এরপরে দুনিয়ায় আসে এক অদ্ভুত জাতি, বাংলাদেশি বাঙালী! এত বেহুশ জাতি এই দুনিয়ায় আর আছে বলে মনে হয় না। তারা এক বাক্যে এইটা পালন করা হারাম বলে রায় দিচ্ছে। আমাদের নিজস্ব একটা পঞ্জিকা আছে। নিজেদের নববর্ষ আছে, এইটা গর্বের না? না! পারলে ধরে মারে! এই রোগের চিকিৎসা আমার জানা নাই। সংস্কৃতি আর ধর্মের একটা ক্যাচাল লাগিয়ে দিয়ে ধর্মের আফিমে বুঁদ হয়ে থাকা মানুষের উপরে এরপরের দায়িত্ব দিয়ে চুপ করে বসে থাকে এই ছাগল গুলো। ইসলাম শুধু এই অঞ্চলেই আসে নাই, আরও নানা দিকে গেছে আরব থেকে। কিন্তু কেউ নিজেদের ভাষা সংস্কৃতিকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে ধর্মকে টেনে নেয়নি। ... ...
এগুলা সব সত্য, কিন্তু কথা হচ্ছে আমরা কেন মরতেছি? সব দুশ্চিন্তা আমাদেরই? আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় দশা চলছে এখন। আমাদের মাথা ঘামাইতে হচ্ছে বিশ্ব রাজনীতির কঠিনতম প্যাচ নিয়ে! মধ্যপ্রাচ্যরে দেখেন, তুরস্ক যে তুরস্ক, মুসলিম দুনিয়ার নেতা হিসেবে যারা আবির্ভূত হয়েছে অনেকের মনে, তাদের দেখেন! সবাই গরম গরম বক্তব্য দিচ্ছে, হেন করবে তেন করবে বলে যাচ্ছে অথচ সবার সাথে ইজরাইলের কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক সব ধরণের সম্পর্ক আছে। নিজেদের আখের গুছিয়ে নিয়েই তারা যা করার তা করে যাচ্ছে। আমাদেরই এই অদ্ভুত প্রেম! ওরা নিজেরা নিজেদেরটা গুছিয়ে নিয়ে আমাদেরকে মুসলিম উম্মাহর গল্প শোনাচ্ছে, আমরা বয়কট বলে আমার প্রতিবেশী যে কোকের কোম্পানির উপরে নির্ভর করে বেঁচে আছে তারে বিপদে ফেলে দিচ্ছি। যে হাজার হাজার কর্মী কোক কোম্পানিতে কাজ করছে তাঁদেরকে একটা মানসিক অস্থিরতার মধ্যে ফেলে দিচ্ছি। ... ...
এগুলা সবই ছিল, অতীত কালে বলছি। কারণ হুট করেই এগুলা সব বেদাত, হারাম হিসেবে চিহ্নিত হয়ে গেছে! কবে কীভাবে যে হয়ে গেল বুঝতেই পারি নাই। অনেক আগে এক শবে বরাতে আমাদের মসজিদে একজন নিউজপ্রিন্ট কাগজে দুই পাশে ছাপা একটা লিফটলেটের মত বস্তু নিয়ে আসছিল। তাতে লেখা ছিল শবে বরাত পালন করা যাবে না, এগুলা বেদাত, হারাম! সেদিন ওই লোক কোনমতে লম্বা পায়ে এলাকা ছেড়ে নিজের পিঠ বাঁচিয়ে ছিল। কেউ সেদিন তার কথা শুনতে রাজি ছিল না। অথচ ওয়াহাবি সালাফিদের এখন এত জোর যে শবে বরাতই টিম টিম করে কোনমতে টিকে আছে! শবে বরাত বললে আব্বার কথা মনে পড়বেই। আব্বা আমাদের মত সারা রাত মসজিদে কাটিয়ে দিতেন না, এশার নামাজের পরে কিছুক্ষণ মসজিদে থেকে চলে আসতেন বাসায়। এরপরে বাসায়ই নামাজ পড়তেন। সকালে দুই হাত তুলে দোয়া ধরতেন। ডুকরে কাঁদতেন, গাল বেয়ে পানি পড়ত, সবার জন্য দোয়া করতেন, দাদা দাদীর জন্য দোয়া করতেন, নানা নানীর জন্য, নিজের ভাই বোনের জন্য। আকুল হয়ে কাঁদতেন। হায়! কেউ যদি তখন তাঁকে বুঝাইতে আসত যে শবে বরাত পালন করা যাবে না! আহা! কেউ যদি আমাকে এখন বুঝায় দিতে পারত যে আমার বাপ ধর্ম বুঝত না, সারা জীবন বেদাত হারাম কাজ করে গেছে লোকটা! ... ...
টাঙ্গাইলের শাড়ির জিআই ( Geographical Indications ) পাওয়া নিয়ে দুইটা ভিন্ন যুক্তি শোনা যাচ্ছে। দুইটাই সঠিক কিন্তু প্রসঙ্গ ভিন্ন। একটা ভারত থেকে জোর গলায় প্রচার হচ্ছে, তা হচ্ছে টাঙ্গাইল থেকে বসাক গোষ্ঠী, যারা মূলত শাড়ি বানাত তারা ভারত চলে গিয়ে সেখান থেকেই শাড়ি বানাচ্ছে, প্রচুর বিক্রি হচ্ছে, একজন বসাককে ভারত সরকার পদ্মশ্রী পুরস্কারও দিয়েছে। দেশের সংখ্যালঘু অত্যাচার, হিন্দুদের বাড়িঘর ছেড়ে সীমান্ত পাড়ি দেওয়া এগুলা দিয়ে বলা হচ্ছে তোমরা তাড়িয়ে দিয়েছে এখন আর তাঁদের শৈল্পিক কৃতিত্বের ভাগ চাও কেন? আর দ্বিতীয় কথাটা হচ্ছে বাংলাদেশের নারীরা শাড়ি পরা কমিয়ে দিয়েছে! এইটাও সত্য, আমার চোখের সামনে শাড়ি পরা নারীর সংখ্যা কমতে দেখছি। বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া শাড়ি পড়ে না এখন অনেকেই, যারা এক সময় শাড়ি ছাড়া আর কিছুই বুঝত না। ... ...
মিসেস হুইলার হয়ত একটা নো ম্যান্স ল্যান্ডে বসবাস করতেন। ধর্মের কারণে তাঁকে হিন্দু সমাজ আপন করে নেয়নি। কৃষ্ণমোহন নিজের প্রতিভায় নিজেকে বাইরের জগতে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। তবে সাধারণ দেশী পাদ্রীরা কিন্তু সে আমলে বেশ ডিসক্রিমিনেশনের মুখোমুখি হতেন। অর্থ খুবই কম হওয়ায় বিক্ষুব্ধ হয়ে তাঁরা চিঠি চাপাটিও লিখতেন, এই চার্চ ছেড়ে অন্য চার্চেও চলে যেতেন। সেটা একটা দিক। কিন্তু তাঁদের বাড়ির মেয়েদের জীবনের খোঁজ কেউ রেখেছিল কি? কতটা আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে ভুগতেন তাঁরা? পরিণত বয়সের ধর্ম ত্যাগের আর সেই সঙ্গে জুড়ে যাওয়া চেনা পরিবেশ-সংস্কৃতি ত্যাগের বাধ্যতার ফল তাঁদের স্ত্রীদের জীবনে কিভাবে আসত? বা তাঁদের পুত্র-কন্যাদের জীবনে একজন পিতার সিদ্ধান্তের ঠিক কি প্রভাব পড়ত? জানা নেই, কারণ দেশি খ্রিস্টানদের স্ত্রীদের বা প্রথম প্রজন্মের ছেলে মেয়েদের কোন গভীর বিশদ আত্মজীবনী আমি হাতে পাইনি। যাই হোক মনোমোহিনীতে ফিরি । ... ...
কী লিখছিল পোস্টে? আমি দেখলাম এক জায়গায় লিখেছে নারী চাকরি করলে সমাজ নষ্ট হয়, নারী চাকরি করলে পরিবার নষ্ট হয়, সন্তানের হক আদায় হয় না! আরেকটা দেখলাম লিখেছে ভার্সিটিতে পড়াশোনা মেয়েরা নির্লজ্জ হয়, তাদের বিয়ে করে লজ্জাশীল স্ত্রী পাওয়া যাবে না এমন একটা কথা! কোন জানি বক্তা মূর্তি ভাঙার ব্যাপারে কী লেখছে সে ওইটাই শেয়ার করছে! দারুণ না? এই ছেলের বয়স কত? হয়ত বিশ একুশ, এই বয়সে এর মনের মধ্যে এই যে এই ধরনের কথাবার্তা বাসা বাঁধছে তার প্রতিকার না করলে কোন লাভ হবে না। কোন ওষুধেই কাজ হবে না যদি না এদেরকে এখনই না ফেরানো যায়। অন্ধ জনগোষ্ঠী যারা অন্ধ ভাবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে তাদের বক্তব্য হচ্ছে হাসিম আমলা, মইন আলীরা ক্রিকেট খেলছে তাদেরকে তো কেউ বাধা দিচ্ছে না। তাহলে তানজিব হাসনের বেলায় কেন মানুষ এমন করছে! আসলে সমস্যা যে ধর্ম পালনে না তা তারা বুঝতে রাজি না। কেউ সারাদিন ধর্ম পালন করুক না, কে ফেরাচ্ছে? কিন্তু এখানে হচ্ছে ধর্মীয় উগ্রতার প্রকাশ, যার সাথে ধর্ম পালনের কোন সম্পর্ক নাই। হাসিম আমলা নারীর চাকরি নিয়ে চিন্তিত এমন কোন নজির পাওয়া যায় নাই। ... ...
তার চোখে-মুখে এক অদেখা, অজানা, অভূতপূর্ব উল্লাস...কোন সেরা চিত্রকরও কি পারে সে উল্লাসকে আঁকতে পুরো সার্থকতার সাথে? অথবা, কোন ফটোগ্রাফার ফুটিয়ে তুলতে পারে সেই বিজয়ের সত্যিকার অভিব্যক্তি? ... ...
বাঙালি লেখিকার অপেক্ষায় ... ...
কতবার ভেবেছিনু আপন ভুলিয়া ... ...
আমি যেন ঘোরের মধ্যে কাটালাম সময়টা! একের পর এক লোক নামছে, উঠছে, ছেলে-বুড়ো-মা-মেয়ে সব শ্রেণীর, সব পেশার, সব বয়সের মানুষ এত ছোট্র এক জায়গায় তীব্র গরমের মধ্যে ঠাসাঠাসি করে বসে থাকে, দাঁড়িয়ে থাকে, তবু লাগে না বড় কোন গোলমাল! এমন সুশৃঙ্খল যাত্রী বিশ্বের আর কোথায় আছে? ... ...
সাহায্যের নামে কাছের মানুষের ব্যক্তিগত পরিসরে ঢুকে পড়া ... ...
বিচ্ছিন্নভাবে র্যাগিং হয়না। এবং কলেজের প্রতিটি ছাত্র সংগঠন ব্যাপারটা জানে। হ্যাঁ, প্রতিটা ঘটনা জানেনা, অংশগ্রহণ বা এনডোর্স করেনা, সবই সম্ভব, কিন্তু জানেনা, এটা হয়না। যদি কেউ বলে, জানতামনা, তাহলে হয় সেই সংগঠনটা নেই, অথবা গুল দিচ্ছে। বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই। আর যদি কোনো সংগঠন বলে, জানেনা, কারণ এটা "বিচ্ছিন্ন ঘটনা", তাহলে সেটাও গুল। "বিচ্ছিন্ন র্যাগিং" হয়না। বিচ্ছিন্ন খুন-জখম-রাহাজানি-গুন্ডামি-শ্লীলতাহানি সবই হতে পারে, কিন্তু র্যাগিং না। কারণ, আপনি কল্পনা করে দেখুন, অন্য একটা ছেলেকে আপনি বলছেন, "এই, প্যান্ট খুলে রাত বারোটায় ইন্ট্রো দিয়ে যাবি" - এটা চুপি-চুপি হয়না, এবং এটা আপনার মাথাতেই আসবেনা, যদি না একটা কালচার চালু থাকে, এবং সেটার একরকম মান্যতা থাকে। ... ...
আগের বার পোস্ট গোলমাল হয়ে গিয়েছিল। আবার ট্রাই করলুম। ... ...
ডিএ নিয়ে আন্দোলন কতটা নৈতিক আর কতটা রাজনৈতিক? সরকারের অগ্রাধিকার কি সত্যিই গরীব মানুষ? টাকার সংস্থান কোথা থেকে হবে? এই নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত এই লেখায় । ... ...
মেয়েদের দায়িত্ব মা হিসেবে, বোন হিসেবে এবং স্ত্রী হিসেবে পুরুষদের শারীরিক এবং মানসিক যত্নআত্তির দায়িত্ব নেওয়া। সমাজনির্দিষ্ট এই পুরুষতান্ত্রিক সুভাষিতাবলীকে চ্যালেঞ্জ করে আত্নপরিচয় খোঁজা নারী আন্দোলনের অন্যতম দায়িত্ব ছিলো, আজও আছে। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সমাজে যত্ন, পরিচর্যা এবং পরিষেবার প্রয়োজন ফুরিয়েছে বা ফুরাবে। তাই এই ধারণাগুলিকে পরিত্যাগ করার বদলে তাকে সমাজে সর্বব্যাপ্ত করার কথাও উঠে এসেছে নারী আন্দোলনের ভেতর থেকেই। শুধু তাকে পুঁজিবাদী ও পিতৃতান্ত্রিক নিগড় থেকে মুক্ত করার প্রয়োজনীয়তাকে সামনে রেখে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন। ... ...
রবীন্দ্রনাথ ... ...
যেমন ইচ্ছা ভেবে নিন ... ...
এই লেখা রামকৃষ্ণ কথামৃতের ভক্তদের জন্য নয়। তাঁরা দয়া করে এই লেখাটি পড়বেন না। কারণ এই লেখা সমাজবিজ্ঞানের দৃষ্টিভঙ্গী থেকে উৎসারিত। সেই একই কারণে এই লেখা রামকৃষ্ণ দর্শনের প্রতি অকারণ বিদ্বেষবশত কোনো কুৎসামূলক লেখাও নয় । কারণ বর্তমান লেখক মনে করেন যে রামকৃষ্ণদেবের মত সরলহৃদয়, সুরসিক, তত্বজ্ঞানী এবং বিরাট ব্যক্তিত্বের অধিকারী ধর্মপ্রচারক বাংলায় চৈতন্যদেবের পর খুব বেশি আসেন নি। বিশেষত পরধর্ম সহিষ্ণুতার ক্ষেত্রে তাঁর বক্তব্য বাংলার মাটি থেকে উঠে আসা ঔদার্যের পরাকাষ্ঠা। তবে রামকৃষ্ণদেবের ‘কামিনীকাঞ্চন ত্যাগ’ তত্ব নিয়ে আমার বহু প্রশ্ন চিরকাল ছিল। সময়ের সঙ্গে সেই সংশয়ের অবসান তো হয়ই নি, আরো বেড়েছে বরং। এখন ভক্তকুলের কাছে এই প্রশ্নের উত্তর চাওয়া বৃথা। কারণ রে রে করে তেড়ে আসা ছাড়া বা অধিকারীভেদের কথা বলে প্রশ্নের পথ বন্ধ করে দেওয়া ছাড়া তাঁদের কাছে যুক্তিসমৃদ্ধ তর্ক কিছু পাই নি। তাই এক অর্থে এই লেখা শুধুমাত্র সেই মানুষদের জন্য, যাঁরা আমার মত সাধারণ, অতি সাধারণ জিজ্ঞাসু। ... ...
এই তো মানুষের হাল ... ...