এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  স্মৃতিচারণ  স্মৃতিকথা

  • হাসনয়ন

    Malay Roychoudhury লেখকের গ্রাহক হোন
    স্মৃতিচারণ | স্মৃতিকথা | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২২০ বার পঠিত
  • 103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168
    আমার জীবনের ঘটনা : মলয় রায়চৌধুরী
    হাসনয়ন

    —তোর গ্রাম থেকে আমাকে একজন ফোন করেছিল : তুই যাসনি এখনও ?
    .
    —না । স্বরগ্রাম উঁচু করে বলল হাসনয়ন, আর মোবাইল বন্ধ করে দিল । আমি দেখে বুঝতে পারলুম, বেশ ক্ষুব্ধ আমার প্রশ্নে ।
    .
    কিছুক্ষণ পর আবার ফোন করলুম ওকে । দেখলুম, মেয়েকে কোলে নিয়ে কাঁদছে । বন্ধ করে দিলুম কোনো কথা না বলে ।
    .
    হাসনয়নের বাবা ছিল আমার সহকর্মী, লখনউতে। পোস্টিঙের পর যখন বাড়ি পাইনি, আমরা চারজন অফিসার একটা অতিথিশালায় একসঙ্গে থাকতুম । প্রভাকরের কাজ ছিল শাকাহারি রান্না আর হাসনয়নের বাবা আমিষ রাঁধতো । আমি আর কুরকুটে ঝাড়পোঁছ করতুম, লন্ড্রিতে কাপড় কাচতে দিয়ে আসতুম । আমি ছাড়া বাকি তিনজনই ছিল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তর । শৈশবে পাটনার বস্তিতে থাকতুম বলে কৃষি, পশুপালন, গ্রামীণ জীবন সম্পর্কে আমি কিছুই জানতুম না । ওদের কাছে শিখতুম । ওদের দেয়া বইপত্র পড়তুম । এই কাজে যোগ দেয়ার ফলে বহুকাল আমার লেখালিখি ছেড়ে যায় । 
    .
    আমরা সবাই লখনউতে একই পাড়ায় বাংলো পেলুম । আমি ছেলে-মেয়ে-স্ত্রীকে পাটনা থেকে নিয়ে এলুম । প্রভাকর ওর স্ত্রীকে কর্ণাটকের গ্রাম থেকে নিয়ে এলো । কুরকুটে তখনও বিয়ে করেনি । হাসনয়নের বাবা, মানে সৈয়দ আবদুল করিমেরও তখন বিয়ে হয়নি । করিম ট্যুরে গেলে আমার ছেলের জন্য নানা উপহার আনতো। একবার একটা নকশাকাটা টেবিল এনে দিয়েছিল শাহারানপুর থেকে । গ্রাম থেকে সবচেয়ে বড়ো মাপের আম এনে দিতো আমার ছেলেকে, ওদের ছিল আমের ব্যবসা। নানা রকম আমের বাগান ছিল । আম যে অতো বড়ো হয়, তা দেখিনি আগে । করিম ওর মাকে এনেছিল গ্রাম থেকে আর মায়ের পোশাকের জন্য বিব্রত বোধ করত । ওর মা রঙিন ঘাগরা আর ব্লাউজ পরতেন ; হায়দ্রাবাদি হিন্দিতে কথা বলতেন । শৈশবে ইমলিতলা পাড়ায় কয়েকজন বউ অমন পোশাক পরত । 
    .
    বাংলো বাড়ি পেয়ে আমি নানা রকম শাক, সব্জি চাষ করতুম । পেয়ারা, কলা, কুল, ইত্যাদি গাছ লাগিয়েছিলুম আর দুই বছরেই ফল দেয়া আরম্ভ করেছিল । সজনে গাছে প্রচুর ফুল আর ডাঁটা হতো। পাড়ায় বিলিয়ে দিতুম । নানা রকমের গোলাপ বাগান করেছিলুম । কার্পেটের মতন বারমুডা ঘাস এনে দিয়েছিল বন্ধুরা । 
    .
    করিম আমার ছেলের জন্য হলুদ আর গোলাপি রঙের ফুলের বাল্ব এনে দিয়েছিল । বদলি হলে বা বাড়ি বদলালে সেই বাল্ব তুলে নতুন করে পুঁততুম । এখন মুম্বাইয়ের ফ্ল্যাটেও আছে তিনটে টবে । লখনউতে আমার মা হার্ট অ্যাটাকে হাসপাতালে ভর্তি হলে, করিম রাত জাগতো মায়ের বিছানার পাশে । মা মারা যেতে আমাদের সঙ্গে শ্মশানে গিয়েছিল ।
    .
    করিম খাম্মামের চাষি পরিবারের বিদ্বান আর ভালো চাকুরে ছিল বলে, ওদের পরিবার ওর বিয়ে দিলেন ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর হায়দ্রাবাদী যুবতীর সঙ্গে । করিমের গায়ের রঙ বেশ কালো আর ওর বউ অত্যন্ত ফর্সা ।  সেসময়ে মুসলমান পরিবারে ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর মেয়ে পাওয়া কঠিন ছিল । করিমের মায়ের সঙ্গে আধুনিকা বউয়ের বনিবনা হলো না । বন্ধুদের সঙ্গেও দূরত্ব গড়ে উঠলো । মুম্বাইতে সান্টাক্রুজে পোস্টিঙের পর ওর ফ্ল্যাটে গিয়ে দেখলুম ওর বউ রান্নাবান্নার নানা গ্যাজেট কিনেছে, এমনকি বাড়িতে আটা পেষার মেশিন,  কিংবা যৌতুক হিসেবে এনেছে । ওদের ছেলে হলে তার নাম রাখলো হাসনয়ন । 
    .
    হাসনয়নের পছন্দ ছিল পাকিস্তানি ক্রিকেটাররা । তাদের বিরাট পোস্টার লাগানো থাকতো ওর ঘরের দেয়ালে। 
    ফুলের যে বাল্ব দিয়েছিল করিম, তাকে আমি নাম দিয়েছিলুম হাসনয়ন । মৈত্রেয়ী ভট্টাচার্য চৌধুরী, যিনি হাংরি আন্দোলন নিয়ে পেঙ্গুইন র‌্যাণ্ডাম হাউস থেকে ‘দি হাংরিয়ালিস্টস’ নামে বই প্রকাশ করেছেন, তিনি বললেন, এই ফুলের নাম রেইন লিলি । আমরা তবু ফুলগুলোকে হাসনয়ন বলার অভ্যাস ছাড়তে পারিনি।
    .
    ছেলেকে ডেনটিস্ট্রতে ভর্তি করে দিল করিম । ওর বউ চেয়েছিল ডাক্তার হোক । এমবিবিএসে সিট পায়নি।হোস্টেলে থাকতো । করিম অবসর নেবার পর গ্রামে বিশাল বাড়ি তৈরি করলো । আমাকে প্রায়ই বলতো, চলে এসো । আমার নাকতলার ফ্ল্যাটে এসেও জোর করেছিল নিয়ে যাবার জন্য । যাওয়া হয়নি। বলেছিল, বাড়িতে সাতটা ঘর আছে, সব তো ফাঁকা পড়ে থাকে ।
    .
    তারপর খবর পেলুম ওর বউয়ের ক্যানসার ধরা পড়েছে । বাঁচাতে পারল না করিম । বউ মারা যেতে গোঁফ দাড়ি বাড়িয়ে ধর্মের আশ্রয় নিল করিম । রোজ পাঁচবেলা নামাজ । দাড়ি গোঁফ ধবধবে শাদা হয়ে গিয়েছিল কালো করিমের । আরও কালো মনে হতো ।
    .
    ওর ছেলে ডেন্টিস্ট্রি পড়ার সময়ে একটি মেয়ের প্রেমে পড়ল । মেয়েটি হিন্দু । করিমের অনুমোদন পেল না হাসনয়ন । বিয়ে করে সংসার পাতলো হায়দ্রাবাদে । একটা মেয়ে হলো । করিম দেখতে গেল না । হাসনয়নকে বারণ করে দিল বউকে ওর বাড়িতে আনতে । এতো ক্রুদ্ধ হয়েছিল সৈয়দ আবদুল করিম যে বলে দিল, “আমি মরলে তুই আমার কবরে মাটি দিবি না।”
    .
    হাসনয়ন ফেসবুকে বউয়ের সঙ্গে ফোটো পোস্ট করতো, শাহরুখ খান-কাজল স্টাইলে । রঙিন পোশাকে, নাচের ভঙ্গীমায় ।
    .
    করিম ওর কেয়ারটেকারকে বলে দিয়েছিল যে ও মারা গেলে আমায়, প্রভাকর আর কুরকুটেকে যেন খবর দেয়া হয় । আমি ফোন পেয়ে হাসনয়নের সঙ্গে যোগাযোগ করলুম আর জানতে পারলুম ওর বাপের নির্দেশ। হাসনয়ন কখনও যায়নি করিমের তৈরি করা বাড়িতে ।
    .
    এখন ওর দুটো মেয়ে, গাড়িও কিনেছে। আমাকে তার ছবি পাঠিয়েছিল ।

     

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    103 | 104 | 105 | 106 | 107 | 110 | 113 | 114 | 119 | 120 | 121 | 123 | 124 | 124 | 125 | 125 | 126 | 127 | 127 | 128 | 129 | 131 | 133 | 134 | 135 | 136 | 138 | 139 | 140 | 141 | 143 | 144 | 145 | 147 | 148 | 149 | 149 | 150 | 151 | 152 | 153 | 154 | 155 | 156 | 157 | 158 | 159 | 160 | 161 | 162 | 163 | 164 | 165 | 167 | 168
  • স্মৃতিচারণ | ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ | ২২০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন