এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ধারাবাহিক  রাজনীতি  শনিবারবেলা

  • ভাটপাড়া তথ্যানুসন্ধান - ৪

    আমরা এক সচেতন প্রয়াস
    ধারাবাহিক | রাজনীতি | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ১৭৪১ বার পঠিত
  • আক্রান্তদের বয়ান

    কী হয়েছে না হয়েছে তা সকলেই জানতে পারে। লোকে সাধারণত পার্টি আর মিডিয়া থেকে পাওয়া তথ্যের উপর নির্ভর করেন, কিন্তু সেসব তথ্যে পক্ষপাতদুষ্টতা থাকে। এরকম একটি সাম্প্রদায়িকভাবে বিভক্ত অঞ্চলে, যেখানে যে-কোনো সময় দাঙ্গার আগুন জ্বলে উঠতে পারে, সেখানে মানুষের সঙ্গে কথা বলা যথেষ্ট কঠিন কাজ, বিশেষ করে যারা পরিবারের লোকজনদের হারিয়েছেন তাঁদের সঙ্গে কথা বলা। মৃত্যুর বিভিন্ন কারণ বাদ দিয়েই আমরা মৃতদের পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা বলব বলে পরিকল্পনা করলাম।

    ১ - মৃত মহ. হালিমের স্ত্রী এবং পুত্রের সঙ্গে কথোপকথন

    ওনাদের বাড়ি পৌঁছানোর সময় সকলেই বাড়িতে ছিলেন। সেটা ছিল এক নির্জন দুপুর। কামারুদ্দিন আমাদের সঙ্গে নিহত মহ. হালিমের স্ত্রী রুবি পারভিন এবং পুত্র তাবরেজ আলমের পরিচয় করালেন। আমরা-র তরফ থেকে শুধুমাত্র দুজন ওনাদের সঙ্গে কথা বললেন।

    আমরা: আমরা মূলত এই কারণেই কথা বলতে এসছি। আমরা সেই সময় আসিনি কারণ তখন জিজ্ঞেস করার মতো পরিস্থিতি ছিল না। আমরা বুঝি প্রিয়জন হারানোর দুঃখ। তবুও, আপনি কি আমাদের বলতে পারবেন সেদিন কী হয়েছিল?
    রুবি: বেশ কয়েকদিন ধরেই এটা চলছিল। সবসময় ৪-৫ জন আসবে। বোমা ফেলবে আর আমাদের হুমকি দেবে। ২৩ তারিখে আমাদের একজনের বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দিল। কালো কাপড় দিয়ে মুখ ঢাকা থাকার দরুন আমরা ওদের চিনতে পারিনি। যাইহোক, পরব শেষ হবার পর পরিস্থিতি ধীরে ধীরে ঠিক হতে থাকল। আমরা সাধারণত বাড়ির বাইরেটায় বসি কিংবা ঘরে থাকি, যেহেতু পরিস্থিতি সম্পূর্ণ শান্ত কোনোদিনই ছিল না। ওইদিন আমরা বাইরেই বসেছিলাম। আমার স্বামীর হার্টের রোগ ছিল, একটু বাইরের হাওয়া খাওয়ার জন্য বসেছিল। তো আমি, আমার দুই সন্তান আর ভাইপোও ওখানেই ছিলাম। হঠাৎ কারা যেন বোমা ফেলল। প্রচণ্ড আওয়াজ হল, আগুন ঝলসে উঠল আর চারদিক ধোঁওয়া হয়ে গেল। আমার জীবনে এরকম অভিজ্ঞতা হয়নি। আমি জানতাম না কে বোমা ফেলেছে। কিন্তু যেই ফেলে থাকুক খুব কাছ থেকে ফেলেছে, কিন্তু আমি দেখতে পাইনি। আমার স্বামীর মাথায় লাগল আর উনি পড়ে গেলেন। তখন আমার বাচ্চারা ঠিক আছে কি না তাও দেখতে পাচ্ছিলাম না। আমারও চোট লেগেছিল কিন্তু তখন কিছু বুঝতে পারিনি। ঘন ধোঁওয়ার মধ্যে দিয়ে বাচ্চারা ঘর থেকে বেরিয়ে এসে দেখল যে ওদের বাবা পড়ে আছে। আমি সাথে সাথে ওনাকে টেনে আনতে গিয়ে দেখলাম মাথাটা ফেটে তিন কি চার টুকরো হয়ে গেছে। আমি জ্ঞান হারালাম। জ্ঞান ফিরতে দেখলাম লোকজন আমাদের উদ্ধার করতে এসছে আর আমার স্বামীর ২-৩ গ্রাম মাংস উড়ে গেছে। এইটুকুই জানি। দিন দুয়েকের জন্য আমি হাসপাতালে ভরতি ছিলাম। ১২ তারিখে অ্যাপোলোতে ভরতি হলাম। বাচ্চাদের ন্যশানাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভরতি করা হল। বড়োটার পেটে আর পায়ে চোট লেগেছিল। ছোটোটার দৃষ্টি চলে গিয়েছিল।
    আমরা: আর আপনার স্বামীর মৃত্যু কবে হল?
    রুবি: ওই মুহূর্তেই, সাথে সাথে ।
    আমরা: এরকম ঘটনা আগে কোনোদিন ঘটেছে?
    রুবি: এরকম প্রায়ই হয়। ওই ক্রসিং থেকে গুণ্ডারা বোম ছোড়ে। ওরা গেঞ্জি আর হাফ প্যান্ট পরে আসে। সাধারণত দূর থেকেই বোমা ছোড়ে। আমরা সাথে সাথে ঘরে ঢুকে যাই। সাধারণত দিনে দু-বার করে বোমা ফেলে। ওরা কারা, কোথা থেকে আসে—কিছুই বুঝতে পারি না। ওরা সবসময় মুখে কালো কাপড় পরে থাকে বলে আমরা ওদের চিনতে পারি না। সাধারণত ওরা রাত ১০ টা, ১০.৩০ নাগাদ আসে।
    আমরা: ওরা কি মোটরসাইকেল করে আসে?
    রুবি: না, একদম সাধারণ লোকের মতো হেঁটে আসে। সবসময় ওই মাঠ দিয়ে আসে। হিন্দুরা এই এলাকায় ৭ টার পরে আর থাকবে না--এরকম একটি অলিখিত নিয়ম আছে। আমরা কয়েকটা মুসলিম পরিবার ঘরের বাইরে থাকতাম, তবে এখন আর সেটা হয় না।
    আমরা: কিন্তু এখন তো এলাকায় পুলিশ আছে।
    রুবি: পুলিশ তো সেদিন থেকেই আছে নাহলে এমনিতে বোম পড়লে তবেই পুলিশ আসে। বোম না পড়লে পুলিশ এমনি এসে যাকে তাকে তুলে নিয়ে যায়। আমাদের ভিতরে যেতে বলে। আমরা ওদের কথা শুনতাম। তো ওইদিনের ঘটনার পর এখানে সবসময় ১০-১২ জন পুলিশ মোতায়েন থাকে।
    আমরা: পুলিশ পিকেটিং সত্ত্বেও এখানে বোমা পড়ে, এটা কি সত্যি?
    রুবি: আমরা খবর পেয়েছি যে বোমা ফেলা জারি আছে, তবে এখানে তা হচ্ছে না। আমি পরশুদিন এখানে এসছি, দিন দশেক এখানে ছিলাম না।
    আমরা: কোথায় ছিলেন?
    রুবি: ছেলেদের নিয়ে আমি আমার ভাইয়ের বাড়ি ছিলাম।
    আমরা: এখন তো নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, আপনি কি একটু হলেও সুরক্ষিত বোধ করছেন?
    রুবি: আমরা কী করে এখানে থাকব? আমার স্বামী মারা গেছেন। ছেলেরা আতঙ্কে এখানে থাকতে চাইছে না।
    আমরা: আপনার বড়ো ছেলে তো চাকরি পেয়েছে?
    রুবি: হ্যাঁ।
    আমরা: কোথায় কাজ পেয়েছে?
    রুবি: কলকাতার কোথায় যেন। আমি এখনও দেখিনি। কী কাজ তাও জানি না। আমায় কয়েকদিন আগেই ছেড়েছে, আমায় অ্যাপোলো যেতে হবে আবার আর আমার ছোটো ছেলের চোখের চিকিৎসার জন্য দিশা আই হাসপাতাল।
    আমরা: ও এখন কোন্‌ ক্লাসে পড়ে?
    রুবি: ক্লাস এইট।
    আমরা: তোমার নাম কী বাবু?
    তাবরেজ: তাবরেজ আলম।
    আমরা: তুমি কোন্‌ স্কুলে পড়?
    তাবরেজ: অ্যাংলো ইন্ডিয়ান হাই স্কুল (চাপা গলায়)।
    আমরা: তুমি এখন স্কুলে যাও, না স্কুল বন্ধ?
    তাবরেজ: এখন খোলা (একটু পরিষ্কার গলায়)।
    আমরা: তুমি স্কুল গেছিলে?
    তাবরেজ: না, (চাপা গলায়) কিন্তু যেতে চাই।
    আমরা: ওকে কোনো একটা স্কুলে পাঠানো দরকার (মায়ের দিকে তাকিয়ে)।
    রুবি: ওরা বলেছে ওকে স্কুলে ভরতি করতে সাহায্য করবে, কিন্তু এখনও তো কিছু করেনি। আমরা অন্য কোথাও চলে যাব। আমাদের রাস্তার ধারে বাড়ি, ছেলেদের নিয়ে এখানে থাকা যাবে না।
    আমরা: আপনারা কত বছর আছেন এখানে?
    রুবি: অনেকদিন, তা ১৫-১৬ বছর তো হবেই। আমার স্বামী এই ঘরটা বানিয়েছিলেন।
    আমরা: এর আগে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা দেখেছেন কখনও?
    রুবি: জীবনে না। এই প্রথম। আমার স্বামী রাজনীতিতে আগ্রহী ছিলেন না। উনি অবসরপ্রাপ্ত মানুষ ছিলেন। ছোটো একটা দোকান ছিল ওনার। এর আগেও পার্টি-পলিটিক্স হয়েছে এখানে, তবে এই মাত্রায় নয়। উনি হৃদরোগী ছিলেন। ২০০০ সাল থেকে ওনার চিকিৎসা চলছে। ওইদিন উনি হাসপাতাল থেকে ফিরেছিলেন। বিধাননগর হাসপাতাল থেকে ডাক্তার দেখিয়ে আমরা ফিরেছিলাম। উনি ডাক্তারকে বলছিলেন “ডাক্তার সাব, বোমা পড়লে একটু ভয় লাগে”। আমার মনে পড়ে ডাক্তারবাবু সাবধানে থাকতে বললেন। আমরা ৪ টে নাগাদ ফিরলাম আর ঘটনাটি রাত ১০.৩০ টা নাগাদ ঘটল।
    আমরা: বাচ্চাদের প্রতিক্রিয়া কী এই ঘটনা নিয়ে? আমরা তো ভাবতেও পারি না।
    রুবি: ওরা তো সবসময়েই ভাবে ওইদিনের কথা। এত তাড়াতাড়ি ওইসব মাথা থেকে যাবে না। আমি যখন ৮-১০ দিনের জন্য হাসপাতালে ছিলাম, আমি কানে কিছু শুনতে পেতাম না। ওরাও কিছু শুনতে পেত না। ওরা তো দিন দুয়েক জল পর্যন্ত খেতে পারেনি।

    ২ - মহ. মুস্তাক

    ১০ জুন, ২০১৯-এর দ্বিতীয় শিকার ছিলেন মহ. মুস্তাক। ওনার পরিবারের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব হয়নি। আমরা যে সময় যাই ততদিনে ওনারা বারুইপাড়া ছেড়ে চলে গেছেন। মৃত মুস্তাকের ছেলে ইমতিয়াজ আলি দুবাই থেকে ফিরেছিলেন এবং আমাদের বন্ধু এবং আমাদের দলের সদস্য সন্দীপ সিংহ রায়ের সঙ্গে কথা বলেছিলেন— “নির্বাচনের পরেই এখানে উত্তেজনা শুরু হয়। ভয় দেখাতে বোমা ফেলে ওরা। কালো কাপড়ে মুখ ঢেকে লোকজন আমাদের হুমকি দিতে থাকে “পাকিস্তানে ফিরে যা”। কেন যাব? এটা তো আমাদেরও দেশ।”

    উনি আরও জানালেন যে এখানে নতুন করে ঘর বানানো এখন নিষিদ্ধ। উনি সন্দেহ করেন যে খুনের মাধ্যমে বারুইপাড়াকে মুসলিম-মুক্ত এলাকা বানিয়ে বড়ো বড়ো বিল্ডিং বানানোর ষড়যন্ত্র চলছে।

    ৩ - রাজেশ শাউ

    রাজেশ শাউয়ের পেটে গুলি লাগে। ওনার একটি হাত কাটা গেছে (অনেকে বলেন যে একটি বোমা ভুলবশত পড়ার ফলে ওনার হাতটি উড়ে গেছে)। ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল কিন্তু বাঁচানো যায়নি।

    উনি শ্রমিক বস্তির একটি সরু গলির একটা এককামরার বাড়িতে থাকতেন। উনি অবিবাহিত ছিলেন। ওনার ভাই এবং ভাইয়ের স্ত্রী ওখানে আছেন। ওনার ভাই জুটমিলের স্থায়ী কর্মী, কিন্তু রাজেশ চুক্তিভিত্তিক শ্রমিক ছিলেন। আমরা পৌঁছাতে ওনার ভাইয়ের স্ত্রীয়ের সঙ্গে দেখা হয়। প্রথমে ইতস্তত করলেও প্রতিবেশীদের অনুপ্রেরণায় উনি কথা বলতে রাজি হলেন। রাজেশ শাউয়ের বোনের ছেলেও উপস্থিত ছিল। আমরা জানতে পারলাম যে রাজেশ শাউয়ের বাবা-মা অনেকদিন আগেই মারা গেছেন।

    আমরা: আপনারা কোন্‌ রাজ্যের বাসিন্দা?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: আমাদের মনে নেই, জন্ম থেকেই এখানে আছি।
    আমরা: না, আমরা জানতে চাইছি কীভাবে আপনারা অন্য জায়গা থেকে এখানে এসেছেন। আপনাদের আগের প্রজন্মের মানুষরা এখানে থাকতেন?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: বিহারের কোনো এক গ্রামে। জেলার নাম মনে নেই।
    বিজয় রজক: ওনারা ওই ব্যাপারটায় জোর দিতে চান না। ওনারা বলতে চান যে ওনারা এখানকারই মানুষ।
    আমরা: আমাদের ওইদিনের কথা কিছু বলুন।
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: ১৯ মে-এর পর দাঙ্গা শুরু হয়। যেভাবে বোম পড়ছিল কোনো সাধারণ মানুষ বাইরে যাবার কথা ভাবতেই পারবে না। নয়াবাজারের বহু হিন্দু বাড়ি লুটপাট হয়েছিল। মদন মিত্রের (বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল প্রার্থী) কামারহাটির গুণ্ডারা আবার ২২ তারিখ বোম ফেলা শুরু করল। ওরা পুলিশের পোশাকে এসছিল। সবাই পালাতে শুরু করল। লোকে নিজেদের বাড়ি ছেড়েও পালাতে থাকল। অনেকে প্রাণ বাঁচাতে মিলে আশ্রয় নিল। রাত ১২ টা নাগাদ রাজেশের গুলি লাগে। লোকজন ওকে কাঁধে তুলে পালাতে চেষ্টা করল। গুণ্ডারা ওদের দিকেও গুলি আর বোমা ছুড়তে শুরু করেছিল। ওরা রাজেশকে ফেলে পালিয়ে যায়। রাজেশকে এক কোণে পড়ে থাকতে দেখে ওরা ভোজালি দিয়ে ওর হাত কেটে নেয়। পুলিশ ওকে হাসপাতালে নিয়ে যায়।
    আমরা: ওঁকে কোথায় খুঁজে পাওয়া গেল?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: ওকে মসজিদের বাইরে পাওয়া গেছিল। মিলের গেটের কাছে ওর গুলি লেগেছিল। রাত ১২ টা নাগাদ। এই লাইন বস্তির সব লোক মিলে আশ্রয় নিয়েছিল। অনেকে ঢুকতে পারেনি। রাজেশও পারেনি। রাজেশ ঢোকার আগেই দারোয়ান দরজা বন্ধ করে দেয়। অনেক রক্ত পড়ছিল ওর, ওরা ওকে মারবে বলেই ঠিক করে রেখেছিল। ও বয়ান পর্যন্ত দিয়েছে যে ওকে কামারহাটির গুণ্ডারা মেরেছে। ওরা পুলিশের উর্দিতে এসছিল। কিন্তু সকাল ৭ টায় পুলিশ আমাদের বলে যে রাজেশ বোম ছুড়তে গিয়ে ওর নিজের হাতে বোমা ফেটে মারা যায়। আমরা জানি যে পুলিশ বয়ান বদলে দিয়েছে। যাকে ইচ্ছা জিজ্ঞেস করুন রাজেশ সাধারণ নিরীহ মানুষ ছিল।
    আমরা: ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেয়েছেন আপনারা? ওখানে কি বোমা ফেটে মারা যাবার কথা লেখা ছিল?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: হ্যাঁ, পেয়েছি কিন্তু জানতাম যে ওই রিপোর্ট পুলিশের কথা মতো লেখা হয়েছে।
    আমরা: আপনারা কীভাবে জানলেন যে পুলিশ বয়ান পালটেছে?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: আমাদের কিছু বন্ধু ওখানে ছিল। মিডিয়ার কাছে ভিডিও ফুটেজ পর্যন্ত আছে যে ওকে যখন নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ও অচেতন ছিল।
    আমরা: কামারহাটির গুণ্ডারা আর পুলিশ একসঙ্গে কাজ করেছে, আপনি নিশ্চিত?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: হ্যাঁ, ওরা একসাথেই ছিল। পুলিশ ওদের সাথে ছিল।
    আমরা: সবাই কামারহাটির?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: ভিতরের লোক তো ছিলই। না হলে আমরা কোথায় আছি জানবে কী করে? বাইরের কেউ ঢুকতেই পারে না, ঢুকলেও এই গোলকধাঁধার মতন গলি দিয়ে চিনে বেরোতে পারবে না।
    আমরা: হ্যাঁ, সে আমরা বেশ বুঝতে পারছি।
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: আমি বলছি। বাইরে একটা নরেন্দ্র মোদীর পোস্টার ছিল। কে লাগিয়েছে জানি না। আমার মনে হয় ওই জন্যই আমাদের নিশানা বানিয়েছিল। আমাদের সদরদরজায় লাথি মারছিল। ঢুকলে আমাদের সবাইকে ধরত (রাজেশ শাউয়ের ভাই, ভাইয়ের স্ত্রী, বোনের ছেলে, বাকি ছেলেমেয়েরা)। আমরা ভিতর থেকে প্রাণপণ শক্তি লাগিয়ে দরজা চেপে ধরেছিলাম।
    আমরা: আপনারা কি বিজেপি সমর্থক?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: আমরা দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ। দু-বেলার রুটি জোগাড় করতে কাজ করি।
    আমরা: আরে না না, মানে বিজেপি সমর্থক হওয়া তো কোনো অপরাধ নয়।
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: দেখুন আমি দেশের ভালোর জন্য ভোট দিয়েছি। এরকম হবে স্বপ্নেও ভাবিনি।
    আমরা: এই জায়গাটার নাম কী?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: সর্দার লাইন।
    আমরা: এখানে হিন্দু-মুসলিম অনুপাত কীরকম? জানেন?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: এটা হিন্দু এলাকা। পাশের দর্মা লাইন মুসলিম এলাকা।
    আমরা: আপনারা একে অন্যের এলাকায় যাতায়াত করতেন তো?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: হ্যাঁ, যাতায়াত তো ছিলই।
    আমরা: সেদিন কারা চিহ্নিত করেছিল বলতে পারবেন?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: স্থানীয় লোক।
    আমরা: স্থানীয় কারা?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: স্থানীয় মুসলিমরা। ওদের সাথে পুলিশ ছিল।
    আমরা: আপনার কি মনে হয়, আবার ঝামেলা হবে?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: দেখুন আমরা ঝামেলা চাই না। কিন্তু পুলিশ আমাদের শান্তিতে থাকতে দেবে না। ওরা রাতে আমাদের ধরতে আসে। কাল রাতেও এসছিল। প্রায় ৩০ জন পুলিশ। আমরা, স্থানীয় মহিলারা ওদের ঘেরাও করেছিলাম। আমাদের কয়েকজন ছেলেকে ধরে নিয়ে গেল, আর কথা দিল যে সকাল ১০ টার মধ্যে ছেড়ে দেবে। এখনও দেয়নি।
    আমরা: পুলিশকে চালনা কে করছে? নির্বাচন কমিশন?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: হয়তো।
    আমরা: কারণ স্থানীয় মুসলিমরা আমাদের জানাল যে নির্বাচন কমিশনের পুলিশ তাদের উপর অত্যাচার করছে।
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: পুলিশ যারই হোক, আমাদের উপর অত্যাচার হচ্ছে।
    আমরা: অর্জুন সিংহ তৃণমূল করার সময় কাকে ভোট দিতেন?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: আমরা তৃণমূলেই ভোট দিতাম, কিন্তু বদল দরকার। আগে সিপিআইএম ছিল। মানুষ বদল চাইল, বদল এল। এখন আবার বদলানোর দরকার—ভালোর জন্য। এরা সিপিআইএম-এর থেকেও ভয়ংকর হয়ে গেছে। মমতা এত স্বৈরাচারী যে লোকে ওনার বিরুদ্ধে চলে গেছে।

    কথাবার্তা চলাকালীন কয়েকজন প্রতিবেশী এসে উপস্থিত হলেন। তাঁদের মধ্যে একজন মন্টু সিংহ জানালেন যে উনিও মিলের ভিতর ছিলেন।

    রজক: আমরা শুনেছি যে ওরা মিলে ঢুকেছিল লোকজনকে মারতে। একটু বলুন।
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: ওরা জোর করে মিলে ঢুকেছিল। গেটকিপার দরজা খোলেনি, কিন্তু ওরা এমন ধাক্কাধাক্কি শুরু করল যে খুলতে বাধ্য হল। দরজা না খুললে ভেঙে ফেলত।
    মন্টু সিংহ: আমরা সবাই ওইদিন রাত ১০ টার মধ্যে মিলে ঢুকে গেছিলাম। ওরা রাত ১ টা নাগাদ ঢুকল। মুসলিমরা পুলিশের সাথে ছিল। গেটকিপারকে এমন মেরেছে যে ওর হাত ফুলে গেছে। গেটকিপার লাইট নিভিয়ে দিয়েছিল। ওরা ওকে লাইট জ্বালাতে বলল। গেটকিপার ওদের বলেছিল যে পাওয়ার হাউসের লোক চলে গেছে ও সুইচ জানে না। দলের কেউ একজন বলল যে পাওয়ার হাউসে ২৪ ঘণ্টা লোক থাকে। এই খবর মিলের বাইরের লোক জানে না। পুলিশ বলল লাইট জ্বালাতে। তাই হল। আমরা প্রাণভয়ে পালাতে থাকলাম। যারা পালাতে পেরেছে বেঁচে গেছে, বাকিদের নির্মমভাবে মারধর করা হয়েছে (বাকিরাও এই কথায় সম্মতি জানাল)। প্রশাসন আর গুণ্ডা একসাথে কাজ করছিল। গুণ্ডারাও পুলিশের উর্দিতে ছিল। প্রায় ৬০০-৭০০ লোক আশ্রয় নিয়েছিল ওখানে।
    আমরা: আমরা দেখেছি যে মুসলিমদের বাড়িও লুট হয়েছে, ২ জন মুসলিমও মারা গেছে। শুধু যে হিন্দুরাই ভুগেছে তা তো নয়?
    ভিড়ের সবাই: হ্যাঁ দাদা, সবাই ভুগেছে ।
    আমরা: এর আগে এরকম তো কোনোদিন হয়নি। এমনকি মুসলিমরাও বলছে যে স্থানীয় লোকজন ঝামেলা পাকিয়েছে। আপনাদের মতামত কী?
    ভিড়ের সবাই: আমরা এখানে বহু প্রজন্ম ধরে আছি। আমরা ওদের ইদ উৎসবে অংশগ্রহণ করি, প্যান্ডেল বানাই। আমাদের সম্পর্কটা বিষিয়ে দিল। আমরা শান্তি চাই।
    আমরা: এই স্থানীয়রা কারা? পার্টির লোক?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: সেটা তো জানি না।
    আমরা: না, মানে আপনারা তো স্থানীয়, আপনারা চেনেন?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: এখন পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে হিন্দু মানেই বিজেপি আর মুসলিম মানেই তৃণমূল। কেউ ফেজ টুপি পরছে—তৃণমূল! আমাদের বাড়িকে নিশানা বানানো হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর পোস্টারের জন্য। আমার বোনের বিয়েতে গেছিলাম আমরা, কে লাগিয়েছে তাও জানি না।
    রজক: মিল খোলা ছিল?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: মালিক খোলা রেখেছিল, কিন্তু কোনো শ্রমিক কাজে যায়নি। ৭ দিন মতো কাজ বন্ধ।
    আমরা: আমরা একটু ধন্দে পড়ে গেছি। আপনারা তো নিজেদের দাবী নিয়ে একজোট হয়ে মালিকের বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলছিলেন। আপনারা এতদিন ধরে এখানে আছেন। এই মাত্রার দাঙ্গা হল কীভাবে?
    সবাই: আমাদের জীবনে ট্রেড ইউনিয়নের কোনো ভূমিকা নেই।
    আমরা: কিন্তু হিন্দু-মুসলিম তো একসাথেই মিলে কাজ করে। এখন কী অবস্থা? আপনারা ওদের সাথে কথা বলেছেন?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: এমন নয় যে একে অপরের সাথে কথা বলে না। আমরা শিক্ষিত লোকেদের সাথে তো কথা বলি। আমাদের ডিপার্টমেন্টে অনেক মিয়াঁ কাজ করেন। আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। দাঙ্গাবাজদের সাথে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। কিন্তু এমনিতে বাকিদের সঙ্গে তো আমরা একসাথে খাওয়াদাওয়াও করি। মিলের ভিতরে কোনো পার্থক্য করা হয় না।
    আমরা: সরকার থেকে কেউ সাহায্যের জন্য এসেছিলেন এই ঘটনার পর?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: ওনারা বললেন যে পরিবারের একজনকে সরকারি চাকরি আর পরিবারকে ১০ লাখ টাকা দেওয়া হবে। এখনও অবধি তো কিছুই হয়নি।
    আমরা: রাজ্য সরকার থেকে কেউ দেখা করতে আসেনি?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: একদিনের জন্যও একটা মানুষও না ।
    আমরা: আমরা মহ. হালিমের বাড়ি গেছিলাম। ওনার ছেলে রাজ্য সরকারের চাকরি পেয়েছেন। আপনাদের এরকম কিছু দেওয়া হয়নি?
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: না। এই ভাবেই তো হিন্দু-মুসলিম ভাগাভাগি হচ্ছে। ওনারা শুধু মুসলিমদের জন্য করবেন।
    আমরা: তেমনই, অর্জুন সিংহও মুসলিমদের সাথে দেখা করতে যাননি।
    রাজেশ শাউয়ের ভাইয়ের স্ত্রী: দাদা, থাক এসব। ওনারা উপরমহলের লোক, কী করছেন ওনারাই জানেন।
    রজক: ওনারা রাজনীতির নোংরা খেলা খেলবেন আর সাধারণ মানুষ মরবে। আগুন জ্বলবে। আর ওই আগুনে ওনারা নিজেদের রুটি সেঁকে নেবেন, আসবেন, বসবেন, একসাথে খাওয়াদাওয়া করবেন আর চলে যাবেন।


    (ক্রমশঃ)




    গ্রাফিক্স: স্মিতা দাশগুপ্ত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • ধারাবাহিক | ২৯ আগস্ট ২০২০ | ১৭৪১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    হজম  - Subhankar Sengupta
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pc Thomas | 116.193.128.149 | ০৫ জানুয়ারি ২০২৪ ২৩:৩৪527417
  • This comprehensive review on Communal politics in West Bengal is imperative. Thanks AAMRA.- pc Thomas
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল প্রতিক্রিয়া দিন