এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • লাইনে দাঁড়ান

    Tapas Kumar Das লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ১৩ মে ২০১৯ | ২৩৬৪ বার পঠিত
  • ভোট বুথে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় না। বুথে। বুথ, একটা ঘেরা ঘর, সেখানে। ঘরে একটা যন্ত্র থাকে, যন্ত্রে বোতাম। খুব সাধারন যন্ত্র, গ্ল্যামার নেই, যন্ত্রে মিম বানানো যায়না, কারো বানানো মিম রিগ্রেসিভ না প্রোগ্রেসিভ তা নিয়ে তুমুল আলোচনাও করা যায়না। শুধু যন্ত্রের বোতাম টেপা যায়। টিপে, ক্ষমতাকে উল্টে দেওয়া যায়। মিম বানিয়ে, মিম নিয়ে পলিটিক্যাল কারেক্টনেস সংক্রান্ত আলাপ আলোচনা করে, কমেন্ট লিখে, বানী দিয়ে যা করা যায়না। করতে গেলে বোতাম টিপতে হবে।

    বোতাম টিপবেন। বুথে গিয়ে। ফেসবুকে নয়। বুথ, একটা ঘেরা ঘর, সেখানে যাবেন, সেখানে যন্ত্র আছে, তাতে বোতাম টিপবেন।

    ক্ষমতা জানে, মানুষ স্বাধীন ভাবে বোতাম টিপতে পারলে, সমস্যা আছে। বিপদ। তাই রাষ্ট্র ওই বোতাম অবধি আপনাকে পৌঁছতে না দেওয়ার চেষ্টা করবে। মিম বানানো নিয়ে, মিম রিগ্রেসিভ কিনা সেই নিয়ে আপনার প্রোগ্রেসিভ আলোচনা নিয়ে, রাষ্ট্রের মাথাব্যথা নেই। তাই রাষ্ট্র আপনাকে ফেসবুকে প্রোগ্রেসিভ হতে খুব একটা বাধা দেবেনা। কিন্তু বোতাম টিপতে বাধা দেবে। হয় পেশিশক্তি দিয়ে, বা লোভ দেখিয়ে। বা আপনার বুদ্ধি ঘুলিয়ে দিয়ে - আপনি তখন মনে করবেন আপনার ভার্চুয়াল বিপ্লব ই সরকার গড়বে। আপনি ভুলে যাবেন ভারতবর্ষে নয়শ মিলিয়ন ভোটার, যার মাত্রই এক ক্ষুদ্র ভগ্নাংশ ফেসবুক ব্যাবহার করেন। আপনি ভুলে যাবেন যতোই মিম বানান বা অন্যের বানানো মিমের রাজনৈতিক শুদ্ধতার বিচার করুন, তাতে ভারতবর্ষের কিছু আসে যায়না, জনগণের কিছু আসে যায়না। ক্ষমতা উল্টে দিতে গেলে বোতাম টিপতে হবে। গিয়ে। পৌঁছে। দাঁড়িয়ে। আপনার সমূহ জ্ঞান এবং পলিটিক্যাল কারেক্টনেস হয়তো আপনার পড়শির চিন্তা ধারা পূতপবিত্র করে তুলতে পারবে, কিন্তু পেশিশক্তির বাধা কাটিয়ে বোতাম অবধি পৌঁছতে হবে সেই জ্ঞানকে প্রয়োগ করতে হলে। পৌঁছতে না পারলে? পৌঁছতে না পারলে সুকুমার রায়।

    বিদ্যাবোঝাই বাবুমশাই চড়ি শখের বোটে
    মাঝিরে কন বলতে পারিস সূর্য কেনো ওঠে ...

    রাষ্ট্র বিদ্যাবোঝাই বাবুমশাই দের চেনে। জানে যে বুথে যাওয়ার রাস্তায় একটা পেটো, না না, পেটো নয়, একটা বুড়িমা বা দুলালের চকোলেট বোম টপকে দিলেই আমরা শুড়শুড় করে ঘরে ঢুকে যাবো (আর রাজনীতিতে দুর্বৃত্তয়ন নিয়ে নেটের পাতায় ভারি ভারি কমেন্ট লিখে ফেলব), আর তারা হুড়হুড় করে ছাপ্পা মেরে বেরিয়ে যাবে।

    তারা হাসে।

    জানেতো, পাশের ক্লাবে রাত দুটো অবধি মাইক বাজলেও আমরা গিয়ে ধমকে থামাতে পারিনা, ধ্বকে কুলোয় না। বদলে পরের দিন এই নিয়ে পোস্ট দি সমাজ টা কোথায় যাচ্ছে সে বিষয়ে জোরদার বক্তব্য সহ। আমরা যাবো পেটোর ভয় কাটিয়ে বোতাম টিপতে? দেশ ও সমাজের কথা ভেবে ক্ষমতা উল্টোতে?

    আমরা খুব আলোচনা চর্চা করবো, কী ভাবে কী করা উচিৎ, কোনটা প্রগতি কোনটা দুর্গতি - কিন্তু সেই গন্ডির বাইরে আমাদের নজর যাবেনা, বুঝতেই পারবোনা এ ক্রান্তিকালে এসব অর্থহীন, মহাকালের প্রায়রিটির লিষ্টের অনেক নীচে আমাদের এই উৎসাহী জ্ঞানচর্চা -

    The smart way to keep people passive and obedient is to strictly limit the spectrum of acceptable opinion, but allow very lively debate within that spectrum—even encourage the more critical and dissident views. That gives people the sense that there’s free thinking going on, while all the time the presuppositions of the system are being reinforced by the limits put on the range of the debate.

    বলেছিলেন চমস্কি।

    রাজনৈতিক শুদ্ধতা খুব ভালো জিনিস। অবশ্যই তার চর্চা করবেন। কিন্তু এখন, বুথ। কিন্তু এখন, বোতাম টেপা।

    তাই ভোট দেবেন। যদি মনে করেন সেরকম পছন্দসই প্রার্থী পাচ্ছেন না, তাহলে সবকজন খারাপের মধ্যে সবচেয়ে কম খারাপ যাকে মনে করবেন, তাঁকেই দেবেন। তিনি কে হবেন, সেটা আপনি ঠিক করবেন আপনার বিচার বিবেচনা এবং রাজনৈতিক মতাদর্শ অনুযায়ী। যাকেই দিন, কোন একজন প্রার্থীকেই দেবেন। নোটায় দেবেন না। এবারের সাধারন নির্বাচন অত্যন্ত ক্রুশিয়াল। ভারতবর্ষ এরকম টালমাটাল রাজনৈতিক অবস্থায় আগে এসে দাঁড়ায় নি কখনো। এই নির্বাচনে প্রতিটি ভোট মূল্যবান। প্রত্যেকটি ভোট। আপনার অমূল্য ভোট টি নোটায় মেরে দার্শনিক ধ্যাষ্টামো করবেন না অনুগ্রহ করে, অন্ততঃ এবারের মতো। এই ক্রান্তিকালে সেটা বিলাসিতা হবে।

    খুব গরম, অসম্ভব খারাপ, প্রায় প্রাণঘাতী ওয়েদার, রাস্তায় পাঁচ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকলে মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পড়ে যাবো। আমার নিজেরই হচ্ছে। জানি। অনুগ্রহ করে একটা দিন সেই কষ্টটা নিন। এই একদিনের কষ্টের বিনিময় মূল্য অপরিসীম। আগমী পাঁচ বছর, বা হয়তো তারও বেশি অনেক যন্ত্রণা নিতে হতে পারে, একদিনের এই কষ্টের কাছে নতিস্বীকার করে লাইনে দাঁড়ানো এড়িয়ে গেলে।

    হয়তো বোমা পড়বে, হয়তো ওয়ান শটার নিয়ে দাপিয়ে বেড়াবে রাষ্ট্রের পেশীশক্তি। রেপ থ্রেট দেবে বুথে যেতে গেলে । ভয় পাওয়া স্বাভাবিক। আমিও পাই। বৌ বাচ্ছা আছে, ভীতু মধ্যবিত্ত আমিও, আমার একেবারেই কোন এক্সট্রা সাহস নেই আপনাদের তুলনায়। আসুন, বেঁধে বেঁধে থাকি, যেন একা ভয় না পেতে হয়, যেন ভয়ের সময়ে একা হয়ে যেতে না হয়। আসুন। হাত ধরুন। একসাথে। বুথে যাবো। বোতাম টিপবো। ওটা অধিকার। আমাদের অধিকার। ভোট দিন। রাষ্ট্রর চোখ রাঙ্গানি নস্যাৎ করে দিতে ওটাই একমাত্র অস্ত্র। সে রাষ্ট্রর, ক্ষমতার, পতাকার রং যাই হোক না কেন।

    ভোট দিন। প্রার্থীকে দিন। নোটায় নয়। দেশের, সমাজের, এই অস্থির সময়ে যাঁরা নিজেদের অরাজনৈতিক ভেবে শ্লাঘা বোধ করেন, সেইসব মূঢ় দের করুণা করুন -

    The worst illiterate is the political illiterate, he doesn’t hear, doesn’t speak, nor participates in the political events. He doesn’t know the cost of life, the price of the bean, of the fish, of the flour, of the rent, of the shoes and of the medicine, all depends on political decisions. The political illiterate is so stupid that he is proud and swells his chest saying that he hates politics. The imbecile doesn’t know that, from his political ignorance is born the prostitute, the abandoned child, and the worst thieves of all, the bad politician, corrupted and flunky of the national and multinational companies.

    (Bertold Brecht)
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ১৩ মে ২০১৯ | ২৩৬৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে মতামত দিন