এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়নঃ মিথ, ইতিহাস ও রাজনীতি

    Samrat Amin লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৩৪১১ বার পঠিত | রেটিং ১ (১ জন)
  • কাশ্মীরে ডোগরা রাজত্ব প্রতিষ্ঠিত হবার পর তাদের আত্মীয় পরিজনেরা কাশ্মীর উপত্যকায় বসতি শুরু করে। কাশ্মীরি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মানুষেরাও ছিলেন। এরা শিক্ষিত উচ্চ মধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত শ্রেনি। দেশভাগের পরেও এদের ছেলেমেয়েরা স্কুল কলেজে পড়াশোনা করেছে। অন্যদিকে কাশ্মীরে শিখ সম্প্রদায়ের মানুষ ব্যবসা বানিজ্যের সঙ্গে যুক্ত ছিল। সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিমরা ছিল কৃষি শ্রমিক, শিল্প সামগ্রী ও পর্যটন শ্রমিক। ডোগরা রাজাদের পৃষ্ঠপোষক ছিল হিন্দু জমিদার মালিক ও কাশ্মীরি পন্ডিতরা। প্রজাদের সংখ্যাগরিষ্ঠ অংশই মুসলিম। মালিকশ্রেনির অত্যাচারহেতু দিনমজুরদের চাপা ক্ষোভ ছিল। ডোগরা রাজারা নিজেদের পরিজন ও পৃষ্ঠপোষক উচ্চ মধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষদের সরকারি উচ্চ পদে বসাতো।

    ডোগরা রাজা প্রতাপ সিং এর আমল অব্দি ঠিক ছিল। কাশ্মীরি পন্ডিতদের একাংশ জমিদারিত্ব নিয়ে ডোগরাদের সঙ্গে ক্ষমতা ভাগ করে খাচ্ছিল। শ্রমিকের ন্যায্য পারিশ্রমিকের জন্য মাঝে মধ্যে প্রজাবিদ্রোহ যে হত না তা নয়। সেরকম হলে প্রতাপ সিং এর সেনারা ডান্ডা মেরে প্রজাদের রাজতান্ত্রিক সবক শিখিয়ে দিতেন। টিন্ডেল বিস্কো লিখেছেন, মুসলিমরা ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাত না, কারন ডোগরা রাজার আমলে তাদের চাকরি মিলত না। মুসলিমরা জনসংখ্যায় ৯৬% হয়েও শিক্ষায় ১% এরও কম। ডোগরা রাজার উপর ভরসা হারিয়ে কয়েকজন মৌলানা ভাইসরয় লর্ড রিডিংকে চিঠি লিখে মুসলিমদের আর্থসামাজিক অবস্থা ও শিক্ষা বিস্তারের জন্য উদ্যোগ নিতে অনুরোধ করে। চিঠির বয়ান ছিল -

    "বর্তমানে কাশ্মীরের মুসলিমরা শোচনীয় পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে। তাদের শিক্ষা সংক্রান্ত বিষয়টি চরমভাবে অবহেলা করা হচ্ছে। জনসংখ্যার ৯৬% হয়েও শিক্ষার হার মাত্র ০.8%... এতদিন আমাদের যাবতীয় দাবি, অধিকার ও ক্ষোভের প্রতি চরম উদাসীন থেকেছে রাষ্ট্র। আমরা মহামতি মহারাজের প্রতি এতদিন ধৈর্য্য রেখেছি, কিন্তু ধৈর্যেরও একটি সীমা আছে... দেশের হিন্দু পন্ডিতরা জনসংখ্যায় ৪% হয়েও প্রায় সমস্ত সরকারী বিভাগে ওরাই তর্কাতীতভাবে প্রভুত্ব করছে।"
    (Representation to the Viceroy, Lord Reading by Khadmans of Khanqah Muallah, Shah Hadman, Srinagar, 29 Sept 1924 as quoted in Muslims of Kashmir, RI/I/I474, OICI).

    চিঠি পেয়ে ভাইসরয় লর্ড রিডিং রাজা প্রতাপ সিংকে তদন্তের নির্দেশ দেন। নামকেওয়াস্তে তদন্তের পর "কাশ্মীর দরবার" প্রতিবেদন প্রকাশ করে যে ভাইসরয় এর কাছে এই দাবি যারা করেছে তার আসলে "দেশদ্রোহী"। ভাইসরইকে চিঠিতে যাদের স্বাক্ষর ছিল তাদের তিরস্কার করে কাশ্মীর থেকে তাড়িয়ে দেওয়া হয়।

    প্রজাপীড়ন ও শ্রমিকদের শ্রম চুরি করে রাজতন্ত্র ও সামন্ততন্ত্র বেশ ফুলেফেঁপে উঠেছিল। কিন্তু হরি সিং নতুন সমস্যা দানা বাঁধে শেষ মহারাজা হরি সিং এর আমলে। সিংহাসনে আরোহন করেই সরকারী পদগুলি তিনি কেবল তাঁর বংশের জম্মুবাসীদের দিতে শুরু করলেন। স্বার্থে আঘাত লাগায় কাশ্মীরি পন্ডিতদের টনক নড়ে। তারা আওয়াজ তুলল কেন সরকারি পদগুলি "বহিরাগতদের" দেওয়া হবে। সেইসময় "কাশ্মীর কাশ্মীরিদের" এই স্লোগান কাশ্নীরি পন্ডিতরাই তুলেছিল। তাদের প্রায় একচ্ছত্র সামাজিক ক্ষমতায় "বহিরাগতরা" যাতে ভাগ বসাতে না পারে সেকারনে ১৯২৭ সালে রাজার উপর চাপ সৃষ্টি করে "Hereditary State Subject" নামে একটি আইন পাস করিয়ে নেয়। এই আইনের বলেই তারা যেমন বহিরাগতদের সরকারি চাকুরিতে নিয়োগ বন্ধ করে দেয়, তেমনি কাশ্মীরে বাইরের কারুর জমি কেনার রাস্তাও বন্ধ করে দেয়।

    গত শতাব্দীর শেষ দশকের শুরু থেকে উপত্যকা জুড়ে যে বিদ্রোহের আগুন জ্বলে উঠেছিল সেটা ঘোলাটে হয়েছিল কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়নকে কেন্দ্র করে। ১৯৮১র আদম সুমারী অনুযায়ী কাশ্মীরে হিন্দু জনসংখ্য ছিল ১২৪০৭৮ জন। মোট জনসংখ্যার ৪%। এদের মধ্যে একটা বড় অংশই কাশ্মীরি পন্ডিত শ্রেনির। ১৯৮৯-৯০ সালে এদের জনসংখ্যা ছিল ১৩০,০০০ থেকে ১৪০,০০০ এর মতো। বর্তমানে এদের বড় অংশ ভারতের বিভিন্ন বড় বড় শহরে বসবাস করে। দায়িত্বশীল উচ্চ প্রশাসনিক পদে বর্তমানে কর্মরত। ১৯৯০ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মার্চের দিকে বিদ্রোহ যখন চরমে উঠল তখন প্রায় এক লক্ষ কাশ্মীরি পন্ডিত উপত্যকা ছেড়ে জম্মু ও দিল্লী শহরে পালিয়ে এসেছিল। এই ঘটনাটি ভারতের ধর্মীয় রাজনীতির ইতিহাসে অন্যতম বিতর্কিত ঘটনা। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক প্রভাবিত কাশ্মীরি পন্ডিতদের সংগঠন বারংবার অভিযোগ তোলে যে নিছক "এথনিং ক্লিঞ্জিং" এর জন্য তাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত হিংসা ও সন্ত্রাস চালানো হয়েছে। পাকপ্রভাবিত ইসলামি সংগঠনগুলি জেহাদের নিমিত্তেই কাশ্মীরি পন্ডিতদের তাড়িয়েছে বলে তারা মনে করে। এমনকি বিতাড়নের সময় মাইকে ইসলামি স্লোগানও ব্যবহার করা হয়েছে বলে তাদের দাবি।

    অন্যদিকে আজাদি সংগঠন গুলির দাবি যে আন্দোলনের চরিত্রকে ঘোলাটে করে দেওয়ার জন্য ভারতীয় প্রশাসন এই ষড়যন্ত্রটি করেছে। তারা আরও অভিযোগ করে যে বিশেষ করে জম্মু কাশ্মীরের তৎকালীন রাজ্যপাল জগমোহন সিং ইচ্ছাকৃতভাবে কাশ্মিরী পন্ডিতদের মনে ইসলামোফোবিয়ার আগুন জ্বালিয়েছে যাতে করে স্বাধীনতা আন্দোলনের চরিত্র সাম্প্রদায়িক রূপ পায়। এমন একটি পূর্বপরিকল্পিত পরিবেশ তৈরি করা হয়েছে যাতে তারা কাশ্মীর ছেড়ে পালায়।
    পালানোর জন্য ট্রান্সপোর্টের সুব্যবস্থাও রাখা ছিল। কেন্দ্রে তখন ভিপি সিং এর নেতৃত্বে ন্যাশনাল ফ্রন্ট সরকার। বিজেপি ছিল শরিক। বিজেপির কাছের লোক জগমোহনকে কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসাবে পাঠানো হয়। এই সেই জগমোহন যিনি ১৯৮৪তে দিল্লীর মুসলিম বস্তিতে বুল ডজার চালিয়ে বিখ্যাত হয়েছিলেন। জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসাবে তার আগে জেনারেল কৃষ্ণ রাও মাত্র ছয়মাস পার করেছেন। তার মধ্যেই হঠাৎ তাকে সরিয়ে এমন একজন মানুষকে রাজ্যপাল বানানো হল যিনি মুসলিমবিদ্বেষী হিসাবে খ্যাত। প্রতিবাদে ফারুখ আব্দুল্লা পদত্যাগ করলেন। বিধানসভা ভেঙে গেল। রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হল। জগমোহন হয়ে উঠলেন কাশ্মীরের সর্বময় কর্তা। মুজাহিদ গোষ্ঠী কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়নের জন্য দায়ী হলে তাদের নিরাপত্তা দিতে না পারার জন্য জম্মুর রাজ্যপাল ও বিজেপির সমর্থনপুষ্ট ভিপি সিং সরকারকে আগে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো উচিৎ। এই দায় তারা নিতে রাজি কি ? মনে হয় না। তাবলীন সিং তাঁর লেখায় বলেছেন, "জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যপাল হিসাবে জগমোহন সিং এর নিয়োগ কেন্দ্রীয় সরকারের ঐতিহাসিক ভুল। নবনির্বাচিত ভিপি সিং এর সরকারে এমন কেউ ছিল না যে এই সত্য কথাটি ভিপি সিং এর কানে তুলবে।" (Singh, Tragedy of Errors, p-131)

    এসময় জগমোহনের নেতৃত্বে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস, গনহত্যা, লুন্ঠন চরম আকার ধারন করে। কাশ্মীরিদের উপর দমনপীড়নে রেকর্ড গড়লেন তিনি। ১৯৯০ এর ২১ থেকে ২৩শে জানুয়ারী ৩০০ কাশ্মিরীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে। কয়েকবছরের পরিসংখ্যান ধরলে সংখ্যাটি আরও বহুগুন বেড়ে যাবে। দেশভাগ পরবর্তী যুগে কাশ্মীরে এমন গনহত্যার নজির বহু। জানুয়ারী মাসের এই গনহত্যার প্রতিবাদে কাশ্মিরীরা ১৯৯০ এর ১লা মার্চ যুক্তিবাদী দিবসটিকে মুক্তিকামী দিবস হিসাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিল।

    স্বাধীনতাকামী মুজাহিদদের দাবি ছিল যে তারা যাদের ভারত সরকারের চর বলে মনে করত তাদেরই হত্যা করত। ১৯৮৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে পরের বছর ফেব্রুয়ারি মার্চ অব্দি যত জন তাদের হাতে খুন হয়েছে তাদের মধ্যে কিছু উচ্চ প্রশাসনিক ও বিভাগীয় পদে কর্মরত কাশ্মীরি পন্ডিত ছিলেন। "ইন্ডিপিন্ডেন্ট ইনিসিয়েটিভ অভ কাশ্মীর" এর রিপোর্ট অনুযায়ী চর সন্দেহে মিলিট্যান্টদের হাতে খুন হওয়া ১০০ জনের মধ্যে ৩২ জন হিন্দু, বাকি ৬৮ জন মুসলিম। মুজাহিদদের মতানুযায়ী, "একজন বিশ্বাসঘাতক ৫০ জন দখলদার ভারতীয় সেনার সমান। হিন্দু মুসলিম যায় হোক, আমরা কাউকে ছাড়ব না" (ইন্ডিপিন্ডেট পত্রিকা, ১০.৬.৯০)। হাই প্রোফাইল কাশ্মীরি পন্ডিত যারা জেকেএলএফ এর হাতে শ্রেণীশত্রু হিসাবে খুন হয়েছিল তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন বিজেপির কাশ্মীর ইউনিটের প্রেসিডেন্ট, একজন অবসরপ্রাপ্ত বিচারক যিনি এক দশক আগে জেকেএলএফ এর সহপ্রতিষ্ঠাতা মকবুল বাটকে মৃত্যুদন্ড দিয়েছিলেন এবং ভারত-সরকার পোষিত দূরদর্শনের শ্রীনগর কেন্দ্রের ডিরেক্টর। এরকম প্রভাবশালী কাশ্মীরি পন্ডিতদের হত্যার ফলে এই সম্প্রদায়ের সাধারন মানুষের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছিল। সেই ভীতি থেকেই তারা ভিটেমাটি ছেড়েছে। কিন্তু জেকেএলএফ এর বয়ান অনুযায়ী এই সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষকে হত্যা করা নয়, বরং যেকোন ধর্মীয় সম্প্রদায় নির্বিশেষে ভারত সরকারের "চর" দের হত্যাই তাদের উদ্দেশ্য।

    পাশাপাশি একটা আর্থসামাজিক কারনও ছিল। কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়ন ইস্যুটিতে যে দীর্ঘ বছরের শ্রেনী সংঘাত রয়েছে সেটি আড়াল করার জন্য সাম্প্রদায়িক সংঘাতের বয়ান সামনে আনা হয়। সাম্প্রদায়িক রাজনীতির বাজারে বেশ লাভজনক পন্যও বটে। শুধু কাশ্মীরি পন্ডিত কেন, শিখ ও অপন্ডিত হিন্দু বিতাড়ন হল না কেন ? প্রশ্নগুলি উঠে আসবেই। কাশ্মীরের ইতিহাস গনহত্যা, অপহরন ও বিতাড়নের ইতিহাস। রাষ্ট্র ও মুজাহিদ গোষ্ঠী উভয়ের দ্বারাই সংগঠিত হয়েছে এগুলো। কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়নই বিতাড়নের একমাত্র ইতিহাস নয়। এর আগেও কাশ্মীরে বিতাড়ন হয়েছে দেশভাগের পরেপরেই।

    তখন পাক উপজাতিদের সহযোগে পুঞ্চ বিদ্রোহ তখন চরমে। ২৬ শে অক্টোবর, ১৯৪৭ হরিসিং ও নেহেরুর চুক্তির পরদিন ভারতীয় সেনা জওয়ানদের বিমান শ্রীনগর বিমানবন্দরে নামে। ভারতীয় সেনা জওয়ানদের তাড়া খেয়ে উপজাতি ও পুঞ্চ এলাকার কাশ্মীরি যুব বিদ্রোহীরা পিছু হটতে লাগল। তখন থেকেই শুরু হয় কাশ্মীরে মিলিটারি শাসন। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য আজাদ কাশ্মীর গঠিত হওয়ার পরেও এপারের কাশ্মীরে পাঠান উপজাতিরা হানা দিতে থাকে। বিদ্রোহের শক্তি ছিল পুঞ্চ এলাকার কাশ্মীরি যুবকরা। এরা প্রায় সবাই ছিল প্রাক্তন সেনা। তখন পুঞ্চ এলাকা ছিল রাজা ধ্যান সিং এর জায়গীরের অন্তর্গত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ৭০ হাজার কাশ্মীরি যুবক মহারাজের ডাকে অংশগ্রহন করেছিল। যুদ্ধ শেষ হলে তারা নিজ এলাকায় ফিরে আসে। ফিরে এসে দেখে মহারাজা বিবিধ জিনিসের উপর অহেতুক কর চাপিয়ে বসে আছেন। যেগুলো সাধারন প্রজাদের কাছে অসহ্য হয়ে উঠেছিল। অন্যদিকে মহারাজা তার সৈন্যদলের যুদ্ধফেরৎ মুসলিম যুবকদের নিতে চাননি। তার সৈন্যদলে কেবল হিন্দু ও শিখ যুবকরাই ছিল। ক্ষোভ পুঞ্জিভূত হতে লাগল মুসলিম যুবকদের। মুসলিমদের উপর নির্যাতন ও অবহেলা মাত্রা ছাড়ায়। লক্ষ লক্ষ মুসলিম নিধন হয়। গুজব ছড়ায় যে মহারাজা মুসলিম নিধনের উদ্যোগ নিয়েছেন। প্রানভয়ে ভিটেমাটি ছেড়ে পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে পালিয়ে যায় দুই লাখ মুসলিম (Ian Stephens, Pakistan, London, 1963, p-200)। কোন এক অদৃশ্য শক্তিবলে এই গনহত্যা ও বিতাড়নের ইতিহাস স্মৃতির আড়লে চলে গেছে।

    এই গনহত্যা ও বিতাড়নের জন্য একদা মুসলিম অধ্যুষিত জম্মুতে মুসলিমরা সংখ্যালঘু হয়ে যায়। তবে কাশ্মীরে কাশ্মীরি পন্ডিতরা সংখ্যালঘুই ছিল। বিভিন্ন সরকারী চাকুরিতে তাদের উপস্থিতি খুব বেশি ছিল। জনসংখ্যার বিচারে চাকুরিক্ষেত্রে কাশ্মিরী মুসলিমদের উপস্থিতি তেমন ছিল না। এটাকে স্থানীয় মুসলিমরা বঞ্চনার নজির হিসাবেই মনে করেছিল। মুসলিমদের প্রতি বঞ্চনার এই প্রবনতা ডোগরা রাজাদের সময় থেকেই চলে আসছে। কাশ্মীরি পন্ডিতরা বংশগতভাবে ডোগরা রাজাদের পৃষ্ঠপোষক ছিল। ফলতঃ ডোগরা রাজত্বের সময় মহারাজাদের আশীর্বাদে উচ্চ প্রশাসনিক পদগুলি কাশ্মীরি পন্ডিতরা দখল করে বসেছিল। তার উপর আবার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম জনগোষ্ঠীর সঙ্গে ডোগরা রাজাদের তেমন সখ্যতা ছিল না। যার দরুন সংখ্যালঘু হলেও পন্ডিতরা আর্থসামাজিক দিক দিয়ে অনেক এগিয়ে ছিল। ১৯৯০ এর জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি মাসে উপত্যকায় ধর্মান্ধ মৌলবাদী স্লোগান ধ্বনিত হয়েছিল বলে অভিযোগ আনা হয় তার কারন হতে পারে এই পুঞ্জীভূত ক্ষোভ।

    তবে ইসলামীয় স্লোগান আদৌ ব্যবহার হয়েছিল কিনা, সেটা রাজনৈতিক গিমিক কিনা সে বিষয়ে বিতর্ক রয়েছে। অনেকে মনে করেন সামাজিক বঞ্চনাজনিত ক্ষোভ ছিল আসল কারন। এহেন আর্থসামাজিক ভাষ্যটিকে সযত্নে আড়াল করা হয়। এই ঘটনার পর থেকে কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়ন ইস্যু ভারতের রাজনৈতিক ক্ষেত্রে বিশাল বড় ইস্যু হয়ে দাঁড়ায়।মিডিয়া প্রোপাগাণ্ডা কাশ্মীরে মিলিটারি শাসন জারি রাখার ক্ষেত্রে সবথেকে বড় যুক্তি হিসাবে কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়নের ঘটনাটিকে খাড়া করে। কিন্তু আশ্চর্যজনক ব্যপার হল কতজন কাশ্মীরি বিতাড়িত হয়েছে, কতজনকে হত্যা করা হয়েছে, এই সংক্রান্ত যে মামলা গুলি চলছে সেগুলো কতদূর এগিয়েছে সেসম্পর্কে কোন নির্ভরযোগ্য সরকারী তথ্য নেই। এক নামী সংবাদ সংস্থা আরটিআই করেও সদুত্তর পাইনি। জম্মু ও দিল্লীর শরনার্থী শিবিরের কাশ্মীরি পন্ডিতদের মধ্যেই বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ রয়েছে। তারা মনে করে ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে কাশ্মীরি পন্ডিতদের উদ্দেশ্যে দেওয়া প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে বিজেপির তেমন আগ্রহ নেই, কিন্তু বিষয়টি নিয়ে রাজনীতির খেলা খেলতে চরম আগ্রহ রয়েছে। এমনকি কাশ্মীরি পন্ডিতদের জন্য ঘোষিত তিনখানা প্যাকেজের মধ্যে দুইখানা প্যাকেজই নরেন্দ্র মোদির ক্ষমতার কুর্সিতে বসার অনেক আগের।

    সাম্প্রদায়িক হিংসা কাশ্মীরের ঐতিহ্য ছিল না। দেশভাগের সময় থেকেই এটা শুরু হয়েছে। বরং সম্প্রীতি ও সহাবস্থানই কাশ্মির ভূখন্ডের আদর্শ ছিল। সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যগতভাবে কাশ্মীরিরা সুফি ধারাকে এতদিন মেনে চলেছে। পীর দরগা মাজারে হিন্দু মুসলিম নির্বিশেষে সবাই যেত। নিজেদের জাতিগত সাংস্কৃতিক স্বাতন্ত্রতা ও মূল্যবোধকে বোঝাতে কাশ্মীরিরা "কাশ্মীরিয়াৎ" শব্দটি ব্যবহার করে। বাঙালীর বাঙালীয়ানার মতো। ধর্মীয় সমন্বয়, পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতিই "কাশ্মিরিয়াৎ" এর প্রানভোমরা। "কাশ্মীরিয়াৎ" আত্মপরিচয়ে কাশ্মীরের হিন্দু মুসলিম সবাই নিজেদের একাত্ম করতে পারে। ঠিক এই কারনেই কাশ্মীরের ইতিহাস নিয়ে আজীবন গবেষক অধ্যাপক সুমন্ত্র বসু কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়ন ইস্যু নিয়ে অন্বেষণ করতে গিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া পেয়েছেন। বহু কাশ্মীরি পন্ডিত যারা ভিটে ছেড়ে পালিয়ে গেছিলেন তাদের অনেকেই ফিরে এসেছেন। তাদের অনেকেই সেই সময় কিছু ধর্মান্ধ মুসলমানের উগ্রতার বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দেয়। কেউ কেউ বলেন কাশ্মীরি মুসলিমদের সঙ্গে তাদের ভাতৃত্বের সম্পর্ক ছিল, কিন্তু পাক মদতপুষ্ট "বন্দুক সংস্কৃতি" তাদের সম্পর্ক নষ্ট করেছে।

    আবার অনেক কাশ্মীরি পন্ডিত জানায় যে যেদিন তারা পুনরায় উপত্যকায় ফিরে আসে প্রতিবেশী মুসলিমরা তাদের সাদরে গ্রহন করে, গোটা মহল্লা তারা মিষ্টি বিতরন করে উৎসব পালন করে। আবার কিছু পন্ডিত স্বাধীনতাকামী মুজাহিদ গ্রুপের প্রতি সংহতি জানায়। কিছু মুজাহিদ গোষ্ঠীও পত্রপত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে কাশ্মীরি পন্ডিতদের স্বভূমিতে ফিরে আসার আহ্বান জানায়। সেই সঙ্গে তারা স্থানীয়দের সতর্ক করে দেয় যে কেউ যাতে পন্ডিতদের সম্পত্তি বেদখল করে না নেয়। ১৯৯০ এর অক্টোবরে বিজেপির জর্জ ফার্নান্ডেজ মুখ ফসকে বলে ফেলেছিলেন যে কাশ্মীরে কাশ্মীরি পন্ডিতদের জমিজায়গা, সম্পত্তি বেদখল হয় নি (Fernandes, India's Policies in Kashmir, p-291)। হিজবুল্লা নামে এক মুজাহিদ গোষ্ঠী ১৯৯১ এর নভেম্বরে এক কাশ্মীরি পন্ডিত দম্পতিকে অপহরন করেছিল। ৪৫ দিন পর তারা ছাড়া পায়। ফিরে আসার পর তাদের বয়ান ছিল,

    "এই সময়কালে বিভিন্ন সময়ে আমরা ৫৭টি মুসলিম বাড়িতে থেকেছি। তারা সবাই আমাদের প্রতি যথেষ্ট ভালবাসা ও আতিথেয়তা দেখিয়েছে। আমরা তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ। তাদের সহানুভূতির দরুণ আমরা পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার শক্তি পেয়েছি... আমরা গ্রামে গ্রামে ঘুরেছি। বহু মানুষের সাথে কথা বলেছি। বিভিন্ন মুজাহিদ গোষ্ঠীর সঙ্গে যুক্ত তরুণদের সাথে কথা বলে তাদের দাবি ও বক্তব্য জানার চেষ্টা করেছি। তাদের সঙ্গে আলোচনায় উঠে এসেছে শিক্ষা থেকে ধর্ম, সামাজিক জীবন, রাজনীতি, কাশ্মীরিয়ৎ, মানুষের সরল আবেগ সবকিছুই। তাদের কথায় কথায় বারবার উঠে এসেছে কিভাবে পারস্পরিক সম্পর্কের সেতু নির্মান করে সবার হৃদয় জেতা যায়। এইরকম আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে যতদিন গেছে কাশ্মীরিদের মধ্যে প্রেম ভালবাসা সদাশয়তার উপর আমাদের বিশ্বাস আরও পোক্ত হয়েছে।" [Khemlata Wakhloo and O. N. Wakhloo, Kidnapped: 45 Days with Militants in Kashmir (Delhi: Konark, 1993, 396)].

    দুইজন প্রথিতযশা বিচারপতি ভি.এম তারকুন্ডে ও রাজিন্দর সাচার এবং দুইজন শিক্ষাবিদ বলরাজ পুরি ও অমরিত সিং কাশ্মীর পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার জন্য ১৯৯০ এর মার্চ এপ্রিল মাসে কাশ্মীরে যান। সরজমিনে তদন্তের পর তারা বলেন যে কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়নের দায় জগমোহন সিং ও মুজাহিদ গোষ্ঠী উভয়েরই। কাশ্মীরের মানুষের উপর অত্যাচার চালিয়ে ভারত ভূখন্ড থেকে কাশ্মীরের মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে দেওয়ার দায় জগমোহন সিংকে নিতে হবে। অন্যদিকে মুজাহিদ গোষ্ঠী কাশ্মীর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মুশিরুল হক ও তাঁর সচিব আব্দুল গিলানি এবং হিন্দুস্তান মেসিন টুলস ওয়াচ ফ্যাক্টরির জেনারেল ম্যানেজার এইচ.এল খেরাকে হত্যা করেছে। তাদের দাবি যায় হোক না কেন তারা যত হত্যা ও অপহরনের ঘটনা ঘটাবে ততই রাষ্ট্রীয় দমনপীড়ন বাড়বে। হয়ত তারা চাই যে রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বাড়ুক, তাতে আন্তর্জাতিক নজর আকর্ষন করা যাবে।

    ভারতীয় মিডিয়া ও উগ্র হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিকরা প্রায়শই অভিযোগ করে এসেছে যে বাবরি মসজিদ কান্ডের পরে জম্মু কাশ্মীরে প্রচুর মন্দির ধ্বংস করা হয়েছে। এই বক্তব্যের সত্যতা যাচাই করার জন্য ১৯৯৩ সালের ফ্রেব্রুয়ারী মাসে দেশের প্রথম সারির একটি পত্রিকা অনুসন্ধান চালিয়েছিল। সাংবাদিকদের অস্ত্রসহ একটি তালিকা ধরিয়ে দেওয়া হয়েছিল। বিজেপির দিল্লী অফিস থেকে দেওয়া এই তালিকায় ছিল ২৩ টি জায়গার মন্দিরের নাম, যে মন্দির গুলো নাকি ধ্বংস করা হয়েছে। বিজেপির সর্বোচ্চ নেতা লালকৃষ্ণ আদবানী উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে তদন্তের আগে বললেন, " কাশ্মীরে যে এতগুলো মন্দির ধ্বংস করা হল, কেউ কিছু বলল না, কেন এই দ্বিচারিতা?" তদন্তকারীর দল বিস্তর তদন্ত করে এসে ছবি দেখাল যে ২৩ টি মন্দিরের মধ্যে ২১ টিই অক্ষত আছে। আর অন্য দুটি হালকা কিছু ক্ষতি হয়েছে, সেটা সহজেই সারিয়ে নেওয়া যায়। তদন্তকারীর দল প্রতিবেদন পেশ করল,

    "১৯৯০ এ কাশ্মীরি পন্ডিত বিতাড়নের পর যেসব গ্রাম গুলিতে এক দুটি পন্ডিত পরিবার রয়ে গেছে সেখানে মন্দির গুলো অক্ষত রয়েছে। এমনকি বেশ কিছু গ্রাম অস্ত্রধারী মুজাহিদে পরিপূর্ণ হওয়া সত্ত্বেও মন্দিরের দেওয়ালে কোন আঁচড় পড়েনি। পন্ডিত পরিবারের লোকেরাই মন্দির গুলোর দেখাশুনা করেন। প্রতিবেশী মুসলিমরা তাদের উৎসাহিত করেন মন্দিরে নিয়মিত পূজো দিতে"(India Today, 28 Feb. 1993, 22–25).

    এই প্রতিবেদনই বলে দিচ্ছে ধর্মীয় বিদ্বেষ নয়, বরং সমন্বয়ই কাশ্মীরের এতদিনের ঐতিহ্য। ঘৃণা নয়, সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতি নিয়ে পারস্পরিক সহাবস্থান, এটাই কাশ্মীরিয়াৎ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ | ৩৪১১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • laora lasun | 236712.158.895612.138 (*) | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০১:২৫47687
  • aro likhte thakun, loke januk je musalmaan namok niriho opapbiddho jati der ki bhabe juge juge victimise kora hoyeche
  • কৌশিক সাহা | 236712.158.676712.162 (*) | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০৪:৩৯47688
  • শ্রী(মতী) অসুন কি বিদ্রুপের চেষ্টা করছেন? তাই যদি করে থাকেন তাহলে ভাল হয়নি। বড্ড বেশি গোমূত্রের গন্ধ ।
  • মোবারক | 103.134.255.116 | ১০ অক্টোবর ২০২১ ২১:০৮499412
  • অনেক কিছু জানলাম, অনেক ঘোলাটে কথা পরিস্কার হল। ধন্যবাদ
  • জিৎ | 2409:4060:2d88:ffe1:bf40:75cd:bbf2:f70a | ১০ অক্টোবর ২০২১ ২২:৫২499414
  • এরকম যুক্তি ইদানিং অনেক শুনছি। একটা বিশেষ রাজনৈতিক দল এবং তাদের প্রিয় সংবাদ মাধ্যমও এরকম গোল গোল যুক্তি দেয়। এই যুক্তিগুলোর  অসারতা উদ্বাস্তু মাত্রেই বুঝতে পারবে। কেউ যেচে ভিটে মাটি ছেড়ে পালায় না। 
  • Jyotirmoy roy saikat | 37.111.202.88 | ১৮ মার্চ ২০২২ ১৫:০১504951
  • একবারে ফালতু ব্লগ, আসল সত্যতার কোনো কিছুই  তুলে ধরা হয় নি,  এটা বিভ্রান্তিকর। 
  • সে | 194.56.48.114 | ১৮ মার্চ ২০২২ ১৫:৪১504952
  • বেশ ভালো লেখা।
  • Smg Gsm | ১৯ মার্চ ২০২২ ১৭:০৭505004
  • তার মানে 19 জানুয়ারি হঠাত করে সবার শখ জাগলো ভারত ভ্রমণে বেরিয়ে পরি, বেশ বেশ।
  • chandidas | 2605:6400:30:f54d:e11d:74da:15b3:175d | ১৯ মার্চ ২০২২ ১৭:৩৬505005
  • খুব ভাল লেখা। ইউক্রেনের লোকরা যেমন পুতিনের আন্তরিক ভালবাসায় দেশ ছেড়ে দিগবিদিকে ছুটে যাচ্ছে, কাশ্মীরি পণ্ডিত ও বাংলাদেশি হিন্দুরাও গিয়েছিল। সবাই তো মিলেমিশে থাকতে ভালবাসে। এখানে হিংসার কোন ভূমিকা কোনদিনই ছিল না। ভূমিসংস্কার এভাবেই হয়।
  • এলেবেলে | ১৯ মার্চ ২০২২ ১৯:৩৩505011
  • চাড্ডিদের গা চিটপিট করছে বুঝি? তো নিন, দুটো রেফারেন্স দিয়ে গেলাম। পারলে নালিফাই করুন।
     
    ১. ১৯৪৭ সালের ২৬ অক্টোবর কাশ্মীরের পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের অধিকারের ভিত্তিতে মহারাজা হরি সিং-এর সঙ্গে নেহরুর যে চুক্তি সম্পাদিত হয়, সেটি ‘Instrument of Accession’ নামে পরিচিত। এই চুক্তিতে বলা হয়, কেবল প্রতিরক্ষা, পররাষ্ট্র ও যোগাযোগ ব্যবস্থা ছাড়া ভারত সরকার কাশ্মীরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপে করতে পারবে না। চুক্তিতে আরও বলা হয়, যত দিন না জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ গণভোটে নিজেদের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করছেন, শুধু তত দিন পর্যন্তই বন্দোবস্তটি অস্থায়ীভাবে বলবৎ থাকবে।
     
    অথচ অক্টোবর মাসে স্বাধীন ভারতে সংযুক্ত হওয়ার আগেই রাজা হরি সিং-এর নির্দেশে এবং জম্মু প্রজা পরিষদের সহযোগিতায় দুই থেকে আড়াই লাখ জম্মুবাসী গুর্জর মুসলিমকে পরিকল্পনা মাফিক হত্যা করা হয় বা পাকিস্তানে পালাতে বাধ্য করা হয়। মাত্র কয়েক মাসের মধ্যে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ (৬১%) জম্মুতে মুসলিম জনসংখ্যা ৩৫ শতাংশে নেমে আসে।
     
    ২. এ বিষয়ে ১৯৪৮ সালের ১০ অগস্ট লন্ডনের ‘দ্য টাইমস’ পত্রিকায় প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়: “2,37,000 Muslims were systematically exterminated – unless they escaped to Pakistan along the border – by the forces of the Dogra State headed by the Maharaja in person and aided by Hindus and Sikhs. This happened in October 1947, five days before the Pathan invasion and nine days before the Maharaja’s accession to India.”
     
    তারও আগে ১৯৪৭-এর ২৫ ডিসেম্বর, গান্ধী এ ব্যাপারে লেখেন: “The Hindus and Sikhs of Jammu and those who had gone there from outside killed Muslims. The Maharaja of Kashmir is responsible for what is happening there…Muslim women have been dishonoured.”
     
    ইয়ে মানে হরি সিং ডোগরা বংশের ছিলেন, এটা জানেন তো?
  • পন্ডিত | 2404:1c40:160:3976:1c1e:36ff:fe32:689e | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১২:৩৪524004
  • এটা একটা সম্প্রদায়ের দোষ ধামাচাপা দেওয়া লিখা যে লিখেছে সে হয়তো দাদাল। কাস্মীরী পন্ডিত দের বাধ্য করা হয় কাস্মীর ত্যাগ করতে। পন্ডিত দের বৌ মেয়ের সম্মান নষ্ট করা হয়। পাকিস্তান যেই কৌশল অবলম্বন করে কাস্মীর দখলের জন্য সেই সব কিছুই লেখা হয় নি এখানে। 
  • hihi | 2405:8100:8000:5ca1::3b4:eedf | ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ১৩:৪১524006
  • হে ভগবান! তথ্যের সোর্সে কি? দ্য টাইমসের প্রতিবেদন!!
    ৫০ বছর পরে কেউ নোটবন্দির ইতিহাসে লিখবে জি নিউজে প্রচারিত সংবাদ থেকে জানা যায় নতুন নোটগুলিতে জিপিএস চিপ ছিল!!
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। আলোচনা করতে প্রতিক্রিয়া দিন