এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • প্যাসেজ টু হেভেন (পর্ব-২)

    Maskwaith Ahsan লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০২ জুন ২০১৫ | ১৫৪৬ বার পঠিত
  • সুঁতোর টান নেই, অথচ ঘুড্ডি আছে
    বেহেশতে সৃষ্টিকর্তা চেষ্টা করেছেন জগতে সমাজের চাপে এক হতে না পারা প্রেমাত্মাদের সাত পাকে বেঁধে দিতে। দেবদাস-পার্বতী, লায়লা-মজনু, রোমিও-জুলিয়েটের বিয়ে হয়েছে। সুন্দর একটা বাসা, বিরহ ভাতা সবই পাচ্ছেন তারা।

    লায়লা মেয়েটা ভালো। তবে সামান্য কালো। এ কারণে মজনুর চোখ পড়েছে ব্রিজিত বার্দোর দিকে। আর ব্রিজিত জানেন কী ভাবে মজনুদের লেজে খেলাতে হয়। লায়লার সবই ভালো;কিন্তু মেয়েটা একেবারেই ঢং ঢাং জানে না। কেমন বোন বোন লাগে মজনুর কাছে। অন্যদিকে ব্রিজিত যেন লরেলাই, যাদু হ্যায় নেশা হ্যায়। বেহেশতের কতজনই তার প্রেমে আকুল। জওহরলাল নেহেরু তার পুঁজিবাদী পার্টির কাজ ফেলে দৌড়ে বেড়ায় ব্রিজিত বার্দোর পিছে। আর ওদিকে লেডি মাউন্টব্যাডেন তো আছেই। ব্রিজিত বার্দোর অবশ্য মজনুকেই ভাল লাগে। ঘোড়েল মেয়েরা বোকা প্রেমিক ভালবাসে। নেহেরুর ওপর চালাকিটা আর বেহেশতে কাজে আসছে না। লায়লা একা একা বসে রুমাল সেলাই করে। দোয়া পড়ে ফুঁ দেয়। এই রুমাল পকেটে রাখলে যেন মজনু বেপথু না হয়।

    তাই কী হয়। ব্রিজিত বার্দো বলে কথা। মজনুকে দিয়ে লন মোয়িং করায়। মানে মজনু ব্রিজিত বার্দোর বাগানের মালি হয়ে যায়। আর ওদিকে দুঃখিনী লায়লা অস্নাত-অভুক্ত-অতৃপ্ত যেন বেঘুম রাতের সাথীকে খুঁজছে।

    বিদ্যাসাগর যেহেতু বেহেশতেও বিধবা সেবা নিকেতনের অধ্যক্ষ; উনি একটু যা লায়লার খোঁজ খবর নেন। তবে উনি তো শুধু বিদ্যার গল্প করেন। সাগরের কোনগল্প নেই তার কাছে; তাই লায়লা ক্রমশঃ ইন্টেলেকচুয়াল হয়ে ওঠে। উদাসীন মজনুর লায়লারাই হয়তো ইন্টেলেকচুয়াল হয়।

    গান্ধীজীর অবশ্য একটা নজর রয়েছে লায়লার দিকে। উনি ডান হাতটি জুলিয়েটের কাঁধে রাখার ব্যাপারটা সেটল করে ফেলেছেন। বাম হাতটি খুব ইচ্ছা ছিল চন্দ্রমুখীর কাঁধে রাখার। চন্দ্রমুখী সটান না করে দিয়েছে। এতো নাটক করে ভারত বিভাগ ঠেকাতে পারে নি যে লোক তার সঙ্গে এতো খেজুরে আলাপের ইচ্ছা নাই চন্দ্রমুখীর।জীবনে দুজন দেবদাস দরকার নাই তার । একটা নিয়েই অনেক ভুগেছে মেয়েটি।

    গান্ধীজী লায়লার মাঝে প্রতিশ্রুতি খুঁজেছেন। ভারতের কোন নারী আর গান্ধীজীর ধারে কাছে ভেড়ে না।লায়লা রাজী হয়ে যায়। গান্ধী মজনুর চেয়ে অনেক কেয়ারিং।জুলিয়েট- লায়লা নিয়ে গান্ধীজী সাম্যবাদ প্রতিষ্ঠার আন্দোলন শুরু করেন।

    রোমিও বেহেশতে এসে রীতিমত ক্যাসানুভা হয়ে গেছে। অড্রে হেপবার্ণ থেকে পারভিন ববি সব ফিল্ম স্টারের সঙ্গেই দহরম মহরম তার। হেভেনের মনোচিকিতসক অবশ্য দেবদাস-পার্বতী, লায়লা-মজনু, রোমিও-জুলিয়েটকে ম্যারেজ কাউন্সেলিং করছে। কাজ হবে বলে মনে হয়না।

    বেহেশতের শান্তি নিকেতনে কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাঠের বারান্দায় বসে ভিক্টোরিয়া ওকাম্পোকে বোঝান,
    ওকাম্পো ম্যারেজ ইজ দ্য এন্ড অফ লাভ। দেখো ঐ জগত সেরা প্রেম-প্রতীকদেরবেহাল অবস্থা।

    ওকাম্পো ভালোই ছিল। সুচিত্রা সেন বেড়াতে এসে এই বিয়ের পোকাটা ঢুকিয়ে দিয়েছেন । উনি বলেছেন, উত্তমকেও আমি সাফ জানিয়ে দিয়েছি ফোর টোয়েন্টি চলবে না। নিবন্ধিত বিয়ে ছাড়া সুচিত্রা সেখানে নাই।

    উত্তম বিয়ের কথা শুনে আর একবারো ফোন করেনি। শোনা যায় লেডি ডায়ানার বাসায় তার নিয়মিত যাতায়াত।
    বিপদে পড়েছেন বেচারা রবি ঠাকুর, ওকাম্পো খালি বিয়ে বিয়ে শিখেছে ঐ সুচিত্রার কাছে। বিচিত্র এই পাবনার মেয়ে। তাকে যে কেউই পাবে না।

    জিয়াউর রহমান হেভেনে খাল কেটে বেড়ান। তাকে ম্যারেজ ব্যুরো থেকে বলা হয়েছিল তার ব্যাপারে জেন অস্টিনের আগ্রহ আছে। কিন্তু জিয়া এই মহিলার খুব পেঁচানো মেয়েলী উপন্যাস পড়ে বিরক্ত। উনি অপেক্ষা করছেন ঢাকার জেন অস্টিনই আসুক। সুন্দরী নারী মানেই বাঁকা চুল। সোজা করা অসম্ভব। আসুক পুতুলই আসুক। আর কিউবান রাম-স্নুকার্সক্লাবে সময় ভালোই কাটে তার। নেহেরু তাকে বেশ পছন্দই করে। সকালে উঠে খালকাটা শুরু করা কঠিন। কারণ নেহেরুর রাতে একদম ঘুম হয়না। পাখিরা কেউ ফোন ধরে না। লেডী ব্যাডেনও আবার সাফ সাফ বলে দিয়েছেন, এতো বড় আকারের ভারত নিলে, প্রধানমন্ত্রী হলে; আমাকে কী দিলে নেহেরু। এভরি ডে কান্ট বি এবাউট ইউ।
    নেহেরু সটকে পড়ে। তবে হাল ছাড়ার পাত্র সে নয়, মেরিলিন মনরোকে ফোন লাগায়।

    মনরো বলে চলে এসো। আমার বাসায় পার্টি আছে। অনেকেই আসছে।

    নেহেরু বাসায় ফিরে একটু ফ্রেশ হয়েই মনরোর পার্টিতে যায়। জিন্নাহ একটা টেবিলে সরোজিনী নাইডুর সঙ্গে গল্প করছে। চে গুয়েভারার বাহুলগ্না প্রীতিলতা। চে এখনল তার নির্দেশে ওঠে আর বসে। কোথায় গেছে সেই লৌহমানব, ঠিকই আছে, যে মেয়ের নাম প্রীতি তার লঙ্গে লতা; চে গুয়েভারা সেইখানে আটকে যেতেই পারেন।

    গান্ধীজী জুলিয়েট আর লায়লার কাঁধে হাত দিয়ে খিল খিল করে হাসছেন। নাত্থুরাম গডসে তার পা টিপছে। এটা তার নিয়মিত দন্ড।

    বঙ্গবন্ধু এলেন; মুখে সেই পাইপ, সবাই চমকে তাকায়। মেরিলিন মনরো ব্যস্ত হয়েওঠে। জুলিয়েট গিয়ে অটোগ্রাফ নেয়, প্রীতিলতা গিয়ে কদমবুচি করে, লায়লা গিয়ে মজনুরবিরুদ্ধে নালিশ করে, অড্রে হেপবার্ণ একটু নাচতে আগ্রহ প্রকাশ করেন, মিসেস মুজিব পিছেই ছিলেন। উনি প্রশ্রয়ের হাসি হেসে বলেন, অসুবিধা কী একটু নাচলে!

    গান্ধীজী মিসেস মুজিবের নীল চোখের প্রশংসা করেন। পেছন থেকে আইভী রহমান হেসে বলেন, লেট মি হ্যান্ডেল হিম ভাবী। জিল্লুর রহমান হাসি লুকাতে কলিম শরাফীর সঙ্গে গল্প জুড়ে দেন।

    এমন সময় খুব ভাব নিয়ে ঢুকেন ইন্দিরা গান্ধী, যেন তার রূপে ঝলসে যাবে গোটা মেহেফিল। অথচ সবাই ব্যস্ত পার্টিতে। গান্ধীজী মিসেস মুজিব আর আইভী রহমানের সঙ্গে সেই অতীতের গল্পগুলো পুনরাবৃত্তি করেন।

    অভ্রে হেপবার্ণ বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে বসে লম্বা শলাকা সিগেরেট ধরিয়েছে।বঙ্গবন্ধুর চারপাশে জুলিয়েট-লায়লা-মেরিলিন মনরো।

    চে একটু কিউবান ডার্টি ডান্স সালসা করছেন ৭২ জন হেভেন ডান্সারের সঙ্গে। নেহেরুও নাচে জমে গেছেন।

    শুধু ইন্দিরা কাউকে পাচ্ছেন না গল্প করার। শেষ পর্যন্ত মওলানা ভাসানীর সঙ্গে বসে পরিবেশ দূষণ ও গার্বেজ ম্যানেজমেন্ট নিয়ে কথা বলেন।
    এমন সময় রবীন্দ্রনাথ আসেন ওকাম্পোকে নিয়ে। ওকাম্পোর মুড অফ। ঐ যে বিয়ের ইস্যুতে জটিলতা। মনরো এগিয়ে যান কবিকে অভ্যর্থনা জানাতে।

    হঠাত দেবদাস হাজির হয় পাঁড় মাতাল অবস্থায়; পার্বতীর অত্যাচারে সে এখন বিভ্রান্ত। পার্বতী পার্টিতেও আসেনি; কী একটা সিরিয়াল আছে টিভিতে। ওটা তার দেখতেই হবে। চন্দ্রমুখী এগিয়ে আসে। দেবদাসকে একটা সোফায় বসায়। কাগজী লেবুর শরবত এনে দেয়।

    রবিদার মনে হয় দেবুটাই হ্যাপি, ওরতো চন্দ্রমুখী আছে।
    শুধু কেউ নেই আমার, ওকাম্পোর হয়েছে সুচিত্রার ঢং।
    চন্দ্রমুখীই ভালো; অযথা সুঁতোর টান নেই, অথচ ঘুড্ডি আছে।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০২ জুন ২০১৫ | ১৫৪৬ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। ভেবেচিন্তে প্রতিক্রিয়া দিন