এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • গোয়েন্দা কাহিনি বিষয়ক - ফ্রীডরিশ  ডুরেনমাটের লেখা পড়ে 

    সিএস লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ৩০ আগস্ট ২০২৩ | ৫৩৭ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • কথাগুলো আগেও মনে হয়েছে,  ফ্রীডরিশ ডুরেনমাটের লেখা দুইটি গোয়েন্দা কাহিনি পড়ার পরে আবারও মনে হল। 

    এরকম হয়েছে, অনেকদিনই, যে আদি  - মধ্য -অন্ত যুক্ত গোয়েন্দাকাহিনী আর পড়ে উঠতে পারি না। বুদ্ধির কারসাজি, অপরাধীর ক্লু ছড়িয়ে যাওয়া আর গোয়েন্দার সেসবের অনুসরণ, আসলে যা লেখককে পাঠকের অনুসরণ, মোচড়, বাঁক, বোকা বানানো (অপরাধী দ্বারা গোয়েন্দাকে বা লেখক দ্বারা পাঠককে), রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতি, শেষে সমাধান বা বুঝিয়ে দেওয়া, প্রাইভেট গোয়েন্দার কেরামতি বা এক্স্ট্রেন্সিটি, এইসব ছক সমন্বিত লেখা পড়ে উঠতে পারিনা। অন্যদিকে ইদানীংকালের রবার্ট গ্যালব্রেথের বইগুলো, সেসব তো বহরে প্রায় ডিকেন্সিয়ান যেন, ডিটেল আর গল্প আর শাখা গল্প , আর চরিত্রদের মধ্যের সম্পর্ক ইত্যাদি মিলিয়ে যা, সেসব পড়তে গিয়ে মনে হয়, গোয়েন্দা গল্পে তো আরো ব্রেভিটি থাকা উচিত ছিল ! 

    কিন্তু এও জানি, ১৯৫০ পরবর্তী সময়ে গোয়েন্দা গল্পের চরিত্র বদল হয়েছিল, স্ক্যান্ডেনেভিয়ান ধারার ডিটেকটিভ ফিক্শনে যা ধরা আছে, যে সব লেখার আদি পিতা - মাতা হয়ত সুইডেনের ওহালু স্জোয়াল যুগল, যারা প্রতি দশকে একটি করে বই লিখতেন, প্রতি বইয়ের পর্যায়ক্রমিক পরিচ্ছেদগুলো এক এক জন লিখতেন, দুই সন্তান রাতে ঘুমিয়ে পড়ার পরে লিখতে বসতেন, প্রাইভেট ডিটেকটিভের বদলে পুলিশ ইন্স্পেক্টরকে গোয়েন্দা চরিত্র করেন যা নিতান্তই বাস্তবসম্মত, তদন্তের পুলিশি পদ্ধতি ও একঘেয়েমি গল্প জুড়ে থাকে, আর বইগুলো যেন সার্জেনের ছুরির তলায় সুইডেনের কল্যানমুখী রাষ্ট্রব্যাবস্থাকে চিরে দেখার উপায়।  

    অথবা ১৯৫০-র দশকেই প্রকাশ পাওয়া ব্ল্যাক আমেরিকান লেখক চেস্টর হাইমসের লেখাগুলি যেগুলো হার্লেম শহর আর ব্ল্যাক আমেরিকান এক্স্পেরিয়েন্স ও কালো মানুষদের দৈনন্দিন আর ক্রাইসিসকে ব্যবহার করছে, ক্রাইম নভেলের প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ডিটেকটিভদের হাজির করছে কিংবা আরো কিছু পরের স্পেনীয় লেখক মন্তালব্যানের লেখায়, সিসিলির লেখক আন্দ্রে ক্যামেলারির লেখায় (যে লেখাগুলির পুলিশ চরিত্রটির নামও মন্ত্যালবান, লেখক মন্ত্যালবানকে অনুসরণ করে ! ) বর্তমানের ছবি উঠে আসছে পলিটিশিয়ান - টাকা - বিগ বিজনেস -মাফিয়া ইত্যাদি নিয়ে, গোয়েন্দাকাহিনি ১৯৩০ - ৪০ দশকের স্বর্ণযুগ পেরিয়ে এসে ড্রয়িংরুমকেন্দ্রিক লেখা থেকে সরে এসে রাস্তায় নামছে, গোয়েন্দকাহিনিকে অনেক বেশী 'সামাজিক করে তোলার চেষ্টা করা হচ্ছে। এও বোঝার যে তিরিশ - চল্লিশের দশক যদি গোয়েন্দা গল্পের স্বর্ণযুগ হয়, সেই সময় সাহিত্যে - শিল্পে হাই মডার্নিজমেরও স্বর্ণযুগ এবং এইসব ক্রাইম নভেলের লেখকরা সেসবের সাথে পরিচিত ছিলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যও ছিল গোয়েন্দা গল্প আর সাহিত্যকে মিশিয়ে লেখা তৈরী করা।  
     
    তো এইরকম কিছু লেখাই পড়তে চাই, গোয়েন্দা কাহিনিকে ব্যবহার করে যা 'শুধুই' গোয়েন্দা কাহিনি থেকে বেরোতে চায়;  কোন জায়গায় প্রথাগত গোয়েন্দা গল্প থেকে এইসব লেখা আলাদা হয়ে যায় সেগুলো বুঝতে পারাই যেন পাঠক হিসেবে প্রাপ্তি, ঘুরিয়ে বলা যায়, এও হয়ত পাঠক হিসেবে এক ধরণের গোয়েন্দাগিরি,  লেখাগুলিকে  লক্ষ্য করে। 

    সুইস লেখক ফ্রীডরিশ ডুরেনমাটকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে ইউরোপের অন্যতম প্রধাণ এবং আভা-গার্দ নাট্যকার হিসেবে মূল্য দেওয়া হয়েছে, মূলতঃ ১৯৫০ আর ১৯৬০ এর দশকে যেসব নাটকগুলো লিখেছিলেন তার ভিত্তিতে(দ্য ভিজিট এবং দ্য ফিজিসিস্টস যার মধ্যে অতিবিখ্যাত  ), এপিক থিয়েটারের প্র‌্যাক্টিশনার হিসেবে গণ্য করা হয় সে কথাও জেনেছি । প্রশ্নমুখর সেসব লেখা ব্যক্তি, ব্যক্তিস্বাধীনতা, নৈতিকতা, ন্যায়, রাষ্ট্র ও সমাজ নিয়ে, বিতর্কও হয়েছিল এবং নাট্যজগতে প্রভাব্শালীও হয়েছিল সেইসব নাটক। ফিল্মের সাথেও জড়িত ছিলেন, স্ক্রীপ্ট লিখেছিলেন, উপন্যাসও লিখেছিলেন যার মধ্যে অন্তত চারটি উপন্যাস ক্রাইম নভেলই, ১৯৫০-র দশকে প্রকাশিত হয়েছিল তিনটি লেখা, অন্য একটি উপন্যাস ঐ দশকের শেষের দিকে লেখা শুরু হয়েও ছাপা হয়েছিল ১৯৮০ -র দশকে, চারটি উপন্যাসের মধ্যে দুটি ইন্স্পেক্টর বালরাশ নামে বার্ণ পুলিশের এক সিনিয়র অফিসারকে মুখ্য চরিত্র করে। নিজের লেখা গোয়েন্দাকাহিনি নিয়ে বলেছিলেন যে সেসবই কমবয়সে স্ট্রাগল করার সময়ে টাকার জন্য লেখা; আবার এই মন্তব্যও ছিল যে গোয়েন্দাকাহিনির মধ্যেই আর্ট লুকিয়ে রাখা যেতে পারে, কারণ গোয়েন্দাকাহিনিতে কেউই আর্টের আশা করে না !  অনুমান করি, 'টাকার জন্য' লিখলেও ঐসব লেখার মধ্যে শিল্পী হিসেবে নিজস্ব ধারণা এবং গোয়েন্দাকাহিনি বিষয়ে মন্তব্য ছড়িয়ে দেওয়াই ছিল ডুরেনমাটের উদ্দেশ্য।

     প্রথাগত গোয়েন্দকাহিনির তো সমালোচনাই করেছিলেন, বক্তব্য ছিল মোটামুটি যে, মাথা খারাপ হয়ে যায় এই কথা ভেবে যে কী করে লেখকরা যূক্তিসম্মত গোয়েন্দা গল্প লেখেন যা যেন দাবা খেলার মত যেখানে ডিটেকটিভকটি শুধু নিয়মগুলো জেনে খেলাটিকে আবার করে খেললেই অপরাধী ধরা পড়বে এবং ন্যায় ঘটবে। বোঝা যায়, বাস্তব জগতের সাথে তুলনা করে গোয়েন্দা গল্পকে ক্রিটিসাইজ করছেন, নিছক সময় কাটানোর উপযোগী যেসব লেখা সেগুলো অপছন্দের, গোয়েন্দা গল্পের সামর্থ্য থাকলেও বাস্তব থেকে তার চ্যুতি ঘটছে, সেইসব লেখার মধ্যে অনেক কিছুই এনে ফেলা যায়, সমাজবাস্তবতার অনুসন্ধান করা যায় এই যেন বক্তব্য। এবং সমাপতন এও নয় যে ​​​​​​​প্রায় একই সময়ে, সুইজারল্যাণ্ডের ​​​​​​​লেখক ​​​​​​​ডুরেনমাট ​​​​​​​আর ​​​​​​​সুইডেনের ​​​​​​​লেখকযুগল ওহালু স্জোয়াল​​​​​​​, ​তারা ​​​​​​​সেই ​​​​​​​দুই ​​​​​​​দেশের ​​​​​​​বাসিন্দা যে ​​​​​​​দেশ দুইটি কত ​​​​​​​না ​​​​​​​উন্নত ​​​​​​​বা যুক্তিসঙ্গত ​​​​​​​ব্যবস্থার ​​​​​​​অনুসারী ​, অথচ ​​​​​​​সেই ​​​​​​​ব্যবস্থার ​​​​​​​মধ্যেই ডিজর্ডার ​​​​​​​খুঁজে ​​​​​​​পাচ্ছেন ​​​​​​​এবং ​​​​​​​সেই ​​​​​​​সূত্র ​​​​​​​ধরেই ​​​​​​​গোয়েন্দা ​​​​​​​গল্পকে ​​​​​​​নতুন ​​​​​​​করে ​​​​​​​লিখতে চাইছেন। 
     
    দ্য জাজ এণ্ড হিজ হ্যাংম্যান  নামের ১২০ পাতার ছোট, পাতলা উপন্যাসটিতে যেমন, ডুরেনমাট গোয়েন্দাকাহিনির  ধরণের বদল ঘটিয়েছিলেন (যা ঢের বেশী করে আছে দ্য প্লেজ  নামের লেখাটিতে ) গোয়েন্দা গল্পের মূল ট্রোপকে ব্যবহার করেই (খুন দিয়ে শুরু, বিশ্লেষণ দিয়ে শেষ ), যে লেখা থেকে  কিছু বিষয়কে এবং ডুরেনমাটের উদ্দেশ্যকে খুঁজে পাই।  

