সিন নদীর পারে সেবারের জুলাইটা ছিল সত্যিই অন্যরকম। ইউজিন, তোমার কি মনে পড়ে? জুলাই বরাবরই এই ফরাসী দেশে ভিন্ন আভা, ভিন্ন দীপ্তি নিয়ে আসে। প্রায় পৌনে একশ বছর আগের জুলাইয়ের চোদ্দ তারিখের গল্পটা পিতামহ পিতামহীরা শোনায় নি কি? দিকে দিকে খবর রটে গেছিল যে বাস্তিল দুর্গের উপর কামান থেকে গুলি ছোঁড়া হবে সাধারণ, নিরস্ত্র মানুষের উপর। আর সে খবরে এত দিনের ক্ষুধার্ত, ক্লান্ত ও বিপন্ন মানুষ যত ভয় পাবার বদলে বরং উল্টো হঠাৎই অতিকায় দৈত্যের মনের জোর নিয়ে ছুটলো সো-জা বাস্তিল দুর্গ বরাবর। ১৪ই জুলাইয়ের দু’দিন আগেই রাজা ভার্সেই থেকে সৈন্যবাহিনী নিয়ে এসে জনতার উপর আক্রমণ চালিয়েছিল। জনতাও এর উত্তরে সাথে সাথেই পাল্টা আক্রমণের জন্য প্রস্তÍত হয়ে গেছিল। শহরের ঘণ্টা বেজে উঠলো। জনগণের পক্ষ থেকে সতর্ক ঘণ্টা। জনতা দরকারে রাষ্ট্রীয় অস্ত্রভাণ্ডারও দখল করতে প্রস্তÍত। একটি গার্ড রেজিমেন্ট জনতার পক্ষে অবস্থান নিল। ঠিক তার দু’দিন পরেই অর্থাৎ চোদ্দ তারিখেই যেই না খবর রটলো যে বাস্তিল দুর্গ থেকে মানুষের দিকে গুলি ছোঁড়া হবে, অমনি সব ধেয়ে গেল দুর্গ বরাবর। তারপর বাকিটা ইতিহাস। গিলোটিনে অভিজাতদের মাথা। লিবার্তে-ফ্রাতের্নিতে-ইগালিতে...সাম্য-মৈত্রী-স্বাধীনতা...মানুষ স্বাধীন হয়েই জন্মায়...তথাপি সে সদা শৃঙ্খলিত! তবু, ইউজিন...যেমনটা তোমার পিতামহ বলতেন আর এ-ও জানা কথাই...প্রতিটা বিপ্লবের পরই আসে একটি করে প্রতিবিপ্লব...হাজার অন্যায়ের প্রতিবাদেও কারখানায় শ্রমিক ধর্মঘট করতে পারত না। নারী রয়ে গেল আগের মতই নিরক্ষর, গৃহকর্মের দাসী। তবে বিপ্লবটা কোথায়? তবু ১৭৯২ থেকে ১৮৭০...গুনে গুনে ৭৮টা বছর পরে আবার এই জুলাই...সে যেন একইসাথে রক্তবর্ণ অথচ পিঙ্গলাভ মেঘ, যা যে কোন ঝড়ের আগে দেখা যায়। ... ...
রাত প্রায় এগারোটা বাজে। বাবার বাড়ি আর শ্বশুরবাড়ি দু’টোই খুব বেশি প্রগতিশীল না। বাবার বাড়িই শাহবাগ থেকে কাছে। দ্রুত একটা রিক্সা নিয়ে বাড়ির দিকে রওনা করে ফারহানা। আধা ঘণ্টায় পৌঁছে যায়। কলিং বেল টিপতেই মেজো আপা দরজা খোলে, ‘শাহবাগ থেকে মাত্র ফিরলি? জানিস, ব্লগার থাবা বাবা যে মারা গেছে? টিভিতে বললো!’ ‘হুম- রাজিব হায়দার নামে একজন মারা গেছে জানি...’ ‘সে-ই ত’ থাবা বাবা নামে লিখত। তুই ত’ আর ব্লগ পড়িস না। আমি বাবা লন্ডনে থাকি বলে দেশের সব পেপারের ই-ভার্সন আর ব্লগ পড়তে হয়! ছেলেটা নাস্তিক ছিল। তা’ নাস্তিক হওয়া কি দোষের? তার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা নাই? তাই বলে তাকে খুন করতে হবে? কবে আমরা একটু সভ্য হবো?’ ... ...
...তবু বিপ্লবের পিছু পিছু পায়ে পায়ে নিঃশব্দে হেঁটে আসে যে প্রতিবিপ্লব ক্ষুধার্ত ডাইনির মতো, সে সহসাই পেছন থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপ্লবের কাঁধে ছুরি বসায়। বাঘনখে বিদ্ধ করে তার হৃৎপিণ্ড। তাই কি হয় নি? মার্চের ২২ তারিখেই অভিজাতদের কিছু দাঙ্গাবাজ গায়ে পড়ে হামলা করলো কমিউনের লড়াকু শ্রমিকদের সাথে। শ্রমিকরা আত্মরক্ষা করার চেষ্টা করতেই ওরা ছুরি, পিস্তল, লাঠি রেখে পালালো। কমিউনের সেনাপতি লুলিয়ার লোকটিকে তোমাদের যে ভাল লাগত না, সেটা ত’ ঠিকই ছিল ইউজিন! অভিজাতরা তাড়াতাড়িই যে আবার দখল করে নিল দুর্গ মঁ-ভালেবিঁ। ব্যর্থতার শাস্তিতে বহিষ্কৃত হবার সাথে সাথে কমিউনের পিছু নিল সে। ভার্সেই থেকে আসা অভিজাতদের শেষ বাহিনীর পক্ষে কাজ করলো লুলিয়ার। হায়, শ্রমিক নারীরা পর্যন্ত লড়াইয়ে এগিয়ে এলো। নিজেদের দরিদ্র, নিরন্ন বস্তি রক্ষায় পুরুষের পাশাপাশি তারাও কামান চালালো। গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়লো রাস্তায়। নিকোলা আর জাঁকের স্ত্রী, প্রেয়সিরা খুন হলো রাস্তায়। মৃত স্বামীর শবদেহের পিছু হাঁটতে হাঁটতে শিশু সন্তানের কাণে শ্রমিক মেয়েরা শ্লোগান দিয়েছে, ‘ভিভা পারি কমিউন!’ তবু ভার্সেইয়ের সেই বিপুল সৈন্যবাহিনীর সাথে শেষরক্ষা হলো কি? শ্রমিক নেতা ফ্লুঁরাসকে পেছন থেকে খুন করলো বুর্জোয়া সেনাপতি দেসার্ত, বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের হাত থেকে যার জীবন বাঁচিয়েছিল ফ্লুঁরাসই। ফ্লুঁরাসের মৃতদেহ টুকরো করার দৃশ্য ভার্সেইয়ের গোলাপ বাগানে উপভোগ করলো বুর্জোয়াদের স্ত্রী ও রক্ষিতারা। ৬ই এপ্রিল শহীদ শ্রমিকদের শবযাত্রায় কফিনের পিছু পিছু দুই লাখ শ্রমিকের শবযাত্রার ঢল...শুধু পূর্ব প্রস্তুতি ছিল না কমিউনের...ভার্সেই সৈন্যরা এপ্রিলের ৭ তারিখ দখল করে নিল নিউলি-তে সিন নদীর ঘাট। মে মাসের শেষ নাগাদ জার্মানরা বন্দী ফরাসী সৈন্যদের ছাড়ার পর বুর্জোয়াদের শক্তি আরো বাড়লো। ফরাসী বুর্জোয়াদের সাথে হাত মেলালো জার্মান বাহিনীও...আটটা দিন...আট/আটটা দিন সে কি খাণ্ডবদাহন! লোশেজের কবরখানা ভরে উঠলো নর-নারী-শিশু-বৃদ্ধের লাশের স্তুপে। ত্রিশ হাজার মানুষ হত্যার পর শুরু হলো পাইকারি গ্রেপ্তার। লড়াইয়ের শেষ দুই দিনে হেরে যাবে বুঝে শ্রমিকেরা নিজের হাতে নিজের প্যারি প্রিয়তমার দেহে জ্বালালো আগুন। বুর্জোয়া ভার্সেই যেন পায় নিছকই এক অগ্নিদগ্ধ শহর। তিন দিন ধরে দাউ দাউ করে জ্বললো আগুনের লকলক শিখা। ... ...
ঘুমন্ত নগরীতে সবাই ঘুমোচ্ছে। সবাই পাথরের মত ফ্রিজ। রানীর পায়ের কাছে এক মস্ত ফিনিক্স পাখি, সেও ঘুমোচ্ছে। দুইজন মুখোশধারী জ্যান্ত যুবক সব খুঁটে খুঁটে দেখছে। একজন রানীর পাশে রাখা বড় ঘন্টায় আওয়াজ করতেই সবাই জেগে ওঠে। অন্যজন ফিনিক্স জেগে উঠতেই তরবারি দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে। নগরীর সবাই ছটফট করতে করতে ড্রাগনের আকারধারণ করে ও মারা যায়। ভয়েস ওভারে সীমান্তবাবা কী করে অশুভ শক্তি ড্রাগনদের ধ্বংস করতে হবে তার বিবরণ দেন। সারা সমুদ্র লাল রঙ হয়ে যায়। মুখোশ পরিহিত দুই যুবক তার মধ্যে দিয়ে ভেসে ওঠে। সমুদ্রতটে দেখা যায় ড্রাগন দেবাদিদেব ইউনিকর্ণ ছটফট করতে করতে ঢুবে যেতে থাকে চোরাবালিতে। মুখোশ পরা দুই যুবক তাকে ডিঙিয়ে ফ্রেমের দুইপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়। ড্রাগন দেবাদিদেব ইউনিকর্ণ বাঁচাও বাঁচাও করতে করতে ঢুবে যায় চোরাবালিতে। ... ...
মরুপ্রান্তর। দিন। রক্ষীরা চলেছে উটের পিঠে। তাদের মাথায় ছত্রী ধরে আছে মরু পোষাকে স্থানীয় মানুষ। পেছন পেছন চড়া রোদে সালমা ও রুমকি কোলে সন্তান নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে চলেছে দিগন্তের দিকে। আবহে দুইজনের একসঙ্গে থাকার গানটির স্যাড ভার্শন শোনা যায় (হামনিকা শুনে শোলের কথা মনে পড়বে)। কাঁটাতারের বেড়া। রক্ষীরা তাদের বেড়া পার করে ফিরে যায়। ... ...
আমার ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়, এই অসহিষ্ণুতার পেছনে এক পৌরুষ-সাধনার চালচিত্র রয়েছে। মানিয়ে নেওয়া, নরমভাবে সমাধানের পথ খোঁজা, ক্ষেত্র বিশেষে মেনে নেওয়া এইসব মিনমিনে ভাব আমরা সজ্ঞানে বর্জন করেছি। আমাদের সমাজজীবনে আমরা একটা সহজ সমীকরণ করে নিয়েছি, নমনীয়তা ইক্যুয়াল টু মেয়েলি ইক্যুয়াল টু দুর্বলতা। মেয়ে মাত্রই দুর্বল, তাই যা কিছু মেয়েলি তাই পরিত্যাজ্য। আমরা প্রথমে আবেগপ্রবণতা আর চোখের জলকে মেয়েলি বলে দাগিয়ে দিয়েছিলাম, ক্রমে মায়া-মমতা-সহানুভুতি এগুলোও আস্তে আস্তে সেই তালিকায় ঢুকে গেছে। সেই কারনেই আমরা নেতা হিসেবে দেখতে চাই এমন একজনকে যিনি নির্মম, কঠোর, বলদর্পী হয়ত বা হিংস্রও। ... ...
কামনায় মেয়ে মানে ঠিক কী তা আমি জানি না - মেয়ের কামনা যেমন হবে নাকি যেমন কামনা হলে মেয়ে বলা হবে? যদি প্রথমটা হয় তাহলে শরীরে মেয়ে আমি যে কামনা করব সেটাকেই মেয়ের কামনা বলে ধরে নিতে হবে। কাজেই আমার মেয়েকে কামনা করাও তাহলে মেয়ের কামনা, যা আমাকে কামনায় মেয়ে করে তুলতে পারে। কিন্তু যদি দ্বিতীয়টা হয় তাহলে ছেলেদের কামনা না করলে আমি কামনায় মেয়ে হব না। আবার দ্বিতীয়টাকে বেঞ্চ মার্ক হিসাবে ধরলে যেসব শারীরে পুরুষ পুরুষদের কামনা করে তাদেরও মেয়ে বলতে হয়। আমার আপত্তি নেই এ ব্যবস্থায়, কিন্তু বাকি সবাই রাজি কী? ফোর্থ ডাইমেনশনের হিসাবটাও এখানে এক্কেবারে ফিট করে যাচ্ছে, যে নিজেকে মেয়ে বলে উপলব্ধি করেছে সেই মেয়ে। যে পুরুষ (শরীরে) নিজেকে মেয়ে বলে উপলব্ধি করে পুরুষকে কামনা করেছে সেও মেয়ে, আবার যে পুরুষ (শরীরে) নিজেকে মেয়ে বলে উপলব্ধি করে মেয়েকে কামনা করেছে সেও মেয়েই। এর উল্টোটাও সত্যি, তবে সেটা ছেলে হবার গল্প, সেটা এখন বলছি না। ... ...
অনেক কথার পর নীতা বলেছিল হ্যাঁ জন্মেছি যখন বাবা-মা বাড়ি-ঘর-দোর কিছু তো ছিলই। তারপর ঘুরতে ঘুরতে এখানে যখন এসেছিলাম, পেশা করে যখন সংসারটা দাঁড়াচ্ছিল তখনো বাড়ি যেতাম। বাবা মাকে টাকা পয়সা পাঠাতাম। বাড়ি যখন যেতাম বাবুকে বর সাজিয়ে নিয়ে যেতাম সঙ্গে। একবার হল কি আমাদের গাঁয়ের এক ধনীর দুলাল একটু ফুর্তি করতে এখানে এসেছিল আমাকে দেখেও ফেলেছিল। যদিও আমি চেনা দিইনি । তারপর যখন বাড়িতে গেলাম দেখলাম নানাভাবে বাবা মাকে অত্যাচার করতে শুরু করেছে গাঁয়ের মাথারা। আমাকে বাড়িতে দেখেই ওরা সেদিনই পাড়ায় সালিশি সভা বসিয়ে দিল। সেখানে সাব্যস্ত হল আমি খারাপ মেয়ে। আমিও গেলাম খুব রেগে। ভাবলাম আমি এখানে থাকিনা কারুর খাই ও না পরিও না তবু কিনা আমার বিচার !সভায় দাঁড়িয়ে বলে দিয়েছিলাম, যা করেছি বেশ করেছি। যে আমায় দেখেছে সেও তো ওখানেই যায়। তাহলে তার কেন বিচার হচ্ছেনা? এরপর আর আমায় গ্রামে টিঁকতে দেয়নি। বাবা মাও আর আমার সঙ্গে সম্পর্ক রাখেনি।। যাকগে সেসব কথা। ... ...
নৃবিজ্ঞানের জেন্ডার পঠনপাঠনের কোর্স পড়তে পড়তে নারী হিসেবে আমার মাঝে যৌন নিপীড়ন নিয়ে নানান রকমের সচেতনতা তৈরী হয়েছিলো। তারপরেও ব্যক্তি জীবনে আমি ভাবতাম যা কিছু আমার জীবনে দমনমূলক, নিপীড়নমূলক তার কারণ কোন না কোন ভাবে আমি, আমার অসাবধানতাই আমাকে উৎপীড়নের সুযোগ করে দিচ্ছে কিংবা আমি যেহেতু নারী তাই নিপীড়িত হবই। এই লালিত বোঝাপড়া সমেত আমি ধর্ষিত নারীদের নৃশংস নিপীড়ন অভিজ্ঞতা শুনতে শুরু করি। ধর্ষিত নারীদের নিপীড়ন অভিজ্ঞতার কথন শুনতে শুনতে গবেষক আমার জীবন মূল্যবোধ, ভাষা ও দৃষ্টিভঙ্গি বদলে যেতে থাকে। সহিংসতাবিদ্ধ নারীর সাথে আমার ‘যন্ত্রণা’ বোধে মিলের জায়গা তৈরী হয়। ১৮ জন নারীর যৌন উৎপীড়ন অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করতে করতে, লেখতে লেখতে কখনও আমি রেগে উঠি, কখনও আমার অসহায় লাগতে থাকে, আমার গা গুলিয়ে বমি আসতে থাকে, আমি হাঁপিয়ে উঠি, প্রতিনিয়ত অসুস্থ বোধ করি। আমি দেখতে থাকি মধ্যবিত্ত যৌথ পরিবারে বসবাসে অভ্যস্ত আমার আজীবন ‘নির্ভরতা আর শ্রদ্ধার’ সম্পর্কগুলো ভাঙ্গতে শুরু করেছে, আমার মধ্যবিত্ত শ্রেণীচৈতন্যের ধরে নেয়া ধারণাগুলো (আমার বাবা, ভাই তো নয়ই আমার পরিচিত কোন মানুষই ধর্ষক হতে পারে না) নানান প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাচ্ছে (তারমানে কিন্তু এই নয় যে পিতা কিংবা ভাই মাত্রই ধর্ষক)। গবেষণা আমাকে এই বোঝাপড়ায় পৌঁছে দেয় যে পিতৃতান্ত্রিক সমাজে শ্রেণীভেদে নারী আসলে কেবল ‘ভোগের বস্তু’ তাই যেকোন সময়ে, যেকোন পরিসরে, যেকোন সম্পর্কে নারী ধর্ষণের শিকার হতে পারে ... ...
আপনি নাটক করলে লোক না হলে, টিকেট না বিক্রি হলে দর্শক তৈরি নয় বলে গাল না দিয়ে আয়নার সামনে প্র্যাকটিস করে দেখুন, আপনার না মাইরি ওটা হচ্ছে না l মানে নাটকটা l ফিরে যান, টু দ্য বেসিক, ফিরের থেকে শুরু করুন, লেগে থাকুন, হাল চাষুন, হলধরদের মত, দলকে পাপড়ি হিসেবে দেখুন, দলবাজির ক্ষেত্র নয়, দেখবেন, আপনার সীমিত ক্ষমতা নিয়েও আপনি কিছুদূর যেতে পারবেন l কিছু্দূর, কেননা যদি আপনি বয়স্ক হয়ে থাকেন, তাহলে আপনি সেই সোনার সময়টা ফেলে এসেছেন, যখন দিনে ১৫০০ স্কিপিং করে নাট্যতত্ত্ব পড়ে মহলায় যাওয়া আর সম্ভব নয়, শরীর দেবে না, আপনিও তো জানেন যে দেহপট সনে নট সকলি হারায় l মন খারাপ করবেন না, মন ভালো করুন, ভালো নাটক করার চেষ্টা করুন, দেখবেন আপনার নাটকেও একটু একটু করে লোক হবে l টিকেট কেটেই লোকে নাটক দেখবে l খিস্তি করতে হবে না l ... ...
ঝিন্চ্যাক ছাড়া কিছু থাকবে না। মানুষের থিয়েটারকে মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করতে এবার থিয়েটারকেও ব্যবহার করা হচ্ছে। আগে বলা হতো থিয়েটারে দর্শক হয়না। এখন হয়। কী এমন বিপ্লব ঘটিল। ঘটিল এটাই যে যে রস আগে বাজারি ছবি, কমেডি সার্কাসে, টিভিতে পাওয়া যেত সেই রস এখন থিয়েটারেও মিলছে। আমরা সবাই ড্যাংড্যাং করে নাচছি আর বলছি থিয়েটারের সুদিন এলো! হালে একটি নাটক (প্রায় আড়াই ঘন্টার) দেখে দর্শকরা উচ্ছসিত প্রশংসা করছেন। বলছেন অসাধারণ লাইট, দুর্ধষ্য সেট, কোরিওগ্র্যাফ, কি চমৎকার অভিনয়! সত্যি বলতে কি জঘন্য সংলাপ, অকারণে অভিনেতাদের পটুত্ব জাহির, কিছু সার্কাস-জিবনাস্টিক এবং ‘ওদের থিয়েটার’ এর মতন করার একটা অসফল প্রয়াস। দর্শক মুগ্ধ, কারণ ‘ঝিন্চ্যাক প্রোডাকশন’। ‘জীবনের সাথে সম্পর্কহীন এক abstraction এর চর্চা’। ... ...
মঞ্চে যা ঘটছিল তখন তাতে কাহিনীর পর কাহিনী অত্যন্ত দুর্বল, আরোপিত ও ন্যূনতম সাহিত্য পদবাচ্য না। একদিকে বিপ্লবের প্যামফ্লেটধর্মী উৎকট নাটক, অন্যদিকে প্রাণান্তকর ভাঁড়ামো। এমনকি নান্দীকারের করা জাতীয় নাট্যোৎসবে বাইরে থেকে আসা নাটকগুলোও সাঙ্ঘাতিক প্রেডিক্টেবল হয়ে উঠেছিল। মনোজ মিত্রের অলকানন্দার পুত্রকন্যা, সুমনের কোরিওলেনাস, নর্মান বেথুন, উষা গাঙ্গুলির কোর্টমার্শাল, মহাভোজ এমন কিছু নাটক এদিক ওদিক আগে বা পরে আসবে সে সময়ে। কিন্তু এগুলো ব্যতিক্রম। তাছাড়া নিষিদ্ধ একটা সম্পর্কের স্বাদকে আন্ডারলাইন করে একটি পত্রিকাগোষ্ঠী তীব্র প্রচার চালিয়েছিল ওই নাটকটি নিয়ে। বহুপঠিত সেই পত্রিকা পড়েই তখন বেশিরভাগ দূরের দর্শক আসতেন কলকাতায় নাটক দেখতে। হ্যাঁ, তখনো আসতেন! কলকাতাতেও বাংলা সিনেমায় অঞ্জন চৌধুরী, স্বপন সাহার যুগ চলছে। শহুরে মধ্যবিত্ত দর্শকেরা হলে যাচ্ছেন না। গ্রামের দিকে ভিডিও পার্লারে তিন ধরণের সিনেমা হয়। একটা পর্নোগ্রাফি, অন্যটা হিন্দি এবং কখনো-সখনো বাংলা। সিঙ্গল স্ক্রিন-ই তখন সব। সেখানে বাংলা সিনেমা চলে এবং লোকজন দেখতে আসেন। কিন্তু তাঁরা কেউই নাটকের দর্শক না। ফলে নাটকের সঙ্গে এর প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে ওঠেনি। নাটকের সঙ্গে তখন কিছু প্রতিদ্বন্দ্বিতা শুরু হয়েছে সিরিয়ালের। ... ...
অধিকাংশ ইতিহাসবিদের মোটামুটি গ্রহণযোগ্য মত হলো সাম্প্রদায়িক পরিস্থিতি সাধারণভাবে শান্তিপূর্ণই ছিলো, এমনকি হিন্দু-মুসলিম মিলন, পরস্পরের সংস্কৃতি সম্পর্কে শ্রদ্ধা ও উপভোগের অজস্র দৃষ্টান্তও ইতিহাসে পাওয়া যায়। মমতাজুর রহমান তরফদার ভাষায় "হিন্দু ও মুসলমানের মধ্যে সম্পর্ক ছিল আন্তরিকতাপূর্ণ এবং ধর্মান্ধতার ঘটনা ছিল বিরল।" যদিও "সতর্কতার সাথে এসব গ্রন্থ পড়লে মনে হয় যে কিছু কিছু মুসলমান কর্মকর্তার ব্যক্তিগত খেয়াল ও ধর্মান্ধতা এসব সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষের জন্য দায়ী ছিল। আবার, সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে সংঘটিত সাম্প্রদায়িক হাঙ্গামার ঘটনাও ঘটেছিল" ( হোসেনশাহী বেঙ্গল)। অর্থাৎ প্রাকবৃটিশ আমলে সাম্প্রদায়িক সংঘাতের তুলনায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিই প্রধান প্রবণতা ছিলো, এই মতটি একভাবে মেনে নেয়া যায়, কিন্তু জিনিসটা ব্রিটিশরা আসার আগে এ দেশে ছিল না, এই মতটি মেনে নেয়ার মত না। ... ...
গত দু’দশকে ভারতের HCR দ্রুত কমে এসেছে। আর্থিক সংস্কার (মানে ১৯৯১-এর পর থেকে নয়াউদারনীতির প্রয়োগ) যে সফল হয়েছে তার প্রমাণ হিসেবে প্রায়শ এই HCR কমে আসার কথা বলা হয়। কী রকম কমেছে একটা ধারণা করে নেওয়া যাক। শহর অঞ্চলগুলোতে HCR কমেছে ৩২% (১৯৯৩-৯৪) থেকে ২১%-এ (২০০৯-১০)। গ্রামীণ এলাকায় কমেছে আরো দ্রুত হারেঃ ৫০% থেকে ৩৪%, একই সময়সীমায়। প্ল্যানিং কমিশনের তথ্য অনুযায়ী ২০০৯-১০-এর পরের দু’বছরে সারা দেশের HCR আরো ৮% কমেছে। ফলে ২০১১-১২-তে দারিদ্র্যের হার ২২%-এ নেমে এসেছে। সরকারি নীতি যারা ঠিক করেন তাঁরা, এবং তাঁদের সেনাপতি কাগজ-টিভিওয়ালারা, গরীবির ওপর জোরদার ধাক্কা নিয়ে প্রভূত আপ্লুত। অর্থাৎ, খুব তো শাইনিং ইন্ডিয়া শাইনিং ইন্ডিয়া করে গালমন্দ দিলে। এই দেখ প্রমাণ, আর্থিক সংস্কার সত্যি সত্যি ভাল কাজ করছে। না না, জনপ্রতি আয়-ফায় বাড়ার কথা বলছি না। সে তো মুকেশদা, রতনকাকুরা বেশি কামালে দেশের জনপ্রতি আয় বেড়ে যাবে, তাতে রামা কৈবর্তের কী এল গেল। ওসব ছেঁদো তর্ক থাক। সংস্কারের সুফল এক্কেবার নিচুতলায় পৌঁছোচ্ছে, বুঝেছ? ... ...
আমরা অবশ্য ইঞ্জিনিয়ারিং-এর ফাঁকে ফাঁকে সাস্টেনেবিলিটি শব্দটা গুঁজে দিয়ে ফান্ডিং চাইছি আজকাল। সাস্টেনিবিলিটির আরেক নমুনা দেখলাম সাইজুদ্দিন ঢালির ক্ষেতে এসে। অসাধারণ চাষের বাহার। এক জায়গায় বেগুন হয়েছে তো পাশে কুমড়ো, কিছুটা সর্ষের ক্ষেত। একটা ধানের বীজতলা। আর টাটাদের পাঁচিলের গা জুড়ে ছড়িয়ে আছে রজনীগন্ধার গাছগুলি। জিগেশ করলাম ‘চাষে এখন খরচা কেমন? জল পান কোথা থেকে?’ সাইজুদ্দিন বললেন ‘শ্যালো আছে আমার, জল তুলে নিই’ওয়াটার রিসোর্সের ক্লাস করা আমি এবার আঁতকে উঠি- ‘জলসেচ ছিল না এখানে?’ – ‘ছিল তো। বাগজোলা থেকে জল আসত। তো ২০০০ সাল নাগাদ সে সব পুরো রাজারহাটে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ওই নোটিশ বেরোনোর কিছু আগে। যাদের পাম্প কেনার পয়সা নেই, তারা এমনিই চাষ ছেড়ে দ্যায়।’ কী ভয়ংকর! মাটির তলা থেকে জল তুলে চাষ করা কতটা ক্ষতিকর তা নিয়ে এখানে আলাদা করে লিখছিনা। কিন্তু সত্যিই শিউরে উঠি আমি, কয়েক বছর আগে সেচ বন্ধ করে তারপর জমি দখল করে বাড়ি তোলার ধান্দা যাদের, তারা তো আক্ষরিক অর্থে নিজের মাকে বিক্রি করে দিতে পারে! জমিতে চাষ করছিলেন যে চাচা, তিনি বললেন- ‘আমি তো চাষ ছাড়া আর কিছুই জানিনা। জমি চলে গেলে এই বয়সে খাবটা কী?’ এ প্রশ্ন অনেকবার আলোচনা-টোনায় শুনেছি। কিন্তু এখন যিনি খাবটা কী বললেন, ওই বীজতলার ধান ছড়িয়ে বড় করে আমার অন্ন তিনিই হয়তো সংগ্রহ করেন। সাইজুদ্দিননে জিগেশ করলাম, ওই যে বড় বাড়িগুলো, একসময়ে আপনার, আপনার ভাই বন্ধুদের মাঠ ছিল। এখন পিচ-কংক্রিট। কেমন লাগে? উত্তর দিলেন- ‘কী বলব দাদা, ওখানে এখন তো আমাকে ঢুকতেও দ্যায়না, দেখতেও দ্যায়না ভেতরে কী আছে। কিন্তু একটা হাসপাতাল যদি হত। দরকারে অদরকারে আমিও যেতে পারতাম।’ ... ...
নিজের খুন হওয়ার পিছনে পাখির যে একেবারে কোনও অবদান নেই, এমনটা কিন্তু বলা যাবে না| খুনের মত এতবড় একটা বেআইনি কাজে সেও যে ইন্ধন যুগিয়েছিল তার খবর পাওয়া যাবে রাজারহাট এলাকায় বৌ-ঝিদের এককাট্টা করে সে-ই যে প্রথম জমি বাঁচানোর আন্দোলন গড়ে তোলার চেষ্টা করেছিল সেই বিবরণ খুঁজে কিম্বা খুঁড়ে বের করতে পারলে| তার প্রায় হিস্টিরিয়াগ্রস্ত হাত পা ছোঁড়া, এক দালালকে একসময় ঝাঁটাপেটা করার ইতিবৃত্ত জন্ম দিতে পারে নি কোনও বড়্সড় আন্দোলনের| তাই পাখি হঠাৎ লাশ হয়ে যেতে তার সোয়ামি বালু সর্দার ছাড়া আর কেউ তেমন নড়েচড়ে বসে নি| আর বসে নি বলেই অঞ্চলের বা পার্টির কেউ ভাবেই নি 'প্রোমোটার হটাও, পার্টি বাঁচাও' শ্লোগানের মধ্যে এই পাখি বৃত্তান্তটি ঢুকে পড়বে| এমনিতে বালুর অভিযোগ থানায় জমা হওয়ার পরও কেটে যাওয়ার কথা অনেক দিনরাত, আসামী ফেরার এবং কোর্টের ডেট বছরে, দুবছরে একবার করে পড়তে পড়তে আসামীটির একসময় ৬৩ বা ৭৭ বছর বয়সে সিরোসিস অব লিভার বা উচ্চরক্তচাপজনিত কারণে নির্বিঘ্নে মারা যাওয়ার কথা, কিন্তু বৃত্তান্তটির এমন সরল হওয়ার পথে বাধ সাধল ননী সাহা| রিয়েল এস্টেট ব্যবসায় তার ঘোর প্রতিদ্বন্দী এবং পার্টির 'ভদ্র লবির নেতা'কে নাস্তানাবুদ করতেই ননীর নাকটি তেরচা করে ঢোকে পাখি উপাখ্যানে| ... ...
এই প্রেক্ষাপটে, সুপ্রীম কোর্টের নতুন রায় ৩৭৭ ধারার প্রযোজ্যতাকে একটা নতুন ধরণে প্রতিষ্ঠা করেছে। এই রায়ের পরে ৩৭৭ ধারা আরো বেশি করে 'সমকামিতা'-বিরোধী আইন হিসেবে প্রচারিত হচ্ছে, যাতে এটা আরো বেশি বিপজ্জনক ভাবে প্রযুক্ত হতে পারে। এই আইন নাকি বিশেষভাবে 'সমকামিতা' কে অবৈধ করে, এইরূপ অপপ্রচারের ফলে পুলিশ এবং সমাজের রক্ষণশীল অংশ আরো বেশি করে জানতে পারছে যে ৩৭৭ ধারাকে প্রান্তিক লিঙ্গ ও যৌনতার মানুষদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করা যেতে পারে । কিন্তু এই ধারা নিয়ে চর্চা করে এবং গণমাধ্যমে বিক্ষোভ প্রদর্শন করে এই আইনের গুরুত্বকে যতটা বাড়িয়ে তোলা হয়েছে, এই বিচার ও ৩৭৭ ধারার সঠিক অর্থ নিয়ে ততটা আলোচনা হয়নি। সুপ্রীম কোর্টের এই নতুন রায়ের দরুণ যে যে সাম্প্রতিক বিক্ষোভ দেখা গেছে তা আসলে ২০০৯ সালের সেই সিদ্ধান্তের প্রতীকি গুরুত্বের ফল । সংখ্যালঘু যৌনতার অধিকারের ক্ষেত্রে সাম্প্রতিক রায়ের তাৎপর্য ও গুরুত্বকে খাটো করার জন্য এই কথা বলা হচ্ছে না। কিন্তু হয়ত আন্দোলনকর্মীদের, বিচারব্যবস্থার এবং গণমাধ্যমের উপলব্ধি করার সময় এসেছে যে লিঙ্গান্তরকামী বা যৌনসংখ্যালঘু মানুষের জীবনে অসহায়তা এবং তাঁদের অধিকারলঙ্ঘন শুধুমাত্র ৩৭৭ ধারার নিরিখে বিচার করা যাবে না, বরং তা এই আইন এবং বিচারের চেয়ে অনেক সুদূরপ্রসারী আকার নেয়। শুধুমাত্র ৩৭৭ ধারার প্রতি অতিরিক্ত নজর না দিয়ে যৌনতা ও লিঙ্গ -ভিত্তিক বৈষম্যের সেই বিস্তৃত ক্ষেত্র সমকালীন ও ভবিষ্যৎ ভারতীয় রাজনীতির কেন্দ্রস্থলে নিয়ে আসতে হবে। ... ...
প্রথমত আদালত জানাল যে লিঙ্গভিত্তিক যে সাম্যের অধিকার সংবিধান দিয়েছে, যৌনতা বা সেক্সুয়াল ওরিয়েন্টেশন তার আওতায় আসবে না (দিল্লি হাইকোর্টের ভাবনা ভিন্ন ছিল)। এখানে ভাবা দরকার যে, সংবিধানে কেন লিঙ্গভিত্তিক সাম্যের অধিকারের কথা বলা হয়েছে। একথা অনুমান করা কষ্টকর নয় যে সংবিধান প্রণেতারা বুঝেছিলেন, সমাজে লিঙ্গভিত্তিক বৈষম্য আছে, তাই তার বিরুদ্ধে রক্ষাকবচের দরকার রয়েছে। একই রকম ভাবে আমাদের সমাজে যৌনতাভিত্তিক অসাম্যও রয়েছে, কিন্তু আদালত দুর্ভাগ্যজনকভাবে তার বিরুদ্ধে কোনো রক্ষাকবচ দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলেন না। তারা বলে দিলেন যে যৌনতা সমানাধিকারের মাপকাঠি হতে পারে না। অর্থাৎ, এক কথায়, কোনোরকম বৈষম্যের বিরুদ্ধে প্রান্তিক যৌনতার মানুষদের সংগ্রামের অধিকার তারা কেড়ে নিলেন। তাঁরা আরও জানালেন যে, যারা “প্রকৃতিসম্মত যৌনক্রিয়া” করেন আর যারা “প্রকৃতিবিরুদ্ধ যৌনক্রিয়া” করেন তারা দুটি ভিন্ন গোত্রভুক্ত (ক্লাস)। তাই এক গোত্রের সাম্যের অধিকার, অন্য গোত্র দাবি করতে পারে না। কিন্তু আইনের চোখে কেন হেটেরোসেক্সুয়াল আর হোমোসেক্সুয়ালদের ভিন্ন গোত্র হিসেবে দেখা হবে, তা তাঁরা ব্যাখ্যা করলেন না। আরো মজার ব্যাপার হল, তাঁরা এটা বুঝলেন না যে, এই গোত্রবিভাজন খুবই আপেক্ষিক। আজ যদি স্বামি-স্ত্রী দুরকমের যৌনক্রিয়া করেন তবে তাদের কীভাবে গোত্রভুক্ত করা হবে, এই রায় থেকে সেটা বোঝা গেল না। ... ...
না। এসব কিছুই নয় আসলে। আমরা জানি রাষ্ট্র যা কিছুকে বাঁধা যায় না তাকেই ভয় পায়। নিজে ভয় পায় বলেই ভয় দেখাতেও চায়। ৩৭৭ ধারা আসলে একটা জুজু, তাকে দিয়ে শাস্তি বিধানের তুলনায় ভয় পাওয়ানোর কাজটা হয় বেশি। এতো ফাঁপা আইন দিয়ে সত্যিই কিছু হবে না আমাদের, আমরা যারা কামকে ভয় পেতে শিখিনি, যৌনতাকে লাভের জন্য ব্যবহার করতেও শিখিনি, আমরা যারা যার যার মায়ের কাছে ‘খারাপ মেয়ে’ হয়েছি নানা সময়, নানা কারণে। আমরা জানি এশুধু কয়েক মাস বা বছরের অপেক্ষা, আইন বদলাবেই। যা নিয়ে ভাবছি তা অন্য – যেদিন রাষ্ট্র সমকামী মানুষের অধিকার মেনে নেবে বা নিতে বাধ্য হবে, সেদিন যত ক্যুয়ার, বক্র, নচ্ছার, সমকামী-মূল-স্রোতের বাইরে থাকা জটিলারা তাদের মতো জায়গা পাবে তো? ... ...
আমাদের এই গাইডটি সঙ্গে রাখুন, পড়ুন, পড়ান, কনফিডেন্সের সাথে সমকামিতা সারান। এমনকি এই সব ক’টি ভাট সত্যি হলেও এটি অনুসরণ করুন। অঘটন আজও ঘটে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি হয়না কি ? এই ঘোর কলিতেও ? এছাড়াও আপনার চেষ্টাটাই আসল। এই অসুখ সারাতে উদ্গ্রীব সকলের জন্য রইলো শুভেচ্ছা বার্তা, গেট ওয়েল সুন ! ;-) ... ...