এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • বিষয় জিকেসিআইইটি - এপর্যন্ত

    Anamitra Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ আগস্ট ২০১৮ | ১৬৯২ বার পঠিত
  • নিয়মের অতল ফাঁক - মালদহের গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি - প্রথম কিস্তি (প্রকাশঃ 26 July 2018 08:30:34 IST)

    আজব খবর -১
    ২০১৬ সালে একটি সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা এক ইঞ্জিনিয়ারিং ছাত্র ভারতীয় সেনায় ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগ দিতে গেলে সেনা আধিকারিকরা উল্টে তাকে জেলে পুরে দেওয়ার হুমকি দেন। কারণ পদপ্রার্থীর পেশ করা ডকুমেন্টে গন্ডগোল ছিল। ভারতীয় সেনার মতে ভুয়ো ডকুমেন্ট। ব্যারাকপুরের ঘটনা।

    খবর - ২
    ২০১৮ সাল। ওই একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের দুই ছাত্র ভারতীয় উপকূলরক্ষীবাহিনীতে চাকরি পায়। কিন্তু শেষ অবধি তারা যে চাকরিতে যোগ দিতে পারেনি তার কারণ তাদের পেশ করা সার্টিফিকেট, রেজাল্ট, ইত্যাদির সত্যাসত্য যাচাই অসম্ভব বলে জানিয়ে দেয় উপকূলরক্ষীবাহিনী। অথচ যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে এই ছাত্ররা পড়াশোনা করেছে সেটি কাগজপত্রের হিসেবে কেন্দ্রীয় সরকারের অধীন। সোনিয়া গান্ধী, মনমোহন সিং, প্রণব মুখার্জীর মতো হেভিওয়েট নেতাদের ঘুরে যাওয়া একটি প্রতিষ্ঠান, গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি, মালদা।

    কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে অনশন-আন্দোলনের সুবাদে বেশ কয়েকদিন ধরেই কানে আসছিলো যে মালদা মেডিক্যাল কলেজেও কিছু একটা চলছে। কানে আসছিলো বলার চেয়ে চোখে পড়ছিলো বলা ভালো বরং, সোশ্যাল মিডিয়ায় দু-একটা মন্তব্য দেখা যাচ্ছিলো। কিন্তু বিশদে বোঝা যাচ্ছিলো না কিছুই। খোঁজ নিয়ে জানা গেলো, মেডিক্যাল নয়, একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। কিন্তু কলেজ কি বলা যায়? নাকি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান? নাকি শুধুই কয়েকটি বিল্ডিং যার কোথাও কোনোদিন সঠিকভাবে নিবন্ধীকরণই হয়নি। এই প্রশ্নের সঠিক উত্তর হয়তো পাওয়া যেতে পারতো প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষের থেকে, কিন্তু মজার বা ভয়ের ব্যাপার হলো, তাঁরা নিজেরাও এ বিষয়ে সম্যক ধারণা রাখেন না। ২০১৬ থেকে ধরলে সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা এই নিয়ে তৃতীয় দফায় আন্দোলনে নেমেছে। কিন্তু শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে কোনো সদুত্তর তারা পায়নি কর্তৃপক্ষের থেকে। রাজ্য সরকার এবং কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকাও তথৈবচ।

    GKCIET অর্থাৎ গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি প্রতিষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে। MHRD তথা মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের উদ্যোগে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি, দুর্গাপুরের অধীন এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মডিউলার প্যাটার্নে শিক্ষা ও তৎপরবর্তী শংসাপত্র প্রদানের কথা ছিল। মডিউলার প্যাটার্ন হওয়ার ফলে মাধ্যমিকের পর ৬ বছরের মধ্যে একেবারে B.Tech সম্পূর্ণ করে বেরোনোর আশায় অল ইন্ডিয়া এন্ট্রান্স টেস্ট-এর মাধ্যমে প্রথম বছর ছাত্রছাত্রীরা ভর্তি হন। সম্পূর্ণ পাঠ্যক্রমটি তিন ভাগে বিভক্ত। প্রতিটি ভাগ দু'বছর করে। অর্থাৎ, মাধ্যমিকের পর প্রথম ২ বছর সার্টিফিকেট কোর্স যা ভোকেশনাল কোর্সে উচ্চ-মাধ্যমিকের সমতুল অথবা আইটিআই সমতুল্য ডিগ্রি, দ্বিতীয় ২ বছর – ডিপ্লোমা অর্থাৎ পলিটেকনিকের সমতুল, তৃতীয় ২ বছর – বি টেক ডিগ্রী। এই প্রত্যেক দু'বছরেই পুরোনো ছাত্রছাত্রীরা যে কেউ, যাঁরা সার্টিফিকেট বা ডিপ্লোমাতেই সন্তুষ্ট, কোর্সটি ছেড়ে দিতে পারেন এবং ভর্তি নেওয়া যেতে পারে নতুন ছাত্রছাত্রীদেরও।

    শুরুতে ইনস্টিটিউটের কোনো নিজস্ব বিল্ডিং ছিলনা। ক্লাস হতো মালদা পলিটেকনিক কলেজের কাছে গভর্নমেন্ট টিচার্স ট্রেনিং কলেজের ভিতর ভাড়া করা সরকারী জায়গায়। ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠানটি নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণ সম্পূর্ণ করে। মালদার নারায়ণপুরে অবস্থিত এই ক্যাম্পাসের উদ্বোধন করেন ভারতবর্ষের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ড: মনমোহন সিং। উপস্থিত ছিলেন সোনিয়া গান্ধীও। সেইদিনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অনেক বড় বড় কথা হয়েছিল। যেমন কিভাবে এই মডিউলার কোর্সের মাধ্যমে ছাত্রদের দক্ষতার বিকাশ ঘটবে, অথবা কিভাবে অদূর ভবিষ্যতেই GKCIET মালদার প্রান্তিক ছাত্রছাত্রীদের জন্য হয়ে উঠতে চলেছে M.Tech বা Ph.D-র সোপান, কিভাবে এই প্রতিষ্ঠান থেকে পাশ করা ছাত্রছাত্রীরা কাজ পেতে পারেন এই প্রতিষ্ঠানেই, ইত্যাদি।

    এরপর ২০১৪ সালে ক্যাম্পাসে নতুন বিল্ডিং-এর উদ্বোধন হয়। উদ্বোধন করেন ভারতবর্ষের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জী। ২০১৪ সালেই ২০১০, ২০১২ এবং যাঁরা নতুন ভর্তি হলেন সেই সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে চালু হয় বি.টেক। ২০১৬তে এই ব্যাচটির উত্তীর্ণ হওয়ার কথা ছিল আর গন্ডগোলের সূত্রপাত ঠিক তখনই।

    নিয়মের অতল ফাঁক - মালদহের গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি - দ্বিতীয় কিস্তি (প্রকাশঃ 28 July 2018 03:01:00 IST)

    ২০১০ থেকে ২০১৬, অর্থাৎ ৬ বছর, অর্থাৎ ২+২+২ সিস্টেমে GKCIETতে ভর্তি হওয়া ছাত্রছাত্রীদের প্রথম ব্যাচের B.Tech পাশ করার বছর।
    রেজাল্ট বেরোনোর কথা ছিল জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে। কিন্তু তার আগে থেকেই হাওয়ায় খবর ভাসতে থাকে যে রেজাল্ট বা সার্টিফিকেট, পাওয়া যাবে না কোনোকিছুই। স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রছাত্রীরা শঙ্কিত হয়ে কর্তৃপক্ষের কাছে এই উড়ো খবরের সত্যতা জানতে চান। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের যে অ্যাফিলিয়েশন প্রয়োজন হয় এবং সেই বিষয়ে যে কোনো সমস্যা ঘটে থাকতে পারে, এসব নিয়ে ছাত্রদের তখনও কোনো ধারণা ছিলোনা। তাঁদের আশংকানিরসন এবং রেজাল্ট সংক্রান্ত যাবতীয় প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার জন্য GKCIET কর্তৃপক্ষ জুন মাসের ২ তারিখ ইনস্টিটিউটের আধিকারিকদের সাথে ছাত্রছাত্রীদের একটি মিটিং-এর আয়োজন করেন। সেই মিটিং-এই প্রথমবারের জন্য জানানো হয় যে গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির আদতে কোনো অ্যাফিলিয়েশনই নেই এবং তার ফলে ছাত্রছাত্রীদের রেজাল্ট বা সার্টিফিকেট দেওয়া সম্ভব হবে না।
    হবে না মানে হবে না ! বিন্দুমাত্র ধোঁয়াশা বা দ্বিধাদ্বন্দের কোনও জায়গা না রেখে স্পষ্টভাবেই বলে দেওয়া হয় একথা। অর্থাৎ গত ৬ বছর ধরে তোমরা এখানে পড়াশোনা করে যে যোগ্যতা অর্জন করেছো তার কোনো প্রমান তোমাদের কাছে থাকবে না। মানে, হয়তো তোমরা শিখেছো অনেক কিছুই, কিন্তু সেই শিক্ষা কাজে লাগিয়ে উপার্জন করবে বলে যদি ভেবে থাকো তাহলে ভুলে যাও। কারণ কোনো কাগজ আমরা তোমাদের দিতে পারবো না যা দেখিয়ে তোমরা নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতা প্রমান করতে পারো। কারণ সেধরণের কাগজ তোমাদের হাতে তুলে দিতে গেলে যে ধরণের বৈধ স্বীকৃতি প্রয়োজন তা আমাদের প্রতিষ্ঠানের নেই। অর্থাৎ আমাদের কাছে প্রয়োজনীয় কাগজগুলি না থাকার ফলে তোমাদের যে সমস্ত কাগজগুলির প্রয়োজন তোমরাও তা হাতে পাবে না।

    পরিষ্কার ব্যাপার! না বোঝার কোনও কারণ নেই।
    কিন্তু নির্বোধ ছাত্রেরা বুঝতে চায় না। মিটিং-এর পরের দিন থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে ইন্সটিটিউটে শিক্ষক ও আধিকারিকদের উপস্থিতির হার হ্রাস পায়। এমত পরিস্থিতিতে ছাত্ররা একজোট হওয়ার উদ্দেশ্যে মনস্থির করে। জন্ম হয় GKCIET ছাত্রছাত্রী ঐক্য-র। নোটিস দেওয়া হয় ৮ই জুন থেকে শুরু হবে আমরণ অনশন। ইচ্ছুক ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ করা হয় যোগদানের জন্য। কর্তৃপক্ষ শুরুতে গুরুত্ত্ব দেয়নি। ফলে ১০ তারিখ আধিকারিকদের অফিস ঘেরাও করা হয়। ঘেরাও চলে প্রায় রাত ১টা পর্যন্ত। শেষ অবধি আধিকারিকরা দরজা ভেঙে পালিয়ে যান এবং পরের দিন, অর্থাৎ ১১ই জুন, ইন্সটিটিউটে আসেন ইংলিশবাজারের বিডিও, আইসি এবং মালদহ জেলার ডিএসপি কে সঙ্গে নিয়ে। ছাত্রদের অনুরোধ করা হয় অনশন তুলে নিতে। স্বাভাবিকভাবেই ছাত্ররা মানেননি। দাবী না মানলে অনশন যে তোলা হবে না সেকথা স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয় জিকেসিআইইটি ছাত্রছাত্রী ঐক্যের পক্ষ থেকে। বিডিও, আইসি এবং ডিএসপি আধিকারিকদের সঙ্গে নিয়ে ইন্সটিটিউট থেকে বেরিয়ে যান।

    ১২ই জুন থেকে আধিকারিকরা প্রতিষ্ঠানে দৈনিক হাজিরা দেওয়া বন্ধ করে দেন সম্পূর্ণত। এদিকে ছাত্রছাত্রীদের অনশন চলতে থাকে। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় না কোনোকিছুই। ১৫ই জুন নাগাদ অনশনরত দুই ছাত্র গুরুতরভাবে অসুস্থ হয়ে পরে। সরকারী মেডিক্যাল টিম আসেনি। তাঁদের ভর্তি করা হয় মালদা মেডিক্যাল কলেজে। এরপর ১৬ই জুন অনশনরত ছাত্রছাত্রীরা আধিকারিকদের অফিসগুলিতে তালা ঝুলিয়ে দেন। তাতেও কোনো ফল হয় না। ১৯শে জুন ছাত্রছাত্রী ঐক্য-র পক্ষ থেকে মালদা শহরের বিভিন্ন জায়গায় পথনাটিকা আয়োজন করা হয় এবং ২১শে জুন ডাক দেওয়া হয় মহামিছিলের। ২১ তারিখের মিছিলটি সমগ্র মালদা শহর পরিক্রমা করে। এরপরই শোনা যেতে থাকে রাজ্য সরকারের তরফে নাকি ইন্সটিটিউটটি অধিগ্রহণ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সরকারিভাবে ছাত্রদের কিছু জানানো না হলেও উত্তরবঙ্গ সংবাদ এবং টাইমস অফ ইন্ডিয়া-র মতো সংবাদপত্রগুলোতে এই মর্মে খবর প্রকাশিত হয়। সেই খবরে উল্লেখ করা হয় যে রাজ্য সরকার MHRD কে এই বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন এদিকে চলতে থাকে, জারী রাখা হয় অনশনও। একের পর এক ছাত্রছাত্রীর শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে। অবশেষে ২৭শে জুন ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

    দিনটি ছিল সোমবার। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ ৬০০ জনেরও বেশি মানুষ মালদা রথবাড়ি মোড়ের কাছে ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। এই ছয়শতাধিক মানুষের মধ্যে জিকেসিআইইটি-র ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও ছিলেন কিছু অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ছাত্র এবং কিছু স্থানীয় সাধারণ মানুষ। ছাত্রছাত্রী ঐক্য-র দাবী ছিল ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেটকে ঘটনাস্থলে এসে অ্যাফিলিয়েশনের বিষয়টি নিয়ে ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলতে হবে। ৫ ঘন্টার ওপর অবরোধ চলার পরও ডিএম সাহেব আসেননি। তার বদলে ঘটনাস্থলে এসে উপস্থিত হন মালদা সদরের তৎকালীন সাবডিভিশনাল অফিসার শ্রী সন্দীপ নাগ। ছাত্রদের বক্তব্য অনুযায়ী সন্দীপ বাবু আদেও তাঁদের সাথে কথা বলতে আসেননি। বরং তিনি এসেই অবরোধ তুলে নিয়ে "নাটক" বন্ধ করতে বলেন। ছাত্ররা সামগ্রিক পরিস্থিতি ব্যাখ্যা তাঁদের কি করা উচিত জানতে চাইলে তিনি বলেন, "মরে যাও"! এই মন্তব্যের পর ঘটনাস্থলে উপস্থিত মানুষজন উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ফলে খুব শিগগিরই ঘটনাপরম্পরা পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি এবং লাঠিচার্জের দিকে এগোয়। যদিও ঘটনাপরবর্তী কোনো সরকারি বিবৃতি নেই যা এই ঘটনাক্রমের প্রমান হিসেবে পেশ করা যেতে পারে। পাঁচজনকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। তার মধ্যে দু'জন, আলমগীর খান এবং পরমা কুমারী নামে ডিপ্লোমা কোর্সের এক প্রথম বর্ষের ছাত্রী-র আঘাত বেশ গুরুতর ছিল। ইংলিশবাজার পুলিশ স্টেশন এই ঘটনার সত্যতা মানতে চায় না, তৎকালীন এসপি প্রসূন বন্দোপাধ্যায় সাংবাদিকদের ফোন ধরেন না , এবং এএসপি অভিষেক মোদী এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকার করেন।
    রাত্রি প্রায় সাড়ে ৯টা নাগাদ সাধারণ মানুষের হয়রানির কথা মাথায় রেখে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।

    পরেরদিন, মঙ্গলবার, ২৮শে জুন, ২০১৬ বাংলা টিভি চ্যানেলগুলিতে প্রচারিত সংবাদসূত্রে জানা যায় জিকেসিআইইটিকে বৈধতা প্রদান করতে চলেছে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ টেকনিকাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট; যদিও রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে তখনও ছাত্রদের কিছু জানানো হয়নি। এছাড়া উক্ত সংবাদ অনুযায়ী এই বৈধতাপ্রদানোত্তর ডিপ্লোমা কোর্সটি সরকারি স্বীকৃতি পেয়ে যাবে বলে জানানো হলেও সার্টিফিকেট কোর্স বা বি.টেক-এর স্বীকৃতির কি হতে চলেছে সেই বিষয়টির কোনো উল্লেখ রাখা হয় না। ফলে ছাত্রদের অনশন এবং আন্দোলন চলতে থাকে। ওইদিন সন্ধেবেলা জিকেসিআইইটি ছাত্রছাত্রী ঐক্য-র তরফে আয়োজিত একটি মোমবাতি মিছিল পুনরায় শহর পরিক্রমায় বেরোয়। মিছিলটি শেষ হয় গনি খান চৌধুরীর মূর্তির পাদদেশে পথসভার মধ্য দিয়ে।
    এরপর জুলাই মাসের ২ তারিখ রেল অবরোধ কর্মসূচি নেওয়া হয়। নিমাইসরা রেল ব্রিজের ওপর থামিয়ে দেওয়া হয় গুয়াহাটি-চেন্নাই এক্সপ্রেস। চারঘন্টার ওপর অবরোধ চলে। ঘটনাস্থলে আসেন তৎকালীন ডিআরএম। তিনি ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে জানান যে বিষয়টি তাঁর এক্তিয়ার বহির্ভূত, তবু তিনি MHRD -কে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করবেন যাতে দ্রুত সমস্যার সমাধান করা হয়।

    ২০১৬ সালে রথযাত্রা ছিল জুলাই মাসের ৬ তারিখ। আর ৫ তারিখ সন্ধে থেকে ৬ তারিখ সন্ধে পর্যন্ত ছিল ঈদ। ঈদ-এর লগ্নের ঠিক কয়েকঘন্টা আগে , দুপুর একটার সময় জিকেসিআইইটিতে আসেন শ্রী দীপঙ্কর চক্রবর্তী, স্টেট্ কাউন্সিলের বিশেষ অফিসার। তাঁর আসার ব্যাপারে আগেই ঘোষণা করেন কর্তৃপক্ষ। টিচার্স ট্রেনিং কলেজ (টিটিসি, মালদা)-র ক্যাম্পাসে জড়ো হতে বলা হয় ছাত্রছাত্রীদের। অ্যাডিশনাল ডিএম শ্রী দেবতোষ মন্ডল মহাশয়ের উপস্থিতিতে দীপঙ্করবাবু জানান জিকেসিআইইটি-র সার্টিফিকেট কোর্স এবং ডিপ্লোমা কোর্সটিকে ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট কাউন্সিল অফ টেকনিকাল অ্যান্ড ভোকেশনাল এডুকেশন অ্যান্ড স্কিল ডেভেলপমেন্ট বৈধতাপ্রদান করছে। পেশ করা হয় MHRD -র চিঠি, যে চিঠির বয়ান অনুযায়ী বি.টেক কোর্সটিকে বৈধতাপ্রদান করতে চলেছে এনআইটি দুর্গাপুর। তবে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এবং কম্পিউটার সায়েন্স-এর ডিপার্টমেন্ট দুটির বৈধতার জন্য স্টেট্ টেকনিক্যাল কাউন্সিলকে এখনও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে কারণ এআইসিটিই-র অনুমোদন প্রয়োজন।
    এই ঘোষণায় আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ফিরে আসে উৎসবের আমেজ। আন্দোলনের নৈতিক জয়ের ফলে তুলে নেওয়া হয় অনশন। ঠিক হয় ছুটি থেকে ফিরে আয়োজন করা হবে বিজয় মিছিলের, জুলাই মাসের তৃতীয় সপ্তাহ নাগাদ।
    নিয়মের অতল ফাঁক - মালদহের গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি - তৃতীয় কিস্তি (প্রকাশঃ 02 August 2018 10:55:05 IST)

    ২০১৬ র জুলাই। মাত্র কিছুদিনের অপেক্ষা। তারপরই চলে আসবে এআইসিটিই-র অনুমোদন। এমনটাই বলে গিয়েছিলেন স্টেট্ কাউন্সিলের স্পেশাল অফিসার। কিন্তু প্রায় দু'সপ্তাহ কেটে যাওয়ার পরও যখন এলো না কোনো খবর ফের অনশনে বসতে বাধ্য হলো জিকেসিআইইটি-র কম্পিউটার সায়েন্স এবং সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের ১৫ জন ছাত্র। কর্তৃপক্ষ এবার আর ভুল করেনি, কারণ আগে থেকেই ধারণা ছিল আন্দোলন আবার ছড়িয়ে পড়লে কোন জায়গায় যেতে পারে। ফলে তাড়াহুড়ো করে দু'দিনের মধ্যে নিয়ে আসা হয় অ্যাফিলিয়েশনের চিঠি। বৈধতা পায় কম্পিউটার সায়েন্স, সিভিল, কেমিক্যাল এবং সেরিকালচার-এর মতো ডিপার্টমেন্টগুলি। অবশেষে জুলাইয়ের ২১ তারিখ মালদা শহরে আয়োজিত হয় ছাত্রছাত্রীদের বিজয় মিছিল। কিন্তু গণ্ডগোল পিছু ছাড়ে না জিকেসিআইইটি-র।

    প্রথম দফায় অনশন চলাকালীন যখন একের পর এক ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়ছে এবং কোনো সরকারি মেডিক্যাল টিমকে পাওয়া যাচ্ছে না তাদের দেখভালের জন্য সেই অবস্থায় ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিস্ট্যান্ট রেজিস্ট্রার আব্দুল রাজ্জাক। তাঁরই উদ্যোগে ডাক্তার আসে জিকেসিআইইটিতে। আন্দোলনের শুরু থেকে তিনি নৈতিক ভাবে ছাত্রছাত্রীদের পাশেই ছিলেন। হঠাৎ শোনা যায় আব্দুল বাবুকে জিকেসিআইইটি থেকে সরিয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে এনআইটি দুর্গাপুরে। স্বভাবতই ছাত্ররা এই খবরে ষড়যন্ত্রের আভাস পায়। আবারও তৈরী হয় আন্দোলনের পরিস্থিতি। এনআইটির তৎকালীন ডিরেক্টর শ্রী অশোককুমার দে-র বক্তব্য অনুযায়ী অবশ্য এর সমস্তটাই অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। ছাত্রদের আন্দোলনের সাথে এর কোনো সম্পর্ক নেই। যেহেতু এনআইটি জিকেসিআইইটি-র মেন্টর সংস্থা তাই কিছু আর্থিক বিষয়ের কাজ সামলানোর জন্য সাময়িকভাবে আব্দুলবাবুকে দুর্গাপুর পাঠানো হচ্ছে। এর মধ্যে কোনো চক্রান্ত নেই। তবে এই বিষয়টি নিয়ে আন্দোলনে যাওয়া হবে কি হবে না সেই বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্তে আসার আগেই ২৮শে জুলাই ছাত্রদের সামনে আসে আবারো একটি নতুন বিষয়।

    অ্যাফিলিয়েশন নিয়ে যে জট ছিল আর সেই জট ঘিরে যে আন্দোলন গড়ে ওঠে তার ফলে ছাত্রদের বেশ খানিকটা সময় নষ্ট হয়েছিল। পরীক্ষা পিছিয়ে যায় প্রায় দু'মাস। ফলে ছাত্ররা চেয়েছিলেন তাড়াতাড়ি পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হোক যাতে তাঁদের বছর নষ্ট না হয়। সেই সময় জিকেসিআইইটি -র নবনিযুক্ত টিচার ইনচার্জ শ্রী শুভাশীষ দত্ত প্রথমে জানিয়েছিলেন ভর্তির বিষয়টি নিয়ে সমস্যার কিছু নেই। মডিউলার কোর্সের স্বাভাবিক নিয়মেই ভর্তির পদ্ধতি সম্পাদন করা হবে। কিন্তু ২৮ তারিখ তিনি জানান যে ভর্তির বিষয়টি তাঁর হাতে নেই। যেহেতু অ্যাফিলিয়েশন প্রদানকারী সংস্থা স্টেট্ কাউন্সিল তাই এবার থেকে তারাই পরীক্ষা বা ভর্তি জাতীয় বিষয়গুলি দেখবে। এরকমটাই নাকি হয়ে থাকে। যদিও সেই সময়কার সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যাচ্ছে যে শিক্ষাক্ষেত্রের উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকদের মতে টিচার ইনচার্জের দাবী সঠিক নয়। পরীক্ষা বা ভর্তির মতো অভ্যন্তরীণ বিষয়গুলির ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানেরই সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা অ্যাফিলিয়েশন প্রদানকারী সংস্থার সাথে আলোচনার ভিত্তিতে।

    এরকম বিভ্রান্তিকর পরিস্থিতিতে স্বাভাবিকভাবেই আন্দোলন পুনরায় জোরদার হয়। ২৯শে জুলাই সকাল ১১ টা থেকে টিচার ইনচার্জকে ঘেরাও করে রাখেন ছাত্রছাত্রীরা। ঘেরাও চলে রাত অবধি। ঘেরাওতে মূলত সামিল হন সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সের পড়ুয়ারা। হিসেব অনুযায়ী সার্টিফিকেট কোর্সের ছাত্রদের ভর্তি হওয়ার কথা ডিপ্লোমায় এবং ডিপ্লোমার ছাত্রদের সরাসরি সুযোগ পাওয়ার কথা বিটেক-এ। কিন্তু এই ভর্তির বিষয়টি সুনিশ্চিত করা যাচ্ছিলো না। এছাড়াও বিটেক-এর পাকাপাকি অ্যাফিলিয়েশন মেলেনি তখনও। অস্থায়ী ভিত্তিতে এক বছরের জন্য অ্যাফিলিয়েশন দিযেছিলো এনআইটি দুর্গাপুর। এবিষয়ে রিসোলিউশন-এর কপি দিয়ে ছাত্রছাত্রীদের অভিহিত করা হলেও জারি করা হয়নি কোনো আদেশনামা। ফলে বিষয়টি নিয়ে ধন্দে ছিলেন বিটেক-এর ৮০ জন ছাত্র। আরো সমস্যার ব্যাপার, এনআইটির অধ্যাপক ভি কে দ্বিবেদী এতদিন জিকেসিআইইটি-র টিচার ইনচার্জ ছিলেন। এনআইটিতে প্রতিষ্ঠানটির হয়ে প্রতিনিধিত্বও তিনিই করতেন। কিন্তু নতুন ইনচার্জ শুভাশিষ বাবু জিকেসিআইইটি-র অধ্যাপক হওয়ায় ছাত্রদের মনে হতে থাকে যে দুর্গাপুরে মেন্টর সংস্থার কাছে তাঁদের সমস্যাগুলি নিরপেক্ষভাবে তুলে ধরা এরপর থেকে আর আদেও হবে কিনা সেই ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছে না। দিনটি ছিল শুক্রবার। সাংবাদিকদের কাছে শুভাশিস বাবু জানান যে তিনি সবে মঙ্গলবারই বিটেক-এর অ্যাফিলিয়েশনের ব্যাপারটি সুনিশ্চিত করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলিতে আবেদন জমা দিয়ে এসেছেন। ছাত্ররা তাঁকে সময় না দিলে তাঁর সত্যিই কিছু করার নেই।

    সেইদিন সন্ধের পর ঘটনা অন্যদিকে মোড় নেয়।

    প্রথমত ঘেরাও চলাকালীন কিছু ছাত্র অসুস্থ হয়ে পড়লে অ্যাম্বুলেন্স-এর ব্যবস্থা করা হয়নি বলে আগে থেকেই ছাত্রদের মনে ক্ষোভ ছিল। তার উপর আবার সন্ধেবেলা ক্যাম্পাসে হানা দেয় অজ্ঞাতপরিচয় কিছু ব্যক্তি। আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের মারধর করা হয়। রাত দশটার সময় ক্যাম্পাসে পুলিশ এলে ছাত্ররা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানায়। পুলিশ আশ্বাস দেয় যে টিচার ইনচার্জ ছাত্রদের দাবী পূরণ করার বিষয়টি দেখবেন। ইংলিশবাজার থানার আইসি ছাত্রদের বুঝিয়ে ইনচার্জকে ক্যাম্পাস থেকে বার করে নিয়ে যান। সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রতিবাদে পুনরায় অনশনে বসে ছাত্ররা পরের দিন থেকে। নারায়ণপুরের মূল ক্যাম্পাসে কর্তৃপক্ষ তালা ঝুলিয়ে দেয়। ফলে আন্দোলন সরে আসে পাওয়ার গ্রিড ক্যাম্পাসে। যদিও স্টেট্ কাউন্সিলের নামোল্লেখ না থাকা সূত্র অনুযায়ী সব সিদ্ধান্তই নাকি জিকেসিআইইটি কর্তৃপক্ষেরই হাতে ছিল, ৩১শে জুলাই উত্তরবঙ্গ সংবাদকে দেওয়া তৎকালীন ডিরেক্টর অশোকবাবুর বক্তব্য অনুযায়ী স্টেট্ কাউন্সিল যতক্ষণ না লিখিত ভাবে পরীক্ষা ও ভর্তির ব্যবস্থা তাঁদের হাতে তুলে দিচ্ছেন ততদিন জিকেসিআইইটি কর্তৃপক্ষের কোনোকিছুই করা সম্ভব নয়। সমস্ত শর্ত মেনে না এগোলে ভবিষ্যতে পুনরায় সমস্যা দেখা দিতে পারে বলে জানান তিনি। আরো জানান, মঙ্গলবার, অর্থাৎ ২৬শে জুলাই পাঠানো চিঠির উত্তর এখনো আসেনি স্টেট্ কাউন্সিল থেকে। MHRD-কেও পরিস্থিতির কথা জানানো হয়েছে, কিন্তু তারাও নিশ্চুপ। কেন্দ্রীয় সরকার থেকে নাকি রাজ্যের মুখ্যসচিবকে প্রতিষ্ঠানের আইনশৃঙ্খলার বিষয়টি তত্ত্বাবধানে রাখতে বলে হয়েছে। কিন্তু ডিআইজিরা ফোনে সমস্ত ঘটনা শুনেও কোনো পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। অশোকবাবুর মতে ক্লাস শেষ না হলে পরীক্ষা-র ব্যবস্থা করা সম্ভব নয় কোনোভাবেই। উল্টে ছাত্রছাত্রীরা বেশি গন্ডগোল করলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রক থেকে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে। সেক্ষেত্রে নতুন যাঁরা ভর্তি হয়েছেন তাঁরাও সমস্যায় পড়বেন। কিছু ছাত্রছাত্রী নাকি তাঁকে ফোন করে ক্লাসে আসবার ইচ্ছেপ্রকাশ করেছে। কিন্তু আন্দোলনকারীরা তাদেরকেও ক্লাসে আসতে দিচ্ছে না।

    ৩১শে জুলাই দিনটি ছিল রবিবার। জিকেসিআইইটি-র ছাত্রদের দ্বিতীয় পর্যায়ের আন্দোলনের তৃতীয় দিন। পয়লা আগস্ট ফেসবুকে প্রকাশ করা ছাত্রদের বিবৃতি অনুযায়ী শুক্রবারের ঘটনার পর থেকে শুভাশীষ বাবু আর ক্যাম্পাসমুখো হননি। তাঁকে ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না। এমনকি ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না যে আইসি-র সাথে বেরিয়ে গিয়েছিলেন শুভাশীষ বাবু, তাঁকেও। প্রতিবাদে মালদা-র মানিকচকে দেড় ঘন্টা সেদিন রাজ্যসড়ক অবরোধ করে রাখা হয়েছিল। পোড়ানো হয়েছিল ইনচার্জের কুশপুতুল। কিন্তু কর্তৃপক্ষের দিক থেকে কোনো বিবৃতি, যথারীতি পাওয়া যায়নি।
    নিয়মের অতল ফাঁক - মালদহের গণি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি - চতুর্থ কিস্তি (প্রকাশঃ 12 August 2018 10:22:56 IST)

    লেখাটি যাঁরা পড়ছেন তাঁদের অনেকেই অবগত থেকে থাকবেন যে গত ৮ই আগস্ট, ২০১৮, বুধবার, থেকে জিকেসিআইইটি-র ছাত্রছাত্রীদের আন্দোলন আছড়ে পড়েছে কলকাতায়। কিন্তু আমাদের লেখার আগের কিস্তিটি শেষ হয়েছে ২০১৬ সালের পয়লা অগাস্টের ঘটনার কথা উল্লেখ করে। অর্থাৎ কালপঞ্জীর হিসেবে এই লেখা প্রায় দু'বছর পিছিয়ে রয়েছে। এই কিস্তিতে চেষ্টা করা হবে সেই ফাঁকটিকে কমিয়ে আনার। তবে সে প্রয়াস খুব একটা ফলপ্রসূ হবে বলে মনে হয় না।

    এর কারণ মূলত দুটি।

    প্রথমত, তথ্য এবং তথ্যসূত্রের অভাব। আজ অবধি কোথাও কোনো চেষ্টাই হয়নি মালদা জিকেসিআইইটি-র ঘটনাপরম্পরা লিপিবদ্ধ করে রাখার। এদিকে আন্দোলন শুরু হয়ে ২ বছরের ওপর ইতিমধ্যেই অতিক্রান্ত। এর মধ্যে নানান ঘটনা ঘটে গেছে। এইসব ঘটনার সংখ্যা এতই বেশি যে বর্তমানে আন্দোলনরত ছাত্ররাও সঠিকভাবে দিনক্ষণ, তারিখ বা নাম উল্লেখ করতে পারছে না। সমস্তটাই "ওই ঘটনাটা ঘটার ৬ দিন পর মোটামুটিভাবে ধরা যায়" জাতীয় বাক্য হিসেবে আসছে। সেখান থেকে সঠিক তথ্য ছেঁকে তোলার জন্য দরকার নির্ভরযোগ্য প্রমান। অর্থাৎ কিনা, সেই সময়কার ফেসবুক পোস্ট, কলেজ কর্তৃপক্ষের তারিখ নির্দেশ করা চিঠি (যার কিনা সূত্র পুনরায় ফেসবুক পোস্টই) অথবা সংবাদপত্রের প্রতিবেদন। এই দু'বছরে বেশ কিছু প্রতিবেদন আবার হারিয়েও গিয়ে থাকতে পারে অ্যালগোরিদম-এর দৌলতে। যদি তা নাও হয়ে থাকে কিছু আঞ্চলিক সংবাদ পরিবেশকের তো নিশ্চিতভাবেই বলা যেতে পারে যে এখন আর কোনো অস্তিত্ব নেই। উদাহরণ স্বরূপ, ডুয়ার্স খবর নামে একটি ওয়েবসাইট সেই সময় এই আন্দোলন নিয়ে প্রতিনিয়ত সংবাদ প্রকাশ করতো (হিন্দিতে, যদ্দুর সম্ভব)। ওয়েবসাইটটির বর্তমানে ডোমেন চেঞ্জ হয়ে গেছে। নাহলে অনেক তথ্যই যাচাই করে নিতে সুবিধা হতো।

    দ্বিতীয়ত, পদ্ধতিগত খামতি। যে কাজ কোনো একজন পেশাদার সাংবাদিক করলে হয়তো ৬-৭টি অ্যাঙ্কর স্টোরিতেই নামিয়ে দিতেন সেই একই কাজ যখন সাংবাদিকতার এক প্রাক্তন ছাত্রকে করতে হয় তখন উপায়ের সংখ্যা স্বাভাবিক ভাবেই সীমিত হয়ে পরে। যথা --- কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ স্থাপনে সময় লেগে যায়, প্রতিষ্ঠিত সংবাদপত্রের সূত্রে স্বাধীন নাগরিকদের সই সম্বলিত চিঠি পাঠিয়েও জবাব আসে না, ইত্যাদি। তার উপর আবার ছাত্রছাত্রীরাও একের পর এক কর্মসূচি নিয়ে ব্যস্ত। ফলত, সবসময় প্রয়োজন পড়লেই যে তাদের সাথে যোগাযোগ করে ওঠা যাবে এমনটাও নয়। ফলে সময় লাগে, এবং লাগবে ভবিষ্যতেও, যদিও বা শেষ পর্যন্ত এই দলিল সম্পূর্ণ করে ওঠা যায়।

    পুরোনো ঘটনায় ফিরে যাওয়ার আগে একটি কথা জানিয়ে রাখার বিশেষ প্রয়োজন বোধ করছি। আজ, অর্থাৎ ১১ই আগস্ট, ২০১৮, দুপুর নাগাদ কলেজ কর্তৃপক্ষ প্রেস কনফারেন্স করে তাদের বক্তব্য জানিয়েছে। সেখানে তারা ছাত্রদের দাবীগুলিকে কেন্দ্র করে কর্তৃপক্ষের নেওয়া সমস্ত উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেছে। এবং পরিশেষে একটা ব্যাপার পরিষ্কার করে দিয়েছে যে অনেক প্রচেষ্টার পর এই মুহূর্তে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আর কোনো কিছুই করতে অপারঙ্গম। অর্থাৎ কিনা, ছাত্রদের দাবী মেটানোর বিষয়টি তাদের এক্তিয়ারের বাইরে।

    আসলে ভেবে দেখলে কর্তৃপক্ষ শুধু ওইটুকু জানালেই পারতো। কারণ যে প্রচেষ্টার ফল মেলেনি সেই প্রচেষ্টা এই মুহূর্তে নিজেদের প্রতারিত মনে করতে থাকা ছাত্রদের কোনোভাবেই সাহায্য করবে না। বরং অনেক সদর্থক পদক্ষেপ হতো বিষয়টি তাদের এক্তিয়ারের বাইরে বলে জানিয়ে কর্তৃপক্ষ যদি রাজ্যপালকে অনুরোধ করতেন ১৩ তারিখ ছাত্রদের দাবি অনুযায়ী তাদের সাথে দেখা করে তাদের সমস্যা মেটানোর জন্য সত্ত্বর পদক্ষেপ নিতে। এতে ছাত্ররা আশ্বস্ত হতো যে নতুন ডাইরেক্টর আসলে বিষয়টির সমাধানই চান একান্তভাবে এবং ছাত্রছাত্রীদের রাজ্যপালের সঙ্গে দেখা করে উঠতে পারার ব্যাপারটাও হয়তো একটু সহজ হয়ে যেত।

    যাই হোক।
    ফিরে আসি ২০১৬-র অগাস্ট মাসে। এ পর্যন্ত যেভাবে আমরা বিস্তারিত বিবরণে গিয়েছি একেকটি ঘটনার এই পর্যায়ে আমরা সেই ধরনটি ব্যবহার করা থেকে অল্পবিস্তর বিরত থাকবো। এতে আমাদের ফাঁক কমিয়ে আনার কাজটি করতে সুবিধা হবে। সত্যি বলতে ততটা তথ্য জোগাড় করাও হয়তো আর সম্ভব নয়। কারণ ২০১৬তে আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ে গণমাধ্যমগুলি যেভাবে ছাত্রদের পাশে দাঁড়িয়েছিল, এই দ্বিতীয় পর্যায়ে তাদের সেই ভূমিকা আর দেখা যায় না। উৎসাহে খামতি ঘটেছিলো হয়তো। এক জিনিস নিয়ে লিখে লিখে আর কদিনই বা পাঠকের কৌতূহল ধরে রাখা যায়। নিতান্তই জেলা শহরের ছাত্র আন্দোলন। সে আর এমন কি রসের বিষয়!

    দোসরা অগাস্ট, ২০১৬, জিকেসিআইইটি মালদা-র ছাত্রছাত্রীরা ফোয়ারা মোড় অবরোধ করে। তাদের মূল বক্তব্যের সংখ্যা ছিল আট।
    ১) এনাইটি দুর্গাপুর এবং জিকেসিআইইটি-র প্রফেসর ইন চার্জ ভর্তির বিষয়টি পরিষ্কারভাবে ব্যাখ্যা করছেন না কেন?
    ২) পরীক্ষার সূচি ঘোষণা করা হচ্ছে না কেন?
    ৩) ছাত্রছাত্রীরা ভুখ হরতালের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে অথচ আধিকারিকরা প্রতিষ্ঠানে আসছেন না কেন?
    ৪) প্রতিষ্ঠানে না এসেও আধিকারিকরা বেতন পাচ্ছেন কেন?
    ৫) প্রফেসর ইন চার্জ শুভাশীষ দত্ত এবং সুপারিন্টেন্ডেন্ট দেব হালদার কিছু বহিরাগত এবং সিনিয়র ছাত্রদের আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের উপর লেলিয়ে দিয়ে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটাচ্ছেন কেন?
    ৬) নিয়াজুম হেগিনস নামক ছাত্র এবং অরুণাচল প্রদেশ থেকে আগত তফসিলি জাতিভুক্ত এক ছাত্রীকে হেনস্থা করার ঘটনায় পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?
    ৭) জিকেসিআইইটি-র আধিকারিক ও ফ্যাকাল্টিদের মধ্যে বয়ে চলা "ক্ষয়িষ্ণু চোরাস্রোত" (!) প্রতিষ্ঠানটির ক্ষতি করছে। এসব বন্ধ করা প্রয়োজন।
    ৮) ওয়ার্কশপের সংখ্যা বাড়াতে হবে। লাইব্রেরিতে বইয়ের সংখ্যা বাড়াতে হবে। শিক্ষক এবং হোস্টেলের সংখ্যাও অপর্যাপ্ত এবং অবিলম্বে বাড়ানো প্রয়োজন।

    ছাত্রদের বিক্ষোভ যাতে জেলা প্রশাসনিক চত্বরে অনিয়ন্ত্রিত ভাবে ছড়িয়ে না পরে তার জন্য আগে থেকেই ব্যাপক পুলিশি ব্যবস্থা রাখা হয়েছিল। শতাধিক পড়ুয়া মিছিল করে এসডিও-র কাছে ডেপুটেশন জমা দিতে আসার পথে ফোয়ারা মোড়ে তাদের আটকে ডিভাইডার দিয়ে প্রবেশ পথ ঘিরে ফেলা হয়। ফলস্বরূপ সেখানেই ছাত্রছাত্রীরা অবস্থান বিক্ষোভ দেখতে শুরু করে। কিছু সময় পরে ছ্যাত্রদের কয়েকজন প্রতিনিধিকে এসডিও-র সাথে দেখা করার অনুমতি দেওয়া হয়। তৎকালীন অতিরিক্ত জেলাশাসক (সাধারণ) দেবতোষ মন্ডলের বক্তব্য অনুযায়ী ছাত্রদের দাবী শোনা হয় এবং জিকেসিআইইটি-র টিচার ইনচার্জকে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য আস্তে বলা হয়। পরবর্তীতে গোটা বিষয়টি নিয়ে উচ্চপর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য রিপোর্ট পাঠানো হবে বলেও জানান তিনি।

    তেসরা অগাস্ট, ২০১৬ ছাত্রছাত্রীদের দ্বিতীয় দফার অনশন পঞ্চম দিন ছিল। এইদিন লাগাতার অনশনের জেরে দুই ছাত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ে। একজন কম্পিউটার সায়েন্সের সার্টিফিকেট কোর্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী নীতা যাদব এবং অপরজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ছাত্রী সুপ্রীতি অধিকারী। ছাত্রী দু'জনকে মালদা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হলে ডাক্তাররা তাদের অবস্থা স্থিতিশীল বলে জানান।

    চৌঠা অগাস্ট, ২০১৬ নোটিস জারী করে অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বন্ধ করে দেওয়া হয়। এনআইটি দুর্গাপুরের রেজিস্ট্রার এই নির্দেশিকা জারী করেন। হোস্টেল খালি করে দেওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। আন্দোলনরত ছাত্রদের বক্তব্য অনুযায়ী মাত্র দু'জন আধিকারিকের ভুল বোঝানোর ফলে এনআইটি এরকম সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এই সিদ্ধান্তের ফলে অরুণাচল প্রদেশ, আসাম, ত্রিপুরা এবং মেঘালয় ইত্যাদির মতো ভিনরাজ্যে থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা অসুবিধার মধ্যে পড়ে। জিকেসিআইইটি এবং এনআইটি-র তৎকালীন ডিরেক্টর শ্রী অশোককুমার দে জানান, একশ্রেনীর পড়ুয়ারা ক্লাস হতে দিচ্ছে না। ফলে নিরাপত্তার চরম সমস্যা দেখা দিয়েছে। এই অনাস্থার পরিবেশেরই ফসল এই নির্দেশিকা। ভর্তি এবং পরীক্ষার বিষয়ে ইতিমসয়েই চিঠি দিয়ে স্টেট্ কাউন্সিলের মতামত জানতে চাওয়া হয়েছে কিন্তু এখনো উত্তর আসেনি। উত্তর এলেই সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে। এই ব্যবস্থা নিতান্তই সাময়িক। এরপর প্রকাশ মিশ্রের প্রতিবেদন অনুযায়ী অশোকবাবু পাটনায় কত টাকায় হোস্টেল ভাড়া করে কজন ছাত্রকে রাখা হয় এবং মালদায় কিভাবে ২০ জন কম ছাত্রকে রাখতে গিয়ে মাসে আড়াই লক্ষ টাকা বেশি খরচ হয়ে যাচ্ছে এবং এসবের জন্য যে আসলে প্রাক্তন চেয়ারম্যানই দায়ী এই জাতীয় অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বলেন যার সাথে ছাত্রদের আন্দোলন বা প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থার কোনো সম্পর্ক নেই। কাজেই এইসব কথাবার্তা উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করছি না। এসব জিকেসিআইইটি-র তৎকালীন অ্যাকাউন্ট্যান্ট ছাড়া আর কারুরই বোধহয় জানার বিশেষ প্রয়োজন নেই। আমাদের তো নেই-ই।

    ৫ই অগাস্ট, ২০১৬ প্রসেনজিৎ মন্ডল নামক আরও এক ছাত্র অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এইদিনই ফ্যাক্স পাঠানো হয় কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী শ্রী প্রকাশ জাভড়েকর মহাশয়কে। এই ফ্যাক্স বার্তায় উল্লেখ ছিল যে ২৬ দিনের আন্দোলনের পর অ্যাফিলিয়েশনের সমস্যা মিটলেও নতুন করে পরীক্ষা ও ভর্তি প্রক্রিয়া নিয়ে সমস্যা দেখা দিয়েছে। সেই সমস্যার সমাধানে ছাত্ররা অহিংস আন্দোলনের পথ বেছে নেওয়া সত্ত্বেও কর্তৃপক্ষ ক্লাস বন্ধ করে হোস্টেল খালি করাচ্ছে। এবং এই অবস্থার জন্য কর্তৃপক্ষ উল্টে ছাত্রদেরই দায়ী করছে। এর ফলে ভিনরাজ্যে ছাত্রছাত্রীদের অসুবিধায় পড়তে হচ্ছে। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে ভিনরাজ্য থেকে আসা ছাত্রীদের সংখ্যা এই ফ্যাক্সবার্তা অনুযায়ী দেড়শো। সর্বমোট আটশো পড়ুয়ার জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা চলছে। এছাড়াও এই বার্তায় জানানো হয় যে, ২০১৬-র জুন মাসে এনআইটি-র সেনেট মিটিং-এ নেওয়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে জিকেসিআইইটি কোনো ছাত্র ভর্তি নিতে পারবে না। অন্যদিকে ওই মিটিং-এই আবার বিটেক-এর অ্যাফিলিয়েশনের বিষয়টি নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়ে থাকলেও সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনামা জারী করা হয়নি। ফলে চলতি শিক্ষাবর্ষে বিটেক পাশ করে বেরোতে চলা ১৮০ জন ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যতও অনিশ্চিত। ছাত্রদের পড়াশোনা এবং বিচারের অধিকারের বিষয়টি যাতে মন্ত্রীমশাই সুনিশ্চিত করার উদ্যোগ নেন সেই মর্মে এই ফ্যাক্সবার্তাটিতে অনুরোধ রাখা হয়েছিল।

    এর পরের ঘটনা ঘটে ১৫ই অগাস্ট, ২০১৬। ক্লাস বন্ধ ছিল, হোস্টেল খালি ছিল, অধিকারিকরাও আসছিলেন না, ফলে গন্ডগোলের সম্ভাবনা প্রায় ছিল না বললেই চলে। কিন্তু, বেধে গেলো। তাও জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মতো বিষয়কে কেন্দ্র করে। ছাত্রছাত্রীদের ইচ্ছে ছিল যে ক্লাস বন্ধ থাকলেও ক্যাম্পাসে ১৫ই অগাস্ট জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হোক। সেই জন্য তারা কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগের চেষ্টাও করে। কিন্তু সাড়া মেলেনি। ফলে ছাত্ররা প্রবীণ এক গ্রামবাসীকে দিয়ে ওইদিন পতাকা উত্তোলন করায়। এর ঠিক পরপরই জাতীয় পতাকা তোলার জন্য নারায়ণপুর ক্যাম্পাসে এসে উপস্থিত হন টিচার ইনচার্জ শ্রী শুভাশীষ দত্ত মহাশয়। এসে তিনি দেখেন পতাকা তোলা হয়ে গেছে ইতিমধ্যেই। এই ঘটনায় তিনি ক্ষোভপ্রকাশ করে জানান যে দোষী ছাত্রছাত্রীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেইমতো ১৬ই অগাস্ট কর্তৃপক্ষ একটি মিটিং ডাকেন। ছাত্রদের ফেসবুক পোস্ট অনুযায়ী সেই মিটিং-এ নাকি জানতে চাওয়া হয় কোন সাহসে ছাত্ররা কর্তৃপক্ষের অনুপস্থিতিতে বিনা অনুমতিতে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করায় ক্যাম্পাসের মধ্যে, তাও একজন "দলিত"-এর হাত দিয়ে ! এই ঘটনার রেশে ১৯শে অগাস্ট ৩জন অজ্ঞাতপরিচয় গুন্ডা ক্যাম্পাসে এসে আন্দোলনরত ছাত্রদের হুমকি দিয়ে যায় এবং, ডুয়ার্সখবর ডট কম-এর ২০শে অগাস্টের প্রতিবেদন অনুযায়ী, এক ছাত্রকে বহিস্কার করা হয়। বর্তমানে ওয়েবসাইটটির ডোমেন চেঞ্জ হয়ে যাওয়ার ফলে উক্ত ছাত্রের নাম জানা যায়নি। ফেসবুকে শেয়ার হওয়া লিঙ্কটির থাম্বনেল-এ ডেটা স্ক্রেপিং উত্তর প্রদর্শিত হেডলাইনের মাধ্যমে এই বহিষ্কারের কথা জানা যাচ্ছে।

    এর পরের পর্যায়ের ঘটনাসমূহের সত্যাসত্য বিচার করা অসম্ভব। কারণ এ পর্যন্ত যে ক'টি প্রতিবেদন পাওয়া যাচ্ছিলো এর পর আর তাও পাওয়া যায় না। ৫ই ডিসেম্বর, ২০১৬-র আগে আর কোথাও কোনো খবরের কাগজে বা ওয়েবসাইটে জিকেসিআইইটি বিষয়ক কোনো প্রতিবেদন সম্ভবত প্রকাশিত হয়নি। ফলে ফেসবুক থেকে যেটুকু যা জানা যাচ্ছে ---

    ১) ২১শে সেপ্টেম্বর নাগাদ একটি অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটে। সাকেত কুমার সোনু নামে সম্ভবত এক বহিরাগত আন্দোলনরত এক ছাত্রীর শ্লীলতাহানির অভিযোগে অভিযুক্ত হয়। পুলিশে অভিযোগ জানিয়ে লাভ হয়নি, এবং কোনো এক কারণে ছাত্রদের ধারণা হয় যে অভিযুক্ত ব্যক্তি তৎকালীন টিচার ইনচার্জের পরিচিত এবং টিচার ইনচার্জ তাকে অভিযোগের হাত থেকে বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। ২) ৬ই অক্টোবর, ২০১৬ এবং ২৮শে অক্টোবর, ২০১৬ যথাক্রমে সার্টিফিকেট কোর্স এবং ডিপ্লোমা কোর্সের সার্টিফিকেট দেওয়া হবে বলে নোটিশ দিয়ে জানিয়েছিল কর্তৃপক্ষ। সেই প্রতিশ্রুতি, যথারীতি, রাখা হয়নি।

    ৩) পয়লা নভেম্বর, ২০১৬ স্টুডেন্ট ইউনিটি-র উদ্যোগে গনি খান চৌধুরী সাহেবের জন্মদিন উদযাপন করা হয়। ওইদিনের অনুষ্ঠানে যাঁরা যাঁরা উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যাচ্ছে তাঁরা হলেন ডালু বাবু, আলবেরুনী দা, মোস্তাক আলম কাকু, এবং মাসুদ দা। এঁদের মধ্যে একজন এমপি এবং অন্তত দুজন এমএলএ। ফেসবুক পোস্টে ছাত্র সংগঠনটি ঠিক এই নামগুলি উল্লেখ করেই এঁদের কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেছে।

    এরপর ৫ই ডিসেম্বর, ২০১৬ নারায়ণপুরের মূল ক্যাম্পাসে গন্ডগোল লাগে। সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সের ছাত্ররা ক্যাম্পাসে ভাংচুর চালায় এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ১৭ই নভেম্বর থেকে টিচার ইনচার্জ শুভাশীষ দত্ত প্রতিষ্ঠানে গরহাজির। তাই সার্টিফিকেট পাশ ছাত্রদের ডিপ্লোমায় ভর্তি ও দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রদের রেজিস্ট্রেশন আটকে গেছে। তাদের বক্তব্য থেকে আরো জানা যায় যে, জুলাই মাসে যে পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা ছিল তা শেষ অবধি শেষ হয়েছিল নভেম্বর মাসে এসে। এছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক নাকি এই ইনচার্জের নিয়োগে পদ্ধতিগত ত্রুটি খুঁজে পেয়ে যথাযোগ্য ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে। সাংবাদিকরা শুভাশীষ বাবুর মতামতের জন্য তাঁকে ফোন করলে তিনি ফোন ধরেননি এবং চেয়ারম্যান অর্ধেন্দু ভট্টাচার্য্য বলেন যে তিনি এ বিষয়ে কিছুই জানেন না, খোঁজ নিয়ে দেখতে পারেন বড়জোর।

    এরপর ৮ই ডিসেম্বর উত্তরবঙ্গ সংবাদের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ৭ তারিখ পুনরায় প্রতিষ্ঠান বন্ধের নির্দেশ জারী করা হয়। এই নিয়ে দ্বিতীয়বার। একই সাথে পুনরায় হোস্টেল খালি করার নির্দেশও ছিল। ভরা শীতের মধ্যে হোস্টেল খালি করার নির্দেশ দিলেও ছাত্রছাত্রীরা কোথায় যাবেন সে নিয়ে কোনো বিকল্প ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। যথারীতি ভিনরাজ্যের থেকে আসা ছাত্রছাত্রীরা পুনরায় সমস্যায় পড়ে। এদিকে ছাত্রছাত্রীদের বক্তব্য অনুযায়ী কর্তৃপক্ষের সমস্যার সমাধান করার সদিচ্ছা নেই বলেই বারবার এরকম নির্দেশ জারী করা হচ্ছে। তাদের বক্তব্য থেকেই জানা যাচ্ছে যে ওই একই সময়ে গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়েও ভাঙচুর এবং অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছিলো। তাতে ওই বিশ্ববিদ্যালয়টি বন্ধ করে দেওয়া হয়নি মোটেই। ছাত্রছাত্রীরা এদিন জেলা প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান বিক্ষোভ দেখায় এবং তারপর তাদের তরফে জেলাশাসককে একটি স্মারকলিপি জমা দেওয়া হয়। সাংবাদিকদের কাছে ছাত্রদের পেশ করা বক্তব্য অনুযায়ী তখনও ডিপ্লোমা কোর্স ভর্তি আটকেই রয়েছে, দ্বিতীয় বর্ষের রেজিস্ট্রেশনও চালু হয়নি এবং সেই জাভড়েকর মহাশয়কে পাঠানো ফ্যাক্সবার্তায় বিটেকের অ্যাফিলিয়েশন সংক্রান্ত যে নির্দেশনামার উল্লেখ ছিল সেটি তখনও জারী করা হয়নি। অর্থাৎ এককথায়, অবস্থা বদলায়নি একটুও। যার ফলেই ছাত্ররা অধৈর্য হয়ে চূড়ান্ত পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়েছে। তাদের আরো দাবী যে, যেহেতু শুভাশীষ বাবুর বিরুদ্ধে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক থেকে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে তাই তিনিই আড়াল থেকে প্রভাব খাটিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়ে ছাত্রদের ক্ষতিসাধন করার চেষ্টা চালাচ্ছেন।

    এদিন আবার অর্ধেন্দুবাবু ফোন ধরেননি বলে জানা যাচ্ছে। অন্যদিকে অশোকবাবু (তৎকালীন তত্বাবধায়ক ডিরেক্টর) জানিয়েছেন যে ছাত্ররা ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের মতো ঘটনা ঘটানোর ফলে আধিকারিক, শিক্ষক এবং কর্মীরা সকলেই আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। তাই প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে হচ্ছে আপাতত। ভর্তির বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন যে রেসাল্টই বেরোয়নি এখনো। রেসাল্ট না বেরোলে ভর্তি সম্ভব নয়। তাছাড়া পরীক্ষা চলাকালীন ছাত্রছাত্রীরা নাকি বই সামনে খুলে রেখে লিখছিলো। ফলে পুলিশি প্রহরায় পরীক্ষা চালাতে হয় পরদিন থেকে। এরপর ছাত্রদের দাবী ছিল স্থানীয় পর্যায়ে খাতার মূল্যায়নের দায়িত্ত্ববন্টন করতে হবে, কিন্তু সেই দাবী মানা সম্ভব নয়। স্টেট্ কাউন্সিলের নির্দেশ অনুযায়ী পরীক্ষা ব্যবস্থা চালানো হচ্ছে, প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। রেজিস্ট্রেশনের বিষয়টি নিয়েও কাউন্সিলকে চিঠি পাঠানো হয়েছে এবং উত্তর আসেনি এখনো। উত্তর না এলে কর্তৃপক্ষের কিছু করার নেই। মানবসম্পদমন্ত্রক থেকে কি সত্যিই শুভাশীষবাবুকে বরখাস্ত করার সুপারিশ করা হয়েছে? -- এই প্রশ্নের উত্তরে অশোকবাবু জানান এসব ভিত্তিহীন কথাবার্তা। ওনার কাছে এরকম কোনো খবর নেই। এর আগে একবার ইনচার্জকে দিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেওয়া হয়েছিল। আর এর মধ্যেই নতুন রেজিস্ট্রার ও ডিরেক্টর যোগদান করার কথা আছে। তিনি এটুকুই জানেন।

    ৯ই ডিসেম্বর, ২০১৬ ছাত্রছাত্রীরা অতিরিক্ত জেলাশাসক আয় বিমলা-র সাথে দেখা করে বিষয়টিতে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপের দাবী জানায়। ওইদিনই দুপুরে তারা তৃণমূল কংগ্রেসের জেলা সভাপতি ডাঃ মোয়াজ্জেম হোসেন-এর সাথেও দেখা করে। ডাঃ হোসেন ডিরেক্টর অশোকবাবুকে ফোন করে ছাত্রছাত্রীদের দাবিগুলি নিয়ে আলোচনা করে প্রেস বিবৃতিতে জানান, " এটি কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতিষ্ঠান। রাজ্য সরকারের স্টেট্ কারিগরী কাউন্সিল সার্টিফিকেট ও ডিপ্লোমা কোর্সের অ্যাফিলিয়েশন দিয়েছে। তারপরও কেন প্রতিষ্ঠানে বন্ধের নোটিস ঝোলানো হলো? এটা কি প্রতিষ্ঠানটিকে মালদহ থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার চক্রান্ত করছে কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রক? সমস্যাটি নিয়ে আমি রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে আলোচনা করবো"।

    ডাঃ হোসেন আলোচনা করেছিলেন কিনা বা সেই আলোচনায় কি কথা হয়েছিল জানা নেই। ছাত্র্রছাত্রীরা সত্যিই বই খুলে বসে পরীক্ষা দিয়েছিলো কিনা, শুভাশীষবাবুকে দিয়ে জোর করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নিয়েছিল কিনা তাও জানা নেই। আবার মন্ত্রক থেকে সত্যিই শুভাশীষবাবুকে বরখাস্ত করার সুপারিশ পাঠানো হয়েছিল কিনা এবং সমস্ত চক্রান্তের আড়ালে ওই ব্যক্তিই ছিলেন কিনা তাও জানা যায় না। জানা যে যায় না, তার কারণ মাঝেমাঝেই গণমাধ্যম ঘুমিয়ে পড়েছে। একটা স্টোরি যে সম্ভাব্য ফলো-আপ স্টোরিগুলোর জন্ম দিতে পারে সেগুলো উঠে আসেনি যখন প্রয়োজন ছিল। ফলে আজ দেড় বছরেরও বেশি সময় পড়ে আন্দাজ এবং অনুমান ছাড়া আর বিশেষ কিছুই করার থাকে না।

    ৯ই ডিসেম্বর,২০১৬-র পর পুনরায় গণমাধ্যমে নৈঃশব্দের শৈত্য। সোশ্যাল মিডিয়াতে এরপর ২৯শে ডিসেম্বর ছাত্রদের পোস্ট দেখা যাচ্ছে যেখানে তেসরা জানুয়ারী মালদা বৃন্দাবনীর মাঠে সমস্ত ছাত্রছাত্রীদের জড়ো হওয়ার আহ্বান রাখা হচ্ছে। এই পোস্ট অনুযায়ী তখনও অবস্থার বদল ঘটেনি একফোঁটাও। ইনস্টিটিউট খোলার জন্য কি কি পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা নিয়ে আলোচনাই এই জমায়েতের উদ্দেশ্য বলে জানা যাচ্ছে। কিন্তু সেদিন জমায়েত হয়েছিল কিনা, বা হয়ে থাকলেও কি আলোচনা হয়েছিল জানবার কোনো উপায় নেই।

    এরপর ১০ই জানুয়ারী, ২০১৭ জিকেসিআইইটি-র ছাত্রছাত্রীরা প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি পাঠায়। চিঠিটি হুবহু নিচে তুলে দেওয়া হলো।

    January 10, 2017

    To
    The Hon’ble Prime Minister (Govt. of India)
    Shri. Narendra Modi
    New Delhi ,India

    Sub: Urgent. Call for Mass movement. from Students of GKCIET, Malda, West Bengal

    Respected Sir/Madam,
    This for your kind attention that we students of GKCIET which is Centrally funded institute of Ministry of HRD, Govt. of India in Malda, West Bengal have been looking forward to call a mass movement by sending request to other Universities' and Institutes' students to join us to support our voice of protest against injustice being carried out by GKCIET authority and its mentor institute NIT, Durgapur. Out of frustration of 5 years in GKCIET we have come to this condition of fear that how long our academic career would be abused by GKCIET authority and NIT, Durgapur. We have come to this institute from all over the India with hope and dreams but everything seems to be painful due to mismanagement, false commitment, poor infrastructure of GKCIET. Simply we students and our parents are betrayed here and we are in middle of no where.

    Take necessary action and save our future by saving and reopening GKCIET which is completely closed since more than one month by official order of NIT,Durgapur. And take rigorous action against the culprits and conspirators who are still playing with the future of thousand innocent students. If no action has been taken to solve our problems by this week we will call mass movement through social net work in the country.

    Thanking you
    Sincerely
    All GKCIET students
    Malda, West Bengal
    India

    এরপর জানুরীর ১১ তারিখ কর্তৃপক্ষ জিকেসিআইইটি-র সমস্ত কর্মীদের উদ্দেশ্যে অর্ডার জারী করে। অর্ডারটিতে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার সময়ে স্থানীয় নিরাপত্তা ব্যবস্থার সাথে হাত মিলিয়ে প্রতিষ্ঠানের স্বার্থে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া ছিল। বলা ছিল প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকাকালীনও এই দায়িত্ত্ব পালন করে যেতে হবে। এই আদেশনামার ফলে কতটা কি হয়েছিল জানা যায়না। তবে কোনো বড় গন্ডগোল যে হয়নি সেকথা ধরে নেওয়াই যায়। কারণ এরপর আবারও ফেব্রুয়ারী মাসের প্রথম সপ্তাহের আগে জিকেসিআইইটি-র নাম কোনো সংবাদপত্রে প্রকাশিত হবে না।

    (ক্রমশ)
    প্রতিবেদন --- কর্তৃপক্ষের প্রতারণার প্রতিবাদে জিকেসিআইইটি-র ছাত্রদের আয়োজিত সভায় সাধারণ মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত যোগদান (প্রকাশঃ 31 July 2018 09:35:42 IST)

    তিরিশে জুলাই, সোমবার, গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি-র ছাত্র সংগঠন জিকেসিআইইটি স্টুডেন্ট'স ইউনিটি-র উদ্যোগে মালদা মেন্ পোস্ট অফিসের কাছে ফোয়ারা মোড়ে বিকেল চারটে থেকে একটি পথসভার আয়োজন করা হয়। এই সভার উদ্দেশ্য ছিল ইনস্টিটিউটের ছাত্রছাত্রীরা বছরের পর বছর কিভাবে জিকেসিআইইটি কর্তৃপক্ষের দ্বারা প্রতারিত হয়ে আসছে সেই কাহিনী মালদা শহরের সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। মালদা জিকেসিআইইটি-র ছাত্র আন্দোলন ২০১৬-র জুন মাসে শুরু হওয়ার পর ইতিমধ্যেই ২ বছর অতিক্রম করেছে কিন্তু বহু ছাত্রছাত্রীর ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত। প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ, রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার তথা মানবসম্পদ বিকাশ মন্ত্রকের তরফে ছাত্রদের কিছু দাবী অংশত মেনে নেওয়া হলেও সমস্যা এখনও মেটেনি। বিভিন্ন জায়গায় চাকরীর পরীক্ষা দিতে গিয়ে এই প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের পেশ করা রেজাল্ট ও সার্টিফিকেট মান্যতা পাচ্ছে না। অসুবিধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার ক্ষেত্রেও। মালদা শহরের সাধারণ মানুষকে এই সমস্ত ঘটনার কথা জানিয়ে ছাত্রদের পাশে দাঁড়াতে অনুরোধ করাই তাই এই পথসভার অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল। এছাড়া কর্তৃপক্ষের তরফে আন্দোলনকারীদের মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর বিষয়টিও আলোচনা হয়। বিকেল চারটে থেকে সন্ধ্যে সাতটা, তিনঘন্টা এই সভা চলে। মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণে আজকের সভায় জমায়েতের অঙ্ক ছিল পাঁচশো'র কিছু বেশি। ছাত্রছাত্রীরা ছাড়াও আজকের সভায় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং অধ্যাপকরা অংশগ্রহণ করেন। মালদা'র কালিয়াচক গার্লস হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা শ্রীমতি মল্লিকা সরকার এদিনের সভায় বক্তব্য রেখে জিকেসিআইইটি-র প্রতারিত ছাত্রছাত্রীদের পাশে থাকার কথা জানান। এছাড়াও আজকের সভায় ব্যক্তিমানুষ হিসেবে অংশগ্রহণ করেন মালদা বার অ্যাসোসিয়েশনের সাথে যুক্ত কিছু আইনজীবী। ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বলে তাঁরা আইনি জটিলতার ক্ষেত্রে পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন। যাদবপুর এবং প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি থেকে যোগ দিতে আসা ছাত্রপ্রতিনিধিরা কবিতাপাঠ ও গানের মাধ্যমে অংশগ্রহণ করেন। এছাড়া কর্তৃপক্ষের নৈঃশব্দ ও প্রতারণার প্রতিবাদে সভাস্থলে মস্তকমুণ্ডন করান জিকেসিআইইটি-র দুই ছাত্র, কুনাল ঘোষ এবং নাজমূল হক।
    "নাহলে রেপ করে বডি বিছিয়ে দিতাম.." (প্রকাশঃ 17 August 2018 14:52:32 IST)

    গত পরশু অর্থাৎ স্বাধীনতা দিবসের দিন, মালদা জিকেসিআইইটি ক্যাম্পাসে আন্দোলনরত ছাত্রছাত্রীদের বাইকবাহিনী এসে শাসিয়ে যায়। তারপর আজকের খবর অনুযায়ী তাদেরকে মারধর করে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেওয়ার চেষ্টা চলছে। ছাত্রদের বক্তব্য অনুযায়ী মারধর করছে বিজেপির সমর্থক এবং শিক্ষকরা। তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস এবং বামমনস্ক দলগুলির স্থানীয় কর্মীরা এবিষয়ে আঙ্গুল চুষছেন না বাতাসা খাচ্ছেন সেখবর এখনও নিশ্চিতভাবে পাওয়া যায়নি। সৌম্যদীপ চ্যাটার্জী নামক চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ জনৈক ল্যাব অ্যাসিট্যান্ট অত্যন্ত বীরত্বের সাথে ছাত্রীদের জানিয়েছেন যে ইনস্টিটিউটে ক্যামেরা রয়েছে বলে নাকি তারা বেঁচে যাচ্ছে, নাহলে রেপ করে বডি বিছিয়ে দেওয়া হতো। সুপ্রিয়া সরকার নামে এক ছাত্রীকে টেনে হিঁচড়ে বাথরুমে নিয়ে গিয়ে মারধর করা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে। এ সমস্তই সম্ভবত কলকাতায় অবস্থানরত ছাত্রছাত্রীরা যাতে চাপে পরে আন্দোলন তুলে নিয়ে মালদা ফিরে এসে সহপাঠীদের পাশে দাঁড়াতে বাধ্য হয় তারই চেষ্টায়। কলকাতায় যে গত ৯ দিন ধরে জিকেসিআইইটি-র ছাত্ররা শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছে তা কর্তৃপক্ষের কাছে লজ্জার বৈকি। কারণ এতদিন সোশ্যাল মিডিয়ায় বিভিন্ন পোস্টের নিচে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের ঘনিষ্ঠরা বারংবার প্রমান করার চেষ্টা করেছে যে আন্দোলনের নামে গুন্ডাগিরি চলে প্রতিষ্ঠানে। সেই ভয়ে নাকি মাঝেমাঝেই নিরাপত্তার কথা ভেবে ইনিস্টিটিউট বন্ধ করে দিতে হয় এবং ভবিষ্যতে আবারও বন্ধ করে দেওয়া হতে পারে যদি আন্দোলন তুলে না নেওয়া হয়। সেখানে গত ৯ দিনে কলকাতায় অন্তত একবারও পুলিশের সাথেও মারপিট লাগেনি ছাত্রদের। উল্টে তারা অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের পাশে পেয়েছে। পাশে পেয়েছে সাংস্কৃতিক কর্মীদের এবং সামাজিক-রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক বিভিন্ন মঞ্চকে। গত ৯ দিন ধরে কলকাতায় আন্দোলন চলছে মূলত চাঁদার পয়সায়। খাবার জুটছে চেয়েচিন্তে, কোথাও কোনো হানাহানি কাটাকাটির খবর নেই। এ কি কম লজ্জার বিষয়? কাজেই আন্দোলনকে যে কোনো মর্মে মালদায় ফিরিয়ে আনতে হবে কলকাতার নাগরিক সমাজের ঘুম ভাঙার আগেই। নাহলে কর্তৃপক্ষের মুখোশ খুলে যাবে যে। মিথ্যে হয়ে যাবে ছাত্রদের গুন্ডাগিরি চালানোর সমস্ত দাবী। আর আন্দোলন মালদায় ফিরিয়ে আনতে যারা মালদায় রয়ে গেছে এখনো তাদের মারধর করার চেয়ে উন্নত পন্থা আর কিই বা হতে পারে। কে না জানে, কান টানলেই মাথা চলে আসে সাধারণত। মাথা কলকাতায়, কান মালদায়; অতএব দাও মুচড়ে। কিন্তু কর্তৃপক্ষ বোধহয় তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে ভুল করে ফেললেন। ওঁরা জানেন না যে কলকাতার ঘুম এতো সহজে ভাঙে না। নাগরিক সমাজ তো দূর কি বাত, সবকটি ছাত্র সংগঠনই এখনও নিশ্চিত নয় জিকেসিআইইটি নিয়ে তাদের অবস্থান কি হওয়া উচিত সেই বিষয়ে। এমনকি আইসা বা ইউএসডিএফ-এর মতো আগুনখেকো ছাত্র সংগঠনগুলি, যাঁরা কথায় কথায় কারা বেশি বামপন্থী সেই বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন, তাঁরাও এখনও পর্যন্ত জিকেসিআইইটি-র ছাত্র আন্দোলন বিষয়ে কোনো সাংগঠনিক বিবৃতি প্রকাশ করে উঠতে পারেননি। ভারতের ছাত্র ফেডারেশনও বোধহয় গত ৯ দিন ধরে সোমনাথবাবু এবং অটলবাবু-র স্বাস্থ্যচিন্তায় মগ্ন ছিল। ফলে সাংগঠনিক বিবৃতি নেই তাদের তরফ থেকেও। সিপি আর টিএমসিপিকে নাহয় হিসেবের বাইরেই রাখা যাক, ছাত্রআন্দোলনের পাশে দাঁড়ানো যে সমস্ত ছাত্র সংগঠনের অস্তিত্বগতভাবেই প্রয়োজন তাঁরা ইংল্যান্ডে বিরাট কোহলি বাহিনীর ব্যাটিং পারফর্মেন্স দেখে বিষাদে ঘুমিয়ে পড়েছেন। এমতাবস্থায় জেগে আছে শুধু মালদা জিকেসিআইইটি-র ছাত্রছাত্রীরা, কলকাতার রেনুছায়া মঞ্চে। অতএব প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ গায়ে হাত তোলার ব্যাপারটা আর কয়েকদিন পরে শুরু করলেও পারতো। তাড়াহুড়ো করতে গিয়ে এর ফল পুরোটা হয়তো কর্তৃপক্ষের পক্ষে না গেলেও নাও যেতে পারে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ আগস্ট ২০১৮ | ১৬৯২ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 7845.29.893412.33 (*) | ১৯ আগস্ট ২০১৮ ০২:৩৬63758
  • কোলকাতার লোকজন, আসুন। আসতে বলুন। নিজে না পারলেও জানান অন্যদের। এরপরেও, এত কিছুর পরেও আসবেন না, ওদের পাশে দাঁড়াবেন না? অবস্থা কিন্তু খুবই খারাপ আর হইচই ও, দেখাই যাচ্ছে প্রায় নেই! কালকের কনভেনশন অন্তত খুব বড় করে হোক, ভিড় উপচে পড়ুক, মেডিকেলে যেমন দেখেছিল কোলকাতা। হবে তো?

    "আপনারা সবাই অবগত আছেন যে গনি খান চৌধুরী ইনস্টিটিউট অফ ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড টেকনোলজির ছাত্ররা কলকাতার একাডেমি অব ফাইন আর্টস-এর সামনে রানুছায়া মঞ্চে অনেক ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করেও আমাদের আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি গত ১০ দিন ধরে। রাজ্যপালের সাথে দেখা করতে চেয়ে আমরা ১২ দিন আগে একটা চিঠি পাঠিয়েছিলাম, কিন্তু তিনি এখনো দেখা করার অনুমতি দেননি। কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতারণা ও রাজ্য সরকারের অবহেলার শিকার হয়ে রানুছায়া মঞ্চে একের পর এক আমাদের GKCIET-র সাথীরা অসুস্থ হয়ে পড়ছে। নাজমুল খুব অসুস্থ, কথা বলতে পারছেনা। শেখ সাহিদের খুব জ্বর। অন্যদিকে কলেজে আন্দোলনকারী ছাত্র নাসিম নাওয়াজ ও শুভম সাহাকে শক্ত রড, ধারালো ছুরি দিয়ে পিঠে ও হাতে মেরেছে, কেটে দিয়েছে, আমাদের সহপাঠি সাক্ষী কুমারী ও সুপ্রিয়া সরকারকে "ক্যামেরা না থাকলে রেপ করে বডি ফেলে দিতাম" বলেছে সিরাজ, সৌম্যদীপ, দীপাঞ্জন নামক অামাদেরই শিক্ষকরা।
    রাজ্যের কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান WBSCT&VE&SD আমাদের ২০১৬ সালে অ্যাফিলিয়েশন দিলেও সেটার কোনো বৈধতা নেই, তা আমরা কিছুদিন আগে জানতে পারি।
    যে অ্যাফিলিয়েশনের কোনো মূল্য নেই, সেই অ্যাফিলিয়েশন দেওয়ার মানে কী হয়????
    একদিকে যেমন কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতারণা, অন্যদিকে রাজ্য সরকারের অবহেলার শিকার হয়েছি আমরা।
    তাই আমাদের সোমবারের গণ কনভেনশনে কলকাতার সমস্ত ছাত্রসমাজ ও নাগরিক সমাজকে আমাদের পাশে দাঁড়িয়ে আমাদের ন্যায্য দাবি পাইয়ে দেওয়ার জন্য সোচ্চার হতে অনুরোধ জানাচ্ছি।

    - ইতি GKCIETর বঞ্চিত ছাত্রছাত্রীগণ।

    #পাশেঅাছিজিকেসিঅাইইটি
  • Pi | 2345.110.015612.21 (*) | ২০ আগস্ট ২০১৮ ০৯:৩৫63759
  • বড় হচ্ছে আন্দোলনের পরিসর। আলমগীর লিখেছে,
    আজ কলেজের নতুন ছাত্রছাত্রীদের সাথে কথা বললাম।।তারা আমাদের আন্দোলন ও আমাদের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছে।।এবং তাদের কিছু দাবি আমাদের জানিয়েছে যেমন - ল্যাব নেই কলেজে তাদের ল্যাব চাই,লাইব্রেরীতে পর্যাপ্ত পরিমানে বই নাই বই চাই,হোস্টেল এখনো কলেজ তাদের দেই নি সকলে বাইরের ছাত্র,কলকাতা,মেদনিপুর,শিলিগুড়ি ও রাজ্যের বাইরের,খাওয়ার জল নেই,ক্যান্টিন নেই,বেশি টাকা নিয়ে ভর্তি নিয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষ সেটা ফেরত দিতে হবে,বাস ফ্যাসিলিটি দিতে হবে নাহলে তারাও আন্দোলনের পথে যাবে।। তাদের এই দাবি আমরা সমর্থন করেছি।।
    আজ থেকে কলেজ বন্ধ অনির্দিষ্টকালের জন্য।।
  • ছাগলছানা | 237812.58.78900.220 (*) | ২১ আগস্ট ২০১৮ ০১:৪৩63760
  • তথ্যসূত্র গুলোর লিংক গুলো দিয়ে দিলে ভালো হত. এমনকি যে সাইট টা এখন আর নেই সেটার ও.
    কেউ না কেউ কপি দিয়ে দিতে পারত .

    সুত্র গুলোর লিংক না থাকায় কিছুই করা যাচ্ছেনা.
  • pi | 2345.110.125612.109 (*) | ২৬ আগস্ট ২০১৮ ০৪:০৬63761
  • যাঁরা পারবেন, চলে যেতে পারেন। আজ, একাডেমির সামনে।

    "অাপনারা সবাই হয়তো জানেন, গত ১৬ দিন ধরে এই কলকাতার ফুটপাথে পড়ে রয়েছে ৪০টি ছেলেমেয়ে, মালদার গনি খান ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি কলেজের ছাত্রছাত্রী। কলেজ থেকে বেরিয়ে কোথাও চাকরি পাচ্ছে না ওরা, উচ্চশিক্ষা পাচ্ছে না, বছরের পর বছর বৈধ সার্টিফিকেটের জন্য অান্দোলন করে চলেছে, অথচ ওদের কথা কারও কানে পৌঁছোচ্ছে না। তাই অাজ এই শহরের মানুষের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে ছেলেমেয়েগুলো, একটাই অাশা নিয়ে, যদি অামরা ওদের পাশে দাঁড়াই। দিনের পর দিন একাডেমির সামনের ফুটপাথে, ত্রিপলের সামান্য অাশ্রয়ে, প্রবল বৃষ্টিতে, প্রচণ্ড গরমে, খেয়ে না-খেয়ে লড়াই করে যাচ্ছে, অামাদেরই ঘরের ছেলেমেয়েরা। অামরা কি ওদের ফিরিয়ে দেব? দরজা বন্ধ করে দেব? এতখানি অমানবিক, নিষ্ঠুর মুখ কি অামাদের ছিল, কিছুদিন অাগেও, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সি, বা এই সেদিনের মেডিকেল কলেজের অান্দোলনের সময়?
    বন্ধু, একবার নিজের ছেলে বা মেয়েটির মুখের দিকে তাকান, একবার ভাবুন, ওদের ভবিষ্যৎ যদি এই ছেলেমেয়েগুলোর ভবিষ্যতের মতো অাক্ষরিক অর্থেই অন্ধকার হয়ে যায়, বাবা-মা হিসেবে একবার অন্তত অনুভব করুন সেই অবস্থাটা। তাহলেই অাপনারা বুঝতে পারবেন, অাজ কতখানি অসহায় হয়ে ওরা অামাদের কাছে এসেছে।
    অাসুন না, একটা দিন অন্তত সবাই একটু ওদের পাশে থাকি। বলি, তোরা একা না, অামরা অাছি। অাজ রবিবার সকাল দশটায় একাডেমির সামনে জড়ো হব অামরা, রাখি পরাব ওদের, অাগামী দিনের জন্য কিছু অর্থ সংগ্রহের চেষ্টা করব, এই অামাদের কর্মসূচি। অাশা রাখি, অাপনাদের সবাইকে সেদিন পাব, এই কলকাতা শহর অাবার দেখবে, মানুষের পাশে মানুষের এসে দাঁড়ানো।"

    https://www.facebook.com/events/2060443437313180/?ti=cl
  • pi | 2345.110.894512.4 (*) | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০২:৩৯63763
  • এটা কদ্দুর সত্যাসত্য, জানা নেই।

    এটা ছাত্রদের বক্তব্য

    "বহুবার আমাদের কাগজ দেখিয়ে ঠগানো হয়েছে,অবাক হওয়ার মত কিছু নেই।।ছাত্রদের সাথে আলোচনায় বসুন না হলে আন্দোলন চলবে কাল ২টায় রানুছায়া মঞ্চে আসুন।।"
  • Anamitra Roy | 7845.29.455612.173 (*) | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৯:১৭63762
  • #GKCIET-র দীর্ঘ লড়াই অবশেষে সাফল্যের মুখ দেখল। কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন দপ্তরের উচ্চশিক্ষা বিভাগ একটি আদেশনামা প্রকাশ করেছে। তার ক্রমাঙ্ক F. No - 8-10/2013 - TS.VII (Part - II) dtd 23.08.2018।

    এই আদেশনামায় স্পষ্টভাষায় বলা হয়েছে -

    Therefore Ministry of Human Resource Development hereby notifies that:

    (i) The successful completion of the third level of modular programme from GKCIET is considered
    equivalent to 4 year B.Tech programme in engineering and students who have successfully completed the 3rd level of modular programme of GKCIET are eligible for all employment and higher educational avenues where B.Tech (4 year) in engineering is the eligibility requirement.

    (ii) The successful completion of the second level of the modular programme from GKCIET is consideredequivalent to 3 year diploma programme in engineering and students who have successfully completed the 2nd level of modular programme of GKCIET are eligible for all employment and higher educational avenues where 3 year diploma in engineering is the eligibility requirement.

    (iii) The successful completion of the first level of the modular programme from GKCIET is consideredequivalent to 10+2 (vocational) level programme and students who have successfully completed the 1st level of modular programme of GKCIET are eligible to all employment and higher educational
    avenues where 10+2 (vocational) is the eligibility requirement.

    সমস্যা এরপরেও পড়ে থাকবে। জট পাকাতে চাইবে কলেজ কর্তৃপক্ষ। যেহেতু এখন আর মডুলার সিস্টেম নেই, তাই দ্বিতীয় মডিউল পাশ করা ছাত্রছাত্রীদের ডিগ্রীতে ভর্তি করতে আপত্তি করতে পারে। সেক্ষেত্রে লড়াইটা মালদায় কেন্দ্রীভূত করতে হবে।

    GKCIETর লড়াকু ছাত্রছাত্রীদের রক্তিম অভিবাদন।

    (Sujan Bhattacharyyaদার পোস্ট)

    #পাশেঅাছিজিকেসিঅাইইটি
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। খারাপ-ভাল মতামত দিন