এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অতিনাটকীয়

    একক লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৩ জুলাই ২০১৬ | ৭১৯ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অন্ধকারে দাঁড় করানো ভ্যাকুয়াম ক্লীনার । ধাক্কা লাগতেই ভোঁতা শব্দ করে উল্টে যায় । অন্ধকারেই হাতড়ে সোজা করে রাখে অসীম । বাঁদিকে টেবিল তারমানে । জল খায় । আরও জল । রান্নাঘরের অন্ধকারের দিকে হাঁটতে থাকে । বাসন পড়ার শব্দ । আদি জেগে ওঠে এবার । ফ্যাকাসে ডিম লাইট জ্বলে ওঠে । জল ভরে ঘরে ঢোকে অসীম ।

    কীসের আওয়াজ ?

    অসীম উত্তর দেয় না । চোখ বন্ধ করেই জল ঢালে গলায় । বিছানায় এসে শুয়ে পড়ে । অদিতি জলের বোতল নিয়ে বাকি জল অসীমের গায়ে মাথায় ঢেলে দেয় । বিছানা ভিজে যায় । নিজে উঠে গিয়ে সোফা তে শুয়ে পড়ে । ঘুমিয়ে যায় ।

    ব্যালকনির দরজা খোলা । মার্চের শুরুতেও বেশ ঠান্ডা বাতাস দেয় এখানে । এই এগারো তলার ফ্ল্যাটে । ভিজে বেডকভার জড়ানো অসীম একটু কুইকুই করে কুকুরের মত । ঘুমিয়ে যায় । কেঁপে ওঠে ।

    আইসিইউ থেকে জেনেরাল বেডে যাওয়ার প্যাসেজে অদিতি দাঁড়িয়ে ছিল । ডক্টর আচারিয়া পয়েন্ট ধরে বলছিলেন ইনফ্লুয়েঞ্জা কন্ট্রোলে এলেও অসীমের কী কী যত্ন নেওয়া দরকার । অদিতি পকেট থেকে স্মার্ট ফোন বের করে রেকর্ডার অন করে । আচারিয়া ভুরু কোঁচকান । তারপর ফোনটা কেড়ে নিয়ে ছুঁড়ে দেন লিফট এর দরজার দিকে । হনহন করে হেঁটে পাশের ওয়ার্ডে চলে যান ।
    অদিতি এইচার কে কমপ্লেইন করে । দেড় ঘন্টা বাদে হেলতে দুলতে কাপাশতলা থানা থেকে দুজন অফিসার আসে । ফোনের মেমরি থেকে কিছু রেকর্ড শোনার পর জিজ্ঞাসাবাদের জন্যে ডক্টর আচারিয়াকে তুলে নিয়ে পুলিশ চলে যায়। হাসপাতাল কতৃপক্ষ চাপ দেয় যে অসীমকে তক্ষুনি হাসপাতাল থেকে ছাড়িয়ে নিতে হবে সব টাকাপয়সা ক্লিয়ার করে। অর্ধেক পেমেন্ট ক্যাশে করার পর বাকিটা কার্ডে করতে গেলে দেখা যায় মেশিন কাজ করছেনা । অসীম একটা চেয়ারে বসে ঢুলছিলো । কাউন্টারের মেয়েটি অদিতিকে বলে : আপনার হাসব্যানকে রেকে জান জান টাকা নিআসুন । অদিতি অসীমের দিকে তাকায় । তার মাথা ঝুঁকে পেছন দিকে । হুইল চেয়ারে বসা । পাশের থেকে মেট্রন একটু ধাক্কা দেয় অসীমকে : শুনছেন ? অসীম জড়িয়ে জড়িয়ে কিছু বলে । অদিতি বুঝতে পারে । এক ধাক্কা দেয় চেয়ারে । হাসপাতালের লবি ছেড়ে বেড়িয়ে এটিএম খুঁজতে থাকে । অসীমের চেয়ার টা গড়াতে গড়াতে গিয়ে পেছনের কাঁচের দেয়ালে ঠোক্কর খায় । ভাঙ্গে না । একজন নার্স ধরে ফেলে । অসীমকে দুটো ঝাঁকুনি দিয়ে বলে : সোজাহয়েবসুন জ্বর্তআরনেই ! অসীম চোখ বুজে থাকে । সোজা হয়ে বসে ।

    ক্যাশ মিটিয়ে রসিদ নিয়ে অদিতি হাসপাতালের বাইরে এসে দাঁড়ায় । ট্যাক্সি ডেকে এনেছিল টাকা তোলার সময় । অসীম আধ বোজা চোখে হাতড়ে হাতড়ে ট্যাক্সিতে ওঠে । ড্রাইভার ভদ্রলোক সাহায্য করতে যান । অদিতি চোখের ইশারায় বারণ করে । অসীমের মাথা ঠুকে যায় । ড্রাইভার ধরে নেয় । বসিয়ে দিয়ে অনুযোগের চোখে অদিতির দিকে তাকায় , অস্ফুটে বলে : কেয়া মেডাম ! অদিতি অসীমকে হিঁচরে টেনে ট্যাক্সি থেকে নাবিয়ে ল্যাম্পপোস্টের ধারে দাঁড় করিয়ে দেয় । ড্রাইভার বলে : চল ফোট । ড্রাইভার খিস্তি করে । অদিতি রাস্তা থেকে ভাঙ্গা খোয়া তুলে গাড়ির কাঁচে ছুঁড়ে মারে । চৌচির হয়ে ফেটে যায় ইন্ডিকার সামনের কাঁচ । ড্রাইভার তেড়ে এসে অদিতির চুলের মুঠি ধরে । প্রথমে থাপ্পড় মারে | তারপর টেনে নিয়ে গিয়ে ট্যাক্সির বনেটে মাথা ঠুকতে থাকে। তিনবার পাঁচবার । চারপাশে আরও চারজন জমে যায় । তিনজন ফোন বের করে ভিডিও তুলতে থাকে। একজন পকেটে হাত দিয়ে এদিক ওদিক দেখে হাঁটা দেয় । অসীম এর মধ্যে ল্যাম্পপোস্ট ছেড়ে রাস্তায় বসে পড়ে । আগের মতই ঢুলতে থাকে । অদিতি ওদিকে ড্রাইভারের হাতে ভাঙ্গা কাঁচ ফুটিয়ে দেয় । রক্ত গড়াতে থাকে সাদা ইন্ডিকার গা বেয়ে ।

    কাপাশতলা সেন্ট ক্যাথিটার নার্সিংহোমে প্রাথমিক চিকিত্সার পর অদিতি কে ছেড়ে দেওয়া হয়। পুলিশ অসীমকেও কুড়িয়ে এনেছিল । কারন যে অফিসার হাসপাতালে গেছিলেন তিনিই দেখে চিনতে পারেন । এএসাই ফুল্লকুসুম মল্লিক অসীমকে নাম ঠিকানা জিজ্ঞেস করেন । অসীম উত্তর দেয় না । ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন ড্রাগ নেওয়ার কোনো চিহ্ন নেই । অদিতি কে জিজ্ঞেস করাতে অদিতি বলে , মাথাটা ঠুকে দিন দেয়ালে ঠিক কথা বলবে ।
    এএসআই ফুল্লকুসুম মল্লিক মাধ্যমিকে জেলায় থার্ড । কাপাশতলায় নতুন । ঝুঁকে পড়ে অসীমের চিবুক টেনে তুলে কনসার্ন -গাম্ভীর্য -মেজাজ সবকিছু ধুনে একবার হাঁক দেন : অ অসীম্বাবু , আপনার শরীর খারাপ করছে ? অসীম নিরুত্তর । অদিতি বলে , শরীর কিচ্ছু না , দেখছে ।

    অসীম্বাবুউউ , কী দেখছেন ?

    নিরুত্তর বা বিড়বিড় করে কিছু, যা শোনা যায়না বলে বা তাই, বোঝা যায়না ।

    বারদুএক একই শব্দ উচ্চারন করে অসীম আবার ঢুলতে থাকে । এএসআই ফুল্লকুসুম মল্লিক একটা ট্যাক্সি ডেকে দেন ।ড্রাইভারকে ঠিকানা বুঝিয়ে দেন । অদিতি মেয়েটিকে, চুল এলোমেলো ,তীক্ষ্ণ চেহারায় তাঁর বেশ ভাল্লাগে । ওঠার সময় হাত ধরে তুলে দেন ট্যাক্সিতে । তারপর নিজেও চড়ে বসেন । অসীম সামনের সীটে থাকে । ড্রাইভার জিজ্ঞেস করে আগের বলা ঠিকানাতেই যাবে কী ? অবস্যই না । কাপাশতলা -কাঁকড়াহাটি বাইপাস ধরে নেয় ট্যাক্সি । দুপাশ দিয়ে গাড়ি ছুটে চলে । ওপরে বিন্দু বিন্দু আলো । রাতের এয়ারবাস নাবছে । অদিতি কিছুক্ষণ টানাটানি সহ্য করে নিজেই স্ট্র্যাপ আলগা করে দেয় । এএসআই ফুল্লকুসুম মল্লিক একবার সামনে তাকান । একবার অদিতির মাংসের দিকে। হাতাতে হাতাতে জিজ্ঞেস, ওনার ....কী মানে মেন্টাল ....

    অদিতি দুল পরা কানের জট থেকে চুল সরায় । পেছনে এলিয়ে বসে বলে , না সেরম কিছুনা । ঘুমোচ্ছে । দেখছে ।

    মানে ?

    স্বপ্ন । স্বপ্ন দেখে রাদ্দিন । চোখ বন্ধ করে । রোগ ফোগ কিছুনা । দাঁতে দাঁত কিষটে বলে অদিতি ।

    কাপাশতলা -কাঁকড়াহাটি বাইপাস দিয়ে ট্যাক্সি ছুটতে থাকে । অসীম ঢুলছে । সামনে আলোর রেখা । বিন্দু । রাতের এয়ারবাস নাবছে ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৩ জুলাই ২০১৬ | ৭১৯ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    নাইটো - একক
    আরও পড়ুন
    সিপাহী - একক
    আরও পড়ুন
    প্রহাস - একক
    আরও পড়ুন
    স্বাদ - একক
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • একক | 53.224.129.48 (*) | ১৩ জুলাই ২০১৬ ০১:০৭58280
  • #
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যুদ্ধ চেয়ে মতামত দিন