এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বিউটি এ্যান্ড দি ব্রেন - ততসহ একালের কবিতা

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৬ আগস্ট ২০১৫ | ৮১২ বার পঠিত
  • আমি নিজের দিক থেকে কিছু বেশ পুরানো এবং বহুল প্রচলিত কথা ভাবছিলাম – এই যে ‘আর্ট’ (এখানে ধরা যাক কবিতা) তার সফলতা ঠিক কতটা বা কিভাবে নির্ভর করা উচিত যে পড়ছেন (বা যে দেখছেন) তাঁর উপর? এই প্রসঙ্গে V.S. Ramachandran এর লেখা “The Tell-Tale Brain” বইটির সপ্তম পরিচ্ছদে খুব সুন্দর আলোচনা আছে – “Beauty and The Brain – The Emergence of Aesthetics”. একটি বিখ্যাত উদাহরণ আছে, যেখানে বলা হচ্ছে শিল্পী Marcel Duchamp আর্ট গ্যালারীতে একটি প্রসাব করার চিনামাটির পাত্রগুলি ঝুলিয়ে রেখেছিলেন এই দাবী করে যে, “আমি বলছি যে এটা আর্ট – তাই এটা আর্ট”! এবার রামাচন্দ্রন প্রশ্ন ছুঁড়েছেন পাঠকের উদ্দেশ্যে যে কতবার আমরা কনটেম্পোরারী আর্ট গ্যালারী তে ঢুকে সেই ছোট বালকটির মত অনুভব করেছি যে খুব তাড়াতাড়ি ধরতে পেরে গিয়েছিল রাজার পরণে আদপেই কোন কাপড় নেই!

    আমি বেশ কিছু সত্যিকারের সাহিত্য প্রেমী মানুষের সাথে কথা বলে অনুভব করেছি যে সমকালীন কবিতা সম্পর্কে তাঁদের ধারণা অনেকটাই ওই আর্ট গ্যালারীতে ঢোকা ছোট বালকটির মত। অনেকেই মনে করেন, কবিদের পরণে কাপড় নেই বা থাকলেও খুব কম! ব্যাপারটা আরো কম্পিলিকেটেড হয়ে ওঠে যখন দেখা যায় যে, এই ব্যক্তিরাই আবার আধুনিক ‘গদ্য’ সাহিত্য বিষয়ে অনেকটা সহনশীল। তাহলে কি আমজনতার কাছে কবিতার মাপকাঠি আলাদা?
    যাঁরা আধুনিক কবিতা সম্পর্কে বিরূপ (বা সহনশীল নয় এমন) ধারণা পোষণ করেন, তাঁরা সবাই যে কম জ্ঞানী, পিছিয়ে পড়া, বা পড়াশুনা করতে বিমুখ – তা আদপেই নয়। তাহলে এমনটা হয় কেন? আমরা নিজেরাও অনেক ঢাল ব্যবহার করি – লিখে দিলাম, বা বোঝা মনে পাঠকের খামতি; এটা একান্তই আমি নিজের জন্য লিখছি, কেউ না বুঝলেও ক্ষতি নেই – এই সব। এ কিছু নতুন কথা নয়, অনেক আলোচিত। কিন্তু আমাকে যেটা অবাক করে সেটা হল, সোস্যাল মিডিয়াতে এবং ইন্টারনেটে (ফেসবুক, ব্লগ, ওয়েবসাইট ইত্যাদি) আজকাল যেন এই অসহিষ্ণুতার পরিমাণ অনেক বেড়ে গ্যাছে। ধরুন কেউ আধুনিক কবিতা নিয়ে বিরুপ মন্তব্য করল – আমার ধারণার সাথে না মিললেই আমি দুম করে বলে দিলাম এঁরা কবিতা বোঝেন না। এটা কি ঠিক? হ্যাঁ যদি দেখা যায় যিনি মন্তব্য করেছেন তাঁর কবিতা/শিল্প বিষয়ক কোন ব্যাকগ্রাউন্ড নেই, তাহলে সেটা উপেক্ষা করা যেতেই পারে – কিন্তু যদি দেখা যায় ইনি কবিতা নিয়ে নাড়াঘাঁটা করেন, তবুও এমন মন্তব্য করছেন – তাহলে কি সত্যি ধরে নেওয়া যায় ইনি কবিতা বোঝেন না?

    নাকি আমাদের রেফারেন্স ফ্রেম আলাদা – আমাদের ইন্ট্রোস্পেকশন আলাদা – আমাদের ভাবনা আলাদা – কবিতা বলতে আমি কি বুঝি বা কবিতার কাছে আমি কি চাই – এই সব আলাদা! তা যদি হয়, তাহলে কেবল আমিই ঠিক এই ভাবনার কোন মানে হয় না। যাঁরা আধুনিক কবিতাকে অস্বিকার করে নানা মন্তব্য করেণ, তা যেমন অনভিপ্রেত – ঠিক তেমনি অনভিপ্রেত যাঁরা ভালোবাসেন না তাঁদের লক্ষ্য করে পালটা মন্তব্য।

    আমি আমার গোলাপী পেনটার দিকে তাকালাম – অন্য কেউ আমার মনের মধ্যে ঢুকে দেখতে পারে না যে সেই গোলাপী রঙের সাথে আমার অভিজ্ঞতা ঠিক কেমন হল। সেই অভিজ্ঞতা কেবল আমারই। অবশ্যই অন্য লোকেদেরও ঠিক আমার মতই অনুরূপ অভিজ্ঞতা হতে পারে। যদি অন্য কেউ আমার গোলাপী পেন দ্যাখে, তাহলে নিঃসন্দেহে তারও আমার মতই রঙ সম্পর্কে অভিজ্ঞতা হবে। কিন্তু তার অভিজ্ঞতা তারই – আমার অভিজ্ঞতা একান্তই আমার। এখন আমার মনে হয় আমাদের এই একে অপরের অভিজ্ঞতার উপর হস্তক্ষেপ বা এক্সপেক্টেশন থেকেই হতাশার সূচনা।

    তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে সর্বজনীন বলে কি কিছুই হতে পারে না? মেসি সেরা ফুটবলার, ঐশ্চর্য্য সুন্দরী – বড়ে গুলাম আলি ভালো গায়ক এগুলি প্রমাণের জন্য অতো পরিশ্রমের দরকার হয় না কেন? তবে এ কেবল উদাহরণ মাত্র – কারণ সবার কাছে ঐশ্চর্য্য রাই সুন্দরী বা গোলাম আলি বড় গায়ক নাও হতে পারেন। এদের আবেদন ইউনিভার্সাল নাও হতে পারে, তাই এই সব জিনিসের 'ইউনিভার্সালিটি' নিয়ে অবশ্যই কথা থেকেই যাবে। আমি 'মেজরিটি রুলস' টাইপ ব্যাপার বলতে চাইছিলাম। ইনফ্যক্ট আমরা যারা অন্য ধরণের কবিতার লেখার চেষ্টা করছি তারাও কিন্তু এখনো পর্যন্ত ওই সংখ্যা লঘু। তবে আমি কিন্তু সংখ্যা গরিষ্ঠ বা লঘু সেই দিয়ে কোন জিনিস ভালো বা খারাপ বিবেচনা করতে চাইছি না আদপেই। যেমন ধরা যাক আমার এক বন্ধু জয় গোস্বামী পছন্দ করে না। সেটা আমার কাছে বিশাল বিষ্ময়ের কিছু না - সেই দলে আরো অনেকে আছে, এমন কি হয়ত আমিও। আমি নিশ্চিত যে কেন ভালো লাগে না, একটু চেষ্টা দিলে আমার বন্ধু বা আমি হয়ত তার কারণ ব্যখ্যা করতে পারবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এখন আমার বন্ধু যদি দাবী করে - বাকিদের জয় গোস্বামী সম্পর্কে ধারণা ভুল - জয় গোস্বামী বাজে কবি, এবং সেটাই ফাইন্যাল, এই ব্যাপারটা কতটা ঠিক। কারণ আমি নিশ্চিত যারা বলেছে ভালো লেগেছে, তাদেরো কিছু যুক্তি আছে –

    আমার নিজের স্ট্রাগেলটা চলছে ঠিক ওই খানে – আমাদের এই ভিন্ন পছন্দের উৎস কি কেবলমাত্র ওই ‘রেফারেন্স ফ্রেম’? নাকি শিক্ষা, অভ্যাস, আমাদের ব্রেনে তড়িৎ-নিউরোন ইমপালস্‌ ইত্যাদি ইত্যাদি। আগে যেমন বলেছি – যদি কেউ আধুনিক কবিতা না ভালোবাসে, সেটা কোন বড় ব্যাপার নয় – কিন্তু যদি দেখা যায় সেই ব্যক্তি অন্য আধুনিক আর্টকে ভালোবেসে ডিফেন্ড করছেন, কেবল কবিতা বাদে – তাহলে কি কোথাও ফাঁক থেকে যায়?

    অনেক দিন আগে থেকে খুব ছোট জিনিস একটা ভাবতাম – প্রথম যখন বিদেশ যাই, আমার বিদেশী বন্ধুদের দেখি বলিউড সিনেমা নিয়ে হালকা রসিকতার ভাব আছে – অর্থাৎ, বলিউডের (মূলত কর্মাশিয়াল) সিনেমা নাকি ‘রিয়েলেষ্টিক’ নয়! গাছের চারিদিকে একজন ছেলে একটি মেয়ের হাত ধরে ঘুরে ঘুরে গান গাইছে, এটা ভাবলেই তাদের বাস্তব থেকে অনেক দূরের ঘটনা মনে হয়। কিন্তু এরাই র‍্যাম্বো্র সিনেমা দেখছে কোন রকম প্রজুডিস ছাড়াই। এবার ভাবা যাক কোনটি বেশী বাস্তবের কাছাকাছি – র‍্যাম্বো একাই পুরো সোভিয়েত বাহিনীকে শেষ করে দিচ্ছে প্রবল বিক্রমে – নাকি একজন ছেলে – এক মেয়ের হাত ধরে গান গাইছে গাছের চারিদিকে! আরো অনেক উদাহরণ আছে, যা সব পড়ে বা দেখে আমার ক্রমশঃ মনে হতে শুরু করল যদি নিজের কিছু ভালোলাগে (কেন ভালোলাগে সেটা পরে আলোচ্য বিষয়) – আমরা অনেক সময় তলিয়ে দেখি না কেন ভালো না লাগছে, কিন্তু সেই ভালো লাগা ডিফেন্ড করার জন্য আমরা অনেক অনেক সময় ভন্ড যুক্তির আশ্রয় নিই। তবে এই ভন্ড যুক্তি বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ব্যবহার হয় – ইন কমপ্যারিজন টু আদার্স। মানে সাধারণ ভাবে মনে হতে পারে দুইই অবাস্তব (যেমন উপরে সিনেমার উদাহরণ) – কিন্তু আমি যেহেতু র‍্যাম্বো ভালোবাসি, আমি ক্রমশঃ ভন্ড যুক্তির আশ্রয় নেব এটা প্রমাণ করার জন্য যে কিভাবে র‍্যাম্বোর বাস্তবতা, বলিউডের গাছের চারিদিকে ঘুরে গান করার বাস্তবতার থেকে আলাদা। অসংখ্য ফালতু জারগন, মর্ডান – পোষ্টমর্ডান – ইত্যাদি ইত্যাদি এনে সেই আলোচনা ভরে উঠবে, কিন্তু সত্যি কেউ নিরপেক্ষ ‘অবসার্ভার’ থাকে তার কাছে এটা পরিস্ফুট হবে যে আদপেই আমরা নিজেদের ভালো লাগাকে ডিফেন্ড করছি। আবারো নিজের ভালোলাগাকে কি সত্যিই কি কোন ডিফেন্ডের দরকার আছে? বলেই দিলেই হল যে আমার ভালো লাগে – কিন্তু না, আমাদের গভীরে ঢুকে গেছে হিপোক্রেসী – হয়ত বা অবচেতন মনে আমরা সেটা জানিও – তাই আমাদের ডিফেন্ড করে যেতে হয়, কারণ আমাদের রেফারেন্স ফ্রেম ইন-কনসিসট্যান্ট।

    আসতে আসতে এই বিষয়ে পড়তে শুরু করে কিছু রেফারেন্স ও পাই। যখন বৃটিশরা ভিক্টোরিয়ান সময়ে ভারতে এলো তাদের কাছে ভারতীয় আর্ট নিয়ে পড়াশুনা মূলত বিবেচিত হত Ethnography ও Anthropology বলে। ভারতীয় শিল্পের নগ্নতা তারা ঠিক ভাবে না নিতে পেরে তাকে বর্ণনা করে প্রিমিটিভ হিসাবে এবং চিহ্নিত করে রিয়েলিষ্টীক নয় বলে। উদাহরণ স্বরূপ ধরা যাক চোল (দ্বাদশ শতাব্দী) সময়ের ব্রোঞ্জের ধাতুমূর্তি ‘পার্বতী’র কথা যা ভারতবাসির কাছে নারীত্ব, সৌন্দর্য্য, আকর্ষণ, লাস্য এই সবের চূড়ান্ত প্রতীক। কিন্তু বৃটিশরা যখন এই আর্ট দেখল, তখন তাদের অভিযোগ এল এই বলে যে সেগুলি নাকি আর্ট নয়, কারণ সেগুলি প্রকৃত নারীর সাথে সামঞ্জস্য বিহীন। স্তন ও পাছা খুবই বড়, কোমর সরু। ইংরাজদের এমন মন্তব্যের কারণ কি? কারণ তাদের অবচেতন মনে ভারতীয় আর্টের সাথে তারা তুলনা করছিল পাশ্চাত্য আর্টের – প্রধানত প্রাচীন গ্রীক ও রেনেশাঁসের সময়কার আর্টের যেখানে ‘রিয়েলিজম্‌’ প্রাধান্য পেয়েছিল।

    এখন যদি আমরা ভারতীয় আর্টকে ‘আধুনিক/নতুন/উত্তর আধুনিক কবিতা’ এবং পাশ্চাত্য আর্টকে ‘প্রচলিত/তথাকথিত কবিতা’ দিয়ে প্রতিস্থাপন করি তাহলে আইডিয়ার স্ট্রাগলের কথা অনেকটা অনুধাবন করতে পারব। অবচেতন মনে তথাকথিত কবিতার রেফারেন্স সেট করে আধুনিক কবিতা অনুধাবন করতে গেলে কিছু সমস্যা তো আসবেই। তবে সেই সমস্যা অনতিক্রমন্য কিছু নয় – সমস্যা গাঢ হয়, নতুন কিছু মানিয়ে নেবার ইচ্ছা বা ক্ষমতা না থাকলে।
    প্রশ্ন উঠতে পারে, আর্ট যদি কেবলি বাস্তবতা বা রিয়েলিজম্‌ সম্পর্কিত হয় – তাহলে আর্ট তৈরীর দরকারটাই বা কি? চোখ – কান খোলা রেখে প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়ালেই তো হয়! বেশীর ভাগ মানুষই একমত হবেন যে আর্ট কেবল বাস্তবতাকে তুলে ধরার জন্য নয়, বরং তার থেকে বেরিয়ে ভেঙে, চুড়ে, বাড়িয়ে, অনুভবে – সব মিলিয়ে মিশিয়ে আরো কিছু।

    যে বিদেশীরা ভারতীয় আর্টকে উপযুক্ত মর্যাদা দেয় নি রিয়েলিষ্টীক নয় বলে, তারাই আবার পিকাসোকে জিনিয়াস বলে অভিহিত করেছে যিনি নাকি আমাদের নিষ্ঠুর বাস্তবতা থেকে উদ্ধার করেছিলেন এই দেখিয়ে যে আর্ট-কে রিয়েলিষ্টীক হতে হবে এমন কোন কথাই নেই। পিকাসোর আঁকা মহিলা – মুখের একদিকে দুই চোখ, হাতবিহীন, নুয়ে পড়া – সন্দেহাতীত ভাবেই চোল সময়ের পার্বতীর মূর্তির থেকেও অনেকগুণের বেশী বিকৃত ছিল বাস্তবতা থেকে? তাহলে? এখানেও সেই দ্বৈত মানদন্ড – যারে দেখতে নারি, তার চলন বাঁকা, খুব কর্কশ ভাবে বলতে গেলে। পিকাসোর ব্রিলিয়ান্স নিয়ে প্রশ্ন করার ক্ষমতা আমার নেই – তবে পিকাসো যা করেছিলেন ওই ছবিতে, ভারতীয় শিল্পীরা প্রায় হাজার বছর আগে সেই একই জিনিস করে গ্যাছেন।
    অনুরূপ ভাবে উনবিংশ শতাব্দীর এক প্রখ্যাত ন্যেচারিলিষ্ট স্যার জর্জ ক্রিষ্টফার বার্ডউড মনে করতেন যে ভারতীয় আর্ট কেবলমাত্র ‘হস্তশিল্প’ (ক্রাফট) মাত্র। তিনি নাকি ভারতীয় দেবতাদের অনেক হাত দেখে অস্বাছন্দ বোধ করতেন এবং সেই মতমত এতই তীব্র ছিল যে ভারতীয় সভ্যতার প্রতিভূ নটরাজ মূর্তিকে তিনি বহু বাহু বিশিষ্ট দানব (multiarmed monstrosity) বলে অভিহিত করেছিলেন। ঘটনা হচ্ছে সেই ব্যক্তির আবার কোন সমস্যা ছিল না রেনেশাঁস আর্টে চিত্রিত ডানাওয়ালা পরী, মানুষের বাচ্ছাদের নিয়ে! ডাক্তারি বিদ্যার দিক থেকে দেখতে গেলে, দুই একটা হাত বাড়তি হাত কোন মানুষের থাকলেও – ডানা ওয়ালা বাচ্চা নিতান্তই অসম্ভব! তাহলে!

    [ক্রমশঃ]


    প্রশ্ন উঠতে পারে যে তাহলে আদপেই ‘রেফারেন্স’ ফ্রেম ঠিক কি জিনিস? রেফারেন্স ফ্রেমের ইন-কনসিস্টেন্সি আর ভিন্ন দৃষ্টীভঙ্গী/মতামতের উপর ক্রমশঃ বেড়ে ওঠা আমাদের অসহনশীলতা এক জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি করে প্রায়শঃ। আমাদের ‘রেফারেন্স’ গড়ে ওঠে মূলত দুই ভাবে – ১) আরোপিত ও ২) অর্জিত।

    আরোপিত অর্থে ঠিক জোর করে আমাদের কেউ শেখাচ্ছে এমন নয় (যদিও জোর করে শেখানোর ঘটনাও ঘটে), যে সমাজে আমরা বাস করছি, যে পরিবেশে আমাদের বিকাশ হচ্ছে – সেখানকার ‘স্বাভাবিকত্ব’ আমাদের কাছে আরোপিত হয়ে ওঠে আমাদের অজান্তেই। আমার বাবা মা হেমন্ত – মান্না – মানবেন্দ্র শুনে গেছে আমার সমস্ত ছোটবেলা। তাই সেই সব গান আমার কাছে স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে এক সময় জুড়ে। ঠিক তেমন ভাবেই রবীন্দ্র নজরুল সুকান্ত। এখানে লক্ষ্য করার বিষয় যে স্বাভাবিকত্বের গন্ডী ঠিক সময়ের বেড়া দিয়ে আটকানো নেই – বরং তা নির্ভর করছে আমাদের বাবা-মায়ের কাছে ‘স্বাভাবিকত্ব’ ঠিক কি ছিল? আমার কিছু চেনা পরিচিতের কাছে পরবর্তী কালে জেনেছি যে তাদের ছোটবেলায় জীবনানন্দ, প্রেমেন মিত্তির থেকে শুরু করে সুনীল-শক্তি পর্যন্ত স্বাভাবিক ছিল।

    আরোপিত-র উপর আমাদের অনেক সময় কোন কন্ট্রোল থাকে না – কিন্তু নিজে যেটা আমরা চালন করতে পারি তা হল ওই ‘অর্জিত’ ব্যাপারটা। এটা আমার চয়েস – তবে চয়েস তো আর গাছ থেকে পড়ে না – চয়েস থাকা চাই। এই ভাবে আমার চয়েসে যখন আসছে সুমন – নচিকেতা, তখন হয়ত আমারই বয়েসী অন্য আরো কাছে ‘অর্জিত’ হচ্ছে বব ডিলান, বিটলস্‌ বা সে ডুবে যাচ্ছে জ্যাজ বা ব্লুজে। আমি কোয়ান্টাম লাফে ঠিকমত বিশ্বাস করি না – তার থেকে আমার কাছে ‘গড়ে ওঠা’ বড় বেশী স্বাভাবিক মনে হয়। আমার ব্যাকগ্রাউন্ড আমাকে যা দিয়েছে, আমার উপর যা আরোপিত হয়েছে, আমি তার উপর বেস করে এগিয়ে যেতে চাইছি, আমি চাইছি অর্জন। এ যেন সেই ছোটবেলার ঈশ্বর বিশ্বাস থেকে ক্রমশঃ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে আরো খোঁজ খবর নেওয়া শুরু। আমার সেই অর্জনের উপর নির্ভর করবে সে আমি বদলাবো, আমার রেফারেন্স ফ্রেম বদলাবে নাকি আমি রেফারেন্স ফ্রেম একই রেখে আরো গোঁড়া হয়ে যাব – আমি ‘অর্জন’ বিরোধী, পরিবর্তন ভীত স্থবির হয়ে যাব। আমার অনেক বন্ধু চার্চেই তাদের ‘অর্জন’ খুঁজে পেয়েছে, তেমনি অনেকে রবীন্দ্রনাথেই চরম মুক্তি খুঁজে পেয়েছে। আসলে এই ‘অর্জন’ জিনিসটা কনস্ট্যান্ট হওয়া উচিত নয় – কোন কিছু চরম ‘অর্জন’ হয়ে গ্যাছে মানেই এক স্থবিরতা। বরং আমি চাইব নিজেকে প্রশ্ন করে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া – নিজের ‘রেফারেন্স ফ্রেম’ অ্যাডজাষ্ট করা যদি দরকার হয়।

    আদি কবিতার কথা বলি – তাহলে প্রশ্ন, আমি কবিতার কাছে কি চাই? কবিতা শুধু আমার কাছে শব্দ, ধ্বনি, অলংকার যুক্ত কিছু মুক্ত বাতাস, যা আমার শুধু শুনতে ভালো লাগে, নাকি আমি কবিতার কাছে চাই কিছু তত্ত্বকথা, দার্শনিক উপলব্ধি? নিজে যা জানি তা ঝালিয়ে নিতে আমি কবিতা পড়ছি, নাকি নিজের জানাকে আরো প্রসারিত করতে? নাকি আমি স্পার্ক খুঁজছি, যা আমাকে ভাবাতে সাহায্য করবে? তো সেই ভাবে দেখতে গেলে, আমি কি চাইছি, তার উপর ভিত্তি করেও থেকে যাচ্ছে আমার ‘রেফারেন্স ফ্রেম’ যার সাহায্যে আমি কবিতা সম্পর্কে নিজের জাজমেন্ট পাস্‌ করছি।

    এই যদি হয় তাহলে বিরোধ কিসের? আমি যদি উপরের ব্যাখ্যা করা ‘রেফারেন্স ফ্রেম’ তত্ত্বের উপর নির্ভর নির্ভর করি, তাহলে তো এই সবই নিজের ব্যাপার – এটাই তো স্বাভাবিক যে আমার ফ্রেম তোমার সাথে নাও মিলতে পারে! তাহলে? এই খানেই কবিতা (বা অনেক ক্ষেত্রে শিল্প জিনিসটাই) ধর্মীয় মৌলবাদের খুব কাছাকাছি চলে যায় অনেক অনেক সময়। এটা ঠিক যে ‘আধুনিক কবিতা/একালের কবিতা’ এতোবেশী ভাবে বা এতো জনের দ্বারা আক্রান্ত হয়েছে, শিল্পের অন্য কোন শাখা মনে হয় সেই ভাবে আক্রান্ত হয় নি। সবাই নিজের মতমত পেশ করেই খালাস – ব্যাখ্যা করার দায় নেই কারুর। সেই যেমন নীরদ সি চৌধুরী বলে গিয়েছিলেন স্বাধীনতার পর নাকি বাংলা সাহিত্যে কিস্যু হয় নি! তাও সই – কিন্তু যদি নিজের রেফারেন্স ফ্রেমই ইন-কনসিসট্যান্ট হয়?

    যদি কবিতার প্রতি আমাদের বিশ্বাস ওই ধর্মীয় বিশ্বাসের মত দ্বৈত মাপকাঠির হাতছানি দেয়? যেমন ওই আমাদের ইউনিভার্সিটির বায়োমেটিরিয়্যালস্‌ পড়ানো গ্রীক প্রোফেসর আর্টিমিসের মত, যে কিনা বিশ্বাস করে পৃথিবী সৃষ্টি হয়েছিল ভগবানের দ্বারা মাত্র ছয়দিনে – এবং সেটা জোর গলায় দাবী করে যে তার সেই ধারণা বা বিশ্বাসের সাথে তার প্রোফেশনে পড়ানো বায়োমেকানিস্কের কোন কোন কনফ্লিক্ট সে খুঁজে পায় না! কিংবা আমষ্টারডামের উপকন্ঠে এক চার্চে আলাপ হয়ে যাওয়া কেমেষ্টির পি এইচ ডি সাউথ আফ্রেরিকানের সাথে যে লেকচার দিয়ে বেড়াত পৃথিবী কোন মতেই ছয় হাজার বছরের বেশী পুরানো নয়, তাহলে!

    আধুনিক/নতুন যুগের কবিতার কবিরা এতো বার আক্রান্ত হয়েছে যে, তারা ওই ধর্মীয় মৌলাবাদের মত বা গুপ্ত ধর্মীয় গোষ্ঠির মত গোষ্টী গড়ে তুলেছে একের পর এক। এসেছে নানা আন্দোলন, বন্যার মত লিটিল ম্যাগাজিন। এরা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে তাদের পথটাই একমাত্র পথ – ঠিক ওই প্রাচীন পন্থীদের মতই – যাঁরা এখনো মনে করেন এবং ইন ফ্যাক্ট স্যোসাল মিডিয়ায় প্রকাশ ও করেন যে রবীন্দ্রানাথের পর নাকি আর কবিতা পড়ারই দরকার নেই! সব বেদে লেখা আছের মত – সবই কবিগুরু বলে গ্যাছেন! এই দুই গোষ্টিই সমান দায়ী আজকের এই অসহিষ্ণু অবস্থার জন্য। এরা সেই চার্চের পাদ্রী বা ধর্মগুরু বা মৌলবীদের মত যারা দাবী করে চরম সত্য তারা জানতে পারে গ্যাছে – কিন্তু আমি এ হতে চাই না, আমি সেই বিজ্ঞানী হতে চাই, যে বলবে আমি চরম কিছু পাই নি, কিন্তু সেটা সন্ধানে আছি। আমার কাছে চরম সত্যের থেকেও, সেই সত্য সন্ধানের পথটাই বেশী আকর্ষনীয়। এই পথ অনুসন্ধানের বিষয় নিয়ে আরো কিছু কথা পরে।

    আবার এমনটাও কি হতে পারে না যে, আমি অনেক ধরণের কবিতাই একসাথে ভালোবাসি – আমি রবীন্দ্রনাথ যেমন পড়ি তেমনই পড়ি সুব্রত সরকারের কবিতা? কি ভালোবসব সেটা একান্তই আমার ব্যাপার – আমার মানসিক ক্ষুধা যে মেটাতে পারবে আমি তাই ভালোবাসব। অন্যের মানসিক ক্ষুধা কি হবে, সেটা তো আমি ঠিক করে দিতে পারি না। আমরা এমন অসহিষ্ণু হব না যে অন্যে যে কবিতা পড়ে কিছু খুঁজে পাচ্ছে, তাকে আমরা ‘গু-হাঁটকানো’ বলব! কোনটা ‘গু’ আর কোনটা ‘সন্দেশ’ সেটা ঠিক করে দেবে কে! আমার কাছে যা ‘গু’ অন্যের কাছে তা নাও হতে পারে!

    আমি ঐ কবিতাকে ‘গু’ বলছি কারণ আমার মানসিক চাহিদা সে মেটাতে পারে নি – আমার মানসিক চাহিদা কি? অনেক সময় আমি সেটা জানি, আমি চাই আমাকে ভাবার খোরাক দেওয়া হোক – আমি ভাবতে চাই। একটা সূত্র দেওয়া হোক, আমি সেই সূত্রের ডগাটি কেবল কবিতা থেকে ধরব, তার পর আমি খুলতে থাকবো জট পাকানো সুতো গুলি – নতুন দিগন্ত খুলে যাবে আমার সামনে। “কবি – কবিতা – পাঠক” এই ত্রিভুজের এক বাহু খসে পড়ে কবিতা প্রকাশিত হবার পর। আমার সামনে শুধু আমি আর কবিতা! কবি কি বলতে চেয়েছেন সেটা নয় – আমি কি তুলে নিচ্ছি কবিতা থেকে সেটাই আমার কাছে বড়। অর্থাৎ কবি কি বলতে চেয়েছেন এমন কবিতায় আমি ক্রমশ ইন্টারেষ্ট হারাচ্ছি। অবশ্য এমনও হতে পারে যে, কবি যা বলতে চেয়েছেন আর আমার উপলব্ধি দুই এক! কিন্তু আমি তো জানি না কবি কি বলতে চেয়েছেন! আমার কাছে কবিতার সত্যি কেবল আমারই সত্যি।

    অনেকের কাছে কবিতার ছন্দ খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার – কবিতার ব্যকরণ (তাঁরা ব্যকরন অর্থে স্ট্রাকচার বোঝান) প্রাধান্য পায়। এটা আমি আস্বীকার করছি না যে ছন্দ বা ব্যকরণ জানা জরুরী নয় – বরং আমি বিশ্বাস করি যে নতুন কিছু গড়তে গেলে পুরানোকে জানতে হবে ভালো করে – ভিত্তি গড়তে হবে। না হলে কি যে নতুন আর কি পুরানো সেটা বুঝবো কি করে! কবিতার ইতিহাস না জানলে তো নিজে ইল্যুয়শনে ভুগবো এই ভাবে যে আমি যা সৃষ্টি করছি তা সবই নতুন! অথচ সে সবই হয়ত আলোচিত হয়ে গ্যাছে বহু বহু বার। কিন্তু এমন যদি হয় যে, আমি কবিতায় যা পেতে চাই তা ধরতে গেলে ছন্দ খুব একটা জরুরী নয়? ইন ফ্যাক্ট, আমি যা চাইছে কবিতার কাছে তা পেতে হলে ছন্দ মাঝে মাঝে অপ্রয়োজনীয় বাধা হয়ে দাঁড়ায় অনেক সময়।
    প্রাচীন কবিতা মৌলবাদীরা আধুনিক/একালের কবিদের এই বলে দেগে দেন যে তারা নাকি কবিতার ছন্দ বোঝে না! কিন্তু আমার অভিজ্ঞতা অন্য কথা বলে – যারা সিরিয়াস কবিতার চর্চা করে, তাদের প্রায় সবাই ছন্দ সমন্ধে খুবই সচেতন, আর রবীন্দ্রনাথ? রবীন্দ্র সাহিত্য পড়ে নি, কিন্তু আধুনিক সাহিত্য/কবিতা লিখছে, এমন আমার কারো সাথে আলাপ নেই – বা জানাও নেই! ওই যে, কেউ আটকে গেছে – আর কেউ এগুতে চাইছে! এ তো চিরন্তনের লড়াই!

    এখন যদি কেউ কবিতাকে এই ভাবে না দেখেন? তিনি কবিতা পড়ে বেশী ভাবতে চান না – অর্থাৎ হয়ত পরিশ্রম বিমুখ পাঠক। কবির সত্যি অর্থে আমার সত্যি – যতক্ষণ আমি না বুঝতে পারছি কবি কি বলতে চেয়েছেন, আমার অন্তর ছটফট করছে। আমি কবিতায় ছন্দ ভালোবাসি, কবিতা আমার কাছে শ্রুতি মধুর হতে হবে – কবিতায় আমি উপমা খুঁজব – পাখীর নীড়ের মত চোখ আমার চিত্ত চাঞ্চল্য ঘটাবে। তাহলে? এঁদের কি তা হলে কবিতা পড়ার অধিকার নেই?

    আমি দেখেছি প্রবল বুদ্ধিমান, প্রবল বাস্তব বুদ্ধি সম্মত ব্যক্তি সিনেমা বলতে পছন্দ করে রজনীকান্ত জাতীয় সিনেমাগুলি। আমাদের মধ্যে যাঁরা আধুনিক কবিতা/উত্তরাধুনিক/উত্তর-উত্তরাধুনিক/নতুন যুগের কবিতা নিয়ে ছিঁড়ে ফেলছি মাথার চুল, ভরে ফেলছি খাতা, তুলে ফেলছি তুফান তাদের অনেকেই অমিতাভ, উত্তমকুমার, হেমন্তের গানের ফ্যান! তাহলে? আমরা কি নিজেরাই এক এক জন আমাদের সেই প্রোফেসর আর্টিমিস নয়? কোনটা ইন-কনসিসট্যান্ট আর কোনটা নয়, তা নির্ভর করে আমাদের যুক্তিজাল আর অনেক সময় আমাদের ‘হিপোক্রেসী’র উপর। আমরা অতি-অভিনয়, মেলোড্রামা পছন্দ করব সিনেমায় – কিন্তু কবিতায় তা এলে আমাদের কাছে তা হবে নিম্নমানের কবিতা! কারণ? – কারণ একটাই, কবিতার কাছে আমার এক্সপেক্টেশন অন্য!

    তাহলে ভালো কবিতা কি তা ঠিক করবে কে? কোন জিনিসটা ঠিক রিয়্যালিজম আর কোনটা নয় কে ঠিক করে দেবে? যদি সবাই বলে, “আমি বলছি যে এটা আর্ট, তা এটা আর্ট” – তাহলে মাপকাঠি কি হবে? শুধু ভালো লাগার জন্য কবিতা প্রয়োজনীয় হলে হয়ত এই সব দরকার হত না – কিন্তু কোন তত্ত্ব, আর্টের কোন শাখা, এমনকি শিক্ষাক্রম – এই সব জুড়ে থাকলে একটা মাপকাঠি তো দরকার হয়! সেই মাপকাঠি কে ঠিক করে দেবে? মাপকাঠি ঠিক করাটাই আর্টের একটা ফাঁদ – ইনফ্যাক্ট আমার তো মনে হয় যে সমস্ত বিষয় প্রমাণ সাপেক্ষ নয় (বা সাবজেকটিভ) তারা থ্রাইভ করে এই কনফ্লিক্টের উপর।

    অনেকে দাবী করেন আর্টের কারবার সাধারণকে নিয়ে নয় – বরং, জীবনে যা হয়তো সাধারণ, আর্টে তা রূপায়িত, কি রূপান্তরিত – করলে তা-ই অসাধারন হয়ে ওঠে। সেটা অনিবার্য। তাঁদের কাছে সেটাই আর্টের জাদু। যেহেতু তাঁরা এই বিশ্বাস করেন, তাই তাঁদের কাছে আর্ট সেই ভাবে ধরা দেয় – তাঁরা আর্ট সেই ভাবে ডিফেন্ড করেন। এমন যুক্তি দেওয়া হয় যে, হ্যামলেটের সঙ্গে কান ঘেঁষে গুলি চলে যাওয়া গোয়েন্দা ব্লেকের কি সব্যসাচীর প্রভেদ তো একটা আছেই! খুব বড় করে কিছু আঁকলেই বড়ো আর্ট হয় না (আর্টে রিয়েলিজম – বুদ্ধদেব বসু)। ইংরেজ ল্যান্ডস্কেপ শিল্পী টার্ণারের সমন্ধে একটা গল্প চালু আছে। টার্নারের একটি সূর্যাস্ত দেখে এক মহিলা মন্তব্য করেছিলেন যে, “এ-রকম সূর্যাস্ত তো আমি কখনো দেখিনি”। টার্নার নাকি জবাব দিয়েছিলেন, “কিন্তু দেখতে পেলে কি খুশি হতেন না?” একদল আর্টের লোক বলেন – তাঁদের কাছে সমস্ত আর্টের এই হচ্ছে মূল কথা!

    একদিকে বলছি অবাস্তব সুর্যাস্ত দেখতে পেলে খুশী হতাম – আবার অন্যদিকে বলছি ব্লেকের কান ঘেঁষে গুলি চলে যাওয়া অবাস্তব! এটা তো একটা কনফ্লিক্ট! বাউন্ডারি তা হলে ঠিক কোথায়? কিন্তু আমাদের মনে রাখতে হবে এই কনফ্লিক্টও অনেক সময় সচতুর ভাবে তৈরী করা হয় – নিজেদের বাঁচিয়ে রাখা প্রমাণ করতে। অনেক সাহিত্য আন্দোলনও মনে হয় সেই বাঁচিয়ে রাখা টিকিয়ে রাখতেই প্রসবিত। এই প্রসঙ্গে পরে আসছি।
    বুদ্ধদেব বসু অনেক দিন আগে “আমাদের কবিতাভবন” প্রবন্ধে লিখেছিলেন ‘কবিতা’ পত্রিকায় দুই-একবার প্রকাশিত কিছু কিছু কবির কোন কোন কবিতা তাঁকে ভাবিয়েছিল বা মনে ধরেছিল বা হন্ট করেছিল। কাকসম্পৃক্ত রহস্যাবৃত নিচের কবিতাটি তাঁকে নাকি হানা দেয় মাঝে-মাঝেঃ

    “সন্ধ্যানীরব অলিন্দ’পরে
    একেলা দাঁড়ায়ে শুনিনু গান।
    অন্ধকারের শাবকদলের
    স্তিমিত পাখায় ভরিল প্রাণ।।
    নিতল নয়নে বিষাদ মহান,
    ওগো কাক! ওগো বায়স কালো!
    মৃদু কর্কশে গাহো কোন গান!
    ভয়ে সুখে প্রাণ ভরিয়া গেলো।
    নিশার মতন শান্তনয়ন,
    কঠিনচঞ্চু হে মোর পাখী!
    কম্পিত হিয়া রাখিনু মেলিয়া,
    বিঁধে লহো পাপ, রেখো না বাকি।
    ওগো গম্ভীর, স্নেহসুকঠিন,
    হননের পাপ হরন করো;
    নিশীথের দেশে নবজাত মোরে
    স্নেহল আঁধারে বরণ করো”।

    ভাবা যায়! এই কবিতা বুদ্ধদেব বসুকে হন্ট করেছিল! হন্ট তো দূরের কথা – এই কবিতা আমার কাছে খুবই দূর্বল বলে মনে হচ্ছে! তার মানে কি বুদ্ধদেব বসু আমার থেকে কবিতা কম বুঝতেন? তাহলে!

    এবার দেখা যাক, কাক সংক্রান্ত কবিতাই যদি আমাকে পড়তে হয়, তাহলে সেই কবিতার প্রতি আমার প্রত্যাশা কেমন থাকবেঃ

    “আমার বৃত্তগুলো ছোট হয়ে গিয়েছিল
    সুদৃশ্য জাদু টানা খোদাই করা গহবরের পরিধি বরাবর আমি বার বার হাঁটছি
    ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে যে কাকের রং কালো সেও
    ওরা কি বার বার গহবর হয়ে আসে?
    আমার কেন কাক ভালো লাগে?
    পরিধির অংক আর গোছানো প্রশ্ন ভয় পেলে চেপে বসছে বার বার
    আর
    উপরমুখি দেওয়ালটা হাততালি দিচ্ছে
    দেওয়ালটাকে নেমে আসতে দেবেনা কালো কাকগুলো।
    গুম যাই বলে রাত আসে

    [গহ্বর – সোমা সমাদ্দার]

    এই কবিতা আমাকে কি দিতে পারছে যা বুদ্ধদেবের উল্লিখিত কবিতা দিতে পারে নি? কাকের রং কালো – গহবর-এর রং কালো – আবার আমার বিজ্ঞান ব্যাকগ্রাউন্ড থেকে আমি জেনেছি যে ব্ল্যাক হোল নামে কোন জিনিস হয় – যদিও তার রং কালো কিনা সেই বিষয়ে জটিলতা আছে – কারণ আমি গহবরের পরিধি বরাবরই হাঁটছি মাত্র – একবার পড়ে গেলে তার থেকে আমি বেরোতে পারব না – আর বেরোতে না পারলে আমি কেমন করে জানাব যে তার রং ঠিক কি ছিল? কাক এই এখানে কেবল প্রতীকই?

    ব্যাপারটা জটিল হয়ে যায় একটু কারণ এই বুদ্ধদেব বসুই জীবনানন্দ দাশের জন্য অনেক সময় ব্যয় করেছিলেন তাঁকে ঠিক জায়গায় প্রতিষ্ঠিত করার জন্য। আধুনিক বাংলা কবিতার প্রথম সংকলনে বুদ্ধদেব বসু জীবনানন্দের জন্য ঠিক মত জায়গা বরাদ্দ করতে পারেননি বলে মনকষ্টে ছিলেন। দ্বিতীয় সংস্করণে তিনি তাঁর আক্ষেপ মিটিয়ে ছিলেন জীবনানন্দের কবিতা পর্যাপ্ত ভাবে প্রকাশ করে। আর জীবনানন্দের সেই সব কবিতা আমার কাছে খুবই প্রাসঙ্গিক মনে হয়, এমনকি মনের মাঝে হানাও দেয়।

    তাহলে কি দাঁড়াল – এক ক্ষেত্রে বুদ্ধদেব বসুর ভালো লাগা আমার কাছে প্রায় হাস্যকর লাগল, অন্য জায়গায় প্রাসঙ্গিক। আমাদের দুই জনের নিজের নিজের রেফারেন্স ফ্রেম কি তা হলে ইন-কনসিসট্যান্স?

    [ক্রমশঃ]

    বিজ্ঞান ও কবিতা
    ------------------------------------
    আগের কিছু জায়গায় আমি বিজ্ঞানের প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছি। এবার একটু ব্যখ্যা করার চেষ্টা করব আমি নিজে বিজ্ঞানের সাথে কবিতাকে কি ভাবে সম্পর্কিত দেখতে চাই। প্রথমেই বলে নিই, আমি (বা আমরা – যাঁরা আমার সাথে সহমত) কিন্তু এখানে বিজ্ঞান নিয়ে কবিতা লেখার কথা বলছি না – বরং বিজ্ঞানের ভিত্তি, বিজ্ঞানের প্রদর্শিত পথ, ভাবনা কিভাবে আমাদের কবিতায় ঢুকে আসতে পারে তার কথা লিখতে চাইছি। সহজ করে বলতে গেলে আমি বিজ্ঞান-কেন্দ্রীক কবিতার কথা বলছি না, বিজ্ঞান-সচেতন কবিতা ভাবনার কথা বলছি।

    1.Science is far from a perfect instrument of knowledge. It’s just the best we have.
    2.Science is more than a body of language; it is a way of thinking.

    উপরের দুই উক্তির সাথে আমার “কবিতা এবং বিজ্ঞান” এই মিথোজীবিতার একটা আপাত অর্ন্তলীন সম্পর্ক হয়ত উপস্থাপিত করা যায় – যদি অবশ্যই আমরা চিন্তাধারা উন্মুক্ত রাখতে পারি। বিজ্ঞান এবং কবিতা (বা সাহিত্য) এই দু প্রায় আলাদা রকম ক্ষেত্র নিয়ে কাজ করতে গেলে এই চিন্তার উন্মুক্ততার প্রয়োজনীয়তা প্রায় অনৈস্বীকার্য।

    বাংলা ভাষায় কবিতায় বিজ্ঞান চেতনা কি তেমনভাবে উপস্থাপিত হয়েছে? সে হোক না পুরানো বা নতুন কালের – কবিতা যদি বিজ্ঞান ভাবনা সমৃদ্ধ হয় তা হলে কি তার বিস্তার কমে আসে? বিস্তার অর্থে বলতে চাইছি পাঠকের সাথে কবিতার সংযোগের কথা। কবিতায় বিজ্ঞান চেতনা নিয়ে কাজ করতে গেলে অলিখিত প্রায় এক শর্তই চলে আসে যা হল - সুপঠিত (এবং well-informed) পাঠক। তো সেই ক্ষেত্রে কবিতা এবং বিজ্ঞান দুইয়ের ক্ষেত্রেই যেটা জোর দিতে চাইব তা হল ওই thought process – the way of thinking.

    আমার কবিতা ভাবনাতে সেই “the way of thinking” জড়িয়ে আছে গুরুত্বপূর্ণ ভাবেই। প্রকৃতপক্ষে বলতে গেলে আমার লেখা কবিতা কিন্তু আমার ভাবনা পদ্ধতির-ই হতে পারে প্রতিফলন বা আরও এগিয়ে বলতে গেলে ‘নির্মম’ প্রতিফলন। প্রশ্ন হতে পারে ‘নির্মম’ বলছি কেন? নিজের লেখার প্রতি পক্ষপাত শূন্য? কি অনুসিদ্ধান্তে আসতে চাইছি তার উপর তথ্য সংগ্রহ করতে আমি হয়ত চাইব না– বরং সংগ্রহীত তথ্যভিত্তি করেই গড়ে উঠুক না আমাদের কবিতা! এই দুইয়ের মধ্যে পার্থক্য খুবই সামান্য নাও হতে পারে যদিও আপাত ভাবে এরা এক। অনেক বৈজ্ঞানিক পরীক্ষাই করা হয় কোন এক বিশেষ লক্ষ্য স্থির করে – অর্থাৎ আমরা জানি আমরা কি খুঁজছি। এর প্রধান সীমাবদ্ধতা হল – সম্ভাব্য অচেনা বা অনৈশ্চয়তার উপর আমাদের আপাত নির্লিপ্ততা। তাই চাইব কোন অনুসিদ্ধান্ত গড়ে ওঠার আগে বিশ্লেষিত হোক হাতে আসা সমস্ত তথ্য। বিষয় ভাবনা যদিও থাকে, পর্যবেক্ষণ এবং তথ্য নির্মাণ আবশ্যিক – কবিতার ভিতরেই প্রোথিত থাক বিশ্লেষণ লব্ধ অনুসিদ্ধান্ত।

    তথ্য সংগ্রহের সাথে তা হলে তথ্য নির্মাণের সম্পর্ক কি? আমি এই প্রসঙ্গে কিছু উদ্ধৃতির আশ্রয় নিচ্ছিঃ

    At a dinner many decades ago, the physicist Robert. W. Wood was asked to respond to the toast "Physics and Metaphysics". By "Metaphysics" people then meant something like philosophy or truth you could recognize by just thinking about them. They could have been considered as pseudoscientific information. Wood answered along these lines :
    The physicist gets an idea. The more he thinks it through the more sense it seems to make. He consults scientific literature. The more he reads the more promising the idea begins to appear. Thus prepared he goes to the laboratory and devices an experiment to test the idea - a painstaking experiment. Many possibilities are checked, the accuracy of measurements is refined, the error bars reduced. He lets the chips fall where they may. He is devoted only to what the experiment teaches. At the end of all this work, through careful experimentation, the idea proves itself to be worthless. So the physicist discards it, frees his mind from the clutter of errors and moves on.
    The difference between physics and metaphysics, Wood concluded, as he raised his glass high, is not that the practitioners of one are any smaller than those of the other. The difference is that the metaphysicist has no laboratory!

    আমি আসলে ওই Wood বর্ণিত Physicist এর মতই হবার কথা বলছি – নির্মম! আবশ্যই একজন কবির গবেষণাগার নেই – নাকি আছে! আছে নাকি কোন বিজ্ঞানীর পরীক্ষালব্ধ Absolute Truth? যদিও আমরা শুনে আসছি Absolute Truth বলে কিছু নেই – কিন্তু হাজার হাজার বছর ধরে চর্চিত এই দার্শনিক কচাকচির ভিতর না ঢুকে যদি আমরা ওই পদার্থবিদের মতই Experiment করি?

    অকটাভিও পাজ্‌ বলেছিলেন, “Poetry is a form of knowledge, of experimental knowledge”. এখানেও সেই Experiment-এর ব্যবহার। জ্ঞান অন্বেষণে কোন Instrumentই একেবারে সম্পূর্ণ নয় – তাহলে কেন না আমরা আমাদের হাতে থাকে শ্রেষ্ঠ হাতিয়ার ‘বিজ্ঞান’-কেই মুখাপেক্ষী করি? মুখাপেক্ষী অর্থে বলতে চাইছি বিজ্ঞানের অর্ন্তলীন “the way of thinking” – টাকে আমরা কবিতা ভবনাতে প্রোথিত করে দিই! কোন ভাবনা মাথায় এলে তাকে ঘিরে শুরু হোক অন্বেষণ, হোক পর্যবেক্ষণ – পূর্বসুরীর কবিতার সাথে তুলনা খোঁজা হোক – দেখা হোক ভাবনাটায় নতুনত্বের অবদান কতটা। এক কথায় আমরা Woods বর্নিত সেই Physicist এর ধাপগুলোই অনুসরণ করি। আসলে – “The truths they seek are different but they employ similar methods to ascertain them.”

    আমরা বিজ্ঞান গবেষণার ধারাগুলি অনুসরণ করলেও এটা মনে রাখব যে বিজ্ঞান ও কবিতা ভাবনার অন্তত একটা খুব গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য আছে – সেটা হল পরীক্ষার বিষয়বস্তু নিয়ে। একজন বিজ্ঞানী মূলত একজন পর্যবেক্ষক, এবং সাধারণত কোন পরীক্ষায় বিজ্ঞানী নিজে কোন ভূমিকা পালন করেণ না। কিন্তু আমি যে কবিতা ভাবনার কথা বলছি সেখানে দেখতে গেলে – The subject of the experiment could be the poet itself: he could be both the observer and the phenomenon observed. His body and his psyche, his entire being, are the ‘field’ in which all sorts of transformation take place.” অর্থাৎ - তথ্য যদিও বা নিরপেক্ষভাবে সংগৃহীত হয়, তথ্য নির্মাণে কবির স্বকীয় আবদান থেকেই যায়, আর সেই খানেই সংগৃহীত তথ্যাবলী থেকে ‘কবিতা’ গড়ে ওঠে।

    অকটাভিও পাজ্‌ - এর Modern Poetry and Science সম্পর্কিত আরও কিছু উক্তিঃ
    “There is more than one similarity between modern poetry and science. Both are experiments, in the sense of “testing in a laboratory” : an attempt is made to produce a certain phenomena through the separation or combination of certain elements which the experimentor has subjected to the pressure of some outward force or left to develop according to the laws of their own nature. This operation takes place in a closed space, in the most complete isolation possible. The poet deals with words as the scientist deals with cells, atoms or other-material particles : he extracts them from their natural medium, everyday language, isolates them; he observes and uses the properties of language as the scientific researcher observes and uses the properties of matter.
    As he writes, as he tests his ideas and his words, the poet does not know precisely what is going to happen. His attitude towards the poem is emperical. Unlike the religious believer, he is not attempting to confirm a revealed truth; unlike the mystic he is not endeavoring to become one with a transcendent reality; unlike the ideologue, he is not trying to demonstrate a theory. The poet does not postulate or affirm anything apriori; he knows what counts is not ideas but results, not intentions but works. Isn’t this the same attitude as that of a scientist ? Poetry and science do not imply a total rejection of prior conceptions and institutions. But theories (“working hypotheses”) are not what justify experiments; rather the converse is true.

    একটি কবিতার কয়েকটি পঙতি দেখা যাকঃ

    “ফোর্থ ডায়মেনশনের আড়ালে কে তুমি, হাসছো অনন্তকাল? তোমারই খেয়ালে গড়া কায়ার বাঁধনে বসে তোমারই রূপকথা শুনি। শোনাও যেটুকু শোনাতে চাও হার্জের নির্দিষ্টি সীমায়”
    -রূণা বন্দোপাধ্যায়

    বলাই বাহুল্য লেখিকা এখানে তাঁর বিজ্ঞান চেতনার ছাপ রেখে গেছেন কবিতাটির মধ্যে – প্রশ্ন উঠতে পারে সময়কে যে ফোর্থ ডায়মেনশন, বা হার্জ কম্পাঙ্কের একক সেটা জানা না থাকলে কবিতাটির রসবোধ কতটা সম্ভব হবে! কিন্তু সেখানেই যেন চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়া হয় পাঠকেও – পড়াশুনা বা জানার পরিসীমা বাড়ানোর চেষ্টা। আমার কবিতা ভাবনার সেটাও একটা দিক।

    বৈজ্ঞানিক জ্ঞান আদপেই হচ্ছে বিভিন্ন বক্তব্যের আধার, যেই বক্তব্যগুলির নিশ্চয়তা বিভিন্ন পর্যায় ভুক্ত। কিছু সবচেয়ে অনিশ্চিত, কিছু প্রায়-নিশ্চিত – কিন্তু কোন কিছুই একেবারে (চরম) নিশ্চিত নয়। এখানেই বিজ্ঞানের সৌন্দর্য – এইখানেই কবিতার সাথে তার মিল। যদি ধরেও নেওয়া যায় কবিতার অর্থ বের করা যায় – তা হলেও কবিতার “absolute meaning” বলে কিছু হয় কি? মনে হয় না – এইখানেই চলে আসে অনিশ্চয়তা সূত্র, পাঠক যেখানে পর্যবেক্ষক প্রভাব (Observer’s Effect) মিশিয়ে কবিতাটিকে নিজের মত করে তোলে।

    আমরা স্বীকার করি বা না করি, আমাদের সম্যক ধারণা থাক বা না থাক – বর্তমান মনুষ্যজীবন ধারার সাথে বিজ্ঞান কিন্তু ওতোপ্রোত ভাবে মিশে গেছে এই সময়ে। এই অবস্থা থেকে ফেরার আর প্রায় কোন উপায়ই নেই। তাই যদি বিজ্ঞান চেতনা আমাদের কবিতা ভাবনার এক অন্যতম স্তম্ভ হয়, বলাই বাহুল্য তা অত্যন্ত যুগপোযোগী এবং বহু প্রতীক্ষীত এক বিষয় হবে। শুধু প্রচলিত দার্শনিক ভাবনা সূত্র নয় – আমরা যদি প্রকৃত বিজ্ঞান চেতনা অনুভব করতে পারি তা হলে দেখব তার গভীরেও প্রবল রোমাঞ্চ লুকিয়ে আছে। বিষয়ের যত গভীরে প্রবেশ করা যাবে, ততই যেন পরতে পরতে খুলতে থাকবে তার সৌন্দর্য্য। কবি নিজে কবিতা লেখার সময় এই গভীরতারই রস আস্বাদন করবে এবং উপস্থাপিত কবিতা পাঠককেও সেই সৌন্দর্য্যের হদিস দেবে।

    আমার কবিতা ভাবনার কবি কিন্তু এখানে শিক্ষকের ভূমিকা পালন করবে না, বরং তার কবিতা হবে ‘facilitator’। কবি এবং পাঠকের এই যোগসূত্রটা কিন্তু আমার কবিতা ভাবনার এক গুরুত্বপূর্ণ ধাপ – যে জন্যই আমরা অনেকটা দাবী করব ‘well-informed’ বা সুপঠিত পাঠক। কবিতা পড়ার শেষে – কবি কি বলতে চেয়েছেন – এমন কোন প্রশ্নের উপস্থাপন জরুরী নয়। আমরা চাইব কবিতা পাঠকের কাছে কিছুটা একান্তই থাক – বহুবার পাঠের ফলে ক্রমশঃ খুলতে থাকুক না কবিতার আবরণ। এই আবরণ বাহ্যিক হতে পারে আবার এই আবরণ উপস্থাপিত তত্ত্বের আপেক্ষিক সত্যতা হতে পারে। কবিতা পাঠের অভিজ্ঞতা হোক “The pleasure of finding things out!”

    কবি যদি কবিতার ভিতরে প্রোথিত ভাবনার মাধ্যমে নিজেকে প্রসারিত করে – তাহলে প্রাপক দিকে পাঠককেও কিন্তু তৈরী থাকতে হবে। দুই-এর মিলনে অনেক সময় একটা যাত্রাপথ তৈরী হতে পারে – জ্ঞানের সাথে আসে গভীর, আরও চমকপ্রদ রহস্য – যা প্রলুব্ধ করে আরও বেশী গভীরে প্রবেশ করার জন্য। কবি এই যাত্রা পথে নিজেকে তৈরী করার জন্য এই বিষয়ে সচেতন হবে না যে তার কোন প্রশ্নের উত্তরে থাকবে হয়ত হতাশা, তার প্রথমে তৈরী কবিতার স্কিমের সমর্থনে মিলবে না হয়ত যথোপযুক্ত সাড়া। কিন্তু আনন্দ এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কবি একজন বিজ্ঞানীর মতই যাত্রাপথের প্রতিটি নুড়ি উলটে দেখবে অকল্পনীয় আশ্চর্যের সন্ধানে – যা তাকে আরো চমকপ্রদ প্রশ্ন এবং রহস্যের সম্মুখীন করবে। এটাই হবে আমার কবিতা ভাবনায় কবির Grand Adventure। এটাই রিচার্ড ফাইনম্যানের ভাষায় Pleasure of finding things out।

    কোন কবি সাধারণত এই Grand Adventure বিষয়ে লেখে না, শিল্পীরা তা উপস্থাপনের চেষ্টা করে না। কেন এমন হয়? কেউই কি ব্রহ্মাণ্ডের বর্তমান রূপ দেখে অনুপ্রাণিত হয় না? বিজ্ঞানের মূল্য আমাদের গায়কদের গাওয়া গানে উল্লিখিত হয় না – তাই আমরা এই বিষয়ে খুব কমই গান বা কবিতা শুনতে পাই – যা শুনি তা হল বিজ্ঞান সভার লেকচার। তাহলে আমাদের এই একবার ফিরে ভাবা উচিত নয় –প্রকৃতপক্ষেই কি আমরা বিজ্ঞানপ্রধান যুগে বাস করছি?

    আমাদের এটা মনে রাখরে হবে যে “where the science ends, philosophy begins” এই জাতীয় উক্তিগুলি বেশীরভাগ সময়েই অসম্পূর্ণ। কোন কোন সময় Out of context এদের উপস্থাপন করা হয়েছে – আবার কোন সময় নিজেদের বিজ্ঞান সচেতনতার খামতি ঢাকতে সুচতুর ভাবে এদের ব্যবহার করা হয়েছে। বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে দেখানো যায় যে বিজ্ঞান অনুসন্ধিৎসু মন ও জ্ঞান নানাবিধ প্রশ্ন উত্থাপন করে কোন বিষয়ে বাড়তি উদ্দীপনা ও রহস্য যোগ করে। সেই অর্থে ধরতে গেলে বিজ্ঞান চেতনা সব সময়েই কেবলমাত্র ‘যোগ’ করে – কোন কিছু ‘বিয়োগ’ করে না উপলব্ধি থেকে। ধরা যাক একটি ফুলের সৌন্দর্য্য – কবি অবশ্যই নিজের মত করে সেই সৌন্দর্য্যের বর্ণণা দেবেন, এবার দেখা যাক কবির সৌন্দর্য্যচেতনার সাথে বিজ্ঞান চেতনা যোগ হলে আরো কি ভাবে আপাত লুক্কায়িত তথ্যের, চমকপ্রদ রহস্যের সমাহার ঘটতে পারে –

    কবি কল্পনা করতে পারেন ফুলের ভিতরে জীবকোষগুলি, তাদের ভিতরে রাসায়নিক বিক্রিয়া সমুহ যাদের নিজস্ব একটা সৌন্দর্য্য আছে। শুধ মাত্র ফুলের বাহ্যিক দৈর্ঘ্য-প্রস্থের মাত্রা নয়, বিজ্ঞানসচেতনতা কবির তূণীরে যোগ করতে পারে আরো ছোট মাত্রার (আণবিক স্তরে), ভিতরের সৌন্দর্য্যের উপলব্ধি। জীববিজ্ঞানের ধারণা থাকায় কবি আরো ভাবতে পারে সেই ফুলের ক্রমবিকাশ ও বিবর্তন যা কিনা পতঙ্গেদের আকর্ষণের জন্যই হয়েছে মূখ্যাত। এর থেকে আরো প্রশ্ন উঠতে পারে, তা হলে কি ফুলের থেকে নীচু স্তরের জীবেদেরও এই ধরণের সামগ্রিক সৌন্দর্য্য সচেতনতা লুকিয়ে আছে? গণিত মনস্ক কবি মন ভাবতে পারে ফুলের পাড়ড়ির বিন্যাস, তাদের দল সংখ্যা কেন ফিবোনাচ্চি শ্রেণীর সাথে সম্পর্কিত হয়ে ওঠে প্রায়শই?

    ভ্লাদিমির নোভাকভ্‌ সেই ১৯৫৯ সাথে লিখে গেছেন, “I cannot separate the aesthetic pleasure of seeing a butterfly and the scientific pleasure of knowing what it is.”

    এ যেন আমার ভাবনায় কবিদের কথাই – কবি বিজ্ঞান সচেতন বা চর্চার সাথে যুক্ত থাকলে ওই আগে বর্ণিত ‘যোগ’ হবার ব্যাপারটা এসে যায় – বিজ্ঞান তার ছাপ রাখে পরিকল্পিত বা অনেক সময় অবচেতন ভাবেও। কবিতা ও বিজ্ঞানের এই যে Intellectual Procedure - এর গভীর সাদৃশ্য, সেটা আরো সচেতনভাবে অনুধাবন এবং উপস্থাপন করাও আমার বিজ্ঞান সচেতন কবিতা ভাবনার অন্যতম মূল লক্ষ্য।

    সকল মানুষের বিষ্মিত হবার ক্ষমতা থাকে না – বিজ্ঞান কবিতার ভিতরে তেমন ভাবে ধরা থাকে না কারণ তথাকথিত কবিরা মনে হয় বিজ্ঞানের সেই ব্যপ্তি, ওর বিস্তারটাকে ঠিক মত অনুধাবন করতে পারেন না। ঈশ্বর সবকিছুর স্রষ্টা, নিয়ন্ত্রক – এ সবই বিষ্ময়ের – ঈশ্বরের অস্তিত্ত্ব, প্রকাশ, ব্যপ্তি সবই আমাদের ভাবায়। কিন্তু এই ভাবনাটাই কি কম চমকপ্রদ যে আমাদের সূর্য মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির প্রায় ২০০ বিলিয়ন নক্ষত্রের একটা মাত্র, এবং মিল্কিওয়ে নিজে আরো ওমন ২০০ বিলিয়ন গ্যালাক্সির মধ্যে একটা!

    যদি সচেতন ভাবে আমাদের লেখার সময় বিজ্ঞান অনুধাবন এবং উপস্থাপন থাকে, তাহলে এটাও লক্ষ্য রাখাও জরুরী যে বৈজ্ঞানিক বিষয় যেন বিকৃত হয়ে আমাদের লেখায় পরিবেশিত না হয়। এক কথায় বলতে গেলে আমরা যেন “Intellectual Impostures” এর তালিকাভুক্ত না হয়ে যাই।
    অনেক সময় নতুন কিছু উপস্থাপনের চেষ্টা, নতুন তত্ত্ব উদ্ভাবনের নেশা বৈজ্ঞানিক ব্যখ্যাকে শৈল্পিক স্বাধীনতার সাহায্যে উপস্থাপিত হয়েছে – যার ফলে লেখা চমকপ্রদ হলেও তা রয়ে গেছে মূল বিজ্ঞান থেকে দূরে। ভিত্তিগত ভাবে এমন লেখা শুধু চটকদার বলেই চিহ্নিত হবে সময়ের সাথে। আমার কবিতায় যদি বিজ্ঞান থাকে, তাহলে তা থাকবে Scientific Honesty সহ।

    Science and Poetry – র মেল বন্ধন আমার উদ্ভাবন নয় – একটু খোঁজ নিলেই দেখা যাবে বিষয়টি নিয়ে সাম্প্রতিক কালেও বেশ উৎসাহ আছে কবি ও গবেষক মহলে। তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে আমি যা বলছি সেই কবিতা-ভাবনা নতুন কি দিতে পারে?

    যাঁরা কবিতা ও বিজ্ঞানের মেলবন্ধন নিয়ে ভেবেছেন তাঁরা অনেকেই সরাসরি বিজ্ঞানকে নিয়েই কবিতা লিখেছেন – সেট হোক না পরমাণুর ব্যাসার্ধ, চাঁদের ওজন বা কৃষ্টাল ল্যাটিস। ফলতঃ সেই সব কবিতা হয়ে গেছে প্রায়শই কাব্যিক গুণে (বা অনেক সময় অকাব্যিক ও বটে!) জড়িত বিজ্ঞান ব্যখ্যা। কিন্তু সেটা আমি চাইছি না আমার কবিতা ভাবনায় – আমরা কোন বিজ্ঞান শিক্ষকের ভূমিকা পালন করছি না – বিজ্ঞানকে সহজ ভাষায় পরিবেশন করাও আমাদের উদ্দেশ্য নয়। আমাদের প্রথম পদক্ষেপ হবে কবি সংক্রান্ত প্রচলিত Instinctive আর Romantic সংজ্ঞার বাইরে বেরিয়ে Logical এবং Preciseness আমাদের কবিতায় অন্তর্লীন ভাবে প্রোথিত করে দেওয়া।

    [ক্রমশঃ]
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৬ আগস্ট ২০১৫ | ৮১২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • sswarnendu | 198.154.74.31 (*) | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৭:১৭67670
  • খুব ইন্টারেস্টিং....চলুক।
  • de | 24.139.119.173 (*) | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৩৬67671
  • হুঁ, ইন্টারেস্টিং!
  • Ekak | 125.99.196.27 (*) | ১৭ আগস্ট ২০১৫ ১০:২৮67672
  • চলুক !
    প্রসঙ্গত , পিকাসো বলায় মনে পরলো । অনেকদিন আগে একটি প্রবন্ধ পড়েছিলুম গোলাপ সুন্দরী এবং ফের্দন লেজে -র আঁকা সোডা বটল -পিকাসো আর্ট (থ্রি উওমেন এট দ্য স্প্রিং ) এগুলো পাশাপাশি রেখে আলোচনা । তারপর এই সময়টা নিয়ে আগ্রহী হই ।আরও ঘাঁটতে থাকি । ইংরেজরা যতই ভুল্ভাল্বিশ্লেষণ করুক পট শিল্পের প্রভাব পাশ্চাত্য সমসাময়িক দের উপর পরেছে বলেই মনে হয় । বা অলভার ইন্ডিয়ান আর্ট এর ও ।
  • ujbuk | 96.159.140.135 (*) | ২২ আগস্ট ২০১৫ ০৮:৩১67673
  • বাহ বেশ ভালো । অনেক দিন পর একটা লেখা দেখলাম যাতে লেখাটাই ফোকাস, আমি লিখছি আমি কত জানি এই ব্যাপারটা নয়। চলুক !
  • সুকান্ত ঘোষ | 129.160.188.123 (*) | ২৩ আগস্ট ২০১৫ ০৪:৫৫67674
  • যাঁরা পড়ছেন তাঁদের অনেক ধন্যবাদ।

    একক,
    আপনি ঠিকই বলেছেন - প্রভব হয়ত পড়েছেই। আমার লেখার অর্থ কিন্তু এই ছিল না যে কোন প্রভাব নেই ভারতীয় আর্টের - বরং ফার ফ্রম ইট। আমি বলতে চেয়েছিলাম প্রখ্যাত সমালোচকদেরও পক্ষপাত থাকে, যা তাঁদের ব্যাকগ্রাউন্ডের উপর নির্ভর করে অনেক সময়।
  • he he party | 93.143.240.15 (*) | ২৩ আগস্ট ২০১৫ ০৫:৪৬67675
  • সোজা বাংলায় লিখতে যে আঁতেলদের কি সমোস্যা হয়
  • | 24.99.27.162 (*) | ২৩ আগস্ট ২০১৫ ০৯:২০67676
  • ইন্টারেস্টিং তো।
    পড়ছি .... চলুক
  • sinfaut | 127.195.58.31 (*) | ২৫ আগস্ট ২০১৫ ০৪:২৫67677
  • সুকান্ত, একট বই পড়ছি এই বিষয়েই প্রায়। হয়তো আপনার ভালো লাগবে।

    The Age of Insight: The Quest to Understand the Unconscious in Art, Mind, and Brain, from Vienna 1900 to the Present - Eric Kandel
  • সুকান্ত ঘোষ | 129.160.188.131 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৫ ১১:৩৭67678
  • দ এবং sinfaut,
    অনেক ধন্যবাদ।

    আর ধন্যবাদ বইটির খোঁজ দেবার জন্য। এটা আমার কাছে নেই বা আগে পড়ি নি - খুব তাড়াতাড়ি সংগ্রহ করে পড়ার চেষ্টা করছি।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন