শেষ বিকেলের আলোয় ডলি রাখাইনের ফর্সা কচিপানা মুখে লালচে আভা। কণ্ঠস্বর বাস্পরূদ্ধ, যেন অস্পষ্ট থেকে অস্পষ্ট হতে থাকে, আচ্ছা, বিপ্লব দা, আপনার তো ঢাকায় অনেক টাকার চাকরি! এ রকম একটা বাড়ি সস্তায় কিনতে পারেন? মানবিক লোকজন এসবের দখল নিলে রাখাইন মালিকটি দেশান্তরে গিয়েও অন্তত নিশ্চিন্ত যে, যাক, পূর্বপুরুষের ভিটেমাটির নিশানাটুকু তো টিকে থাকবে, সেটুকু তো আর একেবারে নিশ্চিহ্ন হচ্ছে না! … ... ...
এসব খবর-অপখবরের মধ্যে নিউজ পোর্টালের এপে সকাল হয় সবুজ। এখনো এই প্রাচীন নগরে টিকে থাকা কৃষ্ণচূড়ার কোটরে বাসা বাঁধে টিয়ে। বৃষ্টিতে হয় তার সবুজ স্নান। মনে পড়ে প্রাথমিকের সেই গান : একদিন সূর্যের ভোর, একদিন স্বপ্নের ভোর, একদিন সত্যের ভোর আসবে, এই মনে আছে বিশ্বাস, আমরা করি বিশ্বাস, সত্যের ভোর আসবে একদিন...। ... ...
হারিয়ে যাওয়া রান্না - আমাদের বাড়ির বাইরের দিকটাকে আমরা বাইরবাড়ি বলতাম। বাইরবাড়ির বারান্দা ছিল আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা। সেখানে ছিল একটি বড় নকশা করা কাঠের বেঞ্চ। সেই বারান্দা আর বেঞ্চ ছিল আশেপাশের সকল বাড়ির মানুষের অবসরে সময় কাটানোর জায়গা। কারণ এই বারান্দাই ছিল সেই পাড়ার সদর জায়গা। ... ...
সত্যপীরের দরগা থেকে ফিরছে বুড়ো আনসার বাওয়াল। ছেলে মন্তেজ এর গায়ে ভর দিয়ে হাঁটছে। ক্লান্ত শরীর। হাতে ধরা লাঠিতে ভর দেয়ার মতো গায়ের জোর নেই। মন্তেজ শেখের হাতের মুঠোয় দরগার বাতাসা। ওর নাতি দুবছরের রাজু বাতাসা খেতে পছন্দ করে। ঘামে ভিজে কাগজে মোড়ানো বাতাসা নরম হয়ে গেছে। দরগায় মানত ছিল আনসার বাওয়ালের। ঘোর বিপাকে পড়ে দরগায় গিয়েছে সে। নইলে বাহাত্তর বছরের শরীর বয়ে অতদূর যাবার কথা নয়। দরগাতে প্রতিদিন আগরবাতি জ্বলে। মুসলমান-হিন্দু নির্বিশেষে ভক্তরা রোগ মুক্তি আর সংসারের মঙ্গল কামনায় শিরনি দেয়। ফুল, ফল আর লুঠ দেয়। ‘হিন্দুর দেবতা আমি মোমিনের পীর, যে যাহা কামনা করে তাহারা হাসিল’- এই পাঁচালীর ভক্তিরসে বাওয়ালী, মৌয়াল, জেলেদের মনে আশা জাগে। সত্যপীরের দয়ায় যদি কোনো উপায় হয়! ... ...
চোতমারানির পোলারা চুদতেও পারে না। আক্রোশটা খিস্তিখেউড়ে পরিণত হয়ে ঝনঝন করে ভেঙে পড়ছিল। ঘটনাটার ফলাফল তখন সবেমাত্র সে টের পায়। তলপেট থেকে যখন টক জলের ঘূর্ণি গা কাঁপিয়ে বাইরে এসে পড়ে। কলতলায় যাবার সু্যোগ দেয় না। দরজার বাইরে বসে সে হাঁপায় আর শরীরের সমস্ত শক্তি একাট্টা করে গালি দেয়। ... ...
মৃণাল সেনের দ্বিতীয় মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষ্যে শ্রদ্ধার্ঘ্য ... ...
অনেক সময় লেখক নিজের বিপরীত অবস্থানে গিয়েও তো আখ্যান লিখতে পারে। সেক্ষেত্রে লেখকের স্বর আর চরিত্রের স্বর কখনোই এক হবে না। একজন পুরুষ লেখকের কলম যখন নারীর জবানীতে আখ্যান লেখে কিংবা একজন নারী লেখকের কলমে পুরুষ যখন গল্পকথক (প্রোটাগোনিস্ট) হয়ে ওঠে তখন আলাদা করে লেখকের স্বর খুঁজে পাওয়া মুশকিল। লেখক অভিজ্ঞতা, রুচি, আবেগ, পর্যবেক্ষণ, দর্শন, ইতিহাসসহ সংস্কৃতির অগণন সূত্র মিলিয়ে বিপরীত লিঙ্গের চরিত্রটিকে তৈরি করে। চরিত্রটি লেখকের স্বরে নয় ভিন্নস্বরে কথা বলে। আসলে তখন ভাষা কথা বলে। লেখক না। অটো রাইটিং বা স্বতোলিখনে যা রচিত হয় সেটাই টেক্সট হয়ে ওঠে। ভাষা পারফর্ম করতে থাকে, লেখা তৈরি হতে থাকে। অটোম্যাটিক রাইটিং শব্দটা পড়ে মনে হলো- সব লেখাই আসলে অটো রাইটিং। ... ...
ঐশ্বর্য নেই, গৌরব নেই। নেই ভাষা, ভাষ্য। তবু এক অধিকার থাকে। এমন এক অধিকার যা থেকে কাউকে বঞ্চিত করা সম্ভব নয়। এটি হলো ছেড়ে যাবার, বিলুপ্ত হবার একান্ত অধিকার। চলে যাবার এই একটি অধিকার আছে বলেই ভূমিস্পর্শ করে শুয়ে আছে কেউ। উপুড় হয়ে। ... ...
এই তো বাংলার Socialism। এই Socialism – এর জন্ম কার্ল মার্ক্সের পুঁথিতে নয়। এই Socialism এর জন্ম ভারতের শিক্ষাদীক্ষা ও অনুভূতি হইতে। যে গণ-আন্দোলনের সূচনা বিবেকানন্দের উক্তির মধ্যে পাই তাহা আরো পরিস্ফূট হইয়াছে , দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশের বাণী ও সাধনার মধ্যে। দেশবন্ধু বলিয়াছেনঃ মনে করিয়ো না শুধু তোমার মধ্যে ও আমার মধ্যে নারায়ণের বিরাজ। সে অহঙ্কার একেবারে ছাড়িয়া দাও। যাহারা দেশের সারবস্তু , যাহারা মাথার ঘাম পায়ে ফেলিয়া মাটি কর্ষণ করিয়া আমাদের জন্য শস্য উৎপাদন করে – যাহারা ঘোর দারিদ্র্যের মধ্যেও মরিতে মরিতে দেশের সভ্যতা ও সাধনাকে সজাগ রাখিয়াছে, যাহারা সর্বপ্রকার সেবায় নিরত থাকিয়া আজিও দেশের ধর্মকে অটুট ও অক্ষুণ্ণ রাখিয়াছে- যাহারা আজিও , শুদ্ধ চিত্তে সরল প্রাণে, মর্মে মর্মে দেশের মন্দিরে মন্দিরে পূজা দেয়, মসজিদে মসজিদে প্রার্থনা করে- যাহারা জাতির জাতিত্বকে জ্ঞান কি অজ্ঞানে সাগ্নিকের অগ্নির মতো জ্বালাইয়া, জাগাইয়া রাখিয়াছে- যাহারা বাস্তবিকই এদেশের একাধারে রক্তমাংস ও প্রাণ- ‘উঠ, জাগ জাগ’- তাঁহাদেরই মধ্যে ‘নর-নারায়ণ’ জাগ্রত হউক। ... ...
ইউনিকোডে বাংলা যুক্ত হওয়ায় ইন্টারনেটে দ্রুত প্রসার হচ্ছে বাংলার। অভ্র’ ও উইন্ডোজ সেভেন এই কাজকে করেছে আরো সহজ। আর কম্পিউটারের উইন্ডোজ সেভেন ভার্সন থেকে শুরু করে পরের সবগুলো ভার্সনে বাংলা দেখার জন্য আলাদাভাবে প্রয়োজন নেই বাংলা কনফিগারেশনের। এ ছাড়া ব্রাউজিং সফটওয়্যার ফায়ারফক্সেও এখন যুক্ত হয়েছে অভ্র’। প্রযুক্তির ছোঁয়ায় বিভিন্ন ধরনের কম্পিউটার থেকে তো বটেই, এমনকি মোবাইল ফোনেও সম্ভব হয়েছে বাংলায় লেখাপড়ার কাজ। ... ...
হাল আমলের দুজন বাঙালি ডাক্তার, এই গত পঞ্চাশ বছরের মধ্যেই, এই কলকাতা শহরেই থাকতেন তাঁরা, এমন কিছু কান্ড ঘটিয়েছিলেন, যা, অকল্পনীয়। একজন দিলীপ মহালনবিশ, যিনি ওআরএস এর আবিষ্কারক। খবরে দেখলাম, মারা গেছেন। মৃত্যুর খবরে নড়েচড়ে বসলাম। কারণ, বেঁচে যে ছিলেন, সেটা জানতামনা। নোবেল-টোবেল তো পাননি। যদিও পাওয়া উচিত ছিল। আর আমরা এমনই জাত, যে, বাইরে থেকে পুরষ্কার নিয়ে না এলে, কাউকে জাতে তুলিনা। ... ...
দেশভাগের ঠিক মাস দুয়েক আগে মেয়েটির জন্ম অবিভক্ত বাংলার অবিভক্ত রাজশাহীর শহরে। মেয়েটি যখন পৃথিবীর প্রথম আলো বাতাসে হাত পা মেলে, তখন সেখানকার আকাশ বাতাস, একদিকে যেমন দেশভাগের তীব্র যন্ত্রণার আশঙ্কায় কুঁকড়ে উঠছে, তেমনি আরেকদিকে কৃষক আন্দোলনের এক সর্বোচ্চ পর্যায়কে বুকে ধারণ করে বাংলা ও বাঙালির ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করছে। ... ...