অই ননচ্যালান্স! বাংলার আদি ইমোশন। গনেশ জননী হোক বা সতীর দেহত্যাগ বা বটতলার হত্যাকাণ্ডের গপ্প -- পটের মুখাবয়ব জুড়ে সেই টানা টানা চোখ, শরীরে মন্থর রেখার আনাগোনা। যেন অবাক চোখে শুধু দেখে যাওয়া। তাতে ক্রোধ - দুঃখ - ভয় কিছুরই আধিক্য নেই। যেন সব চোখই শিশুর চোখ। তার সামনে কখনো দাদুর বুড়ো আঙুল কেটে নিয়ে যায় নেংটি ইঁদূর, কখনো ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেয় হাতির পাল, কখনো বা পুষি বেড়ালকে গিলে খায় পাড়ার হুমদো কুকুর। ... ...
না, গায়ে পড়তে বুঝি, হাতির বা অক্টোপাসের শুঁড় নয়, কেমন পাকানো পাকানো মাংসল দড়ির মতো আর তার সারা গায়ে কোনও চকচকে তরল। ফট করে বাঁহাত পেঁচিয়ে ধরতেই ঝাঁকুনি দিয়ে ছাড়াই। এহ্ হাতে চটচটে কীসব লেগে গেল। দিলরাজকে হাঁক দি, পালাও এখানে আর না!! কিন্তু সে পাগলের মতো বালি পাথরের খাঁজে, খুঁজে চলেচে তার মড়া বাচ্চার নাড়ি। ... ...
মুখে বসন্তের দাগ , মাথার ডাক্তার , রসিয়ে কেচ্ছা জুড়েছে পেটে পড়তেই : না চিনতাম না। কিকরে চিনবো ? তখন সবে ট্রান্সফার হইছি। একদিন দুপুরে হাজির। দিব্যি আপিসবন্ত মানুষ। বলে কীনা একটা কুকুরকে স্বপন দেখছে রোজ । ... ...
অতিদূর পল্লীপ্রান্তে এক ফয়সালা বৃক্ষশাখায় পিন্টু মাষ্টার ও বলহরি বসবাস করিত । তরুবর শাখাবহুল হইলেও নাতিদীর্ঘ , এই লইয়া , সার্কাস পালানো বানর পিন্টু মাষ্টারের আক্ষেপের অন্ত ছিলনা । এদিকে বলহরি বয়সে অনুজ তায় শিবস্থ প্রকৃতির । শীতের প্রহর হইতে প্রহর বাহিয়া ,লাঙ্গুল বান্ধিয়া ট্রাপিজ দেখাইতো পিন্টু ,বলহরি কোনও একটি নিম্নশাখে অবাক নয়নে বসিয়া খেলা দেখিত । এত কায়েদার লম্ফঝম্ফ তাহার চরিত্রের বিপ্রতীপ । হাত বাড়াইলে ফল , গ্রামে প্রবেশিলে বাগানের কলাটা -ফলসাটা করিয়া উভয়েরই একপ্রকার আমোদে কালাতিপাত ... ...
নিডলটা ঝেড়ে, খাপে ঢুকিয়ে, বিনে ফেলে, সোফায় এসে বসে শ্রাবণ। ললিত উঠে বসে, শোয়া অবস্থা থেকে। ইনজেকশন নেওয়ার তুলোটা দুবার ঘষে ফেলে দেয় তারপর জামার বোতাম আট্কাতে আট্কাতে জিজ্ঞেস করে ;
- কিরে, কোনো সাইড-এফেক্ট নেই তো ?
- সেরকম কিছু না। ইরেকশন কম হতে পারে। কফি টেবিলটাকে হাত দিয়ে টেনে ইঞ্চি তিনেক সরায় শ্রাবণ : ম্যাক্সিমাম ফোর্টি-এইট-আওয়ার্স। নাথিং সিরিয়াস।
হেসে ফেলে। চোখ পাকায়। শ্রাবণ। হাফুবেলার বন্ধু, আর আজকাল, ললিতের 'যখন দরকার পড়ে' ফিজিশিয়ান। ললিত উঠতে গিয়ে সোফাতে আবার ... ...
একটি তেপায়া কেদারা, একটি জরাগ্রস্ত চৌপাই ও বেপথু তোষক সম্বল করিয়া দুইজনের সংসারখানি যেদিন সাড়ে ১২১ নম্বর অক্রুর দত্ত লেনে আসিয়া দাঁড়াইল, কৌতূহলী প্রতিবেশী বলিতে জুটিয়াছিল কেবল পাড়ার বিড়াল কুতকুতি ও ন্যাজকাটা কুকুর ভোদাই। মধ্য কলিকাতার তস্য গলিতে অতটা আধুনিকতা এখনো প্রবেশ করে নাই যে নূতন ভাড়াটে আসিলেও পড়শীদের কৌতূহল যৎপর্নাস্তি সংবৃত থাকিবে । এই ক্ষেত্রে, মালবাহী টেম্পোর সঙ্গে একটি মধ্যবয়স্ক পুরুষ ও প্রায় চলচ্ছক্তিহীন সত্তরোর্ধ বৃদ্ধা ও সেই তেপায়া কেদারা, জীর্ণ চৌপাই ইত্যাদির বা সবকিছ ... ...
সকাল ছটা থেকে আটটা এই সময়টুকু অবিনাশ ফোন ধরেন না । নেবুতলা মাঠে পাঁচ চক্কর , হালকা ব্যয়াম তারপর বাচ্চাদের ফুটবল পেটানো দেখা । ফেরার পথে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কাঁচা বাজার । বাজারটুকু রোজ না করলেও হয় তবে পুরোনো অভ্যেস । চারপাশ এতো দ্রুত বদলায় যে বোঝা যায় আজকাল । আগে যেতোনা , লোটাকম্বল নিয়ে গ্রাম থেকে এসে যে মেসবাড়িতে উঠেছিলেন সেটা বছরের পর বছর কীভাবে ভূতের বাড়ি হয়ে উঠলো , শরিকি মামলা সবই দেখেছেন একটু একটু করে অনেক বছর ধরে । চাকরি পেয়ে পাশের পাড়াতেই সংসার পাতলে যা হয় । সে ছিল ঢিমে তাল । গত তিন বছরে ... ...
যে ধারণ করে সে মাতা । নারীর মধ্যে এই ধারণের রূপটি বর্তমান । তাহারা কেহ জগতের যাবতীয় শংকাকে আপনার মাঝে ধারণ করিয়াছে ,কেহ আবিল আনন্দকে ।কেহ আবার সংসারের অণুপুন্খের মধ্যে যে অন্তর্লীন তিক্তভাব তাহাকে ধারণ করে । সে যেন সবুজ নবীন কারবেল্লীগুল্মের মধ্যে তিক্ততম ফলটি । প্রানীদেহ মধ্যে পিত্তের ন্যায় ।
যৌবনদ্গমকালে ভ্রমরের অভাব হয়না । নলিনীও ব্যতিক্রম নহে । কিন্তু মধুপের দল যথাকালে টের পাইয়াছিল যে কবির নির্দেশ উল্টাইয়া দিয়া ,জিহ্বাগ্র ও হৃদয়ে হলাহলের কোনো পার্থক্য রাখেন নাই সৃষ্টিকর্ ... ...
সামাজিকতা মেটার পরে, যে ঘরটায় কোনোদিন থাকতে চাইনি সেখানেই জায়গা হলো । একটামাত্র খুপরি জানলা । দেয়ালের দিকে মুখ করে ছবির দিকে তাকিয়ে বাবা দাঁড়িয়ে । এই জামাটাই । ছবিতেও । সেই ধর্মতলার দোকান থেকে এনেছিলুম , ঠিকঠাক ফিটিং হতো তখন , কিন্তু দিনদিন শুকিয়ে কেমন হাড়সর্বস্ব হয়ে গেলেন মানুষটা । এখনো দেখছি সেইরকম । জেগে আছে পিঠের ডানা দুটো । পাশে গিয়ে দাঁড়াতে একবার দেখে বললেন : খাওয়া শেষ করতে পেরেছিলে ?
বললুম : না । গলায় আটকে গেলো তো ।
হাসলেন : আমার ও তো তাই , জলের গেলাস অবধি হাত ... ...