সুপ্রভাত। আমি মিনি। আমি একটা সাদা বেড়াল। ... ...
ছোটো থেকেই রবি আর শশী এমন করেই বড়ো হয়েছে। নিজেরাই জঙ্গলে ঘুরে খাবার জোগাড় করে, নিজেরাই রান্না করে আর বাবাকেও খাওয়ায়। কোনোদিন কিছু কিনতে গ্রামে গেলে সবাই কেমন থাকায়। ওরা বোঝে লোকে ওদের ভয় পায়। পছন্দ করে না একদম। ওরাও রেগে রেগে থাকে। শুধু বাবাকে ভালোবাসে। কারণ কোনো কোনোদিন বাবা ওদের সঙ্গে আদর করে কথা বলে। মায়ের কথা শোনায়। রবি আর শশী মায়ের কথা ভাবে আর ঘুমিয়ে পড়ে। ওদের কেউ নেই তো! ... ...
একদিন হঠাৎ তিতি জানালা দিয়ে দেখতে পেল ওদের পাশের বাড়ির বাগানের গাছপালা কাটার তোড়জোড় চলছে। তিতি খুব ভয় পেয়ে গেল...."জাম গাছটা কেটে ফেলা হবে না তো, ওখানে যে আমার পাখি বন্ধুরা থাকে।" এক ছুটে ও বাবার কাছে গিয়ে বলল, সেন কাকুদের বাড়ির বাগানের গাছ কাটা বন্ধ করতে বলার জন্য। বাবা তিতিকে অনেক বোঝালেন, কিন্তু কিছুতেই তিতির কান্না থামানো গেল না। ... ...
যেমন চিত্রণ-অলংকরণে, তেমনই ভাষার প্রয়োগে বৈচিত্র্যের অভাবিত-অপ্রত্যাশিত চমক সমগ্র বই জুড়ে অব্যাহত থাকে। মায়ামৃগবধের দৃশ্যে মায়াচরীদের নৃত্যসহ গীতে ‘সহসা আসি সহসা মিলাই/নয়ন ভুলায়ে মনেরে দুলাই/জাগায়ে দুরাশায় ডুবাই নিরাশায়—/হাওয়ায় হাওয়ায় সোনার ধূলার/ ঘূর্ণা বায়ে পায়ে পায়ে হারায়ে চলি—/নিরুদ্দেশে মরুমরিচীকা দলি নব নব সাজে/অভিনব দিনে রাতে—গহিন ছায়া রঙিন মায়াচরী’কুল আড়াল হয়ে যান পাণ্ডুলিপির পাতায় বন্ধ দরজার আগলে, আলতো বন্ধ দরজার পাল্লায় লেখা ফুটে ওঠে, ‘Behind Closed Doors Because...’ ... ...
বাংলার সমাজে জাতপাত ভিত্তিক উচ্চনীচ ভেদাভেদের বিরুদ্ধে চৈতন্যদেব যে এক বিপুল সাড়া জাগান আন্দোলন সৃষ্টি করেছিলেন - এমনটাই প্রচলিত ধারণা। কিন্তু কেমন ছিল চৈতন্যোত্তর বৈষ্ণব যাপন? গৌড়ীয় বৈষ্ণবমণ্ডলে কি অবহেলিত ছিলেন চৈতন্যদেবের দ্বিতীয় স্ত্রী বিষ্ণুপ্রিয়াদেবী? ইত্যাকার নানা বিষয় চর্চিত একটি বই। পড়লেন অঞ্জন সেন ... ...
আনি আর্নো। এ সময়ে ফরাসি সাহিত্য-নক্ষত্রদের অন্যতম। বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য তাঁর আত্মজৈবনিক লেখাগুলি। তেমনই একটি বই ‘লেজ়ানে’, ‘বছরগুলো’। বিশ্ববন্দিত। পড়লেন পার্থপ্রতিম মণ্ডল ... ...
রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা মানেই কিছুটা আলো-আঁধারি ভাষা এবং স্মার্টনেস। এই-ই মোটামুটি বোঝাপড়া। আরেক ধাপ এগোলে বড়জোর রাঘব বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘরানা কমলকুমার মজুমদারের। আলোচনা মোটামুটি এই স্তরেই ঘোরাফেরা করে। কমলকুমারের ভাষাশৈলী নিয়ে রাঘব বন্দ্যোর কাজকর্মও সেই ভাবনাটিতেই জল-হাওয়া দেয় বটে। এই লেখা সেই ভাবনাধারা থেকে একটি ছেদ ঘটায়, অন্য আরেক চিন্তাভুবনে পাঠককে নিয়ে যেতে চায়। সে বৃত্তান্ত অন্য বটে, এবং অনন্যও। ... ...
ব্যাপার হল গিয়ে রাঘবের সাহিত্যে কী আছে আমি তার কতটুকুই বা জানি! অথবা নিজেকে যদি এমনভাবে বোঝাই যে, আমিই একমাত্র জানি যে রাঘবের সাহিত্যে কী আছে, তারপরও রাঘবের সাহিত্যে যা আছে, তা কিন্তু রাঘবের সাহিত্যেই থেকে যাবে। ... ...
ছক বহির্ভূত, নামবিহীন, সময়স্তব্ধ শূন্য কোনো পরিসর তৈরি করতে চেয়েছিলেন রাঘব? নাকি, অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ-বছর-মাস প্রভৃতি খোপে বদ্ধ কথার ভগ্নাংশ কুড়িয়ে, জুড়ে তাকে অসীম, মুক্ত ক্রমনির্মীয়মাণ পরিসরে স্থাপন করেছেন? কথা যেখানে অমর, সম্পৃক্ত, অবিনির্মিত, অনুক্ষণ! ... ...
জোছনার পিদিম জ্বলা দিগন্তে নির্জন পৃথিবী। তবু এই নির্জনতায় কেউ যেন কাউকে খোঁজে, বাতাসের কোট পরা অদৃশ্যমানতাকে জনে জনে জিজ্ঞেস করে। সবুজ লাউয়ের লতায় পেঁচানো কুঁড়েঘর হয়ে যায় নির্বাসিত এক গভীর দ্বীপ। আগত শীতের হিম আঙ্গুল ঘাড়ের দুই পাশ থেকে জড়িয়ে ধরে। যেন ভয় নেই কোন, নেই আহত হওয়ার সতর্কতা, কোথাও কোন তিক্ততার আঁচড় ছাল ছিঁড়ে চিহ্ন রেখে যায় নাই- শুধু ভালবাসা আছে ঘাসে ঘাসে শিশির হয়ে, চাঁদের অপূর্ব দৃষ্টি হয়ে। এই বোধ নিয়ে জোনাকি উড়ে যায়, লক্ষ লক্ষ বরই ফুল হাসে পাতার ফাঁকে ফাঁকে, দূরে কোন অচেনা পাখি ডেকে ওঠে অচেনা মানুষের গাঁয়ে। কুয়াশার সাদা পর্দার ভিতরে বাঁশি বাজিয়ে বসন্ত নড়েচড়ে ওঠে। ... ...
কুসুমপুরের ঝোপঝাড় জলশূন্য ডোবা, পুকুর পেরিয়ে দমকা একটা মাঠের মধ্যে এসে পড়ে। এই মাঠ, কুসুমপুরের বিশাল ডাহি, সামান্য চড়াই উৎরাই, পাথুরে গেরুয়া ভূমি, মাথার উপর বিস্তীর্ণ আকাশ, দিগন্তে বিলীন এই বিশাল পৃথিবীতে আলো গাঢ় হয়ে আসছে। গাঢ় আলোর ভিতর কৃষ্ণবর্ণের মানুষ একা হাঁটছে; এখন এই রকম দৃশ্য। যেতে হবে বহুদূর। মাঠ পার হয়ে গাঁ পেরিয়ে জঙ্গল, সেই জঙ্গল পেরিয়ে আবার মাঠ জঙ্গল গ্রাম ডাহি এই রকমই তো পথ। কত বছর আগে এই গাঁয়ে এসেছিল বুড়ো তা আর স্মরণে থাকে না। সেই যে বার যুদ্ধের উড়োকল ভেঙে পড়েছিল নিশ্চিন্তার ওপারে তারও অনেক আগে। যুদ্ধের উড়াকল। হ্যাঁ। ঘড়ঘড় শব্দে সে আকাশে চোখ মেলে। মাথায় পাখা ঘুরিয়ে হেলিকপ্টার যাচ্ছে কলাইকুন্ডার দিকে। ... ...
বিজু স্কুলে এসে জানতে পারলো হেডস্যার আসতে পারেনি। তার নাকি জ্বর। কাল কোন এক স্যার চাল বিলির ব্যবস্থা করবে। কিন্তু আজ তারা খাবে কী? রান্না হবে কি দিয়ে? এইসব সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে বিজু যখন বাড়ি ফিরলো বাবাকে দেখে সে অবাক হয়ে গেল। বাবা দাড়ি কামিয়ে, চান করে, আলমারী থেকে জামা কাপড় বের করে, পরে, রেডি হয়ে বসে আছে। বিজুকে দেখতেই বাবা বললো তাড়াতাড়ি চান করে নে বিজু। একটু পরেই আমরা বেরিয়ে যাবো। গনেশ কাকু গাড়ি নিয়ে আসবে। বিজু তো অবাক। কোথায় যাবো আমরা বাবা? বাবা বলে সেও জানে না। কোন একটা জায়গা। শ্যুটিং দেখবো। বিজুর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। ফিল্মের শ্যুটিং বাবা? বাবা ঘাড় নাড়ে, হ্যাঁরে ফিল্মের শ্যুটিং। বলেছে নাকি শ্যুটিং দেখাবে। খেতে দেবে। চল চল দেরি করিস না। ... ...
বহুবছর পরে 'দ্য প্যাশন অ্যাকোর্ডিং টু জি.এইচ.' পড়তে গিয়ে এই ঘটনাটা অংশুমানের মনে পড়বে: অংশুমানের মা চিরকালই ভীষণ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন লোক; ফলে বর্ষাকালে তার খুব সমস্যা হতো। অর্ধেকদিনই খাবার সময় পোকামাকড় এসে পড়লে না খেয়ে উঠে যেত। একদিন রাতে, অংশুমানের মা তখন কলেজে পড়ে, দিদু থালায় ভাত বেড়েছেন দুজনের, হ্যারিকেনের আলোয় খেতে খেতে হঠাৎ একটা আরশোলা দিদুর পাতে এসে পড়ল। দিদু তখন ভাবলেন আরশোলাটাকে পাতের পাশে ফেললে মেয়ের চোখে পড়বে এবং সঙ্গে সঙ্গে থালা ফেলে উঠে যাবে, সারারাত খালিপেটে থাকবে মেয়েটা; ফলে তিনি কোনো শব্দ না করে ভাতসুদ্ধু আরশোলাটাকে মুখে ঢুকিয়ে নিয়েছিলেন। ... ...
প্রথমবার জেলে যাওয়ার পরই সুধারাণী বুঝে গেছিলেন তার বিবাহিত জীবনের পরিণতি কী হতে চলেছে। তার মেধাবী স্বামী শুধু পড়াশোনা করার জন্যই কলকাতায় যান নি। পড়াশোনার পাশে পাশে দেশকে স্বাধীন করার সংকল্পও নিয়ে রেখেছেন। গোপন বিপ্লবী জীবন কাটানোর মাঝেমাঝে হয়ত গ্রামে এসে কোনো এক রাতের জন্য স্ত্রীর সাথে দেখা করতেন, আবার সকাল হলে চলে যেতেন। পুলিশ খবর পেলে বাড়িতে হানা দিত। এভাবেই চলত দিনের পর দিন। কখনো বা স্বমীর অনুরোধে কোনো বিপ্লবীকে লুকিয়ে রাখতেন বাড়িতে। তার পরিচর্যা করতেন। একদিনের জন্যও হয়ত বিবাহিত জীবনের সুখ লাভ করেন নি। তবু কোনোদিনও কোনো অভিযোগ করেন নি। দেশের কাজ মনে করেই হয়ত হাসিমুখে সমস্ত কিছু সহ্য করে গেছেন। যখন কালাপানির সাজা হল তখন থেকে দেশের কাজের পাশাপাশি সংসারের হাল নিয়েও দুশ্চিন্তা শুরু হল৷ বৃদ্ধ শ্বশুর তখন পুরোপুরি ছেলের বৌ এর ওপর নির্ভরশীল। বিয়ের সময় সুধারাণী পড়তেন ক্লাস এইটে। পড়াশোনায় বেশ ভালোই ছিলেন। কিন্তু বিয়ের পর তখনকার প্রথা অনুযায়ী পড়াশোনা ছাড়তে হয়৷ এরপর স্বামী ঘরছাড়া থাকার সময়ে বাড়িতে থেকেই পড়াশোনা শেষ করেন। সংসারে টানাটানি দেখা দিল চাকরির চেষ্টা শুরু করেন। কিন্তু একেই তো চাকরির পক্ষে বয়স বেশি হয়ে গেছিল, তারওপর যখন সবাই শুনতেন ফণীভূষণের স্ত্রী, তখন আরোই ভয়তে চাকরিতে বহাল করতেন না। হয়ত কয়েকমাসের জন্য কোথাও পড়ানোর কাজে ঢুকেছেন, ফণীভূষণের স্ত্রী পরিচয় বাইরে আসার সাথে সাথেই চাকরিটা খোয়াতে হত। এভাবেই কোনোরকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে সংসার। ... ...
১৯৭৫। বাঁকুড়ার ছোট্ট মফস্সল শহর বিষ্ণুপুর থেকে বেরিয়ে পড়েছেন দুই তরুণ। দুনিয়া ঘুরে দেখার আগে সাঙ্গ করছেন ভারতভ্রমণ। সাইকেলে। কিছু পরে হাল ছাড়লেন একজন। ঘুরতে থাকে দ্বিতীয়জনের সাইকেলের চাকা। ১৭ বছর। ৩ লক্ষ ৮৪ হাজার কিলোমিটার। ১৫৪ টি দেশ। আজও এ কীর্তিতে তিনি অদ্বিতীয়। এই প্রথম দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে সে পরমাশ্চর্য সফরের অনুপুঙ্খ কাহিনি শোনাচ্ছেন জয় মণ্ডল। এ পর্বে জুতোর শুকতলা খইয়ে, কপর্দকশূন্য অবস্থায় মুম্বই-দিল্লিতে বহু আচেনা মানুষকে বহু কষ্টে রাজি করিয়ে আফ্রিকা যাওয়ার দুটি ফ্রি টিকিট জোগাড়ের কাহিনি। আলাপে নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
ডেভিড লিভিংস্টোন। আফ্রিকায় বেপাত্তা। কিংবদন্তি মানুষটির খোঁজে আফ্রিকা পৌঁছেছেন মার্কিন সাংবাদিক হেনরি মর্টন স্ট্যানলে। জাঞ্জিবার থেকে শুরু হবে আফ্রিকার গভীরে অভিযান। প্রস্তুতি প্রায় শেষ। বেরোনোর আগে সুলতানের শুভেচ্ছা নিতে তাঁর প্রাসাদে। স্ট্যানলের সেই বিখ্যাত সফরনামা ‘হাও আই ফাউন্ড লিভিংস্টোন’। এই প্রথম বাংলায়। তরজমায় স্বাতী রায় ... ...
চলছে খিচুড়ি মহারহস্য অ্যাডভেঞ্চার। আগের কিস্তিতে দেখেছিলাম খাঁটি ভারতীয় খিচুড়িতে কীভাবে আফগানিস্তান পার করে এসে মিশেছিল ইরানি ‘শোলে’। এ কিস্তিতে আমরা সেই জাহাঙ্গিরি খিচড়ি আর বাজরা খিচড়ির রহস্যভেদের তাগিদে নেতি নেতি করতে করতে হাজির হব ইরান ফিরতি দিল্লি হয়ে সোজা বর্ধমান! নীলাঞ্জন হাজরা ... ...
তামাশা-এ-গুলশন, তমন্না-এ-চিদন/বাহার-আফরিনা গুনাহগার হ্যায়ঁ হম! বাগান অবলোকন, বাসনায় চয়ন/বাসন্তী দেবী, পাপী যে এ মন! হায় মির্জা গালিব, বাগান থেকে ফুল ছেঁড়ার অনুশোচনায় এমন কবিতা, ফুল চয়নের এই বহর দেখলে না-জানি কী লিখতেন জনাব! এক ছাদের তলায় ২২০০ বিঘার বাজার—শুধু ফুল আর ফুল। বছরে বিকিয়ে যায় ১ লক্ষ ১০ হাজার কোটি পিস্ ফুল! হল্যান্ডের আল্সমীর। সুকান্ত ঘোষ ... ...
গোপন কথাটি রবে না গোপনে এমন তো নয় যে আমেরিকা সারা বিশ্বের শান্তিরক্ষার ইজারা নিয়েছিল কোনোদিন। কিন্তু বাংলাদেশ নিয়ে যখন দুনিয়া উত্তাল তখনও আমেরিকা একবারও মুখ ফুটে কোনো প্রতিবাদের ধার কাছ দিয়েও যায়নি কেন? সামান্য হিপোক্রেসিও কি আশা করা যেত না? লেখক বাস তিনটি কারণ বলেছেন। প্রথম দুটি গৌণ। প্রথমত, নিকসন আর ইয়াহিয়া, দুজনের কেউই যখন নিজের নিজের দেশের প্রেসিডেন্ট নন, তখন থেকেই দুজনের মধ্যে একটা সখ্যতা ছিল। নিকসনের অন্তরঙ্গ কথোপকথনের যে টেপ পাওয়া যায় তাতে দুজনের সুসম্পর্কের কথা উল্লেখ হয়েছে একাধিক বার। দ্বিতীয়ত, নিকসন, ইন্দিরা গান্ধিকে রীতিমতন অপছন্দ করতেন। রাশিয়ার সাথে মাখামাখি, ইন্দিরা সোস্যালিস্ট ঝোঁক—শুধু এগুলিই নয়। মানুষ হিসেবেই ইন্দিরাকে নিকসন পছন্দ করতেন না। এর আগে একবার দুজনের মিটিং হয়েছিল দিল্লিতে মিনিট কুড়ির জন্য। ইন্দিরা নাকি যথেষ্ট উৎসাহ তো দেখানইনি, তায় তাঁর এক সহকর্মীকে হিন্দিতে প্রশ্ন করেন, “এ আরও কতক্ষণ টাইম নেবে?” নিকসনের আর-এক পরামর্শদাতার মতে নিকসন রাষ্ট্রনায়ক হিসেবে কোনো মহিলাকে হজম করতে পারতেন না। তো সে কথা বলতে কী, নিকসন গোটা ভারতীয় জাতিকেই অপছন্দ করতেন, বলেছিলেন ভারতীয়রা ‘Slippery and treachorous’। পাকিস্তান ও তার অধিবাসীদের ক্ষেত্রে কিন্তু প্রশংসাই বরাদ্দ ছিল। মূল কারণটি কিন্তু এইসব ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ নয়। নিকসন-কিসিঞ্জার জুটি তখন চিনের সাথে আবার করে সম্পর্ক গড়বার চেষ্টা চালাচ্ছেন। তবে, সবই গোপনে, খুবই গোপনে। প্রথমে ফ্রান্স ও পরে রুমানিয়ার মাধ্যমে চেষ্টা চালিয়েছিলেন চিনকে গোপন বার্তা পাঠানোর। কিন্তু নিকসনের পছন্দ ছিল পাকিস্তান। চিনের খুবই বিশ্বাসযোগ্য বন্ধু এবং লুকোছাপা খেলার পক্ষে সবথেকে নির্ভরযোগ্য দেশ তাই পাকিস্তান। আর তাই নিকসন আর কিসিঞ্জার দুজনই প্রাণপণ চেষ্টা করে গেছেন, পাকিস্তানের যেন কোথাও কোনো অসুবিধা না হয়। নিকসন এটাও একাধিকবার বলেছেন, “জাস্ট তিন মাস। কোনো রকমে তিনটে মাস কাটিয়ে চিনের সাথে ডাইরেক্ট চ্যানেল হয়ে গেল আর চিন্তা নেই। পাকিস্তানকে না খুঁচিয়ে ওই তিন মাস আমার চাইই চাই।” চতুর্থ কারণটি, একেবারেই আমার নিজস্ব ধারণা। সেটি হচ্ছে ভিয়েতনাম। ৬৯ সাল থেকেই শুরু হয়ে গেছে ওই দেশ থেকে আমেরিকান সেনা প্রত্যাহার। ভিয়েতনাম থেকে মোটামুটি (হেরে গিয়ে না বললেও) না জিতেই ফিরে আসা। যে সময়ে কিসিঞ্জার চিনের সাথে গোপন সখ্য করছেন, সেই সময়ে প্যারিসে উত্তর ভিয়েতনামের সাথেও একই সময়ে খুব গোপনেই একটা ‘বোঝাপড়া’র ডায়ালগ শুরু হয়েছে। দক্ষিণ ভিয়েতনামের যে শেষের সেদিন আগত সেটা আর কারওই অজানা নয়। ... ...