    - লেখাটির প্রতিপাদ্যগুলি হয়ত এটাই যে একজন ব্যক্তি, অনেক অপরাধই যে করেছে কিন্তু প্রমাণের অভাবে দোষী সাব্যস্ত করা যায়নি, তাকে অন্য একটি অপরাধ যার সাথে সে যুক্ত নয় সেই অপরাধে শাস্তি দেওয়া যায় কিনা, আবার অন্যদিকে কোন শাস্তি না পাওয়াও সঠিক অবস্থা কিনা ? দ্বিতীয়তঃ, একজন ব্যক্তি যে একটি খুন করেছে, তাকে সেই খুনের জন্য শাস্তি না দিয়ে ম্যানিপুলেট করা যায় কিনা , ব্যবহার করা যায় কিনা , ক্রমশঃ এমন পরিস্থিতি তৈরী করা যায় কিনা যাতে আগের ব্যক্তির শাস্তির (হত্যার) সাথে সে যুক্ত হয়ে পড়ে ?  অর্থাৎ একজন খুনীকে দিয়ে আরো একটি খুন করিয়ে বিচারের ব্যবস্থা করা যায় কিনা কারণ ইন্সপেক্টর বালরাশ চরিত্রটি যে দীর্ঘদিন ধরে প্রথম ব্যক্তির সঙ্গে ডুয়েল লড়েছে কিন্তু পেরে ওঠেনি, সে সিদ্ধান্তে এসেছে যে ঐ প্রথম ব্যক্তির শাস্তি পাওয়া উচিত এবং সেটা খুন হয়ে যাওয়ার মাধ্যমে। অপরের সম্বন্ধে স্থির সিদ্ধান্তে কেউ পৌঁছলে সে নিজেকেই বিচারক বানিয়ে ফেলে  এবং তার সিদ্ধান্তকে কাজে পরিণত করার জন্য কাউকে ব্যবহার করলে ব্যবহৃত ব্যক্তিটি হয়ে পড়ে ফাঁসুড়ে ! 

    (হ্যাঁ, এই প্যারাটি লেখার পরেই মনে হল এই দেশে বা বিভিন্ন দেশেই ন্যায়বিচারের বাইরে গিয়ে অপরাধীকে হত্যা করে শাস্তি দেওয়ার 'প্রচলিত ' পন্থা এবং সেই কাজে অন্য এক অপরাধীকেই ব্যবহার করার কথা। )

    - গোয়েন্দা ও অপরাধীর মধ্যে যে ডুয়েল, যার আর্কিটাইপ হোমস - মরিয়ার্টির ডুয়েল, সেই ডুয়েলের চরিত্র বদল ঘটে এই উপন্যাসটিতে। অপরাধী ও গোয়েন্দা, অনেক লেখাতেই দেখা যায় একে অপরকে মূল্য দিচ্ছে, অ্যাপ্রিশিয়েটও করছে, টেক্কা দেওয়ার চেষ্টা করছে, কেউ কখনও হারছে বা জিতছে কিন্তু গোয়েন্দা চরিত্র কখনই অন্যকে ব্যবহার করে অপরাধীর মৃত্যু ঘটিয়ে তুলছে না। এই লেখায় যে সেটি ঘটে , তার যুক্তি হিসেবে চল্লিশ বছরের শত্রুতাকে খাড়া করলেও, বোধ করি এই জন্যই ঘটনাটি ঘটিয়ে তোলা যায় কারণ গোয়েন্দা চরিত্রটি একজন পুলিশ। 

    - উপন্যাসটি পড়া শেষ করে ফেলার পরে বোঝা যায় পাঠক যে লেখাটি পড়লেন, সেইটি, যে খুন বা অপরাধ ঘটে গেছে লেখাটির শুরুতেই তার অনুসন্ধান নয়, সাধারণ ক্রাইম নভেলে যেমন ঘটে,  বরং গোয়েন্দা চরিত্র দ্বারা আরও একটি অপরাধ ঘটিয়ে তুলে কীভাবে 'শাস্তি' দেওয়া হচ্ছে তারই বর্ণনা। যদি বলি ক্রাইম নভেলের উদ্দেশ্যই হল একরকমের ম্যানিপুলেশন, অপরাধী ও  গোয়েন্দা যেমন সেইটি একে অপরের প্রতি করার চেষ্টা করে তেমনই নভেল লেখকও গোয়েন্দা গল্পের বিভিন্ন পদ্ধতি দিয়ে পাঠককে ম্যানিপুলেট করার চেষ্টা করে, তাকে ভুল দিকে চালাবার চেষ্টা করে যেহেতু পাঠকের উদ্দেশ্যও হল অপরাধের কারণ ও অপরাধীকে খুঁজে বার করা, তাহলে লক্ষ্য করি এই লেখাটিতে প্রথাগত ম্যানিপুলেশনকে উল্টে দেওয়া হয়েছে, পাঠক বুঝতেই পারে না যে লেখাটির উদ্দেশ্য ক্রাইমের সমাধান নয়, সম্পূর্ণ উল্টোদিকে গিয়ে  অন্য একটি ক্রাইম ঘটিয়ে তোলা ! কিন্তু যেহেতু ক্রাইম নভেলিস্টের উদ্দেশ্য হল ক্লু ছেড়ে দিয়েই পাঠককে বোকা বানানোর চেষ্টা করা, সেই একই ট্রোপ এখানেও ব্যবহার হচ্ছে কিন্তু অন্য কারণে। 

    - উপন্যাসটির প্রায় দুই - তৃতীয়াংশ পেরিয়ে যাওয়ার পরে ইন্সপেক্টর বালরাশ ও তার সহকারী তদন্তের প্রয়োজনে এক লেখকের সাথে দেখা করতে আসে, যে খুনটি ঘটে গেছে এবং খুনের সাথে যুক্ত বলে যাকে সন্দেহ করা হচ্ছে তার সাথে লেখকটির পরিচয় ছিল যেহেতু। কথা শুরু করার আগেই ইন্সপেক্টর বালরাশ ভাবে যে লেখকটি তাদের পছন্দ করছে না, এও ভাবে যে কোন লেখকই পুলিশকে পছন্দ করে না। সহকারীটি ভাবে, সাবধানে কথা বলতে হবে, না হলেই এনার পরের বইতে তাদের চরিত্র করে ঢুকিয়ে দেওয়া হবে !  আরো ঘটে যে তারা তিনজনে নিজেদের জায়গায় বসার পরে বোঝা যায় যে পুলিশ দুজনের মুখের ওপরে একটি জানলা থেকে আলো এসে পড়েছে (অতএব  তারা যেন স্পটলাইটে ) কিন্তু লেখকের মুখটি অন্ধকারে। এও লক্ষ্য করার যে এই পরিচ্ছেদটিতে এবং বইয়ের প্রথম দিকে যখন লেখকটির উল্লেখ করা হয়েছিল, কখনই লেখকের নাম উল্লেখ করা হয়নি, যেন এই লেখক কোন বিশেষ লেখক নয়, যে কোন লেখকই । আমার কাছে এই পরিচ্ছেদটি, তার বিশেষত্বগুলি গোয়েন্দাকাহিনি লেখার বিষয়ে ডুরেনমাটের উদ্দেশ্যর প্রমাণ; যে গোয়েন্দাকাহিনির লেখক আর লেখার উদ্দেশ্য যেন পুলিশ এবং সেই সূত্রে আইন - ন্যায় - বিচার এবং রাষ্ট্র, এইসব বিষগুলিকে স্পটলাইটে ফেলে লক্ষ্য করা। রাষ্ট্রর কথা এবং লক্ষ্য করার কথা লেখকটিই বালরাশকে বলেছিল,  যে লেখকরা পুলিশের মতই, তারাও মানুষকে লক্ষ্য করে, নজর রাখে, শুধু তাদের হাতে রাষ্ট্রের ক্ষমতা, আইনের ক্ষমতা বা জেলখানার ক্ষমতা নেই। এও তো জানা যে ওহালু - স্জোয়াল যুগলের লেখায় বা স্ক্যাণ্ডেনেভিয়ান গোয়েন্দাকাহিনির ধারায় অথবা ১৯৬০ র  দশক থেকে শুরু হওয়া জন লে কারের লেখায় পুলিশ বা স্পাইরা মূল চরিত্র হয়ে ওঠে, কারণ তাদের মধ্যে দিয়েই ঐসব লেখকরা পুলিশ আর রাষ্ট্রের কাজের ধরণকে বিচার করতে থাকেন। 

    ডুরেনমাটের নাটক আমি পড়িনি, কিন্তু সেইসব নাটক সম্বন্ধে লেখা পড়ে যা ধারণা হয়েছে এবং এই বই দুইটি থেকে যা ধারণা করেছি, দুয়ে মিলিয়ে মনে হয়েছে আর্টিস্ট হিসেবে একই রকমের প্রশ্ন থেকেই একই সময় জুড়ে এই গোয়েন্দাকাহিনি ও নাটকগুলো ডুরেনমাট লিখেছেন, দুই ধরণের লেখাই তাঁর আর্টেরই অঙ্গ। এবং গোয়েন্দাকাহিনি নিয়ে ডুরেনমাটের মত আর তাঁর লেখার আরও বৈশিষ্ট্য খুঁজে পাওয়া যাবে দ্য প্লেজ উপন্যাসটিকে প্রসঙ্গ করে। 

    এও মনে হল, ওপরের প্যারায় শেষ বাক্যের  'বিচার করতে থাকেন ' অবধি লিখে, রাষ্ট্র আর অর্থনীতি আজ ব্যক্তিকে গিলে খেয়েছে, লেখকের পুলিশকে লক্ষ্য করার যে দৃশ্যটি ১৯৫০ সালে সত্যি ছিল, সত্তর বছর কেটে যাওয়ার পরে সে দৃশ্য সম্পূণ উল্টে গেছে, পুলিশই আজ ছায়ায়, লেখক আর ক্রিটিকরাই আজ নজরদারিতে, ক্রাইম গল্পের লেখকের আর কোন ক্ষমতাই নেই যেন রাষ্ট্রের সাম্গ্রিক জালকে প্রশ্ন করার, ফলে প্রাইভেট ডিটেকটিভকেন্দ্রিক গল্পই হয়ত লেখা হতে থাকবে, যতদিন না পরিস্থিতি আরো বদলে গিয়ে বা খারাপ হয়ে গিয়ে উল্টোদিকে ঘুরতে পারে। 
     
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • বইপত্তর | ৩০ আগস্ট ২০২৩ | ৫৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সিএস | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:৩২523118
  • .
  • kk | 2607:fb91:149f:50ef:c602:dac5:c51f:301d | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০১:৫৪523119
  • ভালো লাগলো আলোচনাটা। বেশির ভাগ গোয়েন্দা গল্পের মেলোড্রামা আর অবাস্তবতা দেখে দেখে খুব ক্লান্ত। গতের বাইরে বেরিয়ে এসে লেখা পড়তে পেলে খুবই খুশি হই।
  • সৈকত বন্দ্যোপাধ্যায় | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৮:৫২523140
  • দা জাজ অ্যান্ড হিজ হ্যাংম্যান অর্ডার দিচ্ছি। আর কী দেব বলে দাও। 
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:6b8e | ০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:১৫523143
  • হ্যাংম্যান - এর একটা সিকোয়েল আছে, সাসপিশন, পড়ছ যখন পড়ে ফেল। আমি এখনও পড়িনি। The Pledge পড়তেই হবে। আর The Execution of Justice, এটা ডুরেনমাটের আর একটা।
  • একক | ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ০৩:০১523160
  • ডুরেন্মাট একবন্ন পড়িনি। সময় করে পড়তে হবে দেখচি। সিএস কে ধন্যবাদ :)
  • | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:২৪523245
  • বাহ এঁর নামই শুনিনি। ধন্যবাদ ধন্যবাদ। 
    অনেক কটা ফ্রি ইপাব আছে দেখছি। পড়ে ফেলতে হবে। 
  • dc | 2401:4900:1f2b:91d7:889b:adcc:2ec8:cd24 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:০৫523248
  • বেশ কয়েক বছর আগে ডুরেনমাটের তিনটে গল্প পড়েছিলাম - দ্য অ্যাসাইনমেন্ট (লিবজেন থেকে), দ্য প্লেজ, আর সাসপিশান (পরের দুটো কিন্ডলে)। প্লেজ গল্পটা বিশেষ ভালো লেগেছিল, এইজন্য যে আমার ফ্রেম স্টোরি ব্যপারটা খুব ইন্টারেস্টিং লাগে। হ্যাংম্যান পড়া হয়নি, সিএস যখন রেকো দিয়েছেন তখন অবশ্যই পড়বো।
     
    স্ক্যান্ডিনেভিয়ান গোয়েন্দা গল্পর গপ্পো যখন হচ্ছেই তখন সুইডিশ লেখক স্টিগ লার্সেনের উল্লেখ করা যেতে পারে। ওনার মিলেনিয়াম সিরিজের তিনটে বই উনি নিজে লিখেছিলেন, তারপর অন্যরা সিরিজটা কন্টিনিউ করছেন। এই সিরিজের গল্প নিয়ে দুটো সিনেমাও হয়েছে, গার্ল ইন দ্য ড্রাগন ট্যাটু আর গার্ল ইন দ্য স্পাইডার্স ওয়েব, দুটোই অ্যামাজন প্রাইমে আছে, বেশ ভালো সিনেমা। 
  • dc | 2401:4900:1f2b:91d7:889b:adcc:2ec8:cd24 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:১৩523250
  • স্টিগ লার্সেনের লেখা অবশ্য ডুরেনমাটের মতো অতোটা ডিকন্স্ট্রাকশনিস্ট না, তবুও খুব রিয়েলিস্ট আর কনটেম্পোরারি।  
  • | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৪৭523251
  • হ্যাঁ গার্ল উইত দ্য ড্র‌্যাগন ট্যাটু পড়েছি। সিনেমাটা দেখি নি। 
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:6b8e | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:২৬523256
  • শুধু 'দ্য অ্যাসাইনমেন্ট' বললে পুরোটা বোঝা যায় না। বইটার নাম ছিল The Assignment: or Observing the Observer of the Observers ! বইটা পড়িনি, পড়ার ইচ্ছে আছে। গল্পটা মনে হয় জটিল, বিষয় এবং লেখার ধরণে, উভয়ত। অনেকেরই পছন্দ হয়নি।
  • dc | 2401:4900:1cd0:b405:71aa:b3da:5bf1:2a73 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৫:৫১523257
  • হুঁ পুরো নামটা লিখতে ল্যাদ লাগছিল :-p তবে পড়ে ​​​​​​​দেখতে ​​​​​​​পারেন, বিশেষ ​​​​​​​করে ​​​​​​​কদিন আগের ​​​​​​​সিসিটিভি ​​​​​​​নিয়ে ​​​​​​​আলোচনার ​​​​​​​পর ​​​​​​​তো নিশ্চয়ই ​​​​​​​পড়ে দেখতে পারেন। ​​​​​​​
     
     
  • সিএস | 2405:201:802c:7838:9813:2cbe:ba01:6b8e | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৬:০৭523259
  • পিডিএফটা আছে, পড়ব।

    হ্যাঁ, নামটা দেখে নজরদারির কথাই মনে হয়েছিল।
     
     
  • kk | 2607:fb91:149f:50ef:dae4:bb1e:83d5:2798 | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ২১:৩২523274
  • স্টিগ লার্সেন, মিলেনিয়াম সিরিজের সব বইগুলোই পড়েছি। আমার কিন্তু 'গার্ল উইথ দ্যা ড্র‌্যাগন ট্যাটু' গল্পটা যত ভালো লেগেছিলো পরের  গুলো অত ভালো লাগেনি। দ্বিতীয় ও তৃতীয় বইয়ের স্টোরিলাইনে অনেক পোটেনশিয়াল ছিলো কিন্তু সেগুলো সেভাবে ডেলিভার করা হয়েছে বলে আমার মনে হয়নি। স্পাইডার্স ওয়েব তো আরো ছড়ানো ছিটানো। প্রথমটা ছাড়া অন্য বইগুলো পড়ার সময় খুব বেশি মনে হয়েছে যে এগুলো টিভি সিরিজের জন্য লেখা। অনাবশ্যক ডিটেল, লম্বা করা। আর অনেক অবাস্তব সমাধান। বিশেষ করে তিন নম্বর বইয়ে (গার্ল হু কিকড দ্য হর্নেটস নেস্ট) সিগারেট কেস দিয়ে মাটি খুঁড়ে বেরিয়ে আসা এই জাতীয় জিনিষগুলো। তবে ঐ আর কী, সবই পড়ে দেখা যেতে পারে। না পারলে বুঝবোই বা কেমন করে যে বইগুলো কেমন?
    যা হোক, এই সুতোয় বেশ কিছু বইয়ের রেকো পেয়ে খুব ভালো লাগলো। এগুলো পড়ে দেখবো এখন এক এক করে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। চটপট মতামত দিন