এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • চুপিসার

    Sukanta Ghosh লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ নভেম্বর ২০১৩ | ১৭৯৮ বার পঠিত
  • চুপিসারে কেউ আসে না – নীরবে চলে আসার মাহাত্ম পাশের বাড়ির কালো বেড়ালটাও শিখে গেছে। আমার কোন পোষা গাছ নেই, আমার প্রিয় গাছে ফুল আসে, ফুল ঝরে যায়। বিষবৃক্ষের সাথে নিয়মিত সম্পর্কে জড়িয়ে পরে ঘুম ভাঙা চোখ। বিষবৃক্ষে মিষ্টি ফল হয় – দশ মিনিট যায়, পনের মিনিট পরে আমি বৃক্ষ ভুলে যাই। বাড়ির সামনের গাছটায় লেগে আছে গত রাতের জল – অথচ ওই পাতা, যা আমাকে অনেক বিভক্ত করেছে, তা পিচ্ছিল হবারই কথা ছিল ।
    বৃষ্টির শব্দ – চেতনা – ফোঁটা থেমে গিয়েছিল ভোর রাতের অনেক আগে। জলের পরেও সিল্ক এসেছে, আধভেজা দরজা গুডনাইট বলেছে, আমি ফ্যাকাসে মুখ দেখব বলে তাকিয়ে – পিছনের আলো ক্রমশঃ সরু হয়ে কাঁধে লতিয়ে থাকা চুল ঢেকে দিল – বৃষ্টির শব্দ শুনব বলে চাইছি দরজা খুলে যাক –
    অবচেতন বলছে বিড়াল নিয়ে কবিতা হয় – বিড়ালের রঙ আঁকছি – রামধনু রঙ – তরঙ্গ দৈর্ঘ্য এলোমেলো হয়ে গেলে কি রামধনু ডাকা যাবে? দরজার ওপাশে বিষণ্ণ চোখ ভাবতে ইচ্ছা করে – অস্থির পিঠ ঘোরানো দেখতে ইচ্ছে করে – আমি বৃষ্টির শব্দ চাপা দিয়ে দরজায় আর একবার টোকা দিতে চাইছি প্রবল –
    কিন্তু শব্দের সাথে রঙ মিলছে না – একটাও ফোঁটা ধরতে পারছি না – তুমি বৃষ্টি ভালোবাস – একরাশ বৃষ্টি নিয়ে ঘরে ঢুকবো বলে আমি দরজার ওপাশে অপেক্ষা করছি –

    আমাকে ওরা বলেছিল এখানে ভালো কাঠ পাওয়া যায় না
    তবে বৃষ্টি হয় নিয়মিত, গাছেরা এখানে চিরহরিৎ
    ভাবছি কাঠ কাকে বলে, মৃত গাছদেরই কি?
    আমার বাগান তাহলে জীবিত কাঠে ভর্তি
    আরো বলল এখানে পছন্দের আসবাবও নাকি দূর্লভ

    আমি দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে
    পালিশ করা গাঢ় বাদামী টেবিলটা থেকে মৃদু শব্দ আসছে
    শব্দ শোনা যাচ্ছে – যারা শব্দ করছে তাদের নয়
    অথচ এখন ভয় করছে না আমাদের দুজনের কারও

    আমি আগে বেড়াতে গেলে নির্জনতা খুঁজতাম
    এখন কোলাহল
    সামনের গাছটায় হর্ণবিল আসে
    বিকেল পাঁচটা নাগাদ সামনের সবুজ জায়গা জুড়ে
    অসংখ্য সাদা পাখি
    উড়ন্ত পাখির ছবি উড়তে যাবার আগের দৃশ্যটা
    ধরে রাখতে পারে না

    আমি তাই বলেছিলাম এসো
    ছবি না তুলে আমরা বৃষ্টির শব্দ শুনি
    বলেছিলাম
    পাখির বাসা ভাঙাটাও জরুরী মাঝে মাঝে
    সে তুমি যতই ভোরের ডাক ভালোবাস

    নরম আসবাব থেকে দেখা যায় হাঁটতে বেড়ানো
    চেনা দম্পতি, সাইকেল বালক
    সামনের বাড়িতে বাগান পরিচর্যায় ব্যস্ত গৃহিনী
    অজান্তেই কৌতুহল ডেকে আনে
    ওর বাড়িতে যারা আসে তারা সবাই
    কাজের লোকের লক্ষণ যুক্ত

    সমুদ্রতীরকে সজীবতা দেয় শুধু বিকেল
    আমরা ভিজে বালি দিয়ে হেঁটে আসি
    এতো কাছে এলে আকর্ষণ হারানোই স্বাভাবিক – প্রচলিত কথা আর বলতে ইচ্ছে করে না। বিতর্ক না হলে কথা ফুরিয়ে যাবার ভয় গ্রাস করে – আমরা কান পেতে শুনি তাই ভিন্নমত। জাবরের মত উঠে আসা গল্প – কে নাচ শেখার চেষ্টা করছে আর কে বৃথা গান

    আমার ছবি আঁকতে ইচ্ছে করে, নতুন করে সরল রেখা টানতে
    ক্লাস এইটের অসমাপ্ত ব্যাঙ - বায়োলজির আনোয়ার স্যারের হাসি
    আমি একটা পরিপূর্ণ ব্যাঙ আঁকতে চাই
    যেটা পাশের ঘর থেকে ডেকে আনা বাসুদেব স্যার চিনতে পারবে
    কোন রঙে ব্যাঙ ভালো হতে পারে?
    তোমার আঁকা ঘোড়াটা খয়েরী
    জল রঙে
    আমি এখন প্রতিটা বিভাজন রেখা স্পষ্ট চাই
    সেইমত শেখাও পেন্সিল, মোম – প্যাষ্টেল

    শরীরের থেকে সমুদ্র আঁকা সোজা
    শুধু নীল রঙ নিয়ে খেলে যাওয়া
    নীল ছবিতে সমুদ্রের গল্প রাখা সম্ভবত খরচাসাপেক্ষ

    আমাদের রান্না ঘরের জানালায় পর্দা নেই
    তাই রাতের বেলা খালি গায়ে রান্না করতে পারি না
    তবুও জানলা উন্মুক্ত রাখি
    কিছু অস্বস্তি এখনো বাঁচিয়ে রাখতে
    কিন্তু সেটা জরুরী কিনা আলোচনা করি
    আবারো কিছু কথা হয়

    আমি ভালো করে না বলা অভ্যাস করি
    ভীতিকর কিছু রাতের খাবারের নিমন্ত্রণে
    সম্মতি সূচক ঘাড় নাড়তে ভুলে যাই
    অহংকার সত্যিই একটি প্রয়োজনীয় হাতিয়ার

    আমার কোন গৃহপালিত জন্তুই ভালো লাগে না
    কিছু পরিচিতের গান শুনে মনে হয়
    বাড়িতে একটা কুকুর থাকা জরুরী
    অন্তত যতদিন গায়ককে সঙ্গ দেওয়া
    সামাজিকতার মধ্যে ধরা হবে

    এইভাবেই সমুদ্র সংলগ্ন সন্ধ্যাও ক্লান্তিকর হয়ে ওঠে কখনো কখনো। আমি কোলাহল পেতে চাই আবার নির্জনতাও – রোজই ভাবি বাইরেই বারান্দায় এমন সময় গীটার বাজালে কেমন হয়! আমার বর্ষার গান তোলা নেই, যে গানটা অভ্যাস করি সেই ভাষায় কদম ফুল নিয়ে কোন গান নেই – তাই আর বারান্দায় যাওয়া হয় না – ঈষৎ অন্ধকারে স্বাস্থসচেতন কেউ হেঁটে যায় – একটু পরেই হয়ত বৃষ্টি আসবে, আমি পছন্দের আসবাবের উপরে কফি রেখে ভেবে দেখি অনেকদিন হল একটাও কোন সম্পূর্ণ কবিতা মুখস্ত বলতে পারি না – আরেকটা দিন বৃথা চলে যায় – একটা শরীর আবার শরীর চায় – ও ঘরে ভায়োলিন বাজবে – সাইকেল চড়া পাহারাদারেরা কাঠের বাড়ির পাশ দিয়ে টহল দেবে – আমি কারণ খুঁজব, অস্বস্তি ফিরে আসবে – ভোর রাতে ঘুম ভেঙে দেখব চারিদিক ঠান্ডা হয়ে গেছে – দেওয়ালের গায়ে খালি গায়ে থাকা বাঁশিবাদকের তবু শীত করবে না

    আমি খুব তাড়াতাড়ি ভালো ব্যাঙ আঁকতে পারব
    কিন্তু নাম্বার দেবার জন্য স্যার থাকবেন না
    দরকারও হবে না, কারণ ছবিটি বায়োলজির ব্যাঙ থেকে আলাদা হবে
    আমি খুব তাড়াতাড়ি গীটারেও সুর তুলতে পারব
    কিন্তু বর্ষার গান শোনার কেউ থাকবে না
    বৃষ্টি অর্থে এখানে জল
    ওর সাথে মিশে অভিমান নেই, নেই কদমের ফুল
    প্রলোভনে থেকে যাওয়া নিজেকে
    বড় লোনা মনে হয় বারান্দার বাতাসে বসে
    আমি আঙ্গুল চেটে দেখি স্বাদ বদলেছে কিনা
    সামনের বারান্দায় বেতের চেয়ারে বসা বিড়ালটা
    অবাক হয়ে থাবা থেকে মুখ সরিয়ে নেয়
    বিড়ালের সাথে তার মালকিনের সম্পর্ক
    শুধুই খাবার দেওয়ার নয়

    চাই না সে আমার বারান্দায় এমন ভাবে আসুক
    আমার নির্জনতায় শুধু কিছু বাহারি পাতাগাছ
    রোজ জল চাইবে বিকেল বেলায়
    ওদের কাছে সমুদ্রের গল্প করি
    সমুদ্র থেকে শরীর উঠে আসে
    নীল রঙে শরীর ডুবে যায়
    বৃষ্টি আমাকে ভেজায় না
    চুপিসারে
    পুরানো হয়ে আসা কিছু রহস্য শোনায়
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ নভেম্বর ২০১৩ | ১৭৯৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • su | 86.118.6.148 (*) | ০১ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৮:১৬45562
  • ভালো লাগলো খুব। ধন্যবাদ । ভালো থাকবেন ।
  • sosen | 125.241.24.36 (*) | ০২ ডিসেম্বর ২০১৩ ০৩:৪০45563
  • সুন্দর। নিমগ্ন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে মতামত দিন