এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  ইস্পেশাল  নববর্ষ ২০১৪

  • রূপকথা - দ্বিতীয় টুকরো

    সুমেরু মুখোপাধ্যায় লেখকের গ্রাহক হোন
    ইস্পেশাল | নববর্ষ ২০১৪ | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ৯৫৩ বার পঠিত
  • প্রথম টুকরো | দ্বিতীয় টুকরো

    দৃশ্য- ৭০


    স্থান কাল্পনিক/ পাহাড়তলিতে ড্রাগন রাজার ডেরা। সময় রাত/ অবাস্তব।


    গান- ৪


    ড্রাগন ড্যান্স।


    রক ভার্শনে গাওয়া গান-


    আমরা এমনি এসে ভেসে যাই,


    আলোর মতন  হাসির মতন


    কুসুমগন্ধরাশির মতন


    হাওয়ার মতন  রাশির মতন


    ঢেউ-এর মতন ভেসে যাই।। (গীতিকার- দ্বিজেন্দ্রলাল রায়)



    ড্রাগনেরা সবাই উন্মত্ত উদ্বাহু হয়ে নাচে। বৃদ্ধ রাজা যেন পুনঃযৌবন পেয়েছেন।


    সোনার পদ্মফুলের মত সোফায় দুই পাশে দুই স্ত্রী নিয়ে দেবতা জিরো।


    অন্য সোনার পদ্মফুলের সোফায় অন্য দেবতাদের দেখা যায়।



    গানের শেষ অংশে বৃদ্ধ ড্রাগন রাজা দেবতা জিরোর কাছে নিয়ে যান ক্রিস্টাল গোলক। বলেন আশীর্বাদ করতে সদ্যোজাত নাতিকে।


    জিরো গোলকের বিম্বতে দেখেন সদ্যজাত সন্তান। চমকে যান, এ তো মানুষের বাচ্চা। এ তাকে মানবে কেন?


    ড্রাগন রাজ সোহাগকে প্রশ্ন করেন বাচ্চাকে জন্মানোর সঙ্গে সঙ্গে সবুজ ড্রাগন সুরক্ষা বর্ম পরানো হয়নি কেন?


    সোহাগ জানায় বাচ্চার জন্য যে একমাত্র বর্মটা ছিল সেটা অনেকদিন আগেই চুরি হয়ে গেছে।


    দেবতা জিরো মাথা নাড়তে থাকেন, সব শেষ। সব শেষ।


    ড্রাগন রাজা অজ্ঞান হয়ে যান। গান থেমে যায়।


    তার হাত থেকে ক্রিস্টাল গোলক পড়ে গড়াতে থাকে।



    দৃশ্য- ৭১


    গোরস্থান। রাত।


    একা এক বাচ্চার জন্ম দেয় ময়না। হাতড়ে হাতড়ে গোরস্থানের রক্ষীর পরিত্যক্ত ঘরে গিয়ে ঢোকে। 


    কুলুঙ্গিতে লুকিয়ে রাখা একটা সবুজ রঙ-এর গিরগিটির মত খোলস দিয়ে বাচ্চাটিকে মুড়িয়ে দিয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়।


    দেখা যায় তক্তাপোষের উপর শুয়ে আগের বৃদ্ধ রাজবৈদ্য। তার কাশির গমকে বাচ্চাটি কেঁদে ওঠে।



    দৃশ্য- ৭২


    রাজপ্রাসাদের মূল সভাকক্ষ।



    সিংহাসনে আসীন রাজা ও মহামন্ত্রী। আগে দেখা শূন্য সিংহাসনগুলিতে ফিরে এসেছেন, সেনাপতি, মন্ত্রী ও বিদুষক ও গণৎকার।


    রক্ষীরাও ফিরে এসেছে সকলে।


    সভায় ঘোষণা করা হয়, আজ বিরাট রাজার সন্তানদের নামকরণ অনুষ্ঠান। নামকরণ করবেন বিশিষ্ট ত্রিকালজ্ঞ বেদান্তবিশারদ কোরানজিৎ বাইবেলাচার্য।


    দাসীরা শাঁখ বাজায়। উলুধ্বনী দেয়।


    সুমোকুস্তিগীরের চেহারার রাজপণ্ডিত বিশিষ্ট ত্রিকালজ্ঞ বেদান্তবিশারদ কোরানজিৎ বাইবেলাচার্য আসতেই ঘরের আলো পালটে যায়।


    বড়রানী সোহাগ আসে পুত্র নিয়ে।


    গণৎকার মন্ত্রপূত ঘড়া থেকে একটি অক্ষর বার করেন- ‘ব’।


    তার হাতে ধরা ‘ব’ টি দ্রুত বড় হতে থাকে।


    দুইজন সুন্দরী সেই অক্ষরটি নিয়ে ক্যাটওয়াক করে সবাইকে দেখায়।


    সবাই কানাকানি করে নাম নিয়ে। বিদুষকের ফুটকাটা নিয়ে হাসাহাসি হয়।


    বিশিষ্ট ত্রিকালজ্ঞ বেদান্তবিশারদ কোরানজিৎ বাইবেলাচার্য গম্ভীর হয়ে মন্ত্র আঊড়ে পুত্রের নাম দেন বিশাল।


    আলো আবার পূর্ব-অবস্থানে ফিরে যায়।


    সভায় ঘোষণা হয়, প্রথম পুত্রের নাম।


    শঙ্খধ্বনী, উলুধ্বনি হয়।


    ২য় রানী আসে সন্তান নিয়ে। অনুরূপ ঘটনার মধ্যে দিয়ে তার নাম হয় ইস্কাপন।


    রুমকি আসে কোলে বাঁদর নিয়ে। সবাই ছি ছি করে। বিদুষক নোংরা ইঙ্গিত দেয়। সবাই তাই নিয়ে হাসাহাসি করে। রুমকির অনুরোধে বিশিষ্ট ত্রিকালজ্ঞ বেদান্তবিশারদ কোরানজিৎ বাইবেলাচার্য বাঁদরের নামকরণ করতে চান না। রুমকি নিজেই তোলে একটি অক্ষর- ‘প’। ন্যানা তার নাম দেন, পাভেল। 


