এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  ইদের কড়চা

  • জঙ্গ-কি-ময়দান

    স্বাতী রায়
    গপ্পো | ০৬ মে ২০২২ | ১২৬৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (২ জন)
  • তন্ময় ভট্টাচার্য | প্রতিভা সরকার | হেমন্ত দাস | শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় | মৃণাল শতপথী | কল্পর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় | দেবাশিস মল্লিক | মণিশংকর বিশ্বাস | সুকান্ত ঘোষ | সাদিক হোসেন | ডাঃ সেখ নূর মহাম্মদ | মোহাম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ | সোমনাথ রায় | রুমা মোদক | জয় গোস্বামী | দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় | সুপর্ণা দেব | সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় | স্বাতী রায় | অনিন্দিতা গোস্বামী | ফারুক আব্দুল্লাহ | খান শামিমা হক | নীলু ইসলাম | সারিকা খাতুন | দময়ন্তী | সাদাত হোসাইন | গোলাম রাশিদ | মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় | শারদা মণ্ডল | অমর মিত্র | হামিরউদ্দিন মিদ্যা | ইমানুল হক | নীলাঞ্জন দরিপা | চিরশ্রী দেবনাথ | সায়ন কর ভৌমিক | কৌশিক বাজারী | ঐন্দ্রিল ভৌমিক | চৈতালী চট্টোপাধ্যায় | যাজ্ঞসেনী গুপ্ত কৃষ্ণা | মোজাফ্‌ফর হোসেন | অনুরাধা কুন্ডা | মাজুল হাসান | জগন্নাথদেব মন্ডল | যশোধরা রায়চৌধুরী | কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায় | শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী | দীপেন ভট্টাচার্য | মৌ সেন | পায়েল দেব | তনুজ | রুখসানা কাজল | পার্থসারথি গিরি | ইদের কড়চা
    ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক


    দুটো ছোট্ট ছোট্ট পা। আকাশে ছুঁড়ে ছুঁড়ে খেলা করছে। রাধিয়ার দেখে দেখে আশ মেটে না।

    ***

    রুদ্র জ্যৈষ্ঠ। সকাল নটা-দশটাতেই রোদের যা তাত! গা যেন ঝলসে যায়, সওয়া যায় না। পিরবাবার মাজারের দিক থেকে হাওয়া আসে। হাওয়া তো নয়, আগুনের হলকা। পাক খেতে খেতে ছুটে আসে গ্রামের দিকে। ঝলসিয়ে দেয় চামারদের বিবর্ণ গেরস্থালির আয়োজন। নেহাতই একটেরেতে বাসের ব্যবস্থা, গ্রামের অনেকটা দক্ষিণে। এদের গায়ের হাওয়া যেন আশরাফদের গায়ে না লাগে। হাওয়াকে নিয়মের গণ্ডিতে বাঁধে কার সাধ্যি। তবু চেষ্টার কমতি নেই!

    কুকুর-বেড়ালও এই সময়ে পথে বেরোয় না। রাধিয়ার আদরের বেড়াল নানহিও এখন ঝিমোচ্ছে। পুবমুখো ঘরের পিছনের দেওয়াল-ঘেঁষা এক চিলতে ছায়ায় এলিয়ে পড়ে আছে। এই ঘরটাই এ গ্রামের শেষ আস্তানা। এর পিছনে ঝুপসি জঙ্গল। তার ওপারে সড়ক। শাহি সড়ক। উত্তর-পশ্চিম কোণ বরাবর চলে গেছে আগ্রার দিকে। সড়কের দিক থেকে যেন একটা আবছা শব্দ আসে। ভানুকে বিছানা থেকে কোলে তুলে নিতে নিতে কান পাতল রাধিয়া। এই কুত্তা-খেদানো রোদেও একটা দল যাচ্ছে। অনেকগুলো ঘোড়ার খুরের শব্দ। খটাখট খটাখট শব্দ জঙ্গল পেরিয়েও কানে আসছে। শব্দ শুনেই বোঝা যায়, খুব তাড়া তাদের। এ যাওয়া অন্য সময়ের মত রয়ে সয়ে জিরোতে জিরোতে যাওয়া না। ঘোড়ার পায়ের শব্দ তো না, বিপদের ইশারা। ভানুকে বুকের মধ্যে আরও একটু জোরে চেপে ধরে রাধিয়া। ছটফট করে ওঠে ভানু। দুধ খাওয়া ছেড়ে কেঁদে ওঠে। সম্বিত ফেরে রাধিয়ার। চাপ আলগা করে।

    কদিন ধরেই এই শান্ত সড়ক অশান্ত হয়ে উঠেছে। ওরা কারা? কোথায় যাচ্ছে? ছুটছে কেন? রাধিয়া আন্দাজে জানে। সেদিন ভানু মাই ছেড়ে সবে ঘুমিয়েছে। অন্ধকার একটু পাতলা হয়েছে। একটা ঠান্ডা প্রাণ-জুড়ানো হাওয়া দিচ্ছে। আর দশটা ভোরের মতনই। বাইরে একদিকের খাটিয়ায় ভানুর বাপ, মহেন্দর শুয়ে। এই ঠান্ডা হাওয়ায় তার ঘুম আরও গাঢ় হচ্ছে। ফোঁ-ৎ, ফোঁ-ৎ, ফোঁ-ও-ৎ নাক ডাকার শব্দ ঘরেও ভেসে আসছে। এপাশের খাটিয়ায় যুগল পরসাদের ভোর হয়ে গেছে। তার ভাঙ্গা গলায় গুন গুন গান ভেসে আসছে, ‘সত্য গুরুদত্ত শিবদত্ত দাতা, রামকে চরণ মে চিত্ত লাগা’। রাতজাগা নতুন-মায়ের কানে সে লোরির মত শোনায়। চোখের পাতা জুড়ে যায়। তখনই আচমকা শব্দটা শোনা গেল। অনেক দূরের থেকে, তবু ভোরের নিস্তব্ধতায় স্পষ্ট। রাধিয়া ধড়মড়িয়ে উঠল, তার নিদ টুটে গেল। ভানুর দাদিও জেগে গিয়েছিল, সে বলে উঠল, “কামান দাগছে, গোলার শব্দ। যুদ্ধ তাহলে লাগলই!”

    গোলা! কামানের গোলা! শাশুড়ি যখন বলছে, তখন তাই। শাশুড়ির বাপের ঘর কেল্লার পাশে, বাপ-ভাইরা সব পল্টনের মাইনে করা সিপাহি, সে আর গোলার শব্দ চিনবে না! আর এই লড়াইয়ের কথাটা কিছুদিন ধরেই হাওয়ায় উড়ছে। পল্টনের সিপাহিদের সঙ্গে গোরা সাহেবদের বনছে না। এটা ওটা নিয়ে প্রতি পদে পদে লাগছে। সিপাহিরা সব ভিতরে ভিতরে ফুঁসছে। তবে কি সিপাহিরা রাগ উগরে দিল?

    সারাদিন ধরে খালি সড়কের দিক থেকে ঘোড়ার খটখটি শব্দ শোনা গেল। ঠিক কী যে হল! ঘরে বসে বোঝার কোন উপায় নেই। এই মহল্লা সব কিছুর বাইরে যেন। এখানে খবরও আসে অনেক, অনেক দেরিতে। ভাল খবরও তাই, খারাপ খবরও তাই। এখানকার মানুষদের শুধু পরিশ্রমেই অধিকার। তাই ব্যাপারটা বুঝতে বুঝতে সাঁঝের বেলা, যখন মরদরা সব দিনের কাম-ধান্দা সেরে ঘরে ফিরল, তখন। মহেন্দর পরসাদ চুলার ধারে বসে, রোটি-ভাজি খেতে খেতে বাপকে বলল, “লড়াই তাহলে লেগেই গেল। সাহেবরা জোর ভয় পেয়েছে। গির্জাঘর-দপ্তর-মক্তব সব ছেড়ে-ছুড়ে কেল্লায় গিয়ে ঘুষেছে। সেখান থেকে সিপাহিদের উপর কামান দাগছে। সিপাহিরাও কি ছেড়ে দেবে? দলে দলে সিপাহি এসে জড়ো হচ্ছে সাহগঞ্জে। জিগির তুলেছে, এ হল জিহাদ। একজন সাহেবকেও ছাড়বে না, একজন যিশুভক্তকেও ছাড়বে না। বাচ্চা-বুড়ো সব্বাইকে কেটে ফেলে দেবে। দলে দলে সাধারণ গেরস্থ ঘরের ছেলেরাও যোগ দিচ্ছে সিপাহিদের সঙ্গে। সব ফুঁসে উঠেছে একেবারে।”

    বুড়ো যুগল পরসাদের খাওয়া হয়ে গিয়েছিল। সে লোটার থেকে জল খায় ধীরে সুস্থে। এক ঢোঁক, এক ঢোঁক করে। আর বিড়বিড় করে, “আগুন একবার জ্বললে আর রক্ষে নেই। কখন কোন দিক দিয়ে যে কার চালে ফুলকি উড়ে এসে পড়বে কেউ বলতে পারে না। পুরো মহল্লা সাফ হয়ে যাবে।”

    যমনা গরমাগরম রোটি সেঁকে সেঁকে বাপ-ছেলেকে দিচ্ছিল। যুগলের কথা তার মোটেই পছন্দ হয় না। তার বাপ-বড়ভাই সব পল্টনে কাজ করে। সে নিয়ে তার বড় গুমর। সে ঝাঁঝিয়ে ওঠে, “গরিব মানুষ শুধু লাথ খাবে? আংরেজরা সিপাহিদের মানুষ বলে মনে করে না, ভালমুখে কথা বলে না একটা, গালি ছাড়া, মারধোর ছাড়া কোন কথা নেই তাদের মুখে – খালি নিজের জাতের কোলে ঝোল টানে, এসব কথা কানে ঢোকেনি এতদিন? বেশ করেছে সিপাহিরা, মেরে ওদের নিজের দেশে ফেরত পাঠিয়ে দিক, হাঁ।” বলে মল ঝমঝমিয়ে উঠে যায় সেখান থেকে। খাবারের আশায় নানহি বসে ছিল কাঠের গাদার পাশে। সে রাতে আর খাওয়া জোটে না বেচারির।

    পরের রাতে যমনার তেজ মাটিতে মিশে গেল। বাড়ি ফিরে জলটুকু মুখে দেওয়ার সবুর সইল না মহেন্দরের, তার আগেই মার কানে কথাটা তুলতে গেল, “মায়ি এ মায়ি, নানাজিকা ঘর তোড় দিয়া সাহেবলোগোনে। পুরা মহল্লা জ্বালা দিয়া। রামজি জানে আদমিলোগোকা ক্যা হুয়া – কৌন বাঁচা, কৌন মরা ” শুনেই যমনা হাত পা ছেড়ে ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে। মড়াকান্না জোড়ে। কান্না শুনে প্রতিবেশীরাও এসে হাজির হয়। অনেক আলাপ-আলোচনা হয়। রাতের অন্ধকারে শুধু টিকের আগুনের হাত-ফেরতা আলো চোখে পড়ে। পাঁচজনা বুদ্ধি দেয়, একবার সাহগঞ্জ যাওয়া দরকার। এই বিপদে অপনা আদমিরা পাশে না দাঁড়ালে কি হয়! মহেন্দর পরসাদ যাক। ক’জন ইয়ার দোস্তও সঙ্গে যাক। কী হয়েছে ভাল মতন বুঝে আসুক। তেমন হলে না হয় সেখানকার সবাইকে নিয়ে চলে আসুক কিছুদিনের জন্য।

    পরের দিন মহেন্দরদের ফিরতে ফিরতে ঘোর নিশুতি। যমনা সারাদিন উচাটন হয়ে ছিল। কাজকর্ম সবই করেছে, কিন্তু মন পড়ে আছে রাস্তার দিকে। অন্যদিন তার খরনজর থাকে সংসারের সবদিকে, তাই নানহির কপালে ঝড়তি-পড়তি ফেলাছড়ার খাবারের বেশি কিছু জোটে না। আজ রাধিয়া লুকিয়ে লুকিয়ে নানহিকে একটু দুধও দিয়েছে। যমনার চোখের আড়ালে। সন্ধের দিকে যমনা ভানুকে দোল দিচ্ছিল। সেও খানিকটা আনমনে। তখন সাহস করে প্রশ্নটা করেই ফেলে রাধিয়া। সিপাহিদের মধ্যে লড়াই লেগেছে, কিন্তু যিশুবাবার ভক্তদের সঙ্গে কীসের দুশমনি সিপাহিদের? তাদের বিরুদ্ধে জিগির তুলছে কেন তারা? যমনা উত্তেজিত হয়ে পড়ে। বলে, “জানিস না, ওই গির্জাঘরের সাহেবরা অন্য ধর্মের লোকদের ঘেন্না করে? ওরা বলে, শুধু যিশুবাবার পায়ে যারা আশ্রয় নেবে, তারাই স্বর্গে যাবে। ওরা চায়, তামাম দুনিয়ার সব লোককে যিশুভক্ত বানাতে। ছলে-বলে-কৌশলে যেমন করে হোক। লোভ দেখিয়ে দলে লোক টানে। ফুসলিয়ে বাপ-দাদার ধর্ম কেড়ে নেয়, তারপরেও ওরা দুশমন না? তাজ্জব বাত!” ভানুর দাদিকে আর ঘাঁটায় না রাধিয়া। তবু মনের প্রশ্ন যায় না। তবে যে ভানুর দাদাজি বলে, যিনি রাম, তিনিই রহিম। তবে কি যিশুবাবা রাম-রহিমের থেকে আলাদা? আরও জট পাকিয়ে যায়। তবে বাচ্চা-বুড়ো কেটে ফেলার কথায় স্বস্তি পায় না মোটে। করুণ আর্তি জানায় চিরচেনা রামজির কাছে, রামজি রহম করো। মানুষে মানুষে হানাহানি বন্ধ করো, রামজি।

    মহেন্দররা দল বেঁধে গিয়েছিল, দল বেঁধেই ফিরল। খবর নিয়ে এসেছে। সেই সঙ্গে আরও কিছু। একটা লম্বাপানা পুঁটলিমতো। বাপ-ভাইয়ের খবরের জন্য উদ্গ্রীব যমনার আগে সেদিকে খেয়াল পড়েনি। দাওয়ায় পা রাখতেই সে ছেলের উপর যেন ঝাঁপিয়ে পড়ল। তা খবর ভাল-মন্দয় মেশানো। নানাজির ঘর দোর আর কিছুই নেই, সব পুড়ে আংরা। তবে মহল্লার লোকজন হামলার আগেই পালাতে পেরেছিল। তাই মানুষজনের তেমন ক্ষতি হয়নি। এই বাঁচোয়া। এতক্ষণে যমনা সামান্য স্বস্তি পায়। ছেলের হাতের পুঁটলিটার দিকে এতক্ষণে তার নজর পরে। ইয়ে ক্যা? ছেলে পুঁটলিটা বাড়িয়ে ধরে মায়ির দিকে। যমনার হাতের মধ্যে পুঁটুলিটা সামান্য নড়ে ওঠে। যমনা আঁতকে ওঠে, রাম! রাম! এ কী? ভাল করে ঠাহর করে সবিস্ময়ে বলে ওঠে, “আরে! এতো বাচ্চা একটা! কাদের বাচ্চা? কোথায় পেলি?”

    সবকটা ছোকরা একসঙ্গে কলকলিয়ে ওঠে। সবার হট্টগোলের থেকে যা উদ্ধার হয়, তা হল এই যে বেরাদরদের খোঁজ খবর নেওয়ার পরে ওরা সাহেব-গির্জাতে গিয়েছিল। ভাঙচুর, লুঠতরাজ তো আগেই হয়েছে, মেহেঙ্গা কুছু ইধার উধার যদি মিলে যায় সেই ধান্দাতে। বিলকুল বেকার কাম হল, শকুনে-শেয়ালে সব নিয়ে ভেগেছে। একটা দামি কাঠের টুকরোও পড়ে নেই, সোনা-চাঁদি-জেবর-উবর তো বাদ দাও। সেই সব ঢুঁড়তে ঢুঁড়তে বাচ্চাটাকে মিলল। গির্জাঘরের পাশের একটা বাড়িতে। মেমসাহেব পাশেই পড়েছিল, মেমসাহেবের ধড়ের থেকে মুন্ডু আলাদা করে দিয়েছে একেবারে। আরও কটা বাচ্চা, মেয়ে এদিক ওদিক মরে পড়ে আছে। শুধু এই বাচ্চাটা তখনও জিন্দা। মহেন্দর তড়বড় করে বলে, “দুধের বাচ্চা, আমাদের ভানুর সমান সমান, ফেলে চলে এলে রামজি গুসসা করবেন না?”

    যমনা তো হাঁ! ওদের দাওয়ায় গলার আওয়াজ শুনে যে পড়শিরা জড়ো হয়েছিল তারাও হাঁ! সাহেবের বাচ্চা তুলে নিয়ে এলি! ভয়ডর নেই যে তোদের একদম! শুধু যুগল পরসাদের চোখ দিয়ে দরদর করে জল বেরোয়, সে বার বার কপালে হাত ঠেকিয়ে রামজিকে প্রণাম জানায়। আর মৃদু গলায় মহেন্দরকে বলে, “বহোত আচ্ছা কিয়া বেটা! রামজি তেরা ভালা করেগা।” যমনা আর কি করে! খানিক ইতস্তত করে বৌয়ের হাতে তুলে দেয় বাচ্চাটা। বলে, দ্যাখ আগে মাই টানে কিনা! রাধিয়া তাড়াতাড়ি বাচ্চাটাকে নিয়ে ঘরে ঢুকে যায়। আহা রে! এইটুকু শিশু একটা! তাড়াতাড়ি কোলে জড়িয়ে ধরে, মুখে দুধের বোঁটা গুঁজে দেয়। টান, বেটা, টান। দুধ খেয়ে জুড়া একটু। মহেন্দরকে আরও একটু ভালবেসে ফেলে রাধিয়া! ভাগ্যিস বাচ্চাটাকে ফেলে রেখে আসেনি। বাচ্চাটা মারা গেলে পাপ হত না?

    মহল্লার সোরগোল থামে না এত সহজে। উঠোনের নিমের তলায় পঞ্চজনার আসর বসে। কেউ বলে, গোরা সাহেব হল জাতসাপ – এ তার বাচ্চা! এখন দুধ খাবে, বড় হলেই ফণা ধরবে। তখন পাড়াশুদ্ধ সবাই মারা পড়ব। তার থেকে এখনই ফেলে দাও। বিপদ বুঝতে পারে অনেকেই। কিন্তু ফেলে দেওয়ার কথায় সকলে রাজি হয় না। আহা, দুধের শিশু! তার অবহেলা করতে আছে নাকি! কেউ বলে, গোরা সাহেবরা টের পেলে এসে কেড়ে নিয়ে যাবে। এইবার যুগল পরসাদের মৃদু গলা শোনা যায়, সে যখন গোরা সাহেবরা নিতে আসবে তখন দেখা যাবে। এখন তো বাচ্চাটা খেয়ে-পরে বাঁচুক। ঘরে বালবাচ্চা আসা – একি রামজির কৃপা ছাড়া সম্ভব? ভুরুক ভুরুক কল্কে ঘোরে হাতে হাতে। আলোচনা হতেই থাকে। কোনো মীমাংসা হয় না।

    বাচ্চাটা বেঁচেই গেল। কোন মন্ত্রের জোরে কে জানে! খুব দুর্বল, ভাল করে কাঁদতেও পারে না। তবু রাধিয়াকে চিনে ফেলেছে। ঘুমিয়ে পড়ে যখন, তখনও রাধিয়ার কাপড় মুঠো করে ধরে রাখে। আর যখন জেগে থাকে, রাধিয়া কাছে এলেই ওকে দেখে। বড় বড় টানা টানা চোখ। ধবধবে গোরি। নীল চোখের মণি। বড় মায়া-ভরা। রাধিয়া ওর নাম দিয়েছে লছমি।
    লছমিমাইয়ের মতই সুন্দর। একা রাধিয়া না, মায়ায় জড়িয়েছে সবাইকেই। ভানু আর লছমি যেন একই। তারা এক বিছানায় ঘুমায়, একসঙ্গে খেলা করে, রাধিয়া একবার এর কপালে চুমা খায়, আবার ওর কপালে। দুজনেই মুখ আলো করে হাসে। রাধিয়ার বুক ধুকপুক করে, সত্যি লছমিকে গোরারা কেড়ে নিয়ে যাবে? চোখে জল চলে আসে, হাতের কাজে ভুল হয়ে যায়। যমনা খরখরিয়ে ওঠে। রাধিয়ার চোখের জল সে দেখতে পায় না, নাকি দেখতে চায় না? শুধু যুগল পরসাদ কিছুটা যেন বোঝে। রাধিয়াকে কাছে ডেকে বলে, “রামজির কৃপা হলে লছমি তোর কোলেই থেকে যাবে। তুই মন দিয়ে রামজিকে ডাক, বহু।” তাই করে রাধিয়া। বনফুলের মালা গাঁথে রামজির জন্য, আরও বেশি যত্ন করে পূজা চড়ায়। ভানু আর লছমি দু’জনেই যেন সহি-সলামত থাকে। রামজির কৃপা যেন পায় ওরা দুটিতে।

    এরই মধ্যে মহেন্দর আবার খবর আনল যে সিপাহিরা লড়াইতে হারছে। একের পর এক ঘাঁটি ছেড়ে পালাচ্ছে। পল্টন ছেড়ে ভাগছে অনেকেই। নেতারা কেউ মরেছে, কেউ ভেগেছে। সিপাহিরাজ খতম হো গিয়া। লালমুখো সাহেবরা আবার কেল্লার বাইরে আসতে শুরু করেছে। ভেঙ্গে যাওয়া গির্জা-বাড়িঘর আবার নতুন করে তৈরি হচ্ছে। শহরে এখন কাজের ছড়াছড়ি। আচ্ছে দিন ফিরে এল। মামাজির খবরও পাওয়া গেল। হাঙ্গামার সময় ওরা সোজা মামাজির স্বশুরালে গিয়ে উঠেছিল। ওখানেই আছে এখন, তবে মামাজি শিগগিরি একদিন বহিনের কাছে আসবেন। সেই খবরে যমনার খুশি আর ধরে না। যে যুদ্ধে দেশি পল্টন হারে, তার খবরে তার আর আগ্রহ নেই। ভাই এলে কেমন করে, কী দিয়ে আপ্যায়ন করবে সেকথাই বহুর সঙ্গে দিনরাত আলোচনা চলে।

    মামাজি এলেন। সঙ্গে এক দোস্ত। পল্টনওয়ালা দোস্ত। এদের দলটা খুব লড়াই করেছে। সাহেবদের অনেক ক্ষতি করেছে। বিশেষত এই দোস্তের হাতে কত যে সাহেব মারা পড়েছে, জখম হয়েছে! তাই সাহেবরা এই দোস্তের নামে ঢেঁড়া দিয়েছে। মাথার জন্য ইনামের লোভ দেখিয়েছে। প্রাণ বাঁচাতে সঙ্গী-সাথীরা সব এদিক ওদিক ছিটকে গেছে। দোস্তের লুকিয়ে থাকার নিরিবিলি আস্তানা দরকার। শহর থেকে দূরে। তাই বহেনের ঘরে আসা। আশ্রয় নিতে। সব শুনে টুনে যুগল পরসাদ ভরসা দেয়। কুটুম মানুষ, অতিথি হয়ে এসেছ, সাধ্যমতো খাতিরদারি করব। কোনও ভয় নেই। এই মহল্লার কেউ গদ্দার নয়। কেউ গদ্দারি করবে না।

    নিশ্চিন্তে মামাজি আর তার দোস্ত আরামসে খাটিয়ায় গা এলায়। লোটাভরা সরবত দেয় যমনা। মামাজির পায়ের কাছে বসে পড়ে। প্রশ্নের ঝুড়ি উজাড় করে দেয়। মামাজিও সপ্রশ্রয় উত্তর দিতে থাকে। যুদ্ধের গল্প শোনায়। দোস্তের বীরত্বের গল্পও। কেমন করে চলন্ত গাড়িতে টিপ করে কোন সাহেবকে মেরে ফেলেছে, এক এক কোপে সাহেব-কোঠির মেমসাহেবের, বাচ্চাদের মুন্ডু উড়িয়ে দিয়েছে – এইসব গল্প হতে থাকে। রক্তের গন্ধ-মাখা। যমনা হাঁ করে শোনে। যুগল পরসাদের ভাল লাগে না। সে গুনগুন করে, ‘সবকো সম্মতি দে ভগবান’।
    রাধিয়া বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত ছিল। তাদের সাফসুতরো করিয়ে, এক কোলে ভানু, আরেক কোলে লছমিকে নিয়ে সে গুরুজনদের পরনাম করতে এল। লছমিকে দেখে মামাজি শুধায়, ইয়ে লেড়কি কৌন হ্যায়! যুগল পরসাদ সংক্ষেপে বলে, মহেন্দরের বেটি। বেটি? মামাজির অবাক জিজ্ঞাসা। যমনা সবিস্তারে বড়ে-ভাইকে লছমির আবির্ভাবের গল্প শোনায়। বড়ে-ভাই আর তার দোস্ত শোনে। আর নিজেদের মধ্যে মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। কিছু বলতে চায়, তবে যুগল পরসাদের শান্ত, নিরুত্তাপ মুখ দেখে দুজনেই চুপ করে যায় তখনকার মতন। একটা চাপা অস্বস্তি মাটি কামড়ে পড়ে থাকে।

    ততক্ষণে ওদিকে আরেক খেলা জমে। নতুন লোক দেখে ভানু ভয় পায়। দাদার কোলে সেঁধিয়ে যায়। লছমির মোটে ভয়ডর নেই। সে দোস্তসাহেবের পাহাড়-তুল্য পালোয়ানি বপুর উপর টুমটুম হয়ে বসে। কচি কচি হাতে চাপড়ায়। এক সময় দেখা যায়, দোস্তসাহেব চৌপাইতে চিৎপাত। আর তার বুকের উপর বসে লছমি দৌরাত্মি করছে। এই তার বিশাল মোচ ধরে টানছে। ওই গলার খাঁজে আটকে থাকা মাদুলি ধরে টানছে। এই নাকের ফুটোয় আঙুল ঢুকিয়ে দিচ্ছে। তার মুখে হাসি ধরে না! কাণ্ড দেখে যমনা গালে হাত দেয়। আই লো মা! কিষণজি যেমন পুতনা রাক্ষসীকে একটুও ডরায় নি, এই মেয়ের দেখি তেমন সাহস! হায় রাম! গালের থেকে হাত নামানোর অবকাশ মেলে না যমনার।

    যুগল পরসাদ লছমিকে কোলে তুলে নেয়। অনাবশ্যকভাবে আবার বলে, মহেন্দরের বিটিয়া। একটু থেমে বলে, আমাদের বহু ওকে দুধ দিয়ে পালছে। মহেন্দরের মামাজি আর তার দোস্ত শোনে। তারা ভানুর দিকে তাকায়। এ হল মহেন্দরের বেটা। আর ও হল মহেন্দরের বিটিয়া। লছমির দিকে সোজা তাকায় না। কী চলে কার মনে, কে জানে! লছমির এতে কিছু এসে যায় না। দেখা যায়, তার দোস্তসাহেবের কোলের দিকে ভারি নজর। কোলের মালিক যতই এড়িয়ে থাকতে চেষ্টা করুক না কেন।

    তখনকার মত চুপ করে থাকলেও, মহেন্দরের মামাজি মহেন্দরের বিটিয়ার কথায় ফিরে ফিরে আসে। যুগল পরসাদকে বার বার বলে, আংরেজ হল বেইমানের জাত। তাদের বাচ্চার খুনেও বেইমানি আছে। তার উপর এই বাচ্চা বিধর্মীর বাচ্চা – একে বড় করা পাপ, ঘোর পাপ। দোস্তসাহেবও জোর গলা মেলায় মামাজির সাথে। হাঁ অযোধ্যার বড় মহান্ত পরমানন্দজিও বলেছেন। সেই জয়মলশেঠের হাভেলিতে এসেছিলেন না, ক’দিন আগে। বিশাল বড় সাধুবাবা। তার চরণের সেবার জন্য কতলোক নিত্য ধরনা দেয়। বাবাজিও বলেছে, যিশুর কথা বলে যারা তারা আমাদের পহেলা দুশমন। তাদের কেটে যমনায় ফেলে দেওয়া ধর্মের কাজ। এসব পুণ্যাত্মাদের মুখের কথা, নিজের কানে শোনা, হাঁ। যুগল পরসাদ শিউরে ওঠে। শুধু বলে, দুধের বাচ্চার আবার ধর্ম কী! আর কথা বাড়ায় না সে। সেখানে সুবিধা না করতে পেরে, মামাজি বহেনকে বলতে থাকে, “কোকিলের বাচ্চা কাকের বাসায় কি মিশ খায়? এই বেজাতের, বেধম্মা মেয়ে তো গলার কাঁটা হয়ে থাকবে পরে! মহেন্দরের বিটিয়া, মহেন্দরের বিটিয়া বলছ বটে তোমরা, এ বেটির শাদি দেবে কী করে? বেটির কথা ছাড়, কোন জাতের লোক এরপর তোমাদের ঘরে করণ করবে? ভানুরও আর শাদি হবে না!” যমনার মাথায় কথাটা ভালভাবেই সেঁধোয়। সেও ভাবনায় পড়ে। রাগ ঝামটে পড়ে যুগল পরসাদের দিকে – “ছেলেটা বুদ্ধুরাম, জাতসাপের বাচ্চা তুলে নিয়ে এল ঘরে, কই মহল্লার আর কেউ তো হাত বাড়ায়নি। আর বাপকে দ্যাখো, কোথায় সবদিক সামাল দেবে! তা না সেও ছেলের কথায় নেচে উঠল! ক্যায়সা আদমি হো!” ঘরের হাওয়া গরম হয়ে ওঠে। মহেন্দর ঘরে ফিরলে যমনা তাকে হুকুম দেয়, “মেয়েটাকে আবার কেল্লার পাশে চুপিচুপি শুইয়ে দিয়ে আসবি। ও মেয়ে ঘরে থাকলে বিপদ হবে।” মহেন্দর থতমত খেয়ে শোনে। রাধিয়ার চোখ দিয়ে জল গড়াতে থাকে। যুগল পরসাদ থম মেরে যায়। রামজির নামগানও আর শোনা যায় না সে রাতে।

    ঘাড়ের উপর আরও বড় বিপদ নাচছিল, এক রামজিই শুধু সে কথা জানতেন। সে বিপদ এল গোরা পল্টনের রূপ ধরে। পথ দেখিয়ে নিয়ে এল ওদেরই গ্রামের তালুকদার। পঞ্চাশ টাকা দাম উঠেছে দোস্ত-সাহেবের মাথার। অত টাকার লোভ ছাড়া কি মুখের কথা! ঘোড়সওয়ার দল ঝাঁপিয়ে পড়ল ওদের মহল্লার উপর। ভর দুপুরে। মরদরা প্রায় সবাই তখন কামকাজে বাইরে। ঘরে ঘরে খেতে বসার তোড়জোড় চলছিল। সব ফেলে রেখে, মেয়েরা, বাচ্চারা, বুড়োরা সব প্রাণপণে ছুট লাগালো দক্ষিণে, জঙ্গলের দিকে। ছুট, ছুট। ঘোড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে মানুষের ছুট। যমনা আর রাধিয়ার কোলে বাচ্চারা, ভানু আর লছমি। মেয়েমানুষের ছোটার গতি এমনিতেই শ্লথ, বাচ্চা-কোলে আরও পিছিয়ে পড়ে। সাহেবের চাবুকের ডগা প্রায় তাদের কানের কাছে শিষ দিয়ে যায়। ওদের অত পিছিয়ে পড়তে দেখে ফিরে আসে মামাজি আর দোস্তসাহেব। বাচ্চা দুটোকে ছিনিয়ে নেয় ওদের কোল থেকে, তারপর আল ছেড়ে মাঠে নেমে পড়ে। লকলকে মকাইয়ের শিষের আড়াল দিয়ে ওদের হাত ধরে টেনে প্রায় উড়িয়ে নিয়ে যেতে থাকে জঙ্গলের দিকে। সাহেবের চাবুক আর শিকারের দিশা পায় না। তবে শালপ্রাংশু-মহাভুজ শরীরটা সবুজের চাদরে পুরো আড়াল হয় না। তালুকদার সেইদিকে দেখিয়ে দেয়। বন্দুক তুলে নিশানা করে সাহেবরা। গুলির পরে গুলি ধেয়ে আসে। “এই গুলিটা মিঃ গ্রাহামের জন্য। এই গুলিটা পাদ্রি ম্যাকফারসনের জন্য, এইটা এমিলির জন্য” … দাঁতে দাঁত পিষে বলে, “ডার্টি নিগার! আমাদের মেয়েদের, বাচ্চাদের গায়ে হাত তোলা! এই নে! চার্চে আগুন ধরিয়েছিলি – এইটা সেই জন্য”… গুলির পর গুলি প্রতিহিংসা ঢালে। জঙ্গলের সীমানায় পৌঁছে যাওয়া গাঁওয়ালেদের কানে আসে মরণ-আর্তনাদ! হায় রাম! একটা বাচ্চার তীব্রস্বর একবার কেঁদে উঠে থেমে যায়। সবাই যে যার কান চাপা দেয়। মাথা চাপড়ায়। হায় রাম! হায় রাম!

    পেটে ঠোক্কর দিয়ে সাহেবরা ঘোড়ার মুখ ফেরায় উল্টোদিকে। আপাতত কাজ মিটেছে। তালুকদারের গায়ে তার পুরস্কারের টাকা ছুঁড়ে দেয়। তালুকদার সেলামের পর সেলাম ঠোকে। “হুজুর মেহেরবান”! “ডার্টি নিগার” বলে পিচিক করে সাহেব মাটিতে থুতু ফেলে। তারপর ধুলো উড়িয়ে আগ্রার দিকে চলে যায়। ধুলোর ঝড় এসে স্থিতু হয় উঠোনে উল্টে থাকা চকচকে পিতলের বগি থালায়, মাটিতে ছড়ানো অভুক্ত অন্ন-ব্যঞ্জনে। আরও বিবর্ণ হয় চামারপাড়া।


    ***

    অবশেষে বৃষ্টি নেমেছে। রুক্ষ মাটির বুকে জলের ফোঁটা ঝরে পড়েছে। রক্তের দাগ মুছে গেছে মাটির বুক থেকে। সোঁদা মাটির গন্ধের সঙ্গে বুনোফুলের গন্ধ মিশে চারদিক ভারি হয়ে আছে। বুক ভরে গন্ধ নেয় রাধিয়া। মাটির গন্ধ, ফুলের গন্ধের সঙ্গে মিশে থাকে শিশুর গায়ের গন্ধ। রামজির রহম।
    দুটো ছোট্ট ছোট্ট পা। আকাশে ছুঁড়ে ছুঁড়ে খেলা করছে। পাশে একটা গর্ভিনী বিড়াল গুটিশুঁটি মেরে শুয়ে।
    রাধিয়া দেখে আর দেখে!


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    তন্ময় ভট্টাচার্য | প্রতিভা সরকার | হেমন্ত দাস | শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় | মৃণাল শতপথী | কল্পর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় | দেবাশিস মল্লিক | মণিশংকর বিশ্বাস | সুকান্ত ঘোষ | সাদিক হোসেন | ডাঃ সেখ নূর মহাম্মদ | মোহাম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ | সোমনাথ রায় | রুমা মোদক | জয় গোস্বামী | দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় | সুপর্ণা দেব | সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় | স্বাতী রায় | অনিন্দিতা গোস্বামী | ফারুক আব্দুল্লাহ | খান শামিমা হক | নীলু ইসলাম | সারিকা খাতুন | দময়ন্তী | সাদাত হোসাইন | গোলাম রাশিদ | মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় | শারদা মণ্ডল | অমর মিত্র | হামিরউদ্দিন মিদ্যা | ইমানুল হক | নীলাঞ্জন দরিপা | চিরশ্রী দেবনাথ | সায়ন কর ভৌমিক | কৌশিক বাজারী | ঐন্দ্রিল ভৌমিক | চৈতালী চট্টোপাধ্যায় | যাজ্ঞসেনী গুপ্ত কৃষ্ণা | মোজাফ্‌ফর হোসেন | অনুরাধা কুন্ডা | মাজুল হাসান | জগন্নাথদেব মন্ডল | যশোধরা রায়চৌধুরী | কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায় | শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী | দীপেন ভট্টাচার্য | মৌ সেন | পায়েল দেব | তনুজ | রুখসানা কাজল | পার্থসারথি গিরি | ইদের কড়চা
  • গপ্পো | ০৬ মে ২০২২ | ১২৬৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ঘন্টাঘর - একক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • প্রতিভা | 2402:3a80:1cd3:d907:478:5634:1232:5476 | ০৬ মে ২০২২ ২১:০১507321
  • বড় মানবিক একটি গল্প দিলে হে! আর সাজিয়েছ বড় সুন্দর। সিনেমাটিক ট্রিটমেন্ট। তবে রাধিয়ার চরিত্রটি আরও একটু খেলাতে পারতে। 
  • | ০৭ মে ২০২২ ১৬:৫৫507352
  • বড় বড় যুদ্ধ দাঙ্গার সময় এমন কত ছোট্ট ছোট্ট ঘটনা ঘটে গেছে তার কোন হিসেব নেই।  টেনশানে টান টান মানবিকতায় ভরপুর গল্প। গোবলয়ের রামভক্তদের মধ্যেও মানবিক মুখ এখনো কিছু আছে আশা করি। 
     
    আমার শুধু মহাবিদ্রোহের যে ব্যাকড্রপ আঁকা গল্পে সেইটে একটু হালকা লাগল।  অতখানি বিদ্রোহের আর অমন ভয়ংকর দমনপীড়নের আরেকটু বিস্তার থাকলে ভাল লাগত। 
  • স্বাতী রায় | ০৮ মে ২০২২ ২২:৩৮507420
  • @প্রতিভা দি আর দ কে অনেক ধন্যবাদ। মাথায় রাখব। 
  • শান্তনু চট্টোপাধ্যায় | 116.193.139.89 | ১০ মে ২০২২ ১৬:০০507489
  • নিজেকে কেন এভাবে লুকিয়ে রেখেছেন, কে জানে। তবে এমন লেখার হাত যদি নিয়মিত না লেখে, সেটা পাঠকদের প্রতি অন্যায়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন