ছোটগল্প : ব্যাঙ রাজপুত্র (ছাতার আড়াল)
সুপ্রীতি বর্মন

জবুথুবু গেরস্থালি কুয়োর ব্যাঙ খুব ঘরকুণো ঘোলাটে জন্ম নিয়ে নিষ্প্রাণ চোখে তার শুধু একটানা হাপিত্যেশ গোঙানি দূর থেকে সুন্দরী বিলে রমিত শরীরের আকাঙ্খা।
গয়ংগচ্ছ শীত তবুও তার আলসেমি করে নিষ্পাপ সত্ত্বার ঘূণহীন কাঠের অপলক শয্যায় ছত্রাক গজিয়ে দিন ও রাতের চক্রবৎ ঘূর্ণন হাতের মুঠোয় জড়িয়ে ধরে সৌরমালী কে ঠেঙিয়ে লুকিয়ে পিঠ উপুড় করে শুদ্ধু ঘুমায় নাক ডেকে ডেকে,,, কোনদিকে কোন হুঁশ নেই।।।।
সংসারের দন্ডকারন্যে প্রখর চৈত্রদাহে তার জমাট তৃষ্ণা আর ব্যাথা ক্রমশ চাগাড় দিয়ে উঠে ক্ষয়িষ্ণু হয়ে যায় যৌবন,,, সৌন্দর্য খসে পড়ে আর পৈশাচিক কুষ্ঠে পিঠময় চাঙড় নিয়ে বহন জ্বালায় মুখ গুঁজে পড়ে থাকে,,, তার পরম আদরের আশ্রয় গেরস্থালি ছাতাকে আঁকড়ে ধরে রাখে ছোট্ট মাথায়,,,
ওদিকে বনপলাশীর পদাবলীর রাই অনুসূর্যা বীভৎস দুলুনির উল্টোকুঁজো বাবুই পাখির বাসায় বাস করে। ঊণকোটি চৌষট্টি কাজে তার জীবন ঝালাপালা আর দিনগুলি ভোগের আগেই ফুড়ুৎ করে পালায়।
একদিন অকালবর্ষনের রাত্রি মনের গহীন অরণ্যে pindrop silence এ জবাকুসুম ধূপ জ্বালিয়ে প্রদীপের সলতে খানিকটা উসকে,,, চাঁদখোর নিকৃষ্ট দীঘিতে গন্ধর্বছায়া ফেলে,,, আমারও চাই দিকভ্রষ্ট হবার মতন পূর্বরাগ,,,,
তাই ঝাঁপি ঢাকা দিয়ে আমাকে অলক্ষ্যে ধারণ করো সোনা বৌ,,, আমার অনুসূর্যা,,, আমি খুব একা আমার যে আপন কেউ নেই,,,
স্বরতন্ত্র ফুলিয়ে জোর জোর তাকে ডাকে।
পরের দিন বিষাক্ত ভিটেমাটি ছেড়ে স্ত্রী রতির জন্য লকলকে প্রণয় আরক্ত জিহ্বা গুটিয়ে পুরুষার্থ রাজটীকা ধারণ করে। সুন্দর সমীপেষু রাজকুমার হয়ে ব্যাঙের খোলস ছাড়িয়ে পথে নেমে পড়ে অনুসূর্যা তাকে ডেকেছে তার কাছে যে তাকে যেতেই হবে,,,,
আজ বছরশেষে বাঙালীর সর্বশ্রেষ্ঠ পূজো দুগ্গাপূজো,,, সেই তো তাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে রৌদ্রদগ্ধ স্নানে একমাত্র ছাতার আড়াল হয়ে তাকে কোলের কাছে নিয়ে ঠাকুর দেখাবে,,,, কত সুখ কত কড়ি লাগবে না একেবারে ছাড়পত্র এখানে ঐ যে বলে না ফেল কড়ি মাখো তেল,,, এখানে অর্থহীন। কিশোরী টিয়া খুব চতুর খালি খুনসুটি তার আর আলুথালু বেশে সে চলে এসেছে কোন ভ্রুক্ষেপ নেই।
রাজপুত্রের কোঁকড়ানো কেশ আর ঝাড়লন্ঠনের মতন দোলন তার পক্ষীরাজ সাইকেলের গর্ভগৃহে পা ঝুলিয়ে বসে স্ত্রী রতি। রাজকুমার এতো চেষ্টা করে তবুও সে তার স্বভাবদোষে কেমন করে ম্লেচ্ছ হয়ে উঠে কেবল অনুসূর্যার পেছু পেছু ঘোরে তাকে কাছছাড়া করতে চায় না। কিন্তু অনুসূর্যার খনা জিভ শিষ্টতার আচরণ নেই একদম। পান থেকে চুন খসলেই শুধু তাকে উলঙ্গ করে ছোটলোকের মতন কাঁচা কাঁচা খিস্তি মারে,,,
পথে ঘাটে তার অমূল্য মানদন্ডে সংরক্ষিত আত্মসম্মানে নিজের প্রচেষ্টায় ছত্রাক গাঁজায়।
রাজপুত্রের বুকের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়,,, সে অনেক কষ্ট পায় আর জমাট মণিপদ্মে জল টলমল করে। তবুও তার বাৎস্যায়ন রসে বারমাস্যা,,, তোমার ইচ্ছেমতন জায়গায় কোলের কাছে নিয়ে ঘোরায়। তার কোন অভিযোগ নেই। কারণ অজ্ঞাতবাসে সে শুষছে তোমার সাথে তার দাম্পত্যের ঘ্রাণ।
হঠাৎ রাজপথের আশেপাশে গজিয়ে উঠে ছত্রাকরাজি আর গিজগিজ গুজবে মশগুল গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টির দল। কি যেন ঐ মেয়েগুলো তাদের দেখে মুচকি হাসে আর তির্যক বজ্রপাতে ব্যঙ্গ করে। যতই হোক রাজপুত্র মনে মনে ছিল এক গেরস্থালি কুয়োর ব্যাঙ। তাই এইসব বাচালতা সে সহজেই আঁচ করে ফেলে আর অকুণ্ঠ উত্তাপে উদ্রেককারী উদ্বিগ্ন তায় অনুসূর্যা কে বোঝাতে চায়,,, তারা যেন কিছু বলছে।। তাতে অনুসূর্যা প্রচন্ড রাগে ক্ষেপে যায় আর তার সেই সাংসারিক দূর্বলতম স্থান লোকজনের হাসি ও ব্যাঙ্গে মনের ভেতরটা আরো সংকুচিত হয়ে কুঁকড়ে উঠে।
পরিণামে সে স্থান কাল পাত্র সব ভুলে গিয়ে তার কথা শোনামাত্রই কিছু ভালো করে না জেনে ঐ তার মধ্যবর্তী পন্থা সঙ্গে করে নিয়ে আসা ছাতা নিয়ে উত্তম মধ্যম মার দিতে থাকে তাকে,,, আর বলতে থাকে কেন তুমি আমাকে ছেড়ে চলে যাও না,,,, আমি খুব কুপয়া,,, আমার কালসর্পযোগ আছে যদি বিষাক্ত হলাহলে তোমাকেই গিলে ফেলি,,, আমি চাই না তোমার কোন ক্ষতি হোক। আমার সঙ্গত্যাগ করো।
তবুও তার পুরুষালী পিঠে চাকদা চাকদা জেদী কেন্দ্রীভূত গুটিকোরক,,, হনহন করে একাগ্রচিত্তে তার হাঁটন চলন,,, বলে কিনা হোক যা হবার,,, আমি তোমাকে ছাড়ছি না ছাড়বো না,,, বলেছি না একদিন ব্যাস,,,
তারপর বহুকাল বাদে ঘর ছেড়ে রাস্তায় গলি থেকে রাজপথে হৈ হুল্লোড় আর অপরূপ যৌবনে নৈশিল হাওয়ায় নাচ ও গান।। সকলে মিলে চলেছে পুকুরঘাটে দুগ্গা ঠাকুরের বিসর্জনে। মা আর কিছুক্ষণ পরেই জলের অতলে তলিয়ে যাবে। অনুসূর্যা বলে উঠে আমি কিন্তু শেষ অবধি বিসর্জন দেখবো। সৌর বলে ঠিক আছে। আমি আছি তোমার সাথে। বহুকাল পরে তার সখ কেউ পূরণ করলো।
ওদিকে তিলোত্তমা সুন্দরী জলের তলায় এলোকেশে কেমন সোহাগ সিঁদুরে তলিয়ে যেতে থাকে,,, আর বিকেলের পড়ন্ত রোদে আনুসূর্যার খোলা পিঠে যেন সদ্যস্নাতা সোঁদা আঘ্রাণ পৃথুলা পরশে তির্যক চাহনিতে,,,,কম্পিত হয়ে ওঠে তার নাভিউত্থিত সমুদ্রকন্দর। অনুসূর্যার সেই দীর্ঘসূত্রীতার জীবনশৈলীতে শুধু অপেক্ষা ছিল আর আজ যেন রাজপুত্র কে খুব কাছে পেয়ে কখন উৎকন্ঠার আঁজলা ভরা রৌদ্রদগ্ধ ঘামের ঘর্ষণে,,, সৌর এর আঙুলের শলাকা গিঁথে যেতে থাকে মোহমাৎসর্য এর পলশ্রীর যেন সোনা বৌ এর লাল শাঁখা পলার শরীরী আগুনে। বিসর্জনের মাহেন্দ্রক্ষণে কি দারুণ অন্তমিল দুজনের।
হঠাৎ তাদের এই প্রণয়রাগের খুনসুটি লক্ষ্য করে ফেলে বিসর্জনের পুকুরঘাটে ঠেকানো একটি নৌকার মাঝি ঠিক যেন পদ্মানদীর মাঝি। রাজপুত্র টাল সামলাতে না পেরে পিচ্ছিল ঘাটে গড়িয়ে গেলে প্রচন্ড ভয় পেয়ে অনুসূর্যা কে আঁকড়ে ধরে। যতই হোক সে কুয়োর ব্যাঙ।ওদিকে মাঝি বলে ওঠে এতো ভয় কিসের গো বাবু,, কিসের মরদ গো তুমি,,, ঠিক যেন কোন গেরস্থালির ব্যাঙ। হাঁড়িয়ার নির্ঝরিণীর কোলে আরামপ্রিয় হয়ে শুতে গেলে তো নির্ঘাৎ হাঁপুচুপু খাবে।তখন সৌর লজ্জা পেয়ে বলে না গো মাঝি আমি একদম ঠিক আছি। অনুসূর্যা মনে মনে হাসে আর ভাবে খুব না তুমি,,, এদিকে বলছো ঠিক আছি,,, তারপর তো অন্যমনস্ক ভানে উপরচালাকি করে পড়ে পড়ে জল খাবে মটকা মেরে পড়ে থেকে। আর টালমাটাল পায়ে তারপর মাতাল হবে আমার কাজলাদীঘি নয়নের উদগ্র রমণের মুদ্রায়,,, তোমাকে বিবশ করে তুলবে আমাকে তোমার আরো কাছে টেনে নিতে,,, বল সৌর। ঠিক না।
সৌর একবার হেসে তার কোমল মুখের দিকে তাকায় ঘাড় ঘুরিয়ে সাইকেল চালানোর ফাঁকে,,, কেমন যেন একটা স্বতন্ত্র অধিকার বোধ তুমি শুধু আমার। আর ওদিকে তোমার দ এর ভাগে তখন নাছোড়বান্দা সহমত গুমোট যন্ত্রণার বিষাদগ্রস্থ মেঘরাজের পেখম বিস্তার,,,এক ঘন শৈলবল্ককেশে গনগনে নিদাঘ মধ্যাহ্নে তার দৈহিক ছাতার আড়াল অনুসূর্যা কে।
ঘরে ফিরে সেই মনখারাপের দুর্ভেদ্য জঙ্গল শুধু হাহাকারের হুতাশন তার পাঁজর গুলো চুষে রস পান করতে থাকে। পুরুষার্থে ভোগের সোহাগী পেয়ালায় লালায়িত প্যাঁচানো ত্রস্ত শরীর শুধু শর্বরীকে খোঁজে। দুচোখে ঘোর তমিস্রা নেমে আসে। ভাবে বেহেশতের হুর অনুসূর্যা সে এক কাঞ্চনকন্যা আমাকে অনুকম্পা করছে না তো। ও কি আমাকে সত্যিই ভালোবাসে। সৌরর গায়ে লুকানো সেই কবে থেকে গেরস্থালির ব্যাঙের মতন ঘৃণ্য গুটিকোরকের কর্কশ খোলস,, সে কি কখন তার মনের মতন অপরূপ হতে পারবে।
আহির ভৈরবী তার নির্দিষ্ট লগ্ন ভুলে যখন দুশ্চিন্তার দামামা বাজিয়ে ওঠে দলিতমথিত স্পৃহায় যুবতি রাতে,,,তখন হঠাৎ ছাদের আলসেতে শুকানো স্ত্রী রতির কাপড়ের ঝালরের মতন দুর্ভেদ্য মিথ হয়ে সামনে এসে দাঁড়ায় অনুসূর্যা,,,,এক কুমারী নিলাজ নগ্নবক্ষে গৌরবর্ণ হেমাগ্নি লতা হয়ে। সৌরর বুকে করপদ্ম রেখে বৈষম্যমতার ঊর্মি কোমল বাহু দিয়ে ঠেলে হামাগুড়ি খেতে থাকে সৌরর রমিত শরীরের সবটুকু জুড়ে আনাচে কানাচে যত অনাসক্তি আছে তাকে ঘিরে। আর সৌরকে এক ঘোরে মোহগ্রস্ত করে শয্যার সাথে মিশিয়ে দেয়।
তারপর শর্বরী হেমাগ্নি প্রণয় আরক্ত জিহ্বায় তার লেহন করতে থাকে উগ্র চরণে। এতটাই যে সৌরর মধ্যে চাগাড় দিয়ে ওঠা সেই বৃহদাকায় ব্যাঙের সকলপ্রকার কর্কশ খোলস টুপ টুপ করে কুমুদের লালাভ পাপড়ির মতন খসে পড়তে থাকে এলোমেলো ভাবে। এক চরম শীৎকারে রত্নাকরের অকালবর্ষণে তার অঙ্গ শুদ্ধ হয়ে ওঠে। আর হেমাগ্নির মতন গলে যেতে থাকে অনুসূর্যা আর ছাঁচ হয়ে বসে যেতে থাকে সৌরর শরীরী মুদ্রায়,,, হঠাৎ সে রূপে এক অপরূপ রাজকুমার হয়ে উঠে,,,, সোনার অঙ্গে এক সুদর্শন যুবা,,,
এতকাল ধরে অনুসূর্যার প্রমাদ গুনে কইমাছের দিন কাটানো থেকে বেরিয়ে এসে সৌরকে দিল এক নির্বাণ ঋণ,,, কুয়োর ব্যাঙের খোলস উন্মোচনে সুদর্শন রাজকুমার,,, তাকে আরো কাছে টেনে নিজের করে। এতকাল ধর্তব্যের মধ্যে তাকে না পেয়ে কাছে পই পই করে আমন্ত্রণ, প্রণয় সম্ভাষণ,, আজ সুদে আসলে সব চুকিয়ে দিল সে,,,আর আজ থেকে কোন ছাতার আড়াল রইলো না,,,
রাজপুত্রের বালিশ নৈকট্যে তখন ছড়িয়ে থাকা শীতল বীর্যবীজের তোষকে পাশ ফিরে দখল করে শুয়ে আছে কুমুদ,,, অপার ক্লান্তির অলস এক অলৌকিক ঈশ্বরী চমকিত রজনীঘুম,,,,ঘুম ভেঙে সৌর দেখে তার শরীরটা কেমন চকচক করছে গৌরবর্ণ হেমাগ্নির মতন আর অনুসূর্যা তার কোল অধিকার করে তখনো শুয়ে আছে। এটা কি স্বপ্ন না সত্যি,,, আমার শরীরের সব রোগ সে শুষে নিয়েছে আশীবিষের মতন,,, আর অনুসূর্যার কপালে জ্বলছে যেন একটা ত্রিনয়ন ঈশ্বরীর মতন,,, এক রাজকীয় চিত্রনাট্য।।।।
##In love with my Fairy Tale
##My extreme passion of reading that from my Childhood
##This is my innovation or creative initiative regrading the short story writing as a Fairy Tale
##This is not the transformation of Frog Princess but the subject matter is concentrated on Frog and the Ordinary Girl.