এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বসন্তের রেশমপথ

    ফরিদা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২১ এপ্রিল ২০১৮ | ১০০২ বার পঠিত




  • -“আরে বরফ পড়ছে তো!”
    -”বরফ? সে কী? বৃষ্টি তো!
    -”আরে দেখ। সত্যি বরফ, জ্যাকেটে লেগে আছে”
    - তাইতো!
    আর তাই কিছুক্ষণ পরেই দুই-হাত পেতে ওই চোদ্দজনের নানান বয়সীরা শিশু হয়ে যায় বরফের কুচি হাতে ধরতে। আস্তে আস্তে বাড়ছিল সেই বরফকুচির প্রকোপ।

    একটু আগেই ওরা নাথাং উপত্যকায় ঘুরছিল। মাঝখানের অনেকটা সমতল জায়গার প্রায় তিন দিক ঘেরা বরফ ঢাকা পাহাড়ে। একদিকের পাহাড় বরফ কিছুটা কম, তারই দেয়াল ঘেঁসে প্রায় গোটা পঞ্চাশ ঘরের চালা দেখা যাচ্ছে। সেটা গ্রাম। নাথাং। সেই পাহাড় বেয়ে উঠছিল ওরা। বরফে পা পড়লে পিছলে যাচ্ছিল। তাই পাহাড়ের গায়ের বাদামী শুকিয়ে আসা ঘাসে পা দিয়ে দিয়ে ওঠা। প্রায় ১৩,৪০০ ফিট উচ্চতায় এমনিতেই ওঠানামা বেশ চাপের। তার মধ্যেই যতটুকু সম্ভব উঠছিল। কথা বলছিল, তুলছিল ছবি।

    ------------------
    সমতলের লোক ওরা। দলের ও পালের গোদা অয়নের পেশা লোকজনকে বেড়াতে নিয়ে যাওয়া। আপাতত কয়েক বছরে সে এই সিল্ক রুটে বেড়াতে নিয়ে আসছে। রামধুরা, সিলেরি, পদমচেন জুলুক, আরিতার এইসব জায়গায় নিজে নিজে বেছে নিয়েছে কিছু হোম স্টে। সেখানকার সুযোগ সুবিধায় কমতি আছে বটে, তবু ওই হোম স্টে চালান মানুষদের আন্তরিকতা আর যত্ন আত্তিতে সে সব আর গায়ে লাগে না। প্রায় সব হোম স্টে চালান মহিলারাই। নিজেরাই দুর্দান্ত খাবার বানান। সহকারী হয়ে যারা সেখানে কাজ করেন তারাও কাছাকাছি গ্রাম থেকে আসেন। প্রত্যেকে দারুণ সুন্দরী, সারাক্ষণ টিপটপ পরিচ্ছন্ন থাকেন ও হোম স্টে’র প্রতিটি অংশ রাখেন সেই রকমই। রান্নাঘরের প্রতিটি চামচ খুন্তি কড়াই হাতা অবধি ঝকঝকে তকতকে।

    তা সেই অয়নের নিজের পরিবার, এক দিদি ও তার দুই ছেলে আর স্কুলের বন্ধু অমিতাভ, দীপঙ্কর, সুমন সপরিবার এই বেড়াতে যাওয়ার প্ল্যান করছিল মার্চ মাসের শুরুতে। সুমনের ছেলের ক্লাস টেন সিবিএসসি পরীক্ষার পরে একটা ছোট বেড়াতে যাওয়ার কথা চলতে সেই প্ল্যানে দেখা পাওয়া গেল দীপঙ্করের মেয়ের ও বাবুইদির ছেলেদেরও স্কুল ও পরীক্ষা সংক্রান্ত চাপ কম। বাবুদি র বড়টি আবার এইবার বারো ক্লাসের পরীক্ষা দিয়ে উঠেছে সবে। সে আবার আঠারোয় পড়বে এই বেড়ানর মধ্যেই। অমিতাভ তার অফিসের একত্রিশে মার্চের গেরো থেকে বেড়িয়ে কিছুটা খালি থাকবে, বেড়ানও হবে।



    এপ্রিলের তিন তারিখ রাতের দার্জিলিং মেল ধরল অয়ন, দীপঙ্কর, অমিতাভ ও বাবুই দি’রা। আর পরের সকালে দিল্লি থেকে সোজা বাগডোগরা পৌঁছল সুমনরা। সকালে নিউ জলপাইগুড়িতে ব্রেকফাস্ট করিয়ে বাকিদের একটা গাড়িতে রওনা করিয়ে অন্য একটা গাড়িতে অয়ন তুলে নিল সুমনদের। মাঝরাস্তায় লোহাপুলে সেই গাড়ি থামল মধ্যাহ্ন ভোজনের জন্য তখন প্রায় দেলা দু’টো। সবার পেটেই প্রায় তখন দু’টো করেই ছুঁচো দৌড়চ্ছিল। তারা শান্ত হ’ল ভাত ও দুর্দান্ত পর্কের ঝোলের পরাক্রমে। অন্য গাড়িটি তখন বাকিদের পৌঁছে দিয়েছে গন্তব্যে বাকিদের। তারা পথশ্রম লাঘবে সামান্য ভদকা বোতল খুলেছে। দুপুরের খাবার খেতে বসবে কিছু পরেই। জায়গাটি একটা পথের বাঁকে পাহাড়ের ঢালে অনেকটা জঙ্গল, বিরাট উপত্যকা আর দূরের তখন অদৃশ্য কাঞ্চনজঙ্ঘার দিকে তাকিয়ে থাকা হোম স্টে। এর একটা পোশাকি নাম থাকলেও স্থানীয় ও ভ্রমণরসিক মানুষ একে সুবালার ভাবী হোম স্টে বলেই মনে রাখেন।

    অয়নরা যখন পৌঁছল তখনও বিকেলের আলো যেন তাদেরই অপেক্ষায় ছিল। গাড়ি থেকে নেমেই প্রথমে সুমন খুঁজতে গেল রান্নাঘর। আসার পথে দু’লিটার ফুল ক্রীম দুধ কেনা হয়েছে। সেটা আশু জ্বাল না দিলে খারাপ হয়ে যাবে।

    হোম স্টের একটা রেস্টোর‍্যাণ্টের পাশ দিয়ে যে সিঁড়ি নেমে গেছে, সেখানে পাশাপাশি দু’টো বেশ বড় ঘর। বড় বিছানা, সেন্টার টেবিল, সোফা, লাগোয়া বাথরুম ঝকঝকে, গীজার নেই। আর বারান্দা দিয়ে দেখা যাচ্ছে পাহাড়ের গায়ের জঙ্গল, দূরের পাহাড়ের গায়ে কালিম্পঙ শহর, আর আরও দূরে, নিচে আবছা হয়ে আসছে তিস্তা নদী। তার বাঁক যদিও বোঝা যাচ্ছে।

    এই দুটো ঘরের একটায় দীপঙ্কর, অণ্বেষা ও তাদের মেয়ে ঐশী। একটায় সুমন ও রেশমী। ওদিকে রেস্টোর‍্যাণ্টের গা বেয়ে সিঁড়ি উঠেছে দোতলায়, সেখানে একটা ডাইনিং স্পেস ঘিরে তিনটে ঘরের একটায় একটায় অয়ন-মানসী, একটায় বাবুই-দি আর অয়নের মেয়ে আমন। বাকিটা ছোটদের আড্ডাখানা সেখানে আস্তানা গেড়েছে বাবুই-দির ছেলেরা রোরো রুনার আর সুমনের ছেলে সম্পান। ঠিক এর পাশের একটি হোম স্টের একটা ঘর অমিতাভ -শ্রাবন্তীর।

    ওদিকে রান্নাঘরে দুধ জ্বাল দেওয়া হলে সুমন গেল সেটা ভিনিগার দিয়ে কেটে ছানা বানাতে। সেই ছানা ছাঁকার জন্য জোগাড় করা হল কারোর একটি ওড়না। এবার সেটা নিংড়ে জল ঝরাতে রাখা হল।

    এদিকে সন্ধ্যা নামছে, হোম স্টের দুধ -চা আর বাবুই দি’র আনা গুডরিক এর রোস্টেড চায়ের পাতা গরম জলে র গ্লাসে রঙ বদলে বদলে জল খেয়ে ভারী হয়ে নিচে এসে জমছে। তা আস্তে আস্তে চুমুক দিয়ে খাওয়াই বিধেয়। কলকাতা থেকে আনা নকুড়ের আম সন্দেশ আর ভি আই পি স্যুইটসের জলভরা তালশাঁস আস্তে আস্তে ফুরোচ্ছে। এক ফাঁকে শ্রাবন্তী ফের ঘরে গিয়ে নিয়ে আসছে উজ্জ্বলা র চানাচুর। সুবালা ভাবীর এক সাকরেদ গরম গরম সুস্বাদু ভেজ পকৌড়া এনে হাজির করল। চায়ের পর্ব মিটতে না মিটতেই মাঠে অর্থাৎ সেই খাইকুট্টি ডাইনিং টেবিলে ব্যাট করতে নামলেন ক্যাপ্টেন মর্গান রাম আর ব্যাকার্ডি লিমুনি, দর্শকের করতালির মধ্যে। ওদিকে কিশোরদের “মদ-বিড়ি খাওয়ার ঘর” বলে যা চিহ্নিত ছিল তার দরজা বন্ধ। ভেতরে আড্ডা জোরদার। শুধু “মদ-বিড়ি” র বদলে এন্তার লেজ চিপ্স, কুড়কুড়ে আর থামস আপ চলেছে।



    কলকাতা থেকে আনা হয়েছিল আড়াই’শো গ্রাম খোয়া ক্ষীর, কিছুটা সুজি, ময়দা, নকুল দানা, আর গাওয়া ঝর্ণা ঘি। দিল্লি থেকে এসেছিল এর পরিকল্পনা, রেসিপি, রাধুনি ও তিনটে বড় এলাচ।

    এদিকে একটা বড় পাত্রে সেই জল ঝরান ছানা মাখা হল, খোয়া ক্ষীর মাখা হল, তারপর এদের মেশান হল, মিশ্রণে যোগ দিল ময়দা ও সুজি। সেটাকে মেখে তাদের ছোট ছোট বল বানান হল, তার মধ্যে নকুল দানা আর এলাচ দানা ভরে দেওয়া হল।

    রান্নাঘরে গিয়ে রস বানিয়ে রখা হল একটা পাত্রে। চিনি নেওয়া হল সুবালা ভাবীর ভান্ডার থেকেই। ওদিকে কড়াইতে সেই ঝর্ণা ঘি দিয়ে ধীরে ভেজে রঙ ঠিকঠাক হলে সেই বল যেই ফেলা হল রসে, তা রস খেয়ে লেডিকিনি হচ্ছিল। গোল্লা পাকাতে হাত লাগাল মানসী অন্বেষা ও বাবুই দি। ভাজার সময় অনেকটা, সেটা ধরে ধরে করল বাবুই দি।



    কিছুটা চিলি চিকেন এসেছে, ক্যাপ্টেন মরগ্যান বেশ হাত খুলে খেলছেন, পাকা খেলোয়াড়। কিন্তু নতুন প্রতিভা ব্যাকার্ডি লিমুনি যে এভাবে এত জয়প্রিয় হবেন তা ভাবা যায় নি। এর মধ্যে এক পশলা বৃষ্টিও এসেছিল। বারান্দা ভেজা, ফলত সেখানের প্লাস্টিক চেয়ার। জঙ্গলের বুনো গন্ধ আসছিল। গান হচ্ছিল খুব। অনেকক্ষণ।

    রাতের মেনুতে ছিল সুবালা ভাবীর রান্না করা স্পেশাল পর্ক, রুটি, ভাত ডাল। অনেক রাত অবধি কেউ আর নিজের নিজের ঘরে ফিরছিল না।





    অয়নের হিন্দি অনন্য। সে এক স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাষা, এর নিজস্ব ব্যকরণ, উচ্চারণশৈলী ও মাধুর্য আছে। ঐতিহ্য বলতে তেমন কিছু এখনও নেই, যদিও এই ভাষা তৈরী হয়েছিল আনুমানিক দু’হাজার আট খ্রীষ্টাব্দে যখন অয়ন তার বন্ধুদের নিয়ে কাজা টাবো যাচ্ছিল। তারও আগে সোনার কেল্লা সিনেমায় লালমোহনবাবু এই ভাষাতেই ফেলুদার সঙ্গে আলাপচারিতা শুরু করেন বলে ঐতিহাসিকরা জানিয়েছেন। কলকাতার বাইরে কাজের সুবিধার্থে সে এই ভাষা প্রবর্তন করে। ভাষার নিজস্ব হরফ এখনও নেই, বাংলা হরফে তা ফোটানও মুশকিল। তবে অনেকে আজকাল একে “ইটালিক্সে বলা বাংলা” ও বলছেন। হিন্দি না জানা বাঙালির কাছে এ এক আশ্চর্য আশির্বাদ। বাংলা শব্দকে একটু টেরিয়ে বেঁকিয়ে বললে তা বেশ হিন্দি হয়ে যায় - এই ধারণা থেকে এই ভাষার উদ্ভব।

    তা এই ভাষাতেই অয়ন বলছিল রাতে বৃষ্টি হলে পরের দিন সকালে কাঞ্চণজঙ্ঘা নাকি “ঝ্যক ঝ্যক করেগা সক্কাল বেলামে”। যদিও আগের রাতে বৃষ্টি ছিল তবু কাঞ্চণজঙ্ঘার অল্প কিছুটাই দেখা গেল সকালে। কিন্তু দেখার অন্য অনেক কিছু ছিল, শোনারও।

