এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  সমাজ

  • মেডিক্যাল টার্মিনেশন অফ প্রেগন্যান্সি এক্ট ইন্ডিয়া 

    স্বাতী রায় লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | সমাজ | ২৭ জুন ২০২২ | ১০৭৪ বার পঠিত | রেটিং ৪.৫ (২ জন)
  • আমেরিকার সুপ্রিম কোর্ট কলমের এক খোঁচায় সেখানকার মেয়েদের সংবিধানগত গর্ভপাতের অধিকারটিকে খারিজ করে দিয়েছেন। তারপরই বেশ একটু ভারতের প্রগতিশীলতা নিয়ে আনন্দ দেখা গেছে। হওয়ারই কথা। বলে কিনা সেই ১৯৭১ সাল থেকে এদেশে গর্ভপাত করানো ডাক্তারের জন্য আর অপরাধ নয়।  কি লেখা ছিল সেই ​​​​​​​আইনে? বলা ছিল যে কোন রেজিস্ট্যার্ড  ডাক্তার যদি মনে করেন যে গর্ভধারণের ফলে গর্ভবতী মহিলার জীবনহানির ঝুঁকি আছে বা তার কোন শারীরিক মানসিক গুরুতর ক্ষতির আশঙ্কা আছে  অথবা শিশুর জন্ম হলে তার কোন শারীরিক মানসিক অস্বাভাবিকতার সম্ভাবনা আছে, তাহলে সেই সেই ক্ষেত্রে ০-১২ সপ্তাহের মধ্যে  (দুজন ডাক্তারের অনুমতিক্রমে ২০ সপ্তাহের মধ্যে )  গর্ভমোচন করলে ডাক্তার অপরাধী হবেন না।  এবং সেই সঙ্গে ব্যাখ্যা হিসেবে বলা ছিল যে সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখার উদ্দেশ্যে বিবাহিত মহিলা বা তার স্বামীর ব্যবহৃত কোন  উপকরণ বা পদ্ধতির ব্যর্থতার ফলে যদি গর্ভধারণ হয়,তাহলে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের মানসিক যন্ত্রণা গর্ভবতী মহিলার গুরুতর মানসিক ক্ষতি ঘটাবে বলে ধরে নেওয়া যায়।  ধর্ষণজাত ভ্রূণের গর্ভপাত করতে হলে অবশ্য বিবাহিত-অবিবাহিত বাধা নেই।  অর্থাৎ কার্যগতিকে যাই হোক, ধর্ষণ না হলে অবিবাহিতার গর্ভমোচনের অধিকার ছিল না। আর লক্ষ্য করা যাক সন্তানের সংখ্যা সীমিত রাখার কথাও। মানে দুটো পাঁচটা বাচ্চা হয়ে গেলে তবেই এই কথা ভাবা যাবে।  
     
    তবু আইন একটা আছে পঞ্চাশ বছর ধরে। কিন্তু সত্যিই সেই আইনের কতটা ছাপ পড়েছে সমাজের উপর? পশ্চিমবঙ্গের মেয়েদের অভিজ্ঞতা কি বলে? মেয়েদের কথা বাদ দিন, এমনিতেই ওদের বারোহাত কাপড়ে কাছা জোটে না, তাদের আবার মতামত! তার থেকে ডেটা দেখুন। ডেটা পাওয়া গেছে http://www.johnstonsarchive.net/.../india/ab-indias.html থেকে। অবশ্য ডেটা ঠিক কিনা তা আমি মিলিয়ে দেখিনি। 
     
     
    এখানে এই যে ১৯৯৩-৯৪ সালে রিপোর্টেড এবরশনের সংখ্যা ৬৪ হাজারের বেশি হল, এমন তো নয় যে সেবার কোন গ্রহ নক্ষত্রের যোগে সংখ্যাটা ওই মাত্রায় পৌঁছাল। বরং প্রশ্ন উঠুক, অন্যান্য বছর এত কম কেন? সত্যিই কি আবর্শনের দরকার পড়েনি ? নাকি দরকার পড়েছে, আর দরকার মেটাতে মেয়েরা বাধ্য হয়েছেন হাতুড়ের কাছে যেতে, বাড়িতে বিভিন্ন উপায় চেষ্টা করতে?

    কমিউনিটি মেডিসিনের চার অধ্যাপক ২০১৫-১৬ সালে নক্সালবাড়ি ব্লকে ৪২০ জন ১৫-৪৯ বছরের মহিলার মধ্যে সার্ভে করে জানিয়েছিলেন যে যদিও গড়ে প্রতি মহিলার ১.৩ টি গর্ভপাতের অভিজ্ঞতা রয়েছে, এর মধ্যে ৪৮.৩%ই আপনাআপনি হয় না, অর্থাৎ কিনা সেগুলো ইনডিউসড এবরশন, ওষুধ দিয়ে বা সার্জিক্যালি করা হয়। আর তার ৫৮% হয় বাড়িতে, হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে ইত্যাদি। অনুমান করছি সেগুলো নিশ্চয় আর কোনভাবে রিপোর্টেড হয়না। ১৭৮টা এবর্শনে ৫০ টা হিসেবের বাইরে থেকে গেল। আরও ৭১ টা হয় বেসরকারি জায়গায় – তারই বা কটা রিপোর্টেড হয় তা কে জানে! এই অবস্থায় প্রথম ছবির ওই পেন্ডুলামের মতন একবার চাগিয়ে উপরে ওঠা আবার ঝপ করে নেমে যাওয়া দেখলে কেমন সন্দেহজনক লাগে না? ( সূত্রঃ https://www.ijph.in/article.asp?issn=0019-557X;year=2019;volume=63;issue=4;spage=298;epage=304;aulast=Dasgupta )

    আরও অবাক হতে হয়, দ্বিতীয় ছবিটা দেখলে। ডেটা সোর্স ঃ http://www.johnstonsarchive.net/.../ab-indiad-westbengal... 
     
     
    এটা ২০১০-১১ সালের ডেটা। কলকাতায় যেখানে প্রায় ১৫০০০ এবর্শন, সেখানে বীরভূমে মাত্র ৮২ টা, বাঁকুড়ায় মাত্র ৩২৭ টা। কী জানি হয়ত সেখানকার মানুষের জীবন খুবই সংযমী, কোনও উল্টোপাল্টা পা পড়ে না সেখানকার মানুষের, তবে আমি পাপী তাপী মানুষ আমার কেমন মনে হয় যে আসল কারণটা হয়ত অন্যত্র। রিপোর্ট যতদূরে দেখতে পায়, তার বাইরে হয়ত থেকে যায় অনেকটাই। সেই বাইরে যেটা থেকে যাচ্ছে, তার কতটা সেফ এবর্শন? দেবা ন জানন্তি, কুতো মনুষ্যাঃ …

    সরকারি হিসেবে অবশ্য ( memo no H/SFWB/ 215-05-2013/3502) বীরভূম জেলাতেই ১২ টা সরকারি কেন্দ্রে প্রাইভেট এমপ্যানেল্ড ডাক্তারদের এসে এবরশন করানোর কথা। হয়ত সরকারি ডাক্তারের আকাল বলেই। ঠিক জানি না। এবরশন করালে টাকাও পাওয়ার কথা। আসলে কী হয় কে জানে! অবশ্য অত দূর বীরভুমে গিয়ে কি হবে, ঘরের পাশের দক্ষিণ ২৪ পরগনার কথা নিয়ে সৌভিক পাইন আর টি কে এস রবীন্দ্রন লিখেছেন এই পেপার - Availability, Utilization, and Health Providers' Attitudes Towards Safe Abortion Services in Public Health Facilities of a District in West Bengal, India  https://www.ncbi.nlm.nih.gov/pmc/articles/PMC7784791/   দক্ষিণ চব্বিশ পরগণার বিয়াল্লিশটা ফেসিলিটির ( দুটি জেলা হাসপাতাল  ১ টা স্টেট জেনেরাল হাস্পাতাল  ৯ টা গ্রামীণ হাসপাতাল ৬ টা ব্লক প্রাইমারি স্বাস্থ্যকেন্দ্র আর ২৪ টা প্রাইমারি স্বাস্থ্য কেন্দ্রের )  মধ্যে মাত্র ১২ টা কেন্দ্রে এমটিপি করা হয়। সার্ভিস প্রোভাইডার দের আটিটুড নিয়ে তাঁরা বলেছেন  The patterns depict that providers seemed to be more willing to provide abortion services for reasons of social stigma (pregnancy outside marital relationship), severe degrees of fetal anomaly than for contraceptive failure, first pregnancy within marriage, and mental health concerns of the client.  সেই সঙ্গে ওঁরা এও জানিয়েছেন যে We found no association between attitudes towards safe abortion and abortion provisioning by health providers. However, there seem to be subtle ways in which subversion of the services happened. Instead of an outright denial to service provision, there were various forms of gatekeeping to restrict women's access to abortion services through strategies such as provision conditional on acceptance of contraceptive methods, requiring husbands' consent, refusal to unmarried clients, dissuading primigravida women, reluctance to provide in the public facility, and channelizing to their private chambers.   হাতের কাছে পরিষেবা পাওয়ার নিরিখে কলকাতার লোকেরা তুলনায় ভাগ্যবান। সরকারি ব্যবস্থার পাশাপাশি বিভিন্ন বেসরকারি, আধা সরকারি বিভিন্ন রকমের ব্যবস্থা মেলে। সার্ভিসের ভাল মন্দ জানিনা, তবে মেরি স্টোপস ক্লিনিক তো আছেই, পরিবার সেবা সংস্থার স্ত্রী ক্লিনিক আছে শহর জুড়ে। কলকাতার বাইরে এই ধরণের সার্ভিসই বা কতটা মেলে?

    বিবাহিত মেয়েদেরই হাতের আওতায় এল না সেফ এবর্শন, অবিবাহিত হলে তো কথাই নেই!  আইনে অবশ্য এতকাল অবিবাহিতদের সাধারণ মানে ধর্ষণের ক্ষেত্র ব্যতীত গর্ভমোচনের কথা বলাও ছিল না।  কত রকম যে কথা শুনতে হয়! একটি এমটিপি করতে আসা মেয়েকে নার্স বিভিন্ন ব্যক্তিগত প্রশ্ন করায় এক বেসরকারি হাসপাতালের (পশ্চিমবঙ্গের বাইরের) ডাক্তার নার্সকে ডেকে কাউন্সেল করেছিলেন, বলেছিলেন এই সব কথা তো তোমার জানার দরকার নেই। ও একটা সার্ভিস নিতে এসেছে আমাদের কাছে, আমরা দেব এইটাই ওর সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক, বাকিটা ওকে বুঝে নিতে দাও। এই ডাক্তার মহিলাকে অসীম শ্রদ্ধা জানাই। এর পাশে রাখি সেই সব কলকাত্তাই ডাক্তারদের যারা শুধু সিঁদূর দেখতে না পাওয়ার জন্য একটি মেয়েকে কুমারী ধরে নিয়ে মোরাল পিসিমা হয়ে এমটিপি করা নিয়ে ব্ল্যাকমেইল করতে চেষ্টা করেছিলেন।
     
    এই সবে ২০২১ সালে,আইন তৈরির পঞ্চাশ বছর পরে,  যে বদল হল তাতে সময় সীমা বাড়িয়ে সাধারণ  এমটিপির ক্ষেত্রে করা হল ২০ সপ্তাহ আর ধর্ষণজাত ভ্রূণের ক্ষেত্রে দুই ডাক্তারের অনুমতিক্রমে ২৪ সপ্তাহ অবধি গর্ভমোচন করা যাবে। সেই সঙ্গে ব্যাখ্যায় এল বড় বদল। বলা হল  সন্তান সংখ্যা সীমিত রাখার উদ্দেশ্যে বা গর্ভধারণ বন্ধের উদ্দেশ্যে কোন  মহিলা বা তার সঙ্গীর ব্যবহৃত কোন  উপকরণ বা পদ্ধতির ব্যর্থতার ফলে যদি গর্ভধারণ হয়,তাহলে অনাকাঙ্খিত গর্ভধারণের মানসিক যন্ত্রণা গর্ভবতী মহিলার গুরুতর মানসিক ক্ষতি ঘটাবে বলে ধরে নেওয়া যায়। এইটুকুই ভারতের আধুনিকতার অর্জন।

    এমনিতেই ভারতের এবর্শন সংক্রান্ত আইন নিয়ে একটা বড় বক্তব্য যে গর্ভ রাখা না রাখা গর্ভবতী জনের ইচ্ছার অধীন না, ডাক্তারের মতামতের দ্বারা পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। সাবালিকা মায়ের ( অথবা নাবালিকার  ও মানসিক অসুস্থের ক্ষেত্রে অভিভাবকের ) সম্মতি ছাড়া অবশ্যই গর্ভমোচন করা যায় না। কিন্তু মা চাইলেই হবে না। ডাক্তার ঝুঁকি বুঝলে তবেই গর্ভমোচন হবে। শহরাঞ্চলে শিক্ষিত মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা তেমন সমস্যা না হলেও বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন আর্থসামাজিক অবস্থায় ডাক্তার গর্ভবতীর সম্পর্ক এতটা সহজ -সরল থাকে কি? হাসপাতালের ডাক্তার যেখানে মেয়ে রোগীদের বলেন বাড়ির ছেলেদের ছাড়া ওষুধ বুঝিয়ে দেব না, প্রসব হতে আসা মেয়েদের সঙ্গে গরু ছাগলের মতন ব্যবহার করেন,  সেখানে মেয়েদের ইচ্ছায় গর্ভপাত হয় কিনা বা হলে কতটা হয় সে সন্দেহ থেকেই যায়।  তারউপর পিএনডিটি এক্টের জন্য এখন ডাক্তাররা চাপে থাকেন কি? গর্ভপাত করাতে হেজিটেট করেন? তাহলে কিন্তু আনসেফ এবর্শন বাড়বে বই কমবে না। আরও একটা কথা এই প্রাইড মাসে না তুললে অন্যায় হবে, এই আইন কিন্তু আগাগোড়া মেয়েদের কথাই বলে গেছে শুধু। অন্যদের কি হবে?
     
    তবে এসব তো পরের কথা, এমনকি আইনে যেটুকু আছে, সেটুকুও যে কতটা হয় এই ছবিগুলো তার প্রমাণ। আইন থাকলেই হয় না, আইনকে সবার হাতের আওতায় পৌঁছে দিতে হয়। সেজন্য ইনফ্রাস্ট্রাকচার লাগে, মানুষ লাগে, সদিচ্ছা লাগে। নাহলে হয়ত প্রগতিশীলতার খাতায় অফিসিয়াল টিকটা মারা যায়, কিন্তু আখেরে কাজের কাজ কিছু হয় না। সংবিধানসম্মত অধিকারের আওতায় থাকা ভারত আর আওতার বাইরে থাকা আমেরিকার তফাৎটা তখন ঝাপসা হয়ে যায়।

    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৭ জুন ২০২২ | ১০৭৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | ২৭ জুন ২০২২ ২২:৪০509457
  • ভারতের প্রায় সব আইনকানুনই আধাখ্যাঁচড়া। এটাও তার ব্যতিক্রম নয়। 
    এর বিপ্রতীপে আবার মহারাষ্ট্র কর্ণাটক তেলেঙ্গানার বিস্তৃত অঞ্চলে মহিলা শ্রমিকদের ইউটেরাস অপারেশান করিয়ে দেওয়া।আসিক পিরিয়ড ও গর্ভধারণজনিত শারিরীক অসুবিধায় যাতে কর্মক্ষপমতায় ছেদ না পড়ে ছুটি না নিতে হয় তাই শ্রমিক যোগানের ঠিকেদারই ধরে ধরে করিয়ে দেয় দল কে দল। 
     
    কলকাতায় কর্পোরেট হেলথ চেকিঙের জন্য নির্দিষ্ট পরীক্ষাকেন্দ্রে ফর্মে অবিবাহিতা দেখলেই চোখ বুজে প্যাপ স্মিয়ার টেস্ট বাদ দিয়ে দেয়।  করতে বললে অতি আপত্তিকর সব প্রশ্ন করে। পশ্চিমবঙ্গের বাইরে কিন্তু টুকটাক প্রয়োজনীয় প্রশ্ন করে টেস্ট করে নেয়। 
  • Katha Haldar | ২৭ জুন ২০২২ ২৩:৩৮509458
  • ভারতবর্ষের মত তৃতীয় বিশ্বের দেশে জনমানসে ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট বিচার করলে রাজনৈতিক, ধর্মীয় প্রভাব এতখানি যে নিরপেক্ষ আইনের সমবণ্টন প্রায় অসাধ্য একটি কাজ। এক্ষেত্রে গর্ভবতী মা ও তাঁর পরিবারের বিজ্ঞানমনস্ক হওয়া এবং সততা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। পাশাপাশি আইন প্রত্যেক মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার সাথে সাথে তার সৎ প্রয়োগের দিকটিও নিশ্চত করা আবশ্যক। নয়তো কত কন্যাভ্রুণ হত্যার মত ঘটনার ব্যাপকতা কীভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে তা বলার অপেক্ষা রাখেনা। ফলে আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয় বিদ্যালয়ের একটা নির্দিষ্ট শ্রেণী থেকে এবিষয়ে যথাযথ বিজ্ঞানসম্মত ধারণা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে তৈরি করতে হবে। তার সাথে আয়োজন করতে হবে বিভিন্ন ক্যাম্প। ডাক্তারদের এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ওপর সতর্কতা, কিছু বিধিনিষেধ জারি করে গর্ভবতী মায়ের সিদ্ধান্তের ওপর ভিত্তি করে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়ার স্বাধীনতা দিতে হবে। আইনের জটিলতা নিশ্চই আছে আমার মতামতও সাধারণ মানুষ হিসেবে। কিন্তু কোনও আইন আরোপের ক্ষেত্রে ভবিষ্যতে এর ফলাফল কী হতে পারে তার বিচার ক্রমাগত করে গিয়ে তা পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন। সবার আগে মা ও সন্তান উভয়ের ভালো ম্যাক্সিমাইজ যাতে করা যায় ঠিক সেই পথে আইন আরোপ করা দরকার। এবং সেই অনুপাতে তার বণ্টন প্রয়োজন। 
  • যোষিতা | ২৮ জুন ২০২২ ০২:৫৬509461
  • কোলকাতার সরকারি হাসপাতালে ৮০/৯০ এর দশকের খবর জানি। সায়ার দড়ি ঢিলে করে লাইন দিয়ে অপেক্ষা করত মহিলারা অ্যাবর্শনের জন্য। তখন ম্যারেজ সার্টিফিকেট বা অন্য কিছু দেখাতেও হতো না, আউটডোরের কার্ড থাকলেই হতো। সঙ্গে একজন থাকতে হতো, যাতে অ্যাবর্শনের কিছু পরে রোগী বাড়ি ফিরতে পারে কারো সঙ্গে, প্রচুর রক্তপাত হয় কিনা, সেজন্য। এবং অ্যাবর্শন প্রায় ব্লাইন্ড পদ্ধতি, অনেকটাই আন্দাজে বুঝে বুঝে, ইনটার্ণ ও হাউসস্টাফেদেরই এগুলো বেশি করতে হয়। কোনও অ্যাবর্শনই পুরোপুরি সেফ নয়, একজন হাউজস্টাফ একবার ইউটেরাস ফুটো করে ফেলেছিল, তৎক্ষণাৎ পেট ওপেন করে সার্জারি না করলে রোগীর মৃত্যু হতে পারত। অনেক ক্ষেত্রেই রোগী প্রেগন্যান্সির ডিউরেশন সঠিক বলে না, অ্যাবর্শন করবার সময় সাত মাসের ভ্রূণও কেটে কেটে বের করার ঘটনা আছে। 
    ভারতে জন্মনিয়ন্ত্রণের জন্য অ্যাবর্শনে উৎসাহ দেওয়া হতো, প্রথমে তিনটি সন্তান থাকলে, পরবর্তীতে দুটি থাকলেই। ১৯৭১ সালের সময়টায় যখন গর্ভপাত আইনত বৈধ হয়, তখন এর পেছনে ছিল পরিবার পরিকল্পনার ব্যাপারও। এমনকি গর্ভস্থ ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করে তারপরের অ্যাবর্শন হতো। হ্যাঁ।
    অনেক অনেক পরে লিঙ্গ নির্ধারণ অবৈধ হয়। যখন আল্ট্রাসাউন্ড যন্ত্র দিয়ে ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করে করে কন্যা ভ্রূণ হত্যার হিড়িক পড়ে যায়।
    অ্যামেরিকার ব্যাপারটা ভারতের মত নয়। ওরা গডে ট্রাস্ট করে, ওদের ধর্মে অ্যাবর্শন অ্যাপ্রুভড নয়। তার ওপর আরও অনেক ব্যাপার আছে যেগুলো এখানে বলা হয়ত ঠিক হবে না।
     
  • স্বাতী রায় | ২৮ জুন ২০২২ ১০:৩১509465
  • হ্যাঁ ভারতে এম টি পি অ্যাক্ট এসেছিল পরিবার নিয়ন্ত্রণ পরিকল্পনার হাত ধরে। সেই জন্যই আইনের ভাষ্য ওই রকম। নারী স্বাধীনতার my body my right এর হাত ধরে এলে তার বচন অন্য রকম হত বলে আশা করা যায়। 
     
     তবে এদেশেও  ক্রিশ্চিয়ান মোরালিটির ছাপ খুব একটা কম না। ৮০ -৯০ র দশকে আহা একটা প্রাণ মেরে ফেলা কি ঠিক জাতীয় কথা অনেক শুনেছি। এখনো লোকে বলেন কিনা তা জানিনা অবশ্য। 
     
    কন্যা ভ্রূণ হত্যা সমস্যা তো বটেই। কিন্তু সেই সমস্যার সমাধান এবরশন বন্ধ করে নয়। আর ডাক্তারের হাতে মেডিক্যাল বা সার্জিকাল পদ্ধতিতে গর্ভ মোচনের মধ্যে যেটুকু নিরাপত্তার অভাব থাকে সেটাতে ডাক্তারের স্কিলের এবং অ্যাটিটিউডের একটা বড় ভূমিকা থাকলেও সেটা একজন অনভিজ্ঞ হাতুড়ের কাছে অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে গর্ভ মোচনের যে নিরাপত্তাহীনতা তার সঙ্গে তুলনায় আসে না। দুটোতেই অবশ্য একটা শরীরের রেসপন্স জনিত uncertainty থেকেই যায়। 
     
    তবে হ্যাঁ এদেশের মেয়েদের অশিক্ষা, সামাজিক চাপ এইসব অবশ্যই অনেক সমস্যার জন্ম দেয়। তবে মায়ের স্বাস্থ্য বিষয় টাকে একটু গুরুত্ব দিলে আর স্বল্প খরচে আধ ঘণ্টায় গর্ভ পাত করে বাড়ি ফিরে গিয়ে সংসারের কাজে লেগে যান গোছের বিজ্ঞাপনী গিমিক প্রথম থেকে তৈরি না করে একটু যত্ন করে ধৈর্য সহকারে প্রসেস ডিফাইন করলে হয়ত ব্যাপারটা অন্য রকম হত।  
     
    @দ আমার খুব মনে হয় বাঙালির সব থেকে বড় সর্বনাশ করেছেন গোখলে। ওই what Bengal thinks today বলে। বাঙালি ঐটাই ধরে বসে রইল আর কিছু শেখার তাগিদ রইল না। 
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভ্যাবাচ্যাকা না খেয়ে প্রতিক্রিয়া দিন