এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • মুসলমানের কিসসা..

    Rana Alam লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ মার্চ ২০১৫ | ১১৯৭ বার পঠিত
  • ( এই লেখাটি আয়নানগরের বেরিয়েছিল।লেখাটি’র কিছু পরিবর্ধন ঘটেছে।সুতরাং এই পরিবর্ধনের ফলে পড়তে গিয়ে কিছু ছন্দ পতন হতে পারে,তার জন্য আগাম ক্ষমাপ্রার্থী)

    ‘তারপর একটা বোরখা পরা লোক পুলিশের ভ্যান থেকে নেমে আসে।গ্রামের সমস্ত জোয়ান মদ্দদের তার সামনে প্যারেড করানো হয়।বোরখা পরা লোকটা যার দিকে আঙ্গুল তোলে আর্মি তাকে তুলে নিয়ে যায়।কিসের অপরাধে তা জানা যায় না।কোনো উকিল দলিল থাকেনা।কোনো প্রমাণ থাকেনা।সে আর ফেরত আসেনা।জলজ্যান্ত একটা মানুষ ভ্যানিস হয়ে যায়।সে যে ছিল বাস্তবে তারই কোনো প্রমাণ থাকেনা’।

    একটা বারো-তেরো বছরের ছেলে গল্প শুনছে তার বাকি ভাই বোনেদের সাথে।সালটা ১৯৯৭।তারই এক দূরসম্পর্কের আত্মীয়া ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন এক কাশ্মীরী শাল বিক্রেতাকে।বিয়ের পর তিনি কাশ্মীর চলে যান।বেশ কবছর পর স্বামী আর দুই সন্তান কে নিয়ে তারা কাশ্মীর ছেড়ে চলে আসেন।তাদেরই গল্প।
    বক্তা শেষ করেন , ‘কাশ্মীরে মুসলমান হওয়ার জন্যই এত অত্যচার হয়’।

    বারো-তেরোর ছেলেটার শিরদাঁড়া দিয়ে তখন ভয়ের স্রোত নেমে যায়।

    এর অনেক বছর পরে যখন বছর তিরিশের ছেলেটা বিশাল ভরদ্বাজের হায়দর দেখতে যায়।সেই নব্বইএর কাশ্মীর।পুলিশের ভ্যানে বোরখা পরা লোক।সামনে দিয়ে গ্রামের জোয়ান মদ্দরা প্যারেড করে যাচ্ছে।বোরখা পরা লোকটা যার দিকে তাকিয়ে হর্ন বাজালো,আর্মি তাকেই তুলে নিয়ে গেলো।কোনো উকিল দলিল নেই।কোনো প্রমাণ থাকলো না।সে আর ফেরত আসেনা।জলজ্যান্ত একটা মানুষ ভ্যানিস হয়ে যায়।

    পুরোনো ভয় লাগাটা আরেকবার ফেরত আসে।নুইয়ে পড়া শিঁরদাঁড়ায় আরেকবার ভয়ের স্রোত নেমে যায়।
    আগেরমতই ‘মুসলমান’ ছেলেটার সামনে ধর্ম দিয়ে শত্রু আর বন্ধু খোঁজার পুরোনো খেলাটা উঁকি দেয়।

    মুর্শিদাবাদের এক প্রত্যন্ত গ্রামে জন্ম আমার।ইলেক্ট্রিক দেখেছি সাত বছর বয়সে।মাটির বাড়ি ছিল।বাবা-মায়ের চাকুরীসূত্রে তারপরেই আমরা শহরে চলে যাই।পিতৃদত্ত নাম ছিল রাণাপ্রতাপ মন্ডল।আমাদের পারিবারিক উপাধি মন্ডল।তিন চার পুহহরুষ আগে নমঃশূদ্র হিন্দু থেকে ধর্মান্তরিত মুসলিম আমরা।আবার অনেকে বলেন আমরা নাকি বাউল ছিলাম।হিন্দু ধর্মের কুৎসিত বর্ণভেদ প্রথাতে যারা নমঃশূদ্র ছিলেন,তারাই আমাদের পূর্বপুরুষ।আমাদের বাড়িতে গরুর মাংস খাওয়ার চল ছিল না।এখনও আমার বাড়ির বয়স্করা অনেকে গরুর মাংস খান না।রেশন কার্ড অব্দি রানাপ্রতাপ মন্ডল নামটা ছিল।তারপর ঠিক মুসলমান নাম নয় এই কারণে নামটা পাল্টায়।বিশুদ্ধ শাস্ত্রসম্মত মেহফুজ আলম নাম রাখা হয়।ইসলাম ধর্ম কাফের নাম থেকে রক্ষা পায়।যদিও সরকারী কাজ ছাড়া এই নামটা ব্যবহার করিনা।নিজের নাম সব জায়গাতেই লিখি রাণা আলম।এই নাম নিয়েও একটা ব্যাপার আছে।অনেক মুসলিম বাড়িতে আরবি শব্দ বিহীন নাম রাখা হয় এই জন্য যে যাতে তারা হিন্দুদের আক্রোশ থেকে রক্ষা পায়।আমার সঙ্গেই পড়তো সুমন সরকার,দিলীপ মন্ডল যাদের নাম শুনে বোঝা যেত না যে তারা মুসলমান।আসলে এর পিছনে কিছু ঘটনা যা আমরা বড়দের মুখ থেকে শুনতাম সেগুলো কাজ করতো।আমি ছোট থেকেই শুনেছি যে হিন্দুরা আমাদের ঘৃণা করে। মানুষ ভাবেনা।আমার এক গ্রামতুতো চাচাজি’র দাড়ি ধরে বাস থেকে নামিয়ে দেওয়া হয়েছিল।আমার মা যখন চাকরির ইন্টারভিউতে যান,সেই স্কুলের দিদিমণিরা চান নি যে কোনো মুসলিম সেই স্কুলে আসুক।তারা স্কুলের সেক্রেটারির কাছে আবেদন অব্দি করেছিলেন।কাটরা মসজিদের দাঙ্গায় কিভাবে কোনো মুসলিমকে কুপিয়ে মেরেছিল হিন্দুরা তার বর্ণণা শুনতাম।সেসব কাহিনী শুনে হাড় ঠান্ডা হয়ে যেত।কাউকে চেনার আগেই তাকে তার নাম শুনে শত্রু কিংবা মিত্র নির্বাচিত করতাম।এই অভ্যেস অসচেতনভাবেই আমাদের তৈরী হয়ে যায়,সমাজ আমাদের দিয়ে তৈরী করায়।

    আমাদের গ্রামে আমাদের কালীবেলতলা বাগানের পাশে ‘রামনবমী’ মেলা বসতো প্রতিবছর।রামের মন্দির ছিল।পূজারী ঠাকুর রা কঘর থাকতেন মুসলিম বাড়ি ঘেরা পাড়াতে।কোনোদিন সমস্যা হয়েছে বলে শুনিনি।তারপরে সব পালটে গেলো।মন্দির উঠে গেল।হিন্দুরা যারা পারলেন তারা বাড়ী বিক্রি করে চলে গেলেন অন্যত্র।মন্দিরের সামনের মেলাটা আমার ছোটবেলার অন্যতম আকর্ষণ ছিল।সব শেষ হয়ে যাবার পরের কয়েকবছর মন্দির আর মেলা’র জায়গায় গিয়ে বড্ড ফাঁকা লাগতো।এখন সব সয়ে গেছে।

    সালটা বোধহয় দুহাজার ছয় কি সাত।বহরমপুরে স্কোয়ার ফিল্ডের পাশে তথ্য সংস্কৃতি দপ্তরের সামনের চাতালে’র কাছে বড় ছাতা টাঙিয়ে বিএসএনএল এর ৯৪৩২ সিরিজিএর সিম বিক্রি হচ্ছিল দশ টাকায়।তখন ইউনিভার্সিটিতে পড়ি।আমি আর আমার ঘনিষ্ঠ বন্ধু অম্লান সিম তুলতে গেলাম।অম্লান আমার আগে।ভিড় অল্প।অম্লান ডকুমেন্টস জমা দিল।জিগগেস করলো সই করতে হবে কিনা ফর্মে।কাউন্টারে বসা ছেলেটি মাছি ওড়ানোর ভঙ্গিতে জানালো যে লাগবে না।এরপর আমি।ডকুমেন্টস জমা দিলাম।ছেলেটি অলস ভঙ্গিতে ডকুমেন্টসের দিকে তাকালো,তারপর আচমকা সোজা হয়ে বসে বললো ‘আপনি ফর্মে সই করুন’।আমি অম্লান কে সই করতে হয় নি দেখে নিজেও ফিরে যাচ্ছিলাম।এবার ফিরে সব কটা সই করতে শুরু করলাম।আড়চোখে দেখলাম যে ছেলেটি আমার ডকুমেন্টস গুলি খুঁটিয়ে দেখছে যে অম্লানের ডকুমেন্টস গুলো একবার দেখেই রেখে দিয়েছিল।
    ঠিক কবে থেকে আমি মুসলমান হয়েছি তা ঠিক মনে করতে পারছিনা।তবে মনে পড়ছে সেই ছোটোবেলায় আমাদের বাড়ির থেকে অনতিদূরের যে প্রাচীন আশ্রম টি আছে,সেখানকার এক সন্যাসী আমাদের বাড়িতে ভিক্ষে নিতে এসে মা’কে দেখে তৎক্ষণাৎ অ্যাবাউট টার্ন করে ফিরে যাওয়াতে আমার জিজ্ঞাসু চোখের দিকে তাকিয়ে মা হেসে বলেছিলেন ‘আমরা মুসলমান তো।ওরা হিন্দু সন্যাসী’।

    তখনও ঠিক বিষয় টা বোধগম্য হয়নি।হিন্দু সন্যাসী হলে মুসলমানের বাড়িতে ক্যানো ভিক্ষে নেওয়া যাবেনা,সেটাও বুঝে উঠতে পারিনি।গরমের ছুটিতে গ্রামের বাড়ি গিয়েছিলাম।জ্যাঠতুতো ভাই বোনেদের সাথে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে পাঠিয়ে দেওয়া হল।সেখানে দুই পাড়ার ছেলে মেয়েদের মধ্যে টিফিনের সময় খেলা নিয়ে ঝগড়া।ঝগড়ায় যে গালাগাল গুলো ব্যবহার হচ্ছিল তা আমি কখনও শুনিনি।সেখান থেকে জ্ঞানলাভ হল যে আমরা,মানে মুসলমানেরা হলাম ‘নুনুকাটা’র জাত।আর হিন্দুদের নুনুকাটা হয় না।নিজের আইডেনিটিটি নিয়ে আরো বুঝলাম যে আমরা আব্বা-আম্মা বলি,ওরা,মানে হিন্দুরা বলে বাবা-মা।আমরা পানি বলি,ওরা বলে জল।আমরা নামাজ পড়ি।ওরা পূজো করে। প্রাইমারি স্কুল পার করার আগেই এই শব্দগত বিভেদ গুলো বুঝে গেছিলাম।
    আরেকটু বড় হলাম।ক্লাস ফাইভে পড়ি।তখন শুনলাম পাকিস্তান আছে বলেই নাকি আমাদের ভারতে মুসলমানেরা বেঁচে আছে।পাকিস্তান নাকি হুমকি দিয়ে রেখেছে যে ভারতের একটা মুসলমানের ক্ষতি হলে ওরা ভারতকে উড়িয়ে দেবে।নইলে কোনকালে হিন্দুরা ভারতের মুসলমানেদের কচুকাটা করে দিত।ভারত পাকিস্তান খেলা হলে বেশ কিছু জায়গায় তখন পাকিস্তানের পতাকা উড়তো।অনুপস্থিত ঈশ্বরের মতই অদৃশ্য পাকিস্তানের ভরসায় হিন্দুদের হাত থেকে বেঁচে কেটে গেলো আরো কয়েকটা বছর।হাই স্কুলের গন্ডিতে পা দিয়ে নিজের মুসলমানত্ব নিয়ে আরো নিঃসংশয় হলাম।ঈদ আমাদের পরব।দূর্গা পূজো হিন্দুদের।হিন্দুরা গরুকে পূজো করে, অতএব গরু খেলেও হিন্দুদের সামনে বলা যাবেনা।ওরা কষ্ট পাবে।বন্ধুদের সাথে একসাথে স্কুলে যেতাম আর ফিরতাম।যাতায়াতের পথে হিন্দু বন্ধুরা মন্দির দেখলে দাঁড়িয়ে প্রণাম করতো।তাদের সাথে আমিও করতাম।বন্ধুত্বের টানে না কিসের জন্য তা বলতে পারবো না।অত ভাবার বয়স তখন ছিল না।এরকমই একদিন ফেরার পথে জনৈক স্বধর্মীয় গুরুজনের সাথে মন্দির দেখে অভ্যেস বশতঃ প্রণাম করেছিলেম।তিরষ্কার ছাড়াও দু-একটা চড় চাপাটি যে জুটেছিল,তা মনে আছে।হিন্দুদের মন্দিরের সামনে মুসলমান হয়ে প্রণাম করাটা যে ঘোরতর পাপ তা আমাকে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছিল।

    আমি ঠিক নিজের আত্মকথা লিখতে বসিনি।সংখ্যালঘু মাত্রেই আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভোগে।সে যেখানকারই সংখ্যালঘু হোক না ক্যানো।আমি নামগত কারণে সংখ্যালঘু।অতএব নিজের এই সংখ্যালঘুত্ব টা বিচার করতে বসেছি।হাইস্কুলে পড়ার সময় থেকে বাঙালি সমাজে হিন্দু-মুসলিম পার্থক্যটা ভালোমতই মগজস্থ হয়েছিল।বিশেষতঃ কথা বলার সময় খেয়াল রাখতে হত যাতে কোনো মুসলমানী শব্দ বাইরে ব্যবহার না করি।আবার দু-চারজন সংখ্যালঘু যখন নিজেদের মধ্যে কথা বলতো তখন তারা নিজেদের স্বাভাবিক শব্দে ফিরে যেত বা এখনো যায়।

    এ প্রসঙ্গে সরস্বতী পূজোর কথা আসা উচিত।স্কুলে কলেজে সরস্বতী পূজো হয়।সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু বাঙ্গালি’র বড় অংশ সরস্বতী পূজোকে তাদের স্বাভাবিক বাঙ্গালিত্বের অংশ হিসেবে দ্যাখেন।একটি ধর্ম নিরপেক্ষ দেশে সরকারী অর্থে পোষিত কোনো জায়গাতে যে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের অনুষ্ঠান হওয়াটা আইনত উচিত নয় সেটা তারা মাথায় রাখেন না।এটা নিয়ে তর্ক কিছু কম হয় নি।উদাহরণ টা দিলাম মেজরিটি ইম্প্যাক্ট বোঝাতে।বছর খানেক আগেই মুর্শিদাবাদের একটি স্কুলে কিছু ছাত্রের নামাজ পড়ার অনুমতি চাওয়াকে কেন্দ্র করে দাঙ্গা বেঁধেছিল।গরু খাওয়া নিয়েও একইরকম ঝামেলা।মুসলমান গরু খায়,অতএব তারা ঘৃণার্হ।এটা সরল যুক্তি। কিন্তু গরু তো ক্রীশ্চানও খায়।ক্রীশ্চানের গরু খাওয়া নিয়ে হিন্দুদের প্রতিবাদ দেখিনা।তাহলে কি মুসলমানে গরু খায় বলেই বিরোধিতা? অবশ্য এ ভাবনাটাও আরেক ধরণের সরলীকরণ।ঠিক যে ধরণের সরলীকরণ এখন মাদ্রাসা নিয়ে হচ্ছে।মাদ্রাসা মানেই সন্ত্রাসবাদের আঁতুড়ঘর গোছের তত্ত্ব প্রতিষ্ঠা হচ্ছে সর্বত্র। আউটলুক পত্রিকায় অজিত সাঁই এই সরলীকরণ নিয়ে সম্প্রতি একটা রিপোর্ট প্রকাশ করেছেন এবং বাংলা মিডিয়ার নিউজ ফ্যাব্রিকেশনের কিছু এক্সাম্পলও বেরিয়েছে।এর একটা পালটা পয়েন্টও আছে। কিছু সাম্প্রদায়িক মুসলিম এই সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িক আচরণ কে কাজে লাগিয়ে পালটা আগুনে ইন্ধন দিচ্ছেন।হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা আর মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা একে অপরকে পুষ্ট করে যাচ্ছে।
    কিছুদিন আগে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় জহর সেন এর একটি লেকচার শোনার সৌভাগ্য হয়েছিল।তিনি তার বক্তব্যে বলেছিলেন যে যেকোনো সমাজে তার কালচার বা বহিরঙ্গএর যাবতীয় যা কিছু আসলে সখ্যাগুরু দ্বারা নির্ধারিত এবং নিয়ন্ত্রিত হয়।সংখ্যালঘুকে সেখানে অ্যাডপ্ট করতে হয়।সংখ্যালঘু মুসলমান হিসেবে এই অ্যাডাপ্টেশন প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়ে আমিও গেছি।বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের হিন্দুদেরও নিশ্চয় একইভাবে অ্যাডপ্ট হতে হয়।আমাকে হিন্দুদের যাবতীয় প্রধান উৎসবের নাম জানতে হয়েছিল।কেউ শেখায় নি বা জোর করেনি।কিন্তু যে আবহে বড় হয়ে উঠেছি তাতে এমনিই জেনে যেতাম। এবং অবাক লাগতো যে আমি হিন্দুদের ধর্মীয় উৎসব সম্পর্কে অনেক কিছুই জানি।পুরাণ আর উপকথাগুলো জানি।কিন্তু আমার চারপাশের হিন্দুদের অধিকাংশই মুসলিমদের ধর্মীয় উৎসব সম্পর্কে কিছু জানেন না।এর কারণ সংখ্যাগুরু হিন্দুদের উদাসীনতা নাকি মুসলিমদের রক্ষণশীলতা,অথবা দুটোই,তা আমার কাছে পরিষ্কার নয়। ঈদ যে বাঙ্গালি’র উৎসব এই ধারণাটা গড়ে ওঠেনি।বাঙ্গালি’র উৎসব বলতে দূর্গা পূজাই জেনে এসেছি।পত্র পত্রিকাগুলোর পূজো সংখ্যা বেরুতো।আমি ভুল না করলে যে বছরে কলেজে দাখিল হই,২০০২-০৩ হবে,সেই বছর সাংবাদিক বাহারউদ্দিন প্রথম কোনো পত্রিকার ঈদ সংখ্যা প্রকাশ করেন।
    বারো ক্লাস পরীক্ষার আগে আমার জনৈক সহপাঠিনী যিনি পরবর্তীকালে একটি বহুজাতিক সংস্থার উচ্চপদে আসীন হবেন,তিনি আমাকে একদিন আমাকে বললেন ‘রাণা,তোকে কিন্তু আমাদের মতই লাগে।মুসলমান মনে হয় না’।আমি হেসে জিজ্ঞেস করলাম, ‘ক্যানো রে? মুসলমানরা কি আলাদা কিছু হয়?’।সে আমতা আমতা করে উত্তর দিলো, ‘না,মানে ওরা একটু ক্যামন ক্যামন হয় জানিস তো’।তখন মনে হয়েছিল তাহলে কি আমি আমার মুসলমানত্ব হারাচ্ছি? সংখ্যালঘুর যে আত্মিক বিপন্নতা থাকে যেখান থেকে সে সংখ্যাগুরুর সাথে মিশে যেতে চায়,তারই কি প্রভাব পড়েছিল আমার উপর?

    শুধু এই প্রশ্নটা নয়,উত্তর খোঁজা বাকি ছিল আরো অনেক কিছুর।আমার শহর বহরমপুরে যেভাবে চোখের সামনে পুরোনো বাড়িগুলো ভেঙ্গে হুড়মুড়িয়ে ফ্ল্যাট গজিয়ে উঠে আমার চোখের চেনা ছবিগুলো নিমেষে ঝাপসা করে দেয়,ঠিক তেমনি রাণা আর রাণা আলম,নামের তফাতে কিভাবে দুনিয়ার দুই রূপ হাজির হত।স্কুল জীবনের শেষ দিকে এক নামী সংখ্যালঘু আবাসিক স্কুলে আমাকে ভর্তি করা হয়।সেখানে সবাই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে,রোজা রাখে।যথার্থ মুসলমানী আবহাওয়া।আমার অস্বস্তি হত।বাড়িতে কোনোদিনই আমাকে ধর্ম চর্চা করতে চাপ দেওয়া হয় নি।বছরে দুদিন ঈদ গাহে গিয়ে নামাজ পড়ি বা পড়বার ভান করি,তারা এতেই খুশী ছিলেন।এখানে এসে অন্যরকম পৃথিবী।দেখতাম আমি যে মুসলিম আইডেনটিটি নিয়ে শংকিত থাকি।বাইরে চেপে চলার চেষ্টা করি।এখানে এরা সেই আইডেনটিটি নিয়ে বেশ সহজ থাকে।ধর্মীয় আবহে আর কড়া শৃংখলাতে মানাতে পারিনি,কিছুদিন থেকে চলে আসতে হয়েছিল।এতে সেই স্কুলটার দোষ নেই।সেখান থেকে এখনও প্রতি বছর প্রচুর কৃতী ছাত্র ছাত্রী বের হয়। আমাদের হোস্টেল ছিল পার্ক সার্কাসের জান নগরে। পার্ক সার্কাস স্টেশনে নেমে নাক চেপে হাঁটতে হত।চতুর্দিকে জঞ্জাল আর ঘিঞ্জি।এখানে কি পৌরসভার গাড়ি ঢোকেনা?নাকি,পৌরসভা এদের দেখতে পায় না?এরা বাংলায় কথা বলেনা।ভাত খাওয়া পেটে কাবাব বিরিয়ানি সহ্য হত না।চারপাশের নোংরা পরিবেশ দেখে আপাত ধারণা হয়েছিল যে মুসলমান বলেই বোধহয় পৌরসভার গাড়ি এখানে ঢোকেনা।পরে খেয়াল করেছিলাম পার্ক সার্কাসের যেদিকটায় বড়লোকেদের বসত,সেদিকটা পরিষ্কার কিন্তু অপেক্ষাকৃত আর্থিক নিম্নবর্গীয় মানুষজনেদের বাসের জায়গাটাইয় পৌরসভার দেখা মেলেনা।পরবর্তীকালে জেলা শহরের হরিজন কলোনিতেও একই হাল দেখেছি। পার্ক সার্কাসে সেদিন ভারত পাকিস্তানের ক্রিকেট ম্যাচ।হোস্টেলের পাশের ক্লাবে দেখতে গেছি।পার্ক সার্কাস সম্বন্ধে আগেই শুনে এসেছি যে এটা আদতে অ্যান্টিসোস্যাল আর পাকিস্তান পন্থী মুসলিমদের বাস।আমি সৌরভের আর ভারতের সমর্থক।একটু সিঁটিয়ে ছিলাম।শচীন খুব ভালো ব্যাটিং করছিল।দেখলাম প্রত্যেকটা বাউন্ডারি’র সাথে সেখানকার ছেলে ছোকরার দল লাফিয়ে উঠছে আনন্দে।দু-একজন বয়স্ক লোক,তার মধ্যে পাশের ফার্মেসীর মালিক ছিলেন,তারা পাকিস্তানের সাপোর্টার ছিলেন।আমাদের দাপটে বেশী মুখ খুলতে পারেন নি।খেলা শেষে ভারতের জয়ে যখন আমরা সমবেত উল্লাস প্রকাশ করছিলাম চিৎকার আর কোলাকুলি করে, তখন আমার ভিতরের অদৃশ্য বাউন্ডারিটা মুছে যাচ্ছিল।

    হোস্টেল থেকে ফেরার পথে শেয়ালদহ স্টেশনে আমার সাথে আলাপ হয়েছিল এক বৃদ্ধা ভিখারিনীর।তিনি ওপার বাংলা থেকে সব হারিয়ে এসেছিলেন।এপারে এসেও শান্তি জোটেনি।ভিক্ষে করে বেঁচে আছেন।বেশ কয়েকবার তার সাথে পরপর তার সাথে দেখা হওয়াতে বেশ গল্প হত।লালগোলা ঢোকার অনেক আগেই আমি প্ল্যাটফর্মে পৌঁছাতাম।তিনি আমাকে ওপারের গল্প শোনাতেন। তাদের বাড়ি ছিল।কিভাবে পালিয়ে এসেছেন।কিভাবে সেখানকার চেনামুখগুলো আচমকা পালটিয়ে গিয়েছিল।রাতের বেলায় কিভাবে সশস্ত্র মানুষেরা হিন্দু বাড়ি খুঁজে বেড়াতো। সেই বৃদ্ধার মুখে ঘটনাগুলো শুনে মনে হয়েছিল সীমান্তের কাঁটাতারগুলো কোনোদিনই কালো নয়,বরং লাল...রক্তাক্ত লাল।শুনতে গিয়ে কষ্ট হত।এরকমই একদিন আমি ওনার পাশে বসে গল্প করছি প্ল্যাটফর্মের বেঞ্চে।আমার এক সহপাঠী আমাকে দেখে আমার ভালো নাম ধরে ডাকল,যেটি আরবি ভাষার।বৃদ্ধা আমাকে ডাক নামেই চিনতেন।ভালো নামটা শুনে জাস্ট চমকে উঠলেন।এক পলকে সাদা হয়ে গেল মুখটা।আমার সাথে ওনার আর কোনোদিন দেখা হয় নি।

    সেদিন মাথা নিচু করে ট্রেনের জানালার ধারে বসে মনে হচ্ছিল অনেক মাইল দূরের কোনো এক দেশের কতগুলো নরপিশাচের অপকর্মের দায় কিভাবে নাম বা ধর্মগত সাদৃশ্যের কারণে অনায়াসে আমার উপর এসে গেল।হাতদুটো মেলে দেখেছিলাম যে কোথাও রক্ত লেগে আছে কিনা,নাকি লেগে আছে অথচ আমি দেখতে পাচ্ছিনা। আমি সেই বৃদ্ধা’র কোনো দোষ দেখিনি।তার জায়গায় আমি থাকলেও হয়ত একই রকম ঘৃণা পোষণ করতাম।

    এই ঘৃণার শেষ কোথায় ? আমি মুর্শিদাবাদের লোক।দু-একটা লোকসভা আগে,কোনো এক পঞ্চায়েত ভোটে আরএসএস কিছু জায়গায় লিফলেট ছড়িয়েছিল যে মুসলমানেরা হল মীরজাফরের জাত,ওরা বিশ্বাসঘাতক।অতএব,মুসলিম ক্যান্ডিডেট দের ভোট দেবেন না। মুসলিমদের সম্পর্কে এরা মীরজাফরের জাত কথাটা অনেককেই ব্যবহার করতে দেখেছি।কিন্তু সিরাজের শত্রু ইংরেজদের সাথে তো মীরজাফর একাই হাত মেলান নি।জগত শেঠ ষড়যন্ত্রের অন্যতম প্রধান হোতা ছিলেন,অথচ তার নাম কেউ বলেনা ক্যানো? ক্যানো,জগত শেঠ এর জাত বিশ্বাসঘাতক হিসেবে ছাপ্পা পায় না?এই প্রশ্নগুলো তখনই মাথায় আসতো।
    আমি মুর্শিদাবাদের লোক।জনসংখ্যার প্রায় সত্তর ভাগ মুসলমান।এবং বেশিরভাগটাই দারিদ্র্য আর অশিক্ষায় ডুবে আছে।এদের জীবন নিয়ন্ত্রিত হয় গ্রামের মসজিদের ইমামের হাতে। মৃত্যু-পরবর্তী কোনো এক অলীক জান্নাতের ভাবনাতেই জীবনটা কেটে যায়।স্বাস্থ্য সচেতনতার হাল খুব খারাপ।খুব কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়।কম বয়স মানে তেরো-চৌদ্দো।বিয়ের পরই মা।অপুষ্ট শরীরে অপুষ্ট সন্তানের জন্ম হয়।কখনও মায়ের মৃত্যু হয়,কখনও সন্তানের মৃত্যু হয়।এই মা এবং সন্তানের মৃত্যুহার টা মুর্শিদাবাদে সাংঘাতিক।মুসলিম ধর্মগুরুরা এই সংক্রান্ত সচেতনতা বাড়াতে কখনও সেভাবে উদ্যোগ নিয়েছেন বলে আমার চোখে পড়েনি। আমি তখন স্কুলে পড়ি।গ্রামে আমাদের বাড়িতে মিলাদ দেওয়া হয়েছে।যে মৌলবি সায়েব এসেছেন তিনি স্থানীয় স্কুলের আরবি’র শিক্ষক।পাড়ার লোকেরা বসে শুনছে।কথা প্রসঙ্গে সেই মৌলবি বললেন, ‘যার আসার তাকে আল্লাতলা পাঠাবেনই।ওসব জন্মনিয়ন্ত্রণ টিয়ন্ত্রণ দিয়ে কিছু হবেনা’।

    আমি তখন ক্লাস নাইনে পড়ি।পরিবার পরিকল্পনা বিষয়টা অল্পস্বল্প জানি।এও বুঝি গ্রামের মুসলিমদের দারিদ্র্যের অন্যতম কারণ পরিবার পরিকল্পনার অভাব।আমি অবাক হয়েছিলাম যে গ্রামের একজন মাথা যার কথা এই অশিক্ষিত গ্রামের লোক অন্ধের মত অনুসরণ করে,তিনি অনায়াসে বলে দিলেন যে জন্ম নিয়ন্ত্রণ প্রথাটা কোনো কাজের নয়।
    আমার কথা বলার অধিকার ছিল না।সাহসও হয়নি।কিন্তু সেখানে উপস্থিত আমার অনেক গুরুজন যারা কলেজের গন্ডি পেরিয়েছেন তারাও কিন্তু কোনোরকম প্রতিবাদ করেন নি।

    ধর্মের ভূমিকা মুসলিমদের মধ্যে খুব বেশী।মুশকিল হচ্ছে এই ধর্মই যে মাঝে মধ্যে রক্ষণশীলতার প্রাচীর তুলে মুসলিমদের বিচ্ছিন্ন করে দেয় তা বোঝানো যায় না।অনেক মুসলিম বাড়িতে মেয়েদের নাচ বা গান শেখানোতে আপত্তি থাকে।এরজন্য তারা কোনো যৌক্তিক ব্যখ্যায় যান না।ধর্মে মানা আছে,অতএব আর কোনো কথাই থাকতে পারেনা।

    এই ধর্মে আছে কথাটাও মাঝে মধ্যে জিরাফের মত শোনায়।ইসলাম ধর্মে চারটে বিয়ে করার অধিকার থাকলেও আমার যেটুকু ধর্ম সংক্রান্ত পড়াশুনো তাতে জানি ধর্মের নিয়ম মানলে কারুর পক্ষেই বাস্তবে দ্বিতীয় বিবাহ করা সম্ভব না।অথচ সে নিয়মের কোনো বাস্তব প্রতিফলন নেই।গ্রামের দিকে এখনও অনেক মুসলিম একাধিক বিবাহ করে থাকেন।পুরুষ তান্ত্রিক সমাজের অধিকার মেনেই ধর্ম তাদের ক্ষেত্রে চুপ করে ভদ্রতা রক্ষা করে।কোনো ইমাম বা মৌলবী’কে ন্যুনতম প্রতিবাদ করতে দেখা যায় না।অথচ এটা নিয়ে কথা উঠলেই ফল ধররে লক্ষণের মত শোণানো হয় যে ‘আহা,ওটা তো ইসলাম ধর্ম সম্মত নয়’।এটা বুঝিনা যে যেটা বাস্তবে মানাই হয়না সেটা ধর্মে থাকলেই বা কি না থাকলেই বা কি।

    প্রসঙ্গত,আরএসএস যেমন সব কিছু বেদ-পুরাণে খোঁজে,তেমনই সব কিছু এখন কোরানে খোঁজার প্রবণতা মুসলিমদের মধ্যেও শুরু হয়েছে।গেরুয়া-সবুজ মিলে যাচ্ছে আর কি।

    তাবলিগ জামাত নামে মুসলিমদের একটি ধর্মীয় সংগঠন আছে যারা বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে নামাজ পড়া সহ ধর্মের বিভিন্ন দিক ব্যখ্যা করে।পেশাগত জীবনে সুপ্রতিষ্ঠিত বহু মুসলিম এদের সাথে যুক্ত।বহু ডাক্তারও আছেন এদের সাথে।বহরমপুরেই তাবলিগ জামাতের নেতৃস্থানীয় একজন হলেন এফআরসিএস ডাক্তার।এরা গ্রামে গিয়ে ধর্ম প্রচার করেন।জান্নাতের পথ দেখান।কিন্তু কখনই মুর্শিদাবাদের অশিক্ষিত মুসলিম মায়েদের জন্য কোনো মেডিক্যাল ক্যাম্প করেন না।গ্রামের মুসলিমদের মধ্যে পরিবার পরিকল্পনার সুফল আর প্রয়োজনীয়তার কথা বলেন না।আমি অন্তত দেখিনি।অথচ ধর্মভীরু এই গরিব মানুষদের খুব সহজেই এরা বোঝাতে পারতেন বিষয়গুলি।জিজ্ঞেস করলে একটা কমন উত্তর আছে যে এটা তাদের কাজ না। শুধু পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ালেই এই পিছিয়ে থাকা মুসলিমদের উন্নতি হবেনা।শিক্ষা ও স্বাস্থ্য সচেতনতা দরকার।এ প্রসঙ্গে আল আমীন মিশনের কথাটা বলে রাখা দরকার।এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অগণিত মুসলিম ছাত্র ছাত্রী আজ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে সুপ্রতিষ্ঠিত।এবং এই প্রতিষ্ঠিতদের মধ্যে অনেকেই খুব হত দরিদ্র পরিবার থেকে উঠে আসা।সম্প্রতি সরকারী উদ্যোগে মসজিদের ইমামদের স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সচেতনতা প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে।অত্যন্ত ভালো উদ্যোগ বর্তমান প্রেক্ষিতে।

    আরেক জনের কথা বলা উচিত।তিনি হলেন জাকির নায়েক।মুম্বাই নিবাসী এই ভদ্রলোক ইসলাম ধর্মের প্রচারক হিসেবে কিংবদন্তী হয়ে উঠেছেন।এই প্রজন্মের বহু মানুষ জাকির নায়েক কে অনুসরণ করেন।সমস্যাটা একটা থেকেই যায়।জাকির নায়েক যখন নিজের ধর্ম প্রচার করছেন,তাতে ক্ষতি নেই।কিন্তু যখন উনি ঘর ভর্তি লোকের সামনে অন্য কোনো ধর্মের থেকে ইসলাম কতটা শ্রেষ্ঠ তা প্রমাণে ব্যস্ত হয়ে পড়েন তখন তা আর নেওয়া যায় না।অন্য ধর্মের লোকেরা একই কাজ করলে কি প্রতিক্রিয়া হত সেটা অনুমানের বিষয় হয়েই থাক।

    টাকার কয়েনের মতই কখনই ঘৃণারও একদিক হয় না।আমাকে আমার এক স্বধর্মীয় ব্যক্তি একবার বলেছিলেন, ‘তুই তো দিনরাত হিন্দুদের সাথে মিশিস।ওদের সাথেই ঘুরিস।তুই তো নিজেই হাফ হিন্দু’।মানুষ যে কখন হাফ হিন্দু আর হাফ মুসলমান হয়,তা সত্যিই বোঝা দায়। আমি খুব ছোট থেকেই শুনেছি যে হিন্দুরা আমাদের ঘেন্না করে। মানুষ বলে ভাবেনা।নিজে বোঝার মত বয়সে এসে এরকম অনেক অপ্রীতিকর মুহুর্তের মুখোমুখি হয়েছি।পেশাগত সূত্রে পরিচিত আমার এক ব্যক্তি অনায়াসে তার কোনো এক পরিচিত বিশ্বস্ত মুসলিমের কথা বলতে গিয়ে আমাকে বলেছেন যে মুসলিমরা কিন্তু সাধারণতঃ ওরকম হয় না,মানে বিশ্বস্ত হয় না।পঞ্চায়েত ভোটে কর্মী হিসেবে গিয়ে আমার এক পরিচিত আমায় বললেন ‘খুব ভালো জায়গা পেয়েছি।আশেপাশে কোনো মহামেডান নেই।অতএব ঝামেলা হবেনা’।এরা কিন্তু আমায় ‘রাণা’ নামেই চেনেন।আমার নাম রাণা আলম জানলে কখনই এই লুকোনো ঘৃণা বেরিয়ে আসতো না।শিক্ষিতরা যেভাবে বাইরে মুখোশ পরে ভিতরে ঘৃণা লুকিয়ে রাখেন,তা সত্যিই খুব আশংকাজনক।এবং এই নামগত কারণে একটা অদ্ভূত সংশয়ের আবহ তৈরী হয়।ধরা যাক,কারুর সাথে আলাপ হল।তিনি হয়ত সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের।এবার নিজের নাম বলার আগে দুবার ভাবতে হয়।মাথার মধ্যে একটা ভাবনা কাজ করে যে আসল নামটা জানলে ইনিও হয়ত ভিতর থেকে ঘেন্না করতে শুরু করবেন।এই বিপন্নতা আমি এখনও সব সময় কাটিয়ে উঠতে পারিনা।
    অনেক পরের একটা ঘটনা বলছি।বহরমপুরে আমার যেখানে বাড়ি তার উল্টোদিকের পাড়ায় একটা বারোয়ারী দূর্গা পূজা হয়।কাউকে বাড়ি চেনানোর থাকলে অনায়াসে বলে এসেছি যে অমুক ক্লাবের দূর্গা পূজা যেখানে হয় তার কাছে।সেখানে মন্দিরের ঠিক পাশে একটা বাড়ি বিক্রি হবার কথা চলছিল।সেটি চড়া দামে কেনেন জনৈক মুসলিম ভদ্রলোক।তারপরেই ঝামেলা শুরু হয়।উল্লেখ্য যে আমাদের পাড়া মোটামুটি ভাবে মিক্সড হ্যাবিটেশন হলেও ও পাড়াটা মূলত হিন্দু বসতি।যে লোকটি বাড়ি বিক্রি করেছিল তাকে পাড়ার কিছু লোকে ধরে পেটায়।তার অপরাধ সে ক্যানো মন্দির সংলগ্ন বাড়ি মুসলমানকে বিক্রি করেছে।ঘটনাচক্রে সেই মার খাওয়া লোকটির অধিকাংশ বন্ধুই ছিল আমাদের পাড়ার খেটে খাওয়া মানুষ জন।এবং এর মধ্যে দু ধর্মের লোকেরাই ছিল।এরা মার খাওয়া লোকটির পক্ষ নেয়।দু পাড়ার মধ্যে সংঘর্ষ লাগার উপক্রম হয়।আমরা শিক্ষিতেরা যথারীতি ল্যাজ গুটিয়ে নিজেদের ঘরে লুকিয়ে ছিলাম সেটা বলাই বাহুল্য।পুলিস আসে।যারা লোকটিকে মেরেছিল তাদের কিছু বলেনি।যারা মার খাওয়া লোকটির পক্ষে দাঁড়িয়ে ছিল তাদের মধ্যে একজনকে ধরে নিয়ে চলে যায়।

    এটা একটা অবিশ্বাসের আবহ তৈরী করে দিয়েছিল।অনেক গুলো কথা উঠে আসতে শুরু করে।যেমন মুসলমান যদি মন্দিরের পাশে বাড়ি কেনাতে মন্দির অপবিত্র হয় তাহলে ওরা এতদিন আমাদের মুসলমানেদের চাঁদা নিয়ে গেছে ক্যানো। এবং এতবছর ধরে চাঁদা নেওয়া সত্ত্বেও কোনোদিন মন্ডপে যাওয়ার জন্য আমাদের মৌখিক আমন্ত্রণ জানায় নি,প্রসাদ তো দূর অস্ত।অথচ,লালবাগ সমেত বেশ কিছু জায়গার পূজোয় শুনেছি এবং জানিও যে পাড়া শুদ্ধু সবাই ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে পূজো প্যান্ডেলে এসে আড্ডা দেয়,জমিয়ে প্রসাদ খায়। ওপাড়ার অনেকেই আমার পরিচিত।তারা গঙ্গায় যেতে হলে আমাদের পাড়ার মধ্যে দিয়েই যেতেন যেহেতু আমাদের পাড়াটা গঙ্গার কাছে।তারা দেখলাম যাতায়াত বন্ধ করলেন।বেশ কিছুদিন এই অস্বস্তিটা রইলো।

    মাঝের দুবছর এই ক্লাবটি আমাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয় নি।তারপরে আবার নিতে শুরু করে।স্বাভাবিক হওয়ার কিছুদিন পরে এই চাঁদা চাইতে আসা ছেলেদের সাথে আমার একটি স্বভাব বিরুদ্ধ তর্কাতর্কি হয়।তাদের কিছু আচরণ আমার ভালো ঠেকেনি।অবশ্য উত্তেজিত অবস্থায় আমিও যে খুব যৌক্তিক উত্তর দিয়েছিলাম এমনটা দাবী করছিনা।তারা চলে যাওয়ার পর পরিচিত এক মুসলিম আমায় বললেন ‘দেখলে তো।হিন্দুরা এরকমই হয়।তুমি যে ক্যানো ওদের সাথে এত মেশো তা বুঝিনা।কোনো মুসলমানেরই হিন্দুদের সাথে মেশা উচিত না’।

    আমি খানিক অবাক হয়ে বলেছিলাম, ‘দেখুন,আমি ওদের বক্তব্যকে সমর্থন করিনি আর তার মানে এই নয় যে আমি আপনার বক্তব্যকেও সমর্থন করছি।আমি আপনার মতে বিশ্বাসী নই’।

    গুজরাত গণহত্যা যখন হয় তখন আমি সদ্য স্কুল ছেড়েছি।মিডিয়াতে প্রথম দিকে অত খবর পেতাম না।পরবর্তীকালে যখন বিস্তারিত খবর পড়েছি আর কি ঘটেছে তা জেনে শিউরে উঠেছি,সেসব কিছু মুসলমান হিসেবে পরিচয় দিতে গিয়ে ভয় পাওয়ার অনুঘটক হিসেবে কাজ করেছিল।

    সম্ভবত, ব্রাট্রান্ড রাসেলের লেখা বা সম্পাদিত দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপরে ‘ওয়ার ট্রাইবুনালস’ নামে একটা বই পড়েছিলাম যেখানে নাজিদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে কিভাবে বন্দী ইহুদিদের উপর অত্যাচার চালানো হত তার বর্ণণা ছিল।গুজরাতে কিভাবে পুলিশ নিষ্ক্রিয় হয়ে হাত গুটিয়ে বসে ছিল আর হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলি অবাধে হত্যালীলা চালিয়েছে তার বিবরণ আমার মত অনেকেরই মনে এক অন্ধকার পৃথিবীর জন্ম দিয়েছিল সাময়িক ভাবে।হিন্দু বাড়িগুলো যাতে আক্রান্ত না হয় তার জন্য নির্দিষ্ট রঙের পতাকা টাঙ্গিয়ে রাখার নির্দেশ ছিল।তরোয়াল হাতে উদ্যত হিন্দু যুবকের ছবি আতংক জাগিয়েছিল।একটি নির্বাচিত প্রশাসন কিভাবে তার অধিবাসীদের অকাতরে কচুকাটা হতে দেখতে পারে তা বোধগম্য হয়নি।বিদ্বেষ আর ভয়ের এক অদ্ভূত সীমান্তে তখন বাস করছিলাম।

    এরপরে গঙ্গা দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে গেছে।গুজরাত গণহত্যার ক্ষতটাও ভুলেছি।আমার অনেক সংখ্যাগুরু বন্ধু গুজরাত গণহত্যাকে গোধরা কান্ডের স্বতস্ফূর্তঃ প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখেন।আমার সামনেও এটা অনেকে বলেছিলেন।আমি গোধরা কান্ড কে সমর্থন করিনি।দোষীদের শাস্তি হওয়া টা উচিত।কিন্তু একটা অন্যায় দিয়ে কিভাবে আরেকটা অন্যায় কে জাস্টিফাই করা যায় টা বুঝিনি।

    যেকোনো ঘটনা দেখার অনেকগুলো দৃষ্টিকোণ থাকে।গোধরা কান্ড এবং গুজরাত গণহত্যা’কে আমাদের নির্মোহ দৃষ্টিতে এবং মানুষের জায়গা থেকে দেখা উচিত ছিল।কিন্তু আমরা বেশিরভাগ মানুষই তা করতে ব্যর্থ হয়েছি।এই নিন্দনীয় ঘটনার সমালোচনা করতে গিয়ে আমরা অনেকেই নিজেদের হিন্দুত্বে বা মুসলমানত্বে ফিরে গেছি,প্রতিশোধের আঁচে নিজেদের স্যাটিস্ফেকশন খুঁজেছি।

    বাঙালি মুসলমানের এমনিতেই অনেক সমস্যা।প্রথমে তাকে সিদ্ধান্ত নিতে হয় যে সে বাঙালি না মুসলিম।সংখ্যাগুরু হিন্দুদের একটা বড় অংশের ধারণা যে বাঙালি মানেই হিন্দু।মুসলমানেরাও যে বাঙালি হতে পারে তারা সেটা ভাবেনই না।ওই টেলিভিশনে যখন দেখায় বিশ্বের যেখানেই বাঙালি আছে সেখানেই দূর্গাপূজো হয় গোছের খবর তখন তারা একবারও দেখায় না যে দুনিয়াজোড়া বেশ কিছু বাঙ্গালি’র কাছে ঈদও একটা বড় উৎসব।আসলে আমাদের দেশে হিন্দু মুসলমানের সম্পর্কের বাঁধনটা বরাবরই খুব দুর্বল।বাঙালি মুসলমান কে সর্বদা তার ভারতীয় পরিচয় নিয়ে সচেতন থাকতে হয়।সংখ্যাগুরু হিন্দুদের একটা অংশ যে মুসলমানেদের ঘৃণার চোখে দ্যাখেন সেটা প্রতিষ্ঠিত সত্য।আমি নিজেই এরকম বহু উদাহরনের সাক্ষী।ফলে পাকিস্তানের সাথে ক্রিকেট খেলায় ভারত জিতলে মুসলমানকে তার দেশপ্রেমের প্রমাণ দিয়ে প্রকাশ্যে আনন্দ করতেই হবে।না করলেই সমীকরণ তৈরী আছে।আর করলেও অনেকে ভাববেন যে ব্যাটা বাইরে আনন্দ দেখাচ্ছে বটে কিন্তু আসলে হতভাগা ওই পাকিস্তানেরই সাপোর্টার।

    এই বিপন্ন আইডেনটিটি নিয়ে আরেকটা কথা বলার আছে।আমি অনেক সময়ই খুব প্রতিষ্ঠিত লোক যারা সংখ্যাগুরু সমাজের তাদের মুখে শুনেছি যে অপরাধীদের সিংহভাগই মুসলিম আর এটাই প্রমাণ করে যে মুসলিমরা চারিত্রিক ভাবেই অপরাধ প্রবণ।বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষক বন্ধুও আমায় একই যুক্তি দেখিয়ে বলেছিলেন , ‘এরপরেও যদি কেউ মুসলমানেদের অবিশ্বাস করে তাহলে তার কি দোষ বল?’

    এরসাথে এসেছিল তপসিয়া,পার্ক সার্কাস,তিলজলা ইত্যাদি অপরাধ প্রবণ এলাকার নাম যেখানে মুসলিমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ।সমস্যা হচ্ছে যে এটা কেউ ভাবেন না যে সঠিক শিক্ষা আর দারিদ্র্যের জন্যই অধিকাংশ অপরাধী তৈরী হয়।এর সাথে ধর্ম বা বর্ণের কোনো সম্পর্ক নেই।

    সলিমদের একটা অবিশ্বাস আর ঘৃণার দৃষ্টিতে দেখা হয়।উস্তাদ রশিদ খানের গান শুনতে শুনতে আমাকে এক অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আমায় বলেছিলেন,
    ‘অদ্ভূত জাত।এরকম গানও করে আবার মাথা কাটতেও হাত কাঁপেনা’।

    এ লেখা যখন লিখছি তখন খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পরবর্তী কনসিকোয়েন্স হিসেবে মুসলিম বিদ্বেষ প্রকাশ করার অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে।কবি সেখ সাহেবুল হক বেলঘরিয়া স্টেশনের মেস ভাড়ার বিজ্ঞাপনের ছবি সোস্যাল সাইটে পোস্ট করে দেখিয়েছেন যে পরিষ্কার লেখা আছে ‘মুসলমান চলবে না’। সুহৃদ রা খবর দিচ্ছেন যে কলকাতার অনেক জায়গায় ভাড়াটে মুসলমান কে ঘর ছাড়তে বলা হয়েছে।এরকমটা ভাবার কারণ নেই যে এই বিদ্বেষ বা ভয়ের আবহ খাগড়াগড় বিস্ফোরণের পর শুরু হয়েছে।এটা আগে থেকেই ছিল।এ বছরের মাঝামাঝি ঘটনা,বহরমপুরের কবি হিসেবে পরিচিত জিনাত ইসলাম খোদ বহরমপুরের বুকেই কাদাই-এর কাছে ফ্ল্যাট কিনতে গিয়ে ফিরে এসেছেন।প্রোমোটার সবিনয়ে জানিয়েছেন যে কোনো মুসলিম কে ফ্ল্যাট দেওয়া যাবেনা এই শর্তেই জমির মালিক তাকে ফ্ল্যাট করতে দিয়েছেন।রাজনৈতিক নেতাদের কাছে গিয়েও লাভ হয়নি।তারাও ঘুরিয়ে এই বিভাজন সমর্থন করেছেন।

    অনেক ক্ষেত্রেই এই বিদ্বেষের কোনো কারণ থাকেনা।ক্যানো ঘৃণা করেন মুসলিমদের, এ প্রশ্নের উত্তর অনেকেই দিতে পারবেন না।তবুও ঘৃণা করা হয়।ঘৃণার ইতিহাস খুব সুপ্রাচীন।

    আগেই একবার বলেছি যে মুসলিম কে তার ভারতীয়ত্বের প্রমাণ দিতে হয়।মাস্টার্স পড়ি,কোনো একটা মন্দিরে বিস্ফোরণ হয়েছিল।ইসলামিক উগ্রবাদীরা ঘটিয়েছিল।সেদিনই ট্রেনে কল্যাণী থেকে ফিরছিলাম।ফেরার পথে পরিচিতদের মেসেজ করে এই ঘটনার নিন্দা করে যাচ্ছিলাম।আমার সামনে এক পরিচিত মুসলিম বসেছিলেন।চুপচাপ।গোটা ট্রেন জুড়ে সেই বিস্ফোরণের চর্চা চলছিল।আমরা দুজনও জোর গলায় প্রতিবাদ করছিলাম।নিজের নাম বলতে ভয় লাগছিল।মনে হচ্ছিল নাম বললেই আমাদেরও ধরে নেওয়া হবে অপরাধীদের দলে।এবং প্রতিবাদ করার তাড়াহুড়োতেও মনে হচ্ছিল যে কোথাও আমাদের নিজেদের নিরপরাধ প্রমাণ করার তাগিদ থেকে যাচ্ছিল।

    মুসলমানেদের কাছে আরেকটা বড় সমস্যা হল ইসলামিক জঙ্গীবাদের বাড়বাড়ন্ত।এরা ধর্মের নামে মানুষ কাটে।এবং এর বিরুদ্ধে সাধারণ মুসলিম সমাজ থেকে সেভাবে সোচ্চার প্রতিবাদ উঠে আসেনা।যদিও এখন প্রতিবাদ আগের থেকে বেশি হচ্ছে।তবুও এর আরও ব্যাপ্তি দরকার।ফিলিস্তিনে মানবতা আক্রান্ত হলে পাশের দেশ বাংলাদেশেও হয়।সেটার বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ করাটা দরকার এবং আগে দরকার।

    একটা বয়স অব্দি আমার ধারণা ছিল যে এই সাম্প্রদায়িকতা আসলে সংখ্যাগুরুর অধিকার।সংখ্যালঘুর সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে ধারণা হয়েছে আরও পরে।আমাদের গ্রামে যেখানে বছরে দুদিন আমরা যাই,একদিন খবর পাওয়া গেল যে গ্রামের এক ব্যক্তি সে সপরিবারে মুসলমান থেকে ক্রীশ্চান হয়েছে।আমি লোকটিকে আগেও দেখেছি।খুব হত দরিদ্র অবস্থা।প্রায় খেতে পেতনা।গ্রামে ধর্মের মুরুব্বীদের মধ্যে মিটিং হল যে এভাবে ধর্ম ত্যাগ করা বেইমান কাফের কে গ্রাম থেকে তাড়াতে হবে বা তাড়ানো উচিত।আমি তখন স্কুলে উঁচু ক্লাসের ছাত্র।আমি অবাক হয়েছিলাম এটা ভেবে যে লোকটা অ্যাদ্দিন খেতে পেতনা মুসলিম হয়ে তা নিয়ে কারুর কোনো মাথাব্যথা ছিল না।ক্রীশ্চান হয়ে চার্চের দৌলতে সে একটা কাজ পেয়েছে,তার ছেলে মেয়েরা স্কুলে পড়তে পারছে।তাহলে এতে বাকিদের সমস্যাটা কোথায়? নাকি,ধর্মও আদতে সেই সংখ্যাতত্ত্ব মেনে চলে? ওড়িশার অনেক ক্রীশ্চান আদিবাসীকে বজরং দল বা আরএসএস আবার হিন্দু ধর্মে ফিরিয়ে আনে বলে পড়েছি।তাহলে ধর্মও সেই মেজরিটি গেম খেলে থাকে যাতে অন্যের উপর নিজের জোর ফলানো যায়।

    কলেজে উঠে আরেকটা ঘটনা ঘটলো।আমার ছোট ফুপা,মানে ছোট পিসেমশাই চাকরি সূত্রে আমাদের গ্রামেই থাকতেন।তার মেজ মেয়ে,আমার পিসতুতো বোন ভালোবেসে এক হিন্দু ছেলে কে বিয়ে করলো।তাতে গ্রাম তোলপাড়।আমাদেরই অনেক আত্মীয় পরিজন ঘনঘন মিটিং করলেন যাতে পিসেমশাইকে গ্রাম থেকে উচ্ছেদ করা যায়।আমাদের নিজস্ব পারিবারিক পরিচিতি আছে,তার সুবাদে ব্যাপার টা বেশিদূর গড়ালো না,তবে পিসেমশাই এর অসহায় মুখটা আমার মনে আছে আজও।আমি স্কুলে পড়ার সময় আমার এক দাদা এক হিন্দু মেয়েকে ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন।তা নিয়ে আমি আমার বাড়িতে কান্নার রোল পড়তে দেখেছি।জাত ধর্ম যে আর কিছু রইলো না এবং এরফলে সমাজে মুখ দেখান যাবেনা,এটাও শুনেছি। আরেকটা কথা বলে রাখা দরকার,আমার বৌদিকে মুসলিম ধর্মে রূপান্তরিত করা হয়েছিল এবং একইভাবে আমার পিসতুতো বোনও বিয়ের পর হিন্দু ধর্মের আচার পালন করে থাকে।

    মুসলিমদের মধ্যেও অনেকে হিন্দুদের চরম ঘৃণা করেন এটা নিজেই দেখেছি।যেহেতু তারা সংখ্যায় কম তাই আরএসএস বা বজরং দলের মত গলা ফাটিয়ে জাহির করতে পারেন না বটে,তাই বলে বিদ্বেষের চাষ বন্ধ থাকেনা।হিন্দুরা অনেকসময় মুসলিমদের বাড়ি ভাড়া দেন না বলে কথা শোনা যায়।অনেকাংশে সত্যি।আমি নিজেই কল্যাণী’তে নিজের নামে ঘরভাড়া পাইনি।খোদ বহরমপুর শহরেই কল্যাণী বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক বন্ধু জিয়াউল রহমান কে তার এক বন্ধুর মেসের মালিক মুখের উপর বলেছিলেন যে তার বাড়িতে মুসলমানেদের থাকা চলবেনা।কিন্তু কয়েনের উলটো পিঠটাও তো আছে। আমার শহরেই অনেক মুসলমান বাড়ীওলা আছেন যারা হিন্দু ভাড়াটে’কে বাড়ি ভাড়া দেবেন না।হিন্দুরা ঘর ভাড়া দেয় না,এটা নিয়ে চেঁচামেচি শুনি,কিন্তু অনেক মুসলমানও যে একই কাজ করে থাকেন,তা নিয়ে কথা হয় না ক্যানো? যারা সংখ্যাগুরুর সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে কথা বলেন তারা অনেক ক্ষেত্রেই সংখ্যালঘুর সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে চুপ করে থাকেন।এতে বিরুদ্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তি’র হাতই যে শক্ত হয় এটা কি তারা বোঝেন না নাকি বুঝেও বুঝতে চান না তা খোদায় মালুম।

    যারা তসলিমা নাসরিন কে কলকাতায় থাকতে দেওয়ার বিরুদ্ধে মিছিল করেন বা শাহবাগে জামাতি’দের বিরুদ্ধে আন্দোলন হলে তা নিয়ে পার্ক সার্কাসে জমায়েত করে বিক্ষোভ দেখান,তারাও আরএসএস বা বজরং দলের থেকে কিছু কম সাম্প্রদায়িক নন,এই সারসত্যটা বোঝা উচিত।

    প্রাতিষ্ঠানিক রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের স্বার্থে সংখ্যালঘু তোষণের রাজনীতি করে। মুসলিমরা ভোটব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার হয়।এ অভিযোগ শুনে থাকি।কিন্তু মুসলিমরা নিজেদের ভোট ব্যাঙ্ক হিসেবে ব্যবহার হতে দেয় ক্যানো,সেটাও বুঝিনা।রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তার নির্লজ্জ তোষণ নীতি’র উদাহরণ রেখে কিছুদিন আগে ‘ইমাম ভাতা’ চালু করলেন।যদি মুসলিমদের উপকারই করতে হত তাহলে উচিত ছিল মুসলিম অধ্যুষিত এলাকায় আরো কিছু স্বাস্থ্যকেন্দ্র খোলা কিংবা আরও কটা স্কুল খোলা,তা না করে উনি ইমাম দের টাকা বিলিয়ে তাদের মাধ্যমে মুসলিমদের হাতে রাখতে চাইলেন।এটা নিয়ে শিক্ষিত মুসলিমরা খুব একটা সন্তুষ্ট তা নয়,কিন্তু তারা এটা নিয়ে প্রকাশ্যে মুখ খোলেন নি সেভাবে।আরএসএস যে পায়ের তলায় এই রাজ্যে জমি পাচ্ছে তার অন্যতম কারণ এই ইমাম ভাতা।অথচ শিক্ষিত মুসলিম রা প্রতিবাদ করলেন না।ইমাম সম্প্রদায় যারা নিজেদের মুসলিমদের হর্তাকর্তা বিধাতা মনে করেন তারাও হাত পেতে টাকা নিতে দ্বিধাবোধ করেন নি।

    মুসলিম সংগঠনগুলোর কাজকর্মও বোঝা দায়।তারা সুদূর ফিলিস্তিনে মানবতা আক্রান্ত বলে পোস্টার লাগান।সভা করেন।অথচ বাড়ির পাশের দেশে যখন হিন্দুরা সেখানকার কিছু বর্বর মুসলিমদের হাতে আক্রান্ত অত্যাচারিত হয় তখন তা নিয়ে মুখ খোলার প্রয়োজন বোধ করেন না।এদের মানবিকতাও ধর্ম ভিত্তিক।টিপু সুলতান মসজিদের ইমাম সাংবাদিক ডেকে ফতোয়া দিতে পারেন যে কাকে ভোট দিতে হবে অথচ আল কায়দা সমেত বিভিন্ন ইসলামিক উগ্রবাদী সংগঠনের পৈশাচিক কাজকর্মের বিরুদ্ধে একবারও মুখ খোলেন না।শিক্ষিত মুসলিমদের মধ্যে যারা ধর্ম টা মেনে থাকেন,তাদের অনেকবার জিজ্ঞেস করেছি এটা নিয়ে।তারা জানিয়েছেন যে জঙ্গীরা যা করছে তা ইসলাম নয়।কিন্তু যদি তা ইসলাম না হয়,তাহলে তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ কেন করা যায় না,এটাও বুঝিনা।নিরাপদ দূরত্ব রাখা ভালো কিন্তু নিজের ঘরে আগুন লাগা অব্দি অপেক্ষা করাটা বোধহয় বুদ্ধিমানের কাজ নয়।
    মুসলিমদের মধ্যে একাংশ আছেন যারা পাকিস্তান কে সাপোর্ট করেন।সাপোর্ট করেন পাকিস্তান কে মসীহা ভেবে।এটা ভাবেন না যে সাতচল্লিশের পর যারা পাকিস্তানে গিয়েছেন তাদের একটা বড় অংশ এখনও নাগরিকত্ব পান নি।পাকিস্তানে তাদের ‘মুহাজির’ বলা হয়। এবং অনেকেই আছেন যারা মনের মাঝে এই জঙ্গী গোষ্ঠী’র প্রতি সফট কর্নার রাখেন। বোকো হারাম বা আল কায়দা শুধু বিরুদ্ধ ধর্মের লোকেদের মারেনা,বিরুদ্ধবাদী মুসলিমদেরও মারে।কদিন আগেই বোকো হারাম নাইজেরিয়াতে একটি ধর্মস্থানে বিস্ফোরন ঘটিয়ে জনা ষাটেক মানুষ মেরেছে এবং তারা হিন্দু নয়।

    রাষ্ট্রের মূল সমস্যা হল সে যখন তার পেয়াদাদের ডেকে আনতে বলে তখন তারা বেঁধে আনে।সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে যে উগ্র মৌলবাদীদের দাপট বাড়ছে,কিছু মাদ্রাসায় আপত্তিকর কাজকর্ম হচ্ছে,এটা কিন্তু আজকের তথ্য নয়।এমনিতে সীমান্তরক্ষা বাহিনীর সৌজন্যে বাংলাদেশ থেকে ভারতে আসা বা যাওয়াটা কোন ব্যাপার নয়।সেক্ষেত্রে এই এলাকাগুলো দীর্ঘদিন ধরেই অবাধ চোরাচালানকারী আর মৌলবাদীদের সেফ প্যাসেজ হয়ে আছে।প্রশাসন যদি বলে যে অ্যাদ্দিন তারা জানতোনা,তাহলে তারা মিথ্যে বলছে।এবার বেঁধে আনার গপ্পটা বলি।সীমান্তের কাছে এক মুসলিম বাড়িতে কোনো এক আত্মীয়ের বাড়ি গিয়েছি।সে বাড়িতে একজন মারা গিয়েছেন কিছুদিন আগে।মুসলিমদের কেউ মারা গেলে চল্লিশ দিন পর একটি অনুষ্ঠান হয়।একে সাধারণতঃ চল্লিশা বলা হয়।সেই উপলক্ষেই যাওয়া।খেতে বসবো।মাটিতে সারি সারি পাত পড়েছে।রাস্তার ধারেই বাড়ি।আমাদের সাথেই খেতে বসেছিল স্থানীয় একটি অনুমোদনহীন মাদ্রাসার কিছু কিশোর ছাত্র।আচমকা একটি পুলিস ভ্যান রাস্তা দিয়ে গেলো।তক্ষুণি সেই কিশোরেরা পাত ছেড়ে দুদ্দাড় করে দৌড়ে পালিয়ে গেল।পরে জানতে পারলাম পুলিস উগ্রপন্থী খোঁজার জন্য এদের মাদ্রাসাতেও হানা দিয়েছে রাত বিরেতে এবং নিশ্চয়ই এই কিশোরদের সাথেও খুব একটা শোভনীয় আচরণ করেনি নইলে তারা পুলিস দেখেই এভাবে পালাতো না।এই ঘটনা পূর্বতন সরকারের আমলের।বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য তখন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন।মাদ্রাসা মানেই জঙ্গী আখড়া নয়।কিছু মাদ্রাসা অবশ্যই জঙ্গীদের আড্ডা হয়ে গেছে।প্রশাসন তাদের খুঁজে বার করুক।দোষীদের শাস্তি দিক।কিন্তু কোনোরকম সরলীকরণ হলে তা আদতে বিচ্ছিন্নতাবাদকেই অক্সিজেন যুগিয়ে যায়।

    বিশাল ভরদ্বাজের হায়দর দেখার আগের ঘটনা।আমাকে ছোট ভাই এর মত স্নেহ করেন,এরকম এক রাজনৈতিক নেতা,আমায় ট্রেনে ফেরার পথে বললেন যে মুর্শিদাবাদের নবগ্রামে সেনা নিবাস করা হয়েছে কারণ প্রশাসন আন্দাজ করছে যে ভব্যিষতে মুর্শিদাবাদ মালদা রেঞ্জে মুসলিমরা বড়সড় ভারত বিরোধী গোলমাল পাকাবে।তাই এটা আগাম সতর্কতা।আমি হাঁ করে রইলাম।কারণ,আমার জানা ছিল যে এই সেনা নিবাস আদতে কর্ম সংস্থানের সূযোগ তৈরী করবে।তারপর বললাম যে এর থেকে এখানকার মানুষ যাতে উগ্রপন্থাকে বেছে না নেয় তার ব্যবস্থা করাটা ভালো নয়?উনি অপ্রস্তুত হলেন।স্বীকার করলেন যে বিষয়টা ভাবেন নি এভাবে।এবং বাস্তবটা হল যে আমরা অধিকাংশই এভাবে ভাবিনা।

    যারা মুর্শিদাবাদে এসেছেন বা খোঁজ রাখেন,তারা জানেন যে এখানে দারিদ্র্য খুব প্রকট।মুর্শিদাবাদের প্রচুর লোক বাইরে রাজমিস্ত্রির কাজ করতে যায়।সেটাই অনেকের কাছে রোজগারের সোর্স।এর আরেকটা অর্থ হল যে মুর্শিদাবাদে কাজ নেই।সীমান্তবর্তী এলাকায় চোরাচালান জীবিকা হিসেবেই ধরা হয়।পড়াশোনা করে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নটা অনেকের কাছেই বিলাসিতা।উগ্রবাদীদের কাছে বিকিয়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ কিন্তু এটা।বর্ধমানের খাগড়াগড়ের বিস্ফোরণ কান্ডে যারা ধরা পড়ছেন তারা অধিকাংশই নিম্ন আর্থিক বর্গের মানুষ আর প্রথাগত শিক্ষা পান নি।এদের সামাজিক উন্নয়নের মূল স্রোতে আনতে পারলে হয়ত চরম উগ্রবাদের বিরুদ্ধে কিছুটা প্রতিরোধ গড়ে তোলা যাবে।

    ইস্কুলেই পড়ি।এক সম্পর্কিত আত্মীয় আপত্তি জানাচ্ছিলেন স্কুলের ইতিহাস বই তে আকবরের ছবি নিয়ে।ওনার মতে ছবিতে আকবরের দাড়ি নেই।অথচ আকবরের নাকি ফার্স্টক্লাস দাড়ি ছিল।বকলমে যেটা বলছিলেন যে হিন্দুরা চক্রান্ত করে আকবরের দাড়ি বাদ দিয়েছে।আকবরের দাড়ি থাকলো কি না থাকলো তাতে কি আসে যায় সেটা তখনও বুঝিনি।পরে বুঝলাম দাড়ি রাখা মুসলমানত্বের ট্রেডমার্ক।

    বিদ্বেষ খুব সন্তর্পণে তৈরী হয়।আমার এক হিন্দু বন্ধুর মুখে শুনেছি যে তারা শুনেছেন যে মক্কায় হজ করতে গিয়ে মুসলমানেরা শিবের মূর্তির দিকে পাথর ছোঁড়ে।আমি শুনেছি হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থে আল্লাকেই মান্যতা দেওয়া হয়েছে অথচ কাফের রা তা বাইরে স্বীকার করেনা।এভাবেই প্রচুর অসত্য তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া হয় ইচ্ছাকৃত যাতে ধর্ম ব্যবসায়ীদের ব্যবসার ভিত টা মজবুত হয়।

    মুসলিম হওয়ার অসুবিধে হল যে তাকে কখনই ভুলতে দেওয়া হয় না যে সে মুসলিম।প্রাইমারি স্কুল থেকে কর্মক্ষেত্র ছাড়িয়ে জীবনযাপনের প্রত্যেকটা স্টেপে আমাকে কোনো না কোনোভাবে মনে করিয়ে দেওয়া হয়েছে যে আমি মুসলিম।বাম রাজনীতি করি।সেখানেও ইসলামিক উগ্রবাদের বিরোধিতা করার কথা বলতে গিয়ে এক সহকর্মী বললেন ‘এই যে রাণা আলম,ইনি কিন্তু সমানে ইসলামিক উগ্রবাদের বিরোধিতা করে থাকেন’।মানে তার কাছেও আমি মুসলিম।এই কথাটা আমার বাবাও আমাকে বলেছিলেন যে পৃথিবীর যেখানেই যাও,তোমাকে কখনই ভুলতে দেওয়া হবেনা যে তুমি মুসলিম।সংখ্যাগুরুর দেশে সংখ্যালঘুকে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিক বলে ধরা হয়।অফিস-কাছারি সব জায়গায় এই বৈষম্যের ভুরি ভুরি নিদর্শন আছে।অতএব তাহলে কি গোঁড়া ইসলামিক আবহে মিশে যাওয়াটাই একমাত্র ভবিতব্য?বেশ শান্তিতে সেক্টরাইজড হয়ে বাঁচা যায়।

    তাতেও শান্তি কোথায়?কাশ্মীরী মুসলমানদের জন্য চোখের জল ফেলবো আর উচ্ছেদ হওয়া কাশ্মীরী পন্ডিতদের কথা ভুলে যাবো ? মানুষ কে ধর্মের নিক্তিতে মেপে বিদ্বেষের গোড়ায় ধোঁয়া দিয়ে রক্তের গন্ধ শুঁকে ঠিক কতদূর যাওয়া যায়? ঠিক কতদূর ?
    মাঝে মধ্যে মনে হয় যে একটা গভীর শূন্যতার মধ্যে হাতড়ে বেড়াচ্ছি আর নিরন্তর চাপে ভিতরটা দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে।

    ঠিক তাহলে মুসলমানত্ব টা কোথায় দাঁড়াচ্ছে? খানিক আইডেনটিটি ক্রাইসিস আর ধর্মীয় আবহের কড়চা নাকি পারিপার্শ্বিক সিস্টেমের মধ্যে নিজের জায়গা খুঁজে যাওয়ার ক্লিশে গল্প?

    অথবা কোনোটাই নয়।হয়ত অনেকগুলো কনফ্লিক্টিং আইকনের মধ্যে নিজেকে ডিফাইন করার অক্ষম প্রচেষ্টা কিংবা নিছকই একজন মাইনরিটির প্রাণপণে নিজেকে ‘সেকুলার’ প্রমাণ করার তাগিদ।

    নিন ওস্তাদ,গুচ্ছের বাজে বকে ফেললাম।এবার এই মেলোড্রামাটিক মনোলগ টাকে কোন ডাস্টবিনে ফেলবেন সেটা একান্তই আপনার ব্যাপার।

    চললুম।জয় হিন্দ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ মার্চ ২০১৫ | ১১৯৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • .22 | 212.142.118.75 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৮:৪০68511
  • গুচ্ছের বাজে বকবেন কেন! আপনার বক্তব্য খুবই গুরু-গম্ভীর। অচিরেই আলোচনার ঝড় বয়ে যাবে।

    ঝড়টি ভালভাবে পেকে ওঠার আগেই একটি কথা কয়ে যাই-
    আপনার একটা কথা আমার বড় মনে ধরেছে। আমরা যারা কট্টর ধর্মনিরপেক্ষ লোক, মানে যাঁদের ঈশ্বর টিশ্বর নিয়ে তেমন মাথাব্যথা নেই কিন্তু আদাবে বা নমস্কারে, গরুতে বা শুয়োরে, ছানার ডালনায় কিম্বা ডিমের ডালনায়, সবেতেই রুচি, তাঁদের নামাকরন নিয়ে ভারী সমস্যা। ইসলামীমতে আরবী নাম নিলে মুস্কিল, আবার এদিকে সংষ্কৃত নাম নিলেও মুস্কিল।

    এই ধরনের প্রবল ধর্মনিরপেক্ষদের একটি সুনির্দিষ্ট নামাকরনবিধি প্রণয়নের কথা গুরুরা ভেবে দেখতে পারেন। গুরুর অনেকেই দেখি অ্যালফ্যাবেট দিয়ে নাম নেন যেমন- রোমান a, b, d, h, I, k, m, p, S, T, (4)z...........কিম্বা গ্রীক π(Pi)। অর্থাত দেখা যাচ্ছে অ্যালফ্যাবেট- নামাকরনেও জাতিগত একটা ব্যাপার থেকেই যাচ্ছে। মানে এই ধরুন গ্রীক না রোমান, সোয়াহিলি না ককবরক। তাই জাত ধর্মনিরপেক্ষদের নামাকরনের বেলায় অক্ষরের বদলে সংখ্যা ব্যবহার করলে কেমন হয়? ধরুন কারো নাম যদি হত 3.14159, তবে তাঁকে কি আমরা চিনতে পারতাম না? গ্রীক বা হায়রোগ্লিফিক্স যাতেই লেখা হোক না কেন এভাবে লিখলে 3.14159 এর মান (এবং সম্মান) অপরিবর্তিত থাকত।

    এই ব্যবস্থাতেও কোনরকম সমস্যা হতে পারে কি? গুরুর গণিতপ্রেমীরা কি বলেন?

    খেয়াল করে দেখুন, আমার আব্বাজান আমার নামটি ঐরকম ধর্মনিরপেক্ষ নোমেনক্লেচার সিস্টেম ফলো করে দেওয়ায় আমায় আর রানাদার মত অতটা ধর্মসঙ্কটে পড়তে হয় নি।
  • Abhyu | 179.237.30.156 (*) | ১৭ মার্চ ২০১৫ ০৮:৪৫68512
  • রাণা খুব ভালো হয়েছে লেখাটা। আন্তরিক লেখা, আমি সহমত পোষণ করি। স্বাভাবিক্ভাবেই এর থেকে বেশি কিছু করে উঠতে পারি না।
  • h | 127.194.233.130 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৫68513
  • খুব সুন্দর হয়েছে এ লেখা, মানে কোনো প্রশংসাই যথেষ্ট না। নাম সম্পর্কে একটা বিচিত্র অভিজ্ঞতা আমাদের হচ্ছে।
  • dd | 132.172.149.128 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৪68514
  • এ নিয়ে আগেও একবার লিখেছিলাম। তা হোক।

    পশ্চিম বংগে থাকা কালীন আমার কোনো মুসলিম বন্ধু ছিলো না, খ্রীষ্টান ও নয়। মৌলানাতে পড়লেও - যে খানে প্রচুর মুসলিম ছাত্র - তারা ইস্লামিক হিস্ট্রী বা আরবী পড়তো। বাংলা ও পড়তো অনেকে। সবাই প্রায় গাঁয়ের থেকে এসেছে, মেলামেশা চল্লেও সখ্যতা হয় নি।কিন্তু ইকনোমিক্সের ক্লাসে একজন ও অহিন্দু ছিলো না। যদুপুরে এমে পড়তেও এক ই ঘটনা। পাড়াতেও কোনো মুসলিম/খ্রীষ্টান ছিলো না। (একাধিক) আপিসে ও সহকম্র্মীদের মধ্যে মুসলিম প্রেক্টিকেলি ছিলই না। যারা দু এক জন ছিলো তাদের সংগে এখনো যোগাযোগ আছে। অথচো পচ্চিম বংগে প্রায় ২০% মুসলিম।

    কিন্তু ব্যাংগালোরে অন্যরকম ঘটনা। বেশীর ভাগ লোকেই ফ্ল্যাট বাড়ীতে থাকে। প্রতিবেশী কোন ধর্মের কোনো ঠিক নেই। প্রোমোটারেরাও টাকা দ্যাখে - ধর্ম দেখে বাড়ী বেচে না।আমার তিন মে'র স্কুলে কালেজে অজস্র খ্রীষ্টান ও মুসলিম ছাত্র। তাদের সাথে বন্ধুতাও খুব সহজ। অহিন্দু মধ্যবিত্ত শ্রেণী খুব জম জমাট। ছোটো ব্যবসা,উকিল,ডাক্তার, সরকারি বেসরকারি কর্মচারি - সবেতেই প্রচুর মুসলিম/খ্রীষ্টান।

    অন্ততঃ আমার পরের প্রজন্মে সামাজিক -অর্থনৈতিক দিকটাই বেশী জরুরী। চারপাশে এতো কসমোপোলিটান সমাজ যে পদবী দেখে বন্ধুতা হয় না। এই লুরুতে।
  • sosen | 212.142.121.204 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:৪৪68515
  • রাণার লেখা খুব ভালো লাগল। কিন্তু প্রশংসা কইর‌্যা কি হবেক-রাণা আদপে সংখ্যালঘুর মধ্যেও আরেকটু সংখ্যালঘু হয়ে পড়ছে। বাক্সের মধ্যে বাক্স।
    সহমর্মিতা রইল ঃ)
  • কেসি | 47.39.138.202 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৪:৫৬68516
  • বাহ! ভাল লাগল। আমি নিজেও বহরমপুরের লোক বলে আরও বেশী রিলেট করতে পারলাম। কাটরা মসজিদের দাঙ্গা চোখের সামনেই দেখেছি। আপনার সঙ্গে আলাপ করার ইচ্ছে রইল।
  • byaang | 132.172.196.111 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৫:০৪68517
  • খুবই ভালো হয়েছে লেখাটা। আরো লেখা পড়ার অপেক্ষায় রইলাম।
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৫:০৮68518
  • বড্ড লম্বা। পুনরুক্তিও আছে। রাণার লেখার চোখা ব্যাপারটা অনুপস্থিত। অথ্চ খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
  • arindam | 213.99.211.18 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৫:১৯68519
  • হয়তো উদাহরণ টা হাস্যকর হবে, তবু ও বলি - এক সময় তো চেষ্টা ও হয়েছিল সমন্বয় ঘটানোর -এই বাংলাতেই - আজ ও বিভিন্ন বাঙালী হিন্দুর ঘরে সত্যনারায়ণের পুজো আর পাঁচালি পাঠের যে আয়োজন করা হয় সেখানে তো সেই সমন্বয়ের কথাই বলা হয়। ধর্মকে সহজ করে নেওয়ার ব্যাপারটাই হারিয়ে গেছে।
  • hu | 188.91.253.22 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৫:৩০68520
  • অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লেখা। ভালো লাগল।
  • সিকি | 166.107.90.66 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৫:৩৯68521
  • এইবার কমেন্ট করতে পারছি।

    লেখাটা খুব ভালো লাগল - তবে ঐ সোসেন যা কইল, রাণা তো বাক্সের মধ্যে বাক্স, তাই খুব সহজে রিলেট করতে পারলাম।
  • সোম | 60.245.29.233 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৫:৫৬68522
  • dd কিন্তু কমেন্টে একটা খুব ভালো কথা বলেছেন। আমি যখন বেঙ্গালুরুতে থাকতাম তখনও এটা দেখেছি । প্রচ্ছন্ন একটা ডিসটেন্স মেইনটেইন করার ব্যাপার থেকেই যায়, সেটা বেশিরভাগের মধ্যেই থাকে, কিন্তু কখনই সেটা প্র্কট সাম্প্রদায়িকতার পর্যায়ে পৌছে যায় না বেঙ্গালুরু তে - এবং পুরো কর্নাটকতেও । আমি তো দেখিনি।
    তাহলে? লেখাপড়ার ব্যবধান? না কিন্তু। অটোচালকদের, ছোট দোকানদারদের, ছোট শহরের হাটুরে লোকেদের মধ্যে নর্থ ইন্ডিয়ান বিদ্বেষ দেখেছি, ধর্ম বিদ্বেষ কখনো নজরে পড়ে নি তো । কালচার ? তাও না। আমাদের বাংলায় তো অসাম্প্রদায়িকতার অনেক ঐতিহ্য ।

    আসলে আমার মনে হয় ওই অর্থনৈতিক ব্যাপার টাই আসল। পয়সা কামানো থেকে সময় বার করতে পারলে তবেই তো লোক ধর্ম ধর্ম নিয়ে হা পিত্তেশ করবে । empty mind না হলে মাথায় শয়তান আসবে কেমন করে?

    শিক্ষা টিক্ষা ঠিক আছে, খুবই ভালো, কিন্তু প্রথমে বানিজ্য নিয়ে আসুন বাংলায় । লোকেদের চাকরি হোক, আসে পাশে ছোট পারিপার্শিক ব্যবসা গড়ে উঠুক । অনেক প্রবলেম ওখানেই চলে যাবে।
  • san | 113.245.14.207 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৬:০২68523
  • খুব আন্তরিক লেখা , ভাল লাগল।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৬:৩০68524
  • রাণার কলমটি খুবই ফুরফুরে, সাবলীল স্টাইল।
  • utpal mitra | 212.191.212.178 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৬:৫৫68525
  • খুব প্রসঙ্গিক লেখা।কিন্তু আমার মতো সন্খ্যালঘুতমদের (নাস্তিক) দের তো দুপক্খই বিরোধী। আসলে ধর্ম মানেই অনেক কিছুই বিনা প্রশ্নে মেনে নেওয়া। আপনার মতো আমরাও পরিচয় দিতে পারিনা সবসময়
  • de | 69.185.236.51 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৮:৪৩68526
  • খুবই প্রাসঙ্গিক লেখা - এই ঘরের মধ্যে ঘরে তো আম্মো বাস করি - তাই বুঝতে কোন অসুবিধে হোলো না।
  • Du | 230.225.0.38 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৯:১১68527
  • এইটা সদ্য খুঁজে পেলাম - So much blood has been shed by the Church because of an omission from the Gospel: "Ye shall be indifferent as to what your neighbor's religion is." Not merely tolerant of it, but indifferent to it. Divinity is claimed for many religions; but no religion is great enough or divine enough to add that new law to its code.
    - Mark Twain, a Biography
  • Tim | 188.91.253.22 (*) | ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৯:১৭68528
  • খুব দরকারী লেখা, খুব যে নতুন কথা সব এমন নয়, তবু গুছিয়ে লেখার দরকার ছিলো। অনেক ধন্যবাদ।

    নানা ধর্মের মানুষের যে খোপগুলো, নিম্ন-মধ্যবিত্ত বাড়ি থেকে আসার জন্য, খেলাধুলো করার জন্য সেই বিভেদরেখা থেকে সাময়িক মুক্তি পেতাম। ফুটবল বা অন্য যে খেলাগুলো তথাকথিত দুয়োরানি সেখানে গরীবেরা জোটে। সেইসব খেলার ইতিহাসেও সব আর্থ-সামাজিক স্তরের নায়কই থাকে। সেই হিসেবে যেদিন নায়িমের সাথে বন্ধুত্ব হয়েছিলো, মনে মনে হিংসে হয়েছিলো সঈদ নইমুদ্দিনের সাথে নামের মিল আছে বলে। এমনিতেও বেশ মুগ্ধ হয়েছিলাম ছেলেটার স্ট্রাইকিং এবিলিটি দেখে, মাঝমাঠ থেকে বলে বলে গোল করতো। তবে শুধু মুসলিম না, দলে এরকম অনেক ছেলেরাই খেলতো গা ঘষাঘষি করে যাদের সামাজিক ভেদ বেশ তীব্র। কিন্তু কোনদিন বিদ্বেষের রেশমাত্র দেখিনি মাঠে।

    এই ব্যাপারটা স্কুলে পেতাম না। সেই খোপের গল্প। কলেজে এক দুজন। ইউনিভার্সিটিতেও ঐ। পড়াশুনো থেকে শুরু করে একে একে সমস্ত বেঁচে থাকাটাকে খেলার মত করে নেওয়া যায় কিনা এটা মনে হয় ভেবে দেখার সময় এসেছে।
  • Biplob Rahman | 129.30.32.243 (*) | ২৩ মার্চ ২০১৫ ০৭:১৯68529
  • বেড়ালের ল্যাজ ধরে উঁচু করে মাথাটা নীচে দিলে যে বিপরীত চিত্র দাঁড়ায় তাই চলছে বাংলাদেশে!

    আমার এক হিন্দু বন্ধু বলেছিলেন, ছোটবেলা থেকে "মালাউন" গাল শুনে বেচে থাকার যে যাতনা, তা অন্যদের বোঝা মুশকিল। আর দিনাজপুরে এক বুড়ো সাঁওতাল বলেছিলেন, বাবু, আমরা সব সময় খুব ভয়ে থাকি।...

    নোটটি খুব ভালো।
  • SOVAN | 134.124.205.194 (*) | ৩১ মার্চ ২০১৫ ১১:০০68530
  • LEKHATA KASTOTA BARALO.KOTHAY KABE JE EI GONDI-OVYAS VANGBE AMADER.KABE JE SAMMAN KORTE,SAMMANANYO HOTE SHIKBO AAR...
  • প্রদীপ | 111.221.129.67 (*) | ০৭ এপ্রিল ২০১৫ ০৭:৩১68531
  • সত্য কে সত্য চখে দেখার ব্যথা একটু ওজনে বেশি হয়
    লেখাটি মধ্যে সত্য যেন কোথাও লজ্জা পাচ্ছে
    সুন্দর করে লেখার জন্যে ধন্যবাদ
    (আপনি ঠিক কোন ধর্মের বুঝে উঠতে পারলাম না;-) ;-)

    “এই পৃথিবী কখনো খারাপ মানুষের কর্মের জন্য ধংস হবে না। যারা খারাপ মানুষের খারাপ কর্ম দেখেও কিছু করেনা, তাদের জন্যই পৃথিবী ধংস হবে” –
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় প্রতিক্রিয়া দিন