এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  •  নতুন বইয়ের বিজ্ঞাপন ঃ শিশুবিতানের হরিং 

    একক লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ৩৫৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • If you’re doing nonsense it has to be rather awful, because there’d be no point.” - Edward Gorey 

     "বিষক্ষয়" গল্পের শিশু নায়ক বিষক্রিয়ায় মৃত্যুবরণ করেছিল। তার বেশ অনেকদিন বাদে লিখি, " ফয়সালা বৃক্ষের কাহিনি ",  নায়ক দুইটি বাঁদরের একটি অগ্নিকান্ডে মারা যায়। পরিস্কার মনে আছে, এক বন্ধু,  আমার হাতেগোনা পাঠকদের একজন,  ফোন করে অনুযোগ করেন, তুমি হরর লিখবে না ননসেন্স আগে ঠিক করো! 

    ধাঁই ধাঁই করে লোক মারচ গপ্প লেখার নামে,  তাও আবার এবসার্ড সব সিচুয়েশন ক্রিয়েট করে! বীভৎস রস বাংলা বাজারে নতুন কিস্যু না। ওসব অনেক পড়েচি। তোমার লেখায় নানা যায়গায় উদ্ভট রস উঁকি দিচ্চে এদিকে বীভৎস আর উদ্ভট মিলে সাররিয়াল চ্যাঙারি হচ্ছে তাও নয়। এসব কী!!  

    আমার কাছে যে স্পষ্ট উত্তর ছিল তা নয়। থাকলেও ফুটনোটের খাতা খুলে বস্তুম না নিশ্চিত। কিন্তু প্রশ্নটা নিজের মধ্যে ছিলো।  এক্সিস্টেনশিয়াল লেখা কি নন্সেন্স কে সরিয়ে রেখে হয়!  এই উপরের কোটেশনটা যদি বেকেটের নামে চালিয়ে দিতুম তাহলে?? এইযে গালভরা অস্তিত্ববাদ, এর-ও একটা হয়ে ওঠা আছে ত শিশুকাল থেকে বড় বয়েস অব্ধি।  একটা পয়েন্টলেস জীবনকে আমরা যেভাবে দেখি শিশুরাও কি সে চোখে দেখে?  

     মুশকিল হল ঃ আমি এখনো চোখ খুলে,  হ্যাঁ খুলেই দেখতে পাই,  তিনবছর বয়েসে আমাদের আলমবাজারের ভাড়া বাড়ির দেয়াল জোড়া মসের কারুকাজ,  ভেজা মস,  শুকনো বাদামী মসের দিকে তাকিয়ে হাঁ করে বসে থাকা, কত শত গোপন চিন্হ,  ছবি,  আর ঠিক পরদিন আবিষ্কার করা ঃ মা একটা স্ক্রাবার দিয়ে ঘষে গোটা দেয়াল " পরিস্কার " করে ফেলেচেন। সব ফাঁকা।  নেই। যাস্ট নেই। পয়েন্টলেসনেস বুঝতে আমার তত্ত্ব লাগেনি। 

    শিশুদের মন বোঝার চেষ্টা আমি কখনো করিনি। যখন শিশু ছিলুম তখনই করিনি। বালকসুলভ চপলতায় 'ঙ' পেতুম নীচু ক্লাসে। কাজেই এখন আর কী করব!  আমি শুধু সেই শিশুটিকে চিনি যেটা আমি। যে প্রথমবার মৃত্যু দেখে আনন্দ না পেলেও অদ্ভুত কিছু একটা ঘটেচে এই অনুভূতিতেই মশগুল ছিল কয়েকদিন। অন্তত।  

    হারাধনের দশটি ছেলের ছড়া পড়ে মজা পেয়েছি।  পেট ফেটে মস্ত ছাতুর মট বেরিয়ে আসার ছবি দেখতুম তারিয়ে তারিয়ে। লিয়ার আশ্রিত সত্যজিতের  কবিতায় কাঁকড়া তাড়া করচে মানুষকে এর মধ্যে যে অদ্ভুত মজা,  এক্সটিক ব্যাপার তা আমার মুগ্ধ করেচে,  করে। গ্রিম ভাইদের গল্পে সেই বাচ্চাটি যে স্রেফ অপেক্ষা করে করে ঠান্ডা পাথর হয়ে গেল শীতের রাতে এক গির্জার  দরোজায়,  আমি তার জুতোয় নিজেকে খুঁজে পাই। রোমান্টিসিজম?  ধ্রুপদী অর্থে হয়ত। চলিত অর্থে নয়।
     
     আর গোরে?  এডোয়ারড গোরে,  যাঁকে বারবার এতবার উল্টেপাল্টে পড়েছি,  সুকুমার ছাড়া আর কাওকেই অতবার নয়। এই একজন আমাকে আস্থা দিলেন। চরৈবেতির ইংরেজি কী অবশ্য জানি না।


    এই বই- এর শুরুটা সহজ ছিল না। গপ্প - কবিতার পাশাপাশি  চার - ছয় লাইনের ছড়াগুলি লিখে লিখে রাখছিলুম। কিন্তু চিত্রকর?  আঁকবে কে??  সায়ন শুরুর দিকে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিল, কিন্তু তার সময় বাড়ন্ত। ইলাস্ট্রেটর দের সঙ্গে কথা বল্লুম।  আমি ত হাউ মাউ করে ম্যাকাবার নন্সেন্স ইত্যাদি প্রচুর জ্ঞানের কথা বলে যাই,  কিন্তু কেও কম্ফোর্ট জোন ছেড়ে বেরতে চান না। সত্যি, এই পেশাদারী জগতে কোন শিল্পীর সময় আছে আলাদা করে স্টাইল ডেভেলপ করার শুধুমাত্র একটি ছড়ার বইয়ের জন্য!!  এই করে সময় পেরোতে লাগলো। অবশেষে অভীক খানিক বন্ধুকৃত্য করতেই এক- দুটো ছবি এঁকে ব্যাপারটা বুঝে নিতে চাইল। আমি আবদার ধরলুম,  পটচিত্র থেকে  আদলটুকু নিতে হবে। কেন?  
     


    অই ননচ্যালান্স!  বাংলার আদি ইমোশন। গনেশ জননী হোক বা সতীর দেহত্যাগ বা বটতলার হত্যাকাণ্ডের গপ্প -- পটের মুখাবয়ব জুড়ে সেই টানা টানা চোখ,  শরীরে মন্থর রেখার আনাগোনা। যেন অবাক চোখে শুধু দেখে যাওয়া। তাতে ক্রোধ - দুঃখ - ভয় কিছুরই আধিক্য নেই। যেন সব চোখই শিশুর চোখ। তার সামনে কখনো দাদুর বুড়ো আঙুল কেটে নিয়ে যায় নেংটি ইঁদুর,  কখনো ট্রেনের ধাক্কায় নিহত হয়ে চিরঘুমের দেশে পাড়ি দেয় হাতির পাল,  কখনো বা পুষি বেড়ালকে গিলে খায় পাড়ার হুমদো কুকুর। 

    অভীক ফাটায়ে দিয়েসে!!  এককথায়।  এত কম সময়ে,  ধৈর্য নিয়ে,  কম্ফোর্ট জোনের বাইরে বেড়িয়ে,  বারবার পাল্টিয়ে আঠাশটি ছড়ার জন্যে আঠাশটি দূর্দান্ত ছবি এঁকে বইখানি যা দাঁড়িয়েছে তা পাঠক হাতে নিলেই বুঝবেন। এখানে ছবি মানে বাংলা বইয়ের তথাকথিত ইলাস্ট্রেশন নয় - বারংবার ছড়া ও ছবির দিকে ফিরে ফিরে তাকাতে হবে বিষয়কে ভেতরে নিতে হলে। 
     

    যাঁরা এখনো শিশু তাঁদের অবিশ্যি অত চাপ নেই। হাঁ করে তাকালেই বুঝে যাবেন। জুতোর বাক্সে কুকুরছানা  রেখে একদিন ইস্কুল ফেরত এসে দেখা,  বাক্সো নেই,  কুকুরছানা ও গায়েব,  আর রান্নাঘরে মা একটু বেশি ব্যস্ত অন্যদিনের চে --- এর অর্থ কী, আমরা তো জানিই।
     
     
     
    বই ঃ শিশুবিতানের হরিং 
    প্রকাশক ঃ সৃষ্টিসুখ প্রকাশনা। 
    প্রাপ্তিস্থান ঃ স্টল নং ১২৪ ( ২ নং গেটের পাশে) 

     
  • বইপত্তর | ২৭ জানুয়ারি ২০২৩ | ৩৫৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নাইটো - একক
    আরও পড়ুন
    সিপাহী - একক
    আরও পড়ুন
    প্রহাস - একক
    আরও পড়ুন
    স্বাদ - একক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • একক | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৪:৪০516046
  • #
  • যদুবাবু | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৩516047
  • দারুণ আইডিয়া। আর অভীকের ইলাস্ট্রেশনগুলো মারকাটারি হয়েছে আহা শুধু ঐগুলোর জন্যেই এক পিস বাগাইবো। আঁকতে-লিখতেও খুব মজা হয়েছে অনুমান করতেছি। তবে দেখে যে বেশ আঁতকে উঠেছি অস্বীকার কর্বো না। 

    মনে পড়ল, আমার কার্টুনপ্রেম জেনে আমার এক রুমমেট আমাকে একদা হ্যাপি ট্রি ফ্রেণ্ডস দেখিয়েছিল। উফ সেই রাত ভুলিনি। 

     অবশ্য, এই কদিন আগেই একটা ছেলেভুলানো ছড়ার বই পড়ছিলাম, 'খুকুমণির ছড়া'। কেন পড়ছিলাম শিওর নই। তবে মাঝে মাঝে দু-একপিস ছড়া-ছবিতে বেশ নাইট্মেয়ারিশ মশল্লা আছে। এই যেমন একটা ... দেখেই ভাব্লাম এই ছপি কতবার ছোটোবেলায় দেখেছি, উল্টেপাল্টে, নিশ্চয়ই খ্যালখ্যাল করে হেসেছিলাম কে জানে। এখন দেখে ভয় করল। 

  • র২হ | 2601:c6:c87f:c858:f596:33a3:c5e:1b4a | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৬:৫৭516048
  • হরিং দৌড়ক।
    এই প্রোজেক্টটার সংগে জুড়তে পারলে মনে করতাম একটা কিছু কাজ করলাম। নিজের অমনোযোগে হলো না- পরিতাপ, সময় টময় তো অজুহাত।
     
    কিন্তু ছবিগুলো চমতকার হয়েছে। অনেক পাঠকের কাছে পৌঁছোক।
     
    ছড়াগুলি পড়েছি; এককের লেখা নিয়ে  নতুন কিছু বলার সাধ্য নেই।
  • প্যালারাম | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ০৮:৫৮516049
  • এইটে কিনছি।
    পড়তে পড়তে 'The Adventures of the Princess and Mr. Whiffle: The Thing Beneath the Bed' মনে পড়ে গেল। প্যাটিক রথফাসের একটা রিডিং-ও বোধহয় আছে ইউটিউবে।
  • হরিংয়ের জন্য একক | 162.247.74.7 | ২৯ জানুয়ারি ২০২৩ ১২:২০516052
  • হরিণের জন্য একক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। পড়তে পড়তে মতামত দিন