এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • ফেলুদা, শার্লক হোমস আর স্টোনম্যান (দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব) #বেরসিক

    প্রলয় বসু লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৫ জুলাই ২০২০ | ১৫৩৭ বার পঠিত
  • ফেলুদা, শার্লক হোমস আর স্টোনম্যান (দ্বিতীয় এবং শেষ পর্ব)
    #বেরসিক

    ফেলুদা হঠাৎ 'জ্যাক দ্যা রিপার' শব্দটা কয়েকবার অস্ফুট উচ্চারণ করলো। লালমোহনবাবু বোধহয় ঠিক শুনতে পারেননি। উনি প্রশ্ন করলেন, "জ্যাক ফ্রুটের কথা বলছেন? মানে কাঁঠাল?"। ফেলুদা লালমোহন বাবুকে বললেন, "নাহ্। জ্যাক দ্যা রিপার"। তারপর আমাকে বললো, "চল তোর সিধু জ্যাঠার বাড়িতে, কয়েকটা ইনফর্মেশনের দরকার আছে। এ ব্যাপারে সিধু জ্যাঠার শরণাপন্ন হতেই হবে। আপনিও যাবেন নাকি লালমোহন বাবু? কাছেই। হাঁটাপথ।"

    লালমোহনবাবু সানন্দে বলে উঠলেন "অফকোর্স। সাটের্নলি যাব। তবে সেখান থেকে আমরা তিনজন আজ 'মেইন ল্যান্ড চায়না' তে চাইনিজ খেতে যাবো। এটা আমার আজকের ট্রিট। শুনিচি ওখানকার ফুড কোয়ালিটি নাকি বেশ ভালো।" 'মেইন ল্যান্ড চায়না'-র নাম আমি কাগজে দেখেছি, ঋজু বসুর কলামে আনন্দবাজারে পড়েছি। ফেলুদা বললো "ঠিক আছে, তবে আপনি সাটের্নলি না গিয়ে সার্টেনলি গেলে নিশ্চিন্ত হতাম। আর আপনার বাহন যেহেতু আজ সঙ্গে নেই, ট্যাক্সি ফেয়ারটা আমিই দেবো।" বলেই, ফেলুদা ভেতরে চলে গেলো পোশাক বদল করতে।

    সিধু জ্যাঠার বাড়িটা সর্দার শঙ্কর রোডে, আমাদের বাড়ি থেকে কাছেই। পায়ে হেঁটেই যাওয়া যায়। আমাদের রজনী সেন রোডের বাড়ি থেকে খানিক এগোতেই লেক প্যালেস রোড। লেক প্যালেস রোড ধরে সোজা মিনিট দশেক হাঁটলেই সর্দার শঙ্কর রোডে সিধু জ্যাঠার বাড়ি। আমরা তিনজন, পায়ে হেঁটেই বেরিয়ে পড়লাম। বাইরে যদিও কড়া রোদ। তবু, ফেলুদার সাথে বাইরে বেড়োনোর মজাই আলাদা। পথে কিছু ঘটেনি, খালি লালমোহনবাবু একবার রাস্তা ফাঁকা দেখে তাঁর এথেনিয়াম ইন্সটিটিউটের বাংলার মাস্টারমশাই বৈকুন্ঠ মল্লিকের লেখা একটা কবিতা আবৃত্তি করে উঠেছিলেন।

    "অহি, হে মিষ্টান্ন,
    বাঁচিয়া আছি মোরা তোমার জন্য।
    তোমারে করিয়া ভক্ষণ,
    মোরা সুখে থাকি বিলক্ষণ।
    হে বীর, হে কর্মবীর, হে ময়রা,
    নাহি চিনি তোমায় আমরা।
    তবু তুমি করো প্রাণপাত,
    শ্রেষ্ঠ তুমি হে জাত।

    শুধু মিষ্টি না, ভাষার মধ্যে ময়রাদের প্রতি, তাদের শ্রমের প্রতিও ভালবাসাটা লক্ষ্য করবে তপেস ভায়া।" বুঝলাম লালমোহনবাবুর মাথা থেকে পান্নার মিষ্টির ভূতটা এখনো যায়নি। তবে মিষ্টান্ন মানে যে পায়েস আর 'মিষ্টান্ন'-র সাথে 'জন্য'-র মিলটা যে বেশ জোর করে করা সেটা আর বললাম না।

    সেখানে গিয়ে দেখি, সিধু জ্যাঠা একটা মোড়ার উপর বসে একটা নীচু টেবিলের উপরে দাবার বোর্ড রেখে, একা একা দাবা খেলছেন। সামনে একটা বই উল্টানো অবস্থায় রয়েছে। নামটা দেখলাম, 'লজিক্যাল চেস' ইরভিন চেরনেভের লেখা। সিধু জ্যাঠা আমাদের ইশারায় বসতে বলে, দাবার চালে মন দিলেন। সিধু জ্যাঠার ঘর ভর্তি বই। তিনটে বিশাল বড় বড় আলমারি ভর্তি বই। এমনকি ওঁর তক্তপোশের উপরেও বই রাখা আছে। তারই একপাশে কিছুটা জায়গা ফাঁকা আছে। আর ঘরের মাঝখানে একটা প্রকান্ড বেমানান চেয়ার। চেয়ারটা ওনার জন্যে ছেড়ে রেখে, আমরা তিনজন ভাগাভাগি করে তক্তপোশের উপরেই বসলাম। ফেলুদা ওর ধার করা বইগুলো আলমারির ঠিক জায়গায় গুঁজে রেখে, নেড়েচেড়ে অন্য বই দেখতে শুরু করলো। কাছেই কোন বাড়ি থেকে রেডিওতে হিন্দি সিনেমার একটা গানের কলি ভেসে আসছে, শুনতে পেলাম, "ইয়াহা কা হাম সিকান্দার"। লালমোহনবাবু দেখি কোন কথা বলার সুযোগ না পেয়ে নিজের হাঁটুর উপরে গানের সুরে ডান হাত দিয়ে তাল দিতে শুরু করেছেন। আমি আমার সোনি ক্যাসেট রেকর্ডারটা হাতে নিয়ে বসে আছি। ফেলুদা কথা বলতে শুরু করলেই আমি ওটা চালিয়ে দেবো। কিছুক্ষণের মধ্যেই সিধু জ্যাঠার চাকর নারায়ণদা, আমাদের সামনে চার কাপ চা আর একটা প্লেটে বড়ো বড়ো গোটা দশ-বারো রসগোল্লা রেখে গেলো। আমার মিষ্টি খুব একটা ভালো লাগে না। ফেলুদা একটা রসগোল্লা টুপ করে মুখে পুরে চায়ের কাপটা হাতে নিয়ে, সিধু জ্যাঠাকে প্রশ্ন করলো, "আচ্ছা ত্রৈলক্যতারিনীর ঘটনা কি, 'জ্যাক দ্যা রিপার'এর আগের ঘটনা?" এটা আমি আগেও লক্ষ্য করেছি ফেলুদা একদম সময় নষ্ট করতে ভালোবাসে না। সরাসরিই আসল প্রশ্নটা করলো, যে কারণে আসা, সেটা নিয়ে।

    সিধু জ্যাঠার ততক্ষণে দাবা খেলা শেষ। চেয়ারটায় বসতে বসতে সিধু জ্যাঠা বললেন, "সে তো অবশ্যই। 'জ্যাক দ্যা রিপার' ১৮৮৮ সালের ঘটনা, আর ত্রৈলক্যতারিনীর ঘটনা তার অনেক আগের। ত্রৈলক্যতারিনীর ফাঁসিই হয়েছিল ১৮৮৪ সালে। ১৮৮৪ সালের ৪ই সেপ্টেম্বর, ‘দ্য স্টেটসম্যান’ আর ‘ফ্রেন্ড অব ইন্ডিয়া’-র পাতায় বড় বড় করে ছাপা হয়েছিল ‘ত্রৈলক্য রাঁড়’ মামলার চূড়ান্ত রায়। সুতরাং বুঝতেই পারছো আমাদের ত্রৈলক্যতারিনী সময়ের দিক থেকে কুখ্যাত 'জ্যাক দ্যা রিপার' এর থেকে খানিকটা প্রাচীন।" একটু থেমে চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে সিধু জ্যাঠা আবার বলতে শুরু করলেন, "পাঁচটা নাম বলছি, দেখোতো চেনা যায় কিনা?
    মেরি অ্যান নিকোলস, 
    অ্যানি চ্যাপম্যান, 
    এলিজাবেথ স্ট্রাইড, 
    ক্যাথরিন এডোয়েস ও 
    মেরি জেন কেলি।
    কি তপেসবাবু, এই নাম গুলো কি চেনা চেনা লাগছে?"

    'জ্যাক দ্যা রিপার'এর নাম আমি শুনেছি, ফেলুদার মুখে। কিন্তু এই নাম গুলো কেমন, চেনা চেনা লাগলেও, ঠিক ধরতে পারছি না। পাশে লালমোহনবাবুর দিকে তাকিয়ে দেখি উনি যেমন মুখ করে আছেন, তাতে মনে হচ্ছে, নাম গুলো প্রথম বার শুনছেন।

    সিধু জ্যাঠা আবার বলে উঠলেন, "অচেনা লাগছে? আচ্ছা যদি এদের নামের পাশে, একটা করে তারিখ বসিয়ে দেই,
    মেরি অ্যান নিকোলস - ৩১.০৮.১৮৮৮
    অ্যানি চ্যাপম্যান - ০৮.০৯.১৮৮৮
    এলিজাবেথ স্ট্রাইড - ৩০.০৯.১৮৮৮
    ক্যাথরিন এডোয়েস - ৩০.০৯.১৮৮৮
    মেরি জেন কেলি - ০৯.১১.১৮৮৮
    তাহলে? এবার?"

    এই বার বুঝতে পারলাম, এরা সকলেই 'জ্যাক দ্যা রিপার' এর হাতে খুন হওয়া ভিক্টিম। পৃথিবীর অন্যতম কুখ্যাত সিরিয়াল কিলার 'জ্যাক দ্যা রিপার' এবং সেই অমীমাংসিত রহস্য। ফেলুদার মুখে শুনেছিলাম। সিধু জ্যাঠা বলে চললো "যদিও এই সময়ের আশেপাশে মানে, ০২.০৪.১৮৮৮ - ১৩.০২.১৮৯১, এগারোটি খুন হয়েছিল পূর্ব লন্ডনের হোয়াইটচ্যাপেল এলাকায়। শুধু খুন? বলা যায় কেটে ছিন্নভিন্ন করা হয়েছিল তাদের শরীর, অজানা এক আততায়ীর ছুরিতে। অজানা, কারণ লন্ডন, ইংল্যান্ড, ইউরোপ হয়ে সারা পৃথিবীতে আলোড়ন সৃষ্টিকারী এই খুনিকে পুলিশ ধরতে পারেনি। হঠাৎই একদিন হাওয়ায় মিলিয়ে গেছিল 'জ্যাক দ্য রিপার' নামে কুখ্যাত সেই খুনি। সিরিয়াল কিলার তার আগেও এসেছিল, পরেও এসেছে, অনেক। কিন্তু 'রিপার কিলিংস' আক্ষরিক অর্থেই ইতিহাস গড়েছিল। সকলেই মহিলা। এবং সকলেই বারবণিতা। এই খুন গুলিকে বলা হয় 'হোয়াইটচ্যাপেল মার্ডার' আর উপরের পাঁচটি খুনকে প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা হয় 'জ্যাক দ্যা রিপারে'র কাজ। আর এগুলোকে 'ক্যানোনিকাল ফাইভ' বলে।" 

    লালমোহন বাবুর দিকে তাকিয়ে দেখি, ওনার পকেট থেকে ছোট নোটবইটা বের করে ফেলেছেন, ঝড়ের বেগে ওনার হাত চলছে। আমি জানি না, ফেলুদা এই নাম গুলো জানে কি জানেনা। তবে না জানলেও, ও এখন সব মাথায় টুকে রাখছে। মনে রাখার জন্যে ওকে খাতায় টুকতে হয় না। ফেলুদা অবশ্য কিছুদিন আগেই বলছিল, এই কুখ্যাত 'সিরিয়াল মার্ডার মিস্ট্রি'র রহস্য ভেদ হয়েছে বলে ও পড়েছে কোন একটা জার্নালে।

    "দেখো ফেলু, শার্লক হোমস বললেই কতগুলো গল্পের কথাই লোকে ভাবে। তবে, শার্লক হোমস মানেই তা নয়। আচ্ছা, শার্লক হোমসের জনপ্রিয়তার সাথে এই 'জ্যাক দ্যা রিপার'এর একটা সম্পর্ক স্থাপন করার চেষ্টা করা হয়েছে, সেটা জানো? শার্লক হোমসের 'কনসাল্টিং ডিটেকটিভ' হবার কারণটা জানা আছে তো? তুমি গোয়েন্দাগিরি করছো, তোমার এসব জানা উচিত।"

    ফেলুদা মাথা নেড়ে বললো, জানি। তারপর চায়ের কাপে একটা চুমুক দিয়ে বললো, "১৭৭৫ সালে জন্ম, খুব অল্প বয়সে বাবার টাকা চুরি করে বাড়ি থেকে পালিয়ে যান। এরপর ফরাসী সেনাবাহিনীর সদস্য হিসেবে যোগদান করেন। ১৭৯২ খ্রিস্টাব্দে অস্ট্রিয়ার বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধেও অংশগ্রহণ করেছিলেন। যুদ্ধের পর নানান অপরাধের জন্যে বেশ কয়েকবার জেল খেটেছেন। এরপর সেনাবাহিনীর চর হিসেবে কাজ শুরু করেন ১৮০৯ সালে। ১৮১১ সালে উনি সাদা পোষাকের পুলিশ-বাহিনী গঠন করেন, 'ব্রিগেদে দে লা সুরেতে' বা 'সিকিউরিটি ব্রিগেড' নামে। ১৮১২ সালে এই পুলিশ বাহিনীকে ফ্রান্সের পুলিশ বিভাগ স্বীকৃতি দেয়। আর উনি এই বিভাগের কর্তা নিযুক্ত হন। ১৮২৭ অবধি চাকরি করে তারপর নানান প্রশ্নের মুখে ইস্তফা দেন চাকরি থেকে। ১৮৩৩ সালে পৃথিবীতে সর্বপ্রথম, 'লে ব্যুরো দ্য রেঁনসেমেন্তস' বা 'অফিস অফ ইনফরমেশন' নামে বেসরকারী গোয়েন্দা সংস্থা খোলেন। মারা যান ১৮৫৭ সালে। এই হলো ইউজিন ভিদক (Eugène François Vidocq) এর মতো বর্ণময় চরিত্রের জীবনীর সংক্ষিপ্তসার। ১৮২৮ সালে 'মেমোয়ার্স দ্যা ভিদক' এর প্রথম খন্ড প্রকাশিত হয়। ভিদকের জীবনী স্বরূপ। এরপর ১৮৩৬ থেকে ১৮৪৬ সালের মধ্যে আরো তিনটি খন্ড প্রকাশিত হয়, এই বইটির। যেখানে তাঁর জীবনের নানান অভিজ্ঞতার কথা গল্পের আকারে দেওয়া আছে। যদিও প্রায় সমস্ত বিশেষজ্ঞদের মতামত এই বইগুলো ভিদকের নিজের লেখা নয়। অন্য কোন এক বা একাধিক ব্যক্তির লেখা।
    তা এহেন ভিদককে মাথায় রেখেই সৃষ্টি হলো, মঁসিয়ে লিকক্ চরিত্রটি। চরিত্রের বর্ণনা করতে গিয়ে লেখক বলেছেন, "আগে স্বভাব অপরাধী হলেও, এখন আইন মেনেই চলে এবং নিজের কাজের ব্যপারে খুবই দক্ষ"। কেন ভিদকের কথা বলা হয়েছে বোঝাটা খুব কঠিন নয়। স্বাভাবিক ভাবেই এখানে লেখকের নামটা কী সেই প্রশ্নটা মাথায় আসে। লেখক হলেন ফ্রান্সের এমিল গাবরিও (Émile Gaboriau; ১৮৩২-১৮৭৩)। গোয়েন্দা মঁসিয়ে লিকক্ (Monsieur Lecoq) কে নিয়ে সৃষ্টি করলেন 'লা অ্যাফেয়ার দ রুলা ভিজ' (L'Affaire Lerouge; ইংরেজিতে The Widow Lerouge)। প্যারিসের এক সাময়িক পত্রিকায় প্রকাশিত হয় ১৮৬৬ সালে। এই মঁসিয়ে লিকক্ ও ফ্রান্সের 'পুলিশের হয়ে' কাজ করতেন। সরাসরি পুলিশ ছিলেন না। ইংল্যান্ডের লোকেরা এই 'পুলিশ না হয়েও পুলিশ' ব্যাপারটা ভালো চোখে নেননি। আর তারই পাল্টা আখ্যান (counter narrative) বলা যায়, শার্লক হোমস। যিনি পুলিশকে সাহায্য করেন, পুলিশের জোব্বা না চাপিয়েই। হয় পুলিশ না হয় না। এই দুইয়ের মাঝখানে শার্লক হোমসকেসঝুলিয়ে রাখেননি আর্থার কোনান ডয়েল। তাই শার্লক হোমস 'কনসালটিং ডিটেকটিভ'। আর সম্ভবত এই কারণেই 'সাইন অফ ফোর' গল্পে ওয়াটসনের সাথে কথোপকথনে হোমস, লিকক্ এর সম্বন্ধে বলেছিলেন 'miserable bungler' (ভীষণ আনাড়ী)। এভাবেই একটা বৃত্ত সম্পূর্ণ হলো। অর্থাৎ ইংরেজদের ফরাসীদের প্রতি, ভিদক-লিকক্ দের প্রতি মনোভাব আর্থার কোনান ডয়েল, শার্লক হোমসের মুখ দিয়ে বলিয়েছিলেন। এই হলো শার্লক হোমসের 'কনসাল্টিং ডিটেকটিভ' হবার উপাখ্যান।" বলে ফেলুদা থামলো।

    এতক্ষণে ফেলুদাকে বলতে দেখে বেশ ভালো লাগলো। এখানে বলে রাখি, এই গাবরিওর নাম আমার জানা আছে। আমাদের 'ঘুরঘুটিয়ার ঘটনা'য়, যেখানে টিয়া পাখি মুখ দিয়ে বলেছিল সেই বিখ্যাত "ত্রিনয়ন ও ত্রিনয়ন, একটু জিরো'', যা আসলে একটি সংকেত। সিন্দুকের সংকেত নম্বর। সেই ঘটনায়, কালীকিঙ্কর মজুমদার... না, কালীকিঙ্কর মজুমদার নন, তার ছেলে, খুনি ছদ্মবেশী বিশ্বনাথ মজুমদার, ফেলুদাকে সংকেত নম্বর উদ্ধারের পরিবর্তে এই, এমিল গাবরিও-র, বই উপহার বা ঘুষ দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু ফেলুদা শেষ পর্যন্ত নেয়নি বই গুলো। সিধু জ্যাঠার দিকে তাকিয়ে দেখি, উনি সপ্রশংস দৃষ্টিতে ফেলুদার দিকে তাকিয়ে আছেন। উনি বলে উঠলেন, "ব্র্যাভো ফেলু। ব্র্যাভো। সাবাস। তবে তুমি কিন্তু একটা জিনিস বাদ দিয়ে গেলে। এই গাবরিওর আসল সাফল্যের কথা বললে না।"

    কেউ কিছু বলার আগেই সিধু জ্যাঠা বললেন, "গাবরিওর আসল সাফল্য হলো, গোয়েন্দা গল্পে সুপার-স্ল্যুথ (Super-sleuth) এর আমদানি করা। উনিই প্রথম তাঁর লেখায় সৃষ্টি করলেন সুপার-স্ল্যুথ, লিকক্ কে সাহায্য করার জন্যে নিয়ে আসেন পের ট্যাবারেটকে (Pere Tabaret), যিনি একজন বেসরকারি গোয়েন্দা। এইরকম সুপার-স্ল্যুথ হিসেবে এরপর শার্লক হোমসের দাদা মাইক্রফ্ট হোমসকে আমরা পেয়েছি।" এখানে লালমোহনবাবু এমন একটা প্রশ্ন করলেন, তা শুনে সিধু জ্যাঠাও খানিকটা চমকে গেলো। উত্তর যেটা দিলেন, সেটা আমার বেশ মনে লাগলো। লালমোহনবাবু বলে উঠলেন, "আপনাকে কী ফেলুবাবুর 'সুপার-স্ল্যুথ' বলা চলে?" সিধু জ্যাঠা এর উত্তরে বলেছিলেন, "না। 'সুপার-স্ল্যুথ' এর কাজ গোয়েন্দা যদি কোথাও আটকে যায়, যদি তাঁর বুদ্ধি দিয়ে সমস্যার জট না ছাড়াতে পারে, তখন এই 'সুপার-স্ল্যুথ' সেই জট ছাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু আমি তো সেটা করি না। আমি বরং ফেলুকে বই দিয়ে ওর তথ্যভাণ্ডার বাড়াতে সাহায্য করি। অথবা যে তথ্যগুলো ও জানে না, সেই তথ্যের সরবরাহ করি। জট ফেলুবাবু নিজেই ছাড়ায়। দুটো আলাদা।" জট ছাড়াতে ফেলুদার কারো সাহায্য লাগেনা শুনে, মনে বেশ শান্তি লাগলো।

    ফেলুদা আবার বলেলো, "একটা কথা শোনার খুব আগ্রহ হচ্ছে। শার্লক হোমস তৈরী হল। 'কনসাল্টিং ডিটেকটিভ' হলেন। সৃষ্টি হলেই যে সফল হবে, তার কোন মানে নেই। কিন্তু শার্লক হোমস সফল হয়েছিলেন। শার্লক হোমসের সাফল্যের পিছনে, আর্থার কোনান ডয়েল লেখা সহজ সরল ভাষার যেমন বুনোট আছে। আছে কিছু দুর্দান্ত ভাবনা-চিন্তা। বাস্তব আর বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধান পদ্ধতি। আর আছে চরিত্রের আকর্ষণ করার ক্ষমতা। এর বাইরেও যে কিছু আছে সেটা আমার জানা নেই। 'জ্যাক দ্যা রিপার'এর সাথে শার্লক হোমসের জনপ্রিয়তার সম্পর্কের কথাও জানা নেই। আপনিই বলে দিন।"

    সিধু জ্যাঠা বলেলেন, "এটাই অনেক ফেলুবাবু, এতোটা অনেকেই জানে না। তবে কোনান ডয়েলের ভালো লেখার সাথে সাথে এই একটি ঘটনারও দায় আছে বলে আমার মনে হয়। অবশ্য শুধু আমার নয়, বহু গবেষকেরই ধারণা বলে আমার ধারণা। আছে। আছে। নিশ্চিত ভাবেই আছে। তাহলে শোন, শার্লক হোমসের প্রথম গল্পটা ছাপা হয়েছিল, ১৮৮৭ সালে। 'বিটন’স ক্রিসমাস অ্যানুয়াল’-এ, আর তার নাম ছিল ‘অ্যা স্টাডি ইন স্কারলেট’। প্রসঙ্গত এখানে বলে রাখি, এই উপন্যাসটির নাম প্রথমে, 'অ্যা ট্যাঙ্গেলড স্কিন' (A Tangled Skin) ভাবা হয়েছিল। আর সেখানে বলা ছিল, শেরিনফোর্ড হোমসের বয়েস ৩৩ বছর। পরে অবশ্য নাম বদল করে দেওয়া হয়, 'অ্যা স্টাডি ইন স্কারলেট (A Study in Scarlet)। বুঝতেই পারছো, শার্লকের (Sherlock) নাম প্রথমে শেরিনফোর্ড (Sherrinford) রাখা হয়েছিল। নাম অবশ্য একবার শেরিংটন হোপও (Sherrington Hope) ভাবা হয়েছিল। ভাগ্যিস তা হয়নি। অবশ্য এই বয়সের ব্যপারটাও বাদ গেছিল। তা যা বলছিলাম, সেই উপন্যাসটি অসাধারণ চমকপ্রদ কোন সাফল্যের স্বাদ পায়নি। দ্বিতীয় গল্প 'দ্যা সাইন অফ দ্যা ফোর' ছাপা হয় ১৮৯০ সালে, 'লিপিনকট মান্থলি' ম্যাগাজিনে। তৃতীয় গল্প 'এ স্ক্যান্ডাল ইন বোহেমিয়া'। আবার প্রকাশক বদলে গিয়ে এবার 'স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন', জুন ১৮৯১। সঙ্গে সিডনি প্যাজেটের ছবি। ব্যস্, আর ফিরে তাকাতে হয়নি। তৈরী হলো ইতিহাস।

    প্রথম আর দ্বিতীয় গল্পের মধ্যে হয়ে গেছে সেই কুখ্যাত সিরিয়াল কিলিং 'হোয়াইটচ্যাপেল মার্ডার'
    আর তার সাথে সাথেই উঠে এলো 'জ্যাক দ্যা রিপার' এর নাম। অধরা রইলো 'জ্যাক দ্যা রিপার'।
    জনসাধারণের কাছে বার্তা পৌঁছাল, সমস্ত ক্ষমতার ব্যবহার বা কখনো কখনো অপব্যবহার করেও, রাষ্ট্র সবসময় অপরাধীর নাগাল পায় না। সুতরাং প্রয়োজন হলো একজন অতিমানবের। যার কাছে অধরা কিছুই নেই। তাই, জন্ম নিলেন শার্লক হোমস। অতিমানব।"

    মনে মনে ভাবছিলাম, কি অদ্ভুত না? কিন্তু সত্যিই কি তাই? না কি সমাপতন? আর মানুষ এই নতুন থিওরির সৃষ্টি করেছে। আমার মাথা গুলিয়ে যাচ্ছিল। ফেলুদার দিকে তাকিয়ে দেখি, ও চোখ বুঁজে, কপালের উপর তিনটে ভাজ ফেলে শুনে চলেছে সিধু জ্যাঠার কথা। ও কি ভাবছে? আমার মতোই ভাবছে? নাকি অন্য কথা ভাবছে? অন্য ভাবে ভাবনা চিন্তা করছে। তবে মাথায় আরেকটা প্রশ্ন এলো, এই গল্পে শার্লক হোমসের বয়স প্রথমে রেখেও পরে বাদ গেছিল। ১৮৮৭ সালে তেত্রিশ বছর বয়স মানে, শার্লক হোমসের জন্ম ১৮৫৪ সালে হয়। কিন্তু আর কখনোই কি হোমসের বয়সের ব্যপারে লেখেননি কোনান ডয়েল? পরে ফেলুদাকে প্রশ্নটা করে জেনেছিলাম। আছে। সেটা এখানেই বলে রাখি। ওনার শেষ 'কেস' ছিল 'হিস লাস্ট বো' যা ১৯১৪ সালের পটভূমিকায় লেখা, সেখানেই বলা ছিল, শার্লক হোমসের বয়স ষাট বছর। সুতরাং জন্ম সেই ১৮৫৪ সালেই। ফেলুদা আরো বলেছিল, যদিও বইয়ের কোথাও লেখা নেই, তবু হোমসের অনুরাগীরা ৬ ই জানুয়ারি ওনার জন্মদিন হিসেবে পালন করেন।

    "শার্লক হোমসের গল্পে আরেকটা খুব গুরুত্বপূর্ণ জিনিস এসেছে। সেটা কী বলতো তপেসবাবু? তুমি যেমন, ফেলুর 'স্যাটেলাইট' সেইরকম বাকি 'স্যাটেলাইট'রা মানে সোজা কথায় গোয়েন্দাদের সহকারীরা। কোনান ডয়েল সৃষ্টি করলেন শার্লক হোমসের এক বন্ধুকে মানে, ডঃ ওয়াটসনকে। যিনি হবেন গোয়েন্দার সহকারী একই সঙ্গে গল্পের কথক, যার বয়ানে গল্পটা লেখা হবে।

    যদিও এডগার পো তাঁর গল্পেও দ্যুঁপার এক বন্ধুর মুখ দিয়েই গল্পটা বলেছিলেন, গল্পের কথক করেছিলেন, কিন্তু সে সহকারী নয়।

    কোনান ডয়েল বুঝতে পেরেছিলেন, লেখার মধ্যে যতোই বোকা বোকা করে সহকারীকে সাজানো হোক না কেন, সহকারীই হলো গোয়েন্দা গল্পের সাফল্যের আসল কারিগর। ওই বোকা বোকা, ভালো মানুষটার মধ্যেই লুকিয়ে আছে রহস্যের আসল চাবিকাঠি। তুমি হয়তো ভাবছো, কিভাবে? গোয়েন্দা গল্পের মধ্যে কি তাহলে সহকারীর একটা লুকানো ভূমিকা আছে? আমি বলবো, হ্যাঁ আছে। অবশ্যই আছে।

    শার্লক হোমস পরবর্তী লেখা, প্রায় সব গোয়েন্দা গল্পে একজনের উপস্থিতি অবশ্যম্ভাবী, আর সে হল সহকারী। কোন অপরাধী নেই এই রকম গোয়েন্দা গল্পও আছে, কিন্তু সহকারী ছাড়া প্রায় কেউ গোয়েন্দাগিরি করতে আসে না। সহকারীরা অধিকাংশই 'ভালো' মানুষ, সাহস, তীক্ষ্ম বুদ্ধি এবং বিশ্লেষণের ক্ষমতা, কম। লেখক জ্যাক লিকক এদের বলেন "Poor nut" (আনাড়ী ও অনভিজ্ঞ)।

    এবার গল্পের মধ্যে লেখক প্রতি মুহূর্তে কথায়-কাজে গোয়েন্দা-সহকারীর তফাত দেখিয়ে, গোয়েন্দার সম্বন্ধে পাঠকের মনে সম্ভ্রম জাগিয়ে তোলেন। তখন আর আমাদের মনে গোয়েন্দার প্রতিভা আর পারদর্শিতা সম্বন্ধে সন্দেহের অবকাশ থাকে না। সাধারণত সহকারীর বয়ানেই গল্প এগোতে থাকে। কথক।

    সহকারীর ভূমিকা কি কেবলমাত্র গল্পের ধারাবিবরণের মধ্যেই সীমাবদ্ধ?

    না কি গল্পের মধ্যে তার ভূমিকা আরো কিছুটা লুকানো অবস্থায় থাকে? গোয়েন্দা গল্পের শর্ত পালন করতে গেলে তথ্য-সূত্র সব পাঠকের কাছে জিগ-স-পাজলের (jigsaw puzzle) মতো করে দিয়ে দেওয়াটাই রীতি। তাহলে? সহকারীকেই কেন গল্পের ভাষ্যকার করা হয়? গোয়েন্দা যদি গল্পের ভাষ্যকার হয়, তাহলে অসুবিধা কি?

    সমস্যার সমাধানের বিশ্বাসযোগ্য এবং বুদ্ধিগ্রাহ্য সূত্র বা হদিস পাঠকদের সামনে আগেই প্রকাশ করে দেওয়ার কথা। হোক না তা ছড়ানো ছিটানো অবস্থায়। এলোমেলো হলেও গল্পের মধ্যে ভুল সূত্রের (red-herring) মধ্যে দিয়ে সমস্ত সূত্র দেওয়া থাকে। কিন্তু গোয়েন্দাই গল্পের মূল ভাষ্যকার হলে, গোয়েন্দা যদি উত্তম পুরুষে গল্পের বিবরণ দিতে থাকে, তাহলে তার মুখ দিয়ে এমন কোন তথ্য পাঠকের কাছে চলে যেতে পারে, যা গল্পের চমকে ব্যঘাত সৃষ্টি করতে পারে। সেক্ষেত্রে পাঠক আগেই সব জেনে যাবে, যা গোয়েন্দা জানে। অর্থাৎ গোয়েন্দার 'মাথায় কি চলছে' তা পাঠকের কাছে পৌছেঁ যাবে আগেই। সুতরাং গোয়েন্দার 'মাথার খবর' আটকাতেই সহকারীকে টেনে আনা।

    এখন এই এলোমেলো, ছড়ানো ছিটানো সূত্রের থেকে, ভুল সূত্রের মধ্যে থেকে সমস্ত টুকরো সাজিয়ে ছবিটা স্পষ্ট করাই, গোয়েন্দার কাজ। এখানেই কাজে লাগে তার পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা, বিশ্লেষণের ক্ষমতা। আর সহকারীর কাজ হলো সমস্ত সূত্র পাঠকদের কাছে তুলে ধরা। এখানেই সহকারীর প্রয়োজনীয়তা।

    কিন্তু, শুধু কি এটাই কারণ? আর একটু বিষদ ভাবে ব্যাখ্যার প্রয়োজন। গোয়েন্দা গল্পে লড়াইটা হয় দুভাবে। একটা চলে গল্পের মধ্যে, যেটা সবাই পড়ছি। গোয়েন্দার সাথে অপরাধীর। অন্য আরেকটা লড়াই চলে, বইয়ের বাইরে, অদৃশ্যভাবে। লেখকের সাথে পাঠকের। গোয়েন্দা দ্বন্দ্ব যুদ্ধে জয়ী হবার পরেই, সে হয়ে ওঠে নায়ক। পাঠকদের মনে জাগে সম্ভ্রম, শ্রদ্ধা। অন্যদিকে পাঠক অপরাধীকে ধরতে না পারলেও হতাশ হয়ে যায় না। লেখকের কাছে পরাজিত হয়েও বরং লেখকের প্রতি গড়ে ওঠে ভক্তি, ভালোবাসা।
    কারণ, পাঠক নিজেই হয়ে ওঠে গোয়েন্দার সহকারী। পাঠক নিজেকে সান্ত্বনা দেয় এই দেখে, সহকারী যখন অকুস্থলে গোয়েন্দার পাশে থেকেও সব কিছু বুঝে উঠতে পারছে না আগে থেকে, যতক্ষণ না সবটা তাকে বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে, সুতরাং তার এই না বুঝতে পারা বা না ধরতে পারা, একটা ভুলই, অমার্জনীয় কিছু নয়, বোকামিও না। বরং স্বাভাবিক। এটাও একটা বড়ো কারণ, পাঠকদের সান্ত্বনা দেবার উদ্দেশ্যেও সহকারীদের টেনে আনা হয়। সচেতন অথবা অবচেতন মনে, গোয়েন্দা গল্পে সহকারীদের সৃষ্টি এই কারণেই। এবার যদি নিজের কথা বলতে হয়, তাহলে বলতে পারি, আমি এখন আর গোয়েন্দা গল্প পড়তে পড়তে অপরাধী ধরার জন্যে ছুটে চলি না। খালি গোয়েন্দা গল্প পড়ার রোমাঞ্চটা অনুভব করি। ছুটতে গিয়ে, অপরাধী ধরতে গিয়ে গল্প পড়ার যে অনুভূতি সেটাকে আর নষ্ট করতে চাই না।

    আর তাছাড়া গোয়েন্দা গল্পের মধ্যে লেখক কি সত্যিই সমস্ত সত্যি, সমস্ত তথ্য জানিয়ে দেন? আমাদের স্বাভাবিক অভিজ্ঞতা কি বলে? বরং এর উল্টো। গোয়েন্দা গল্পে দেখা যায় একদিন ভোরে বা দুপুরে গোয়েন্দা তার ঘরে নেই। সহকারী গোয়েন্দার অপেক্ষায় এ ঘর ও ঘর করছে। তারপর, দিনের শেষে ক্লান্ত হয়ে গোয়েন্দা, ঘরে ফিরে আসে। তাকে যখন সহকারী, সারাদিনের ব্যপারে প্রশ্ন করে। তখন অবধারিত ভাবে গোয়েন্দা হেঁয়ালি করে একটা উত্তর দেয়। অথচ গল্পের শেষে দেখা যায়, সেই দিনই আসল তথ্য গুলো গোয়েন্দার হাতে এসে পড়েছে। তাহলে? শর্ত মেনে গোয়েন্দা গল্প কোথায়? নেই যে তা নয়। আছে। আলফ্রেড হিচককের লেখা 'সলভ দেম ইয়োরসেলভ মিস্ট্রিজ' এ (Solve them yourself mystries)। যেখানে লেখক, তার গোয়েন্দার সাথে পাল্লা দেবার আহ্বান করেছেন পাঠকদের। হ্যাঁ, নারায়ণ সান্যালের 'কাঁটা সিরিজ' এও এই ধরণের আহ্বান আছে বটে।"

    আমার মাথা এখন সত্যিই বনবন্ করে ঘুরছেই বটে। গোয়েন্দা গল্প আমিও পড়েছি, কিন্তু এমন ভাবে এই সব নিয়ে ভাবিনি। আমার বয়স অল্প, কিন্তু বাকি সবাইও কি আদৌ ভেবেছে এমন করে। কজন আর গোয়েন্দা গল্প নিয়ে এভাবে কাটাছেঁড়া করতে বসে? সাধে কি আর ফেলুদা সিধু জ্যাঠার কাছে কথা বলতে, কথা শুনতে আসে। ঠান্ডা হয়ে যাওয়া চায়ের কাপে সুরুত করে একটা চুমুক মেরে, পরের রাউন্ড শুরু করলেন সিধু জ্যাঠা,

    "তবে ত্রৈলক্যতারিনীর ঘটনাই প্রথম নয়, তার আগেও যে কলকাতায় 'সিরিয়াল কিলিং' এর ঘটনা ঘটেছিল, সেটা জানা আছে কি ফেলুবাবু?" এবার প্রশ্নটা সরাসরি ফেলুদাকেই করলো সিধু জ্যাঠা।

    "তোমরা জানো কিনা জানিনা, এই কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উৎপত্তির কারণও যে একটা 'সিরিয়াল কিলিং', সেটা জানো কি?" আমি তো জানিনা, কিন্তু ফেলুদা কি জানে এই ঘটনার কথা? ডান দিকে তাকিয়ে দেখি, ফেলুদা একটু পেছন দিকে কাত হয়ে বসেছিল। শরীরটাকে একটু সামনের দিকে এগিয়ে বসতেই বুঝতে পারলাম, ও ঘটনাটা জানে না আর একটা দুর্দান্ত গল্পের সন্ধানে ও ভিতরে ভিতরে ভীষণভাবে এক্সাইটেড হয়ে আছে। সিধু জ্যাঠা বললেন, "প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের নাম জানা আছে? এই প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ই ত্রৈলক্যতারিনীর ঘটনা নিয়ে দুটো গল্প লিখেছিলেন, তাঁর 'দারগার দপ্তর' এ..."

    এই প্রিয়নাথই কি ফেলুদার সেই দারোগা প্রিয়নাথ? আমার মাথায় প্রশ্নটা এলো। "এটাও আমার একটা প্রশ্ন ছিল। নামটা শোনা, পদবীটা মনে ছিল না। উনিও কি শার্লক হোমসের গল্প বাংলায় লিখেছিলেন? যতদূর মনে পড়ছে, উনি তো ওনার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা লিখতেন।" ফেলুদা, সিধু জ্যাঠার কথা থামিয়ে বলে উঠলো।

    সিধু জ্যাঠা মাথা নেড়ে একটা কিছু বললেন, মুখে রসগোল্লা থাকার জন্যে বোঝা গেল না। তারপর প্লেটের দিকে হাত দেখিয়ে আমাদের বাকি রসগোল্লা গুলো খেয়ে নিতে বললেন। খিদে যে পাচ্ছে না, তা নয়। ঘড়িতে এখন সোয়া একটা বাজে। কিন্তু এইসব কথা তো রোজ রোজ আলোচনা হয় না। তাই পেটের খিদের থেকে এই মুহূর্তে মনের খিদের পরিমাণ অনেক বেশি মনে হলো। লালমোহন আজ শুধুই শ্রোতা। ওঁর খাতায় অনেক কিছুই নোট হচ্ছে। পরে সময় মতো গল্পে ব্যবহার করবেন।

    ঢকঢক্ শব্দ করে এক গ্লাস জল খেয়ে সিধু জ্যাঠা বলতে শুরু করলেন, "প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় (১৮৫৫-১৯৪৭), কলকাতা গোয়েন্দা পুলিশের এক দক্ষ আধিকারিক ছিলেন, ১৮৭৮ থেকে ১৯১১ সালে অবধি। তেত্রিশ বছর তিনি গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছিলেন। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায়ের নাম এলেই অবশ্যম্ভাবী এসে পরে 'দারোগার দপ্তর' এর নাম।

    ওনার লেখা 'দারোগার দপ্তর' সেই সময় তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের প্রথম ধারাবাহিক রচনা হিসেবে আজও 'দারোগার দপ্তর' এক বিশিষ্ট স্থান দখল করে আছে গোয়েন্দা সাহিত্যের দুনিয়ায়। সময়টা লক্ষ্য করবে ফেলু, বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যের সবে হাতে খড়ি হচ্ছে সেই সময়। সেই হিসেবে প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় কে বাংলা ক্রাইম ফিকশন কাহিনীর 'জনক' বলে অভিহিত করা যেতেই পারে। 'দারোগার দপ্তর' এর অধিকাংশ গল্পই মূলত পুলিশি প্রক্রিয়ার বিশদ বিবরণ। এখানে না আছে অপরাধীর মনস্তাত্ত্বিক জটিলতার বিশ্লেষণ, না আছে পরবর্তী কালের গোয়েন্দাদের তাৎক্ষণিক বিচার বিবেচনার পরিচয়। সেই সময়ের বিদেশী লেখকদের থেকেও তার লেখা বরঞ্চ অনেক বেশী প্রভাবিত হয়েছে ভিদকের থেকে, 'মেমোয়ার দ্যা ভিদক' এর থেকে। পুলিশের চোখে অপরাধের ঘটনাবলীর বিবরণ। যান্ত্রিক বিবরণ।

    তবে, 'দারোগার দপ্তর' এর ১৬৮ তম সংখ্যার গল্প, 'চূর্ণ প্রতিমা (পাগলের অদ্ভুত পাগলামি)', যারা শার্লক হোমসের 'অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্য সিক্স নেপোলিয়ন' গল্পটি পড়েছে মিলটা বুঝতে পারবে। শার্লক হোমসের গল্পটিতে, নেপোলিয়নের ছটি মুর্তি, লুকোনো মুক্তো আর মূর্তিগুলিকে ভেঙে ফেলা হয় মুক্তোর খোঁজে, এই প্লটটি প্রিয়নাথের গল্পে দেশীয়করণ হচ্ছে, মুক্তোর বদলে বড় হিরে থাকছে, নেপোলিয়নের মুর্তির বদলে শিব-শ্যামার মুর্তি থাকছে ছ'টি, যার শেষটি প্রিয়নাথ নিজে কিনেছিলেন বলে লেখা আছে। প্রিয়নাথ মুখোপাধ্যায় কাহিনীটি লিখছেন ১৩১৩ বঙ্গাব্দে অর্থাৎ ১৯০৬-০৭ সাল নাগাদ। শার্লক হোমসের গল্পটি বইতে সংকলিত হয়েছে ১৯০২-০৩ সাল নাগাদ, অনুমান করে নেওয়া যায় 'স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিন'-এ প্রকাশিত হয়েছে আরোও কিছু আগে। সুতরাং এই গল্পটি সম্ভবত প্রিয়নাথ বাবু পড়ে থাকবেন। এবং তার বঙ্গীয়করণ করেছেন। এই প্রসঙ্গে বলি, আরো দুটি গল্পের মধ্যে শার্লক হোমসের উপস্থিতি রীতিমতো পরিষ্কার, 'স্ত্রী কি পুরুষ?' এর সাথে 'দ্যা অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্যা ইঞ্জিনিয়ার্স থাম্ব আর 'পিতৃশ্রাদ্ধ' এর সাথে 'দ্যা অ্যাডভেঞ্চার অফ দ্যা কপার বীচেস' এই দুটো গল্পের 'সেট' এক সাথে পড়লে মিল চোখে পড়বেই।

    তা, এবার কলকাতা পুলিশের এই গোয়েন্দা বিভাগের উৎপত্তির ঘটনাটা শোনো। ১৮৫৬ সালে তৎকালিন গভর্নর-জেনারেল, লর্ড ডালহৌসি, কলকাতা পুলিশের স্থাপন করেন। এস. ওয়াচোপ (S. Wauchope) ছিলেন তখন কলকাতার প্রধান বিচারপতি, তাকেই প্রথম পুলিশ কমিশনার হিসাবে নিয়োগ করা হয়। পরবর্তী কালে, ভি. এইচ. সালচের আমলে, ১৮৬৬ সালে, 'কলকাতা পুলিশ আইন এবং কলকাতা উপ-পৌর পুলিশি আইন' এর সৃষ্টি। প্রসঙ্গত বলি, প্রথম আধুনিক পুলিশি ব্যবস্থা ইংল্যান্ডে বা লন্ডনে শুরু হয় ১৮২৯ সালে, স্যার রবার্ট পিলের অধীনে। পুলিশের প্রাথমিক কাজ ছিল কেবলমাত্র পাহাড়া দেওয়া। ইংল্যান্ডে পুলিশের বিখ্যাত গোয়েন্দা বিভাগ 'স্কটল্যান্ড ইয়ার্ড' খোলা হয় ১৮৪২ সালে। টানা এক সপ্তাহ একটি মৃত্যু রহস্যের কিনারা না করতে পেরে, আটজন সদস্যের একটি আলাদা বিভাগ খোলা হলো, যা আজ সারা পৃথিবী জুড়ে সমাদৃত।

    ১৮৬৮ সালে ১লা এপ্রিল, রোজ ব্রাউন (Rose Brown) নামের এক মহিলা খুন হন কলকাতার রাজপথে। যা 'আমহার্স্ট স্ট্রিট হত্যাকাণ্ড' হিসেবে বিখ্যাত বা কুখ্যাত৷ সেই একই বছরে নিহত হন আরও পাঁচ মহিলা, যাদের তিনজন ছিলেন গণিকা৷ রহস্যের কিনারা করতে এবং খানিকটা চাপের মুখে কলকাতার তৎকালীন পুলিশ কমিশনার স্টুয়ার্ট হগ প্রতিষ্ঠা করলেন আলাদা একটি ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্ট। ২৮ শে নভেম্বর, ১৮৬৮। তবে হগ সাহেব শুধুমাত্র পুলিশ কমিশনার ছিলেন না, একই সঙ্গে কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যানও ছিলেন। কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি একটি বাজারের প্রতিষ্ঠা করেন, একসময় যা 'হগ মার্কেট' নামে পরিচিত ছিল, এখন যাকে আমরা 'নিউ মার্কেট' নামে চিনি। হগ সাহেবের কথায় আরেকটা দারুন গল্পের কথা মনে পড়ে গেল।" সিধু জ্যাঠা চায়ের কাপে একটা চুমুক দিতে একটু থামলেন।
    বাবাহ্ এতো গল্পের মধ্যে গল্প, তার মধ্যে আবারো গল্প। তবে সিধু জ্যাঠার কাছে গল্প শুনতে ভালোই লাগে। শুধু গল্প নয়, সত্যি গল্প।

    "দিল্লি থেকে কলকাতা আসার পথে একবার হগ সাহেবের কিছু মালপত্র চুরি যায়। খোদ পুলিশ কমিশনারের জিনিস চুরি! চারিদিকে হইচই পরে গেল। শেষে সেই চোরাই জিনিসের হদিস পাওয়া গেল, এলাহাবাদে। এলাহাবাদের কোর্ট থেকে আদেশ এলো, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান স্টুয়ার্ট হগ যেন সত্ত্বর কোর্টে গিয়ে সেই জিনিস চিনে নিয়ে, তার সত্ব দাবী করে। কাজের চাপে দুবার নির্দিষ্ট তারিখে কোর্টে পৌঁছতে ব্যর্থ হলে, কলকাতার পুলিশ কমিশনার হগ সাহেবের কাছে এলাহাবাদের আদালতের আদেশ এলো, কলকাতা মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান হগ সাহেবকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে হবে। সে এক কান্ড! বাধ্য হয়ে শেষে কমিশনার হগ সাহেব, চেয়ারম্যান হগ সাহেবকে গ্রেফতারের আদেশ জারি করে এলাহাবাদ নিয়ে যাবার আদেশ দিলেন। শাস্তি স্বরূপ চেয়ারম্যান হগ সাহেবকে যাতায়াতের খরচ নিজের পকেট থেকে দিতে হয়েছিল, আদালতের আদেশে। অভাবনীয় তাই না! অন্তত এখনকার ভারতবর্ষের প্রেক্ষাপটে।

    যাক, হগ সাহেবের গল্প ছেড়ে আবার, কলকাতার নব নির্মিত গোয়েন্দা দপ্তরে প্রবেশ করি চলো। সেই ডিটেকটিভ ডিপার্টমেন্টে এ. ইউনান, তার সুপারিনটেন্ডন্ট এবং আর. ল্যাম্ব, তার ফার্স্ট ক্লাস ইন্সপেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৮৭৩ সালে সেই দফতরের সুপারিন্টেনডেন্টের ভার নেন রিচার্ড রীড (Richard Reid)৷ তবে, ১৮৬৮ সালে, রোজ ব্রাউন হত্যাতদন্তেও মূল গোয়েন্দা ছিলেন তিনিই, রিচার্ড রীড৷ আর এই রীডকেই কলকাতার 'প্রথম ডিটেকটিভ' বলে মনে করা হয়। রোজ ব্রাউন এবং আরও বহু চমকপ্রদ অপরাধের গল্প লিখেছিলেন রীড সাহেব, বইটির নাম ‘এভরি ম্যান হিজ ওন ডিটেকটিভ' (Every man his own detective) প্রকাশিত হল ১৮৮৭ সালে৷ রীড সাহেবের উদ্দেশ্য ছিল অধস্তন পুলিশ কর্মচারীদের অনুসন্ধানের সঠিক পদ্ধতি শেখানো। অধস্তন পুলিশ কর্মচারীদের উদ্দেশ্যেই লেখা। ‘ডিডাকটিভ রিজনিং’ এর সঠিক ব্যবহার করে অপরাধীকে পাকড়াও করা যায় কী ভাবে, তার জন্যে৷ 'ইংরেজ ডিটেকটিভের চোখে প্রাচীন কলকাতা' নামে এই বইটির অনুবাদ করেন, শ্রী পরিমল গোস্বামী ১৯৬৬ সালে। এই রীড সাহেবই আবার সপ্তম এডওয়ার্ড যখন যুবরাজ হিসেবে কলকাতা এসেছিলেন, তার দেহরক্ষী ছিলেন। এই বইটির সাহিত্য গুন হয়তো খুব কিছু নেই, কিন্তু ঐতিহাসিক গুরুত্বকে বাতিল করার উপায় নেই। এই বই দুটোই তুমি ওই বাঁদিকের আলমারির নীচ থেকে তিন নম্বর তাকে বাঁকোণে পাবে ফেলু। ফেলুদা নিজের জায়গা থেকে উঠে বই দুটো খুঁজে পেয়ে, হাতে করে নিয়ে আবার এসে বসলো নিজের জায়গায়।

    সিধু জ্যাঠা হঠাৎ হাসি হাসি মুখে বলে উঠলেন, "তা তুমি হঠাৎ 'সিরিয়াল কিলার' নিয়ে এতো উৎসাহীত হয়ে উঠলে কেন ফেলুবাবু? তুমি কী 'স্টোনম্যান' এর কেসটা নিয়ে স্টাডি করছো?"

    আমি জানি, কেউ এখনো পর্যন্ত না ডাকলেও ও গত কয়েকদিন ধরে স্টোনম্যানের খুন করা যায়গা গুলোতে গিয়ে নিজে থেকেই তদন্ত করছে। একদিন বলছিল এইরকম 'সিরিয়াল কিলারের' একটা কেস হাতে পেলে মন্দ হয় না। ফেলুদার দিকে তাকিয়ে দেখি প্লেট থেকে একটা রসগোল্লা তুলে নিয়ে, কিছু একটা বলে উঠলো আর তারপরেই হাতের রসগোল্লাটা মুখে না পুরে আমার দিকে ছুঁড়ে মারলো আর রসগোল্লাটা দেখি একটা বিরাট পাথর হয়ে আমার দিকে ধেয়ে আসছে। আমি হাত দুটো সামনের বাড়িয়ে একটা চিৎকার করে উঠতেই, হঠাৎ আমার ঘুমটা ভেঙ্গে গেলো। দেখি চারপাশে বেশ কয়েকটা বই ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে আছে, আর তার মাঝে আমি ঘেমে নেয়ে একশা হয়ে শুয়ে আছি। পাশেই সুপ্রতিম সরকারের 'গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার' এর দ্বিতীয় পর্ব, যেখানে স্টোনম্যানকে নিয়ে লেখাটা আছে, একপাশে 'ফেলুদা সমগ্র' আর অধ্যাপক সুকুমার সেনের 'ক্রাইম কাহিনীর কালক্রান্তি' বই তিনটি দেখতে পেলাম।
    যদি ভুলে যাই ঘটনাটা, তাই চট করে লিখে ফেললাম তোমাদের জন্যে। কেমন লাগলো জানাতে ভুলোনা কিন্তু।

    (সময়কাল গুলো একটু ক্ষমাঘেন্না করে পড়বেন, দয়া করে।
    'স্টোনম্যান' ঘটনা ১৯৮৯ সালের জুন থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে হওয়া,
    সত্যজিৎ রায়ের মৃত্যু হয় ১৯৯২ সালের ২৩ শে এপ্রিল,
    মনসুর খানের 'জো জিতা ওহি সিকন্দর' সিনেমাটির প্রকাশকাল ২২ শে মে ১৯৯২,
    'পান্না সুইটস্' দোকানটি খোলে ১৯৯৩ সালে,
    'মেইনল্যান্ড চায়না' রেস্টুরেন্টেটির কলকাতাতে আগমন হয় ১৯৯৮ সালে,
    অদ্রীশ বর্ধনের অনুবাদ ‘শার্লক হোমস সমগ্র’ সটিক, প্রকাশিত হয়েছে লালমাটি থেকে ২০১১ সালে,
    সুপ্রতিম সরকারের 'গোয়েন্দাপীঠ লালবাজার ২' প্রকাশিত হয় ২০১৯ সালে।
    সুতরাং বুঝতেই পারছেন সন-তারিখের এক জগঝম্প জগাখিচুড়ি অবস্থা ... অবশ্য স্বপ্নে সবই হতে পারে তাই না?)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৫ জুলাই ২০২০ | ১৫৩৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • রঞ্জন | 122.180.175.31 | ২৫ জুলাই ২০২০ ১৪:৩২95483
  • টুপি খুললাম প্রলয়বাবু।

    আমি আরও অনেকের মতই গোয়েন্দাগল্পের পোকা। তবে এই বয়সে আমার পোয়ারোর থেকে শার্লক বেশি পছন্দ। অবশ্য মিস মার্পল মন্দ নয়। এবং আমারও এখন অপরাধীর পেছনে ধাওয়া করার চেয়ে গল্পের রস ও একটু নাটকীয়তা পছন্দ।

    আমার মেয়ে লন্ডনে ২২১ বি, বেকার স্ট্রীট তীর্থদর্শন করার আনন্দে দেখে এসেছে।

  • প্রলয় বসু | ২৬ জুলাই ২০২০ ০০:০৯95522
  • রঞ্জন বাবু, অনেক ধন্যবাদ... 

  • গবু | 223.223.129.190 | ২৬ জুলাই ২০২০ ০৮:১৩95534
  • দারুন লাগলো। ইতিহাসকে গল্পের ছলে পড়া, আবার pastiche ধাঁচে - মানিকবাবু থাকলে একটা "জিতে রহো বাচ্চে!" পেয়ে যেতেন মনে হয়।
  • প্রলয় বসু | ২৭ জুলাই ২০২০ ০৬:৫৯95597
  • আপাতত, আপনাদের থেকে পেলেই যথেষ্ট 

    @গবুবাবু

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন