এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  বইপত্তর

  • শহীদ হবার আগের মৌমাছিগুলো   

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    বইপত্তর | ০৫ এপ্রিল ২০২০ | ২৪৮৮ বার পঠিত
  • অনেক দিন নিজের বাঙালীয়ানার পরীক্ষা দেওয়া হয় না, আর দেবার মনে হয় দরকারও নেই! নিজের বাঙালীত্ব প্রমাণের শেষ ধাপটা অতিক্রম ফেলেছি সেই প্রায় এগারো বছর আগে যখন নিজের কবিতার প্রথম এবং একমাত্র বইটি বের করে ফেলি। বলাই বাহুল্য কেউ ছাপতেও চায় নি, আর বই বেরোবার পর কেউ পড়েও নি! রিভিউ তো দূরের কথা! বাঙালীত্বের প্রমাণের পরীক্ষায় পাশ করেছিলাম কিনা জানা নেই কিন্তু এতোটা আঁতেল হয়ে উঠতে পারি নি যে কাউকে বই পাঠিয়ে অনুরোধ করব রিভিউ লিখে দেবার জন্য! রিভিউ লেখার মত কাউকে যে তেমন চিনতাম না, এই সত্যি কথাটা বলে আর হাটে হাঁড়ি ভাঙতে চাইছি না।

    সেই যুগে প্রিন্ট-অন-ডিম্যান্ড এত বেশী প্রচলিত হয় নি বাঙলা বই ছাপার ক্ষেত্রে। ফলতঃ আমার কবিতার বইয়ের প্রায় সবকিছুই অবাঙালী জনতাকে দিয়ে সম্পন্ন করা। কেবল ভূমিকাটা বাদে – নেহাত কবিতা না পড়ে ভূমিকা ঠিক যুতসই লেখা যায় না, আর তার জন্য বাঙলা জানতে হবে, তাই ভূমিকা লেখার ক্ষেত্রে বাঙালী অবদান রেখে গিয়েছিল।

    এখনো হাতের কাছে সেই বইটা রয়ে গেছে দু-পিস – কি কি ধরণের কবিতা ছিল সেই বইতে সেটা মনে আছে মোটামুটি, কিন্তু যেটা মনে ছিল না তা হল বইটাকে আমি আবার চারটে চ্যাপ্টারে ভাগ করেছিলাম। প্রতি চ্যাপ্টারের শুরুতে বাংলায় বিশুদ্ধ ধোঁয়াশা তৈরী করার চেষ্টা করেছিলাম – সেদিন পড়তে গিয়ে নিজের গায়েই কাঁটা দিয়ে উঠল! হালকা দেখে নেওয়া যাক কি পরিমাণ আঁতেল হতে পেরেছিলাম তৎকালে -

    প্রথম চ্যাপ্টারের শুরুতে লেখা হচ্ছেঃ

    “--- অথচ দরজাটা খোলাই ছিল। ছাদ আশ্রয়, দেওয়াল সুরক্ষা দিলে দরজা দিয়েছে গোপনীয়তা। আর সেই সূচনা থেকেই জানালার সাথে মিথ্‌ হয়ে গেছে অজস্র অলিখিত ও কিছু লিখিত পঙতিমালা। বলা হয় এক ছাদের নীচে বসবাস করলে নাকি সম্পর্ক দানা বাঁধে। সেই পরিবর্তনশীল সম্পর্কের সাথে মানবিক বিক্রিয়ায় কিছু মুহুর্ত তৈরী হয়। তেমনি কিছু মুহুর্ত কবিতার আকারে – যেখানে কাঠের সিঁড়ির সাথে নুপূরধ্বনি অজান্তেই মিশে গেছে --”

    কি বোঝাতে চেয়েছিলাম তা আর নিজে এতদিন পরে বুঝে উঠতে পারলাম না!

    দ্বিতীয় চ্যাপ্টারের শুরুতে লেখা হচ্ছেঃ

    “মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসের নামই কি পরিক্রমা? সচল পরিক্রমাকে ভ্রমণ নাম দিলে অনুভূতির পরিক্রমাকে কি বলা যায়? আমার ক্ষয়িষ্ণু ভাবনাগুলি প্রায়শঃই সৌন্দর্য কেন্দ্রীক অনুভূতির সমান্তরালে প্রবাহিত হয় – সেখানে আকর্ষণ আছে, কিছু বর্ষাস্নাত দুপুরের খুনসুটি – আর স্বচ্ছ অথচ নির্জন সন্ধ্যায় রোমন্থন। পরিক্রমা শুরু এবং শেষ বা না শেষ হবার মাঝখানের সময়টুকুতে অর্জিত হয় অভিজ্ঞতা। বর্ণনা সর্বদাই তাই কিছু আপাত সত্যের উপাখ্যান - ”

    লেখার সময়কাল ব্যাকট্র্যাক করে মিলিয়ে দেখে বুঝতে পারলাম – পি এইচ ডি থিসিস লিখতে লিখতে মাথাটা আউলে গিয়েছিল। সারাদিন লেখা আর সন্ধ্যে বেলায় ক্লান্ত হয়ে রোমন্থন – এমনি মনে হয় কিছু একটা দাবী করতে চেয়েছিলাম।

    তৃতীয় চ্যাপ্টারের শুরুটাঃ

    “বিচ্ছুরণে মুদ্ধতা তৈরী হয়। আর তার কদর মানুষ করে এসেছে সেই প্রস্তর যুগ থেকেই। তবে নিয়ন্ত্রিত রশ্মির কারুকাজ তার করায়ত্ব হয়েছে বলতে গেলে প্রায় এই সেইদিনই। উন্মোচনের সাথে রহস্য তৈরী করতে ভালোবাসা মানুষ তাই মুদ্ধতা জনিত আবেগ প্রকাশের মাধ্যম হিসাবে কবিতাকে বেছে নিয়েছে কোন কোন সময় – ক্যালাইডোস্কোপের মতনই কবিতায় প্যাটার্ণ গড়ে ওঠে, কিছু শব্দ থেকে একমাত্রিক, দ্বিমাত্রিক বা বহুমাত্রিক প্রতিফলনে - ”

    বুঝতেই পারছেন প্রস্তর যুগ থেকে মানুষ কি করছে তা আমার পক্ষে জানা সম্ভব ছিল না – সেই যুগে কিছু বিচ্ছুরিত হত কিনা তাও আমার জানা ছিল না – পোয়েটিক লাইসেন্স নিয়েছিলাম আর কি!

    শেষ চ্যাপ্টারের শুরুতে লিখে দিয়েছিলামঃ

    “একটা সময়ে দিনলিপি স্মৃতিমেদুর করে তোলে – আমরা তো মেদুরতা ভালোবাসি! মস্তিষ্কের ধূসর কোষগুলোয় প্রোথিত থাকে আবেশ ও বিহ্বল মুহুর্তের জটিল ফুটপ্রিন্ট। অথচ কত সাধারণে বাঁচা যায় অণুক্ষণ – তাই তো বৈচিত্রের সাথে জড়িয়ে থাকা পর্যবেক্ষণ মূলসূর হতেই পারে এখনও লেখা হয় নি এমন সব কবিতার কারণ জানি পদার্থবিদ্যার সেই বিড়ালটির মত সমস্ত সময়েই আমি একই সাথে মৃত ও জীবিত ছিলাম - ”

    বার খেয়ে তো কবিতা বইয়ের পাণ্ডুলিপি তৈরী করে ফেললাম, কিন্তু প্রচ্ছদ করবে কে! তখনো বিয়ে হয় নি, তাই এমন উপায় নেই যে প্রচ্ছদ অমৃতা-কে দিয়ে আঁকিয়ে পুরো ব্যাপারটা হোম প্রোডাকশন করে নেব! আর আমি কোন শিল্পীকে চিনিনা – ফলতঃ একে ওকে জিজ্ঞেস করা শুরু করলাম, ভাই একটা কেউ প্রচ্ছদ করে দেবার লোক পাওয়া যাবে? আমার মাথার ভিতর তখনো ঘুরছে এই ব্যাপারটা যে, প্রচ্ছদ করতে হলে কবিতাগুলি মূল ভাষায় পড়া জরুরী। একে তাকে মেল করলাম – বেশীর ভাগই উত্তর দিল না, যারা দিল তাদের অ্যাসেসমেন্ট আমি করলাম এই ভাবে, “বারো হাত কাঁকুড়ের তেরো হাত বীচি”।

    একদিন কথা প্রসঙ্গে আমার এই প্রচ্ছদ শিল্পী খুঁজে পাবার ব্যাথার কথা যোসেফ-কে বললাম। যোসেফ আমার বন্ধু, ‘মালটা’ নামক দেশের। যোসেফ সোফায় বসে বসে মাল খাচ্ছিল, আমাকে বলল, “আরে ধুর এটা কোন ব্যাপার হল। তুই আমার খুড়তুতো ভাই ক্রীস-কে বল, ও করে দেবে”। ক্রীস-কে আমি চিনতাম, ওই যোসেফ এর সূত্রেই চেশাশুনা, আমাদের কাঠের বাড়িতে প্রায়ই আসত। ক্রীসের পুরো নাম, ক্রীস অ্যাকুইলিনা – সে তখন বার্মিংহাম ইউনিভার্সিটিতে ক্রিয়েটিভ ডিজাইন নিয়ে পড়ছে। মাতাল যোসেফ সেই রাত একটার সময় ক্রীস-কে ফোন লাগালো, বল খুব জরুরী দরকার, তুই এক্ষুণি নিয়ে চলে আয়। ক্রীস হন্তদন্ত হয়ে ব্রডওয়ের কোন পাব থেকে বেরিয়ে আমাদের বাড়ি চলে এল। এসে দ্যাখে জরুরী তো কিছু নয় – বরং বইয়ের প্রচ্ছদ করতে হবে! তবে ক্রীস খুব ভদ্র ছেলে, মুখে কিছু না বলে আমার কাছ থেকে পুরো ব্যাপারটা শুনলো। যে বইয়ের নাম “শহীদ হবার আগের মৌমাছিগুলো” তা ইংরাজীতে অনুবাদ করা কি চাপের তা নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন! অনেক কষ্ট করে আমি বইয়ের সারমর্ম ক্রীস-কে বোঝালাম। সে বললো বুঝলাম, আমি ধ্বন্দে রইলাম – কারণ আমি নিশ্চিত ছিলাম যে নিজে কবিতা না পড়ে উপযুক্ত প্রচ্ছদ অসম্ভব।

    আমার কবিতার বই-টা কেউ পড়ে নি কথাটা মনে হয় পুরোপুরি সত্যি নয়। অন্তত তিন জন পড়েছিল আমি নিশ্চিত – আমার অনুরোধে আর্যনীল-দা ভূমিকা লিখে দিয়েছিল, অমৃতা পড়েছিল কবিতার বইটা সিওর, কারণ আমাকে প্রথম প্রথম জিজ্ঞেস করত, ভিভিয়ান কে? আর নিখাদ পাঠক মনে হয় একজনই ছিল সেই বইয়ের – অন্যএকজন।

    আজকে যখন ফিরে দেখি নিজের প্রথম বইটা, অনেক কিছুই পাল্টাতে ইচ্ছা করে। নতুন করে লিখতে করে অনেক কবিতা, নতুন ভাবে লেখনীতে ধরতে ইচ্ছে করে মৌমাছিদের। কিন্তু ক্রীস-এর করে দেওয়া প্রচ্ছদটা পাল্টাতে ইচ্ছে করে না – আমি আজও নতুন করে ওই কবিতাগুলি লিখলেও, ক্রীসের আঁকা প্রচ্ছদটাই রেখে দিতাম। আর পাল্টাতে চাইতাম না ভিভিয়ান-কে নিয়ে লেখা কবিতাগুলো।

    সঙ্গের ছবিটি ক্রীসের আঁকা প্রচ্ছদের – আমার প্রিয় হয়ে আছে আজও।


    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • বইপত্তর | ০৫ এপ্রিল ২০২০ | ২৪৮৮ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • শিবাংশু | ০৫ এপ্রিল ২০২০ ১৫:১০92040
  • ছেলে বলে নাকি কবিতা বোঝেনা! :-)

    প্রচ্ছদের গল্পটা তো জানতুম। আবার পড়া হলো ...
  • একলহমা | ০৫ এপ্রিল ২০২০ ২০:২৮92048
  • চমৎকার প্রচ্ছদ, অসাধারণ!
    তোমরা ত কৌরব ছিলে, কিছু লোক নিশ্চয়ই পড়েছেন। :)
    চারটে ভাগ থেকে দুটি-তিনটি করে নিয়ে একটি তোড়া দেবে নাকি এখানে? ও হ‍্যাঁ, ভিভিয়ান কে?
  • সুকি | 108.162.237.21 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১২:০৫92054
  • শিবাংশুদা,
    কবিতাই এমন একটা বিষয় যেখানে কম এফর্টে আঁতেল হওয়া যায় :)

    একলহমা,
    খেয়েছে, আপনি আবার কৌরবের খোঁজ খবর রাখেন দেখেছি :) আসলে আমি চিরদিনই আউটসাইডার টাইপের, বেশীর ভাগ সময়ে বহিরবৃত্তে ঘুরপাক খেয়ে থাকি। তবে কবিতা একটু আধটু সিরিয়াস চর্চা করেছি একসময় - এক জায়গায় নিয়মিত লিখতামও এক জায়গায়, সেখানে কবিতা লেখক হিসাবেই চেনে লোকে। গুরুতে তেমন ভাবে কবিতা নিয়ে তো চর্চা হয় না, তাই ওগুলো উহ্য থেকে যায়।

    ভিভিয়ান-কে নিয়ে এই গুরুতেই লিখেছি তো আগে, এখানে আছেঃ

    https://www.guruchandali.com/comment.php?topic=14968
  • r2h | 162.158.22.249 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১২:২৫92055
  • লেখাটা নিয়ে আর কী বলবো, অতি চমৎকার ইত্যাদি, প্রচ্ছদটাও অসাধারন (আমি একটা জিনিস ভাবছি যদিও, ফ্রন্ট ব্যাক একসঙ্গে দেখলে যেটা পাওয়া যাচ্ছে, একটা দিক একবারে দেখলে সেই অভিজ্ঞতা একটু অসম্পূর্ন হবে কিনা, এবং ফ্রন্ট কভারেই পুরো ছবিটা ভার্টিক্যল করে দিলে কেমন হতো, এইসব)।

    তবে সেসব যাক। যে লাইনটা পড়ে মন্তব্য করতে এলাম সেটা হলো "গুরুতে তেমন ভাবে কবিতা নিয়ে তো চর্চা হয় না"।

    এটা খুবই ঠিক কথা, কিন্তু একটু মর্মপীড়া। ক'বছর আগে লোকজন হৈহৈ করে কবিতা লিখতো, ছন্দ ইত্যাদি নিয়ে বড় বড় টই হয়েছে।
    কিন্তু কোনভাবে, কবিতা নিয়ে চর্চা, আলোচনা সেটা সত্যিই হয়নি। কদিন আগেও ছোটাইদির কথা প্রসঙ্গে আলোচনা নিয়ে একটু গজগজ করছিলাম, আবার মনে হলো।

    মিঠুন, একক, ওমনাথ এদের মাঝে মাঝে কবিতা নিয়ে নৃশংস কাঁটাছেঁড়া করতে বলেছি (সোমনাথকেও বলেছি কিনা মনে পড়ছে না) , কিন্তু যতই তুর্কী হোক কবিদের মনে দুঃখ দিতে এদের অনীহা। কৌশিকদা কয়েকটা লেখা লিখেছে তাও, যদিও কারো কোন নিন্দে করেনি।
  • সম্বিৎ | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১২:৩৯92056
  • সুকি কৌরব নাকি? পরবাসের আদিমকালে কমলদার সঙ্গে মোলাকাত মনে পড়ে গেল। আর পারমিতার আর্যনীলের সঙ্গে সুনীল গাঙ্গুলির সাক্ষাৎকার।
  • সুকি | 108.162.237.45 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৩:২৬92059
  • ন্যাড়াদা,
    ওই সাক্ষাতকারটা আগে পড়েছি, তখন অবশ্য পারমিতাদিকে চিনতাম না। বাংলা কবিতা নিয়ে সমকালীন চিন্তাভাবনা করতে এবং একটানা কাজ করে যেতে আর্যনীল-দার মতন খুব কম লোককে দেখেছি। এই গুরু থেকেও তো আগের বছর বইমেলায় সেই কবিতার চটি হল, তাতে আর্যনীলদার কবিতা ছিল মনে পড়ছে। তবে আমার সংযোগ সবই ওই 'নতুন' কৌরবের দলের সাথে - মানে কৌরব ওই অনলাইন হয়ে থেকে। পুরানো কৌরব তেমন কাউকে চিনি না ব্যক্তিগত ভাবে -

    মনে পড়ে গেল সেই বহুকাল আগে কি সব লিখেছিলেম আমরা সবাই -

    https://jacket2.org/article/circumcontentive-poetry

    হুতো,
    আক্ষেপ শুধু আমার নয়, অনেকেরই এমন আক্ষেপ কবিতা নিয়ে। আর এটা শুধু গুরুর ওয়েব সাইটের প্রবলেম নয়, এক সামগ্রিক প্রবলেম। আলোচনা করবে কে? সবাই লিখে চলেছে কবিতা এবং একে অপরের পিঠ চুলকানোর মত ব্যাপার হচ্ছে - কে কার কবিতা খারাপ বলবে? আর গোষ্ঠীর ব্যাপার - কবিতার থেকেও গোষ্ঠী পোষণ এবং দ্বন্দ নিয়েই কবিরা অস্থির। যাই হোক, অনেক ব্যাথার জায়গা আছে।
  • সিএস | 162.158.22.33 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৫:০৬92061
  • আশির দশক থেকে, কৌরবের প্রভাবে, কমল চক্রবর্তী যতটা না তার থেকে ঢের বেশী বারীন ঘোষালের লেখা আর থিওরাইজেশনের মদতে (অতিচেতনার কবিতা ইত্যাদি, যদিও সেগুলো অনেক ক্ষেত্রেই প্রবলেম্যাটিক), কিছুটা কৌরব অনলাইন, কিছুটা কবিতা ক্যাম্পাস, নতুন কবিতা ইত্যাদিতে কবিতাকে দলছুট করার চেষ্টা করা হয়েছিল। আর্যনীল বিদেশে থাকেন বলেই হয়ত, সেখানকার ছোট প্রেস বা ক্যাম্পাস থেকে বেরোন লেখালেখির সাথে পরিচিত ছিলেন, সেসবই লেখায় নিয়ে আসার চেষ্টা করেছিলেন, ভাষাভাবনার কবিতা ইত্যাদিতে তার পরিচয় আছে। কবিতা ক্যাম্পাস বা নতুন কবিতায়, প্রণব পাল, অলোক গোস্বামী অথবা ধীমান চক্রবর্তীদের লেখায় কবিতার শব্দকে ব্যাঁকানো হয়েছে, চলে আসা কবিতা যার ধরণ অনুভূতিময়তা বা লিরিসিজমের মধ্যে ছিল সেগুলো থেকে সর্বৈব সরে গিয়ে। কিছুজনের কবিতা কিছুতা হলেও হয়েছে, আর্যনীলেরই কিছু কবিতা, শুভ্র মুখোপাধ্যায়ের বা অরূপরতন ঘোষের। সবাই যে একই সাথে একইরকমের কবিতা লিখেছেন বা একই রকমের লিখব সেরকম ছিল না নিশ্চয়। অনেকেরই লেখা ক্রিপ্টিক হয়েছে বিশেষ করে কবিতা ক্যাম্পাস গোষ্ঠীর লেখাগুলো, তবু এরও মধ্যে কিছুজনের কবিতা ইঙ্গিতময়ও হয়েছে, যেমন আর্যনীলেরই কিছু কবিতা, শুভ্র মুখোপধ্যায়ের কবিতা বা অরূপরতন ঘোষেরও।

    (এর বেশী লিখতে গেলে কবিতা ধরে ধরে লিখতে হবে। ঃ-))
  • | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৪৯92062
  • আগেই হাত তুলে ভয়ে ভয়ে বলে রাখি আমি বাপু কবিতা বুঝি না।
    এই প্রচ্ছদটা বেশ দেখতে।

    গুরুতে এককালে প্রচুর কবি ছিল। তারা সারা দুপুর খেলার ছলে কবিতা লিখত, অনেক সময় নিছক ইয়ার্কি মেরে একে অন্যের উত্তরে লিখে যেত। রঙ্গন, বিক্রম, হুতো টিমি, টি, দুখে এবং ডিডিদাদা। এছাড়া সোসেন, একক খুবই সিরিয়াস কবি। কোনোরূ ছ্যাবলামিতে যোগ দেয় নাই। তেকেণা মানে সই সঙ্গীতাও অল্প কিছু কবিতা লিখেছে। ও হ্যাঁ ট্যান মানে আটোজ। তবে সেসব সুন্দর ব্যাপার স্যাপার ভাট আর টইতে ছড়িয়ে আছে। সম্প্রতি বহতা অংশুমালূর কবিতাঅ ভাল লেগেছে।

    তবে ফেসবুক কবিদের আমি সাংঘাতিক ভয় পাই। দুর্দমনীয় বেগে তাঁরা চেনা অচেনা আধাচেনা সবাইকে কবিতা ইনবজস করেন। বাবাগো
  • | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৫০92063
  • *বহতা অংশুমালী
  • সিএস | 162.158.22.153 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৫:৫৬92064
  • * নামগুলো নিয়ে বাক্যটা দু'বার লিখেছি।
  • সুকি | 162.158.187.72 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৩১92066
  • সিএস,
    আপনি কৌরবের এবং সাম্প্রতিক বাংলা কবিতা নিয়ে খোঁজ খবর রাখেন দেখে খুব ভালো লাগলো। আপনি যেগুলো বলেছেন তার সাথে আমি অনেকাংশেই একমত। বারীণদার শেষের দিকে (বা তারো অনেক আগের) কবিতা গুলো আমি ব্যক্তিগত ভাবে পড়ে আনন্দ পাই নি। কবিতা কেমন হওয়া উচিত বলে মনের মধ্যে যে ধারণা গড়ে তুলেছি তার সাথে সেই সব কবিতার কোণ মিল পেতাম না। এইই ভাবে 'নতুন কবিতা' বলে যে জিনিসটি সার্ভ করা হচ্ছিল, সেটাও নেওয়া বেশ চাপের হয়ে যাচ্ছিল। তবে এই সবই গোষ্ঠিগত ব্যাপার - যা দেখলাম সকল গোষ্ঠীরই মূল সমস্যা হচ্ছে, মুখে যাই বলো না কেন, আপনি সেই গ্রুপে থাকতে হলে আপনাকে তার প্রাণপুরুষের সাথে সহমত হতে হবে। আনন্দ বাজার বিরোধী আন্দোলন এদের ব্যাক অব দ্যা মাইন্ড থেকেই যায় এবং আনন্দ বাজারকে (এখন আর আনন্দ বাজার গালাগাল যোগ্য নেই) গালাগাল দিতে দিতে এরা নিজেদের মত করে ছোট ছোট আনন্দবাজার মানসিকতা গড়ে তুলেছে। শুভ্র (তবে ওটা বন্দ্যোপাধ্যায় হবে) অনেক ভালো লিখেছে, ওর বৌদ্ধ লেখমালা তো অনেক ভালো। যেমন লিখেছেন, অরূপরতন ভালো লিখেছে, সব্যদা (সান্যাল) অনেক ভালো কবিতা লিখেছে। যাই হোক, অনেক দিন পরে এই নিয়ে আলোচনা দেখে ভালো লাগল।

    দমু-দি,
    হ্যাঁ, অনেকেই তো লিখেছে। তবে তেমন পরীক্ষা-নিরীক্ষা কবিতা নিয়ে তেমন পাই নি এই সাইটে। যেমনটা পেয়েছি অন্য অনেক বিষয় নিয়ে এখানে। একান্তই ব্যক্তিগত মতামত।
  • সিএস | 162.158.22.153 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৬:৫৬92067
  • হ্যাঁ, শুভ্র বন্দ্যোপাধ্যায়। মুখোপাধ্যায় তো শৌভ, শৌভ মুখোপাধ্যায়, কৌরব থেকেই বই আছে বোধ করি, এখানেও তো লিখেছেন।

    সব্যসাচী সান্যালও উল্লেখ করার ছিল। এপ্রিলতা নামে যে লেখাটা সেটা তো কৌরবে 'ভাষাভাবনার কবিতা'-র অংশ হিসেবে ছাপা হয়েছিল। কিন্তু উৎসাহীরা পড়ে দেখতে পারেন এটা জানার জন্য যে কবিতার ঠিক বাঁধাধরা আকার বা রূপ নাও থাকতে পারে, এই লেখাটির মত সেটি একটি ডায়েরী বা আত্মজীবনীর অংশ অথবা এপ্রিলের বসন্তে আগত উৎকন্ঠা হতে পারে। জগতকে দেখার একটি দর্শন বা উপায় যদি হয় কবিতা, তাহলে কবিতা তো যেকোন ফর্মই নিতে পারে।
  • সুকি | 162.158.187.104 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৩৯92074
  • ওই শৌভ তো চট্টোপাধ্যায়, ওর কবিতার বই "মায়াকানন" বের করেছে রোহণ সৃষ্টিসুখ থেকে গতবার।
  • সিএস | 162.158.158.200 | ০৬ এপ্রিল ২০২০ ১৮:৫৬92075
  • কি মুস্কিল !!!! ঃ-)
  • একলহমা | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০২:৫৭92077
  • কোন এক জন্মে আমি কৌরব-এর পাঠক ছিলাম। তার পর কত জন্ম কেটে গেছে, কত ঢন্দ্রভূক অমাবস্যা - এখন সকলই অতীত।
  • সুকি | 108.162.237.207 | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ১৭:১১92095
  • পুরো ভৌতিক কেস - আক্ষেপ করছিলাম আমার কবিতার বই নিয়ে এবং সেটার কেউ আলোচনা করে নি বলে। আজ জানতে পারলাম রুণা-দি এটা নিয়ে একটা আলোচনা করেছে গতমাসে!

    https://dehlij5.blogspot.com/2020/03/blog-post_78.html?fbclid=IwAR03RNVJ28uS9DPMoKG1F2EU4G_Xl6ySggCWrniTHtDFlk28LR8gWznnc08

    বাই দি ওয়ে, রুণা বন্দোপাধ্যায় নিয়মিত সিরিয়াসলি কবিতার আলোচনা করে যাচ্ছে নানা কবিদের নিয়ে। খুব কম দেখা যায় এমনটা।
  • r2h | 162.158.22.249 | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ২০:০৭92098
  • আলোচনায় প্রচ্ছদের ছবি আর ডিটেল অন্য - কিছু মিস করলাম? ক্রীসের প্রচ্ছদটা শেষ পর্যন্ত হয়নি?
  • সুকি | 162.158.187.72 | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ২০:৫৯92101
  • আরে সে এক অন্য গল্প - তখনো তেমন প্রিন্ট অন ডিম্যান্ড বাংলায় চালু হয় নি, ক্রীসের সাথে সাথে অন্য এই প্রচ্ছদ করে দিয়েছিল কবি বন্ধু সুদীপ্ত, তালেগোলে দুই প্রচ্ছদেই বই ছাপা হয় কয়েক কপি করে - যে যেটা পেয়েছিল তারপর!
  • r2h | 162.158.23.4 | ০৭ এপ্রিল ২০২০ ২১:৪৪92103
  • আচ্ছা ঃ)
  • একলহমা | ০৮ এপ্রিল ২০২০ ০৬:৫৮92109
  • রুণা বন্দ্যোপাধ্যায়-এর আলোচনা পড়ে এলাম - খুব সুন্দর লেখা।
  • Du | 172.69.71.81 | ১০ এপ্রিল ২০২০ ০৩:৫১92126
  • একটু মজা করছি শুরুর লাইনের প্রসঙ্গ তুলে - ক্রিস বাঙ্গালীর প্রিয় কাজটা ঠিকই বুঝেছে ঃ)
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। সুচিন্তিত মতামত দিন