    শাঁখ বাজে না, উলুধ্বনি ওঠে না।


    রুমকি কাঁদতে কাঁদতে অন্ধকার কোণে গিয়ে দাঁড়ায়।


    সালমা আসে কোলে প্যাঁচা নিয়ে। সভায় আবার হাসাহাসি হয়। ন্যানা পূর্বের মত ঘটনার মধ্য দিয়ে তার নাম দেয় – টিঙ্কা।


    গণৎকার বলেন – রাজার এই দুই স্ত্রী ব্যাভিচারী। এরা রাজ্যে থাকলে তারা সকলে পূর্বের মত বিরাট গড় পরিত্যাগ করবেন।


    সকলে সেই কথায় সায় দেয়।


    রাজা জনরোষে অতিষ্ঠ হয়ে রক্ষীদের হুকুম দেন ব্যাভিচারী রানীদের সীমানা পার করে রেখে দিয়ে আসতে।


    সালমা ও রুমকি কোলে সন্তান নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় নেয়।



    দৃশ্য- ৭৩


    রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ার। দিন।


    সালমা ও রুমকি কোলে সন্তান নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় নেয়, পায়ে হেঁটে।


    দুইজন রক্ষী চলে সঙ্গে ঘোড়ায় চেপে।



    দৃশ্য- ৭৪


    বিরাটনগড় বাজার। দিন।


    জন সমাবেশের মধ্যে দিয়ে সালমা ও রুমকি কোলে সন্তান নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বিদায় নেয় ঘোড়ায় চাপা রক্ষীদের প্রহরায়। তাদের দেখে বাজারের গুঞ্জন থেমে যায়।



    দৃশ্য- ৭৫


    মরুপ্রান্তর। দিন।


    রক্ষীরা চলেছে উটের পিঠে। তাদের মাথায় ছত্রী ধরে আছে মরু পোষাকে স্থানীয় মানুষ। পেছন পেছন চড়া রোদে সালমা ও রুমকি কোলে সন্তান নিয়ে চোখের জল ফেলতে ফেলতে চলেছে দিগন্তের দিকে।


    আবহে দুইজনের একসঙ্গে থাকার গানটির স্যাড ভার্শন শোনা যায় (হার্মোনিকা শুনে শোলের কথা মনে পড়বে)।


    কাঁটাতারের বেড়া। রক্ষীরা তাদের বেড়া পার করে ফিরে যায়।



    দৃশ্য- ৭৬


    ষড়ভুজাকৃতি ঘর। দিন।


    মহারানীর কোলে বিশাল খেলছে ক্রিস্টাল গোলক নিয়ে। ক্রিস্টাল গোলকে ফুটে ওঠে রুমকি ও সালমার বাঁদর ও পেঁচা নিয়ে কাঁটাতার পার হওয়া।


    মহারানীর দ্বিখণ্ডিত জিভ লোভে লকলক করে।


    দৃশ্য- ৭৭


    সীমান্তবাবার আশ্রম। দিন।



    ঘরে বসে বিবিধ পাতা ও ফুল খলে পিষে ওষুধ বানাচ্ছেন সাধু। সামনের বনে উড়ে বেড়াচ্ছে পাখিরা।


    সাধু খল থেকে মণ্ড নিয়ে বিভিন্ন বোতলে ঢোকাতে ঢোকাতে চোখ পড়ে দরজায়।


    দরজায় (লাগানো ক্রোমা কাপড়ে) যেন দেখা যায় বহু দূরের ছবি। সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সালমা ও রুমকি।


    সাধু দরজা দিয়ে সেই দিকে এগিয়ে যান।



    দৃশ্য- ৭৮


    মরুপ্রান্তর। দিন।


    কাঁটাতার পেরোতেই সীমান্তবাবার দেখা পেয়ে উল্লসিত হয়ে ওঠে রুমকি ও সালমা।


    তারা সকলে হাঁটতে থাকে। পাভেল সাধুর পিঠে আর টিঙ্কা কাঁধে।


    সাধু বলেন তিনি সব জানেন। মহারানীর খাস বাঁদি ময়না সোহাগের নির্দেশে ইউক্যালিপ্টাস গাছের শিকড় মিশিয়ে দিয়েছিল তাদের পায়েসে। তাই এই হাল। তবে তার গবেষণালব্ধ ওষুধ খেলে আস্তে আস্তে তারা উভয়েই মনুষ্যরূপ ফিরে পাবে।


    আনন্দে পাভেল লাফ দিয়ে বালিতে নেমে ডিগবাজী খেতে থাকে।



    দৃশ্য- ৭৯


    পাহাড়ের পাদদেশে ড্রাগন রাজের ডেরা। সন্ধ্যা।


    ড্রাগন রাজা মারা গেছেন। তারা দোলনা গাছ থেকে নামানো হচ্ছে। বৃদ্ধ ড্রাগনরা সব হাহাকার করছে। এমন সময় গাছের আউটলাইন আলো হয়ে যায়। সাদা পঙ্খীরাজ ঘোড়া চেপে দেবতা জিরো আকাশ থেকে নেমে আসেন। ঘোড়ায় তার পেছনে বসে বিরাটগড়ের প্রাক্তন রাজবৈদ্য কোলে একটি ড্রাগনের বাচ্চা।


    বাচ্চা দেখে ড্রাগনেরা দুঃখ ভুলে মেতে ওঠে উল্লাসে। আর তাদের নিজেদের তপ্ত নিঃশ্বাসে নিজেদের পুড়ে মরতে হবে না।


    বাচ্চার অভিষেক ঘটে ড্রাগন-রাজের শূন্য সিংহাসনে। দেবতা জিরো তার হাতে তুলে দেন ক্রিস্টাল গোলক।


    ড্রাগনেরা পুলি টেনে বাচ্চা সমেত দোলনা গাছে তুলে দেয়। জয়ধ্বনি করে জিরো দেবতার নামে।


