এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • পুলিশ, ওরে পুলিশ!

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ | ১১৮৮ বার পঠিত
  • পুলিশ ! ওরে পুলিশ!
    (শেষ কিস্তি)
    ৩১ ডিসেম্বরের রাত। মাঝরাতে নববর্ষ বরণ। মোবাইলে নেমন্তন্ন পেয়ে গি্ন্নি ও বাচ্চাদের চোখ এড়িয়ে ঠিক সময়ে পৌঁছেচি গজ্জুশেঠের হোটেলে।প্রায় সমবয়সী শেঠজি আমার বন্ধু।
    জড়ো হয়েছি আমরা ক’জন, প্রায় জনাদশেক; কেউ ফক্কড়কবি বাবা নাগার্জুনের চেলা, তো কেউ কবি সম্মেলন আলো করা গোপালদাস নীরজের। তবে সবকটাই একলব্য–শিষ্য; গুরুর সঙ্গে সাক্ষাৎ পরিচয় নেই কিন্তু শিষ্য বটেক, খানিকটা বিদ্রোহী নাগাদের স্বঘোষিত কম্যান্ডারের মত।
    একটা হলঘরের মেজেতে গদির ওপর বিছানা পাতা।হেলান দিতে গাও–তাকিয়া। সামনে গোটাকয়েক প্লেটে থরে থরে সাজানো ফিশ–ফ্রাই, কাবাব, টিকিয়া আদি পাকস্থলীকে বিরক্ত করার মত কিছু খাদ্যদ্রব্য।আর আছে গেলাসে গেলাসে রঙিন জল। যাঁরা ওই মন্ত্রে দীক্ষিত ন’ন, তাঁদের জন্যে কোকস্।
    কিন্তু একি! একপাশে হাসিমুখে বসে জনাদুই খাঁকি পোশাক। এরা কেন? কে এদের ভিসা দিয়েছে?
    আমার বাঁকা ভুরু দেখে গজ্জু সাফাই গাইল–– এরা দুজন আমার বিশেষ অতিথি।
    রাগ চাপতে পারিনা।এখন হিসেব করে মেপেজুকে কথা বলতে হবে!খেয়াল রাখতে হবে শ্রীমুখ নির্গত অশ্লীল চুটকিগুলো পলিটিক্যালি কারেক্ট কি না!নিকুচি করেছে এমন নববর্ষ্ বরণের!
    গজ্জুশেঠ হাসে,– শান্ত হয়ে খানিকক্ষণ বোস দিকি!একটু পরেই টের পাবি এঁরা স্থানীয় থানার কেউ নয়।ছুটিতে এসেছেন নিজের বাড়িতে, বিলাসপুরে।কাজেই বিশ্বাস করতে পারিস যে এঁরা কেউ আমার কাছে হপ্তা আদায় করতে আসেন নি, এসেছেন পুরনো বন্ধুত্বের সুবাদে একটু আনন্দ করতে।
    এঁদের একজন লম্বাটে চেহারার তিওয়ারি, হেসে বললেন– বুঝতে পারছি যে খাঁকি পোশাকে আপনার এলার্জি আছে।দাঁড়ান, এই খুলে রাখলাম কেমন?
    এই বলে তিনি স্যান্ডো পরে পা মুড়ে বসে পড়লেন। ঘরের হাওয়া একটু হাল্কা হল।
    জমে উঠেছে নিঊ ইয়ারের পার্টি, চুটকি,পান–ভোজন, একে তাকে চিমটি কাটা। কেউ উঠে পড়তে চাইছে, অজুহাত দিচ্ছে– বাড়িতে গিন্নি একলা রয়েছেন। সঙ্গে সঙ্গে কোরাস তাকে ধরে বসিয়ে দিচ্ছে, আশ্বস্ত করছে– চিন্তা করিস নে; উনি বাড়িতে একা নেই– আমরা জানি।
    মাতাল হাসির হররা। রেগে উঠতে গিয়েও হাসতে হচ্ছে।
    এর মধ্যে কেউ গান ধরল। দু’পাত্তর চড়ানোয় ওর গলাটা শোনাচ্ছে পুরনো দিনের আরপিএম বাড়ানো গ্রামোফোনের মত।পাবলিক হেসে গড়াচ্ছে।কেউ বলল গুলাম আলির গজল হোক তো কেউ পাকিস্তানের সুফিসংগীত। রাত বাড়ছে।
    দেখছি গজ্জুশেঠ ওই তিওয়ারির কানে কানে কি যেন গুজগুজ–ফুসফুস করছে আর পুলিশের ব্যাটা প্রায় মেয়েলি ঢংয়ে লাজুক হেসে আস্তে আস্তে মাথা নাড়ছে।
    কিন্তু শেঠজির ইশারায় পাশের কামরা থেকে একটি স্কেলচেঞ্জার হারমোনিয়াম।তাজ্জব কী বাৎ, গজব কী বাৎ––– হারমোনিয়াম এসে নামল ওই পুলিশ সাব–ইন্সপেক্টরের সামনে!
    আরও গজব রে গজব! হারমোনিয়ামে হাত ছোঁয়াতেই বদলে গেছে ওর চেহারা।একটুখানি বেলো করে চাপা গলায় খানিকটা আলাপ করে ধরল–
    ‘তুম আপনি রঞ্জ–ও– গম্, আপনি পরেশানি মুঝে দে দো’।
    ( তোমার সব যন্ত্রণা, সব ব্যথার ভার– আমায় দাও।)
    সব গালগল্প থেমে গেছে। ঘরের ভেতর সুর দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

    গলা ছুঁয়ে যায় তারার কোমলগান্ধার।
    –‘ ম্যাঁয় দেখুঁ তো দুনিয়া তুমে ক্যায়সে সতাতী হ্যায়?
    কুছ দিন কে লিয়ে ইয়ে নিগেবানি মুঝে দে দো!’

    (দেখি তো তোমায় কে এত কষ্ট দেয়!
    নাহয় ক’দিনের জন্যে তোমার সব ভার আমায় দাও’।)

    কিসের এত কষ্ট? কিসের দু:খ? খাঁকি পোশাক তো দু:খ দেবার জন্যে, কষ্টের ভাগ নেবার জন্যে তো নয়!আমার বুকের ভেতরটা কেমন মুচড়ে মুচড়ে উঠছে।
    সাতদিন পরে সাতসকালে রেলস্টেশন গেছি, কোলকাতা থেকে মুম্বাই মেলে মা আসছেন। তিওয়ারিজি। পরনে যথারীতি খাঁকি ধরাচুড়ো। আমাকে দেখেও দেখলেন না।প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়ে রেলগাড়ির কামরার জানালা দিয়ে আদর করে যাচ্ছেন একটি ষোড়শী মেয়েকে আর কিমাশ্চর্যম্! রুমাল দিয়ে চোখ মুছে চলেছেন।
    কাঁধে চাপ পড়ল– গজ্জুশেঠ।বন্ধুর জন্যে নিয়ে এসেছে একঝুড়ি আপেল আর কিছু কমলালেবু।ও ইশারায় সরে আসতে বলে,– কী ব্যাপার রে?
    তিওয়ারির নকশাল বেল্টে ট্রান্সফার হয়েছে।অনেক ধরাধরি করেও আটকাতে পারেনি।এদিকে ওই একটি মেয়ে। ভিলাইয়ে কলেজে পড়ছে।বাপের সঙ্গে দেখা করে ফিরে যাচ্ছে।তার দু’দিন পর তিওয়ারিগিন্নি স্বামীকে ললাটে টিকা পরিয়ে ‘জয়যাত্রায় যাও গো’ বলে বস্তারের নারায়ণপুরের জন্যে টা–টা করবে আর প্রার্থনা করবে যেন জগদলপুরের দন্তেশ্বরীমাতা কর্তাকে ভালোয় ভালোয় বছরখানেকের মধ্যে বিলাসপুরে ফিরিয়ে দেন।আজকাল ছত্তিশগড়ে পুলিশের জীবনের কোন ভরসা নেই।

    আমি পুলিশকে আর ভয় পাইনে, তা সে ধরাচুড়া পরেই থাকুক না কেনে!
    বুঝে গেছি যে খাঁকি হল সাপের খোলসের মত, ওদের প্রোটেকশন।
    কিন্তু পুলিশ সামনে এলে প্রয়াত কবি তুষার রায়ের দেওয়া মন্ত্রটি বিড়বিড় করতে থাকি:
    ‘পুলিশ, ওরে পুলিশ! কবির সামনে এলে পরে টুপিটা তোর খুলিস্’।
    ্্্্্্্্্্্্*****্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্্


    A to Z,
    সম্ভবতঃ আপনার ভার্সনটাই ঠিক।
    আমি চল্লিশ বছর বাংলার বাইরে, সম্পর্কহীন হয়ে ছিলাম,
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ | ১১৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Atoz | 161.141.84.239 (*) | ০৫ নভেম্বর ২০১৩ ১১:৪৪45579
  • আমি কার কাছে যেন শুনেছিলাম(মনে হয় আকাশবাণী কলকাতার কোনো নাটকে)-
    "পুলিশ, ওরে পুলিশ!
    কবির সঙ্গে দেখা হলে-
    টুপিটা তোর খুলিস।"
  • kaushik | 126.203.194.227 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০২:৪৭45580
  • ভালো লাগলো!
  • ujbuk | 96.135.50.199 (*) | ০৬ নভেম্বর ২০১৩ ০৮:০৫45581
  • "এমন কি পুলিশেও গাইল রবীন্দ্র সঙ্গীত"

    ভাস্কর বাবুর লেখা
  • Biplob Rahman | 212.164.212.20 (*) | ০৯ নভেম্বর ২০১৩ ০২:১৯45582
  • ছোট, কিন্তু ভালো লেখা। বেশ লাগলো।

    চলুক।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। না ঘাবড়ে প্রতিক্রিয়া দিন