এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  অর্থনীতি

  • আর্থিক স্বাধীনতার এক নিভৃত কারিগর 

    মোহাম্মদ কাজী মামুন লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | অর্থনীতি | ২৪ আগস্ট ২০২৩ | ৭৭১ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • ছেলেটি ঘামছিল দরদর করে, মাঝে মাঝে রুমাল দিয়ে মুছে নিচ্ছিল মুখমন্ডল, সারা শরীর যেন ভেঙ্গে পড়ছে ক্লান্তিতে, তবু উঠার নামগন্ধ নেই। তার সামনে একটি টেবিল, একটি ল্যাপটপ, আর এক গাদা কাগজপত্র। বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নেমে এসেছিল, আর এই অজ পাঁড়াগায়ে বিদ্যুত পৌঁছুলেও  খেয়াল খুশীমত সে আসা যাওয়া করতো, তাই যখন পাশেই রাখা বিশাল স্ট্যান্ড ফ্যানটা ঠায় দাঁড়িয়েছিল নির্বাক, নিঃশব্দ, সামনে-পেছনে-ডাইনে-বায়ে গোল হয়ে দাঁড়ানো প্রায় জনা ষাট-সত্তর মানুষ, তাদের মধ্যে ছেলে-বুড়ো-বউ-ঝি কেউই বাদ পড়েনি, একটুও কুন্ঠিত হচ্ছিল না, ব্যাপারটা তাদের এতটাই গা সওয়া  - বরং তারা প্রবল আগ্রহ নিয়ে দেখছিল ছেলেটির কাজকর্ম, তাদের জন্য আজ এক বিষ্ময়ের দিন, আজ নাকি তাদের ব্যাংক হিসাব খোলা হবে! ব্যাংক যে তারা দেখে না তা না, উপজেলা সদরে ব্যাংকের দিকে চোখ তুলে তাকায় মাঝে মাঝে, জানে এখানে অনেক অনেক টাকা পয়সা থাকে, সমাজের বড়লোকদের অনেক কাজ থাকে এখানে। গ্রামের প্রত্যন্ত কোণে পড়ে থাকা এই মানুষগুলির মধ্যে কেউ কেউ যে একটু সাহস করে ঢোকেনি ঐ ব্যাংকগুলিতে, তা নয়; কিন্তু স্যান্ডেলটা বাইরে রেখে দুরুদুরু বুকে যখন ঢুকেছে, একটা কথাও বলতে কেঁপে উঠেছে অন্তরাত্মা। অফিসারদের দূর থেকেই দেখে ভয় লেগেছে, কোট প্যান্ট পরা বিদেশী লোকেদের মত দেখতে, শুনেছে তারা নাকি ইংরেজীতে কথা বলে, তাদের কাজকারবারও নাকি সব ইংরেজীতে। কিন্তু এই ছেলেটি কি আজব, একদম কথা বলছে তাদের ভাষায়। আর তার সাথে রয়েছে আরও কয়েকটি ছেলে-মেয়ে, তারা তো তাদেরই গ্রামের, কলেজে পড়ছে। নতুন জিনিস দেখার বিষ্ময় এক সময় কেটে এলেও তারা স্থানটিতে ভীড় করেই থাকে, এক নতুন ধরণের বাতাস তাদের দেহে পরশ বুলিয়ে যায় -  বিদেশ থেকে তাদের আপনজনেরা টাকা পাঠালে ঘরের কাছের এই ব্যাংক থেকেই নাকি তুলে নিতে পারবে, আর বিদ্যুত বিল জমা দিতে এখন থেকে আঠারো কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে হবে না। তাদেরও ব্যাংক একাউন্ট হবে, তাদের একটা নাম্বার থাকবে, যেই নাম্বারে সরকার থেকে আসা ভাতা সরাসরি চলে আসবে, আগে ধর্না দিতে হতো মেম্বারদের কাছে, জানতেও পারতো না, কার ভাগ্যে কি জুটবে, বা আদৌ জুটবে কিনা কিছু।  এইখানে নাকি তারা নিরাপদে টাকা জমা রাখতে পারবে, চুরির বা ঠকার ভয় থাকবে না।  চাইলে নাকি ঋণও পাবে, কৃষি বা দোকানদারির জন্য, মহাজনের কাছে ধর্না দেয়া লাগবে না, এও কি সম্ভব?

    এদিকে ছেলেটি কাজ করেই যাচ্ছে, ওভার টাইম, কিন্তু জানে কোন পয়সা নেই এর জন্য, এমনকি এই চাকরিটার জন্যই  কতই বা আয়। যখন পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেখেছিল ঢুকে পড়েছিল, অনেকেই মানা করেছিল, কিন্তু সে তার বড় ভাইয়ের মত দুবছর অফিসে অফিসে ঘুরতে চায়নি; জুতোর তলি খোয়াতে তার আপত্তি ছিল না, কিন্তু মানুষের কথা, গঞ্জনা থেকে ভেবেছিল দূরে থাকতে পারবে। কিন্তু আজ যখন সে পথে পথে ঘুরে, তখন শুধু মানুষের সালাম পাওয়ার জন্য না, বরং সে যে একটি সমাজকে বদলে দিচ্ছে, সেরকম একটা মহৎ কিছু করতে পারার আনন্দে উদ্বেল হয়ে উঠে তার দেহ মন। ছেলেটির সাহায্যে নিয়োগ পেয়েছে এলাকার গোটা পাঁচেক উঠতি ছেলে-মেয়ে। ওরাও যে কি এক বিপুল আনন্দ নিয়ে কাজ করে! অথচ ওদের আয় বলতে খুবই সামান্য কিছু অর্থ। কিন্তু কিছু একটা করা, যা গুরুত্বপূর্ণ, যাতে জীবনের অর্থ ফুটে উঠে সম্যক, জীবন যাপনের একটা অর্থ খুঁজে পায় মানুষ, তা পেয়েছে তারা।

    বাংলাদেশে এমনি অগণিত মানুষ এক ছিল যারা আর্থিক অন্তর্ভূক্তির বাইরে ছিল, তাদের চাহিদা ছিল ব্যাংকিং সেবার। গ্লোবাল ফিনটেক্স ডাটাবেইজ ২০১৭ অনুযায়ী, ১৫ বছরের বেশী বয়সী বাংলাদেশীদের মধ্যে মাত্র ৫০ শতাংশের ব্যাংক একাউন্ট ছিল।  অন্যদিকে, বাংলাদেশে আরো অসংখ্য তরুণ ছিল যাদের যোগান চাকরির বাজার উপচে পড়ছিল। অথচ এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা ও যোগানের ব্যবধান পূরণে কেউ এগিয়ে আসছিল না। আর্থিক আওতার বাইরে থেকে শোষিত হচ্ছিল বিস্তর মানুষ, অন্যদিকে, চাকরীর বাজার থেকে ছিটকে হতাশায় অনেক তরুণের হয়েছিল মরণ দশা, কেউ কেউ আইন পরিপন্থী কর্মকান্ডে জড়িয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু এতগুলো সমস্যার সমাধানে তুরুপের তাস ছিল আমাদের হাতেই, শুধু তাকে দেখার মত, বের করে আনতে দরকার হত এক জোড়া দুর্ধর্ষ চোখ, যে আজ থেকে একশো বছর কি হতে যাচ্ছে, তাও দেখতে পায়।

    মোঃ আরফান আলি তখন ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টরের দায়িত্ব পালন করছেন একটি ব্যাংকের। রিটেইল ব্যাংকিং এর সাথে একটি বাড়ি একটি খামার এর প্রকল্পকেন্দ্রিক দায়িত্ব তার হাতে এল। তিনি কাজ করতে করতে পদ্ধতিটার সমস্যাগুলো দেখতে পেলেন, এইগুলো উন্নত করার চিন্তা করতে করতে তার মাথায় এল, আরে, আমাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থাটাই তো খোলনলচে বদলে দেয়া যায়। যেমন করে, একটি বিষয়ের চিন্তা করতে অন্য অনেক মহান আবিষ্কারের কথা জানতে পারা যায় ইতিহাসের পাতায় পাতায়।

    একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্পের জন্য গ্রামের প্রান্তিক মানুষ ব্যাংকে হিসাব খুলছে, ২০০ টাকা করে জমা দিচ্ছে, ব্যাংকও সরকারী অনুদানের মাধ্যমে ২০০ টাকা করে দিচ্ছে; পরে প্রান্তিক লোকগুলি মুরগি পালন, সবজি চাষ, বাছুর ক্রয় ইত্যাদির জন্য ক্ষুদ্র ঋণ পাচ্ছে। কিন্তু মানুষগুলির ব্যাংকে আসা খুব কষ্ট, অনেকটা পথ অতিক্রম করে আসতে হয় তাদের, সারাটা দিন ব্যয় হয়ে যায় তাদের, প্রান্তিক এই মানুষগুলোর জন্য একটি দিনের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড খুব খুব গুরুত্বপূর্ণ। এছাড়া, মানুষগুলি কেমন একটা ভয়-ভীতির মধ্যে থাকে, ব্যাংকের সব কিছু তাদের দূর প্রবাসের মত মনে হয়।  এই যে প্রচলিত মডেল, শহরের বাণিজ্যিক লাভজনক শাখার পাশাপাশি  কিছু গ্রামীণ শাখা করার বাধ্যবাধকতা, এবং পরবর্তীতে গ্রামের শাখাগুলোর মাধ্যমে গড়ে তোলা আমানতের পাহাড় শহরের শিল্পপতিদের হাতে তুলে দেয়া, যাদের অনেকে আবার সেই টাকা চুরি করে বিদেশে নিয়ে যাবেন, বেগমপাড়া বানাবেন কানাডার মত -  এই ব্যবস্থা বদলানোর, চক্র ভাঙ্গার একটা প্রচন্ড তাগিদ অনুভব করলেন আরফান আলী।

    একটি বাড়ি একটি খামারের কাজ করতে যেয়ে তার মধ্যে দৃঢ় বিশ্বাস জন্মেছিল, প্রান্তিক মানুষকে ব্যাংকমুখী করা যায়, শুধু তাদের জীবনমান উন্নয়নের স্বপ্নটা দেখাতে হবে। তিনি বাংলাদেশ ব্যাংকে তার পরিকল্পণা বিশদ আকারে তুলে ধরেন। পরিকল্পণা প্রনয়নের সময় তিনি নিশ্চয়ই আফ্রিকাসহ কিছু দেশে প্রচলিত প্রান্তিক ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে বাংলাদেশের পরিবেশ, পরিস্থিতি ও চাহিদাকে মিলিয়ে দেখেছেন। তখন গভর্নরের দায়িত্বে ছিলেন ড. আতিউর রহমান। আর তিনি তো সারাজীবন এই প্রান্তিক মানুষগুলোর সাথেই ছিলেন, সেখান থেকেই উঠে এসেছেন, বেড়ে উঠেছেন; তো তাদের কি করে উন্নয়নের মূল সোপানে পৌঁছে দেয়া যায়, তা নিয়েই তো মশগুল থাকতেন সারাটাক্ষণ। সুতরাং, আরফান আলীর এই প্রস্তাব যেন বীন বাজিয়ে দিল কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তার জন্য বরাদ্দ কক্ষে, ঝাঁপিয়ে পড়লেন একে বাস্তবরূপ দিতে, উদ্বোধন হয়ে গেল দেশের প্রথম এজেন্ট ব্যাংক মুন্সীগঞ্জে, ২০১৪ সনের ১৭ জানুয়ারি। ইতিহাসের অমোঘ নিয়তিতেই যেন আরফান আলী পেয়ে গেলেন ড. আতিউর রহমানের মত আরেক যুগনায়ককে!

    আজ থেকে ৯ বছর আগের কথা, মোঃ আরফান আলী শাখা ব্যবস্থাপকদের সভা ডেকেছেন। “আপনারা আমায় কথা দেন, আপনারা প্রত্যেকে আমায় ৫ টা করে এজেন্ট ব্যাংক দেবেন বছর শেষে।“ – এমন আহবানের পর উপবিষ্ট অতিথিদের ভাল করে নিরীক্ষণ করলেন -  অনেকে নির্বাক মুখে বসে আছে, তারা অনেকেই বুঝতেই পারছেন না এই ব্যাংকিং, তাহলে কি করে জনপ্রিয় করবেন এই নতুন ধারার ব্যাংকিং। আরফান আলী যেন আশ্বস্ত করতেই বলে উঠলেন, “কঠিন কিছু না, আপনারা একজন শিক্ষিত, গ্রহণযোগ্য, মোটামুটি স্বাবলম্বী মানুষ খুঁজে বের করেন, যে চাকরি খুঁজতেসে, তাদের জন্য এইটা হবে সব থেকে ভাল চাকরি।‘’ তার কথা হাওয়ায় মিলিয়ে যাচ্ছিল, ওদিকে শুরু হয়েছে গুঞ্জন - এইটা কি সম্ভব? গ্রামের মুর্খ অশিক্ষিত মানুষ ফিংগার ডিভাইস বুঝতে পারবো? না, টিকবে না! শেষমেষ, তিনি আবেগদীপ্ত কণ্ঠে সভাকক্ষ প্রকম্পিত করে ঘোষণা করলেন, “বাংলাদেশের প্রতি তিন কিলোমিটারে একটি করে এজেন্ট ব্যাংক হবে, আজ থেকে পাঁচ বছর পর আপনারা গর্বিত হবেন আপনাদের এই কাজের জন্য, বটগাছের শিকড়ের মত ছড়িয়ে যাবে সারা দেশে এজেন্ট ব্যাংক।“ ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, পাঁচ বছর লাগেনি, তার আগেই বাংলাদেশে ব্যাংকিং ব্যবস্থা যেন এক রূপকথার জগতে প্রবেশ করে।

    মোঃ আরফান আলী প্রথম এজেন্ট ব্যাংকটির পর দুর্বার গতিতে এগিয়ে যেতে থাকলেন, এমন একটি প্রজেক্ট নিয়ে মেতে রইলেন দিনরাত, যা নিয়ে খুব বেশী আয় উপহার দেয়া যায় না উদ্যোক্তাদের, সে স্থানীয় এজেন্টই হোক বা ব্যাংকের বোর্ডই হোক। সুতরাং, একটা প্রবল চাপ হয়ত ঘিরে থাকতো অহর্নিশি। কিন্তু তিনি সমর্থন পেয়েছিলেন তখনকার পরিচালকদের কাছ থেকে, যারাও একটি সার্থক উন্নয়ন মডেলের অংশীদার হওয়ার পথ থেকে সরে দাঁড়াতে চাননি। এছাড়া তিনি পেয়েছিলেন তার সহকর্মীদের , এক ঝাঁক দুরন্ত, অসাধারণ প্রত্যয়ী মানুষ। এমনো দিন গেছে, সারা দিন ধরে প্রায় আটটা এজেন্ট ব্যাংক উদ্বোধন করেছেন, আর কোন কাজ করতে পারেননি তার পোর্টফোলিওর;  কিন্তু দমে যাননি, কারণ তার মনে যে তখন নতুন কিছু করার, পরিবর্তনের উত্তাল স্বপ্ন। তিনি জানতেন, প্রচলিত ব্যাংকিং দিয়ে হবে না, সমাজটাকে বদলাতে হলে এ পথেই করতে হবে। নিজে সারা জীবন কর্পোরেট ব্যাংকিং করেছেন। আজ সেখান থেকে ফিরে মাটির ব্যাংকিংয়ের গন্ধ শুঁকতে লাগলেন প্রাণভরে, লোকচক্ষুর আড়ালে-আবডালে পরে থাকা দুনিয়া থেকে হিরে তুলে আনার স্বপ্ন দেখলেন, শেকড় থেকে উদ্যোক্তার বীজ বপন করে অর্থনৈতিক বীজ বপন বিরাট মহীরুহ গড়ার লক্ষ্য তার।  

    মহীরুহ যে গড়ে উঠছে তার জন্য নীচের তথ্যগুলোই যথেষ্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চ-২০২২ প্রান্তিকের এজেন্ট ব্যাংকিং রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, ২৯ টি ব্যাংক এজেন্ট ব্যাংকিং কার্যক্রমে নিয়োজীত রয়েছেন ১৪,১৬৬ জন এজেন্ট পরিচালিত ১৯,৫৩০ টি আউটলেটের মাধ্যমে, যারা ইতোমধ্যে প্রায় এক কোটি একান্ন লাখ তিরানব্বই হাজার একশো ছেচল্লিশটি হিসাব খুলতে সক্ষম হয়েছেন, যার ৪৯% খুলেছেন নারী গ্রাহক, আর ৮৫.৮০% হল গ্রামীণ গ্রাহক, ৮৬.০১% আউটলেট গ্রামে।  এই হিসাবগুলোর মাধ্যমে এ পর্যন্ত আমানত জমেছে ২৫,১৬৪.৯৬ কোটি টাকা, ঋণদান হয়েছে ৬,৪২১.৪৬ কোটি টাকা, এবং রেমিট্যান্স এসেছে ৮৪,৭১৫.০৭ কোটি টাকা।  আরফান আলি অবশ্য পুরো সন্তুষ্ট নন ঋণের ফিগার নিয়ে, লোন টু ডিপোজিট রেশিও মাত্র ২৫.৫২%, যেখানে  গ্রামের এজেন্ট ব্যাংকের বরাদ্দ ৬৪.৯০%, শহরের ৩৫.১০%। তবে আশার কথা হচ্ছে, ঋণ-আমানতের হারের সাথে সাথে শহর-গ্রামের ব্যবধানও আস্তে আস্তে কমে যাচ্ছে।  

    এজেন্ট ব্যাংকের এই গৌরবদীপ্ত অভিযানে সমালোচকদের তীর অবশ্য এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ থাকেনি - এজেন্টরা টাকা পয়সা নিয়ে পালিয়ে যাবে, গ্রামের মানুষ এই টেকনিলোজি ভিত্তিক ব্যাংকিং কিছুই বুঝবে না, তাদের ইচ্ছেমত ম্যানিপুলেট করা যাবে। কিন্তু আরফান আলী জানেন, গ্রামের মানুষও টেকনোলজিকে সাদরে বরণ করে নেয়; তিনি তার নিজের গ্রামে দেখেছেন, কি করে অশীতিপর বৃদ্ধা তার মধ্যপ্রাচ্য-প্রবাসী ছেলের সাথে ভিডিও কনফারেন্সিং করছেন। চিরকালই নতুনকে বরণ করে নিতে এক দল লোকের অনীহা, এ তো সেই এনআইডি সিস্টেম প্রবর্তনের সময়ও তিনি দেখেছেন। সে সময় দেশব্যাপি এক দল লোকের সমালোচনার তীর ছুটছিল দুরন্ত বেগে, বাংলাদেশের দরিদ্র ও অশিক্ষিত মানুষ যাদের খাওয়া পরার ঠিক নেই, তারা এনআইডির মর্ম কি করে উপলব্ধি করবে? কিন্তু আরফান আলী জানতেন, যে লোকটার চালচুলো নেই, সেও তো তার দলিল দস্তাবেজটা বুক আগলে রাখে। আসলে মানুষকে স্বপ্ন দেখাতে হয়, তাহলে তারা গ্রহণ করবে না, এমন কিছু আছে পৃথিবীতে? সাধারণ মানুষের এই অসাধারণ শক্তি ও ক্ষমতার উপর আরফান আলীর ছিল পুরোপুরি বিশ্বাস। একটি ছোট জায়গা থাকবে এজেন্ট ব্যাংকের জন্য, এখনকার  মত ঢাউস কোন পরিসর নিয়ে জায়গার অপচয়ের মানেই হয় না। আর হ্যাঁ, যে জায়গায় ব্যাংক হবে, সেই এলাকা থেকেই এজেন্ট নেয়া হবে, কারণ শহর থেকে যেয়ে ব্যাংকিং সেবা দেয়ার মধ্যে আরফান আলী একটা দূরত্ব ও অন্যয্যতা অনুভব করেছিলেন; তিনি মনে করতেন,  চেনে না, জানে না, এমন লোকের সাথে গ্রামের লোক কখনই একাত্ম হতে পারবে না। মন দিয়ে তাদের ভাল চিন্তা করা বা সেবায় হয়ত ঘাটতি থেকে যাবে। নিজেদের লোকের উন্নতি চাওয়া মানুষের চিরায়ত স্বজাত্যবোধের চেতনা থেকে উৎসরিত, তো  কোন স্থানীয় এজেন্ট নিজের মানুষকে কি করে পথে বসাতে পারে? আরফান আলীর কাছে ছিল এ এক অতি দূরবর্তী সম্ভাবনা; কিছু ঘটনা হয়ত এড়ানো যাবে না, কিন্তু তা ‘কিছু ঘটনা’ হয়েই থাকবে। আমরা আজ যখন পেছনে ফিরে তাকাই, তখন দেখি আরফান আলীর ভাবনা সঠিক ছিল। দুর্ঘটনার সংখ্যা সত্যি হাতে গোনা।

    এজেন্ট ব্যাংক শুরু হওয়ার পর এজেন্ট খোঁজা ছিল এক বড় চ্যালেঞ্জ। অনেক শিক্ষিত বেকার আগ্রহী হল, কিন্তু তাদের অভিভাবকেরা চুড়ান্ত প্রতিরোধ নিয়ে দাঁড়ালেন, কারণ যখন শুনলো যে, প্রথম দুতিনবছর লোকসান গুনতে হবে, তাদের ভ্রু পুরোটাই কুঁচকে গেল, আধুনিক ফাইনান্সের ব্রেক ইভেন মডেলের সাথে তো তাদের খুব পরিচয় নেই। যাহোক, কেউ কেউ তাও সাহস করে এগিয়ে এলেন। কিন্তু এরপর শুরু হল প্রচলিত ব্যাংকিং এর সাথে ক্ষণে ক্ষণে তুলনা, ওরা এইটা পারে, এজেন্ট ব্যাংক কেন পারে না? একজন এজেন্ট প্রথমে একটি মাদার একাউন্ট খোলে মূল ব্যাংকে, সেখান থেকে টাকা উঠিয়ে দেয় তার গ্রাহকদের, আবার গ্রাহকেরা টাকা জমা দিলে, তা আবার ঐ মূল একাউন্টে জমা দিয়ে ব্যালেন্স ঠিক রাখতে হয়, না হলে, চেক পেমেন্ট করা কঠিন হয়ে যায়। এই যে এজেন্ট ব্যালেন্স, তারও একটি সীমা আছে, যা আবার খুব বড় নয়। আসলে সর্বত্র যা হয়, শুরুতে পরীক্ষামূলকভাবেই সীমিত রাখতে হয় সুবিধাগুলি, এক সময় সাফল্য দেখাতে সক্ষম হলে আস্তে আস্তে সব হয়, এবং হয়েছেও তাই, এখন কাস্টমাররা ডেবিট কার্ড পাচ্ছে না শুধু, কেউ কেউ তো গ্রামে বসে এলসিও খুলছে। তাই এজেন্ট ব্যাংকিং শুধু আর্থিক অন্তর্ভুক্তিকরণ নয়, শহর-গ্রামের যে দূরত্ব, সামাজিক যে বৈষম্য, তার জন্যও কিন্তু বড় উত্তর।  এ হচ্ছে সুষম উন্নয়নের চাবিকাঠি, যা নিয়ে আমরা যুগযুগান্তর ধরে ভেবেছিলাম, কিন্তু কোন কুল কিনারা করতে পারছিলাম না। শুধু তাই নয়, সামাজিক নিরাপত্তা জাল এখন শক্তমত ফেলা যাচ্ছে প্রান্তিক মানুষের নদীতে, স্বয়ং প্রধামন্ত্রী উদ্বোধন করেছেন এজেন্ট ব্যাংক একাউন্টে বয়স্ক ভাতা, বিধবা ভাতার অর্থ বিতরনের কার্যক্রম। সামাজিক অনাচারকে এইভাবে কোন ঢালতলোয়ার, সৈন্যবারুদ ছাড়াই নিরবে নিভৃতে উপড়ে ফেলার কৌশল – বিশ্বেই মনে হয় নজিরবিহীন।

    কিন্তু প্রান্তিক মানুষের জন্য তো আমাদের মাইক্রো ফিনান্স প্রতিষ্ঠান তো ছিলই। তবে সেগুলো কি সব ব্যাংকিং সুবিধা প্রদান করতে পারতো? অথবা, তাদের সুদের হারও ছিল আকাশ ছোঁয়া। সেই তুলনায় একজন গ্রাম্য প্রান্তিক কৃষক মাত্র ৯% হারে বা ক্ষেত্রবিশেষে আরো প্রণোদিত হারে ঋণ সুবিধা পাচ্ছেন, বাড়ির পাশেই মাত্র মিনিট পাঁচেক হাটার দূরত্বেই পাচ্ছেন প্রবাস থেকে পাঠানো আয় তুলে নিতে, এসবের হিসেবে করলে পদ্মা সেতুর সমতূল্য জিডিপি-অবদান চলে আসতে পারে, কিন্তু সেই হিসেবে চোখ নেই এজেন্ট ব্যাংকের কারিগরদের।  শুরু থেকেই এজেন্ট ব্যাংকের কাজটি হয়েছে এক নিরব বিপ্লবের মত করে, যুগান্তকারী কাজ হলেও তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে সামান্যই। আরফান আলী হয়ত ভাবেন, আরো অনেক যুগ পরে আছে একে নিয়ে আলোচনার জন্য,  এখন বরং কাজের সময়, আরো অনেক পথ বাকী আছে যে। এক বিপ্লব পথ দেখায় আরো বিপ্লবের। আরফান আলী এখন আর এজেন্ট ব্যাংক নিয়ে ভাবছেন না, এখন স্কুল ব্যাংকিং, ডাকঘর ব্যাংকিং, মাইক্রো মার্চেন্ট – এইসব আবিষ্কার নিয়ে নিরীক্ষা চলছে তার বিশাল ফাইনান্সিয়াল ল্যবে। আর্থিক অন্তর্ভূক্তি যেন এক মহাসাগর, সেখানে রয়েছে আরো অযুত নিযুত মণিমানিক্য, সেগুলো তুলে আনতে এক নিরলস ডুবুরির মত নিমগ্ন রয়েছেন তিনি।
     
    (লেখাটি আনন্দ আলো ঈদ সংখ্যায় প্রকাশিত) 
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৪ আগস্ট ২০২৩ | ৭৭১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • হীরেন সিংহরায় | ২৪ আগস্ট ২০২৩ ২২:৪৩522904
  • ইউনুস সাহেবের স্বপ্ন সফল করছ। কি বলে যে তোমাদের ধন্যবাদ জানাই 
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ২৬ আগস্ট ২০২৩ ১০:৩৬522959
  • @হীরেনদা,
    অনেক ধন্যবাদ মন্তব্যের জন্য। 
    আজকের বাংলাদেশের যতটুকু অর্জন তার পেছনের নিয়ামকগুলোর মধ্যে এনজিওগুলোর নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রামকে একটি হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এনজিও মডেলেরও আছে কিছু সীমাবদ্ধতা। আর সে সীমাবদ্ধতাগুলোর দিকে চোখ রেখেই জন্ম এজেন্ট ব্যাংকিং মডেলের। যদিও এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নিজস্ব সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এনজিওগুলোর মত এরা মানুষের উঠোন পর্যন্ত চলে যেতে পারেনি। তবে সুদ হার সাধ্যের মধ্যে রেখে তারা মানুষকে সুন্দর আগামীর স্বপ্ন দেখাচ্ছে। 
  • হীরেন সিংহরায় | ২৬ আগস্ট ২০২৩ ২০:২৪522967
  • মামুন 
     
     সীমিত মাইক্রো ফাইনান্স ( কলকাতা এবং কেনিয়া ) অভিজ্ঞতায় দেখলাম সুদের চড়া হার । ঋণের নিরাপত্তা আর সুদের হার বিপরীত গামী – ঋণগ্রহীতার সামর্থ্য যতো অনিশ্চিত,  সুদ তত বেশী – সেটা কি সঠিক ? তোমরা এজেন্সি ব্যাঙ্কিঙ্গে যে দিশা দেখাচ্ছ সেখানে এই আপাত বিরোধিতা চোখে পড়ে না ।
  • Ranjan Roy | ২৭ আগস্ট ২০২৩ ০৮:৫৮522986
  •  "আমরা আজ যখন পেছনে ফিরে তাকাই, তখন দেখি আরফান আলীর ভাবনা সঠিক ছিল। দুর্ঘটনার সংখ্যা সত্যি হাতে গোনা"।
    --সত্যিই তাই।
    আমি নিজের কথা ভাবি।
    ইন্দিরা গান্ধীর নির্দেশে যে গ্রামীণ ব্যাংক খোলা হয়েছিল তার শাখাগুলো খোলা হত  একেবারে পিছিয়ে থাকা গ্রামীণ এলাকায় --যেখানে পাকা বাড়ি নেই বললেই চলে, বিদ্যুৎ আছেও নেইও। ক্যাশ কাউন্টার নেই। শুধু চেয়ার টেবিল, একটা ছোট ভল্ট আর কিছু গাবদা লেজার।
       আপনাদের এজেন্ট ব্যাংকের মতনই। অল্প সুদে ঋণ দাও, আর ডিপোজিটে বেশি সুদ, প্রফিটের জায়গায় লস অবধারিত। তাছাড়া ব্যাংকের পরিসেবা সীমিত।  আর্থিক বিচারে 'উইকার সেকশন' ছাড়া কাউকে লোন দেওয়া যাবে না।
       কিন্তু একটা কাজ হল। অগণিত কৃষকের মনে ব্যাংক বলতেই যে একটা ভয় একটা দূরত্ব ছিল সেটা ধীরে ধীরে উপে গেল। ওরা ভিড় করে দৃপ্ত পদক্ষেপে ব্যাংকের ভেতরে পা রাখল।
       আজ দেখি, খুব কম গ্রামীণ ব্যাংক লসে আছে।
    তারপর ৪৬ বছর কেটে গেছে। 
    মনমোহন সিং (রিজার্ভ ব্যাংকের গভর্নর অবতারের দিনে)  ক্রমশঃ সব বদলে দিয়েছেন। কিছু কাঠামোগত পরিবর্তনও করেছেন। 
    এখন আমার গ্রামীণ ব্যাংক (ছত্তিশগড় রাজ্য গ্রামীণ ব্যাংক) এডুকেশন  ও কনজিউমার/ পার্সোনাল লোন দিতে পারে--  একজনকে এককোটি, অবশ্য বাড়ি জমি মিলিয়ে ১১০% কোল্যাটারাল দিতে হবে।
    শুনে আমার হার্টফেল হওয়ার জোগাড়। 
     ম্যানেজারের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা।  রাজ্যের রাজধানী  এবং জেলা সদরগুলোতে পাঁচ ছটা করে শাখা। অন লাইন এবং কোর ব্যাংকিং সগৌরবে চলিতেছে। ইন্ডিস্ট্রিকেও লোন দেওয়া হচ্ছে। এন পি  এ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকের চেয়ে কম। আমরা অন্য ব্যাংকের সমান বেতন  ও পেনশন পাচ্ছি। 
     
    কিন্তু আমার মন কেমন করে সেইসব ফেলে আসা দিনের জন্যে , যখন বৃষ্টিভেজা কাদাভরা পথে  আমাকে সাইকেল চালিয়ে আল ধরে গ্রামে ঢুকে খাটিয়া পেতে গ্রামের বুড়ো-জোয়ান সবাইকে ক্যান ব্যাংকে টাকা রাখবা -- বোঝাতে হত। 
    দরজার আড়াল থেকে কোন কাজলপরা সলজ্জ চোখ এই নবাগত আজব চিড়িয়াকে দেখত। 
    তারপর কাঁসার গ্লাসে করে ঠোঁট পুড়িয়ে দেওয়া চা আসত, তাতে ঘরের মোষের দুধের সর ভাসছে।
      আজ সেট্রালাইজড ব্যাংকিং । বার্ষিক ক্লোজিং এর দিনে ব্যাংক খালি। ভারতের কোন সুদূর প্রান্তের শহরে বসানো মাস্টার কম্পিউটারে অনায়াসে বেরিয়ে আসছে সমস্ত ব্যাংক  এবং শাখাগুলোর সালতামামি, ব্যালান্স শীট, লাভ  লোকসানের খতিয়ান।
      আমাদের সময়ে ওই অ্যানুয়াল ক্লোজিং ছিল উৎসবের মত সাতদিন রাত জেগে তৈরি করতে হত হিসেব নিকেশ। শেষ সময়ের আগে জানা যেত না নাফা হয়েছে নাকি এবারও নুকসান? 
    ে যেন ফুলশয্যার আগে নববধূর ঘোমটা তুলে চেহারা দেখা যাবে না। দুরু দুরু বক্ষে তার প্রতীক্ষা। 
    আজকেরটা যেন রেজিস্ট্রি বিয়ে। কোন রহস্য নেই, কোন রোম্যান্স নেই। হয়ত এটাই ভাল। চাঁদের রোম্যান্সও তো উপে গেছে।
     কাউকে চাঁদপানা মুখ বলতে গেলে মনে ভেসে উঠবে চাঁদের গালে খানাখন্দের ছবি।
     
  • Kuntala | ২৮ আগস্ট ২০২৩ ১৬:২৪523041
  • অসাধারণ লাগল আপনার আজকের লেখা। মনে পড়ল আশির দশকে ভারতে 'গ্রামীণ ব্যাংকের' সূচনা ও করুণ পরিস্থিতি। কেন ভারতে এই ভাবে অর্থনৈতিক ইনক্লুশন হোল না বলুন তো? গ্রামীণ সমাজে জাতপাতের বাড়াবাড়ি, 'পরিচিত' মানুষেরাও যেন ঠিক নিজের লোক নয়।
  • হীরেন সিংহরায় | ২৮ আগস্ট ২০২৩ ২১:১১523044
  • রঞ্জন
    আহা সেই ক্লোজিংএর দিন! কখনো ভুলব না হ্যাজাক লনঠনের আলোয় ভোরবেলা অবধি কাজ! কোন চেঁচামেচি নেই অজস্র মানুষ স্টেট ব্যাংকের মাঠে যেন উৎসব চলছে। আর মহীনের চা। 
     
    আরেকটা কথা - ২৪% সুদ চাপিয়ে কার উন্নয়ন করে মাইকরো ফাইনানস ? আপনার গ্রামীন ব্যাংক মামুনদের এজেনসি ব্যাংক মানুষের মংগলের অনেকটা কাছাকাছি। 
     
    আমার অভিজ্ঞতা স্বল্প । অনুভূতি আছে তথ্য হাতে নেই
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ২৯ আগস্ট ২০২৩ ০০:১০523052
  • @রঞ্জন রায় দাদা,
    ''অল্প সুদে ঋণ দাও, আর ডিপোজিটে বেশি সুদ, প্রফিটের জায়গায় লস অবধারিত। তাছাড়া ব্যাংকের পরিসেবা সীমিত।'' 
    আমাদের এজেন্ট ব্যাংক ডিপোজিটের হার থেকে বেশী হারে ঋণ দিয়ে থাকে। এ আসলে প্রচলিত ব্যাংকগুলোর জন্য তৈরী করা গাইডলাইনেই চলে। তবে এর আকারটা ছোট। আসলে আমাদের দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বাধ্যবাধকতা ছিল যে গ্রামে ব্যাংক করতে হবে। কিন্তু কমার্শিয়াল ব্যাংকগুলো সেই বিধি মানতে গিয়ে পড়ল লসে। কারণ তারা প্রচলিত মডেলে বিশাল আকারের ব্যাংক করল বটে গ্রামে। কিন্তু তেমন ব্যবসা পেল না। আবার ঢাকা থেকে লোকবল এনে চালানোটাও ছিল চ্যালেঞ্জিং। ভাল রিসোর্স আসতে চাইত না গ্রামে। সেজন্যই আরফান আলি ভাবলেন যে গ্রামের ব্যাংকিং সেবা দানের জন্য দরকার হবে একটি ছোট জায়গা। তাহলে অপচয় দূর হবে। আর এ ব্যাংকগুলো চালাবে স্থানীয় লোকজন। এর ফলে সেবাদান ও মুনাফা অর্জন - দুই-ই হবে।  
     
    ''এখন আমার গ্রামীণ ব্যাংক (ছত্তিশগড় রাজ্য গ্রামীণ ব্যাংক) এডুকেশন  ও কনজিউমার/ পার্সোনাল লোন দিতে পারে--  একজনকে এককোটি, অবশ্য বাড়ি জমি মিলিয়ে ১১০% কোল্যাটারাল দিতে হবে।
    শুনে আমার হার্টফেল হওয়ার জোগাড়। ''
    আমাদের এজেন্ট ব্যাংকগুলো এলসি খোলারও ক্ষমতা রাখে। আসলে একটি বাণিজ্যিক ব্যাংক যা যা করতে পারে,সব ক্ষমতাই দেয়া হয়েছে। গ্রামে যে সঞ্চয় ও ঋণদান সমিতিগুলো ছিল তার থেকে এজেন্ট ব্যাংকের পার্থক্য এখানেই। সব ব্যাংকিং সেবাই কেন্দ্রীয়  ব্যাংকের চোখের সামনে থেকে দেবে। 
     
    '' দরজার আড়াল থেকে কোন কাজলপরা সলজ্জ চোখ এই নবাগত আজব চিড়িয়াকে দেখত। 
    তারপর কাঁসার গ্লাসে করে ঠোঁট পুড়িয়ে দেওয়া চা আসত, তাতে ঘরের মোষের দুধের সর ভাসছে।'' 
    আহা!আহা! আপনার ছত্তিশগড়ের বইটিতে এর কিছু নমুনা পাওয়া যায়!  
     
    '' যেন ফুলশয্যার আগে নববধূর ঘোমটা তুলে চেহারা দেখা যাবে না। দুরু দুরু বক্ষে তার প্রতীক্ষা। 
    আজকেরটা যেন রেজিস্ট্রি বিয়ে। কোন রহস্য নেই, কোন রোম্যান্স নেই। হয়ত এটাই ভাল। চাঁদের রোম্যান্সও তো উপে গেছে। কাউকে চাঁদপানা মুখ বলতে গেলে মনে ভেসে উঠবে চাঁদের গালে খানাখন্দের ছবি।'' 
    আহা! আহা! ক্লোজিং শেষ হয়ে যায় রাত আটটা নয়টার মধ্যেই। অথচ আগে শুনতাম সারা রাত চলত কাজ আর ক্লান্ত বিধ্বস্ত ব্যাংকারদের দেয়া হত একদিন ক্লোজিং ছুটি। এখন ছুটি আছে অবশ্য কোন কোন ক্লান্তি বা বিধ্বস্ত হওয়া রহস্য রোমাঞ্চ যাত্রায় শরীক হয়ে - এমনটা নেই একেবারেই। ...দিন দিন পৃথিবী বিরস হচ্ছে তাই না দাদা? 
    ....
    পাঠ ও মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ। আমার জন্য আলোকবর্তিকা হয়ে থাকল। 
     
  • মোহাম্মদ কাজী মামুন | ২৯ আগস্ট ২০২৩ ২৩:৩৭523067
  • @কুন্তলাদি,
    অশেষ ধন্যবাদ জানবেন। আমায় অনেক শক্তি যুগিয়ে যায় আপনাদের এই অনুপ্রেরণামূলক মন্তব্য। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন