এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিতে গরু: দেশ কোনদিকে? # পর্ব - ২

    Ashoke Mukhopadhyay লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ৩০ আগস্ট ২০১৬ | ১৭১৮ বার পঠিত
  • সংবিধান, ধর্ম নিরপেক্ষতা ও খাদ্য নির্বাচনের অধিকার

    সেকালের এলাকা ছেড়ে বেরিয়ে এসে এবার আমরা এখানে আধুনিক কালের প্রেক্ষিতে কিছু নতুন যুক্তি তর্ক হাজির করব শুভ বুদ্ধি সম্পন্ন মানুষদের ভেবে দেখবার জন্য। আমাদের প্রথম প্রশ্ন ধর্মনিরপেক্ষতা (secularism)-এর মাপকাঠিতে একজন সাধারণ নাগরিকের খাদ্য বিষয়ে সাংবিধানিক অধিকার কতখানি সুরক্ষিত সেই সম্পর্কে। ভারতের সংবিধান নাকি ভারত রাষ্ট্রকে একটা ধর্মনিরপেক্ষ ব্যবস্থা গড়ে তুলবার নির্দেশ দেয়। এই ব্যাপারে শুধু কংগ্রেস বা গান্ধীবাদীরা নন, বেশিরভাগ বামপন্থী দল এবং তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বুদ্ধিজীবীদেরও বৃহৎ অংশ মনে করেন, এই “নাকি”-বাচক সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। পাকিস্তান ইসলামিক রাষ্ট্র হলেও ভারত সত্যি সত্যিই একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র হিসাবে গড়ে উঠেছে। বিশেষত, ১৯৭৬ সালে ইন্দিরা গান্ধী জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে সংবিধানের ৪২-তম সংশোধনের মাধ্যমে এর মুখবন্ধে “ধর্মনিরপেক্ষ” ও “সমাজতান্ত্রিক” শব্দজোড়া যুক্ত করার দ্বারা এই কাজটি সুসম্পন্ন করে গেছেন!

    বেশ। তাহলে বিচার করে দেখা যাক!

    ধর্মনিরপেক্ষতা কথাটার মানে কী? এর সরল মানে হল, রাষ্ট্র কোনো ধর্মকে আশ্রয় বা প্রশ্রয় দেবে না। কোনো বিশেষ ধর্মাবলম্বী মানুষদের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখাবে না। অথবা কাউকে আলাদা করে বিরোধিতা করবে না। নাগরিকদের ব্যক্তিগত বিশ্বাসের পর্যায়ে বিশেষ বিশেষ ধর্মাচরণের অধিকার থাকবে, কিন্তু তা কখনই অন্য ধর্মাবলম্বীদের অধিকার ক্ষুণ্ণ করবে না। ভারতীয় রাষ্ট্র কি এই অর্থে ধর্মনিরপেক্ষ?
    না। ভারতে ধর্মনিরপেক্ষতার মানে দাঁড় করানো হয়েছে সমস্ত ধর্মে সমান উৎসাহ প্রদান। যা আসলে এক অর্থে বহুধার্মিক রাষ্ট্র (multi-theocratic state)-এর চরিত্র নির্দেশ করে। এতে একে তো নাস্তিক দূরের কথা, এমনকি অপ্রাতিষ্ঠানিক ধর্মবিশ্বাসীদেরও কোনো জায়গা থাকে না; অপর দিকে, নামে বহুধার্মিক হলেও বাস্তবে, প্রশাসনিক যন্ত্রে হিন্দু আধিকারিকের বিপুল সংখ্যাগরিষ্ঠতার প্রভাবে, সরকারি কাজকর্ম ও রীতিনিয়ম শেষ পর্যন্ত হিন্দু ধর্মভিত্তিক হয়ে ওঠে। যে কোনো সরকারি প্রকল্পের উদ্বোধনে গেলে দেখা যায়, সেখানে হিন্দু ধর্মীয় প্রাচীন রীতিনীতি মেনেই কাজ হয়, রাষ্ট্রপতি হিন্দু শিখ বা মুসলমান বলে এর কোনো ব্যত্যয় হয় না। পাকিস্তানের সাথে ভারতের পার্থক্যটা তখন দাঁড়ায় এই রকম: ওরা যা বেশ জোরশোর সহ করতে পারে বা করেও থাকে, আমাদের দেশে সেই কাজগুলোই একটু আড়াল আবডাল রেখে করা হয়।

    আপাতত এই গোমাংস প্রসঙ্গ ধরে একটা মাত্র উদাহরণ দিলেই ব্যাপারটা স্পষ্ট হবে।

    বিজেপি তো অনেক পরের কথা, জনসঙ্ঘও তখন ভারতের সংসদীয় রাজনৈতিক ক্ষেত্রে প্রায় অপ্রাসঙ্গিক—এই রকম অবস্থাতে অধিকাংশ রাজ্যে পঞ্চাশের দশক থেকে গোমাংস ভক্ষণ নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছিল। কাদের উদ্যোগে? কাদের শাসনকালে? সঙ্ঘ পরিবারের তখন এই দাপট ছিল না। কেন্দ্র ও সমস্ত রাজ্যে তখন কংগ্রেসেরই সরকার। তাদের তরফেই এই সব কার্যক্রম গৃহীত ও পালিত হয়েছে। তাদের দলের ব্রাহ্মণ্যবাদী উচ্চবর্ণের নেতাকর্মীদের উদ্যোগেই। এবং সেটা জওহরলাল নেহরু, বল্লভভাই প্যাটেল, গোবিন্দবল্লভ পন্থ, লালবাহাদুর শাস্ত্রী, প্রমুখ জবরদস্ত নেতাদের জীবদ্দশাতেই। যাঁরা সংবিধানকে নাকি ধর্মনিরপেক্ষ বানিয়েছেন, তাঁদের আমলে এটা সম্ভব হল কীভাবে? শ্রীমতী গান্ধী যখন শব্দটিকে দিয়ে সংবিধান অলঙ্কৃত করলেন, তখন তিনিই বা এই নিষেধাজ্ঞা তুলে দিলেন না কেন? তুলে দেওয়া তো দূরের কথা, তিনি বরং পরের খেপে ভোটে জিতে এসে ১৯৮২ সালে অতি-উদ্যোগী হয়ে নিষিদ্ধকারী রাজ্যগুলিকে গোহত্যা বন্ধে আরও তৎপর হতে (এবং অন্যান্য রাজ্য থেকে গোমাংস গোপনে আমদানির বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে) অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। প্রবীন পাঠকদের হয়ত মনে পড়ে যাবে, সেই সময় শ্রীমতী গান্ধী পাঞ্জাবের ভিন্দ্রানওয়ালাকে ব্যবহার করে পাঞ্জাবে উগ্র খালিস্তানি জঙ্গিবাদকে প্রশ্রয় দিয়ে অকালী দলের ভোট ব্যাঙ্কের দখল নিতে এবং তাকে হাতিয়ার করেই সারা দেশে প্রচ্ছন্ন হিন্দু কার্ড খেলে সদ্য গঠিত বিজেপি-র ভোট ব্যাঙ্কে কামড় বসাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলেন। ফলে ধর্মনিরপেক্ষতার প্রশ্ন কীভাবে বারবার আশু সংকীর্ণ রাজনীতির কাছে পরাস্ত হয়েছে, সেই সব প্রসঙ্গ কখনও কংগ্রেসের অন্দর মহলে উঠেছে বলে আমরা শুনিনি।

    বরং আশ্চর্যজনক ঘটনা হল, নিজে একজন জৈন সম্প্রদায়ভুক্ত কঠোর নিরামিষভোজী হওয়া সত্ত্বেও এবং দীর্ঘ দিন গোরক্ষা আন্দোলনের সমর্থক হয়েও স্বাধীনতার প্রাক্কালে মোহনদাস করমচাঁদ গান্ধী কিন্তু সংবিধানে গোহত্যা নিবারণ আইন ঢোকানোর প্রস্তাবের খুব তীব্র ভাষায় বিরোধিতা করেছিলেন। তিনি হিন্দুদের ধর্ম বিশ্বাসের কারণে অহিন্দু জনসাধারণের খাদ্যাভ্যাসে হস্তক্ষেপ করার বিরোধিতা করেন। তাঁর বক্তব্য ছিল: “ভারতে তো শুধু হিন্দুরাই বাস করে না। এখানে মুসলমান, পার্শি, খ্রিস্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীরাও আছে। এই যে একদল হিন্দুর মনে হচ্ছে যে ভারতবর্ষ এখন থেকে শুধু হিন্দুদেরই দেশ এটা ভ্রান্ত ধারণা। . . . সুতরাং আমি বলব, সংবিধান রচনা পরিষদে যেন এটা নিয়ে কেউ চাপাচাপি না করেন।” [গান্ধী ১৯৬৯, ২৭৭-৮০] তিনি সেই ভাষণে কিছু চিত্তাকর্ষক বিষয়ের উত্থাপন করেছিলেন। ভারতের যে ব্যবসায়ীরা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে গরু রপ্তানি করে জুতোর কারখানায় চামড়ার যোগান দেবার উদ্দেশ্যে, তাদের অধিকাংশই তো হিন্দু এবং ধর্ম বিশ্বাসী। তারা নিশ্চয়ই জানে, সেই সব গরু এবং সেই সব জুতোর মাঝখানে একটি ক্রিয়া আছে যার নাম (সমাসবদ্ধ পদ হিসাবে) সংক্ষেপে গোহত্যা! তা, সেটি বন্ধ করা হবে তো? ভারতের গ্রামাঞ্চলে যে বলদের কাঁধে লাঙল এবং গাড়ির জোয়াল তুলে দিয়ে বছরের পর বছর মেরুদণ্ড ভেঙে দেওয়া হয়, তার নামও তিলে তিলে গোহত্যা নয় কি? এগুলো যদি বন্ধ করার উদ্যোগ নেওয়া না হয়, তাহলে রাজেন্দ্রবাবু যেন আর গোহত্যা নিবারণের প্রস্তাব নিয়ে না এগোন! [ঐ]

    এখানে উল্লেখযোগ্য, সেই সময় রাজেন্দ্রপ্রসাদ ও অন্যান্য কিছু কংগ্রেসি মাতব্বরের উদ্যোগে বেশ কিছু কংগ্রেস কর্মী সংবিধান রচনা পরিষদে এরকম একটি প্রস্তাব উত্থাপন ও খসড়া সংবিধানে সংযোজনের ব্যাপক গণপ্রচেষ্টা চালিয়েছিলেন। তাঁরা দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজার হাজার চিঠিপত্র লিখিয়ে পরিষদের দপ্তরে পাঠাতে থাকেন দাবিটিকে একটি জনচরিত্র দানের লক্ষ্য নিয়ে। গান্ধীর প্রবল বিরোধিতার জন্যই তাঁর জীবদ্দশায় তাঁরা শেষ অবধি আর কুলিয়ে উঠতে পারেননি। (সঙ্ঘ পরিবারের নাথুরাম গড্‌সে কি আর সাধে গুলি চালিয়ে গান্ধীর মুখ চিরতরে বন্ধ রাখার ব্যবস্থা করতে চেয়েছিল!!

    মনে রাখতে হবে, ১৯৪০-পূর্ববর্তী গান্ধী আর ১৯৪০-এর দশকের গান্ধী কিন্তু চিন্তা চেতনায় মানসিকতায় এক নন। তিনি তখন অনেকখানি পালটে গিয়েছিলেন। বিশেষ করে, আজাদ হিন্দ বাহিনীর বিবিধ ঘটনাবলি জানার ফলে এবং সেখানে সুভাষ বসুর সাম্প্রদায়িক প্রশ্নকে চমৎকারভাবে সমাধানের পদ্ধতি সম্পর্কে অবহিত হয়ে, তিনি তাঁর পুরনো রক্ষণশীল সামাজিক-সাংস্কৃতিক অবস্থান প্রায় আমূল পরিবর্তন করে ফেলেন। এক সময় তিনি ছিলেন গোরক্ষা আন্দোলনের এক অন্যতম মুখ্য প্রবক্তা। ভারতীয় সংবিধানে যারা গরু হত্যা বিরোধী ধারা সংযোজন করতে উদ্যোগী হয়েছিলেন, তাঁরা সকলেই গান্ধীর সেই পুরনো কথাগুলিকেই উদ্ধৃতি হিসাবে ব্যবহার করে গিয়েছেন। এমনকি, ২০০১ সালে বাজপেয়ীর সরকারের দ্বারা গঠিত গবাদি পশু সংক্রান্ত জাতীয় কমিশনও খুব লক্ষণীয়ভাবে গান্ধীর শেষ পর্যায়ের, বিশেষ করে সংবিধান রচনা কালীন, বক্তব্যগুলিকে উপেক্ষা করে, তাঁর আগেকার রক্ষণশীল মতামতগুলিকেই তুলে ধরেছে।

    মৌলবাদ বিরোধী মুখ বন্ধের নৃশংস প্রয়াসের প্রথম সফল পরীক্ষাটির সম্পাদন কর্তা কিন্তু পাকিস্তানও নয়, বাংলাদেশ নয়—সেও এই “মেরা মহান” ভারতেরই অবদান!!) কিন্তু প্রচেষ্টা চালু ছিল। আম্বেদকরের সঙ্গে এই প্রশ্নে তাঁদের ব্যাপক বিতর্ক হয়। সংখ্যাধিক্যের নামে গা-জোয়ারি ব্যাপার একটা ছিলই। তাই ১৯৫০ সালে প্রকাশিত সংবিধানের চূড়ান্ত খসড়ায় দেখা গেল, নীতি নির্দেশক ধারাগুলিতে এরকম একটি (৪৮ নং) নির্দেশ তাঁরা ঢুকিয়ে দিতে সক্ষম হয়েছেন। হয়ত মাননীয়(!) গড্‌সের সম্মান(!!) রক্ষার খাতিরেই!!! আর তার জোরেই তাঁরা পরবর্তীকালে দেশের অধিকাংশ রাজ্যে এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে ফেলেছিলেন।

    গণতন্ত্র এবং ধর্মনিরপেক্ষতার প্রতি কংগ্রেসীদের আস্থার সত্যিই জবাব নেই!

    এ তো গেল কংগ্রেসিদের কথা। শ্রেণি চরিত্র অনুযায়ী স্বাভাবিক আচরণ।

    কিন্তু তার বিপরীতে বিরোধীদের অবস্থান কী ছিল এই প্রশ্নে? বামপন্থীদের তরফেও সংসদে বা কোনো বিধান সভায় সেই ভ্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবি করা হয়েছে বলে এই লেখকের জানা নেই। এমনকি, কোনো দলের আভ্যন্তরীন রাজনৈতিক ক্লাশেও কোনো মার্ক্সবাদী নেতা এই সব অপ্রিয় ও অনাকর্ষণীয় অভিপাদ্য উত্থাপন ও আলোচনা করেছেন বলে মনে হয় না। সজ্ঞানে বা না বুঝে বিষয়টিকে কার্যত আগাগোড়া অগ্রাহ্য করেই যাওয়া হয়েছে। এখন যদি বিজেপি সেই কার্যক্রমকে আরও সম্প্রসারিত করতে চায় এবং আরও কিছু রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে চায় (করে ফেলছেও), তার বিরুদ্ধে এদের কী-ই বা বলার আছে? ওরা অন্তত নতুন কিছু করছে না; তোমাদের দেখানো এবং মেনে নেওয়া রাস্তায় আরও দু-চার কদম বেশি এগোতে চাইছে। দুই বিজেপি শাসিত রাজ্য মহারাষ্ট্র এবং হরিয়ানায় সম্প্রতি গোহত্যা এবং গোমাংস ভোজন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবারের নানা মুখিয়াদের তরফে শ্লোগান উঠেছে, “গরুকে জাতীয় পশু বলে ঘোষণা করা হোক।”

    এবার প্রায়োগিক দিক থেকে বিষয়টা বিচার করে দেখা যাক।

    সংবিধানের প্রতি আনুগত্য নিয়ে আমাদের অনেকের মধ্যেই আবেগের অন্ত নেই। বিজেপি বা সঙ্ঘ পরিবার শুধু বিরোধী অবস্থানে নয়, সরকারি ক্ষমতায় আসীন হয়েও সংবিধান মেনে চলতে চায় না—এরকম অভিযোগ আমরা হামেশাই শুনে থাকি। কথাটা ভুল বা মিথ্যা নয়। সত্যিই ওদের মধ্যে বর্তমান সংবিধান মেনে চলার আগ্রহ বা প্রবণতা যথেষ্ট কম—এ নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই। ওরা নিজেরাও এই ব্যাপারে খুব একটা ধোঁয়াশা রাখেনি। সংবিধানের অনেক কিছুই যে ওরা মানতে পারে না বা মানতে চায় না—এই সত্য ওরা কখনই খুব একটা গোপন করে চলে না। কিন্তু কংগ্রেসের নেতারা তো সংবিধান বলতে প্রায় অজ্ঞান। বামপন্থীরাও অনেকটা সেই রকমই করে থাকেন। খুব গদগদ ভাব দেখান।

    সেই সংবিধানে সংখ্যালঘুদের নানা রকম অধিকার সংরক্ষণের জন্য একটা বিশেষ ধারা আছে। ৩০গ ধারা। যাতে সংখ্যাগুরুর গরিষ্ঠতার ভারে বা চাপে তাদের ধর্ম বা ধর্মীয় সংস্কৃতি বা সামাজিক জীবনের সামনে অস্তিত্বের কোনো সঙ্কট আসতে না পারে। তারই সুযোগে মুসলিম পারিবারিক আইন সাংবিধানিকভাবে গ্রাহ্য হয়ে আছে। ধর্ম ও জীবন ধারণের অধিকারের মধ্যে ভোজন ও ভোজ্য নির্ধারণের অধিকারও নিশ্চয়ই নিহিত থাকে। আবার তাতে ৪৮ নং ধারাও সংযোজিত হয়ে রয়েছে। তাহলে কোনো রাজ্য সরকার যখন গোহত্যা ও গোমাংস ভোজনের উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করে, সে তখন সংবিধানের এই ধারার জোরেই ৩০গ ধারাটিকেও অগ্রাহ্য করেই এটা করতে পারছে। সংবিধান বিশেষজ্ঞ এবং ভক্তিবাদীরা এই ব্যাপারে কী বলছেন? এই যে এত বছর ধরে কয়েকটি রাজ্যের সাংবিধানিক কর্তৃত্বকারী প্রতিষ্ঠান সুবিধামতো সংবিধানেরই একটি ধারা দেখিয়ে অন্য একটা বিশেষ ধারাকে অনায়াসে লঙ্ঘন করে চলেছে—তা নিয়ে তাদের মধ্যে কোনো রকম উত্তাপ সঞ্চারিত হয়নি বা হয় না কেন? কংগ্রেসের নেতারা কী বলেন? বামপন্থী দলগুলোই বা কী বলছেন এই সম্পর্কে? তাঁরা কি জানেন না, না বোঝেননি, নাকি, বুঝেও ভোটের খেলায় দুদিকেই একটু করে টিক দিয়ে রেখেছেন?

    সঙ্ঘ পরিবার বরং এই জায়গায় খুব সঙ্গতিপূর্ণ আচরণ করছে। তারা সংবিধান থেকে সেই বিশেষ ধারাটিই তুলে দিতে চাইছে। যেমন তারা সংবিধানের কাশ্মীর সংক্রান্ত ৩৭০ নং ধারা তুলে দিতে চায়। (যদিও তারা আবার ঠিক তার পরের ৩৭১ নং ধারা কেন তুলে দেওয়ার কথা বলে না—সেই আলোচনায় এখন ঢুকব না।) সত্যিই তো। ৩০গ ধারা না থাকলে ওই রাজ্যগুলোর বিরুদ্ধে এখানে আমাদের উত্থাপিত এই অভিযোগটি আর তোলা যেত না।

    বিচার বিভাগ এই ব্যাপারে কী করছে তাও আমাদের কাছে দেখবার বিষয়। আজকাল অনেক ব্যাপারে আদালত আগ বাড়িয়ে আইন বে-আইনের নানা সমস্যা সম্পর্কে মতামত এবং/অথবা পরামর্শ, এমনকি নির্দেশও দিয়ে দিচ্ছে। অথচ, এই যে এতগুলি রাজ্য সরকার সংবিধানের একটা মৌলিক অসঙ্গতি নিশ্চিন্তে ব্যবহার করে চলেছে, এর বিরুদ্ধে তাঁদের কোনো বক্তব্য নেই কেন—সেই প্রশ্নও আমরা তুলতে বাধ্য হচ্ছি।

    আরও আশ্চর্যজনক হচ্ছে এই ঘটনা যে ৩০গ ধারা বলে মুসলিম পারিবারিক আইনের জোরে একজন মুসলমান পুরুষের একসঙ্গে চার জন স্ত্রীকে ঘরে রাখার অধিকার সম্পর্কে তাঁদের কারোর খুব একটা কোনো আপত্তি নেই (যেটি আধুনিক জীবনধারা ও সভ্যতার সম্পূর্ণ পরিপন্থী), কিন্তু দুনিয়াভর নব্বই শতাংশ মানুষের আধুনিক খাদ্যাভ্যাস অনুসরণ করে তাদের গোমাংস ভক্ষণের অনুমোদন দিলেই নাকি দেশ রসাতলে যাবে!

    বেঁচে থাকলে দ্বিজেন্দ্রলাল রায় আজ আবারও হয়ত নতুন কোনো নাটকে সেই গ্রিক সম্রাট সিকন্দরের মুখে তাঁর সেনাপতির উদ্দেশে কিছু সংলাপ বলাতে চাইতেন!

    গরু: দেবতা ও কৃষিবন্ধু

    একথা সকলেই জানেন, গোমাংস ভোজনের বিরুদ্ধে সঙ্ঘ পরিবারের প্রধান আপত্তি দুটি: প্রথমত, গরু হচ্ছে হিন্দুদের দেবতা স্বরূপ; মাতা ভগবতী; মাতৃরূপিনী। দ্বিতীয়ত, গরু ভারতবর্ষের গ্রামীন জনজীবনে খাদ্য উৎপাদন ও কৃষি কাজের সহায়ক বলেই গোহত্যা সমাজ অর্থনীতির পক্ষে হানিকারক। সেই কারণেই শাস্ত্রকাররা(?) নাকি গরুকে দেবতা জ্ঞানে পূজা করতে নির্দেশ দিয়ে কৃষি ভিত্তিক অর্থনীতিকে রক্ষা করার সুন্দর বন্দোবস্ত করেছিলেন। এই সব যুক্তি এ দেশের হিন্দু ধর্মবিশ্বাসী সাধারণ মানুষকে বেশ খানিকটা আকৃষ্ট করে থাকে।

    এই দুটি যুক্তি শুধু যে বিজেপি বা আরএসএস দিয়ে থাকে এমন নয়। বহু শিক্ষিত বুদ্ধিজীবী, যাঁরা হয়ত হিন্দুত্ববাদীদের সমর্থক নন, বরং বামপন্থী ও প্রগতিশীল, তাঁরাও দিয়ে থাকেন। অন্যদিকে, যাঁরা এই দুই যুক্তিতে আস্থা প্রদর্শন করেন তাঁরা সকলেই যে ওদের মতো তীব্র মুস্লিম বিদ্বেষী বা সাম্প্রদায়িক মনোভাব থেকে এরকম ভেবে থাকেন, তা নয়। আসলে যে জিনিসটা এঁদের সকলের মধ্যেই সমান ভাবে কাজ করে যায় তা হচ্ছে দুই ব্যাপারেই সঠিক জ্ঞানের স্পষ্ট অভাব।

    প্রথম বিষয়টা নিয়ে আগে বলি। ধর্মীয় বিশ্বাস হিসাবে এর জোর অনেক বেশি। অথচ হিন্দু ধর্মের সাথে (অন্তত আজ যে আকারে হিন্দু ধর্মকে আমরা দেখতে পাই তার সাথে) গরুর সম্পর্ক খুব কম। এই সম্পর্কে আলোচনার ক্ষেত্রে আমাদের কাজ অনেকটাই সহজ করে দিয়ে গেছেন স্বয়ং স্বামী বিবেকানন্দ। তিনি দেখিয়েছেন: “There was a time in this very India when, without eating beef, no Brahmin could remain a Brahmin; you read in the Vedas how, when a Sannyasin, a king, or a great man came into a house, the best bullock was killed; how in time it was found that as we were an agricultural race, killing the best bulls meant annihilation of the race. Therefore the practice was stopped, and a voice was raised against the killing of cows.” যার অনুদিত ভাষ্য হল: “এই ভারতেই একটা সময় ছিল, যখন গোমাংস ভোজন না করলে কোনো ব্রাহ্মণের ব্রাহ্মণত্ব থাকত না। বেদপাঠ করলে দেখতে পাবে, কোনো বড় সন্ন্যাসী বা রাজা বা অন্য কোনো বড়লোক এলে ছাগল ও গোহত্যা করে তাঁদেরকে ভোজন করানোর প্রথা ছিল। ক্রমশ সকলে বুঝল—আমাদের জাতি প্রধানত কৃষিজীবী, সুতরাং ভালো ভালো ষাঁড়্গুলি হত্যা করলে সমগ্র জাতি বিনষ্ট হবে। এই কারণেই গোহত্যা-প্রথা রহিত করা হল—গোহত্যা মহাপাপ বলে পরিগণিত হল।” [স্বামী বিবেকানন্দ ১৯৮৯ক, ৪৮; সাধু ভাষা থেকে চলিত ভাষায় রূপান্তরিত ও আধুনিক বানান রীতি প্রযুক্ত। শেষ বাক্যটির শেষাংশ লক্ষ করুন; স্বামীজীর মূল ভাষণে না থাকলেও অনুবাদে তাঁর বক্তব্য বিকৃত করে কীভাবে “পাপ” কথাটা ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে।]

    বিবেকানন্দ অন্যত্র এও বলেছেন, “You will be astonished if I tell you that, according to the old ceremonials, he is not a good Hindu who does not eat beef. On certain occasions he must sacrifice a bull and eat it. That is disgusting now. However they may differ from each other in India, in that they are all one—they never eat beef. The ancient sacrifices and the ancient gods, they are all gone; modern India belongs to the spiritual part of the Vedas.” অনুবাদে যা দাঁড়িয়েছে এই রকম: “আপনারা শুনলে বিস্মিত হবেন যে, প্রাচীন প্রথানুসারে—যে-হিন্দু গোমাংস ভক্ষণ করে না, সে খাঁটি হিন্দুই নয়। কোনো কোনো উৎসবে তাকে গোবধ করতেই হত, গোমাংস ভক্ষণ করতেই হত। আর আজ সেই প্রথা একেবারে বীভৎস বলে গণ্য হয়ে থাকে। অন্য সব বিষয়ে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে মত পার্থক্য থাকলেও এ-বিষয়ে আজ সবাই একমতাবলম্বী। কেউ আর এখন গোমাংস ভক্ষণ করে না। প্রাচীন যুগের দেবদেবী, প্রাচীন যুগের পশুবলি সবই লুপ্ত হয়েছে, চিরদিনের মতো লুপ্ত হয়েছে। আর বর্তমান ভারতবর্ষ বেদের আধ্যাত্মিক অংশটুকু গ্রহণ করেছে।” [স্বামী বিবেকানন্দ ১৯৮৯খ, ২৯৭; আধুনিক বানান রীতি প্রযুক্ত। মাঝখানে “disgusting” শব্দটির অনুবাদ লক্ষ করুন; স্বামীজীর মূল ভাষণ থেকে অনুবাদে “বিরক্তিকর” না বলে কীভাবে গোমাংস ভোজনকে নিন্দনীয় করে তোলার উপযোগী একটা শব্দ “বীভৎস” ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। উভয় উদ্ধৃতির ক্ষেত্রেই লক্ষণীয়, স্বামীজীর ধম্মশিষ্যরা তাঁর ইতিহাসবোধকে গ্রহণ করার বদলে যতটা সম্ভব ঘেঁটে দেবার চেষ্টা করেছেন।]

    সাধারণত, ধর্মবিশ্বাসীরা ধরে নেন, প্রাচীন শাস্ত্রে যা যা নির্দেশ লেখা ছিল, মানুষের ধর্মীয় রীতিনীতি সেকালে সেইভাবেই পরিচালিত হত। বর্তমানে ধর্মের অনেক বিকৃতি সাধন ঘটেছে, কিন্তু তখনকার মানুষ ধর্মের নিয়ম কানুন ঠিকঠাক মেনে চলত। তাই যদি হয়, আর বিবেকানন্দের কথায় যদি বিশ্বাস স্থাপন করা যায়, তাহলে এটা মেনে নিতেই হবে যে সনাতন হিন্দু ধর্মে গরুর মাংস খাওয়ায় নিষেধাজ্ঞা তো নেইই, বরং এই গোমাংস খাওয়ার মধ্যেই কিছু কিছু ক্ষেত্রে ধর্ম পালনের রীতি নিহিত। বিভিন্ন ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রে যে মধুপর্ক ব্যবহারের পৌনঃপুনিক উল্লেখ পাওয়া যায়, তাতে বিবিধ প্রকারের মাংস থাকে, গোমাংসও তার এক অন্যতম উপকরণ। তাই কোনো প্রাচীন শাস্ত্রেই এর উপর কোনো নিষেধাজ্ঞা নেই। তাহলে পরবর্তীকালে সেই একই ধর্মের অনুসারীদের মধ্যে তাদেরই শাস্ত্র-বিরোধী এরকম একটা উলটো রীতি প্রচলিত হয়ে এল কোত্থেকে?

    এইখানে এসে বিবেকানন্দই আবার যে উত্তর দিয়েছেন সেটাই অনেকের কাছে খুব সন্তোষজনক মনে হয়েছে। কৃষির স্বার্থে গরুকে বাঁচানোর জন্যই নাকি এই নিয়ম এসেছিল। আর সেই সঙ্গে এও অনেকে যোগ করে দেন, বিবেকানন্দও দিয়েছিলেন, বুদ্ধ-মহাবীর প্রমুখ সেকালের নব ধর্ম প্রবর্তকরা বৈদিক পশুবলির বিরুদ্ধে প্রাণীহত্যার বিরুদ্ধে অহিংসার যে নৈতিক আবেদন প্রচার করেছিলেন, তাতে সাড়া দিয়েই নাকি ধীরে ধীরে হিন্দুসমাজে গোমাংস ভক্ষণ বন্ধ হয়ে যায়। আরও পরে এটাই শেষ পর্যন্ত তাদের ধর্মীয় রীতি হয়ে দাঁড়ায়।

    আপাত দৃষ্টিতে এরকম একটা নিবিড় ধর্মনিস্পৃহ আর্থসামাজিক থিসিস খুব সহজেই আমাদের সংস্কারমুক্ত উদার মনকে আকৃষ্ট করে। যুক্তির ফাঁক-ফোকরগুলি দৃষ্টির বাইরে থেকে যায়। তাই আমি মনে করি: এই বিষয়ে রবীন্দ্রনাথের আপত্তির কথাটাও জেনে নেওয়া খুব জরুরি। “ঘরে-বাইরে” উপন্যাসের শেষ ভাগে নিখিলেশ-এর মুখ দিয়ে তিনি এই সম্পর্কে যে বয়ানটি তুলে ধরেছিলেন, সেটি শুধু যে যুক্তি হিসাবে অকাট্য তাই নয়, এই ধরনের সামাজিক ইতিহাসের প্রসঙ্গে আমাদের কীভাবে যুক্তি তর্ক বিচার বিবেচনা করতে হবে সেই দিকে একটি অমূল্য দিক-নির্দেশও বটে। কেন না, বুদ্ধ বা মহাবীর শুধু তো গরু নয়, সমস্ত পশু বলির বিরুদ্ধেই মানুষকে উদ্বুদ্ধ করতে চেয়েছিলেন। হিন্দুরা বেছে বেছে তার থেকে শুধু গরুকে রক্ষা করার দায়িত্ব মেনে নিল, আর বাকিদের আগের মতনই মারতে এবং খেতে লাগল—এটাকে কীভাবে এবং কতটা বুদ্ধের শিক্ষা বলে চালানো যায়? বা, আদৌ যায় কি? কৃষি এবং পশুবলির ক্ষেত্রে তাই তাঁর ঐকান্তিক প্রশ্ন: কৃষিতে শুধু গরু নয়, মোষও কাজে আসে। সেই আদ্যি কাল থেকেই। এবং সারা ভারত জুড়েই। দুধ ঘি পেতে এবং খেতেও উভয়কেই লাগে। অথচ, কৃষির নামে গোহত্যা বন্ধ হল, মোষ বলি বন্ধ তো হলই না, উলটে তা নিয়ে এক উন্মত্ততা দেখা যায় সমাজে—এটাই বা কেমন কথা? [ঠাকুর ১৯৯৫, ৫৬৮-৬৯]

    সুতরাং দেখা যাচ্ছে, ধর্মাশ্রিত ও ধর্মাতীত—কোনো দিক থেকেই গোহত্যা নিবারণ ও গোমাংস ভোজন নিষেধের পক্ষে সামাজিক-ঐতিহাসিক সূত্র ধরে আলাদা করে কোনো যুক্তি তর্ক সাজানো যাচ্ছে না। আমরা এর সাথে আমাদের কালের আধুনিক জ্ঞান ও যুক্তি পরম্পরার ভিত্তিতে আরও কিছু প্রশ্ন উত্থাপন করতে চাই।

    এক, সমগ্র বৈদিক যুগের বৈশিষ্ট্য ছিল পশু পালন ও পশু শিকার। উন্নত কৃষি ভিত্তিক হরপ্পা নগর সভ্যতার ধ্বংসের পর উত্তর ভারতে নবাগত বৈদিক জনজাতির লোকদের মধ্যে কৃষি সেকালে প্রচলিত হয়নি, কৃষি ভিত্তিক সমাজের কোনো সমস্যাই তাদের সামনে উপস্থিত হয়নি। যজ্ঞ এবং পশুবলি ছিল শিকার ও ভোজনের সপক্ষে ম্যাজিক সংস্কৃতির কিছু প্রথা-প্রকরণ। সংগঠিত সমাজে দৈনন্দিন ভোজনে ছোট ছোট পশুপাখি ব্যবহার করা হত। বিশেষ বিশেষ দিনে, উৎসব আনন্দের দিনে, অতিথি আপ্যায়নে, বৃহৎ পশু বলি দিয়ে ভোজনের মেনু সমৃদ্ধ করা হত। গরু মোষ ঘোড়া—হাতের কাছে যা পাওয়া যেত তাকেই খরচ করা হত। ভোজনের বাইরে ঘোড়ার ব্যবহার ছিল ব্যক্তি পরিবহনে এবং যুদ্ধসংঘর্ষে, গরু মোষের ব্যবহার ছিল দুধ ঘি সংগ্রহে এবং মাল পরিবহনে। আর এই কারণেই বহুকাল পর্যন্ত গরু ছিল এক গুরুত্বপূর্ণ দানসামগ্রী।

    দুই, এরই ধারাবাহিকতায় বৌদ্ধযুগের আশপাশে যখন ভারতে আবার কৃষির প্রচলন হল, তখন থেকে গরু-মোষের লাঙল বহনের কাজ বাড়ল। কিন্তু ভারতে যে সংখ্যায় গরু এবং মোষ পাওয়া যায়, তাদের যা প্রজনন হার, এবং অতীতে দেশে যতটা মুক্ত ও সামূহিক চারণ ভূমি ছিল, তাতে গোহত্যা ও ভোজনের ফলে কৃষিক্ষেত্রে গভীর সঙ্কট ঘটে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হত না। কিংবা, মুসলমান রাজত্বের সাতশ বছরের কোনো সময়েই শোনা যায়নি যে তাদের গোমাংস ভোজনের ফলে চাষবাসে গরুর অভাব ঘটে গিয়ে দারুণ অসুবিধা হয়েছে। এমনকি অবিভক্ত যে বাংলার সংখ্যাগুরুই ছিল মুসলমান, সেখানেও কখনও গরুর অভাবে চাষ বন্ধ হয়ে গেছে বলে কেউ অভিযোগ করেনি। এর সাথে (গোমাংস-ভোজী) ইউরোপীয় আমলকে যোগ করলে এরকম অসুবিধা তো আরও বেশি করে হওয়ার কথা ছিল। তাও হয়েছে বলে আমরা আজ অবধি শুনিনি। অন্তত ইতিহাসের পাঠ্যপুস্তকে এরকম কথা কেউ লেখেনি। ইংরেজ আমলে ১৮৭০ এবং ১৯৪৩ সালের দুটো ভয়াবহ মন্বন্তর হয়েছিল। সেই দুর্ভিক্ষেরও কোনোটাই গরু বা মোষের অভাবে চাষাবাদ বন্ধ হয়ে হয়নি। ইংরেজ শাসকদের এবং দেশি লুটেরাদের অতিলোভের ফাঁদে পড়েই সেই দুই দুর্ভিক্ষ ঘটেছিল। সুতরাং ভারতীয় প্রেক্ষাপটে গরু-কৃষি সমীকরণের বাস্তব অস্তিত্ব আমাদের সাদা চোখে কোনো দিক থেকেই ধরা পড়ছে না।

    তিন, এই গরু-কৃষি সমীকরণের যুক্তিটিকে মেনে নেবার আর একটা বড় সমস্যা আছে। সেটার কথাও বিজেপি-পন্থী বা বামপন্থী—কাউকেই ভাবতে বা বলতে দেখছি না। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম, এই ব্যাখ্যাটা সত্য। তাহলে, এখন যখন (মোদীর সাধের ডিজিট্যাল ভারত জুড়ে) সমগ্র দেশেই চাষের প্রক্রিয়ায় যন্ত্র ব্যবহার শুরু হয়ে গেছে, গরুর সংখ্যা তখন তো বিপুল পরিমাণে উদ্বৃত্ত হয়ে পড়ার কথা। কৃষি এবং পরিবহন—কোনো জায়গাতেই এখন আর গরু-বলদের ব্যবহার নেই। (প্যাঁচালো লোকেরা বলে, সেই জন্যই নাকি কংগ্রেস নেতৃত্ব তাঁদের চুনাবি প্রতীক জোড়া বলদ এবং গাইবাছুর ইত্যাদি পরিত্যাগ করে সামান্য অগ্রসর হয়ে মানুষের হাত ব্যবহার করতে শুরু করেছে।) এত উদ্বৃত্ত গরু নিয়ে এখন করবেনই বা কী, রাখবেনই বা কোথায়? তাদের খাওয়াবেন কী? সেই আয়তনের চারণ ভূমিই বা কোথায় পাবেন? ধর্মে বা শাস্ত্রে যখন নিষিদ্ধ নয়, চাষেও আর একেবারেই কাজে লাগছে না, তখন আর আপনারা গোমাংস নিয়ে শুধু শুধু এত হইচই করছেন কেন? আপনাদের প্রদত্ত যুক্তি মেনেই তো গোমাংস ভোজন এখন সচ্ছন্দে চলতে পারে! দীর্ঘদিনের অভ্যাস বদলের জন্য নিজেরা যদি খেতে না-ও চান, যারা চায় তাদের একটা সস্তার স্বাস্থ্যকর আমিষ ভোজনে বাধা দেবেন কেন?

    চার, আর একটি ঘটনা এই ডামাডোলের মধ্যে লোকচক্ষুর অন্তরালেই থেকে যাচ্ছে। সম্প্রতি ২০১৫ সালের এক সংবাদে প্রকাশ, গবাদি (গো + মোষ) মাংস রপ্তানিতে সারা বিশ্বে ব্রাজিল যেখানে ২০ লক্ষ টন সরবরাহ করে দ্বিতীয় স্থানে ছিল, সেখানে প্রথম স্থানটি কে অধিকার করেছে জানেন কী? বিজেপি-আরএসএস ঘোষিত পবিত্র গোভূমি ভারতবর্ষ। তার রপ্তানির পরিমাণ ২৪ লক্ষ টন। [Source: The Hindu, 10 August 2015.] পাছে কেউ সন্দেহ করেন, মোষ রপ্তানিকেই সেকু-মাকুরা গরু রপ্তানি বলে চালিয়ে দিচ্ছে, সেই পত্রিকাটির দিল্লি সংস্করণ রপ্তানিতব্য পশুভর্তি কয়েকটি ট্রাকের রঙিন ছবিও ছাপিয়ে দিয়েছে। তাতে চোখ রাখলেই বোঝা যাবে, কালো রঙের পশুগুলো গরু বা মোষ দুই-ই হতে পারে, কিন্তু সাদাগুলো যে গরু তাতে কোনো ধন্দ জাগবে না। এই রপ্তানি প্রক্রিয়ায় জ্যান্ত গরুগুলিকে কোথায় কাটা হয়েছে, ভারতে না বিদেশে, সেটা—এমনকি গান্ধীর মতেও—আদৌ বড় কথা নয়। ভারতীয় হিন্দুরাই যে কাটা হবে জেনেই এই রপ্তানি করে চলেছে সেটাই সবচাইতে বড় কথা! ফলে বর্তমানে এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, রপ্তানি করার ক্ষেত্রে এই হিন্দু ধার্মিক ব্যবসায়ীদের ডলার আমদানিতে যাতে ঘাটতি না পড়ে, সেই জন্যই হয়ত সঙ্ঘ পরিবারের গোরক্ষার স্বার্থে এত উল্লম্ফন-উলঝম্পন!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ৩০ আগস্ট ২০১৬ | ১৭১৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | 116.51.25.245 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৩:১৫55788
  • এই লাস্ট লাইনটা বুঝলাম না

    "ফলে বর্তমানে এই সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না, রপ্তানি করার ক্ষেত্রে এই হিন্দু ধার্মিক ব্যবসায়ীদের ডলার আমদানিতে যাতে ঘাটতি না পড়ে, সেই জন্যই হয়ত সঙ্ঘ পরিবারের গোরক্ষার স্বার্থে এত উল্লম্ফন-উলঝম্পন!" গোহত্যা বন্ধ হলে তো ক্ষতি হবে এই বীফ একস্পোর্টারদেরই। তাদের স্বার্থ,তাহলে কী করে সংঘ পরিবার দেখছেন ?
  • Ashoke Mukhopadhyay | 69.97.222.228 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৩৮55789
  • গোহত্যা বন্ধ হলে রপ্তানিযোগ্য গরুর সংখ্যা বাড়বে। আর গরু রপ্তানিতে তো কেউ বাধা দিচ্ছে না। দেশের আইনেও বাধা নেই। সুতরাং -----!
  • Ekak | 53.224.129.62 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৪৩55790
  • আরে শ্লটারিং করবেন কীকরে স্লটার ব্যান হলে ? গোটা গোটা গরু কন্টেনারে করে পাঠাতে হলে তো লাইভ ক্যাটল কন্টেনারের কস্ট+হাইজিন +ফুড সব মিলিয়ে বিশাল লজিস্টিকস । ইন্টারন্যাশনাল মার্কেটে পাত্তাই করতে পারবে না । আবার ভেবে বলুন :)
  • pi | 192.66.37.131 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৪৮55791
  • এইগুলো পড়লাম। ঠিক কী ?

    1) Slaughter of bulls and bullocks is not banned in most states
    2) Cattle which are old, unfit for breeding, or have stopped yielding milk can be slaughtered in many states provided one gets a 'fit-to-slaughter' certificate from the government
    3) Usually buffalo meat aka carabeef is also counted under beef. Indeed, this forms the majority of the beef exported by India.

    আরIndia exports only buffalo meat. Beef trade is banned, India exports buffalo meat, (bovine meat).

    ..US department of agriculture has classified water buffalo meat as 'beef '.

    এই কারণে নাকি ভারত বিফ এক্ষপোর্টে প্রথম।
  • Ekak | 53.224.129.62 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৫:৫৭55792
  • হ্যাঁ
  • pi | 192.66.37.131 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:০১55793
  • এইটাও দেখলাম। অনলাইনে কীকরে পাঠায় ? এক শহরের মধ্যে নাকি অন্য দূরের শহরেও ? একটা একটা গরু কীকরে পাঠায় ?

    Cows go online

    Over the past few years, since India’s e-commerce boom began, a number of farmers have also taken to popular online market places such as OLX and Quikr to sell their cows and buffaloes. A substantial number of them came from India’s tier II and tier III towns. Last year, even goats were sold online during the Muslim festival of Bakra Eid.
    Here are the number of search results that online marketplaces showed for the sale of cows and buffaloes:
    WebsiteCow Buffalo
    OLX 1,308200
    Quikr246 56
  • Ekak | 53.224.129.62 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:০৩55794
  • যেভাবে সারফেস ক্যারেজ পাঠায় । টাকাটা অনলাইন ট্রান্সাকশন হয় । গরু হাম্বা হাম্বা করে লরি চেপে যায় । এ আর এমন কী । রাজ্যে রাজ্যে ক্যাটল চলে যাচ্ছে এভাবেই । অনলাইন হয়ে ট্রান্সাকশন স্মুদ হয়েছে শুধু ।
  • pi | 192.66.37.131 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:১০55795
  • আরে দলে দলে গরু লরি করে যায় জানি। আমি একটা একটা গরু মানে একটা গরু কীভাবে পাঠায় জানতে চাইলাম। কোন ইন্ডিভিজ্যুয়াল পাঠালে পরতায় পোষাবে ?
  • Ekak | 53.224.129.61 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:১৭55796
  • এরকম বালক সাপ্লাই চেইনে মাঝখানে লোক থাকে । সাইটে যোগাযোগ করলে সেই ক্যারেজ একসঙ্গে তুলে নিয়ে রওয়না দেয় । এটা ছাগল পাঠানোর ক্ষেত্রেদেখেছি । মনে কর যে ক্যারিয়ার তুলবে সে হয়তো এই গ্রাম থেকে বিশ টা ওই গ্রাম থেকে ত্রিশ টা এইভাবে । গোরুতেও সেভাবেই করে নিশ্চই । বা কোনো একটা কমন পয়েন্টে গিয়ে গরুর মালিক পৌঁছে দিয়ে আস্তে পারে ।
  • pi | 192.66.37.131 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:১৯55797
  • আচ্ছা।
  • Ekak | 53.224.129.61 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:২৩55798
  • যতক্ষণ মাটির ওপর , ব্যাপারটা পুষিয়ে যায় । আকাশে উঠলেই জ্যান্ত পাঠানোর আকাশছোঁয়া খরচ ।
  • pi | 192.66.37.131 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:৩২55799
  • এভাবে জাহাজে পাঠানো যায়না ? মানে, পাঠানো হয়কি এখন ?
  • pi | 192.66.37.131 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:৪০55800
  • এভাবে জাহাজে পাঠানো যায়না ? মানে, পাঠানো হয়কি এখন ?
  • Ekak | 53.224.129.61 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:৪৪55801
  • এখন পাঠানো হয় বলে জানিনা । সবাই স্লটার করে ফ্রিজ করে পাঠায় । জাহাজে পাঠানোর চে ফ্লাইটে খরচ কম হওয়ার কথা মনে হয় । জাহাজে তো অনেক বেশিদিন ধরে ফুড - হাইজিন -ভেট -ইনসিউওরেন্স সেতো বিশাল খরচ ! ফ্লাইটে উড়ানের খরচ জাহাজে পার ডিএম । কেটেকুটে পাঠা বরং :)
  • Ekak | 53.224.129.61 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:৪৫55802
  • এ হে হে পার ডে হবা । গরুর পার ডিএম লিকেচি লোকে তেড়ে এলো বলে :(
  • sinfaut | 11.39.13.86 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৬:৫৭55803
  • পার ডে আর পার ডিয়েম তো একই মানে। তেড়ে আসবে কেন?
  • Debabrata Chakrabarty | 113.51.151.177 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৭:০৯55804
  • বাংলা দেশ ,পাকিস্তান এবং নেপালে ( মূলত মোষ ) পাঠাতে তো আর জাহাজ বা ট্রাক লাগেনা - দিব্য হাঁটিয়ে পার করা হয় । তবে বাকি দেশের ক্ষেত্রে মনে হয় কেটে কুটেই পাঠাতে হবে । বাংলাদেশে সম্ভবত বর্তমানে একটি কি দুটি মাংস রপ্তানির আধুনিক ফ্যাক্টারি আছে । এই সুযোগে আরও গজাতে পারে যদি অবশ্য ভারত থেকে নিরবিচ্ছিন্ন সাপ্লাই চেন বজায় থাকে ।
  • dd | 59.207.56.186 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ০৭:১২55805
  • রে রে রে।

    দয়া করিয়া লজিস্টিক্স, এক্ষ্পোর্ট, ইম্পোর্ট ইঃ নিয়ে আলোচোনা বন্ধ করুন।প্লীজ। আমি,আজ্ঞ্গে, চল্লিশ বছর ধরে এই জিনিসই করে এইচি কিনা। খুবই উত্তেজিত বোধ করি দুম দাম কথা শুনলে।

    রে রে রে
  • Ashoke Mukhopadhyay | 127.194.45.111 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ১১:১৩55806
  • আমার লেখার শেষ প্যারাটা পড়ুন। হিন্দু কাগজে কি খবর ছিল দেখে নিন। আমিও জানি না কি করে পাঠানো হয়। সম্ভবত যে রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা নেই সেই রকম রাজ্যের বন্দরে নিয়ে গিয়ে জাহাজে তুলে দেয়। তারা জল সীমানা পেরিয়ে কাটাকুটির কাজ সেরে ফেলে। মা গঙ্গাজল পায়, মায়ের শরীর চলে যায় ডলার আনতে। শুধু মাংস নয়, চামড়াও রপ্তানি হয়। ফলে খরচ বেশি হয় না।
  • avi | 55.249.72.193 (*) | ৩১ আগস্ট ২০১৬ ১২:২০55787
  • বাহ।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন