এটাই নাকি চিত্রকর গ্রাম। ভরতপুর। মোটে পনেরো ঘর চিত্রকর। হুড়মুড় করে ঢুকে পড়তে গেলাম প্রথম বাড়িতেই। সঙ্গে দেবাশীষ মুখার্জি ভাই--- আগে এসেছে কিনা। বলল--দাঁড়ান ওই খানটায় , অনিলকে ফোন লাগাই। একটা পুরোনো গরীব কুয়ো --ডুমুর অশথ গাছের শেকড় জল ছোঁয়ার জন্য প্রতিযোগিতা করছে। ঝুঁকে দেখতে দেখতেই ডাক এল। গাঁয়ের একটি সিমেন্ট বাঁধানো দাওয়ায় ওরা ছবি বিছিয়ে দিচ্ছে। এটাই নিয়ম। বাইরের কেউ এলে পনেরো ঘরে কানাকানি করেই খবর পৌঁছে যায়--যার যেটুকু পুঁজি এনে সাজায় সেই দাওয়ায়। ... ...
আমরা যে যার কাজে ব্যস্ত, উল্লাস উল্লাসের। বড়ভাই কাস্টমসে চাকুরি করেন, দু হাতে আয় তার। তাই ওর ভবিষ্যত নিয়ে আমরা কেউ ভাবি না। মাঝেমধ্যে অবসর পেলে আমি ওর রুমে ঢু মেরে আসি। কখনও কখনও বলে- কাকু আসো, তোমাকে একটা নতুন আবিষ্কারের কথা বলি। বেশিরভাগ সময় বলত, কাকু, এখন বিরক্ত করো না-তো। অন্যসময় এসো। একমাস পর সে বিড়ালটি প্রদর্শনীর ব্যবস্থা করল। বেঁচে আছে দেখেই বড় ভাবীর আনন্দ যেন আঁটছে না। কিন্তু এ কেমন বেঁচে থাকা? বিড়ালটির শরীর শুকিয়ে একেবারে কাঠের জো অবস্থা। ... ...
“পরব হল, এই ধর আমোদ, নাচ গান। সোহরাইতে ঠাওর করিসনি, কেমন নাচ করে বিটিছেলারা?” ধাতুরির ফ্যাসা কণ্ঠে চঞ্চল জীবের কামজ্বর চিতাধূমচালিত চৈত্রের বিশুদ্ধ পাতার ন্যায় অন্তর্হিত হইবার পূর্বে যেরূপ অবশেষ রাখিয়া যায়, ধাতুরি সেমতো চক্ষু উন্মীলন করিয়া বুধনিকে অবলোকন করিল, সে দংশনে শীতপত্রের বিশুষ্কতা, ফলত নিষ্ফল—“এই, এই যে সারদাপ্রসাদ আর বুধনি, উয়াদের বাপলা হবেক সব্ব অগ্রে। উয়ারা বর বউ হবেক, গাঁও জুড়ে বসবেক ভোজ, উয়ার অন্তে আসবেক বারুনি পরব। কিত্তে মজা! মজাই মজা!” হাহাকার করিয়া বুড়া বাতাস ধাতুরির জিহ্বা চুম্বন করিল। ... ...
কারোর মনে হতে পারে কলকাতা শহরটি - উত্তর দক্ষিণে লম্বাটে, পূর্ব-পশ্চিমে কম চওড়া শহরটি তার জালিকাটা রাস্তা ও জায়গাগুলি সমেত - যেন একটি বৃহদাকার জাল যে জালের মধ্যে কোন মানুষ পড়ে যেতে পারে, পড়ে গিয়ে কলকাতা শহরের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে! এরকম হয়ত পুরোটা নয় যে এই জালের কেন্দ্রে মিনোটরের মতো কেউ আছে যার কাজই হল এক এক করে কলকাতার মানুষদের শুধুই গ্রাস করে যাওয়া আর সেই কাজ থামানোর জন্য থিসিউসের ম্তো কারোর দরকার, শহরটা হয়ত অতখানি কুটিল বা বিভ্রান্তিকর নয়, বিভিন্ন মানুষ তো বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন কারণে কলকাতায় এসেছে, অনেকেই জন্মাবধিই এই শহরে থেকেছে যে শহর তাদের আশ্রয় দিয়েছে, ফলে সব চরিত্রই এই শহরের মধ্যে হারিয়ে যায়নি, কেউ নিশ্চয়ই সেখানে নিজেকে খুঁজেও পেয়েছে। কিন্তু এমনও বোধ হয়, এই শহরের এক কালো আত্মা আছে যাকে পুরোপুরি বুঝে ওঠা যায়নি, যে নিজেকেও ক্রমাগত বদল করেছে, যে এক কুহক তৈরী করে যার নিয়ন্ত্রণে চরিত্ররা থাকতে বাধ্য হয়; মূলতঃ এই শহর হয়ত ক্রীতদাস -ক্রীতদাসীদের শহর হয়েই রয়ে গেছে, সেই সময় থেকেই যেদিন থেকে গ্রামগুলো শহর হিসেবে গড়ে উঠেছে, ফলে কিছু মানুষ ও মানুষী এই শহরের কালো আত্মার গ্রাস থেকে চেষ্টা করেও মুক্ত হতে পারেনি। ... ...
তিনিও হাতে তুলে নিলেন অপরাজিতা। অপরা অমলতাসের বিভূতি দিলেন বসুধাকে। রিমঝিম ধ্বনি, সাজলো পরমা প্রকৃতি। চটজলদি প্রদোষ আর যামিনী আঁকলেন, মোমরঙের সাথে সামান্য গর্জনতেল মিশিয়ে। মোহন-উতল সরস্বতীর ঢেউ। ঊষাদেবীর পোষা মুকুর এসে বসলো মঙ্গলঘটের চূড়ায়। নিপুণ তান, শুদ্ধস্বরে লেখা হল দর্পণমুরলী এবং আয়ুষ্মতী কোজাগরী। শিশুরা আবার বেরিয়ে এলো ঘর থেকে। স্কুলের আলপথগুলি মেলে দিল পেন্সিলের ডানা। কিশোরী সাজলো সরলঅঙ্কের আভায়। ... ...
সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটকের উত্তরসূরী হিসেবে বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গৌতম ঘোষ, উৎপলেন্দু চক্রবর্তী, অপর্ণা সেন বা আরও পরে ঋতুপর্ণরা যখন আলোচনায় চলে আসেন, তখনও কিন্তু কিছুটা ব্রাত্যই রয়ে যান তপন সিংহের মতো কিছু পরিচালক! হ্যাঁ, তপন সিংহ হচ্ছেন সেই পরিচালক যিনি এপার আর ওপারের মাঝের সেই সবুজ, স্নিগ্ধ এক ভূখন্ড যেখানে রয়ে যায় অদ্ভুত এক ভালোলাগা এবং সে ভালো লাগা কেবলই এন্টারটেনমেন্টজনিত ভালো লাগা নয়, সে ভালো লাগায় রয়ে যায় চিন্তার কিছু স্পেস, শিল্পের কিছু অনিবার্য শর্তপূরণ! সম্ভবত 'দ্য হিন্দু' পত্রিকা তাঁর 'দাদাসাহেব ফালকে' পাবার পর তপন সিংহের সিনেমা নিয়ে লিখেছিল – 'Complex ideas through a simple narrative.....!' হ্যাঁ, সত্যি তিনি পারতেন। তাঁর ছবির সুদীর্ঘ তালিকা থেকে মাত্র একটি ছবিকে আলোচনায় আনতে চাই, উদাহরণ হিসেবেই, 'গল্প হলেও সত্যি'! কোনো এক আলাপচারিতায় তপন সিংহ একবার বলেছিলেন – 'আমার হতাশ লাগে এই ভেবে যে দর্শক ছবিটাকে শুধুই হাসির ছবি হিসেবে নিল'! একজন পরিচালক হিসেবে তো হতাশ হবারই কথা এবং ন্যায্য কারণেই। যারা সিনেমাটি দেখেছেন, আরেকবার ভাবুন তো, 'গল্প হলেও সত্যি' কি নেহাতই হাসির ছবি? নির্ভেজাল হাসি আর এন্টারটেইনমেন্ট? রবি ঘোষের অসামান্য অভিনয়ে বুঁদ হয়ে থাকতে থাকতে বাঙালি দর্শকের কি একবারও মনে হয়নি, আপাত হাসির আড়ালে সিনেমাটির এক অন্তহীন স্পেস তৈরির কথা? প্রথম যখন 'গল্প হলেও সত্যি' দেখি, বয়েস নেহাতই কম। সেসময় নির্ভেজাল হাসি নিয়েই মুগ্ধ হয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তী সময়ে যখন সিনেমাটা বেশ কয়েকবার দেখি, অনুভব করেছি একজন কুশলী পরিচালক কীভাবে তৈরি করেন ভাবনার স্পেস!ইংল্যান্ডের পাইনউড স্টুডিও থেকে সরাসরি কলকাতা, সাউন্ড ইঞ্জিনিয়ার থেকে পরিচালনায়, বাংলা সিনেমার দর্শক পেল এক পরিচালককে যিনি হেঁটে গেলেন মাঝের এক পথ বেয়ে। পাশাপাশি দু'টো পথেরই হাতছানি ছিল। বিস্তর আন্তর্জাতিক ছবি দেখার সুবাদে চলচ্চিত্রের বিভিন্ন ঘরানাগুলোর সঙ্গে ছিল তাঁর নিবিড় পরিচয়, অন্যদিকে তথাকথিত আপাত জনপ্রিয়তার হাতছানিও ছিল। দুটো রাস্তাকেই সহজে এড়িয়ে মাঝামাঝির যে পথ তিনি বেছে নিলেন তাতে ঝুঁকি নেহাতই কিছু কম ছিলনা। 'গল্প হলেও সত্যি' দেখতে দেখতে তপন সিংহ সম্পর্কে সেই মন্তব্য বোধহয় ভীষণভাবে অনুভব করি – " A magical union of liberate art and critical populism made Tapan Sinha middle-of-the road – Bengali Cinema. যাকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে স্টোরিলাইন সেই ধনঞ্জয়ের আবির্ভাব থেকে সিনেমার শেষদৃশ্যে অদ্ভুত এক ধোঁয়াশার মধ্যে তার মিলিয়ে যাওয়া, পুরোটাই এক রহস্যময়তায় ঘেরা! কোথা থেকে এল ধনঞ্জয়, নানান প্রশ্নে তার হেঁয়ালি মাখানো উত্তর, একসময় চলেই বা গেল কোথায়, কোনো উত্তরই যনো প্রাত্যহিক বাস্তবতার সঙ্গে মেলেনা, কিন্তু ভীষণভাবেই প্রাত্যহিকতায় গড়ে ওঠে এ কাহিনীর নির্মাণ, চরিত্র, আঙ্গিক! ... ...
আমি শহরের এই বিশেষ ট্রাফিক সিগ্ন্যালে নিজের নাম রেখেছি উদার মহিলা কারণ বাকি সব্বাই এমনিই ভিক্ষা দেয় আমি দিতে পারলে কপালে হাত ঠুকি দিতে না পারলে মুখে একটা চুক শব্দ করি রাধা নির্বিরোধে সরে যান যেন অপারগতা বোঝেন স্টিয়ারিং থেকে হাত সরাবার আলস্য আমার এই উদারতা শস্তা মাত্র পাঁচ ছ টাকায় এই ট্রাফিক সিগন্যালে যেখানে মূত্রশালা ও গন্ধ প্রবল যখনই একটা লম্বা সিগন্যাল পড়ে আর গাড়ি আটকে যায় আমার উদারতা লেখা থাকে ... ...
“আপনার ভূতের ভয় নেই?” প্রশ্ন করল মায়া। “না, আমার কোনদিন-ই ভূত প্রেতের ভয় নেই। আমি বরং খুশি হতাম ওর ভূত যদি এসে বলে যেত ও আত্মহত্যাটা করল কেন।” হালকা সুরে বলল অনন্ত। কাণ্ডটা দেখো, ভাবল সত্যার্থী, গল্প শুরু হতেই সেই ত্রিদিব সামন্তর কথা এসে পড়ল। না কি মায়াই সূক্ষ্ম কৌশলে গল্পকে সেই পথে ঠেলে দিচ্ছে! "সেই, ওনার ভূতই সম্ভবতঃ বলতে পারবে কেন করেছিলেন ঐ কাণ্ড,” বলল অপালা, “সাধারণ মানুষের ব্যাখ্যার অতীত।" "হ্যাঁ, ওটা আর কোনদিন জানা যাবে না। বহুবার আলোচনা করেও এ ঘটনাটার কোন ব্যাখ্যাই আমরা কখনো খুঁজে পাই নি। একেবারে ব্যাখ্যার অতীত যাকে বলে।" - হাত পা নেড়ে প্রবল ভাবে নিজের মত জানালেন সমর। "তাই ভাবছেন?" উস্কে দিল মায়া। "ভাবাভাবির কিছু নেই আর।” বলল সমর, “পুরো ঘটনাটাই অভাবনীয়। হাসিখুশি, প্রাণচঞ্চল একটি লোক, সাফল্যের চূড়ান্তে রয়েছে, পুরনো বন্ধুরা মিলে দিব্যি গল্প-গুজব করছি সবাই, হ্যাঁ অন্তত পাঁচ-ছজন ছিলাম আমরা সেই রাতে। ভবিষ্যতে কী কী করতে চলেছে তাই নিয়ে তার কত স্বপ্ন, কত পরিকল্পনা। সেই লোক ডিনার টেবিল থেকে উঠে তিনতলায় নিজের ঘরে চলে গেল। কিসের জন্য? খোলা বারান্দা টপকে নীচে লাফিয়ে পড়ে ঘাড় মটকে মরে যাওয়ার জন্য! কেন? কিসের জন্য? কোনদিন আর সেটা জানা যাবে না। কোনদিন না।" "কোনদিন জানা যাবে না কথাটা কি একটু বাড়াবাড়ি হয়ে যায় না, সমরবাবু?" হাসিমুখে জিজ্ঞাসা করল মায়া। সমর অবাক হয়ে তাকাল ওর মুখের দিকে। "বুঝলাম না। কী বলতে চাইছেন আপনি?" "একটি সমস্যা এক সময় সমাধান করা যায়নি মানে কি কোনদিনই আর সমধান করা যাবে না?" "হাঃ! দেখুন মিস মূর্তি, যে সমাধান সেইদিন বের করা যায়নি, আজকে, দশ বছর বাদে সেই সমাধান আপনি খুঁজে বার করবেন?" মায়ার মুখের মৃদু হাসি একটু ছড়িয়ে, কৌতূকী বাঁক নিয়ে আবার আগের অবস্থানে ফিরে এলো। “ইতিহাস কিন্তু তাই বলে সমরবাবু। আমাদের দেখাগুলো একান্তই আপেক্ষিক। ঘটনাকে ঠিকভাবে বুঝতে হলে তাকে ছাড়িয়ে এগিয়ে যাওয়ার দরকার পরে। তিনটে মাত্রায় ঘটনাকে পুরো দেখা যায় না। চতুর্থ মাত্রাটিকে জুড়তে লাগে – সময়। চার মাত্রার ক্যানভাসে সমস্ত উপাদানগুলো ঠিকঠাক মতন বসে পুরো ছবিটা ফুটিয়ে তোলে।” অলক সেন এই সময় সামনের দিকে ঝুঁকে এল, যেন বিলাপ করে গলা ভেঙ্গে গেছে এমন হাহাকারের স্বরে বলে উঠল - ... ...
১৯৭৫। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন দুই তরুণ। দুনিয়া ঘুরে দেখার আগে সাঙ্গ করছেন ভারতভ্রমণ। সাইকেলে। কিছু পরে হাল ছাড়লেন একজন। ঘুরতে থাকে দ্বিতীয়জনের সাইকেলের চাকা। ১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। এ পর্বে নানা বিচিত্র অভিজ্ঞতার স্মৃতি—সাপের কামড় থেকে রক্ষা, মাঝরাতে পুলিশের লাথি... আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
পটোলেতে ফুলকপি ব্যাকরণ মানি না। নেই যে দাঁতের তেজ হেরিটেজ জানি না—‘কচি পাঁটা’ হাড়সার, কেনই বা খাব আর, রেওয়াজি-চর্বিওলা খোজা পাঁঠা থাকাতেও?! বাঙালির আলু চাই বিরিয়ানি পাকাতেও। নস্টালজিয়া থাক, নবীনেরা হরগিজ, আলুপোস্তয় দেবে পারমেসিয়ান চিজ! ডিমান্ড ও সাপ্লাই হেঁশেলেতে দিল ধুম, বাঙালি বছরভর খেতে পেল মাশরুম! প্রাণ চায়? রেঁধে যান পড়বে না মোটে ঢিঢি, হেঁশেলে যে হুঁশিয়ার হাজির আছেন ডিডি। ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হবে আফ্রিকার গভীরে অভিযান। চলছে জোর প্রস্তুতি। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায়। ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। যে ‘বাজরাখিচড়ি’ ওরফে ‘লাদরা’-র এমন নাম রটাল ডাকসাইটে কেতাব জাহাঙ্গিরনামা, কী সেখানা? আদৌ যাবে কি জানা? এ প্রশ্ন ধাওয়া করেই আমরা ঢুকে পড়েছি মুঘল বাদশাদের মহাহেঁশেলে, যেখানে একবার ঢুকলে বার হওয়া কঠিন! আর সেখানেই আমরা দেখব, কীভাবে আগমার্কা ভারতীয় খিচড়িতে এসে মিশে গেল আফগান ধারা। নীলাঞ্জন হাজরা। ... ...
মেধাবী ছাত্র চঞ্চলকে এভাবে বছর বছর ফেল করতে দেখে তার বাবা চিন্তিত হলেন। তিনি যথেষ্ট অভিজ্ঞ চিকিৎসক। ফলে রোগ নির্নয় করতে ভুল করলেন না। তিনি রাগা রাগী করলেন না। পঞ্চমীদের বাড়িতে গিয়ে শাসিয়ে এলেন না। শুধু মেডিকেল কলেজের হোস্টেল সুপারের সাথে আলোচনা করে মেন হোস্টেলে চঞ্চলের জন্য একটি বেডের বন্দবস্ত করলেন। নিজে গাড়ি করে বিছানা পত্তর আর বই খাতা সমেত চঞ্চলকে হোস্টেলে রেখে এলেন। ... ...
রাষ্ট্রসংঘের একাধিক মানবাধিকার ঘোষণায়, সনদে ‘জরুরি অবস্থায়’ রাষ্ট্রের হাতে (ইউ এন এর পরিভাষায় নেশন) কিছু বিশেষ ক্ষমতার ব্যবহার ও কিছু নাগরিক/মানবাধিকারের উপর নিয়ন্ত্রণের অনুমোদন দেওয়া আছে। বর্তমান করোনা পরিস্থিতি সেই ধরনের বিপর্যয়ভুক্ত। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে এ কথাও বলা জরুরি যে, এই ‘বিশেষ ক্ষমতা’ মোটেই নিরঙ্কুশ নয়। ... ...
উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সরকারি কর্মীর হাতে, পুলিশের হাতে, সেনাবাহিনীর হাতে, বিচারকদের হাতে, সাংবাদিকদের বা প্রচার মাধ্যমের হাতে, ব্যবসায়ীদের হাতে, এমনকি জঙ্গিদের হাতেও থাকে স্বেচ্ছাচারিতার অগাধ ক্ষমতার উপস্থিতি। তারাই ক্ষমতা বৃত্তের ভরকেন্দ্র। সাধারণ মানুষ এখানে দ্বিতীয় শ্রেণির নাগরিক। ... ...
এ দেশে মহৎ স্থাপত্যকে গুঁড়িয়ে দেওয়া কিছু মানুষ কর্ম বলে বিবেচনা করেন, আদালত সে ঘটনায় দোষী খুঁজে পায় না, অন্যদিকে কাল্পনিক মহাকাব্য স্থান পায় লক্ষ্মীর আসনের নিত্যকর্ম পদ্ধতির পাশে। হিন্দুর পুজোকে এদেশে সামাজিক উৎসব আখ্যা দিয়ে দেওয়া হয়, ধর্মীয় আচারকে সামাজিক নাম দিয়ে তাতে মেতে ওঠেন লিবারাল, সেকুলার, মায় নাস্তিক বলে দাবি করা লিবারেলরা। ... ...
মৃত্যুদণ্ড বা ধর্ষকের মৃত্যুদণ্ড, এসব অপরাধ কমাতে কতটা কার্যকর, সে পৃথক তর্কে না গিয়েও এই যে তাৎক্ষণিক ন্যায়বিচারের আকাঙ্ক্ষা, তা কোনও আইন বা সংহিতা (কোড)গ্রাহ্য হতে পারে না। আইনের রাস্তায় কোনও অপরাধ প্রমাণে সময় লাগে, তা সে যত ন্যূনতমই হোক না কেন। এখন একটা সওয়াল প্রায়শই ওঠে, যে এই তাৎক্ষণিক শাস্তিদানের আকাঙ্ক্ষা আসলে বিলম্বিত বিচারের অতিপ্রতিক্রিয়া। ... ...