এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • অলৌকিকের কেরামতি : স্রেফ গুল, না মনের ভুল ?

    Debasis Bhattacharya লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৪ আগস্ট ২০১৯ | ৩৯১৭ বার পঠিত | রেটিং ৪ (১ জন)
  • [লেখাটি মূলত কিশোরবয়স্কদের উদ্দেশে লেখা, বছরদুয়েক আগে ছাপা হয়েছিল 'নেহাই' পত্রিকায় । তবু এর বিষয়বস্তুর কারণে বয়স্করাও হয়ত কেউ কেউ আগ্রহ বোধ করতে পারেন] ............

    তোমরা কি কখনও ভেবে দেখেছ, যে আমাদের জীবনটা কত বেশি বেশি মজায় ভরপুর ? সে সব মজা অবশ্য এমনিতে সবসময় চোখে পড়ে না, কিন্তু একটু খুঁটিয়ে ভাবলেই টের পাওয়া যায় । যেমন ধর রাস্তায় ভিড়ের মধ্যে একটা লোককে ডেকে যদি জিজ্ঞেস কর, আচ্ছা দাদা, আপনার অচ্ছোদপটলটা ঠিক কোথায় চটপট বলুন তো, তাহলে বেশির ভাগ লোকই বেদম ঘাবড়ে যাবে । সেটা আবার কোন জাতের পটল, এই ভেবে ভেবে ঘেমে নেয়ে একশা হবে হয়ত । ওইরকম একশো জনকে ধরে ধরে জিজ্ঞেস করলে হয়ত অতি সামান্য কয়েকজন বলতে পারবে যে, ওটা হচ্ছে আমাদের চোখের ওপরকার এক স্বচ্ছ আস্তরণ, যাকে ডাক্তারি ভাষায় বলে কর্নিয়া । কিন্তু যদি জিজ্ঞেস কর ‘অলৌকিক’ মানে কী, তাহলে দেখবে প্রশ্ন করতে না করতেই জবাব এসে যাচ্ছে । এর মধ্যেকার দুর্ধর্ষ মজাটা খেয়াল করলে কি ? অচ্ছোদপটল আমাদের সকলেরই আছে এবং তা সাংঘাতিক জরুরি, ওতে সামান্য চোট লাগলেই কেলেঙ্কারি । অথচ কেউ তার মানে জানে না । কিন্তু এদিকে, যদিও একটাও অলৌকিক ঘটনা কেউ সারা জীবনে দেখেনি, তবু সবাই মনে করে যে অলৌকিক বলতে কি বোঝায় তা তার জানা আছে । এই যে কয়েক বছর আগে অনেক ঘটা করে মাদার টেরিজাকে ‘সন্ত’ বলে ঘোষণা করা হল, তোমরা তো শুনেইছ । চার্চ বলছে, তিনি নাকি অন্তত দুজন মরোমরো রুগীকে অলৌকিকভাবে মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচিয়েছেন । তা শুনে সকলেই আশ্চর্য, কিন্তু ব্যাপারটা আসলে ঠিক কী হতে পারে তা নিয়ে কি আর ভাববার সময় আছে কারুর ? কী করে হল, কে দেখেছে, এইসব প্রশ্ন করবার লোক কম ।

    বুঝতে পারছি, এইটুকু পড়েই তোমরা সব উসখুস করছ । ভাবছ, ইল্লি আর কি, অলৌকিক ঘটনা কেউ কোনওদিন দেখেনি, --- বললেই হল বুঝি ? হ্যারি পটার না হয় স্রেফ সিনেমা । কিন্তু চোখের সামনে এই যে ফেলটুস পাঁচুগোপাল নারায়ণের সিন্নি দিয়ে মাধ্যমিকটা উৎরে গেল, তার কী হবে ? ফার্স্ট বয় নিত্যানন্দ গত সরস্বতী পূজোর অঞ্জলির সময়ে মন্ত্র না বলে প্রসাদের থালার দিকে একবার খালি তাকিয়ে ফেলেছিল বলে হাপিয়ালির ঠিক আগের দিন ম্যালেরিয়ায় কোঁকাতে লাগল । এই আজ সকালেই তো, সাত সক্কাল বেলা হরিনাম উচ্চারণের সঙ্গে সঙ্গে ঠাম্মার নড়া দাঁতটা পড়ে গেল, এতদিনের ব্যথা-ট্যাথা পুরো গায়েব । কাজের মাসী ভর সন্ধেয় বেলগাছের নিচে বাসন মাজতে বসে বেহ্মদত্যির মুর্তি দেখে দাঁত কপাটি লেগে মুচ্ছো গেল, হপ্তাখানেকও বোধহয় হয়নি । এসব কি তবে কিছুই নয়, অ্যাঁ ?

    আরে, আরে, এই দ্যাখো ! আমি কি একবারও বলেছি যে এসব কিছুই নয়, নাকি বলেছি যে তোমরা সব বসে বসে গুল দিচ্ছ ? সেসব মোটেই বলিনি । কিন্তু আমার পুরো কথাটা তো শুনবে আগে, না কি ? কথার মাঝখানে অমন করলে কথাবার্তা কইব কি করে ? হ্যাঁ, যে কথা বলছিলাম, ওই অলৌকিক । উঁহু, উঁহু, একদম ব্যস্ত হয়ো না । ওসব কেউ আদৌ দেখেছে কি দেখেনি, বা যদি দেখেও থাকে তাহলে ঠিক কী দেখেছে সে সব তক্কো পরে হবে । তার বদলে আমরা এখন একটু ভেবে দেখবার চেষ্টা করব, যে, ‘অলৌকিক’ বলতে ঠিক কী বোঝায় । কথাটা যত সোজা ভাবছ তত সোজা নয় কিন্তু । গণ্ডা গণ্ডা সব ত্যাঁদড় লোকজন কথার ভুল ধরবে বলে ঘাপটি মেরে বসে আছে, আর তাদের মধ্যে সবাই যে একেবারে আকাট গোমুখ্যু তাও নয় । তবু এসো একটু চেষ্টাচরিত্র করে দেখি । যে রকম ঘটনাকে আমরা সাধারণত অলৌকিক বলে দাবি করে থাকি সেরকম একটা সহজ উদাহরণ নেওয়া যাক । ওপরের ওই ফেলটুস পাঁচুগোপালের কেসটাই ধর । ওপাড়ার মুখুজ্জে ফ্যামিলির ভারি নামডাক, কিন্তু হলে হবে কী, বাড়ির ছোটছেলে পাঁচুগোপাল হয়েছে আদরে বাঁদর । সেভেন থেকে শুরু করে কোনওদিনই আর কোনও ক্লাসে দুবছরের কম থাকে না । সেই অনুযায়ী ভাবা গিয়েছিল এবছর ফাইনাল পরীক্ষায় পাঁচু একটু বিশ্রাম-টিশ্রাম নেবে, কিন্তু পরীক্ষার মাসদুয়েক আগে হল কী, পাঁচুর জাঁদরেল মেজোপিসি সটান শ্বশুরবাড়ি থেকে এসে গ্যাঁট হয়ে বসে লাগিয়ে দিল এক মহাযজ্ঞ --- নারায়ণের সিন্নি ! সে কি আর যেমন তেমন, এক নম্বর ময়দা এক নম্বর দুধ এক নম্বর চিনি এক নম্বর মর্তমান কলা, তার মধ্যে আবার কাজুবাদাম আর কিশমিশ । পাড়াশুদ্ধু লোক তো তাই খেয়ে ধন্য ধন্য, খালি পাঁচুর বাবার মুখটা একটু ভার । তার পকেট থেকেই খরচটা গেছে কিনা ! আর তার ঠিক পাঁচমাসের মাথায় পাঁচু এক চান্সে মাধ্যমিকের দড়ি ছিঁড়ল । তাই তার মেজোপিসি এখন গলার শির ফুলিয়ে পাড়ায় পাড়ায় রাষ্ট্র করে বেড়াচ্ছে যে ওই সিন্নির ফলেই নাকি এত সব কাণ্ড । পাড়ার লোকেদেরও তাতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই, অত ভাল সিন্নির কোনও ফলাফল থাকবে না তাই আবার হয় নাকি ? খালি পাঁচুর বাপটাই যা একটুই গাঁইগুঁই করছে । তার বক্তব্য ............ যাকগে, সে কথা একেবারে শেষে ।

    এখন একটা জিনিস ভাল করে ভেবে দেখ । এই যে পাড়ার লোক বলাবলি করছে যে নারায়ণের কৃপাতেই নাকি ফেলটু পাঁচু পরীক্ষাটা উৎরে গেল, এটা কিন্তু একটা অলৌকিকতার দাবি । ঠাকুর-দেবতার কথা পাড়লে তো সেটা অলৌকিকই হল, ঠিক কি না বল (এ নিয়ে অবশ্য আমার আর একটু কথা আছে, একটু পরে বলব) ? যদি ঘটনাটাকে বিশ্লেষণ কর, মানে ভেঙে ভেঙে সরল করে নিয়ে আলাদা আলাদা করে ভাব, তাহলে দেখতে পাবে যে এর মধ্যে মোদ্দা ব্যাপার আছে তিনটে । এক নম্বর হচ্ছে, পাঁচু এর আগে কখনও একবারে পাশ করতে পারেনি । দু নম্বর, মাধ্যমিক পরীক্ষার আগে পাঁচুর বাড়িতে নারায়ণের সিন্নি দেওয়া হয় । এবং তিন, অপ্রত্যাশিতভাবে পাঁচু পরীক্ষাটা উৎরে যায় । এই তিনটে ঘটনার কোনওটাকেই তো অস্বীকার করবার কোনও জায়গা নেই । কাজেই আমি এখন প্রশ্ন করতে পারি, পাঁচুর গল্পটা অলৌকিক হতে গেলে এই তিনটের মধ্যে অন্তত একটাকে তো অলৌকিক হতেই হবে, সেটা তাহলে কোনটা ? প্রশ্নটা করলেই তোমরা নিশ্চয়ই হই হই করে উঠবে । বলবে, আমরা ছোট বলে কি বোকা পেয়েছেন মশাই ? ওগুলো অলৌকিক হতে যাবে কোন দুঃখে ? আলাদা আলাদা ঘটনায় মোটেই অলৌকিকতা নেই, আছে তাদের সম্পর্কের মধ্যে । মানে, সিন্নি খাওয়া আর মাধ্যমিক পাশ দেওয়া আলাদা করে দেখলে কিছুই নয়, কিন্তু ওই সিন্নির ফলে খুশি হয়ে নারায়ণ যে কিঞ্চিত কলকাঠি নেড়ে পাঁচুবাবুকে উৎরে দিলেন, এটাই অলৌকিকতা । ফাটাফাটি জবাব, সন্দেহ নেই । ‘কৌন বনেগা ক্রোড়পতি’ তে এইরকম সব জবাব দিলে এতক্ষণে সাড়ে ছলাখ কামিয়ে বসে আছ, আমি গরিব লোক বলে আর তেমন কিছু দিতে-টিতে পারলুম না । তা, জবাবটাকে ফাটাফাটি কেন বললুম সেটা বুঝলে তো ? আসলে এই জবাবের মধ্যে অলৌকিক সম্পর্কে দুটো খুব জরুরি কথা রয়েছে । এক, সাধারণ রোজকার ঘটনাগুলো অলৌকিক নয়, অলৌকিক মানে এমন অসাধারণ ঘটনা যা এমনি এমনি ঘটতে পারত না । এই ধর, সকালে উঠে দাঁত-টাত মেজে প্রাতঃকৃত্য সেরে থালায় ডাল-রুটি নিয়ে বসলুম, এটা অলৌকিক নয়, কিন্তু ফেলটুস পাঁচুর মাধ্যমিকের বেড়া ডিঙোনোটা অলৌকিক । দুই, অসাধারণ হলেও অলৌকিকতা হবে না, যদি না তার মধ্যে একটু ঠাকুর-দেবতা-ভূত-প্রেত-তন্ত্র-মন্ত্র গোছের ব্যাপার থাকে । আবার ধর, নতুন একজন জব্বর মাস্টারমশাই এসে খটাস খটাস গাঁট্টা মেরে পাঁচুর ঘিলু টাইট করে দিয়ে তাকে পরীক্ষাটা তরিয়ে দিলেন, এটাও অলৌকিক নয় । কিন্তু, এই যে পাঁচু নারায়ণের সিন্নি খেয়ে পাশ করল, এটা অলৌকিক । না, নিছক সিন্নিটুকুই পাশের কারণ এইরকম ভাবলেও তা অলৌকিক হবে না । কারণ, মনে কর, কোনও উচ্চাকাঙ্খী বিজ্ঞানী যদি পাঁচুর কেস দেখে উৎসাহী হয়ে টেস্ট টিউব আর বুনসেন বার্নার সহযোগে সিন্নি বিশ্লেষণ করে পরীক্ষা-তারণ পদার্থের সন্ধানে নেমে পড়তেন,‌ তো সেটা অবশ্যই এক বীভৎস খাজা গবেষণা হত, কিন্তু তাকে মোটেই অলৌকিকের অনুসন্ধান বলে আখ্যা দেওয়া যেত না । কাজেই, সিন্নি নিমিত্তমাত্র । আসল কথাটা হল তার পেছনে এক অদৃশ্য সত্তার কলকাঠি নাড়া ।

    জলের মত পরিষ্কার, অ্যাঁ ?

    তাহলে নিশ্চয়ই, ওই যে সিন্নি-অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে ঠাকুর-দেবতাদের কথা আসছে, সেইটাই হল গিয়ে আসল অলৌকিক ? তা-ই তো হওয়ার কথা । মানুষ যা যা করে বা করতে পারে সেগুলো তো সব লৌকিক । অলৌকিক-টলৌকিক হল গিয়ে ঠাকুর দেবতাদের ব্যাপার । তাই তো ? উঁহু, নাঃ । মনে কিন্তু একটা খ্যাঁচ এখনও রয়ে যাচ্ছে । কারণ, ধরা যাক, যদি এমন হত যে স্বর্গের দেবতারা পাঁচুর কেসটা নিয়ে একটা বোর্ড মিটিং-এ বসে শেষকালে সিদ্ধান্ত করতেন যে ওকে পাশ করানো হবে না এবং তার ফলে পাঁচু ফেলটুসই থেকে যেত, তখন কি আর একে কেউ অলৌকিক বলত ? বোধহয় না । যদি কথাটা অবিশ্বাস হয়, তো পাঁচু বা ওইরকম কোনও ফেলটুসের পরীক্ষার রেজাল্ট বেরোবার ঠিক পর পর সামনে গিয়ে কথাটা বলে দেখ দিকিনি একবার । ফলাফলের জন্য আমি দায়ি নই কিন্তু ।

    আচ্ছা, তাহলে দেখতে পাচ্ছি, অলৌকিকের চারটি অপরিহার্য উপাদান : এক, একটি আপাতভাবে বিস্ময়কর ও অপ্রত্যাশিত বাস্তব ঘটনা বা তার দাবি (এই বাস্তব ‘ঘটনা’ বা ফলাফলের ব্যাপারটা কিন্তু থাকতেই হবে, এইটা না থাকলে হাজার ঠাকুর দেবতার কথা পাড়লেও অলৌকিক হবে না ) । দুই, সে ঘটনা সম্পর্কে কোনও যৌক্তিক ব্যাখ্যার আপাত-অভাব, মানে, সত্যিকারের কোনও ব্যাখ্যা যদি থেকেও থাকে, তো এই মুহূর্তে অন্তত সেটা কারুর মাথায় আসছে না । তিন, ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য থেকে নেওয়া নানা ধ্যানধারণার সাহায্যে যৌক্তিক ব্যাখ্যার অভাব পূরণ । এবং চার (এটা তত অপরিহার্য না হলেও সাধারণত অলৌকিকের সাথে জড়িত থাকে), ওই ‘ঘটনা’ বা ফলাফলটি কারুর পক্ষে বা বিপক্ষে যেতে হবে -- যাকে সাধারণ কথায় ‘শুভ’ বা ‘অশুভ’ বলে (অলৌকিকের ওই এক ঝামেলা, তাই দিয়ে কারুর কোনও সুবিধে বা নিদেনপক্ষে ক্ষতিও যদি না হয়, তো কেউ তাকে অলৌকিক বলে মানতেই চায় না, তা সে যতই আশ্চর্যজনক হোক) । এই চারটে উপাদানকে ভাল করে চিনে নিতে পারলে বিজ্ঞানের সঙ্গে তুলনায় এর বৈপরীত্যটা খুব পরিষ্কারভাবে ফুটে উঠবে ।

    ওহো, ওই তিন নম্বর উপাদানটা, মানে “ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্য থেকে নেওয়া নানা ধ্যানধারণা” নিয়ে দুয়েকটা দরকারি কথা ছিল, বলতে ভুলে গেছি । সেটা বলে নিয়েই বিজ্ঞানের সাথে অলৌকিকের তুলনায় যাব । এমনিতে কথাটা তো বেশ সোজাই, বুঝতে নিশ্চয়ই অসুবিধে হয়নি । ‘ক’-বাবু আজ পড়ি কি মরি করে কাজে বেরোতে গিয়ে চৌকাঠে বেদম হোঁচট খেয়ে গোড়ালিটি মচকেছেন, এবং আপিস কাছারি লাটে তুলে খাটে শুয়ে শুয়ে ব্যাথায় কাতরাচ্ছেন । রোজই তো ওভাবেই কাজে বেরোন, কিন্তু আজ যে কেন অমন হল, কে-ই বা বলতে পারে ! পিসিমা বললেন, আজ সকালে কেষ্টঠাকুরের পূজোর সময় বৌমা (‘ক’-বাবুর স্ত্রী) তাড়াহুড়োয় জলভর্তি ছোট্ট পূজোর গেলাসটা উল্‌টে ফেলেছিল, ঠাকুর রুষ্ট হয়ে শাস্তি দিয়েছেন । বুঝতেই পারছ, ঠাকুর-দেবতা টেনে এনে এই রকম ব্যাখ্যা নিশ্চয়ই অলৌকিক ব্যাখ্যা । ঠাকুর-দেবতারা আছেন এবং তাঁরা সেবা-টেবা ঠিকঠাক না পেলে রেগে গিয়ে কিঞ্চিৎ শিক্ষা দিয়ে থাকেন --- এই বিশ্বাস পিসিমা তাঁর চারপাশের সমাজ থেকে পেয়েছেন, তাই দিয়েই তিনি তাঁর মত করে বিষয়টার ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করলেন, এটুকু বুঝতে সমস্যা নেই । কিন্তু, এই ব্যাপারটার মধ্যে একটা জিনিস খুব ভাল করে খেয়াল করে দেখ । এই ধরনের বিশ্বাসের পেছনে সবসময়ই একটা অদৃশ্য কিন্তু সচেতন সত্তার কল্পনা থাকে । সে সত্তাকে আমরা আমাদের বাস্তব শরীরের ধরাছোঁয়ার মধ্যে পাই না, অথচ সে কিন্তু আমাদের এই বাস্তব জগতকে নানাভাবে প্রভাবিত করতে পারে । তার শরীর নেই, কিন্তু ইচ্ছে অনিচ্ছে খুশি অখুশি রাগ হিংসে এইসব আছে । জড় পদার্থ স্রেফ জড় নয়, তার পেছনে আছে এই রকম সত্তা । এই চিন্তা কোথা থেকে এল সেটা জান তো ? নিশ্চয়ই বইপত্রে পড়েছ, আদিম মানুষ ঝড় বৃষ্টি বজ্র সাগর পাহাড় এই সব কিছুকেই দেবতা বলে ভাবত, তাদেরকে নানাভাবে সন্তুষ্ট রাখার চেষ্টা করত যাতে বিপদের হাত থেকে বাঁচা যায় । তাদের এই বিশ্বাসগুলো নিয়ে ‘অ্যানথ্রোপোলজিস্ট’ বা নৃতত্ত্ববিদেরা অনেক গবেষণা করেছেন । তাঁরা একে বলেন ‘অ্যানিমিজম’, মানে সবেতেই মন-প্রাণ আছে বলে ভাবা । আজ আমরা যে ভাবে সব কিছু ভাবি, এই ‘অ্যানিমিজম’-এর চিন্তা-পদ্ধতিটা হচ্ছে ঠিক তার উল্টো । আমরা আজকে বিজ্ঞান-টিজ্ঞান জানি বলে এইটা বুঝি যে জড় পদার্থ অনেক সরল, আর মন-প্রাণ হল গিয়ে অনেক জটিল ব্যাপার, জড় পদার্থ দিয়ে অনেক জটিল প্রক্রিয়ায় কোষ আর মস্তিষ্কের মত দারুণ সব জিনিস তৈরি হলে তবেই তাতে মন-প্রাণের লক্ষণ দেখা যায় । তাই আজ আমরা সরল থেকেই ভাবনা শুরু করতে চাই, ফিজিক্স-কেমিস্ট্রি দিয়ে জড় পদার্থের সরল নিয়মকানুন যা সব জেনেছি তাই দিয়েই মন-প্রাণকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চালিয়ে যাই । আদিম মানুষ এসব জানত না, তারা শুধু নিজের মনটাকে টের পেত, আর উল্টোভাবে মন দিয়ে জড় জগতকে ব্যাখ্যা করার চেষ্টা চালাত । ভাবত, অদৃশ্য অথচ খুব শক্তিশালী কেউ নিশ্চয়ই আছে, যে কিনা তাদেরকে বিপদে ফেলা কিম্বা শিক্ষা-টিক্ষা দেওয়ার জন্যই ওইসব ঝড় বৃষ্টি বজ্রপাত সৃষ্টি করে --- তা না হলে খামোখা কতা নেই বাত্রা নেই যখন তখন ওসব হবে কেন ? তাকে ঠাণ্ডা করার জন্য তারা প্রার্থনা করত, খাবার দাবার বলি এইসব সহযোগে পূজো চড়াত । অনেক বিজ্ঞানী আজ বলেন, এ ধরনের বিশ্বাসের উদ্ভবের পেছনে কিছু জৈবিক কারণও হয়ত থেকে থাকতে পারে । খাবার সংগ্রহের জন্য শিকার করা বা অন্য হিংস্র জন্তুর হাত থেকে বাঁচা --- উভয় কারণেই জড় পরিবেশের মধ্যে সপ্রাণ বস্তু আবিষ্কার করবার একটা তীব্র জৈব তাগিদ তার ছিল, তাই তার স্নায়ুতন্ত্রের মধ্যে সে ক্ষমতা ধীরে ধীরে বিকশিত হয়েছে, বাঁচার স্বার্থেই । জড়বস্তুর মধ্যে অহেতুক চেতনা আবিষ্কার করা হয়ত সেই ক্ষমতারই একটা ‘বাই প্রোডাক্ট’ । যেহেতু পরিস্থিতিটা এমন যে যেখানে সত্যি সত্যি সপ্রাণ বস্তু আছে সেখানে তা দেখতে না পাবার ঝুঁকিটা বিরাট অথচ যেখানে তা নেই সেখানে তা ‘দেখতে’ পাবার ঝুঁকি খুব বেশি নয়, অতএব জৈব প্রকৃতি এ প্রবণতাকে তাড়াতে ব্যস্ত হয়নি, বরং তাকে খানিক প্রশ্রয়ই দিয়েছে ।

    আজ বিজ্ঞান বহুদূর এগিয়েছে, কিন্তু তার বার্তা পৌঁছেছে খুব সামান্য কিছু মানুষের মধ্যেই । তাই, সেই ‘অ্যানিমিজম’ বেঁচে আছে আজও । শুধু স্বল্পশিক্ষিত পিসিমার মধ্যে নয়, হাতে গ্রহরত্নের আংটি পরে বিজ্ঞানের ক্লাসে ঢোকা অধ্যাপকের মধ্যেও !

    আচ্ছা, এবার তাহলে আগের কথামত বিজ্ঞানের সাথে অলৌকিকের তুলনায় ঢোকা যাক । প্রথমেই আসবে “আপাতভাবে বিস্ময়কর ও অপ্রত্যাশিত বাস্তব ঘটনা বা তার দাবি” । যদি এরকম কোনও দাবি ওঠে, তো অলৌকিকে বিশ্বাসী মন তা বিশ্বাস করতে চাইবে, এবং ব্যাখ্যা না পেয়ে মুগ্ধ বিহ্বল হতে চাইবে । তা, সেখানে বিজ্ঞান কী চাইবে ?

    বিজ্ঞান কিন্তু এক্ষেত্রে আগে নিশ্চিত হয়ে নিতে চাইবে যে, বিস্ময়কর দাবিটি আদৌ সত্যি কিনা, এবং সে বিষয়ে নিশ্চিত হলে তবেই তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা দেবার চেষ্টা করবে । তখুনি ব্যাখ্যা দিতে না পারলে ব্যর্থতা স্বীকার করে নেবে, তবু অযৌক্তিক ব্যাখ্যার আশ্রয় নেবে না । কথাটা একটু বুঝিয়ে বলি, বেশি ঘ্যানঘ্যান করব না, মাইরি বলছি । মাদার টেরিজার অলৌকিক মহিমায় দুজন মুমূর্ষু রুগীর সেরে ওঠার গল্প একদম গোড়াতেই বলেছি । এই গল্প শুনেই ভক্তজন বলে উঠবেন, তাইতো, ওইরকম ভয়ঙ্কর রুগী চিকিৎসা ছাড়াই সেরে উঠল, দৈবী মহিমা ছাড়া এ কীভাবে সম্ভব ? কিন্তু বিজ্ঞানমনস্ক মানুষ জানতে চাইবেন, আদৌ কি সেরেছে ? কে দেখেছে ? যে দেখেছে সে নিজেই বা কীভাবে নিশ্চিত হল ? রোগ হওয়া এবং সেরে ওঠার কাগজপত্তর কই ? কোনও চিকিৎসক কি ওই রূগীদের দেখেছিলেন ? তাঁরা কী বলছেন ? কম হলেও কিছু লোক মাদারের ব্যাপারে এ ধরনের প্রশ্ন রেখেছিলেন --- যেমন সাংবাদিকেরা । তাঁরা জানতে পেরেছিলেন, অন্যতম রুগী মনিকা বেসরা যক্ষায় আক্রান্ত হয়েছিলেন, হাসপাতালে ছিলেন, এবং আধুনিক চিকিৎসাতেই সেরেছেন । মাদারের অলৌকিক মহিমায় নয় । আরেকজন ব্রাজিলের রুগী, তাঁর কাছে সাংবাদিকদের ঘেঁষতেই দেওয়া হয়নি, এবং তাঁর রোগ হওয়া ও সেরে ওঠা সম্পর্কে যাঁরা সার্টিফিকেট দিয়েছেন তাঁরা সব চার্চেরই লোকজন । খবরে বেরিয়েছে, চার্চের এমন অনেক হর্তাকর্তা আছে যারা নাকি ঘুষ নিয়ে অলৌকিকতার সার্টিফিকেট দিয়ে দেয় । তাহলে দেখতেই পাচ্ছ, অলৌকিক অলৌকিক বলে চেঁচালেই হল না, ঘটনার সত্যি মিথ্যে ভাল করে যাচাই করা চাই, তারপরে অন্য কথা ।

    যদি যাচাই করে দেখা যায় যে সত্যিই কিছু একটা ঘটেছে, তখনই আসবে যৌক্তিক ব্যাখ্যার কথা ।
    কীরকম ? উদাহরণ দিয়ে বলি । যেমন ধর, গোড়ায় যে ‘ঘটনা’-গুলোর কথা বলছিলাম । ফার্স্ট বয় নিত্যানন্দ ম্যালেরিয়ায় পড়ে হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষাটা দিতে পারল না, এর সঙ্গে অঞ্জলি দেবার সময়ে প্রসাদের থালার দিকে তাকানোর আসলে কিন্তু কোনও সম্পর্ক নেই । এ দুটো সম্পূর্ণ আলাদা আলাদা ঘটনা, কোনওক্রমে পর পর ঘটে গিয়েছে বলে ওইরকম মনে হচ্ছে, যেন আগেরটাই পরেরটার কারণ । আসলে কাকতালীয় । মানে, তালগাছের ওপর বসে থাকা কাকটা উড়ল বলেই ধুপ করে তালটা পড়ল, এই রকম চিন্তা । হরিনাম করতে গিয়ে ঠাম্মার নড়া দাঁত পড়ে যাওয়াটাও একদম একই ব্যাপার । ওটা পড়ো পড়ো করছিল, যে কোনও সময়েই পড়তে পারত, ঘটনাচক্রে ঠিক ওই সময়েই পড়েছে । আর কাজের মাসীর ব্রহ্মদৈত্যটা আর কিছুই নয়, হাওয়ায় দুলতে থাকা বড়কাকার পাজামা । সকালে কেচে-টেচে ছাতের দড়িতে শুকোতে দেওয়া হয়েছিল, দুপুরের শেষের দিকে কখন যে উড়ে গিয়ে বেলগাছের ডালে আটকে ঝুলছিল, কেউ দেখেনি । সন্ধেবেলা ওটাকে দেখেই মাসী ভেবেছে, ডালে বসে ভুত বুঝি পা দোলাচ্ছে ।

    আর পাঁচুগোপাল ? তার ব্যাপারে আসল কথাটা তার বাবা তো বলেই দিয়েছে, কিন্তু সেটা শেষে বলব, আগেই বলেছি ।

    তবে, এখানে একটা কথা বলে রাখা উচিত । বিজ্ঞান কী সব জানে ? না, তা তো হতেই পারে না । সবই যদি জানবে তাহলে তো গবেষণা-টনা লাটে উঠত, নতুন করে আর কিছুই জানার থাকত না । এই যে কোটি কোটি বিজ্ঞানী প্রতিমুহূর্তে গবেষণা করে চলেছেন আমাদের জ্ঞানকে আরও একটু এগিয়ে নিয়ে যাবার জন্যে, তার আর তবে কীই বা দরকার ছিল ? আচ্ছা, ঠিক কথা । কিন্তু, তাহলে আবার উল্টো দিকের কথাটাও তো ভাবতে হয় ! ধরা যাক এমন যদি হয় যে যাচাই করে দেখা গেল যে সত্যিই অদ্ভুত কিছু একটা ঘটেছে, অথচ বিজ্ঞানের হাতে তার যৌক্তিক ব্যাখ্যা তখুনি হাজির নেই, তখন কী হবে ? তখন কি আমরা অলৌকিককে মেনে নিতে রাজি থাকব ?

    এর পরিষ্কার উত্তর হচ্ছে, না, আমরা কোনওদিনই অলৌকিকতাকে মেনে নিতে রাজি থাকব না । কারণ, অলৌকিকতার বিরোধিতা করতে গেলে সবকিছুর রেডিমেড ব্যাখ্যা পকেটে নিয়ে ঘোরার দরকার নেই । কোনও একটা জিনিস আমার জানা না-ই থাকতে পারে, কারুরই জানা না থাকতে পারে । যা জানি না তা একদিন ঠিকই জেনে নেব, এই মনোভাব নিয়েই তার মোকাবিলা করতে হবে । আগেকার মানুষ যা জানত না তা আজ আমরা জানি, আর আমরা আজ যা জানি না তা ভবিষ্যতের মানুষ জানবে । এটাই সত্যি, এটাই বাস্তব । যা জানি না তা-ই অলৌকিক, তার পেছনে কোনও যৌক্তিক কারণ থাকতে পারে না --- এমনটা যদি ভেবে নিই, তাহলে আমাদের সব জ্ঞানের তো ওখানেই ইতি ! ওইটা একবার মানলেই আমাদের সমস্ত জ্ঞানভাণ্ডার এক মুহূর্তে সাফ হয়ে যাবে । সেইজন্যে, ‘আমি জানি না, খোঁজখবর করে দেখতে হবে’ এই কথাটা বলতে বিজ্ঞান সবসময় রাজি, কিন্তু অলৌকিকের গল্পে যেতে মোটেই রাজি নয় । আর এই নিয়েই বিজ্ঞানের সাথে অলৌকিকের চিরন্তন লড়াই ।

    প্রাচীন কুসংস্কারকে হঠিয়ে বিজ্ঞান আজ পেয়েছে নিজের আসন, সে গল্প আমরা জানি । কিন্তু বিজ্ঞানের আলো আজও বড় কুণ্ঠিত, আজও সে পৌঁছয়নি অনেক অন্ধকার গুপ্ত কুঠুরিতে । অলৌকিকের বিরুদ্ধে লড়াই তাই সমানে চলেছে আজও । কীভাবে ? সেটা তাহলে এবার বলি একটু ।

    অলৌকিকের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান আর যুক্তির লড়াই চলছে সেই প্রাচীন যুগ থেকেই । কুসংস্কার আর অন্ধবিশ্বাসের রক্তচক্ষু যেমন আছে, তেমনি প্রতিস্পর্ধা আর প্রশ্নও আছে চিরকালই । প্রাচীন গ্রিসে এপিকিউরাস, প্রাচীন ভারতে চার্বাকপন্থীরা, মধ্যযুগীয় মধ্যপ্রাচ্যে মুতাজলা দার্শনিক সম্প্রদায়, আধুনিক যুগের গোড়ায় ব্রিটেনে ফ্রান্সিস বেকন, অষ্টাদশ শতকে ব্রিটেনে ডেভিড হিউম এবং ফ্রান্সে ভলতেয়র-দিদেরো-এলভেতিউস-ওলবাক, এবং আজকের দিনে অসংখ্য বিজ্ঞানী-দার্শনিক-সমাজবিদ ও কুসংস্কারবিরোধী আন্দোলনের কর্মীরা --- এঁদের মধ্যে দিয়ে চলেছে অলৌকিকের বিরুদ্ধে যুক্তি আর বিজ্ঞানের সংগ্রাম । বিশ শতকের মহাবিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেছিলেন, তিনি দেখতে চান, ঈশ্বর ইচ্ছে করলে এই জগতটাকে অন্যভাবে বানাতে পারতেন কিনা । একথার মধ্যে লুকিয়েছিল অলৌকিকের ধারণা এবং তার প্রতি বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জের সারাৎসার । জগতের সবই যদি যৌক্তিক নিয়ম দিয়ে চলে আর বিজ্ঞান যদি তা জানতে পারে, তাহলে তো সৃষ্টি-স্থিতি-প্রলয় সবই হবে বস্তুর নিয়মকানুন দিয়ে নির্ধারিত, সেখানে ঐশ্বরিক লীলার জন্য কোনও জায়গা থাকবে না । অলৌকিকতার জন্য আসন বিছানো থাকবে শুধু সেখানেই, যেখানে আছে যুক্তির ফাঁক । কিম্বা হয়ত উল্টো করে বলা যায়, যুক্তির টান টান জালটি যেখানে যেখানে ছেঁড়া, সেই সব গহ্বরের ঠিক তলাতেই পাতা থাকে অলৌকিকের ফাঁদ । আইনস্টাইনের বিজ্ঞানী-মানস চেয়েছিল ওই জালটির সব গর্ত মেরামত করে এক সর্বব্যাপী যুক্তির জাল বানাতে, আবার তার তলায় হয়ত ছিল একান্ত মনুষ্যসুলভ এক সংশয়ও --- অতবড় কাজটা শেষপর্যন্ত পেরে ওঠা যাবে তো ? সব বিজ্ঞানীর মনেই হয়ত থাকে এই প্রশ্ন । কিন্তু তাঁর বৈজ্ঞানিক সত্তা সব সময়ই ভরসা যুগিয়ে চলে --- পারা যাবে, নিশ্চয়ই পারা যাবে । সেটা তুমিও জানো, না হলে কি আর গবেষণা চালিয়ে যেতে পারতে ? গবেষণাটা করছ কেন বলতো ? যুক্তির সর্বব্যাপী জালের আরও একটি ছিন্ন সূত্র শক্ত করে টেনে বাঁধবার জন্যই তো --- তাই নয় কি ? এমনি করে তোমরা যুগের পর যুগ, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে চালাবে মানবীয় জ্ঞানের অনিঃশেষ অভিযান, আর অলৌকিকের আসনটি হয়ে পড়বে ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর ।

    অবশ্য এখানে একটা প্রশ্ন থাকছে । অলৌকিক কি শুধু সেখানেই, যেখানে সম্যক জ্ঞানের অভাব ? অবশ্যই না । যা জানা আছে তার মধ্যেও থাকতে পারে অলৌকিকতা, যদি যা জানা আছে তাকে স্বীকার করবার ইচ্ছেটুকু জলাঞ্জলি দেওয়া যায় । ওই যে গোড়াতে পাঁচুগোপালের কথা বলছিলাম, মনে আছে তো ? সেই যে ফেলটুস পাঁচু, যে নাকি নারায়ণের সিন্নি খেয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষাটা উৎরে গিয়েছিল । পাড়া-পড়শি আত্মীয়স্বজন সব নারায়ণদেবের কৃপা আর চমৎকার সিন্নির কথা বললেও পাঁচুর বাপ কিন্তু বলেছিল অন্য কথা, যদিও কেউ তা কানেই তোলেনি । সে বলেছিল, সিন্নি-টিন্নি কিছু নয়, মেলা গাঁটের কড়ি খরচা করে গুচ্ছ গুচ্ছ মাস্টার রাখা আর ফেল করলে সারারাত গোয়ালঘরে বেঁধে রাখার হুমকি --- এটাই নাকি পাশের আসল কারণ । কিন্তু তার কথা কে আর গ্রাহ্যি করে । কোথায় বলে নারায়ণের সিন্নি আর কোথায় পাঁচুর বাপ, ছ্যাঃ !

    অলৌকিকের ফাঁদ, অতএব, থাকছেই । অজ্ঞানে এবং সজ্ঞানেও । আর তাই সেই সঙ্গে থাকছে অন্ধকার ও অযুক্তির অত্যাচার, থাকছে তার কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ । যুক্তির জালটা আমাদের হাতেই আছে, কিন্তু এবার ওটাকে কাজে লাগাতে হবে । আমরা প্রস্তুত তো, অলৌকিকের ফাঁদ থেকে বেরিয়ে আসতে ?
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৪ আগস্ট ২০১৯ | ৩৯১৭ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সুদীপ দে সরকার | 237812.69.453412.98 (*) | ০৭ আগস্ট ২০১৯ ০৪:২৯49207
  • ছোটদের জন্য লেখা থেকে কত বুড়ো যে চুপি চুপি পড়ে নিয়ে নিজেদের শতছিদ্র আইডিয়া রিপেয়ার করে নিল, সে কী কেউ জানতে পারল?
  • Swati Ray | 237812.68.454512.192 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৯ ০২:০৯49208
  • খুব কাজের লেখা!
  • Debasis Bhattacharya | 236712.158.782323.11 (*) | ০৮ আগস্ট ২০১৯ ০৪:৫৬49209
  • যাক, এইটা পড়ার মত অন্তত দু-চারজন কিশোরবয়স্ক আছেন তবে !
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন