এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • ।। ধর্ম সাম্প্রদায়িকতা মৌলবাদ: কিছু কথা।। তিন

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৭ মে ২০১৭ | ১৯১৬ বার পঠিত
  • [মধ্য প্রদেশের এক দলিত অধ্যুষিত গ্রামে মেয়ের বিয়েতে ঢোল না বাজিয়ে ব্যান্ড বাজানোর অপরাধে গ্রামের একমাত্র কুয়োর জলে কেরসিন ঢেলে দিয়েছে গ্রামের উচ্চবর্ণের মাতব্বররা। আইসিস সন্ত্রাসীদের মতো এক কোপে গলা না কেটে সঙ্ঘু সন্ত্রাসীরা এই ভাবে সহনশীল পদ্ধতিতে গলা শুকিয়ে তিলে তিলে পরলোকে প্রেরণের আয়োজন করছে। ঠিক সেই দিন যেদিন দক্ষিণ এশিয়ার নামে ভারত সরকার একটি কৃত্রিম উপগ্রহ আকাশে তুলবে বলে ঘোষণা হল। মন্দ না! এই ভাবেই হিন্দু রাজ চায় ১৬ শতাংশের জন্য আধুনিক সুখী রাজ্য গড়ে তুলতে, আর ৮৪ শতাংশকে নিয়ে যেতে চায় ২৭২ খ্রিষ্টাব্দের বর্ণাশ্রমিক ঘোর অন্ধকার কালো যুগে। আজ আর শুধু মুসলমান বিরোধী নয়, আপামর দলিত সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধেও ঘৃণা ও হিংসার জারক রসে সিঞ্চিত এক অসম যুদ্ধ ঘোষণা করেছে এই স্বঘোষিত বর্ণ-হিন্দু সেনানী। এই পরিস্থিতির একটা সামগ্রিক মূল্যায়ন বোধ করি আজ প্রয়োজন হয়ে উঠেছে! সুচিন্তিত যুক্তি, প্রামাণ্য তথ্য ও ভারত ইতিহাসের প্রশস্ত ক্যানভাসে। সেই প্রয়াসের আজ তৃতীয় ধাপ!]

    [৮] সাম্প্রদায়িকতার বিকাশ

    এই রকম ইতিহাস শিক্ষা আমাদের দেশে দীর্ঘকাল ধরে, সেই নেহরুর কংগ্রেসি আমল থেকেই, চালু ছিল বলেই সঙ্ঘ পরিবারের পক্ষে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা অনেক সহজ হয়ে গেছে। তারা ইংরেজদের থেকে মধ্য যুগের ভারতের এমন একটা ছবি সংগ্রহ করেছে এবং প্রচার করে চলেছে যে মনে হবে, মুসলিম শাসনের সমস্ত সময়টাই বুঝি হিন্দু মুসলমানের লাগাতার সংঘর্ষের ইতিহাস। উপযুক্ত ইতিহাসবোধ ও বৈজ্ঞানিক মনোবৃত্তির অভাবে অধিকাংশ শিক্ষিত হিন্দুর মনে এই ছবিটা পাকাপাকিভাবে মুদ্রিত হয়ে আছে।

    কথাটা কি সত্য?

    শুধু সঙ্গীতের কথাই ভাবুন। ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের সমস্ত ভাষা-উপাদানেই রয়েছে হিন্দু দেবদেবীর কাছে আরাধনার উপাখ্যান। আর ধর্ম হিসাবে ইসলাম কঠোরভাবে একেশ্বরবাদী এবং মূর্তিপূজার বিরোধী। কিন্তু ভারতীয় ধ্রুপদী সঙ্গীতের দীর্ঘ ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে এবং তার সংরক্ষণ ও লালন-পালন হয়েছে মধ্যযুগের সেই মুসলিম শাসনের কালেই। অসংখ্য মুসলমান ওস্তাদের হাত ধরে। কী করে এটা সম্ভব হল? প্রশ্নটা রবীন্দ্রনাথকেও ভাবিয়েছিল। তিনি বিশ্বভারতীর এক অধ্যাপক ক্ষিতি মোহন সেনকে দায়িত্ব দিয়েছিলেন এই বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য অনুসন্ধান করে দেখতে। অধ্যাপক সেন দেখালেন, সুলতান ও মোগল আমলের সমগ্র সময়কাল ধরে শুধু সঙ্গীত নয়, শিক্ষা, সাহিত্য, ভাষা, চিত্র, স্থাপত্য, ভাস্কর্য, ধর্মচর্চা, এবং যুদ্ধবিগ্রহ—সমাজ জীবনের সব কিছুই গড়ে উঠেছিল “হিন্দু মুসলমানের যুক্ত সাধনা” হিসাবে। [সেন ১৯৯০] আমাদের দেশের কতজন এই উপলব্ধিটা গ্রহণ করতে পারলেন?

    আবার এও দেখার বিষয়, বৌদ্ধ পুঁথিগুলি ইতিমধ্যে (অর্থাৎ, মুসলমান সুলতান বা বাদশাহি শাসন শুরু হওয়ার আগেই) অদৃশ্য বা লোপাট হয়ে গেলেও হিন্দু ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃত পুঁথিগুলি কিন্তু সমস্তই মুসলমান শাসনকাল বেয়ে শুধু টিকে রইল তাই নয়, তার আরও অনুলিপি তৈরি হল, বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদ হল, ফার্সিতে অনুবাদ হয়ে তা বিদেশে গেল, ইত্যাদি। এর তাৎপর্য কী? ভারতীয় গণিত (বিশেষত, শূন্যের ধারণা এবং দশমিক সংখ্যা পাতন পদ্ধতি) আরবদের হাত ধরেই ভারত থেকে নবম শতকে ইউরোপে গিয়ে পৌঁছল। এটাই বা সম্ভব হল কী করে?

    এই রকম যাবতীয় কঠিন তথ্য অস্বীকার করে মিথ্যা এবং ভ্রান্ত এক কল্পিত-সাম্প্রদায়িক আবেগাশ্রিত ইতিহাস বোধের উপর দাঁড়িয়েই এখন সঙ্ঘ পরিবারের মুখিয়ারা প্রচার করছে, মুসলমানরা যেখানেই গেছে, সেখানেই নাকি সমস্ত স্থানীয় সংস্কৃতি ধ্বংস করে দিয়েছে, সেখানকার নাকি সার্বিক “ইসলামিকরণ” ঘটিয়েছে। এখন আমাদের ভেবে দেখা দরকার, ১১৯২ সাল থেকে ১৮৫৭ সাল পর্যন্ত প্রায় সাতশ বছরের মুসলিম শাসনকালে ভারতে কত মন্দির তৈরি হয়েছে, কত মন্দির শাসকরা ভেঙে ফেলেছে, যেগুলো টিকে আছে সেগুলোই বা তারা ভাঙল না কেন। এই দুটো সংখ্যা ঠিক কত এবং তাদের অনুপাতই বা কেমন? ভেবে দেখতে হবে, আরব থেকে বেরিয়ে মোটামুটি একশ বছরের মধ্যেই সিরিয়া লেবানন ইরাক ইরান প্যালেস্তাইন আফঘানিস্তান মিশর—সর্বত্র তারা সমস্ত জনসাধারণকে ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত করে ফেলল, আর ভারতবর্ষে এত সুদীর্ঘকাল রাজত্ব করার পরেও ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত জনসংখ্যার মাত্র এক-চতুর্থাংশও পুরোপুরি মুসলিম ধর্মান্তরিত হল না। কেন? আরও ভেবে দেখা দরকার, একশ শতাংশ মুসলিম দেশ আফঘানিস্তানে প্রায় তেরশ বছর ধরে তারা বামিয়ানের বিশাল বুদ্ধমূর্তি আস্ত রেখে দিয়েছিল কেন? মার্কিন মদত ও প্রশিক্ষণ পুষ্ট তালিবানদের হাতে ধ্বংস হওয়ার আগে পর্যন্ত (২০০০ সাল) তা টিকে রইল কীভাবে? অর্থাৎ, এই সংক্রান্ত প্রচারগুলি আসলে আগাগোড়াই মিথ্যা।

    তার মানে কি এই যে ইসলাম ধর্ম বা মুসলমান রাজাদের মধ্যে সেকালে বা আগাগোড়া এক প্রবল উদারভাব কাজ করেছে বলে এই সব প্রাক-ইসলামি উপাদান রক্ষা পেয়েছে? না, তাও নয়। উদারতা সহিষ্ণুতা—এগুলো আধুনিক ধারণা এবং উপলব্ধি। হিন্দু মুসলিম বৌদ্ধ খ্রিস্টান—কোনো ধর্মের প্রবর্তক বা প্রচারকদের মধ্যেই প্রাচীনকালে এই রকম কোনো আধুনিক ধারণা ও বোধ কাজ করেনি, করা সম্ভবও ছিল না। আসলে, যারা সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে, তাদের জাগতিক স্বার্থের সামনে যতক্ষণ একটা ধর্ম বিশ্বাস বা আচরণ বাধা হয়ে না দাঁড়িয়েছে, তারা তার বিরুদ্ধে কিছু করার কথা মাথায়ই আনেনি। বিপরীতে, তারা বরং চেষ্টা করেছে, স্থানীয় ধর্ম বিশ্বাসীদের মন জয় করে আস্থা অর্জন করে সাম্রাজ্যকে সুরক্ষিত রাখতে। তাদের প্রধান ও সচেতন উদ্দেশ্য ছিল ইহজাগতিক, সম্পূর্ণ বৈষয়িক, স্বার্থ চরিতার্থ করা।

    তাহলে প্রশ্ন উঠতে পারে, সাম্প্রদায়িকতার জন্ম হল কবে থেকে?

    আগেই বলেছি, মধ্য যুগে বিভিন্ন ধর্ম বিশ্বাস ও আচরণ এবং তা নিয়ে মাঝে মধ্যে বিভিন্ন ধর্মালম্বীদের মধ্যে মারামারি কাটাকাটি হলেও তা কখনই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামার দিকে যায়নি। গেলে এতকাল ধরে সারা ভারতবর্ষ জুড়ে পাশাপাশি হিন্দু-মুসলমানের বসবাস সম্ভবই হত না। ঊনবিংশ শতাব্দ থেকেই প্রথম শুরু হল সাম্প্রদায়িক বিভাজন এবং তার ভিত্তিতে পর্যায়কালিক সংঘর্ষ। বিংশ শতাব্দে তার সংখ্যা বৃদ্ধি পেল এবং মাত্রা তীব্রতর হতে লাগল। তারপর একে একে মুসলিম লিগ, হিন্দু মহাসভা, আর এস এস ইত্যাদি সম্প্রদায় ভিত্তিক সংগঠন গড়ে ওঠার সাথে সাথে এই সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ প্রায় একটা কর্মসূচি হিসাবে পালিত হতে শুরু করল।

    মৌলবাদের জন্ম হল কীভাবে?

    যখন আমাদের জাতীয় মনীষীরা এক প্রাচীন আদর্শ জগতশ্রেষ্ঠ মিথ্যা ভারতবর্ষের চিত্র এঁকেছেন, তাঁদের অজান্তেই তাঁরা আজ আমরা হিন্দু মৌলবাদের যে ভয়াল রূপ দেখছি তার চিন্তা-আদর্শগত প্রাথমিক ভিত স্থাপন করে গিয়েছেন। স্বাধীনতা আন্দোলনে যখন “রামরাজ্য” স্থাপনকে স্বাধীন ভারতের স্বপ্নানুষঙ্গে পর্যবসিত করা হয়েছে তখন তাও সেই মৌলবাদী চিন্তার আরও দু মহল বৃহদায়তনে নির্মাণ করে দিয়ে গেছে। অথচ, তারপরও যখন সেই স্বপ্নময় রামরাজ্যে হিন্দুর শ্রেষ্ঠত্ব এবং ব্রাহ্মণ্য অনুশাসন স্থাপনের কোনো সার্থক সদর্থক পরিকল্পনা রচিত হল না; মুসলমান, বৌদ্ধ, জৈন, শিখ, খ্রিস্টান, আর্য, অনার্য, ব্রাহ্মণ শূদ্র—সকলকে নিয়েই এক বহুত্ববাদী ঐক্যবদ্ধ সুহৃদ ভারতের ভবিষ্যত ছবি আঁকা হল, তখনই হিন্দু মৌলবাদী শক্তির উত্থান (১৯২৫) কার্যত অবশ্যম্ভাবী হয়ে উঠল। একে একে হেডগেবার, সাভারকর, গোলওয়ালকর, প্রমুখ এসে ঠিক এই কথাই বললেন। রাম রাজ্য মানেই তা হিন্দু রাজ্য। হিন্দু রাজ্যে বাকিরাও থাকতে পারে, কিন্তু তাদের থাকতে হবে হিন্দুর অধীনে, হিন্দুত্বের অনুগ্রহে।

    মুসলিম লিগের জন্ম হয়েছে তার অনেক আগে। ১৯০৬ সালে। তখন সে মুসলিম স্বার্থকে আলাদা করে তুলে ধরলেও এবং তার মধ্যে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন হলেও তার শক্তি সঞ্চয় করতে অনেক সময় লেগেছে। সেও শক্তি সংগ্রহ করেছে তিলক গান্ধী প্রমুখ জাতীয় নেতাদের প্রতিটি ভ্রান্ত পদক্ষেপ থেকেই। দুই রাস্তায়। কখনও তাঁদের হিন্দু-মুখী মতাদর্শের থেকে বিকর্ষণ-প্রতিক্রিয়ায়, কখনও তাঁদের মুসলিম রক্ষণশীল প্রবণতার প্রতি সস্নেহ আকর্ষণে। ১৯২০-র দশকে যখন গান্ধীবাদী আন্দোলন তুঙ্গে, তখনই মুসলিম সাম্প্রদায়িকতারও চূড়ান্ত আত্মপ্রকাশ।

    অন্যদিকে, গান্ধীর রামরাজ্য প্রচার যতই ব্রাহ্মণ্যবাদী চিন্তাধারাকে শক্তিশালী করতে শুরু করল, ততই তা ভারতীয় তথাকথিত নিম্নবর্ণের মানুষদেরও শঙ্কিত করে তুলল। গান্ধী এটা ধরতে পেরেছিলেন। তবে তিনি ভেবেছিলেন, “হরিজন” সম্বোধন, অস্পৃশ্যতাবিরোধী প্রচার, ইত্যাদির মাধ্যমে তাঁদের মধ্যে এই আশঙ্কা দূর করতে পারবেন। কিন্তু ইতিহাসের দু আড়াই হাজার বছরের চলে আসা ও জমে ওঠা পাপ শুধুমাত্র নাম বদল করে যে স্খালন করা যায় না, এই সহজ বিষয়টাও তাঁর ধর্মাচ্ছন্ন দৃষ্টিতে ধরা পড়ল না। কংগ্রেসের বরোদা অধিবেশনে গান্ধীর ব্যক্তিগত তত্ত্বাবধানেও দেখা গেল, আলোচনা হচ্ছে একই প্যান্ডেলে একই শামিয়ানার নিচে বসে, পাশাপাশি। কিন্তু খাওয়াদাওয়া হচ্ছে হিন্দু-মুসলমান আলাদা আলাদা ভাবে বসে; হিন্দুদের আবার জাতিগত মান ধরে পংক্তিভোজনের ব্যবস্থা। প্রশ্ন তুললেন দক্ষিণ ভারতের পেরিয়ার: এমনটা কেন হবে? যেখানে স্বয়ং গান্ধী বসে আছেন? গান্ধীকেই তিনি অনুরোধ করলেন, আহার-বিহারে এই জাতি-ধর্মগত ভেদরেখা বিলুপ্ত করে দিতে। গান্ধী রাজি হলেন না। আসলে এত বড় একটা সংস্কার সাধনে তাঁর রক্ষণশীল মন সায় দিতে পারল না। তাঁর উপস্থিতিতেই ফলে ভেদরেখাগুলি স্পষ্টতর ও তীক্ষ্ণতর হয়ে উঠতে লাগল।

    বস্তুত, এই তিনটি পরিঘটনা—মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা, হিন্দু মৌলবাদ এবং দলিত জাতির অধিকারের দাবিতে অম্বেদকরের আন্দোলন—সবই যে প্রায় কাছাকাছি সময়ে জন্ম নিয়েছে এবং স্বাধীনতা আন্দোলনকে অনুভূমিকভাবে সিধে চার ভাগে বিভক্ত করে দুর্বল করে দিয়েছে, এটা কোনো কাকতালীয় ব্যাপার নয়। তিনটি ভিন্ন ধারার আন্দোলনের জন্মের পেছনেই রয়েছে গান্ধী নেতৃত্বাধীন জাতীয় কংগ্রেসের সেই একই ভ্রান্ত রাজনৈতিক প্রক্রিয়া। আমরা আজ পর্যন্ত সেই সব মারাত্মক ভুলের মাশুল গুণে চলেছি।

    মুসলিম সাম্প্রদায়িকতা থেকে মুসলিম মৌলবাদের জন্ম নিতে আরও কিছু সময় লেগেছে। একদিকে মধ্য প্রাচে ইস্রায়েল রাষ্ট্র স্থাপন করে প্যালেস্তাইন থেকে আরবদের উচ্ছেদ করার ইং-মার্কিন সাম্রাজ্যবাদী ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে সঠিক পথে আন্দোলন গড়ে তোলার প্রক্রিয়ার অনুপস্থিতিতে প্যালেস্তাইন এবং তার আশেপাশের মুসলিম রাষ্ট্রগুলির ভেতর থেকে ধীরে ধীরে এক অস্থির সন্ত্রাসবাদী প্রবণতা জন্ম নিয়েছে। পাশাপাশি, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদীরা তাদের সক্রিয় উদ্যোগে সোভিয়েত ইউনিয়নের এশিয়ান ভূখণ্ডে মুসলিম জনবসতি অধ্যুষিত অঞ্চলগুলিতে সমাজতন্ত্র বিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চক্রগুলিকে অর্থ অস্ত্র প্রচার ও অন্যান্য ভাবে সাহায্য দিয়ে এই প্রবণতাকে এক সাংগঠনিক শক্তিতে রূপান্তরিত করে তুলেছে। তারপর থেকে তা সম্প্রসারিত হয়েছে ইরানে, আফঘানিস্তানে, আরও নানা জায়গায়। এই পথ বেয়েই বিশ্বপ্রেক্ষিতে ১৯৫০-এর দশক থেকে ইসলামি সন্ত্রাসবাদের জন্ম অভ্যুত্থান ও প্রসার।

    ভারত (বিভক্ত হওয়ার পরেও) একটা যথেষ্ট বড় ভূখণ্ড। হিন্দু মৌলবাদীদের এখানে সরাসরি সরকারি ক্ষমতায় আসতে অনেক সময় লেগেছে। স্বাধীনতা-উত্তর কালে অনেক দিন পর্যন্ত সক্রিয় সাম্প্রদায়িকতার তুলনায় নিষ্ক্রিয় সাম্প্রদায়িকতাই প্রধান প্রবণতা হিসাবে চলমান রয়েছে। ভারতীয় বুর্জোয়াদের বৃহত্তর অংশই যেহেতু হিন্দু (“উচ্চবর্ণ”), তারা এই ভূখণ্ডেই থেকেছে; অখণ্ড ভারতের খনিজ সম্পদ, প্রাকৃতিক সম্পদ (নদী, জঙ্গল, পাহাড়, ইত্যাদি) বেশিরভাগটাই এখানে রয়ে গেছে; ইংরেজ আমলে গড়ে ওঠা কলকারখানারও প্রায় আশি শতাংশই এ অংশে পড়ে গেছে। ফলে পুঁজিবাদী অর্থনৈতিক বিকাশের ক্ষেত্রে পাকিস্তান (ও পরবর্তীকালে বাংলাদেশ)-এর তুলনায় ভারত স্বভাবতই অনেক বেশি এগিয়ে যেতে পেরেছে (বস্তুত, ১৯৯৭ উত্তর কালে এখন এও জানা গেছে যে, ভারত বিভক্তির পরিকল্পনা নেহরু-প্যাটেলরা এমনভাবেই করেছিলেন যাতে ভারতীয় বুর্জোয়ারা এই সুবিধাগুলি পায়)। তার সেই বিকাশমান স্থিতিশীল অর্থনীতিই রাজনীতির ক্ষেত্রেও বহুদিন পর্যন্ত এক ধরনের আপেক্ষিক স্থিতিশীলতা রক্ষা করতে সক্ষম হয়েছে। সংসদীয় রাজনীতি ধীরে ধীরে একটা স্থায়ী রূপ নিতে পেরেছে। তারই সুবিধা নিয়ে শিক্ষা স্বাস্থ্য যোগাযোগ পরিবহন—সর্ব ক্ষেত্রেই ভারতের অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে বাকি দুই অংশের চাইতে বেশি হয়েছে। এর সাথে হিন্দুত্ব বা হিন্দু-গরিষ্ঠতার কোনো সিধা সম্পর্ক নেই। পুঁজির শক্তি ও পরিপক্কতার কারণেই এটা সম্ভব হয়েছে।

    এই আর্থসামাজিক পৃষ্ঠভূমিতেই বোঝা যাবে, কেন পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে ভারতের দিকে যতটা উদ্বাস্তু ও জনসংখ্যার অভিবাসন ঘটেছে, বিপরীত অভিমুখে তার তুলনায় কিছুই হয়নি। আবার অর্থনৈতিক অস্থিরতার কারণে রাজনীতিও অস্থির হওয়ায়, সংসদীয় রাজনীতির বদলে মিলিটারি শাসনেই বেশির ভাগ সময় থাকার ফলে পাকিস্তানে ধীরে ধীরে সক্রিয় সাম্প্রদায়িকতার শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে। আর তার সামনে বিপরীত সাম্প্রদায়িকতা কার্যত না থাকায় এবং বাইরের পূর্বোল্লেখিত ঘটনাবলির প্রভাবে সে ক্রমাগতই মৌলবাদী সন্ত্রাসের আকার নিতে থাকে। ভারতের সাথে কাশ্মীর-ভাগাভাগি নিয়ে ভৌগোলিক-কূটনৈতিক দ্বন্দ্বে পাকিস্তানের ক্রমে ক্রমে কোনঠাসা হয়ে পড়ার ফলে সেই সব শক্তি এইদিকে আরও বেশি করে ঝুঁকে পড়তে থাকে।

    পক্ষান্তরে, বাংলাদেশে আবার যেহেতু ভাষা ভিত্তিক জাতীয়তাবোধের অভ্যুত্থান ধর্মকে পরাস্ত করে এক নতুন স্বাধীন জাতীয় সার্বভৌম রাষ্ট্রব্যবস্থা কায়েম করেছে, সেখানে মুসলিম সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রায় সর্বতোভাবে রাজনৈতিক পরাজয় ঘটেছে। আর পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়ে তার কোমরটাই কার্যত ভেঙে গেছে। দেশের বুকেও তারা জাতীয়তা বিরোধী বেইমান ও দালাল হিসাবে এমনভাবে সুচিহ্নিত হয়ে পড়েছে যে নতুন করে তার পক্ষে মুসলিম স্বার্থের নাম করে উঠে দাঁড়ানো মুশকিল। সেই কারণেই সেই সব প্রতিক্রিয়াশীল শক্তি বাধ্য হয়ে নিজেকে পরিবর্তিত করেছে ইসলামি মৌলবাদী শক্তিরূপে। কোনো এক অদৃশ্য বিপদ থেকে ইসলাম ধর্ম রক্ষার নামে অন্ধ আবেগ, গোঁড়ামি, নারী বিদ্বেষ, হিংসা, ঘৃণা, সন্ত্রাস তারও হাতিয়ার, তবে এখনও তা মধ্য প্রাচ্য বা পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী শক্তিগুলির সমতুল্য নয়।

    কিন্তু ভারতীয় পুঁজিপতি শ্রেণিও যত সঙ্কটের সামনে পড়ছে, ততই সে বুর্জোয়া গণতান্ত্রিক শাসন পদ্ধতির উপর আস্থা হারিয়ে ফেলছে। খুব সন্তর্পনে সেও এখন ধর্মীয় মৌলবাদের উত্থান চাইছে। বিশ্বায়নের পথ ধরেই বহুজাতিক পুঁজিরও যেমন অবাধ চলাচল বেড়েছে বা বাড়ানো হয়েছে, বহুমাত্রিক মৌলবাদী সন্ত্রাসও তেমনই সীমান্ত অগ্রাহ্য করে বিভিন্ন দেশের রাজনীতি সংস্কৃতি সমাজ জীবনকে অবাধে গ্রাস করে নিতে চলেছে।

    ১৯৯১ সালের নতুন গ্যাট চুক্তি, ডাঙ্কেল প্রস্তাব, বিশ্বায়ন; বিশ্ব পুঁজির স্বার্থে অর্থনীতির উদারীকরণ; ভারতে মনমোহনী নতুন অর্থনৈতিক নীতি গ্রহণ; সেই বছরেই অবাধ বাণিজ্যের হল্লাগুল্লার মাঝখানে বাজার এড়িয়ে তেলের খনি দখলের লক্ষ্যে আমেরিকার ভয়াবহ ইরাক-যুদ্ধ; ১৯৯২ সালে ভারতের বুকে সঙ্ঘ পরিবারের প্রত্যক্ষ হামলায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসসাধন; মধ্য প্রাচ্যে আল-কায়দা, আইসিস, আফ্রিকায় বোকো হারাম, ইত্যাদি ইসলামি সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর উত্থান—এগুলোর কোনোটাই নিপাতনে সিদ্ধ বিচ্ছিন্ন ও অন্য নিরপেক্ষ স্বতন্ত্র ঘটনাপুঞ্জ নয়। এই সমস্ত ঘটনাকে এক বৃহত্তর আর্থ-রাজনৈতিক অদৃশ্য সূত্রে গাঁথা বললে বোধ হয় ভুল হবে না। পুঁজির অবাধ বিশ্বায়নের খাতিরে আর্থ-সামাজিক-সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রগুলিতে বর্বরতম প্রতিক্রিয়াশীলতার প্রকাশ!

    [৯] আজকের আদর্শ: প্রাচীন ভারত

    এবার বিশুদ্ধ জ্ঞান-বিজ্ঞানের তরফে একটু হিন্দু মৌলবাদের গালগল্পগুলিকে নাড়াচাড়া করে দেখা যাক। কেন ওদের যুক্তি বিজ্ঞান ইতিহাসবোধ সব কিছু জলাঞ্জলি দিয়ে প্রচার করতে হয়।

    দীননাথ বাত্রা বা নরেন্দ্র মোদী প্রাচীন ভারতে যে সমস্ত বৈজ্ঞানিক কৃৎকৌশলের প্রসঙ্গ তুলছেন সেগুলির মধ্যে এক চিত্তাকর্ষক উপাদান লক্ষ করা যায়। স্টেম সেল রিসার্চই হোক, আর জিন প্রযুক্তিই হোক কিংবা প্লাস্টিক সার্জারিই হোক—সব ক্ষেত্রেই প্রাচীন ভারতে সেই সব গবেষণাই হয়েছিল বলে তাঁরা দাবি করছেন, যেগুলো এখন উন্নত বিশ্ব করে চলেছে বলে জানা গেছে। এরকম কেন হচ্ছে না যে ভারতে একটা এমন ধরনের গবেষণা হয়েছিল, যা সারা বিশ্ব আজ অবধি কল্পনাও করে উঠতে পারেনি?

    যেমন ধরুন, গণেশের ধড়ে হাতির মাথা বসিয়ে দেওয়ার গল্প। একে প্লাস্টিক সার্জারি বলার দরকার কী? এই প্রযুক্তির জন্ম তো ভারতেই। তা, এর এরকম একটা নাম দেওয়া হোক না (আমার পরামর্শ)—অথ-অন্যশরীরমুণ্ড-সংযোজন (হেটারোসেফালোথোরাসিক ফিউসন)! তাতে মৌলিকতা অনেক বেশি ফুটে বেরয়। কর্ণের জন্ম রহস্য কিংবা গান্ধারীর একশ এক সন্তানের জন্মদান বৃত্তান্ত ব্যাখ্যা করতে পশ্চিমি বিজ্ঞানের বা জিনতত্ত্বের পরিভাষার সাহায্য আমরা নেব কেন? ভারতীয় বিজ্ঞান, ভারতীয় প্রযুক্তি, ভারতীয়দের কৃতিত্ব; নামও তার সংস্কৃত ভাষায় ভারতীয় স্টাইলে দেব।

    মেঘনাদ সাহার সঙ্গে অনিল বরণ রায়ের বিতর্কের কথা অনেকেই জানেন। সেখানে তিনিও এই রকম ভাবেই আধুনিক পশ্চিমি বিজ্ঞানের নানান আবিষ্কারগুলিকে প্রাচীন ভারতীয় বিভিন্ন শাস্ত্র গ্রন্থে খুঁজে পাচ্ছিলেন। তিনি অবশ্য সেদিন দাবি করেছিলেন, সব কিছুই বেদে পাওয়া যাবে, এমনটা নয়। কিন্তু বেদ উপনিষদ পুরাণ স্মৃতি ন্যায় বেদাঙ্গ বেদান্ত তন্ত্র ইত্যাদি সংস্কৃত ভাষায় লিখিত বিভিন্ন বিশাল সংখ্যক পুঁথির সব মিলিয়ে কোনোটা না কোনোটাতে পাওয়া যাবেই। সে ইলেকট্রনই হোক, আর বিবর্তন তত্ত্বই হোক। দুঃখের বিষয়, তখন যেহেতু বিদেশে জিনপ্রযুক্তি বিদ্যার প্রায় কোনো অগ্রগতিই হয়নি, সবে তার শুরু তখন, তাই অনিলবাবুর চোখেও বাত্রা বা মোদীর দেখা স্টেম সেল বা জিনপ্রযুক্তি জাতীয় আবিষ্কারগুলো ধরা পড়েনি। অথচ গণেশ-গান্ধারী-কর্ণ সংশ্লিষ্ট ভারতীয় ঘটনাগুলো তো তখনও ছিল।

    এই রহস্যের ব্যাখ্যা কী?

    ব্যাখ্যা আমি যেটা ভেবেছি, কিছু কিছু জায়গায় বলেছিও, তা হল, এর মধ্যে রয়েছে এক রকম হীনম্মন্যতা, যাকে আমরা এক জাতীয়-আবেগ দিয়ে ঢেকে রেখে এইভাবে এক মিথ্যা গর্বের পলেস্তারা দেওয়ার চেষ্টা করে থাকি। বিজ্ঞানের নিত্য নতুন জয়যাত্রার খবর আমরা পাচ্ছি। বিভিন্ন শাখায় কত কিছু আবিষ্কার হয়ে চলেছে। তার থেকে কত রকম প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে। খুব জটিল যন্ত্রপাতির কথা ছেড়ে দিই, কম্পিউটার, সেলফোন, লেজার বিম প্রোজেক্টর, ইত্যাদি। ডট পেনের জেল, জুতো পালিশ করার ক্রিম, মাছ কাটার কাঁচি—সবই আমরা হাতে পেয়ে যাচ্ছি, চমৎকৃত হচ্ছি তাদের উপযোগিতা দেখে—অথচ এরকম খুব সাধারণ জিনিসগুলোরও কোনোটাই আমাদের দেশে আমাদের কৃতিমানদের হাতে উদ্ভাবিত হয়নি। আইনস্টাইন কিংবা হাইজেনবার্গের পিএইচ ডি থিসিস থেকে নোবেল পুরস্কারের ডাক আসে; আর আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলির হাজার হাজার ডক্টরাল থিসিস আট-দশ বছর পরে সংশ্লিষ্ট ছাত্র ছাড়া আর প্রায় কারোর মনেই পড়ে না! যদি আধুনিক বিজ্ঞানের বড় বড় মৌলিক তত্ত্বগত আবষ্কারের কথা ধরি, সেখানে তো ১৯৩০ সালের পরে আমাদের দেশের বিজ্ঞানীদের এমনকি একজনের কোনো কমা সেমি-কোলন পর্যন্ত অবদানও নেই।

    অথচ হাতে আমাদের বেদ উপনিষদ গীতা এবং আরও কত সব গুরুগম্ভীর শাস্ত্র। তাতে আত্মা-পরমাত্মা জীব-শিব ব্রহ্মতত্ত্ব দ্বৈত-অদ্বৈত দ্বৈতাদ্বৈত বিশিষ্টাদ্বৈত ভেদ-অভেদ অচিন্ত্যভেদাভেদ—কত সব জটিল জটিল বুদ্ধিঘুর্ণায়ক প্রতিজ্ঞা, বা আরও কত কী! অতএব কী আর করা? সংস্কৃত শব্দগুলোকে ধরে সামান্য সাদৃশ্য দেখিয়েই বলতে থাকি—এই দ্যাখো, এখানেই রয়েছে। কণা আছে, শক্তি আছে, তরঙ্গ আছে, স্পন্দন আছে, কোষ আছে, মূল আছে, কাণ্ড আছে, প্রাণ আছে, . . ., আর কী চাই? সব আছে। নতুন কিছুই হচ্ছে না। আমাদের মুনিঋষিরা সবই করে রেখেছেন।

    হ্যাঁ, সবই আছে। নেই শুধু দুটো সামান্য জিনিস—মূল জ্ঞান আর কাণ্ড জ্ঞান। সেই অভাবের ফাঁক দিয়েই তো অদ্বৈত ব্রহ্ম কখন যে ব্রহ্মদৈত্য হয়ে ইঠেছে, আমরা টেরও পাইনি!!

    ওই সামান্য জিনিস দুটো থাকলে এই সব মহান(?) আবিষ্কার-দাবি(!!)-কর্তারা বুঝতেন, ভাগ্যিস ওই পশ্চিমি বিজ্ঞানীদের হাতে এই সব বড় বড় শাস্ত্র-ফাস্ত্র নেই, তাই ওঁরা এরকম মৌলিক আবিষ্কার করতে পারছেন। আর উল্টোদিকে, আমাদের মাথায় এই শাস্ত্রগুলোই দিল্লি গেট লাহোর গেট হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নতুন চিন্তা নতুন জ্ঞান ঢুকতে চাইলেই সেখানকার শান্ত্রীরা ভারি গলায় বলছে, “ইধর কুছ করনা নহি, যাও ভাগো ইহাঁ সে! হমারা পরম্‌ ব্রহ্ম্‌ হ্যায়, অওর কুছ নহি চাহিয়ে।”

    থাকলে তাঁরা এও দেখতে পেতেন, প্রাচীন শাস্ত্রের যেখানে কণা আছে, সেখানে হয়ত স্পন্দন নেই; যেখানে শক্তির কথা রয়েছে সেখানে তরঙ্গের কথা নেই; যেখানে কোষের কথা আছে, সেখানে দেহের কথা নেই; ইত্যাদি। অর্থাৎ, আধুনিক বিজ্ঞান তো দূরের কথা, বিজ্ঞানের কোনো স্তরের বোধবুদ্ধির সাথেই এই সব শব্দের কোনো জ্ঞানতাত্ত্বিক সম্বন্ধ নেই। . . . ইত্যাদি, ইত্যাদি।

    থাকলে তাঁরা বুঝতে পারতেন, প্রশ্নটা নিছক প্লাস্টিক সার্জারি বা স্টেম সেল রিসার্চ থাকা না-থাকার কথা নয়। তর্কের খাতিরে না হয় ধরেই নিলাম, ছিল। কিন্তু মানুষের ধড়ে যখন হাতির মুণ্ড বসাতে যাবেন, তখন সংশ্লিষ্ট শিরা-ধমনীগুলি সংযুক্ত হতে পারবে কিনা, মিলবে কিনা, রক্তের গ্রুপ মিলবে কিনা, স্নায়ুসমূহের আকার প্রস্থচ্ছেদ স্নায়ুরসের রাসায়নিক উপাদান সযুজ হবে কিনা, হাড়ের কাঠামো ও উপাদানগুলি সাথে সাথে বসবে কিনা—এই সব বিষয়গুলোর মীমাংসা তো করতে হবে।

    ব্যাসদেবের বা তদানীন্তন মুনিঋষিদের এই সব সমস্যা ভাবার বা ভাবানোর কথা নয়। তাঁদের বিদ্যাবুদ্ধির সীমানায় যে এই সব পড়ত না সেকথাটা বেশ বোঝা যায়। তাঁরা বলেই খালাস। তাঁদের আমলের শ্রোতা বা পাঠকরাও শুনে বা পড়েই খুশি। হয়ত কেঁদে বা হেসেই আকুল হতেন তাঁরা সবাই। কিন্তু আমরা একালের মানুষরাও যদি না ভাবি, কী করে চলবে? একজন মানুষের রক্তই যেখানে আর একজন মানুষকে দেওয়া যায় না গ্রুপ একেবারে খাপে খাপে না মিলিয়ে, সেখানে এই সব প্রশ্ন না তোলা মানে হল নিজেদের বিদ্যাবুদ্ধিকে একেবারে বাজারের মাঝখানে উলঙ্গ করে দেওয়া। [এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য: মুখোপাধ্যায় ২০১৫]

    কিংবা ধরুন খাদ্যাখাদ্যবিচারের প্রশ্ন। বহুজন সমাজ ও মুসলমানদের তরফে গোমাংস ভোজন ও তথা কথিত উচ্চবর্ণের হিন্দুদের গোঁড়ামির দৃষ্টিতে গোহত্যা নিবারণের প্রশ্ন। মুসলমান সমাজের তরফে শুয়রের মাংস ভোজনকে হারাম ঘোষণা। এগুলো খুবই স্পর্শকাতর এক অভিপাদ্য। আগেই আমি সংশ্লিষ্ট ধর্মবিশ্বাসীদের কাছে মার্জনা চেয়ে রাখছি। আপনাদের বিশ্বাস বা আচরণকে আমি ছাড়তে বলছি না, কিন্তু আমার নিজের কাছে যুক্তি দিয়ে তা বুঝে নিতে চাইছি। আশা করি, কোনো পক্ষ থেকেই আপত্তি উঠবে না। অবশ্য উঠলেও আমি নাচার। ধর্মকে আশ্রয় করে সাম্প্রদায়িকতা এবং মৌলবাদ ও সন্ত্রাস এখন যে জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে তাতে এই সব মুদ্দাকে আর চেপে রাখা সম্ভবই নয়।

    গরুর মাংস খাওয়া হিন্দুদের পক্ষে খারাপ কেন?

    শুয়রের মাংসই বা মুসলমানদের পক্ষে হারাম কেন?

    এই সব বিধিনিষেধের পেছনে বৈজ্ঞানিক যুক্তি ছেড়ে দিন, ধর্মীয় যুক্তিই বা কতটা পাকাপোক্ত?

    উনিশ শতকের শেষ ভাগে যখন স্বামী দয়ানন্দের ইয়দ্যোগে উত্তর ভারতে গোরক্ষা আন্দোলন এক হিন্দু পুনর্জাগরণের অঙ্গ হিসাবে শুরু হয়, সেই সময়, বিদ্যাসাগর-অক্ষয় দত্তের সমসাময়িক ও সমভাবুক ভারতবিদ রাজেন্দ্রলাল মিত্র এই বিশেষ ব্যাপারটিতেই বেশ অনেকটা মাথা ঘামিয়েছিলেন। হয়ত সিপাহি বিদ্রোহ, তার পরিণতিতে ব্রিটিশদের প্রচার, ক্রমবর্ধমান হিন্দু-মুসলিম মেরুকরণ—এই সব লক্ষ করে বাস্তব তাগিদেই তিনি এই কাজে হাত দিয়েছিলেন। তাঁর Beef in Ancient India শীর্ষক একটি প্রবন্ধে তিনি দেখিয়েছিলেন, ঋগ-বেদের যুগ থেকে শুরু করে গুপ্ত যুগ হয়ে প্রাচীন ও মধ্য যুগের এক বিস্তীর্ণ সময় ধরে গরুর মাংস বৈদিক আর্য ও তাদের বংশধরদের, এমনকি ব্রাহ্মণদেরও, খুবই প্রিয় খাদ্য ছিল। [Mitra 1967] পরবর্তীকালে আরও অনেকেই এই বিষয়ে গবেষণাকে সম্প্রসারিত করেন। [Lal 1954-55; Sankalia 1967] বৌদ্ধ এবং/অথবা জৈন ধর্মের অহিংসা ও পশুপ্রীতি বিস্তারকালেই হয়ত বা তাদের একাংশের মধ্যে ধীরে ধীরে—শুধু গরুর মাংস নয়, যে কোনো পশুপাখির মাংস ভোজনের প্রতি এক ধরনের অনীহা জন্ম নেয়। প্রাণী হত্যা পাপ—এরকম কোনো মূল্যবোধ তাদের মধ্যে জেগে ওঠে। তারপর কালক্রমে এটা ব্রাহ্মণ্যবাদের পক্ষেও ধর্মানুবৃত্তির একটা অংশ হয়ে ওঠে। আজ দেখা যায়, উত্তর ভারতের ব্রাহ্মণরা শুধু গরু নয়, সাধারণভাবে আমিষ ভোজনের প্রতিই বীতস্পৃহ হয়ে পড়েছে। অন্যান্য অঞ্চলের হিন্দুদের মধ্যে শুধু গরুই খাদ্য তালিকা থেকে কাটা পড়েছে।

    কৃষির উদ্ভাবন ও বিস্তৃতির সাথে গোহত্যা নিবারণের কোনো সম্পর্ক নেই। কেন না, কৃষির কাজে ও বাহন হিসাবে গরুর ব্যবহার এমন যে একই পশুকে অন্তত বার থেকে পনের বছর পর্যন্ত কাজে লাগানো যেত। তাছাড়া, ভারতে কৃষিতে এবং গ্রামীন পরিবহনে শুধু গরু নয়, মোষেরও সমান মাত্রায় ব্যবহার প্রচলিত। সুদূর প্রাচীন কাল থেকেই। বিশেষ করে উত্তর ভারতে। সেক্ষেত্রে মোষেরও গরুর মতোই সম্মান ও খাতির পাওয়া উচিৎ ছিল। তা যখন হয়নি, এতেই বোঝা যায়, বিষয়টাকে সমাজ অর্থনীতির সঙ্গে যুক্ত করে বোঝার কোনো জায়গা নেই।

    দ্বিতীয়ত, সে ক্ষেত্রে পারস্য, ইরান, মিশর, ইত্যাদি যে সমস্ত দেশেও বহু প্রাচীন কাল থেকেই কৃষি প্রচলিত, সেখানেও গোমাংস ভোজন বন্ধ না হলেও অন্তত কমে যেত। সেটা হয়নি। সুতরাং, প্রাচীন বৈদিক-পৌরাণিক আচার বা প্রথা অনুসরণই যদি আধুনিক কালের ধর্মাচরণের দিক নির্দেশক হয়, তাহলে এই সময় হিন্দুদের আবার নতুন করে গোমাংস ভোজনের দিকে আকৃষ্ট করাই হিন্দুত্ববাদীদের একটা বড় মৌলবাদী কাজ হওয়া উচিত।

    আরও একটা ব্যাপার আছে।

    তথাকথিত উচ্চবর্ণের মুষ্টিমেয় হিন্দুদের বাদ দিলে সারা বিশ্বের এক বিরাট অংশই প্রতিদিন গোমাংস ভোজন করে থাকে। হৃদরোগ রক্তচাপ ইউরিক অ্যাসিড ইত্যাদির সমস্যা না থাকলে গরুর মাংস খাওয়ায় কোনো শারীরিক সমস্যা নেই, বরং তা শরীরের পুষ্টির পক্ষে ভালো। বাস্তুতন্ত্রের পক্ষে, দেশের তৃণভূমি রক্ষার পক্ষেও তা ভালো বই মন্দ নয়। হিন্দুত্ববাদীদের এটা না করার একমাত্র কারণ, মুসলিম সমাজের সাথে একটা স্থায়ী সাংস্কৃতিক বিরোধ বাধিয়ে রাখা।

    অন্যদিকে, শুয়রের মাংসে ইসলামের আপত্তি কিসে, আমার কাছে তাও আদৌ পরিষ্কার নয়। পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি নিয়ে একটা যুক্তি উত্থাপনের প্রচেষ্টা অনেকে করেন বটে, কিন্তু তা খুব একটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। আমরা মানুষরা যা যা খাই, তার সবই যে খুব পরিচ্ছন্নভাবে বা পরিষ্কার জায়গায় উৎপন্ন হয়, এমনটা সত্য নয়। বরং, আমার ধারণা অনুযায়ী এর পেছনে দুটোর যে কোনো একটা কারণ কাজ করে থাকতে পারে।

    এক, এটা হয়ত নিতান্তই কাকতালীয় যে যাঁদের হাত ধরে ইসলাম ধর্ম প্রতিষ্ঠিত ও প্রচারিত হয়েছিল, তাঁরা সম্ভবত যে কোনো কারণেই হোক শুয়রের মাংস পছন্দ করতেন না। পরে কালক্রমে তাঁদের অভ্যাসটাই সাধারণভাবে একটা ধর্মীয় নির্দেশ হিসাবে বিবেচিত ও দুনিয়া জোড়া চর্চিত হতে থাকে। অথবা

    দুই, যে প্রধান প্রধান জনজাতির মধ্য থেকে ইসলামের প্রথম প্রজন্মের শিষ্যবৃন্দ সংগৃহীত হয়েছিল, তাদের হয়ত পুরনো ট্রাইবাল সংস্কৃতিতে শুয়র সম্পর্কে কুলকেতু (টোটেম)-সম্বন্ধীয় কিছু বিধিনিষেধ (ট্যাবু) ছিল। ইসলাম ধর্ম পরে তাকেই ধর্মীয় আচার হিসাবে গ্রহণ করে নেয়।

    কিন্তু আপত্তির কারণ যাই হোক, এক্ষেত্রেও সেটা স্বাস্থ্যবিধি ও মানবিক খাদ্যগুণের দিক থেকে একেবারেই যুক্তিসম্মত নয়। যাঁরা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাস করেন তাঁরা তাঁদের ব্যক্তিজীবনে ধর্মীয় মত অনুযায়ী খাদ্যবিচার মেনে চলতেই পারেন, অন্যদের তাতে কিছু বলার থাকতে পারে না। কিন্তু এর সপক্ষে কোনো সাধারণ যুক্তি উত্থাপন একেবারেই সমর্থনযোগ্য নয়।

    তাত্ত্বিক দিক থেকে ধর্মীয় চিন্তার তরফেও এই খাদ্যাখাদ্য বিধিনিষেধের ব্যাপারে একটা সাধারণ স্ববিরোধিতার অস্তিত্ব তুলে ধরার প্রয়োজন আছে। সমস্ত ধর্মেই ঈশ্বর আল্লাহ গড য়িহাবে প্রমুখ সম্পর্কে ধরে নেওয়া হয়, (যার যার যে ঈশ্বর) তিনিই সকলের জন্য খাদ্য যোগান দিয়েছেন। “মুখ দিয়াছেন যিনি, আহার দিবেন তিনি।” সেই ভগবানের একটি সৃষ্টি খাদ্য হিসাবে ভালো, আর একটি খাদ্য হিসাবে হারাম—এই বিচারটাই কিন্তু ভগবানের ক্ষমতা সম্পর্কে একটা সন্দেহ জাগিয়ে দেয়।

    অন্যদিকে, আজকাল সমস্ত ধর্মে বিশ্বাসীই মনে করেন, ধর্মে ধর্মে মূলগতভাবে কোনো প্রভেদ নেই। সমস্ত ধর্মেরই মূল কথা নাকি একই। নামে আলাদা হলেও সকলে সেই একই মহাশক্তিরই উপাসনা করে। সাঙ্কেতিক ভাবে লেখা যায়: ঈশ্বর = য়িহাবে = গড = আল্লাহ = ইত্যাদি। তাই যদি হয়, সেই একই ভগবানের সৃষ্ট গরু ভগবান ভক্ত খ্রিস্টান ও মুসলমানরা খাচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে না, গড এবং আল্লাহ রাগ করছেন না; সেই তাঁরই সৃষ্টি শুয়র ভগবানে বিশ্বাসী খ্রিস্টানরা চিনারা ভারতের দলিত জাতির লোকেরা খাচ্ছে, ক্ষতি হচ্ছে না, গড এবং ভগবান আপত্তি করেননি; তাহলে, সেই একই ঈশ্বরের অন্য অন্য ইহুদি বা মুসলমান ভক্তরা সেই বিশেষ বিশেষ খাদ্যগুলিই খেলে আবার দোষ হয় কীভাবে? [এই বিষয়টির উপর আরও বিস্তারিত আলোচনার জন্য দ্রষ্টব্য: মুখোপাধ্যায় ২০১৬]

    এর অর্থ একমাত্র এটাই হতে পারে যে, সকলের ঈশ্বর এক নয়, পৃথক পৃথক। বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ঈশ্বর রাজত্ব করে যাচ্ছেন; যে যার অঞ্চলে নিজস্ব খাদ্যবিধি চালু রাখতে চান। গড যা খেতে অনুমতি দেন, আল্লাহ তা দেন না; আল্লাহর সাথে ভগবানের নির্দেশের পার্থক্য ঘটে যাচ্ছে। প্রাচীন কালের ট্রাইবাল সমাজের মতো। এটা বললে বিশ্বাসের সাথে আচরণের একটা সঙ্গতি স্থাপন হয়। আর তখন আমরা ধর্মের সঙ্গে সাম্প্রদায়িকতার এবং আরও এগিয়ে মৌলবাদী সন্ত্রাসের সম্পর্কটা ধরে ফেলতে পারি। প্রতিটি ধর্মের তরফে এ হচ্ছে তার তার বেঁচে থাকার এলাকা দখল ও অবলম্বন সন্ধান। পক্ষান্তরে, একজন ধার্মিকের তরফে এ হচ্ছে আধুনিক সমাজ মননের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারার অক্ষমতার প্রকাশ।
    //চলবে//
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৭ মে ২০১৭ | ১৯১৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সাকিব | 236712.158.786712.5 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৯ ০৮:০৮59819
  • আপনার পুরো পোস্টই গবেষণামূলক লাগল।শুধু শেষ অংশ ছাড়া।
    শুয়োরের মাংসে মুসলমানদের আপত্তি কীসে---
    আল কুরআন এ এ বিষয়ে বলা হয়েচে।মুসলমানরা শুয়োর খায় না,এটা কোনো প্রচলিত রীতি বা অনেকের মত নয়।এটা আল কুরআনে আছে,যে মুসলমানদের জন্য শুয়োর নিষিদ্ধ, তাই মুসলমানরা শুয়োর খায় না।
    তবে ইসলামে যেসব হারাম বলা হয়েচে তার কারণ আল্লাহ কুরআনে বলে দিয়েছেন--তার সংক্ষেপ হলো হারাম জিনিসে কিছু উপকারিতা থাকলেও এতে উপকারের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণ অনেক বেশি।
    আর এখানে পরিচ্ছন্নতাই মূল বিষয় না। তাহলে ত আরও অনেক কিছুকেই হারাম বলা হতো।যেমনঃ অনেক হাস -মুরগী ও অন্যান্য পাখি গু গোবর, মল-মুত্র থেকে পোকা-মাকড় খায়।সেগুলোকে কিন্ত হারাম বলা হয় নি।হারাম খাদ্যের সংখ্যা খুব কম।যেমন হিংস্র পশু,শুয়োর।

    এটা কোন ট্রাইবাল না যে কারনে শুয়োর হারাম করা হয়েচে।পরিষ্কার-পরিচ্ছনতা ছাড়াও এর আরও অনেক খারাপ দিক আছে যেগুলো আপনি আলোচনায় আনেন নি।এর স্বভাব নিকৃষ্ট।ইন্টারনেটে শুয়োরের ব্যপারে আরও পড়ে দেখলে বুঝবেন।তবে এটাও সাধারণ যুক্তি।তাই আপনার কাছে খাটবে না হয়ত।অবশ্য আমারও মনে হয় এটা সাধারণ যুক্তি।
    তাহলে বাকি থাকল শুয়োর স্বাস্থ্যের জন্য কতটা উপকারী???
    আমি আপনাকে অতসত রেফারেন্স দিতে চাই না।তবে আপনি বিচার করে দেখবেন যে---
    ১)শুয়োরের গোশত শরীরের জন্য কতটা উপকারী???
    ২)এটা শরীরের জন্য কতটা অপকারী???
    ৩) এর উপকারীতা বেশি না অপকারিতা বেশি???

    আর কুরআনে হারাম বিষয় সম্পর্কে স্পষ্টই বলা হয়েচে যে এতে কিছু উপকারিতা থাকলেও অপকারিতা অনেক বেশি।

    তবে ইসলাম ধর্মে ব্যতিক্রম ক্ষেত্রে শুয়োর খাওয়ার অনুমতি আছে।এর ব্যবহার করারও অনুমতি আছে।তবে সেটা ইমারজেন্সি//এক্সেপশনাল ক্ষে। যেমন আপনি এমন অবস্থায় আছেন যে শুয়োর না খেলে ///এর খাদ্যগত ব্যবহার না করলে বাচবেন না।সেক্ষেত্রে ইসলাম আপনাকে অনুমতি দেয়।তবে এক্ষেত্রে সীমালঙ্ঘন করা যাবে না।ইমারজেন্সি ক্ষেত্রেই এটা প্রযোজ্য।
    আর আমরা মুসলমানেরা শুয়োর খাই না বলেই অন্য ধর্মের মানুষকে হত্যা করতে হবে এমন ধারণা পোষণ করি না।

    আশা করি এটা আপনার ইসলামে শুয়োর সম্পর্কে ধারণা ক্লিয়ার করবে।

    সকলের ঈশ্বর এক নয় পৃথক পৃথক-----
    এটা আপনার সবচেয়ে ভুল ধারণা।আপনি কোনো ধর্মগ্রন্থ নিরপেক্ষভাবে যাচাই করে দেখেন।সব জায়গাতেই বলা আচে সৃষ্টিকর্তা একজন।
    কিন্ত মানুষ তার স্বার্থলাভের জন্য ধর্মগ্রন্থগুলো বিকৃত করে মানুষের কাছে প্রকাশ করে।আর অন্ধ অনুসারীরা সেই ফাঁদেে পড়ে যায়।যেমনঃ
    ১)ইসলাম ধর্মে----একেক জন ভন্ড পীর,কাদিয়ানীরা ধর্মজ্ঞান পুজি করে মানুষের কাছে প্রকাশ করে।অথচ ইসলামের মূলনীতির সাথে এসব মতবাদের মিল নাই।
    ২) হিন্দুধর্মে----হিন্দুধর্মেও কিন্ত একেশ্বরবাদীর কথা বলা হয়েছে।কিন্ত অনেক স্বার্থান্বেষী মানুষ হিন্দুদের বেদকে বিকৃত করে মানুষের কাছে প্রকাশ করে আসচে।আর ভাইরাসের মত তাদের মতবাদগুলো হিন্দু সম্প্রদায়ে ছড়িয়ে গেছে যেমনটা হয়েচে ইসলাম ধর্মে পীরের অনুসারীর ক্ষেত্রে।

    এরকম আরও অনেক উদাহরণ আছে।

    এক্ষেত্রে ধর্মের চেয়ে মানুষের দোষ বেশি।

    ২)গড যা খেতে দেন আল্লাহ তা দেন না----আগে আপনাকে বুঝতে হবে যে খাবারের নিষেধাজ্ঞা কোনো গড থেকে আসছে না ফ্রড থেকে।আর সৃষ্টিকর্তার কথা বইয়ে না লিখে যদি ফ্রডের কথা ধর্মগ্রন্থে চালিয়ে দেয়া হয় তাহলে দোষটা কার????মানুষের না আল্লাহর?????
    আপনি যাচাই না করে দেখে কোনো কিচু খারাপ বলে দিবেন।তারপর সেটাই ছড়াবেন অন্যদের কাছে।এটা ফ্রডের কাজ।তাই প্রত্যেক ধর্মগ্রন্থ ঠান্ডাভাবে যাচাই করে দেখেন।এ ব্যপারে জ্ঞানীদের মতামত নিন।পারিপার্শ্বিকতা বিজ্ঞানের
    সাথে মিলিয়ে দেখুন যে এটা আদৌ কুসংস্কার কিনা????
    অন্য ধর্মের কথা জানিনা,কিন্ত আল কুরআনে আল্লাহ চ্যলেন্জ করেছেন যে এর মধ্যে কোনো ভুল নাই।
    আমি যাচাই করে দেখেচি।এখনও কোনো ভুল পাইনি ও পাবও না।
    আল্লাহ আমাদের প্রকৃত মুমিন হবার তওফীক দান করুক।আমীন।
    এখনো কুরআনে কোনো ভুল সুপ্রতিষ্ঠিতভাবে প্রমাণিত হয়নি।হবেও না।
    আমার মনে হয় আপনি জাস্ট নিজের ধারণা অনুসরণ করছেন।সেটা শেষ লাইন দেখে মনে হলো।আধুনিকতা হোক আর না হোক আমি যেটুকু দেখেচি তা হলো আধুনিকতা ইসলাম বিরোধী হলে তাতে কোনো ভাল ফলাফল পাওয়া যায় না।এটাই বাস্তব।আর আপনার কাচে কোনটা ভাল-খারাপ জানিনা,তবে ইসলামে সব ভালো খারাপের নির্দেশ ও করণীয় আচে।আমার কাজ হলো সেটা খুজে সেই বিধানের সাথে কাজগুলো মিলিয়ে নেয়া।তাহলেই ঝামেলা ক্লিয়ার ইনশাল্লা। কারণ আমার কাছে কোনো কিছু ভাল হবার মানে এই না যে সেটা আসলেই ভাল।

    আল্লাহ আমাদের সবাইকে হেদায়েত দান করুন।আমীন।
  • Amit | 236712.158.23.215 (*) | ১৩ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৫৫59822
  • ব্যাস। একদিকে আঙ্গুল দেখাতে না দেখাতে শুরু হয়ে গেলো আর এক দিকের আবালের প্রোপাগান্ডা।
  • sei | 237812.69.563412.99 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৯ ০৬:১৩59823
  • ইনি ছদ্মনামে জোকার (জাকির) নালায়েক (নায়েক) বলে বোধ হচ্ছে।
  • a | 236712.158.8912.153 (*) | ১৪ আগস্ট ২০১৯ ০৯:৪৭59824
  • বালের লেখা ভার্সেস আবালের প্রোপাগান্ডা। নাজুক নাজুক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। মন শক্ত করে প্রতিক্রিয়া দিন