অনেক বয়স হবার পর কোন এক কবির লেখায় যেন এমন কয়েকলাইন পড়েছিলাম – “ডাক্তার জানে না, আমার অসুখের নাম পিকনিক”। সেই কবি আবার অন্য এক কবির লেখা থেকে এই লাইন ধার করেছিলেন - সে এক কনফিউজিং ব্যাপার। যাই হোক, যে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে শতকরা ৬০ ভাগ লোক পেটের রোগের চিকিৎসা করাতে আসেন সে রাজ্যেরই এক কবি যে এমন কথা লিখবেন সে আর আশ্চর্য কি! তবে ডাক্তারের না জানার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, অন্ততঃ আমাদের দিকের ডাক্তাররা আমাদের অসুখের উৎপত্তি ও নিরাময় দুইই জানত বেশ ভালো করে। ... ...
এক পার্সি মেয়ে বিয়ে করলো হিন্দু ছেলেকে। গুলরুখ গুপ্তা তার নাম।লভ জিহাদ? হবেও বা। লভ তো চিরকালই জিহাদ।সে যাই হোক,নারীর ওপর অবদমনে কোন ধর্মই তো কম যায় না, তাই পার্সিদেরও এক অদ্ভুত নিয়ম আছে। ঘরের মেয়ে পরকে বিয়ে করলে সে স্বসম্প্রদায়ের ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশ নেবার অধিকার হারাবে। যেমন,হিন্দু মেয়েরা মুসলমানকে বিয়ে করলে আর পুজোআচ্চা নয়, বা মুসলিম মেয়ের হিন্দু স্বামী কি তাকে নমাজ পড়ার অধিকার দেয় ! তো গুলরুখও তেমনি একরোখা। সোজা কোর্টের দরজা নেড়ে দিল জোরসে --- আমি কেন টাওয়ার অব সাই ... ...
ল্যাংস্টন হিউজের এই সময়ের জন্যও প্রবল প্রাসঙ্গিক কবিতা 'হার্লেম'-এর অনুবাদ দিয়ে শুরু করলাম। আশা রাখি আরো অনুবাদ আসবে। ... ...
প্রশ্নটা উঠতে দেখেছিলুম যখন বাংলা ১৪০০ সন এসে দুয়ারে কড়া নাড়ছিল। সিকি শতাব্দী আগে। তখন আমরা মত্ত ছিলুম কুসুমচয়নে। নব নব অনুষ্ঠান চারিদিকে। সঙ্গীত-সাহিত্য-ইতিহাস-পরিবেশ থেকে খুঁজে নিচ্ছিলুম ‘বাঙালিয়ানা’র সূত্রগুলি নতুন করে। কবি ভেবেছিলেন ১৪০০ সনে তাঁর লেখা সবাই ভুলে যাবে। দেখা গেল তাঁর লেখার কথা অনেকটা ভুলে গেলেও নামটাকে কেউ ভোলেনি। বাঙালিদের মতো কে আর মানে, ‘কলৌ নামৈব কেবলম।’ সবাই খোঁজে নিজের শিকড়। কিন্তু বাঙালিদের মতো আত্মপরিচয় খুঁজতে ব্যাকুল জাতি আমি ভারতবর্ষে আর দেখিনি। আসলে আমাদের পূর্বপুরুষ ... ...
আমার বাড়ির কাছেই ছোট একটা বার আছে। আমরা বলি স্টিভের ভাঁটিখানা - স্টিভস ব্রিউয়ারি। যদিও স্টিভ মদ বানায় না, কিন্তু ওটাই আদরের নাম হয়ে গেছে। আমরা কজন আধবুড়ো লোক প্রতি শনিবার সকালে গলফ খেলে স্টিভের দোকানে ঢুকে দুয়েক পাত্র বিয়ার সেবন করে বাড়ির পথ ধরি। এ আমাদের অনেকদিনের অভ্যেস। স্টিভ ভিয়েতনামের যুদ্ধে লড়াই করেছে। এখানে যুদ্ধফেরতদের ভেটারেন বলে। স্টিভ হল ভিয়েতনাম ভেটারেন। যুদ্ধের পরে বীতশ্রদ্ধ হয়ে প্রায় পিসনিক হয়ে যায়। নিজে ওহায়োর ছেলে, কিন্তু ওর বেস ছিল স্যান্টা বারবারা। সেখানে থাকার সময়েই বারবারা বল ... ...
ওপেন টি বায়োস্কোপ দেখলাম। কেন দেখলাম সে একটা প্রশ্ন, বিশেষ করে আমার সিনেফাইল বন্ধুরা আমার এমন আলু আলুবখরা, জল এবং জলপাইময় বিচরণ দেখে সপ্রশ্ন হন মাঝে মাঝেই। আমি বলি আহা, অমন তো হয়েই থাকে, আগের দিন লিসানদ্রো অ্যালনসোর ‘লিভারপুল’ দেখলাম, আর পরের দিন সন্ধের অবসরে ওপেন টি। আমাদের ইউটিউবে ছাড়া দেখার সুযোগ নেই, ফলে অন্য সকলের দেখে নানা তর্ক তুলে ফেলার পরে আমার কথা বলতে বসা। এমনিতে এই নস্টালজিয়া ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আমার ইমোশনাল আইডেন্টিফিকেশনের সম্ভাবনা কমই, শুধু এই জন্য নয় যে আমি একজন পেশাদার সিনেমা আলো ... ...
রঙ! শব্দটা শুনলে একটা অদ্ভুত অনুভূতি জাগে মনে। হঠাৎ যেন মনে হয় কেউ এক মুঠো লাল - হলুদ আবির ছড়িয়ে দিল হাওয়ায়। রঙ শুনলে আমার কেন জানি মনে হয়, একটা ক্যানভাসে খুব পাৎলা করে কেউ ক্রিমসন রেডের একটা শেডের উপরে ক্রোম ইয়োলোর এক পোঁচ ভেজা রঙ লাগিয়েছে। আপনাদের কি মনে হয়? নিশ্চই অন্য কিছুর সাথে আপনারা রঙকে রিলেট করেন। রঙ শুধু একটা শব্দ, একটা বিশেষ্য পদ, যা দিয়ে সব রকম রঙের কথা বলা যায়। শব্দটি সাবজেক্টিভ নয় কোয়ালিটেটিভ। কিন্তু আমি যদি বলি আপেল কিম্বা স্ট্রবেরী? অমনি আপনার মনের মধ্যে লাল রঙের একটা ছবি ভেসে ওঠ ... ...
পার্লামেন্টে সাম্প্রতিক জেএনইউ বিতর্কের শুরুর দিন স্মৃতি ইরানি জেএনইউর ছাত্রদের প্রচারিত একটি লিফলেট থেকে পড়ছিলেন, যেখানে দুর্গাকে একজন বেশ্যা হিসেবে দেখানো হয়েছে যিনি মূলবাসী রাজা মহিষাসুরকে ছলনা করে বধ করেন। স্মৃতিজি পড়ছেন যখন সংসদ জুড়ে শেম শেম ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। এরপর তিনি বলেন যে, এই কী বাক্ স্বাধীনতা, কলকাতার রাস্তায় কেউ এরকম বলতে পারবে? পুরাণেতিহাসের এই ভিন্নতর ভার্সন নিয়ে আলোচনার অবকাশ আছে। একটি মত শুনছি কোনো জনজাতির মধ্যে নাকি এইরকম লোকগাথা আছে। দুর্গাপ্রতিমা গড়তে বাংলায় বেশ্ ... ...
আমার দিদার ছিল গোটা চারেক ভালো শাড়ী। একটা বিয়ের বেনারসী, একটা গরদ, মাঝবয়েসে বেনারস বেড়াতে গিয়ে সেখান থেকে কেনা একটা কড়িয়াল বেনারসী, এছাড়া শেষের দিকে তসরও হয়েছিল। মায়ের প্রথম দামী শাড়ী পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কোন হস্তশিল্প মেলা থেকে কেনা দুধে আলতা রঙের একটা বালুচরী। পঁচিশ বছর পরেও তার জলুষ অম্লান এবং তার তুল্য একটি দ্বিতীয় বালুচরী আজ পর্যন্ত দেখলাম না। সেই শাড়ীটি কেনার সময়ে মায়ের পনেরো বছর চাকরী করা হয়ে গেছে। তারপরে মুক্ত অর্থনীতি এসে লোকজনের হাতে টাকাপয়সা বেড়েছে। এখন মধ্যবিত্তের ঘরেও বিভিন্ন প্রদেশের ... ...
ছাত্র গণঅভ্যুত্থানের বিশাল মিছিলে জেনারেল আইয়ুব বিরোধী সেই সময়ে একজন মুসলিম তরুণী প্রকাশ্যে নেতৃত্ব দিচ্ছেন, দুই হাত মুখের কাছে গোল করে লিড শ্লোগানারের ভূমিকা পালন করছেন, ভাবা যায়? ... ...
শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা, আমি তিনমাস ঘুমিয়ে থাকব ইত্যাদি বলে যতই আদিখ্যেতা করুন ভুক্তভোগী মাত্রেই জানেন এই তিনমাস ঘুমিয়ে থাকা তো নয়ই বরং কতরকম চ্যালেঞ্জ, টেনশন, নজরদারি, আর এই ক’টাদিন একটু হাসিখুশি থাকতে হলে তার আগের তিনমাস কি খাটাখাটুনি আর কি উদ্বেগে থাকতে হয়। এখানে ভুক্তভোগী বলতে যারা এই শীতকালে একটু ফুলটুল ফোটান তাদের কথা বলা হচ্ছে। পৃথিবীতে এত গাছ আর ফুল থাকতেও যাঁদের নিজের পা ফেলার রাস্তার ধারে, জানলার পাশে, বারান্দার কার্নিশে চাট্টি ‘নিজের হাতের গাছ’ না দেখলে ঘুম হয়না, এমনিতেই তাদের (পাগলা) ... ...
জনৈক ঠুল্লা (দিল্লী পুলিশকে ঠাট্টা করে বলা হয়) উমর এবং অনির্বাণকেঃ তোমরা জে এন ইউ তে জাতীয়তা বিরোধী সভা আয়োজন করেছিলে কেন? অনির্বাণঃ এন্ডারসনের মতে, জাতি একটি কল্পিত সম্প্রদায় যা সেই সব মানুষ, যারা নিজেদেরকে সেই বৃহত্তর গোষ্ঠীর অংশ বলে মনে করেন, তাদের দ্বারা সামাজিক ভাবে নির্মিত... ঠুল্লা ২ কী? এটা আমরা যা প্রশ্ন করেছি তার উত্তর হল? তোমাদের কে টাকা দিয়েছে? অনির্বাণঃ আমরা কয়েকজন মিলে কয়েক হাজার টাকা তুলেছিলাম। প্রত্যেকে অল্প কিছু কিছু করে ডোনেশন দিয়েছে। ঠুল্লা ৩। তার মানে তোমরা এ ... ...
রোহিত ভেমুলা নিয়ে সর্বত্র কথা হচ্ছে। এক দিকে রোহিতের বিচার চেয়ে চলছে আন্দোলন এবং অন্যদিকে রোহিতের বিরুদ্ধে উঠে আসছে কিছু অভিযোগ। ওই অভিযোগগুলো একটু দেখা যাক। নানান জায়গায় রোহিতের ফেসবুক পোস্টের স্ক্রিন-শট দেখছি এবং তাই উৎসাহিত হয়ে তার ফেসবুক ওয়ালে বেশ কিছু সময় ধরে গত রাতে ঘুরে বেড়ালাম।সবথেকে গুরুতর অভিযোগ হলো, রোহিত 'দেশদ্রোহী'। এই অভিযোগের পিছনে কারণ কী? কারণ হলো, তিনি ইয়াকুব মেমনের ফাঁসির বিরোধিতা করেছিলেন। অভিযোগের প্রমাণ হিসেবে তার একটি ফেসবুক পোস্ট অনেকেই তুলে ধরছেন। কী সেই পোস্ ... ...
আজ অটোর জানালা দিয়ে রাজাবাজারের মোড়ে দেখি আকাশের অনেক উঁচুতে চৌকো গোল নানা রঙিন ছোপ।ঘুড়ি !নাকি হৃদয়ের কথা যা কোনদিন কেউ শুধোল না! সে যাই হোক, ছোটবেলাটা ছুট্টে এলো কোথা থেকে এই ঘিঞ্জি ভিড় ঠেলেও! তার মাথায় এখনো রিবন বাঁধা, হাঁটু ঝুল ফ্রক। মনে করিয়ে দিল ডানপিটে মেয়েটাকে যে একগাদা ছেলের সঙ্গে পাশাপাশি দুটো বড় গাছে ঘুড়ির সুতো পেঁচাচ্ছে। ঘুরিয়েই যাচ্ছে।তেতলার হাতে এরারুট বা গদের আঠা। ওই আঠা ন্যাকরায় নিয়ে পেঁচানো সুতোয় লাগাতে হবে। আর সাগরের হাতে হামানদিস্তায় পেষা ফটো ... ...
আজ সেই রাত।পার্কে গিয়ে তাই করি, বেঞ্চটা খুঁজে বার করে বসি । একটা ফাঁকা সিগারেটের প্যাকেট ফেলে গেছে কেউ বেঞ্চটার ওপর, সেটা দুমড়ে পাশে সরিয়ে দিলাম। পার্কটা ফাঁকা । ঘড়ির দিকে চোখ রাখি, সেকেন্ডের কাঁটাটা ঘুরছে । এখনো পনেরো মিনিট বাকি আছে। হেলান দিয়ে বেঞ্চে মাথাটা তুলে ওপরে তাকালাম। ঝিকমিক করছে নানারকম তারা। একটা কৃত্রিম উপগ্রহ সপ্তষিমণ্ডলকে পিছনে রেখে আকাশ পেরিয়ে যাচ্ছিল। ... ...
অমৃতা জীবন ভালোবাসত – অফুরন্ত জীবনীশক্তি নিয়ে সে আষ্ঠেপৃষ্ঠে জড়িয়ে গিয়েছিল জীবনের সাথে। আরো সহজ করে বলতে গেলে সে বড় ভালোবাসা ভালোবাসত। স্বাভাবিক ভাবেই তার কবিতায় ঘুরে ফিরে এসেছে ভালোবাসার কথা আর তার সাথে লেগে থাকা জীবনের কথা। “নারী পরাজিত হতে ভালবাসেলতিয়ে থাকে ভালো থাকারঘন সবুজ আস্তানায়”একমাত্র ভালোবাসার কাছেই পরাজিত ছিল সে। সেই স্বেছা পরাজয়ের পর খুঁজে নিয়েছে সে নিজের আস্তানা – যেখানে আস্তানা মানে ঘর, আস্তানা মানে আশ্রয়, আস্তানা মানে নিজের একান্তের প্রকাশ। এক সময় কব ... ...
ইপ্সিতা বলল, রিভিউ লেখ। আমি বললাম, আমি কি সিনেমা বুঝি নাকি? ইপ্সিতা বলল, যা দেখে ভাল লাগল তাই লেখ। আমি বললাম, তবে তাই হোক।সিনেমা র নাম, রেনবো জেলি। ইউটিউবে ট্রেলার দেখেই বড্ড ভাল লাগল। তাই রিলিজ করার পরের দিনই আমার চারবছুরের কন্যে সহ আমি হলমুখী।টাইটেল কার্ড। দুর্দান্ত ঝকঝকে। উজ্জ্বল রঙ কিন্তু স্বপ্নের মত। রূপকথা শুরু সেখান থেকেই। শুরুতেই ট্রিবিউট লীলা মজুমদারকে। বিভিন্ন টেকনিক্যাল টার্ম এর বাংলা পরিভাষা চোখ টানল। এডিটিং এর বাংলা বুনোট। বেশ। শুরু হোক তবে।ঘোঁতন। এমন একটা বয়স ... ...
রাককথনআগের সপ্তাহের কিস্তিটা লেখার সময় ভেবেছিলাম এই সপ্তাহে সমপ্রেম ও অপরাধ নিয়ে লিখব। কিন্তু বিভিন্ন লোকজনের সাথে আদানপ্রদান করে মনে হল, তার আগে জেন্ডার ও সেক্সুয়ালিটি সংক্রান্ত কিছু বেসিক ডেফিনিশন আলোচনা করে নেওয়া দরকার।কেউ জানতে চেয়েছেন ক্যুইর মানে কি, কেউ হোমোসেক্সুয়ালের সংজ্ঞা চেয়েছেন, কেউ বা জানতে চেয়েছেন সমাজের চাপে সেক্সুয়ালিটি বদলে যেতে পারে কি না। আমি আমার জানামত উত্তর দেওয়ার চেষ্টা করছি। আমি এই ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ নই, তাই কেউ যদি কোনও ভুল ধরে দেন, তাতে যারা এই লেখাটা পড়বেন তাঁ ... ...
“…আমি পরিমান বা সংখ্যাকে প্রাধান্য দেই না। যেমন, বঙ্কিমচন্দ্রের উপন্যাসের সংখ্যা মাত্র কয়েকটা, কিন্তু সুনীল গাঙ্গুলীর প্রায় চারশ’। অথচ বাংলা সাহিত্যে বঙ্কিমবাবুকে কেউ অতিক্রম করতে পেরেছেন? লেখকের প্রধান দায়িত্ব হচ্ছে মেধাবী রচনা লেখা। লেখকের যদি লেখার প্রতি কমিটমেন্ট না থাকে”… বিশিষ্ট লেখক, চিন্তক আহমদ ছফা, নয়ের দশকের আলাপচারিতায় ... ...
দুধসাগর প্রপাত হয়ে একশোফুট আছড়ে পড়ার পরে মান্ডভী বা মান্ডাওয়ি নদী নেমেছে ব্রাগাঞ্জাঘাট ঘুরে ঘুরে পশ্চিমঘাটের গভীর অরণ্যের মধ্যে দিয়ে পথ করে। দুধসাগরের সবচেয়ে নীচের ধাপটায় পৌঁছানোর অভিজ্ঞতাও ভবিষ্যতের জন্য অমুল্য স্মৃতি। ... ...