এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • #পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে_দেখা

    স্বাতী রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ২৫৫৯ বার পঠিত
  • #পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে_দেখা

    আশালতা দেবী / আশালতা সিংহ
    ১৯১১-১৯৮৩

    আগেকার দিনের মহিলা লেখকদের নিয়ে আমার একটু বিশেষ কৌতূহল আছে। এঁরা হয়তো ভাষা বা ফর্ম নিয়ে বিশেষ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন নি, কিন্তু সহজ ভাবে একটি নিটোল গল্প বলার যে কাজটা সেটা বেশিরভাগই বেশ নিখুঁত ভাবে করেছেন। আর বেশিরভাগ জনের লেখায় তখনকার সমাজের, বিশেষত অন্দরমহলের বেশ একটা অন্তরঙ্গ ছবি পাওয়া যায়। তাই কিছু বছর আগে কখন বই মেলায় "আশালতা সিংহের গল্প সংকলন" হাতে পেলাম, কিনে নিতে দ্বিধা করি নি। দেজ এর ২০০৭ র বই। অভিজিত সেন ও অনিন্দিতা ভাদুড়ীর সংকলন করা।

    আশালতা ছিলেন ভাগল্পুরের মেয়ে। তাই এক অর্থে অনুরূপা, নিরুপমার উত্তরসূরি। তবে অনুরূপা বা নিরুপমার থেকে প্রায় তিরিশ বছরের ছোট হওয়ার দরুণ হয়তো একটু বা বেশি-ই সাহসী। প্রথম খন্ডে আছে ৩৯টি গল্প আর দ্বিতীয় খন্ডে আছে ৬৬ টি গল্প। বেশ কিছু গল্প ( দেশের কাজ, নীর ও ক্ষীর, সফলতা ইত্যাদি) কালকে অতিক্রম করে গেছে। অবশ্য অনেক গল্প-ই প্রেমকে কেন্দ্র করে - তবে বেশ একটু অন্য কোণ থেকে ধরা দিয়েছে লেখিকার চোখে। অনেকেই বলেন যে আশালতার গল্পগুলি আসলে প্রিজমের মধ্যে দিয়ে দেখা আত্মপ্রতিকৃতির টুকরো। হবেও বা। নিজে পড়ে দেখে সিদ্ধান্তে আসাই শ্রেয়। তবে গল্প সঙ্কলণের সম্বন্ধে একটা কথা না বললে নয়, এই বই-এর একটা বড় আকর্ষণ তপোব্রত ঘোষের অনবদ্য ভূমিকা। একটি গুণী মানুষ কিভাবে সমাজের চাপে হারিয়ে যান ব্যক্তিগত জীবনের চোরাবালিতে, তার অসামান্য দলিল এই ভুমিকাটি। যারা গল্পের সঙ্গে সঙ্গে হারিয়ে যাওয়া সময়কে ছুঁতে চান, তাদের জন্য এই ভূমিকা অবশ্যপাঠ্য।

    আশালতার উপন্যাসগুলি আর পাওয়া যায় কি না জানি না। শুধু মাত্র দুটি উপন্যাস, শমী ও দীপ্তি আর শহরের মোহ, আমি পেয়েছি archive.org - এ। উৎসাহীদের জন্য বলা রইল।
    #পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে_দেখা (২)

    লেখকঃ গিরিবালা দেবী
    ১৮৯১- ??

    গিরিবালা নামের সঙ্গে প্রথম পরিচয় কোন এক বই মেলায় আনন্দ'র স্টলে। সুন্দর একটি যত্নে ছাপান মোটাসোটা হার্ডকভার বই। প্রচ্ছদটি মন জয়ী - ক্রস স্টিচে তোলা একটি গোলাপফুলের তলায় ক্রস স্টিচ দিয়েই লেখা বই এর ও লেখার নাম। পাতা উল্টিয়ে দেখে বেশ মনে হল পড়ি, পড়ি।

    বই-এর নাম রায় বাড়ী। একটি বাচ্চা মেয়ে বিনু বিয়ে হয়ে শ্বশুর বাড়ি এসেছে। সেখানে আছে তার শ্বশুরবাড়ীর সব পরিজনেরা, সবার উপরে তার ঠাকুমা-শাশুড়ি, যিনি সংসারে থেকেও একটু একটেরেতে থাকেন। বিনুর চোখ দিয়ে দেখা নতুন সংসারের গল্প, সম্পর্কের বুনট তৈরির আখ্যান, আচার বিচার, রীতি নীতি। সেই সঙ্গে এসেছে গ্রাম বাংলার অজস্র ব্রত পালার কথা। এই বই-এর সবচেয়ে বড় গুণ এর শব্দ-দিয়ে-ছবি আঁকার ক্ষমতা। কথায় কথায় বলে ওঠা ছড়াগুলোও এই বই-এর একটা বিরাট সম্পদ। গোটা বইটা আজো মনে আছে একবার বসে শেষ করেছিলাম। একটুকু ও ক্লান্তি বা বিরক্তি আসে নি। women studies এর যে ধারাটি আত্ম-কথাচর্চার মাধ্যমে কল্যাণী দত্তরা শুরু করেছিলেন, এই বইটি সেই ধারায় এক উজ্জ্বল হীরক খন্ড।

    তবে এই বইতে কোন সামাজিক রীতি নীতি নিয়ে প্রশ্ন নেই। এ বই মেনে নেওয়ার, সমর্পণের মাধ্যমে ভালবাসার চিরাচরিত বাণীর বই। বরং করবী-মল্লিকা বলে একটি উপন্যাসে লেখিকা চেষ্টা করেছেন কিছু অন্য কথা বলার , তবু লেখিকার পক্ষপাতত্ব যে অন্য দিকে তা বোঝা যায়। ছোট গল্প আমি যে কটা পড়েছি, সেগুলি মুলতঃ ন্যারেটিভ। ঠিক শেষের পরে রেশ রেখে যায় না। তাই বিশেষ ভাল লাগে নি। তার মধ্যে একনিষ্ঠ গল্পের মত একটা দুটো গল্পে তবু একটু একটা মোচড় মেলে।

    বরং অনেক বেশি মনোগ্রাহী পল্লীচিত্র বলে লেখা গিরিবালার বাংলার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের স্কেচ। মনে হয় যেন ঠিক সেই আমোদ-আহ্লাদের মাঝখানটিতেই পাঠক বসে আছেন। আর বেশ একটু ঝিম ধরানো লেখাগুলো পড়লে মনে হয় এই পৃথিবীর রণ-রক্ত-সফলতার উপরে উপরে যা আছে, তার যেন একটু একটু হদিশ মিলছে।

    এই পুরো লেখাটাই লেখা স্মৃতি থেকে - রায় বাড়ী বইটা নেই হাতের কাছে। তাই বিশেষ কোন তথ্য দেওয়া গেল না। একটি রচনাবলীর খণ্ড আছে হাতে। কিন্তু রামায়ণী প্রকাশ ভবন থেকে লেখিকার কন্যা বাণী রায়ের সম্পাদিত এই বইটি যে কোন তথ্যের ব্যাপারে অদ্ভুত ভাবে নীরব। অথচ বইটি আন্তর্জাতিক নারীবর্ষ রাজ্যস্তর সমিতির প্রকাশনা। আর আশ্চর্য ভাবে আন্তরজালে খুঁজলে জেন অস্টেন কে নিয়ে ভূরি ভূরি লেখা মিললেও দেশজ লেখকদের সম্বন্ধে প্রায় মেলে না। তাই তথ্যের অপ্রতুলতা রয়ে গেল।

    তবে একটা তথ্য না ভাগ করে নিয়ে পারলাম না । শুনেছি রায়বাড়ির একটি সিক্যুয়েল বেরিয়েছিল লেখিকার কন্যার কলমে - সকাল, সন্ধ্যা, রাত্রি নামে। বইটার শুধু নামই শুনেছি - আর কিছু হদিশ পাই নি। কেউ জানলে একটু জানাবেন?
    #পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে দেখা (৩)

    লেখক - প্রভাবতী দেবী সরস্বতী
    ১৯০৫- ১৯৭২

    একটা সময় ছিল যখন মধ্যবিত্ত বাঙ্গালী বিয়ের বাড়ি মানেই ছিল বেশ কিছু বই-এর প্রাপ্তি - আর ৬০-৭০ র দশকে এই বই গুলোর মধ্যে একটা না একটা বই এর লেখিকা হতেন প্রভাবতী দেবী সরস্বতী।
    জনপ্রিয় ছিলেন নিঃসন্দেহে। আর দীর্ঘ তাঁর সৃজনশীলতার সময়। ১৯২২ সালে তাঁর লেখা প্রথম উপন্যাস বেরয় - অম্বা। ১৯২৩ সালে বেরোন বিজিতা পরে বাংলা , হিন্দি আর তামিলে নাকি সিনেমা হয়। শোনা কথা - কোন সিনেমা-ই দেখি নি নিজে। প্রায় তিনশ বই লিখেছেন। বই গুলো নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই - প্রায় প্রতিটা বই-ই এক ধরণের "বুক ভরা মধু - বঙ্গের বধু" মার্কা ইমেজ নিয়ে চলে। মেয়েদের ত্যাগ, সহিষ্ণুতা, মাতৃস্নেহ এই সব-ই যে আসলে জীবনের
    একমাত্র বিল্ডিং ব্লক , সে সম্বন্ধে কারোর সামান্যতম কোন সন্দেহ থাকলে একবার খালি প্রভাবতী দেবীর বই পড়ুন - ব্যস সব সন্দেহ চলে যাবে। আর হ্যাঁ বিদেশী শিক্ষার কুফল ছেড়ে খাঁটি দেশজ নারী হয়ে যা স্বামীর প্রিয় তা সাধন করাই মেয়েদের জীবনের ধ্রুব লক্ষ্য এও একেবারে জলের মত মাথায় ঢুকে যাবে। বাংলার বৌ, আয়ুস্মতী, চিরবঞ্চিতা ইত্যাদি গোটা পনের বই ইন্টারনেটে মেলে - পড়ে দেখলেই বোঝা যাবে। আর দীর্ঘ বক্তৃতা মার্কা সংলাপ, অবাস্তব প্লট - এগুলো সবই মধ্যমমানের পরিচয়।
    তবে শুধু এই কথাগুলোর লেখার জন্যেই এ লেখাটা হলে না লিখলেও চলত। এত কিছুর পরেও প্রভাবতী দেবী আমায় আশ্চর্য করেন। ওঁর বিয়ে হয় ন'বছর বয়েসে। বিয়ের পরে পড়াশুনা। তারপর কলকাতা কর্পোরেশনের স্কুলে শিক্ষকতা করেন। শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে মিলে জামসেদপুরে নিখিল ভারত বঙ্গ-সাহিত্য সম্মেলনের পরিচালনা করেন। এই অবধি আমার মেলাতে অসুবিধা হয় নি।

    কিন্তু গোলমাল লাগে অন্য খানে।

    প্রভাবতী দেবী হচ্ছেন বাংলা-সাহিত্যের প্রথম মহিলা- ডিটেক্টিভের জন্মদাতা। কুমারী কৃষ্ণা। এবং একটা দুটো গল্প নয়, একটা গোটা সিরিজ লিখে ফেলেন তাকে নিয়ে। একটি পিতৃ-মাতৃ-হীন মেয়ে, মামার সঙ্গে থাকে আর রহস্যভেদ করে। দেশান্তর ভ্রমণেও পিছপা হয় না। নাঃ গোয়েন্দা গল্প হিসেবে ও এ গল্প প্রথম সারির নয়, বরং স্বপনকুমারের সঙ্গেই তার ওঠাবসা। যদিও আমার ব্যক্তিগত মত স্বপন কুমারের থেকে একটু কম অবাস্তব। তবু মানসিক ভাবে যেন এ চরিত্র তার অন্য উপন্যাসের চরিত্রদের থেকে যোজন যোজন দূরে। স্বাধীন চিন্তাভাবনার অধিকারী কৃষ্ণা বিপদের মধ্যে পড়েও মাথা ঠাণ্ডা রেখে উপস্থিত বুদ্ধির জোরে জিতে ফেরে। কারাগারে কৃষ্ণা, মায়াবী কৃষ্ণা, কৃষ্ণার পরিচয়, কৃষ্ণার জয়যাত্রা - এই বইগুলো সব দেব সাহিত্য কুটিরের থেকে প্রকাশিত। এর মধ্যে কারাগারে কৃষ্ণা এই সিরিজের প্রথম বই - ১৯৫২ সালে বের হয় - স্কুল কলেজের মেয়েদের জন্য। আশির দশকেও আমরা সে বই চুটিয়ে পড়েছি। তখনো আগাথা ক্রিস্টি, পি ডি জেমস এমন হাতে হাতে ছিলেন না। খুঁজলে এখনো অনেক বাড়ির পুরোন ট্রাঙ্কে পাওয়া যাবে হয়তো। আমি পড়েছি বিভিন্ন লাইব্রেরীর দৌলতে। তাই সংগ্রহে নেই।

    ঠিক কি কারণে একজন সীতা-সাবিত্রীসমান হিন্দু নারীর আদর্শের প্রবক্তা একজন মহিলা ডিটেকটিভ তৈরি করেন? তাও আবার নিজের মধ্য বয়সে পৌঁছে? তবে কি তিনি নিজের চারপাশের গণ্ডীতে নিজেই হাঁফিয়ে উঠেছিলেন? নাকি ন'বছর বয়স থেকে সংসার সংসার খেলা খেলতে খেলতে তিনি নিজের না পাওয়া নির্ভার তারুণ্য কল্পনায় ফিরে পেতে চেয়েছিলেন? অথবা হয়তো সামাজিক চাপে এক ধরণের approved লেখাই লিখে লিখে ক্লান্ত হয়ে গিয়ে অন্য আকাশ খুঁজেছিলেন? কে জানে!

    জানতে ইচ্ছে করে!
    #পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে দেখা (৪ )

    লেখক- স্বর্ণকুমারী দেবী
    ১৮৫৬-১৯৩২

    সজনি, নেহারো বসন্ত সাজে
    ক্যায়সে মাতল হরষে দিক।
    কাননে কাননে ফুলকুল জাগল
    কুঞ্জে কুঞ্জে কুহরল পিক।।

    (সঙ্গীতশতক)

    কে লিখেছেন? স্বর্ণকুমারী দেবী। কে তিনি ? দেবেন্দ্র নাথ ঠাকুরের চতুর্থ কন্যা, রবীন্দ্রনাথের ন'দিদি আর জানকীনাথ ঘোষালের স্ত্রী। এই কি তাঁর পরিচয়? না - তিনি হলেন স্বর্ণকুমারী দেবী - ঔপন্যাসিক, ছোটগল্পকার, প্রাবন্ধিক, কবি, সংগীতকার, সম্পাদক এবং রাজনৈতিক চেতনায় ভাস্বর এক স্বয়ংসম্পূর্ণ নারী।

    নাঃ কোন বাবদেই প্রথম হওয়ার জয়মাল্য তিনি পান নি। বাবু বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের কলমে জন্ম নিয়েছে দুর্গেশনন্দিনী । ১৮৬৫ সালে। তার বছর তিনেক পরে বের হয়েছে মনোত্তমা। প্রথম বাঙ্গালী নারীর লেখা উপন্যাস। তারও প্রায় আট বছর পরে বেরোল এক অনামিত উপন্যাস "দীপ নির্বাণ" - মেজদাদা সত্যেন্দ্রনাথ ঠাকুরকে উৎসর্গীকৃত। যে বই পড়ে সত্যেন্দ্রনাথ প্রথমে অভিনন্দন জানিয়েছিলেন, ভাই জ্যোতিরিন্দ্রনাথ ঠাকুরকে। পরে জানা গেল, সে বই এর লেখিকা বোন স্বর্ণকুমারী |

    ১৮৮৪ সালে , কাদম্বরী দেবীর মৃত্যুর পরে, ভারতী যখন উঠে যাব যাব করছে, তখন তিনি তার দায়িত্ব নিলেন। প্রথম পর্বে ১১ বছর আর পরের পর্বে সাত বছর ধরে তিনি সম্পাদনা করলেন ভারতী, মানের দিক থেকে যে পত্রিকা তখন বঙ্গের রত্নবিশেষ। তবু তিনি প্রথম বাঙালী মহিলা সম্পাদক নন - সে কৃতিত্ব হল থাকমণি দেবীর, ১৮৭৫ সালে যিনি অনাথিনী নামে এক মাসিক পত্রিকা প্রকাশ করেন।

    দীর্ঘ জীবনে উপন্যাস লিখেছেন প্রায় বারোটি - তার মধ্যে তিনটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। আজকের দিনের মানদণ্ডে ভাষা ভজঘট লাগে। বঙ্কিমের থেকে একটু সরল হয়ত, তবু বেশ গতিহীন। আর জায়গায় জায়গায় অলৌকিকত্ব কেমন গল্পের গরু গাছে নিয়ে তোলে। তবু যেটা ভাল লাগে সেটা হল মিবাররাজের উপসংহারে বিভিন্ন তথ্যসূত্র ঘেঁটে তথ্যের প্রামাণ্যতা নির্ণয়ের চেষ্টা। তবে উপন্যাসের থেকে অনেক বেশি ভাল লাগে ভারতীতে প্রকাশিত ওঁর নভেলেটগুলি , কুমার ভীম সিংহ, ক্ষত্রিয় রমণী ইত্যাদি রাজপুতানার গল্প | রাজকাহিনীর প্রকাশ হতে তখনো অনেক দিন বাকী।

    আজকের দিনে বসে ওঁর সামাজিক লেখাগুলোও পড়তে ভালো লাগে না। ওঁর সব থেকে জনপ্রিয় উপন্যাস স্নেহলতার নায়িকা এক প্যানপেনে ন্যাকা চরিত্র মাত্র। কিন্তু একটু গভীরে ভাবলে একটু অন্য চিন্তা আসে মাথায়। আজকের দিনে একটি মেয়ে সমকামিতা নিয়ে গল্প লিখলে শুনতে হয়, কি সব নোংরা বিষয় নিয়ে লিখিস এসব। বাড়ির লোকের মাথা হেঁট করে দিস! তখনকার দিনে মানে ১৮৯২ সালে একটি সম্ভ্রান্ত বাড়ীর বৌ-র পক্ষে বিধবা স্নেহের ওষ্ঠাধরে চারুর চুম্বন মুদ্রিত করার কথা লেখাই কি বেশ বৈপ্লবিক ছিল? মনে রাখা দরকার সেই ভিক্টোরিয়ান যুগে তখনও শরীর গোটাগুটি ব্রাত্য আর নারীস্বাধীনতার অর্থ যে ঠিক সমানাধিকার নয় তাই নিয়ে তাঁর বাড়ির দৃপ্ত পুরুষেরা আলোচনা করছেন।

    তবে এখানে আর একটা তথ্য হয়তো ইন্টারেস্টিং হবে। স্বর্ণকুমারীর কাহাকে উপন্যাসটির একটি ইংরাজী অনুবাদ প্রকাশ হয় An Unfinished Song নামে , ১৯১৪ সালে। বইটির প্রচুর বিক্রিও হয়। ওই সময়ের খুব বেশি বাংলা লেখকের ভাগ্যে এই সৌভাগ্য হয় নি। প্রথম উপন্যাস ট্রিলজিও লিখেছেন তিনি।

    ছোট গল্পগুলিও অতি কথন দোষে সামান্য দুষ্ট । তবে বেশ কিছু ছোটগল্প যেমন কেন, লজ্জাবতী এগুলি বেশ একটা অন্য রেশ এনে দেয় মনে। আর বিশেষ কৌতূহলী পাঠককে কান্তিবাবুর খোশনাম গল্পটা পড়ে দেখতে অনুরোধ করি। ইনি গান লিখেছেন অনেক, সুর দিয়েছেন - ব্রজবুলি ভাষায় গান লিখেছেন। শুনেছি আদরের ভাই রবি নাকি নিজের বাসরে দিদির লেখা গান গেয়েছিলেন। কৌতুক-নাটক গুলো কিন্তু এখনো পড়তে বেশ লাগে।

    তবে আমাকে সবথেকে অবাক করে স্বর্ণকুমারীর বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধগুলো। একটি মেয়ে যে কিনা কোন প্রথাগত শিক্ষার আওতায় আসে নি, শুধু অন্তঃপুর শিক্ষায় শিক্ষিত, তিনি কেমন অবলীলায় বিষয় থেকে বিষয়ান্তরে ঘুরে ঘুরে পৃথিবীর সৃষ্টি তত্ত্ব, সৌরমন্ডল, নক্ষত্রলোক ইত্যাদি নিয়ে প্রবন্ধ লিখে ফেলেন। অন্য গ্রহে জীব আছে কিনা এও তাঁর চর্চার বিষয়। তাঁর ভ্রমণ সাহিত্যেও এই একই রকম অনুসন্ধিৎসার ছাপ। আসলে তিনি ছিলেন বহুগ্রাহী - তারই ছাপ পড়েছে তাঁর সৃষ্টিশীলতায়। আমরা যখন আজও একটু কঠিন বিজ্ঞানের ইক্যুয়েসন দেখলে তাড়াতাড়ি বই বন্ধ করি বা আমাদের ইস্কুলগুলো যখন ধরেই নেয় মেয়েদের স্কুল তো - অঙ্কে একটু কাঁচা হওয়াই স্বাভাবিক, তখন বুঝতে পারি স্বর্ণকুমারীদের যোগ্য উত্তরসূরি হতে আমাদের এখনো দেরী আছে।

    রামায়ণী প্রকাশ ভবনের স্বর্ণকুমারী দেবীর রচনাবলী আছে বাণী রায়ের সম্পাদনায়। আর উপন্যাস গুলি পাবেন দেজ র ২০০৯ সালের স্বর্ণকুমারী দেবীর উপন্যাস সমগ্রতে। প্রবন্ধগুলির কিছু পাবেন অভিজিত সেন আর অভিজিত ভট্টাচার্যের সম্পাদিত বিকল্প প্রকাশনীর ১৯৯৮ সালের বইটিতে। আরেকটি রচনা সংকলণ আছে দীপ প্রকাশনীর ১৯৬০ সালের, অভিজিত সেন ও অনিন্দিতা ভাদুড়ীর সঙ্কলিত - তাতেও কিছু প্রবন্ধ আছে।

    তবে বোধহয় ঠাকুরবাড়ির মেয়ে হওয়ার সুবাদেই তিনি হয়তো পুরো হারিয়ে যান নি। তাঁকে নিয়ে অনেক আলোচনা হয়েছে। তবে সব থেকে কৌতূহল জাগায় বাণী রায়ের তাঁর সম্বন্ধে ঝাঁঝালো মুখবন্ধের আলোচনাটি। রবীন্দ্রনাথ স্বর্ণকুমারীর সম্পর্কের টানাপোড়েন এক নতুন দৃষ্টিকোণে দেখা| পড়ে দেখতে পারেন - অনেক নতুন আলোচনার রসদ মিলবে হয়তো |
    #পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে দেখা

    লেখক- জ্যোতির্ময়ী দেবী
    ১৮৯৪-১৯৮৮

    আজকের দিনে ( ৮ই মার্চ ২০১৮ ) ফিরে দেখার জন্য জ্যোতির্ময়ী দেবীর থেকে ভাল আর কেই বা হতে পারেন! প্রথম পরিচয় তাঁর সঙ্গে তের কি চোদ্দ বছর বয়েসে। হাতে এসেছিল "মনের অগোচরে"। মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। মনের ভিতরে ছবিটা গেঁথে গিয়েছিল। বিশাখার সংসার। আধুনিকতার সঙ্গে চিরাচরিত ভাবনার সংঘাতের গল্প লিখেছেন উদাসীন নিরপেক্ষতার সঙ্গে। ঝরঝরে ভাষায়। বড্ড মন-কাড়া গল্প। কিন্তু সেই কৈশোরেই মন টেনেছিল বিশাখা – তাঁর মাতা, স্ত্রী, ভগিনী রূপ ছাপিয়ে তার সমস্ত অপ্রতিভত ধরণ-ধারণ নিয়ে নিজস্ব রূপে মনে জায়গা করে নিয়েছিল সে । মনে হয়েছিল রবীন্দ্রনাথ সেই যে সমাপ্তি গল্পে লিখেছিলেন তলোয়ার দিয়ে বিবাহপূর্ব শৈশব ছিন্ন করার কথা, এতো তারই সিক্যুয়েল।

    তারপরেই পড়লাম আরাবল্লীর আড়ালে আর আরাবল্লীর কাহিনী। মুগ্ধতা বাড়ল। আমাদের সেই সময় টিভির এত বাড়-বাড়ন্ত ছিল না। সুইচ টিপলেই শোবার ঘোরে ঢুকে পড়ছে সিরিয়া, এমনটা ছিল না। তাই আমাদের ইস্কুলের ভূগোল বই এর নামগুলোকে সত্যি করে চেনার উপায় ছিল গল্পের বই। তাই যে কোন পরদেশের পটভুমিকায় লেখা বই গোগ্রাসে গিলতাম। কিন্তু এই বই গুলো পড়তে গিয়ে দেখলাম, অ্যাকাডেমিক কৌতূহলকে ছাপিয়ে মনে জেগে থাকছে রাজস্থানী হারেমের সুন্দরীদের অসহায় ক্ষমতার মানচিত্র। সুমেরু রায় পড়ে কতদিন অবাক হয়ে ভেবেছি, শুধু দুষ্টু বলে নিজেদের মেয়েকে, বৌকে দিয়ে আসতে পারল অন্যের হাতে! মেয়েদের তাহলে কতটুকুই বা দাম! ফণীমনসার বন, যেখানে শুধু মৃত কন্যাদের হাড়ের পুতুল পাওয়া যায়, বা বেটি কা বাপ, দাদীমার আফিঙে পঞ্চমা নাতনীর শৈশবে মৃত্যু, হয়ত আজকের দিনে আর প্রাসঙ্গিক নয় - তবু উচ্চকিত বেটি বঁচাও এর সময়েও যখন দেখি নিওন আলোয় মেডিক্যাল ল্যাবরেটরির গায়ে লেখা, এখানে সেক্স পরীক্ষা হয় না, তখন ওই প্রাসঙ্গিকতার ধারণা টোল খায় বৈকি।

    আসলে নিজের জীবন দিয়ে বুঝেছিলেন মেয়েজীবনের কষ্ট। জয়পুরের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন তাঁর ঠাকুরদা। বাবাও জয়পুরের মন্ত্রী। বাড়িতে পড়াশোনার পরিবেশ ছিল। ছিল একটু মুক্ত হাওয়া। তবু দশ বছরে বিয়ে, বারো বছরে নিষ্করুণ শ্বশুরবাড়ী যাওয়া, আর ছয়টি সন্তান নিয়ে পঁচিশবছর বয়সে বিধবা হওয়া। ফিরে এলেন বাপের বাড়ী। সবই ছিল- তবু তাঁর মনে হল সবেতেই তাঁর অনধিকার। তাই তিনি জায়গা খুঁজে নিলেন বই এর জগতে। ১৯২১ সালে ওমর খৈয়ামের অনুবাদক কান্তি চন্দ্র ঘোষের হাত ধরে ভারতবর্ষ পত্রিকায় তাঁর প্রবন্ধ ছাপা হল প্রথম " নারীর কথা"। সেই শুরু. কাছাকাছি সময়েই বিজলীতে বেরোল তার ছোট গল্প। সেই কলম থামল একেবারে শেষ বেলায়। এই দীর্ঘ জীবনের পরিপ্রেক্ষিতে হয়তো খুব বেশি নয় তাঁর রচনাসম্ভার - কিন্তু প্রতিটি লেখা আজও কেমন যেন মনের তার ছুঁয়ে যায়।

    সংসারের খুঁটিনাটির পটভূমিকায় কি অবলীলায় তিনি ছবি এঁকেছেন মেয়েদের অধিকারহীনতার - স্ত্রীধন গল্পে তার প্রমাণ। আবার না-পারা র থেকে পারা'য় প্রোমোশনের গল্প লেখেন গঙ্গাফড়িং- এ। কেয়ার অব ? গল্পে এক মহিলা তাঁর ঠিকানা বলায় হাবি পিসি যখন বলেন, “শাঁখা সিঁদুরের ঠিকানা”, তখন কেমন নিজের জন্য ভয় হয়। অজাত গল্পে অ্যাবরসনের পরের মানসিক অবস্থা নিয়ে লেখেন - সময় 1972. এ সব তো আমাদেরই গল্প, আজকেও। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাঁর কলম হয়েছে শাণিত। ভাবাবেগের আধিক্য মুক্ত, ক্ষুরধার। সময়ের থেকে কতখানি যে এগিয়ে ছিল তাঁর লেখা সে বোঝা যায় তাঁর চিরন্তন নারী জিজ্ঞাসার প্রবন্ধ গুলি পড়লে। নারীর উত্তরাধিকার নিয়ে দাবী জানিয়েছেন। ১৯৩০ র দশকে সহশিক্ষাকে সমর্থন করে প্রবন্ধ লিখেছেন। আর আমরা আজও মেয়েদের সত্যিকারের নিরাপত্তার বন্দোবস্ত না করে মেয়েস্কুলে ছেলে টিচার বন্ধের দাবী জানাই।

    জ্যোতির্ময়ীকে নিয়ে কোন লেখা শেষ করা যায় না তাঁর আইকনিক দুটি লেখার উল্লেখ না করে। এপার গঙ্গা, ওপার গঙ্গা আর সেই ছেলেটা। দেশভাগ- দাঙ্গার এক অসহ দলিল। রাজায় রাজায় যুদ্ধ হলে যে উলুখাগড়াদেরই প্রাণ যায় সে ভারত-কথা লিখে যান তিনি।

    বাংলার মেয়েদের পূর্বকথা জানতে হলে তিনি অবশ্যপাঠ্য। তাঁর লেখা বারে বারে পড়ার। আজও যখন বাপের বাড়িতে জায়গা না পাওয়া ছোট চাকুরীরতা মেয়েটিকে শ্বশুরবাড়ীর লোক বলেন “আমাদের বাড়ীতে আমাদের কথা না শুনে চললে বেড়িয়ে যেতে পারো” আর কোথায় যাবে, কিভাবে শিশুকন্যার দেখভাল করবে বুঝতে না পেরে সে মুখ বুজে শুনতে বাধ্য হয়, তখন বই এর আলমারী খুলে ঝেড়ে ঝুড়ে তার হাতে তুলে দিতে হয় জ্যোতির্ময়ীর লেখা। জীবনযুদ্ধের শক্তি জোগানর জন্য।

    তিনি আমজনতার পছন্দের “বয় মিটস গার্ল ” সিরিজের গল্প লিখতে পারেন নি। ভাবাধিক্যের রসে ডুবিয়ে তুলতে পারেন নি তাঁর লেখা। তাই তিনি আজ জনতার রোজ-পাঠ্য নন। তবু বলব ওই ধরণের ঋজু, সাহসী, স্পষ্টবক্তা, যুক্তিনির্ভর, শিক্ষিত এবং ব্যালান্সড মানুষের খুব অভাব এ দেশে । তাই আজকের দিনে এটাই চাইব, এদেশের বুকে হাজারো জ্যোতির্ময়ী জন্ম নিক।

    গ্রন্থসূত্রঃ দে’জ এর থেকে ১৯৯৪ সালে তাঁর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে তাঁর রচনা সংকলন প্রকাশ হয়েছিল। পাঁচ খণ্ডে।

    #পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে দেখা

    লেখক- শৈলবালা ঘোষজায়া
    ১৮৯৪-১৯৭৪

    মানসী ও মর্মবাণী , কার্তিক ১৩২৩ সাল। ১৩২২ বঙ্গাব্দের বঙ্গসাহিত্যের বিবরণ প্রবন্ধে বঙ্গীয় সাহিত্য পরিষদের অমূল্য চরণ ঘোষ বিদ্যাভূষণ লিখলেন,
    ‘প্রবাসীতে শৈলবালা ঘোষজায়া নাম্নী নতুন লেখিকা শেখ আন্দু উপন্যাস শেষ করিয়াছেন। লেখিকা bold হইতেই পারেন, কিন্তু মাত্র boldness ই কৃতিত্বের পরিচায়ক নয়। সহিস ও মুসলমান মোটরচালকের সহিত শিক্ষিত বঙ্গবালার প্রেমে পড়ার চিত্রটা কি এতই স্বাভাবিক? এটা সংক্রামক রোগে দাঁড়াইল নাকি? পুরুষলেখক না হয় সহিসের প্রেমে-পড়া বাঙ্গালী মহিলার চিত্র আঁকিয়া বাহাদুরি বোধ করিয়াছিলেন; বাঙ্গালী রমণী হইয়া লেখিকা কিভাবে এই জঘন্য চিত্র অঙ্কন করিলেন? শেখ আন্দুর চরিত্রটি বেশ উজ্জ্বল ও সুন্দর। তাহারই পার্শ্বে মহিলা অঙ্কিত বঙ্গ মহিলার চিত্র ( ‘লাবণ্য’ ও ‘জ্যোৎস্না’ ; বিশেষত: লাবণ্যের চরিত্র) যেরূপ ভাবে অঙ্কিত হইয়াছে তাহাতে আমরা স্তম্ভিত হইয়াছি। রবীন্দ্রনাথের অনুকরণে ভাষার পিরামিড গড়া সকলের পক্ষে সহজ নহে; তাই লেখিকা যেখানেই কথার বুকুনি দিয়া ভাবের খেলা দেখাইতে গিয়াছেন সেইখানেই তেমন কৃতিত্ব দেখাইতে পারেন নাই।” (১)

    ১৩২২ বঙ্গাব্দ। মানে ইংরাজি ১৯১৫ সাল। আর বই হিসেবে প্রথম বেরোল আরও দু বছর পরে, গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এন্ড সন্স থেকে। বই-এর উৎসর্গ পত্রে দেখাচ্ছে লেখিকা মেমারির বাসিন্দা। ১৯১৫ সালের একটি হিন্দু বাড়ীর বৌ, তাও আবার কলকাতার থেকে অনেক দূরে মেমারিতে বসে শেখ আন্দুর মত একটি বই লিখছেন, এ এক আশ্চর্য ঘটনা বৈকি। কেন শেখ আন্দু সমসাময়িক অন্য উপন্যাসের থেকে আলাদা? সেই সময়ে বাংলায় মেয়েদের লেখালেখির জগতের অলিখিত সম্রাজ্ঞী অনুরূপা দেবী । ভূদেব মুখোপাধ্যায় এর নাতনী পরম যত্নে হিন্দু নারীর ঐতিহ্য তুলে ধরছেন। সেই সময়ে শৈলবালা প্রথম উপন্যাসেই ঝড় তুললেন – সেখানে একটি বিত্তবান শিক্ষিত হিন্দু বাঙ্গালী মেয়ে লতিকা ভালবাসল তারই বাবার বেতনভুক গাড়িচালক, পাঠান শেখ আন্দুকে। এবং সে ভালোবাসা মুলতঃ শরীরী ভালোবাসা। অথচ আন্দু আকৃষ্ট হল লতিকারই বন্ধু জ্যোৎস্নার প্রতি। কাহিনীর শেষ বিধবা জ্যোৎস্নার আন্দুকে চলে যেতে বলায় – আন্দু মক্কায় রওনা দেয় আর কোন দিন দেশে না ফেরার সিদ্ধান্ত নিয়ে। আন্তঃ-ধর্ম ভালোবাসা, শরীরী আকর্ষণ সব কিছুই তখনকার প্রচলিত উপন্যাসের ছকের বাইরে। মনে রাখতে হবে, লেডি চ্যাটারলিজ লাভার লেখা হতে তখনো অনেক দেরী।

    ১৮৯৪ সালে জন্ম। তের বছর বয়সে বিয়ে। মেমারির নরেন্দ্র মোহন ঘোষের সঙ্গে। খুবই রক্ষণশীল হিন্দু বাড়ির বৌ ছিলেন। তবু তার মধ্যেও তার লেখা শুরু হয়। শুরুটা স্বামীর সহায়তায়। শোনা যায় শেখ আন্দুর পাণ্ডুলিপি স্বয়ং নরেন্দ্রমোহন প্রবাসীর দপ্তরে পাঠিয়ে দেন। তার আগে অবশ্য ১৩২২ সালের জ্যৈষ্ঠ মাসে এই প্রবাসীতেই বেরোয় কর্পূরের মালা, যেখানে গল্পের নামের তলায় লেখা প্রবাসীর দ্বিতীয় পুরস্কার প্রাপ্ত গল্প। এই কথাটা এই কারণে বলা যে জ্ঞানেশ মৈত্র তার নারী জাগৃতি ও বাংলা সাহিত্য বইতে বলেছেন যে শৈলবালার প্রথম প্রকাশ বেগমবাহার গল্প প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়ে – গল্প বীণার সমাধি। এক অবাঙ্গালি বীণাবাদকের সঙ্গে এক বাঙ্গালী কন্যার প্রেম নিয়ে নাকি গল্পটি লেখা। এই গল্পটির আমি সন্ধান পাই নি। তবে কর্পূরের মালা গল্পটিও বিষয়বস্তুর নিরিখে বেশ অসাধারণ। পুরীর জগন্নাথের পান্ডা পাকেচক্রে প্রেমে পড়ে তালেগোলে দেখা হয়ে যাওয়া এক কিশোরীর। এক তরফা প্রেমের আকুলতার দুর্দান্ত ছবি এঁকেছেন। কর্পূরের মালা গল্পে লেখিকার নাম শৈলবালা ঘোষ। এই বছর-ই ভাদ্র মাসে প্রবাসীতে আর একটি গল্প বেরোয় প্রবাসীর ষষ্ঠ পুরস্কার প্রাপ্ত গল্প হিসেবে। রুদ্রকান্ত। এখানেও তিনি চিরাচরিত ধর্মের উপরে মানবধর্মের জয়গান করেছেন। হিরো রুদ্রকান্ত কিভাবে হিন্দু জমিদারের এবং তার মুসলমান নায়েবের অত্যাচার থেকে নায়েবেরই ভাগ্নে তিনু শেখকে বাঁচায় আবার শেষকালে সেই হৃত-সম্মান নায়েবের মৃত্যুর পরে তার ছেলেকে বুকে তুলে নেয়, তারই গল্প। এই গল্পে লেখিকার নাম শৈলবালা ঘোষজায়া। শোনা যায় শ্বশুরবাড়ীর লোকের থেকে নিজের সাহিত্য কীর্তি লুকিয়ে রাখার জন্য এই নাম বদল।

    এর পরেও তিনি অজস্র লিখেছেন। তাঁর লেখায় খুব সহজেই অন্য ধর্মের চরিত্র উঠে আসে। তাঁর একটা সচেতন চেষ্টা ছিল উদারচিত্ত, হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ বর্জিত মানব হিতৈষী সমাজের ছবি আঁকার। সাম্প্রদায়িক সঙ্কীর্ণতা সেই সময়ে কিছু কম তো ছিল না – এবং অনুমান করি মেমারীর অন্তঃপুরিকার জীবনের চারপাশে তার ছায়া বেশ ঘন ছিল। তবু তিনি সেই চাপের কাছে মাথা নোয়ান নি। হয়তো তার বাপের বাড়ীর সহিষ্ণুতা তাঁকে এই ভাবে ভাবতে শিখিয়েছিল। এবং এই জায়গাতেই তিনি অনেক বিরূপ সমালোচনা সত্ত্বেও সমাজ-সমস্যার লেখক হয়ে যান।

    কিন্তু তাঁর ব্যক্তিজীবন সুখের ছিল না। তাঁর লেখিকাসত্ত্বার বিকাশের কয়েক বছর পরেই ১৩২৭ বঙ্গাব্দে তাঁর স্বামী মানসিক রোগগ্রস্ত হয়ে যান। এমনিতেই তার শ্বশুরবাড়ীতে পড়াশোনার পরিবেশ ছিল না। লুকিয়ে লুকিয়ে তাঁকে সেসব করতে হত। তবু স্বামীর সহায়তা পেয়েছিলেন এত দিন। কিন্তু এবার সেটুকুও ঘুচল। আরও বছর বারো পরে নরেন্দ্র মোহন মারা যান। তার কিছু পরে তিনি পুরুলিয়ায় তারই ভাইপোর বন্ধু বিপ্লবী অন্নদাপ্রসাদ যিনি পরবর্তীকালে স্বামী অসীমানন্দ নামে পরিচিত, তার প্রতিষ্ঠিত আশ্রমে চলে যান। এবং সেখান থেকেই লেখালেখি চালাতে থাকেন। ১৯৭৪ সালে মৃত্যু।

    শৈলবালার লেখা আজকে বসে পড়ার সবচাইতে বড় সমস্যা হল তাঁর রচনার কোন পূর্ণ-সংগ্রহ নেই। এবং সেজন্য তাঁর সব লেখা পড়ে ওঠা আমার মত সাধারন পাঠকের পক্ষে প্রায় দুঃসাধ্য। আমি যেকটি পড়ে উঠতে পেরেছি, তাঁর মধ্যে একমাত্র বিপত্তি ১৯৫৮ সালে প্রকাশিত। সেটি শোনা যায় লেখিকার খুব প্রিয় বই ছিল। আমার আধুনিক চোখে আবার সেটা বড্ড আড়ষ্ট ও অবাস্তব লেগেছে। আমার পড়া বাকী সবকটা বই-ই মোটামুটি ১৯৪০ এর আগে প্রকাশিত।

    শুনেছি তিনি অনেক ছোট গল্প লিখেছেন। প্রবাসী, বসুমতী, ভারতবর্ষে ছাপা হয়েছে অনেক। যে কটা গল্প পড়েছি , তার ভিত্তিতে মনে হয়, তাঁর ছোট গল্প ঠিক “শেষ হয়ে হইল না শেষ” এর গণ্ডিতে না পৌঁছালেও সাবলীল ভাবে একটি স্কেচ তৈরি করে। বিষয় নির্বাচনে তিনি খুব বেশী মেয়েলিআনা না দেখালেও বেশ দক্ষতার সঙ্গে মেয়েলি পর্যবেক্ষণ ক্ষমতার মিশেলে পরিবেশ নির্মাণ করতেন। তবে তাঁর উপন্যাসগুলোর বিষয়বস্তু অনেক সময়ই বেশ অভিনব। শেখ আন্দুর পাশাপাশি মহিমাদেবীর মত ইতিহাস ভিত্তিক উপন্যাসও লিখেছেন আবার তেজস্বতীর আত্মমর্যাদাপূর্ণ, সেই আমলে চাকরী করে সংসার প্রতিপালন করা তৃপ্তির চরিত্রও তিনি রচনা করেন। তবে অনেক সময়ই তার চরিত্রগুলো ঠিক সম্পূর্ণ হয় না। কেমন একটু খাপছাড়া হয়ে থাকে। বিশেষ করে মেয়েদের চরিত্রগুলো। হয়তো একজন মেয়ে হিসেবে মেয়েদের অমন অবাস্তব চরিত্র তৈরি করা ঠিক মেনে নেওয়া যায় না। বিদগ্ধ চোখের কাছে আবার লেখার পরিশীলিত ভাব বা নাগরিক স্মার্টনেস একটু কম, যেমনটা ছিল আশালতা সিংহের লেখায়। কলমের সাবলীলতাও হয়ত অতটা নয়, যতটা তার সমসাময়িক সাহিত্যিক জ্যোতির্ময়ীর ছিল।

    তবু তাঁর কৃতিত্ব শুধু একটি বই দিয়ে মাপতে হলে সেটি অবশ্যই শেখ আন্দু। শেখ আন্দুকে নিয়ে অনেক বিরোধী সমালোচনাগুলো ক্ষত বিক্ষত করেছিল তাঁকে। কে জানে হয়তো সেটি কোন পুরুষ লেখকের সৃষ্টি হলে, সেটিই হয়তো যুগান্তকারী রচনা হিসেবে পরিচিত হত। সমালোচনাও কি আর সর্বদা নিরপেক্ষ হয়!

    তিনি বোধহয় অন্য অনেকের মত মননশীল পরিবেশের সাহায্য পান নি। পান নি বোধহয় শহুরে বিদ্বৎজনের সান্নিধ্যও। আর কলকাতার সঙ্গে কোনভাবে জড়িয়ে না থাকার জন্য আজকের দিনে তিনি প্রায় ভুলে যাওয়া একটি চরিত্র।

    তবু সব নিজস্ব সীমাবদ্ধতা নিয়েও একটা জায়গায় শৈলবালা তাঁর অনেক সমসাময়িককে ছাপিয়ে গেছেন। আজকের সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার আবহে ভাবতে অবাক লাগে আজ থেকে একশ বছরের ও বেশি আগে একটি কুড়ি বছরের বৌ মেমারির গ্রামে বসে লিখছেন সম্প্রীতির পাঠ – স্বপ্ন দেখছেন জাতি ধর্মের উপরে উঠে এক মুক্ত ভারতের। সেখানেই আমরা কুর্নিশ করতে বাধ্য হই তাঁকে।

    *************************************
    নোট ১ - অমুল্য বাবু সমালোচনা করতে গিয়ে বলেছেন যে বই এর চরিত্র দুটির নাম লাবণ্য ও জ্যোৎস্না। আমি কিন্তু প্রবাসীর পাতায় এবং মুদ্রিত বই - দুটোতেই পেয়েছি চরিত্র দুটির নাম লতিকা ও জ্যোৎস্না। লাবন্য এলেন কোথা থেকে কে জানে!

    নোট ২ - আর একটা কথা আবছায়া ভাবে শুনেছি, তথ্য প্রমাণ নেই অবশ্য, যে এক সময় তাদের সংসারে কোন কারণে অর্থাভাব আসে । তখন তাদের সংসার চলত শৈলবালার উপন্যাস, গল্পের থেকে পাওয়া অর্থে। এ কথা সতি হলে তিনি বোধহয় বাংলার প্রথম প্রফেসনাল লেখিকা। হ্যাটস অফফ।
    #পুরোন_দিনের_লেখক-ফিরে দেখা (৭)
    কাজী নজরুল ইসলাম

    কাজী নজরুল ইসলামকে ঠিক কোন তালিকাভুক্ত করবেন? কবি , গীতিকার? বাঙালীর বাড়িতে এককসময় একটি সঞ্চয়িতার পাশাপাশি একটি সঞ্চিতা থাকা প্রায় নিয়ম ছিল. আর পাড়ার জলসাতে "মাগো আমায় ছুটি দিতে বল " এর পরেই আসত আধো গলায় "বাবুদের তালপুকুরে, হাবুদের ডালপুকুরে" অথবা "কাঠবিড়ালী, কাঠবিড়ালী পেয়ারা তুমি খাও". তাই নজরুলের কবিপরিচিতি ভোলা বাঙালীর পক্ষে কঠিন. আর নজরুল গীতির সম্বন্ধে এই স্বল্প পরিসরে আলোচনা করতে যাওয়াই বাতুলতা. অসামান্য সুরের বৈচিত্র্য দারুণ ছন্দ আর লোকসংগীত কে বাঙালীর ড্রয়িংরুমে ঢুকিয়ে দেওয়ার পথিকৃৎ নজরুল. অপূর্ব শ্যামাসংগীত আর আগমনী গানের সম্ভার আর তাঁর দেশাত্মবোধক গণসংগীতের সম্ভার - নজরুল কি অবলীলায় ঘুরে বেড়িয়েছেন সংগীত সাম্রাজ্যের আনাচে কানাচে.

    তবু মনে হয় কবি নজরুল, সুরকার গীতিকার নজরুলের আড়ালে চাপা পড়ে যায় ঔপন্যাসিক নজরুল. আর সেই সঙ্গে হারিয়ে যায় একটা সাহিত্যের ধারা - যুদ্ধ সাহিত্য. বাঁধন হারা বলে একটি পত্রোপন্যাস প্রকাশিত হয় ১৩৩৪ বাংলাসালে মানে ১৯২৭ সালে. চিঠির মাধ্যমে এক অননুকরণীয় ভাষায় লেখা উপন্যাস - যাতে বিয়ের কথা বার্তা হয়ে যাওয়ার পরে সব ফেলে নায়ক চলে গেছেন যুদ্ধ ক্ষেত্রে. চিঠির মাধ্যমে উন্মোচিত হচ্ছে পুরো গল্পটি. তাতেই মিশেল হয়েছে সৈনিক জীবনের কথাও. তবে এ বইতে সবথেকে উল্লেখযোগ্য এর ভাষা , আরবি ফার্সী ভাষার পাশাপাশি বিভিন্ন প্রচলিত বাগধারা মিলে তৈরী হয়েছে এক অসামান্য শৈলী. .... "তোমার এই সোজা শেওড়া গাছ ভাইটী ত কম নন, "নিম্নমুখো,ষষ্টি, ছেলে খান দশটী" এ মহাশয় কুঠে কুঠে বুদ্ধি. তিনি তলে তলে এ সব মতলব পাকিয়ে চুনি বিল্লি'র মত চুপসে বসে ছিলেন ....[ ] ..... পরে কত 'নখরা তিল্লা' করে বলা হল যে আমাদের মনুয়রের সঙ্গেই সম্বন্ধ তিনি অনেকলদিন ধরে মনে এঁটে রেখেছেন. আমাকে তাক লাগিয়ে দেবার জন্যেই এতদিন তা বলা হয় নি. ..সে যাই হোক, এইবার কিন্তু দুই বাঁদর বাঁদরী মিলবে ভাল. মনুটা যেমন বাঁদর বেলেল্লা, শোফিও তেমনি আলফাতুন কাহারবা মেয়ে " ... পড়লেই দুঃখ হয় এই অসামান্য ভাষাকে আমরা হারিয়ে যেতে দিলাম. মৃত্যু ক্ষুধা নামের উপন্যাসটিতে যে মেজবৌর ছবি তৈরী হয়, তাকে রুবির প্রেম দিয়েও চাপা দেওয়া যায় নি. আর এই বইটির শুরুর একটি ঝগড়ার দৃশ্য অনবদ্য. কুহেলিকা উপন্যাসের জন্ম পরিচয় দগ্ধ জাহাঙ্গীরের জন্য করুণা হয় - তবু গল্পের টান উপেক্ষা করা যায় না.

    ব্যথার দান ছোটগল্পসংগ্রহের হেনা পুরোপুরি যুদ্ধের পটভূমিকায় লেখা. বাংলা সাহিত্যে এ জিনিস দুর্লভ. নিজের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের স্মৃতিই কি ফুটেছে এখানে? অন্য একটি গল্পসংগ্রহ শিউলি মালার গল্পগুলি অল্পবিস্তর পরিচিত. পদ্মগোখরো, জিনের বাদশা , অগ্নিগিরি বা শিউলি মালা ঠিক "শেষ হয়ে হইল না শেষ " গোত্রের না হলেও ন্যারেসন হিসেবে দুর্দান্ত. নাট্যকার নজরুলের সব নাটকের সন্ধান বোধহয় আজো মেলে নি. যেগুলো মিলেছে সেগুলো হরফ প্রকাশনীর নজরুল রচনা সম্ভারের দ্বিতীয় খন্ডে আছে. আমার তো পুতুলের বিয়ে, বিদ্যাপতি , মধুমালা এগুলো পড়তে খুব ভাল লেগেছে. নাট্যরূপ দেখার বা শোনার সৌভাগ্য হয় নি যদিও. জানেন কি নজরুল ১৯৩৮ সালে দেবীস্তুতি লিখেছেন এবং,সেটি বেতারে প্রচারিত হয়েছে? দেবী স্তোত্র গানে পাঠে আগমনীর সিরে বিষয়ে সেটি আমাদের মহিষাসুরমদর্দিনীর পূর্বজ. ভাবতে আশ্চর্য লাগে যে নিতান্ত গ্রাম বাংলার ছেলে হয়েও নজরুল কি স্বভাবজ ধর্মনিরপেক্ষ ছিলেন - তাই মোহাম্মদ আর শ্যামা দুয়ের গানই লিখে যেতে পারেন অনায়াসে. দিল ওহি মেরা ফাঁস গ্যয়ি . আর সেখানেই তিনি জাতি ধর্মের উপরে উঠে বাংলার আর বাঙালীর মনের আরাম হয়ে যান.

    এই ধারাটিকে পুষ্টতর করার দায় আমাদের উপরেই বর্তায়. আর সেজন্য নজরুলের লেখায় ডুব দেওয়ার মত উপযুক্ত কাজ আর কিই বা হতে পারে!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ | ২৫৫৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 52.110.141.65 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০২:৩২64171
  • ধন্যবাদ স্বাতীদি
  • স্বাতী রায় | 127.194.36.49 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৩:৩২64172
  • @i সই এর লিঙ্কের জন্য অনেক থ্যাঙ্কু। মজা হল যে এই লিঙ্ক দেখতে গিয়ে দেখলাম এটা যিনি লিখেছেন সেই সুদক্ষিণাদি আমার ইস্কুল তুতো সিনিয়র দিদি। তাই আশা করি এবার খবর পাওয়া সহজ হবে।

    @Archive ধন্যবাদ লিঙ্কের জন্য। এই রচনাবলীটা যদিও আমি নেটের অন্য জায়গা থেকে পেয়েছি, তবু আর্কাইভ কে ধন্যবাদ দেব। বাংলা পুরোন বই - যা পাওয়া যায় তাই ভাল।

    @Shodhganga আপনার সাইটটি খুলতে পারি নি। চেষ্টা চালাচ্ছি খোলার।

    আর লেখার সার্থকতা এখানেই যে এই আলোচনা থেকে এগুলো জানা - থ্যাঙ্কু থ্যাঙ্কু
  • i | 134.149.125.59 (*) | ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ১১:০৫64168
  • স্বাতী , ভালো লাগছে আপনার এই উদ্যোগ। লিখতে থাকুন। পড়ছি, পড়ব।

    রায়বাড়ি পড়েছি। তবে সঙ্গে নেই এই মুহূর্তে, নইলে আমিও কিছু জুড়তাম হয়তো।
    বাণী রায়ের এই উপন্যাসটি পড়ি নি। নেট এ যা পেলামঃ

    'মনে পড়ে, গিরিবালা দেবীর ‘রায়বাড়ি’ পড়েছিলাম তার অনেকদিন আগেই, আর বাণী রায়ের ‘শ্রীলতা আর শম্পা’ পড়তে বসেও যে ‘রায়বাড়ি’র সেই হারানো জগতের মায়া ফিরে এসেছিল মনের মধ্যে, তার কারণ হয়তো, ততদিনে জানা হয়ে গিয়েছিল, বাণী রায় গিরিবালা দেবীরই আত্মজা, রায়-পরিবারের পরম্পরাকে আখ্যানে বাঁধবার এই একই পরিকল্পনা ছিল লেখিকা-মায়ের মতো লেখিকা-কন্যারও, বাণী রায় তাঁর রায়বাড়ি-র বয়ানে আঁকতে চেয়েছিলেন নতুন কালকে, মায়ের সমৃদ্ধির কাল পেরিয়ে লিখতে চেয়েছিলেন ভাঙনকালের ইতিকথা, 'শ্রীলতা আর শম্পা' তাঁর সেই পরিকল্পিত চতুর্মুখ উপন্যাসেরই প্রথম দুই মুখ, 'সকাল সন্ধ্যা রাত্রি' নামে সম্পূর্ণ-হয়ে-ওঠা উপন্যাসটির আখ্যানেও ধরা আছে তারই আদল - প্রাচুর্য্ময় অতীতের বিপ্রতীপে দারিদ্র্যেদগ্ধ আভিজাত্যের গর্বে ভরা বর্তমানের দ্বন্দ্বের বিন্যাস।'
    সূত্রঃ http://www.soicreativewomen.org/events/24-blogblogom/soi-sabud/soi-sabud-january-soimela-boimela-2018-issue/112-bani-ray-sudakshina-ghosh.html
  • | 144.159.168.72 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:১৯64173
  • বাহ ভালো আলোচনা।
    'রায়বাড়ি' আমিও এক বসায় শেষ করেছিলাম। বইটা আছেও আমার কাছে। কিছু দরকার হলে দেখে বলতে পারি।

    শোধগঙ্গা খুলতে পারছি। এতে প্রত্যেক পাতা/চ্যাপ্টার আলাদা আলাদা করে তোলা।
  • Shodhganga | 69.160.210.3 (*) | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:৪৬64174
  • <Title: Ashalata Singher chotogolpa nari parisar sandhan
    Researcher: Nath, Sushmita
    Guide(s): Deb, Durba
    University: Assam University
    Completed Date: 01/01/2014

    http://shodhganga.inflibnet.ac.in/handle/10603/97768 >
  • স্বাতী রায় | 127.223.217.73 (*) | ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:৩৭64176
  • হ্যাঁ শোধগঙ্গা খুলেছে। দুটো রেফারেন্স দেওয়া পেপার-ই পড়ছি। অনে----ক ধন্যবাদ।

    ref এর দেওয়া লিঙ্কটি ভারী মুল্যবান। স্বর্ণকুমারী দেবীর আগে কিছুই পড়া হয় নি - পড়তে ইচ্ছে জাগল মনে।

    দ - রায়বাড়ী বইটাতে কোন উল্লেখযোগ্য ভূমিকা ছিল কিনা মনে নেই। যদি থাকে তাহলে তার থেকে যদি গিরিবালার সম্বন্ধে interesting দু চার কথা পাওয়া যেত! রচনাবলী'র যে ভূমিকা, তার থেকে মানুষ গিরিবালার সম্বন্ধে কিছুই পাই নি প্রায়।
  • pi | 24.139.221.129 (*) | ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ ০৫:২৯64177
  • খুব ভাল লাগছে এই সিরিজ।
  • i | 212.159.144.43 (*) | ০২ মার্চ ২০১৮ ০৯:৫৯64178
  • সব থেকে ভালো লাগছে আপনি নিজে এই সব লেখা পড়েছেন, নিজের কথা লিখছেন-নিজের মতামত, নিজের প্রতিক্রিয়া ।
    এক এক জনকে নিয়ে আরো বড় করে লিখলে হত-লেখার থেকে কিছু লাইন তুলে লেখনীর বৈশিষ্ট্য ইত্যাদি-এও ভাবছি।

    পড়ব এই সিরিজ। লেখা থামাবেন না।
  • স্বাতী রায় | 69.97.222.205 (*) | ০৮ মার্চ ২০১৮ ০৪:৩৭64179
  • @i বই এর সঙ্গেই বসত - তাই পড়াটা হয়েছে সহজেই। বড় করে লিখতে গেলে ভয় হয় , যদি পাঠকের ধৈর্য নষ্ট হয়। আর সাহিত্যের ছাত্র নই - এ দুঃখ আছে মনে। তাই অনধিকারীর মত চুপি চুপি এদিক ওদিকে উঁকি মারি। আপনি বললেন, পরে লিখব এক একটা পছন্দের উপন্যাস/ গল্প নিয়ে ।
  • | 144.159.168.72 (*) | ০৯ মার্চ ২০১৮ ০৬:২৭64180
  • খুব ভাল লাগছে এই সিরিজটা। খুবই। কি আশ্চর্য্য! আমি জ্যোতির্ময়ী দেবীর কিচ্ছু পড়ি নি। :-( যোগাড় করে পড়তে হবে তো।

    'রায়বাড়ি এই শনিবারে নামাব। দেখব কিছু আছে কিনা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন