এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • "হেচ"-ওলাদের দেশে

    সিকি লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ | ১৮৫৮ বার পঠিত
  • দুবাইয়ের গপ্পো তো আপনারা শুনেছেন, ফিরে এসে আমদাবাদের গল্পও হাল্কা করে শুনিয়েছিলাম। সেখান থেকেই সুতো ধরি, কেমন?
    আমেদাবাদে তিন মাস থাকার কড়ারে গেছিলাম, যদিও জানা ছিল, জীবনের বাকিস অমস্ত প্রজেক্টের মতই এ প্রজেক্টও শেষ হবার নয় আগামী তিন মাসে, তাই একদম পইপই করে বলে রেখেছিলাম, ডিসেম্বরের শেষে কিন্তু আমি ফিরবই দিল্লিতে। সব্বাই ঘাড় কাত করে হ্যাঁ বলেছিল।

    দশই ডিসেম্বর নাগাদ বুঝতে পারছিলাম, এখন থেকেই গলার আওয়াজ না তুললে কুড়ি তারিখের মধ্যে দিল্লি ফেরা চাপ হয়ে যাবে। এর মধ্যে টোপটা খাওয়াল ফরিদা আর শ্রাবণী। ১৬ই ডিসেম্বরের উইকেন্ডে সারিস্কা যাবে গুরুর সবাই। তুমি চলে এসো, সব্বাই মিলে হুল্লোড় হবে।

    এইবারে আমি পড়লাম ফ্যাসাদে। এমনিতে কুড়ি তারিখ আমর ডেপুটেশন শেষ হচ্ছে, ষোল তারিখে কী করে যাবো? দুদিনের জন্য তো গিয়ে আবার ফিরে আসা সম্ভব নয়। অতএব মেজদার কাছে দরবার করলাম। শেষ চারদিন আমি রিমোটলি কাজ করব, আমার ফেরার টিকিট পনেরো তারিখে করে দাও।

    মেজদা যদি অত সহজে শুনত, তা হলে তো তার নাম মেজদা হত না। চারদিন রিমোটলি কাজ করলে নাকি তার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়বে, তাই সে যেতে দেবে না। এদিকে আমার তেমন কোনও কাজও ছিল না। প্রজেক্ট ডেভেলপমেন্ট শেষের দিকে, আমি বসে বসে খানিক ছোড়দার রোলে কাজ করছিলাম। ব্যাক আপও তৈরি ছিল, কিন্তু মেজদার দাবি, পনেরোই ডিসেম্বর তো নয়ই, তুমি জানুয়ারি মাসটাও থেকে যাও, যতদিন না প্রজেক্ট ডেলিভারি হচ্ছে।

    থেকে যাবার আসল কারণটা আমি জানি, বয়েস হয়েছে, আমি এখন সোনার ডিম পাড়া হাঁস তো, আমাকে অ্যাকাউন্টে রাখলে আমার ডেজিগনেশন অনুযায়ী ক্লায়েন্টের কাছে বেশি বেশি বিলিং করা সম্ভব হবে, ব্যাক আপ যে ছিল, সে ডেজিগনেশনে ছোট, তার বিলিং কম। তাই ...

    আবেদন করলাম। নিবেদন করলাম, কোনওভাবেই কাজ হল না। বললাম, এই রকমের চাপ নিয়ে আমার পক্ষে কাজ করা সম্ভব নয়, আমাকে রিলিজই করে দাও, তো মুখের কথায় যদি রিলিজ পাওয়া যেত, তা হলে আমার কোম্পানিটির বাজারে এত নামডাক থাকত না।

    দেখলাম সোজা রাস্তায় কাজ হচ্ছে না। অতএব, গান্ধিজী ভরসা। আমার সবে ছ মাস হয়েছে কোম্পানিতে, অ্যাপ্রেইজালে কেউ কিছু বিগড়োতে পারবে না, অতএব মুন্নাভাইয়ের স্টাইলে আমি বিনম্রতা কে সাথ পাতি অসহযোগ আন্দোলন শুরু করলাম। কাজ করব না। কল অ্যাটেন্ড করব না।

    মেজদা ভড়কি খেয়ে আমায় ডাকলেন। একদিন টিটি খেললেন আমার সাথে। একদিন খাকড়া এনে খাওয়ালেন। তাতেও বরফ গলল না দেখে আমায় বললেন, আমি কিন্তু এইচারকে তোমার নামে কমপ্লেন করব।

    আমি বললাম, করো। পানিশমেন্ট কী হবে? প্রজেক্ট থেকে বের করে দেবে তো? আমি তো সেটাই চাই।

    মেজদা দেখলেন তিনি নিরুপায়। কোনওভাবেই সিকিকে বাঁশ খাওয়ানো যাচ্ছে না। অতএব, প্রচুর টালবাহানার পর, তেরো তারিখ সন্ধ্যেয় পনেরো তারিখের টিকিট পেলাম।

    চাপটা আরও ক্রিয়েট করেছিলাম এইজন্য, দুবাই কেঁচে যাবার পরে ডিসেম্বরের গোড়ায় আমার আরেকটা অ্যাকাউন্টে সিলেকশন হয়ে গেছিল, ব্রাসেলসে লং টার্ম অনসাইট। বেলজিয়াম। টিনটিনের দেশ। তো সেই প্রজেক্টের মেজদা আমাকে রিকোয়েস্ট করেছিলেন তাড়াতাড়ি রিলিজ নিয়ে দিল্লি ফিরে এলে তিনি তাড়াতাড়ি ভিসার ব্যবস্থাটি করে দেবেন।

    এই অবস্থায় আমার কাছে প্রতিটা দিনই দামী। দুবাই আমেদাবাদের প্রজেক্ট তো তখন আমার কাছে খরচার খাতায়, কোনও প্রসপেক্ট নেই আর।

    পনেরো রাতে দিল্লি ফিরলাম আমেদাবাদের পাট চুকিয়ে, ষোল তারিখে আমরা, শ্রাবণীরা, ফরিদারা আর নেতাইরা, সব্বাই মিলে হইহই করে সারিস্কা গেলাম, মজা করলাম, বাঘের ফুটপ্রিন্ট দেখে তৃপ্ত হলাম এবং পরদিন আবার দিল্লি ফিরে এলাম।

    আমেদাবাদের গুজ্জু মেজদা জাতে বামুন ছিলেন কিনা জানি না, তবে তাঁর অভিশাপ যে লাগতে শুরু করেছে, সে তখনও ধরতে পারি নি।

    ভিসা পেলাম ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে। ততদিনে আরামসে কলকাতা বইমেলা এনজয় করে এসেছি, দিল্লি বইমেলায় থাকতে পারব কিনা তাই নিয়ে চিন্তায় পড়েছি। নতুন প্রজেক্টের মেজদা জানিয়েছেন, তিনি পরের সপ্তাহেই আমার ট্র্যাভেল ডেট জানাবেন।

    পরের সপ্তাহে জানালেন, তার পরের সপ্তাহ। তার পরের সপ্তাহে জানালেন দু সপ্তাহ পরে, এবং আবার আবার দু সপ্তাহ পরে।

    মার্চ গেল, এপ্রিল গেল, মে গেল। আমার একজন মেন্টর গোছের পরিচিত লোক আছেন মুম্বই অফিসে, তাঁর সাথে কথা বললাম, বললেন, তুমি বিলেবল যখন আছো, চিন্তা কীসের? আরাম করো, বেড়িয়ে এসো। জুলাইতে তোমার এক বছর পূর্ণ হচ্ছে কোম্পানিতে, অ্যানিভার্সারি অ্যাপ্রেইজাল হবে, তার আগে কোনওভাবে চেঁচামেচি কোরো না, সব বিগড়ে যাবে।

    মে গেল, জুন গেল, জুলাই গেল, জুলাইতে আমর অ্যাপ্রেইজালও হয়ে গেল, এতদিন ঘরে বসে থাকার কমপেনসেশন হিসেবে মেজদা আমাকে যারপরনাই একটা ভালো রেটিং দিলেন। আমার আর কী চাই?

    এই সময়ে একদিন চেন্নাই থেকে একটি মেজদার কল এল। আরেকটি অ্যাকাউন্টে ঠিক আমারই মতন একজন রিসোর্স চাই, অনসাইট হল আম্রিকা। শিকাগো, নয় কানাডা, টরন্টো।

    খুব ভালো কথা। তাকে বললাম, আমার এই কেস। বেলজিয়াম যাবো বলে বসে আছি, হাতে ওয়ার্ক পারমিট রয়েছে এক বছরের। এই তেঁতুল মেজদা সুপারস্মার্ট। বললেন, ও প্রজেক্ট আইবিএম নিয়ে নিয়েছে, আমরা লুজ করেছি, সেই জন্যেই তোমাকে অ্যাপ্রোচ করছি। তুমি খুব শিগগিরি রিলিজ হয়ে যাবে, তোমার বেলজিয়াম যাওয়া হবে না। চিন্তা কোরো না, আমি তোমাকে আম্রিগা পাঠাবো। আমি ইউএসের বিজনেস ডেলিভারি হেড, নর্থ আমেরিকা রিজিয়নের সমস্ত বিজনেস আমি কন্ট্রোল করি।

    ওব্ববা, তা হলে তো এনাকে আর মেজদা বলা যায় না, ইনি তো বড়দা।

    বড়দা বললেন, তুমি লুরু এসে কিছুদিন কাজ করতে পারবে?

    মাথায় তখনও আমেদাবাদ ছেড়ে আসার আগের ঝামেলার সেই তিক্ত স্মৃতি বিদ্যমান। বললাম, দু মাসের বেশি কোনওমতেই নয়, আর আমার লিখিত কনফার্মেশন চাই।

    বড়দা খুব হেঁহেঁ করে বললেন, আরে চিন্তা কোরো না, ভিসা ফাইলিংয়ের সময়টুকু তোমকে রাখব, ভিসা হয়ে গেলে তো তুমি আম্রিগা চলে যাবে।

    বড়দার কী মহিমা, তিন্দিনের মধ্যেই বেলজিয়াম থেকে খবর এল, ঠিক তাই, আইবিএম প্রজেক্ট ছিনিয়ে নিয়েছে, আমার তাই প্রয়োজন ফুরিয়েছে, আমি রিলিজড উইথ ইমিডিয়েট এফেক্ট। লেপ্পচা।

    অতএব, লুরুর জন্য মানসিক প্রস্তুতি। আগের বারে আমেদাবাদ গিয়ে খুব ভুগেছি, এখন এই ডেপুটেশনের কথা শুনলেই কান্না পায়, ছলেবলেকৌশলে যে কোনও উপায়ে নিয়ে যায়, তারপরে ফিরিয়ে দেবার সময় হলে আর ফিরিয়ে দেয় না। এ কালচার ভারতের সমস্ত বডিশপিং কোম্পানিতে চলে। কি আইবিএম, কি ক্যাপজেমিনাই, কি ইনফি ...

    পাকাপাকি যাবার আগে ক্লায়েন্ট মিটিং, দু দুবার দুদিনের জন্য লুরু যেতে হল। মিটিং হল, লুরুর মেজদা দেখলাম ক্লায়েন্টের কাছে আমার পরিচয় করালেন, আমি দিল্লি থেকে এসেছি, পুরো প্রজেক্ট এখানে বসে এক্সিকিউট করব বলে। চমকালাম, কিন্তু তখনও খাপ খুললাম না, পরদিন বিকেলেই তো আমি ফিরে যাচ্ছি, এখনও তো পাকাপাকি লুরু আসছি না। সমস্ত দিক বাজিয়ে দেখে তবেই আসব।

    (চলবে)
    ~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~

    এর আগে একটু পূর্বকথন আছে। প্রথম দুটি লুরু শর্ট ট্রিপেরও আগে আমার একটা ক্লায়েন ইন্টারভিউ হয়েছিল। ও সব প্রজেক্টের আগেই হয়, ও নিয়ে অত মাথা ঘামাবার কিছু ছিল না, তবে দুটি গল্প ছিল এইবারে। এক তো ক্লায়েন ইন্ডিয়ান, যদিও প্রজেক্টটা আমেরিকা বেসড, কিন্তু ইন্ডিয়ান কোম্পানি, সমস্ত ক্লায়েন ইন্ডিয়ান, আপনারা যারা আইটিতে কখনও কাজ করেন নি, জেনে রাখুন, জীবনের ভয়ঙ্করতম শাস্তি হল ভারতীয় ক্লায়েন্টদের আন্ডারে কাজ করা, আইটি-তে। একেবারে জীবনের অ্যায়সি কি ত্যায়সি করে রেখে দেয়। তো, সেই রকম একজন ইন্ডিয়ানের কাছে আমার ইন্টারভিউ। বড়দা এবং টেকনোলজি এক্সেলেন্স গ্রুপের একটি মহিলা মিলে ইন্টারভিউয়ের আগে আমাকে খুব গ্রুমিং করলেন। সেই মহিলা নাকি এই মুহূর্তে প্রজেক্টের আরকিটেক্ট, খুব শিগগিরই বিয়ে করতে যাচ্ছেন, তাই তিনি আমেরিকা এখন যেতে পারবেন না, আর্কিটেক্ট রোলে আমিই আসব, আর আমি নাকি আমেরিকা যাব। কিন্তু সেটা ক্লায়েন্টকে এক্ষুনি বলা যাবে না, ক্লায়েন কুড়ির বিয়ের খবর এখনও জানে না।

    ও হ্যাঁ, বলতে ভুলে গেছিলাম, এই মহিলা পঞ্জাবী কুড়ি (সিকির ভাগ্যে সর্বদা এরাই জোটে), তবে বর্ন অ্যান্ড ব্রট আপ ইন মুম্বাই, তাই পঞ্জাবী বলতে টলতে পারেন না, মারাঠী বলেন আর হিন্দি বলেন।

    তো, কুড়ি এবং বড়দা, দুজনে মিলে আমাকে গ্রুমিং কল্লেন, কুড়ি জানাল তাকে কী কী কোশ্চেন করেছিল, আমাকে কী কী কোশ্চেন করতে পারে, আর কুড়ি এবং বড়দা দুজনেই আমাকে বলল, ক্লায়েন যখন জিজ্ঞেস করবে তুমি কোথা থেকে কাজ করবে, তুমি জানাবে, তুমি ব্যাঙ্গালুরু থেকে কাজ করবে। ডোন্ট ওরি, ওটা জাস্ট তোমাকে অনবোর্ডিং করার জন্য, তুমি দু মাসের বেশি লুরুতে থাকবেই না। ভিসা ফাইল হতে যতক্ষণ লাগে।

    দু মাসে ইউ এসের ভিসা লেগে যায়, এতটা অপটিমিস্টিক আমিও নই, তবু আশায় বাঁচে চাষা। খটকা লেগেছিল, আমি তো লুরুতে থেকে সেইভাবে কাজ করবই না, কেন অমন কথা বলতে যাবো ক্লায়েনকে?

    বড়দা কইলেন, এবং কুড়িও কইলেন, ওটা জাস্ট ক্লায়েনকে ভক্কি দেবার জন্য। তুমি লুরু এলেই আমি টুক করে সরে যাব, তোমাকে পুশ করে দিয়ে।

    অগত্যা। প্ল্যানমাফিক ইন্টারভিউ হল। শেষে সেই প্রশ্নও এল, এবং আমি ভালোমানুষের মতন মুখ করে বললাম, আমি তো লুরুতে থেকে প্রজেক্টের কাজ করব।

    আমার সিলেকশন হয়ে গেল। চার দিনের মাথায় খুব করুণ গলায় চেন্নাইবাসী বড়দা ফোন করলেন, ক্লায়েন তোমাকে সিলেক্ট করেছে, কিন্তু আর্কিটেক্ট রোলে নয়, টেকনিকাল লীড হিসেবে সিলেক্ট করেছেন, তোমার টেকনিকাল নলেজ ক্লায়েনের খুব পছন্দ হয়েছে।

    আর্কিটেকটকে টেক লিড বানানো, কাইন্ড অফ ডিমোশন। আমি শুধু জিজ্ঞেস করলাম, ডেজিগনেশনে গুলি মারো, অনসাইট পাচ্ছি কি পাচ্ছি না? বড়দা খুব সরল বিস্ময় কণ্ঠে মাখিয়ে বললেন, সে কী বলছো? অনসাইটে তো তুমি যাবেই, তোমাকে পাঠানোর জন্যেই তো এত কিছুর আয়োজন!

    এর পর ক্লায়েনের লুরু আগমন, এবং কিক অফ মিটিং-এর জন্য সিকির দুদিনের জন্য লুরু গমন। প্রথম দিনের মিটিং সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হল, কেবল আমাকে "পুরো প্রজেক্ট ডিউরেশন এখানে থেকে কাজ করবে বলে দিল্লি থেকে এসেছে" বক্তব্যটা ছাড়া তেমন কিছু আপত্তিকর জিনিস পেলাম না। পরের দিন দুপুর থেকে মিটিং, সকালবেলায় তাই আমাদের কিছু প্রেজেন্টেশন এস্টিমেশন এসব বানাতে হবে।

    এর মধ্যে কুড়ি একফাঁকে সময় পেয়ে আমাকে এসে শুধালো, তুমি কি অফশোর ব্যাঙ্গালোরের জন্য হ্যাঁ করে দিয়েছো? প্রজেক্ট লিস্টে তোমার নাম দেখলাম অফশোর টেক লিড।

    আমি তো হাঁ! এমন কথা তো কখনওই হয় নি। যাক গে, সন্দেহমুক্ত না হয়ে আমি আসবই না এখানে, এটা তো দুদিনের ট্রিপ, আমার কাছে ফেরার টিকিট আছে, চাপ কী? এই ভেবে তখনকার মত কুড়িকে আর পাত্তা দিলাম না।

    সন্ধ্যে আটটায় আমার ফ্লাইট, ছটার মধ্যে তাই বেরিয়ে পড়তেই হবে। লোকাল মেজদাকে ফাঁক বুঝে সেই কথা বললাম, আমাকে কিন্তু ছটায় বেরোতে হবে, একটু সামলে নিও।

    ও মা, কথা নেই বার্তা নেই, গাঁকগাঁক করে চেঁচিয়ে উঠল নতুন মেজদা, বেরোতে হবে মানে? প্রজেক্ট শুরু হয়ে গেছে, অ্যান্ড ইউ আর সাপোজড টু স্টে হিয়ার টিল এন্ড অফ ডিসেম্বর, কোথায় বেরোবে এখন? কোত্থাও যাওয়া হবে না, যাও বসে প্রেজেন্টেশনের কাজ করো গিয়ে।

    বাজে ব্যবহার পেলেই আমার মটকা গরম হয়ে যায়, সে তো আপনারা জানেনই। আমি খুব ঠাণ্ডা চোখে মেজদাকে মেপে নিয়ে বললাম, আমার সঙ্গে সে রকমের কোনও কথা হয় নি। দরকার হলে এখানে দু মাস থাকার কথা হয়েছে, সেটাও এই ট্রিপে নয়, এটা আমার দুদিনের ট্রিপ এবং আমি সন্ধ্যে ছটায় বেরোচ্ছি।

    মেজদা খচে বোম, একঘর লোকের মাঝে উদ্দাম চিল্লাতে শুরু করলেন, কথা হয় নি মানে? তোমার সাথে আবার কে কবে কোন কথা বলেছে হে খোকা? দুদিন টুদিন ভুলে যাও, ইউ আর নট গোয়িং এনিহোয়্যার।

    মেজদার বোধ হয় চেঁচানো বাতিক। আমি কথা না বাড়িয়ে বললাম, পারো তো আমাকে আটকাও। আমার বড়দার সাথে কথা হয়ে গেছে।

    বড়দা সকাল থেকেই ক্লায়েনকে খাতিরযত্ন করতে ব্যস্ত। তিনিও চেন্নাই থেকে এসেছেন। ধারেকাছে দেখতে না পেয়ে এসেমেস করলাম, বড়দা, তোমার সাথে কথা আছে, দশ মিনিট টাইম বের করতে পারলে জানিও।

    ইতিমধ্যে দেখলাম ঘরে ঢুকেছেন বড়দা। তাঁকে দেখতে পেয়েই মেজদা হড়বড় করে ইল্লাসেরিসমৃদ্ধ ভাষায় খুব কষে কী যেন বললেন, বুঝলাম আমারই নিন্দেমন্দ হচ্ছে, বড়দা দুবার আড়চোখে আমার দিকে তাকালেন। (এইটা দক্ষিণ ভারতীয়দের একটা মহান দোষ, সামনে নিজভাষী কাউকে পেলেই বিশ্বসংসার ভুলে সেই ভাষায় কথা বলতে শুরু করে, বাকিরা কেউ বুঝতে পারল কি না পারল, তাতে তাদের জাস্ট ছেঁড়া যায়)। আমিও বড়দার দিকে তাকিয়ে আছি। বড়দা দেখলাম আবার বাইরে চলে গেলেন। এইবারে আমি ফোন করলাম। বড়দা ফোন ধরে বললেন, চিন্তা কোরো না স্যার, আমি লানচের পরে তোমার লগে কথা কইব।

    লানচের পরে বড়দা সত্যিই একটা কেবিনে ডাকলেন। তেঁতুল হলে কী হবে, পুউরো চিদাম্বরমের মত পলিশড ইংরেজি, কথা কয়ে সুখ আছে। বললাম, এ কী ব্যবহার? ঘরভর্তি লোকের সামনে? মেজদা কি প্রপারলি এটিকেট জানে না? ... বড়দা খুব সান্ত্বনা দিয়ে বললেন, আসলে ও তোমাকে নিয়ে প্ল্যানটা তো জানে না, তাই ... তুমি সাড়ে পাঁচটাতেই চলে যেও, আমি ওকে বলে দিয়েছি, কেউ আটকাবে না (যেন আটকালেই আমি আটকে যেতাম), আর পরের প্ল্যান?

    বড়দা আবার বিগলিত, প্ল্যান তো একই আছে। তুমি আসবে, ভিসা ফাইল হবে। ক্যানাডা চাইলে ক্যানাডার, ইউএস চাইলে ইউএসের। ততদিন তুমি এখানে বসেই কাজ করো। দু মাসের বেশি তো লাগবে না। আমাদের কোটা আছে। ভিসা হলেই তুমি চলে যাবে। আমরা এখানে তোমার জন্য অ্যাকোমোডেশনের ব্যবস্থা করে দেব।

    আমি মুচকি হাসলাম এইবারে, স্যার, আমার পকেটে একটা ওয়ার্ক পারমিট আছে, শেঙ্গেন। দুহাজার চোদ্দ পর্যন্ত ভ্যালিড। ভিসা হয়ে যাওয়া দিয়ে কিস্যু এসে যায় না। ওই সব গল্প তো অনেক শুনলাম, কংক্রিট প্ল্যান বলো, ক্লায়েন্টকে আমার যাবার ব্যাপারে কবে জানাচ্ছো, নাকি আমি নিজেই জানাবো?

    বড়দা খুব গম্ভীর হয়ে বললেন, আমার কথায় তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না? জানো, আমি নর্থ আমেরিকার বিজনেস ডেলিভারি হেড? কোম্পানির হায়ারার্কিতে পাঁচ নম্বরে? আই রিপোর্ট টু এক্স, এক্স রিপোর্টস টু ওয়াই, ওয়াই রিপোর্টস টু জেড, জেড রিপোর্টস টু সিইও।

    তাতে আমার কী? দ্যাখো বাপু, ডেপুটেশন নিয়ে আমার অলরেডি খুব খারাপ অভিজ্ঞতা আছে, এর আগের ম্যানেজারের সঙ্গে আমার রিলেশনশিপ খারাপ হয়ে গেছে এই নিয়ে, এটা এই কোম্পানির টিপিকাল কালচার, ভুলিয়ে ভালিয়ে ডেপুটেশনে নিয়ে আসো, তারপরে টাইমে রিলিজ দাও না, খালি এক্সটেন্ড করিয়ে রাখো। আমি বারবার রিলেশন খারাপ করতে উৎসাহী নই, কেবল ডেপুটেশনের শেষে বাড়ি ফেরার ব্যাপারে আমি কখনও কম্প্রোমাইজ করি না, এটা জেনে রেখো।

    বড়দা আরও গম্ভীর হয়ে বললেন, আমি জানি না কোন ম্যানেজার তোমাকে কী ভাবে আটকে রেখেছে, তবে আমার সেটা কাজের ধরণ নয়। আমি যে কথাগুলো বলছি, সম্পূর্ণ দায়িত্ত্ব নিয়েই বলছি। তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে পারো, ঠকবে না। এটা খুব হাই ভিজিবিলিটি প্রজেক্ট, এখানে নিজের ক্যাপা দেখাতে পারলে তুমি অনেকদূর পর্যন্ত পৌঁছতে পারবে, আম্রিগা তো কোন ছাড়।

    লোকটা কি আমাকে চাঁদে পাঠাবার কথা ভেবে রেখেছিল ভালো পারফরমেন্স দেখলে? কে জানে!

    সামহাউ আমাকে আধা কনভিন্স করল, দুপুরের দিকে ক্লায়েন্ট মীট শেষ হল, আমি রাতের ফ্লাইটে দিল্লি ফিরলাম।

    বাড়ি ফিরে আমি মেন্টরের সঙ্গে কথা বললাম। সে শুনে বলল, ঝোল কেস লাগছে। তুমি অনসাইট কনফার্ম না করে ব্যাঙ্গালোর যাবে না।

    বেশ কথা। বাড়ি ফিরে আমি একেবারে বোতীন স্টাইলে একখানি লিস্টসমৃদ্ধ মেল লিখলাম বড়দাকে।

    বড়দা, অ্যাজ ডিসকাসড -

    ১। আমি লুরু যাবো, ম্যাক্সিমাম দু মাসের জন্য। তার বেশি কোনও কন্ডিশনেই নয়।
    ২। যাওয়া মাত্রই আমার ভিসা অ্যাপ্লাই করা হবে, ইউএস বা কানাডার জন্য।
    ৩। যদি আমার ভিসা রিজেক্ট হয় কোনও কারণে, আমাকে তক্ষুনি ছেড়ে দেওয়া হবে।
    ৪। যদি আমার ভিসা প্রসেসই না করা হয়, ইমিডিয়েটলি আমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে। আমি অফশোর লোকেশনের জন্য কাজ করব না।
    ৫। আমার থাকার ব্যবস্থা তোমরা করে দেবে।
    ৬। প্রজেক্টের সমস্ত স্টেকহোল্ডারকে আমার স্টে প্ল্যান নিয়ে ক্লিয়ারলি জানিয়ে দেবে। আমি চাই না আমার মুখ থেকে প্ল্যান শুনে কেউ সারপ্রাইজড হয়ে আমার ওপর চেঁচামেচি করুক।

    এগুলিতে রাজি থাকলে জানাও, আমি তারপরে আমার ডেপুটেশন রিকোয়েস্ট রেইজ করব।

    বড়দা খুব প্রম্পট। ইমেলে লিখিত উত্তর দিলেন, এগ্রিড, অ্যাজ ডিসকাসড।

    এই মেলকে সম্বল করে আমি বাক্স প্যাঁটরা গুছিয়ে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে লুরু উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলাম। দু মাসের ডেপুটেশন, দেখতে দেখতে শেষ হয়ে যাবে, আর দু মাস মানে তো আমি ফিরছি অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহেই, পুজোটা বাড়ির লোকের সাথেই কাটানো যাবে।

    কিন্তু সব যদি খাপে খাপে হয়েই যেত, তা হলে আর আমাকে রাত জেগে এত গল্প লিখতে হত কেন?

    (ধৈর্য ধরুন, চলবে)
    পাকাপাকি যাবার আগেও সেই মুম্বাইবাসী কুড়ির সঙ্গে একটা ছোট মোলাকাত না বলে থাকা যায় না।

    ক্লায়েন ভিজিটের সময়ে দুদিনের জন্য যে লুরু গেছিলাম, তখন কুড়িও এসেছিল মুম্বাই থেকে। ফাঁক পেয়ে আমাকে ডেকে বলল, আরে তোমার নাম অফশোর টেক লিডের জন্যে রেখেছে, তুমি জানো?

    আমি ব্যাপারটা আগেই শুনেছি আমার মেন্টরের কাছ থেকে। আমি কুড়িকে অতএব পাল্টা চার্জ করলাম, তুমিই তো আমাকে ইন্টারভিউয়ের আগে বড়দার সঙ্গে মিলে বলেছিলে, ক্লায়েন জিজ্ঞেস করলে আমি যেন বলি হ্যাঁ আমি লুরুতে বসে কাজ করব, কিন্তু আসলে আমাকে লুরুতে কাজ করানো হবে না, আমি অনসাইটেই যাবো। কথা হয়েছিল না এ রকম?

    কুড়ি খানিক তো তো করে বলল, না-না, আমি ঠিক বলি নি, ওটা বড়দাই বলেছে। প্ল্যান তো সে রকমই ছিল বলে আমিও জানতাম, কিন্তু বড়দা তো ক্লায়েনকে বলে-ই নি তোমাকে আম্রিকা নিয়ে যাবার কথা। ও তো শুরুতেই ক্লায়েনকে বলেছে যে আমরা সিকিবাবুকে প্রজেক্টে নিজেছি অফশোরে টেকনিকাল লীডের রোলের জন্য।

    খটকা তখনই লেগেছিল, অতঃপর সেই মেজদার সঙ্গে পাঙ্গা, বড়দার সঙ্গে কথোপকথন, এবং অবশেষে, হ্যাঁ, অবশেষে, এই বয়েসেই ঢপ খেয়ে কনভিন্সড হয়ে আমার লুরু গমন, ষাট দিনের ডেপুটেশনে।

    আগস্ট মাসের ছ তারিখে পৌঁছলাম, হিসেব মত অক্টোবরের চার তারিখে আমি ফেরত আসছি, মানে পুজোয় দিল্লি বা কলকাতাতেই থাকছি।

    কিন্তু যত দিন যাচ্ছে, তত দেখছি গল্প যেন অন্যদিকে এগোচ্ছে। প্রজেক্ট প্ল্যানে আমাকে দেখানো ডিসেম্বরের শেষ অবধি, ভিডিওকনফারেন্সিংয়ে আমার নাম দিয়ে রেসপন্সিবিলিটি ম্যাট্রিক্স শেয়ার করা হচ্ছে এন্ড অফ ডিসেম্বর অবধি। এক দেড় সপ্তাহে সন্দেহটা বেশ পাকাপোক্ত হল। এদিক ওদিক খোঁজ নিয়ে জানলাম, আমাকে আম্রিকা পাঠানোর কথা তো নেইই, এমনকি আম্রিকায় এই প্রজেক্টের জন্য কোনও রকম পজিশনই খোলা নেই।

    বড়দা তার মানে ঢপ মেরেছে। আমার সাথে? বড়দা কী ভেবেছে আমি বাচ্চা ছেলে, ঢপ মারবে বুঝতে পারব না, বা বুঝতে পারলেও মুখ বুজে কাজ করে যাবো?

    চোদ্দই আগস্ট বড়দাকে একটা মেল করলাম, গুরু, তোমার বচন এবং বাস্তব পরিস্থিতি দুটো মিলছে না। আমি এখানে অন্য গল্প শুনছি। শীঘ্র কল করহ, এবং পাঁচই অক্টোবর আমার ফেরার টিকিটের ব্যবস্থা করহ।

    বড়দা, আগেই বলেছি, অত্যন্ত প্রম্পট। প্রায় আধ ঘণ্টার মধ্যে মেল এল, অবশ্যই স্যার। কাল সকালেই আপনাকে কল করছি, আজ আমি একটু কল টল নিয়ে বিজি আছি।

    কাল গেল পরশু গেল, বড়দা কল আর করল না। পাঁচ দিন দেখে আমি আবার মেল করলাম, গুরু, কথা হয়েছিল, তবু কথা হল না। কল করো, নয় তো বলো আমি কল করছি তোমায়।

    বড়দা আবার অ্যাপোলোজেটিক, এবং প্রম্পট, সরি সিকিস্যার, হায়দ্রাবাদ যেতে হয়েছিল, ক্লায়েন ভিজিট ছিল, কল ছিল, ব্লা ব্লা ছিল, আমি কাল অবশ্যই আপনাকে কল করছি।

    পঁচিশে আগস্ট বড়দাকে মোবাইলে ফোন করলাম। রবিবার। সন্ধ্যেবেলা। বড়দা ফোন তুললেন, এবং তুলে বললেন, স্যার, আমি এখন একটা ক্লায়েন্ট কলে আছি, কল শেষ করে আপনাকে ফোন করছি।

    ক্লায়েন্ট কল? রবিবার সন্ধ্যেবেলায়? যাই হোক, রাত কেটে গেল, ফোন আর এল না।

    মঙ্গলবার আবার মেল করলাম। বড়দা প্রায় আমার পায়ে পড়ে যান আর কি মেলের মাধ্যমেই, স্যার, মাফ করে দিন, পাকেচক্রে ভুলে গেছি, (সিসিতে পার্সোনাল সেক্রেটারি) - নন্দিনী, প্লিজ রিমাইন্ড মি দ্যাট টুমরো মর্নিং ফার্স্ট আই হ্যাভ টু কল সিকিস্যার।

    নন্দিনীও বড়দার যোগ্য অ্যাসিসট্যান্ট।

    একতিরিশে আগস্ট একটা শেষ চেষ্টা করলাম। লোকাল মেজদা, সেই যে প্রথম দিন আমার সঙ্গে খুব বাজে ব্যবহার করেছিল, এই কদিনে বুঝেছি, লোকটা হম্বিতম্বি করলেও লোক হিসেবে খারাপ না। অ্যাটিটিউড প্রবলেম আছে ঠিকই, কিন্তু ঠিকভাবে হ্যান্ডল করলে কাজ করিয়ে নেওয়া যায়। তাকে মৌখিকভাবে সমস্ত জানালাম। এবং জানলাম, আমার অজ্ঞাতেই ক্লায়েনকে কনফার্ম করা হয়েছে, আমি মিনিমাম তিন মাস লুরুতে বসে কাজ করব, অনসাইটের তো কোনও গল্পই নেই, দোকানের ভিসা প্রসেসিংয়ের কোটা থাকে প্রতি কোয়ার্টারে, এই কোয়ার্টার এবং পরের কোয়ার্টারের সমস্ত কোটা শেষ, সুতরাং দরকার থাকলেও আমাকে আম্রিকা যেতে দেওয়া যাবে না। সে রকমের কোনও কথাও হয় নি।

    তিন মাস? মানে অক্টোবরের এন্ড? হারগিজ নেহি। কী ভেবেছে এরা? বিনা অনসাইটে আমি এখানে পড়ে থাকব? বাবার লুঙ্গি পেয়েছে?

    দোসরা সেপ্টেম্বর আমি লোকাল মেজদা আর সেজদাকে, বড়দা আর আমার মধ্যে হওয়া পুউরো মেল ট্রেলটা ফরোয়ার্ড করে লিখলাম, এতদ্বারা বোঝা যাচ্ছে, বড়দা আইদার আমাকে রিসোর্স বলে মনে করছে না, অথবা বড়দা আমার সঙ্গে কথা বলতে চাইছে না, আমাকে অ্যাভয়েড করছে। ইহা হাইলি আনপ্রফেশনাল, এবং ব্রিচ অফ ট্রাস্ট। বড়দার সঙ্গে আমি আর কোনওরূপ কথোপকথনে আগ্রহী নই, পাঁচই অক্টোবরের ফিরতি টিকিট পেলে তবেই আমি কাজে কনসেনট্রেট করতে পারব, নতুবা নয়।

    পরদিন, কী আশ্চর্য, সকাল পৌনে দশটার সময়ে বড়দার ফোন এল, চেন্নাই থেকে। আপনাদের কি বলেছি, বড়দা কিন্তু লুরুতে থাকে না? সে চেন্নাইতে বসে আমেরিকার ব্যবসা চালায়? আমি ব্যাগপত্তর নিয়ে লুরুতে এসে অবধি একটা দিনের জন্যেও বড়দার দেখা পাই নি।

    যাই হোক, বড়দা ফোন করল। স্বর কম্পিত। স্যার, আপনি আমার নামে এসকালেশন করেছেন? আপনি আমার সঙ্গে আর কথা বলতে চান না?

    যাক, বুইলাম এসক্যালেশনের এফেক্ট ঘটতে লেগেছে। মোলায়েম করে বললাম, কথা বলার তো আর কিছুই রাখেন্নি স্যার, এখন আপনি যা যা বলবেন, সেসবই হবে আপনার তরফে এক্সকিউজেস, আপনি বলতে পারেন, আই অ্যাম অল ইয়ার্স।

    (চলেগা। রাতে। )


    তিনশো সাতাত্তর তখনও সুপ্রিম কোর্টের বিভূতি পেয়ে গ্লোরিফায়িত হয় নি, সুতরাং পরবর্তী কথোপকথন শুনে আপনারা যদি ভাবেন সিকির মনে পাপ আছে, ভাবতে পারেন, কিন্তু অপরাধী কোনওমতেই বলতে পার্বেন না। আর, কে না জানে, চাপ কখনও পাপা থাকে না, মানে, পাপ কখনও চাপা থাকে না। হুঁ হুঁ বাবা, সে ছিল সেপ্টেম্বর মাস। বড়দা, যে কিনা সেই ষোলই আগস্ট থেকে শুরু করে দোসরা সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুউব বিজি থাকার কারণে আমাকে একবারও ফোন করতে পারেন নি, তিনি তেসরা সেপ্টেম্বর সাতসকালে আমাকে ফোং করে মানাচ্ছেন।

    - রাগ করেছো?
    - সেটা ইম্মেটিরিয়াল। আপনার কী বলার আছে বলুন।
    - না, সত্যিই, বিশ্বাস করো, আমি খুব খুব বিজি ছিলাম। আমাকে অনেকগুলো বিজনেস সামলাতে হয় তো।
    - (ফেলুদা মোডে) যার একটা বক্তব্য একবার মিথ্যে প্রমাণিত হয়েছে, তার আর একটা কথাও আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই স্যার (পড়ুন মগনলালবাবু)।
    - নাঃ, তুমি খুবই রেগে আছো। আচ্ছা, তুমি তো আমাকে ফোন করতে পারতে একবার। আমার ফোনের জন্য আড়াই সপ্তাহ কাটিয়ে দিলে কেন?
    - ফোন তো করেছিলাম, রবিবার সন্ধ্যেবেলায়, আপনি নাকি তখন ক্লায়েন্ট কল সামলাচ্ছিলেন।
    - হ্যাঁ, আরে বোলো না, উইকেন্ডেও এত বিজি ---
    - জানতে পারি কি, কোন ক্লায়েন্ট, কোন দেশের ক্লায়েন্ট আপনাকে রবিবার সন্ধ্যেবেলায় কল করে অফিশিয়াল ডিসকাশন করে?
    - (নীরবতা)
    - আমি আপনার কী ক্ষতি করেছিলাম? এইভাবে মিথ্যে কথা বলে আমাকে নিয়ে এলেন কেন?
    - না না, মিথ্যে তো নয়, আমি সত্যিই তোমার জন্য চেষ্টা করছি।
    - আপনি আবার মিথ্যে বলছেন। চেষ্টা করার কোনও জায়গাই নেই। জানুয়ারি মাসের আগে এল ওয়ান ভিসার কোটা ওপেন হবে না আমাদের কোম্পানিতে। সেটা আমি জানি, আর আপনি জানেন না, এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে বলেন?
    - তোমার কাছে রেডি ভিসা আছে ইউ এসের?
    - থাকলে কি আপনার কথায় দু মাসের জন্য লুরুতে এসে থাকার প্ল্যান করতাম স্যার? কেন ডেভিয়েট করছেন টপিক থেকে? থাকলে কী করতেন?
    - আরে, ক্লায়েন একজন কনসাল্টেন্ট চেয়েছে দু সপ্তাহের জন্যে। ওদের ডিজাইন ওয়ার্কশপ হবে।
    - আমি তো স্যার পাতি টেকনিকাল লিড। আমাকে নিয়ে গিয়ে ডিজাইন ওয়ার্কশপে কী হাতিঘোড়া হবে? আপনি অনেকক্ষণ বলেছেন, এইবারে আমি বলছি, আপনি শুনুন। আপনি প্রথম থেকেই জানতেন যে আমাকে অনসাইট পাঠানো হবে না। সেই মতই আপনি চাল চেলেছিলেন। ক্লায়েন আমার যে ইন্টারভিউ নিয়েছিল, সেই ইন্টারভিউ কেউ আর্কিটেক্ট রোলের জন্য নেয় না, কোর টেকনিকাল রোলের জন্য নেয়। আমি দীর্ঘদিন কোর ডেভেলপমেন্টে ছিলাম, আমি জানি প্রশ্নের পার্থক্য। আরও শুনবেন? এই একই ক্লায়েন্ট, আপনার সুপারভিশনে আমেদাবাদে আর একটি ছেলের ইন্টারভিউ নিয়েছিল, এই টেক লিড রোলের জন্যেই। সেই ছেলেটি আমার পরিচিত। সে আমাকে আপনার নাম, ক্লায়েন্টের নাম, আর তাকে করা কোশ্চেনের দু এক টুকরো আমাকে জানিয়েছে। হুবহু এক। তার ছ বছরের এক্সপেরিয়েন্স। আপনার অনসাইট আর্কিটেক্টের প্রয়োজন সেদিনও ছিল না, আজও নেই। কুড়ি আর্কিটেক্টের রোল সেই মার্চ মাস থেকে সামলাচ্ছে। আপনার দরকার ছিল একজন টেক লিড। সেই ছেলেটা কোয়ালিফাই করতে পারে নি, ক্লায়েন্ট খুশি হয় নি তার উত্তরে। আমি তার থেকে অনেক সিনিয়র, ন্যাচারালি ঐ সব বিষয়ে আমার দখল তার থেকে বেশি, আমাকে সিলেক্ট করেছে, কিন্তু সেই ছ বছুরে ছেলের পজিশনে। আমি সেটাও হাসিমুখে মেনে নিয়েছিলাম বাইরে গিয়ে ডলার কামাবো বলে। আপনি কি মনে করেছেন, দিনের শেষে পাঁচশো টাকা পার ডিয়েম পাবো বলে আমি ফ্যামিলি ছেড়ে এখানে এসে রয়েছি?

    বড়দা চুপ। খানিকক্ষণ বাদে মুখ খুললেন, আমি তোমাকে কীভাবে বোঝাবো জানি না, আমি সত্যিই তোমাকে অনসাইটের জন্যই প্লেস করতে চেয়েছিলাম। তুমি জানো কিনা জানি না, কুড়ির বিয়ে ঠিক হয়েছে। ওর কাছে রেডি এল ওয়ান ভিসা আছে, কিন্তু এই বিশেষ পার্সোনাল কারণে ওকে এখন লং টার্মে পাঠানো যাচ্ছে না। তোমার কাছে রেডি ভিসা থাকলে তোমাকে এক মুহূর্তও আমি বসিয়ে রাখতাম না।

    - কী থাকলে কী করতেন, সেটা তো আবার ইম্মেটিরিয়াল স্যার। কুড়ির ভিসা আছে, আমার ভিসা নেই, সেটা আপনি শুরু থেকেই জানতেন। তো কুড়ির সামনে বিয়ে, সেই পার্সোনাল রিজনটা আপনার কাছে খুব ভ্যালিড মনে হল, আর আমি ফ্যামিলি ছেড়ে নিজের বৌ, ছোট মেয়েকে ছেড়ে এখানে পড়ে আছি, সেটা আপনার কাছে বিশেষ কোনও পার্সোনাল রিজন মনে হল না? আপনার পার্সোনাল রিজনের জাস্টিফিকেশনগুলো কি পার্সন স্পেসিফিক?

    ... কী ক্ষার যে চেপেছিল, লোকটা অনেক সিনিয়র আমার থেকে, নিজেই বলেছিল কোম্পানির হায়ারার্কিতে নাকি চার না পাঁচ নম্বরে। কিন্তু তখন তাতে আমার জাস্ট ছেঁড়া যায় কন্ডিশন।

    যাই হোক, অনেক আকচাআকচির পর, বড়দা বললেন, ইউ এস নেহি তো কৈ বাত নেহি, তোমায় আমি কানাডা পাঠাবো। আমি বললাম, আর তোমার কথায় আমি কোত্থাও যাবো না, আমি বাড়ি যাবো। আমার আর এই প্রজেক্টে বিন্দুমাত্র কন্ট্রিবিউট করার ইচ্ছে নেই। তোমার কথায় বিশ্বাস করে ষাট দিনের ডেপুটেশন নিয়ে এসেছি, দ্যাট এন্ডস অন ফোর্থ অক্টোবর, আমাকে পাঁচ অক্টোবরের টিকিট দাও। আর এখানে সব্বাইই বলছে আমার নাকি তিন মাস থাকার কথা ক্লায়েন্টকে বলে দিয়েছেন আপনি, সেটা আপনি কার কনসেন্ট নিয়ে বলেছেন আমি জানি না, আমার মনে হয় ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে গেলে আপনার এবার সবাইকে সত্যি কথাটা জানিয়ে দেওয়া উচিত, যে আমি অক্টোবরে এখানে থাকছি না। নইলে কিন্তু আমার তরফে আপনি আরও বেশি ড্যামেজ এক্সপেক্ট করবেন।

    বড়দা বহু গাঁইগুঁই করে, আচ্ছা দেখছি, বলে ফোন রাখলেন।

    কিন্তু লাভ বিশেষ কিসুই হল না, হাজার হোক, বড়দা ইজ বড়দা, হায়ারার্কিতে চার না পাঁচ নম্বরে, আমি বোধ হয় সেই হিসেবে হায়ারার্কিতে ডাবল ডিজিটে আসি, কিছু করা গেল না। লোকাল মেজদা সেজদার সঙ্গে দফায় দফায় মিটিং মিছিল হবার পরে বুঝলাম, কিছু করার নেই। আগের বারের মত কাজ বন্ধ করে বসে গেলে এইবারে চলবে না, কারণ আমি এইবারে অ্যাপ্রেইজাল সাইকলে ঢুকে গেছি। খুব বেশি বাড়াবাড়ি করতে চাইলে করতেই পারতাম, কিন্তু ভেবে দেখলাম টিমের মধ্যে আমি অনেকটা সিনিয়র। এই ধরণের বাড়াবাড়ি করতে গেলে সেটা টিমের মধ্যে চাউর হবেই, খুব একটা ভালো এক্সাম্পল সেটিং হবে না। অনেক চিন্তা ভাবনা করে দেখলাম, পুজোয় দিন পাঁচেকের ছুটি নিয়ে বাড়ি ঘুরে আসব, আর বাড়তি ঝামেলা না করে অক্টোবরের শেষ অবধি থেকেই যাবো। কিন্তু এনশিওর করতে হবে অক্টোবর এন্ডের টিকিটটা যেন হাতে পাই, ওটি হাতে না পেলে সমস্ত প্ল্যানিংই অর্থহীন। মেজদা সেজদা এই মর্মে রাজিও হয়ে গেলেন যে অক্টোবর এন্ডেই আমাকে ছেড়ে দেওয়া হবে, আর মাঝে দুর্গাপুজোর জন্য আমি পাঁচদিন ছুটিও পাবো।

    ইতিমধ্যে, লুরুতেই আমার পরিচিত এক ছানা, আমায় এসে বলল, সিকিদা, কুড়ি তো তোমার নামে যা তা বলে বেড়াচ্ছে।

    কী বলেছে?

    আরে, সেদিন আমায় বলছিল, সিকির কি ফ্যামিলি বন্ডিং বলে কিছু নেই? বউ বাচ্চাকে ছেড়ে কী করে তিন চার মাসের জন্য লুরুতে থাকতে রাজি হয়ে গেল? আমি হলে তো থাকতাম না।

    শুনেই, মটকাটি গেল গরম হয়ে। এই ছানা আর কুড়ি, একই গ্রুপের জনতা, আর এদের বস হচ্ছেন আমার মেন্টর সেই ভদ্রলোক। কুড়ি এই সব কথা আমার ফ্যামিলির নামে বলবার সাহস পায় কোত্থেকে? আমার ফ্যামিলি বন্ডিং নিয়ে অন্যের কাছে আলোচনা করবার অধিকার কে দিয়েছে ওকে?

    ফোন করলাম, কথা বললাম ওদের বস, আমার মেন্টরের সঙ্গে। সমস্ত ঘটনা পর পর বললাম। উনি শুনে শুধু বললেন, বড়দা অনেক উঁচু ডালের পাখি, বড়দার খপ্পর থেকে তোমাকে বের করে আনার ক্ষমতা আমার নেই, তবে কুড়িকে টাইট দেবার ব্যবস্থা আমি করছি।

    আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, না না, প্রফেশনালি ওর কোনও ক্ষতি হোক আমি চাই না, কিন্তু এই অ্যাটিটিউডটি ভালো নয়, সামনে মুখে মিষ্টি, পেছনে ছুরি মারা, সেটা করা কোনওমতেই ঠিক নয়।

    মেন্টর বললেন, আরে তুমি জানো না, ও সবসময়েই নিজেকে খুব স্মার্ট প্রতিপন্ন করার চেষ্টা করে, এদিকে ঘটে তেমন বুদ্ধি নেই। তুমি চিন্তা কোরো না, আমি ওকে টাইট দিয়েই ছাড়ব, আমারও কিছু পার্সোনাল স্কোর মেটানোর আছে। আমার আড়ালে ও আমাকে নিয়েও অনেক কিছু বলেছে, সে সবও আমার কানে এসেছে।

    এর দুদিন পর। রাত নটা। আপিস থেকে ফিরে ঘরে সবে বসেছি। কুড়ির ফোন এল।

    (চলবে। বাংলা সিরিয়াল স্টাইলে)


    কুড়ির ফোন এল। কুড়ি খুব তিতিবিরক্ত। দু সপ্তাহের ওয়ার্কশপের জন্য তাকে ইউ এস যেতে হবে, এদিকে তার মায়ের কিছু একটা মেডিক্যাল প্রবলেম আছে, প্ল্যানড হসপিটালাইজেশন আছে, কুড়ি ছাড়া মুম্বাইতে তার মা-কে দেখার কেউ নেই। আমি কী করব এ ব্যাপারে তা জানি না, তবে এটুকু বুঝলাম কুড়ি আমার কাছে ফ্রাস্ট্রেশন ভেন্ট আউট করছে।

    কুড়ি ছাড়া আর কারুর কাছে রেডি ভিসা নেই, তাই কুড়িকেই যেতে হবে, আর এমন কোনও গ্যারান্টি নেই যে দু সপ্তাহেই কাজ শেষ হবে, সফটওয়ারের ডিজাইন ওয়ার্কশপের যেমন নেচার, সেটা আরামসে তিন থেকে চার সপ্তাহ এক্সটেন্ডেড হতে পারে। অনেক রকম স্টেকহোল্ডার আছে, তাদের সবাই যে একসাথে উপস্থিত থাকবে এমন কোনও কথা নেই, সবার সাথে কথা না বললে ডিজাইন ডকু ফাইনালাইজডও হবে না, সেইটা অ্যান্টিসিপেট করেই কুড়ি বেঁকে বসছে। আমি যাবো না। অন্য কাউকে পাঠাও। ম্যানেজমেন্ট এদিকে কুড়ি ছাড়া কাউকেই আর ভাবতে পারছে না এই রোলে, কারণ সেই এপ্রিল মাস থেকে কুড়ি এই প্রজেক্ট নিয়ে নাড়াঘাঁটা করছে। কুড়ি যে গ্রুপের রিসোর্স, সেই গ্রুপ থেকে আমাদের প্রজেক্ট টিমকে বলে দেওয়া হয়েছে, কুড়ি যেতে পারে, তাদের কোনও প্রবলেম নেই।, কুড়ির কনসেন্ট ছাড়াই, এখন প্রজেক্ট ম্যানেজার কুড়ির আর পার্সোনাল প্রবলেমের কথা একেবারেই শুনতে চাইছে না। মানে, কুড়ি যে গ্রুপের, সেই গ্রুপ থেকে নর্মালি হ্যাঁ করে দিলে রিসোর্সের না করার উপায় থাকে না। কনসাল্টেন্সি।

    কুড়ি এর সাথে কথা বলে, তার সাথে কথা বলে মৌখিক আশ্বাসন তো পেয়েছে যে সে দু সপ্তাহেই ফিরে আসবে, কিন্তু লিখিতভাবে কেউ তাকে এই কথাটি দিচ্ছে না। বাওয়াল করে সিকি এমন বিখ্যাত হয়ে গেছে, একটি এসক্যালেশনের এমন মাহাত্ম্য, চেন্নাইবাসী বড়দা, মেলে আমাকে লিখিত প্রতিশ্রুতি দেবার পরে আমার বাঁশ খেয়ে নিজে শিখেছেন এবং অন্যদের শিখিয়ে গেছেন। ডেডলাইন নিয়ে এখন আর কেউ লিখিত কিছু দেয় না।

    তাই নিয়ে কুড়ির খুব মনোকষ্ট। আমি খুব নরম মনের ছেলে, স্পেশালি কুড়িদের দুঃখ আমি একেবারেই সইতে পারি না, হলেই বা তার অন্যত্র বিয়ের কথা চলছে, আমারও শুনে একটু দুঃখ টুঃখ হতে লাগল। বুঝতে পারলাম, এ-ও আমার ইনপুটের ফসল। আমার সেই মেন্টর ভদ্রলোক, যিনি কিনা কুড়ির গ্রুপের বস, তিনিই আমার কথায় কুড়িকে বাঁশ দিচ্ছেন, এ আমি পরিষ্কার বুঝতে পারছি, কিন্তু কিছু বলার নেই আমার। আমি ঠিক এইটা চাই নি, অসুস্থ মা-কে ফেলে রেখে কেউ চলে যাক, এবং সময়মত ফিরে আসতে না পারুক। এই ধরণের কেস আমি একেবারেই বরদাস্ত করতে পারি না। কিন্তু আমার তরফে কিছু বলারও নেই কাউকে। এ এমনই লড়াই, নিজেকেই লড়তে হয়। খুবসে সান্ত্বনা দিলাম, বললাম, সব ঠিক হয়ে যাবে দেখো, মানসিকভাবে প্রস্তুতি নাও, হসপিটালাইজেশন যদি দুইয়ের বদলে তিন সপ্তাহের মাথায় করে নেওয়া যায়, একটু হাসপাতালে কথা বলে নাও। প্ল্যানড যখন, খুব আর্জেন্সি নিশ্চয়ই নেই।

    সেই মত সান্ত্বনা পেয়ে, এক বুক দুঃখ নিয়ে কুড়ি আম্রিকা গেল শর্ট টার্মে।

    এক সপ্তাহ গেল, দুই সপ্তাহও প্রায় যাই যাই করছে। ডিজাইন ওয়ার্কশপ শেষ হবার নাম নিচ্ছে না। যেহেতু আম্রিকান ক্লায়েন, তাই রাতের পর রাত আমাদের কাটছে অফিসে। সন্ধ্যে ছটা থেকে কল শুরু, ভোর চারটেয় শেষ। ফাঁকে ফাঁকে কুড়ি সেমটাইমে চ্যাটের মাধ্যমে আমাকে জানাচ্ছে ক্লায়েন্ট কেমন খচ্চর (হতেই হবে, আফটার অল, ইন্ডিয়ান তো), ওকে কোণঠাসা করার চেষ্টা করছে, টেকনিকালি ভুলভাল জিনিসপত্র স্কোপে ইনট্রোডিউস করার চেষ্টা করছে জোরজার করে, যে-সবের কথা আগে হয়-ই নি।

    এই করে, দ্বিতীয় সপ্তাহও শেষ। কুড়ি ফিরে আর আসে না। তৃতীয় সপ্তাহ। বুধবার। সেদিন ডেটাবেস টিমের জাগরণ ছিল, মানে সেদিন তাদের ডিজাইন ডিসকাশন। আমি তাই রাত সাড়ে নটার মধ্যেই ঘরে ফিরে এসেছি। এসে, যেমন হয়, ল্যাদ খাচ্ছি আর গুরু করছি, রাত তখন সাড়ে বারোটা পেরিয়ে পৌনে একটা, সেমটাইমে (আমার পার্সোনাল ল্যাপিতেও সেমটাইম চালানো থাকে) হঠাৎ কুড়ির পিংঃ জেগে আছো?

    আমি চমকিত। হ্যাঁ আছি।

    কুড়ি কল করল। কথা প্রায় বেরোচ্ছে না, গলা বুজে আসছে কান্নায়। প্রচণ্ড অসহায় অবস্থায় খালি বলছে, আমি কী করব, মায়ের অবস্থা খারাপ হচ্ছে, এই উইকের শেষে যদি আমি ফিরে গিয়ে মা-কে হসপিটালাইজড করতে না পারি, আমার বাবা নেই, মুম্বাইতে আমার আত্মীয় স্বজন এখন আর কেউ নেই, মা-কে আমি আমার ভরসায় আমার কাছে রেখেছিলাম ... এরা বুঝতে চাইছে না, আমার সঙ্গে এমন ব্যবহার করছে, অথচ এদের জন্য আমি কত কত রাত জেগেছি, ...

    কুড়ি অর্ধেক কথা মুখে বলছে, অর্ধেক কথা সেমটাইমে লিখে লিখে জানাচ্ছে, আর ফোনের আওয়াজে বুঝতে পারছি খুবসে কান্না সামলাচ্ছে।

    খুব, খুব খারাপ লাগল। এই তো আমাদের জীবন, কালীদা। ফ্যামিলি ছেড়ে, আমিও তো খুব ভালো নেই। কিছু বাড়তি পয়সার দরকার ছিল, সেই লোভে বেরিয়েছিলাম বাড়ি থেকে, বেরিয়ে ফেঁসে গেলাম ভারতের মধ্যেই আরেকটা শহরে, পয়সাও জুটল না, ফ্যামিলির সাথে থাকাও হল না। কেউ সাহায্য করতে পারে না এ সব ব্যাপারে। নিজের চাপ নিজেকেই সামলাতে হয়। শুধু অন্যের যখন একই অবস্থা হয়, তখন সেগুলো নিয়ে মজা করতে নেই। আমার ফাঁদে পড়া অবস্থা দেখে কুড়ি মজা করেছিল, অন্য ছেলেকে মক করে শুনিয়েছিল, সিকির কি ফ্যামিলি বন্ডিং বলে কিছু নেই? অফশোরে কাজ করবে বলে দিল্লি ছেড়ে লুরু এল? আজ নিজে ঠিক সেই অবস্থায়।

    কী বলব। কুড়িকে বললাম, শান্ত হও। আমি কাল সকালেই কথা বলছি এখানকার ম্যানেজারদের সঙ্গে, তোমার ব্যাপার নিয়ে। ট্রাস্ট মি, একটা না একটা রাস্তা বের করে নেব। ডিজাইন ওয়ার্কশপ এখন এতটা এগিয়ে গেছে, বাকি যদি কিছু থাকে এ সপ্তাহের শেষে, সেটা এখান থেকেও অন কল করে নেওয়া যাবে।

    পরদিন সকালে মেজদা সেজদার সঙ্গে দেখা করলাম। মেজদা সেজদা এখন আমায় দেখলেই ভয় খায়। কিন্তু এখন অচিরেই তাদের ভয় ভাঙালাম, গুরু, কুড়িকে এইবারে ফেরত আনা যায় না? কাল মাঝরাত্তিরে ফোন করে আমার কাছে খুব কান্নাকাটি করেছে। তোমাদের অনেকবার বলেছে, তোমরা হয় তো রিয়েলাইজ করতে পারো নি, ওর মা সত্যিই খুব অসুস্থ, আর ওর কোনও ব্যাক আপ নেই। আমরা বাকিরা মিলে সামলে নেব, ওকে ফিরিয়ে আনো, এই অবস্থায় ও ওখানে ক্লায়েন্ট প্লেসে মাথা ঠিক রেখে কাজও করতে পারছে না।

    মহিলা এমপ্লয়িদের কান্নাকাটি ব্যাপারটা বেশির ভাগ মেজদা সেজদাই খুব ভয় পায়। আমাদের সেজদাও ব্যতিক্রম হল না। বৃহস্পতিবারেই কুড়ির রিটার্ন রিকোয়েস্ট অ্যাপ্রুভড হল, রবিবার সকালেই কুড়ি মুম্বাই এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করল, নিশ্চয়ই তখন তার মুখে একগাল হাসি ছিল।

    (চলবে)


    কুড়ির সমিস্যে তো মিটল, কিন্তু আমার? চৌঠা অক্টোবর আর ফেরা হচ্ছে না, সে ব্যাপারে আমি তখন ধীরে ধীরে মনকে বোঝাতে শুরু করেছি। রাতের পর রাত ঘুম আসছে না, জেগে কাটিয়ে দিচ্ছি, ড্র্যাস্টিক স্টেপ নেবারও সাহস হচ্ছে না কিছু। এরা লিখিত প্রতিশ্রুতি যখন ভঙ্গ করে, তখন পরবর্তী আর কোনও মৌখিক প্রতিশ্রুতি যে রাখবে, এমন ভরসা করার আর কোনও জায়গা নেই। মেজদা সেজদা দুজনেই বড়দার এমন হারামিগিরি শুনে খুব চুক চুক করে আফশোস ব্যক্ত করেছে, আর শেষে বলেছে, আমাদের কিছুই করার নেই, ক্লায়েন্টকে বলা আছে তুমি থাকবে অক্টোবরের শেষ পর্যন্ত, আমরা তোমাকে একত্রিশে অক্টোবর ফেরার ব্যবস্থা করে দিতে পারি।

    বলেছে। কিন্তু এই বলার যে আর কোনও মূল্য নেই, সে আমি জানি। ইন এনি কেস যদি আমাকে অক্টোবরের এন্ডেও বলে, তোমাকে আমাদের আরও কিছুদিন দরকার, থেকে যেতে হবে, তো আমার কাছে দ্বিতীয় কোনও রাস্তা নেই।

    তখন সেপ্টেম্বরের থার্ড উইক। দু রাত জেগে ভাবলাম, খুব সাহসী স্টেপ না হলেও, আধা সাহসী একটা স্টেপ নিই। এখনই একত্রিশে অক্টোবরের টিকিটের জন্য রিকোয়েস্ট রেইজ করে দিই। হাতে টিকিট পেলে তবে জানব, যে আমি ফিরছি, কারুর মুখের কথায় বা মেলের ভাষ্যে নয়।

    তাই করলাম। সাথে মেজদাকে মেল করে দিলাম, অ্যাপ্রুভ করো। হাতে টিকিট না পেলে আমার কাজে মন বসছে না। মেজদা সাথে সাথে মেল করলেন, চিন্তা কোরো না, আমি ঠিক অ্যাপ্রুভ করে দেব। তুমি কাজে মন দাও।

    সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ। রিকোয়েস্ট অ্যাপ্রুভ হল না। তখনও পেন্ডিং পড়ে আছে। আবার মেল করলাম। এমন নয় যে মেজদার সাথে সরাসরি গিয়ে কথা বলতে পারতাম না, তবে বললাম না, আমি সমস্ত ব্যাপারটা ডকুমেন্টেড রাখতে চাই। ... মেল করলাম, উত্তর এল, করে দেব যখন কথা দিয়েছি, করে দেব অ্যাপ্রুভ।

    আর কথা দিয়েছি। তোমাদের কথা যে পদ্মপাতায় জল, তা কি জানো না, হে মেজদা, সেজদা?

    অক্টোবরের দ্বিতীয় সপ্তাহে পুজোর জন্য দিল্লি যাব, চার দিনের ছুটি নিয়ে, সে কথা আগেই বলে রেখেছিলাম, কিন্তু গিয়ে বউ-মেয়েকে যদি কনফার্মডলি বলতেই না পারি যে আমি অক্টোবরের শেষে ফিরছি, সে এক বিশ্রী ব্যাপার হবে। যা করবার চৌঠা অক্টোবরের মধ্যেই করে ফেলতে হবে।

    যা থাকে ভাগ্যে, কপাল ঠুকে তিন তারিখ মেজদার সঙ্গে দেখা করলাম। আবার একই কথা বললাম, টিকিট চোখে না দেখলে কাজে মন বসাতে পারছি না। আমার কাছে সত্যিই আর কারুর কোনও কথার দাম নেই, এখন শুধু টিকিটের দাম আছে। আশা করি তুমি আমার অবস্থা বুঝতে পারছো।

    মেজদা, যেন খুব মজা পেয়েছে এমন ভঙ্গিতে বলল, আরে তুমি বাচ্চাদের মত টেনশন করছো কেন, বলেছি তো অ্যাপ্রুভ করে দেব।
    - তো আজকেই কেন নয়?
    - না, অক্টোবরের থার্ড উইকে তোমার ডিজাইন ডকুমেন্ট সাবমিট করার আছে, সেটা হয়ে গেলেই আমি টিকিটের রিকো অ্যাপ্রুভ করে দেব।
    - বস, তুমি নিজেও জানো , প্রজেক্ট যে গতিতে চলছে, ওটা অক্টোবর এন্ডের আগে তৈরি হবে না, ক্লায়েন্টের থেকে ইনপুট না পেলে আমরা আগে এগোতে পারছি না।
    - কী করব বলো, যাই হোক, ওটা তুমি করে দাও, আমিও তার পরে তোমার টিকিট অ্যাপ্রুভ করে দেব।

    শালা আমাকে লেজে খেলাচ্ছে? সিকিকে? এখনও চেনে নি আমাকে তার মানে। ডিল করছে? করাচ্ছি।

    শুক্রবার সন্ধ্যেবেলায় ডিজাইন ডিসকাশনের একটা ইমপর্ট্যান্ট কল ছিল। সাড়ে ছটা থেকে। আমি টুক করে সাড়ে পাঁচটায় অফিস থেকে বেরিয়ে বাড়ি চলে গেলাম। বাড়ি অখান থেকে বাসে দশ মিনিটের রাস্তা। আমি জানি এর পরেই আমার খোঁজ শুরু হবে। ঘরে এসে ল্যাপটপ চালু করে মোবাইল অন রেখে গুরু করতে লাগলাম।

    ঠিক ছটা সাতাশে আমার কাছে কল এল। চীফ আর্কিটেক্ট (কুড়ি নয়, অন্য একজন) জনৈক বাচ্চা ছেলে(পিএমও)কে দিয়ে আমাকে ফোন করিয়েছে, সিকিস্যার, আপনি কোথায়?

    নিষ্পাপ ভাবে বললাম, আমি ঘরে ফিরে এসেছি।

    - আপনার তো কল আছে এখন।

    - না, আমি আর কল নিতে পারছি না।

    - সে কী, কেন? চীফ আর্কিটেক্ট আপনাকে খুঁজছেন।

    - তাঁকে গিয়ে বলো, মেজদার সাথে আমার একটা ডেডলক সিচুয়েশন তৈরি হয়েছে। সেটা খোলার চাবি মেজদার কাছে, ওটা তিনি না খুললে আমি কল জয়েন করতে পারছি না। সরি ভাই।

    ছটা তেত্তিরিশে আবার ফোন। আবার ফোন করিয়েছে সেই ছেলেটাকে দিয়ে, সিকিস্যার, চীফ আর্কিটেক্ট স্যার বলছেন, আপনি কি ঘর থেকে কল নিতে পারবেন?

    মহা জ্বালা! - আমি তো বললাম, চীফ আর্কিটেক্ট স্যারকে গিয়ে বলো, সমস্যাটা তৈরি করেছে মেজদা। তিনি সলভ না করলে আমি কিছু করতে পারব না।

    ফোনে কথা বলছি, আর দু মিনিট অন্তর অন্তর জার্নি রিকোয়েস্টের পেজটা রিফ্রেশ মেরে যাচ্ছি। তখনও রিকোয়েস্ট পেন্ডিং ফর অ্যাপ্রুভাল।

    ঠিক পাঁচ মিনিটের মাথায় দেখলাম রিকোয়েস্ট অ্যাপ্রুভ হয়ে গেছে। মানে রিকোয়েস্ট এইবারে ট্র্যাভেল ডেস্কে গেছে। জয় ত্তারা, আর কেউ আটকাতে পারবে না। খোকা আবার কল করেছে তারপরে, সিকিস্যার, মেজদা বললেন আপনার প্রবলেম উনি সলভ করে দিয়েছেন, আপনি কি এইবারে কল জয়েন করতে পারবেন?

    - হ্যাঁ হ্যাঁ, আমি বললাম, - কেন পারব না? আমিও দেখতে পাচ্ছি যে তিনি প্রবলেম সলভ করে দিয়েছেন। আমি এক্ষুনি কল জয়েন করছি।

    পরদিন অফিসে গিয়ে শুনলাম, আমার উত্তর পেয়েই নাকি চীফ আর্কিটেক্ট তড়াক করে লাফিয়ে উঠে গিয়ে ল্যান্ড করেছিল মেজদার টেবিলের সামনে, - কী সব ডেডলক তৈরি করে রাখেন আপনি ক্রুশিয়াল রিসোর্সদের সঙ্গে? সিকি নাকি বলছে আপনার সাথে কী ঝামেলা হয়েছে তাই ও কল জয়েন করবে না? ও কল জয়েন না করলে আমি একা কী করে সামলাবো?

    তাই শুনেই নাকি মেজদা ঝটপট ইন্ট্রানেট খুলে দু মিনিটের মধ্যে আমার টিকিট অ্যাপ্রুভ করে দিয়ে চীফ আর্কিটেক্টকে বলেছিলেন, চিন্তা করবেন না, ঝামেলা আমি সলভ করে দিয়েছি, ওকে আরেকবার কল করে বলুন এইবারে কল জয়েন করতে।

    পরবর্তী দুদিন আমি মেজদার ঝোলানো মুখটা খুব এনজয় করেছিলাম। ডকুমেন্ট অবশ্য ঠিক সময়েই জমা করে দিয়েছিলাম, আমার দিক থেকে খামতি ছিল না কোনও ...

    শুধু সেই টিকিটটা আর কাজে লাগে নি। তার চারদিন আগেই আমার কাকার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে আমাকে দৌড়ে যেতে হয় দিল্লির বদলে কলকাতায়। সেখানেই শেষ চারদিন কাটিয়ে নিজের খরচে দিল্লি ফেরত।

    (আপিসিয়াল গপ্পো এখানেই সেশ, পরের পর্বে শোনাবো লুরুর গল্প, আর লুরুর চণ্ডালদের গল্প)।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১০ ডিসেম্বর ২০১৩ | ১৮৫৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • পাতা :
  • সুকি | 212.160.18.74 (*) | ১৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৩৩46529
  • নতুন মাল নামবে না?
  • Pubদা | 202.193.171.151 (*) | ১৮ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৯:০৭46533
  • আইটি জীবনের সার সত্য -- পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে আমার সাথেও তো ... ঃ)
    সিকি'দা - শরীর ঠিক হয়নি এখনও ?
  • ex-tcs | 177.124.124.21 (*) | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৩:২১46534
  • আপনি এই ভাবে TCS এর খচ্চর গুলোকে টাইট দিতে পারলেন!!! আপনার লেখা টা পরে কেমন একটা feel good feel good লাগছে।
  • MMA | 113.28.122.3 (*) | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৪:৪৭46535
  • বোধ হয় আমরা এত চাপ না দিলেও চলত, শেষের কিস্তিটা ঠিক যেন আগেরগুলোর মত জমল না
  • সিকি | 132.177.148.84 (*) | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৪:৫৯46536
  • শেষ হয়েছে কে কইল?

    আর, ইয়ে, এখনও খুব চাপে আছি। এইমাত্তর ক্লায়েন ফোন করে একটা দু-তিনদিনে বানানো সম্ভব এমন একটা ডকু দু ঘণ্টার মধ্যে চেয়েছে। আজ রাতে পারব কিনা জানি না। :(
  • b | 24.139.196.6 (*) | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৫:০৩46537
  • কি সব হিব্রু, গ্রীক ল্যাটিনে লেখা। বড্ড স্পেশালাইজড।
  • শঙ্খ | 169.53.110.143 (*) | ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:৩৩46538
  • বাহ!!

    আমাদের দেশে হবে সেই ছেলে কবে/কথায় না কাজ হলে মেলে বাঁশ দেবে...

    সিকি সেই ছেলে
  • aranya | 78.38.243.161 (*) | ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৫:১৩46539
  • খুবই এনজয়েবল লেখা। সিকি-র তখন কিছু অপ্রীতিকর এক্সপি না হলে কি আমরা এইরম একটা জমাটি লেখা পেতাম? ভগোমান সামহাউ প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির একটা ব্যালান্স করেই ফেলেন ;-)
  • b | 135.20.82.164 (*) | ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৭:২৯46540
  • অরণ্যদা কি বলতে চান? ভালো লেখা পাওয়ার জন্যে সিকিকে জন্ম-নবকুমার হয়েই কাটাতে হবে? শুধু পরের বাঁশ খেয়ে?
    অবিশ্যি সিকি যে বাঁশ দিতেও পারে, ঠান্ডা চোখে তাকিয়ে, সেটাও কিউ ই ডি।
  • sch | 132.160.114.140 (*) | ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৭:৩৯46541
  • সিকি এটাকে একটু আগে পিছে জুড়ে রোম্যান্স অল্প এনে লিখলে চেতন ভগতের অনেক কিছু মারা যাবে - মনে রাখবেন - আশি পাতাতেও আজকাল বই নামে - অনেক লোক এটা পড়বে কিভাবে বসকে টাইট দেবে জানতে আর বসেরা পড়বে সেলফ ডিফেন্স শিখতে । নামটা একটু ভালো লাগবে
  • sch | 132.160.114.140 (*) | ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৭:৪১46542
  • শুধু একটা জিনিস মনে রাখবেন - এটা বাংলা সিনেমা হলে দেব যেন কিছুতেই সিকির রোলে না করে ( মত বদলেছি) -- সিকির রোলে পরমব্রত
  • | 24.97.237.40 (*) | ২০ ডিসেম্বর ২০১৩ ১০:৫৪46543
  • বসকে টাইট দেয়া ফর ডামিজ। :-)
  • sch | 126.203.186.17 (*) | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০২:০৩46544
  • kudos সিকি - ভালো কাজ করেছেন কুড়িকে কোঅপারেট করে
  • a | 132.179.79.48 (*) | ২২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:২০46545
  • বাঁশের নিত্যতা সূত্র!! তবে পার্সোনাল ক্ষার মেটানোর জন্যে প্রফেশনাল পজিশন আর কানেকশনের এই নোংরা ব্যবহার (সব পক্ষেই) আমাদের ইন্ডাস্ট্রিকে প্রতিনিয়ত ব্লীড করাচ্ছে।

    দ্বিতীয়ত, "ঘটে বুদ্ধি বেশি নেই" জাতীয় মন্তব্য খুবই আপত্তিজনক ঠেকল। সুপিরিয়র কম্প্লেক্ষ? নাকি কুড়ি অনসাইট পাবে আর সিকি পাচ্ছে না সেই ক্ষার?

    লাস্ট্লি, সত্যি কি সিকি বড়দার কিছু বালোৎপাটন করতে পেরেছে? আমার মনে হল না ঃ)

    প্লীজ পার্সোনালি নিও না সিকি, গপ্পোটা খুব জেনেরিক বলেই জেনেরিক মন্তব্য করলুম
  • sch | 132.160.114.140 (*) | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৬:৪৮46546
  • কেউ কি সত্যিই কারো কিছু উৎপাটন করতে পারে? কি জানি। সিকি যেটা করেছেন তাতে ভদ্রলোক য়ানইজি ফিল করেছেন, ওনার জালি প্ল্যান ধরা পড়ে গেছে এটা বুঝে এক্টু হলেও অপ্রস্তুত হয়েছেন -- এটুকু মন্দ কি। বস এবং ক্লায়েন্টদের এটুকুই করা যায় - এক আধটা সারপ্রাইসিং বাউন্সার - হঠাৎ করে হেলমেটে বল লাগিয়ে সরি বলা আর সুযোগ পেলে পাঁজরে বল লাগানো
  • de | 190.149.51.67 (*) | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ১১:৫৯46547
  • আরে, এটা আগে দেখিনি তো! পুউরো থ্রিলার তো! চালিয়ে যাও সিকি! দারুণ হচ্ছে!
  • সিকি | 132.177.186.1 (*) | ২৩ ডিসেম্বর ২০১৩ ১২:৪৫46548
  • না। মোজা উৎপাটন করতে পারি নি। পারা সম্ভবও ছিল না। তিনি একে তো আমার অ্যাপ্রেইজার, দ্বিতীয়ত তিনি আবার হায়ারার্কিতে কত যেন নম্বরে। উৎপাটন করতে হলে হায়ারার্কিতে তার ওপরের জনকে মেল করতে হত। সেই লেভেলের এসকালেশন আমি করি নি। সেটা ফ্যাটাল হয়ে যেত। তবে আমার ধারণা, খবর ঠিকই পৌঁছেছে এবং বড়দা কড়কানিও খেয়েছেন যদিও অন্য অ্যাঙ্গেল থেকে।
  • Su | 86.118.6.148 (*) | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ০২:৫৬46549
  • তাপ্পর কি হল সিকিবাবু?
  • সিকি | 133.63.144.65 (*) | ২৫ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৪:৩৫46550
  • লিখছি। কাল সকালবেলায়।
  • | 127.194.85.68 (*) | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৩:৫৬46551
  • অয়ন যেটা লিখেছে সেটা অনেক টা ই ঠিক । কারন ওপর তলার গুলো অনেকে ই এই ভাবে কাজ করে। এবং এই সব ক্ষেত্রে তারা বড় একটু হুড়ো খেতে পারে বলে ই মনে হয়। খুব সিরিয়াস স্টেপ নেওয়া সত্যি ই আন-লাইকলি। কিন্তু সিকি যেভাবে প্রতিবাদ জানিয়েছে সেটাও দরকার। সিকি র গাটস কে সেলাম।
  • সিকি | 132.177.204.177 (*) | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৫:২০46552
  • আসলে বড়দারও যে বড়দা, সম্ভবত সে-ই আসল কালপ্রিট। তিনি বসেন অনেক উঁচু মগডালে। ক্লায়েন্টের সঙ্গে কথাবার্তা বলেন হাই লেভেল, ক্লায়েন্ট বলেছে আমার এই প্রজেক্ট আপনাকে করতে দিলাম, দেখবেন যেন ঠিকঠাক ডেলিভারি হয়। সেই তস্য বড়দা উঁচু মগডাল থেকে নিচের বড়দাকে বলেছেন, যাও, যেখান থেকে হোক, যেভাবে হোক এই টেকনোলজির রিসোর্স ধরে আনো। তোমার টার্গেট, জুলাই মাসের মধ্যে এত এত রিসোর্স ধরে আনা। তুমি কীভাবে ধরবে, এক্সিসটিং রিসোর্সকে টুপি পরিয়ে আনবে নাকি নতুন রিক্রুট করবে সেটা তোমার ব্যাপার।

    নিচের বড়দা তাইই করেছেন। এখন তস্য বড়দাকে এই বড়দার নামে রিপোর্ট করতে গেলে অ্যাকচুয়েলি ঘুরিয়ে তস্য-র নামেই রিপোর্ট করতে হয়। সেটা আরও বড় চাপ।

    রামকেষ্টোর ভাষায়, কামড়িও না, ফোঁস করো, তো সিকি শুধু ফোঁসটুকু করেই ছেড়ে দিয়েছে।

    গল্প আরও বাকি আছে। এখন একটা কল আছে, তারপরে আপিসে একবার মুখ দেখাতে হবে। সব সেরে বসছি।
  • সিকি | 132.177.204.177 (*) | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৫:৫৭46554
  • আজও হল না। :(

    আবার কাল দেখি।
  • a | 132.178.219.85 (*) | ২৬ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৭:০৮46553
  • সেতো বটেই, ফোঁসটুকু করাটাও অনেক গাটসের ব্যাপার।
  • ঐশিক | 132.181.132.130 (*) | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৯:২৪46555
  • তারপরে কি হইলো?
  • siki | 135.19.34.86 (*) | ৩১ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৯:৩৪46556
  • জানে শ্যামলাল। :)

    কদিন উত্তাল বিজি আছি। উইকেন্ডে লিখে সেশ করব।
  • utpal mitra | 212.191.212.178 (*) | ১৮ নভেম্বর ২০১৫ ১১:৪৭46557
  • @@সিকি জলুর মাল নাকি?
  • পাতা :
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন