এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  আলোচনা  সমাজ  সিরিয়াস৯

  • প্রাইভেট টিউটর বলছি

    সৌমাভ চক্রবর্তী
    আলোচনা | সমাজ | ২৬ আগস্ট ২০২০ | ৩২৪২ বার পঠিত
  • পেশা আছে, আছে উপভোক্তাও। নেই স্বীকৃতি। করোনা ভাইরাসের প্রকোপ ও তজ্জনিত নিষেধাজ্ঞায় কার্যত লাটে উঠেছে গৃহশিক্ষকতা। নিজের পেশার অন্য বেশ কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে এই প্রতিবেদনটি তৈরি করেছেন একজন গৃহশিক্ষক স্বয়ং।

    খবরের কাগজ, টিভির পর্দায় বারবার উঠে আসছে করোনা ও লকডাউনে ক্ষতিগ্রস্ত ছোট ব্যবসায়ীদের কথা, দিনমজুর শ্রমিকদের কথা, প্রাইভেট কোম্পানি থেকে চাকরি হারানো যুবক-যুবতীদের কথাও। কিন্তু এক বিশেষ পেশার মানুষের কথা এই সমগ্র লকডাউনে খুব বেশি উঠে এসেছে বলে আমি শুনিনি - গৃহশিক্ষক বা প্রাইভেট টিউটর। আমাদের রাজ্যে বহু মানুষের জীবিকা এখনও ছাত্রছাত্রীদের ব্যক্তিগত পরিসরে শিক্ষাদানের উপর নির্ভরশীল এবং আমাদের শিক্ষাব্যবস্থায় অনেক নিচু শ্রেণির পড়ুয়া থেকে শুরু করে উচ্চশিক্ষা স্তরের পড়ুয়ারাও এই প্রাইভেট ক্লাসের উপর নির্ভরশীল হয়ে আছে। অথচ এই পেশার মানুষদের নিয়ে সেরকম ভাবে কোনও কথাই কোথাও ওঠে না, কোনও দরদী সোশ্যাল মিডিয়া ভিডিও তৈরি হয় না, এঁদের জীবিকা নির্বাহের অসুবিধা নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মিত হয় না, সরকার থেকে কোনও সাহায্য আসে না। শিক্ষা কাঠামোতে এঁদের অবদান অনেকখানি হওয়া সত্ত্বেও মুখ বুজে আর্থিক অসহায়তায় দিন কাটিয়ে চলেছেন এঁরা।
     
    প্রাইভেট পড়ানোর ক্ষেত্রে বছর চারেকের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এখানেও একচেটিয়া রাজত্ব চলে। বর্তমান আর্থ-সামাজিক ব্যবস্থার সঙ্গে সামঞ্জস্য বজায় রেখে কোনও এক সরকারি স্কুলে চাকুরিরত গণিতের শিক্ষকের কাছে দল বেঁধে সবাই পড়তে যাবে, কারণ তাঁর কাছ থেকে ভাল সাজেশন পাওয়া যাবে, এবং ভাল নম্বর পাওয়া যাবে, অন্তত সাধারণ ধারণা তেমনটাই। এদিকে কেউ যদি এই প্রাইভেটে পড়ানোকে নিজের আয়ের গৌণ অংশ হিসাবে না ধরে এর মাধ্যমেই জীবিকা নির্বাহ করতে চান, তাহলে তিনি যতই ভাল পড়ান না কেন, কোথাও গিয়ে পড়ুয়া এবং অভিভাবকদের মনে খুঁতখুঁতানি থেকেই যায় - কারণ তাঁর সরকারি শিক্ষকের টোপরটি নেই। আর যাঁরা পড়ুয়ার বাড়িতে গিয়ে শিক্ষাদান করেন তাঁদের অবস্থা খানিকটা ওই কালবেলার অনিমেষের প্রাইভেট শিক্ষাদানের অভিজ্ঞতার মত হয় বললেও অত্যুক্তি হবেনা ।
     
    পড়ুন, বাংলাদেশের এক বন্ধ খাবারের দোকানের অন্দরের কথা

    অনেক সমস্যার সঙ্গে লড়াই করেও গৃহশিক্ষক ও শিক্ষিকারা এতদিন পর্যন্ত এই ভাবেই চালাতেন। কিন্তু সমস্যা হয়ে গেল এই বছরের মার্চ মাস থেকে। ২২ মার্চ জনতা কারফিউ এবং তারপর ২৪ মার্চ থেকে তড়িঘড়ি দেশব্যাপী সম্পূর্ণ লকডাউন শুরু হবার ফলে দেশের মানুষ নিজের অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনা করার সুযোগ পাননি। এই সময়ে দেশব্যাপী সমস্ত শিক্ষাকেন্দ্র সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেবার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে এবং প্রায় সমস্ত রাজ্য তাতে সায় দেয়। যাঁরা গৃহশিক্ষকতা করতেন, তাঁদের অনেকেই আন্দাজ করেছিলেন রোগের প্রকোপ থেকে বাঁচার জন্য এই লকডাউন খুব শীঘ্রই জারি হবে, কিন্তু তা কতদিনের জন্য বহাল থাকবে সে কথা আন্দাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠেনি।
     
    শুভাশিস দত্ত ২০১৭ সালে বাংলায় স্নাতকোত্তর পাশ করার পর থেকে প্রাইভেট পড়ান। উনি সেভাবে কোনওদিন বড় ব্যাচ করে পড়ান নি, বরং অল্প কয়েকজন ছাত্রছাত্রীদের শিক্ষাদানেই বরাবর আগ্রহী ছিলেন। বোঝা যাচ্ছে যে অর্থ উপার্জনের ব্যাপারটা গুরুত্বপূর্ণ হলেও তিনি স্বতন্ত্রভাবে পড়ুয়াদের প্রতি যত্নশীল হবার ব্যাপারে আপস করেননি। লকডাউনে পড়াশোনার ব্যাপারটা পড়ুয়া থেকে শুরু করে অভিভাবক - বহুক্ষেত্রে সবাই অগ্রাহ্য করে যাচ্ছেন, যার জন্য অনেক টিউশন শুভাশিসকে ছেড়ে দিতে হয়েছে। শুভাশিস অপেক্ষাকৃত কম বয়সি পড়ুয়াদের অঙ্ক শিখিয়ে থাকেন। তাঁর কথায়, গণিতের মত বিষয়, বিশেষ করে বয়সে ছোটদের, হাতে কলমে না দেখিয়ে শুধুমাত্র লেকচার মাধ্যমে পড়ানো যথেষ্ট অসুবিধাজনক - ফলে অনলাইনে অঙ্ক শেখানো প্রায় অসম্ভব। প্রযুক্তিগত সমস্যা তো রয়েইছে, পাশাপাশি শুভাশিস জানালেন অনলাইনে পড়ানোর ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের হাবভাব আচরণ বোঝা যায় না, যার ফলে শিক্ষক-পড়ুয়া যোগাযোগ কিছুটা হলেও বিচ্ছিন্ন হয়। অভিভাবকরাও হয় অনলাইনে পড়ানোর ব্যাপারে জোর দিচ্ছেন, নয়ত সাফ জানিয়ে দিচ্ছেন যে এখন পড়াশোনার ব্যাপার বন্ধ রাখাই ভাল, এবং রোগ সংক্রমণের হারের দিকে তাকিয়ে আবারও মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকে প্রাধান্য দিয়ে শুভাশিস তাঁদের কথা মেনে নিচ্ছেন এবং তাঁদের অবস্থার কথা বুঝতে পারছেন।  অতিমারী দীর্ঘকাল যাবৎ চললে নিজের ও এই পেশার মানুষের ভবিষ্যৎ কী হবে সে নিয়ে যারপরনাই উদ্বিগ্ন তিনি।



    করোনার জন্য প্রায় সব পেশাতেই কর্মহানি হয়েছে প্রবল। বিভিন্ন ক্ষেত্রের প্রতিবেদন ও বিশ্লেষণ নিয়ে এ বিষয়ে দুটি সংখ্যা ভাবা হয়েছে। পরের সংখ্যায় থাকছে হকারদের নিয়ে বিশ্বেন্দু নন্দের, গৃহসহায়িকাদের নিয়ে মৌসুমী বিলকিসের প্রতিবেদন ও অর্থনীতির একটি মডেল নিয়ে অনির্বাণ মুখোপাধ্যায়ের বিশ্লেষণ



     

    সুমন্ত মিশ্র প্রায় চার বছরের বেশি সময় ধরে ইংরাজি এবং কলা বিভাগের অন্যান্য বিষয়ে টিউশন পড়ান। একজন অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ব্যতীত কারোর থেকেই মাইনে পাননি তিনি। অনলাইনে পড়ানোর চেষ্টা করলেও এপ্রিল মাসে কিছুদিন পর ছাত্ররা জানায় যে তারা এই পদ্ধতিতে অভ্যস্ত নয়, এবং পড়া বন্ধ করে দেয়। মাসে যে আড়াই হাজার টাকা টিউশন থেকে আসত, তার অর্ধেকের বেশি তিনি বাড়ির খরচের জন্য দিতেন। লকডাউনের কারণে প্রায় সমস্ত চাকরির জায়গা বন্ধ হবার কারণে নতুন কোনও কাজের জায়গায় আবেদন জানাতেও পারছেন না। এদিকে মাসে মাসে বাড়িভাড়াও গুনে চলতে হচ্ছে, সব মিলিয়ে অর্থনৈতিক ভাবে সুমন্ত এবং তাঁর পরিবার ভয়ঙ্কর ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। সুমন্ত জানালেন, অভিভাবকরা র্তমান বছরে তাদের সন্তানদের লেখাপড়ার জন্য কোনও রকম খরচ করতে অনাগ্রহী এবং তাঁরা চাইছেন আগামী বছর থেকে প্রাইভেট শিক্ষক আবার পড়ানো চালু করুন। সুমন্ত ব্যাখ্যা করে বোঝালেন যে একটি শ্রেণির পাঠ সম্পূর্ণ না করলে পরবর্তী শ্রেণিতে তা চালিয়ে রাখা খুব সমস্যাজনক হয়ে যায় - এই কথা না পড়ুয়ারা বুঝতে পারছে, না পারছেন তাদের অভিভাবকরা।  

    পড়ুন, শুধু কি লকডাউনের জন্যই সাংবাদিক ছাঁটাই?

    বিভাস দাস (নাম পরিবর্তিত) প্রায় ৩৫ বছর ধরে গৃহশিক্ষকতা করছেন। এত বছরের মধ্যে এইরকম ভয়ঙ্কর অর্থনৈতিক অবস্থার সম্মুখীন আগে হননি। পড়াশোনার নতুন ব্যবস্থা, অর্থাৎ অনলাইন মাধ্যমের ব্যাপারে সড়গড় নন বটে, তবে উপায়ান্তর না থাকলে এই নতুন মাধ্যমে অভিযোজিত হবার ব্যাপারেও মুক্তমনা তিনি। প্রায় ৬০-এর কোঠায় পৌঁছনো এই গৃহশিক্ষক তাঁর সংসার এবং সন্তানের পড়াশোনার খরচ জমানো টাকা থেকে চালাচ্ছেন আপাতত। সে টাকা শেষ হয়ে এলে কী করবেন, সে কথা ভাবারও সাহস নেই তাঁর। সে জন্য দু-তিনজন ছাত্রছাত্রীকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে স্যানিটাইজার ব্যবহার করে পড়াচ্ছেন তিনি। কিন্তু অর্থনৈতিক সমস্যা ধীরে ধীরে প্রকট আকার ধারণ করছে বলে উনি জানান। এমনিতেই বছরের মধ্যে ঠিকঠাক ৯ মাস পড়ানো সম্ভব হয়, বাকি সময়টুকু আনন্দ-উৎসব বা পরীক্ষার কারণে বাতিল থাকে । তাই ৯ মাসের মাইনে দিয়ে সারা বছর চালাতে হয়। এই অর্থনৈতিক টানাপোড়েনের জীবনে লকডাউন নতুন অভিশাপ তাঁর কাছে।
     
    ইতিহাস এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞান দুই বিষয়ের এম এ সুশান্ত দাস স্কুল ও কলেজের ছাত্রছাত্রী পড়িয়ে থাকেন। প্রায় ২৫-২৬ বছর ধরে পড়ানোর অভিজ্ঞতায় এই রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন তিনি আগে হননি। অনলাইন পদ্ধতিতে কিছু পড়ুয়াদের পড়ালেও সামনাসামনি পড়ানোর ব্যাপারে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। সুশান্তবাবুর ধারণা সরকার আরেকটু সাহসিকতার পরিচয় দিলে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা সঠিক মূল্যায়নের মাধ্যমে সম্পন্ন করা যেত। পরীক্ষা ছাড়া অন্য কোনও পদ্ধতিতে মেধার মূল্যায়ন করা এই আর্থসামাজিক পরিস্থিতিতে সম্ভব নয় বলেই ওঁর ধারণা। লকডাউনের সময়ে অকারণে বাইরে বের হওয়া ঠিক নয়, এ কথা মেনে নিলেও, তাঁর বক্তব্য শিক্ষালাভের কারণে বের হওয়া অকারণ নয়। প্রত্যেক বছর মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে বহু পড়ুয়া পরের বছরের জন্য তাঁর কাছে পড়তে আসত, কিন্তু এই বছর তেমন সংখ্যা নামমাত্র। বহু ক্ষেত্রে পড়ুয়াদের পক্ষে মাইনে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না, কারণ তাদের পরিবারেও বাঁধা আয়ের ক্ষেত্রে বাধাবিপত্তির সৃষ্টি হয়েছে - সে কথাও বিবেচনায় রেখেছেন তিনি।  

    বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক উত্তম চক্রবর্তী মার্চ মাসে লকডাউন শুরুর পর ভেবেছিলেন মাস দুয়েক চালিয়ে নেবেন, কিন্তু এই রকম পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। আর্থিক দিক থেকে ক্রমশ প্রান্তিক অবস্থার দিকে এগিয়ে চলেছেন তিনি। অনলাইন পদ্ধতিতে শিক্ষকতায় তিনি অনভ্যস্ত।  

    পড়ুন: মহামারী আর লকডাউনে টালিগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রির হাল

    খুব বেশিজনের সঙ্গে কথোপকথন সম্ভব না হলেও, যে কয়েকজনের সঙ্গে কথা হল, তা থেকে একটা বিষয় স্পষ্ট - গৃহশিক্ষকদের আর্থিক এবং মানসিক সংকট যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ব্যক্তিগতভাবে এই সকল সমস্যার সম্মুখীন হবার অভিজ্ঞতা থাকার দরুন এই পরিস্থিতি থেকে বিকল্প পথ খুঁজে পাওয়া যে কতখানি মুশকিল তা আমি বুঝতে পারি। বছর চারেক পড়ানোর অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি, এই পরিস্থিতির সম্মুখীন আগে কোনদিন আমাকে হতে হয়নি। একটা সময়ে ছাত্রছাত্রী সংখ্যা এতই বেশি ছিল যে নতুন কারও শিক্ষকতার দায়িত্ব নিতে পারতাম না।

    এখন অবস্থা উল্টে গিয়েছে। সরকারের তরফ থেকে বহু ক্ষেত্রে কাজ করা মানুষদের ভর্তুকি এবং ছাড় দেওয়া হলেও এই অসংগঠিত পেশার ক্ষেত্রে সেরকম কোনও সাহায্যের কোনও প্রশ্নই ওঠেনি। ব্যক্তিগত খরচ চালানো বা পরিবারকে অর্থনৈতিক ভাবে সাহায্য করা তো হচ্ছেই না, উল্টে তার জায়গায় আসছে অবসাদ, উদ্বেগ, মানসিক চাপ। এর পর কী হবে তা সত্যিই অজানা।




    থাম্বনেল গ্রাফিক্স: স্মিতা দাশগুপ্ত
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • আলোচনা | ২৬ আগস্ট ২০২০ | ৩২৪২ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • | 2601:247:4280:d10:242f:da85:1cb9:291c | ২৭ আগস্ট ২০২০ ০২:২২96685
  • সত্যিই দমবন্ধ করা পরিস্হিতি...

  • বিপ্লব রহমান | ২৮ আগস্ট ২০২০ ০৯:১৩96718
  • এপারে খবরের কাগজে বেরিয়েছে, মাস্টার্সের এক ছাত্র গৃহশিক্ষকতা করে নিজের পড়ার খরচ চালাতেন, গ্রামের বাড়িতে বৃদ্ধা মা'রও সংসার খরচ দিতেন, খুবই অভাবী অবস্থা। 

    লকডাউনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণায় ছেলেটি গৃহশিক্ষকতার কাজ হারায়, গ্রামের বাড়িতে গিয়ে কোনো কাজ পায়নি। শেষে লোকলজ্জা ভুলে অল্প জমি বর্গা নিয়ে নিজেই ধান চাষ করেছেন। ধান পাকলে তবে তার অভাব কিছুটা ঘুচবে বলে আশা। 

    আর এই দুর্দিনে এক বস্তা  আলু ও পগার থেকে ধরা কাঁকড়া দিয়ে মা-ছেলের দুবেলার অন্ন সংস্থান হচ্ছে। ছেলেটি তবু হাল ছাড়েনি। 

    এ এক দারুণ নিদানকাল! :/  

                                        

  • | ২৮ আগস্ট ২০২০ ১২:৩৮96725
  • খুবই খারাপ অবস্থা। ছোটখাট প্রাইভেট স্কুলগুলো থেকেও দেদার শিক্ষকশিক্ষিকা ছাঁটাই করছে। অন্ধকার দিন অন্ধকারতর হচ্ছে।

    অন্য একটা কথাও মনে হল লেখাটা পড়ে। আসলে শিক্ষাব্যব্স্থা ঠিকঠাক থাকলে, স্কুলগুলোর ক্লাসে ছাত্র শিক্ষকের অনুপাত বেশ ঠিকঠাক থাকলে কিন্তু এই পেশাটার উদ্ভব হবারই কথা নয়। স্কুল কলেজের বাইরে কেনই বা আলাদা করে খরচ করে পড়াশোনা করতে হবে?
    আবার অন্যদিকে টিউশনি অনেককে ভালমত ঠেকনা দেয় যতদিন না চাকরি পাওয়া যাচ্ছে। আমি নিজেই আমার কম্পিউটার শেখার খরচ চালাতে, এমনকি কলেজের পড়াশোনা চালাতেও টিউশনি করেছি।

    কিন্তু ঐ আর কি, এটা পার্মানেন্ট পেশা হিসেবে নিতে বাধ্য হওয়াও একটা সমস্যাই আসলে, যেটা এতদিন তেমন নজরে পড়ে নি।
  • π | 47.29.173.143 | ২৯ আগস্ট ২০২০ ২০:১৩96763
  • ঊর্মির কথাগুলোও একটু থাক এখানে।

    " আমাদের মধ্যবিত্ত বাড়ি। বাবার প্রাইভেট টিউশন এবং মার আই সি ডি এস চাকরি৷ আমি বাইরে থাকি পড়ার জন্য। এ বছরের শুরুতে, জানুয়ারীতে বাবার অনেক গুলি অসুখ ধরা পরে। কিডনির, লিভারের, সুগার ইত্যাদি। এতদিন জানা যায়নি কারণ আমাদের বাড়ির পাশের সাবডিভিশন হস্পিটালে এত উন্নত ট্রিটমেন্ট নেই। আর খরচ করে চিকিৎসা করাতে চায়না যে পরিবারগুলো; কেন চায়না জানতে গেলে তাদের দৈনন্দিন জীবন জানার কষ্ট করতে হবে। প্রাইভেট টিউটর বাবার প্রত্যেকদিন মেডিকেল বা এন আর এস গিয়ে চিকিৎসা করানোর সুযোগ নেই। তাই খুব কষ্ট না হলে আমাদের মতো পরিবারের কারোর রোগ ধরা পরেনা। যাইহোক, জানুয়ারীতে একরকম জোর করেই বাবাকে ক্যালকাটা মেডিকেল হস্পিটালে নিয়ে যাওয়া শুরু করি। বাবা ক্যানিং থেকে ভোর ৪ টে নাগাদ ট্রেন ধরে গিয়ে লাইন দিত। বিকালে ফিরে টিউশন পড়াতে যেতে হবে বলে। ট্রিটমেন্ট চলছিল যত অসুবিধাই থাক। অপারেশন এর কথাও ছিল মার্চ-এপ্রিলে। সেসব আজ আর লিখবোনা।

    মার্চে হঠাৎ প্লেনে চড়ে করোনা এল। মেডিকেল কলেজ এক্সক্লুসিভ করোনা মডেলে বন্ধ হয়ে গেলো অন্যান্য রোগীদের জন্য। কড়া লকডাউনে কোলকাতা যাতায়াত অসম্ভব হয়ে পড়লো। পরিস্থিতি এমনই দাঁড়ালো, অন্য কোন হস্পিটালে নিয়ে যাবো সেটা আর ঠিক করতে পারলাম না। তার উপর লকডাউনে প্রাইভেট টিউশন বন্ধ হয়ে বাবার ইনকাম বন্ধ। ৫৫ বছরের একজন শিক্ষক এক মাসে অনলাইন ক্লাস শিখে উঠতে পারেননি। আর ক্যানিং এর মতো জায়গায় ছাত্র-ছাত্রীরাও অনলাইন ক্লাসে অভ্যস্ত নয়। ফলে এরকম একটি বিপর্যয়ে, হাজার হাজার টাকা দিয়ে গাড়ি ভাড়া করে, বিভিন্ন হস্পিটালের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়ানোর মতো মানসিক ইচ্ছা বাবা মা আমার কারোরই আর হয় নি। যথারীতি পুরানো ওষুধ গুলোই চলছিল ৪ মাস বিনা চেকাপেই।

    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=18070
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন