এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  গপ্পো  ইদের কড়চা

  • অ্যাবনর্ম্যাল

    কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায়
    গপ্পো | ১৩ মে ২০২২ | ২৯৮২ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • তন্ময় ভট্টাচার্য | প্রতিভা সরকার | হেমন্ত দাস | শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় | মৃণাল শতপথী | কল্পর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় | দেবাশিস মল্লিক | মণিশংকর বিশ্বাস | সুকান্ত ঘোষ | সাদিক হোসেন | ডাঃ সেখ নূর মহাম্মদ | মোহাম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ | সোমনাথ রায় | রুমা মোদক | জয় গোস্বামী | দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় | সুপর্ণা দেব | সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় | স্বাতী রায় | অনিন্দিতা গোস্বামী | ফারুক আব্দুল্লাহ | খান শামিমা হক | নীলু ইসলাম | সারিকা খাতুন | দময়ন্তী | সাদাত হোসাইন | গোলাম রাশিদ | মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় | শারদা মণ্ডল | অমর মিত্র | হামিরউদ্দিন মিদ্যা | ইমানুল হক | নীলাঞ্জন দরিপা | চিরশ্রী দেবনাথ | সায়ন কর ভৌমিক | কৌশিক বাজারী | ঐন্দ্রিল ভৌমিক | চৈতালী চট্টোপাধ্যায় | যাজ্ঞসেনী গুপ্ত কৃষ্ণা | মোজাফ্‌ফর হোসেন | অনুরাধা কুন্ডা | মাজুল হাসান | জগন্নাথদেব মন্ডল | যশোধরা রায়চৌধুরী | কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায় | শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী | দীপেন ভট্টাচার্য | মৌ সেন | পায়েল দেব | তনুজ | রুখসানা কাজল | পার্থসারথি গিরি | ইদের কড়চা
    ছবিঃ ঈপ্সিতা পাল ভৌমিক



    দিদিমা বিজলীবালা বসুর মৃত্যুটা, যেটা হার্টফেল বলে ধরে নিয়েছিল সবাই, শেষ অঘ্রাণের রাতে চেক মাফলার পরে এসে, কেশে, ‘হার্টফেলই মনে হচ্ছে বটে’ মাথা নেড়ে সার্টিফিকেট লিখে দিয়েছিল নন্দীডাক্তার, সেটা যে খুন হতে পারে, ছোটমেসো মনোজ মিত্রর মৃত্যুটাও যে স্বাভাবিক নয় এবং কে জানে সরকারদের জামাই সুন্দরলালের আকস্মিক প্রয়াণ যা নিয়ে গজল্লা চলেছিল পাড়ার মোড়ে সাতদিন এবং শেষমেশ “সবই নিয়তি” দীর্ঘশ্বাস ফেলে সরে গিয়েছিল পরবর্তী সেন্সেশনের প্রার্থনা বুকে নিয়ে, তার পেছনেই বা কতখানি আদতে নিয়তির হাত - সংশয়গুলো যখন জাগতে শুরু করল, আমি জনস্টন রোড আর ব্লু হিল অ্যাভিনিউর ক্রসিং-এ দাঁড়িয়ে ছিলাম।

    রোদ ছিল। শীত ছিল না। হাফপ্যান্ট পরা ভিড়, আইসড আমন্ডমিল্ক এসপ্রেসো হাতে নিয়ে ঘিরে ছিল। আমি বাকি জামাকাপড়ের ওপর একটা জ্যাকেট চড়িয়ে রেখেছিলাম। যতক্ষণ না গরমে অসুস্থ বোধ হচ্ছে জ্যাকেট জাতীয় কিছু একটা পরা প্রেফার করি। না হলে উন্মুক্ত লাগে। আর উন্মুক্তি অস্বস্তিজনক। এ অস্বস্তি যতদিনের স্মৃতি ততদিনের। যখন জুন মাসে ফ্যান পাঁচে চালিয়ে বেডকভার চাপা দিয়ে শুতাম।

    কাজটা সহজ ছিল না। মাঝরাতের লোডশেডিং-এ গলগল ঘামের জন্য শুধু নয়; ওই পারিপার্শ্বিকতায় নর্ম্যাল এবং অ্যাবনর্ম্যালের সংজ্ঞা ও সীমা স্পষ্ট ছিল এবং যে কোনও রকম অ্যাবনর্ম্যালিটি, যেমন জুন মাসে চাদর চাপা দেওয়া, বাকিদের ওঠাবসা খাওয়াশোওয়ায় যত তাৎপর্যহীনই হোক না কেন, জাস্ট অ্যাবনর্মাল বলেই পিষে দেওয়ার চেষ্টা হত। সোৎসাহ অংশ নিত এমনকি দু’বছরের ছোট বোন পুকাই-ও। ‘মা দেখো বুকাই আবার বেডকভার চাপা দিয়েছে’ চেঁচিয়ে, ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় না থেকে চাদর কেড়ে নেওয়ার চেষ্টা করত। পুকাই চিরকালই অস্বস্তিজনকরকম নর্ম্যাল। পরিবেশপরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ সাজপোশাকে বিশ্বাসী। শীতে বেশি, গরমে কম, সমুদ্রস্নানে আরও কম। কালই দেখলাম, কার্লসবাড বিচে সপরিবারে উল্লসিত স্নানের ছবি আপলোড করেছে, বিকিনিপরিহিত।

    না, ফেসবুকে নিজের নামে নেই আমি। ফেক থেকে দেখেছি।

    দুপুর ছিল, নীল জ্যাকেট পরা আমি ছিলাম। আকাশে ‘বেটার লাইফ’ বিলবোর্ডে মহিলা ছিলেন। মাঝবয়সী, বিবেকানন্দ-হাত ওপচানো স্তন। মহিলার স্বাস্থ্যের স্থূল ও অশ্লীল দীপ্তি আমার মধ্যে আতংক ও বিরাগের কাঁপুনি তৈরি করছিল। নিয়ে যাচ্ছিল শ্যামসুন্দর পল্লী সেকেন্ড লেনে। খোলা নর্দমা। হলুদ বাড়ি। সবুজ দরজা খুলে চোখে চোখ রেখে দাঁড়িয়েছেন বিজলীবালা।

    চোখ সরাতে ফোন বার করেছিলাম। সেকেন্ড লেনের পাশের বাড়ির গাবলুর পাবলিক প্রোফাইলে গত তিনমাস ধরে হুলাবিলায় মারা যাচ্ছেন গাব্লুটাবলুর মা, পুকাই যাকে স্বাভাবিকতায় জেঠিমা সম্বোধন করত। আমি যাকে মন ও শরীরের যাবতীয় সূক্ষ্মতাবর্জিত একজন মানুষ হিসেবে জানতাম এবং সম্বোধনের নৈকট্য এড়িয়ে গাবলুরটাবলুর মা বলে চিহ্নিত করতাম।

    গাবলুটাবলুর মা ছিলেন বিজলীবালার বন্ধু। তাঁদের দৈনন্দিন বন্ধুত্ব অভ্যাসের সময় ছিল যখন স্নান সেরে গাবলুটাবলুর মা ভেজা কাপড় মেলতে ছাদে উঠতেন এবং ঠাকুর দিয়ে বিজলীবালা বাসি ফুলপাতা জমা রাখতে যেতেন বাগানের কোণের বেলগাছের কোটরে। কী রান্না হল-র উত্তরে একজন যদি বলতেন চারাপোনা, অন্যজন অনুযোগ করতেন তাঁদের বাড়ির পুরুষরা জ্যান্ত কই ছাড়া মুখে তুলতে পারেন না। পরদিন এই প্যাসিভ-অ্যাগ্রেসিভ চাপানউতোরের বিষয় হয়ে যেত দশ বছর আগে বাড়িতে শেষ বাচ্চা জন্মানোর সময় হিজড়াকে কোন পক্ষ থেকে বেশি টাকা দেওয়া হয়েছিল। পাড়ার নবাগতা বধূর খাটো ব্লাউজের বেবুশ্যেপনা চর্চার সময় শুধু যুযুধানতা তফাৎ যেত।

    তিনমাস ধরে গাবলুটাবলুর মা হাসপাতালে যাচ্ছিলেন, ফিরছিলেন এবং অ্যালোপ্যাথিক ডাক্তারকে কাঁচকলা দেখিয়ে নাক্স ভমিকা থার্টি খেয়ে চাঙ্গা হয়ে উঠছিলেন। আচমকা সব শেষ। গতকাল নিয়মভঙ্গের ছবি আশ্বাস দিয়েছিল পার্টি ফুরোনোর, কিন্তু মানুষের শোক বীর্যপাতের মতো, ফুরিয়েছে মনে হওয়ার পরও দু’এক ফোঁটা ছিটকে বেরোয়। উচ্ছিষ্ট শোকের উদযাপনে মায়ের হাসপাতাল থেকে ফেরা ও শ্মশানে রওনা দেওয়ার মাঝের একটি ছবি দিয়েছে গাবলু।

    মুটিয়েছে। টাবলুর টাক। গাবলুটাবলুর বউয়েরাও আছে, যুগযুগান্ত আগে যারা সং সেজে বিয়ের সিংহাসন আলো করেছিল। আসলে কেমন দেখতে শিবের বাবার বোঝার সাধ্য ছিল না। যেমনই থাকুক, নির্ঘাত বদলেছে। সকলেই বদলায়।

    আঙুলে গোনা কিছু লোক ছাড়া। সে রকম একজন আছে ছবিতে। ক্যামেরা থেকে মুখ ফেরানো পাখির শরীর। কয়েকবছর আগে পর্যন্ত ঘিয়ে কিংবা বাসন্তী জমিতে চিলতে পাড় চলত, বাংলা সাহিত্যের এক মহামহোপাধ্যায় কবি গত ডিসেম্বরে দেহ রাখার পর থেকে সাদা। ঘাড়ঢাকা ব্লাউজে ধূসর খোঁপার পেপারওয়েট। আ-কবজি ব্লাউজের হাতা থেকে বেরোনো সরু আঙুল। স্থির চামচ রোগীর ঠোঁটের সামনে অপেক্ষায়।

    সবাই জানে চামচে কী আছে। মশলাহীন, নরম খিচুড়ি। সেকেন্ড লেনে এমন কোনও রোগী নেই যারা ও পথ্য খেয়ে বেঁচে ওঠেনি। মরলেও, খেয়ে মরেছে।

    স্মৃতি তৈরি হতে যদি ধরে নিই বছর তিনেক লাগে, সাড়ে তিন দশকে বড়মাসি বদলায়নি। চুল পেকেছে। চোখঠোঁট ঘিরে কিঞ্চিৎ কাটাকুটি। ভেতরের বদল যত ধীরে হয়, বাইরের বদলও তত ধীরে ঘটে। যাদের ভেতরটা হইহই করে বদলায়, বাইরেটাও চোট খায় বেশি।

    আমার খায়নি তেমন। চাদরসংগ্রামের সময় থেকে লম্বা হয়েছি, খুব বেশি না। ওজন বেড়েছে, খুব বেশি না। পুকাইকে জিজ্ঞাসা করলে বলবে তখন যতখানি অ্যাবনর্ম্যাল ছিলাম, এখনও ততখানিই আছি।

    বড়মাসিও অদ্ভুত থেকে গেছে সেই মুহূর্তের মতো যখন হলুদ বাড়ির সবুজ দরজা খুলে দাঁড়াচ্ছেন বসুবংশের অ্যামাজন। এক হাঁটু থেকে ঝুলছে জামাইষষ্ঠী উপলক্ষ্যে জোটা নাতিনাতনিদের একজন, পেছন থেকে কোমর পেঁচিয়ে আরেকজন। দিম্মা! উল্লাসে পুকাই দখল নিয়েছে খালি হাঁটুর।

    চোখে চোখ রেখে আমার অনাগ্রহ কয়েক মুহূর্ত পর্যবেক্ষণ করছেন অ্যামাজন। ঘেঁটি ধরে তুলে নিচ্ছেন শূন্যে। পাঁচ নয় শরীরের মাঝপথে আমার দেশলাইকাঠি পা ড্যাং ড্যাং ড্যাং। ইলিশ, ল্যাংড়া, তাল, কাঁঠালের গন্ধময় প্রকাণ্ড বুকে মাথা চেপে ধরছেন। এত ডিগডিগে রোগা কেন তোর ছেলে মানসী? বলতে বলতে দেহের চার অংশে চারটি ঝুলন্ত বালকবালিকা নিয়ে রওনা দিয়েছেন রান্নাঘরের দিকে। যেন শরীরের শাখাপ্রশাখায় চারটে চড়াইপাখি।

    রান্নাঘরে পৌঁছে, অনুমতির বিনা তোয়াক্কায়, তালের বড়া মুখে ঠুসে দিতেন বিজলীবালা। ওয়াক চাপতে চাপতে শংকু, টুবলু, পুকাইয়ের ধর ধর, গেল গেল-র থেকে প্রাণপণ দৌড়ে ঢুকে যেতাম চিলেকোঠার ঘরে।

    যে ঘরে কেউ তাড়া করে আসবে না। যে ঘর বসুবাড়ির অ্যাবনর্ম্যালিটির এইচ কিউ। বাটিকের চাদর বিছোনো চ্যাপ্টা জাজিমের ওপর পা মুড়ে বসা দাদু। দুই হাতে উলের কাঁটার ঠুনঠুন। টেবিলে ছত্রাকার লিটল ম্যাগাজিনের ওপর ছায়া স্টোর্সের প্লাস্টিকের গর্ভে নড়ছেচড়ছে নীলগোলাপী উলের গোলা। নবারুণ ভট্টাচার্য গোবেচারা হলে দাদুর মতো দেখতে হতেন। দিদিমার রাজ্যজোড়া কাঁঠালের ভূতি, চিংড়ির নাড়ি, মাছের পটকা, পচা বেলপাতা, তাগাতাবিজ, সিন্নি। দাদুর ঘরভর্তি বই, উলকাঁটা, ছাদভর্তি গাছ। দিদিমা বোঁটকা। দাদু গন্ধহীন। দিদিমা পৃথিবীর নর্ম্যালতম মানুষ। রিটায়ার করে উলবোনা শিখে মাফলার থেকে সোয়েটার থেকে পঞ্চো বানিয়ে পাড়াপড়শি আত্মীয়স্বজনদের উপহার দিতে শুরু করা ইস্তক দাদু ঘর থেকে বেরিয়ে গেলে রগের পাশে তর্জনী ঘোরায় অনেকেই।

    দাদুকে ভালোবাসতাম। ভালোলাগত ঘরে আশ্রয় নেওয়া দ্বিতীয় লোকটিকে। সাধারণত বোনপোরা দিনে সেবাদাসী চায় রাতে ছোটমাসি। সরস্বতী ঠাকুরের পদ্মের ডাঁটার পথ আটকে দাঁড়ানো কুচযুগ দেখে ছোটমাসির বুক মনে পড়েছিল সুনীল গাঙ্গুলির। বড়মাসির যে কিছুই বড় নয় সেটা আমার ভালোলাগার অন্যতম ছিল। টেনেটুনে পাঁচ ফুট, মেরেকেটে পঁয়তাল্লিশ কেজি। নিশ্চিন্ত হওয়া যায় প্রাথমিক ভদ্রতাটুকু পেরিয়ে গেলে বুকে চেপে বসবে না। বসে দমবন্ধ করে দেবে না।

    দাদু উল বুনত, বড়মাসি কবিতা পড়ত। আমি বুককেসের কোণা থেকে বার করে আনতাম তৃষ্ণার্ত লালনীল পাখি; হলুদসবুজ বালতির জলে একবার আলতো হাতে মাথা নামিয়ে দিলে যে ক্রমাগত বালতিতে মুখ ডোবায় আর তোলে। পুনরাবৃত্তির গতি কমে এলে আবার মাথায় আলতো চাপ, আবার পাখির জল খাওয়া।

    বসুবংশের তিন অ্যাবনর্ম্যাল, ত্রিভুজের তিনটি বিন্দু, নীরবতায় ডুবে থাকতাম। ঘণ্টার পর ঘণ্টা। ততটা দূরে দূরে যাতে নিজস্ব বৃত্ত রক্ষা হয়, ততটা কাছে কাছে যেখান থেকে পরস্পরের অস্বাভাবিকতার ওম আসে। আশ্বাস যোগায় অদূরেই ঘটে চলা উল্লাস, চিৎকার, চড়চাপাটি ও কান্নাকাটির নরক আমাদের টিকি ছুঁতে অপারগ হবে।




    অস্বস্তিটাকে প্রথমে গরমে জ্যাকেট পরাজনিত চিহ্নিত করেছিলাম, বাড়ি ফিরে জ্যাকেট ছেড়ে স্নান করে বেরোনোর পরও গেল না। জানালায় দাঁড়ালাম যেমন গত বারো বছর ধরে দাঁড়াচ্ছি। পাশে এসে দাঁড়াল মার্কোস, যেমন গত বারো বছর ধরে দাঁড়াচ্ছে। বলছে, আই কুড কিল ফর দিস ভিউ। মার্কোসের নীল মণির আয়নায় ট্রিনিটি চার্চের আলোকিত চুড়ো। সারা শরীর চুম্বক। যে কোনও মুহূর্তে আমাদের মধ্যবর্তী শূন্যতা ফুরিয়ে যাবে, যে কোনও মুহূর্তে আমি আছড়ে পড়ব ওর ওপর। সবটুকু ইচ্ছে খরচ করে নিজেকে সংযত করছি। টের পাচ্ছি, মার্কোসের থেকে ভালো কোনওদিন কাউকে বাসিনি আমি। বড়মাসিকেও না। গলার ভেতর শোক পাল তুলছে।

    বমি হবে? সারাদিন খিদে পায়নি। অ্যাপার্টমেন্টে একমাত্র আলোর উৎস রান্নাঘরের ওভেনের ঘড়ির লাল ডিজিট। এক যুগ আগে মার্কোসের পাশে দাঁড়ানোর মুহূর্তে শুরু হওয়া অস্বস্তিটা সয়ে এসেছে, এটা তিষ্ঠোতে দিচ্ছে না। দুই হাতে নিজেকে জড়িয়ে কাত হচ্ছি বিছানার ওপর, দুই হাঁটু তুলে আনছি চিবুকের যত কাছে সম্ভব। এবড়োখেবড়ো নিঃশ্বাস। চোখের পাতায় ঝাঁকুনি। সরে সরে যাচ্ছে কনফারেন্স রুমের টেবিলটপে শুকনো কফির মানচিত্র, হার্বার দিগন্তে পাওয়ারগ্রিডের গম্বুজ, বিলবোর্ডের বিপুল স্তন।

    গ্রুপ ফোটো। মৃত্যুশয্যা। পথ্যের বাটি হাতে অপেক্ষারত পাখি।

    আরেকটা ছবি ঢুকে পড়ছে এই ছবিটার ভেতর। ক্যামেরায় আবৃত এক চোখ, অন্য চোখের কোঁচকানো পাতা ব্যালেন্স করতে নিকোটিন-কালো ঠোঁট বেঁকে যাচ্ছে। আরেকটা মৃত্যুশয্যা। বিজলীবালার। তখনও দশাসই কিন্তু ক্ষয়ের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। মেদ ঝরে যাচ্ছে, এক দুই তিন চার পাঁজর, মাথার চুল নিশ্চিহ্ন, ঠোঁট খসে জর্দালাঞ্ছিত দাঁতকপাটি পূর্ণ বিকশিত। কংকালটাও গুঁড়ো হতে শুরু করেছে, ছাই হয়ে যাবে এক্ষুনি। গঙ্গা পরিশোধন প্রকল্পের পরিত্যক্ত বাড়ির সামনে দিয়ে ঘটে চড়ে ভেসে যাবে দুলকিচালে।

    পাখিটা ডানা মেলছে। শরীরঘেরা বাসন্তী জমিতে সরু সবুজ পাড়, এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে খোঁপাভাঙা চুল, পাখিটা বড় হচ্ছে, গোটা ছবি ছেয়ে ফেলেছে, পাখির মাথা ঘুরছে, চোখ বুজে ফেলা দরকার এই মুহূর্তে, এক্ষুনি, ভাবতে ভাবতে আমার চোখ ধরে ফেলেছে পাখির চোখ। ঠোঁটের কৌতুক জড়ো হচ্ছে শিসের ভঙ্গিতে, বুউউউকাআআআআই, রান্নাঘরের হাঁড়িতে গবগব ফুটছে রোগতাপহর খিচুড়ি, হাওয়া বইছে শোঁ শোঁ শোঁ, দাদুর ঘরসংলগ্ন ছাদের টবে দুলছে ডাটুরা স্ট্র্যামোনিয়াম, উদ্ধত সাদা ফুলের গভীরে ফণা তুলছে বেগুনি বিষের মায়া।




    ফুটন্ত উত্তেজনা চাপা দেওয়ার ব্যর্থ প্রয়াসে বিজলীবালার মৃত্যুর ঘটনাপ্রবাহের পোস্টমর্টেম হয়েছিল। কাল সকালেও তো কুয়োর পাড়ে চড়ে কোপ দিয়ে কাঁঠাল পাড়ল, দুপুরবেলা ঝাঁটা মেরে ধোওয়ালো গোটা কলতলা ইত্যাদি বিস্ময়মিশ্রিত বাক্যের মধ্যবর্তী শূন্যস্থান পূরণ করছিল শুকনো নাক টানা। কাল রাতেও তো পাড়া কাঁপিয়ে ধমকালো বাড়িশুদ্ধু লোককে।

    বিজলীবালার মৃত্যুর থেকেও আশ্চর্য ঘটনাটা ঘটেছিল আগেরদিন বিকেলে, যার সূত্রপাত হয়েছি দুপুরেই। যখন ছাদ থেকে চেঁচিয়ে গাবলুটাবলুর মা জানতে চেয়েছিলেন বিকেলবেলা বিজলীবালা বাড়ি থাকবেন কি না। বিকেলে বাড়িতে ঢুকে, সদরঘরের চেয়ারে বসে, স্বাভাবিকতম গলায় প্রস্তাব দিয়েছিলেন গাবলুর সঙ্গে বড়মাসির বিয়ের।

    তিনটে করে সিঁড়ি টপকে চিলেকোঠার ঘরের দরজা ধাক্কিয়ে, অধিকাংশ শব্দ উত্তেজিত শ্বাসের তলায় বিসর্জন দিয়ে উগরে দিয়েছিলাম খবরটা, যা শুনেছিলাম পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে। গাবলুটাবলুর মা চলে গেলে জমায়েত হয়েছিল। ছোটমাসি কাঁপছিল উত্তেজনায়, মা বার বার বড়মাসির কাঁধ জড়িয়ে গালে চুমু খাচ্ছিল, আসন্ন দায়িত্বপালনের আঁচ মামার পাতলা দাড়ি গজানো মুখে কর্মকর্তাসুলভ গাম্ভীর্য ও পায়চারির জন্ম দিয়েছিল।

    দাদু বলেছিল, আর ক’দিন পর না হয় . . .

    বিজলীবালা ঘাড় পর্যন্ত ঘোরাননি। সরকারি চাকরি, চরিত্রদোষ নেই, দুটো হাত দুটো পা দশটা আঙুল, জাতগোত্রে মিল। যেচে ওকে বিয়ে করতে চায়। নিখুঁত নীরবতায় শেষ বাক্যটুকুর অভিঘাত হাওয়ায় ছড়িয়ে যেতে দিয়েছিলেন।

    বড়মাসির উদাসীনতা টোল খায়নি একটুও। কোলের ওপর রাখা কবিতার বইয়ে গোঁজা আঙুল কাঁপেনি। নীরবতা নির্ঘাত সম্মতি। এমনকি উৎসাহের উপস্থিতিও আন্দাজ করেছিল কেউ কেউ যখন সেদিন রাতে বড়মাসি নিজেই রান্না করেছিল। ঘুমের আগের দুধের গ্লাস সশ্রদ্ধায় পৌঁছে দিয়েছিল দিদিমার ঘরে।




    ক্যামেরার আড়াল থেকে বেরিয়ে থাকা কোঁচকানো চোখ, তেরছানো ঠোঁটের মালিকের নাম মনে পড়েছিল। মনোজ। পুকাইয়ের এবং ফলতঃ আমারও, ছোটমেসো।

    মনোজ ছিল আগাপাশতলা নর্ম্যাল। ধাঁই ধাঁই ফুটবল খেলত, বিনা মইতে ল্যাম্পপোস্টে ঝুলে থাকা বেড়ালবাচ্চা উদ্ধার করত, পাড়ায় বাসনচোর ধরা পড়লে ওই ল্যাম্পপোস্টে বেঁধেই সবার প্রথম চড়টা মারত। পাড়ার সমস্ত নর্ম্যাল বাবামায়ের স্নেহধন্য, সমস্ত নর্ম্যাল দিদিদের ভাইফোঁটার গন্তব্য, সমস্ত নর্ম্যাল যুবতীর হৃৎস্পন্দন। সে সমস্ত নর্ম্যাল প্রেমিকাদের কাত করে মনোজকে ছিনিয়ে এনেছিল আমাদের ছোটমাসি মণি, বিজলীবালার পর বসুবাড়ির নর্ম্যালতম সদস্য।

    আমার চিন্তার কারণ ছিল না। স্বাভাবিক লোকেরা যত একে অপরের সঙ্গে জুটে যায়, তত আমার আর বড়মাসির মতো অস্বাভাবিক লোকেদের বিপদের আশংকা কমে। না হলে দাদু ও বিজলীবালা সদৃশ জুটি তৈরি হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।

    তবু চিন্তা হয়েছিল। কারণ টাইমিং। মনোজ ও মণির প্রেমের উন্মেষ যখনই ঘটুক, বিকাশ এবং পরিপূর্ণতা ঘটেছিল গরমের ছুটিতে যখন আমি ও পুকাই, শংকু ও টুবলুর সঙ্গে সেকেন্ড লেনে নির্বাসিত। শব্দের চয়ন হয়তো অনাবশ্যক কঠোর হল কারণ দিনগুলো সম্পূর্ণ খারাপ লাগার ছিল না। সকালগুলো ছিল চলনসই, চিলেকোঠার দরজার এই ফ্রেমে পিঠ ওই ফ্রেমে পা ছুঁইয়ে গল্পের বই গেলা দুপুরগুলো ছিল মনোরম এবং লাইব্রেরি থেকে, যার কার্ড বড়মাসি বানিয়ে দিয়েছিল, নতুন বই বগলে বাড়ি ফেরার বিকেলগুলো ছিল উচ্ছ্বাসের এবং আসন্ন আনন্দের প্রতীক্ষায় বাঁধভাঙা উত্তেজনার।

    সেই উত্তেজনায় গোবরজলের ছিটে দেওয়ার জন্য সাইকেলের সিটে পেছন এবং মাটিতে পা ঠেকিয়ে, কলার উড়িয়ে এবং ঠোঁটে সিগারেট ঝুলিয়ে দাঁড়িয়ে থাকত মনোজ। বত্রিশপাটি হেসে তর্জনী বাঁকিয়ে ডাকত। হাতে গুঁজে দিত ফিনফিনে খাম।

    এটা মণিকে দিয়ে দিবি।

    বিয়ে স্থির হয় হয় দেখে বড়মাসির কাছে গিয়েছিলাম। সন্ধের বাতাস তখনও ভাপ ছড়াচ্ছিল। বড়মাসির মুখ ঝুঁকে পড়েছিল গাছেদের ওপর।

    তোর আপত্তি কীসের?

    দেবদাসের লাইন রবীন্দ্রনাথের বলে কোট করে। ‘তোমাকে ছাড়া বাঁচব না’ বাদ দিলে কোনও মৌলিক বক্তব্য নেই একটাও চিঠিতে। ‘মুহূর্ত’ বানান একজায়গায় দুবারই হ্রস্ব উ, একজায়গায় দুবারই দীর্ঘ, একজায়গায় প্রথমবার দীর্ঘ পরেরবার হ্রস্ব। ভুলক্রমেও যে একবারও ঠিক অর্ডার মেন্টেন করেনি এটা ভয়ের না?

    মনোজের সব চিঠি খাম ছিঁড়ে খুলে, পড়ে, নতুন খামে পুরে ছোটমাসিকে ডেলিভারি দিতাম এটা বড়মাসির কাছে স্বীকার করতে ভয় লজ্জা কিছুই করেনি। এই আচরণের পেছনে অন্যের ব্যক্তিগত জীবনের প্রতি কৌতূহলের থেকেও যে বেশি ছিল মনোজের অভদ্র আচরণের প্রতিশোধ, কেউ না বুঝলেও বড়মাসি বুঝবে জানতাম।

    জলের ঝারি নামিয়ে কপালের বিন্দু ঘাম মুছে বড়মাসি বলেছিল, মণির ভয় লাগবে না।

    লাগেওনি। মণিমালা আর মনোজের সংসার ফুলেফলে বিকশিত হয়েছিল। অ্যালবামভর্তি ষাণ্মাসিক ভ্রমণের স্মৃতিচিহ্ন, সপ্তাহান্তে আত্মীয়স্বজন সহকারে হুল্লোড়, সন্তান, আবার সন্তান, আবার সন্তানের উপক্রম হলে মণির ক্লিনিকযাত্রা, বিরিয়ানি, পিঠেপুলি, পুজোপার্বণের হেস্তনেস্ত গার্হস্থ্য। যা দেখিয়ে বড়মাসির মনে বিবাহের ইচ্ছের আগুনে ফুঁ দেওয়ার ব্যর্থ চেষ্টা করেছিল অনেকেই।

    বিজলীবালার মৃত্যুশয্যার ছবিটা, যেটা থেকে প্রতিরাতের স্বপ্নে হানা দিচ্ছিল ডানা মেলা পাখি, সত্যি তোলা হয়েছিল নাকি গোটাটাই কল্পনা সংশয়মুক্ত হতে হলে মনোজকে ফোন করতে হত।

    করা গেল না, কারণ মনোজ আর নেই। বসুবাড়ির, এবং সেকেন্ড লেনেরও, নজর করার মতো বেশিসংখ্যক ভাগ্যবানের ভোগান্তিহীন, দ্রুত ও সংক্ষিপ্ত মৃত্যুর তালিকায় মনোজ ছিল। আমি তখন হোস্টেলে। পুজোয় ছুটি পাই না, ভাগ্যিস। মায়ের ঘ্যানঘ্যান থামাতে বিজয়ার পর মণিকে ফোন করেছি। দেড় হাত বাই দেড় হাত বুথের ভ্যাপ্সানি, কানে ল্যান্ডফোনের ক্রিং ক্রিং ক্রিং, আসন্ন অকওয়ার্ডনেসের অস্বস্তিতে জিভ তেতো। এমন সময় অপ্রত্যাশিত কণ্ঠে, হ্যালো?

    বড়মাসি?

    শান্ত স্বরে খবরটা দিয়েছিল বড়মাসি। মনোজ মারা গেছে। আচমকা। ডায়াবিটিস ছিল, বিপি হাই, ওজন কমানোর তাগাদা দিচ্ছিল ডাক্তার, খাদ্যরসিক বলে পেরে উঠছিল না - এই সমস্ত বিড়ম্বনাই নিয়ন্ত্রণে রাখা গেছে ভেবে সবাই নিশ্চিন্তে ছিল, কিন্তু আসলে যায়নি, উৎসবের অনিয়মে আত্মপ্রকাশ করেছে।

    বড়মাসির শুকনো গলার জায়গা নিয়েছিল মায়ের কান্নাভেজা হেঁচকি। দাবিতে চমক ছিল না, উত্তরও তৈরিই ছিল। এই মুহূর্তে কিছুতেই বাড়ি যাওয়া সম্ভব না। না, মণির যতই আপনজনের সাপোর্টের দরকার থাকুক। তাছাড়া নেপথ্যে ক্রমবর্ধমান কলরোল যে স্পষ্টই আভাস দিচ্ছে আর যাই পড়ুক মণির সাপোর্ট কম পড়বে না, সেটা অনুক্ত রেখেছিলাম।

    মা, মামা, পুকাই, শঙ্কুর সঙ্গে খেপে খেপে কথোপকথনে কীভাবে মনোজের দেহ আবিষ্কার হল, আবিষ্কারের সময় মনোজের দাঁত কতটা ছিরকুটে ছিল, কাল রাতে কী খাওয়া হয়েছিল, ছবির মতো স্পষ্ট হল।

    মণি শুনলাম খুব কেঁদেছে। ভাগ্যিস বড়মাসি ছিল। সামলেছে।

    বড়মাসি?

    কপাল ভাব। এত বছর ধরে এত সাধাসাধির পর এই প্রথম থাকতে এল ছোটবোনের বাড়ি। ঈশ্বর আছেন যে এতেই বোঝা যায়। দিদিকে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন ঠিক সময়ে। বোনের বিপদে দাঁড়ানোর জন্য।




    মাঝরাত পেরিয়েছে। খেয়ে উঠে চিলেকোঠার ঘরে এসে বসেছি। খবর দিয়েই এসেছি। ট্যাক্সির আওয়াজ পেয়ে ডাইনে বাঁয়ে সরু ঢ্যাঙা খুপরি বারান্দাওয়ালা ফ্ল্যাটবাড়িদের মাঝে বেলগাছওয়ালা হলুদ বাড়ির সবুজ দরজা খুলে দাঁড়িয়েছে বড়মাসি। ‘আয়’ বলে দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়েছে।

    দাদুর ঘরটা এখন বড়মাসির। টেবিলে কবিতাসংগ্রহের পাতা মনে করে রেখেছে উলের কাঁটা। মেঝেতে উলের গোলা নিয়ে খেলছে বাদামি বেড়ালছানা। আলমারিতে সবুজহলুদ বালতির সামনে অপেক্ষারত লালনীল পাখি।

    ছাদের খোলা দরজা দিয়ে বাতাসে অমোঘ গন্ধরাজ। শরীরের নিচে দাদুর ইজিচেয়ারের অবতল আরাম। জটগুলো খুলে যাচ্ছে একে একে। চোখ জড়িয়ে আসছে।

    চটকা ভাঙল। ঘরে ঢুকেছে বড়মাসি। বসছে উল্টোদিকের সবুজ সোফায়। হাতে তুলে নিচ্ছে কাঁটা, থাবার নিচ থেকে ফস্কে যাওয়া উলের গোলাকে বাগে আনতে মরণপণ সংগ্রামে রত বেড়ালছানা।

    না করে দিতে পারতে। এমন তো নয়, দিদার সব কথা তুমি শুনতে। বাড়ির মধ্যে একমাত্র তুমি যে দিদার কথা শুনতে না।

    কতবার না করতাম? গাবলুর পর বাবলু আসত। হাবলু পাবলু ভেবলু।

    তা বটে। ক্লান্তিতে আধমরা হতে গিয়েও সামলে নিই।

    তা হলে বিয়ে করে নিতে। কমপ্রোমাইজ করতে। কত লোকে তো করে।

    আরেকবার এসে পাশে দাঁড়াও মার্কোস, সব কম্প্রোমাইজ করব।

    করব ভেবেছিলাম তো।

    তবে?

    বাবা বলল।

    কী?

    কম্প্রোমাইজ তখনই করা যায় যখন সেটার একটা অন্ত থাকে। পরীক্ষার পড়া লোকে খারাপ লাগলেও পড়ে কারণ পরীক্ষা শেষের তারিখটা জানা থাকে। বিয়ে তো আমৃত্যু। এটাও নিশ্চিত করার উপায় নেই যে সে লোকটা তোর আগে মরে যাবে। হয়তো তুই আগে মরে গেলি। এ জীবনে কম্প্রোমাইজ ফুরোল না।

    দিদিমার মৃত্যুর পর বেঁচে ছিল দাদু। জীবনের শেষ পাঁচটা বছর, কম্প্রোমাইজহীন।

    মনোজের সন্দেহ কীসে হল, সুন্দরলালের কেসটায়?

    বড়মাসি তাকাল। যেভাবে তাকাত সমস্ত রেজাল্ট বেরোনোর পর, বাকিরা যখন ‘আরও ভালো করতে হবে,’ ‘কেয়া বাত,’ ‘চালিয়ে যাও,’ ইত্যাদি পিঠচাপড়ানিতে মাটিতে মিশিয়ে দিচ্ছে এবং পরীক্ষাপর্ব ফুরোলে কেন গার্হস্থ্যপর্ব ফাঁদছি না বা অন্য কোনও খোপে ঠিক সময়ে টিক কেন মারছি না ইত্যাদি অনুযোগে একইসঙ্গে ভেতরে জাগিয়ে তুলছে অবসাদ ও হিংস্রতা তখন এই একজোড়া চোখ, কৌতুকে যা সর্বদাই চকচকে, আশ্রয় দিত। নিঃশব্দ আশ্বাস দিত, আমার মতো করে জীবনটা আরও কেউ দেখে। আমার প্রয়োজন অপ্রয়োজন, জরুরি অজরুরি, সাফল্য ব্যর্থতার সংজ্ঞার সঙ্গে আরও কারও সংজ্ঞা মেলে।

    সুন্দরলালের মৃত্যুটার, মাথার ভেতরে এখনও খুন শব্দটা উচ্চারণ করতে পারছি না লক্ষ করি, সঙ্গে হাসি পাওয়া না পাওয়ার বিষয় অঙ্গাঙ্গী ছিল। সুন্দরলালের বউ বাবলি ছিল বড়মাসির ক্লাসমেট। সেই বিরল মানুষদের একজন যারা কোনও একটা সম্পর্কের উপস্থিতি ধরে নিয়ে সেই মতো আচরণ করে যেতে পারে। অর্থাৎ বাকি ক্লাসমেটরা যখন বন্ধুত্বসুলভ ব্যবহার না পেয়ে সরে গেছে, বাবলি ধরে নিয়েছে একসঙ্গে স্কুলে যাওয়া, একসঙ্গে বাড়ি ফেরা এবং সর্বোপরি এক পাড়ায় থাকার সুবাদে বড়মাসি বাবলির বন্ধু। এবং সেই অনুযায়ী আচরণ করে গেছে বড়মাসির দিক থেকে মানানসই পরিশ্রম বা প্রতিদানের অনুপস্থিতিতেও। স্কুল ফুরোনোর পরেও রাস্তায় পাকড়াও করে গল্প করেছে, ছাদে দেখলে চেঁচিয়ে কুশল জানতে চেয়েছে, সিনেমার টিকিট কিনে চড়াও হয়েছে বাড়িতে। বড়মাসি যে দশ মিনিটের নোটিসে সিনেমা যেতে অরাজি হবে না, বাবলির এবম্বিধ সংশয়হীনতা বাধ্য করেছে বড়মাসিকে কবিতার বই ফেলে, ধড়াচুড়ো পরে সিনেমা যেতে। ফেরার পথে ফুচকা এবং আলুকাবলি খেতে।

    বিয়ের আগে কন্যাপক্ষ পাত্রীর নিখুঁত গোল রসগোল্লা বানানোর প্রতিভার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, পাত্রপক্ষ মুচলেকা দিয়েছিলেন পাত্রের হাসাতে পারার ক্ষমতার। তফাৎ হচ্ছে যে পাত্রীপক্ষের দাবিটা ছিল আদ্যন্ত ভুয়ো, পাত্রপক্ষের হুমকিটা ছিল অক্ষরে অক্ষরে খাঁটি। জনশ্রুতি আছে বাসরঘরে সুন্দরলালের চুটকির চোটে উপস্থিত শ্যালিকাদের কারও কারও এমন হেঁচকি উঠেছিল যে নেমন্তন্ন খেয়ে ফিরে যাওয়া নন্দীডাক্তারকে ঘুম ভাঙিয়ে তুলে আনতে হয়েছিল।

    বয়স যত বাড়ল, টাক যত পড়ল, সুন্দরলালের হাসাতে পারার ক্ষমতায় তত শান পড়তে লাগল। ততদিনে পাড়ার অনেকেই, বিশেষ করে রসকষহীন বলে যাদের বদনাম ছিল, সুন্দরলাল আসছে দেখলে গলি বদলাত। সবথেকে বড় এবং আশ্চর্যজনক পরিবর্তন ঘটেছিল বাবলির। সুন্দরলালের চুটকি দূর অস্ত, উত্তম দাসের ক্যাসেট শুনে তার মুখের পেশি নড়ত না, কাদের খানের সিনেমা শুরু হলে নিঃশ্বাস ফেলে সে উঠে যেত। ছেলেমেয়েরা জন্ম ইস্তক জানল মা রামগরুড়ের ছানা। পূর্বাশ্রমের পরিচিতরা, যারা আইবুড়ো বাবলির অট্টহাসি তিনটে বাড়ি টপকে শুনতে পেত এবং মেয়ের ধিঙ্গিপনায় শিউরে শিউরে উঠত - ব্যাখ্যা খুঁজত। সুন্দরলালের ভালো চাকরি, নিষ্কলঙ্ক চরিত্র, অফুরন্ত চুটকির ভাঁড়ার সত্ত্বেও বাবলির বিষাদ তাদের বিভ্রান্ত করত। রাগতও। সাইলেন্ট অ্যান্ড ব্রুডিং পুরুষ যত কামনার, নারী ততখানিই দূরবর্তী ও দেমাকি।

    রাগ বদলে গেল করুণায়, সুন্দরলাল-বাবলির বিয়ের দশ বছরের মাথায় এক সপ্তাহান্তে। আত্মীয়সমাগম হয়েছিল। সকাল থেকে ঘেমেনেয়ে গম্ভীর বাবলি যাবতীয় আয়োজন করেছিল। কিন্তু খেতে বসে সুন্দরলাল যে মুহূর্তে দিনের প্রথম চুটকিটা বলে উঠল, অতিথির থালার ওপর হাতা ভর্তি পাঁঠার মাংস ধরা বাবলির সমস্ত সংযম খানখান হল। মাথা পেছনে হেলিয়ে, চোখ বুজে, মুখ হাঁ করে এমন জোরে কেঁদে উঠল যে প্রতিবেশীরা দৌড়ে এল কী হল কী হল বলে।

    এবং তাদের অনেকদিনের সংশয়ের, যা সুন্দরলাল জানাল সেও পোষণ করছিল মনে মনে কেবল প্রেমবশতঃ প্রকাশ করতে অপারগ হচ্ছিল, নিরাময় হল।

    পরের সপ্তাহে সুন্দরলাল বাবলিকে মানসিক ভারসাম্যহীনদের সংস্থায় ভর্তি করে দিয়ে এল, আমার স্ত্রী হাসির কথায় কাঁদে, এই মর্মে। এবং সাত দিনের মাথায় মরে গেল।

    ওটা আরেকটু সাবধানে করা উচিত ছিল আমার। আরেকটু সময় যেতে দিয়ে।

    আমি জানি বড়মাসির গলার আফসোসটা সুন্দরলালের মরে যাওয়া নিয়ে নয়, সংযম হারানো নিয়ে। সুন্দরলাল ছিল মনোজের জিগরি দোস্ত। সুন্দরলালের পাস থেকে মনোজ গোল করত, বউনি চড় মেরে মনোজ সরে এলে সুন্দরলালের ঘুঁষি ল্যাম্পপোস্টে বাঁধা চোরের ঠোঁট ফাটাত। বাবলিকে অ্যাসাইলামে রেখে আসার সপ্তাহখানেকের মধ্যে সুন্দরলালের আকস্মিক মৃত্যুতে মনোজের মগজে কৌতূহলের কীটেরা নড়ে উঠবে, এ কথা মাথায় রাখা উচিত ছিল বড়মাসির।

    খোলা দরজার কাছে গিয়ে দাঁড়াই। ভীষণ গরম। বৃষ্টি নামবে? পায়ের পাতার ফাঁকে বেড়ালছানার নরম ঘোরে ফেরে।

    মনোজ কিছু বলেছিল?

    খোঁজখবর নিচ্ছিল। কী খেয়েছিল, বাড়িতে কে কে এসেছিল।

    নিয়েই বা কী করত। প্রমাণ তো ছিল না।

    কিন্তু জানতাম, ব্যাপারটা অত সোজা হত না। মনোজের চরিত্রের একটি এবং একটিমাত্র অস্বাভাবিক দিক ছিল নিজের পেশার প্রতি ভালোবাসা। প্যাশন। মনোজ ছিল লালবাজারের গোয়েন্দা। কেস সমাধানের স্ট্রাইক রেট একশো। সারাদিন অফিসে খুনখারাপি সামলে বাড়ি ফিরে ট্র্যাশ গোয়েন্দা গল্প উপন্যাস গোগ্রাসে গিলত। একবার সন্দেহ জাগলে মনোজ সেটার পিছু ধাওয়া করতই। করলে কেঁচো খুঁড়তে কতগুলো সাপ বেরোত, গত কয়েকদিনে গুণে দেখার চেষ্টা করে ক্ষান্ত দিয়েছি।

    গলির মোড়ের বিশ্বাসবাড়ির প্যাট্রিয়ার্ক, গলা ঝেড়ে কফ তুলতেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে, নারকীয় প্রতিধ্বনিতে গোটা গলি কাঁপত, লাঠিপেটা করে বেড়ালছানা মেরে বুক বাজিয়েছিলেন। এবং মরেছিলেন। বিজলীবালার লতায়পাতায় আত্মীয়রা থাকত খড়দায়, তাদের বাড়ির বউটি, গরিব বাড়ির মেয়ে, বিয়ের বেনারসির জ্যালজেলেত্ব নিয়ে যাকে বৌভাতের পরদিন থেকে খোঁটা দেওয়া হত, বিয়ের দেড় বছর পর থেকে যা বদলে গেছিল বংশের বাতি জোগান না দেওয়ার গঞ্জনায়, দুএকঘা চড়চাপাটিতেও। সকলেই জানত। মেয়েটির ঠেলে ওঠা গালের হাড়, চোখের কোণে কালি, মলিন মুখের রহস্য আত্মীয়পড়শির অজানা ছিল না। একদিন ঊষা কোম্পানির পাখা থেকে ঝুলে মরে গেল মেয়েটি। শ্রাদ্ধের নেমন্তন্ন খেতে গিয়েছিলাম সদলবলে। তাদের বাড়িতেও ঘটেছিল দু-একটি অপ্রত্যাশিত মৃত্যু।

    আসন্ন বৃষ্টির আভাস রোম খাড়া করে দিয়ে গেল। একটা চাদর থাকলে আরাম হত। তার থেকেও আরাম হত মার্কোস এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলে। মার্কোস, এস। আমাকে জড়িয়ে ধর। আমার আজীবনের আবরণ হও।

    মনোজ পারেনি। আমিই বা কী করতে পারব? খিচুড়ির মার্ডার ওয়েপন হাজির করতে পারব না, কবর খুঁড়ে টক্সিকোলজি করাব সে সুবিধেও নেই। অধিকাংশ সন্দেহজনক ঘটনার বয়সই কুড়ি বা তিরিশ বছরের পুরোনো। সাম্প্রতিকতম গাবলুটাবলুর মাও পুড়েঝুরে শেষ। কিন্তু সে সবের থেকে বড় প্রতিবন্ধকতা আমার দশ হাতের মধ্যে বসে আছে। একজন বর্ষীয়সী মহিলা। পাখির মতো শরীর। আজন্ম এই পাড়ায় থেকেছেন, প্রতিবেশীদের বিপদেআপদে দাঁড়িয়েছেন। ক্রমাগত ভোল পালটানো, রং বদলানো পৃথিবীতে একটি ক্ষীণ, অচঞ্চল আলো। আমার সিরিয়াল কিলার।

    তোকে প্রমাণ করতে হবে না কিছু। আমি সব স্বীকার করে নেব।

    একসময় এই দরজায় দাঁড়িয়ে মুখ তুললে রাতের আকাশে কালপুরুষ দেখা যেত, এখন জানালায় জানালায় টিউবলাইটের ময়লা আলো। চোখ বুজি। বন্ধ চোখের ভেতর চোখ মেলে দুটো কেঁদে কেঁদে ফুলে ওঠা নীল চোখ। দেড়ঘণ্টা আগে আলোকিত চার্চের চুড়ো সাক্ষী রেখে আমার সামনে হাঁটু মুড়ে বসেছিল মার্কোস। তারপর থেকে ছেলের কান্না থামেনি।

    হোয়াই হোয়াই হোয়াই?

    বুদ্ধিবিবেচনার সমস্ত বারণ অগ্রাহ্য করে ড্রয়ার খুলে বার করে এনেছিলাম সযত্নে গোছ বাঁধা লালনীল পোস্ট ইটস। যেগুলো গত চব্বিশ মাস সতেরো দিন ধরে মণিমুক্তোর মতো কুড়িয়ে নিয়েছি, ফ্রিজের দরজা, খাটের হেডস্ট্যান্ড, চশমার বাক্সের ভেতর ও বালিশের নিচ থেকে।

    চোখের জল উপচে উঁকি মেরেছিল বিভ্রান্তি।

    আই থট ইউ লাইকড দেম।

    আই লাভড দেম।

    ধরে ধরে দেখিয়েছিলাম কী ভাবে ও প্রতিবার গুলিয়েছে তিন রকমের ‘দেয়ার’, অবস্থানসূচক, সর্বনামের বহুবচনসূচক এবং ‘দে আর’ যা কি না স্পষ্ট দুটো আলাদা শব্দ। এবং আমাকে বিধ্বস্ত করেছে। আশ্লেষের তুঙ্গ মুহূর্তে মনোযোগ কেড়ে নিয়েছে মার্কোসের প্রেমবার্তায় ‘ইয়োর’, ‘ইউ আর’ এবং ’ইউ ওয়্যার’-এর নির্বিচার বদলাবদলির স্মৃতি।

    মার্কোসের হতভম্ব মুখের দিকে তাকিয়ে স্বীকার করেছিলাম, ‘দেয়ার’, ‘দেয়ার’, ‘দে আর’; ‘ইউ আর’, ‘ইয়োর’, ‘ইউ ওয়্যার’ ব্যবহার করে বোধগম্য এবং যুক্তিসঙ্গত বাক্যরচনার অসাধ্য সাধন করতে কত রাত আমি জেগে পেরিয়েছি, ও ঘুমিয়ে পড়ার পর। সে সব বাক্য পোস্ট ইটে লিখে বাড়িময় ছড়িয়ে রেখেছি, এই আশায় যে মার্কোস নিজের ভুল চিনবে,সংশোধন করবে, শিখবে।

    বিছানায় ছড়ানো পোস্ট ইট, যেগুলোতে লাল পেন দিয়ে দাগিয়ে ওর ভুলগুলো দেখাচ্ছিলাম, থেকে উঠে এসে আমার মুখের ওপর থেমেছিল মার্কোসের দৃষ্টি। ও দৃষ্টি তুমি চেন বড়মাসি। আমি চিনি। দাদু চিনত। সেই বালকবয়সে পুকাইয়ের চোখে, তারপর আরও কত অগুন্তি আত্মীয়, বন্ধু, প্রেমিক, সহকর্মীর চোখে ও দৃষ্টি দেখেছি আমি। সে সব দৃষ্টিতে নিজেকে দেখেছি। কাজেই মার্কোস কী দেখছে কল্পনা করতে অসুবিধে হয়নি আমার। ও একটা রক্তমাংসের মানুষ দেখছে না, ও দেখছে একটা অবোধ্য ধাঁধাকে। ওর ব্যাখ্যার এবং বুদ্ধির বাইরের একটা জন্তুকে। একটা উড়ন্ত শুয়োর কিংবা কথা বলা জিরাফ।

    আর ইউ ফাকিং নাট্‌স্‌?

    টিউবআলোর মালিন্য ধুয়ে দেয় চোখের জল।

    লেট আস স্টপ বিয়িং ফাকিং নাট্‌স্‌, বড়মাসি।

    মেঘ গর্জে ওঠে। বৃষ্টির তীর কংক্রিটের ছাদের ওপর আছড়ে পড়ে মুক্তি দেয় এতদিনের রুদ্ধ তাপ। ধরা পড়ে স্ট্রিটল্যাম্পের হলুদ বৃত্তে। ভেজা পাতাদের শীর্ষ থেকে টপ টপ ভেজায় তৃষ্ণার্ত মাটি। রাস্তায় উল্লাস করতে করতে দৌড়ে যায় বন্ধুর দল। হর্ন চেঁচিয়ে ওঠে। কারও মায়ের সঙ্গে রমণের ইচ্ছে প্রকাশ করে মাতালের স্বর। চল আমরা ওই বৃষ্টিটায় ভিজি বড়মাসি। যে বৃষ্টিতে ভিজছে, হাসছে, কাঁদছে, উল্লাস করছে, বাঁচছে মা বাবা, পুকাই, মনোজ, মণি। তোমার কবি, আমার মার্কোস। ও পৃথিবীতে কেউ বানান ধুয়ে জল খাচ্ছে না, অ্যাপোস্ট্রফির অবস্থান চুলোয় দিচ্ছে। ওই পৃথিবীতে হয়তো কবিতা নেই, কিন্তু কবিরা সবাই আছে ওখানেই। ও পৃথিবী নিশ্চিত প্রেমহীন, কিন্তু প্রেমিকরা জুটেছে সব ওখানেই। চল আমি তুমিও যাই ওই অদ্ভুত পৃথিবীটায়। হাত ধরে পাশাপাশি দাঁড়াই।

    চোখের জল একসময় ফুরোয়। আবার স্পষ্ট দেখি সবকিছু।

    আমি পারব না। দিনের পর দিন শূন্য বিছানা, শূন্য জীবন, অচেনা ভিড়ের সঙ্গে একা একা ক্রসিং পেরোনো। আমি তুমি হতে পারব না বড়মাসি। একটা বেখাপ্পা বাড়ির চিলেকোঠায় বসে বেড়ালছানাকে সাক্ষী রেখে যুগযুগান্ত ধরে শুকনো পাতায় কবিকে খুঁজে মরব না আমি। ফিরে গিয়ে ভুল বানানের পোস্ট ইট-এর তাড়া ছিঁড়ে ফেলব, মার্কোসকে ফোন করব। পায়ে ধরব। কিন্তু সবার আগে বিবেকবান, সচেতন, স্বাভাবিক নাগরিকের দায়িত্ব পালন করব।

    আমি স্বাভাবিক হব, বড়মাসি। তোমাকে বিসর্জন দিয়ে আমার স্বাভাবিকত্বে অভিষেক হবে।

    এখনই যাবি থানায়?

    বড়মাসির আঙুল আমার চুলের ভেতর থেকে সরে যায়। কোলের শাড়ি ভিজে গেছে। চশমা ফেরত দেওয়ার আগে আঁচলে যত্নে কাচ মোছে বড়মাসি।

    সকাল হোক।

    সেই ভালো। বড়মাসির অস্বস্তিহীন স্বর আমার লজ্জা সামান্য হলেও দূর করে।

    বড়মাসি উঠে যায়। আমি ইজিচেয়ারে ফিরে আসি। দমকা ভেজা হাওয়া। ফুলের গন্ধ। আর যদি কখনও কোথাও না যাই? চাকরি খুঁজে নেব এই শহরে একটা। দিনের শেষে এই ঘরটায় এসে বসব, ছাদের দরজা হাট করে খুলে দেব। বড়মাসি কবিতা পড়বে। খেলা করবে বাদামি বেড়ালছানা। আমি ইজিচেয়ারে শুয়ে দু’হাতের আঙুল বুকের ওপর জড়ো করে পা নাচাব, গুনগুন গাইব। আকাশে উঠে যাওয়া আলোর খুপরিগুলোর, যাদের মালিকদের ঠিকুজিকুষ্ঠি কেচ্ছাকেলেংকারির খুঁটিনাটি ততদিনে কণ্ঠস্থ করেছি বড়মাসির কাছ থেকে, দিকে তাকিয়ে কল্পনা করব এই মুহূর্তে কোন আলোর খুপরিতে কোন নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছে। ঘরময় বই ছড়িয়ে থাকবে, যখন যেটা ইচ্ছে হবে তুলে উল্টেপাল্টে দেখব। পছন্দ হলে পড়ব, না হলে ধুস বলে ছুঁড়ে ফেলব ঘরের কোণায়। বড়মাসির চোখ বইয়ের উড়ন্ত যাত্রাপথ অনুসরণ করবে, কিন্তু বকবে না। পাশের ছোট টুলে বসা লালনীল পাখির মাথায় চাঁটি মেরে জল খাওয়াব।

    ট্রে হাতে বড়মাসি ঘরে ঢোকে। জানতাম। চেঁচিয়ে জাপটে ধরবে না, আরও রোগা হয়ে গেছিস তো বুকাই, ভালো করে খাচ্ছিস না বুঝি ইত্যাদি নির্বোধ আপ্যায়নের আচার মানবে না, কিন্তু আমি আসছি খবর পেয়ে পায়েস বানাবে। অল্প চাল আর অনেক দুধের গাঢ়, ধপধপে পায়েস। কাজুকিসমিসের বিঘ্নবিহীন। ভণিতাশূন্য। নিরলংকার। যেমন বড়মাসি। যেমন আমি ভালোবাসি।

    শুধু আমার না, নিজের জন্যও পায়েস এনেছে বড়মাসি। টেবিলে ট্রে নামিয়ে রেখে উল্টোদিকে বসে। শান্ত চোখ পাতে আমার চোখে।

    আমার ভেতরটা শান্ত হয়ে আসে। আর কষ্ট নেই কোনও। ঘুরে মরা নেই। যারা আমাকে বোঝে না, উঁহু, যাদের আমি বুঝি না, তাদের নাগাল ছাড়িয়ে অবশেষে পালিয়ে এসেছি। যেখানে আমার আসার কথা ছিল চিরদিন। আমার আশ্রয়ে, আমার স্বাভাবিকতায়।

    বাইরে বৃষ্টি পড়ে। উদ্ভট, অবোধ্য, অ্যাবনর্মাল পৃথিবী হইহই ভেজে। পায়েসের বাটিদের মাঝখানে রেখে আমি আর বড়মাসি, পৃথিবীর শেষ দুটি নর্ম্যাল লোক, মুখোমুখি বসে থাকি।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    তন্ময় ভট্টাচার্য | প্রতিভা সরকার | হেমন্ত দাস | শুভেন্দু চট্টোপাধ্যায় | মৃণাল শতপথী | কল্পর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় | দেবাশিস মল্লিক | মণিশংকর বিশ্বাস | সুকান্ত ঘোষ | সাদিক হোসেন | ডাঃ সেখ নূর মহাম্মদ | মোহাম্মদ সাদেকুজ্জামান শরীফ | সোমনাথ রায় | রুমা মোদক | জয় গোস্বামী | দেবর্ষি বন্দ্যোপাধ্যায় | সুপর্ণা দেব | সিদ্ধার্থ মুখোপাধ্যায় | স্বাতী রায় | অনিন্দিতা গোস্বামী | ফারুক আব্দুল্লাহ | খান শামিমা হক | নীলু ইসলাম | সারিকা খাতুন | দময়ন্তী | সাদাত হোসাইন | গোলাম রাশিদ | মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায় | শারদা মণ্ডল | অমর মিত্র | হামিরউদ্দিন মিদ্যা | ইমানুল হক | নীলাঞ্জন দরিপা | চিরশ্রী দেবনাথ | সায়ন কর ভৌমিক | কৌশিক বাজারী | ঐন্দ্রিল ভৌমিক | চৈতালী চট্টোপাধ্যায় | যাজ্ঞসেনী গুপ্ত কৃষ্ণা | মোজাফ্‌ফর হোসেন | অনুরাধা কুন্ডা | মাজুল হাসান | জগন্নাথদেব মন্ডল | যশোধরা রায়চৌধুরী | কুন্তলা বন্দ্যোপাধ্যায় | শ্রীদর্শিনী চক্রবর্তী | দীপেন ভট্টাচার্য | মৌ সেন | পায়েল দেব | তনুজ | রুখসানা কাজল | পার্থসারথি গিরি | ইদের কড়চা
  • গপ্পো | ১৩ মে ২০২২ | ২৯৮২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ঘন্টাঘর - একক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dc | 122.164.197.202 | ১৩ মে ২০২২ ২২:১৩507586
  • অসাধারন ভালো লাগলো। 
  • ইন্দ্রাণী | ১৪ মে ২০২২ ১৪:৪৪507616
  • কুন্তলার লেখা দীর্ঘদিন ফলো করি- নীরবেই মূলত। গুরু তে ওঁর গল্প প্রকাশিত হোক- ভীষণভাবে চেয়েছি- হৃদয়বাসনা পূর্ণ হল অ্যাদ্দিনে।
    কুন্তলার লেখার কয়েকটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা ওঁর লেখার সিগনেচার বলা যায়- লেখকের নাম দেওয়া না থাকলেও বলতে পারবে কোনটি কুন্তলার লেখা। এই গল্পে সকল বৈশিষ্ট্যই পূর্ণ মহিমায় বিরাজিত।
    ওঁর লেখার মহা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার হল ভাষা- উজ্জ্বল, জীবন্ত ভাষা যা দাঁড়িয়ে থাকে পরপর বাক্যের মারাত্মক অসমান দৈর্ঘ্যে, বাক্যের মধ্যে বাংলা শব্দের পরেই ইংরেজি শব্দের বুদ্ধিদীপ্ত ও সপ্রতিভ ব্যবহারে মূলত- যা একই সঙ্গে শ্ম্লেষ ও বিষাদের জন্ম দেয়।
    যেমন এই গল্পের প্রথম প্যারা জাস্ট একটি বাক্য- শব্দসংখ্যা পুরো নব্বই। এখানে বিশেষণের কিছু ব্যবহার অতিকথনের দোষ বলে ভাবতে পারেন পাঠক সমালোচক। কিন্তু মজাটা অন্যখানে। ঐ ৯০ শব্দের ম্যারাথন বাক্যের পরেই পিঁপড়ের মতো কুট্টুস- দুই শব্দের বাক্য -রোদ ছিল; তারপরেই তিন শব্দ- শীত ছিল না। এই ব্যাপারটা আমার মনে সমুদ্রের ঢেউ আছড়ে পড়ার উদ্ভাস জাগায়- বিশাল ঢেউ আছড়াল, জল সরে গেল, কিছু নেই-বালি, কাঁকড়া ভাঙা ঝিনুক। গোটা লেখায় এই বড় বাক্য মেজ বাক্য সেজো বাক্য ক্ষুদে বাক্য নিয়ে খেলা চলতে থাকে- পাঠককে পুরো টেনে নেয়, কখনও ডুবিয়ে দেয়।
    কুন্তলার লেখার আরো বৈশিষ্ট্য এই যে ওঁর আখ্যানে বৃহৎ পরিবার, বয়স্ক নারীরা ঘুরে ঘুরে আসেন, তার সঙ্গে কিছু মৃত্যু যার পিছনে সুড়ঙ্গের মত চোরা রহস্য গুটিয়ে থাকে । ভাষায়, আখ্যানের বুনোটে কুন্তলা পাঠককে সেই সুড়ঙ্গে টেনে নিয়ে যান । গল্প শেষ হয় বিষাদে এবং মায়ায়। এক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে।
    ওঁর প্রতিটি গল্পে উপন্যাসের বীজ থাকে। বলা ভালো, যে কোনো গল্পই উপন্যাস হয়ে উঠতে পারত। এ গল্পও।
  • | ১৪ মে ২০২২ ১৫:৪৫507623
  • ভীষণ ভাল লাগল।  খুব খুব ভাল।
  • Kuntala Bandyopadhyay | ১৪ মে ২০২২ ১৭:৪৫507627
  • ডিসিঃ অসংখ্য ধন্যবাদ। আপনার ভালোলাগা আমাকে ভালোলাগা দিল। 
     
    ইন্দ্রাণীঃ থ্যাংক ইউ বলা উচিত হবে না,তবু বলি। অনেক ভালোলাগা ভালোবাসা জানবেন। আপনার বন্ধুত্বের জন্য আমি কৃতজ্ঞ। 
     
    দ: থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ। 
  • Suchandra Bhattacharya | ১৫ মে ২০২২ ০৯:৫৮507642
  • খুব খুউউব ভালো লাগলো..... একেবারে অন্যরকম গল্প। আরো পড়তে চাই এমন লেখা।
  • পাঠক | 2405:8100:8000:5ca1::11c:33c7 | ১৫ মে ২০২২ ১০:৩১507646
  • হ্যাটস অফফ।
  • স্বাতী রায় | ১৫ মে ২০২২ ১১:৫১507656
  • অসামান্য। যেটা সব থেকে ভাল লেগেছে  অসামান্য স্মার্ট ভাষা ( যদিও মেদুর নয়) এবং গল্পের অন্য ধাঁচের চলন কিন্তু আখ্যানকে পিছনে ফেলে দেয়নি। সবাই সবার পরিপূরক এই গল্পে। আর তিনে মিলে দারুণ অভিঘাত তৈরি করেছে।  হ্যাটস অফফ। 
  • a | 203.219.30.176 | ১৫ মে ২০২২ ১৬:৫৭507673
  • ব্যাপারটা হল গিয়ে অবান্তরের আমি বহুদিনের নীরব পাঠক আর কুন্তলার লেখা অন্যান্য বেশ কিছু সাইটে পড়েছি আর নিজের মনেই বাহবা দিয়েছি। আজ এপাড়ায় দেখে সেটা জানানোর সুযোগ হল। 
    শুধু একটাই অভিযোগঃ অবান্তরে মাঝে মাঝে লম্বা ডুব দেওয়া চলবে না চলবে না :) 
  • a | 203.219.30.176 | ১৫ মে ২০২২ ১৭:০০507674
  • ও হ্যা আরেকটা কথাঃ বইয়ের রিভিউ আরো দিলে গরিবের বড় উপকার হয় 
  • Kuntala Bandyopadhyay | ১৫ মে ২০২২ ১৮:৪৯507686
  • সুচন্দ্রা, পাঠক, স্বাতী -  অনেক ধন্যবাদ। খুবই আপ্লুত হলাম। 
     
    স্বাতী - গল্প আমার মারাত্মক দুর্বলতা। সব শেষে একখানা গল্প যদি না শোনা যায় তাহলে যাবতীয় আড়ম্বর বৃথা, এই আমার ব্যক্তিগত মত। সে গল্প আপনার কাছে পৌঁছেছে জেনে এক্সট্রা খুশি হলাম। 

    অ - সত্যি, অবান্তরে ফাঁক পড়ে বটে আজকাল। বইয়ের ব্যাপারে লিখব লিখব করেও লেখা হচ্ছে না। অচিরেই সারানোর চেষ্টা করব। থ্যাংক ইউ।
  • ব্রততী | 223.223.153.229 | ১৬ মে ২০২২ ১৪:১২507714
  • মুগ্ধ! 
  • Sandipan Majumder | 45.249.73.206 | ১৬ মে ২০২২ ১৬:০৪507722
  • অসাধারণ।  আমার বিশ্বাস, বাংলা  কবিতা  এবং ছোটোগল্প আন্তর্জাতিক  মানে শ্রেষ্ঠত্বর দাবিদার হতে পারে। এইরকম  গল্পপাঠ আমাকে সেই বিশ্বাসে  স্থিত  হতে সাহায্য  করে।
  • Sandipan Majumder | 45.249.73.206 | ১৬ মে ২০২২ ১৬:৪৬507723
  • অবান্তর কি কোনো সাইট? তাহলে  তার আই ডিটা এখানে দেওয়া  যায়? 
  • Kuntala Bandyopadhyay | ১৬ মে ২০২২ ১৮:৩২507728
  • ব্রততী, সন্দীপন - থ্যাংক ইউ থ্যাংক ইউ। ভারি খুশি হলাম। 

    সায়ন্তন - অবান্তর হল ব্যক্তিগত কী খেলাম কী পড়লাম প্যাঁচাল পাড়া ব্লগ। স্বাতীর কাছে কৃতজ্ঞ লিংক দেওয়ার জন্য। আমি আসলে ভাবছিলাম এখানে ব্যক্তিগত সাইটের লিংক দেওয়া সমীচীন কি না, স্বাতী যখন দিলেন তাই সাহস করে মূল সাইটের লিংকটা দিচ্ছি।
     
  • Kuntala Bandyopadhyay | ১৬ মে ২০২২ ১৮:৩৩507729
  • সন্দীপন-এর নাম ভুল করে দ্বিতীয়বার সায়ন্তন লিখেছি। কান ধরে ক্ষমাপ্রার্থী। 
  • kk | 2601:448:c400:9fe0:f94a:6701:7f2e:aa05 | ১৭ মে ২০২২ ০০:৫১507740
  • অসম্ভব ভালো লাগলো!!
  • পারমিতা | 2409:4060:e86:4bdb:9300:2083:ac4d:7408 | ১৭ মে ২০২২ ১৭:১০507780
  • এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেললাম। বেশ ভালো লাগল।
  • Kuntala Bandyopadhyay | ১৮ মে ২০২২ ১৭:০২507809
  • কেকে, পারমিতাঃ কৃতজ্ঞতা ও ভালোলাগা জানবেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন