এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • আলু, বিরিয়ানি ও নানাবিধ

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ১১ মে ২০১৫ | ৭৫০ বার পঠিত | রেটিং ৩ (১ জন)
  • লেখার ক্ষেত্রে পুনরাবৃত্তি একটা ঘাতক ব্যাপার । সাধারণত দুই ধরনের লেখক চর্বিত চর্বণ করেন – এক যাঁরা প্রচুর লেখেন , ফলতঃ লেখার মশালার যোগান না দিতে পেরে পুরনো মাল আউরে দিনযাপন । দুই , যারা কম লেখেন - এরা আগেরবার কি লিখেছিলেন ভুলে গিয়ে একই জিনিস বিবিধ ভাবে চালান দেন ।আমার এই লেখাটা ফলে কোন দলভুক্ত হবে বুঝে উঠতে পারছি না । তবে এটা ঠিক যে আমার এই ঘটনাকাল ঘুলিয়ে ফেলা ও কালক্রম রক্ষা না করতে পারা কিন্তু বাই ডিজাইন নয় – নিছকই অ্যামেচার লেখকের নাবালকচারিতা । আগের ঘটনা পরে আর পরের ঘটনা আরও পরে রেখে কোনও সাহিত্য কোলাজ সৃষ্টির বাসনা বা ক্ষমতা কোনটাই নেই । যা যেই মুহূর্তে পাবলিক খেতে পারে বলে মনে হচ্ছে , নিউজ চ্যানেল গুলির মতো আমি তাতে ঢলে পরছি ।

    কিছুদিন ধরে ভাবছিলাম এয়ারপোর্ট এবং বিমানযাত্রার সময় যে খাবার সংক্রান্ত ঘটনাগুলির মুখমুখি হতে হয় ,তার মধ্যে কোনও যোগসূত্র বার করা যায় কি না । ইদানিং দেখছি বেশ কয়েকটা বিখ্যাত বিমান সংস্থা স্বাচ্ছন্দের প্রায় সমস্ত দিক যথাসম্ভব কভার করে খাবার নিয়ে পরেছে ।প্রথমেই বলে রাখি ওই খাবার যারা বিমানের ভিতর সার্ভ করেন অর্থাৎ এয়ার হোস্টেস ,তাঁদের নিয়ে আমার ধারনা ছোটবেলায় বেশ ধোঁয়াটে ছিল । আমাদের স্কুল লাইফে শুনতাম এয়ার হোস্টেস একখানি জম্পেশ জীবিকা । কিন্তু পরবর্তী জীবনে এয়ার ইন্ডিয়া বা ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সে যাত্রা শুরু করবার পর সেই বক্তব্যের কোনও সার বস্তু খুঁজে পাই নাই । কেবল দেখলাম ফট ফট ইংরাজী বলা মেয়েরা (বা এয়ার ইন্ডিয়ার কর্মরত মধ্যবয়স্ক বা বৃদ্ধারা) খাবার দিয়ে গেলো – শেষে এঁটো প্লেট তারাই তুলে নিয়ে গেল । ভাগ্যিস আমার ঠাকুমা কোনদিন প্লেনে চড়ে নি ! মুজতবা আলী সাহেব বলে গেছেন প্লেনে চড়ার মত যন্ত্রণাদায়ক যাতায়াত পদ্ধতি মানুষ আর দ্বিতীয়টি আবিষ্কার করতে পারেনি – আমি তার সাথে একমত । তা সে যাই হোক , সেই প্লেনের ভিতর জনে জনে খাবার পরিবেশন করা এত্যো গ্ল্যামারাস কেন , আমার আজও তা বুদ্ধি অগম্য। যেমন অগম্য এটা বোঝা যে , কোনও পাবলিক প্লেনে দেওয়া খাবার মেনু দেখে ফ্লাইট বুক করে ? অথচ একটি বিখ্যাত বিমান সংস্থার বিজ্ঞাপনে দেখি এই খাবার বিষয়টিই জোর দেওয়া হচ্ছে – এত্ত বড় বিজ্ঞাপন ,তাতে দেখানো হল – স্টার্টারটা তৈরী ১৬৮ টা লেয়ার দিয়ে, ওভানে ১০ সেকেন্ডের এদিক ওদিক হয়ে গেলে নাকি সর্বনাশ টাইপের কিছু একটা হয়ে যাবে ! সুখের বিষয় হল , এই খাবারটার নাম আমি এখনও জানতে পারি নি । খাবার পরিবেশনে সে এক স্বর্ণযুগ ছিল আমাদের দেশীয় জেট বা সাহারা এয়ারলাইন্সেও । তখনও এই ‘লো োস্ত’ োেপ্ত টা ঠিক চালু হয় নি । আহা বড় সুন্দর ভাবেই খাবার প্লেটগুলি আসত – যতদূর মনে পরছে বিরিয়ানী ও তন্দুর চিকেনের মত জটিল খাবারও খেয়েছি ।

    বিরিয়ানী রান্না কঠিন এটা অনেকের জানা থাকলেও তন্দুর চিকেন তৈরী আপাত সহজ এই ভ্রান্ত ধারনা অনেকে পুষে রাখেন । শেফ দিয়ে বিরিয়ানী রান্না হয় না তার জন্যে চাই কারিগর । ভাল বিরিয়ানী কারিগররা আবার মুসলমান সম্রদায় ভুক্ত । আমি আজও গ্রামের দিকে দেখেছি হিন্দু ঘরে বিরিয়ানীটা মুসলমান খাবার বলে কন্সিডার করা হয় ।ফলতঃ অনেকে বিরিয়ানী খাননা – এঁদের জন্যে আমার অন্তরে প্রবল দুঃখের সঞ্চার হয় মাঝে মাঝে ।এঁরা জানতে পারলেন না কি জিনিস মিস করছেন । বিরিয়ানী মিস করা আর লালনের গান না শোনা – এই দুই ই প্রায় ইকুয়াল ম্যাগনিচিয়ুডের অপরাধ। বিরিয়ানী তৈরীতে নাকি তেঁতুল কাঠের আগুন লাগে- আগুনের আবার নাকি পরত থাকে ।আধুনিক যন্ত্রে তাপ মেপে নয় – বিরিয়ানী তৈরী হয় আগুনের রঙ দেখে ।

    তা যাই হোক দক্ষিণ ভারতীয়রা আবার বিরিয়ানী কনসেপ্টটা আবার নিজেদের মত করে নিয়েছে । আর্যরা যে বিন্ধ পর্বত হট করে পেরতে পারেনি বা আকবরেরও টপ প্রায়োরিটি কিন্তু সাউথ ইন্ডিয়া ছিল না , সেটা জানার জন্য আপনাকে আর রাখাল দাসের স্বরণাপন্ন হবার দরকার নেই । লখনউ ও ব্যাঙ্গালোরের বিরিয়ানীর মধ্যে একটা তুলনামূলক আলোচনা করলেই পেয়ে যাবেন । হায়দারাবাদের বিরিয়ানী এই দুয়ের মধ্যবর্তী । আমি কানপুরে পড়াশুনো শেষ করে ভারতের সিলিকন ভ্যালিতে চাকুরি করতে গিয়ে সবচেয়ে প্রবল ঝটকাটা এই বিরিয়ানী থেকেই পেয়েছিলাম। সে কেমন যেন একটা কাদা কাদা ভাব- দলা, মন্ড এই সব জাতীয় অপ্রচলিত শব্দ প্রয়োগ করতে হবে, সেই অদ্ভুত খাবার বর্ণনা করতে গেলে । ব্যাপারটা পুরো হলুদ আর তেজপাতায় ভর্তি । নর্মাল বিরিয়ানীর মশলা ব্যাতীত মশলার পিরিওডিক টেবিল পু্রো কভার আছে ওতে, এ বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই ।আমার কালচারাল শক পেট থেকেই শুরু হয়েছিল ।

    তবে যাই হোক সেই ব্যাঙ্গালোরের বুকেতেও খুব কষ্টে নর্থ ইন্ডিয়ান (আসল) বিরিয়ানী খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল – যেই ডিসে ভাতের মধ্যে দুটো আলুর পিস উঁকি মারবে । আচ্ছা বিরিয়ানীতে একটা সিদ্ধ গোটা ডিম থাকাটা কি অথেন্টিক ব্যাপারের মধ্যে পড়ে ? এতদিন পর আর ঠিক মনে পরছে না যে সেই ব্যাঙ্গালোরের বিরিয়ানীতে একটা করে ডিম সিদ্ধ দিত কি না । তবে ডিমের দুঃখ আপনার ভুলে যাওয়ার কথা চারপাশে প্রিয়জনদের দেখে- দুনিয়ার বাঙালী জড় হত সেই “লাজিজ” নামক দোকানটিতে । বিরিয়ানী খেতে গিয়ে বিরিয়ানীর প্রেমে পরা ও সামনে যে খাচ্ছে তার প্রেমে পড়া দুই একসাথে অনেক সম্পন্ন হয়েছে । সেখানে প্রেমের বিবাহের সাকসেস রেট রেসিও খুবই হাই ছিল। বিরিয়ানী তে যে আলু দেওয়া হয় তা প্রধানত দুই প্রজাতিভুক্ত হতো - হয় চন্দ্রমুখী নয়ত জ্যোতি ।চন্দ্রমুখী আলুর স্বাদ বেশি। জ্যোতির ততটা নয় । তাই স্বাভাবিক ভাবেই বিরিয়ানীর দামের ওপর ভ্যারি করত আলুর রকমফের । আপাতদৃষ্টিতে আলু তো আলুই – এমনটা মনে হলেও আমাদের সামাজিক জীবনে আলুর রকমফের অনেক সময় বিয়োগান্তক ঘটনার জন্ম দিয়েছে । গ্রামের দিকে একবার শুনেছিলাম নাকি – মুরগীর মাংসের ঝোলে চন্দ্রমুখী আলু না দিয়ে জ্যোতি আলু দেওয়াতে সমীরের ভাইয়ের বিয়ের সম্বন্ধ ভেঙ্গে গিয়েছিল । সমীরের অনেক দিনের অভ্যাস যে মাংসের ঝোলে আলুটিকে চটকে সেই হাইলি ভিসকাস ঝোলটিকে বাটি থেকে চুমুক দিয়ে খাওয়া । তা সমীর ভাইয়ের জন্যে মেয়ে দেখতে গিয়ে ঠিক এইখানটাতেই ঠোক্কর খেয়েছিল । সব কিছু পজিটিভলি চলছিল – কাঁসার বাটিতে ঝোলের আলুটিকে সমাহিত করতে গিয়েই সমস্যার শুরু । আলু সহজে চটকানো যায় না ,আর তার পরে সেই ঝোলে চুমুক দিয়ে সমীর স্থির করে ফেলে যে এই বাড়িতে ভাই এর বিয়ে দেওয়া যাবে না । হবু আত্মীয় বাড়ির লোকেদের মুরগীর ঝোল আর তদোপরি তাতে জ্যোতি আলু দিয়ে যারা আতিথেয়তা সারতে চায় তাদের বংশ ঐতিহ্য নিয়ে সমীর দ্বিধাগ্রস্ত ছিল । সেই সময় আমরা অনেক হাসাহাসি করলেও পড়ে ফ্রেঞ্চ ও ইতালিয়ানদের সংস্পর্শে এসে ওই আলু কেলেঙ্কারির প্রকৃত ম্যাগনিটিউডটা ঠাউর করতে পারি ।

    তা যাই হোক আবার বিরিয়ানীর কথায় ফিরে আসা যাক । আমাদের গ্রামের রশিদ মিঞা তার ছেলে লালটুর বিয়েতে সবাইকে বড়াই করে “হাণ্ডি” বিরিয়ানী খাওয়াবে বলল । “হাণ্ডি” বিরিয়ানী যে কি জিনিস সেই বয়েসে আমরা জানতাম না, এবং এই বয়েসেও জানি না । প্রবল আক্ষেপের সঙ্গে সেই “হাণ্ডি” বিরিয়ানী কেলেঙ্কারির মজা লুটেছিলাম আমরা- আদপে পেয়েছিলাম ঝুরঝুরে এবং চটকানো টাইপ এর ছোট লম্বা চালের কিছু ভাত- নো আলু- নো মাংসের কুচো- নো ডিম ।এই ঘটনার প্রায় ১৮ বছর পর আমস্টারডামে একটা পাকিস্তানি রেস্তোরাঁয় বিরিয়ানী খেতে গিয়ে সেই অমোঘ বিরিয়ানীর কথা মনে পড়ে গিয়েছিল । পাকিস্তানী লোকেরা রেস্টুরেন্ট চালালেও সাধারণত তারা ইন্ডিয়ান রেস্টুরেন্ট বলেই বিজ্ঞাপন দেন । তাই এই ভদ্রলোক ব্যাতিক্রমী ছিলেন – এবং তার প্রমান আমি বিরিয়ানী খেতে গিয়েই টের পেলাম । প্রায় বাসি খিচুরি গরম করে আনলে যে রকম দেখতে হয়- তেমনই একটি জিনিস সুদৃশ্য একটি ডিশে আমার সামনে উপস্থিত হল- জানতে পারলাম ইহাই বিরিয়ানী ।তাও ঠিক ছিল এই পর্যন্ত – তার পরের অবাক কাণ্ডটি হল আমার এক অস্ট্রে্লিয়ান বন্ধু সেই দোকানের নিয়মিত খদ্দের এবং ওই বিরিয়ানী ডিস তার ওয়ান অফ দি ফেভারিট । কি কাণ্ড বলুন তো ! আমার তখন ধরণী দ্বিধা হও এমন টাইপের একটা মানসিক অবস্থা এবং আমি প্রানপনে সেই পরিস্থিতির উপযোগী একটা রবীন্দ্রসঙ্গীত মনে করার চেষ্টা করছিলাম।অবশ্য আমি এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে কোনও স্কটিশ, ভারতীয় হুইস্কি খেয়ে এবং ইতালিয়ান ভারতীয় পাস্তা খেয়ে আমার মতই আক্ষেপ করবেন।

    বর্ধমানে কার্জন গেটের কাছেই দোতোলার একটি রেস্তোরাঁয় আনএক্সপেকটেডলি দারুন খেয়েছি প্রথমবার এবং পড়ে অনেকবার । দ্বিতীয় বারে গ্রামের বন্ধুগুলোকে নিয়ে গিয়েছিলাম । জীবনে কখনও কখনও মনে হয়েছে একটা শিল্প দেখছি চোখের সামনে- শিল্পী আমরা অনেকেই দেখি, কিন্তু শিল্পের বাস্তবতা দেখা সে এক অনন্য অভিজ্ঞতা । আমার গ্রামের কিছু বন্ধু ও ভাইয়ের খাওয়া দেখে আমি সেই অনির্বচনীয় আনন্দলাভ করতাম । দু প্লেট করে পার হেড অর্ডার দিতে হত শুরুতে – হাত দিয়ে খাওয়া অ্যালাও কিনা জেনে নেওয়া হত- তারপর ডাইরেক্ট মনোনিবেশ । আহা সে কি দৃশ্য- এই ছেলেরা ট্যাপ পর্যন্ত না গিয়েই টেবিলের নীচে হাত ধুয়ে খাওয়ার জন্য প্রস্তুত হয়েছিল,যেটা পরে আবিষ্কৃত হয় । তবুও সেই রেস্টুরেন্ট মালিক আমাদের পরেরবার অ্যালাও করেছিল – হয়ত সেই খাওয়া শিল্প দেখার জন্যেই । সেখান থেকেই আমার প্রত্যয় হয় যে প্রকৃত শিল্প আর শিল্পীর কদর সর্বজনীন ।

    আজকাল আবার সমস্ত নামী ডিসেরই রিকনস্ট্রাকসন ও ডিকনস্টাকষন করা হচ্ছে- ‘গ্যাসট্রনমি’র এক উল্লেখযোগ্য ভাগ । আমি যেহেতু ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ড্রয়িং এ খুব কাঁচা ছিলুম,তাই এই দুই এর কোনটাই ঠিক ঠাউরাতে পারিনা ।তবে বিরিয়ানীকে ওমন কাটা ছেঁড়া করলে কি দাঁড়াবে ভেবে শিউরে উঠি । আমার বন্ধু অর্ণব কলকাতা ছেড়ে অন্য কোথাও চাকুরি করতেই গেল না শুধুমাত্র ‘আমিনিয়া’র বিরিয়ানীর লোভে! যাকে কলেজ জীবনে আমরা ‘পিংলে’ বলে ডাকতুম ,আমিনিয়ার মটন বিরিয়ানী আর চিকেন চাপ (বা ভাইস ভার্সা) তার কি হাল করেছিল ভাবলে অবাক হতে হয়- কিংবা অবাক হতে হয় না । বিরিয়ানীর সাথে চাপের যে ভার্সানটি থাকে তাতে তেল থৈ থৈ করতে হবে। যত তেল তত তার স্বাদ। তবে সে অস্বাস্থ্যকর খাবার খেয়ে ক্রমশ স্বাস্থ্যহানিও একটা আনন্দের ব্যাপার বলেই অনেকে গন্য করেন ।আমার লেখা ডায়েট সংক্রান্ত নয় বা লোকেদের স্বাস্থ্যসচেতন করার কোনও ব্রত এই মুহূর্তে আমার নেই।তাই আমার জীবন ফুচকায়, এগরোলে, ল্যাংচায় ,সন্দেশে একেবারে জড়াজড়ি করে আছে ।

    বিরিয়ানী রাঁধতে গেলে নাকি চাল ভিজিয়ে রাখতে হয় দুধের মধ্যে সারারাত। সেই দুধে একটু কেশর মেশানো থাকবে । আর যে পাত্রে বিরিয়ানী হবে সেই পাত্রের নিচের তলে তেজ পাতার একটা লেয়ার দিয়ে রাখতে হবে। যারা রান্না ভালবাসেন বা পাকা কারিগর তাঁরা সব মশলা বেসিক থেকেই শুরু করেন। আর আমার মত যারা বিদেশে থেকেও দেশি বিরিয়ানী বানাতে চায় তার সাহজ উপায় হল রেডিমেড মশলা ব্যাবহার করা। কোনও উপমাহাদেশীয় স্টোরে গিয়ে বিরিয়ানীর মশলার প্যাকেটটা কিনুন – পারলে পাকিস্তানী কোনও ব্র্যান্ড কিনবেন । ওদের বিরিয়ানী মশলাটা বড়ই ভাল হয় । চিকেন না মটন যাই হোক পছন্দ করতে পারেন । খুব সহজে প্যাকেটের গায়ে লেখা পদ্ধতি অনুসরণ করে আপনি মাংসটা রান্না করে নিন । তারপর দুধে ভেজানো বাসমতী চাল ৭০% সেদ্ধ করে নিন ।এইবার সেই তেজপাতা বিছানো পাত্রে অল্টারনেট লেয়ারে মাংস আর চাল দিন । হাল্কা বিরিয়ানী মশলা ছড়িয়ে দিতে পারেন । তারপর পাত্রটা ঢাকা দিয়ে অল্প আঁচে রান্না করুন। চাল পুরো সিদ্ধ হয়ে গেলে সব ভাল করে মিশিয়ে নিন । এই পদ্ধতিতে বিরিয়ানী প্রভূত বিদেশীকে খাইয়ে আমি বেশ সুনাম অর্জন করেছি । তবে ব্যাপার হল ওদের কোনও রেফারেন্স পয়েন্ট না থাকায় খিচুড়িকেও মনে হয় বিরিয়ানী বলে চালানো যেত ।

    বিরিয়ানীতে চাল খূব গুরুত্বপূর্ণ- বিদেশে বসে আমি এত রকমের বাসমতী পেয়েছি যা আমি ভারতেও পাইনি। আমার খুব ইচ্ছে যে একবার বাঁশকাঠি চালের বিরিয়ানী করব। বাঁশকাঠি চালের বিজ্ঞানসম্মত নাম আমার জানা নেই । তবে গ্রামের দিকের পিকনিকে আমাদের বাঁধা মেনু ছিল বাঁশকাঠি চালের ভাত আর মাংসের ঝোল । খাবার আগে অপরিমিত মদ্য পানের জন্য জনতার ক্ষুধা যেমন বৃদ্ধি পেত, তেমনই তার ব্যাস্তানুপাতে স্বাদ গ্রহন শক্তি । ফলে যেকোনো খাবারই অমৃত স্বরূপ মনে হত ।সে জগতে বিরিয়ানী আর পান্তাভাতে কোনও পার্থক্য নেই- আদর্শ কমিউনিজম যাকে বলে আর কি । তবে বাঁশকাঠি চালের প্রতি আমাদের আকর্ষণের মুলে ছিল ফুটবল টিমের তোতলা লক্ষণ । সে দিদির মেয়ের অন্নপ্রাশনে খাবার অভিজ্ঞতা বর্ণনা দিচ্ছিল এই ভাবে -“মাংসের ঝোল ইদিক সিদিক গড়াই যাচ্ছে- পাতার কোনাটা ধরি সাপটাই দিলাম”। তার মুখেই প্রথম বাঁশকাঠি চালের নাম শোনা ও সেই মাংসের ঝোলের এফেক্টটা আমরা রিপিট করতে চেয়েছিলাম- প্রথমবারেই মেনু হিট ।ফলে আমরা তা আর কোনোদিন পালটাবার চেষ্টা করিনি ।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ১১ মে ২০১৫ | ৭৫০ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • dd | 132.167.154.49 (*) | ১১ মে ২০১৫ ০৫:১৫66335
  • "“মাংসের ঝোল ইদিক সিদিক গড়াই যাচ্ছে- পাতার কোনাটা ধরি সাপটাই দিলাম”...... এ তো কাব্য। প্রবন্ধ নয়।

    তবে পুরো দক্ষিন ভারোতেও এমন ধারা হয়। কলাপাতার উপরে রাখা ভাতের টিলার উপর এক মগ রসম ঢেলে দেওয়া হয়। আর সেই রসম ধারা - নদী আপোন বেগে পাগোল পারা হয়ে ছুটে যায় দিগ বিদিগে।

    কনুই পজ্জন্তো আস্তিন গোটানো হাতে ক্ষিপ্র গতিতে থাবা থাবা ভাত স্ল্যাৎ স্ল্যাৎ শব্দ করে খেয়ে নিতে হয়। পুরো ক্যান্টিন সেই সপাৎ হড়াৎছপাৎ শব্দে শিহরিত হতে থাকে। তবে শেষ পর্যন্ত্য মানুষেরই জয় হয়।
  • utpal | 212.191.212.178 (*) | ১১ মে ২০১৫ ০৫:১৭66336
  • আরো লিখুন। অনেক লিখুন।নিয়মিত লিখুন।
  • lcm | 118.91.116.131 (*) | ১১ মে ২০১৫ ০৫:২৯66337
  • বাহ! হেব্বি হয়েছে।

    এই প্রসঙ্গে, কলকাতার আমিনিয়া-র বিরিয়ানি বানানো -
  • amit | 37.33.243.79 (*) | ১১ মে ২০১৫ ০৮:০৮66338
  • ভাত আর মাংস জাস্ট মেশালে হবে না, অল্টারনেট লেয়ার by লেয়ার দিতে হবে, প্রতি লেয়ার-এ ঘি দিতে হবে দরাজ হাতে আর শেষে দুধে মেশানো জাফরান দিতে হবে। আর পাত্রটা আটা দিয়ে সিল করতে পারলে আরো ভালো। এমেচার কুকের একটু ফান্ডা মেরে দিলুম আর কি।
  • সুকান্ত ঘোষ | 129.160.188.221 (*) | ১৩ মে ২০১৫ ১০:৩৬66339
  • আরে অমিতাভদা, লেয়ার বাই লেয়ার সেটা তো উল্লেখ করেছি। কিন্তু পরিবেশন এর সময় তো আর লেয়ার বাই লেয়ার করা যায় না - মালটা মিশিয়ে নিতে হয়। সেটাই বলছিলাম আর কি। তবে আটা দিয়ে সিল করার ব্যাপারটা ভালো বলেছ - এটা লিখতে ভুলে গিয়েছিলাম।
  • se | 204.230.155.215 (*) | ১৩ মে ২০১৫ ১২:২০66340
  • নির্মল আনন্দ। খুব উপভোগ করলাম।
  • সোমেন বসু | 55.114.38.198 (*) | ১০ জুলাই ২০১৬ ০১:১২66342
  • দারুণ.... ভালো বিরিয়ানির মতোই তাড়িয়ে তাড়িয়ে রসাস্বাদন করলুম...
  • aka | 34.96.82.109 (*) | ১০ জুলাই ২০১৬ ০২:৩৪66343
  • কতকগুলো টেকনিকাল ব্যপারঃ

    ১) নর্থ ইন্ডিয়ান বিরিয়ানির অনেক রকম ফের আছে।

    রাজস্থানী বিরিয়ানি, কাশ্মীরি বিরিয়ানি লক্ষ্নৌই বিরিয়ানি, কলকাতা বিরিয়ানি ও ঢাকা বিরিয়ানি একে অন্যের থেকে স্বাদ্র, বর্ণে, গন্ধে, বা রান্নার পদ্ধতিতে আলাদা।

    ২) আলু শুধু কলকাতা বিরিয়ানিতেই থাকে।

    ৩) দক্ষিণেও হায়দ্রাবাদ, কেরালা, তামিলনাড়ুর বিরিয়ানি আলাদা।

    ৪) পাকিস্তানি বিরিয়ানি খুব বেশি খাই নি, খানিকটা রাজস্থানী বিরিয়ানির মতন হবার চান্স। কারণ পারস্য থেকে পাকিস্তান হয়েই বিরিয়ানি ভারতে ঢোকে।
  • potke | 132.172.201.165 (*) | ১০ জুলাই ২০১৬ ০৪:২২66344
  • অ্যাস ইউসুয়াল, ভালো লেখা।
  • কল্লোল | 125.242.129.225 (*) | ১০ জুলাই ২০১৬ ০৪:৩২66345
  • আওয়ধী বিরিয়ানীর কলকাতা ভার্সানটিই শ্রেষ্ঠ, এ নিয়ে কোন কথা হবে ন্না। সেটা অবশ্যই আলু ও ডিমের কারনে।
    আর ইয়ে, চিকেন বিরিয়ানী বলে কিছু হয় না। সত্যের খাতিরে বলতেই হবে, চাড্ডি বললেও বলতেই হবে - গরুর বিরিয়ানীও খুব তেমন দরের নয়। আমি শুওর উট বা ইলিশের বিরিয়ানী খাইনি। তাই ও বিষয়ে কিছু জানি না। একবার ব্যাঙ্গালোরে মাছের বিরিয়ানী খেতে চেষ্টা করেছিলুম - সে সব অশ্লীল কথা থাক।
  • ? | 193.82.199.156 (*) | ১০ জুলাই ২০১৬ ০৪:৪০66346
  • "তাড়িয়ে তাড়িয়ে', বাপরে বাংলার কি দশা।
  • MR | 81.170.111.39 (*) | ১০ জুলাই ২০১৬ ০৪:৪৭66347
  • ইউটিউবে যদি রান্নাটা সেখানো যায় তাতে উপকার হয়। কারণ আমার বিরিয়ানি সবসময়ই মাংসভার হয়ে যায়।
  • potke | 132.172.201.165 (*) | ১০ জুলাই ২০১৬ ০৪:৫৮66348
  • আর লুরুর বিরিয়ানী== মাংসের খিচুড়ি, লাজিজ ই ভরসা।
  • শুভময় ভট্টাচার্য্য | 11.39.57.142 (*) | ১০ জুলাই ২০১৬ ১২:১০66341
  • জিভে জল এসেছে,
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। কল্পনাতীত মতামত দিন