এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • জলধরবাবুর দেশে ফেরা

    ন্যাড়া লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ | ৩০৬০ বার পঠিত
  • জলধরবাবু একজন পোড়-খাওয়া এন আর আই বা ভাপাভা ("ভারত-পালানো-ভারতীয়") । তাঁর লেট-যৌবন-আর্লি-প্রৌঢ়ত্বে জলধরবাবু একটি মস্করামূলক প্রবন্ধ লিখে (http://www.guruchandali.com/guruchandali.Controller?portletId=9&pid=content/bulbulbhaja/1208670233203.htm#.UkUW9j_IanE) হালকা করে দেশে ফেরত যাবার মনোবাসনা ব্যক্ত করেছিলেন । দোষের মধ্যে তো এই । এই দেখেই আকাশের দেবতা মুচকি হাসিলেন । বলিলেন, "তোর ফেসবুক পোস্টিং ১০০১ বার শেয়ার না করাতেই বর দিলাম । যাবি তো যা ।" অতঃপর জলধরবাবু বৌ-বাচ্চা-বাক্স-প্যাঁটরাসহ ভারতবর্ষে ল্যান্ড করলেন ও ধান-চালের পারস্পরিক সম্পর্ক সম্বন্ধে অবহিত হলেন । সংবর্ধনার একটা ক্ষীণ আশা পালন করলেও মনে মনে বুঝে গেছিলেন নাগরিক সংবর্ধনা হবে না । তবে কাছে দূরের আত্মীয়-বন্ধু কি আর চোখ গোলগোল ও ছলছল করে তাঁর দেশে ফেরার একটা মূল্য দেবে না !

    সে গুড়ে বালি । ফিরে দেখলেন বাপে-খেদানো-মায়ে-তাড়ানো ভাপাভার দল পঙ্গপালের মতন দেশে ফিরছে । সব বড় এয়ারপোর্ট হাওড়া স্টেশন । বিলেতফেরত উদ্বাস্তুতে ভরে গেছে । সকলের চোখেই অন্য উদ্বাস্তুর পরিবারের প্রতি তাচ্ছিল্য ও উষ্মা, "আরেক পিস কম্পিটিশন!" দেশোয়ালি বেরাদরদের চোখে ব্যঙ্গ, "সেই তো আবার ফিরে এলি ! সাহেবরা রাখল না?" জলধরবাবু ব্যাঙ্গালোরে এক পিস চাকরি জোটালেন ।

    ব্যাঙ্গালোরে গিয়ে জলধরবাবুর জ্ঞানচক্ষু উন্মিলিত হল। উপলব্ধি করলেন যে ভারতবর্ষকে ত্যজ্য করেছিলেন আর যে ভারতবর্ষকে ফের বরণ করলেন, তারা দুটি আলাদা প্রাণী, আদতে এক হলেও। তার একটি কারণ যদি হয় মাঝে ষোল-সতেরো বছর বিভিন্ন ব্রিজের তলা দিয়ে বয়ে যেতে যেতে নিয়ে এসেছে উদারীকরণের মনমোহনীয়া চকসা, আর একটি কারণ হবে কলকাতা ও ব্যাঙ্গালোরের তফাত। আজকের ব্যাঙ্গালোর যদি একবিংশ শতকের ভারতবর্ষ হয় তো ষোল বছর আগে কলকাতা তবে ঊনবিংশ শতকের বর্মা।

    সদ্য-প্রস্ফুটিত জ্ঞানচক্ষু মেলে জলধরবাবু যা দেখলেন তা হল নিম্নরূপ -

    ১। মধ্যবিত্তের সংসার চালানর জন্যে না-হলেই-নয় এমন জিনিসের দাম বেড়েছে ছ-সাত গুণ।
    ২। না-হলেও-চলে-তবে-হলে-ভাল জিনিসের দাম বেড়েছে দশ-বারো গুণ।
    ৩। আগে পাওয়া যেত না এমন বিলাস বস্তুতে বাজার ছেয়ে গিয়েছে, এবং সেসব জিনিসের হাতপোড়ানো দাম।
    ৪। লোকের, জলধরবাবুর পরিচিত মানুষজনের, মাসমাইনে হরবখত লাখ-বেলাখ। প্রায় সবাইকার গাড়ি আছে। পঁয়তিরিশের মধ্যে চাকুরেরা ফ্ল্যাট কিনে ফেলছেন।

    জলধরবাবু বাকরুদ্ধ হলেন।

    ক্রমে ধাতস্থ হয়ে উপলব্ধি করলেন ভারতবর্ষ আসলে এক নয়, বহু। নিজের বাড়িতেই দুই ভারতবর্ষের রূপ চাক্ষুস করতে লাগলেন অহরহ। পরিবারের ছজন মিলে মোটামুটি ভদ্রস্থ রেস্তোঁরায় সপ্তাহান্তিক পানভোজনের বিল দিয়ে গাড়িতে উঠে খেয়াল পড়ে সেই বিলের পরিমাণ বাইরে এতক্ষণ অপেক্ষমান চালকের মাসমাইনের অর্ধেক। খেয়াল পড়ে প্রথম-প্রথম বার কয়েক বাড়ির পরিচারিকাকে সঙ্গে নিয়ে রেস্তোঁরায় বসে খেলেও সে ঘটনা কমতে-কমতে শূন্যে এসে ঠেকেছে। সবথেকে যা ভয়াবহ, বুঝতে পারেন শিশুকন্যাদ্বয় মার্ক্সসাহেবের তত্ব সম্বন্ধে সম্যক অবহিত না হয়েও শ্রেণী ও শ্রেণীচরিত্র সম্বন্ধে প্র্যাক্টিকাল পাঠ হরবখত নিচ্ছে দৈনন্দিন প্রাত্যহিকতা থেকে - একদল হুকুম করে, সে যতই মধুগুড় মাখান হুকুম হোক না কেন এবং আর একদল সে হুকুম তামিল করে। জলধরবাবু সকাল-সন্ধ্যে "দীনবন্ধু, পার করো" বলে কেঁদে ককিয়েও হালে পানি পান না।

    শিশুকালে স্কুলের প্রেয়ারে চেঁচিয়ে গেয়েছেন "বিবিধের মাঝে দেখ মিলন মহান"। কিন্তু সে মহান যে কী ভাবে দেখা যায় কেউ বলে দেয়নি। কিন্তু জলধরবাবু এবার দেখলেন। বেশ ভাল করেই দেখলেন। সাড়ে বত্তিরিশভাজা বিবিধ ভারতের মাঝে বলিউডি মিলনের মাহাত্ম্য। রণে, বনে, জলে, জঙ্গলে - সর্বত্র বলিউড। টিভিতে বলিউড। রেডিওয় বলিউড। জামায় বলিউড। কাপড়ে বলিউড। সর্বভারতীয় পত্রিকার প্রথম পাতায় বলিউড। শিশুদের বিনোদনে বলিউড। জলধরবাবু খাবি খেলেন। খেয়ে মন দিয়ে মেয়েদের সঙ্গে ছোটা ভীম দেখতে লাগলেন। তবে প্রযুক্তির কী মাহাত্ম্য! শুধু বলিউডই নয়। খোদ কন্নড়ল্যান্ডে বসে প্রতি সন্ধ্যেয় গোগ্রাসে গিলতে লাগলেন বাংলা চ্যানেলের সিরিয়াল। যে সিরিয়ালে সবাই বাড়িতে পূর্ণ সেজে থাকে। সব পরিবারই যৌথ। সব পরিবারেই কুচুটে লোকেরা অন্যকে প্রাণে মেরে দেবার চক্রান্ত চালিয়ে যায় প্রতি সন্ধ্যেয়। সবারই ঘোরতর গুন্ডাদলের সঙ্গে খুব দহরম-মহরম চলে। বিষ অতি সহজলভ্য।

    জলধরবাবু ঘামতে লাগলেন।


    ঘামার সুযোগ জলধরবাবু বিশেষ পান না। একে ব্যঙ্গালোরের অতি মনোরম চির-বসন্ত টাইপ আবহাওয়ায় ঘামার সুযোগ প্রায় পাওয়াই যায় না, তার ওপর জলধরবাবু যে বুদবুদে বাসা নিয়েছেন সেখানে লোডশেডিং হলেই পাওয়ার ব্যাকাপ চালু হয়ে যায় অতি দ্রুত। সে ব্যাকাপে রেফ্রিজারেটর চলে, মাইক্রোয়েভ চলে, টিভি চলে, আলো-পাখা চলে, এসি চলে, গিজারও চলে বোধহয়। না চললে চলবেই বা কেন। লোডশেডিং হয় বটে! মুহুর্মুহু। এই আছে , এই নেই। জলধরবাবুর সত্তর-আশির দশকের কলকাতায় লোডশেডিং-এর সুবর্ণ যুগের কথা মনে পড়ে যায়। হায় সেই সব দিন। বুকের গভীর থেকে দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে জলধরবাবুর। কোথায় গেল সেই ঘরে ঘরে লম্প-কুপি-হ্যারিকেনের দিনগুলি! রোজ সকালে লম্প-হ্যারিকেনের কাঁচ পরিস্কার করার রুটিন ছিল। আজকালকার ছেলেমেয়েরা তো এসব কিছু শিখলই না!!

    কিন্তু জলধরবাবু শিখছেন। প্রতিদিনই কিছু-না-কিছু শিখছেন। সব শেখাই যে নতুন তা নয়। অনেক কিছুই ফিরিঙ্গি-কুসঙ্গে ভুলে গেছিলেন, এখন আবার ঝালাই হয়ে যাচ্ছে। যেমন কেউই সময়ে আসে না। ফোন করলেই বলে "ইন ফাইভ মিনিট্স"। সবাই মোবাইল ফোন ব্যবহার করে। আপিসের লোকেদের পরস্পরকে ফোন করা যায় যখন-তখন। দোকানপাট-আপিস বিল্ডিং-রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স-সিনেমা হল-হোটেল-রেস্টোর‍্যান্ট-শপিং মল - সর্বত্র গেটে সিকিউরিটি গার্ড। পোশাকের কায়দা দেখে খানাতল্লাশি কতটা হবে তা স্থির হয়। গাড়ি নিয়ে ঢুকতে গেলে গাড়ির ট্রাংক খুলে দেখান। কিন্তু ট্রাংকে সুটকেস-টুসকেস থাকলে সে সব খুলতে হয় না। কাজেই যদি কোন কারণে আপনি সিকিউরিটির হাতে ধরা পড়তে চান, বোমা-টোমা সুটকেসে রাখবেন না। পুরোন দিনের হিন্দি ছবিতে যেরকম দেখাত, সেই মতন বোমার ওপরে ওপরে বড় বড় করে "বোমা" লিখে ট্রাংকে রেখে দেবেন।

    এবং মোবাইল ফোন। মোবাইল ফোনের মাধ্যমে অ্যামেরিকা-ফেরত জলধরবাবু এক অনাস্বাদিত মুক্তির হাওয়া পেলেন। নিজের পয়সা দিয়ে কেনা জিনিস যে নিজস্ব হতে পারে, অ্যামেরিকায় বসবাস করে এ ব্যাপার প্রায় ভুলতে বসেছিলেন। নিজের-পয়সা-দিয়ে-কেনা কম্পিউটারে নিজের পছন্দের অপারেটিং সিস্টেম লাগাবেন? হবে, যদি কম্পিউটার ম্যানুফ্যাকচারার অনুমতি দেয়। যে অপারেটিং সিস্টেম পয়সা দিয়ে কিনেছেন, সেটিও আপনার নয়। কারণ আপনি তো কেনেননি, লাইসেন্স নিয়েছেন। সার্ভিস প্রোভাইডার নামমাত্র দামে, সময়বিশেষে এমনকি বিনি পয়সায়, মোবাইল ফোন দেয়। বদলে বন্ধক রাখতে হয় নিজের জিনিস নিজের করার স্বাধীনতাটি। তবে স্মার্ট ফোনের রমরমা আসার পর শুনেছেন অব্স্থার কিছু পরিবর্তন ঘটেছে। অথচ ভারতে? গটগট করে দোকানে ঢুকলেন জলধরবাবু, পয়সা দিলেন, নতুন ফোনে পেলেন। সার্ভিস প্রোভাইডারের আপিস থেকে আগেই সিম কার্ডটি হস্তগত করে চালু করে রেখেছিলেন। সে সিম কার্ডটি এবার স্বস্থানে বসালেন। ব্যস। এবার নিজ মাল নিজ দায়িত্বে।

    সিম ভরার ঠিক সাড়ে তিন মিনিটের মধ্যে প্রথম কলটি এল। নিজের ফোনে প্রথম নিজের কল। আহ্লাদে জলধরবাবু আটখানা। "হ্যালো"। "হ্যালো স্যার, দিস ইজ সুনিধি ফ্রম অমুক ব্যংক। উই আর গিভিং পার্সোনাল লোন আপটু ফিফটি থাউজ্যান্ড ..."। জলধরবাবু বুঝলেন বিনামূল্যে স্বাধীনতা পাওয়া যায় না। তার মূল্য হাতে-হাতে চুকিয়ে দিতে হয়।

    যত সহজে সার্ভিস প্রোভাইডারের আপিস থেকে সিম কার্ড পাওয়ার কথা লেখা হল, ইতিহাস বলে, কাঠখড় তার কিছু বেশিই পোড়াতে হয়েছিল। তার কারণ একটিই। অ্যাড্রেস প্রুফ। এ গ্যাঁড়াকলে যে না ফেঁসেছে তার পক্ষে গর্দিশের অবস্থা কল্পনা করা দুষ্কর। মোবাইল ফোনের অ্যাকাউন্ট করবেন? অ্যাড্রেস প্রুফ নিয়ে আসুন। ল্যান্ডলাইনের সরকারি ফোন বিল, পাসপোর্ট, ড্রাইভিং লাইসেন্স - সব চলেগা। চলেগা তো, কিন্তু মিলেগা কোথায়? বাড়িই এখনও ভাড়া করেননি তো ল্যান্ডলাইন! আর করলেও কোন দুঃখে সরকারি বিএসএনএল নেবেন? বেঁচে থাক প্রাইভেট সেক্টর। আর পাসপোর্ট? সে তো বদল হয়ে গেছে। মার্কিন-নাগরিক জলধরবাবু তো আক্ষরিক অর্থে নিজদেশে পরবাসী। বাকি রইল ড্রাইভিং লাইসেন্স। কিন্তু সে করতে গেলেও তো অ্যাড্রেস প্রুফ লাগবে। কিরকম অ্যাড্রেস প্রুফ চলবে? কেন বাড়ি ভাড়ার দলিল। ব্যস, সার্কল কমপ্লিট। যেখান থেকে শুরু করেছিলেন, ফিনসে সেখানে। ক-য়ে কমললোচন ইত্যাদি। যাকগে, এ ব্যাপারে ফেনিয়ে লাভ নেই। তবে অ্যাড্রেস প্রুফ ভারতে এক মহার্ঘ্য জিনিস। কিন্তু দাঁতের মতন। যার আছে সে এর মর্যাদা বোঝে না। এর সঙ্গে পাসপোর্ট সাইজ ছবিটিও ভুলবেন না। ওটিরও চাহিদা প্রবল। সবাই ২০১১ সালে জলধরবাবু কেমন দেখতে ছিলেন তা ডকুমেন্ট করে রাখতে চায়। কানাঘুষোয় এ-ও শুনেছেন যে সুলভ শৌচালয়ে "পয়সার বিনিময় শৌচকর্ম" করতে গেলেও নাকি প্রতিবার একটি করে পাসপোর্ট সাইজ ছবি জমা করতে হবে।

    অতএব জলধরবাবু এখন সর্বদা পকেটে দুটি পাসপোর্ট সাইজ ছবি নিয়ে ঘোরেন।

    [ তাঁকে নিয়ে লেখার নিচে মন্তব্যের বাহার দেখে জলধরবাবু তাজ্জব বনে গেছেন। ভাপাভাদের প্রতি গা-চিড়বিড় থেকে অপুর সরল বিস্ময় - সব দেখেশুনে জলধরবাবু বলেছেন তেনাকে ক্ষ্যামা দিতে। তবে মন্তব্যগুলো খুব মন দিয়ে পড়ছেন আর অনেক শিখছেন। তাই ধন্যবাদও জানিয়েছেন।]
    জলধরবাবু স্বপ্ন দেখতেন দেশে ফিরে সকালে থলি দুলিয়ে বাজারে যাবেন। দরদাম করে কিনে ফেলবেন টাটকা কাঁচকলা, সবুজ ঝিঙে, কচি পটল, নিদাগ বেগুণ, ঘাই-মারা কই কী রক্তঝরা কাটাপোনা। তবে এ ভারত বাবা-কাকাদের আমলের ভারত নয়, এ হল গিয়ে চকচকে ভারতবর্ষ। আর ব্যাঙ্গালোরও কলকাতা নয়। কাজেই থলি দুলিয়ে বাজার যাওয়ার সময় পেলেন শুধু শনি-রবিবার। কিন্তু বাজার মানে বাজারই। ফিরিঙ্গি হনুকরণের তারের গাড়িঠেলা সুপারমার্কেট নয়। এ হল ব্যাঙ্গালোরের ঐতিহ্যবাহী হ্যাল মার্কেট। আগে নাকি বাঙালীর ছোটখাটো মিলনক্ষেত্র ছিল। এখনও আছে। এখানে আসে অন্ধ্রের রুই, চট্টগ্রামের ইলিশ, কলকাতার কচুর-লতি থেকে চিংড়ি, ঝর্ণা ঘি থেকে সানন্দা। রুই একশো ষাট, যদিও টোটাল ধরণের সুপারমার্কেটে একশো কুড়ি। কারণ টোটালের মাছ লোকাল। ইলিশ সাতশো-আটশো গ্রামের বেশি ওজনের পাওয়াই যায় না। পেলে হাজারের ওপর দাম। নইলে সাতশো-আটশো-নশো। ভেটকি সাড়ে তিনশো। বড় চিংড়ি সাড়ে চারশো। তুলনামূলকভাবে চিংড়ির দামই গেল তিরিশ-চল্লিশ বছরে কম বেড়েছে। প্রতিবার মাছ কিনে ফেরার সময়ে জলধরবাবু প্রতিজ্ঞা করেন পরিবারসুদ্ধ ভাত আর বাটারমিল্ক ডায়েটে পরিবর্তিত হয়ে যাবেন। পরিবর্তনেরই তো বাজার। তার ওপর ভাত-বাটারমিল্ক খেয়ে ভারতের আই-এ-এস ক্যাডার যদি ভর্তি করে ফেলা যায় তো বাঙালির এত কি আম্বা যে মাছ না খেলে চলবে না!

    বলতে নেই, জলধরবাবু নোলাটি বেশ স্বাস্থ্যবান। আজ আরশোলার চচ্চড়ি খেয়ে ফেললেন তো কাল জেলিফিশের মালাইকারি - এরকম দুঃসাহসী না হলেও, চেনাশোনা খাবারের বড়সড় গন্ডির মধ্যে ঘোরাফেরা করে থাকেন। কলকাতা জলধরবাবুর স্বর্গ। পাড়ার মোড়ের "কমলে কামিনী কাফে"র হাড়-সর্বস্ব কষা মাংসর যা সোয়াদ, অ্যামেরিকার বাঘা-বাঘা নামের, জ্যাগাত কি মিশেলিন রেটেড দোকানও তার ধারেকাছে আসতে পারে না। ব্যাঙ্গালোরে মোড়ের দোকানে বাঙালি কষা মাংস না পাওয়া গেলেও, আপিসের মোড়ের অখ্যাত দোকানে যে তন্দুরি চিকেন বানাত, সে খেতে দীর্ঘ পথ হাঁটতেও রাজি ছিলেন জলধরবাবু। তাছাড়া দেশে ফেরার মাস খানেকের মধ্যে আবিষ্কার করে ফেললেন কোরামঙ্গলার আওধি খাবারের দোকান তুন্ডে কাবাবিতে রুমালি রুটি আর তুন্ডে কাবাব। একদম লা-জবাব। খুঁজে পেলেন কলকাত্তাইয়া লাজিজ ও আর্সালান - হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানির থেকে মুখ বদল করতে কলকাতা-স্টাইল বিরিয়ানি আর চিকেন টিক্কা গ্রেভি। হায়্দ্রাবাদী বিরিয়ানি খেতে চার্চ স্ট্রীটের "সমরখন্দ", যা নামেই আফগান। আসলে উত্তরভারতীয় কাবাব, নল্লি আর বিরিয়ানির ফার্স্ট ক্লাস ঠেক। হানা দিলেন ভারতে চলা প্রথম ট্রেনের থিমে তৈরি রেস্তোঁরা "সাহিব-সিন্ধ-সুলতান"। এদের বিরিয়ানির খুব নাম থাকলেও পুদিনাগন্ধী হায়দ্রাবাদী বিরিয়ানি জলধরবাবুর খুব পোষাল না, কিন্তু বাকি খাবারদাবার দিব্যি ভাল। শিখে গেলেন মালায়লি দোকানে মাটন স্টু দিয়ে আপ্পম খাবার রীতিনীতি। কাজেই আপাতত শান্তিকল্যাণ।

    অথচ বড় মুখ করে স্টেক খেতে গিয়ে খুব হেনস্থা হলেন যা হোক। ফাইবার সর্বস্ব স্বাদহীন মাংসখন্ড। মিডিয়াম-রেয়ার চাইলেন, করে আনল চারকোল। ওয়েলডান চাইলে মাংসর মধ্যবর্তীস্থান লাল ও ঠান্ডা। সর্বোপরি সব স্টেকের ওপরেই গ্রেভি ঢালা। মেয়েদের স্প্যাগেটি-অ্যান্ড-মিটবল খাওয়াতে ব্যাঙ্গালোরের নামী ইটালিয়ান রেস্তোঁরায় ঢুকে আবিষ্কার করলেন সেটি ভেজিটেরিয়ান ইটালিয়ান। ন্যাকামো! জলকে যাব, বেণী ভিজাব না! মদও পাওয়া যায়না, তার বদলে মেলে রঙবেরঙের শোভনদর্শন মকটেল। দক্ষিণ-ভারতীয় উচ্চকোটির ব্রাহ্মণেরও কৌলিন্য যাবার কোন ভয় নেই। আবিষ্কার করে রোমাঞ্চিত হলেন ঠিকই, খাবারও খারাপ নয়, কিন্তু খুব যে উৎসাহিত বোধ করলেন, এমন নয়। আর ততক্ষণে দেরি যা হবার হয়ে গেছে। এবং কেরমে কেরমে আবিষ্কার করলেন দেশের বিজাতীয় খানাবিপণিগুলো কোন কঠোর কঠিন কুইজিনত্ব রক্ষা করার ঠিকা ও দায় নেয় নি। কাজেই ইটালিয়ান রেস্তোঁরায় পেতেই পারেন ফাহিতা, চিনে দোকানে পাবেনই পাবেন কোরিয়ান কিমচি ও থাই টম ইয়ুম সুপ। জলধরবাবুও আজকাল নির্বিকারমুখে ইডলির সঙ্গে আলুদ্দম খেতে পারেন, রসম দিয়ে ফ্রায়েড রাইস।

    কাজেই ব্যাঙ্গালোর দিব্যি জায়গা। শুধু সারাদিন মনে হয় একটি রাক্ষুসে কনস্ট্রাকশান সাইটে বসে আছেন। বাতাসে সুরকির গন্ধ। বুটজুতোয় সিমেন্টের ধুলো। বুদবুদ থেকে বেরোলেই চতুর্দিকে ঠং-ঠং ঘটঘট ধুপধাপ শব্দে বাড়ি হচ্ছে, আপিস হচ্ছে, ফ্লাইওভার হচ্ছে, নতুন ব্রিজ বানানো চলছে। কিছুদিন এসব লক্ষ্য করে জলধরবাবু খেয়াল করলেন যে এত সব যে এরা বানাচ্ছে, কেউ কিন্তু কোন নতুন রাস্তা বানাবার দিকে নজর দিচ্ছে না। ফ্লাইওভারও যে হচ্ছে তাতে আন্ডারের রাস্তা আর কার্যকরী রাস্তা থাকছে না। যদিও বা থাকে তবে অপেক্ষায় থাকছে দুদিন বাদে মেট্রোর জন্যে লম্বা আখাম্বা থাম্বা এসে কবে তাকে আপন করে নেবে - এই ভেবে। জলধরবাবু দাড়িটাড়ি চুলকে ভাবতে থাকেন, তবে ফ্লাইওভার বানিয়ে রাস্তা উঁচু করা ছাড়া ঘোড়াড্ডিমের হলটা কী? এছাড়া এর বাড়ির দাওয়া, তার বাড়ির উঠোনের ভেতর দিয়ে ভাঙাচোরা, প্রায়-নেই, চার-হাত চওড়া রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে দেখেন দুধারে প্রাক্তন চাষের জমিরা গ্রাম্য রূপ ছেড়ে সাহেবী পোষাক পরছে - উঠছে হর্ম্যের পর হর্ম্য - যা কোটি কোটি টাকায় বিকোবে। জলধরবাবু ভাবেন, এ সবই তো উন্নতি লক্ষণ। কিন্তু বাবাসকল, এই যে অট্টালিকা বানাচ্ছ, এখানে এসে হাজারের কাছাকাছি লোক থাকবে একদিন - সেই অট্টালিকায় পৌঁছতে তো হাতে হ্যারিকেন, প্যান্টুল ঢলঢলে ও গালে দাড়ি গজিয়ে যাবে! কিন্তু কে শোনে কার কথা! মাঝে মাঝে মনে হয় চিৎকার করে বলেন, "বাপু হে, রাস্তাটা ভুলো না।" কিছু কিছু কমপ্লেক্স তো শহর থেকে দূরত্বের কারণহেতু এবং রাস্তাহীনতার কারণে প্ল্যানে হেলিপ্যাডের বন্দোবস্ত রেখেছে। এ কথা জলধরবাবু নিজেই নিজেকে বিশ্বাস করাতে বেগ পেলেন।

    ব্যাঙ্গালোর আজব শহর। প্রাচ্যের সিলিকন ভ্যালি। নামকরা হুদো হুদো কোম্পানি যেচে গিয়ে আপিস ফাঁদছে আর ট্যাক্সো দিচ্ছে। রাস্তায় আধুনিক কেতার লাখে লাখে গাড়ি। অ্যামবাসেডরের মতন কুলীন গাড়ি রাস্তায় দেখাই যায় না। আন্তর্জাতিক ব্র্যান্ডের জিনিসের বিজ্ঞাপনে রাস্তা-বাড়ি-মানুষ সবেরই মুখ ঢেকে যায়। রাস্তায় চলছে পেল্লায় ও আধুনিক বাস। সারি সারি দামী জিনিসের চকচকে দোকানের মাঝে দুখীমুখে উঁকি মারে পাড়ার মনোহারী দোকান, মুদির দোকান, চুল কাটার সেলুন, ছিটকাপড়ের দোকান। অথচ রাস্তার ধারে ওপেন ড্রেন। শহরজুড়েই। এই একবিংশ শতাব্দীর শাইনিং ইন্ডিয়ার আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন হাইটেক শহরে। এবং নোংরাস্য নোংরা নিষ্কাশনী খাল। আর বিষজল-ভরা লেক। সে লেকও দেখ-তো-দেখ ময়লা-টয়লা ঢেলে ভর্তি হয়ে যাচ্ছে। তারপরেই নীল করোগেটেড শিট দিয়ে বাউন্ডারি ও বিল্ডারের সাইনবোর্ড - লেকভিউ অ্যাপার্টমেন্ট। ভিউ লেকে আছে ঠিকই - যদিও কদ্দিন থাকবে বলা যাচ্ছে না কারণ অন্য বিল্ডাররাও তো সেই একই লেক বুজিয়েই লেকভিস্তা, ওয়াটারফ্রন্ট, অ্যাকোয়াভিউ প্রভৃতি হর্ম্যসমূহ বানাইতেছে। আরও যেটা বলা নেই সে হল বিষ জলের দুর্গন্ধ ও ঝাঁকে ঝাঁকে মশককুলের আগমন ও বসতিস্থাপন। জলধরবাবু বোঝেন খুব শিগ্গিরই ব্যাঙ্গালোরে আর কোন ওয়াটার বডি থাকবে না। দূরদূরান্ত থেকে ট্যাংকারে জল আসবে। রাস্তাও উবে যাবে। থাকবে শুধু থিকথিকে, দলা দলা বহুতল হর্ম্য, অট্টালিকা ও সারণী। রাস্তায় মেঘ নয়, গাভীর মতন চরবে হেলিকপ্টার।

    শেষের ভয়ংকর সেদিনের কথা ভেবে জলধরবাবু শিউরে উঠলেন।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৪ অক্টোবর ২০১৩ | ৩০৬০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • hu | 188.91.253.11 (*) | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:১৬47542
  • অর্পণ আর সিকি এসব কি বলছে? লিং দেওয়া হোক।
  • Bhagidaar | 218.107.71.70 (*) | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:১৮47544
  • সেই টাউনশিপে কি বাঙালি বামুনদের থাকতে দেবে? আমরা মাছ-মাংস খাওয়া বামুন, দক্ষিনীরা আমাদের বামুনি মনে করেনা।
  • রোবু | 177.124.70.1 (*) | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:১৮47543
  • জমেছে। তবে জলধর বাবুচিত স্যাটায়ারটা পুরোটা আসেনি।
  • Arpan | 126.202.148.140 (*) | ১৪ নভেম্বর ২০১৩ ০৫:২৩47545
  • রাস্তার ব্যপারটা পরে বিস্তারিত লিখব। আসলে এই রেটে পপুলেশন এক্সপ্লোশন হবে কুড়ি বচর আগেও কেউ ভাবেনি। আর কুড়ি বছরে শহরের পপুলেশন দ্বিগুণ হয়েছে।
  • ন্যাড়া | 172.233.205.42 (*) | ১৫ নভেম্বর ২০১৩ ০২:৫৬47546
  • স্যাটায়ার করলে চলবে? সময়ের দলিল লেখা চলছে। দ্বাবিংশ শতকের ঐতিহাসিকদের কথাও তো ভাবতে হবে।
  • প্রদীপ রায় | 190.215.81.71 (*) | ০৬ অক্টোবর ২০১৫ ০৯:৫১47547
  • লেখাটি আপনার ফেসবুকে পড়ে শত খানেক 'লাইক' দেবার প্রবল ইচ্ছা হল, কিন্তু add না করা হেতু সেটি হয়ে ওঠেনি।
  • b | 135.20.82.164 (*) | ০৭ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:৫০47548
  • বেশ হইচে। তবে জলধরবাবু একটু গান বাজনা নাটক এসব নিয়ে একটু লিখলেও তো পারেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঝপাঝপ প্রতিক্রিয়া দিন