এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আমাদের কথা

  • মন ভালো করা গল্প গুলি

    স্বাতী লেখকের গ্রাহক হোন
    আমাদের কথা | ০৭ মার্চ ২০২০ | ১৭৫১ বার পঠিত
  • আজকাল আর মন খারাপের খবর দেখতে-শুনতে-পড়তে ভালো লাগে না। বয়স বাড়ছে, বড্ড মানসিক অস্থিরতা জন্মায়। হয়তো বা পলায়ন প্রবৃত্তি, ঠিক জানিনা। বড় ভালো লাগে আশার, ভালোবাসার কথা পড়তে, শুনতে, দেখতেও। আসলে আমি স্বপ্ন দেখতে ও দেখাতে ভালোবাসি। আশা করি সব্বাই মিলে মিশে হাতে হাত ধরে খুব ভালো থাকবে। তাই আজকাল হতাশার কথা শুনলেই এড়িয়ে চলি। কিছু সুদিনের গল্প শোনাতেও ভালো লাগে তাই।

    ১. মেয়েটিকে ১৮ হতে না হতেই বিয়ে দেওয়া হয়েছিলো। গ্রাম দেশ, পাড়াপড়শী দের ঘুম হয় না সোমত্থ মেয়ের বিয়ে না দিলে। বিয়ের পর মেয়েটি শ্বশুরবাড়ির ভালোমন্দ নিয়েই মানিয়ে নিয়েছিলো। এক দিন তার বর রাস্তায় তাকে একটি থাপ্পড় মারে কথা না শোনার জন্য। মেয়েটি সেই বর কে পাঁকে পুঁতে দেওয়ার হুমকি দিয়ে এক বস্ত্রে বাড়ি ছেড়ে চলে আসে, আজ সে WBCS ও অন্যান্য সরকারী চাকরির পরীক্ষা দিয়ে চলেছে। খুব তাড়াতাড়িই কিছু একটায় পেয়েই যাবে সেই আশায় দু চোখে স্বপ্ন নিয়ে বাঁচে। মেয়েটির বাবা মা'কে ধন্যবাদ তাকে সব মানিয়ে নেওয়ার কু পরামর্শ না দিয়ে কোলে টেনে নিয়ে নিজের মত থাকার সুযোগ দেওয়ার জন্য।

    ২. "ভালোবাসলে তো অনেক কিছু সহ্য করতে হয় বল?" চুপ করে ছিলাম। সহ্য করা আর একের পর এক ত্যাগ করা যে এক নয় তা আমার বলে দিতে হয়নি এই পড়ুয়া, দুর্দান্ত রেজাল্ট আর দুর্দান্ত মেধার মেয়েটিকে। উচ্চশিক্ষার জন্য বেঙ্গালুরু থাকার দিন গুলিতে সে "ভালোবাসার" খাতিরে নিজের ল্যাব, পড়াশোনা বাদ দিয়ে প্রেমিকের ঘর ঝাঁট দিয়েছে, খাবার বানিয়েছে, প্রেমিক তখন ঠ্যাঙের উপর ঠ্যাঙ তুলে ঘুমিয়ে থেকেছেন বা কোনো বন্ধুদের সাথে পার্টি করতে গেছেন। নিজের স্কলারশিপের টাকায় মেয়েটি এই প্রেমিকের খরচখরচাও যোগাতেন। তারপর যেদিন ছেলেটি একটি অন্য মেয়ের সাথে ঝুলে পড়লেন ফোকটিয়া গ্রীন কার্ডের আশায় সেদিন মেয়েটি নিজের পাঁচ অঙ্কের মাস মাইনের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে ফিরে এলেন নিজের শহরে। কিচ্ছু করতে ভালো লাগতোনা, কোনো কাজে মন লাগতোনা, সময় কাটাবার জন্য রামকৃষ্ণ মিশনে স্বেচ্ছাসেবী হয়ে কয়েক মাস অতিক্রম করে আবার সব ঝেড়ে ফেলে একটি খাসা চাকরি বাগিয়ে নিয়েছেন নিজের ক্ষমতায়। হ্যাঁ, বেঙ্গালুরুর মত মাইনে না থাকলেও শান্তি আছে। নিজের মত বইএর জগতে বাস করেন আর মাঝে মাঝেই বলেন চল বেড়িয়ে আসি। আজ মেয়েটির হাসি তার চোখেও প্রতিফলিত হয়৷

    ৩. চোখের তলায় কালশিটে নিয়ে কাজ করতো মেয়েটি আমার এক পরিচিতর বাড়ি। বেশ কয়েকবার তাকে আমরা বুঝিয়েছি পুলিশে রিপোর্ট করতে, ছেড়ে দিতে অমন অমানুষ "স্বামী" কে। মুখ নীচু করে চোখের জল মুছে আপন মনে নিশ্চুপে কাজ করে যেতো অপুষ্টিতে ভোগা ১৭র মেয়েটি। বছর পাঁচেক বাদে রাস্তায় দেখা। ঝকঝক করছে কষ্টিপাথরের মেয়েটি, মেরুদণ্ড সোজা, নির্ভীক চাউনি। আমায় প্রায় জড়িয়ে ধরে বললো ও দিদি আমি এখন স্টেশনের পাশে রোল চাউমিনের দোকান দিয়েছি। "আর তোর বর?" "লিভার পচে মরেছে হারামজাদা।" প্রথম কোনো মৃত্যুর খবরে বড় শান্তি হলো।

    ৪. রেখার কথা তো আগেই লিখেছি, উত্তর প্রদেশের এক হরিজন পরিবারের গৃহবধূ, কখনোই স্কুলের মুখ না দেখা রেখা আজ ঘরেলু হিংসার যম। মিষ্টি হাসির নরম সরম রেখা কোথাও ডোমেস্টিক ভায়োলেন্সের খবর পেলেই দলবল নিয়ে যখন হনহনিয়ে হেঁটে যায়, আমার মনে হয় কালবৈশাখী ধেয়ে যাচ্ছে। অনপড়, নীচ জাতকি গাঁওওয়ালি পতহু আমায় মুগ্ধ করে, বিশ্বাস যোগায় - আদিশক্তি প্রবলভাবে আছে।

    ৫. বাঘা বাজারে সবজি বেচে মেয়েটি। কত বয়স হবে? ২৩-২৪ । দা'এর এক কোপে থোড় কাটে, বা কুমড়ো। শিরা ওঠা হাত, শক্ত চোয়াল, ঠান্ডা চোখ। কিছু না নেওয়ার থাকলেও একবার অন্তত ওর সাথে দেখা করে আসি আমি। অদ্ভুত ভালোলাগা, জোর পাই আমি মেয়েটাকে দেখলে। ফক্কুরি করা ছেলে ছোকরা গুলো কল্পনার সামনে এসে চোখ নামিয়ে নেয়, ঠাট্টা করার সাহস পায় না। ১২ বছর বয়স বয়স থেকে এই বাজারে একাই সবজি বেচে কল্পনা।

    আসলে শক্তির লয় বা ক্ষয় নেই। কোনো না কোনো রূপে ঘুমিয়ে থাকে। প্রবল ঘর্ষণে জেগে ওঠে প্রাণদায়ী বা প্রলয়ঙ্করী শক্তি।

    আত্মদীপ ভব...
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আমাদের কথা | ০৭ মার্চ ২০২০ | ১৭৫১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 162.158.227.25 | ০৭ মার্চ ২০২০ ১৭:৩৫91266
  • সত্যি মন ভাল করা!
  • বিপ্লব রহমান | ০৮ মার্চ ২০২০ ২১:৫১91315
  • পাঁচটি অনুগল্পই আলাদা করে সঠিক পরিসরে জীবনের গল্প হতে পারে।

    এই সব অদম্য নারীদের সেলাম জানাই।

    আরো লিখুন, স্বাতি রায়।

  • বিপ্লব রহমান | ০৮ মার্চ ২০২০ ২১:৫৩91317
  • বানান ফস্কে গেল,  স্বাতী  হবে। দুঃখিত। 

  • বিপ্লব রহমান | ০৮ মার্চ ২০২০ ২১:৫৩91316
  • বানান ফস্কে গেল,  স্বাতী  হবে। দুঃখিত। 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভালবেসে মতামত দিন