এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  বিবিধ

  • টিকিটের দাম ও আমার থিয়েটারঃ কাটাকুটি খেলা

    শুদ্ধসত্ত্ব ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১০৯৩ বার পঠিত
  • টিকিটের দাম ও আমার থিয়েটারঃ কাটাকুটি খেলা

    থিয়েটারের টিকিটের দাম এখন হাজার টাকায় পৌঁছেছে। যখন থিয়েটারে এসেছিলাম তখন ছিল দশ টাকা। সর্বোচ্চ কুড়ি টাকা। এই যে দাম এত বাড়লো এর নিশ্চই ক্রেতা আছে, তাই বেড়েছে। তাহলে কি আমার আনন্দ পাওয়া উচিত? এই প্রশ্নটা খতিয়ে দেখতেই এই লেখা।

    অনেকদিন আগে যখন জীবনে প্রথম থিয়েটার করতে এসেছিলাম তখন কোনো ধারণাই ছিল না আসলে এই জগতটার সম্পর্কে। এসেছিলাম একটা সাধারণ ধারণা থেকে। ছাত্রজীবনে যে রাজনৈতিক ভাবনা মাথায় ছিল মনে হয়েছিল সেই কথাগুলোর বিনিময়ের একটা মাধ্যম হল থিয়েটার। চলে এসেছিলাম। লেখালিখি, গান, নাচ এ সমস্ত কিছুর চেয়েও অনেক বেশি প্রত্যক্ষ প্রভাব ফেলতে পারে মাধ্যমটা এটাই দেখেছিলাম। এবং কাজ করতে গিয়ে দেখলাম যে ব্যয় ফিল্মের তুলনায় কিছুই না। একটা পত্রিকা সেকালে আমরা করতাম। সেই পত্রিকার বই আকারে এক ফর্মার মাপে ছাপার খরচ ছিল ৬০০ টাকা। এবং ফর্মার মাপের চেয়েও যদিও চেনা ছাপাখানায় আমরা পাতার হিসেবে খরচ দিতাম সে আমলে তাহলেও মোটামুটি ওই খরচ হত। আর আমার অভিনয় করা প্রথম সিরিয়াস থিয়েটারের প্রযোজনা ব্যয় ছিল ১৮ টাকা। তাও আসলে নয়। আমরা বাসে করে একটি কলেজে গিয়েছিলাম বলে যাতায়াত খরচ ছিল সব মিলিয়ে আট টাকা। আর সেই কলেজের একটি ঘরে বেঞ্চি সরিয়ে প্রযোজনাটির অভিনয় হয়েছিল। কোমরে কাপড় বেঁধে ভিয়েতনামের চাষী হয়ে গেছিলাম সহজেই। 

    নাটকটির নির্দেশক আজ মুম্বাইতে খ্যাতিমান বাঙালি অভিনেতা ও প্রশিক্ষক। মীরা নায়ারাদির সিনেমাতে অবভিয়াস চয়েস। অন্যদিকে আমির কিম্বা অমিতাভের সঙ্গে পর্দা ভাগ করেন। প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন জ্যাকি শ্রফ ইত্যাদি বিভিন্ন স্টারেদের সন্তানদের। না, থিয়েটার আর তিনি করেন না। যাই হোক বাকি দশটাকা খরচ হয়েছিল অভিনয়ের পরে কলেজ ক্যান্টিনে বসে কাপের পর কাপ চা খাওয়া এবং ঘুগনি খাওয়াতে। এই একই প্রযোজনা যখন দক্ষিণ কলকাতার মুক্তাঙ্গন মঞ্চে উঠে আসে তখন সব মিলিয়ে খরচ হয়েছিল ৩৮০ টাকা। হ্যাঁ, যথাযথ সেট, কস্টিউম সব মিলিয়েই সেই খরচ হয়েছিল। এমনকি আমরা একটা শো বোর্ডও খাড়া রেখেছিলাম ক'দিন মঞ্চের বাইরে। এই ছিল আমাদের বিজ্ঞাপন। টিকিট যা বিক্রি হয়েছিল সমস্তটাই ছিল চেনাজানার কাছে। এবং চেনাজানার সংখ্যা পরের শো-তে যাওয়ার মধ্যে না বাড়ায় আমরা মুখ থুবড়ে পড়েছিলাম। প্রযোজনার ব্যয় ওঠেনি।

    আমরা তখন ছাত্র। অন্য ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে আমাদের আয় খুব বেশি হলে মাসে পঞ্চাশ টাকা। দলে সদস্য তখন আট জন। তার মধ্যে আমরা চার জন ছাত্র পড়াতাম। আমি সর্বকনিষ্ঠ। আমার আয় ছিল পঞ্চাশ টাকা মাসে। যদিও তারপরের কিছু বছর বাদে আমিই মাসে ক'হাজার টাকাও রোজগার করেছি পড়িয়ে তবুও সে দিন তখনো আসেনি। নিজেদের চলা, পড়াশোনার খরচ সমস্ত কিছু বাঁচিয়েও মঞ্চে থিয়েটার করার অবস্থা আর ছিল না। সারা বছর ধরে আমরা দুটি শো করেছিলাম। দল উঠে যাওয়ার মুখে এসে দাঁড়ালো। আমাদের নির্দেশক থার্ড থিয়েটার করার কথা ভাবতে পারছেন না। বাকিরাও তথৈবচ। নির্দেশক সত্যিই অত্যন্ত বড় মাপের অভিনেতা। অন্তত আজকের বাংলা মঞ্চে যাঁরা স্টার হয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন তাঁদের যে কাউকে তিনি এক গ্লাস জলের সঙ্গে গিলে নিতে সক্ষম। আগে যখন এ কথা বলতাম তখন প্রমাণ ছিল না। ইদানীং সাম্প্রতিক একটি বাংলা সিনেমা দেখে বেরিয়ে আসার সময় সঙ্গের বন্ধুদের বলতে পেরেছিলাম ওইটা ওই অভিনেতা। পাশে বাংলা সিনেমার কিছু বেফালতু স্টার ছিল। তাদের দৃশ্যের পর দৃশ্যে অবলীলায় যেভাবে গিলে নিচ্ছিল সেটা একটা অন্তত পরোক্ষ প্রমাণ হিসেবে থেকে গেল। সিনেমাটি অনেক বিতর্কিত হয়েছে, কিন্তু কেমন হয়েছে সে কথায় আর যাচ্ছি না। প্রচুর বিপ্লবের পরে মূষিকপ্রসব হয়েছে এটুকুই বলতে পারি।

    সে যাই হোক, সেই অভিনেতা/ নির্দেশক তখন যে দলে কাজ করতেন তখন সেখানে রমরমা চলছে। দলের সদস্যরা সকলে হবু ডাক্তার। এমনকি একজনের তখনই একটি নার্সিংহোমের মালিকানা আছে। তাঁরা অবলীলায় শো করে চলেন। আমরা পারি না। সেখানে আমাদের নির্দেশক অভিনেতা মাত্র। অথচ তিনি যে নির্দেশনাও জানেন বা বোঝেন সে কথা বোঝানোর জন্য আমাদের দলটিই সম্বল মাত্র। অতএব মঞ্চের বাইরে তাঁর মন টিকলো না। তিনি আজীবন এটাকেই পেশা হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। নিয়েছেন পেশা হিসেবে। তখন রাস্তাটা তাঁর সামনে বন্ধ। দূরদর্শন ছাড়া অন্যত্র তখন সিরিয়াল হয় না। সিনেমাতে যাওয়া দূর অস্‌ত। আর সিনেমা বলতে যা তাতে তিনি লজ্জাতেও যাওয়ার চেষ্টা করতে পারেন না। আমরা থিয়েটার মঞ্চে করতে না পারি সকলেই কিন্তু একেকজন আগুনখেকো বিপ্লবী। অতএব তীব্র সমালোচনার অভিঘাত তাঁকে সইতে হবে। তিনি একটি চমৎকার মধ্যপন্থা আবিষ্কার করলেন। তাঁর গ্র্যাজুয়েশন শেষ হতেই তিনি এন এস ডি-র পরীক্ষা দিতে চলে গেলেন। পেয়েও গেলেন। পাওয়ার কথাই। এন এস ডি-তে বছর বছর যে সব ছেলেমেয়েরা এখনো যায় এবং তাদের যেভাবে বাছাই করা হয় তাতে প্রচুর গাফিলতি থাকে। অযোগ্যদের তালিকাটা প্রত্যেক বছর বাড়ে মাত্র। এর মধ্যে দিয়েই দু একজন যোগ্য পৌঁছে যান এখনো। তিনিও গেছিলেন।

    এখানে একটু ব্যাক্তিগত কথা বলে রাখি। নইলে এ যোগ্যতা অযোগ্যতাটা ধোঁয়াশা থেকে যাবে। এন এস ডি-র নিয়ম অনুযায়ী শিশিক্ষুদের স্নাতক হতে হবে। একদিক থেকে দেখতে গেলে স্নাতক অন্তত না হলে নাট্যচর্চার বিপুল জ্ঞানভাণ্ডার সত্যিই সামলানো সম্ভব না। স্নাতক স্তর অবধি  যে শিক্ষা পাওয়া যায় তা প্রাথমিক ভাবে তার বোধ বাড়াতে সক্ষম। তবেই সে নাট্যচর্চার জ্ঞানভাণ্ডারকে সামলাতে পারবে। কিন্তু এ তো খাতায় কলমে। সত্যিই স্নাতক স্তরে কি শিক্ষা হচ্ছে? আমার থিয়েটারের অভিজ্ঞতা সব মিলিয়ে তেইশ বছর। এই অভিজ্ঞতা আমাকে একদম পুলকিত করে না। স্নাতক ছেড়েই দিলাম, স্নাতকোত্তরের ছেলেমেয়েরাও যখন আসছে থিয়েটার করতে তখন তাদের জ্ঞানের যে ভয়াবহ অবস্থা আমি দেখেছি ও দেখছি তাতে করে এই ব্যবস্থাটাই আমার হাস্যকর বোধহয়। আর এতে যেটা হয় তা হল যে সমস্ত ছেলেমেয়েরা নানা কারণে স্নাতক হতে পারে না, তার মধ্যে বহু সময়েই অর্থনৈতিক কারণ অতি প্রকট, তারা প্রথমেই বাদ পড়ে যায় এই সিস্টেমেটিক সমৃদ্ধ ব্যবস্থার সুবিধে পাওয়ার থেকে। যদি স্নাতকদের হাল এমনই হয় যেমন আমি দেখছি তাহলে এটা তুলে দিলে কি হয়? যোগ্যতা লড়েই তো প্রমাণ হতে পারে? হবে না। কেন না এন এস ডি-র পরিচালকদের কেউ এ সব নিয়ে ভাবিত না। তাছাড়া গরীবের বাচ্চারা থিয়েটারে এলে তাকে কি বাজার করা সহজ কাজ? তার বদলে উচ্চ মধ্যবিত্ত বা মধ্যবিত্তরা এলে চট কোড়ে বাজার কেন ঈশ্বর তা বোঝানো যায়! ছোট থেকে বুঝে আসছে কী না!! 

    তাহলে এন এস ডি পরিচালকরা কি নিয়ে ভাবেন? ভাবেন তাঁদের টার্মের আয়ু এবং অন্যান্য হিসেব নিয়ে। সেই হিসেবের মধ্যে থাকে প্রচ্ছন্ন লবির সিস্টেম। অমুকের কত ছেলেমেয়ে পেল থেকে অমুক কত সুবিধে পেলেন সেই সব ইক্যুয়েশন কষে তাঁদের খ্যাতির খোঁজ চলে। সেই দেওয়া-পাওয়ার পিরামিডটা এতটাই পরিস্কার দেখা যায় যে, আমার ছাত্রজীবনে দেখেছি এর জন্য ছাত্রছাত্রীরা কী লালায়িত হয়ে জায়গা মতন তেল দেওয়ার খোঁজে থাকে! আর ফাঁকে পড়ে যায় বহু ছেলেমেয়ে, যারা যোগ্য, কিন্তু যোগাযোগের বাইরেই মূলত। তো সেই জালের ফাঁক দিয়ে যে যোগ্যরা ওখানে পৌঁছে যায় তারা বুঝেও যায় যে থিয়েটারের হাল ঠিক কেমন! প্রতিদিন কাছ থেকে ভারতের থিয়েটারের একটি পাওয়ার সেন্টারের যে সব বিষয় আসয় তাদের চোখে পড়ে তাতে করে থিয়েটার কী দিতে সক্ষম এ বিষয়ে খুব বেশি মোহ থাকার কারণ নেই। থাকেও না। তার ফলশ্রুতিতে এঁদের পরবর্তী গন্তব্য অনায়াসেই বদলে যায় মুম্বাইতে। আমার বন্ধুটিরও গিয়েছিল। কিন্তু এর সঙ্গে থিয়েটারের টিকিটের দামের কি সম্পর্ক?

    আজ্ঞে, একটু ব্যক্তিগত বয়ানের মধ্যে দিয়েই সেটা দেখতে চাইছি। থিয়েটারটাকে আগে দেখে নিচ্ছি, যাতে শুধু দামটা দেখলে অন্ধের হস্তিদর্শন না হয়ে যায়! আরেকটু ক্ষমাঘেন্না করে সঙ্গে থাকুন।  সেদিন যখন আমাদের নির্দেশক থিয়েটার মঞ্চে না নিয়ে যেতে পারার দীর্ঘ অবসাদে চলে গেলেন দিল্লীতে তখন চারপাশটা বেশ ঘেঁটে গেছিল। একাংশ আড়ালে বলতে শুরু করলেন এ একেবারে বিশ্বাসঘাতকতা। অন্য অংশ দোলাচলে। তিনি যাবার আগে আমাদের জন্য আরেক নির্দেশক দিয়ে গেলেন। সেই নির্দেশক বর্তমানে সরকারি চাকরির পাশাপাশিই সিরিয়ালের চিত্রনাট্য লিখে থাকেন। কিন্তু থিয়েটার তিনি সেদিনও যা বুঝতেন আজকের চিত্রনাট্যটিও তেমনই বোঝেন। ফলে দলের সিনিয়াররা দ্রুতই বিক্ষুব্ধ হলেন। দল চলা বন্ধ হয়ে গেল। আমার সামনে গোটাটাই ফাঁকা প্রায়। প্রায় বললাম এই কারণে তদ্দিনে একটি তথাকথিত বড় নাট্যদল থেকে ডাক পেয়েছি। সেখানে আশা নিয়ে গেছি কাজ শেখার। কিন্তু শুরুর দলটি ভেঙে যাচ্ছে আর অর্থনৈতিক কারণটা একদমই ফেলনার নয় যখন বুঝছি তখন মাথায় আসছে না কী করে সমাধান করা যায়! নানান উপায় এলো। একটা সমবায় গঠনের কথা ভাবলাম। অনেক ভেবেচিন্তে ক্যাডবেরীর ডিলারশিপ নেওয়ার কথা হল। দোকানঘর খোঁজাখুঁজি করতে করতেই সেই পরিকল্পনা খতম। মানে সকলেই একে একে কেটে পড়লেন। আমি একে সর্বকনিষ্ঠ, তায় সবাই মিলে ব্যবসা করতে গেলে সবার মধ্যে যে সম্পর্ক আবশ্যক তা অবশ্যই ছিল না। আমরা বন্ধু ছিলাম বটে, কিন্তু তা বলে মধ্যবিত্ত পারিবারিক বৃত্তের মধ্যে আপন আপন স্বার্থ দেখার যে শিক্ষা থাকে তার থেকে বঞ্চিত ছিলাম না। তাই পরিবারগুলো জোর দিল আলাদা আলাদা নিজেদের ব্যবস্থা দেখার। একা একা তো সমবায় গড়া যায় না। অতএব মাথায় উঠলো রতন থিয়াম বা হাবিব তনবীরদের মডেল। 

    পরের পরিকল্পনা এলো দূরদর্শনে স্লট জোগাড় করে টেলিফিল্ম বানিয়ে সেই টাকা দিয়ে দল চালানো ও কাজ চালানোর ব্যবস্থা করা। লেগে গেলাম অর্থ জোগাড় করতে। আজ্ঞে, নির্মাণের অর্থ না। সে আমার সাধ্যাতীত ছিল। অর্থ ঘুষের। দিল্লী দূরদর্শনে তখন আজকের এক সর্বভারতীয় রাজনৈতিক দলনেত্রী টেলিফিল্ম বানাতেন। তাঁর এক পরিচিত বলে দাবি করা আমাদের এক দাদা স্থানীয় আমাদের ঘুষের টাকা জোগাড়ে উপদেশ দিলেন। সে অর্থ জোগাড় হলেই নাকি দিল্লী থেকে উনি ঐ নেত্রীর মাধ্যমে অনুমোদন করিয়ে আনবেন। সব ব্যবস্থা হয়ে আছে। এবং তখন জানতাম না যে এটা ঘুষের টাকা। জানতাম প্রোজেক্ট জমা দিতে গেলে এটা এন্ট্রি ফী!! টাকা জোগাড় হল। আজ, কাল পরশু করে একদিন বোঝা গেল যে সেই টাকা গেল কালের গর্ভে। টেলিফিল্ম প্রযোজনার ব্যবস্থায় থিয়েটারের ইতি। এর পরেও চেষ্টা করেছি লোক জুটিয়ে কাজ করার। খুব স্বল্প কাজ করতে সক্ষম হয়েছি। কিন্তু মঞ্চে না, রাস্তা এবং আজকের ইন্টিমেট থিয়েটারের ঢঙ-এ দর্শক-অভিনেতার এক সমতল স্থানে। ধীরে ধীরে সে বন্ধ হয়ে গেল। সহযোগীরা জীবন-জীবিকার তাগিদে সরে সরে গেলেন।

    বড় দলের বড় ক্যানভাসে তখন শিখছিলাম বড় রকমের ছক কষা। আজকে বলতে আর দ্বিধা হয় না যে কাজ ওখানে যা শিখেছি তাতে বাকিদের কোনো হাত ছিল না, বরং অসহযোগিতাই ছিল বেশি। নির্দেশক বিখ্যাত মানুষ। তাঁকে অ্যারিস্টটলিয়ান পোয়েটিক্সের প্লট এবং বেকেটের নাটকের ভাবনা নিয়ে প্রশ্ন করেছিলাম! প্রশ্ন করতে বলেছিলেন তিনি নিজেই। উত্তরে বললেন যে এ সব প্রশ্ন তিনি চাইছেন না। এ সবের জন্য বই-টই আছে। তিনি জেনে বলে দেবেন কোন বইটা পড়তে হবে। বলেননি। বরং আড়ালে বলেছিলেন ছেলে বড় আঁতেল। এবং মজার কথা হচ্ছে আঁতেল নয় এমন সব সঙ্গীরা নাটকের সেট, আলো, শব্দ এ সমস্ত বিষয়ে কিছুই জানার প্রয়োজন বোধ করেনি। যখন একটা আট ফুট বাই ছ ফুটের শো বোর্ড একা কাঁধে করে দক্ষিণ কলকাতা থেকে পায়ে হেঁটে, চক্ররেল ধরে গিরিশ মঞ্চে গিয়েছি রাখতে- তখন তারা সিরিয়ালে অভিনয়ের রাস্তা খুঁজতে টালিগঞ্জে। নির্দেশকের আত্মীয় বলে এ সুবিধে তাদের ছিল। আমার ছিল থিয়েটারের শিক্ষা, তাই এটা জরুরী কাজ বলেই মনে হয়েছিল। সুতরাং সে এক শিক্ষা হয়েছিল বটে। প্রায় একা হাতে সমস্ত সামাল দিয়েছি দিনের পর দিন আর শিখেছি নানান কাজ থিয়েটারের নেপথ্য শিক্ষকদের থেকে। কিন্তু নাট্যচর্চার বিষয়ে কী শিখলাম সেটাই আজকের কথা।

    শিখেছিলাম অর্থ কীভাবে জোগাড় করতে হয়! তা করতে গিয়ে কিভাবে অযোগ্য অভিনেতাকেও দিনের পর দিন মঞ্চে ঠাঁই দিতে হয়। এ কথা বলবো না যে তিনি আমাকেও ঠাঁই দিতে চাননি মঞ্চে, কিন্তু অবস্থা দেখে নিজেই কিছুটা চাতুর্য্যের আশ্রয় নিয়েছিলাম সে ভার এড়াতে। যে নাটকটি হচ্ছিল সেই নাটকটি এক লেখিকার উপন্যাস। তাবড় পত্রিকায় প্রকাশিত। সুতরাং একটি রিভিউ ও অন্যান্য হিসেবে পাকা বাছাই। সে নাটকে একটি দেড় মিনিটের চরিত্রে অভিনয় করতাম ও যাবতীয় নেপথ্যের কাজ সামলাতাম। ওখানেই ছিল আমার উৎসাহ। ওটা জানার জন্যেই বড় দলে যাওয়া। অভিনয়ে বেশি মনযোগ দিয়ে দিলে সে কাজে ঘাটতি হত। তাছাড়া, আমি নিজেও অভিনেতা হিসেবে তখনো বেশ দুর্বলই ছিলাম। বেশ কিছু গুণ আমার আয়ত্বে আসেনি তখনো। তাই এড়িয়ে গেলাম কায়দা করে। এর সঙ্গেই ছিল তাঁদের প্রযোজনায় অর্থ যোগানের বিষয়। স্পনসর দেবার ক্ষমতা বা ডোনেশন দেবার ক্ষমতা আমার ছিলই না। থিয়েটার করবো বলে এমনকি টিউশন করার সময় ছিল না। সর্বমোট তিনটি দলে কাজ করছি একই সঙ্গে। আমি তো সারাক্ষণ এই কাজটাই করি এবং দলগুলো না ওয়ার্কশপ না রেপার্টারি, কোনো ধাঁচের না। অতএব সময়ের সংঘাত দলের সঙ্গে দলের হত না, কিন্তু নিজের সঙ্গে কাজের হত। অতএব অর্থ যোগান দেওয়া প্রযোজনার জন্য আমার পক্ষে সম্ভব ছিল না। পর পর শো-এর টিকিট বিক্রিও অসম্ভব ছিল। টিকিট কেটে থিয়েটার দেখার লোক আমার ধারেপাশে বেশ কমই ছিল। আর যাও বা ছিল তাও চল্লিশ টাকার টিকিট কাটার লোক না। দশ টাকার টিকিট বেচতেই যথেষ্ট পরিশ্রম হত। সুতরাং সেটাও সবটা পেরে উঠতাম না। অবিক্রিত টিকিটের টাকা জোগাড় করে দিতে দম বেরিয়ে যেত। কিছুদিন কাজ করার পরে ছেড়ে দিলাম সে দল। 

    আরো নানান বিষয় নিয়ে লিখতে চাই না, কেন না উদ্দেশ্যটা ঝাল ঝাড়া না। উদ্দেশ্যটা হল যেখান থেকে চলতে শুরু করেছি সেখান থেকে আজকের আয়োজনের ফারাক বোঝা। অতএব আরো কিছু কাদার কথা না বললেও চলবে। তৃতীয় যে দলে কাজ করতাম সেটা মূলত ব্যাঙ্ক কর্মীদের নিয়ে গঠিত। নাট্যকার-নির্দেশক একই মানুষ। মহড়া হত সন্ধেতে এস্প্ল্যানেডের ব্যাঙ্কের মধ্যেই। মহড়ার থেকেও বেশি হত আড্ডা। আড্ডাধারীরা স্বনামধন্য মানুষ সমস্ত। শিল্প জগতে অনেকেই বেশ দিকপাল ছিলেন বা পরে হয়েছেন। আগের বড় দলের একাংশ অভিনেত্রীও আজ বড় পর্দার পরিচিত মুখ। কিন্তু এখানে যেটা ছিল সেটা হল নাট্যবিষয়ক থেকে শিল্প বিষয়ক আলোচনার বিস্তার। নির্দেশক থেকে শুরু করে অন্য আড্ডাধারীরা কামু-কাফকা-বেকেট কিম্বা শেখ্‌নার আলোচক মানুষ। ফলে ধীরে ধীরে অন্য একটা জগৎ একটু একটু করে খুলছিল। কিন্তু নাটকটা হত না তেমন! নির্দেশকের নিজের একটি নাটক নিয়ে অবসেশনে কেটে গিয়েছিল তিনটে বছর। আজকে নাটকটি পুনঃরোমন্থন করলেও একই কথা মনে হয়, এমন কিছু আহামরি নাটক ছিল না সেটা। তবে আরেকটা সমস্যা ছিল। সমস্যা হল অর্থের। নির্দেশক বারো আনা অর্থ যোগান দিতেন। সেই অর্থ দিয়ে ইউনেস্কোর একটি নাটক আমরা করতাম তখন। দুটি চরিত্রে দুজন বয়স্ক অভিনেতা। তাঁরা, কিছুটা পরে বুঝেছি, চরিত্র পেয়েছিলেন বলেই একমাত্র অর্থের কিছু যোগান দিতেন। অতএব সে দলে আমাদের চরিত্রহীন হয়েই থাকতে হত। নাট্যকার-নির্দেশক একদিন আমাদের ফেলে ব্যাঙ্কের চাকরিতে বড় বড় ছুটি নিয়ে মুম্বাই পাড়ি দিলেন সিরিয়ালের চিত্রনাট্য লিখতে। এক বাঙালি নির্দেশক, যিনি আড্ডায় খুব আসতেন, তাঁর সিরিয়ালের চিত্রনাট্য। ইনি বাংলায় লিখতেন, ওখানে হিন্দিতে অনুবাদ হত। জি টিভিতে চলতো সেটা। এখন এর ঠিক উল্টোও হয়। হিন্দি বা ইংরেজীতেও ওয়ান লাইনার আসে মুম্বাই থেকে, টালিগঞ্জে তার থেকে ভাড়ার কলমচিরা চিত্রনাট্য লেখেন। এখানকার গপ্পো লেখকরা বোধহয় কিছুকাল হল মারা গিয়েছেন।

    তো সেই উড়ানের পর দলও উড়েই গেল। এই সময়কাল হল মোটামুটি আগের শতাব্দীর নব্বই দশকের শুরু থেকে প্রায় শেষের দিক। তারপরে থিয়েটারকে একদিন বিদায় জানাতে হল। তার মধ্যে অ্যাকাডেমি পাড়ার চরিত্র বদলে গিয়েছে। নাটক, সিনেমা, কবিতা, ছবির বিস্তৃত আড্ডাখানায় ভিক্টোরিয়ায় বিকেলচর যুবক-যুবতী, কিশোর-কিশোরী এসে বসেছে। গোপনে, ঝোপেঝাড়ে। সঙ্গেই এসেছে বাইকবাহিনী। যৌনকর্মীদের দরাদরির ঠাঁই হয়েছে। দালাল এসেছে। পুলিশ বেশি বেশি করে। গাঁজা থেকে চরস সমস্তই সীমানার মধ্যেই পাওয়া যায় সন্ধান জানলে। মেডিক্যাল রিপ্রেজেন্টেটিভ থেকে অন্যান্য বেসরকারি চাকরির সেলসের ছেলেপুলের ভীড় হয়েছে। মেয়েদেখার একটি আশ্চর্য্য খেলা গড়িয়াহাট, বালিগঞ্জ, শ্যামবাজার মণীন্দ্র ছেড়ে এসেছে অ্যাকাডেমিতে-নন্দনে। এমনকি পুলিশ ট্রেনিং কিম্বা মিলিটারির মাথা কামানোরাও এসেছে। ঝামেলা হয়েছে বহুবার। বদলে বদলে গিয়েছে। নন্দন যেমন উঠতি চিত্রতারকা থেকে চলচ্চিত্রকর্মীদের কাজ দেওয়া-নেওয়ার একটা ঠেক হয়েছিল। অ্যাকাডেমির একলা আড্ডার আলো কমছিল। অনেকেই নন্দনে তখন। থিয়েটার পাড়ার দাদা-দিদিরা পাড়ায় সমবেত হলে শুনতাম একমাত্র কমেডি করলেই লোক খাবে। লোক কি খাবে এই নিয়ে প্রকাশ্যে উতলা হওয়া শুরু হয়েছিল। আগে এটা কয়েকজন চুপি চুপি সেরে নিয়ে বিখ্যাত উপন্যাস বাছতো যেমন, তা আর রইলো না। সকলেই লোক কি খায় জানতে খুব আগ্রহী! ভাবতাম লোকরাক্ষসটি বকরাক্ষসের চেয়েও তাহলে ভয়ঙ্কর বটে! অতএব সে জিজ্ঞাসার উত্তর ছাড়াই মঞ্চে মঞ্চে পটলার পেটখারাপ কি জগুবাবুর হাগু জাতীয় প্রযোজনায় ভরে যেতে শুরু করলো।

    ব্যতিক্রম ছিল। কয়েকটি প্রযোজনা, কখনো কখনো কয়েকটি দল। মাধব মালঞ্চী কন্যা এর মধ্যেও হয়েছে। একটু আগে আগে মহেশ এলকুঞ্চওয়ারের নাটক-ও মোটামুটি। কিন্তু এই সমস্ত মঞ্চ ঘটনার বাঁধ ভেঙেছিল যে, দিকচিহ্ন হিসেবে যাকে নির্দেশ করা যায় সে হল 'দায়বদ্ধ' বলে প্রযোজনাটি। যাঁরা দেখেছেন তাঁদের কিছু বলার নেই, যাঁরা দেখেননি তাঁদের জন্য বলি দু'চার কথা। 'সোনার মাথাওলা মানুষ' কিম্বা 'দুই হুজুরের গল্প' নাটকগুলো এঁরা করতেন তার আগে। অসম্ভব ব্যতিক্রমী কিছু না হলেও যেমন সংবেদনশীল বামপন্থীদের দ্বারা যে সব নাটক সে আমলে হচ্ছে তেমন মোটামুটি। কিন্তু 'দায়বদ্ধ' এদের মতন নয় একদম। এক মধ্যবয়স্ক রোম্যান্টিক ট্রাক ড্রাইভারের গল্প যে এক মহিলাকে কন্যা সন্তান সমেত নিয়ে এসে ঘর বেঁধেছিল। কিন্তু তেমন কিছু আদতে করতে পারেনি। মদে আক্রান্ত হয়েছে। মেয়েকে অসম্ভব ভালবাসে, যে প্রেমিকার পূর্ব সম্পর্কের সন্তান।এর সঙ্গে তার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠতা। সেই ঘনিষ্ঠতা তার মায়ের সন্দেহ ও ঈর্ষার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এই নিয়ে টালমাটাল। রোম্যান্টিক আবহ গড়ে উঠেছে পপুলার হিন্দি সিনেমার মেলোডিয়াস গানে গানে। মূল চরিত্রাভিনেতা অসম্ভব লাউড এবং মেলোড্রামায় ভরিয়ে দিয়েছেন। আর দর্শক হল ভরিয়ে দিয়েছে। শো-এর পর শো জুড়ে। কেন?

    মঞ্চে যা ঘটছিল তখন তাতে কাহিনীর পর কাহিনী অত্যন্ত দুর্বল, আরোপিত ও ন্যূনতম সাহিত্য পদবাচ্য না। একদিকে বিপ্লবের প্যামফ্লেটধর্মী উৎকট নাটক, অন্যদিকে প্রাণান্তকর ভাঁড়ামো। এমনকি নান্দীকারের করা জাতীয় নাট্যোৎসবে বাইরে থেকে আসা নাটকগুলোও সাঙ্ঘাতিক প্রেডিক্টেবল হয়ে উঠেছিল। মনোজ মিত্রের অলকানন্দার পুত্রকন্যা, সুমনের কোরিওলেনাস, নর্মান বেথুন, উষা গাঙ্গুলির কোর্টমার্শাল, মহাভোজ এমন কিছু নাটক এদিক ওদিক আগে বা পরে আসবে সে সময়ে। কিন্তু এগুলো ব্যতিক্রম। তাছাড়া নিষিদ্ধ একটা সম্পর্কের স্বাদকে আন্ডারলাইন করে একটি পত্রিকাগোষ্ঠী তীব্র প্রচার চালিয়েছিল ওই নাটকটি নিয়ে। বহুপঠিত সেই পত্রিকা পড়েই তখন বেশিরভাগ দূরের দর্শক আসতেন কলকাতায় নাটক দেখতে। হ্যাঁ, তখনো আসতেন! কলকাতাতেও বাংলা সিনেমায় অঞ্জন চৌধুরী, স্বপন সাহার যুগ চলছে। শহুরে মধ্যবিত্ত দর্শকেরা হলে যাচ্ছেন না। গ্রামের দিকে ভিডিও পার্লারে তিন ধরণের সিনেমা হয়। একটা পর্নোগ্রাফি, অন্যটা হিন্দি এবং কখনো-সখনো বাংলা। সিঙ্গল স্ক্রিন-ই তখন সব। সেখানে বাংলা সিনেমা চলে এবং লোকজন দেখতে আসেন। কিন্তু তাঁরা কেউই নাটকের দর্শক না। ফলে নাটকের সঙ্গে এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠেনি। নাটকের সঙ্গে তখন কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে সিরিয়ালের।

    জোছন দস্তিদার মহাশয় তাঁর নাট্যগোষ্ঠীর পাশাপাশিই একটি প্রযোজনা সংস্থা খুলেছিলেন টেলিভিশনের জন্য। সেখানে হাতেখড়ি হয়েছিল বেণুদা, খেয়ালিদি, দেবাংশুদার মতন মানুষদের। সিরিয়ালের বাজারে তাঁরা সফলও হয়েছিলেন। সেখানে এক ধরণের কাহিনী উঠে এসেছিল যার প্রাথমিক মডেল ছিল সেই নুক্কড় জাতীয় সিরিয়াল প্রথম দিকের দূরদর্শনের। অথবা পঞ্চাশের বাংলা ছায়াছবি যেখানে মধ্যবিত্ত এবং নিম্নমধ্যবিত্ত পরিসরকে সামনে রেখেই যাবতীয় প্রেম-পরিণয়ের কাহিনী আঁকা হত। অর্থাৎ যাঁরা মূল দর্শক তাঁদের কাহিনীটি কোথাও না কোথাও বিধৃত থাকতো। তাই তার সঙ্গে সংযোগ স্থাপনে অসুবিধে হত না। সেই সব কাহিনী মঞ্চ থেকে উবে যেতে বসেছিল। প্রথম দিকে বিপ্লবের জোয়ারে, পরের দিকে বিপ্লবহীনতার জোয়ারে। এখানে বলা যায় যে আমি অনেকক্ষেত্রে বেশ সুইপিং কমেন্ট করছি। তা করছি বটে! কিন্তু পরিসর ছোট এবং বিষয়টা টিকিটের দাম- তাই একটু লাফ দিচ্ছি। দিতে গিয়ে অন্তত আমার দৃষ্টিভঙ্গীটা পরিস্কার করার চেষ্টা করছি। তো মঞ্চের সেই খালি খালি আবহে নিম্নমধ্যবিত্তের সংকট বাদ দিয়ে, ওটাকে শুধুমাত্র ব্যাকড্রপ করে এল 'দায়বদ্ধ' নাটকটি। সঙ্গে নিয়ে এল সম্পর্কের জটিল টানাপোড়েন। 

    এখানে একটা কথা বলা উচিত যে অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাপপুণ্যের পরে কিন্তু যৌনতা, ক্ষমতায়ন ও তার অন্ধকার নিয়ে নাটক এ মঞ্চে খুব এসে পৌঁছয়নি। এই এল। যাঁরা বুঝে গেছিলেন যে আমরা নাট্যমঞ্চের লোকেরা বিপ্লব শুধু মঞ্চে করি, খুব জোতদার মারি এবং বাইরে সব মারের ক্ষেত্রে মুখ বুজে থাকি তাঁরা অনেকদিন আসছিলেন না। ক্কচিৎ-কদাচিৎ মাধব মালঞ্চী ইত্যাদিতে কেউ কেউ ঢুঁ মেরে যাচ্ছিলেন। সে মডেলটাও বেশ সুগঠিত ছিল তখন। শুনেছি কয়েকজন ব্যাঙ্ক কর্মচারী কিছু টাকা দিয়ে প্রথমে ফান্ড করতেন। অভিনেতা-অভিনেত্রী নির্বাচন হত। প্রযোজনা হত। গ্রুপ থিয়েটারের দলের যে কনসেপ্ট সেটা বোধহয় কাজ করতো না অন্য থিয়েটার-এর ক্ষেত্রে। যাই হোক, দায়বদ্ধ এল যখন তখন বিপ্লবে বীতশ্রদ্ধ দর্শকরা এলেন। নাট্যকার নিজে একটি বৃহৎ সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত অনেকদিন। নির্দেশকও তাই। কল শো প্রচুর হল। শুনেছি প্রভুত উপার্জনও হয়েছে। টিকিটের দাম এর পরেই কিন্তু বাড়লো। 

    আমার যতদূর মনে পড়ে সেইবারেই নান্দীকার জানালেন তাঁদের খরচ খুব বেড়ে যাচ্ছে বলে টিকিটের দাম বাড়াতে বাধ্য হচ্ছেন তাঁরা। নান্দীকার ফেস্টিভ্যালেই হবে। ষাট টাকা হল দাম। আমার মতন অনেকে পেরে উঠলেন না দাম দিয়ে থিয়েটার দেখতে। বাইরে চলে যেতে হল দেখার বৃত্তের। বাকি দলেরাও দাম যাঁদের নাম-ডাক আছে তাঁরাও একে একে বাড়ালেন দাম। পড়াশোনা আমার তেমন হয়নি। খুব অনিয়মিত হয়েছে আর কী! তো সে আমলে আমি শিং ভেঙে বাছুরের দলে। বিশ্ববিদ্যালয়ে গেছি নাট্যশিক্ষা নিতে। দিনের হাত খরচ ছিল দশ টাকা। মেট্রো-অটো চললে কুলোতে পারতাম না। বাস এবং হাঁটা মেলালে যাতায়াতের পরে খাবার খরচ দিনের একবেলার সিকিভাগ থাকতো। বন্ধুদের, বান্ধবীদের প্রবল ভালবাসায় টিকে গিয়েছি কোনো রকমে। নাট্যশিক্ষা করতে হবে বলে বাইরের সমস্ত কাজ ছেড়ে দিয়েছি। চলচ্চিত্রের এবং তথ্যচিত্রের কাজ করি না। টিউশানি নেই। আয়পয় কিসুই নেই। সেখানে ষাট টাকার টিকিট? অতএব বহু প্রযোজনার ঝাল লোকমুখে খেয়ে কাটাতে হয়েছে। তবু তো ভাল, অ্যাকাডেমির গেটে বা নন্দনের গেটে লোকজন চিনতো, করুণা করতো। তাই কিছু হলেও দেখেছি। কিন্তু আমারই অনেক অনেক বন্ধু যাঁরা থিয়েটার করেন উলুবেড়িয়া, রাণাঘাট, সাঁতরাগাছি, সোনারপুর, শ্যামনগর তাঁরা এ পাড়ায় আসতেনও না। যাতায়াতের খরচেই কুলোবে না। নাট্যশিক্ষার ক্লাস শেষ হলে বাড়ি যাওয়া, এই ছিল র‍্যুটিন। পায়ে হেঁটে আসা শুরু করলাম যখন তখন অনেকে আসতে শুরু করলেন। কিন্তু থিয়েটার দেখার উপায় নেই।

    তাহলে কাদের জন্য এ থিয়েটার? যাঁরা অর্থ দিতে পারবেন তাঁদের জন্য। যাঁরা পারবেন না? তাঁদের এখানে ঠাঁই নেই। তাহলে যে গ্রুপ থিয়েটার বলে ছাড় পাওয়া যেত ট্যাক্সে, হলের ভাড়ায়? গ্র্যান্ট পাওয়া যেত যা দিয়ে অনেকেই বাড়ী গাড়ি করেছেন, দলের ছেলেমেয়েটি হারিয়ে গিয়েছে থিয়েটার থেকে- সে সব কেন হত? উত্তর নেই। শ্যামবাজার, হাতিবাগানের থিয়েটার করার জন্য যা সে সবে এঁরা কেউ কোনোদিন যাননি। সব রকমের সুবিধে সবার কাছ থেকে আদায় করে বলেছেন থিয়েটারে পয়সা নেই। কয়েকজন, মাথা মাথা কয়েকজন সমস্তটা খেয়েছে। উচ্ছিষ্ট দিয়েছে আশেপাশের কয়েকটি দলকে। তারা বশংবদ থেকেছে। গ্র্যান্ট থেকে হল পাওয়া সবেতেই যেহেতু এঁদের কথাই শেষ কথা তাই বাকিরাও টুঁ শব্দ করেনি। এই অবস্থা অনেকদিন ধরেই আছে। এর মধ্যেই ছোট সংগঠনগুলোর টিকে থাকার চেষ্টা এবং গ্রুপ থিয়েটারের ভাল থিয়েটার করার আদর্শকে বজায় রাখার চেষ্টা চলেছে।

    চলেছে কী ভাবে! আমার কম বয়সেও বেশ কিছু অঞ্চলে একাঙ্ক নাট্য প্রতিযোগিতা হত। প্রতিযোগিতার কথা শুনে নাক সিঁটকানোর অভ্যাস ছিল বড় দলদের। কিন্তু তার মধ্যেও হত। সেখানে আমি নিজে এমন কিছু নাটক দেখেছি যা গুণমানে কোনো অংশেই মূল ধারার থিয়েটার থেকে কম না। এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে গোর্কির মা থেকে গুলশন-এর মতন প্রযোজনাও আমি দেখেছি। বহু একাঙ্ক নাটক লেখা হত। উৎসাহী বহু মানুষ সে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতেন। নাট্য চর্চার একটি পরিমণ্ডল বজায় থাকতো। প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে তাঁরা প্রযোজনার ব্যয় কমাতে পারতেন। জিতলে আর্থিক পুরস্কারে সমৃদ্ধ হতেন। প্রযোজনা চালিয়ে যাওয়া সম্ভব হত। এই প্রতিযোগিতাগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বহু দল ধীরে ধীরে ভেঙে গিয়েছে। বিশেষ করে মফস্বলের বহু নাট্যদল আর কাজ করেন না। তাতে ক্ষতিই হয়েছে! এঁরা মূল ধারার থিয়েটারে অভিনেতার যোগানদার ছিলেন। বড় দলের বড় নির্দেশকের যখন অভিনেতা তৈরির সময় হত না তখন এঁরা অজস্র অভিনেতা-অভিনেত্রী বানিয়েছেন। আজকের অনেক প্রখ্যাত নাট্যব্যক্তিত্বও এই প্রতিযোগিতা থেকে উঠে এসেছেন। হ্যাঁ, এ কথা সত্যি যে প্রতিযোগিতার মানদণ্ড নির্ধারণ করা যায় না! তাই শিল্পে প্রতিযোগিতা অর্থহীন। কিন্তু সঙ্গে এ কথাও সত্যি যে যে ভুয়ো মানদণ্ডে আমরা অস্কার, নোবেল এই সমস্ত নিয়ে আন্দোলিত হই একই প্রক্রিয়ায় এটাও তো চলতো। তাকে আক্রমণে আক্রমণে বিপর্যস্ত করা গেল আর বাকিদের নিয়ে আহ্লাদিত হয়ে রইলাম এই বা কেমন কথা!

    আমি টিকিটের দামের প্রসঙ্গে এর কথা আনলাম তার কারণ এই ধরণের প্রতিযোগিতায় টিকিট অনেক সময়েই থাকতো না। থাকলেও তার দাম ছিল অসম্ভব কম। দর্শক সংখ্যার আনুকূল্যে লোকসানের সম্ভাবনা কম ছিল। অনেক মানুষ দেখতেন থিয়েটার। সেখান থেকেই তাঁরা তৈরি হতেন মূল ধারার থিয়েটার দেখার জন্য। দর্শক তৈরি করার বড় বড় কথা না বলেও এঁরা পাড়ায় পাড়ায় এক শ্রেণীর দর্শক তৈরি করতে পেরেছিলেন, যাঁদের একাংশ গিয়ে একাডেমি, রবীন্দ্রসদন, শিশির ভরাতেন। সে সব দর্শক এই প্রতিযোগিতার শ্রাদ্ধের সঙ্গে সঙ্গেই উবে গেলেন। ফলে নাটক দেখার যে চোখ, কান দরকার হয় তাও বিলুপ্ত হয়ে যেতে বসেছে।

    বাকি থাকলেন তাহলে কোন দর্শক? ইভেন্টের দর্শক! আজ্ঞে ইভেন্টের দর্শক। কালে কালে এই শহরের মধ্যবিত্তের একাংশের আয় বেড়েছে। বড় অংশের কমেছে। যাঁদের কমেছে তাঁদের বৃহদাংশই আজ ঘর বন্দী। এমনকি মাল্টিপ্লেক্সেও তাঁরা ঢোকেন না। তাঁদের সবেধন নীলমণিটি হল টেলিভিশন। এবং সেই দর্শকের সংখ্যা শহর, মফস্বল আর গ্রাম মিলিয়ে এতটাই বেশি যে টেলিভিশন সিনেমা বা নাটককে বলে বলে গোল দেয়। আগের বিপ্লবাগ্রহী সচেতন রাইটার্স ফেরত, ইস্কুলের মাস্টার, অধ্যাপক নাটকের দর্শকাসন থেকে এমনিতেই কমছিলেন। তার নানা কারণ আছে। রাইটার্সের কেরানি বা বড়বাবু জানেন বিপ্লব একটি চমৎকার সুগন্ধী যা বিদেশে মুখ্যত পাওয়া যায় এবং এখানে নাক টানলে বড্ড বেশি সর্দি হবার আশঙ্কা। তিনি আপিসে ফেডারেশন, দল, প্রোমোশন, শালির বাড়িতে বেড়ানো এ সব নিয়ে মুখ্যত ব্যাস্ত। নাটক ক্কচিৎ কদাচিৎ দেখেন। দেখেন আপিসের অনুষ্ঠানে কেউ কল শো পেলে। অধ্যাপক, ইস্কুল মাস্টার ব্যাস্ত হয়েছেন ছাত্র-ছাত্রী পড়াতে। স্ট্যাটাস বাড়াতে এটাই একমাত্র রাস্তা। কোনো সন্ধে আর ফাঁকা নেই। রাতের দিকে খেতে খেতে কখনো খবর শোনেন, কখনো হিন্দিতে সিরিয়াল দেখেন দামি পোষাক এবং দামি সেটের। ইস্কুল মাস্টার ছুটিতে কাশ্মীর বা কোডাইকানাল এবং অধ্যাপক প্রোমোটার ভায়রার সঙ্গে ব্যাঙ্কক। দলছুট কয়েকজন সব সময়েই থাকে। তাঁরা বাহুল্য এখানে। এর সঙ্গে জুড়ুন বেসরকারি চাকরির ধাক্কা। নব্বই পরবর্তী অর্থনীতিতে শ্রমিকের থোবড়া এমনিতেই বেশ অস্পষ্ট, সঙ্গে আবার সাদা কলারের শ্রমিক হলে তো শ্রমিক বলে বুঝতেই জীবন চলে যায়। চল্লিশ বা পঞ্চাশ হাজারি হলে তো দাসত্বকেই মহান বলে ঢাক পেটানোর মহান উত্তরাধিকার আছেই। সেই ব্রিটিশ উপনিবেশে যেমন হোতো আর কি! বোনার্জি, চ্যাটার্জিরা তো ব্রিটিশ শাসন নেই ভাবতেই পারতেন না তাই না! তো দর্শক কে?

    ওই ইভেন্টের দর্শক! ইস্কুল, কলেজের ছাত্রছাত্রীদের যে অংশ বাপ-মায়ের অনেকটা টাকা হাতখরচ ধন্য তারা বাংলা ভাল করে বুঝতে পারে না। ব্যাণ্ডের গান গাইলে ইংরেজীতে স্ট্রাগল করে। রক গায়। বাদবাকি অংশটা কোনো রকমে মোবাইলের বাড়তি খরচ, টিউশানির পয়সা বাঁচিয়ে একবার মাল্টিপ্লেক্সে মান বাঁচাতে যায়। না হলে চুপি চুপি সিঙ্গল স্ক্রিনে ঢুঁ মেরে আসে এবং ফেসবুকে মাল্টিপ্লেক্সের সামনে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে আপলোডিয়ে সম্মান রক্ষা করে। তারা থিয়েটার জানলো কখন যে আসবে? তাদের বাবা-মা'রা জানলেও এই প্রতিযোগিতার যুগে ছেলেমেয়েদের মাথাতে বাজে বিষয় ঢোকাতে নারাজ। তার বদলে ডান্স বাংলা, ক্রিকেট কিম্বা সারেগামাপা হলে অন্তত কিছু হয়! হ্যাঁ কিছু সচেতন ছেলেমেয়ে আছে বলে শোনা যায়। তারা এত সামান্য যে এখানে খুব একটা বিষয় হয়ে উঠছে না। ইউথ থিয়েটার বলে এক সময়ে ইস্কুল কলেজে যা ছিল তা দলীয় আবর্তেই শেষ হয়ে গিয়েছে। সেখান থেকে যারা থিয়েটার জগতে এসেছিলেন সে সংখ্যাটা বেশ কম। আর একরকম ইউথ থিয়েটার হয়েছে যা বাজার কেন্দ্রিক রাস্তাতেই চলছে, যেমন তাদের বড়রা করছে আর কি! তারা এটাকে নিয়ে ভাবছে। এ বেশ ভাল কথা। তবে সে ভাবনা দানা বাঁধা সমস্যার। কেন না এখান থেকেই মুম্বাই বা দিল্লীর থিয়েটারের এই সেকশনটা চলে গিয়েছে 'নেক্সট বেস্ট থিং' সিনেমা বা টেলিভিশনে। বাজারই যদি হয় তাহলে আর আটকে থাকবে কেন! অতএব বেশিদিন চলার প্রশ্ন থাকে না। বাদবাকি কিছু ছেলেমেয়ে এখানে আসছে সরাসরি টেলিভিশন বা সিনেমাতে যাবার ইচ্ছে নিয়েই। দলের কাজটাও তারা সব সময়ে ঠিক করে করে উঠতে পারে না টালিগঞ্জে ঘোরাঘুরির চক্করে, তো অন্য দলের কাজ কখন দেখবে? অতএব বাকি সেই ইভেন্টের দর্শক।

    এঁরা বেশ প্রিভিলেজড ক্লাস। এঁরা শান্তিনিকেতন গেলে হোটেলে বাউল ডেকে 'ফোক' শোনেন। শহরের মাঝারি সারির মেলা থেকে নানা অনুষ্ঠানে এঁরা আসেন। আসার চেষ্টা করেন। বাড়িতে টেলিভিশন দেখলেও সপ্তাহে একদিন বা মাসে দু দিন এঁরা গাড়ি নিয়ে আসেন। অথবা মেট্রো বা ট্যাক্সিতে আসেন। তো এঁরা যেখানে যাবেন সেখানে পার্কিং ব্যবস্থা ঠিক থাকা বাঞ্ছনীয়। বাড়ির থেকে খুব দূরে যাবেন না। অতএব শহর উত্তর-দক্ষিণ-পূর্ব-পশ্চিমে ভাগ হয়ে গেল। এক জায়গার লোক অন্য জায়গায় যাবেন না। সংখ্যাটা কখনোই বেশি হবে না। আর তাঁরা যাবেন কোথায় ও কেন? যেখানে ইভেন্ট হবে সেখানে যাবেন। থিয়েটারকে ইভেন্ট হয়ে উঠতে গেলে বড় মিডিয়া লাগবে। বিজ্ঞাপন লাগবে। স্পনসর লাগবে। সে সবের রাস্তায় খরচ যথেষ্ট। এখন আর শুধু সাংবাদিককে মদ খাওয়ালে রিভিউ পাওয়া যায় না। বস্তুত সাংবাদিকরা মদ খাবেন বলে লেখেন না। অনেক বড় হাতছানি আছে তাঁদের সামনে। সেখানে আছে কোম্পানির ফুটমার্কের প্রশ্ন, সেখানে আছে সেলিব্রিটি ভ্যালুতে বিক্রির প্রশ্ন। তো এত এত খরচ করে থিয়েটার করতে হলে টিকিটের দাম বাড়বে না? এ থিয়েটার কি আর মধ্যবিত্তদের আছে বাপু? ছিলও কি? শ্রমিক, কৃষক শুধু মঞ্চে এখানে সেজে সেজে আসছেন বহুকাল। দর্শক হিসেবে কদাপি না। বাকি যাঁরা তাঁদের হালহকিকৎ একটা দেবার চেষ্টা করলাম। সুতরাং এই থিয়েটারের টিকিটের দাম বাড়বেই। একে ঠেকানো অসম্ভব। স্বল্প কিছু দল দাম বাড়িয়ে এ কাজ পারবে। বাকি দলগুলো ক্রমশ মঞ্চ ছেড়ে দেবে। সাড়ে ছজন দর্শক নিয়ে শো তো চালানো যায় না। হাতে গোণা কয়েকটি মঞ্চ আছে যেখানে কোনো রকমে এ কলকাতায় থিয়েটার করা যায় মোটামুটি মানের। সে মঞ্চগুলোতে এঁরা দাপাবেন। হ্যাঁ, গ্রুপ থিয়েটারের পোষাক পরেই দাপাবেন। কোথাও তো লেখা নেই গ্রুপ থিয়েটার মানে সস্তার থিয়েটার! সরকার সে ব্যবস্থা বুঝে নিয়েই নানা নিয়মে বদল এনেছে। আলো, সাউণ্ড এ সমস্ত ইক্যুইপমেন্ট পরিবহণে এখন ম্যাটাডোর বা মিনিডোর নিতেই হবে। খরচ এক লাফে অনেকটা বেড়ে গিয়েছে তাই। ট্যাক্সে ছাড় কমানো হচ্ছে দিনে দিনে। অনেক গ্র্যান্ট, বাজেট সমৃদ্ধ দলেদের কোনো সমস্যা নেই। তাঁরা টিকে যাবেন। সরকারেরা তাঁদের দিচ্ছে এবং নিচ্ছে। যাঁরা পাচ্ছেন না তাঁদের প্রসেনিয়ামের আশা ছাড়ার সময় এসে গিয়েছে।

    যে থিয়েটারে আমি এসেছিলাম আর যে থিয়েটার আমি দেখছি এখন তাতে অনেক ব্যবধান। এটাই সত্যি। এখান থেকে আমার থিয়েটারটা আর নেই। সেটা করতে গেলে সম্পূর্ণ অন্য ব্যবস্থা। তার জন্য লোক, আদর্শ, ব্যবস্থা, দর্শক সব আলাদা। তবে সে কথা এ লেখায় নয়। এখনো সত্যি বলতে সে লেখা লেখার সময় আসেনি। ফাঁকা মাঠে পরিকল্পনা বয়ান করে লাভ কী! তেমন লোকদের দেখা পেলে লেখা যাবে আবার। না হলে ইভেন্ট দেখার খেলাকে থিয়েটার বলে ডাকা হচ্ছে দেখা ছাড়া রাস্তা নেই। টিকিটের দাম সংক্রান্ত লেখাটি আসলে যে থিয়েটারের আদত ব্যবস্থার উপর আলোকপাত সে কথা জানাতেই এই লেখা। পণ্ডিতির ফিক্‌র ছেড়ে সাধারণ দেখা থেকে লেখার চেষ্টা করলাম। যদি কিছু পৌঁছয় আপনাদের কাছে তাহলেই অনেক হল!!

    ডিসক্লেইমার ঃ  ** এখানে বেশ কিছু ক্ষেত্রে যাঁকে নিয়ে লিখছি তাঁর বা তাঁদের নাম উল্লেখ করিনি। ভাল বা মন্দ যাই লিখি তা তাঁদের নিয়ে লেখার জন্য লেখা না। এঁরা অনেকেই প্রতিষ্ঠিত, কেউ কেউ প্রয়াত। বিড়ম্বনার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র এই ভাবে লেখাটা লেখা বলে এঁদের আনতে হয়েছে।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ | ১০৯৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • aranya | 154.160.5.25 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:১৫88724
  • হতাশাজনক অবস্থা
  • aranya | 154.160.5.25 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:২২88725
  • লেখাটা পড়তে বেশ ভাল লাগল, ধন্যবাদ শুদ্ধ, নিজের অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেওয়ার জন্য। নতুন ভাবে কিছু করতে পারবেন, আশা করি, কিছু একটা পথ বেরোবে
  • Sibu | 118.23.96.158 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০২:৩৬88726
  • গ্রুপ থিয়েটারের জেন্ট্রিফিকেশন হয়েছে। সবেতেই হচ্ছে এখানে হবে না কেন? মানে ঠেকিয়ে রাখা যাবে কি করে?
  • সুদীপ্ত ভৌমিক | 77.52.130.30 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৪:৩৬88729
  • থিয়েটার, অর্থাৎ প্রসেনিয়াম থিয়েটার, চিরকালই মধ্যবিত্ত, উচ্চবিত্তর মাধ্যম। একসময় তা ছিল বিনোদনের মাধ্যম, তারপরে হলো মননের মাধ্যম - বা আঁতেল-দের মাধ্যম। দর্শক এখন তো কেবল বিনোদনের আশায় থিয়েটার দেখত আসেন না, আসেন "সংস্কৃতির চর্চা" করে সমাজে নিজেকে "শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান" প্রমাণ করতে। আজ এই থিয়েটারের দর্শকের পকেটে পয়সা আছে, তারা "এফোর্ড" করতে পারেন। সুতরাং টিকিটের দাম নিয়ে তাদের খুব একটা মাথা ব্যথা নেই। ষাট টাকা সর্বোচ্চ টিকিটের দাম শুনলে বিস্মিত হন তারা, "মাত্র এই দামে থিয়েটার হয়? ভাবা যায় না!" আর যেহেতু এরাই থিয়েটার দেখেন, তাই টিকিটের মূল্য কম করলেও, দর্শক বেশি হবার সম্ভাবনা নেই। কিছুদিন আগেই দেখে এলাম স্টার থিয়েটারে মাত্র চল্লিশ টাকা টিকিট, হল ফাঁকা! শুনলে হয়ত অনেকেই রেগে যাবেন, কিন্তু মোদ্দা কথাটা হলো, থিয়েটার একটি পণ্য! আর পাঁচটা পণ্যের মতো, তাকেও খদ্দেরের কাছে গ্রহণ যোগ্য করতে হবে। সুতরাং কোন খদ্দেরের কাছে আপনার থিয়েটার আপনি পৌঁছতে চাইছেন, সেটা বিচার করে তবেই পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করুন।
  • aranya | 154.160.226.53 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৫:২৮88730
  • থিয়েটার যদি আর পাঁচটা পণ্যের মতো শুধুই একটা পণ্য হয়, তাহলে সেটা করা কেন? ব্যবসা হিসেবে নিয়ে মুনাফা করা + "শিক্ষিত, সংস্কৃতিবান" হিসেবে ডিরেক্টর ও তার গ্রুপের ইমেজ তৈরী করা ?
    এর বাইরেও নিশ্চয়ই কিছু আছে ..
  • aranya | 154.160.226.53 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৫:৩৭88731
  • ওয়েল, প্রসেনিয়াম থিয়েটার নামক আর্ট ফর্ম-টা ভাল লাগে এবং সেটা নিয়মিত ভাবে দর্শকের সামনে পেশ করতে গেলে জিনিসটাকে পণ্য হিসাবে ট্রিট করা ছাড়া উপায় নেই - এটা অবশ্য কেউ ভাবতেই পারেন
  • শিবাংশু | 127.201.149.234 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৬:১৩88727
  • ভালো লেখা । গত বিশ বছর ঘটনাক্রমের ধারাটি এই রকমই ।

    তবে গিরিশ ঘোষ, অর্ধেন্দু মুস্তোফি থেকে শম্ভু মিত্র, উৎপল দত্তের বিবর্তনও সময়ের ধর্মেই হয়েছিলো। দর্শকের চারিত্র্য বদল হলে মঞ্চও পাল্টে যায় ।এই ব্যাপারটা ঠেকিয়ে রাখা যায়না ।
  • কল্লোল | 125.241.60.42 (*) | ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৭:১০88728
  • কলকাতায় ২৫ পয়সার টিকিটে কেয়া, রুদ্র আর অজিতেশের রাজা অয়দিপাউস থেকে ব্যাঙ্গালোরে ১০০০টাকায় নাসির-রত্নার ডিয়ার লায়ার। সময়টা ১৯৭৩ থেকে ২০১৪। মাঝখানে প্রায় বছর দশেক শতাব্দি, আয়না ইঃ অঙ্গনমঞ্চ দলের সাথে গান গাইতে যাওয়া মাঠে ঘাটে।
    অজিতেশরা নাটক করতেন চাকরী করে। কেউ অধ্যাপক, কেউ ব্যাঙ্কে, কেউ বেসরকারী কোম্পানীতে। আর কেউ কেউ সিনেমা, যাত্রা। আর কেউ কেউ কিছু করতেন না। কিন্তু নাটক হতো, জোরদার হতো। টাকা-পয়সা হতো না। টাকা-পয়সার দরকার ছিলো। ধার দেনা, ধার শোধ না করা ইঃ।
    অঙ্গনমঞ্চের বন্ধুরা প্রায় সকলেই চাকরী, তবে কোনকালেই তারা পুরো মাইনে পেতো না। অত ছুটি কোথায়?
    নাসিররা নাটক করতে করতে ফিল্মে, ফিল্ম করতে করতে নাটক। তবে হিন্দি বা ইংরাজিতে। সর্বভারতীয় বাজার। মটলীকে নাটক করতে ডাকলে খরচ - ৪ লাখ, নাসির ছাড়া, ৭ লাখ নাসির সমেত।
    কেনো এসব লিখলাম কে জানে।
    হ্যাঁ, আপোষ। কোথাও না কোথাও আপোষ করতে হয় সকলকে।
  • শুদ্ধ | 113.24.87.1 (*) | ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ ০৮:১২88732
  • প্রথমেই সকলকে ধন্যবাদ জানাই মতামতের জন্য। হ্যাঁ, থিয়েটার তো জেন্ট্রিক্লাসেরই ছিল, আছেও তাই শহরাঞ্চলে। মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলে এর ব্যাতিক্রম এখনো কিছু টিকে আছে। কিন্তু টিকেই আছে। বড় ধরণের বিকল্প হিসেবে উঠে দাঁড়ায়নি। দাঁড়ানোর কথাও না। ঠিক যেমনভাবে উপন্যাস উঠে দাঁড়াতে পারছে না। বিগত কুড়ি বছরে বাংলা সাহিত্যে স্থায়ী আসন পাবে এমন উপন্যাস লেখা গেল কি? কিম্বা একটা সিনেমা, যা জাতির সংস্কৃতির অঙ্গ হয়ে গেল, ধরুণ পথের পাঁচালির মতন? এ অন্য এক লেখার বিষয়! তবু সংক্ষেপে বলি হয়নি, কেন না হবার মতন পরিমণ্ডল আজ নেই। শুধু বাজারের জন্য না, আদতে বৌদ্ধিক স্তরে এক ভয়াবহ শূণ্যতা দেখা দিয়েছে এবং সেই শূণ্যতা যে শূণ্য তাও নিজে জানে না। তাই তার সঙ্কটও এত তীব্র হচ্ছে না যে তার থেকে ছিটকে আসবে কোনো কামু, কাফকা, সার্ত্র বা অমিয়ভূষণ।

    কথা হচ্ছে এই সময়ই কি থাকবে? মনে হয় না। কিছুটা জোর দিয়েই বলি থাকবে না। আমার ব্যাক্তিগত ইতিহাসপাঠ তাই বলে। এবং এও বলে যে ডেকাডেন্স হচ্ছে শিল্প-সাহিত্যের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। চামড়া পুড়ছে, তবে দাউ দাউ করে জ্বলার অপেক্ষায় আছি। কারোর না কারোর, কোথাও না কোথাও জ্বলবেই এবং ফসল ফলবেই। ওই যে চক্রবৎ পরিবর্তন্তে সুখানি চ দুখানি চ! আর হ্যাঁ, পৃথিবীটা কাল মোটেও ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে না। মানুষ খুব একটা স্থিতিশীল অবস্থায় দম বন্ধ হয়ে মরে যায় বলে একদিন স্থিতিশীলতাকে সে ঝেড়ে ফেলে দেয় এবং অন্য এক যাত্রা করে। না হলে সভ্যতা অনড় ও জড়দগব হয়ে যাবে। কাজেই এও থাকবে না।

    কিন্তু যখন আছে তখন কাজটা কি? অন্তত আমার কাছে? কাজটা খুব সোজা! এই যে নতুন সময় আসবে তার সম্ভাবনাটাকে জিইয়ে রাখা আর তার সংগঠনকে যথাসম্ভব সাহায্য করে চলা। পণ্য বলতেই আমার কোনো বিরূপতা ফুটে ওঠে না। পণ্য নিজে দোষাবহ কিছু না, দোষাবহ যা কিছু সে তার ব্যবহার। ওই ছোটবেলার বিজ্ঞান অভিশাপ না আশীর্বাদ রচনার মতন। কিন্তু পণ্য নিয়ে যাঁরা ভাবছেন তাঁরা কিন্তু খুব ভাল করেই জানেন যে এখানে পণ্য আমার পছন্দ কিনা তা মুখ্য হচ্ছে না! হচ্ছে আমাকে পছন্দ করানো হবে এই ব্যবস্থা সৃষ্টির কাজটা! মঞ্চ ছটা। কাজ করবে বত্রিশটা দল। তার মধ্যে কেমন করে কাজ হবে তার প্যাটার্ণ হিসেবে থিয়েটারে একটা স্টার সিস্টেম সেই পুরোনো কালের মতন ফিরিয়ে আনা হচ্ছে। আপাতভাবে! একদম সোজা কথায় আপাতভাবে!

    কেন না এই সিস্টেম আর সেই সিস্টেমের সোজা ফারাকটা হল পুঁজি নিবিড়তায়। এখানে যে পুঁজি বিনিয়োজিত হচ্ছে তা ব্যবসায়িক পুঁজি না। গ্র্যান্টের টাকা এবং কদাচিৎ স্বল্প কিছু অনুরাগীর টাকা। গ্র্যান্টের টাকা ভোগে গেলে যারা করলেন বিনিয়োগ তাঁদের গায়ে লাগে না। অনুরাগীর টাকার ক্ষেত্রেও তাই। এবারে তার পরেও এঁরা খুব পেশাদার হবার চেষ্টা করছেন বিপণনে। জায়গা মতন লিখিয়ে, দেখিয়ে প্রচার বাড়িয়ে টাকা তোলার ইচ্ছে। খুব সদিচ্ছা। টাকা না উঠলে কাজ করবেন কী করে! কথা হচ্ছে এই যে মডেল এর সারবত্ত্বা কি? এতো বাজার পত্রিকার ব্যবসা পদ্ধতি। প্রচুর সার্কুলেশন দেখিয়ে বিজ্ঞাপণ টানা, সরকারের থেকে সমস্ত রকমের সুবিধা আদায় করা, তার জন্য যে সরকারই হোক না কেন তাকে নিজের অনুকূলে আনা, যাতে অন্যান্য ব্যবসার জমি থেকে শুরু করে সরকারী বিজ্ঞাপণের টাকা সব সুনিশ্চিত হয় এবং সেই টাকা বিনিয়োগ করে অন্যান্য সমস্ত পত্রিকার ডিস্ট্রিবিউশনকে টাকা দিয়ে আটকে দেওয়া! এখানে পণ্যের গুণগত মান যাচাই করার অবকাশ কই? নেই!

    দেখুন নেই বলেই তিরিশ বছর একচ্ছত্র রাজত্ব করার পরে সে রাজত্ব ভাঙছে। অন্য পত্রিকারা অনেকদূর সিঁধ কেটে ঢুকে গিয়েছে। তারাও সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে একই খেলায় দক্ষ। তারা এক সঙ্গে বরং একটি বিজ্ঞাপন সতেরোটি রাজ্যের নিজেদের সাবসিডিয়ারি পত্রিকা ও চ্যানেলে দিতে পারে, এনাদের ক্ষেত্রে সেটা এখনো মেরেকেটে তিনটে মতন। অতএব হুঙ্কার দিয়ে সরকার ফেলে দেওয়ার বদলে চুপিচুপি নৈশভোজ করছেন। তো বাজার তো চলছে এই মডেলে! এই মডেলেই সেই বাজার পত্রিকা থিয়েটারের বাজার বানাচ্ছে, বানাতে মদত দিছে! টিকবে? আজ্ঞে না। ধ্বসে যাবে, যাচ্ছেও। তথাকথিত স্টার স্টাডেড বিখ্যাত নাটকের মধ্যে দুটি বা খুব বেশী হলে তিনটি গত দশবছরে দর্শকাণুকূল্য এতটা পেয়েছে যে নিজেদের বারোটা শো করতে পেরেছে। বাকীরা ঢক্কানিনাদ করে শুরু করার পরে হলে পাঁচটা শো পেরোলেই তিরিশ জন দর্শক। তা তাঁরা চিৎকার করছেন না কেন? না গ্র্যাণ্ট বাঁচাচ্ছে। না পেলে? বিপ্লবী হয়ে বলবেন দর্শক ঠিক নেই, সরকার ঠিক নেই, নাটক ঠিক নেই বলবেন না। এই মহান তামাশায় প্রথম শো-তে চল্লিশ জন দর্শক পাওয়া দল ও এই বাজারবাবু দলের আদত ব্যবধান চারটে শো-এর। এর পরে জায়গা মতন মাল্যদান করলে কল শো জোটে। সে আগেও জুটতো। শিবিরে নাম থাকলে অনেক কনভেনশনেই কল শো পাওয়া যেত। এ সব ম্যানেজমেন্ট-এর ব্যাপার। এখনো পাওয়া যায় নাম থাকলে। তাতে করে দেখবেন পৌনে চারজনের নাম নাট্যদিগ্‌গজ হিসেবে ঘুরে ফিরে এখন বাজছে। বাজার কোথায় এখানে? কেনই বা আমি তার নাম নিয়ে টানাটানি করি।

    করছি না! এই মডেল বাঁচানো যাবে না। এ মডেল ম্যূলা রুজ হবার ক্ষমতাও রাখে না, রাসবিহারী সরকার তো দূর অস্‌ত! আবার ব্রডওয়েও হবে না। মাঝামাঝি বঙ্গীয় সংস্করণ হয়ে ব্যবস্থা পোষিত আহ্লাদী হবে। তাহলে আমাদের কাজ কি? আমার কাজ, আবার বলছি এই জেন্ট্রির থিয়েটারটাকে বাঁচিয়ে রাখা নানান সংস্করণে। মঞ্চে, মঞ্চের বাইরে যেখানে যেমন করে হয়!

    জেন্ট্রির থিয়েটার কি এতই ভাল? আজ্ঞে, বাকী যা যা আছে তার মধ্যে উন্নততর! বিপ্লবী , প্রতিবিপ্লবী সব ধারা মনে রেখেই বলছি, ধারা-টারার বাইরেও একটি নাট্যাদর্শ আছে। যা আজকের না! যা কয়েক হাজার বছরের! হঠাৎ করে তাকে উপড়ে দেওয়া যায় না। দিলে ভালর চেয়ে মন্দই বেশী হয়! থিয়েটার প্রসেনিয়ামে এসেছে তার কারণ শুধু শাসনের সুবিধেই নয়, মাধ্যমের সবচেয়ে বেশী শক্তিটাকে ব্যবহার করার সুবিধেও বটে। নইলে ক্যারাভ্যান থিয়েটারে লোক কম ছিল না। মধ্যযুগ গোটা সামলে দিয়েছে ওই থিয়েটার। আবার ওই থিয়েটারই তার আগের প্রসেনিয়ামের বৈশিষ্ট্যকে ধারণ করে রেখেছে, উন্নত করেছে কোনো ক্ষেত্রে। কিছু ক্ষেত্রে কিছুই পারেনি। যেমন আলোর ক্ষেত্রে। এ সব থাক! আদত কথাটা হল আমার কাজ থিয়েটারের নিজস্ব গূণাবলীকে বহন করা সে আমি যেখানেই কাজ করি না কেন! পারলে তাকে উন্নত করা। না পারলে অন্তত যাঁরা পরে আসছেন, আমার চেয়েও দক্ষ ও দীপ্ত তাঁদের হাত অবধি যাতে যায় সেই ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা। কাল যদি আলো বগলদাবা করে, শব্দের জন্য আরো উন্নত ব্যবস্থা সঙ্গে নিয়ে মাঠে পর্দা টাঙিয়ে বা প্যাণ্ডেল করে কাঁপিয়ে দিতে পারেন, দিন! তাঁকে যেন শূন্য থেকে শুরু না করতে এটা সুনিশ্চিত করাটা আমার কাজ। পারলে ধন্য, না পারলে আমার গোটাটাই বৃথা! এর মধ্যে হাততালি এল কি এল না, কমিটিতে ঠাঁই বা কে আমাকে চেনে আর কে চেনে না, এতে আর এ বয়সে সত্যিই কিছু যায় আসে না! কাজের প্রয়োজনে যতটা চেনানোর তার আপ্রাণ চেষ্টা করবো, তার বেশীও না কমও না।
  • ইউপিএস | 233.29.202.100 (*) | ০৪ মার্চ ২০১৪ ০৬:২৯88733
  • একটু ছোট করে লিখলে ভালো হত l ব্যাখ্যাটাও কী বড়!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন