এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • সোশাল সাইটে প্রোপাগান্ডা

    Manash Nath লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০১ এপ্রিল ২০১৭ | ১৪৩৬ বার পঠিত
  • স্বাধীন ভাবে নিজ বিদ্যাবুদ্ধিতে ভাবনাচিন্তা লেখালেখি করতে চাইলে এই ফেসবুক হোয়াটস এ্যাপ এর দুনিয়ায় আপনার খবর আছে মশাই! সোশাল মিডিয়ার আদিলগ্নে ছিল বিভিন্ন চ্যাটগ্রুপ। ভারতে তখন ইন্টারনেটের হামাগুড়ি দশা। সেই আমলেও কোন বামফ্রন্ট বা বিজেপি বা কংগ্রেস বা তৃণমূল সমর্থকরা নিজেদের মধ্যে তর্ক আড্ডা মারতেন। মানে যেমন আমরা চায়ের দোকানে মেরে থাকি আর কি। তারপর অর্কুট এলো। সেখানেও বিভিন্ন গ্রুপ তৈরি হলো। কোন গ্রুপে কোন দলের সমর্থকরা দলে ভারি সে পরিষ্কার বোঝাই যেতো। আর ফেসবুকে তো এখন রাজনৈতিক ক্যাম্পেন খোলাখুলিই হয়। সে হোক কোন অসুবিধা নেই ; ফিল্ম, টেলিভিশন, খবরের কাগজের মত ইন্টারনেট আর সোশাল মিডিয়াও প্রচারের কাজে ব্যাবহার হবে এতে অবাক হবার কিছু নেই। কিন্তু যে জন্য এই লেখাটা লিখতে চাইছি তার কারণ অন্য।

    আপনি নিশ্চয় খেয়াল করেছেন ফেসবুকে আপনার টাইমলাইনে বা বিভিন্ন গ্রুপে, ম্যাসেঞ্জার, হোয়াটস এ্যাপের গ্রুপগুলোতে কিছু কমন লেখা,ছবি, মিম, পোস্টার ঘুরে বেড়ায়। সবাই এ ওকে শেয়ার করে... আপনিও হয়ত করেছেন। তাতে ফেসবুকের বিভিন্ন লেখা ছাড়াও, জোকস, পাঁচ মাথা সাপ, প্লাস্টিকের ডিম,কথাঞ্জলির কবিতা, মা তারার অলৌকিক কাহিনী, চুটকি, ফিল্মস্টার বা পর্ণস্টারদের ভিডিও কি না নেই। এসবের মাঝেমাঝে বেশ কিছু খবর ঘুরতে দেখবেন যে বাংলাদেশে হিন্দু মেয়ে রেপ বা হিন্দু বাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছে বা পশ্চিমবঙ্গের কোন প্রত্যন্ত অঞ্চলে দাঙ্গার খবর! এছাড়াও সুচতুর ভাবে এমন সব খবর যাতে মনেই হয় সব নষ্টের গোড়া এই মুসলিমগুলো! এই সমস্ত খবর কিন্তু কোন জাতীয়, স্থানীয় বা আঞ্চলিক খবরের কাগজ বা চ্যানেলে কিন্তু পাবেন না.. ভারতীয় আইনে জাতি বা ধর্ম বিদ্বেষ ছড়ানো দণ্ডনীয় অপরাধ। দাঙ্গার খবর ও সঙ্গত কারণেই সেন্সার করা হয়। আচ্ছা এই সব খবর কারা ছড়ায়?এদের সোর্স কি? তাতে সারবস্তু কতটা আছে? ক্রসচেক ছাড়া এত গুরুত্বপূর্ণ আর বিপদজনক খবর মানুষ ছড়ায় কি ভাবে!! লেখাগুলোতে স্থানীয় টান এবং যথাযথ বানান ভুল অব্ধি রক্ষিত হয়!
    রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা তো চেনাই যায়... সে বিজেপি থেকে সিপিএম, তৃণমূল, কংগ্রেস, আপ সবাই করে। দলীয় নেতা নেত্রীর মাহাত্ম্য বা গরু বাতাসে অক্সিজেন ছাড়েগুলো তাও বোঝা যায়!! কিন্তু এগুলো কারা ছড়ায়?

    আসুন আপনাদের বরং এই সময়ের ভারতীয় রাজনীতির এক ইন্টারেস্টিং চরিত্রের সাথে আলাপ করাই। যারা খোঁজখবর রাখেন তারা অবশ্য জানেনই... এনাকে নিয়ে ম্যাগাজিনের কভার স্টোরিও হয়ে গেছে। প্রশান্ত কিশোর। বছর চল্লিশের এই তরুণ ইউনাইটেড নেশনে আট বছর চাকরি করে খবরে এলেন যখন ২০১২ র ইলেকশানে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র দামোদর মোদির নির্বাচনী সেনাপতি এবং স্ট্রেটেজিস্ট হিসেবে অবতীর্ণ হলেন। গুজরাট দাঙ্গার কলঙ্ক লাগা মোদিকে বিধানসভা নির্বাচনে বিকাশ পুরুষ হিসেবে তুলে ধরে উগ্রহিন্দুত্বর ধাব্বা খুব সফল ভাবেই মুছে ফেলতে সমর্থ হয়েছিলেন তিনি।

    প্রশান্তকিশোরই প্রথম সোশাল মিডিয়াকে গুরুত্বের সাথে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং স্পেশাল স্ট্যাটেজি তৈরির দিকে জোর দেন। সময়টা ২০১২ সাল। তখনো স্মার্টফোন এত হাতে হাতে ছড়ায়নি। ফেসবুক সবে গুটিগুটি পায়ে এগোচ্ছে। তাহলে কি ছিল বা আছে এই সোশাল মিডিয়ায়? বন্ধুরা মনে করিয়ে দি ওই ২০১২ তেই দিল্লির বুকে ঘটে যায় ভয়ংকর নির্ভয়া কান্ড। ছাত্র ছাত্রী ও সাধারণ মানুষের বিক্ষোভ আর প্রতিবাদ রাষ্ট্রের ভিত নাড়িয়ে দেয়। আন্না হাজারে এবং অরবিন্দ কেজরিওয়ালের মত ইলেকশন মেশিনারি ছাড়া মানুষ সংবাদের শিরোনামে উঠে আসেন। এদের সোশাল মিডিয়ারই হিরো বলা যেতে পারে। অসংগঠিত শহুরে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত তার রাগ ঘৃণা আনন্দ উগরে দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এই সোশাল মিডিয়াগুলোকে ব্যাবহার করতে থাকে।
    ২০১৪ র লোকসভা নির্বাচনে আদবানী এবং জাতীয় স্তরের নেতাদের সরিয়ে মোদি যখন বিজেপির প্রধানমন্ত্রীর দাবিদার হিসেবে ভোটে অবতীর্ণ হন তখন তাঁর নির্বাচনী স্ট্রেটেজিস্ট হিসেবে কিন্তু সেই প্রশান্ত কিশোর। সেই বিখ্যাত চায়ে পে চর্চা আর উন্নয়ন উন্নয়ন উন্নয়ন। নো হিন্দুত্ব। গোটা ইলেকশন ক্যাম্প্যানিং এ একবারো রাম মন্দির বা হিন্দুত্ববাদের কথা বলেননি মোদি। আর সোশাল মিডিয়াতে ভেসে গেল শাইনিং ইন্ডিয়ার গল্পে। একদিকে ছলে বলে কৌশলে প্রমাণ করার চেষ্টা স্বাধীনতার পর থেকে সেকুলারিজম এর নামে মুশলিম তোষণ হয়েছে তাই জাগো হিন্দু উল্টোদিকে খালি উন্নয়ন আর শাইনিং ইন্ডিয়ার গল্প। মানে তলায় আঁচ উপরে পাখার হাওয়া... রাবড়ি স্টাইল বলা যায় আর কি!

    প্রশান্ত কিশোরের গল্প না হয় পরে আর একদিন হবে, বিহারে নীতিশ কুমারের জয়ের পেছনেও তিনি ছিলেন। পরে রাহুল গান্ধীর সাথেও কাজ করেছেন। কিন্তু আমি বলতে চাইছি এই সোশাল মিডিয়া যে লং টার্মে প্রোপাগান্ডা চালানোর জন্য একটা বড় হাতিয়ার এটা প্রশান্তকিশোর বহু আগেই বুঝেছিলেন। এবারের উত্তরপ্রদেশ ইলেকশানেই বিজেপি ৫০৩১ জনের সোশাল মিডিয়া টিম তৈরি করে! ১০৩৪৪টি হোয়াটস এ্যাপ গ্রুপ বানান হয় নির্বাচন উপলক্ষে। কিছু প্রোফাইল আছে যারা সরাসরি রাজনৈতিক প্রচার করে, তাদের চেনা যায় কিন্তু গুজব এবং মিথ্যা কথা ছড়িয়ে দিয়ে লং টার্মে জনমন বিষিয়ে দেবার কাজটা একটা বড় প্ল্যানিং এর অঙ্গ।

    লক্ষ্য করে দেখবেন যখনই আপনি এই সমস্ত জাতিগত ধর্মগত ঘৃণা এবং গুজব ছড়ানোকে ক্রস করার চেষ্টা করবেন আপনাকে দাগিয়ে দেবার চেষ্টা হবে। প্রথমে বলা হবে আপনি মাকু বা সিপিএম। তারপর যথারীতি চলে আসবে নিতাই নন্দীগ্রাম ৩৪ বছর, সাঁইবাড়ি, বিজনসেতু। মাকু না হলে তিনু বা তৃণমূল! তখন নারদা সারদা নিয়ে খিল্লি, কংগ্রেস হলে রাহুল পাপ্পু!! আর কিছু না পেলে আপনি সুশীল! মানে কেন এর বেলায় প্রতিবাদ করনি কেন ওর বেলায় মিছিলে হাঁটোনি!! মোটামুটি এই লাইনেই চলবে সাথে কিছু ফেক প্রফাইল থেকে গালাগালি আর হুমকি। এটা একেবারেই সংগঠিত একটি স্ট্যাটেজি। কোন স্বাধীন কণ্ঠস্বরই এই সম্মিলিত আক্রমনের সামনে যেন দাঁড়াতে না পারে! কিছুদিন আগেই বেকার হোস্টেলে বঙ্গবন্ধুর মূর্তি সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে একটা গুজব খুব সংগঠিত ভাবে ছড়িয়ে দিয়ে একই ভাবে ধর্মীও উন্মাদনা আর ঘৃণা ছড়ান হয়েছিল। অনেকেই সেই ফাঁদে পা দিয়েছিলেন!

    এমন চেষ্টা আগামী দিনে আরো হবে। জাতীগত এবং ধর্মগত সংহতি নষ্ট করে দিতে পারলে মানুষকে তার জাতি বা ধর্ম পরিচয়ে ভোট করানোর দিকে আরো একপা এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায়। মুখে উন্নয়নের বাণী তলায় তলায় ভোট ভাগের স্ট্যাটেজি। যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা। একটু তলিয়ে ভাবুন, এত সহজে আপনার মাথাটা চিবোতে দেবেন না।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০১ এপ্রিল ২০১৭ | ১৪৩৬ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    মার - Manash Nath
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • pi | 57.29.228.250 (*) | ০৩ এপ্রিল ২০১৭ ০৬:৩৪59511
  • একদমই।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ক্যাবাত বা দুচ্ছাই প্রতিক্রিয়া দিন