    জিরো দেবতাকে সেখানে দেখা যায় না।


    গাছের আউটলাইন বরাবর আলো নিভে যায়।



    দৃশ্য- ৮০


    মেঘের রাজ্য। সময় অবাস্তব।


    দেবতা কাঁঠালী নির্মাণ করেছেন ফ্ল্যাট বাড়ি সদৃশ মাল্টিলেয়ারড সোনার পদ্ম। একেকটি দেবতার পরিবারের জন্য বরাদ্দ একেকটি তলা। বিভিন্নসংখ্যক মাথাওয়ালা দেবতারা বিভিন্ন তলায় নাচ করে।


    গান- ৫


    (বিষয়- প্রার্থনা সঙ্গীত)


    মোদের রেখেছ ধরার উপরে


    ধরতে পারেনা কেহ


    ড্রাগন বংশ হবেনা ধ্বংস


    হবে না আর দাবদাহ।


    বল বল বল সবে


    রাখে হরি আর মারে কে? 


    রাখে হরি আর কে মারে।। তুমি এস হে, এস হে (কোরাস)




    যুগে যুগে ড্রাগন 


    পাঠায়েছ তুমি বারে বারে।


    তুমিই আলোর দিশা প্রভূ


    হতাশা আমাশা অন্ধকারে।


    তুমি এস হে,


    শিরোধার্য তব জীবনের বাণী


    কখনও হয়নি ম্লান


    বল বল বল সবে


    রাখে হরি আর মারে কে?


    রাখে হরি আর কে মারে।। তুমি এস হে, এস হে (কোরাস) 



    তোমার রুহির ধারায় সাজানো


    আমাদের স্বর্ণকমল বাগান


    ঘাটালে বাঁকুড়ায় তুমিই ভরসা


    আর্তের কাছে মাদার টেরেসা


    চাঁদের পাহাড়ে কাদের মোল্লা


    গোলহীন দিনে রজার মিল্লা


    তুমি এস হে,


    বাওয়ালী ভুলে ফের চ্যালেঞ্জ কর


    মনোটোনে তুমি হয়ে ওঠো রংবাজ।


    বল বল বল সবে


    রাখে হরি আর কে মারে।। 


    রাখে হরি আর কে মারে।। তুমি এস হে, এস হে (কোরাস)




    দৃশ্য- ৮১


    মহামন্ত্রীর অন্দরমহল। রাত।


    বশ খেলছেন পরমা সুন্দরী ন্যানা ও মন্ত্রী দেবশংকর। মন্ত্রীর চুলে পাক ধরেছে। বয়েসের ছাপ। ন্যানার কোন পরিবর্তন নেই।


    গুপ্তচর এসে সংবাদ দেয় মহারানী সোহাগ, রাজপুত্র বিশাল ও মারিয়া মিলে বিরাট রাজাকে হত্যা করে বাগানের কূপে নিক্ষেপ করেছে।


    দেবশঙ্কর ও ন্যানা যেন এই মুহূর্তে বিরাটগড় ছেড়ে চলে যান। গুপ্তঘাতক নিয়োগ করা হয়েছে আজ রাতেই তাদের মেরে ফেলা হবে।


    দৃশ্য- ৮২


    মন্ত্রীর আবাসগৃহের প্রধান ফটক। রাত।


    দুটি ঘোড়ায় মন্ত্রী ও ন্যানা বাড়ি পরিত্যাগ করে।



    দৃশ্য- ৮৩


    বিরাটগড় বাজার। দিন।


    ঘোষণা হয় ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে। রাজা বিরাটের অবর্তমানে রাজকুমার বিশালএর অভিষেক বার্তা।


    মন্ত্রী দেবশঙ্করের অবর্তমানে যুবরাজ ইস্কাপন দায়িত্বভার গ্রহণ করছেন।


    বাজারের সবাই নিজেদের মধ্যে কানাকানি করে।


    দৃশ্য- ৮৪


    সীমান্তবাবার আশ্রম। দিন।



    পাভেল ও টিঙ্কা বড় হয়েছে। মন্তাজ দৃশ্যে দেখা যায়- 


    সালমা তাদের যুদ্ধবিদ্যা সেখাচ্ছে।


    সাধু তাদের শাস্ত্রপাঠ করাচ্ছে।


    রুমকি তাদের সঙ্গীত শিক্ষা দিচ্ছে।


    তারা নিজেদের মধ্যে লড়াই করছে।


    সালমা ও রুমকি – দুইজনেরই বয়েস বেড়েছে। তারা ওষধির বাগানে কর্মরত। বিভিন্ন পাতা, ফুল শিকড় তোলে।


    সেগুলো ঝরনার জলে ধুয়ে পরিস্কার করে।


    রুমকি খলে ছেঁচে ওষুধ বানায়।


    সালমা উনুন জ্বালিয়ে রান্না করে।


    সাধু দুইজনকে মাপ মত ওষুধ খাইয়ে দেয়।


    সাধু সালমা ও রুমকিকে জানায় আর একমাস পরে পাভেল ও টিঙ্কার যেই আঠেরো বছর পুর্ণ হবে অমনি তারা মনুষ্য অবয়ব ফিরে পাবে।


    রাতে টিঙ্কা ও পাভেলকে সালমা বিরাট গড়ের গল্প বলে ঘুম পাড়ায়।



    দৃশ্য- ৮৫


    পাহাড়তলিতে ড্রাগন রাজের ডেরা। সকাল।


    পরিপূর্ণ যুবক এখন ড্রাগন রাজা। রাজার খাটিয়া গাছ থেকে ঝুলছে সব থেকে উঁচুতে। অন্যান্য গাছ থেকে ঝুলছে সভাসদবর্গের খাটিয়া।


    তারা পরিকল্পনা করছে মড়ক বা মহামারী বাধিয়ে পৃথিবী থেকে সমস্ত মানুষ নিকেশ করে দেবে।


    গোটা পৃথিবীটাই হয়ে যাবে তাদের।


    রাজা ক্রিস্টাল বলে, সোহাগ, সোহাগ বলে তিনবার ডাকলে বৃদ্ধা মহারানীর বিম্ব ভেসে ওঠে। 


    যুবক রাজা নির্দেশ দেন বিরাটগড়ের সমস্ত মানুষকে মেরে ফেলতে।


    ক্রিস্টালের বিম্বের মধ্যে রানী ভয়ে কেঁপে ওঠেন।



    দৃশ্য- ৮৬


    ষড়ভুজাকৃতিঘর। দিন+রাত।


    বৃদ্ধা মহারানী ঘরে হতবম্বের মত ক্রিস্টাল গোলক হাতে করে বসে। ঘরের বাইরের আলো চলে গিয়ে অন্ধকার এসে গ্রাস করে।


    রাজপুত্র বিশাল এসে ঘরের আলো জ্বালায়। সোহাগের সম্বিত ফেরে।


    সোহাগের কাছে ছেলে আবদার করে। অনুমতি চায় রাজ্যভার গ্রহণ করার আগে সারাটা দেশ সে আর ইস্কাপন একবার ঘুরে দেখে নিতে চায়। এতে রাজ্যচালাতে তাদের সুবিধা হবে।


    অনুমতি দিয়ে রানী বলেন, বিরাটগড়ের একজন শত্রু আছে। ড্রাগনরাজা, তাকে দেখা যায় না, তাই তাকে মারা ভীষণ কষ্টকর। তবে দুঃসাধ্য নয়।


    আর তাকে না মারতে পারলে পুরো বিরাটগড়ই ধ্বংস হয়ে যাবে।


    বিশাল তাকে হত্যা করে বিরাটগড়কে বাঁচাবার অঙ্গীকার করে।


    রানী তাকে ড্রাগন বংশের গুপ্তকথা বলে দেন।


    দেশের সীমানা বরাবর যে সমুদ্র তার নীচে আছে ঘুমন্ত নগরী। সেখানে থাকেন ড্রাগন রানী। তার পোষা ফিনিক্স পাখিকে মারতে পারলে দুনিয়ার সমস্ত ড্রাগন এক সঙ্গে মারা পড়বে। শেষ হয়ে যাবে কোটি কোটি বছরের ড্রাগন সাম্রাজ্য।


    বিশাল প্রতিজ্ঞা করে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে বেরিয়ে যায়।


    মহারানী ঝরঝর করে কাঁদতে থাকেন।


    ঘরের আলোর বদল হয়।


    সবুজ আলোয় দেখা যায়, মহারানীর উর্দ্ধভাগ সবুজ গিরগিটির মত। জিভ দ্বিখণ্ডিত। চোখ দিয়ে ঝরে পড়ছে সবুজ কান্না।



    দৃশ্য- ৮৭


    দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চল। সকাল।



    বয়স্ক সালমা ও রুমকি ঝুড়ি করে পাতা ও ফুল সংগ্রহ করছে। তারা কথা বলে বিরাট গড় নিয়ে। কেমন আছেন রাজা ও জায়েরা? বিশাল ও ইস্কাপনকে দেখতে ইচ্ছে করে দুজনের। তারা ঠিক করে একমাস বাদে পাভেল ও টিঙ্কা যখন মনুষ্য অবয়ব ফিরে পাবে তখন সকলে মিলে ফিরে যাবে বিরাট গড়ে।



    দৃশ্য- ৮৮


    সীমান্তবাবার আশ্রম। দিন।


    শিক্ষা সমাপনে গুরুকে প্রণাম করে পাভেল ও টিঙ্কা।


    সাধু তাকে বলে তার মায়েরা বিরাটগড়ের রানী ও তারা রাজপুত্র। তাদের বিরাটগড়ের উপর শত্রুর ছায়া পড়েছে। তাদের কর্তব্য শত্রুর ছায়া থেকে প্রজাদের উদ্ধার করা।



    দৃশ্য- ৮৯


    রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ার। দিন।


    দুই ঘোড়ায় বিশাল ও ইস্কাপন। পেছনে তাঁবু ও খাদ্যের সরঞ্জাম নিয়ে দুটি পৃথক উটের গাড়িতে অনুচরবৃন্দ।


    চোখের জলে মারিয়া বিদায় জানাচ্ছেন দুই ছেলেকে। 


    বিশাল ও ইস্কাপন ঠিক করে দুই জনে যাবে দুই দিকে। দেশ প্রদক্ষিণ করে ফিরে আসবে ঠিক এই খানে। 


    দলবল সেই মত ভাগ হয়ে যায়।


    মারিয়া এক খাঁচা পায়রা তুলে দেন ইস্কাপনের দলের গাড়িতে। রোজ যেন একটা করে চিঠি লিখে উড়িয়ে দেয় সে।


    মারিয়া দুইজনকেই বলেন, একমাসের মধ্যে ফিরে আসতে। সামনের জন্মদিনে তাদের ১৮ বছর পূর্ণ হবে। সেইদিনই হবে রাজ্যাভিষেক।


    দুই দল দুইদিকে চলে যায়।


    ছাদে দাঁড়িয়ে হাত নাড়তে নাড়তে দীর্ঘশ্বাস ফেলেন মহারানী।



    দৃশ্য- ৯০


    জলতলে ঘুমন্ত নগরী। সময়- অবাস্তব।


    ঘুমন্ত নগরীতে সবাই ঘুমোচ্ছে। সবাই পাথরের মত ফ্রিজ।  রানীর পায়ের কাছে এক মস্ত ফিনিক্স পাখি, সেও ঘুমোচ্ছে।


    দুইজন মুখোশধারী জ্যান্ত যুবক সব খুঁটে খুঁটে দেখছে।


    একজন রানীর পাশে রাখা বড় ঘন্টায় আওয়াজ করতেই সবাই জেগে ওঠে। অন্যজন ফিনিক্স জেগে উঠতেই তরবারি দিয়ে তার গলা কেটে ফেলে। নগরীর সবাই ছটফট করতে করতে ড্রাগনের আকারধারণ করে ও মারা যায়।



    ভয়েস ওভারে সীমান্তবাবা কী করে অশুভ শক্তি ড্রাগনদের ধ্বংস করতে হবে তার বিবরণ দেন।


    সারা সমুদ্র লাল রঙ হয়ে যায়।


    মুখোশ পরিহিত দুই যুবক তার মধ্যে দিয়ে ভেসে ওঠে।


    সমুদ্রতটে দেখা যায় ড্রাগন দেবাদিদেব ইউনিকর্ণ ছটফট করতে করতে ঢুবে যেতে থাকে চোরাবালিতে। মুখোশ পরা দুই যুবক তাকে ডিঙিয়ে ফ্রেমের দুইপাশ দিয়ে বেরিয়ে যায়।


    ড্রাগন দেবাদিদেব ইউনিকর্ণ বাঁচাও বাঁচাও করতে করতে ঢুবে যায় চোরাবালিতে।



    দৃশ্য- ৯১


    মহারানীর শয়নকক্ষ। রাত।


    দুঃস্বপ্ন দেখে ধড়ফড় করে বিছানার উপর উঠে বসেন মহারানী।


    বালিশের তলা থেকে বের করেন ক্রিস্টাল গোলক। ছেলে বিশালের নাম ধরে তিনবার ডাকেন।


    ক্রিস্টাল গোলকে বিম্ব ভেসে ওঠে, মদ্যপ বিশাল শুয়ে পড়েছে শুঁড়িখানার বেঞ্চে। একজন বিশ্রী দর্শন গণিকা তার জুতো খুলে দিচ্ছে।


    বেশ কয়েকবার ছেলের নাম ধরে ডাকতে থাকেন রাগত স্বরে। বিস্ফারিত চোখে তাকিয়ে থাকেন গোলকের দিকে।


    তারপর অন্য হাত দিয়ে চাপা দেন নিজের চোখ।


    দৃশ্য- ৯২


    রাজপ্রাসাদের বাগান। সকাল।



    মারিয়া ছুটতে এসে নির্দিষ্ট স্থানে থামে। তার ছেলের চিঠি নিয়ে উড়ে এসেছে পায়রা।


    তার পা থেকে চিঠি খুলে নিয়ে সে পড়ে।


    ছেলে ইস্কাপন গিয়ে পৌঁছেছে সমুদ্রে।


    মারিয়া শুনতে পায় সমুদ্রের গর্জন।


    চিঠির মধ্যে ফুটে ওঠে সমুদ্র।


    চিঠিটা বড় হয়ে সমস্তটা(ফ্রেম/স্ক্রিন) দখল করে।


    বিশাল সমুদ্র। 



    দৃশ্য- ৯৩


    সমুদ্রের তলদেশ। সময়- অবাস্তব।



    সমুদ্রের তলে এসে পৌঁছেছে ইস্কাপন। ক্ষুদ্রাকৃতি ‘টাইটানিক’ লেখা জাহাজে উপর পা ছড়িয়ে বসে আখ খাচ্ছে গোলাপ। সে চুষে চুষে রস খেয়ে ছিবড়ে ফেললেই মাছেরা এসে গিলে ফেলছে। সেইখানে জাহাজের উপর গোলাপের গায়ে গা লাগিয়ে বসে ইস্কাপন।


    নিচে ১০জন গবেষক/ সমুদ্র বিজ্ঞানীকে দিয়ে জাহাজের গায়ের শ্যাওলা পরিস্কার করাচ্ছে গণিকা পামেলা।


    গোলাপকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেতে যায় ইস্কাপন। গোলাপ লজ্জা পেয়ে কনুই-এর ধাক্কা দেয় ইস্কাপনকে।


    টাইটানিক থেকে ছিটকে পড়ে ইস্কাপন।


    তলিয়ে যেতে থাকে সমুদ্রের তলায়।


    তার দিকে দ্রুত ছুটে আসতে থাকে একটা বিশাল সাইজের তিমি।


    প্রকান্ড তিমি ছুটে আসে সোজাসুজি।



    দৃশ্য- ৯৪


    পার্বত্য নদীর ধার। দিন।



    অসিযুদ্ধরত পাভেল আর টিঙ্কা। বিশাল তার দলবল নিয়ে সেখানে পৌঁছায়। বাঁদর আর পেঁচাকে যুদ্ধ করতে দেখে আমোদ পায়। তাকে জাল ফেলে ধরতে নির্দেশ দেয়। সঙ্গীরা জাল ফেলে তাদের ধরলে পাভেল তাদের প্রশ্ন করতে থাকে। এতে বিশালরা ততোধিক আমোদ পায়।


    বিশাল সবাইকে নির্দেশ দেয় কথা বলা বাঁদর আর পেঁচাকে তাদের সঙ্গে উটের গাড়ি করে বিরাট গড়ে নিয়ে যেতে।


    বিরাট গড় যাওয়ার কথা শুনে পাভেল আর টিঙ্কা চুপ করে যায়। কোন প্রতিবাদ করে না।


    তাদের গাড়িতে তুললে গাড়ি চলতে শুরু করে।



    দৃশ্য- ৯৫


    রাজবাড়ির বাগান। দিন।


    মারিয়া দৌড়ে এসে নির্দিষ্ট স্থানে থামে। ডালে এক সঙ্গে অনেক অনেক পায়রা দেখে হকচকিয়ে যায়।


    ভাল করে লক্ষ্য করে, না কারো পায়েই কোন চিঠি বাঁধা নেই।


    মারিয়া ডুকরে কেঁদে ওঠে।



    দৃশ্য- ৯৬


    রাজবাড়ির সিংহদুয়ার। দিন।


    দুইপাশ থেকে পূর্বের কথা মত দুটি দল এসে পৌঁছায়। বিশালের উটের গাড়িতে কথা বলা বানর ও পেঁচা। ইস্কাপনের উটের গাড়িতে, ইস্কাপনের অর্ধেক মৃতদেহ। বানর ও পেঁচা কেউ লক্ষ্য করে না। জটলা হয়, ইস্কাপনের মৃতদেহ ঘিরে। ইস্কাপনের সঙ্গীরা বিশালকে বলে, সমুদ্রস্নানের সময় এক অতিকায় তিমি এসে ইস্কাপনের অর্ধেক খেয়ে নেয়। 


    মারিয়া পাগলের মত ঝাঁপিয়ে পড়ে ইস্কাপনের মৃতদেহের উপর। পাগলের মত করতে থাকে। বাছা আমার একবার তাকা। আমি জানি এই তিমি ড্রাগন রাজার পোষা। আমি ঠিক মেরে আনব তোমার জন্য। তুমি একবার চোখ খোল।


    বিশাল ড্রাগন রাজার নাম শুনেই ঘোড়ায় উঠে দলবল নিয়ে যায় শত্রুর মোকাবিলা করতে।



    দৃশ্য- ৯৭


    সীমান্তবাবার আশ্রম। সন্ধ্যা।



    পাতা ও ফুল সংগ্রহ করে পর্ণকুটিরে ফিরে আসে রুমকি ও সালমা।


    পাভেল ও টিঙ্কাকে কোথাও খুঁজে পায় না।


    দুইজনেই দুইজনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।



    দৃশ্য- ৯৮


    রাজপ্রাসাদের অতিথিশালা। রাত।



    রাজার অতিথি বানর ও পেঁচা। অতিথিশালায় ন’জন শুভ্রকেশ গণিকা তাদের চিনতে পারে। তারা ছিল তাদের দাই মা। তারা পাভেল ও টিঙ্কার মায়ের নাম জিজ্ঞাসা করে বুঝতে পারে তাদের অনুমানই সঠিক। তারা খুব আদর করে পাভেল ও পেঁচাকে।


    দৃশ্য- ৯৯


    অতিথিশালার স্নানাগার। রাত।



    শুভ্রকেশ গণিকারা নিয়ে এসেছে স্নানাগারে স্নান করাতে।


    ঢং ঢং করে রাজপ্রাসাদের অতিথিশালার ঘড়িতে রাত ১২ টা সূচিত হয়। ঘোষণা শোনা যায়।


    সঙ্গে সঙ্গে পাভেল ও টিঙ্কা দুই রূপবান রাজকুমারে পরিণত হয়।


    গণিকারা অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে থাকে।



    দৃশ্য- ১০০


    বিরাটগড় বাজার। রাত।



    ঢ্যাঁড়া পিটিয়ে ঘোষণা করা হয়, রাজকুমার ইস্কাপনের আকস্মিক অপঘাতে মৃত্যুর কারণে কাল রাজসভায় রাজকুমারদ্বয়ের অভিষেক স্থগিত রাখা হচ্ছে। পরবর্তী কর্মসূচী উপযুক্ত সময়ে জনসাধারণকে জানিয়ে দেওয়া হবে।


    পানশালা থেকে মদ্যপরা আলোচনা করতে করতে বেরোয়। বেশ হয়েছে গোটা বংশকে গিলে খাক।



    দৃশ্য- ১০১


    ষড়ভূজাকৃতি ঘর। রাত।



    বশ বোর্ডের উপর অন্যরকম গুটি ছড়ানো। মহারানী গুটিতে হাত না লাগিয়ে সেগুলোর স্থানান্তর করাচ্ছেন।


    শ্লোক বলে বলে প্রার্থনা করেন, জিরো দেবতার কাছে। তার সন্তানের দীর্ঘায়ু। সামনের আয়নায় ফুটে ওঠে সমুদ্রতট। রাজকুমার বিশালের পথ রোধ করে দাঁড়িয়েছে ড্রাগন দেবাদিদেব ইউনিকর্ণ।


    দেবতা জিরোকে জোরে জোরে ডাকতে থাকেন।


    জিরো আসেন না।


    রানী এক এক করে আয়নাগুলি ভাঙতে থাকেন।


    ঘরের রঙ ও আলো পালটে সবুজ হয়ে যায়।


    বৃদ্ধা সোহাগের উপরিভাগ ড্রাগনের আকার ধারণ করে।


    ঘরের বাইরে বজ্র-বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি পড়ে।


    দৃশ্য- ১০২


    সমুদ্রতট। ভোর।


    বজ্র- বিদ্যুৎ সহ বৃষ্টি পড়ছে।


    ইউনিকর্ণের ল্যাজের ঝাক্কায় দলবল সমেত বিশাল ছিটকে পড়ে সমুদ্রগর্ভে।



    দৃশ্য- ১০৩


    জলের তলায়। সময়- অবান্তর।



    এক প্রকান্ড তিমি বিশালের সেনা দলকে গিলে ফেলে।


    বিশালের সঙ্গে তিমির প্রচন্ড যুদ্ধ হয়।


    বিশাল বর্ষার সাহাজ্যে তিমিকে পরাস্ত করে হত্যা করে।



    দৃশ্য- ১০৪


    জলের তলায় ড্রাগন রানীর দরবার। সময়- অবাস্তব।



    বিশাল পৌঁছায় ঘুমন্ত নগরীতে।


    মায়ের কথা মত ঘন্টা বাজায়। সবাই জেগে ওঠে। ফিনিক্স উড়ে গাছের ডালে গিয়ে বসে। বিশাল তার নাগাল পায় না। সবাই আস্তে আস্তে ড্রাগন রূপ ধারণ করতে থাকে। রক্ষীদের ল্যাজের বাড়ি খেলে বিশাল ছিটকে পড়ে ঘন্টার ওপর।


    ঘন্টা বাজতেই সবাই ফ্রিজ হয়ে যায়।


    বিশাল ফ্রিজ হয়ে আস্তে আস্তে পাথর হয়ে যায়।



    দৃশ্য- ১০৫


    মেঘের রাজ্য। সময় –অবাস্তব।



    সোনার পদ্ম-এর উপর পদ্ম সাজিয়ে বানানো অভিনব ফ্ল্যাট বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়।  একাধিক মাথা ওয়ালা ড্রাগন দেবতারা ছোটাছুটি করতে থাকেন- ভূমিকম্প! ভূমিকম্প! দেবতা জিরো সোনার চোঙ্গা ফুকে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা করেন।–গুজব ছড়াবেন না। গুজবে কান দেবেন না। আমাদের স্বর্গরাজ্য কোন ভূমি নেই তাই ভূমিকম্পও অবাস্তব। আপনারা শান্ত হোন।


    কিন্তু আবার কেঁপে ওঠে সব। দেবতা জিরোর প্রথম স্ত্রী চারু এই নড়ার সঙ্গে সঙ্গে মর্তের উদ্দেশ্যে ঝাঁপ মেরে দেয়।


    পদ্মের স্ট্রাকচার বিস্কুটের মত ঝরে ঝরে পড়তে থাকে।


    জিরোর মেজো স্ত্রী জীজা কুয়ো থেকে জল তোলার মত সোনার বালতি দিয়ে ভেঙ্গে পড়া সোনার টুকরো তুলে তুলে জড়ো করছিল।


    নিচের তলা থেকে মুখ বাড়িয়ে দেবতা কাঁঠালী বলেন- বৌদি, কালিদাসের কথা জানেন?


    জীজা সোনা সংগ্রহ করতে করতে বলে, কে সে সোনার ব্যবসায়ী?


    বলামাত্র জীজার তলা খসে পড়ে। জীজা শূন্যহাতে মেঘের রাজ্যে তলিয়ে যায়।



    দৃশ্য- ১০৬


    রাজার অতিথিশালা। দিন।


    সীমান্তবাবার সঙ্গে রুমকি ও সালমা পপ ইন করে। ৯ জন পক্ককেশী গণিকা তাদের বহুদিন পর দেখে খুব খুশী হয়। তারা নিয়ে আসে পাভেল ও টিঙ্কার কাছে।


    অনুরাগ পর্ব শেষে পাভেল ও টিঙ্কাকে সাধু বলেন, তোমাদের বিরাটগড়কে রোষানল থেকে মুক্ত করতে তোমারাই পারবে। যাও বেরিয়ে পড়।


    রুমকি ও সালমা চোখের জলে বিদায় দেয় ছেলেদের।


    আশীর্বাদ করে। বলে, জয়ী হয়ে ফিরে এস।



    দৃশ্য-১০৭


    রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ার। দিন।



    ঘোড়ায় করে যুদ্ধসাজে বেরিয়ে যায় পাভেল ও টিঙ্কা।


    মারিয়াকে দেখা যায় পাগলের বেশে দরজার আশে পাশে কাগজ কুড়াচ্ছে।


    কাগজ হাতে দৌড়ে বেড়াচ্ছে, চিঠি চিঠি বলে।



    দৃশ্য- ১০৮


    সমুদ্রতট। দিন।


    সমুদ্রতটের ইউনিকর্ণ প্রহরারত। পমা সুন্দরী চারু ছলনা করে। 


    পরমা সুন্দরী চারু এসে ভ্রূভঙ্গী করে বলে, আপনার সোনার রাজ্য তো দেবতা জিরো ভেঙ্গে ভেঙে বেচে দিচ্ছে মোটা টাকায়। হে দেবাদিদেব, আপনি এর বিহিত করুন।


    ইউনিকর্ণ রাগে গজগজ করতে করতে চারুকে পাহারায় রেখে উড়ে যায় মেঘের রাজ্যের দিকে।



    দৃশ্য- ১০৯


    সমুদ্রতট। দিন।


    পাভেল আর টিঙ্কা এসে পৌঁছায় সমুদ্রের ধারে। চারুকে কাঁদতে দেখে পাভেল কারণ জিজ্ঞাসা করে। চারু জলের নিচে নির্দেশ করে বলে তার ঘর সংসার সব ড্রাগনেরা নষ্ট করে দিয়েছে।


    চারুকে অপেক্ষা করতে বলে দুইভাই ডুব দেয় জলের তলায়।



    দৃশ্য- ১১০


    জলের তলায় ঘুমন্ত রাজ্য। সময়- অবাস্তব।


    দুই ভাই গিয়ে পৌঁছায় ঘুমন্ত রাজ্যে। তারা অবাক হয়ে যায় নগর দেখে। সাধুর কথামত তারা ফিনিক্স পাখিটি খোঁজে। পাভেল উঠে যায় গাছে। পাখি কে এখাতে ধরে অন্য হাত দিয়ে গলায় ছুরি ঠেকায়। টিঙ্কা ঘণ্টা বাজাতেই সবাই নড়ে ওঠে। ফিনিক্স নড়তেই তার গলা দু-টুকরো হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।


    বিশাল ঘুম ভাঙ্গতেই টিঙ্কাকে আক্রমণ করে। 


    প্রভূত ধস্তাধস্তির পর পাভেল বিশালকে বেঁধে ফেলে।



    ফ্রিজ নগরীর সবাই ড্রাগন আকৃতি ধারণ করে ছটফট করতে করতে মারা যায়।



    দৃশ্য- ১১১


    পাহাড়তলী ড্রাগন রাজার ডেরা। দিন।



    গাছ থেকে দোলনাগুলি ছিঁড়ে ছিঁড়ে পড়ে। 


    ড্রাগনরা মৃত্যু চিৎকার করতে থাকে।


    তাদের গা ফেটে সবুজ রক্ত বেরোতে থাকে।



    দৃশ্য- ১১২


    ষড়ভূজাকৃতি ঘর। দিন।



    বৃদ্ধা মহারানীর উপরিভাগ গিরিগিটির সবুজ চামড়া ফেটে সবুজ রক্ত বেরোতে থাকে।


    তিনি ছটফট করতে করতে মারা যান।


    তার হাত থেকে ক্রিস্টাল গোলক গড়িয়ে পড়ে।



    দৃশ্য- ১১৩


    মেঘের রাজ্য। সময়- দিন



    ইউনিকর্ণ ও জিরো মারামারি করতে করতে ভেসে ড্রাগনদের মৃত্যুচিৎকার। 


    অবশিষ্ট সোনার স্ট্রাকাচার ভেঙে দুজনেই পড়ে যায়।



    দৃশ্য- ১১৪


    সমুদ্র । দিন।


    ভাঙ্গা স্ট্রাকচার – জিরো, ইউনিকর্ণ ও অন্যসব বিবিধ মাথাওয়ালা দেবতাদের নিয়ে প্রবল জোরে সমুদ্রে ঢুকে যায়।


    সমুদ্রতীরে দেখা যায় একটা বিশাল তিমি মৃত।


    দশজন বামন এসে সেটা মাথায় করে চলতে শুরু করে।



    দৃশ্য- ১১৫


    বিরাটগড় বাজার। দিন।


    তুমুল হর্ষধ্বনীর মধ্যে টিঙ্কা ও পাভেল ঘোড়ায় করে ফেরে সঙ্গে দুই পরমা সুন্দরী চারু ও জীজা। কোমরে দড়ি বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে আসা হয় পিতৃহন্তারক বিশালকে।


    লোকে তার গায়ে থুতু ছেটায়।


    সবাই তাদের পেছন পেছন চলে রাজবাড়ির দিকে।


    বাজারে ঘোষণা হয়। জনকোলাহলে তা শোনা যায় না।



    দৃশ্য- ১১৬


    রাজপ্রাসাদের সিংহদুয়ার। দিন।


    সবাই এসে পৌঁছায় রাজদ্বারে। সালমা ও রুমকি তাদের বরণ করে ভিতরে নেয়। বৃদ্ধা গণিকারা ছাদ থেকে ফুল ছেটায়। ভেরী বাজে। তোপধ্বনী হয়। জনতা শাঁখ বাজায়, উলু দেয়।


    বিশাল বাঁধা থাকে দরজার বাইরে।



    দৃশ্য- ১১৭


    রাজপ্রাসাদের সভাকক্ষ। দিন।


    হাজির প্রচুর মানুষ। সবাই প্রবেশ করে রাজপ্রাসাদের সভাকক্ষে। দেখা যায় মাঝখানে ফাঁকায় বসে একমনে বশ খেলছেন মহামন্ত্রী দেবশংকর ও পরমা সুন্দরী ন্যানা।


    রাজ্যাভিষেকের ঘোষণা হয়। 


    সুমো কুস্তিগিরের চেহারার রাজপণ্ডিত আসেন মানুষের কাঁধে চেপে। বিদুষক, গণৎকার অন্যান্য মন্ত্রী সবাই ফিরে এসেছে রাজ্যে।


    ন্যানার চোখাচোখি হয় চারু ও জীজার সঙ্গে। তিনজনেই হেসে ওঠে সবাইকে লুকিয়ে।


    ক্রমশ এই ভিড় থেকে দূরে চলে যান সীমান্তবাবা।


    দেখা যায় তিনি দরজার পর দরজা পার হয়ে বাইরে কাঁটাতারের সীমান্ত পার হয়ে হেঁটে চলেছেন দিগন্তের দিকে।


    অন্তিম স্ক্রোল উঠতে শুরু করে।


    -০-


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
    প্রথম টুকরো | দ্বিতীয় টুকরো
  • ইস্পেশাল | ১৫ এপ্রিল ২০১৪ | ৯৫৩ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • a x | 86.31.217.192 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৪:৩১87451
  • আমিও পড়ে ফেলেছি। রূপকথার মত করেই পড়লাম। ডিকোড করার চেষ্টা করিনি কোনো সচেতন ভাবেই। বেশ লাগল পড়তে। কিন্তু দৃশ্যায়নের চেষ্টা করতে গিয়ে খুব খাটতে হল - ক্যাওটিক লাগল।

    বেশ কিছু টাইপো আছে, ঠিক করে নেওয়া দরকার - সাহায্য, বর্শা, ইত্যাদি।
  • তাপস | 127.194.69.159 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৬:০১87449
  • একটা মানুষ ক্রমাগত পাথরের গায়ে মাথা ঠুকে চলেছে, আর পরিতাপ করছে - তাকে কেউ বুঝিয়ে বলার নেই যে 'বৃথা চেষ্টা তৃষ্ণা' ইত্যাদি ।

    সুমেরুর দীর্ঘ জীবন কামনা করা যাক ! বুঝুন বা না-ই বুঝুন, পড়ুন কিম্বা না-ই পড়ুন, ভালো লাগুক কিম্বা না-ই লাগুক, আস্তাবল পরিষ্কার করতে নেমেছে তো লোকটা! লেটস গিভ দ্য ডেভিল হিজ ডিউ ।
  • সুমেরু | 127.194.86.166 (*) | ১৭ এপ্রিল ২০১৪ ০৬:৪৯87450
  • যাক, কেউ পড়ে ফেলেছে। আর ভয় নেই। ফেসু সময়মত নামানো অন্যের টুসকিতে লাইক-ফাইক দেখে ভাবলাম, লেখাটা গেল ভেসে। সোনালীও দেখি সময়ের বাগানে। ফুল- ফল না ফুটলেও চলে যায়। যাক।
  • Biplob Rahman | 212.164.212.61 (*) | ১৮ এপ্রিল ২০১৪ ০৩:২৮87452
  • এই ভাবে পরিসমাপ্তি হবে তো, বেঙ্গমা? :O
  • সুমেরু | 127.194.85.27 (*) | ২২ এপ্রিল ২০১৪ ০৭:২৩87453
  • যারা পড়লেন তাদের ধন্যবাদ। দৃশ্যায়ন ক্যাওটিক কেন লাগল কে জানে, জ্ঞানত দৃশ্যগুলি খুবই পরিস্কার, হুড়োহুড়ি নেই, সিঙ্গল। ক্যাও তবে কোথায়, সময়ে? বিপ্লবদার কোয়েশ্চেনটি মারাত্মক, একটা ভাবনায়/ জীবনে/ চলনে পরিসমাপ্তি কেন চাইছেন? একটা সময়ের রাজ্যে/ দেশে/ স্পেসে সীমান্ত হেঁটে চলে লাফিয়ে উড়ে বেড়াচ্ছে, তাকে খুঁটিতে বাঁধার জন্য এই লেখা নয়।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন