এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • বুলবুলভাজা  কূটকচালি

  • আঁতেল কাহারে কয়!

    তির্যক লেখকের গ্রাহক হোন
    কূটকচালি | ১১ মে ২০০৮ | ৭২৯ বার পঠিত
  • "আঁতেল" এই শব্দটি বিগত কয়েক দশক ধরে বাঙলা ভাষা জগতে বিপুল আলোড়ন সৃষ্টি করেছে এবং এই অতুলনীয় শব্দটিকে ঘিরে জনমানসে অদ্ভুত মিশ্র প্রতিক্রিয়া লক্ষ্য করা গেছে। ফরাসী ঘ্রাণমিশ্রিত এই শব্দটির উৎপত্তি সম্ভবত: "ইন্টেলেকচুয়াল" থেকে, যদিও শব্দটিকে বাঙলা ভাষার অভিধানে সরকারীভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে কিনা তা আমার অজ্ঞাত। কিন্তু এই শব্দটির বিচিত্র অর্থ এবং জনমানসে এর প্রভাবের কথা বিচার করে এই শব্দটির বিষয়ে বিস্তৃত আলোচনার অবকাশ রয়েছে।
    আঁতেল শব্দটি মূলত: বিশেষণ। যদিও এর সঠিক ও সর্বজনস্বীকৃত সংজ্ঞা এখনও নির্ণয় করা যায় নি, কিন্তু এর লক্ষণগুলি বিশ্লেষণ করলে এই বিশেষণটি নিন্দাবাচক না প্রসংশাবাচক সেই বিষয়েই প্রাথমিকভাবে একটি সংশয়ের সম্মুখীন হতে হয়। কারণ অত্যন্ত স্বাভাবিক ও (আপাত:দৃষ্টিতে) একেবারেই নির্দোষ কিছু গুণাবলীও ক্ষেত্রবিশেষে আঁতেলের লক্ষণ বলে গণ্য হয়। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্বচ্ছ হবে। তার আগে একথা উল্লেখ করে দেওয়া দরকার যে বিভিন্ন বয়সের ও অবÙÛ¡নের একটি বিস্তৃত জনগোষ্ঠির ওপর সমীক্ষা চালিয়ে এই নিবন্ধে উল্লিখিত মতামত এবং উদাহরণগুলি সংগ্রহ করা হয়েছে এবং সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণ করে জনমানসে আঁতেল কথাটির সম্পর্কে নিরপেক্ষভাবে একটি ধারনা গঠন করা হয়েছে।
    দেখা গেছে কোনো ব্যক্তি অলপবয়সে চশমাধারণ করলে এবং সেই চশমার দরুণ তার চেহারায় একটি বিশেষ মাত্রা যুক্ত হলে পারিপার্শ্বিক জনগণের চোখে সেই ব্যক্তি অনেক সময়ই আঁতেল নামে চিহ্নিত হয়ে থাকেন। যেহেতু দৃষ্টিশক্তির সীমাবদ্ধতার কারণেই কোনো ব্যক্তি চশমাধারণ করে থাকেন এবং চশমা ব্যবহার করা একেবারেই একটি নিরপরাধ বিষয়, তাই চশমাধারীকে আঁতেল নামে অভিহিত করার কোনো যথার্থ কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। আবার কোনো চশমাধারী ব্যক্তি সচরাচর শুধু চশমার কারণে অন্য ব্যক্তিকে আঁতেল শ্রেণীভুক্ত করেন না (অবশ্য কিছু ব্যতিক্রমী ক্ষেত্রে চশমার আদলের ওপরও ব্যক্তির আঁতেল পদবাচ্য হওয়া নির্ভর করে)। এর থেকে প্রমাণিত হয় যে "আঁতেল" এই ধারণাটি স্পষ্টভাবেই ব্যক্তিনির্ভর। অনুরূপভাবে কিছু বিশেষ পোষাক যেমন জিন্‌স্‌ ও খদ্দরের পাঞ্জাবী, শান্তিনিকেতনী ঝোলা (পুরুষ ও মহিলা উভয়ের ক্ষেত্রে সমভাবে প্রযোজ্য), পুরুষের লম্বা চুল ও দাড়ি প্রায়শ:ই আঁতেলের লক্ষণরূপে গণ্য হয়। তবে এক্ষেত্রে চশমাসম্পর্কিত সমীকরণ প্রযোজ্য নয়, অর্থাৎ একজন জিন্‌স্‌-পাঞ্জাবী পরিহিত ব্যক্তি অনায়াসেই অনুরূপ পোষাকে সজ্জিত অপর ব্যক্তিকে আঁতেল বলে নির্দেশ করতে পারেন। অন্য বৈশিষ্ট্য বর্তমান না থাকলে ধুতি-পাঞ্জাবী এবং শাড়ীকে যেমন সাধারণভাবে আঁতেলগোষ্ঠীর লক্ষণ বলে গণ্য করা হয় না তেমনি বারমুডা, মিনিস্কার্ট বিকিনি ইত্যাদি পোষাককেও আঁতেলের পরিচয় বলে ধরা যায় না। অতএব দেখা যাচ্ছে সাজসজ্জা ও পোষাকের ক্ষেত্রে প্রাচ্য বা পাশ্চাত্য কোনো ধারাকেই নির্দিষ্টভাবে আঁতেলের চিহ্ন বলা হয় না। তবে জিন্‌স্‌-পাঞ্জাবী-দাড়ি-চশমা-ঝোলা এই সমন্বয়কে প্রায় সকলেই একবাক্যে আঁতেলের লক্ষণ বলে স্বীকার করে থাকেন।

    তবে পোষাক এবং সাজসজ্জা সম্পর্কিত এইসব লক্ষণগুলি আঁতেলশ্রেণীকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্র একেবারেই গৌণ। একজন ব্যক্তির আচরণ ও ব্যক্তিত্বের কিছু বৈশিষ্ট্যই তাঁকে আঁতেল বলে চিহ্নিত করে। অতিমাত্রায় সরল ও বুদ্ধিহীন ব্যক্তি কখোনোই আঁতেল শ্রেণীভুক্ত হতে পারেন না। বরং আঁতেলরা অতিবিজ্ঞতার অভিযোগেই অভিযুক্ত হয়ে থাকেন।। অর্থাৎ সর্বসাধারণের পক্ষে বোধগম্য নয় এমন বিষয় আঁতেলদের কাছে অত্যন্ত উপাদেয় বলে গৃহীত হয়। পক্ষান্তরে সাধারণভাবে অত্যন্ত জনপ্রিয় কোনো বস্তু ও বিষয় আঁতেলগোষ্ঠীর কাছে নিতান্ত আকর্ষণহীন ও অপাঙক্তেয়রূপে একপ্রকার বর্জিতই হয়ে থাকে। সংক্ষেপে বলা যায় আপাত:কঠিন ও দুর্বোধ্য বিষয়ে সবিশেষ আগ্রহ ও জ্ঞান এবং সেই জ্ঞানের উদ্দেশ্যমূলক প্রদর্শন আঁতেলের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য বলে গণ্য হয়ে থাকে। যেহেতু বোধগম্যতার পরিধি অনুসারে "দুর্বোধ্যতা"র সংজ্ঞা মানুষে মানুষে পরিবর্তিত হয়, তাই কোনো ব্যক্তির আঁতেল পদবাচ্য হওয়াও একটি নেহাৎই আপেক্ষিক ঘটনা। আবার যে কোনো কঠিন বিষয়ে ব্যুৎপত্তিই আঁতেল অভিধার পক্ষে অনুকূল নয়। যেমন বিজ্ঞানের যে কোনো শাখা, ইতিহাস, অর্থনীতি এবং ব্যবসায়ে পারদর্শীতা আঁতেলের লক্ষণরূপে গণ্য হয় না। কিন্তু কলাবিভাগের কিছু কিছু বিষয়ে উৎসাহ এ ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে। আধুনিক সাহিত্য, বিশেষত: কবিতা, বিমূর্ত চিত্রকলা, উচ্চাঙ্গ সংগীত এবং সমান্তরাল ধারার চলচ্চিত্রের কথা এই প্রসঙ্গে বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। তবে আপেক্ষিকতার সূত্রটি এই ক্ষেত্রেও সমানভাবেই প্রযোজ্য। অর্থাৎ কোন্‌ বিষয়ে কতদুর আগ্রহ ও ব্যুৎপত্তি আঁতেলের লক্ষণরূপে স্বীকৃত হবে তা একান্তভাবেই যিনি আঁতেল সম্মোধন করছেন, সেই ব্যক্তির নিজস্ব বিচরণক্ষেত্রের পরিধির ওপর নির্ভর করে। সঠিকভাবে বললে কোনো ব্যাক্তির আঁতেল শিরোনামে ভূষিত হওয়া একটি উভমুখী প্রক্রিয়া যা দাতা ও গ্রহীতা উভয়ের ক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। কয়েকটি উদাহরণ দিলে বিষয়টি স্পষ্ট হয়ে উঠবে। যেমন সাহিত্যে আগ্রহী নন এমন ব্যক্তির কাছে রবীন্দ্রনাথ সবচেয়ে বড়ো আঁতেল কারণ তিনি গুটিকতক অপ্রয়োজনীয় গান-গল্প-কবিতা রচনা করে সময় নষ্ট করে গেছেন। সেই সময়ে মাঠে চাষ বা অন্য কোনো "কাজের কাজ" করলে দেশের প্রকৃত উপকার হত। সেই সূত্র অনুসারে রবীন্দ্রভক্তরাও সকলেই কমবেশি আঁতেল, তাঁরা সময় নষ্ট করার এই ধারাটি বজায় রেখেছেন ও এগিয়ে নিয়ে চলেছেন। আবার সাহিত্যে কিছুটা আগ্রহী ব্যক্তি, যাঁর কাছে রবীন্দ্রনাথই শেষ কথা, রবীন্দ্রনাথের গুটিকয়েক অন্ত্যমিলযুক্ত কবিতা (বড়জোর জীবনানন্দের রূপসী বাঙলা) ও ছোটগল্প যিনি সাগ্রহে পড়েছেন, বছরে দু-চারটি সমকালীন উপন্যাস যিনি পড়ে থাকেন, তাঁর কাছে সমকালীন কবিদের রচনায় আগ্রহ ও তার প্রসংশা করা অতি কঠিন "আঁতলামি"। তেমনি কেবলমাত্র পোর্ট্রেইট ও ল্যান্ডস্কেপ জাতীয় ছবির আগ্রহী দর্শকের কাছে বিমূর্ত চিত্রকলার রসাস্বাদন করতে পারা একান্তভাবেই আঁতলামির পরিচয়। হাস্যকৌতুক ইত্যাদি লঘু বিষয়ে যাঁদের একান্ত আগ্রহ তেমন ব্যক্তির কাছে গুরুগম্ভীর বক্তৃতাধর্মী কথাবার্তা বলা এবং শোনা বা পড়া আঁতেলের একটি অত্যন্ত প্রতিষ্ঠিত গুণ বলে পরিচিত হয়। এইভাবে সরলরৈখিক পদ্ধতিতে অগ্রসর হলে দেখা যায় ক্ষেত্রবিশেষে রবীন্দ্রসংগীত বা বিদেশী সংগীত পছন্দ করা, তথাকথিত "আর্ট ফিল্ম"-এর প্রসংশা করা বা কোনো জনপ্রিয় ছবি ভালো না লাগা ইত্যাদি বহুবিচিত্র গুণ ও অভ্যাস আঁতেলের লক্ষণ হয়ে উঠতে পারে। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের খেলা পছন্দ না করা বা ভারতীয় দল থেকে তাঁর বহিষ্কৃত হওয়ায় যথেষ্ট দু:খ প্রদর্শন না করাও বাঙালী সমাজে আঁতেলের লক্ষণরূপে চিহ্নিত হতে পারে। সরু গলায়, হাতের বিশেষ ভঙ্গি সহকারে, ধীরে ধীরে কথা বলা কখোনো কখোনো আঁতেলের একটি গৌণ বৈশিষ্ট্য হিসাবে চিহ্নিত হয়। তবে অন্যন্য চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যগু লি না থাকলে শুধু মাত্র সরুগলায় কথা বললে বা বিশেষভাবে হাঁটাচলা করলে তাঁকে আঁতেল না বলে ন্যাকা বলা হয়।

    প্রসঙ্গত: উল্লেখ করা যেতে পারে যে এই নিবন্ধে আঁতেল সম্পর্কে কোনো শেষ কথা বলা বা সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া যাচ্ছে না, শুধুমাত্র প্রচলিত ধ্যানধারণাগুলিই আলোচনা ও বিশ্লষণ করা হচ্ছে। এই পর্যন্ত আলোচনা থেকে এটা স্পষ্ট যে যদিও আঁতেল একটি আপেক্ষিক ধারণা, তবে সাধারণভাবে প্রচলিত জনমতের বিপরীত ধারণা পোষণ করা আঁতেল তালিকাভুক্ত হবার একটি প্রাথমিক শর্ত হিসাবে গণ্য হয়। তবে এযাবৎ যেসব লক্ষণ এর কথা উল্লিখিত হয়েছে তা প্রাথমিক শ্রেণীর আঁতেল সম্পর্কে প্রযোজ্য। এই পরিধির বাইরে কিছু ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যাঁরা এই তথাকথিত আঁতেলের তুলনায় কিছুটা বিপরীত মনোভাব পোষণ করেন। এই দ্বিতীয় পর্যায়ের ব্যক্তিরা প্রথম পর্যায়ের আঁতেলদের পছন্দের বিষয়গুলির সমালোচনা করেন এবং কঠিনতর বাক্যবন্ধ প্রয়োগের মাধ্যমে নিজেদের শ্রেণীগত বৈশিষ্ট্য প্রকাশ করে থাকেন। উদাহরণস্বরূপ দেখানো যায় এঁরা সত্যজিৎ রায়ের চলচ্চিত্র, জয় গোস্বামীর কবিতা, হুসেনের ছবি, ভীমসেন যোশীর সংগীত ইত্যাদির ত্রুটিবিচ্যুতি দর্শাতে ও তাই নিয়ে গভীর আলোচনায় মগ্ন হতে পারেন। এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে আমজনতার পছন্দের কিছু বিষয়কে এঁরাও "ভালো" বলে থাকেন (সম্পূর্ণ নূতন কোনো দৃষ্টিভঙ্গি থেকে) যা আঁতেলের পক্ষে নিতান্তই অপ্রত্যাশিত ও প্রায় অনৈতিক বলে বিবেচিত হয়। সংশ্লিষ্ট বিষয়ে এঁদের জ্ঞান ও সমালোচনার যথার্থতা থাকুক বা না থাকুক, এই বাক্তিরা সাধারণ জনগণ এবং তথাকথিত আঁতেল উভয় শ্রেণীর কাছেই বিরাগভাজন হয়ে থাকেন এবং উচ্চতর শ্রেণীর আঁতেলরূপে গণ্য হন।

    অতএব দেখা যাচ্ছে যে জনসাধারনের চোখে আঁতেলরূপে প্রতিপন্ন হওয়া নিতান্ত সহজ কর্ম নয়। এই ভাবমূর্তি নির্মাণের জন্য এক বা একাধিক আপাত:কঠিন বিষয়ে পড়াশোনা ও জ্ঞান থাকা দরকার। সম্যক ব্যুৎপত্তি প্রয়োজন না হলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে দু-চারটি লাগসই কথা বলতে পারার মতো কিছুটা বিদ্যা আবশ্যক। মনে রাখা দরকার একজন আঁতেল জনমানসে নিন্দিত হলেও বুদ্ধিজীবী হিসাবেই নিন্দিত হন এবং তাঁর বক্তব্য সুখকর ও গ্রহণযোগ্য না হলেও একেবারে "পাগলের প্রলাপ" বলে উড়িয়ে দেওয়া যায় না। সুতরাং আঁতেলের কথাবার্তা ও আচরণে একটি ন্যূনতম ব্যক্তিত্বের ছাপ থাকা প্রয়োজন। প্রতিষ্ঠানবিরোধী মত প্রকাশ করা এবং প্রচলিত মতামতকে (যা আঁতেলের ঘোষিত মতামতের বিরোধী) উপেক্ষা এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে করুণা করার মতো মনের জোর ও স্পর্ধা থাকাও দরকার। একজন আঁতেলকে জনপ্রিয় আনন্দের স্রোতে গা ভাসালে চলে না বরং সযত্নলালিত একটি উন্নাসিক ভাবকে আচরণে প্রকাশ করে চলতে হয়।

    সুতরাং একথা বললে ভুল হবে না যে আঁতেল কথাটি সাধারণভাবে নিন্দার্থে ব্যবহৃত হলেও এটি ঠিক নিন্দাবাচক বিশেষণ নয়। কারণটি ইতিমধ্যেই আলোচনা করা হয়েছে। যে সকল …গুণাবলী থাকলে একজন ব্যক্তি আঁতেল হয়ে ওঠেন, প্রায়শ:ই দেখা যায় সেগুলি স্পষ্টভাবে ক্ষতিকর বা অন্যায় কিছু নয়, নির্দোষ রুচি, অভ্যাস বা আচরণমাত্র। তাই একজনকে মিথ্যাবাদী বা বিশ্বাসঘাতক বললে যেরকম নিন্দা বোঝায়, আঁতেল বললে ঠিক সেই পর্যায়ের নিন্দা বোঝায় না। মনোবিজ্ঞানীদের বিশ্লেষণের মধ্যে দিয়ে বোঝা গেছে যে কাউকে আঁতেল বলে উল্লেখ করার মধ্যে বক্তার একটি সূক্ষ্ম অসূয়াবোধ বা অপারগতা প্রকাশ পায়। কোনো অপরূপ সুন্দরী মহিলার সৌন্দর্যের গৌরবকে খর্ব করার জন্য যেমন তার আচরণের মধ্যে দম্ভ বা অহমিকার পরিচয় খোঁজা হয় (সৌজন্য : "ইন্দ্রাণী", রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর) তেমনি যখন কোনো ব্যক্তির কথা যুক্তিদ্বারা খন্ডন করা যায় না, আবার গ্রহণ করাও যায় না, এবং মনে হয় ঐ ব্যক্তি যোগ্যতার অধিক …গুরুত্ব পেয়ে যাচ্ছেন, তখনই তাঁকে আঁতেল অভিধাযুক্ত করা হয়ে থাকে। এর মাধ্যমে বক্তার একপ্রকার অহমিকা জনিত তৃপ্তি হয়ে থাকে। ইংরেজী বাক্যালাপে অপটু ব্যক্তির কাছে অনর্গল ইংরেজীতে কথাবার্তা চালানো যেমন আঁতেলের লক্ষণ, আবার কেউ অনর্গল শুদ্ধ বাঙলায় কথা বলে চললেও তা আঁতলামির পরিচয় বলে প্রতিভাত হতে পারে। অথচ শুদ্ধ বাঙলা বা ইংরেজীতে বাক্যালাপ কখোনোই দোষনীয় বা নিন্দনীয় কোনো অভ্যাস নয়। অত্যন্ত কৌতুকের সঙ্গে লক্ষ্য করা গেছে যে কোনো ব্যক্তি পরিচিতিবিশেষে কোনো অভ্যাসকে আঁতলামি বলে চিহ্নিত করলেও সুযোগ পাওয়ামাত্রই সেই গুণটি আয়ত্ত করতে সচেষ্ট হয়ে ওঠেন। এই সব দিক বিচার করে বলা যায় আঁতেল কথাটি এমন একটি নিন্দাবাচক শব্দ যা যিনি আরোপ করেন তিনি নিন্দার্থে ব্যবহার করলেও যাঁর উদ্দেশ্য ব্যবহার করেন, তিনি ততটা নিন্দিত বোধ করেন না বা বিশেষ লজ্জিত হয়ে ওঠেন না।

    এযাবৎ উল্লিখিত মতামতগুলি বিস্তৃতভাবে আলোচনা ও বিশ্লেষণ করে আঁতেল সম্পর্কে নিম্নলিখিত সমীকরণটি গঠন করা গেছে যার দ্বারা এই আলোচনার উপসংহারে উপনীত হওয়া যায়।
    যদি আমিও জানি / পারি, তুমিও জানো / পারো : তা ভালো
    যদি আমিও জানি না / পারি না, তুমিও জানো না / পারো না : তাও ভালো
    যদি আমি জানি / পারি, তুমি জানো না / পারো না : তা সবচেয়ে ভালো
    যদি আমি জানি না / পারি না , কিন্তু তুমি জানো / পারো : তাহলেই তুমি আঁতেল
    এই সমীকরণটি আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে সংগৃহীত, তথ্যসূত্র আমার কাছে অজ্ঞাত। তবে আমার জ্ঞানত: আঁতেলের এই সমীকরণের ব্যতিক্রম লক্ষ্য করা যায় নি। কোনো ব্যতিক্রম দেখা গেলে আমি তা তলিকাভুক্ত করতে সাগ্রহে প্রস্তুত।

    মে ১১, ২০০৮
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক।
  • কূটকচালি | ১১ মে ২০০৮ | ৭২৯ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন