আমাদের দেশে -- ভারত, বাংলাদেশ ইত্যাদি জায়গায় -- শিক্ষা হলো প্রধানতঃ চাকরিবাকরি, কাজকর্ম পাওয়ার একটা রাস্তা। এবং মালিকদের ও শাসকদের নির্ধারিত পথ অন্ধভাবে অনুসরণ করার যোগ্যতা অর্জন করা। কিন্তু এ শিক্ষা কোনো শিক্ষাই নয়। ... ...
গুরুচণ্ড৯-র বই । দ্বিতীয় সংস্করণ । ... ...
বিট আন্দোলন ... ...
১। ভারতে কোনো সাধারণ ভাষা বা সাধারণ জাতীয়তা নেই। ব্রিটিশ শাসনের চাপে একটা বহির্মুখী ঐক্য গড়ে উঠেছে, কিন্তু তার ভিতরে যা সাংস্কৃতিক মিল, তা ইউরোপের বা মধ্যপ্রাচ্যের নানা জাতির মধ্যের মিলের চেয়ে বেশি কিছু না। ফলে ভারতবর্ষকে একটা জাতি হিসেবে ভাবা যাবেনা। ২। ভারতবর্ষের সুনির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীগুলোর একটা তালিকা করেন তিনি। পূর্বে বাঙালি, ওড়িয়া, অসমীয়া। পশ্চিমে গুজরাতি, মারাঠি। দক্ষিণে চারটি - তামিল, তেলুগু, কন্নড়, মালয়ালি। এবং খুবই কৌতুহলোদ্দীপক, পাঞ্জাবি এবং হিন্দুস্তানিদের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, যে, এদের জাতিনির্মাণ এখনও সম্পূর্ণ হয়নি। একই তালিকায় পাহাড়ের জনজাতিরাও আসে। ৩। দেশভাগের পর, বাংলা নিয়ে আলাদা করেই গুরুত্ব দেওয়া হয়। যেহেতু বাঙালি একটা আস্ত জাতি, তাই কৃত্রিম ভাগাভাগির পরও দুই টুকরোর মিলনের পক্ষে ছিলেন দিয়াকভ। তিনি প্রায় ভবিষ্যদ্বাণী করেন, যে, কোনো সন্দেহ নেই, ভারত এবং পাকিস্তান, দুই দিকেই বাঙালি সমস্যার মোকাবিলা করতে হবে রাষ্ট্রশক্তিকে। এই ভবিষ্যদ্বাণী, বলাবাহুল্য সত্য হয়েছে। নকশালবাড়ি, মুক্তিযুদ্ধ, উদ্বাস্তু, এনআরসি, সব মিলিয়ে বাঙালি সমস্যা এবং বাঙালি ট্র্যাজেডি চলেছে, চলেছে রক্তগঙ্গাও। ... ...
বেঙ্গালুরু আর মুম্বাইতে ইণ্ডিয়া জোট গঠনের মধ্য দিয়ে তাহলে নতুন কী হোলো যাতে বেশ কিছু বামপন্থী সমর্থক দলগুলির ওপর রেগে গেলেন ? কারণ একটাই, সেখানে মমতা বন্দোপাধ্যায় তথা তৃণমূলের অংশগ্রহণ।তাঁদের আবেগকে সম্মান জানিয়েও বলতে হয় এ তাঁদের রাজনৈতিক ভুল। ... ...
স্তালিনের মৃত্যুর পরেরদিন ভারতের প্রধানমন্ত্রী পন্ডিত নেহরু ভারতীয় সংসদে স্মৃতিচারণ করে লম্বা বক্তৃতা দিয়েছিলেন। তাতে তিনি বলেন, যে, স্তালিনের গুরুতর অসুস্থতার কথা যখন কানে আসে, তখন তিনি মস্কোর ভারতীয় রাষ্ট্রদূতের পাঠানো একটা প্রতিবেদন পড়ছিলেন। সেই শেষ সাক্ষাৎকারে স্তালিন কথা বলেছিলেন ভারতের নানা ভাষা নিয়ে। তাদের শতকরা বিন্যাস, প্রভাব, সম্পর্ক, এইসব নিয়ে। এতটাই বিশদে, যে, নেহরু স্তালিনের জ্ঞানে কিঞ্চিৎ বিস্মিতও হন। ... ...
অনুবাদকও ভুল পথে নিয়ে যেতে পারে ... ...
"চার জন আলাদা হয়ে খুঁজতে হবে, এক সাথে না," খোঁচা বলল। বলে একটু সরে দাঁড়াল, দোকানে আসা এক ভদ্রলোককে জায়গা করে দিতে। বছর ৫৫-র ভদ্রলোকের গায়ে ব্রাইট নীল রঙের শার্ট আর ফেডেড জিন্স, স্পোর্টস জুতোটা বেশ নামী কোম্পানির। পান কিনে ভদ্রলোক দোকান থেকে বেরিয়ে গেলেন। "সেই লোকটা," অভিষেক ফিসফিস করে বলল। "কোন লোকটা?" তিন জন প্রায় এক সঙ্গে জিজ্ঞেস করলাম। "আন্টির সঙ্গে যে লোকটা কথা বলছিল।" "তুই সিওর?" বলল তৃষা। "তাই তো মনে হচ্ছে, এই রকম ব্লু শার্টই ছিল ওনার গায়ে, প্যান্টটাও তো সে রকমই।" ভদ্রলোক হেঁটে যাচ্ছেন সামনে। একটা তিন তলা সাদা বাড়ির গায়ে একটা গ্যারাজ, সেখানেই ঢুকে গেলেন। ... ...
পাপের স্পর্শ ( A touch of Sin ) ছবিতে হিংসা, রক্তপাত, আত্মহনন ভালো পরিমাণে আছে। কিন্তু এসব আছে এমন একটা সমাজে বাঁচার প্রতিক্রিয়া হিসেবে যেখানে প্রতারণা আছে, নিষ্ঠুরতা আছে, আছে অর্থগর্বী প্রমত্ততা। দেখে কখনো মনে হবে না যে ৭৪ বছর আগে জনগণতান্ত্রিক বিপ্লব ঘটে যাওয়া , সমাজতান্ত্রিক পথে হাঁটা কোনো দেশের ছবি দেখছি। ... ...
দিল্লির নয়ন-মনোহর গম্বুজের তলে যুবরাজ বুঘরার প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে পড়ত! সাপের থেকেও পেঁচানো এর প্রাসাদ, ভয়ংকর কুটিল এর খিলান! এদিকে যে খেয়ালী ও আত্মভোলা যুবরাজকে নিয়ে সুলতান গিয়াসউদ্দিন বলবনের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না, সে-ই তাকেই তিনি পাঠালেন বাংলায়, যার বিদ্রোহের ঘনঘটায় অষ্টপ্রহর শংকিত থাকতো দিল্লীর দরবার। ফরমানটা জারি হওয়ার পর থেকেই নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন বুঘরা; কী জানি কোন অচেনা মুল্লুকে তার বলী হতে যাচ্ছে! কিন্তু যতই এগিয়ে আসছিল একটি নদীবিধৌত সবুজ আঁচল , মন-প্রাণ জুড়িয়ে আসছিল বুঘরার, আর মনে হচ্ছিল, এতদিন বুঝি এর অপেক্ষাতেই ছিলেন! বাংলার প্রকৃতি ছিল খেয়ালি -এমন ঘনঘোর বর্ষা এমন অঝোর ধারায়, এক টানে, এক সুরে - আর কোথাও দেখেননি বুঘরা! খেয়ালি বাংলা ও বুঘরা হয়ে উঠলেন হরিহর আত্মা! আজ সেই আত্মাকেই ছেড়ে দেয়ার কাতর আহবান উঠে এসেছে পিতার কণ্ঠে! কিন্তু কি করে সম্ভব! কি করে! ... ...
কতবার ভেবেছিনু আপন ভুলিয়া ... ...
জনগণেৱ ভোটাধিকাৱ প্ৰয়োগে সীমাবদ্ধ যৌক্তিকতা বা বাউন্ডেড ৱ্যাসনালিটি ত্বত্তেৱ ভূমিকা ... ...
সবাই নিজের নিজের মতো হালীম বানান তবে একটা ব্যাপারে সবাই একমত — হালীম অতি সামাজিক খাদ্য। এত পরিশ্রমলব্ধ প্রাপ্তি চট করে ফুরিয়ে যেতে দিতে ইচ্ছে হয় না। তাই এ রান্না ঠিক কম করে বানিয়ে শান্তি হয় না। উপকরণের অনুপাত বলতে ওই শস্য ও মাংস সমান সমান রাখা। বাকি সব স্বাদবোধ অনুযায়ী। তাই সবকিছু মেশানর শর্তসাপেক্ষেও প্রতিটি হালীম রান্না নিজস্ব স্বাদ গন্ধে আলাদা ও স্বয়ংসম্পূর্ণ। ... ...
"কী বুঝলি?" বিশেষ কাউকে উদ্দেশ্য না করেই জিজ্ঞেস করল অভিষেক। ফোন থেকে চোখ না তুলে সারাক্ষণ কী করে থাকে ছেলেটা! "বোঝাবুঝির ব্যাপার নেই," বলল তৃষা, "দেখতে হবে সোনা নিজে কী চাইছে।” "কী চাইছে মানে?" আমি বুঝলাম না। খোঁচা বলল, "ও চাইছে কাকিমা প্রেম করছেন কি না সেটা যেন আমরা জানার চেষ্টা করি।" "আমরা কী করে জানব? স্বর্ণালী নিজেই জানে না।" আমি বললাম। তৃষা কিছু একটা বলতে যাচ্ছিল, তার আগেই স্বর্ণালীর মোবাইল বেজে উঠল। আন্টি ফোন করছেন।তৃষা ফোনটা নিয়ে রান্নাঘরের দিকে চলে গেল। "নির্ঘাত দেরি করে ফিরবেন, ওইখানে যাবেন,” বিরক্তির সঙ্গে বললাম। খোঁচা বলল, "তোর তাতে কী প্রবলেম?" আমি রেগে গেলাম। "আমার কী প্রবলেম মানে? আমি স্বর্ণালীর প্রবলেমকে আমি নিজের প্রবলেম বলে মনে করছি, তাই আমার গায়ে লাগছে।" ... ...
উত্তরপ্রদেশে তৃপ্তা ত্যাগী বলে যে শিক্ষিকা এক মুসলমান ছাত্রকে ক্লাসরুমে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে হিন্দু ছেলেদের দিয়ে চড় খাইয়েছেন, তার তাৎপর্য অনেক গভীর। ... ...
ছেলেটি ঘামছিল দরদর করে, মাঝে মাঝে রুমাল দিয়ে মুছে নিচ্ছিল মুখমন্ডল, সারা শরীর যেন ভেঙ্গে পড়ছে ক্লান্তিতে, তবু উঠার নামগন্ধ নেই। তার সামনে একটি টেবিল, একটি ল্যাপটপ, আর এক গাদা কাগজপত্র। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছিল, আর এই অজ পাঁড়াগায়ে বিদ্যুত পৌঁছুলেও খেয়াল খুশীমত সে আসা যাওয়া করতো, তাই যখন পাশেই রাখা বিশাল স্ট্যান্ড ফ্যানটা ঠায় দাঁড়িয়েছিল নির্বাক, নিঃশব্দ, সামনে-পেছনে-ডাইনে-বায়ে গোল হয়ে দাঁড়ানো প্রায় জনা ষাট-সত্তর মানুষ, তাদের মধ্যে ছেলে-বুড়ো-বউ-ঝি কেউই বাদ পড়েনি, একটুও কুন্ঠিত হচ্ছিল না, ব্যাপারটা তাদের এতটাই গা সওয়া - বরং তারা প্রবল আগ্রহ নিয়ে দেখছিল ছেলেটির কাজকর্ম, তাদের জন্য আজ এক বিষ্ময়ের দিন, আজ নাকি তাদের ব্যাংক হিসাব খোলা হবে! ... ...