এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  উপন্যাস

  • ওইখানে যেয়ো নাকো তুমি(রহস্য উপন্যাস)ঃ ৮ম পর্ব

    Ranjan Roy লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | উপন্যাস | ২৭ জুন ২০২২ | ১২৮১ বার পঠিত | রেটিং ৪ (২ জন)
  • দ্বিতীয় ভাগ
       ১
    বিক্রম
    কাল রাত থেকে অঝোরে বৃষ্টি হচ্ছে। মে মাসের মাত্র দশ তারিখ, ছত্তিশগড়ের বাকি এলাকায় এখনও গরম হাওয়ার লু’ বইছে। কিন্তু এখানে বস্তারের এই সুকমা জেলায় প্রি-মনসুন বৃষ্টি নেমেছে দু’দিন আগেই। হয়ত অন্ধ্রের দিকে একটি সাইক্লোনের প্রভাব।
    আমি সুকমা জেলা সদর ছেড়ে তিন কিলোমিটার দূরের মহাদেব ডোংরি গাঁয়ে রয়েছি । মনে হচ্ছে এই ডেরা থেকে বেরোতে আরও কটা দিন দেরি হবে।
    এখনও রোজ দুপুর বেলায় খাকি উর্দি পরা কুত্তারা এরিয়া ডোমিনেশনের প্রোগ্রামে বেরিয়ে পড়ে। ওদের কোবরা ব্যাটেলিয়নের মাথায় কালো ফেট্টি আর কালো জাংগল ইউনিফর্ম পরা সেপাইগুলো চলাফেরা করে নিঃশব্দে , বেড়ালের মত। স্টেট পুলিশের মত হুমহাম করে মাটিতে দপদপিয়ে পা ফেলে নয়।
    ওরা কোণ্ডাগাঁওয়ের অ্যান্টি-গেরিলাওয়ার ফেয়ার কলেজে ট্রেনিং পাওয়া। কিন্তু ওরা ডালে ডালে, তো আমরা পাতায় পাতায়।
    আর ক’টা দিন। টানা কয়েকদিন বৃষ্টি হলেই নদীনালা সব উপচে পড়বে। ইন্দ্রাবতী, শঙ্খিনী, ডংকিনী আর শবরী—সবার বানিভাসি জলে ডুবে যাবে রাস্তাঘাট, ছোটখাট পুল। বন্ধ হবে বাস, জীপ আর মোটরবাইকের আনাগোনা। গ্রামগুলোসব ছোটখাটো দ্বীপের চেহারা নেবে।  
    সরকারি বাহিনী এই সময় জলে ঘেরাবন্দী হয়ে আটকা পড়তে চায় না। এতদিনের অভিজ্ঞতায় বুঝে গেছে তাতে হাল হবে কলে আটকা পড়া ইঁদুরের মত। কোন সাহায্য এসে পৌঁছোতে পারবে না। হেলিকপটার নামার জায়গা নেই।
    তখন এই এলাকায় আমরাই সরকার। আমাদের লাল এলাকা তখন আয়তনে বেড়ে যায়, আবার শরতের শেষে ওরা এগিয়ে আসে আমরা গুটিয়ে যাই। যেন কাবাড্ডি খেলছি। ওদের দান চলতে থাকে গরমের শেষ অব্দি, বারবার ঢুকে পড়ে আমাদের কোটে, মারাত্মক হামলা করে। আমাদের দান শুরু হয় বর্ষা এলে।
    বুঝতে পারি--এই কবাড্ডি খেলার একটা নেশা আছে। টের পাই, ওই নেশা আমার মাথায় চড়েছে। নইলে কবে ফিরে গিয়ে ছত্তিশগড়ের কোন একটা জনপদে হাতুড়ে ডাক্তারখানা খুলতাম। মেডিকেল কলেজের চারবছরের বিদ্যের কিছু তলানি এখনও মাথায় রয়ে গিয়েছে, সবটা ভুলি নি।
    ব্যস,  গরীবদের জন্য নামমাত্র মূল্যে ওষুধ আর আকুপাংচার--ওটা কোলকাতায় ভালই শিখেছিলাম। সেন্ট্রাল কমিটির বিজয় দুটো জিনিসকে বিশ্বাস করে না।  হোমিওপ্যাথি আর আকুপাংচার।
    সাবুদানার মত ছোট ছোট গুলি খাইয়ে মানুষের রোগ সারানো আর ছুঁচ ফুটিয়ে ব্যথা কমানো! এসব হচ্ছে একধরণের আধুনিক ঝাড়ফুঁক, গরীব অশিক্ষিত মানুষকে উল্লু বানিয়ে লুঠে নেওয়ার ধান্দা। সবাই হেসে উঠল।
     আমি আমার কিট বের করে কমঃ রমাইয়াকে বললাম—আপনার হাঁটুর চাকতির ঠিক নীচে রয়েছে হোকু পয়েন্ট। আমি এবার তাতে দেড় মিলিমিটার ছুঁচ ঢোকাচ্ছি , দেখবেন আপনার হাতের বুড়ো আঙুলটা আপনার থেকেই নড়ে উঠবে।
     পরের রাত্তিরে বিজয় এল আমার তাঁবুতে। কিন্তু কিন্তু করে বলল—আমায় শেখাবে? আমি বিহারের দ্বারভাঙ্গা জেলার গাঁও থেকে এসেছি। ভাল হাসপাতাল নেই। ঝোলাছাপ হাতুড়ে আর বৈগা গুনিনদের অবাধ মৃগয়া। ওখানে যদি কয়েকজনকে শেখানো যায় কমরেড—
    তারপর ও হাতটা বাড়িয়ে দেয়।
    কাল রাত্তিরে ডেরার বাইরে পা ফেলেছিলাম। শবরী নদীর পাড়ে শিবমন্দিরের চাতালে তিনজনের মিটিং; আমি , অবুঝমাড় এলাকার কম্যান্ডার ভীমা এবং বীজাপুর রিজিয়নের গায়ত্রী মণ্ডাবী। আমরা নিরাপদ, কারণ মন্দিরের পুজারী কিস্টা গোড়ম খবর এনেছিলেন সুকমা ব্যাটালিয়নের  সামান্য কিছু সৈনিক হেড কোয়ার্টারে রয়েছে। বাকিরা মুখবীর মানে খোচরের কাছ থেকে খবর পেয়ে পনের কিলোমিটার উত্তরে বড় একটা অপারেশনে গেছে।
    আমি জানি, সারারাত ঘন বনের মধ্যে প্যাঁচার মত ঘুরে বেড়িয়ে ওদের হাতে আসবে কাঁচকলা। ফিরতে হবে মুখ চুন করে। কারণ, ওই খবরি আমাদের লোক। ডাবল এজেন্টের রোল করছে।
    এর দরকার ছিল। আমরা তিনজন তিন রিজিয়নের কম্যান্ডার এখানে এমার্জেন্সি বৈঠক করব, এ’সময় কোবরা ব্যাটালিয়ন আমাদের কাছাকাছি এলাকায় গন্ধ শুঁকে বেড়াবে—এ হতে দেওয়া যায় না।
    তবু আমরা অসতর্ক নই। এক কিলোমিটার রেডিয়াস থেকেই আমাদের ঘিরে ওয়াচ রয়েছে সাতজনের দল, ছড়িয়ে ছিটিয়ে। কোন সন্দেহজনক মুভমেন্ট দেখলেই সিগন্যাল দেবে—প্রথম লোকটির কোটরী হরিণের ডাক,  সেটা শোনামাত্র পরের জন ছাড়বে প্যাঁচার ডাক। তারপরের জন সোজা দৌড়ে আসবে এদিকে।
    অসতর্ক হওয়ার বড় মূল্য দিতে হচ্ছে আজকাল।
     ফেব্রুয়ারিতে মহারাষ্ট্রের গড়চিরৌলিতে  পুলিশের স্পেশাল কম্যান্ডো অপারেশনে আমাদের ২৬ জন মারা গেছে। আসলে গুলি চলায় মরেছে মাত্র ১৫ জন, বাকিদের হাত-পা বেঁধে হাঁটু গেড়ে বসিয়ে মাথার পেছনে গুলি করা হয়েছে। আর আমি জানি যে ওদের মধ্যে ১১ জন নিরীহ গ্রামবাসী। ওদের অপরাধ আমাদের আগের দিন রাত্তিরে শেলটার দিয়েছিল, খাবার দিয়েছিল। ১৫ কিলোমিটার দূরের পুলিশ আউটপোস্টে গিয়ে খবর দেয় নি।
     কিন্তু তা’বলে ওই নিরস্ত্র লোকগুলোকে এভাবে মেরে ফেলতে হবে? ওদের মধ্যে ৬ জন মেয়ে; আমাদের জন্যে রান্না করেছিল। যে কেউ খবরটা পড়বে সেই বুঝবে যে আসলে কী হয়েছিল। এমন ভয়ংকর গোলাগুলি চলল, কয়েক ঘন্টা ধরে এমন যুদ্ধ হল যে ২৬ জন মারা পড়ল কিন্তু কম্যান্ডোদের কেউ নয়!  
          এই সাজানো এনকাউন্টার নিয়ে জনতার প্রতিবাদে ফেটে পড়া উচিৎ ছিল। কিন্তু কিছুই তো হল না। কারও রাত্তিরের ঘুম নষ্ট হল না। অথচ সেবার দিল্লিতে তেঁতুল বারে মদ পরিবেশন নিয়ে বচসা থেকে  গুলিতে একটি মেয়ের মৃত্যু হল। সে নিয়ে কী আলোড়ন! খবরের কাগজ, টিভি কেউ বাদ যায় নি। তারপর নতুন প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা মোমবাতি নিয়ে পথে নামল। 
    কিন্তু  গড়চিরৌলির জঙ্গলে আধা ডজন গেঁয়ো আদিবাসী মেয়েকে শিকার করলে কারও কিছু আসে যায় না। বুঝতে পারছি, সব মৃত্যু সমান নয়। ডেডবডিরও ক্লাস আইডেন্টিটি আছে। আর একটা ব্যাপার। আমাদের আন্দোলনের জনসমর্থনে বোধহয় ভাটার টান । এটা নিয়ে ঠিক ভাবতে চাইনে।
         এত ভাবার কী আছে? এটা তো জলের মত সহজ। অমন সুন্দরী লেডি ডায়নার বীভৎস মৃত্যুতে আমি কতটুকু বিচলিত হয়েছিলাম? ডায়নারা  আমার কাছের লোক নয়; আমার তো নয়ই।
        কিন্তু দু’জনের মৃত্যু আমাকে নাড়িয়ে দিয়ে গেছে। গড়চিরৌলির   কমঃ শ্যামলী ডোঙ্গরে আমার পার্টনার ছিল।
        শ্যামলী নাগপুর ইউনিভার্সিটির মেয়ে। অরুন্ধতী গ্যান্ডীর রিক্রুট। অল্পদিনেই ভাল নাম হল। ওর পরিচয় রেড আর্মির ক্র্যাক শুটার হিসেবে নয়, বরং দক্ষ সংগঠক হিসেবে।   নতুন এলাকায় সংগঠন গড়তে ওকে  পাঠিয়ে ভরসা করা যেত। গাঁয়ের মেয়েদের মধ্যে সেল বানানোয় ওর জবাব নেই। পার্টিতে ও নাম নিল কমঃ পিওলি। এটি নাগপুরের কাছে একটি নদীর নাম। ওর ছোটবেলা কেটেছে পিওলির পাড়ে একটি গ্রামে।
        এ’বছর জানুয়ারি মাসে আমাদের বিয়ে হল। বিয়ে শব্দটায় আমার আপত্তি আছে। আমরা বর বউ নই। আমি কারও স্বামী নই, স্বামী মানে তো প্রভু। আমরা দু’জন কমরেড, সহযোদ্ধা। তবু একসাথে থাকতে হলে এক বিছানা শেয়ার করতে হলে পার্টির অনুমতি দরকার। দেখতে হবে আমাদের নতুন জীবন যেন লড়াইয়ের পথে বাধা না হয়ে দাঁড়ায়।
        আর যৌনতার ব্যাপারে অনেক বুর্জোয়া প্রেজুডিস না মানলেও আমরা ছেলেমেয়েরা আলাদা তাঁবুর নীচে শুই। এ’ব্যাপারে কোন শিথিলতা বরদাস্ত করা হয় না। কমরেড মাওয়ের রেড বুকে গণফৌজের সৈনিকদের জন্যে যে আটটি নির্দেশ রয়েছে তার অন্যতম হল – মেয়েদের দুর্বলতার সুযোগ নেবে না।
       কয়েক দশকের অভিজ্ঞতায় এটা স্পষ্ট যে নারীকে কেন্দ্র করে রেষারেষিতে আমাদের সংগঠন নষ্ট হতে পারে, এমনকি কালকের কমরেড আজ পুলিশের মুখবির হয়ে যেতে পারে।
       মালা বদল, পুরুত এসবের প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু কয়েকজন  মেয়ে কমরেড  বুনো ফুল দিয়ে দুটো স্তবক বানিয়েছিল। আমরা দু’জন সেদুটো অদলবদল করলাম। আর রেডবুক হা তে নিয়ে বিপ্লব এবং পরস্পরের প্রতি বিশ্বস্ত থাকার শপথ নিলাম। সেদিন দণ্ডকারণ্য ডিভিশনের কম্যান্ডারের আসার কথা ছিল। কিন্তু তিনি কিছু লজিস্টিক প্রবলেমের কারণে আসতে পারেননি। তাতে আমার খারাপ লাগেনি। কারণ ওঁর কিছু কিছু জিনিস আমার নাপসন্দ। উনি কথায় কথায় বড্ড কোটেশন আওড়ান আর সব ব্যাপারে শেষ কথা বলার দম্ভ! খানিকটা যেন আন্তরিকতা কম, ভড়ং বেশি । আর ছত্তিশগড়ের তুলনায় অন্ধ্রের কমরেডদের দিকে একটু যেন ঝুঁকে থাকেন।
       আমরা সবাই গণসংগীত গাইলাম। সত্তরের অমর শহীদ কমঃ সুব্বারাও পাণিগ্রাহীর তেলুগু ভাষার সেই গানঃ ‘কমুনিস্ত লমবিমবু কস্তজীবলম্‌,
    আওনান্না আদান্না আদে ইস্তলম’।
     কম্যুনিস্ট আমরা, আমরা কম্যুনিস্ট,খেটে খায় যারা তাদেরই আমরা,
    আমরা কম্যুনিস্ট!
    কিন্তু রাত্তিরে আমাদের ছোট তাঁবুর নীচে সাদাসিধে বিছানায় মোবাইলের টর্চ নিবিয়ে দেওয়ার পর শ্যামলী আমার কানের কাছে গুনগুনিয়ে শোনাল একটি পুরনো বলিউডি গানঃ তেরি মেরি শাদী সিধিসাদি পণ্ডিত না শেহনাই রে!
    আমার কিন্তু ওই পরিবেশে একটুও বেখাপ্পা লাগেনি, যদিও ফিল্মিগান গাওয়াকে আমরা একটুও আশকারা দিই না।
    পরের দিন ভোরে কমঃ পিউলি আমাকে ঠেলে তুলে দিল। রাত সাড়ে তিনটে। আধঘন্টার মধ্যে আমাকে বেরিয়ে পড়তে হবে। মহারাষ্ট্রের চন্দ্রপুরে আমাদের সংগঠন দুর্বল। ওটা আমাদের সাপ্লাই লাইন। কাজেই ওখানে অ্যাকশন এড়িয়ে যাই।  শুধু স্লীপার সেল তৈরি করি।
    পথ দেখিয়ে নেওয়ার জন্য গাইড এবং দু’জন বডিগার্ড রেডি হয়ে আছে। সূর্য ওঠার আগে হেঁটে পেরোতে হবে প্রাণহিতা নদী। তারপর মোটরসাইকেল, ফের বাস। কিন্তু আমার প্রোগ্রাম শেষ হতে একমাস। তারমধ্যে কয়েকবার পেরোতে হবে ইরাই ও বেণগঙ্গা নদী। আসলে আমার ঘাড়ে চেপেছে গোদাবরী বেসিনের বিশাল এলাকায় সংগঠনকে ছড়িয়ে দেওয়ার দায়িত্ব।
    না, এ’কাজে কমরেড পিউলি আমার সঙ্গী হতে পারে না। আমি এ’ব্যাপারে শেষ নির্ণয়ের ভার কমিটির উপর ছেড়ে দিয়েছিলাম । কিন্তু আমরা দু’জন এই প্রস্তাবে ভোট দিতে পারব না। কারণ, আমরা ইন্টারেস্টেড পার্টি।  এ নিয়ে আমার কিছু বলার নেই। শুধু পিউলি জড়িয়ে ধরে বলেছিল –কাজ সেরে ফিরে এসো, আমি অপেক্ষায় থাকব।
    এরকম অনেকবার আমি ঘাঁটি এরিয়া থেকে বেরিয়ে অপারেশনে গেছি এবং ফিরে এসেছি। দু’বার সামান্য আহত হয়েছিলাম, একবার হাতে গুলি লেগেছিল। ফিল্ড হাসপাতালে সময়মত সার্জারি হওয়ায় গুলি বেরিয়ে গেছল, সেপটিক হয়নি। নইলে হাতটাই কেটে বাদ দিতে হত।
    কিন্তু আমরা দুজনেই জানি—ফিরে আসার কোন গ্যারান্টি নেই। আমাদের ঘনিষ্ঠ অনেকে ফিরে আসতে পারেনি।
    তারপর একটি মাস কীভাবে  যেন কেটে গেল! শহরে গেলে বেস এরিয়ার কারও সঙ্গে মোবাইলে কথা বলা নিষিদ্ধ, সিকিউরিটি রীজন। ফলে ওর সঙ্গে কথা হয়েছে কালেভদ্রে।  ও নিজেও ব্যস্ত, গড়চিরৌলি জেলায় আদিবাসী মহিলাদের মধ্যে প্রকাশ্য গণসংগঠন গড়ার কাজে।
    ও মেয়েদের নানান পরামর্শ দেয়-- স্বাস্থ্য নিয়ে অক্ষর পরিচয় নিয়ে,  এমনকি স্বামী গায়ে হাত তুললে তার থেকে বাঁচার উপায় নিয়ে।
    ফেব্রুয়ারির দ্বিতীয় সপ্তাহ। আমার কাজ গোছানো হয়ে গেছে। এবার ফেরার পালা।
     
    চন্দ্রপুর শহর থেকে কিছু নিরোধের প্যাকেট কিনেছি, অন্য কমরেডদের এড়িয়ে গিয়ে। বাসে বসে ভাবছিলাম যদি এক শতাব্দী আগে কন্ট্রাসেপ্টিভের আবিষ্কার হত, তাহলে কি লং মার্চের সময় চেয়ারম্যান মাওয়ের দ্বিতীয় পত্নীর অতগুলো সন্তান হত? না হলে ওনার সুখ দুঃখের সাথী ওই মহিলার স্বাস্থ্যও ভেঙে পড়ত না। আর হয়ত --- হয়ত মাও ওনাকে ছেড়ে ওই বয়সে অপেরা অভিনেত্রীকে-- ল্যাং পিঙ নাকি চিয়াও চিংকে-- বিয়ে করতেন না।
    প্রাণহিতা নদী অব্দি পৌঁছুতে রাত্তির হয়ে গেল।
    অসুবিধে নেই, বরং রাতের অন্ধকারে নদী পেরিয়ে ঘাঁটি এলাকায় ঢোকা অনেক নিরাপদ। তবে এই সময় নদীর এ’পারে আমার জন্যে দু’জনের অপেক্ষা করার কথা। রাস্তা আমার চেনা। কিন্তু আমি রিজিওনাল কম্যান্ডার। পাশাপাশি তিনটে রাজ্যে আমার মাথার দাম ঘোষণা করা হয়েছে। পার্টির কড়া নিষেধ, কম সে কম দু’জন গার্ড এবং স্কাউট ছাড়া একা একা অ্যাডভেঞ্চার করা চলবে না।
    এখান থেকে হাঁটতে শুরু করলে কিছু ক্ষেত আর জঙ্গল পেরিয়ে সেন্টারে পৌঁছুতে মেরে কেটে দু’ঘন্টা। মাঝরাত্তিরে শ্যামলীকে চমকে দেয়া যাবে। কিন্তু কুঞ্জাম আর ঘাটগে কেন আসেনি?
    মনটা কু’ডাক ডাকছে। কিছু একটা হয়েছে।
    একটা গাছের ছায়ায় উপুড় হয়ে শুয়ে পড়ি। কৃষ্ণপক্ষের রাত , এভাবে শুয়ে পৃথিবীকে সমান্তরাল এক্স- অ্যাক্সিস ভাবলে  অন্ধকারেও গাছ ও মানুষের ছায়ার তফাৎ তারার ক্ষীণ আলোয় অনেক দূর হতে স্পষ্ট বোঝা যায়।
    কোথাও গুলি চলছে কি? নাঃ শুধু কিছু কুকুরের কান্না।
    আধঘন্টা কেটেছে। এবার কিছু নড়াচড়া দেখতে পাচ্ছি। আমার অবস্থান থেকে মাত্র পঞ্চাশ গজ দূরে কেউ ছপ ছপ করে নদী পেরোচ্ছে। বোঝা যাচ্ছে স্থানীয় লোক। কারণ ও সোজাসুজি না পেরিয়ে সাবধানে  সরে সরে পা ফেলছে। ওর জানা আছে কোথায় এক হাঁটু জল। কোথায় মাত্র গোড়ালি ডুববে।
    সতর্ক হই। আমার কোমরের কষিতে গোঁজা একটি পিস্তল। পুরনো ধরনের, কিন্তু বেশ পয়া। কয়েকবার আমার  জান বাঁচিয়েছে। ধ্যেৎ, এসব কী ভাবছি!
    ছায়াটা নদী পেরিয়ে থমকে দাঁড়িয়েছে। তারপর দু’পা এগিয়ে একটা গাছের নীচে এসে হাত দিয়ে হাওয়া আড়াল করে বিড়ি ধরিয়ে নিবিয়ে ফেলল। আবার ধরিয়ে ফের নেবাল। আরে, এটা তো আমাদের কোড। এসে গেছে আমার লোক।
    আমি সতর্কতা ভুলে দ্রুত এগিয়ে বলি—কমঃ কুঞ্জাম, এত দেরি? ঘাটগে এল না?
    কুঞ্জাম কোন কথা না বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে। তারপর থরথর করে কাঁপতে থাকে। কোন কথা বলে না।
    কোথা থেকে একটা ভুতুড়ে ঠান্ডা হাওয়া বইছে। কুকুরের কান্না আরও চড়া গ্রামে।
    আমি ওর দু’কাঁধ ধরে ঝাঁকাতে থাকি।
    ওর হেঁচকি সামলে কথা বলা শুরু হতে খানিকক্ষণ সময় চলে যায়। আমি অধৈর্য হয়ে পড়ি।
    --পালাও কমরেড, যে দিকে দু’চোখ যায় পালাও। চন্দ্রপুরে যেও না। অন্য কোন ছোট শহর বা গ্রামে, নইলে সোজা মুম্বাইয়ের ভীড়ে। গড়চিরৌলি ডিভিশনাল কমিটি শেষ। ওরা হন্যে হয়ে তোমাকে খুঁজছিল। বরাতজোরে বেঁচেছ। আমি ছাড়া আরও দু’জন ওদের ঘেরা থেকে গলে বেরোতে পেরেছে।
    আমার মাথা যেন যন্ত্রণায় চৌচির হয়ে যাবে। বুকের ধুকধুকি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। কোনরকমে বলি-মেয়েরা? কমঃ পিউলি?
    --কেউ বেঁচে নেই। ওরা – ওরা অনেক বেশি যন্ত্রণা পেয়ে মরেছে। গড়চিরৌলি ঘাঁটি শেষ। পালাও। এখনই এই গাঁ ছেড়ে জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে সরে যাও। তুমি আমি আলাদা। জানিনা আর দেখা হবে কিনা। এখন আমি তোমাকে বিশ্বাস করি না। তুমিও আমাকে কোর না, তবেই আমরা বাঁচব।
    তারপর দেখা যাবে।
    ওর চলে যাবার আগে যা জানতে পেরেছিলাম—আমাদের ভেতর থেকে কেউ পুলিশ হেডকোয়ার্টারে গিয়ে খবর দিয়েছিল। সেও বেশ ক’দিন আগে। কোবরা ব্যাটালিয়নের কম্যান্ডারের হাতে কাগজে আঁকা ম্যাপ ছিল। ওরা আজ ভোর চারটে নাগাদ অপারেশন শুরু করে। কোথায় কোথায় আমাদের রাতপাহারার  স্কাউটেরা পজিশন নিয়েছে সব ওদের জানা। ফলে ওদের নিউট্রালাইজ করতে কুত্তাদের বেশি বেগ পেতে হয় নি। আমাদের প্রতিরোধ দু’ঘন্টার মধ্যে শেষ। বিশাল বাহিনী  আঁটঘাট বেঁধে এলাকা ঘিরে ফেলেছিল। তারপর গ্রেনেড এবং মর্টার দিয়ে আক্রমণ শুরু করে। ওরা ঠিক আমাদের মত বুকে হেঁটে এগোচ্ছিল।
    আর ভোরের দিকে একটু ঝিমুনি আসে। 
    *******************************************************************

    অন্য যে মৃত্যুটি আমাকে বিচলিত করেছে সেটা একেবারে অদ্ভুত।  
    শ্যামলীর কথা আলাদা। ও তো কমঃ পিউলিও বটে। আমরা যেকোন সময় মরতে পারি জেনেই এই খেলায় নেমেছি। ওর জায়গায় আমিও হতে পারতাম। চন্দ্রপুরে ধরা পড়লেও আমাকে এখানে এনে এনকাউন্টার করে দিত, ঠিক কমঃ  চেরকুরি রাজকুমারের মত। বা আমি সেদিন ঘাঁটিতে থাকলে দুজনেই শেষ হয়ে যেতাম। এই যে নেই হয়ে যাওয়া এটা আর আমাকে অবাক করে না।
    ঠাকুমার গলার কীর্তনের লাইন মনে পড়ে—‘যেন পদ্মপত্রে জল, জীবন চঞ্চল’।
    কিন্তু পারমিন্দর বলে পাঞ্জাবী মেয়েটির কথা আলাদা। ও তো মরবে বলে তৈরি ছিল না। ওর রক্তে রয়েছে অ্যাডভেঞ্চার।  পঙ্গা নিতে ভালবাসত।
    বিলাসপুরের রেল এলাকায় পোর্টার খোলি বা কুলিদের পাড়ায় এক রাত্তির কাটানোর প্ল্যানটা ওরই ছিল। মার্চের সেই রাত্তিরে আমরা অরপা নদী পেরোতে পারিনি। পুলিশের ঘেরাবন্দী বড্ড আঁটোসাঁটো। ওদের কাছে পাকা খবর ছিল যে আমি নদী পেরিয়ে কোরবা রায়গড় ঝারখণ্ড সিংভুমের রাস্তায় সাঁওতাল পরগণায় পৌঁছে যাব।
    খবরটা একটু ভুল ছিল। আমি সেদিন নয়, তার একদিন আগেই বিলাসপুর পৌঁছে গেছলাম। ছিলাম কমঃ সোনালীর ফ্ল্যাটে।  ওর মা জানতেন আমি ওদের ইউনিয়নের সর্বভারতীয় নেতা। একরাত্তির কাটিয়ে পরের দিন অন্য রাজ্যে চলে যাব।
     সেদিন কর্ডন ব্রেক করতে না পারায় ফিরে আসতে হল। কিন্তু সোনালীর বাবা ফিরে এসেছেন, কাজেই অন্য শেল্টারের ব্যবস্থা করতে হবে। তখন পারমিন্দর ব্যবস্থা করল পোর্টার খোলির বা রেলের কুলি ধাওড়ার  মনবোধি গাড়া’র এক কামরার কোয়ার্টারে রাত কাটানোর। সে রাত্তিরে মনবোধি আর তার বউ বারান্দায় ঘেরা জায়গাটায় দুটো ছোট বাচ্চা নিয়ে শুল।
    আমি আর ঘুমুতে পারি নি। সারারাত ভেতরের ঘরে বসে লোকেশ আর পারমিন্দরের সঙ্গে বৈঠক—কী করে কর্ডন ভাঙা যায়! শেষে ওই উদ্ভট দুঃসাহসী প্ল্যান পারমিন্দরের মাথা থেকেই বেরোল। হাতগাড়ি আর পুরনো নীল ইউনিফর্ম মনবোধি দেবে। ও রেলের কুলি এবং জমাদার। পুরনো হাতগাড়ি কোথায় একসঙ্গে রাখা আছে সেসব ওর জানা আছে।
    এটা নিয়ে কী হবে?
    পুলিশের সঙ্গে চু-কিত -কিত খেলা হবে। পুলিশকে বোকা বানানো যাবে। মনবোধি এটুকুতেই খুশি। দেশি চোলাই এবং কিছু মারপিট এসবের চক্করে পুলিশের সঙ্গে পঙ্গা ওর জন্য খুব নতুন কিছু নয়।
    আমি তবু কিন্তু কিন্তু করছিলাম। বলছিলাম এটা খুব রিস্কি হচ্ছে। যদি ধরা পড়ি? যদি কেউ টের পায় ভেতরে লাশের বদলে জ্যান্ত মানুষ?
    আমার আশংকাকে হেসে উড়িয়ে দিল পারমিন্দর।
    --কী যে বলেন কমরেড ! ধরা পড়লে আমি পড়ব, আপনি কেন পড়বেন? আপনি হলেন রেলের খালাসি, ওদের কেউ ব্যক্তিগত ভাবে চেনে না, শুধু ক্লাস দিয়ে চেনে। চতুর্থ বর্গকে রেলওয়ে কর্মচারী। আর এই রঙচটা নেভি ব্লু গোছের হাফপ্যান্ট হাফশার্টেই আপনার শ্রেণী পরিচয়।
    আচ্ছা, চেস্টারটনের ‘অ্যান ইনভিজিবল ম্যান’ গল্পটা পড়েন নি? অদৃশ্য মানুষ? কীভাবে সবার কড়া পাহারার মাঝখানে একজন এসে খুন করে উধাও হয়ে যায় , কেউ ওর আসা যাওয়া দেখতে পায় না! আসলে খুনী এসেছিল পোস্টম্যান সেজে যাকে কেউ ‘ব্যক্তিমানুষ’  ভাবে না, ইউনিফর্ম দেখে চেনে। আপনিও খালাসী, ব্যস।
    আমার মন তবুও খুঁতখুঁত করে। পারমিন্দর ধরা পড়লে কী হবে? ওকে এগিয়ে দিয়ে নিজের জান বাঁচাব?
    পারমিন্দর আমায় আশ্বস্ত করে। বলে ওর প্ল্যান বি রেডি আছে। ধরা পড়লে হেসে বলবে এটা আগামী গরমে বিলাসপুরের রাস্তায় রাস্তায় নুক্কড় নাটকের প্রস্তুতি। নাটকের নাম ‘জিন্দা লাশ’।
    ওর পরিচালনায় প্রত্যেকবার এপ্রিল -মে মাসে বিলাসপুরে নুক্কড় নাটক বা পথনাটিকার ফেস্টিভ্যাল হয়। এ’ব্যাপারে  গোটা শহরে পারমিন্দরের সুনাম আছে। কাজেই এটা একটা নাটকের পাবলিসিটি স্টান্ট ছাড়া আর কিছু মনে হবে না কারও।
    আর ঠিক তাই হল। বিকেলবেলা আমরা লিংক রোড ধরে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। কেউ কেউ টাকা দিয়ে মৃতদেহের উদ্দেশে নমস্কার করছিল। বেশির ভাগ লোকই রেলে কাটা পড়া  মড়া শুনে সরে পড়ছিল।
    কিন্তু সামনে পড়ল গ্রেট গোয়েন্দা কোসলে। আগের দিন রাতে প্রাইভেট গাড়িতে টহলদারি করছিল। আগেই খবর ছিল। কিস্টাইয়াই দিয়েছিল। পেট্রোল  দেবার অজুহাতে ওদের গাড়ির নম্বর এবং গাড়িতে বসা কোসলের থোবড়া দেখে ওই কনফার্ম করল।
    মাথা ঠাণ্ডা রেখেছিলাম।
    তারপরে সারকণ্ডা শ্মশানঘাটের কাছে গিয়ে নির্জন মাঠের কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে চটের ঢাকা সরাই। বেরিয়ে এল ডাকাবুকো মেয়েটা। ঘামে জবজবে মুখ, জামাকাপড়ের অবস্থাও তাই। ওই ঠেলাগাড়ি থেকে বেরোতে পারছিল না। পা ধরে গেছে।
    হাত ধরে টেনে তুললাম।
    ও দাঁড়িয়ে উঠে এদিক ওদিক তাকাল। হাত-পা নাড়াল, জামাকাপড়ের ধূলো ঝাড়ল।  তারপর আমাকে খুব জোরে আঁকড়ে ধরল।
    --কমরেড, আমরা পেরেছি।
    অন্ধকার ঘনিয়ে এসেছে। ভাগ্যিস কেউ দেখেনি।  তাড়াতাড়ি ছাড়িয়ে নিয়ে ওকে বলি আগে আগে পথ দেখাতে, এদিকটায় আমি কিছুই চিনি না। আমি একটু দূরত্ব রেখে ওকে অনুসরণ করি। এই খালাসীর পোশাকটা বদলানো দরকার, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব।
    কিন্তু কিস্টাইয়ার মৃত্যু নিয়ে আমার কোন আফশোস ছিল না।
     
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ধারাবাহিক | ২৭ জুন ২০২২ | ১২৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • স্বাতী রায় | ২৭ জুন ২০২২ ২০:১৪509451
  • এক্কেবারে খোদ  সোনালির বাড়িতেই গিয়ে উঠেছিল! এটা ভাবি নি। ভেবেছিলাম ওই ফ্ল্যাটেই আছে কোথাও,আর সেটা দেখে ফেলাতেই কবিকে মরতে হল এটাই ভাবছিলাম। জমাটি হচ্ছে। 
  • বিপ্লব রহমান | ৩০ জুন ২০২২ ০৭:০২509504
  • "গড়চিরৌলির জঙ্গলে আধা ডজন গেঁয়ো আদিবাসী মেয়েকে শিকার করলে কারও কিছু আসে যায় না। বুঝতে পারছি, সব মৃত্যু সমান নয়। ডেডবডিরও ক্লাস আইডেন্টিটি আছে।" 
     
    প্রেক্ষাপট ভিন্ন, তবু যেন ভিন্ন নয়, এপারেও এমন সহজ শিকার চলছে, তবু সমাজ চেতে না! 
     
    থ্রিলার জমজমাট yes
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। দ্বিধা না করে প্রতিক্রিয়া দিন