এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • দূরত্বের আখ্যানমালা

    ফরিদা লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ জানুয়ারি ২০১৮ | ১৪৩৬ বার পঠিত
  • ১৩
    চলো, আখ্যান লিখি, তুমি কিছু বলো-
    কিছু আমি বলি - যদি যেতে চাও, চলো...


    যাই ছুঁয়ে আসি, নদীঘাট, একটি শালতি
    পলকা দুলতেছিল, কাঁচা পথে কাদের পালকি
    হেঁকে যায়, ঝোপ ঝাড়, পিছুপিছু কত বাচ্চারা
    জুটেছিল, দেখ মুখ টিপে ঘোমটা আড়ালে
    হঠাৎ বিদ্যুৎ চমক, ওইখানে তুমিই দাঁড়ালে।


    তাই হবে, অনেক অনেক দিন আমাদের
    কথা নাই, চিঠি ও পত্তর
    তোমাকে লেখার খাতা, বারো ভূত দানছত্তর
    উড়িয়ে পুড়িয়ে খেয়ে নোনা ইঁট জমিদার বাড়ি
    জঙ্গলে দেওয়ালের গলায় বাঁধা আছে অশ্বত্থ ঝুরি।


    যেমন চালাতে হয়, যেমন চলতে
    যেমন চাইবে লোকে, জ্বালাতে সলতে
    আমিও চাইতে পারি, আমিও চাইব
    আবার বলবে কবে - যেমন বলতে?


    তুমি ও কথার ফাঁদ যত মনগড়া
    কাহিনী ভোলাতে আসা শিশুপথ্য ছড়া
    শুধুই কাটাও পাশ গিয়েছ পালিয়ে
    অনেক অনেক দূর, অনেক জ্বালিয়ে
    আবার এসেছ, - এই জ্বলা পোড়ো ভিটে
    দু’চার কথায় দেখো সাধ যাবে মিটে।


    তবে তাই হোক, ফের খাতা ছেঁড়া শব্দ গড়ায়
    ইঁট কাঠ, খসা পাতা, যাতে সে আশ্রয় পায়
    ধুলো পথ, ঘাসের জঙ্গল, কিছু পরে রাত্রি নামবে
    ফিরে যাবে? এখনও কি শেষ লোকালটা পাবে?


    জানতাম চলে যাবে, এ পৃথিবী আখ্যাননির্ভর
    ঠিকঠাক পৌঁছবে? ফিরে যাওয়া প্রসঙ্গান্তর
    তাও ফের ফিরবেও জানি, এইখানে রাখা থাকে খাতা
    মাঝে মধ্যে কিছু তার সাদা, মাঝে মাঝে লিখছে কবিতা।

    এ শহরে বহুদিন হ’ল, সময়ের হিসেবে দেড় যুগ
    আজও ঠিক চেনাশোনা নেই, আজকেও নয়া উজবুগ।
    অনেক অনেক দিন আগে, রাত হ’ত হারান ঠিকানা
    দুই হাতে অচেনা নগরী, ভিন ভাষা রেয়াত করে না
    যে যার নিজের তালে ছোটে, মাথা নিচু গাড়ি সারি সারি
    পথে কেউ হাঁটছে না মোটে, যাকে এক প্রশ্ন দিতে পারি।
    সেই থেকে আমিও একলা, সেই থেকে গাছ দেখা শুরু
    সেই থেকে রাস্তা আটকালে, আমারও কুঁচকে যায় ভুরু।
    সারা দিন আর কথা নেই, শুধু পথ, গাড়ি গাড়ি ভিড়
    এ শহরে ছয় ঋতু ব্যাপী, অজস্র তারকা তিমির
    তাই কথা নিজে নিজে বলা, তাই কথা হাত ছাড়ছে না
    এ শহরে হারালে একবার, কেউ তাকে ফিরে ডাকবে না
    জানা কথা, জেনেশুনে সবই, সাধ করে নির্বাসন নিলে
    ছন্দপাতন অপরাধ পাপ যদি হয় লাঘব সমূলে।


    এ শহরও তেমন আর কই
    এখানেও ভাষা জড়সড়
    ট্রেন থেকে নামলে দেখবে
    সহজে নিস্তার নেই কারও।

    ভাষা তাই দূরে সরে গেছে
    বেলাতট প্রায় মরুভূমি
    এ শহরও অনেক অচেনা
    যতটা জানতে একে তুমি।

    এখানেও পুকুর বুজিয়ে
    ফ্ল্যাট বাড়ি কাটাপোনা প্লট
    এ শহরে জানলা খোলে না
    সবারই মগজে যানজট।

    ভালো আছো, হয়ত ওখানে
    নিজে নিজে কথা বলো, শুনি
    নদীর অপরদিকে ঘাস
    মনে মনে মাঝে মাঝে বুনি।


    যত নষ্ট সময় ছিল
    যত স্পষ্ট ছিলে তুমি
    যতি চিহ্ন যেত দেখা
    তোমার সাবেক বনভূমি

    যখন দু’হাতে আগলাতে
    আমি খুব পালিয়ে যেতাম
    তোমার আগল খোলা দেখে
    যখন সত্যিই হারালাম
    দেখি অনেক অনেক দূরে
    দেখি অনেক তারার সারি
    আমি হাজার পাতায় খুঁজি
    আমার নিজের শহর বাড়ি
    আমার নিজের ভাষায় গাওয়া
    চেনা রাস্তা জোড়া গানে
    বইমেলাতে পুজোয়
    খেলার মোহনবাগানে
    অনেক ছড়িয়ে রাখা সময়
    অনেক জড়িয়ে রাখা শিকড়
    ভিতের শিরায় শিরায় চলা
    শোণিত স্রোতের বাঁধা নিগড়
    যখন উপড়ে তোলা হ’ল
    আমি সজ্ঞানে যাই মরে
    তাই একলা বকতে বসা
    এই ভূতের শহর জুড়ে।



    ছবির চোখে চোখ রেখেছি
    এই পৃথিবী ছবির মতো
    সেই মুহূর্ত যেই ছুঁয়েছি
    প্রস্তরীভূত সম্ভবত-
    ওই ছবিও হাঁটছে পিছু
    ওই কথাটির রাস্তা যেমন
    নির্জনতায় উঁচু নিচু
    গাছের শাখায় দোল খেয়ে রোদ
    সামনে দাঁড়ায় বলতে কিছু।
    হাসলে তখন সে রোদ্দুরে
    হলদে আবীর মারল ছুড়ে
    সেই হাসিটাই আটকে থাকে
    তাতেই যেন বিপর্যস্ত।

    কাজ নেই আর আমার যেন
    ফিরে আসলেও ঠায় তাকিয়ে
    ওই পৃথিবী অপেক্ষমান
    কাল সীমানার কূল হারিয়ে -
    সমুদ্রজল উঠছে ফুঁসে
    সামান্য এক ফোঁকড় পেলেই
    নৌকা ডুবোয় এক নিমেষে।
    ছবির চোখে চোখ রেখেছি
    জলের কাছে খেলতে এসে
    মোচার খোলা নৌকা আমার
    এক ডুবে যায় সৃষ্টি ভেসে।


    ছবিই বটে, অ্যালবামেরা ছড়িয়ে থাকে
    হারমোনিয়াম সারেগামা’য়
    সমস্ত দিন গায়ে হাতে পায়
    কেউ যেন বা উঠছে মাথায়
    পোকার মতো মাঝ-মিটিঙে।

    ছবিই বটে, যা ইচ্ছে তাই
    শব্দ বানায় কী অস্পষ্ট হাতের লেখায়,
    পরীক্ষাতে অচিন প্রশ্ন পড়লে যেমন
    আলপাটকা গপ্প ফাঁদে মধ্যমেধা।

    উপপাদ্য প্রমাণ করতে উকিল আসেন
    চা বিস্কুট সঙ্গদানে ভালোই বাসেন
    তা সত্ত্বেও অনাথবৎ সে অঙ্কখাতায়
    চেনা অঙ্কও নিত্য নতুন জবাব দিয়ে
    চমক দিয়ে তীর্থগামী পঞ্চ কেদার।


    জানো, এই শীতকালে কত পাতা ঝরিয়েছি
    পুরনো চিঠি শব্দরা, অবলীলায় মরে যাচ্ছিল
    তাদের কথা তোমায় একদিন কত না বলেছি-
    ঠিক মনে নেই, ভারহীন হ’তে কি কষ্ট হচ্ছিল?

    ওরা তো অংশ ছিল, রান্নার বাসন, টোল পড়া
    স্যসপ্যানের ভাঙা হাতলটা মাপসই, ভোঁতা ছুরি
    পাতলা চাটুতে রুটি পুড়ে যেত। অভ্যাস মনগড়া
    এই অবসরে ওদের একে একে মনে করে পুড়ি।

    হয়ত একে একে যেত, একেবারেই অথর্ব, বাতিল
    কেউ বা নিজেই হারাত, নতুন চামচ সেটের কিছু
    ফিরতে চেয়েও পারে নি, আমিই কি ছিলাম অমিল
    খুব আটকেছি, যখন সঙ্গ দিতে নিয়েছিলে পিছু।

    এক ফুঁয়ে ঝরিয়েছি সব, লেখা, শব্দ, অক্ষর, জঞ্জাল
    যদিও সহজে কেউ বুঝবে না, ভাগ্যিস এটা শীতকাল।


    আজকে হঠাৎ খুব কুয়াশার ঝাঁক এসেছিল
    সাদা অন্ধকার সকালে কিচ্ছু দেখার জো নেই,
    পিঠে হাত রেখে অন্ধ গাড়িরা রাস্তা পেরোচ্ছিল
    আমার এমন দিনে তোমাকে তো মনে পড়বেই।

    মনে হয় রাস্তার বাতি নেভানর ছেলেটি আসেনি
    হয়ত কাছাকাছি গ্রাম থাকে। সাইকেলে ঠান্ডায়
    সে জায়গা আরোই অগম্য, নাকি তার ঘুমও ভাঙেনি
    দিনের আলোয় বাতি জ্বলে, ফ্যালফ্যাল তাকায়।

    নার্সারি স্কুল থেকে নিয়ে যেতে দাদু দেরি করেছিল
    গেটের দিকে ঠায় তাকিয়ে দেখেছি স্কুল প্রায় ফাঁকা
    ঘামছিলাম। সব্বাই ভুলে গেছে ভেবে কষ্ট হচ্ছিল
    বাতিগুলি দেখে সেই কথা মনে পড়ল একা একা।

    ঘুমোনর সময় হয়ে গেছে, অথচ নেভানর লোক নেই
    কবে যে ফেরাবে আমায়, নাকি শেষ অবধি প্রবাসেই?


    আজকে কি ফের মনখারাপের দোকান খুলছ
    কবেকার সেই স্কুল বাক্সের নতুন করে ধুলো ঝারছ
    চলতে চলতে থমকালে ট্রেন ওই শহরে ঘোর কুয়াশায়
    শব্দভেদী বিষাদ বাঁশি প্রাণের মায়া ত্রাণের আশায়।

    অনেক কিছুই নেই যা আছে, থাকলে হয়ত দেখতেও না
    যা রয়েছে অপেক্ষাতে, তাকে ঠিকঠাক দেখছও না
    একটা খুঁজতে যায় হারিয়ে কাছে পিঠের অনেক কিছুই
    দিনশেষে স্রেফ সংখ্যা মাত্র রিঠে ফলের গুলি কুড়োই।


    তবে তুমি বললে কেন শীতের পাতা ঝরার কথা
    এমন করে সাত সকালে বিষাদ আনলে ফের অযথা
    আজকে আবার সারাদিনের অফিস গ্লানির মধ্যিখানে
    আচমকাই দেখছি যেন সুর বসাচ্ছ নতুন গানে
    এক গোড়ালি জলের মধ্যে রোপন করা ধানের চারা
    পাপক্ষয়ের দিন কাটাচ্ছে স্কুলের জামায় বুড়োহাবড়া।

    চামড়া এঁটে বসছে জামা, এখন কি আর এসব মানায়
    মনখারাপের ধর্মঘটে আইন অমান্য পাড়ায় পাড়ায়
    ক’দিন পরেই সরস্বতী সাজের শাড়ির বাহার নিয়ে
    বান্ধবী কি আনবাড়িতেও ফোন করবেন আগল দিয়ে?
    নাকি একলা শব্দ খেলা উলের গোলা বারান্দাতে
    যায় গড়িয়ে প্রায় অলক্ষ্যে ছন্দ বোনে গভীর রাতে।



    কে যে বোনে, কেই বা গোণে মধ্যিখানের এক পৃথিবী
    দিন যাপনের রঙ মিলান্তি ইস্কাপনের সাহেব বিবি
    জোড়ায় পেলে ভাগ্য খোলে, লড়তে হলে খুব ভোগান্তি
    টেক্কাটি যেই দান তুলেছে, তুলকালামে ঘোর অশান্তি-
    ভাল্লাগে না, ভরসন্ধ্যার হাওড়া ব্রীজের রেলিং থেকে
    ঘোলা গঙ্গায় কালো নৌকা যাচ্ছিল কি আমায় ডেকে?
    হাঁটতে হাঁটতে আহিরিটোলা ঘাটের কাছে বড় ঠাকুর
    সব কথা কি যায় ভাসানো, কয়েকটি তার গোপন থাকুক
    বৃষ্টি ভেজা রোদে পোড়া সস্তা মূর্তি কোন আনাড়ির
    এক পুরনো ভর্তি খাতার নাম দিয়েছি “যমের বাড়ি”।

    যতদূর এসেছি মনে করি, সেই পথের দু’ধারে
    অজস্র চারা গাছ বসিয়েছি, যত নদী পার হই
    সেখানে নৌকা রাখি, সাঁকো আঁকি, ঘাট পাড়ে
    বট ঘিরে পাখি ও শিশুদের সমবেত খেলা হৈ চৈ।
    এছাড়াও জনপদ, কয়েকটি ছোট গ্রাম, দীপ জ্বালে
    গঞ্জেরা আলো ফেলে উৎসবে ডাকে, মেলা টেলা বসে,
    শিল্পাঞ্চলে কারখানা, দুইবেলা শাঁখের শব্দে সাইকেলে
    টিফিন বাক্স ঝুলিয়ে মানুষেরা জীবন প্রার্থনায় আসে।
    স্কুলে স্কুলে ধারাপাত, কলেজের দেওয়াল পত্রিকারা
    ভরে ওঠে আঁকিবুকি লিখে ছবি এঁকে। শহরেও যায়
    কেউ কেউ, ডানায় বাতাস পায়, সৌভাগ্যবান তারা -
    যারা সারাদিন ফাৎনার দিকে ধ্রুবতারকার মতো চায়।
    তার এক প্রান্তে আছো তুমি, অন্যটিতে আমি। বুড়োবুড়ি।
    অভ্যস্ত হয়ে, ক্ষয়ে এত সহজে কি পুরনো হতে পারি?

    অতদূর ভাবতে পারি না,
    বারবার সুতো ছিঁড়ে যায়
    কাটা ঘুড়ি, চিঠি, বালি ঘড়ি
    ইতিহাসে লেখা শুধু ক্ষয়।
    যত গড়ে, সব ভেঙে পড়ে
    বেলাভূমি বালির প্রাসাদ
    সূর্যাস্ত ক্ষণ নিয়ে জেগে
    অন্ধত্ব স্মৃতির আস্বাদ।
    তোমার খেলার মাঠ বড়
    বোধ হয় পাখির চোখে দেখা
    আমি তো অঙ্কে নই দড়
    সযত্নে খাতা লিখি একা।
    সে খাতায় লেখা খুটিনাটি
    সে খাতায় লেখা ঘটনারা
    যা তুমি সহজে গেছ ভুলে
    তারও থাকে সাধ মনগড়া।
    সেও চায় বেড়াতে পৃথিবী
    স্কুল, গ্রাম গঞ্জ কারখানা
    যায় না, রাস্তা ভোলে যদি
    তবে বুঝি চিঠিও পাবে না।
    এই ভালো, শহর সামলে
    আগলাই মহাফেজখানা
    যা পাঠাও সবই থাকে লেখা
    যা তুমি মনেও রাখবে না।


    ভিতরে অনেক ভিড়
    কঠিন আলোর আবরণ,
    অনেক পরিশ্রমেও সামান্য গভীর
    মৃদুতম অন্ধকার খুঁজে পাওয়া দায়।
    নতমস্তকে দু’চোখ বন্ধ রেখে প্রার্থনা করে গেছি
    বেঁচে থাকা কালীন ফাঁকতালে সব্বার চোখের আড়ালে
    যদি অন্তত এর কিছুটা হারান যায়।
    পারছি আর কই, ঘাড়ে আরও বোঝা চেপে বসে
    আরও আলো, আরও ক্লান্তি নিয়ে দিন গুজরান
    ঠেসাঠেসি ঘেঁষাঘেঁষি কলের পুতুল জলের গেলাস,
    ফুলদানি, বকলমে পোশাকেরা সার দিয়ে
    স্মৃতিসৌধ দেখতে এসেছে -
    আমি যার মতো হ’তে চাইতাম, এই ফাঁকে দেখি
    সে সত্যি সত্যি সারারাত কুকুরদের বিস্কুট খাইয়েছে।


    কোথায় পালাতে চাও তুমি, ফেলে আস যাকে-
    কোথায় পালাবে, প্রিয় ভাষাভূমি এরই মাঝে
    বাক্য আকাঙ্ক্ষা আতুর হয়ে পথ চেয়ে থাকে।
    ঋতু পরিবর্তনে সাড়া দেয়, বেশ করে সাজে
    কাজে বা অকাজে উৎসব পার্বণে দেখেছি শখ করে
    দল বেঁধে বইমেলা গিয়ে তেলেভাজা কিনে আনে।
    তুমি, জানো তার মানে?
    তুমি জানো, কতদিনে বছর পুরনো হয়?
    কতক্ষণে, ঠিক কত পিঁপড়ে প্রজন্ম পার হয়
    নিড়বিড়ে এ শহরে জ্যামে ভরা রাস্তায়
    টইটম্বুর ভিড়ে ঠাসা বিরক্তিকর বাসগুলি
    অযথা সামান্য পথ, অন্তহীন সময় কাটিয়ে?
    তবু আশা থকে তুমি নিজে থেকে ফিরবে একদিন
    সে আজকেও সেজেছে, বইমেলা শুরুর দিনে
    কড়কড়ে চোখে, সে দেখছে তাকিয়ে।


    জানি, সুখে আছো,
    সুখে সেই থাকে, যে অপেক্ষায় -
    থেকে থেকে দিন গুজরান করে
    যা খুশি লেখে, তুলে আনে ধুলো মাটি থেকে
    গোল গোল কারুকার্যময় নুড়ি।
    সর্বাঙ্গে বৃষ্টি মাখে, পুরনো নোনা ধরা দেওয়ালেও
    সে আঁচল সরিয়ে শুস্ক স্তন খুলে
    বাঁচিয়েছে বটচারা, তার সবুজ পাতাদুটি
    ইস্কুল বাস এলে সকালের দিকে তিরতির করে কাঁপে
    সে পাশ ফিরে ঘুমোয়,
    সুস্বপ্নে উড়তে থাকে ঘুড়ি।


    সুখ বলো, সুখ,
    পাড়ে বাঁধা যে নৌকা দুলছে আজকে সামান্য হাওয়ায়
    কবে তার তলা ফেঁসে যাবে ঠিক নেই,
    তারও আগে চর জেগে আটকেও যেতে পারে সে।
    ক্ষয় বলো, ক্ষয়
    উচাটনে বেলা বয়ে যায়,
    আচমকা খোলে জল দেখে ভয়
    সামান্য ঝড় জলে, উড়ে আসে খবরের কাগজে
    তোমার শহরের কথা এলে - ভয়
    উন্মুখ স্নায়ু নিয়ে টানটান ভাঙা নৌকাটি দুলছে
    দূর থেকে নক্ষত্র দেখা চোখে, তাকে সুখ মনে হয়।


    কে কতটা ভালো আছে, কে জানে?
    সারাদিন উপোসে কাটিয়ে পুরো ঠাকুরদালান
    ধুয়ে মুছে আলপনা দিয়ে ঠিক বিকেলের আগে
    লক্ষ্মীর পদচ্ছাপ আঁকতে বড় ভালো লাগে কারও।

    সকাল থেকে নাওয়া খাওয়া ছেড়ে
    প্রেসের দরজায় হত্যে দিয়ে পড়ে থেকে থেকে
    শেষ অবধি সন্ধ্যার আলো জ্বলে গেলে
    কয়েকটি নতুন বই যেই টেবিলে জন্মালো-
    সেদিকে তাকিয়ে কারও পলক পড়ছে না।

    কারও ছুটি শুরু আজকেই-
    সন্ধের ট্রেনে চেপে জানলায় কপাল ঠেকিয়ে
    বাইরের অন্ধকারে আলো দেখে দেখে
    ঘুম আর কিছুতে আসে না।
    রাত পোহালেই প্রিয় শহরটি
    ফোন থেকে জ্যান্ত হয়ে ফুসফুসে ঢুকে যাবে
    একেবারে বুঁদ হয়ে ডুবে যাবে
    সেখানে কখনও নৌকা- একলা ভাসে না।


    আমি বহু ঘুরে বেড়ালাম ক’দিন
    কম শীতে এ শহরে ভিনদেশ থেকে যত রঙ আসে
    তাদের জমায়েত ছিল। কলকাকলিমুখর
    কথাগুলি, দিনগুলি রাতগুলি মায়াময় করে রাখে।
    শহরের আর কাজ কই, পিঠেপুলি শেষ হতে না হতেই
    বইমেলা শুরু হয়ে যায়।

    দেওয়ালে দেওয়ালে ছবি, নতুন নতুন বই
    বিষয় বাহারে মরশুমি ফুল হয়ে সেজে ওঠে
    শহরের বিলাস ব্যসন।
    যত পথ চলা হয়, যত কথা বলা হয়, যত শোনা
    তার ছবিগুলি শহরের নিজস্ব প্রকাশন -
    কথোপকথন ঢঙে তোমাকে বলতে গেছি বারংবার।

    সব কথা, সব ছবি, চাঁদ ধরে রাখে,
    সবকিছু নিয়ে চিঠি গেছে, ডাক দেবে পিওন জ্যোৎস্নার।


    অলৌকিক কিছু হোক, কি বলো,
    বিকেলের চায়ে এক্ষুণি জ্যোৎস্না নামুক
    পথচলতি অজস্র শামুক পাকাবাড়ি ছেড়ে
    বড় রাস্তায় আজ গড়াগড়ি খাক।

    চতুর্দিক জলে ডোবা,
    ইঁটের গায়ে বইয়ের মলাট আটকান
    তাতে ধীরে ধীরে পা ফেলে কুমীরডাঙা হচ্ছে
    যে মলাটে পা পড়ছে সে লোকটা
    সোজা বুকের মধ্যে ঢুকে যাচ্ছে
    মস্তিস্কে খুটখাট লিখছে টাইপ করছেন লেখক।

    জানতে চাইছি না, বুঝতে চাইছি না, শুধু শব্দ হয়ে যাক
    যেভাবেই হোক, যা খুশি, শিলাবৃষ্টি, সুনামি, ভূকম্প
    খোড়ো চাল উড়ে যাক ঝড়ে, হারাক কথার সব খেই
    ফুটিফাটা গরম, সব অঙ্ক ভুল, জীবাণুনাশক স্বপ্ন -
    যার, একলা পরীক্ষাগারে একটাও চালু কলম নেই।

    কিচ্ছু হচ্ছে না, কারা পায় অলৌকিক যোগ
    বেশি আর কি চেয়েছি বলো, ওই, সামান্য ঘোড়ারোগ।


    বেশ আছো, পরোয়া কিছুর নেই
    কলমের ডগায় ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাত কুয়াশা
    অপেক্ষায় থাকে, যা চাইছ তক্ষুণি এনে দেয়-
    বোঝো না তো, এদিকে পান থেকে চূণ খসে গেলে
    সবটুকু পান্তা আলুনি হয়ে যায়।

    বেশ লাগে, দেখতে তোমাকে,
    মনগড়া পৃথিবীতে রাংতার ঢাল তলোয়ার নিয়ে
    মেঘের রাজত্ব এক। রাজার এক পানের দোকান
    সূর্যাস্তের পর থেকে যাবতীয় পুরনো হিন্দি গান
    বাজলেই লোকে বাড়ি ফেরে -

    সত্যি, কীভাবে বাঁচো বলো, এতদিন বইমেলা ছেড়ে?


    যত রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে, তার গণনা হয় না
    তবু, মাকড়শার জাল, জঙ্গলে গাছের সারির মধ্যে
    যে কোনোটা ধরে এগোলে, সে ধীরে ধীরে পথ বাতলায়
    চেনাশোনা, ভাষা সড়গড় হলে।
    ক্রমশ সহজ হয় যাতায়াত, আবার বহুদিন পরে
    তাকে ফের মনে পড়ে, ফেলে আসা কথা নাড়াচাড়া -
    সে রাস্তা বেমক্কা হারালে, আমাদের এমনই বরাত।

    হয়ত ব্যথায় নীল, হয়ত প্রচুর গরমিল
    কাছে থেকে হিসেব কষতে গিয়ে একদিন
    চায়ের প্রস্তাব আসে, কিছু পথ নির্জন দু’জনে
    সে একবার হাত রাখে হাতে, কিছুক্ষণ পরম্পরাহীন
    স্বগতভাষণ বা আচমকা বৃষ্টির দিন -
    গাছগুলি পাতা থেকে টুপটাপ জল ছিটিয়েছিল

    প্রতিটি প্রিয় রাস্তা এক একটা সিঁড়ির মোড়ে
    আমাকে নামিয়ে দিয়ে,
    একলা ফিরে গিয়েছিল।


    বারবার ভুল করো তুমি -
    রাস্তার দরজা হয় না, জানলা দেওয়াল নেই
    দুইদিকই খোলা, মাঝে মাঝে নদীনালা আসে, সেতু
    তাই কিছু ঘটাং ঘটাং ট্রেন, শব্দের অছিলা যেহেতু
    আলো থাকে দিন রাত্রির, সাদা কালো, কখনো রঙিন
    কিছু পোষ্য কুকুর বিড়াল গরু মোষ পাখিরা
    বেশ কিছু যান চলাচল সংসার ছিরিছাঁদহীন।

    সে তোমাকে ডাকতে যায় নি,
    তুমি নিজে নেমে এসেছিলে,
    সে কখনও প্রশ্ন করে, নিজে নিজে কথা বলেছিলে
    তাকে পরিচিতি বলি, হয়ত সামাজিকতার দায়
    সে দেখেছে, এক গন্তব্যে পৌঁছনর পর
    তোমার পরিচিতজন তোমায় ভিতরে নিয়ে গেলে
    একজন এসে তোমার অজান্তে দরজা বন্ধ করে দেয়।

    তুমি সে রাস্তায় আর কখনও ফিরবে না জানি-
    যতটুকু বলো, তাই শুনি, বাদবাকি থাকে অপেক্ষায়।


    জানি সব দোষ তো আমারই, অথবা স্বভাবজাত
    পথ বা গন্তব্য যা কিছুতে সামান্য শান্তি পাই
    পরলোকে ঘুড়ি উড়ে গেলে, যেহেতু মাথার ভিতরে
    দপদপ করে ঘোড়া, তার নীল স্বপ্নের দেশ থেকে
    কাজল পৃথিবীকে দুরন্ত দেখায় জেনে কীভাবে
    খুঁজে খুঁজে মানুষের শরীরে ঢুকে পড়ে।

    জানি, কীভাবে সাধারণতম সামান্য রাস্তায়
    একটি সামান্য ক্ষত যান চলাচলে দগদগে ঘা হয়ে যায়
    দুরন্ত গাড়িরা ছুটে যায় প্রথম প্রথম, শিশুটি চেঁচায়
    চেঁচাতে চেঁচাতে বেড়ে ওঠে। বেহিসেবী অচেনা দ্রুতগামী
    গাড়িকে সে উলটে ফেলেছে দেখি।
    সব দেখেশুনে রাস্তাটি স্থাণুবৎ।
    শোধ নিয়ে ক্ষতচিহ্নটি আরও লাল দগদগে। হাঁফায়।


    প্রতিটি যন্ত্রণা দিনে এমন একাগ্র হয় মানুষ
    হেরে গিয়ে একলা বেলাভূমি জুড়ে দাঁড়ায়
    মধ্যরাতে তীব্র তেষ্টায় স্বপ্নের লালচে ফানুস
    কিছুটা ওপরে উঠে কেতরে ছরকুটে পুড়ে যায়।

    যন্ত্রণা একাকী। মন্ত্রী সান্ত্রী সেনাপতি লোকলস্কর
    তটস্থ সারাক্ষণ। কান চুলকিয়ে গর্দান কে খোয়াবে
    যতদিন যন্ত্রণা থাকে, সবকিছু রুটিমাফিক বড়জোর
    বৃষ্টিতে বারান্দা ভ্রমণ। কথা এলে বালিশে শোয়াবে।

    পূর্ণিমা যন্ত্রণা দিনে একটাও তারকা নেই। নির্ঘুম।
    জরুরী অবস্থাকালীন লোকে কাজেও বেরোচ্ছে না
    স্বাভাবিক খিদে তেষ্টার দল দেশে গেছে। যাত্রা মরশুম
    যে কথা পাঠাব ভেবেছি, জানাল সে কাজে যাচ্ছে না।

    চুপ থাকি। একাগ্র মানুষ আমি ঘনঘোর যন্ত্রণা দিনে
    বুহুদিন এমন কাটিয়ে, বলেছে সে, তোমাকেও চেনে।



    আমাদের বারান্দা থেকে দেখা যায় ‘কবিতা রাই’য়ের ফ্ল্যাট। ভাবছিলাম, ওর বাড়িতে যত বই আছে - সবই কবিতার বই। রান্নাঘরে কবিতা খাদ্য, আলমারি ভরা কবিতার পোশাক। ছেলেটা ক্লাস ফোর কি ফাইভে পড়ে। বর্ণপরচয় থেকে তাকে কবিতা পড়ান। সোসাইটিতে সামনা সামনি দেখা হলে কবিতা স্মিত হাসেন। কবিতা সম্পর্কে এর বেশি কিছু জানা বোঝা সঙ্গত নয়।


    এর মধ্যে একদিন সিনেমা গিয়েছিলাম। যত সমস্যা, প্রেম, রোগভোগ, দিনগত পাপক্ষয় সবটাই ঘন্টা তিনেকে আটকান। এদিকে মাটিতে বড় বড় শক্ত ঘাসের জঙ্গল থেকে গাছতলার শীতলা পুজোর চোরাই নকুলদানা ঠেলে তুলে আনতে গ্রামের সব জোয়ানমদ্দনারীশিশুবৃদ্ধ পিঁপড়েরা জেরবার। অন্য কোথাও কেউ হয়ত আমাদের সারাজীবনের পুরোটাই আধঘন্টার সিরিয়াল দেখে তবে রান্না চড়াবে।

    তার কথা মনে করেই ফুর্তিফার্তা যেটুকু।


    প্রথম প্রথম তোমায় দেখে কিছু বলিনি পাছে
    বড্ড আস্তে কথা বল, যেন আসতে বল কাছে
    গাছের ফাঁকে সন্ধ্যাবেলা আলোর টানাটানি
    ঘুমপাড়ানি গান শোনাচ্ছ বাসায় শাবক আছে।

    আমার তেমন রেস্ত কোথায়, সময় রাহাজানির
    ওইদিকে আর তাকাতে নেই - শুধুই যে হয়রানি
    চিৎকৃত আর ধিক্কৃত দিন শরীর পোড়া শোকে
    লোকাল ট্রেনের হাতল ছাড়লে কী হয় তাও জানি।

    আস্তে যেতে দুই বেলাতেই দেখেছি আড়চোখে
    ওই পথটুকু পার হ’তে চেয়ে হারায় কেন লোকে
    আজকে না হয় কাল বা পরশু থামব আমি জানি
    যে আস্তে বলে, আসতে বলে সন্ধ্যাবেলার ঝোঁকে।


    একটা পাতাই লেখার রসদ
    দুই পাতাতে ভাত
    তিনের গেরো কাটলে তবে
    চার দেওয়ালের ছাত।

    তাইতো শুধু জাবর কাটা
    তাতেই আস্তে বলি
    বুনোফুলের গোপন ইচ্ছে -
    যদি পুষ্পাঞ্জলি।

    সশব্দে কি ভাঙে সবই
    শব্দেই হয় লেখা
    চিরকালীন নৈ:শব্দেই
    “তুমি” লিখতে শেখা।


    প্রিয় বন্ধুর ফোন বেজে বেজে থামে বারোমাস
    সংবাদপত্র সাজে তাজা দু:সংবাদে প্রতিদিন
    অথবা খোলামকুচি রেশনে মিলবে কচি ঘাস
    এর মধ্যে ক্ষতচিহ্নগুলি স্পষ্টতর অধুনা রঙিন।

    মানুষ তখনই ফেরে, ঘরোয়া পোশাক চড়ে গায়
    সারাদিনে যেখানে সে গুমচোট খেয়ে দৌড়েছে
    সেইখানে ব্যথা অনুভূত, শ্বাস চাপে যেন যন্ত্রণায়
    ওষুধেরা থাকে, শেষ অবধি যারা ঘুম পাড়িয়েছে।

    অনেকের চেয়ে ভালো আছে - ভেবে দেখেছে সে
    ইচ্ছেমতো কেনাকাটা আয়ত্তে সুস্বাস্থ্য পরিবার
    নিয়মিত পত্রপত্রিকারা দলবেঁধে জমতেই আসে
    বৎসরান্তে সবান্ধব ভ্রমণ পাহাড় বা সমুদ্রধার।

    প্রতিদিন মরে যেতে যেতে স্বপ্নে অন্ধকার হ’লে
    দেখেছে দু’একটা পুরনো কবিতায় আলো জ্বলে।


    তুমি বলতে না, “দূরত্ব অভ্যাসমাত্র,
    নক্ষত্রেরা বহুদূরে থাকে যাতে সে
    পৃথিবীকে তার পূর্বজন্মকথা
    কিছুটা শোনাতে পারে?”

    তুমিই তো বলেছিলে- “চাইলেই দেখা যায়
    যদি চেয়ে থাকো কিছুক্ষণ
    চাঁদ চায় বলে জোয়ার ভাটায়
    দোলে আমাদের নৌকারা মোচার খোলার মতন। “

    প্রতিদিন এ পৃথিবীতে সম্মিলিত প্রাণীরা
    কোটি বৎসর বেঁচে থাকে।
    দেখা হলে ফের কোনও নক্ষত্রজন্মে -
    আমি নয় সে কথা শোনাব তোমাকে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ জানুয়ারি ২০১৮ | ১৪৩৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • kumu | 192.77.52.157 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ০৫:২২64818
  • বিস্ময়ের শেষ নাই!!!!!!!!
  • de | 69.185.236.54 (*) | ১১ জানুয়ারি ২০১৮ ১১:০৪64817
  • বাঃ!
  • ফরিদা | 11.38.4.13 (*) | ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৪৯64819
  • থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু, দে'দি, কুমুদি....

    এটা চালাতে চাইব, দেখি।
  • ফরিদা | 11.38.4.13 (*) | ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:৪৯64820
  • থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু, দে'দি, কুমুদি....

    এটা চালাতে চাইব, দেখি।
  • Du | 182.58.104.33 (*) | ১২ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:১৮64821
  • কি সুন্দর! একটু একটু করে পড়ছি।
  • Swati | 60.93.104.244 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:১৫64822
  • তারপর?
  • শিবাংশু | 113.249.4.39 (*) | ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ ০৭:২৮64823
  • উওহ মেরে ঘর কা করে কসদ জব তো সায়ে সে,
    কয়ি কদম দর-ও-দীওআর চল কে দেখতে হ্যাঁয় ।।

    ফরাজ আসীর হ্যাঁয় উস কা, কে উওহ ফরাজ কা হ্যাঁয়,
    হ্যাঁয় কৌন কিস কা গিরফ্তার, চল কে দেখতে হ্যাঁয় ।।

    (আহমদ ফরাজ)
  • ফরিদা | 37.56.140.99 (*) | ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৫:০২64824
  • দু, স্বাতী, শিবাংশু দা,

    থ্যাঙ্কু :)
  • কান্তি | 55.248.59.91 (*) | ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:১৬64825
  • একটু দেরীতে পড়লাম এইকাব্য মালিকা। দোলা দিল। ভাবালো। অতীতের অনেক ছবিকে ফিরিয়ে আনলো। ভাল লাগলো। তবে অল্প অল্প কোরে পাতে পেলে আরো ভাল স্বাদ নেওয়া যেত। ধন্যবাদ।
  • ফরিদা | 11.38.4.8 (*) | ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ০৬:২৫64826
  • কান্তি,
    এটা এই জানুয়ারিতেই শুরু হয়েছে, পূর্ব-প্রস্তুতিবিহীন, গন্তব্য উদাসীন হয়ে, কিছুটা রোজনামচা, কিছু স্মৃতিচারণ, কিছু অপ্রসঙ্গ ছুঁয়ে যাচ্ছে।

    আমার হাতে বিশেষ কিছুই নেই, ছেড়ে দিয়েছি, এ যা পারে করুক, যেখানে খুশি যাক। শুধু এ যা যা বলবে তাই লিখব -এইরকম এক আলগা প্রতিস্রুতি দেওয়া আছে, তাও ক'দিন তা রক্ষা পাবে সেটাও অজানা। হয়ত সে মাঝখানে একেবারে চুপ হয়ে যাবে, হয়ত বা আমি কিছুতেই ওর কথা লিখব না।

    থ্যাঙ্কু, অনেক।
  • de | 24.139.119.172 (*) | ১৮ জানুয়ারি ২০১৮ ১০:০৮64827
  • ভর দুপুরের মন খারাপ!
  • de | 69.185.236.56 (*) | ৩১ জানুয়ারি ২০১৮ ১২:১২64828
  • ফরিদার কবিতা আমার আবৃত্তি করতে ইচ্ছে করে -
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৪:২০64829
  • “দূরত্ব অভ্যাসমাত্র,
    নক্ষত্রেরা বহুদূরে থাকে যাতে সে
    পৃথিবীকে তার পূর্বজন্মকথা
    কিছুটা শোনাতে পারে?”

    এটা পড়ে লাইনগুলো সেভ করে রাখব ভাবছিলাম। রাখলাম।

    তারপরেই দেখি এই চার লাইনও তো ছাড়তে পারছিনা। রেখে দিলাম।

    “চাইলেই দেখা যায়
    যদি চেয়ে থাকো কিছুক্ষণ
    চাঁদ চায় বলে জোয়ার ভাটায়
    দোলে আমাদের নৌকারা মোচার খোলার মতন। “

    আর তারপর,

    প্রতিদিন এ পৃথিবীতে সম্মিলিত প্রাণীরা
    কোটি বৎসর বেঁচে থাকে।
    দেখা হলে ফের কোনও নক্ষত্রজন্মে -
    আমি নয় সে কথা শোনাব তোমাকে।

    লিন্কটাই রেখে দিলাম।
  • Tim | 140.126.225.237 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৬:৫৮64831
  • পড়ছি ফরিদা, নজর রাখছি এই পাতায়। ঃ-)
  • San | 160.242.64.68 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৭:০২64832
  • এই পোস্টটা পড়ে মনে হল এখানেই শেষ হবার ছিল।
    ফরিদাদা, ধন্যবাদ।
  • রিভু | 117.0.228.218 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৭:২০64833
  • অনেকের চেয়ে ভালো আছে - ভেবে দেখেছে সে
    ইচ্ছেমতো কেনাকাটা আয়ত্তে সুস্বাস্থ্য পরিবার
    নিয়মিত পত্রপত্রিকারা দলবেঁধে জমতেই আসে
    বৎসরান্তে সবান্ধব ভ্রমণ পাহাড় বা সমুদ্রধার।

    প্রতিদিন মরে যেতে যেতে স্বপ্নে অন্ধকার হ’লে
    দেখেছে দু’একটা পুরনো কবিতায় আলো জ্বলে।
    ---------------------------------------------------
    সাইলেন্স। শেষ থেকে পড়ছিলুম। পুরোটা পরে পড়বো।
  • ফরিদা | 116.212.178.13 (*) | ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১২:২২64830
  • এই লেখাটা এতটাই। এখানেই শেষ। মানে ১ আর ২ এর পরেও থাকবে, কথা বলবে টলবে, হয়ত লিখবে অন্য কেউ। সিনেমায় যেমন হয় আর কি, সিনেমার শেষেও চরিত্ররা থাকেন, রান্না টান্না চাপান, খান দান, সুখদু:খের গল্প হয় সিনেমায় তা দেখান হয় না।

    যতদিন দূরত্ব থাকবে, ততদিন বিন্দু বিন্দু আলোপথ নিয়ে আখ্যানমালা তৈরি হবে, ছিঁড়ে পড়বে ঝড়ে বৃষ্টিতে, গড়েও উঠবে ফের। সে লেখা হোক ছাই না হোক সে পরোয়া তারা করবে না।

    যারা পড়লেন, মন্তব্য করলেন তাদের ধন্যবাদ জানাচ্ছে ১ আর ২।
    ধন্যবাদ, আমারও।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লড়াকু প্রতিক্রিয়া দিন