মন্মথনগরে বাঁধ ভেঙেছে এক কিলোমিটার জুড়ে। জোড়াতালি দিয়ে বানানো বাঁধ। ভাঙার পর তার কঙ্কালসার চেহারা দেখলেই বোঝা যাচ্ছে মানুষের অসহায়ত্ব নিয়ে ছেলেখেলা করা হয়েছিলো। প্রায় ৬ হাজার বিঘে জমি জলমগ্ন। মানে নোনাজলের তলায়। ফসল নষ্ট হয়েছে, আগামী কয়েকবছর ফসল হবে না। গরু বাছুর মারা গেছে। পুকুর খালের মাছ মরে ভেসে উঠছে ব্যাপকহারে। আনুমানিক ৫০০ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। সংখ্যাটা আরো বেশি হতে পারে। নদীর ঠিক পাড়েই যাদের বাস তাদের সর্বস্ব গেছে। ... ...
ইদের শুভেচ্ছাসহ প্রকাশিত হলো আজকের বুলবুলভাজা - ছোট্গল্প, কবিতা, বড়গল্প, স্মৃতি, এই সময়ের কথা, এবং এক খন্ড ডিডির কিচাইন! ... ...
ঈদ বলতে বুঝি, কয়েকজনের বাড়িতে বচ্ছরকার নেমন্তন্ন। বিরিয়ানি, সেমাই, হালিম। ব্যস। আর রইল জাকারিয়া স্ট্রিট। আমাদের সেকুলারিজমের প্র্যাকটিক্যাল খাতা। ঈদ নিয়ে তাই আমার বলার কিছু নেই। করোনা, লকডাউন আর সাইক্লোনে লণ্ডভণ্ড হয়ে যাওয়া সময়ে তেমন করে ঈদ এলই বা আর কই! আমি বরং বলি কয়েকজন খুচরো মানুষের গল্প, যাঁদের আজ, এই ঈদের সন্ধেয় আচমকা মন পড়ছে, অকারণেই। একজন বর্ণহিন্দুর চোখ দূর থেকে দেখেছে যে 'অপর'দের, তাদেরই কয়েকজন। ... ...
চাঁদরাত কথাটা খুব মিষ্টি। মায়ের ভালোবাসার মতন মিষ্টি। আলতো করে চোখ বুজলাম। আমি আমাদের বর্ধমানের গোলাপি বাড়িটার ঠিক সামনে দাঁড়িয়ে। পুরো পাড়াটা সবুজ নীল টুনি বাল্বে মায়াময়। ক্লাবের সামনে প্যান্ডেল... সুভানসাহেবের বাড়ি সামনেও প্যান্ডেল। ছোটো ছোটো বাচ্চারা নতুন জামা পরে সেজে গুজে ঘুরে বেড়াচ্ছে। তাদের কাছে ছোট্ট টাকার ব্যাগ। তাতে আছে জমানো টাকা। কাল অনেকে ঈদ সালামি পাবে। ... ...
প্রদীপ হল (হ্যাঁ হল) আদি গঙ্গার পাড়ে। ফলতঃ প্রদীপের ছাদ ও ব্রিজের রাস্তা একই লেভেলে। রাস্তার ওপর টিকিট ঘর। টিকিট কেটে সিঁড়ি বেয়ে নীচে নামতে হতো। প্রদীপে টিকিট ছিলো ৫০ ও ৬৫ পঃ। ব্যালকনি নাই। কারণ থাকা সম্ভব নয়। থাকলে টিকিটের দাম হতো ১টাকা। ও কেউ কিনতো না। ১টাকা দিয়ে সিনেমা দেখার বিলাসিতা ঐ অঞ্চলে কারুর ছিলোনা। সামাজিক অবস্থান। কে পি রায় লেন, ইউ কে মন্ডল লেন সংলগ্ন অঞ্চল। কলকাতার বেশ পুরোনো লালবাতি এলাকা ও বাংলার ঠেক। একটি সরকারী গাঁজা-চরস-আফিমের আবগারী দোকানও ছিলো। সে সত্যযুগে সরকার এসবও বেচতেন। হাজার হলেও জনকল্যানমূলক রাষ্ট্র। ফলে প্রদীপে সিনেমা দেখতে যাওয়ার নিষিদ্ধ যাত্রা কদাপি বড়দের কানে গেলে কান কামস্কাটকায় চালান অবধারিত। ... ...
কিন্তু পত্রিকার একটা ইসে আছে না? মানে ক্যারেকটার। সেই বুঝে খুব উদাসীন ডিরেকশন থাকে। যেমন ধরুন লেখা আছে "এবারে প্যাঁজ দিন"। আপনি যদি প্রশ্ন করেন, আরে,পেঁয়াজ যে দেবো, কতোটা তো বলবেন? তার কোনো সদুত্তর মিলবে না। বড়জোর উত্তর পাবেন, "দিন না, দিন না। এক খাবলা দিয়ে দিন"।তবে এও ঠিক মাপ জোক দেওয়াও মুষ্কিলের। সারা বিশ্বজুরে পাঠককুল - এক মাপে সবাইকে বোঝাবেনই বা কী করে? যদি বলেন তিনটে পেঁয়াজ দিন - তো সেটা কলকেতার তিনটে বিমর্ষ মুড়ির মোয়া সাইজের হতে পারে আবার টেক্সাসের পাঠিকার কাছে থান ইঁট সম ইডাহোর রাক্ষুসে আলুও হতে পারে। ... ...
জীবনে এতো রহস্য কেন এটা নিয়ে আমি ভেবেছি। আমার এই লেখাগুলি হয়ত সেইসব রহস্য কিনারা করার এক চেষ্টা। আমি একসময় খুবই যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতাম। সেইসময়ে, বা তার কিছু পরে রফিকুন্নবীর সাথে আমার দেখা। এরপর থেকে রহস্য নিয়ে আমার ভাবনা চিন্তার অনেক বদল হয়েছে। রফিকুন্নবী বলেন, কী মিয়া এইসব কী কও! মিস্ট্রি থাকব না? তাইলে থাকলো কী! মিস্ট্রি ইজ দি ইন্ট্রিগ্রাল পার্ট, ইন্ট্রিগ্রাল বুঝো তো, মানেই হইল ধরো মূল একটা জিনিস, অব লাইফ। তাই মিস্ট্রি কখনো সলভ হয় না। আমি বললাম, সলভ হয় তো। অনেক হয়। শার্লক হোমসীয় কার্যকলাপ হয় তো। রফিকুন্নবী তখন বিরক্তির সাথে আমার কথা উড়িয়ে দেন। বলেন, ধুর মিয়া! মিস্ট্রি কখনো সলভ হয় না, একটা গেলে ঐ জায়গায় আরেকটা আসে। সলভ দিয়া মিস্ট্রি বিষয়ে ভাবা হইল একটা ফান্ডামেন্টাল মিসটেক। ভাববা রিপ্লেসমেন্ট দিয়া। মানে ঐ রহস্য সইরা কোনটা আসলো। ... ...
রহিমা খালা এক বাসাতে থেকে কাজ করার কথা বলল। ফুলবানু অনেক ভেবেচিন্তে রাজি হলো। খুব বড়োলোকের বাসা। থাকা-খাওয়া ওখানেই। মাসে বেতন পাঁচ হাজার টাকা। একসাথে এত টাকা ফুলবানু কল্পনাও করতে পারে না। তবে প্রথম মাসের বেতন থেকে দু’হাজার টাকা খালাকে দিতে হবে। সকাল থেকে রাত অবধি কাজ করতে হয়। সমস্যা বাধল রান্না করা নিয়ে। তার হাতের রান্না ও-বাড়ির কেউ মুখে তুলতে পারে না। পারবেই বা কেমন করে? সে কি বড়োলোকের খাওয়ার মতো রান্না করেছে কোনোদিন? নাকি খেয়েছে কোনোদিন? সমস্যা আরও আছে। এ বাড়িতে রান্না, তরকারি গরম করা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা সবই হয় মেশিনে। ওগুলোতে হাত দিতে বড়ো ভয় করে ফুলবানুর। সে রান্না করেছে ক্বচিৎ-কদাচিৎ। ইটের চুলা বানিয়ে ভাত আর সবজি রান্না করেছে বটে; তবে সেই রান্না কি এ বাড়ির মানুষ মুখে তুলতে পারে? খালাম্মা জানিয়ে দিলেন, এ মাস গেলে বেতন দিয়েই বিদায় করে দিবেন। ও-বাড়িতে একটাই ছেলে। ভার্সিটিতে পড়ে। বড়ো ছেলে বিয়ের পরে বউ নিয়ে এই ঢাকা শহরেই থাকে। বউ এর সাথে মায়ের বনিবনা না হওয়ায় বড়ো ছেলে পৃথক বাসা নিয়েছে। ... ...
পরদিন সকালে বাইসনের পাল এড়িয়ে ঘাসের ওপর হাঁটি, কয়েক মাইল যাবার পরে একটা বড় হ্রদ পড়ল, তার পাড় ধরে দক্ষিণদিকে আরো মাইল দশেক হাঁটলাম। অবশেষে একটা বড় খামার দেখা গেল। অন্তত তিন শ একরের খামার, সয়াবিন চাষ হচ্ছে। চাষ-জমির শেষে কিছু সারি দিয়ে দেবদারু গাছ। সেটা পার হয়ে খামার বাড়ির শস্য রাখার উঁচু সাইলো ঘর, গোলাঘর, শস্য নিয়ে কাজ করার কয়েকটা ট্র্যাক্টর ও কম্বাইন। পাশে একটা দোতলা কাঠের বাড়ি। সেই বাড়ির সামনে যখন আমরা দাঁড়িয়ে তখন সূর্য হেলে পড়েছে পশ্চিমে, আমাদের লম্বা ছায়া পড়ে বাড়ির দরজায়। আমরা ইতস্তত করি, এখানে জীবিত কি কেউ আছে? পৃথিবী নিস্তব্ধ হয়ে গেছে। এই বাড়ির ভেতর রয়েছে হয়ত মৃতদেহ। যে রোগে তারা মরেছে সেই রোগ কি ছোঁয়াচে নয়? আমরা একটা কাপড় মুখে বেঁধে নিই। হঠাৎ দুটো কুকুর দৌড়ে আসে, শেপার্ড, কিন্তু তারা ঘেউ ঘেউ করে না, দাঁত খিঁচায় না, লেজ নাড়ায়, এমন যেন এই খামার বাড়ির প্রতি তাদের কোনো দায়িত্ব নেই। ... ...
এরা দুই বোন এবার ঈদে কোন নতুন জামা নিবে না বলে দিল! ওরা দুই বোন ঈদে নতুন জামা নিবে না এই কথা ওদের মুখ থেকে না শুনলে হয়ত আমার জীবনেও বিশ্বাস হত না। কিন্তু আমি শুনলাম এবং বিশ্বাস করলাম। খুব আশ্চর্য হয়েও মনে হল এ কেমন ঈদ এসে হাজির হল? এমন হবে কেন? বাচ্চারা যদি ঈদের আনন্দ না করে তাহলে ঈদের আর থাকল কী? ঈদ এলে তো আর আকাশে ঈদ লেখা ভেসে উঠে না। এই বাচ্চারা যখন নতুন কাপড় পরে দল বেঁধে ঘুরে বেড়ায় তখন ঈদ লাগে, ধুপ করে সালাম করে সালামি চায় তখন ঈদ হয়, প্রতি বাড়িতেই খাওয়া দিবে, অত খাওয়া অসম্ভব জেনেও ওরা প্রতি বাড়িতেই যাবে এবং আর খেতে পারব না বলেও খাবে, খেয়ে বের হয়েই আর খাওয়া যাবে না, এখন যেখানে যাব সেখানে কিচ্ছু খাব না, শুধু দেখে করেই চলে আসব! ... ...
করোনার ক্রান্তিতে গত ২৬ মার্চ, স্বাধিনতা দিবস থেকে সারাদেশে গণছুটি ও গণপরিবহণ বন্ধ রেখে দফায় দফায় বাড়ানো হয় লকডাউন। সবশেষ ঈদের কেনাকাটার জন্য ১০ মে থেকে আংশিক লকডাউন শিথিল হলো। দোকান-পাট, মার্কেট ও শপিং মল সকাল আটটা থেকে বিকাল চারটা পর্যন্ত খোলা রাখার ঘোষণা এলো। সরকারের পক্ষ থেকে সবখানে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মানার নির্দেশনা দেওয়া হলেও বাস্তবে দেখা যায়, করোনাকে মোটেই কেয়ার করছে না বাঙালি। দোকান-মার্কেট-শপিং মলে ঘেঁসাঘেষি আর ঠেসাঠেসি করেই চলছে কেনাকাটা। গণপরিবহন বন্ধ থাকলেও বেরিয়ে এলো প্রচুর ব্যক্তিগত যান, সিএনজি চালিত অটো-রিকশা, অবৈধ ইঞ্জিন রিকশা, রিকশা, ভ্রাম্যমান হকার ও সাধারণ মানুষ। আইন-শৃংখলা বাহিনীও সরিয়ে নিলো তাদের টহল ও নজরদারি। ... ...
ইদের দিন খুব ভয় লাগত আমাদের । আবার সেই "তোদের আর তোরা কি যেন খাস....ওই যে...." এসব মনভাঙা কথা চলে আসত। সমষ্টিতে বাঁচতে চাওয়া দুই শিশু আবার একঘরে হয়ে যেত। হাসাহাসি হবে খাবার নিয়ে, উৎসব নিয়ে। বেজায় লজ্জিত হয়ে কুঁকড়ে বসে থাকতে হত দিন দুয়েক। মা খুব মনোযোগ দিয়ে পাড়ার কাকিমাদের সঙ্গে ভিড়তে চেষ্টা করত। তার জন্য সিঙ্গার কোম্পানীর টকটকে গুড়ো লাল রংটাই মাথায় দিত। মানে সিঁদুর দিলে জাত যাবে। আর লাল রং দিয়ে জাতে ওঠা যাবে। আসলে.... "ও আপনিও সিদুঁর পড়েন?" এই বাঁধ ভাঙা আবেগের মধ্যে এক মুসলমান মহিলাকে ভীষণ করে কাছে টেনে নেওয়া যায়! মায়ের সেই কাছে যাওয়ার টান ছিল। প্রয়োজনও ছিল। নিজের সন্তানদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়িয়ে তুলতেই মা সকলের মাঝে আমাদের মিলিয়ে দেওয়ার কথা ভেবেছিলেন। মুসলমান মায়ের সিঁদুর দেখে যদি তার ছেলে মেয়েদের খেলা নেয় সবাই,যদি তাদের ঘৃণা করে দূরে সরিয়ে না দেয় সেটাই তো আসল কথা। ... ...
... আমার পুরোনো নিমগাছ চুড়োয় দেখেছি তার বাঁধা আছে পুজোর মাইক হেমন্তবাতাসের ঝরা গানে তারা-ঝিকমিক চাঁদের বাড়িতে ফেরা পাখি ... ... ...
সত্যি বলতে, তিরিশদিন এমন না খেয়ে থাকলে নাকি গরীবের পেটের জ্বালার খানিক বোঝা যায়- এই যুক্তিখানার বাড়বাড়ন্ত, হালে, বেশ মনোরঞ্জনকারী। গুছিয়ে পরের ভোরের সেহেরির উপকরণের তোড়জোড় আর বিকেল থেকেই হরেক কিসিমের ফল-বাহারি নাস্তা সাজানো উপোসী বাড়ির মহিলাদের, ফুরসৎ নেই আপিস থেকে খানিক আগে ফিরে নামাজ-কোরান পাঠের পর আরামসে মিনিট তিরিশেক, আপনার মতন, গা এলিয়ে নেওয়ার। মশাই, বলুন তো, কোন গরীব মানুষ এমন বিলাসিতায় না খেয়ে থাকে?! ... ...
সরকারিভাবে বাড়ির সকলের টেস্ট হল যেহেতু আমরা সকলেই দাদুর সঙ্গে ছিলাম। রিপোর্টে জানা গেল আমাদের কারও কোভিড পজিটিভ (asymptomatic) , কারও নেগেটিভ, কারও 'inconclusive'..হেলথ ডিপার্টমেন্টের সঙ্গে কথা হল। আমরা CMOH এর পারমিশন নিয়ে সকলে হোম কোয়ারেন্টাইনে থাকার সিদ্ধান্ত নিলাম। তারপর থেকে যে কোনো প্রয়োজনে পাশে ছিলেন ডাক্তার বন্ধু, দাদা আরও অনেকে। এদিকে আমি ফেসবুকে প্রতিদিন সকলের সেরে ওঠার আপডেট দিতে থাকি। অনেকে তাতে আশ্বস্ত হন। ফেসবুক মারফৎ অনেক পরিচিত - অপরিচিতদের সন্ধান পাই যাঁরা আমাকে সাহায্য করতে থাকেন। খুব কঠিন ছিল দু বছরের বোনপোকে ঘরে আটকে রাখা বা দূরে সরিয়ে রাখা। ওকে আটকানোর জন্য ওর দিকে মোবাইল বাড়িয়ে দিতে হয়েছে। কঠিন ছিল দিদাকে সামলানো। Alzheimer's patient - তাঁকে শুতে বললে সেটা তিনি বুঝতে সময় নেন কমপক্ষে ১৫ মিনিট। কিছুই আর বুঝতে পারেন না। কাউকে চেনেন না। ... ...
আর কী-বা সেবা দিতে পারি ফ্রিতে, দুশমনের ঠাণ্ডাতম দিনে... একদিন ছন্দ মেলাতাম, একদিন অন্ত্যমিল দিতাম, একদিন প্রেম ভেঙে যাওয়ার ছমাস যেতে না যেতেই ছটফট করতাম নতুন প্রেমের জন্য, আর এখন হারপিকের ফাঁকা কৌটোর দিকে তাকিয়ে কাটিয়ে দিতে পারি সারাবসন্ত... আগের প্রজন্মের উন্মাদেরা সব কী করছেন এখন? নতুন বইটা তারা কি পড়লেন? কারুর হাতে কি জ্যান্ত হলো? কেঁপে উঠল কি কারও তালুর ওপর? কোথায় প্যাঁচাদের চিয়ার্স? আজ মাপবো হেমিস্ফিয়ারের জ্যামিতি-আকার-আয়তন... তার ব্যাপ্তি... একটা লোক অনর্গল হয়ে গ্যাছে বাংলাভাষার সাথে মিশে... এটা রোগ না নেশা না সিদ্ধি না অভিশাপ না চক্রান্ত না ভ্রান্তি না প্রতিভা না পরিশ্রম না নিউরোপ্রবাহ না প্রলাপ না পলায়ন না প্রারব্ধ না ট্রান্স না মোনোটনি...? ... ...
বায়ান্নোর রক্তস্নাত ফেব্রুয়ারী মাসের রাত। মায়ের গহন গভীর দুঃখী মুখে বেদনার অশ্রুজল। আনিসুজ্জামান ঘ্রান পেলেন বাংলার পলিমাটির। বর্ণমালা খচিত আলপথের ধারে পথ হারানো মা যেন চিরদিনের আকাশ, বাতাস, বাঁশি নিয়ে ভয়ার্ত, সন্ত্রস্ত। সারাজীবনের জন্যে বুকে গেঁথে ছিল দৃশ্যটি। পরবর্তী জীবনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যকে ঋদ্ধ করে তুলতে তার সমস্ত মেধা, শ্রম, চিন্তাকর্মকে সমিধ করে তুলেছিলেন বিপুল নিষ্ঠা, সন্মান ও ভক্তিতে। ... ...
এমন বিশাল প্রাজ্ঞ একজন মানুষকে নিয়ে কিছু লিখতে গেলে যে মাত্রার পড়াশোনা লাগে স্বীকার করতে দ্বিধা নেই আমার সেটা একেবারেই নেই। আত্মীয়তার সূত্রে তিনি পরিচিত হলেও তাঁর কর্মযজ্ঞের বিশাল পরিমণ্ডলের সাথে তেমন পরিচয় ঘটেনি বললেই চলে। তাঁর গবেষণা বাংলা ভাষা- সাহিত্যের ভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেছে, বাংলা ভাষার চেতনাকে তিনি তুলে ধরেছেন অনেক অগ্রগামী চিন্তা চেতনার মাধ্যমে। তাঁর সমসাময়িক অনেক অধ্যাপককে ছাড়িয়ে তিনি উঁচুতে উঠতে পেরেছিলেন যে একনিষ্ঠতার কারণে, সেই একনিষ্ঠ চিন্তাধারাই বাংলাদেশের সাহিত্যিক পরিমণ্ডলকে সমৃদ্ধ করে রেখেছিল এতকাল। তাঁর অভাব পূরণ হবার নয়। এ ছাড়া বাংলা সাহিত্যে অল্প কজন মুক্ত চিন্তার অধিকারী আছেন, তিনি তাঁদের অন্যতম। ... ...
এরকম এক সময়ে ফ্যাতাড়ুরা আর অন্তর্ঘাত ঘটাতে পারেনা। এরা নিজেরাই রাষ্ট্রের জন্ম দেওয়া অন্তর্ঘাতের অংশীদার হয়ে যায়। এর হিংসা আর শক্তি প্রদর্শনের extra-judiciary, extra-state হাতিয়ার হয়। এরা “নীলকণ্ঠ পাখির খোঁজে”-র সৌম্যকান্তি পাগল চরিত্রটির মতো দুর্বোধ্য “গ্যাৎচরেৎশালা” উচ্চারণ করেনা। এরা স্পষ্ট ভাষায় হিংসা-ঘৃণা-হিংস্রতা-পেশির ভাষা উচ্চারণ করে। ভাষার চিহ্ন এঁকে দেয় “অপরের” শরীরে। পার্টি এবং রাষ্ট্রের ভেদরেখা মুছে যেতে থাকে। আমাদের বোঝা রাজনীতির চেনা ছকে ঠিক এই গল্পগুলো তৈরি হচ্ছেনা। ঘটনাচক্রে এখানে আক্রান্ত হন বেচারা বিদ্যাসাগর। তিনি এই চলমান ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে পড়ে যান। ... ...
যথারীতি রঙ্কির পেট ব্যথা চাগাড় দিয়েছে। দৌড়ে গিয়ে টিনের দরজা বন্ধ করেছে, কিন্তু এমন পেট মোচড়ানো যে শেকল তুলে দিতে পারেনি। কিন্তু আমাশার যেমন হয়, মোচড়াবে, কিন্তু একবারে ক্লিয়ার হবেনা, রঙ্কি কোঁথ পেড়েই যাচ্ছে ,পেড়েই যাচ্ছে, পেট আর পরিষ্কার হয় না। শেষে সেই মাহেন্দ্রক্ষণ যখন এসে উপস্থিত হল,অমনি রঙ্কি গোল গোল চোখে দ্যাখে একজোড়া কালো হাত নিচের টিন কাত করে বড় গামলায় উবুড় করছে। ভয়ে রঙ্কি চিৎকার করতে যাবে। দ্যাখে ওপর দিকে মুখ করে হাসছে তিলোয়া, চুলে অব্দি হলুদ হলুদ কী সব, কিন্তু দাঁতগুলো সাদা ঝকঝকে। ... ...