[ তখন ছেলেটি প্রস্তুত হচ্ছে নরেন্দ্রপুরে ভর্তি হবে বলে। সেসবের জন্যে এখানে ওর কোচিং ক্লাস শুরু হয়। এর মধ্যে হঠাৎ একদিন অলোক দেখে যে ছেলে কোচিং থেকে আগেভাগেই বাড়ি চলে আসে জ্বর আর হাত-পায়ে ব্যথার কারণে। হাত আর পা ফুলে ওঠায় স্থানীয় ডাক্তারবাবুদের শরণাপন্ন হতেই হয়। দুতিনবার ডাক্তার দেখানোর পরেও জ্বর আর কমে না ছেলের। ফোলাটাও বাড়তেই থাকে। এরমধ্যে রাজপুর অঞ্চলের এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি দেখেবুঝে স্টেরয়েড দিতে শুরু করেন।] ... ...
আজ থেকে মাত্র কয়েকশ’ বছর আগে (১৭৫৬-৫৭ সি.ই.), নবাব সিরাজদ্দৌলাকে সরিয়ে ক্লাইভ ও তাঁর অনুগত মিরজাফরকে সিংহাসনে বসাতে বণিক মহতাব চাঁদ ও স্বরূপ চাঁদের (ইতিহাসে যাঁরা “জগৎ শেঠ” (Banker of the World) উপাধিতে বিখ্যাত) ভূমিকা এবং তাঁদের বিপুল অর্থব্যয়ের হিসেব জানলে চমকে উঠতে হয়। অতএব রাজাকে রাজা বানিয়ে তুলতে (king-maker) বণিকসম্প্রদায়ের প্রভাব আজও যেমন আছে, সে সময়েও ছিল – এমন অনুমান করাই যায়। ... ...
সেদিন খাওয়া দাওয়া সেরে ফেরার সময় শেফ-কে বিদায় জানাতে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম – এই রেষ্টুরান্টের তেমন বিজ্ঞাপন দেখি না কেন! আবারো সেই টিপিক্যাল উত্তর পেলাম – “দরকার পড়ে না”! রোজই সব টেবিল বুক থাকে, বেশীর ভাগ কাষ্টমারই রিপিট কাষ্টমার। টুরিষ্ট তেমন কেউ আসেই না এখানে – প্রায় চোখের আড়ালে তাদের। টেবিল রিজার্ভ না করে গেলে চান্স কম। তবুও কোন কোন টুরিষ্ট ঘুরতে ঘুরতে এখানে খেতে ঢুকে পরে এবং টেবিল খালি থাকলে তাদের ভাগ্য সুপ্রসন্ন ধরে নিতে হবে। রিজার্ভ করলে পুরো সন্ধ্যেটাই সেই টেবিলে অতিথি কাটাবে ধরে নেওয়া হয় – ফলে টেবিল টার্ন-রাউন্ড এর কোন কনসেপ্ট নেই এদের। ধীরে ধীরে খাওয়া এবং পান চলতেই থাকে। এত বেশী সময় নিয়ে চলতে থাকে খাওয়া দাওয়া যে এর ফাঁকে একটা পলাশীর যুদ্ধ টাইপের ছোটখাট ইভেন্ট কিছু ঢুকে যেতেই পারে! ... ...
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরে সব কিছুরই টানাটানি । রুটি , কয়লা র্যাশনে পাওয়া যেতো , চকোলেটের র্যাশন ছিল ১৯৫৮ অবধি। বাড়ির বাথরুম অজানা বস্তু। মাঝে মধ্যে সার্বজনীন স্নানঘরে পয়সা দিয়ে গা ধোয়ার ব্যবস্থা। সেন্ট্রাল হিটিং অনেক দূরে তখন। যুদ্ধে ভাঙ্গা বহু বাড়ির মেরামত হয় নি। যুদ্ধ থেকে যারা ফেরেন নি ব্রিটিশ সরকার তাঁদের পরিবারকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করেছেন । লন্ডন অনেক দূরের শহর । জর্জ এবং জেনি অ্যাডামস নিঃশব্দে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছিলেন তাঁদের দিকে । না, কোন ইউনিসেফ বা অক্সফ্যামে টাকা পাঠিয়ে বিবেক পরিষ্কার করেন নি । নিজের হাতে টাকা বা সামগ্রী পৌঁছে দিয়েছেন । ১৯৯৯ সালের ২৭শে আগস্ট বিবাহের সুবর্ণ জয়ন্তীর দিনে শেষ বারের মতো জর্জ অ্যাডামস জেনিকে নিয়ে গিরজে থেকে রাসটন লজ অবধি তাঁর প্রিয় সিলভার শ্যাডো রোলস রয়েস চালান । পরের দিন সেটি নিলামে তোলা হয় – সে যাবত প্রাপ্ত সমস্ত টাকা দান করেন। ... ...
কুরবানি ঈদ আসলেই এগুলা মনে পরে এখন। মনে পরে আমাদের যখন কুরবানি দেওয়ার উপায় ছিল না তখনের কথা। আব্বা আম্মা যথাসাধ্য চেষ্টা করে যেতেন আমাদের, আমার যেন এর জন্য মন খারাপ না হয়। আমার যে খুব মন খারাপ হত তাও না, আবার মাঝেমধ্যে যে খারাপ একেবারেই লাগত না তাও না। রোজার ঈদের কষ্ট হচ্ছে নতুন কোন জামা কাপড়ই হয়ত জুটে নাই আমার আর কুরবানির ঈদের কষ্ট ছিল আমাদের কুরবানি দেওয়া হচ্ছে না এবার! সবই এখন মধুর স্মৃতি। দুঃখ গুলাও এখন মনে করে ক্যামন জানি সুখ পাওয়া যায়। কারণ হয়ত ওই সব স্মৃতির সাথে আব্বা আম্মা মিশে আছে, আমাদের বৃহৎ পরিবারের সকলেই মিশে আছে। ... ...
রবীন্দ্রনাথের গানের হারিয়ে যাওয়া শিল্পীদের কথা ... ...
ওপরচালাক, পেশীকলাগর্বিত, ধনগর্বী, অথচ ভেতরে শিশুর মতো অসহায় এক চিত্রাভিনেতা সাজা পেয়েছে বলে, পুরো সোশ্যাল মিডিয়া জুড়ে হয় প্রবল চ্যাঁ ভ্যাঁ, নয়ত থুথুছেটানো ছিছিক্কার দেখে হাসি পায়, রাগও ধরে। হয় লোকে অন্ধ, কেবল সুগঠন দেখে অক্কা পায়, নয় তো মিচকে, ভেতর ভেতর বেজায় খুশি যে কোন ক্ষেত্রে ইন্দ্রপতন হলেই। দ্যাখ ব্যাটা কেমন লাগে, খুব বাড় বেড়েছিলি তো - গোছের মানসিকতা আর কি। স্যাডিস্ট, মর্ষকামী।এই তুমুল আলোড়নে বিচারের বাণী বা বিচারব্যবস্থার ফাঁকফোকর নিয়ে কোন আলোচনা সেঁদোতেই পারছে না। সত্যিকারের নায়কদের ... ...
ফেরার গল্প শোনো। ভোরে উঠে ট্যাক্সি করে চিৎপুর স্টেশনে চলে গেলাম আমরা। এখান থেকে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকার উদেশ্যে ছেড়ে যায়। ট্রেনে যাত্রা বেশ আরামদায়ক। সবচেয়ে বড় আরাম হচ্ছে সীমান্তে আমাদের কোন দৌড়াদৌড়ি করতে হয় না। এই স্টেশনে আমাদের সমস্ত ইমিগ্রেশন, কাস্টমসের কাজ শেষ করে ট্রেনে তুলে দিবে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ, আবার ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে( ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন! তুমি এখান থেকে রাজশাহীর ট্রেনে উঠতা!) নামার পরে ঢাকার কাস্টমস অফিসাররা বাংলাদেশের অংশের কাজ কাম শেষ করে মুক্তি দিবে আমাদের। সহজ না? ... ...
আমার কলকাতা ঘুরার জন্য আমি একটা ছোটখাটো তালিকা বানিয়েছি। এক নম্বর হচ্ছে ৮ থিয়েটার রোড। মুশকিল হচ্ছে থিয়েটার রোড বলে কোন রোড এখন আর নাই, এখন হচ্ছে শেক্সপিয়ার সরণি। আরও মুশকিল হচ্ছে আমি কেন থিয়েটার রোড যেতে চাই এইটা কেউ জানেও না। ভারতীয় সরকারও না, বাংলাদেশ সরকারও না! কী একটা আশ্চর্য কাণ্ড না? অথচ আমার কাছে কলকাতা এই কারণেই, আট নাম্বার থিয়েটার রোডের জন্যই বিশেষ। আমার কাছে কলকাতা প্রাচীন দালানের জন্য আকর্ষণীয় না, ভিক্টরিরা মেমোরিয়াল না দেখে দেশে ফিরলে বিন্দুমাত্র আফসোস হবে না, যাদুঘরের জন্য না, কম দামে জিনিস পাওয়া যায় এই কারণে না, আমার কাছে কলকাতা বিশেষ কারণ এই পথে এক সময় সুনীল শক্তিরা রাত জেগে শহর পাহারা দিয়েছে। বিশেষ কারণ এইখানে এমন কিছু মনিষীর আগমন ঘটেছিল যারা বাঙালি জাতির দিক পথ পরিবর্তন করে দিয়েছিল। শহর হিসেবে ঢাকার থেকে ঢের নবীন শহর কলকাতা, অথচ বাঙালি জাতির উপরে এর প্রভাব পড়েছে অনেক অনেক বেশি। আর প্রধান কারনই হচ্ছে এই মনিষীরা। আমি একটা টান অনুভব করি কারণ এখানে, এই ১৩৪, মুক্তারাম বাবু স্ট্রিটে এক সাধক বাস করতেন, যার জীবন আমাকে অদ্ভুত ভাবে টানে। মনে হয় সব ছেড়ে শিবরাম হয়ে যাই। এই কয়দিনে কতদূর দেখতে পারব জানি না। চেষ্টা করব যতদূর যাওয়া যায় যাওয়ার। ... ...
[ সেই চুরাশি’র ডিসেম্বরের সকাল নটায় উঠেছিলাম করোমণ্ডল এক্সপ্রেসের সাধারণ স্লিপার ক্লাস এস থ্রি-তেই। হারাধনের দশটি ছেলেমেয়ে। মাঝের স্লিপারগুলোর ভাঁজ খোলা হতো রাতের বেলায়। অবরে সবরে দুপুরের ভাতঘুমের জন্যে লাঞ্চের পরেও। ওঙ্গলে—বিজয়ওয়ারা জং—ইলুরু পেরিয়ে সাঁইসাঁই ছুটে চলা করোমণ্ডল এক্সপ্রেসের পরবর্তি স্টপেজ রাজামুন্দ্রী আসবো আসবো করছে। প্রায় বিকেল হয় হয়। হঠাৎ আমার মা-র অস্বস্তি শুরু। বুকজ্বালা দিয়ে শুরু হয়ে চোখ উলটে প্রায় যায় যায় অবস্থা ! ] ... ...
খবরে জানা গেছে, অঙ্কের এক অধ্যাপক রিচার্ড ফাইনম্যানকে 'উজবুক' বলায় পাশের পাড়ার পদার্থবিদ্যার ২ ছাত্র এসে তাঁকে বেধড়ক পেটায় ও তারপর তাঁর গলা কেটে নেয়। ... ...
[ আমার চোখে দেখা আর হৃদয়ে্র অনুভবে জারিত এই ছোট্ট ছোট্ট চিকিৎসা সংক্রান্ত ঘটনাগুলি এখনো মোছেনি আমার মাথার স্মৃতিকোষগুলোর থেকে। তার থেকে তুলে আনা এই মণি-কাঞ্চনগুলোয় যেমন পেয়েছি সাক্ষাৎ ভগবানদের, তেমনি কিছু কিছু সাংঘাতিক ঘটনা নেহাৎ-ই সহ্য করেছি উপায়ান্তরহীন যাপনে। ক্রোধে ফেটে পড়েছি মননে। রক্তচাপ বাড়িয়েছি বারংবার – মধ্যবিত্ত মনোভাবনায়। পেয়েছি আচম্বিত বাড়ানো হাত - অকাতর অকৃপন স্পর্শে। কৃতজ্ঞতাও হয়তো অব্যক্ত ছিল আমার পক্ষে সে সময়। তো এইসব ছিন্নবিচ্ছিন্ন ঘটনার কিছু রেশ গ্রন্থিত করছি প্রাণের আনন্দে। এখনো বেঁচে আছি, বেঁচে আছে আমার প্রজন্ম। তাই ভগবানের নামকীর্তন যেমন করেছি অক্লেশে, আবার সেই ‘আতঙ্ক’ চলচিত্রের মতো যেন কিছুই দেখিনি আমি হয়ে পাল্টেছি চরিত্র কিম্বা স্থান-নাম। মহাবীর-বুদ্ধ-নানক-রামকৃষ্ণের পুণ্যভুমিতে আজ হিংসা পৌনঃপুনিকতায় ছড়াচ্ছে বিদ্বেষের লাল আগুন। যে আগুন শুধুই ভস্ম-জন্ম আহ্বান করে। নিরুপায় আমি করজোড়ে মার্জনা চাইছি আমার এটুকু অপৌরুষেয়তার।] ... ...
[ বাচ্চা মেয়েটি তখন সদ্যই সন্তানসম্ভাবা। মেয়েটির গোটা শরীর জুড়ে শুরু হ’ল অসহ্য ব্যথা আর যন্ত্রণা। এপাশ থেকে ওপাশ ফিরতে পারে না সে এমন প্রলয়ঙ্করী ব্যথা। স্বাভাবিকভাবেই কলকাতার ব্যানার্জি, মুখার্জি, পাল, চৌধুরী ইত্যাদি নামী নামী ডাক্তারবাবুদের চেম্বারে ছুটোছুটি শুরু হ’ল। কিন্তু ব্যথা আর কমেই না। বরং অযথা ব্যথা কমানোর ওষুধ খেয়ে খেয়ে সে মেয়ে প্রায় নিস্তেজ। কিছুদিনের মধ্যেই বিছানা হ’ল তার আশ্রয়।] ... ...
তাঁর নির্দেশের লক্ষ্য ছিল সাধারণ মানুষ, অতএব তিনি মাগধী প্রাকৃত এবং আঞ্চলিক প্রাকৃত ভাষাই ব্যবহার করেছিলেন তাঁর নির্দেশগুলিতে। এর অপরিসীম গুরুত্ব বুঝে সংস্কৃতর পাশাপাশি গড়ে উঠতে লাগল প্রতিটি অঞ্চলের ভাষা এবং তাদের নিজস্ব লিপি। অর্থাৎ আজ আমি বাংলাভাষায় এই যে লেখাটি লিখছি এবং আপনি যে সেটি পড়ছেন, তার পিছনে সম্রাট অশোকের অসাধারণ এই অবদান স্বীকার করে আমরা যেন তাঁর প্রতি শ্রদ্ধায় প্রণত থাকি। ... ...
মানুষের শৈশব ও বাল্য চেতনায় যে শিক্ষার বীজ রোপিত হয় – কৈশোর ও তারুণ্যে নিজের মস্তিষ্কের রসায়নে সেই শিক্ষাতেই সে তার ভবিষ্যতের স্বপ্ন, আশা, আকাঙ্ক্ষা পূরণের পথ খুঁজতে থাকে। কেউ হয় অত্যাচারী এবং বিলাসী রাজা, কেউ মানবদরদী সমাজ-সংগঠক, কেউ দার্শনিক, কেউ দারুণ যুদ্ধবাজ, আর অধিকাংশ হয়, আমাদের মতো থোড়-বড়ি-খাড়া জীবনের অধিকারী। মস্তিষ্কের এই বিশেষ রসায়নের ফর্মুলাটি আজও আবিষ্কার করা সম্ভব হয়নি। ... ...