    উপত্যকায় ছোট ছোট কয়েকটি বাড়ি থেকে বাচ্চারা স্কুলের পোশাকে বের হচ্ছিল, পাখিরাও আকাশে আকাশে ছোটাছুটি করে লুকিয়ে পড়ছিল গাছে, পাতার আড়ালে। তাদের ডাক শোনা যাচ্ছিল, কয়েকটি মাত্র দেখা গেল তার থেকেও অনেক কম ধরা পড়ল ক্যামেরায়। সামনের রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে দু’পাশের জঙ্গল থেকে সেই ডাক বার বার থামিয়ে দেয়।



    বায়নাকুলার চোখে লাগিয়ে রোরো পাখি খুঁজছিল, ক্যামেরা নিয়ে সুমন। রেশমী আস্তে আস্তে ঘুম থেকে উঠছিল। গতকাল এখানে এসে পৌঁছনর পর এই প্রথম সকালের চায়ের পাশে পাওয়া প্রাণ বিস্কুট। এইখানেই জানা গেল বাংলাদেশের “প্রাণ” বিস্কুট কলকাতায় পাওয়া যাচ্ছে, এর গার্লিক বিস্কুটটা ছিল সুপারহিট।

    গীজার নেই তবে চানের গরম জল পাওয়া যায় একবার বললেই। সেদিন আর গাড়ি নিয়ে অন্য কোথাও যাওয়ার নেই। হেঁটে বেড়াতে যাওয়া ওই রাস্তা দিয়ে। এক জায়গায় এসে পথ বেঁকে যায়, একদিকে গেলে পাওয়া যাবে তিস্তা উপত্যকার একটা ভিউ পয়েন্ট, অন্য পথ উঠে গেছে পাহাড়ে, নিয়ে যাবে “ইচ্ছে গাঁও”। যা হয় আর কি, কয়েকজন বলে পাহাড়ে উঠে ইচ্ছে গাঁও যাওয়ার কথা, কেউ কেউ বলে চওড়া রাস্তা বরাবর হেঁটে তিস্তা দেখার কথা, কেউ কেউ কিছুই বলে না। চওড়া রাস্তার দূরত্ব অনেকটা, আর ইচ্ছে গাঁও এর রাস্তা অনেকটা চড়াই।

    শেষ অবধি তিস্তা উপত্যকাই যাওয়া হল। চওড়া রাস্তা, মানে খুব চওড়া নয়, দুটো গাড়ি গতি কমিয়ে পেরোতে পারে সহজেই। রাস্তার দুই পাশে ছোট ছোট কাঠের বাড়ি, টিনের চাল, সহজ ফুটফুটে শিশু আর প্রচুর ফুলগাছ। সবাই যে যেখানে পেরেছে, বাড়ির দরজায়, দেওয়ালের পাশে, জানলার চৌকাঠে ফুলগাছ বসিয়েছে, আর ফুল ফুটেছেও এন্তার। পোষা মুরগি ঘুরছে, দানা খুঁটছে ইতস্তত। তাদের ছানারা, খুব ছোট অবস্থায় ঝুড়ির নার্সারিতে, যারা অল্প বড় তারা ভারিক্কি চালে নড়বড় করতে করতে দানা খোঁটা শিখছে। পোষা বেড়াল মুখ বাড়াচ্ছে ঘরের আধখোলা দরজা থেকে, কেউ ঘরের চাল থেকে অবাক হয়ে দেখছে শহুরে লোকজনের কাণ্ড।



    সেই চওড়া রাস্তা আস্তে আস্তে নেমে যাচ্ছে, ফিরে আসার পথে চড়াই পেতে হবে এই একটা মৃদু শঙ্কা থাকছে, তবু হেঁটে যাচ্ছিল ওরা। এক জায়গায় এসে দেখা গেল বড় পথ ছোট গলিপথ নিতে হবে। রাস্তা যেমন হয় আর কি পাহাড়ে, অনেকটাই নদীর মতো, যে রাস্তা যত সরু তা ততটাই উচ্চ নতির। সেই গলিপথও তাই, অনেকটা খাড়া নেমে যাচ্ছে তিস্তার সেই ভিউ পয়েন্টের দিকে। খানিক গিয়ে একটা ভিউ পয়েন্ট পাওয়া গেল বটে, কিন্ত তা ধুলিধুসারিত, পরিত্যক্ত প্রায়। তিস্তা এখান থেকেও দেখা যাচ্ছে, কিন্তু বিপজ্জনক হল যে সেখান থেকে আরও একটা ভালো ভিউ পয়েন্টও দেখা যাচ্ছে, আর সেটা আরও অনেকটা নিচে।

    দু-একজন বলে এখানেই বেশ, ছোটদের দল নিচের পয়েন্টের দিকে এগোয়। কয়েকজন বড়ও। বাকিরাও পিছু নেয় কিছু না বলেই। হ্যাঁ, এখান থেকে দেখা যাচ্ছে বটে, কিন্তু হালকা কুয়াশার চাদর ঢাকা আছে বলে তিস্তা সম্পূর্ণ দৃশ্যমান হয়। ওরা যেখানে আস্তানা গেড়েছে, সেই হোম স্টেও ঠাহর করা যায় সেই ভিউ পয়েন্ট থেকে, রাস্তার বাঁকে। বেশ অনেকটা দূরে, আর বেশ কিছুটা উচ্চতায়।



    কিছুক্ষণ কাটিয়ে ফেরার পালা আসে। সেই গলিপথের তীক্ষ্ণ চড়াই বেশ ক্লান্তিকর। ছোটরা এগিয়ে থাকে এই ধরণের পথে। কয়েকজন বড়ও। বাকিরা সবার শেষে বড় রাস্তায় উঠে একটা গাড়ি জোগাড় করে ফেলে। সেই গাড়ি, ওদের নিয়ে চটপট ফিরিয়ে দেয় আস্তানায়, পথে দেখা হওয়া বাকি সঙ্গীদের স্পষ্টত বিমূঢ়, ক্ষিপ্ত, গর্বিত করে।

    ফিরে এসে পথ হাঁটার ক্লান্তি লাঘব করতে পাওয়া গেল ঠান্ডা বীয়ার। এদিকে খাওয়ার টেবিলে দুপুরে ডিমের ঝোলের কথা ছিল, এল রুইমাছ। হাঁটাও হয়েছে এন্তার, কাজেই খাওয়া দাওয়ার পর ভাতঘুম এল ওদের সব্বার।

    সেই ভাতঘুমের মধ্যে ছিল টিনের চালে ঝমঝমে বৃষ্টি, সন্ধ্যায় ধোঁয়া ওঠা চিকেন মোমো, খাওয়ার জল কিনতে অন্ধকারে হেঁটে যাওয়া রাতের দিকে আরও ঠান্ডায়। তখন আকাশ অনেকটা পরিষ্কার। তখনই জানা যায় অনেক তারার মধ্যে শহরের মানুষ শুধু সপ্তর্ষিমণ্ডলকেই চেনে।



    আগের রাতেই ঠিক হয়েছিল পরদিন খুব সকালে বেরোন হবে। গন্তব্য নাথাং ভ্যালি। এও জানা গিয়েছিল অত সকালে গরম জল পাওয়া একটু মুশকিল, সুবালা ভাবীর সহকারীরা গ্রাম থেকে আসে তাদের বাচ্চাদের স্কুলে পাঠিয়ে। এদিকে আবার সুবালা ভাবীর বিকেল থেকে জ্বর। সকালের জলখাবার ভাবা হয়েছিল করা হবে রাস্তা থেকেই। কিন্তু কার্যকালে দেখা দেখা গেল সকালের চা, যারা চান করতে চাইছিল তাদের গরম জল ও সবার জন্য গরম গরম ম্যাগী প্রস্তুত। ভাবী সেই উঠেছেন, জিজ্ঞেস করাতে বলছেন – বাচ্চাগুলো খালি পেটে বেরোবে সকাল সকাল, তাই উঠেই পড়লাম।

    এদিকে সেই ছয়ই এপ্রিল আবার রোরোর জন্মদিন। রোরো সেদিন থেকে একেবারে আঠেরোরো! ম্যাগি দিয়ে ব্রেকফাস্টের মধ্যে তাই কেক কাটা আর প্রচুর হৈ হল্লা।



    দূরত্ব প্রায় ১০৫ কিলোমিটার। কিন্তু পথে পারমিট নেওয়ার জন্য থামা আছে রঙলি তে। সে জায়গাটা ঘিঞ্জি। নাথু লা, ছাঙ্গু লেক, নাথাং এইসব জায়গায় যাওয়ার গাড়িরা ভিড় করে আছে। পারমিট তৈরি হচ্ছে। পাহাড়ের সমাহিত রূপে পৌঁছনর আগে একবারের জন্য গরম, ভিড় ও ডিজেল ধোঁয়ার নরকদর্শন। রঙলি ছাড়িয়ে গাড়ি উঠতে থাকলে ফের রাস্তা পাহাড়ের জিম্মায় চলে যায়। গাড়িতে তখন মৃদু ঘুমের আবহ। ঠাণ্ডা হাওয়া যত আসে গাড়ির কাচ তত বন্ধ হয়।

    এক জায়গায় পাহাড়ি ঝর্ণা ঘিরে দু একটা খাবারের দোকান। আসা যাওয়ার পথে গাড়ি থামে সেখানে। যাত্রীরা ঝর্ণার পাথরে পা দিয়ে জলের কাছে পৌঁছতে চায় যতটা সম্ভব নিজস্ব মোবাইল ফোন আর ক্যামেরা বাঁচিয়ে। যতটুকু ছাড়া যায়, পাওয়া ততটুকুই মানুষ এ কথা জানে। গাড়ি চালকেরা উদাসীন ভাবে খেতে খেতে দেখে এই সব শহুরে আদেখলেপনা।



    ছোট ছোট গ্রাম আসে। আস্তে আস্তে চোখে পড়ে রডোডেনড্রনের লাল রঙ সেই রাস্তার দুই-পাশে, উদ্ধত নয়, তবু যেন নিশানের লাল অনেক দিন পরে চোখে পড়ে যাত্রীর। মনে পড়ে যায় অনেক কিছুই। ছোট ছোট গ্রামগুলি পাহাড়ের গায়ে, পাহাড়ের প্রভাবে বাসিন্দাদের অনেক বড় করে তোলে। তাদের বাড়ি ঘর দোর ঘিরে অজস্র গাছ পালা লতা পাতা ফুল।

    এই রাস্তাই রেশমপথ, বাংলায় যাকে “সিল্ক রুট” বলা হয়। হিমালয় পার হয়ে ব্যবসা চলার জন্য মানুষ খুঁজে নিয়েছিল এই সব রাস্তার হদিশ। চিন দেশ থেকে রেশমের পসরা আনত ব্যবসায়ীরা। সেই থেকে “সিল্ক রুট”। এই পথেই ব্যবসায়ের রেশমসূত্র ধরেই সাংস্কৃতিক আদানপ্রদান। যা কিনা পরে বৌদ্ধধর্ম প্রসার ঘটায়, তারও আগে এই পথে এসেছেন হিউয়েন সাঙ, ফা হিয়েন। এই পথে হেঁটে যাবেন অতীশ দীপঙ্কর মহাশয়।

    পথ এঁকেবেঁকে পাহাড়ে উঠেছে। বাচ্চার হাতের টানা লাইন আঁকাবাঁকা পাহাড় জুড়ে, তাতে পিঁপড়ের সারি গাড়ি দম নিয়ে উঠতে থাকে। গাড়ির মধ্যে তখনও ঠাণ্ডা মালুম হয় না, কিন্তু বাইরের ঠান্ডা হাওয়া টের পাওয়া যায়। একটা সময়ে মেঘ ছুঁয়ে যায় গাড়িরা। একটা ভিউ পয়েন্ট এ গাড়ি থামে, নামটা প্রায় বাংলা -”থাম্বি”।

    কিন্তু তখন এত মেঘ যে কিছু আর দেখা যায় না, হাত পা ছাড়িয়ে ফের গাড়ি চলতেই (বা পাহাড় বেয়ে কিছুটা চড়তেই) আচমকাই দেখা যায় পাহাড়ের গায়ে বরফকুচির সাদা ছোপ লেগে আছে। শহুরে ভ্রমণকারীর দল তা দেখেই চিল চিৎকার করে ওঠে। ক্রমে পাহাড়ের গা হয়ে আসে অবিকল ব্ল্যাক ফরেস্ট পেস্ট্রি। ক্রমে তাতে ক্রিম বেড়ে বেড়ে যায়। মাঝে দু এক চিলতে মিলিটারি আস্তানা। ইতিউতি জওয়ানরা বন্দুক টন্দুক নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। ঘোঁতঘোঁতে মিলিটারি ট্রাকেরাও। এরও বেশ কিছুটা পরে একটা গ্রাম আসে, রাস্তা আচমকা খুব সরু। তখনই গাড়ি থামিয়ে চালক জানান এরা গন্তব্যে পৌঁছে গিয়েছে।

    একেবারেই গ্রাম। সরু রাস্তার দু'পাশে ঠেসাঠেসি করে প্লাইবোর্ডের বাড়িরা মাথায় টিনের চাল সেঁটে খেলনা বাড়ি সেজেছে যেন। বাড়ির মালিক পেম্পা ও ড্রাইভারেরা চটপট লাগেজ নামিয়ে চালান করে দেন ঘরগুলোতে। একতলায় দু’টো, আর দোতলায় দুটো, চারটে ঘর এখানে। এটিও হোম স্টে। তবে এর কোনও নাম নাই। পেম্পার বাড়ি বললে লোকজন ঠিক দেখিয়ে দেবে। ঘরগুলো বড়, প্রতি ঘরে প্রায় তিন চারজন আরামে শুতে পারে। লাগোয়া বাথরুম ঝকঝকে, তবে তোলা জলে কাজ সারার ব্যবস্থা।

    ওই ঠান্ডায় স্নানের প্রশ্নই তোলে না কেউ। খিদেও জব্বর পায়। গরম ভাতে ইয়াকের দুধের ঘি, আলু চোখা, আর ডাল অমৃত মনে হয়। ডিমের ঝালও থাকে। দোতলায় একটা রান্নাঘর যাতে জনা দশেক চেপেচুপে বসে খেতে পারে। আবহাওয়া জনিত কারণেই মানুষ ওখানে সুজন, তেঁতুলাপাতাতেও যারা কিনা ন’জনকে বসাবে।

    খাওয়ার পর হেঁটে দেখতে বেরোন, ওই ছবির মতো গ্রামটিকে। খেলনা বাড়ির সামনে মহা আদুরে লোমশ কুকর শাবকেরা বসে আছে। কয়েকটা বাড়ি দেখা যায় তালা দেওয়া, তবে সে তালার চেহারা মোটেও পুষ্ট নয়, শহুরে মানুষের বেড়াতে যাওয়ার ব্যাগে তার চেয়ে শক্ত তালা দেখতে পাওয়া যায়।



    ছোট গ্রাম, খান পঁচিশেক বাড়িতেই ছাড়াতেই দেখা যায় বিস্তীর্ণ উপত্যকাটি। সেই পাহাড়ে উঠে খেলা হচ্ছিল, এই লেখার প্রথম অনুচ্ছেদগুলি ঠিক এই সময়টাই। কিন্তু বরফ পড়ছে বলে যা ওরা ভাবছিল তা নেহাৎই যে শিলাবৃষ্টি ছিল, সেটা ওরা বুঝবে ঠিক কয়েক ঘন্টা পরেই।

    আর ঠিক তার পরেই, বরফ টরফ ধরে এবার চা কিম্বা কফির তেষ্টা, পাওয়াও যায় এক ক্যফেও। আর তার কফিটিও অসাধারণ। বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা পুরনো ঝুপড়ি কুঁড়েঘরের উষ্ণ আরামদায়ক টুল, নিচু টেবিলে রাখা কফির কাপ, আলো বলতে একমাত্র জানলা থেকে আসা বাইরের বিকেলের আলো, যাতে অনেকটা গাঢ় মেঘ মেশান। সেই দোকান যেন এক জাদুর ঠিকানা। বেশ কয়েকটি পছন্দসই রাম, ভদকা ও হুইস্কির বোতলও পাওয়া যাচ্ছিল। ভিতরের ঘরে চাল থেকে ঝোলা দড়িতে বাঁধা ইয়াকের দুধের তৈরি জমান চীজের কিউব। যাকে এরা ছুরপি বলে। শীতকালে চ্যুয়িং গামের মতো মুখে রাখলে শরীর গরম থাকে। পাশেই ইয়াকের মাংস হয়ে ঝুলছে একটা পা। ওখান থেকে অল্প মাংস কেটে নিয়ে স্যুপে মিশিয়ে মিডিয়ে নিলে অনেক দিন চলে। জায়গাটা নিজেই রেফ্রিজারেটর হয়ে থাকে।



    এককথায়, পুরো জায়গাটাই ডিজিটাল ছবির মতো, চির অমলিন। ফ্রিজশট।

    বৃষ্টি ও হাওয়ার জোর বাড়লে এরা ফিরেছে পেম্পার আস্তানায়। ছোটরা খাটে উঠে লেপ কম্বলের তলায় সেঁধিয়েছে, কেউ কেউ ঘুমোচ্ছে। বিছানার এক চিলতে অংশ ফাঁকা দেখে অয়ন সেখানে শুতে গিয়ে বলে পাশের শিশুটিকে আর একটু চেপে দিতে দেওয়ালের দিকে। সে আবার তখন জেগে, ঘুমোনর ভানে। সে কথাগুলি পুনরুচ্চারণ করে মানুষের সবিশেষ আনন্দসঞ্চার করে।

    সেই একটা ঘরে প্রায় জনা দশেক মানুষ যে যেখানে পেরেছে শুয়ে বসে আড্ডা মারছে, এর মধ্যেই চা খাওয়া, বিস্কুটের প্যাকেট চলাচল করে।

    রাত্রি নামলে ফের মদ্যপান, আড্ডা, ওখানে তাড়াতাড়ি রাতের খাবার দেওয়া হয়, সে সময়ও দ্রুত চলে আসে আড্ডার মধ্যে হানা দিতে।

    খাওয়ার টেবিলের মাঝখানে একজায়গায় আগুন জ্বালানর ব্যবস্থা ছিল। রাতে খেতে বসে দেখা গেল তার প্রয়োজনীয়তা। খাবার অত্যন্ত সুস্বাদু কিন্তু নামে সাধারণ ডাল ভাত আলুভাজা চিকেন।

    শোওয়ার ব্যবস্থা এখানে ঘর অনুযায়ী নয়, বরং খাট অনুযায়ী। একটা ঘরে সুমন অয়ন সাম্পান রোরো রেশমী এঁটে যায়। ডবল বেডের একটায় অয়ন সুমন, একটায় রোরো সাম্পান, সিঙ্গল বেডে রেশমী।

    মাঝরাতে একটা সময় ঘুম ভেঙে যায় সুমনের। সিগারেট তেষ্টায় বাইরে আসে। দোতলা থেকে আসা বারান্দার আলোয় চোখে পড়ে বাইরের পাতলা রাস্তাটি সাদা হয়ে আছে। একটু চোখ তুলতেই সে দেখে নি:শব্দে আকাশ থেকে সাদা সাদা ফুলের মতো তুষার ঝরছে, যেন আকাশের তারারা ঘুমোতে আসছে মাটিতে সদলবলে, ঝাঁকে ঝাঁকে। সামনের বাড়ির চালগুলো একেবারে সাদা। সে সবাইকে ঘুম থেকে ডাকাডাকি করে। এক এক করে বেরোয় বাবুইদি, মানসী, অমিতাভ, শ্রাবন্তী, অয়ন, অণ্বেষা।

    ঘড়িতে তখন রাত সাড়ে তিনটে। তারপর আর ঘুম হয়ছিল নাকি পুরোটাই স্বপ্নের অন্তর্গত সুমনের তা মনে থাকার কথা নয়।





    বরফ পড়া এই পাড়ায় তেমন বিরল ঘটনা নয়। শহুরে মানুষ সকালে উঠে যেমন বুঝতে পারে রাতে বেজায় ঝড়বৃষ্টি হয়ে পথে জলকাদা, তেমনই এরা সাতসকালে সাদা পথঘাট দেখে বাড়ি থেকে বেরোনর সময়ে গামবুট গলিয়ে নেয় পায়ে। সকালের আলো ফোটার সময়ে রাস্তায় যে ধবধবে সাদা লেপ জড়ান ছিল তা ক্রমে ভেঙে যায় মানুষের চলাচলে। আর পাওয়া যায় ঝুপ ঝুপ করে শব্দ।

    বাড়িগুলির টিনের চালের ঢালুপথে জমা হওয়া বরফ আস্তে আস্তে গলছে সকালের মৃদু উত্তাপেই। তারা স্লিপ খেয়ে কিছু কিছু করে ভেঙে ভেঙে রাস্তায় নামছে খেলতে, কাদা মেখে ফুর্তি করবে বলে। এদের আস্তানার বারান্দা থেকে এই পথ ছাড়া বাকি অংশটা একেবারে সাদা। দূরের পাহাড় আরও সাদা, উপত্যকার যতটা দেখা যাচ্ছে সাদা। আর সেই সাদা রঙে সকালের আলো চোখ ধাঁধিয়ে দেয়, অন্য অল্প রঙ দূর থেকে আলাদা করা যায় না। সাদা ও কম সাদা এই দুটো ছাড়া রঙ ছিল না যেন সেই দৃশ্যের।

    এদিন আবার সকালে বেরোনর কথা ছিল, ছাঙ্গু লেক, কুপুপ লেক, বাবা মন্দির এইসব জায়গায়। ড্রাইভারেরাও অন্য কোথাও ছিল তারাও সাত সকালে হাজির পেম্পার হোম স্টের কিচেন কাম ডাইনিঙে। সেখানে স্যসপ্যানে জল ফুটতেই থাকছে। যে যখন চাইছে তাকে চা ও ম্যাগী বানিয়ে দেওয়া হচ্ছে দ্রুত।

    পেম্পা, নাকি ড্রাইভারদের কেউ এর মধ্যে জানাল, এই বরফে ছাঙ্গু যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। তা আর এ যাত্রা হ’ল না। বাকিরা ঘুম থেকে উঠে বরফ টরফ দেখে কিছুটা অবাক, কিছুটা উচ্ছ্বসিত, চা ও সকালের কাজ সারার জন্য একটু গরম জল কখন কোথায় পাওয়া যাবে এই নিয়ে প্রশ্নার্ত অথবা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে কেউ পেম্পার সন্ধানে ঘর থেকে বেরিয়ে বরফের দৃশ্যে সমাহিত। ছোটদের ডাকা হচ্ছে। তারা লেপের মধ্যে থেকে বেরোতে খুব রাজি নয়। এ যুগের ছেলেপিলে এরা, বরফ টরফ খুব দেখে ফেলেছে এযাবৎ যথেষ্ট পর্দা দূষণে।

    গরম জল মুহূর্তে পাওয়া যায়। পেম্পা জানে, সে প্রস্তুত রেখেছে, বাথরুমে রাখা ছোট বালতি নিয়ে শুধু নিয়ে আসার ওয়াস্তা পেম্পার সব পেয়েছির ডাইনিং কাম কিচেন থেকে।

    সকালে চান করার প্রশ্নই নেই এখানে, দাড়ি কাটা বা পোশাক বদলের দরকার বা উদ্যোগ। পরনের পোশাক এই ঠান্ডায় শরীর থেকে নামতে চায় না। যে যার জ্যাকেটটুকু ছেড়ে লেপের মধ্যে ছিল। সকালে উঠে জ্যাকেট গলালেই একবারে রেডি। বেশ সহজ সরল ব্যবস্থা।

    সকালের জলখাবারের ধোঁয়া ওঠা ঝোল ঝোল ম্যাগি যেন অমৃতসমান। ছোট ডাইনিং রুমে স্থান সংকুলনের সমস্যা হেতু আক্ষরিক অর্থেই মানুষকে কাছাকাছি আনে। আর সেখানে এরা তো এতদিনকার বন্ধু সব। সে উষ্ণতা তাই বড় মনোরম। অয়ন অমিতাভ দীপঙ্কর সুমন তো স্কুলে দশ বারো বছর একসঙ্গে পড়েছে। বাবুইদিও তো অয়নের বাড়ি যাতায়াতের সূত্রে ততটাই চেনা। রেশমী অণ্বেষা মানসী শ্রাবন্তী এরাও কেউ নতুন নয় আর। নয় নয় করে পাঁচ ছ’টা নাকি আরও বেশি এই ধরণের বেড়াতে যাওয়া, আর তার আগের মাস তিনেকের প্ল্যান, ও ঘন ঘন দেখা হওয়া ও আড্ডার সুবাদে বেশ কাছাকাছিই। পট্ট আমন ঐশী রোরো রুনারও পরস্পরকে আবার প্রায় জ্ঞান হওয়া ইস্তক দেখে আসছে। বরং এই ধরণের বেড়ানগুলোয় এরাই বিন্দাস মিলেমিশে সবচেয়ে বেশি বিন্দাস থাকে।

    গাড়িতে ফের তোলা বাঁধা হল মালপত্তর। গতকালের রাস্তা এই সকালে ভোল বদলেছে সাদা পোশাকে। গতকাল যা ব্ল্যাক ফরেস্ট মনে হচ্ছিল তা সকালে একেবারে ক্রিম ঢালা পাইন অ্যাপেল পেস্ট্রিটি। শুধু তার চেরিটা কে যেন আগেভাগে মেরে দিয়েছে।

    ছাঙ্গু যাওয়া ক্যানসেল হয়েছে তাই ফেরার পথেই নামার পালা। নামার পথে এক জায়গায় দেখা যায় পাহাড়ের গায়ে জিগজ্যাগ রাস্তাটি। দূরে জুলুক গ্রাম। মাঝখানে হেলে দুলে ভেসে যাওয়া সাদা মেঘ। গতকাল পাহাড়ে ওঠার সময়ে দেখা যায়নি এইসব, কুয়াশা ছিল বলে। এদিন সেখানে থেমে আশ মিটিয়ে ছবি তোলা হল।



    যারা বেড়াতে আসেন এদিকটায়, তারা অনেকেই জুলুকে রাত্রিবাস করে নাথাং ভ্যালি, ছাঙ্গু এইসব দিনমানে ঘুরে নেন। তাই জুলুকের নাম বেশি শোনা শোনা লাগে।

    অয়ন এই সিল্ক রুটের বেশ কয়েকটা জায়গায় ঘর লীজ নিয়ে রাখে সারা বছরের জন্য। ট্যুরিস্ট পাঠায়। রামধুরা তে এরা যে সুবালা ভাবির হোম স্টে তে ছিল সেটা অয়নের লীজ নেওয়া। এমনই এক জায়গা এল জুলুক ছাড়িয়ে নামার সময়ে, পদমচেন। বন্ধুরা মজা করে বলে “অয়নের জমিদারী”। পদমচেনের হোম স্টে চালান পাশি ভাবি। তার রান্নার সুখ্যাতি এ অঞ্চলে রসিকজনবিদিত। এখানের ঘরগুলোও আরাম উপকরণ বহুল। বাথরুমে গীজারও আছে। আর রাস্তায় ফুটে আছে রডোডেনড্রন।

    মাঝে রংলি তে থামা হ’ল কিছুটা পর্ক কেনার জন্য। এখানে মাটন খুব একটা চলে না, পাওয়াও যায় না, তাই দাম বেশি তাই লোকেও খায় না। চিকেন থেকে মুখ বদলাতে পর্কই ভরসা। রংলি থেকে বেরোতেই গাড়ি আচমকা বাঁক নিল রাস্তা থেকে আর উঠতে থাকল চড়াই ধরে।

    আরিতার একটা লেক। চারপাশে গাছে ঘেরা জঙ্গলের আবহে সে লেকের জল চিরসবুজ। পাড় বাঁধান, লেকে বোটিং করে বেড়াতে আসা জনতা। পাহাড়ি সিনেমার শ্যুটিংও হয় নিয়মিত। এখানেই লেকের পাশেই উঠে যাওয়া পাহাড়ের গায়ে এই “লামপোখরি ভিলেজ রিসর্ট”টিতে এরা পৌঁছল প্রায় দুপুরের খাবার সময়ে। এখানেও গীজার আছে, থাকার ব্যবস্থা অনেকটাই আরামদায়ক। স্নান উন্মুখ সমতলবাসী উৎফুল্ল হতে গিয়ে নিভে যায় যখন সে দেখে পাওয়ার কাট।

    তবু একসময়ে পাওয়ার আসে, গরম জল পাওয়া যায়, চান টান হয়, একপাশে পথশ্রমক্লান্ত মানুষ চটপট চাঙ্গায়নি সুধা স্বরূপ ভদকাটি খেতে খেতে আনন্দিত হয়। বাইরের জঙ্গলে পাহাড়ি বুলবুলির ছড়াছড়ি। বারবেট এসে রীতিমতো পোজ দিয়ে অপেক্ষা করেন। হোয়াইট আই গুলির আবার পছন্দ পাতায় পাতায় লাফিয়ে ক্যামেরা ওলার সঙ্গে কুমীরডাঙা খেলার। মাঝে মাঝে ফোকাসের আওতায় পাওয়া যায় বটে, তবু অতৃপ্তি রেখে আসতেই হয় কোথাও না কোথাও।





    এখানেও রান্না চমৎকার - কথাটি বাহুল্য মনে হলেও না লেখা হলে সত্যগোপনের পাপ লাগে যেন। যেখানে এদের চারটে ঘর, সেখান থেকে অল্প ঘাসে হেঁটে চালা ঘেরা ডাইনিং এর জায়গা, সেখানে ভাত ডালের সঙ্গে পাওয়া গেল অত্যন্ত সুস্বাদু ও ইতিপূর্বে এ দলের কাছে অনাস্বাদিত কুমড়ো ও শুটকির এর চচ্চড়ি। সে কুমড়ো নাকি ফলান এই হোম স্টের পুনম ভাবি। এখানে সবজি পাওয়ার ইদানীং সমস্যা হচ্ছে। সিকিম রাজ্য নিজেদের অরগানিক স্টেট বলে ঘোষণা করে পশ্চিমবঙ্গ থেকে সবজি আমদানি বন্ধ করে দিয়েছে। বর্ডারের একদিকে কুড়ি টাকা কিলো ট্যমেটো বর্ডার পেরোলে একশো কুড়ি টাকা। ট্যুরিস্ট নিয়ে বেড়ান গাড়ির ড্রাইভারেরা ট্যমেটো এদিক থেকে কিনে ষাট টাকা দরে ওপারে চেনা লোককে দিয়ে উভয়ের সুরাহা করছেন।

    আর ছিল অর্ধেক করে কাটা ডিমের একটা কষা। সেটিও চমৎকার। দুপুরের খাওয়া শেষ হতে হতে বিকেল গড়িয়ে আসে। কিছুটা ফাঁকা মাঠ পেয়ে পট্ট রোরো রুনার এক বল পেয়ে খেলে, বাকিরা কেউ অল্প ঘুমিয়ে নেয়, কেউ পাখি লুকোচুরি খেলায় মেতে ওঠে ফের।

    রাতের মেনুতে পর্ক আছে তাই বরাদ্দ চিকেন আসে পকোড়া হয়ে, শুরুর দিনের স্টকে থাকা রাম হুইস্কি ভদকার ছ’বোতলের অল্পই পড়ে আছে জেনে আর একটা ব্যাক আপ ব্লেন্ডার্স আসে। রাত বাড়ে, ফের গান হয়। কথা বাড়ে কিছু। আগের রাতে বাবুইদি হাঁটতে বেরিয়েছিল খাওয়ার পরে, নাথাং ভ্যালিতে, সে রাতে গানও গেয়ে ভালোই ঠান্ডা লাগয়ে এসেছে। এদিন গলা ভাঙা। রেশমী গান গায়, শ্রাবন্তীও। ঠান্ডা এখানে বেশ কম। এমনকি রামধুরার চেয়েও। হয়ত এই হোম স্টে’র বিরাট আড্ডা মারার জায়গার তুলনায় আলো কিছুটা কম, নাকি “অদ্যই শেষ রজনী” ভাবের বিহ্বলতায় কিছুটা নবমী নিশি বিষাদের আঁচ পাওয়া যায়।



    সকাল পাখির ডাকে অত্যন্ত মুখর। কিন্তু নাম না জানা পাখিরা লুকিয়েই থাকে পাতাবহুল গাছের আড়ালে। অল্পই দেখা হয় তাদের, ছবি ওঠে তারও অনেক অনেক কম। লেকের পাশ দিয়ে সকালে বেড়াতে ভালো লাগে কারো। কেউ কেউ বই নিয়ে লনে। গোছগাছ সারতে হয়, দীপঙ্কর কে সকালে অফিস ছুটতে হবে বলে ওরা ফ্লাইটের টিকিট কেটেছে, ছ’টায় বাগডোগরা ছাড়বে। কাজেই এগারটার মধ্যেই বেরিয়ে পড়া হয় প্ল্যানমাফিক।

    লোহাপুলের সেই রেস্তোরাঁ, যেখানে অয়ন সুমনেরা দুপুরে দুর্দান্ত সেই পর্ক কারী পেয়েছিল সেখানেই থামা হল খেতে। এদিন আবার বৃষ্টি পিছু নিয়েছে পাহাড় থেকেই। বাবুইদি আবার সকাল থেকে একেবারে সাইলেন্ট মোডে। কথার আওয়াজ পাওয়া যাচ্ছে না।

    শিলিগুড়ি পৌঁছে দীপঙ্কর অন্য ট্যাক্সিতে মালপত্র চাপিয়ে চলে গেল বাগডোগরার দিকে। বাকিরা চার ঘন্টার জন্য ঘর নিল নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশন লাগোয়া তিরুপতি হোটেলে। এতদিন ফোন, খেলার খবর ফেসবুক এইসব খোঁজ পড়েনি। সমতলের সিমেন্টের জঙ্গলে সেইসব দূষণ নিয়ে মোবাইল সিগনাল আসলে দেখা গেল ইস্টবেঙ্গলের খেলাও আছে তখন। তাই দেখা হল।

    অয়নের জমিদারী নিউ জলপাইগুড়ি স্টেশনেও ছড়ান। রাতের খাবার বলা ছিল তার এক বন্ধুর হোটেলে। প্যাক করিয়ে আনতে গেল সে অমিতাভ ও সুমন। খাবার প্যাক করাতে করাতেই সেই টেবিলে এসে হাজির মুচমুচে মৌরালা ভাজা আর একটা হাফ আরসি। বোতলটা শুধু একটা জলের বোতলের পিছনে রাখাই দস্তুর। পাড়ায় বড়দের দেখে সিগারেট ট্যাপ করার মতো।

    ফেরার ট্রেনে এদের আর এ সি টিকিট ছিল এসি থ্রি তে। অয়নের আশ্বাস ছিল কনফার্ম হয়ে যায়। একটাও যদিও শেষ অবধি হয়নি। উল্লেখ্য হল তাতে কারোর খুব একটা অসুবিধা হয়নি, শুধু সুমন ও অয়ন যে বার্থটি ভাগ করে ঘুমোল (একজন একশো, অন্যজন আশি - ওজনে) তার নিকটবর্তী বার্থে ঘুমে ব্যর্থ দুইজন জওয়ান সকালে নিজেরাই দু:খ করছিলেন নাকডাকার শব্দ নিয়ে।

    উপসংহার

    অনেক কিছু পাওয়া হয়, বাকিও থাকে আরও অনেকটা। আর একটা দিন পাওয়া গেলে আরও কয়েকটা জায়গা দেখা হ’ত, ওইদিন রাস্তা বন্ধ না হলে বরফে ঘেরা ছাঙ্গু লেক না জানি কতটা ভালো লাগত, অথবা ফেরার সময়ে দীপঙ্করদের ফ্লাইট ধরার তাড়া না থাকলে রিশিখোলা দেখা আসা যেত, যাওয়ার সময় সুমনরা একই সঙ্গে পৌঁছলে রামধুরা এক রাত্তির থেকে বেরোন যেত – এই সব নানাবিধ ব্যাপার থেকে যায়। কিছু পরে এরা অবশ্য আর থাকে না যা দেখা হয়েছে সেটাই মনে থাকে, তাও তাকেও রাখা যাক এই বৃত্তান্তে।

    এমনিতে, সমতল বাসিন্দাদের ভ্রমণ যেমন হয় আর কি, ক্যামেরা, ফোন, সব জায়গায় একগাদা ছবি নিয়ে তারা ফিরে আসে সমতলে ফের, স্টেশন বা এয়ারপোর্ট থেকে বেরোলেই ফের মিশে যাবে আমে দুধে খবরের কাগজে, চাকরি বাকরি, বাজার করা, দিনযাপনের চক্করে। মাঝে মাঝে দেখা সাক্ষাৎ হ’লে ফের কথা উঠবে হয়ত কখনও সখনও। যারা যেখানে থাকে, তার ভালোলাগা মন্দলাগা সইয়ে সইয়ে নিতে সে জায়গা অধিবাসীদের কিছুটা অবশ করে রাখে। পাহাড়ের মানুষদের যেমন পাহাড় আলাদা করে গায়ে লাগে না, সমতলবাসীও স্থান নিরপেক্ষ হয়ে ব্যস্ত থাকে যাপনের বৃত্তান্তে। মাঝে মাঝে জলে ঢিল পড়লে তরঙ্গ অনুভূত হয়, অনেকদিনের ক্লান্তি জাড্য কাটিয়ে ফের তারা ঠিক করে – অনেকদিন কোথাও যাওয়া টাওয়া হয় না – “কী রে, যাবি নাকি দিন পাঁচেকের জন্য?”

    পুনশ্চঃ লেখায় অমিতাভ, বাবুই দি, অণ্বেষা ও রেশমী তাদের তোলা ছবি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন বলে থ্যাঙ্কু।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২১ এপ্রিল ২০১৮ | ১০০২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • I | 57.15.168.164 (*) | ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০১:২৬62290
  • ইস্স্স,কত পর্ক খেয়েছে। হেব্বি হিংসে দিলাম।পাহাড়ের সন্ধেগুলো ফাটাফাটি।পকোড়ার সাথে যদি রোস্টেড দার্জিলিং থাকে তাহলে তো কথাই নেই।
    কতদিন পাহাড়ে যাই না!
  • ফরিদা | 181.78.216.117 (*) | ২১ এপ্রিল ২০১৮ ০৯:২৭62285
  • তুললাম। হেঁইয়ো :)
  • kumu | 181.79.3.125 (*) | ২১ এপ্রিল ২০১৮ ১১:১১62286
  • আমিও যাবো ও ও ও
  • সিকি | 132.173.82.156 (*) | ২১ এপ্রিল ২০১৮ ১১:১৩62287
  • জিও!
  • dc | 132.174.249.74 (*) | ২১ এপ্রিল ২০১৮ ১১:২৪62288
  • বাঃ ভারি ভাল্লাগলো। যেমন ঘোরার তেমন খাওয়ার গপ্পো।
  • i | 131.44.233.22 (*) | ২১ এপ্রিল ২০১৮ ১১:৪৪62289
  • খাওয়ার গপ্পোরই পাল্লা একটু হলেও ভারি।
    সেই কে যেন চিঠি লিখেছিল-শিলং পাহাড়ে আসিয়াছি। খুব খাইতেছি।

    ভালো লাগল লেখা। লেখকের সামনে বসে তাকিয়া কোলে নিয়ে বেড়ানোর গল্প শুনছি যেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খেলতে খেলতে মতামত দিন