এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  গপ্পো

  • লাইনের ধারে

    Ritwik Sengupta লেখকের গ্রাহক হোন
    গপ্পো | ০১ মে ২০২০ | ৩৪৪১ বার পঠিত
  • টালিগঞ্জের রেললাইন পার হয়ে, ঢালূ দিয়ে নেমে, লিলিপুলের পাশে একটা বেঞ্চিতে এসে বসল, অজয়। কয়েক বছর আগে সরকারি উদ্যোগে এখানে, লেকের মাঠে, গজিয়ে উঠেছে অজয় মালহোত্রা ক্রিকেট একাডেমি। তাই, লেক-এর এই অংশে, সাধারণ মানুষের আনাগোনা, বেশ কম - বিকেলের দিকে ছেলেদের প্র্যাকটিস না থাকলে, এই সন্ধ্যাবেলাতেও বেশ নিরিবিলি।
    পুরো-নাম, অজয় মন্ডল।
    বয়স , বছর চব্বিশ।
    পেশা জানতে চাইলে, বলে পুলিশের সিভিল অফিসার।
    ঠিকানা, ঢাকুরিয়া স্টেশন সংলগ্ন কাটজুবাগান বস্তির ২৭ নম্বর ঘর। ছাউনি বললে শুনতে খারাপ লাগে - তাই ঘর বলে।
    কলকাতার চারু-মার্কেট সংলগ্ন রেললাইনের ধারের, এই মাঠে, প্রায় ১৪ বছর আগে , উপার্জন শুরু করেছিল অজয়। আজ ও সেইদিনের সব ঘটনা, বেশ স্পষ্ট মনে আছে তার। তারপর চোদ্দ বছরে অনেক 'পোষাক' পাল্টেছে। সেই ঘটনাও প্রায় বছর দশ হল - এক গ্রীষ্মের দুপুরে ওই টালিগঞ্জ প্ল্যাটফর্মে এক সাধুবাবা তাকে বলেছিল, "মন ভারী করিস না, পোষাক অনেক পাল্টাতে হবে, তবে মাঝে মাঝে একলা থাকিস"।

    *. *. *

    অজয়ের বয়স তখন প্রায় দশ বছর। একদিন ওই রেললাইনের এইপারে, প্রাতঃকর্ম সেড়ে ঢালু দিয়ে চড়ে আবার রেললাইন অবধি উঠেছে, হঠাৎ পিছন থেকে, কেউ একটা শক্ত হাতে তার ঘাড় চেপে ধরে একটা ঝাঁকুনি দিয়ে বলে উঠল, "লোকটাকে বারণ করলিনা কেন ওইভাবে লাইন পার হতে - রেলে কাটা পড়ল? দেখলি তো?"
    অজয় বলে উঠল, "কী বলছো, আমি কী করে বলবো...?"
    কথা শেষ করতে করতে তাকিয়ে দেখে খাঁকি উর্দ্দিতে একজন পুলিশ কন্স্টেবল্। বললে, "চল থানায়"।
    অজয় কেঁদে ফেলল, বলল "আমি তো কিছু করিনি!"
    পুলিশের লোকটা বললে, "যদি কথা শুনিস, তাহলে ছেড়ে দেবো....একবার ভালো করে দেখে নে, লাশটা কেমনভাবে পড়ে আছে, মুখ থুবড়ে, যেমন বলব, বড়বাবুর সামনে তেমন বলবি, তাহলে ছেড়ে দেবো; আর যদি চালাক সাজার চেষ্টা করবি..."
    কথা শেষ করতে না দিয়েই অজয় বলেছিল, "যেমন বলবে তেমন করব, আমাকে আটকে রেখোনি বাবু, আমার মা অসুস্থ, দিদি এখন মায়ের সব বাবুদের বাড়ি কাজ করছে, আমি বাড়ি না ফিরলে মাকে জলপট্টি দেওয়া হবেনা, বার্লি-বিস্কুট খাওয়ানো হবে না মাকে, জ্বর বেড়ে যাবে"।
    আবার রেললাইনের ঢালু দিয়ে নেমে, হাঁটতে শুরু করলো ওরা, মাঝখানে বার দুই অজয় আর্জি জানিয়েছিল তার মাকে একবার জানিয়ে আসবে বলে - ধমক খেয়ে চুপ করে গেছে।
    ওরা টালিগঞ্জ থানায় পৌঁছোতেই, আরেকজন পুলিশ এসে তাকে নিয়ে একটা ঘরে একটা কালো রঙের বেঞ্চিতে বসতে বললো। কিছুক্ষণ পরে, একটি লোক এসে তাকে এককাপ চা আর একটা গোটা কোয়ার্টার-পাউন্ড পাঁউরুটি দিয়ে গেল। অজয় বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে থাকলো, লোকটা বলল "খেয়ে নাও বাবু"।
    বাড়িতে অসুস্থ মায়ের কথা ভেবে, বিশেষ ইচ্ছা করল না তার, অজয় লোকটাকে সেটা জানালো, লোকটা বললো বাড়ি যাওয়ার আগে তার মায়ের জন্য একটা রুটি দিয়ে দেবে। খুশী মনে অজয় চা-পাঁউরুটি খেতে শুরু করলো। হঠাৎ, ঘরের অন্যদিকে তাকিয়ে দেখে, তাদের বস্তির মিনিও, এককোনে বসে চা-পাঁউরুটি খাচ্ছে। এইবার তার কিছুটা ভয় কাটলো যেন - কাছে গিয়ে বলল "আমাদের এখানে কেন নিয়ে এসেছে রে, আমাদের ছাউনি ভেঙে দেবে?"
    মিনি বলল, "আরে না, যেমন বলবে, তেমন বলবি, তাহলে একশো টাকা দেবে"।
    "তুই এখানে আগে এসেছিস?", চাপা স্বরে প্রশ্ন করে অজয়, "আমাদের এখানে কেন এনেছে রে?"
    এক-চোখ টিপে মিনি বলল, "চুপ কর, বেড়িয়ে বলবো।"
    মিনি তাদের বস্তিতে থাকে, সমবয়সি।
    কিছু সময় পরে, মিনিকে একজন পুলিশ এসে নিয়ে গেল, অন্য একটা ঘরে। পাঁচ মিনিট পরে মিনি হাসতে-হাসতে বেড়িয়ে এলো, সেই পুলিশের লোকটা অজয়কে নিয়ে গেল বড়বাবুর সামনে, মানে এস.আইয়ের কাছে।
    অজয় কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখলো, বড়-সড় চেহারার সেই পুলিশের বড়বাবুকে। লাল রেক্সিনে মোড়া, একটা বড় টেবিলের ওপারে বসে, চেয়ারটাকে হেলিয়ে, দুলছে লোকটা। সামনে চায়ের কাপ, একটা হাত-ঘন্টা, খবরের কাগজ, আর ডান হাতের কাছে পাকিয়ে রাখা একটা চওড়া খয়েরি রঙের বেল্ট। মনে হল, লোকটাকে ইদানিং কোথাও দেখেছে। ঘোর কাটবার আগেই, লোকটা গম্ভীরস্বরে জিগেস করলো, "ওই লোকটা যখন ওই ইঞ্জিনের সামনে ঝাঁপ মারলো, তুই তখন কী করছিলি?"
    হতভম্ব হয়ে অজয় বললো "কে আবার ঝাঁপ মাড়লো?"
    "স্মার্ট সাজা হচ্ছে?", বলে তার মাথার পেছনে একটা চাটি মারলো, কাছে দাঁড়িয়ে থাকা আরেকজন পুলিশের লোক।
    "মনে পড়েছে", বললো অজয়, "আমি ওই লাইনের ধারে ফুল তুলছিলাম"।
    পুলিশের লোকটা মুচকি হেসে বললো, "হুঁ, তোকে দিয়ে কাজ হবে, এই নে একশো টাকা রাখ, সোজা ঘরে যা, কারো সাথে কোন আলোচনা নয় - আলোচনা করলে ওই ইঞ্জিনটা আবার তোকেও ধাক্কা মারবে....."।

    আর বাকি কথা না শুনে, সোজা, কখনও ছুটে, কখনও হেঁটে ঘরে পৌঁছাল, অজয়। সেদিন দুপুরে আবার থানায় ডাক পড়েছিল। অজয় আর মিনির, তার সাথে প্ল্যাটফর্মের কিছু হকারের। একটা সাদা শার্ট পড়া লোকের সামনে ওরা সবাই বললো, ওই লোকটা ইঞ্জিনের সামনে ঝাঁপ দিয়েছে, লাইনের উত্তরদিক থেকে। ওরা সকলে আবার একশো টাকা করে পেলো। এবারে টাকা দিল অন্য একটা লোক - সে পুলিশ নয়। ফেরার পথে অজয় মিনিকে বললো, তুই বলবি বলেছিলি, ব্যাপারটা কী, মিনি শুধু বললো পরে বলবে।
    সেদিন রাতে সে যখন টাইম-কলের থেকে জল নিয়ে ফিরছে, মিনি তাকে জানিয়েছিল, যে মিনি দেখেছে, তিনটে লোক চ্যাংদোলা করে ওই লোকটাকে চলন্ত ইঞ্জিনের সামনে ছুঁড়ে দিয়েছে, আর ওই পুলিশের লোকটা কিছু দূরে দাঁড়িয়েছিল একটা পোলের পিছনে। সব দেখছিল, আ্য ক্সিডেন্টের পরে, অন্য লোক তিনটে, ওই পুলিশটাকে ঈশারা করেছিল। প্ল্যাটফর্মের ওই চাওয়ালাটা ও তখন দোকান খুলছিল, সে সব দেখেছে।
    অজয় হঠাৎ জিগেস করল, "মিনি তুই ওই বড়বাবুকে আগে দেখেছিস? আমি যেন কোথায় দেখেছি"।
    মিনি বললো, "ওই লোকটাই তো সেবার বুলবুলদার কারখানায় বিশ্বকর্মা পুজোতে সবার হাতে প্রসাদ দিচ্ছিল, বুলবুলদাকে খুব মানে।"
    বুলবুলদা এই বস্তির গড্ ফাদার এবং এখানকার কাউন্সিলারের বল-ভরসা। এখন ও মাঝে মধ্যে এই বস্তিতে এসে থাকে, যদিও পার্টি তাকে সুইস পার্কের পিছনে, সুজয়গড় কলোনিতে, একটা টালির-চালের পাকা বাড়ি দিয়েছে। এই বস্তির আবাসিকদের হিতার্থে, সে সক্রীয়।
    সেদিন সারারাত অজয় ঘুমোতে পারেনি। মাঝরাতে উঠে, ভেবেছিল একশো টাকার নোট দুটো ফেলে দিয়ে আসবে নর্দমায় - কিন্তু তাদের অভাবের সংসারে সেটা সাজে না, সে বুঝেছিল। তাদের ছেঁড়া পর্দার ফাঁক দিয়ে আকাশের তারার দিকে চেয়ে থেকে, সেই, তার বিশ্বরূপ দর্শনের সূচনা - নিজে নিজে বাস্তব বুঝতে শেখা।

    এরপর মাস ছয় কেটে গিয়েছে - অজয় টালিগঞ্জ বাজার থেকে আধা-পচা মাছ কিনে ফিরছে - হঠাৎ পান-বিড়ির দোকান থেকে রমেশদা তাকে ডাকলো।
    বললো, "হাতের জিনিষটা ঘরে রেখে আয়, আসবি কিন্তু...কথা আছে...তোর ভালো হবে"।
    'ভালো হবে', কথাটার, একটা টান অনুভব করেছিল অজয়।
    এখন ও মনে পড়ছে, ঘর থেকে রমেশদার দোকান হেঁটে যেতে, আকাশ-পাতাল কতো কিছু ভেবেছিলো সে। দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই, রমেশদা বললো, "খবরের কাগজ পড়তে পারিস?", বলে একটা সোনালি রঙের সিগারেটের বাক্স তাকে দেখালো, জিগেস করল "এ'র গায়ে কী লেখা?"
    অজয় বলল "ইন্ডিয়া কিংস্, ভারতের মানচিত্র...কি সুন্দর বাক্স!"
    রমেশদা বলল "কাজটা ঠিক মতো করলে, এই বাক্স আরো ভালো লাগবে, পারবি?"
    অজয় বলল, "কী কাজ বললে নাতো!"
    রমেশদা বললো, "একবার শুনলে কিন্ত না বলতে পারবিনা!"
    অজয় আরো ঔৎসুক হয়ে বলল, "এসেছি যখন, কাজ করে দেবো"।
    রমেশদা এবারে একটা নস্যির ছোট স্টিলের কৌটো তার হাতে দিয়ে বলল, "এর মধ্যে একটা লালচে খয়েরি পাউডার আছে, তার থেকে এক চিমটে করে প্রতিটা সিগারেটে ভরে, আবার তার উপর তামাকটা ভরে, সিগারেটগুলো প্যাকেটে ঢুকিয়ে আমাকে দিয়ে যাবি, আর যদি খদ্দের থাকে তো বলবি যে এই প্যাকেট নয়, ক্লাসিক দিতে বলেছে, আমি তোকে অন্য প্যাকেট দেবো আবার সেটাও ওইরকম করে তৈরী করে আনবি, প্রতি প্যাকেটে তিরিশ টাকা পাবি"।
    আরো বলল, "তুই ভালো সাক্ষী দিস, আমি শুনেছি - তুই পারবি"।
    অজয় ক্লাস ফাইভ অবধি পড়েছে, চট করে হিসেব করে মনস্থির করলো, যে একাজ ঠিক মতন করতে পারলে তার মা দুটো বাড়ি ছেড়ে দেবে, বিশ্রাম পাবে, দিদি সেলাই-ক্লাসে ভর্তি হবে আর সে নিজে শোনপাপড়ি কিনে খাবে। একটু মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে, রমেশদার থেকে প্যাকেট দুটো নিয়ে নিল সে।
    এরপর, বেশ কিছু মাস, গড়ে, প্রতি দুই দিনে, নব্বই টাকা রোজগার চলল, অজয়ের। বেশ কয়েকমাস পরে তাদের বস্তিতে, পনেরো নম্বর ছাউনির বুড়োদাকে একদিন মাঝরাতে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হল। যাওয়া মাত্র ড্রিপ চালু হল। পরদিন ভোরবেলা ভবলীলা সাঙ্গ হল বুড়োদা-র। বুড়োদা-র মা-বাবার কান্না দেখে অজয় মনস্থির করেছিল ওদের পরিবারকে কিছু অর্থ সাহায্য করবে। দিন পনেরো পরে ওদের বাড়িতে গেল, তার মাকে সাথে নিয়ে। বুড়োদার বাবা বললে, "কী আর বলবো, আমরা খাবার পাইনা ভালো করে, আর আমার ছেলে সিগারেটে ড্রাগ মিশিয়ে নিজের শরীরটা কে শেষ করে দিল। আমি ঈশ্বরের কাছে আকুতি করি, যারা বেচে, তাদের ও কোলের ছেলে যেন হারিয়ে যায়; মানুষ কিনা আরেকটা মানুষকে ওষুধ দিয়ে খুন করছে!"
    সেদিন বাড়ি ফিরে , অজয় তার মাকে বলে, লেকে স্নান করতে গেল। জলে নেমে গলা অবধি চুবিয়ে অনেকক্ষণ ভেবেছিল সে - তার রোজগারের চাপে এইরকম কত বুড়োদা ঝাঁঝরা হয়ে যাচ্ছে। সে যতবার উপার্জন করছে, সেই টাকার গায়ে রক্ত লেগে থাকছে! মনস্থির করল, আর না, রমেশদাকে গিয়ে জানিয়ে দেবে, আর সম্ভব নয়। কিন্তু , টাকা আসবে কোথা থেকে - আর সে রোজগার না করলে, তার মায়ের আবার সেই হাড়-খাটুনি, দিদির সেলাইয়ের ক্লাসে যাওয়া বন্ধ। তার ইচ্ছা ছিল দিদিকে একটা দরজির দোকান করে দেবে। গলা পর্যন্ত জলে ডুবে, সারা শরীরে জলের আদর উপভোগ করছে অজয়, আর ভাবছে, কি করে পথ পাল্টাবে। তার বিশ্বাস সে পারবে - তাদের সেই বুলবুলদা একদিন যখন রমেশের দোকানে শুনেছিল যে অজয় নিজে নেশা-ভাঙ করেনা, তখন তাকে বলেছিল "ভাইটি, তোর জেদ আছে বলতে হবে, খুব ভালো, পেটের জন্য যা করতে হয় কর, কিন্তু সেই দাগ যেন পিঠে না লাগে...."। সাথে সাথে মনে হল আজ বুলবুলদার সাথে দেখা করে পরামর্শ চাইবে।
    বিকেলে, বুলবুলদার সাথে দেখা করল।
    বুলবুলদা বলল, "তোকে যদি ওরা ছাড়তে না চায়, বলে দিবি, তাহলে বুলবুলদা চলে আসবে, তাতেই কাজ হবে, তবে তুই কিরকম কাজ করতে চাইছিস ভাইটি?"
    অজয় বলল, "আমি এমন কাজ করবো যাতে পাঁচটা লোক খুশী হয়, তবে ওইরকম নেশা করে খুশী, এমন নয়"।
    "তুই তোর মা আর দিদিকে অনেক দেখাশুনো করিস, আমি খবর রাখি, আমার ভালো লেগেছে, আমি তোকে সাহায্য করতে চাই," বলে চললো বুলবুলদা, "তবে কথা যেন পেটেও না যায়, বাইরেও না আসে - পেটে গেল তোর ক্ষতি আর বাইরে বেড়োলে আমার ক্ষতি, এইটুকু খেয়াল রাখতে হবে, সবসময়, কেউ বেশীকিছু জিগেস করলে আমাকে এসে বলিস"।
    বুলবুলদা আরো বলে, "তুই মানুষের আনন্দের জন্যে কাজ করবি খুব ভালো কথা, কাল বিকেলে পাঁচটার দিকে ওই রিক্সা-স্ট্যান্ডের কাছে পার্টি অফিসে চলে আয়"।

    বুলবুলদা ঠিক যেমন বলেছে, রমেশদাকে তেমনভাবে জানিয়ে পার্টি অফিস পৌঁছালো, অজয়। একটি টাক মাথা লোক এসে বলল, "তুই অজয়, আয় ভাই আমার সাথে, বুলবুলদা বলে রেখেছে আমাকে, আয় আমার স্কুটারে বসে পড়", বলে তাকে স্কুটারে বসিয়ে সোজা গিয়ে থামলো প্রতাপাদিত্য রোডে একটা তিনতলা বাড়ির সামনে। বাড়ির সামনে বোর্ডে লেখা 'ছায়া নার্সিং সেন্টার'।
    ওরা ফুটপাথে স্কুটার দাঁড় করিয়ে নামলো। নেমেই লোকটা অজয়কে বললো "কেউ জিগেস করলে বলবে ষোল বছর বয়স, আর বলবে থানায় আলাপ আছে"। তারপর আবার জিগেস করলো "আসলে বয়স কত তোর?"
    অজয় বললো "চোদ্দ, চার বছর ধরে ওই ট্রাফিক-পুলিশের জমা টাকা, ওই পানের দোকান থেকে নিয়ে , থানায় পৌঁছে দিচ্ছি, থানাতে অনেক চেনা!"
    এবারে লোকটা চকচকে দাত বার করে একটা চওড়া হাসি দিয়ে বলল, "বুলবুলদা চোস্ত ক্যান্ডিডেট দিয়েছে তাহলে, ঠিক আছে উপরে চল"।
    এবারে অজয় লোকটার হাত ধরে টেনে বলল, "নার্সিং সেন্টারে, আমার কী কাজ?"
    লোকটা বললো "দেখা যাক, নার্সরা তো রোগীদের সেবা করে, এখানেও তাই, একতলা আর দু'তলার নার্সরা শারীরিক রোগীদের সেবা করে, আর তিনতলার নার্সরা মানসিক রোগীদের সেবা-যত্ন করে...আগে দেখে নে তারপর কাজ বুঝিয়ে দেবো...ভালো কাজ, পাঁচ ঘন্টার ডিউটি।"
    ওরা তিনতলায় পাঁচটা ঘর ঘুরে দেখলো, সব ঘরে রঙিন টিভি, রঙিন সোফা, বড় খাট আর জানালাতে এসি মেশিন লাগানো। অজয় সব দেখে অবাক হলেও কিছু বললো না। ওরা কাউন্টারের লাগোয়া টু-সিটার সোফাতে বসল - একটি ছেলে এসে চা-চানাচুর দিয়ে গেল। কিছু পরে এক মাঝ-বয়সের ভদ্রলোক এলেন, সাদা-সার্ট, কালো প্যান্ট আর মোটা ফ্রেমের চশমা। অজয়ের সাথে আলাপ হল। ভদ্রলোক বললেন মাসে ছয় হাজার টাকা মাহিনা, আর এছাড়া পেসেন্ট পার্টি কোন বখশিস দিলে, ওই গার্ডের সাথে ভাগ করে নিও।

    অজয়রা নীচে নেমে এলো, অজয়ের মনে অনেক প্রশ্ন - বোধহয় আন্দাজ করতে পেরে লোকটা বলল "চল, আরো এককাপ করে চা খখাই, তারপর ফেরা যাবে", ওরা রাস্তার বাঁকে একটা দরজির দোকানের সামনে গিয়ে বসল। চা এলো, চুমুক দেওয়ার আগেআজ অজয় সংক্ষেপে জিগেস করল,"আমার কী কাজ, আর এই ১৯৯৬ সালে ছয়-হাজার টাকা মাহিনা কেন?"
    এবার লোকটা বলতে শুরু করল, "তোর ডিউটি সন্ধ্যা সাড়ে-আটটা থেকে শুরু, এই দরজির দোকানের সামনে, ওই যে পিসিও বুথটা, দোকানের গায়ে, ওর ভেতরে ঢুকে রিসিভার তুলে ২২২ নম্বর লাগাবি, তারপর জিগেস করবি নম্বর কত, উল্টোদিক থেকে একটা গাড়ির নম্বর বা ট্যাক্সির নম্বর বলে দেবে, সেই নম্বর নিয়ে সোজা মুদিয়ালি বাজারের পাশে রতনের হোটেলের সামনে গিয়ে দাঁড়াবি, সেখানে রিক্সা স্ট্যান্ডের পাশে ওই ঢগাড়ি বা ট্যাক্সি এসে দাঁড়াবে, কাছে গিয়ে লোকটাকে বলবি ডাক্তারবাবু এসে গেছে, লোকটা নামলে ওখানে লাইনের সবচেয়ে পিছনে যে রিক্সা, সেটায় চেপে এই নার্সিং সেন্টারে এসে, লোকটার হাত ধরে ধরে সিঁড়ি পর্যন্ত পৌঁছে দিবি, তারপর ও নিজেই উঠে যাবে; দেড়টা বেজে গেলে ঘরে চলে যাবি, আর পুলিসের জিপ দেখলে ভয়ের কিছু নেই, তবে যদি কালো ভ্যান দেখিস, ওই সেনটারের গার্ডকে জানিয়ে, এলাকা থেকে হালকা হয়ে যাবি, সব পরিস্কার?!"
    অজয় বললে, "এতে মানুষের আনন্দ কোথায়, আর এরা কিসের ডাক্তার দেখায়?"
    লোকটা একটু হেসে বলল, "খোকন আমার, এই যে লোকগুলোকে তুই রিক্সা করে নিয়ে আসবি, এদের টাকা পয়সা অনেক, বাড়িতে বৌ-বাচ্চা আছে, নিজের ঘর আছে, বাড়ি-গাড়ি সব আছে, লোকে ভাও দেয়....সব।কিছুর সাথে এদের একটা অসুখ আছে...ওই ভাড়া করা মেয়েমানুষের আদর না খেয়ে দিন শেষ হয়না....ওইটা হলে আবার এরা স্বাভাবিক হয়ে যায়, নাহলে জানোয়ারের মতন হয়ে যায়, তখন এদের কোন ভালো-মন্দ বিচার থাকে না, ওই তিনতলায় না আসলে এরা কার কী ক্ষতি করবে কেউ জানেনা - তবে একটা জিনিস বলা হয়নি, এই লাইনে দুটো নিয়ম পাশের লোক ছাড়া কারো সাথে কথা নয় আর রাতে যাদের চেনো, দিনে তাদের দিকে তাকাবেনা"।
    এরপর, পাঁচ বছর কেটে গেছে, অজয়ের মা এখন তার দিদির সেলাইয়ের ব্যাবসা দেখে, দিদির বিয়ে হয়ে গেছে ১৯৯৯ তে। অজয় মাঝে মধ্যে বারাসতে দিদির বাড়ি ঘুরে, মনে মনে ভয় তার মিষ্টিপনা দিদিটাকে কেউ লাইনে না ঢোকায়। এলাকায় যেকোন নির্বাচনে অজয়কে মিটিংয়ে ডাকা হয়, উপস্থিত থাকতে। অনেকদিন ধরে ইচ্ছা, ঢের হয়েছে, এবার লাইন ছাড়বো। লোকে জানে সে পুলিশের সিভিল অফিসার তাই রাতে ডিউটি করে। শুধু বুলবুলদা সব জানে । একদিন সন্ধ্যাবেলা মিনি তাকে বললো "রোল খেতে যাবি, কথা আছে"।
    রোল কিনে, ওরা মেনকা সিনেমা হলের সামনের গেট দিয়ে লেকের পার্কের পথ দিয়ে হাঁটতে শুরু করল। মিনি বললো, "শোন সময় নষ্ট করে লাভ নেই, তোকে একটা মেয়ে ভালোবাসে, বিয়ে করবি তাকে?"
    অজয় বললে, "মেয়েটা কি তুই?"
    মিনি বললো "না, নার্সিং সেনটারের মেয়ে" বলে মুচকি হাসলো।
    অজয় দাঁড়িয়ে পড়লো, একটু অবাক হবার ভান করে বললো "কোন নার্সারি?"
    মিনি বললো "নার্সারি নয় নার্সিং সেন্টার, যেখানে তুই রোজগার করিস"।
    "তুই কী করে জানলি?"
    মিনি বললো "তুই কাজে জয়েন করবার চারদিন পর ভোম্বলদা, যে তোকে স্কুটারে করে নিয়ে গিয়েছিল, সে আমাকেও ওখানে চাকরি দিয়েছে, একতলায়, তোর উপর আর গার্ডের উপর নজর রাখার জন্য"।
    অজয় খানিক লজ্জা, খানিক হতাশায় চুপ করে থাকলো। কিছুক্ষণ পরে বলল, "যে মেয়েটাকে চিনিনা, সে আমাকে ভালোবাসে, মাতাল নাকি গাঁজা খায়? এইসব এত সস্তা নয় রে মিনি!"
    "আচ্ছা বুঝেছি, ধরে নে পছন্দ করে....আর তুই যে মানুষের উপকার করতে চাস সবসময়, এই মেয়েটাকে বিয়ে করলে ও বেঁচে যাবে....করবি....ওর উপর বাবুরা তোড়জোড় করছে তিনতলায় চাকরি করার জন্য....এখন তো আর পালিয়ে বাঁচবেনা, আর কেউ না বুঝুক, তুই তো জানিস....এই দেখ থানাতে নতুন অফিসার এসেছে বলে এখন ক'দিন।সেন্টার বন্ধ, কিন্তু সেন্টার তো খুলবে, তখন তো ওরা ছাড়বেনা মেয়েটাকে....ওদের কোন পুরোন খদ্দের সিঁড়ি দিয়ে সকালবেলা নামবার সময় মালতিকে ঢুকতে দেখেছে দোতলায়...সেই থেকে নজর....তুই কিছু কর....দেরি করিস না"।
    "ঠিক আছে, দেখছি, কিন্তু তোর কি হবে? আমি যদি ওই মেয়েটাকে বাঁচাতে চাই, আমাকে হয়তো এই শহর ছাড়তে হবে, কিন্তু তোকে কে বাঁচাবে?" রোলের শেষ কাগজটুকু ছুঁড়ে ফেলে প্রশ্ন করলো অজয়।
    মিনি হেসে উত্তর দিলো,"ক'মাস পরে ভোম্বলদা আমাকে বিয়ে করবে"।
    এরপরে বুলবুলদার সাথে কথা বলে, অজয়, লেক গার্ডেন্সের একটা নার্সিং হোমে মালতিকে চাকরি যোগাড় করে দিল। বছর দুই হল সবে। আজ বুলবুলদা ডেকে পাঠিয়েছে অজয়কে।
    অজয় গিয়ে পার্টি অফিসে পৌঁছাতেই, বুলবুলদা বেড়িয়ে এল, বলল "শোন মালতিকে আর তোর মাকে নিয়ে সড়ে পড় এখান থেকে....এই খানকার সেই বজ্জাত ওসি, যে মালতিকে নজর দিয়েছিল, সে ট্র্যান্সফার হয়ে লেক থানায় আসছে....সময় নষ্ট করিস না"।
    অজয় বলল, "তোমাকে একটা পেন্নাম টরি বুলবুলদা..."
    "মনে রাখিস, আমি কখনো বিপদে পড়লে পাশে দাঁড়াস, ব্যস, পেন্নাম করিস না....লেক কালীবাড়িতে গিয়ে 'মা'কে একটা পেন্নাম করিস...তিনি না চাইলে তুই তো কবেই ভেসে যেতি!"

    * * *

    আজ অজয় বেঞ্চে এসে বসেছে, একলা থাকতে, আর এবার পোষাক পাল্টাবে বলে। আজ রাতে, মা আর মালতিকে নিয়ে আসানসোলে চলে যাচ্ছে, একটা কারখানায় কাজ নিয়ে। বলবুলদাই যোগাড় করেছে। ঘরে যাবার পথে, পার্কের অন্ধকার বেয়ে, রেললাইনের ঢালু চড়ে লাইনের মাঝখানে এসে দাঁড়ালো, সেই যেখানে লাশটা পড়েছিল.....পকেট থেকে দু'শ-টাকা বার করে, দলা-মোচা করে ছুঁড়ে ফেলে দিল, বিড়বিড় করে বলল "পুলিশের টাকা চাইনা!"

    কাল সকালে অজয়দের জীবনে, টালিগঞ্জের রেললাইন অতীত হয়ে যাবে।

    ঋত্বিক সেনগুপ্ত।।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • গপ্পো | ০১ মে ২০২০ | ৩৪৪১ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    ইঁদুর  - Anirban M
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • জয় দত্ত | 172.68.146.205 | ০২ মে ২০২০ ০২:০৯92896
  • বাহ্ । পড়তে পড়তে হারিয়ে গেছিলাম ওই লেকের আসে পাশে। অদ্ভুত । মন ভরে গেল। 

  • Aloka Bhattacharyya | 162.158.165.11 | ০৩ মে ২০২০ ২১:১১92958
  • Bhalo laaglo. 

  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ঠিক অথবা ভুল মতামত দিন