এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ধারাবাহিক  বিবিধ

  • পুরানো সেই দিনের কথা - "হত্যাকারী কে?"

    ক্যাপ্টেন হ্যাডক লেখকের গ্রাহক হোন
    ধারাবাহিক | বিবিধ | ১৭ নভেম্বর ২০২০ | ২৪৮১ বার পঠিত
  • (১, ২) | (৩) | পর্ব ৪ | পর্ব ৫

    রহস্যকাহিনীতে গোয়েন্দা যখন খুনের কিনারা করতে তদন্ত শুরু করে, তখন তার প্রথম কাজগুলোর মধ্যে পড়ে ভালো করে ক্রাইম সীন খতিয়ে দেখা। কারণ, খুনী যেই হোক না কেন, সে তার পরিচয়ের চিহ্ন কোনো না কোনো ভাবে এই অকুস্থলে ফেলে গেছে, কিছু না কিছু ইশারা তার শত সাবধানতা সত্ত্বেও তাকে ধরিয়ে দেবার জন্য ক্রাইম সীনে রয়ে গেছে। গোয়েন্দার কাজ এই চিহ্নকে চিনে বার করা, এবং তারপরে সেই সূত্র ধরে আসামী অবধি পৌঁছনো। কিন্তু এই যে আসামীর ফেলে-যাওয়া-চিহ্ন, এ জিনিস অনেকসময় এত সূক্ষ্ম এবং ক্ষণজীবী হয় যে গোয়েন্দার চোখে পড়ার আগেই তা মিলিয়ে যাওয়ার ভয় থাকে। সামান্যতম নাড়াচাড়া, নিতান্ত পলকা উনিশ-বিশের দরুণ সাংঘাতিক জরুরী ক্লু বরাবরের মতো নষ্ট হয়ে যায়। 'আ স্টাডি ইন স্কার্লেট'-এ ঠিক এই জন্য পুলিশকে হোমসের কাছে ধমক খেতে হয়েছিল। এসবের গোলমালের ভয়ে ঝানু গোয়েন্দারা তাদের অ্যানালিসিসের আগে অবধি কাউকে ক্রাইম সীনের চৌহদ্দি মাড়াতে দেয় না, পুরো জায়গা কর্ডন-অফ করে দেওয়া হয়। উদ্দেশ্য: ঘটনাস্থলকে যথাসম্ভব টাটকা রাখা। 


    কিন্তু মানুষকে আটকানো গেলেও প্রকৃতিকে তো আর রুখে রাখা যায় না। তাই গোয়েন্দাকে তৎপর হতে হয় যাতে দেরী না হয়ে যায়, রোদ-জল-ধুলো-বাতাসের ঝাপটায় কোনোরকম এদিক-ওদিক হওয়ার আগেই তাকে প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ সেরে ফেলতে হবে। সময় এখানে একটা মস্ত বড় ফ্যাকটর। গতরাতের বৃষ্টির দাগ আজ সকালের বৃষ্টিতে দেখতে দেখতে ধুয়ে যাবে, মাটিতে ঝরে পড়া ছাইয়ের গুঁড়ো বাতাসের ধাক্কায় ধুলোর সাথে ধুলো হয়ে মিশে যাবে। পায়ের ছাপ আর পাওয়া যাবে না, বারুদের গন্ধ মিলিয়ে যেতে যেতে একসময় নেই হয়ে যাবে। ডেটা যোগাড় শুরু করতে যত দেরী হবে, রহস্যের কিনারা করা সত্যসন্ধানীর পক্ষে তত কঠিন হয়ে দাঁড়াবে।


    দু'দিনের দেরীতে থমকে যায় আমাদের আন্দাজ, তিলমাত্র উপদ্রবে গোলমাল হয়ে যায় রহস্যভেদীর তদন্তের সুতো। তাই, আজ থেকে দুশো বাহান্ন মিলিয়ন বছর আগে পৃথিবীর বুকে যে মরণঝড় বয়ে গিয়েছিল, তার কিনারা করা যে কত কঠিন তা আমাদের ধারণাতেও আসে না।


    কিন্তু পার্মিয়ানকে বিদায় জানিয়ে মেসোজয়িকের দেউড়ি পেরোবার আগে এই ঘটনার মুখোমুখি আমাদের দাঁড়াতেই হবে। কারণ তা না হলে মেসোজয়িকের গোড়ার কথা পাড়াই অসম্ভব হয়ে যায়।


    আমাদের সিনেমায়-গল্পে সবচেয়ে বিখ্যাত যে এক্সটিংশন ইভেন্ট, সেই ডাইনোসর-লোপ-পাওয়ার ঘটনা ঘটেছিল আজ থেকে পঁয়ষট্টি মিলিয়ন বছর আগে, জুরাসিক পার্ক-এর ট্যাগলাইনে স্পিলবার্গ লিখেছিলেন - 'অ্যান অ্যাডভেঞ্চার সিক্সটিভাইভ মিলিয়ন ইয়ারস ইন দ্য মেকিং'। এই ডাইনো-এক্সটিংশনের নাম K-T extinction, পৃথিবীর ৬৫% প্রাণী এর ফলে বিলুপ্ত হয়ে যায়। কিন্তু সে তো উপসংহারের কথা। সেই রক্ত-সন্ধ্যা আসতে এখনো ১৮৬ মিলিয়ন বছর দেরী। আমরা এখন দাঁড়িয়ে আছি ডাইনোসরদের কাহিনীর উপক্রমণিকায়, যা লেখা হয়েছিল মেসোজয়িক পর্বের আরম্ভে, প্যালিওজয়িক পর্বের শেষে। এই প্যালিওজয়িকের মধ্যে ছ'টা পর্যায়; আমরা রয়েছি ছ' নম্বর পর্যায়ে - পার্মিয়ানে। আর পার্মিয়ান পৃথিবীর সংসারে হঠাৎই এসে যতি টেনে দিচ্ছে যে অভিশাপ, তার নাম 'দ্য গ্রেট পার্মিয়ান এক্সটিংশন'। জীববিজ্ঞানীরা চলতি ভাষায় বলেন 'দ্য গ্রেট ডাইং', বায়োজিওলজিক্যাল টাইম স্কেলের গায়ে নাম লেখা থাকে 'Permian-Triassic extinction', সংক্ষেপে 'P-T extinction'। প্যালিওজয়িক আর মেসোজয়িকের মাঝখানে সীমারেখা হয়ে থেকে গেছে এই মহাবিলুপ্তির অধ্যায়। পার্মিয়ানের সাইনাপসিড-শাসিত পৃথিবীতে গাছ-পালা-পশু-পোকা মিলিয়ে যতরকম প্রাণী ছিল, পার্মিয়ান এক্সটিংশনের ধাক্কায় তার ৯০% নিঃশেষ হয়ে যায়। হাজার-হাজার নতুন ফুটে ওঠা সম্ভাবনা, লক্ষ লক্ষ নতুন জাতের জীব, যারা বেঁচে গেলে পরবর্তী ইতিহাসের চেহারা সম্পূর্ণ অন্যরকম হত, - তারা সবাই যেন উপন্যাসের মাঝখানে এসে নিষ্ঠুর, অপ্রত্যাশিত আঁচড়ে এক লহমায় বাতিল হয়ে গেল। 


    কিন্তু এই ভয়ঙ্কর পরিণতি এল কী করে? উত্তর খোঁজার আগে দু'একটা প্রাসঙ্গিক আলোচনা করে নেওয়া যাক।


    জীবাশ্মবিদরা যখন পুরোনো দিনের প্রাণীদের সম্বন্ধে খোঁজ করেন, তখন তাঁদের একটা প্রধান অবলম্বন হয় ফসিল। ফসিল বলতে মরে-যাওয়া-প্রাণীর পাথর-হয়ে-যাওয়া দেহাবশেষ। ফসিলে সবকিছু পাওয়া যায় এমন নয়। কোন্ ধরনের ফসিল কী ভাবে প্রাচীন প্রাণের জানান দিচ্ছে, তার ভিত্তিতে তাদের কয়েকটা ভাগে ভাগ করা হয়েছে। 


     কেউ মারা যাবার পর চাপা পড়েছে, তারপরে ধীরে ধীরে বিশ্লিষ্ট হয়ে মাটিতে মিশে গেছে, কিন্তু ততদিনে তার মৃতদেহের চারধারে ঘিরে ওঠা মাটির খোলস জমে শক্ত হয়ে গেছে, আর তা সহজে ভাঙবে না, ফাঁপা ছাঁচের মতো গলে যাওয়া প্রাণীশরীরের আদলটুকু বুকে নিয়ে সে টিকে যাবে কোটি কোটি বছর। এই ধরনের 'ছাঁচ' ফসিলকে নাম দেওয়া হয়েছে mold fossil। এতে আসল প্রাণীর চেহারাটা পাওয়া যায় না, পাওয়া যায় তার 'নেগেটিভ ইমেজ', উল্টো অবয়ব। এই ছাঁচই আবার কোনো কোনো সময় অন্য খনিজ 'পুর' দিয়ে ভরাট হয়ে যায়, লক্ষ বছর ধরে জমে কঠিন ওঠে। সেই ফসিল যখন আমরা পাই তখন দেখি প্রাণীর চেহারা অবিকল ধরা আছে, কিন্তু মূর্তিটা যে পদার্থে তৈরী সেটার সাথে আসল প্রাণীদেহের কোনো যোগ নেই। প্রথমে ছাঁচ তৈরী হয়েছে, তার পরে সেই ফাঁকা ছাঁচে ঢেলে তৈরী হয়েছে সেই প্রাণীর হুবহু প্রতিমা। এই 'প্রতিমা' ফসিলের নাম cast fossil। 


    কখনো বা নিশানা মেলে আরও ঘুরপথে। পথ দিয়ে হেঁটে চলে যাওয়া প্রাণীর পায়ের ছাপ শুকিয়ে জমে ফসিল হয়ে থেকে যায়, সেই ফসিলে পায়ের মালিকের পরিচয় ধরা পড়ে। শুধু পায়ের ছাপ নয় - বাসা বাঁধার গর্ত, হজমে সুবিধে হওয়ার জন্য পেটে-চালান-করা নুড়ি, এমনকী পাথর হয়ে যাওয়া মলও পাওয়া যায়। এধরনের প্রস্তরীভূত মলের পোষাকী নাম coprolite। প্রাণীর অবয়ব সম্পর্কে খুব বিশেষ কিছু জানা না গেলেও এই ধরনের ফসিল থেকে জীবাশ্মবিদরা তার স্বভাব সম্পর্কে অনুমান করতে পারেন। এই ধরনের 'ফেলে-যাওয়া-নিশানা' থেকে যে ফসিল পাই, তার নাম trace fossil।


    আর যেখানে আসল প্রাণীদেহ নিজেই পাথর হয়ে রয়ে গেছে তার জীবনকাহিনীর সাক্ষী দিতে, সেখানে আমরা তাকে বলি true form fossil, বা body fossil। জাদুঘরে আমরা যে ডাইনোসরের কঙ্কাল দেখি, তা এই বডি ফসিল। আবাল্য পরিচিত আমাদের পড়শী ফসিল যে কয়লা, সেও এই বডি ফসিল, গাছের শরীরের কার্বনটুকু রয়ে গিয়ে তার জন্ম। 


    ইউরোপে ব্ল্যাক ট্রায়্যাঙ্গল নামে একটা পাহাড়ী অঞ্চল আছে। তার একদিকে জার্মানী, একদিকে পোল্যান্ড, আর একদিকে চেক রিপাবলিক সীমান্ত। পার্মিয়ানের শেষে কী হয়েছিল, সেই খোঁজে জীবাশ্মবিদ হেঙ্ক ভিশার এই অঞ্চলে হানা দিলেন, কারণ ব্ল্যাক ট্রায়্যাঙ্গলে ফসিলের প্রাচুর্য অগাধ।


    বন অবশ্য আর নেই। আশির দশকে ব্ল্যাক ট্রায়্যাঙ্গল তার নামই পেয়েছিল এই অঞ্চলের ভয়ঙ্কর দূষিত জলহাওয়ার দরুণ। আশেপাশের অজস্র কলকারখানার চিমনির ধোঁয়ায় মেশা সালফার ডাইঅক্সাইড আর অন্যান্য বিষের বাষ্পে অ্যাসিড বৃষ্টি নেমে বনভূমি প্রায় ঝলসে গেছে। এই মরা বনের মাঝে হেঙ্ক তাঁর টীম নিয়ে খুঁজে দেখতে চাইছেন আড়াইশো মিলিয়ন বছর আগেকার বনের ফসিলচিহ্ন। এমন কয়েকটা জায়গা তাঁরা বেছে নিয়েছেন, যেখানে পৃথিবীর জীবনে এক পর্ব থেকে আরেক পর্ব বয়ে চলার গতি পাথরের গায়ে স্পষ্ট হয়ে ফুটে আছে। সেখানে তাঁরা হাতুড়ি দিয়ে টুকরো টুকরো পাথর ভেঙে তুলছেন, প্রতিটি টুকরো ছোট ছোট আণুবীক্ষণিক ফসিলে ঠাসা। এর মধ্যে হেঙ্কদের বিশেষ লক্ষ্য যার দিকে, তা হল প্রস্তরীভূত পরাগরেণু।


    বসন্তের মাঝামাঝি যখন আকাশের নীল আর মেঘের সাদা মিলে ঘুম-ভাঙা প্রকৃতিকে হঠাৎ করেই যেন আর চেনা যায় না, আর ফ্যাকাশে দাঁড়ানো গাছের ডালে ঠিক সময়ে কোথা থেকে সবুজ পাতার কুঁড়ি এসে জোটে, তখন হাওয়া-লাগা পাইনবনের ভেতর দিয়ে দুপুর বেলা হেঁটে গেলে মাঝে মাঝে এক অপূর্ব দৃশ্যের সাক্ষী হতে হয়। পাইনের ডালে ডালে ফুটে থাকে cone, আর প্রকৃতির নিজস্ব বসন্তোৎসবে সামিল হয়ে সেই কোন থেকে থেকে বাতাসের ঝাপটায় মুঠো মুঠো হলুদ আবীর উড়িয়ে দেয়। পাইনবনের ধারে দাঁড়িয়ে পড়া মানুষ সেই ধুলো দেখে অবাক হয়, বনের হাওয়ায় আবীর এসে জামায় মিহি হয়ে ছড়িয়ে পড়ে। কেন বসন্তকালে গাছপালার এই আজব খামখেয়ালিপনা, কীসের এই অদ্ভুত উৎসব? - এই উড়ে-পড়া আবীর আসলে অপুষ্পক পাইন গাছের পরাগকণা, আর এই 'কোন' তাদের বাতাসের গায়ে রেণু-ঝরানোর আয়োজন। পাইনের ফুল নেই, কোনই তাদের পরাগকে মোচন করে চারিদিকে ছড়িয়ে দেয়, তাই বাংলায় তাদের নাম হয়েছে 'মোচক'। 


    পার্মিয়ান অরণ্যে যারা সেদিন মাথা তুলে দাঁড়িয়ে ছিল, সেই আদিম মহাদ্রুমেরা সবাই ছিল অপুষ্পক গাছের দল। সাইকাড, গিংকগো, বীজওয়ালা ফার্ন গাছ pteridosperm, প্রাথমিক দশার কনিফার - যাদের উত্তরসূরী আজকের পাইন, - এরা সবাই ছিল সেই দলে। সেই প্রাগৈতিহাসিক বসন্তে তারাও আকাশে পরাগ উড়িয়ে দিত, গাছে গাছে ছড়িয়ে পড়ত সেই রেণু, পুরুষ কোনের পরাগে স্ত্রী কোনের গর্ভাধান হত, জন্ম নিত নতুন শিশুবৃক্ষ। কিন্তু, স্বাভাবিক নিয়মেই, বীজ ফুঁড়ে যতগুলো গাছ জন্মায়, তার চেয়ে অনেক বেশী বীজ গাছকে ফলিয়ে তুলতে হয়, তা নইলে পরের প্রজন্মের অস্তিত্বের নিরাপত্তা থাকে না; এবং সেইরকমই যতগুলো ফলের ভিতর গাছ তার বীজকে ফলিয়ে তোলে, তার তুলনায় অনেক অনেক বেশী পরাগরেণু তাকে ফুলে ফুলে ফুটিয়ে রাখতে হয়। সুতরাং গাছ যদি একটা পাওয়া যায়, পরাগরেণু মিলবে লক্ষাধিক। তাছাড়া পূর্ণাঙ্গ গাছের শরীর বেশ জটিল জিনিস, তা অবিকৃতভাবে টিকে যাওয়া বেশ শক্ত; সে তুলনায় কণা-আকারের পরাগ রয়ে যায় সহজে। তাই, খোঁজার সময়ে বড় কিছুর আশায় থাকার পাশাপাশি ছোটো ফসিল-পরাগের দিকে নজর রেখে যেতে হয়।


    'খন্ডহর বতাতেঁ হ্যায়, ইমারৎ বুলন্দ থী।' ভগ্নাবশেষে জানান পাওয়া যায়, অট্টালিকা প্রাসাদোপম ছিল। হেঙ্করা দেখলেন, পার্মিয়ান-মেসোজয়িক সীমানার আগে অবধি যত ফসিল, তাতে বেশ ভালো সংখ্যায় পরাগরেণুর হদিস মিলছে। অর্থাৎ সুস্থ-সবল প্রাণময় অরণ্যভূমির ইঙ্গিত স্পষ্ট। কিন্তু পার্মিয়ান সীমান্তে এসে পরাগের সংখ্যা কমে প্রায় শূন্যে দাঁড়াতে চাইছে। তাকে হটিয়ে দিয়ে তার জায়গায় প্রবল হয়ে দেখা দিচ্ছে অন্য এক চরিত্র: ফাঙ্গাস, বাংলায় যার চলতি নাম ছত্রাক। একটা একমুঠো সাইজের পাথরে ফাঙ্গাসের চিহ্নাবশেষ পাওয়া যাচ্ছে প্রায় দশ লক্ষ। পরাগ প্রায় নেই।


    পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে পার্মিয়ান পাথর নিয়ে হেঙ্করা খতিয়ে দেখেছেন, প্রতিবারেই এই এক ছবি উঠে এসেছে। ফাঙ্গাসদের মধ্যে এক অদ্ভুত 'জনবিস্ফোরণ', বইয়ের ভাষায় 'ফাঙ্গাল স্পাইক'। কোথা থেকে আসছে এত ফাঙ্গাস? হেঙ্কের ধারণা, এটা একধরনের কাঠ-পচানো ছত্রাক, যা বনে মরা গাছের গায়ে জন্মায়। সারা গ্রহ জুড়ে এই ফাঙ্গাসের এই রকম বংশবৃদ্ধির কারণ তাহলে একটাই হতে পারে। 


     কোনো অদ্ভুত ভয়াবহ কারণে হাজার হাজার প্রজাতির গাছ দলে দলে মৃত্যুবরণ করেছে। এমনভাবে তারা মরেছে যে তার দাগ এখনো অবধি পাথরের গায়ে থেকে গেছে, পঁচিশ কোটি বছরের পুরোনো ক্রাইম সীন এখনো সূত্র যুগিয়ে যাচ্ছে। এভাবে মরেছে তারা একদিনে নয়, হাজার হাজার বছর ধরে। মহামারী নয়, কোনো অসুখ নয়। এভাবে জাতিপ্রজাতি নির্বিশেষে কোনো অসুখ কখনো প্রভাব ছড়ায় না। এর পেছনে অন্য কোনো ভীষণ প্রাণঘাতী বিপর্যয় কাজ করেছে। একদিন নয়, হাজার হাজার বছর ধরে।


    কী ভাবে এ ঘটনা ঘটল, তা নিয়ে নিশ্চিত উত্তর এখনো পাওয়া যায়নি। কিন্তু তদন্ত চলছে, এবং তাতে কয়েকটা সম্ভাব্য দিক আমাদের হাতে উঠে আসছে। 


    সাইবেরিয়ার পশ্চিমদিকে প্রায় ছাব্বিশ লক্ষ বর্গকিলোমিটার জুড়ে আগ্নেয়শিলার এক বিশাল বিস্তার পাওয়া যায়। এর নাম সাইবেরিয়ান ট্র্যাপস। আমাদের দেশের পশ্চিমঘাট পর্বতে যে ডেকান ট্র্যাপস দেখতে পাওয়া যায়, সাইবেরিয়ান ট্র্যাপস তারই অগ্রজ। 'ট্র্যাপস' কথাটা আদতে সুইডিশ শব্দ 'trappa', অর্থ 'সিঁড়ি'। এইধরনের ট্র্যাপের আরেকটা নাম আছে, ফ্লাড ব্যাসল্ট। 'ফ্লাড', কেননা এই ধরনের আগ্নেয়শিলা আক্ষরিক অর্থেই লাভার বন্যা থেকে তৈরী হয়। বিরাট মাপের অগ্নুৎপাতের সময় পৃথিবীর গভীর থেকে ভলকে ভলকে লাভা বেরিয়ে আসে, ভূত্বকের ফাটল ছাপিয়ে চারদিকে বয়ে যায়। যেতে যেতে লাভার স্রোত জুড়িয়ে গিয়ে কঠিন হয়ে আসতে থাকে, ঢেউয়ের ওপর ঢেউ চাপ বেঁধে থাকে-থাক পাথর হয়ে জমে যায়। সিঁড়ির সাথে এই জমাট-পাথরের আকৃতির মিল, তাই এর নাম 'ট্র্যাপস'। দাক্ষিণাত্যের পাহাড়ের গায়ে পাথরের এই সিঁড়ির মতো ধাপ ধাপ গড়ন স্পষ্ট দেখতে পাওয়া যায়। 


    সাইবেরিয়ান ট্র্যাপসের উদ্ভবের পেছনে কতবড় অগ্নুৎপাতের ভূমিকা আছে, তা তার আকারেই পরিষ্কার। এখন এই অঞ্চল পাইনবনে ঢাকা পড়ে গেছে, কিন্তু আদতে এই জমাট লাভাস্তর প্রায় চার কিলোমিটার পুরু। সম্পূর্ণ আয়তন যতটা দাঁড়ায় তাতে সারা পৃথিবীটাকে কুড়ি ফুট গভীর লাভা দিয়ে মুড়ে ফেলা যায়। ভূবিজ্ঞানীরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, এই ট্র্যাপসের বয়স ঠিক পঁচিশ কোটি বছর। পার্মিয়ানের শেষে এসে কি তাহলে এই লাভার বন্যাতেই সব পুড়ে মরল?


    ঠিক তা নয়। লাভা তো আর সারা পৃথিবী জুড়ে ছড়ায়নি, তাতে সবার সেরকম পরিণতি হবার কথা নয়। কিন্তু আগ্নেয়গিরি ফেটে পড়ার প্রভাব শুধু আগুনেই সীমাবদ্ধ থাকে না। মেঘের মতো ঘন হয়ে ছাই আর গন্ধকের ধোঁয়া আকাশে ছাপিয়ে ওঠে। সালফেট যৌগে বাতাস ঝাঁঝালো হয়ে উঠে সূর্য ঢাকা পড়ে যায়, অ্যাসিড রেন নামে। সাইবেরিয়ার অগ্ন্যুৎপাতে এই প্রভাব এত বিশাল আকারে দেখা দেবার কথা, যে দীর্ঘদিন সূর্যের কিরণ না পেয়ে সারা পৃথিবীর বুকে হিমযুগ নেমে আসবে। বরফ-জমার হার বেড়ে গিয়ে জলভাগ কমে আসবে সমুদ্রে, সী লেভেল পড়তে থাকবে হু হু করে। তার ফলে মুক্তি পাবে সমুদ্রের জলে মিশে থাকা মিথেন গ্যাস, আর আগুন-পোড়া কার্বন-ডাই-অক্সাইডের সাথে মিশে তা পৃথিবীকে গ্রীনহাউস দশার দিকে ঠেলে দেবে। ব্যাপারটা এত বিভিন্ন দিক থেকে ভয়ঙ্কর যে কল্পনা করা কঠিন। ১৭৮৩ খ্রীষ্টাব্দে যখন আইসল্যান্ডে লাকি আগ্নেয়গিরি জেগে উঠেছিল, তখন তার চোটে এক বছরের মধ্যে পৃথিবীর তাপমান দুই ডিগ্রী নেমে আসে। হাজার হাজার শতাব্দী ধরে প্রতি বছর একটা করে এরকম বিস্ফোরণ হলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়?


    এতদূত অবধি এসে যদি মনে হয় যে এতক্ষণে 'গ্রেট ডাইং'-এর জন্য দায়ী প্রথম সন্দেহভাজনের নাম শর্টলিস্ট করা গেল, তাহলে এবার তার পরের প্রশ্ন হবে, - কেন? কোথা থেকে কীভাবে হল এই অগ্নুৎপাত?


    উত্তর যা পাওয়া যাচ্ছে তা যেমন একদিকে আশ্চর্য, তেমন আরেকদিকে ঢোঁক-গেলানো ভয়ের। সেটা বুঝতে গেলে প্রথমে আমাদের দেখতে হবে আমাদের এই গ্রহটা আসলে ঠিক কেমন।


    পৃথিবী যে চিরকাল কঠিন ছিল না, সে যে শৈশবদশায় একটা ঘুরন্ত, তরল আগুনের ভাঁটা, সে কথা আমরা মোটামুটি জানি। বয়সের সাথে সাথে সে যত জুড়োতে লাগল, ততই তার গায়ের ওপরকার আস্তরণ জমে শক্ত হয়ে এল। যেমন আঁচ থেকে দুধের কড়াই নামানোর পর আস্তে আস্তে তার ওপরে সর জমে। 


    কিন্তু দুধের কড়াইয়ের সাথে তুলনাটা ঠিক মেলে না। হাজার হোক, আধুনিকতার প্রসাদে পৃথিবীটা এখন 'ফ্ল্যাট আর্থ' নেই, পৃথিবীর আকৃতি গোল। দুধের কড়াইকে তাই আমরা একটু বদলে নেব, যাতে আমাদের হিসেব মেলে।


    চন্দ্রলোক অভিযানের সময় সেই ক্যাপ্টেন হ্যাডকের হুইস্কি গ্লাস থেকে পালিয়ে বল হয়ে গেছিল মনে আছে? রকেটের ভেতর কৃত্রিম অভিকর্ষ অফ হয়ে যাওয়ার জন্য সেইসব উৎকট ফ্যাসাদ হয়েছিল। কারণ মাটির (বা রকেট-মেঝের) অভিকর্ষ না থাকলে তো তরলকে কেউ আর তলার দিকে টেনে ধরে থাকে না, সে তার নিজস্ব অভিকর্ষের টানে নিজেই নিজেতে গুটিয়ে যায়, গুটিয়ে বল হয়ে যেতে চায়। আমাদের গরম দুধের কড়াইকে সেই গ্র্যাভিটি-অফ-করা রকেটের মধ্যে নিয়ে যাওয়া যাক, দুধটুকু কড়াই ছেড়ে শূন্যে ভেসে উঠুক।


    এতক্ষণে বল-বল চেহারা এসেছে। এবারে যেই দুধ জুড়াবে, অমনি তার সারা গায়ে চাদরের মতো গোল হয়ে সর জমতে আরম্ভ করবে। এই আমাদের পৃথিবী।


    এবারে একটা পুরোনো কথা ঝালিয়ে নেওয়া যাক। পৃথিবীর পুরো মাধ্যাকর্ষণটা আমাদের সবাইকে টানছে তার নিজের দিকে, নিজের দিকে বলতে তার কেন্দ্রের দিকে। শুধু আমাদের সবাইকে নয়, পৃথিবী নিজেকেও নিজের কেন্দ্রের দিকে টান দিয়ে রেখেছে। শিশু পৃথিবী যখন গরম ও তরল, তখনও এই মূল নিয়মের কোনো ব্যত্যয় হয়নি, আর তার ফলে তার মধ্যেকার যত উপাদান, সেগুলো সবই তাদের ভরের ভিত্তিতে স্তরে স্তরে ভাগ হয়ে যেতে চেয়েছে। এক গ্লাস জলে মাটি গুললে খানিকক্ষণ পরে সেই মাটি গ্লাসের তলায় থিতিয়ে পড়ে। মাটি থিতিয়ে পড়ছে কারণ মাটির কণা জলের তুলনায় ভারী, তাকে মাধ্যাকর্ষণ টানে বেশী। আর তলায় থিতিয়ে পড়ছে কারণ মাধ্যাকর্ষণের টান আসছে পৃথিবীর কেন্দ্র থেকে, গ্লাসের সাপেক্ষে সেটাই তলা। আমাদের দুধের-বল পৃথিবীর ক্ষেত্রে তলা বলতে কিছু নেই, তার কেন্দ্রটাই তার একমাত্র 'তলা', সেই বিন্দুটুকুর দিকেই তার সমস্ত থিতিয়ে পড়া। তাই তরল পৃথিবীর সবচাইতে ভারী উপাদানগুলো গিয়ে জমা হয়েছিল তার একেবারে মধ্যিখানে। এরা সবাই ভারী ধাতুর বর্গভুক্ত, ভূগোল বইয়ে তাদের কথা লেখা থাকে। এই কেন্দ্রীয় core অংশের বাইরে রইল মধ্যবর্তী mantle, আর তার বাইরে আমাদের এই 'সর', - crust। 


    কিন্তু ওপরের সরটুকু জমে গেলেও ভেতরের অংশ তো জমেনি? সেখানে এখনও তরলের মধ্যে দিয়ে অবিরাম স্রোত বইছে, ঠেলাঠেলি চলছে। এর সাথে ক্লাস ফোরে আমরা পরিচয় করেছিলাম কিশলয়ে 'গরম জলে ও গরম হাওয়ার স্রোত' পড়তে গিয়ে। গরম জিনিস সবসময় চায় ওপরের দিকে ভেসে উঠতে, আর সেই চলনের ঠেলায় ঠাণ্ডা জিনিস তলার দিকে ডুব মারে। চায়ের কেটলিতে চা-পাতার নড়াচড়া দেখলে পরিষ্কার বোঝা যায় এই স্রোত। কেটলির তলা থেকে জল ফুটে উঠে ওপর দিকে উঠে আসছে, ওপরের ভাগের অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা জল চলে যাচ্ছে নীচে; আবার তলায় গিয়ে আগুনের আঁচে যেই তা গরম হচ্ছে, ততক্ষণে ঠান্ডা হয়ে আসা ওপরের জলকে নীচে ঠেলে তা আবার উঠে আসছে ওপরে। এই গরম স্রোত জলেও দেখা যায়, বাতাসেও। আসলে যেকোনো ফ্লুইড পদার্থেই এ জিনিস ঘটে।


    পৃথিবীর গভীরের ম্যাগমাও তরল, তাই তার মধ্যেও যদি কোনো ধরনের স্রোত দেখা যায়, তাতে আশ্চর্যের কিছুই নেই।


    একদল বিজ্ঞানী বলেন, সাইবেরিয়ান ট্র্যাপসের পেছনে যে বিশেষ ধরনের ম্যাগমাস্রোতের ভূমিকা আছে, তার নাম mantle plume। ব্যাপারটা শুনতে নতুন লাগলেও আমাদের কাছে মূল বিষয়টা বেশ পরিচিত। শান্ত ঠাকুরঘরে ধূপকাঠির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে এ ব্যাপারটা আমরা অনেকেই দেখেছি। যখন বাতাসে কোন তরঙ্গ থাকে না, চতুর্দিক স্তব্ধ, চুপচাপ, তখন ধূপের ধোঁয়া ঠিক একটা সরল আস্বচ্ছ কলামের মতো হয়ে সোজা ওপরের দিকে উঠে যায়। উঠে যায় ফুটদেড়েক, কি তার সামান্য বেশী। তারপরে সেই ধোঁয়ার কলামের মাথায় একটা গোল ছাতার মতো তৈরী হয়, মাথার অংশটুকু গোল হয়ে মুড়ে কলামের বাইরের দিকের গায়ে পাকিয়ে যেতে চায়। পাকিয়ে গিয়ে একটা ধোঁয়ার রিং তৈরী হয়, সেটা তলার কলাম মারফত আরও আরও ধোঁয়া পেতে পেতে বড় হয়ে ছড়িয়ে পড়তে থাকে। কয়েকটা মুহূর্তের ব্যাপার, তার মধ্যেই পুরো রিংটা গলে গিয়ে বাতাসে মিশে যায়। এই অদ্ভুত ব্যাপারটা পদার্থবিদ্যার একটা নিয়ম মেনে চলে, তার নাম র‍্যালে-টেলর ইনস্ট্যাবিলিটি। নামে জটিল লাগলেও আসলে জিনিসটার উদাহরণ আমাদের কাছে খুবই চেনা, কারণ ফেলুদা যখনই চারমিনারে টান দিয়ে ধোঁয়ার রিং ছাড়ে, তখন সেই রিংগুলো তৈরী হয় এই র‍্যালে-টেলর গোলমালের নিয়ম মেনেই। 


    পৃথিবীর গভীরে মাঝে মাঝে এরকম অতি-তপ্ত ম্যাগমা একরোখা হয়ে ওপরের দিকে উঠে আসে। অপেক্ষাকৃত ঠাণ্ডা, ঘনতর ম্যাগমা ঠেলে সরিয়ে সে নিজের চ্যানেল নিজে তৈরী করে নেয়। কোর থেকে ম্যানটল হয়ে উঠে আসতে আসতে তার মাথার অংশ গোল হয়ে মতো ফেঁপে ওঠে, চওড়া হয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো দেখাতে থাকে, অনেকটা যেন পাখির লেজের পালকের মতো লাগে; তাই ভূতত্ত্ববিদরা একে নাম দেন ম্যানটল 'প্লুম', বাংলায় পালক। 


    এই যে বলছি 'মাঝে মাঝে ওপরের দিকে উঠে আসে', আমাদের সময়ের হিসেবে এর আন্দাজ লাগানো চলে না। পৃথিবীর এরকম 'মাঝে মাঝে' আমাদের কাছে কয়েক কোটি বছর। এই ম্যানটল প্লুম যেখানে ক্রাস্ট ফাটিয়ে উপচে বেরোচ্ছে, সেই পয়েন্টকে বলে 'হটস্পট'। এখানেই মজা। আমাদের মতো অতি ছোটোদের ধারণায় মনে হয় পৃথিবী স্থির, ভূত্বক কঠিন এবং অনড়, তার তলাকার তরল ম্যাগমাই বুঝিই এই কঠিন পাথরের তলায় ঠেলাঠেলি করে টগবগ করছে। কিন্তু বস্তুত এই পুরো ব্যাপারটাই আপেক্ষিক। আমরা যদি উল্টোভাবে ভাবি, যে আমাদের এই অতি-পাতলা 'সর'-টুকুই এই ম্যাগমা-গোলকের গায়ের ওপর ভেসে ভেসে বেড়াচ্ছে, তাহলে তাতে ভুল কিছুই থাকে না। এই ভূত্বক বা ক্রাস্ট ডাঙায় দাঁড়িয়ে মাপলে বড়জোর তিরিশ কিলোমিটার পুরু, মহাসাগরের তলা থেকে ধরলে তাও কমে মাত্র পাঁচ কিলোমিটার দাঁড়ায়; আর ম্যানটল প্লুমের উৎস কোর আর ম্যানটলের মাঝ বরাবর - ভূপৃষ্ঠ থেকে মোটামুটি তিন হাজার কিলোমিটার গভীরে। সেই গভীরতা থেকে ঠাসা ম্যাগমার মধ্যে দিয়ে ঠেলে তিন-হাজার-কিলোমিটার লম্বা সুড়ঙ্গ করে তা ওপরে উঠে আসছে। এভাবে ভাবলে একটা জিনিস বুঝতে পারি। ম্যানটল প্লুমের হটস্পট যে জায়গায়, পৃথিবীর কেন্দ্রের সাপেক্ষে সেই পয়েন্টটার নড়চড় হবে না কখনোই। সে মোটামুটি একজায়গায় রয়ে যায়। তার ওপরে ভেসে বেড়ানো ক্রাস্ট - যার পরিচয় আমাদের ওপরতলার কাছে টেকটনিক প্লেট - সেই প্লেটরাই সরে সরে যেতে থাকে যুগযুগান্ত ধরে। পর্বতমালা ওঠে-পড়ে, মহাসমুদ্র গড়ে উঠে আবার শতধা হয়ে ছড়িয়ে যায়। কিন্তু হটস্পট নড়ে না। তাই সরে সরে যেতে থাকা টেকটনিক প্লেটে তার বুলেট-গর্ত তৈরী হয় একটা নয়, ক্রমে ক্রমে অনেকগুলো। লিথোস্ফিয়ারে টানা দাগের মতো তার চিহ্ন ফুটে ওঠে। প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপমালা এই রকম হটস্পট আর টেকটনিক প্লেটের যুগলবন্দীতে তৈরী।


    এখনো অবধি যতদূর বোঝা গেছে, পার্মিয়ান আর ট্রায়াসিক পর্যায়ে এক ম্যানটল প্লুম জেগে ওঠার ফলে সাইবেরিয়ান ট্র্যাপসের সৃষ্টি হয়। তার পর থেকে লক্ষ লক্ষ বছর কেটে গেছে, ওই ম্যানটল প্লমই এখন সরে এসেছে আইসল্যান্ডের তলায়, ক্রীটাশিয়াসের পর থেকে সেখানেই তার অবস্থান। মানুষ নাম দিয়েছে 'আইসল্যান্ড প্লুম'। 


    প্রথম জনের বয়ান নেওয়া হল। এবার দ্বিতীয় জন। 'Devils don't come from hell beneath us. No, they come from the sky.' পার্মিয়ান এক্সটিংশনের প্রথম আসামী পাতাল ভেদ করে উঠে এসেছিল। দ্বিতীয় জন দেখা দিল মহাকাশের দিক থেকে।


    ১৯৬২ সালে বিজ্ঞানী আর. এ. শ্মিড্ট এক অদ্ভুত প্রস্তাব করলেন। দক্ষিণ মেরুর অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশ, যেখানে বছরভর বরফ আর তুষারের রাজ্য কায়েম থাকে, সেখানে বিভিন্ন দেশের গবেষকরা জুটে নানারকম পরীক্ষানিরীক্ষা চালান। এইরকম কিছু পরীক্ষার ফলাফল হাতে পেলেন শ্মিড্ট। অ্যান্টার্কটিকায় উইলকিস ল্যান্ড আইস শীট বলে একটা জায়গা আছে, সেখানটার বেশ কিছু মাপজোক খতিয়ে দেখে হিসেবপত্র করে শ্মিড্ট বললেন, ওই আইস শীটের তলায় এক বিশাল আকারের ইমপ্যাক্ট ক্রেটার লুকোনো আছে।


    ইমপ্যাক্ট ক্রেটার বলতে বোঝায় আকাশ থেকে খসে পড়া উল্কার আঘাতে পৃথিবীর গায়ে হওয়া গর্ত। এখানে উল্কা বলতে ছোটো meteorite নয়, আমরা বেশ বড় সাইজের জিনিস নিয়ে কথা বলছি, যাকে ইংরেজীতে বলে asteroid, বাংলায় 'গ্রহাণু'। এধরনের উল্কাপাতে তৈরী গর্তের আকার কীরকম হতে পারে তার আন্দাজ পাওয়ার জন্য একবার চাঁদের দিকে চোখ তুলে তাকানোই যথেষ্ট। চাঁদের গায়ে আমরা যে দাগ দেখি, তা বুড়িও নয়, খরগোশও নয়, 'কলঙ্ক'-ও নয়, - তা এই ইমপ্যাক্ট ক্রেটার। চাঁদের গায়ে যেসব উল্কারা আছড়ে পড়েছে, তাদের দাগ আমরা পৃথিবী থেকে এখনো দেখতে পাই। 


    পৃথিবীতে সবথেকে বড় ইমপ্যাক্ট ক্রেটার আছে দক্ষিণ আফ্রিকার ফ্রি স্টেট অঞ্চলে; তার নাম Vredefort crater। এ প্রায় দুশো কোটি বছর পুরোনো ব্যাস মোটামুটি একশো সত্তর কি.মি.। -  শ্মিড্ট তাঁর রিপোর্টে বললেন, উইলকিস ল্যান্ড আইস শীটের নীচে যে ক্রেটার লুকোনো আছে, তার ব্যাস অন্তত সাড়ে চারশো থেকে পাঁচশো কি.মি.। এর কয়েক বছর পরে, ১৯৭৬ সালে, আরেক বিজ্ঞানী ওয়েইহাউপ্ট তাঁর পেপারে বললেন একই কথা। ওই জায়গায় বরফের তলায় কিছু একটা আছে, আর তা আকারে খুব একটা ছোটখাটো নয়। 


    তুলকালাম লেগে গেল। এত বড় দাবী উঠলে সেটাই স্বাভাবিক। পুরু বরফের নীচে কী চাপা পড়ে আছে, তা সরাসরি আমাদের পক্ষে দেখা সম্ভব নয়, খোঁড়াখুঁড়ি করার প্রশ্নই ওঠে না। পুরো ব্যাপারটাই অঙ্ক কষে বের করতে হয়। সুতরাং বেন্টলি বলে এক গবেষক এই ক্রেটারের অস্তিত্বকে চ্যালেঞ্জ করে বসলেন। আদৌ জিনিসটা আছে, নাকি পুরোটাই খাতা-কলমের কল্পনা, সেই নিয়ে কথা চলল অনেকদিন। কিন্তু শেষ অবধি বেন্টলির দাবী টিকল না। ওয়েইহাউপ্টদের গবেষণার ভিত্তিতে তাঁর আপত্তি বাতিল হয়ে গেল। পৃথিবীতে হওয়া সমস্ত উল্কাপাতের খোঁজপত্র রাখার যাঁরা বড়কর্তা, সেই আর্থ ইমপ্যাক্ট ডেটাবেসের ২০১১ সালের রিপোর্টে উইলকিস ল্যান্ড আইস শীট ক্রেটারকে 'পসিবল ইমপ্যাক্ট ক্রেটার' থেকে 'প্রব্যাবল ইমপ্যাক্ট ক্রেটার'-এ তুলে আনা হল। মানে যাকে ভাবা হয়েছিল 'সম্ভব', তাকে এবারে বলা হল 'সম্ভাব্য'। 


    অন্যদিকে আরেক বক্তব্য পেশ করলেন ওহিও বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই ভূতত্ত্ববিদ - রাল্ফ ভন ফ্রিস আর লারামি পট্‌স। এঁরা ব্যাপারটাকে নিলেন অন্যদিক থেকে। যেকোনও ভরওয়ালা জিনিসেরই একটা মহাকর্ষীয় বল থাকে; কোন্ জিনিসের মহাকর্ষ বল কেমন হবে সেটা হিসেব করে বার করা যায়। উল্টোটাও তেমনি হয়, কোনো জিনিসের মহাকর্ষ বলের হিসেব নিয়ে তা থেকে বলা যায় জিনিসটার আকার-আকৃতি কেমন। অ্যান্টার্কটিকার মহাকর্ষীয় বল কোথায় কেমনভাবে ছড়িয়ে আছে, সেই হিসেবনিকেশ করে ফ্রিসরা দেখালেন, উইলকিস ল্যান্ড আইস শীটের নীচে প্রায় তিনশো কিলোমিটার চওড়া কিছু একটা বস্তু চাপা পড়ে আছে। সেই বস্তুটা যাই হোক না কেন, তার মধ্যে অনেকখানি ভর একজায়গায় ঠেসে আছে, - concentrated হয়ে আছে। ফ্রিস পদার্থবিদ্যার ভাষায় বললেন: এটা একটা mass concentration, সংক্ষেপে 'মাসকন'। 


    ফ্রিস এবং তাঁর সঙ্গীরা আরও বললেন, যে সাধারণত এইধরনের মাসকন সময়ের সাথে সাথে ধীরে ধীরে পৃথিবীর গায়ে মিলিয়ে মিশে যায়। এই মাসকন এখনো স্পষ্টভাবে প্রতীয়মান, সুতরাং ধারণা করা যায় যে এর বয়স পাঁচশো মিলিয়নের বেশী হতে পারে না, তার বেশী হলে এতদিনে আর এর নাম-নিশানা থাকত না। এদিকে একশো মিলিয়ন বছর আগে যখন অস্ট্রেলিয়া মহাদেশ গন্ডোয়ানাল্যান্ডের গা থেকে ছিঁড়ে বেরিয়ে এসেছিল, তখনকার সেই ফাট ধরার চিহ্ন এর গায়ে পরিষ্কার দেখা যাচ্ছে। মানে সেই ঘটনার সময় এ সশরীরে পৃথিবীর বুকে উপস্থিত। - দুয়ে দুয়ে চার এই দাঁড়াচ্ছে যে এর বয়স ওই পাঁচশো আর একশো মিলিয়নের মাঝামাঝি কোথাও।


    হঠাৎ এর মধ্যে এক খবর পাওয়া গেল। ভূবিজ্ঞানীদের মধ্যে যাঁরা টেকটনিক প্লেটের গতিবিধি নিয়ে কাজ করছিলেন, তাঁরা বললেন, আড়াইশো মিলিয়ন বছর আগে এই উইলকিস ল্যান্ড আইস শীট অঞ্চল পৃথিবীর ওপর যে জায়গায় ছিল, তা সাইবেরিয়ান ট্র্যাপসের ঠিক বিপ্রতীপ।


    প্রায় যেন বোমা ফাটার মতো হল ব্যাপারটা। ফ্রিসদের দল বললেন - সাইবেরিয়ান ট্র্যাপসের তৈরীর সাথে এই উইলকিস উল্কাপাতের সম্পর্ক থাকতে পারে। এপিঠে এই উল্কা আসে আছড়ে পড়ল, আর সেই অভিঘাতেই ওপিঠে ম্যানটল প্লুমের হটস্পট তৈরী হল। এই থিয়োরি নতুন নয়, এইধরনের চোট-খেয়ে-উল্টোপিঠে তৈরী হওয়া হটস্পটকে বলে antipodal hotspot; বিজ্ঞানীদের একদল সন্দেহ করলেন, সাইবেরিয়ান ট্র্যাপসের অগ্ন্যুৎপাতের পেছনে নির্ঘাত এই মাসকনের হাত আছে। 


    এদিকে অস্ট্রেলিয়া আর অ্যান্টার্কটিকায় পঁচিশ কোটি বছরের পুরনো পাথর স্টাডি করতে গিয়ে তার ভেতর একধরনের আণুবীক্ষণিক কোয়ার্টাজ দানা পাওয়া গেল, সেই দানাদের গায়ে খুব সূক্ষ্ম চিড়-খাওয়ার দাগ। বিজ্ঞানীরা বললেন, এই ধরনের আণুবীক্ষণিক ফাটল কোনো সাধারণ চোট খেয়ে হয় না; এর পেছনে পারমাণবিক বোমার চেয়ে বহু বহুগুণ বেশী শক্তিশালী কোনো ভয়ঙ্কর আঘাত রয়েছে। যেমন, - বড় ধরনের কোনো উল্কাপাত।


     একটা দিকেই ধোঁয়াশা থেকে গেল। এইধরনের ইমপ্যাক্ট যখনই হয়, তখন সেই উল্কাপিণ্ড আছড়ে পড়ার আঘাতে পৃথিবীর গা থেকে বিস্ফোরণের মতো মাটি ছিটকে ওঠে। টন টন পাথর আর ধুলোবালি আকাশে উৎক্ষিপ্ত হয়ে মেঘের মতো চারদিক ছেয়ে ফেলে। এভাবে ছিটকে ওঠা ধুলো-পাথর-মাটির রাশকে বলে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ejecta। এই ইজেক্টা সারা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে যায়, তার পর পৃথিবী জুড়ে ঝরে পড়ে। ভূবিজ্ঞানীরা সাধারণ পাথরের মধ্যে থেকে আলাদা করে ইজেক্টা সনাক্ত করতে পারেন, কবেকার কোন্ শিলাস্তরে ইজেক্টার অস্তিত্ব পাওয়া যাচ্ছে, সেই থেকে আন্দাজ করা যায় সেই সময়ে কোনো বড় ধরনের উল্কাপাত হয়েছিল কি না। এ যেন গানশট রেসিডিউ থেকে অপরাধীর হদিশ লাগানো। - সমস্যা হল, পার্মিয়ান-ট্রায়াসিক সীমান্তে ঠিকমতো ইজেক্টা স্তর এখনো পাওয়া যায়নি। তাই পুরো ছবিটা যেন মিলেও ঠিক মিলতে চাইছে না। 


    সন্দেহের তীর উঠছে অন্য দিকেও। মাইকেল র‍্যামপিনো বলে একজন গবেষক দক্ষিণ অাটলান্টিক মহাসমুদ্রের ফকল্যান্ড দ্বীপপুঞ্জের কাছে একটা অভিকর্ষীয় গোলমাল লক্ষ্য করেছিলেন ১৯৯২ সালে। তার পঁচিশ বছর পর, ২০১৭ সালের অগাস্টে, আরও দু'জন বিজ্ঞানীর সাথে মিলে তিনি একটা গবেষণাপত্র বার করলেন। এতে দেখানো হল যে এই 'গোলমাল' আসলে একটি ২৫০ কি.মি. চওড়া ইমপ্যাক্ট ক্রেটার, এবং তার বয়স আনুমানিক আড়াইশো মিলিয়ন বছর। যদি এই অনুমান সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে আমাদের হাতে সম্ভাব্য আসামীর সংখ্যা আরও বেড়ে যায়।


    কী হতে পারে এরকম উল্কাপাতের ফলে? - প্রথমেই ধুলো আর বিষাক্ত গ্যাস একসাথে পাকিয়ে আকাশে উঠে সূর্যকে আড়াল করে ফেলবে - কয়েক দিন নয়, টানা কয়েক মাসের জন্য। সূর্যের কিরণ না পেয়ে পৃথিবীর তাপমান হু হু করে নেমে আসবে, আর সেই সাথে নামবে তীব্র অ্যাসিডিক তুষারপাত আর বৃষ্টি। যতদিনে মেঘ কাটবে, ততদিনে আগুনপোড়া কার্বন ডাইঅক্সাইড আর পচে ওঠা প্রাণীদেহ থেকে ওঠা বাষ্পে বাতাস ভারী হয়ে উঠবে। আর কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্রীনহাউস গ্যাস হবার দরুণ এর ফলে দেখা দেবে লক্ষ বছর ব্যাপী উষ্ণায়ন। প্রাথমিকভাবে যেটুকু হবে, - সেই অন্ধকার, শীত আর অ্যাসিড বৃষ্টিতেই গাছেরা মারা পড়বে, আর মরবে সালোকসংশ্লেষী অণুজীব ফাইটোপ্ল্যাংকটনের দল। তাদের ওপর নির্ভর করে যারা বাঁচত, সেই শাকাহারীরা না খেতে পেয়ে মারা যাবে, আর তার পর মরবে অবশিষ্ট আমিষাশী প্রাণী। 


    তাছাড়া অন্য ব্যাপারও আছে। সমুদ্রে কোনো কোনো জায়গায় মাঝে মাঝে জলে দ্রবীভূত অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যায়, একে বলা হয় anoxia। এটা আমাদের চেনা জিনিস। লোকাল ট্রেনে যখন মাছওয়ালারা বড় বড় জলভরা গামলায় মাছ নিয়ে ওঠেন, তখন তাঁরা একটা হাত জলে ডুবিয়ে রাখেন, কিছুক্ষণ পর পর সেটা নাড়িয়ে জল ঘেঁটে দিতে থাকেন। এটা ওঁরা করেন যাতে বাতাসের অক্সিজেন জলে সহজে মিশতে পারে, বদ্ধ জল অনেকক্ষণ থাকতে থাকতে ভেতর থেকে ভেপসে না ওঠে। অ্যাকোয়ারিয়ামেও একই কারণে বুদ্বুদ মেশিন বা ওরকম কোনো যন্ত্র রাখা হয়, যাতে জমা জলে কৃত্রিমভাবে বাতাস খেলিয়ে দেওয়া যায়। সমুদ্রের জলেও এই একই জিনিস ঘটে, কিন্তু তা কাটিয়ে দেয় সমুদ্রেরই নিজস্ব জলস্রোত। বরফে ঢাকা মেরু অঞ্চলে সমুদ্রের জল যতটা ঠাণ্ডা হয়, সেই তুলনায় নিরক্ষীয় অঞ্চলের জল হয় অনেকটা বেশী গরম। এই তারতম্যের জন্য সারা পৃথিবী জুড়ে মহাসমুদ্রদের মধ্যে একটা ঠাণ্ডা-গরম পরিচলন স্রোত বইতে থাকে। অনেকটা সেই চায়ের কেটলির মতো, তবে এর গতিপথ অন্যরকম। এই স্রোত সমুদ্রের মধ্যে চট করে কোথাও অ্যানক্সিয়া তৈরী হতে দেয় না, কোনোরকম কিছু জমে ওঠার আগেই তা টেনে নিয়ে যায়। কিন্তু পার্মিয়ানের সময়কার যে প্যানজিয়া পৃথিবী, সেই পৃথিবীতে বরফে-ঢাকা মেরুদেশ ছিল না। স্রোতের আসা-যাওয়াও অন্যরকম ছিল। সেই স্রোতবিহীন সমুদ্রের জলে অক্সিজেনের পরিমাণ দিনে দিনে ফুরিয়ে এল, আর তার প্রভাব পড়ল সামুদ্রিক গাছ আর প্রাণীদের ওপর।


    একদিকে যেমন অক্সিজেনের ভাগ কমে এল, অন্যদিকে তেমন কার্বন ডাইঅক্সাইড বেড়ে উঠল ধীরে ধীরে।


    সামুদ্রিক প্রাণী বলতে যাদের কথা আমাদের মনে পড়ে, তারা সকলেই সমুদ্রের ওপরতলার বাসিন্দা। কিন্তু গভীর সমুদ্রে যেসব ব্যাকটিরিয়ারা থাকে, তাদের ধরন এদের থেকে আলাদা। উপর থেকে যে সমস্ত জৈব অবশেষ নীচের দিকে থিতিয়ে পড়ে, তার ওপর নির্ভর করে তাদের জীবন চলে। এই জৈব অবশিষ্টাংশ হজম করে তারা বাইকার্বনেট বলে একধরনের যৌগ তৈরী করে। এই বাইকার্বনেট জমে থাকে সমুদ্রের তলায়, জলের চাপে ওপরের দিকে বড় একটা উঠে আসতে পারে না।


     পঁচিশ কোটি বছর আগে কোনো এক ভাবে, কিছু একটা অতিকায় ধাক্কায় এই দীর্ঘদিনের জমানো বাইকার্বনেট ঠেলা খেয়ে ওপরের দিকে উঠে এসেছিল। উঠে আসতে আসতে জলের চাপ যেই কমে এল, দ্রবীভূত বাইকার্বনেট থেকে উজিয়ে বেরোল কার্বন ডাইঅক্সাইড। ফলে যা হল তা একরকম আমাদের সবারই স্বচক্ষে দেখা - বাজারে যে বোতলে ভরা সোডাজল বিক্রি হয়, তা আসলে স্রেফ জলে-গোলা কার্বন ডাইঅক্সাইড, আর কিছু না। ভেসে ওঠা বাইকার্বনেট থেকে উথলে বেরোনো কার্বন ডাইঅক্সাইড সমুদ্র জুড়ে সোডার মতো ফেনিয়ে উঠল। 


    বিস্ফোরক আঘাত নামল না কোনো, ভয়াবহ চোট খেয়ে কেঁপে উঠল না দিগ্বিদিক, কোনো রাক্ষুসে পাহাড় দাবানল ছড়াল না মৃত্যুদূত হয়ে। নিঃশব্দে পর্দা নামল নিবে আসা মঞ্চে, সমুদ্রের প্রাণীরা সবাই ধীরে ধীরে অক্সিজেনের অভাবে প্রাণশক্তি হারিয়ে অবসন্ন ঘুমে ঢলে পড়ল।


    সেদিনের কথা মনে করে একজন বিজ্ঞানী স্বগতোক্তি করেন - "Perhaps the Permian ended with a whimper and not a bang."


     জীবনের আয়োজনেই কোথা দিয়ে যেন মৃত্যু ফুটে ওঠে। সেদিনের সমুদ্রের অতল থেকে যে হলাহল উঠেছিল, তার মধ্যে কিন্তু কার্বন ডাইঅক্সাইড একা ছিল না।  গ্রীনহাউস গ্যাসদের আরেকজনও এই বিলোপে সামিল হয়েছিল, - কার্বন ডাইঅক্সাইডের থেকেও তার প্রভাব হয়েছিল বেশী। সে হল মিথেন।


    একধরনের অণুজীব হয়, তাদের নাম আর্কিয়া। পৃথিবীর আদিমতম প্রাণীদের মধ্যে এরা পড়ে। এদের মধ্যে একদল আছে, যারা তাদের শারীরিক বিপাকের মধ্যে দিয়ে মিথেন উৎপন্ন করে, - এদের নাম মিথেনোসারসিনা। কোটি কোটি বছর আগে যখন পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে মুক্ত অক্সিজেন ছিল না, সেই সময়ে প্রাণের বিকাশে এই মিথেনোসারসিনারা নাটকীয় ভূমিকা নিয়েছিল, আমাদের মতো অক্সিজেনপায়ীদের সৃষ্টির পেছনে এদের অবদান অদ্ভুত। কিন্তু সে কথা থাক। মিথেনোসারসিনা নিজে কিন্তু অক্সিজেন সহ্য করতে পারে না, তাই এমন জায়গায় তারা বাসা বাঁধে যেখানে অক্সিজেনের নাগাল পৌঁছয় না। সমুদ্রের অন্ধকার গভীরেও তাদের দেখা পাওয়া যায়। 


     আজ থেকে প্রায় চব্বিশ কোটি বছর আগে মিথেনোসারসিনাদের জীনে এমন এক পরিবর্তন এল, যাতে তাদের মিথেন উৎপন্ন করার ক্ষমতা অনেকটা বেড়ে গেল। এতদিন তারা যা কিছু 'খেয়ে' বাঁচত, হঠাৎ তার তালিকা অনেক প্রশস্ত হয়ে পড়ল, যেন নতুন ভাঁড়ারঘর খুলে গেল তাদের সামনে। সমুদ্রের নীচে থিতোনো পলির ভেতর জৈব কার্বনের সম্ভার জমে ছিল, তাকে তারা নিজেদের বিপাকের কাজে লাগাতে শুরু করল। ঢালাও খাবারের যোগান পেয়ে সমুদ্রে মিথেনোসারসিনাদের সংখ্যা বেড়ে উঠল ব্যাপকভাবে। আর সেই সাথে পাল্লা দিয়ে তাদের মিথেন উৎপাদনও বাড়ল, জলে তার পরিমাণও বেড়ে চলল। 


    অন্যান্য অণুজীবদের হাতে এই মিথেনের খানিকটা ভেঙে কার্বন ডাইঅক্সাইড তৈরী হল। সবটা মিলে সমুদ্রের জল হয়ে উঠল তীব্র অ্যাসিডিক, অক্সিজেনের ভাগ কমে গেল সাংঘাতিকভাবে - দেখা দিল অ্যানক্সিয়া। আর অ্যানক্সিয়ার সরাসরি প্রভাবে আরেক বিপদ ঘনাল। একদল ব্যাকটিরিয়া ফুলেফেঁপে উঠল যারা হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস তৈরী করে। - মিথেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, হাইড্রোজেন সালফাইড - এই সব নামগুলোই আজ আমাদের চেনা, আজকের বিশ্ব উষ্ণায়নের পেছনে এদের হাতই সবচেয়ে বেশী। - পার্মিয়ান সমুদ্রের গ্রীনহাউস গ্যাসেরা আস্তে আস্তে জল ছাপিয়ে  বাতাসে ভেসে উঠল, বাড়তে লাগল পৃথিবীর তাপমান।


    কেউ কেউ এসব ছাড়াও আরেকরকম সম্ভাবনার কথা বলছেন। 


    একধরনের মিথেন যৌগ হয়, তার নাম মিথেন ক্ল্যাথরেট। সমুদ্রের নীচে জমা বরফের ভেতর এই মিথেন ক্ল্যাথরেট চাপা থাকে। অতখানি তলায় জলের উষ্ণতা এত কম, আর সেই সাথে জলের চাপ এত বেশী, যে এই ক্ল্যাথরেট-বরফ কখনো চট করে গলে না, কঠিন হয়ে জমে থাকে।


    দৈবাৎ যদি কোনো দুর্ঘটনাবশত এই বরফের কিছুটা সামান্য গরম হয়ে গলে যায়, তাহলে সেই গলে যাওয়া ক্ল্যাথরেট থেকে কিছুটা মিথেন ছাড়া পেয়ে জলের ভিতর ভেসে উঠবে। এবার, মিথেন যেহেতু গ্রীনহাউস গ্যাস, তাই সেই মিথেন-গোলা জলের তাপমান যাবে বেড়ে। আর সেই গরম-হওয়া জলের তাপে আরও খানিকটা ক্ল্যাথরেট-বরফ গলবে, আবার কিছুটা মিথেন মুক্তি পাবে। তাতে জলের উষ্ণতা আবার আরেকটু চড়বে। এভাবে চলতে থাকবে ব্যাপারটা, চলতে চলতে ক্রমশ বাড়বে। 


    এই যে চেন-রিঅ্যাকশন চালু হয়ে গেল, একে থামানো অসম্ভব; ছুটে যাওয়া বন্দুকের গুলির মতোই একে আর ফেরানো যায় না, তাই একে বলে clathrate gun। যে কোনো কারণেই হোক, - পঁচিশ কোটি বছর আগে যদি এই বন্দুক ছুটে গিয়ে থাকে, তবে পার্মিয়ান শ্মশানের পেছনে তার ভূমিকা থাকতে বাধ্য।


    তপ্ত সমুদ্রের চিহ্ন মিলেছে অন্যখানেও। Conodont বলে একরকমের প্রাণী আজ থেকে কুড়ি কোটি বছর আগে পৃথিবী থেকে মুছে গিয়েছিল, আজকে তাদের ফসিল ছাড়া আর কোনো চিহ্ন আমরা পাই না। কিন্তু জীবাশ্মবিদদের কাছে এই কনোডন্টদের মূল্য অপরিসীম। এদের ফসিলকে index fossil বলে ধরা হয়, কারণ পৃথিবীর ইতিহাসের কালপঞ্জী সাজাতে গিয়ে গবেষকরা এদের ব্যবহার করেন। কোন্ যুগে কোন্ ঘটনা ঘটেছিল, কোন্ প্রাণীরা কোন সময়ে বেঁচে ছিল, সেসবের তারিখ নিশ্চিত করতে এইধরনের সূচক ফসিলের প্রয়োজন পড়ে। অন্য খবরও পাওয়া যায়। 


    চীনের কিছু অঞ্চলে খুঁজে পাওয়া প্রায় পনেরো হাজার কনোডন্ট ফসিল যাচাই করে দেখেছেন কয়েকজন বৈজ্ঞানিক। দেখে তাঁরা জানিয়েছেন, সে সময়ে সমুদ্রের ওপরদিককার জলের তাপমান চল্লিশ ডিগ্রী সেলসিয়াস ছাপিয়ে গিয়েছিল। আমাদের আজকের পৃথিবীতে সমুদ্রের জল মোটামুটি কুড়ি ডিগ্রীর আশেপাশে ঘোরাফেরা করে। বছরের পর বছর দূষিত জলে চল্লিশ ডিগ্রী তাপমানে প্রাণের টিকে থাকা প্রায় অসম্ভব। 


    পার্মিয়ান এক্সটিংশন কীভাবে হয়েছিল, সেই খবর এখনো আমাদের অজানা। ইঙ্গিত পাওয়া যায় শুধু, টুকরো টুকরো, আবছা, অনিশ্চিত। এক পৃথিবী প্রাণের প্রায় সবটুকু নিংড়ে নিয়ে গেল যে ঘটনা, তার দাগ রয়ে গেছে এখানে সেখানে। যারা শুনতে জানে, তাদের কাছে সেই অতীত এখনো কথা কয়। আমরা ঘরে বসে কাগজেপত্রে সেই বয়ান পড়ি। অদেখা, অচেনা জীবনের ছায়া আমাদের মনে এসে পড়ে, যারা মুছে না গেলে এই উপন্যাসে আমাদের অস্তিত্ব লেখা হত না।


    শেষ বিদায় নিল অনেকে। সামুদ্রিক প্রাণীদের ৯৬% নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল, টিমটিম করে টিকে রইল নামমাত্র কয়েকজন। সামুদ্রিক বিছে বা সী স্করপিয়ন নামে পরিচিত ইউরেপটেরিডদের দল বিদায় নিল এই উপসংহারে; অমেরুদণ্ডী ট্রিলোবাইটরা ডেভোনিয়ানের সময় থেকে ধীরে ধীরে নিভে আসছিল, পার্মিয়ান সীমান্তে এসে তারা পুরোপুরি মুছে গেল; প্রায় নির্বংশ হয়ে গেল অ্যামোনাইটরা, কেবল ৩% প্রজাতি কোনোক্রমে রয়ে গেল; গ্যাস্ট্রোপডদের মধ্যে ৯৮% বিলুপ্ত হয়ে গেল, যেটুকু রইল তাদের থেকেই একদিন উঠে আসবে উত্তরকালের শামুকদের বংশ; 'সাগর কুঁড়ি' ডাকনাম যাদের, সেই ব্লাস্টয়েডরা সবাই শেষ হয়ে গেল চিরতরে। 


    ডাঙায় কীটপতঙ্গের মধ্যে ন'খানা বর্গ একেবারে নির্মূল হয়ে গেল এই নিধনপর্বে; মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হল আরও দশটা। পোকামাকড়দের স্বর্ণযুগ ছিল এই পার্মিয়ান, - কী আকৃতিতে, কী বৈচিত্রে - এমন সুসময় তাদের আর কখনো আসেনি। পি-টি এক্সটিংশন এসে তাদের ভরন্ত সংসার ছারখার করে দিল। তার অনেকটা হল গাছেদের ধ্বংস হয়ে যাওয়ার ফলে। 


    বড় এক্সটিংশন ইভেন্টের প্রভাব গাছপালাদের ওপর তেমন ভয়াবহভাবে পড়ে না, একরকম ভাবে তারা নিজেদের সামলে নেয়। কিন্তু তবু নড়ে যায় প্রকৃতির ভারসাম্যের সাজ, যারা ক্ষমতাশালী ছিল তারা ভেঙে পড়ে, তুচ্ছ হয়ে থাকা প্রাণ বেড়ে উঠে সবার ওপরে জায়গা করে নেয়। পার্মিয়ান অরণ্যে আধিপত্য করত অপুষ্পক জিমনোস্পার্মের বংশ, তারা পাইন গাছের জ্ঞাতি। এই ঘটনার পর ধীরে ধীরে তাদের প্রতিপত্তি কমে গেল। গ্লসপটেরিস জাতের যে বীজ-ফার্ন জন্মাত, তারাও পিছিয়ে গেল মঞ্চে। তাদের জায়গায় মাথা তুলল সিলুরিয়ানে প্রথম-আসা লাইকোপড গাছের দল, আগামী বেশ কিছু বছর বনে তাদেরই রাজত্ব চলবে।


    মেরুদণ্ডীদের মধ্যে সেসময় সমুদ্রে দেখা মিলত অ্যাকান্থোডিয়ান মাছেদের, যারা এখনকার হাঙরদের সুদূর পূর্বসূরী। পার্মিয়ানশেষের প্রলয়ে এরাও হারিয়ে গেল। ডাঙায় বড় রকম ধাক্কা খেল সাইনাপসিডরা, সরোপসিডরাও বাদ গেল না। সব মিলে স্থলচর মেরুদণ্ডীদের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ প্রজাতি মুছে গেল। পেলিকোসররা বিদায় নিল এই সময়। থেরাপসিডদের মধ্যে যারা বাঁচল, তাদের মধ্যে সবচেয়ে ভালোভাবে টিকে গেল শাকাহারী লিস্ট্রোসরাস। গর্গনপসিড জাতের শিকারীরা সবাই লুপ্ত হয়ে গেল, ছোরাদেঁতো মস্কোরাইনাস এসে সেই ফাঁকায় ঠাঁই করে নিল। জলে, ডাঙায় - সবখানেই মাত্র কয়েকটা হাতে গোনা প্রজাতি সুতো হয়ে টিকে রইল। সময়ের গতিতে একদিন ডাইনোসরদের পিতামহ আর্কোসররা এসে এই রঙ্গমঞ্চে প্রধান ভূমিকা নেবে, সে দিন আসতে এখনো তিরিশ মিলিয়ন বছরের অপেক্ষা। এখন পড়ে রইল শুধু জীবনের ভাঙা জয়স্তম্ভে লেখা মহাকালের কৌতুক, আর সাগর-পাহাড় একাকার করা আদিগন্ত মৃত্যু-মরুভূমি।


    কিন্তু প্রাণের চলা তো থেমে থাকে না, মৃত্যুর থেকে তো সে নিজেকে পৃথক করে দেখে না! যে বাধাই আসুক, তারই ভেতর দিয়ে পথ সে করে নেবেই। সময়ের স্রোতে চারিদিকে ছড়ানো শ্মশানের বুকেই জাগল নতুন পঞ্চবটী, রাতের অন্ধকারে ঝড় এসে প্রাণের দরজা ভেঙে উড়িয়ে নিয়েছিল, আলো ফুটতে দেখা গেল ঘরভরা শূন্যতা জুড়ে অব্যক্ত প্রতিশ্রুতি দাঁড়িয়ে আছে।


    পথ শেষ হল না। পার্মিয়ান ফুরোল, তার অবসানের পটে আরম্ভ হল কাহিনীর আগামী অধ্যায়: মেসোজয়িক পর্ব।


    .....


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
    (১, ২) | (৩) | পর্ব ৪ | পর্ব ৫
  • ধারাবাহিক | ১৭ নভেম্বর ২০২০ | ২৪৮১ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • avi | 2409:4061:2d9e:9ce5:45ba:5c21:3c:e81e | ১৭ নভেম্বর ২০২০ ১৮:৩৯100377
  • আহ্হঃ। কিছুদিন পর পরই এর আগের খণ্ডগুলো পড়ে যেতাম, আর মনে মনে দুঃখ করতাম বাকিটা হয়তো আর আসবে না। আজ চোখে পড়তেই বিরিয়ানি অর্ডার করে দিলাম, এবং পড়ে ফেললাম। এই লেখার শেষদিকে এলে একটু মন খারাপ হয়ে যায় শেষ হয়ে আসছে ভেবে। চালিয়ে লিখতে থাকুন ক্যাপ্টেন, এক ক্রেট লক লোমন্ড পাওনা রইল আপনার।

  • ক্যাপ্টেন হ্যাডক | ১৭ নভেম্বর ২০২০ ১৯:৫১100380
  • লক লোমন্ড যা আছে পাঠিয়ে দিন, গত তিন বছরে এই লেখা আর এগোয়নি। এ সবই পুরোনো লেখা পোস্টালাম। আর এগোবে বলে আশাও নেই। কাজেই ওই ক্রেট, বিরিয়ানি, - যা আছে সব এইবেলাই ইয়ে করে ফেলুন।

  • avi | 2409:4061:2d9e:9ce5:45ba:5c21:3c:e81e | ১৮ নভেম্বর ২০২০ ০৬:১৫100410
  • যাহ।

  • Ranjan Roy | ১৮ নভেম্বর ২০২০ ০৯:০২100419
  • হায় মেসোজয়িক যুগ।

  • গবু | 223.223.131.41 | ১৮ নভেম্বর ২০২০ ১৬:৪২100451
  • ইশ - এটা আর বেরোবেনা ভাবলেই অদ্ভুত খারাপ লাগছে। এতো সাবলীল আর সহজবোধ্য লেখা সেইবহু আগে পড়া কিছু সুকুমার বাবুর লেখার কথা মনে করিয়ে দেয়।


    হ্যাডক বাবু - সত্যিই হবে না?

  • Amit | 121.200.237.26 | ১৯ নভেম্বর ২০২০ ০৬:২৯100470
  • পরের পর্বের জন্যে আর তর সইছে না. দারুন ইন্টারেষ্টিং লেখা। মানে এতোটাই ভালো যে পড়তে পড়তে মনে হচ্ছে যেন বিবিসি র ওয়াকিং উইথ ডাইনোসর সিরিজগুলো  চোখের সামনে প্লে হয়ে চলেছে। 


    অসাধারণ। 

  • b | 14.139.196.16 | ১৯ নভেম্বর ২০২০ ১১:২০100480
  • হ্যাডক স্যার, নেশন ওয়ান্ট্স টু নো। 

  • হবে না মানে? | 151.141.85.8 | ২০ নভেম্বর ২০২০ ০১:২৮100497
  • আরে হবে না মানে? সবে তো পার্মিয়ানিরা বিদায় নিলেন। এখনও তো ডাইনোরাই আসেন নি! তাঁরা তো আসবেন মেসোজোয়িকে। " মহারাজ এ কী সাজে/ এলে এ হৃদয়পুরমাঝে", তবে না? লিখুন ক্যাপ্টেন, লিখুন।

  • ক্যাপ্টেন হ্যাডক | ২৪ নভেম্বর ২০২০ ১৪:২২100597
  • কাফকাসরাস স্বপ্নাদেশ দিয়ে গেছে,আর লেখা যাবে না। অন্য খুচরো লেখাপাতির যুগ এখন।

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লাজুক না হয়ে প্রতিক্রিয়া দিন