এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  আলোচনা  বিবিধ

  • ডাক্তার জানে না, আমার অসুখের নাম পিকনিক

    সুকান্ত ঘোষ লেখকের গ্রাহক হোন
    আলোচনা | বিবিধ | ২৩ মে ২০১৫ | ৭৬৪ বার পঠিত | রেটিং ৫ (১ জন)
  • অনেক বয়স হবার পর কোন এক কবির লেখায় যেন এমন কয়েকলাইন পড়েছিলাম – “ডাক্তার জানে না, আমার অসুখের নাম পিকনিক”। সেই কবি আবার অন্য এক কবির লেখা থেকে এই লাইন ধার করেছিলেন - সে এক কনফিউজিং ব্যাপার। যাই হোক, যে রাজ্যের হাসপাতালগুলিতে শতকরা ৬০ ভাগ লোক পেটের রোগের চিকিৎসা করাতে আসেন সে রাজ্যেরই এক কবি যে এমন কথা লিখবেন সে আর আশ্চর্য কি! তবে ডাক্তারের না জানার সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ, অন্ততঃ আমাদের দিকের ডাক্তাররা আমাদের অসুখের উৎপত্তি ও নিরাময় দুইই জানত বেশ ভালো করে।

    আর পাঁচটা বালকের মত আমাদের ছোটবেলাটাও পিকনিকের সাথে বেশ ভালোভাবেই জড়িয়ে ছিল। পিকনিকের বাঙলা প্রতিশব্দ কি? কাছাকাছি রয়েছে চড়ুইভাতি ও বনভোজন। চড়ুইভাতি শব্দটির মধ্যে কেমন যেন একটা সখি সখি ভাব লেগে আছে। ম্যাচো ভাবটা কম, তাই একটা বয়সের পর আর চড়ুইভাতি করা যায় না যতক্ষন না আর একটা নির্দিষ্ট বয়সে পৌঁছানো যাচ্ছে। আমাদের দিকে রেঞ্জটা ১০-৬০ বছরের মধ্যে ছিল। আর বনভোজন বাঙালী আতেঁল ও কলকাতাবাসী লোকেরা করে বলে আমাদের ধারণা ছিল। আমরা করতাম Feast – শব্দ ভেঙে ভেঙে ‘ফিষ্টি’ তে পৌঁছেছিল। আমাদের গ্রাম্য বাল্য জীবন যখন নিস্তরঙ্গ ও বর্ণহীন হয়ে আসত মাঝে মাঝে (আলু ও ধানের ফলন বা দাম ভালো না থাকলে) তখন এই ফিষ্টি নামক মোচ্ছবটি আমাদের এক্সট্রা প্রাণবায়ু ইনজেক্ট করত। ফিষ্টি বিবর্তন নিয়ে রীতিমত এক থিসিস ফেঁদে ফেলা যায় সোস্যাল সাইন্সে।

    যে কোন উপলক্ষেই ফিষ্টি হতে পারত – তবে বয়সের উপর নির্ভর করে স্থান ও কাল বদলেছে, পাত্র প্রায় একই থেকে গেছে। খুব ছোটবেলায় ফিষ্টির হাতেখড়ি হয়েছিল ঝুলন খেলার মধ্যে দিয়ে। আমরা ছোটরা নিজেদের খেলনা জড়ো করে ঝুলন পাততাম ও বড়দের কাছ থেকে পয়সা আদায় করতাম। ঝুলনের শেষে সেই টাকা দিয়ে ফিষ্টি হত। মেনু খুবই সিম্পল থাকত – কোন বছর লুচি-ঘুঘনি ও তৎসহ মিষ্টি। আবার কোন বছর ভাত-মাংস। বাড়ির পিসি ও মায়েদের দল সব কিছুর ভার নিত, আমরা শুধু খেয়েই খালাস। মনে আসে তখন বাড়ীতে মুরগীর মাংস রান্না হত না, ফলতঃ পাঁঠা বা খাসি খেয়েই আমরা বড় হয়েছি (দূর্জনেরা বলেন অনুরূপ চারিত্রিক বৈশিষ্ট লাভ করেছি)। ছোটবেলার ফিষ্টি সব অর্থেই নিরামিষ ছিল। পিকনিক তার প্রকৃত রূপ খুলতে শুরু করল ক্লাস নাইন-টেন উঠার পর থেকে। স্থান পরিবর্তিত হল – বাড়ি থেকে ফিষ্টির স্থান সরে গিয়ে গ্রামের ইস্কুলবাড়িতে।

    আমাদের গ্রামের প্রাইমারী স্কুলের স্থানমাহাত্ম আমাদের কাছে কালীঘাট, দক্ষিণেশ্বর, তিরুপতি বা ইডেন গার্ডেনসের মতই ছিল। গ্রামের একপ্রান্তে এই স্কুলের চত্তরেই আমাদের বেশীর ভাগ ফিষ্টি সম্পন্ন হত। সামনেই ছিল এক প্রকাণ্ড পুকুর ও খালি মাঠ, আর স্কুলের ভিতর ছিল এক বকুল গাছ। তাই প্রাক বৈদ্যুতিক যুগে সন্ধ্যের পর সেই স্থান এক মায়াবী পরিবেশের সৃষ্টি করত। আবার গ্রামের একধারে হবার জন্য জলীয় দ্রব্য পানেরও অসুবিধা হত না আমাদের। প্রত্যেক বড় পূজা সম্পন্ন হবার পর একটা ফিষ্টি বাঁধা ছিল – ভাবটা এই ছিল যে, পূজার আয়োজন (বাজনা ও মাইক ভারা করা এবং বিজয়ার দিন নাচা) সম্পন্ন করে পাবলিক খুব ক্লান্ত হয়ে গেছে এবং রিল্যাক্সের জন্য একটু খাওয়া-দাওয়া দরকার।

    প্রসঙ্গত বলে রাখা ভালো যে এ সবই হত ব্যাচ সিষ্টেমে। যেমন আমাদের বাবা/কাকাদের একটা গ্রুপ ছিল, তার পরের জেনারেশনের একটা গ্রুপ, তার পরে আরো একটা এবং তার পরে আমরা। ওই ইস্কুল বাড়িতে সব গ্রুপই ফিষ্টি করত। খাদ্য বস্তু বা মেনু মূলতঃ এক থাকলেও, পার্থক্য থাকত পানীয় ও ধূমপান লিমিটে। আমাদের আগের গ্রুপটি ধেনো (দেশী মদ) ও গাঁজা প্রেফার করত। আমাদের ব্যাচে প্রথমে শুরুর দিকে (হাতেখড়ির সময়) চালু ছিল থ্রি-এক্স রাম ও অফিসার চয়েস। হুইস্কি তখন বুঝতাম না, তা সেই নিয়ে মাথাব্যাথাও তত ছিল না। অবশ্য বয়স বাড়ার সাথে সাথে পছন্দের এনভেলপ প্রসারিত হতে শুরু করে – রয়েল স্ট্যাগ দুরদার করে জীবনে অনুপ্রবেশ করে। আমাদের ব্যাচ আবার গাঁজা খুব একটা পচ্ছন্দ করত না – কোন এক বিশেষ কারণ বশতঃ পক্ষপাতিত্ব ছিল খৈনীর দিকে। আর তা ছাড়া রাতের দিকে ফিষ্টি শুরু হবার আগে অনেককেই দেখতাম ‘তাড়ি’ খেয়ে চূড় হয়ে আছে। আমরা যখন ক্লাশ ১০-১২ তে পড়ি তখন তাড়ির চল নিদারুণ বেড়ে গিয়েছিল। সুজনেরা বলে এর পিছনে আমাদের দুক বন্ধু আলম ও মনসার অবদান সবিশেষ। যাদের জানা নেই (অর্থাৎ দূর্ভাগার দল) তাদের অবগতির জন্য জানাই তাড়ি তৈরী হত তালরস গেঁজিয়ে। গরমের দিনে ভোরের দিকে তালরস সত্যই সুস্বাদু। তবে বেলা বাড়ার সাথে সাথে গরমে মাল গেঁজে উঠত। আর সেট জিনিস তূরীয় হত বেলা দুটো-তিনটের দিকে। গরম কালে ঘরের ভিতর দুপুরে আমরা এমনিই কেউ ঘুমুতে পারতাম না – আশ্রয় হত মূলতঃ বাগানগুলিতে। সেই সব আম বা গাব গাছের ছায়ায় বসে তালরস পানের মজাই আলাদা। কলকাতার আতেঁলরা বছরে একবার সেই তালরস শান্তিনিকেতনের দিকে খায়ে সারা বছর তার ঢেকুর তোলে আর সাহিত্য পয়দা করে। যাঁরা পার্কস্ট্রীটের পাবগুলিতে গিয়ে পরের দিন অফিসে ফাট্টাই মারেন তাঁদের জেনে রাখা ভালো যে নেশার জগতে খুব অল্পটাই তাঁরা ছুঁতে পেরেছেন – অন্ততঃ আবহের দিক থেকে। গোমড়া মুখো বারটেণ্ডারের বীয়ারের গ্লাস এগিয়ে দেওয়া আর শ্যামা বা বুধোর মায়ের মাটির ভাঁড়ে (বা গ্লাস) করে তাড়ি এগিয়ে দেওয়ার মধ্যে অনেকটাই পার্থক্য। এর সাথে যোগ করুন ফুরফুরে প্রাকৃতিক হাওয়ার অ্যাডভাণ্টেজ!

    তাড়ি ছিল গ্রীষ্মকালে সবচেয়ে সহজলভ্য ও সস্তা নেশার পানীয়। তাড়ি পান ঠিক আছে – কিন্তু তৈরী হত সেই সেবনের পর মাঠে ফুটবল খেলতে নামলে। তাড়ি খাবার পর যে ঘাম হয় তার দূর্গন্ধ অস্বাবাভিক। ড্রাগটেষ্টের ব্যাপার না থাকায় অনেক ফুটবল ম্যাচ আমরা তাড়ির জোরে জিতেছিলাম। তার যতটা না নেশাগ্রস্ত হয়ে অকুতভয় খেলার জন্য, তার থেকেও বেশী ঘামের দূর্গন্ধের জন্য। বিপক্ষ প্লেয়ার কাছে আসার সাহসই পেত না!

    আমাদের গ্রামের সব ব্যাচেরই ফিষ্টির মেনু ছিল প্রায় ওয়ান ডাইমেনশনাল। ভাত, একটা তরকারী, মাংস ও শেষ পাতে চাটনী-মিষ্টি। ফাণ্ডের অবস্থার উপর নির্ভর করে মাংসের রকমফের হত, খাসী নয়ত মুরগী। মুরগী আবার দুই প্রকার, দেশী ও পোলট্রী। ফাণ্ডের অবস্থা শোচনীয় হলে তবেই পোলট্রী মুরগী কেনা হত। আর সিজিন অনুযায়ী রকমফের ঘটত তরকারীর। শীতকালে জনপ্রিয় ছিল বাঁধাকপি। তবে তরকারী কেন যে করা হত আমি সেটা আজও বুঝতে পারি নি। ফিষ্টি সময় তরকারীর ভূমিকা কোন প্রতিযোগীতার তৃতীয় স্থান নির্ধারক ম্যাচের মত – কোনই গুরুত্ব নেই, শুধু করতে হয় বলে করা। পোলট্রী মুরগীর দাম ৩৫ টাকা কেজি দিয়ে বহুযুগ আগে ফিষ্টি শুরু করার পর এখন তা ১২০ টাকায় পৌঁছেছে। পোলট্রী মুরগী পাওয়া বা কেনা সহজ – ওরা প্রায় শহীদ হয়েই আছে মাংসের ভারে। সমস্যা হত দেশী মুরগী সংগ্রহ করা নিয়ে। ফিষ্টির দলে কতকগুলি সদস্য ছিল যারা বাড়িতে মুরগী পুষত, আর স্বাবাভিক ভাবেই তারাই প্রাইম টার্গেট থাকত মুরগী সাপ্লাই দেবার জন্য। মুরগী সংগ্রহ ব্যাপারটাই ছিল বেশ রোমাঞ্চকর, অনেক সময় খাওয়ার থেকেও বেশী। এমন সময় গেছে যখন সন্ধ্যাবেলা মুরগী খুঁজতে বেরিয়েছি রাতে ফিষ্টির জন্য। বাড়ি বাড়ি ঘুরছি – এ্যাই মুরগী বিক্রী করবে তোমারা? হয়ত কেউ বলল হ্যাঁ করব – তখন শুরু হল মুরগী ধরার পালা। সেই মুরগী আম গাছের ডগায় ঝিম মেরে বসে আছে। নিকষ অন্ধকারে আমগাছের ডাল বেয়ে চুপিসারে মুরগী ধরতে উঠছি এ দৃশ্য খুবই স্বাভাবিক ছিল এককালে। আর আমরা যেহেতু গ্রামের ছেলে ছোকরার দল ছিলাম এবং সবাই নিজেদের গাছের/বাগানের ফল-মূল ইনট্যাক্ট রাখতে চাইত – তাই প্রায়শঃই জিনিস কিনতে গিয়ে আমাদের একটা কথা শুনতে হত, “যা, তোদের কেনা দামে দিয়ে দিলাম”। কেনা দামটা যে কি আর যে বাড়িতে পোষা মুরগী বিক্রী করছে তার কাছে কেনা দাম কি ভাবে প্রযোজ্য হয়, সেটা আন্দাজ লাগাবার বৃথাই একটা চেষ্টা দিতাম। মুরগী ধরার পর ছাড়ানাও এক হ্যাপার কাজ। সৌভাগ্য বশতঃ বেশ কিছু সুদক্ষ সার্জনও ছিল আমাদের দলে।

    মুরগী ছাড়ানোর মধ্যে কোন পৈশাচিক আনন্দ আছে কিনা বলতে পারব না, তবে আমাদের সার্জেনদের দেখতাম বেশ তারিয়ে তারিয়ে অথচ ক্ষিপ্রহস্তে মুরগী নিধন করছে। দলের ফিষ্টিতে বেশির ভাগ সময় রান্না আমিই করতাম। যৌথ পরিবারে মানুষ (!) হবার জন্য খাবার-দাবার ভাগ-বাটোয়ারা বিষয়ে আমার ধারণা বেশ স্বচ্ছ ছিল। ফলতঃ ছেলেরা সানন্দেই আমার হাতে রান্না ও মাংস ভাগের দায়িত্ব ছেড়ে দিত। মুরগী রান্না আদপেই সোজা কাজ, কারন মাংস প্রায় স্বয়ংসিদ্ধই বলা যেতে পারে – তাও আবার যদি মাতালদের উপযোগী রান্না করতে হয়। সবচেয়ে বেশী বিতর্ক অবশ্য মাংস ভাগ নিয়ে বা রান্না পদ্ধতি নিয়ে নয়, মাংস ধোয়া হবে কিনে সেই নিয়ে হত। অনেকের মতে মাংস ধুলে তার স্বাদ নাকি চলে যায় – এটা আবশ্য পরিক্ষীত সত্য নাকি মাতাল জিহ্বার ইলিউশন তা বলতে পারব না। গড়পড়তা হিসাবে জন প্রতি ২৫০ গ্রাম মুরগীর মাংস ধরা হত, খাসী হলে সেটা কমে দাঁড়াত ২০০ গ্রাম। মাংস মেখে নেওয়া হত তেল, নুন, মশলা, টক দই, আদা-রসুন বাটা ইত্যাদি দিয়ে। তারপর গরম তেলে পেঁয়াজ ছেঁকে আলাদা করার পর, সেই ছাঁকা তেলেই মাংস কষে নেওয়া হত। আলুর রকমফের অনুসারে তা আগে ছাঁকা হত বা ডাইরেক্ট ঝোলে দেওয়া হত। মাংস কষা হলে জল দিয়ে ফোটানো এবং প্রায় সিদ্ধ হয়ে এলে তাতে গরম মশালা দিয়ে ঘেঁটে দেওয়া।

    মাংস রান্না বা ফিষ্টি করতে গেলে উনুন একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। এখন আমাদের দিকে এই সব কাগের জন্য গ্যাস সিলিণ্ডার সহ ওভান ভাড়া পাওয়া যায়। তবে আগে আমরা উনুন নিজেরাই বানিয়ে ফিষ্টি করতাম। উনুন তৈরী ও তা ধরানোর দায়িত্বে থাকত ‘হাবা’ – সে একাজে অভূতপূর্ব পারদর্শিতা অর্জন করেছিল। জ্বালানি হিসাবে ব্যবহৃত হত মূলত কাঠ ও ঘুঁটে, শুরুতে কেরোশিনের সাহায্য। পরে যখন সমাজ এগোয়, তখন আমরা কাঠের উনুন থেকে কেরোসিনের স্টোভে সিফট করে গিয়েছিলাম। হাবা এতে হালকা দুঃখ পেয়েছিল, তবে এর পরেও কেরোসিনের স্টোভটি সেই নিয়ে আসত ও ধরাত।

    কাঠের অভাব খুব একটা আমরা অনুভব করি নি। আমাদের নিমো স্টেশনে কৃষ্ণচূড়া গাছগুলি রেল কাটতে শুরু করে কোন এক সময়। আমার মেজো জ্যাঠা তখন সদ্য চাকুরী থেকে রিটায়ার করে সারাদিন কি করবে ঠাওর করতে না পেরে পাগলের মত কাজ (বা অকাজ!) খুঁজে বেড়াচ্ছে। তাই জ্যেঠু গ্রামের বালক সম্প্রদায় কে নিয়ে গাছ বাঁচাও আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পরে। যে কয়টা গাছ কাটা হয়েছিল সেগুলি পড়ে রইল – রেল বাকি গাছ কাটা বন্ধ করল। এখন ঘটনা হচ্ছে ওই কাটা গাছগুলির কি হবে? আমাদেরই গ্রুপের রবি কাঠমিস্ত্রীকে ধরা হল সেগুলি কেনার জন্য। রবি বিজনেসের সময় বিজনেস বলে শুধু মোটা গুঁড়িগুলো কিনল – বাকি থাকল গুচ্ছের ডাল পালা। সেট কাঠ বিক্রির টাকায় ফিষ্টি হল এবং তার পরের অনেক ফিষ্টিরই জ্বালানি ওই পড়ে থাকা ডাল পালা সাপ্লাই করেছিল। অপ্রাসঙ্গিক, তবু জানিয়ে রাখা ভালো রবি সেই কৃষ্ণচূড়া গাছের খাট বানিয়ে কাঠাঁল কাঠের খাট বলে এক স্বদেশীয় বিহারীকে বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিল। গ্রামে রেলের প্রতিনিধি ছিল স্টেশন মাষ্টার আমার সেজ জ্যাঠা যাকে বলা হইয়েছিল যে গাছ বিক্রির টাকা “নিমো ভারত সেবক সমাজ” (আমাদের গ্রামের ক্লাবের নাম) এর উন্নতিকল্পে লাগানো হবে। জ্যাঠা আমাদের ভাবগতিক সম্পর্কে অবহিত থাকার জন্য পরে আর উন্নতি বিষয়ক কোন খোঁজ নেয় নি।

    আগের পর্বে আমাদের ক্লাবে শোনপাপড়ী কারখানা খোলা ও তা উঠে যাবার কথা লিখেছিলাম। তা সেই কারখানা উঠে যাবার পর পড়ে থেকে একটা বাঁশের আটচালা যেখানে মাটির উনুনে রস জ্বাল দেওয়া হত। আর পড়ে ছিল একটা মাল বইবার তিন চাকার ভ্যান রিক্সা। একবার বর্ষাকালে ফিষ্টির স্থান পরিবর্তন করে স্কুল বাড়ি থেকে ক্লাবে নিয়ে আসা হয় ওই উনুনের সুবিধা নেবার জন্য। দ্বিতীয়বার সেই জায়গায় ফিষ্টি করতে গিয়ে রাত দশটা নাগাদ জ্বালানীতে টান পড়ল – পাবলিক তখন প্রায় মাতাল। তাই তারা আর কাঠের সন্ধানে অন্য কোথাও না গিয়ে সেই বাঁশের চালাটাই ভেঙে জ্বালানি করতে শুরু করে। সেই দিন মাংস পাঁঠার হবার জন্য পুরো চালাটাই লেগে যায় মাংস সিদ্ধ করতে। তাও সেই শোনপাপড়ী কারখানার স্মৃতি আরও কিছুদিন ছিল যখন আমরা সেই ভ্যান রিকশা নিয়ে ফিষ্টির বাজার করতে বেরোতাম। পরের একবার ফিষ্টিতে সেই রিস্কার কাঠের ফ্রেমও জ্বালানি হইয়ে যায়, ততসহ কারখানার শেষ স্মৃতি।

    একবার ঠিক হল মেনুতে বৈচিত্র আনতে হবে মাছের কোন একটা আইটেম করে। কেউ বিয়ে বাড়িতে তখন সদ্য বাটার ফ্রাই খেয়ে এসেছিল, সেই প্রস্তাব দিল যে বাটার ফ্রাই হোক তাহলে। আমাদের মধ্যে মৎস-সম্রাট শুভর কাছে অর্ডার হল টাটকা তোপসে জোগাড়ের জন্য। শুভ করিতকর্মা ছেলে, ১০০-১৫০ গ্রাম সাইজের মাছ সে জোগাড় করে ফেলে – তারপর সেই মাছ বেসনে (সোডা মেশানো) ডুবিয়ে ভাজা। সে এক দেখার মতন দৃশ্য – সবাই (ইনক্লুডিং মাতালেরা) উনুনের চারিদিকে গোল হয়ে বসে মাছ ভাজা দেখছে, আর আমি মাছ ভাজছি। টেষ্ট করতে করতেই মাছ প্রায় শেষ হয়ে যাবার জন্য খাবার পাত পর্যন্ত আর সেই বাটারফ্রাই পৌঁছয় নি।

    রান্নার সময় আর একটা প্রধান ঝামেলার সৃষ্টি হত ঝালের পরিমাণ নিয়ে। চারপাশে দাঁডিয়ে পড়ল সব – এ বলে আর একটু গুঁড়ো লঙ্কা দাও মাংসে, তো ও বলে একদম বেশী দিও না! প্রায়শই ব্যাপারটা ফ্রেণ্ডলি মারামারির পর্যায়ে চলে যেত। যে বেশী ঝাল খেতে পারত না তাকে বলা হত রসগোল্লার পড়ে থাকা রসটা তুই পাবি!

    গ্রামের বাইরে আমরা ফিষ্টি করতে যেতাম মূলত শীতকালে, মানে যখন আর সবাই যায় আর কি। আমাদের যাবার জায়গা একটাই ছিল – দামোদরের ধার। আমাদের গ্রামের থেকে দামোদর ৩-৪ কিলোমিটারের মধ্যে ছিল। হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইনে পাল্লা রোড বলে একটা স্টেশন আছে যেটা ফিষ্টির জায়গা বলে প্রভূত খ্যাতি লাভ করেছিল। এর কারণ মূলত আশির দশকে সেখানে হওয়া একাধিক বাংলা সিনেমার শুটিং – পাল্লা রোডের ডাকবাংলোকে তাপস-শতাব্দী বিখ্যাত করে দিয়েছিল। তবে সত্যি কথা বলতে কি, জায়গাটা শীতকালে প্রকৃতই মনোরম হত। দামোদরের জল প্রায় শুকিয়ে আসা – ফুরফুরে বাতাস, মিঠে রোদ, আর নদীর চড়াতে ফিষ্টি। আমরা গ্রাম থেকে যেতাম ট্রাক্টরে করে, ক্লাবের সদস্য প্রায় জনা ৫০ ছিল। মাল পত্র তুলে নিয়ে সকাল সকাল রওনা – মাঝে মাংস এবং মদ কেনার জন্য স্টপ। তবে আমি এত্যো পাবলিকের রান্না করার সাহস পেতাম না, তাই গ্রামের গোপাল ঠাকুরকে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হত।

    গোপাল ঠাকুর বা তার সহকারী বুধো কলুর সাথে আমাদের একটা দুষ্ট মিষ্টি সম্পর্ক ছিল। প্রথমেই বলে রাখা ভালো যে এরা আমাদের ফিষ্টিতে রান্না করতে আসত কোন রকম ফিনান্সিয়াল লাভের আশা ছাড়াই। শীতাকাল হলেই ওরা জিজ্ঞাসা করতে শুরু করত, কি রে তোদের ফিষ্টি কবে? সেই বুঝে অন্যদের ডেট দেব। পাবার মধ্যে ভাগ্য ভালো হলে গোপাল ঠাকুর বেঁচে থাকা তেল, গরম মশলা, বা জিরে-ধনে গুঁড়ো একটু বাড়ি আনতে পারত। বুধো কলু কেবল একটু মাংসের ঝোল ছেলের জন্য নিয়ে যেত – মাতালরা বিশ্বভাতৃত্ববোধের ইউনেস্কো দূত হতে পারে সেটা আমাদের পিকনিক থেকে ভালো বোঝা যেত – পাবলিক যতই মাতাল হোক, বুধো তার ছেলের জন্য মাংস নিয়ে যেতে পারে নি কোনবার সেটা হয় নি। তবে একবার ফেরার পথে ওদের রান্নার হাতা-খুন্তি নিয়ে একটু ঝামেলা হয়েছিল – সবাই এটা জানে যে হালুইকরেরা নিজেদের বড় বড় হাতা ও খুন্তি নিয়ে রান্না করতে আসে। আর আমাদের পিকনিকের থেকে ফেরার সময় একটা রুটিন ছিলে যে বাকি রান্নার জিনিসপত্র একেবারে ডেকরেটারের ঘরে নামিয়ে বিল মিটিয়ে ঘরে ফেরা। তা সেইবার ফেরার সময় কারো কাছে আর বিল মেটাবার টাকা ছিল না – ফলে গোপাল ঠাকুরের রান্নার ফেমাস খুন্তি-হাতা গুলি বন্ধক রাখার তোড়জোর করা হয় – এর ফলে গোপাল ঠাকুর খুবই রেগে গিয়েছিল – কিন্তু তা সত্ত্বেও পরের বছর পিকনিকে যথারীতি হাজির হয়।

    সারাদিন পিকনিকে গেলে একটা জলখাবারের ব্যবস্থাও করতে হয় সকালের দিকে – আমাদের সময় সেটার প্রায় ফিক্সড মেনু ছিল মুড়ি, ছোলা ছাঁকা, বেগুনী, ঘুঘনী। কেউ একবার লুচি চালু করতে চায়, তাকে যথারীতি আতেঁল বলে উড়িয়ে দেওয়া হয়েছিল। তবে রুটি-ঘুঘনী হয়েছিল কোন কোন বার জলখাবার হিসাবে – কিন্তু শীতকালে ক্রীকেট টুর্ণামেণ্টগুলিতে ওটা পেটেণ্টেড মেনু থাকার জন্য আর কেউ রিপিট করতে চাইত না সেই একই খাবার। ক্রীকেট টুর্ণামেণ্ট ও ততসহ খাবার দাবার বিষয়ে একটা আলাদা পর্ব লিখব, না হলে আমাদের যৌবনের সাথে অন্যায় করা হবে। সেই ফিষ্টির মেনুও কিন্তু একই ছিল প্রায় – মাঝে মাঝে ফ্রায়েড রাইক মাংস মেনুতে উচ্ছাস বয়ে আনত। রান্না ছাড়াও আরো একটা বড় কাজ ছিল ওই ফিষ্টির সময় মাতাল সামলানো – জলে ডু্বে মারা যাবার ঘটনাও আছে – তাই সর্তক থাকতে হত যে পাবলিক যাতে কন্ট্রোলে থাকে। যারা মাল না খেয়ে ফিষ্টিতে স্যাক্রিফাইস দিত, তারাই মাতাল সামলাবার দায়িত্বটাও নিত। গোপাল ঠাকুর কিন্তু খুব কম সময়ে রান্না করতে পারত – সেই রান্না দেখার পর আজকাল টিভিতে একটা ডিস তৈরী করতে ৩ ঘন্টা সময় নেওয়া হয় দেখে রিলেটিভিটি জিনিসটা আরও হৃদয় দিয়ে অনুধাবন করতে পারি।

    একবার তেমনই এক ফিষ্টিতে আমি সদ্য বিদেশ থেকে শেখা ‘সাংগ্রিয়া’ পানীয় প্রস্তুত করে সবাইকে খাওয়াই। সেই গল্প পরেরবার।
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • আলোচনা | ২৩ মে ২০১৫ | ৭৬৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    উৎসব - Sobuj Chatterjee
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • 4z | 79.157.80.175 (*) | ২৩ মে ২০১৫ ০২:৩৩66302
  • সুকির এই সিরিজটা ব্যপক হচ্ছে।
  • সিকি | 132.177.91.13 (*) | ২৩ মে ২০১৫ ০২:৩৬66303
  • সুকি অ্যাজ ইউজুয়াল অসাম।
  • শঙ্খ | 127.194.252.19 (*) | ২৩ মে ২০১৫ ০২:৪৩66304
  • সিটি, হাততালি, টেবিল চাপড়ানো, পিঠ চাপড়ানো ইত্যাদি।

    কেন ভালো লাগে বা লেগেছে, সে নিয়ে বিশ্লেষণ করতেই পারি, কিন্তু এক, টেইম নেই, দুই, এইসব লেখার পরে তার দরকারও নেই। পেটপুরে দুশো গ্রাম খাসি খেয়ে ঢেঁকুর তোলার আরাম পেলুম।
  • dd | 132.167.158.219 (*) | ২৩ মে ২০১৫ ০৪:৪৮66305
  • ফাসক্লাস
  • I | 120.224.203.159 (*) | ২৩ মে ২০১৫ ০৪:৫৮66306
  • দিব্য লেগেছে।
  • সে | 188.83.87.102 (*) | ২৩ মে ২০১৫ ১১:৫৭66301
  • "ড্রাগটেষ্টের ব্যাপার না থাকায় অনেক ফুটবল ম্যাচ আমরা তাড়ির জোরে জিতেছিলাম। তার যতটা না নেশাগ্রস্ত হয়ে অকুতভয় খেলার জন্য, তার থেকেও বেশী ঘামের দূর্গন্ধের জন্য। বিপক্ষ প্লেয়ার কাছে আসার সাহসই পেত না!" - এর ওপরে কথা হয় না। সুপার।
  • skm | 83.6.121.117 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০১:৫০66314
  • আমাদের গ্রাম বর্ধমান এ ।পাল্লা রোড থাকে বেসি দূর noy। শীতকালে ফ্যামিলি পিকনিক খিচুরী হত বাড়ির আম baganae। এখন হয় না । যখন পরতাম , হোস্টেল thecae ট্রাক করে দিঘা তে পিকনিক holo।
    পুজোএর পর পিকনিক স্ট্যান্ডার্ড মেনুএ bhat, mangso, misthi, একটা torkari। মদ চলত na। এখন গ্রাম এ ভালই মদ cholae।
  • kumu | 11.39.34.121 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০২:৩৮66307
  • খুব উপভোগ্য লেখা।
  • সুকি | 129.160.188.112 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০৪:১২66308
  • সবাইকে ধন্যবাদ -

    তা বলছিলাম কি, যদি আপনারাও পিকনিকের খাবার দাবার বিষয়ক কিছু স্মৃতি এখানে শেয়ার করেন তা হলে প্রভূত আনন্দ পাব।

    আমার অনেক দিনের ইচ্ছা কলকাতায় যারা মানুষ হয়েছে তারা কিভাবে ছোটবেলায় পিকনিক ইত্যাদি করত তা জানার।
  • সে | 188.83.87.102 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০৪:৫৫66309
  • সুকি,
    এদেশে এসে জানলাম, পিকনিকের অর্থ ভিন্ন। তৈরী খাবার বয়ে নিয়ে গিয়ে খেলে তাকে পিকনিক কয়। আমাদের অফিসের ক্যান্টিনে পিকনিক নিয়ে আসা বারণ ছিলো। মানে বাইরে থেকে খাবার নিয়ে আসা। ক্যান্টিনে লেখা ছিলো, পিকনিক অ্যালাউড নয়। ওখান থেকেই কিনে খেতে হবে। সেই অর্থে, পিকনিক রোজই করতাম। টিফিন কৌটোয় বাড়ী থেকে আনা খাবার নিয়ে, ক্যান্টিনের বাইরে কোথাও বসে খেতাম। ;-)))
  • Abhyu | 118.85.88.75 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০৫:৪৫66310
  • আমি তো গ্রামে মানুষ, গ্রামের নাম কল্যাণী। ফাঁকা মাঠ প্রচুর, সেখানেই পিকনিক। সবচেয়ে পপুলার জায়গা ছিল লেকের ধারে। লেক মানে গঙ্গার বুজে যাওয়া একটা শাখা/উপনদী থেকে তৈরী হওয়া জলা। তার পাশে অনে-এ-এ-ক জায়গা। একসাথে অনেক্গুলো দল পিকনিক করতে পারে আলাদা আলাদা করে। তা ছোটোবেলায় আমরা সারাদিন খেলতাম আর বড়রা রান্না করত, মুনলাইট পিকনিকও করেছি - শুধু খেতে বসলেই চলত, আর কোনো দায়িত্ব ছিল না। ব্যাপারটা বদলে গেল ক্লাস এইট নাইন থেকে, নিজেরাই রান্না এবং পরিবেশন করতাম। কোএড স্কুল বলে ব্যাপারটার অন্য মাত্রা ছিল :)
    একবার ঊষা মিস বিকেলবেলা ঐ দিন দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন, এসে পরিবেশন করেছিলেন - অরণ্যদারা ওনার কাছে পড়েছে হয় তো।
  • dd | 132.171.64.103 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০৫:৫৫66315
  • শুনুন।
    খুব ছোটোব্যালায় পিকনিক মানে বটানিকেল গার্ডেন বা চিড়িয়াখানা। মাসী পিসীদের সাথে। আরো বহুৎ কুচো কাচা কাজিন। ওনলি ইন উইন্টার। পাউরুটি, মাখোন,কমলালেবু, ডিম সেদ্দো। কম্পালসারী মেনু। নাথিং এল্স। বহু যুগ আগের, সেই সোনা রংএর ডিমগুলি।

    কালেজ জীবনে টিবনে পিকনিক খুম কমে গেসলো। বড্ডো বোমা পরতো চাদ্দিকে।

    আবার চাগরী জীবনেও পিকনিক হতো। সেটাকে বোলতো ফেমিলি ডে আউট। কোল্কাতায় হোতো বাঞ্ছারামের বাগানে। লুরুতে নানান রিসর্টে। পরিমিত মদ্যপান। রিসর্টের বাফে মেনু, মাংসো থাকতো হাড় ভর্তি। চিকেন হতো ব্লটিংপেপারের।

    হায়, সেই কার্ড রাইস ও আজ আর নাই।
  • Abhyu | 118.85.88.75 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০৬:০৭66316
  • সেই সোনা রংএর ডিমগুলি :)
  • san | 113.245.14.254 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০৬:৪৭66311
  • খুবই আনন্দ পেলাম পড়ে। আরো পর্ব লিখুন। আমার স্মৃতিতে ছোটোবেলার বেশিরভাগ পিকনিকই ফ্যামিলি পিকনিক - কোলকাতা থেকে গাড়ি/বাসে করে পিকনিক স্পটে যাওয়া - সঙ্গে রান্নার উপকরণ। হৈ-চৈ খেলাধূলো গানবাজনা সবই হত , দিব্বি মজা হত। অবশ্য হাউসিং এর ছাদে কখনও কখনও ছোটোরা নিজেরা রান্না করে পিকনিক হয়েছে বৈ কি :-) মধুর স্মৃতি সব -
  • sosen | 212.142.69.19 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০৬:৫৩66312
  • আমরা ফিস্ট কইতাম
  • byaang | 233.227.19.67 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ০৮:৫২66317
  • কী যে ভালো লাগল লেখাটা পড়ে! খুব ভালো এই লেখাটা। অনেক পুরোনো ফিস্টির কথা মনেও পড়ে গেল।
  • Somnath | 131.241.208.125 (*) | ২৪ মে ২০১৫ ১২:১০66313
  • ভাল লাগল। আপনার লেখা থেকে নিজের অনেক স্মৃতিকে খুঁজে পেলাম। তবে পরবর্তী ক্রিকেট নিয়ে লেখার ইচ্ছা প্রকাশ করছেন। খুব ভাল। কিন্তু ক্রিকেট বানানটি "ি"কার লিখলে চোখের আরাম হয়। ইংরেজি শব্দ। "ি"-কারই ভাল। পরবর্তী কলমের আশায় রইলাম। ধন্যবাদ।
  • শিবাংশু | 127.197.250.189 (*) | ২৬ মে ২০১৫ ১২:১১66318
  • সুকান্তের সব লেখাতেই একটা সজল শুশ্রূষা থাকে। সাম্প্রতিক লেখাগুলির মধ্যেও তা অবিরল। ভালো লাগে, এটুকুই লেখা থাক এখানে।
  • | 213.132.214.155 (*) | ২৬ মে ২০১৫ ১২:৪৬66319
  • খুব ভালো লাগলো। ধন্যবাদ।
  • m | 213.112.220.194 (*) | ২৭ মে ২০১৫ ০৪:৪১66320
  • স্বাবাভিক -> স্বাভাবিক? একাধিক জায়গায় আছে তাই লিখলাম। লেখা উপভোগ্য হয়েছে, পিকনিকের মতই।
  • সুকি | 168.161.176.18 (*) | ২৭ মে ২০১৫ ০৭:৩৯66321
  • সবাইকে লেখা পড়ার জন্য ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেবার জন্য ধন্যবাদ।

    সোমনাথ, আপনি ঠিকই বলেছেন - ওটা 'ক্রিকেট' ই লেখা উচিত এবং আমিও তাই লিখতে চেয়েছিলাম। টাইপো হয়ে গেছে।

    m - আপনিও ঠিক - স্বাভাবিক বানানটাও ভুল রয়েছে, এবং বেশ চোখে পড়ছে। কি করে ভুল হল বুঝতে পারছি না।

    dd-দার কথায় 'কার্ড রাইস' এর উল্লেখ দেখে ব্যাঙ্গালোর এর কথা মনে পড়ে গেল। বহুকাল আগে কোম্পানির দৌলতে 'লীলা প্যালেসে' খেতে যেতাম প্রায়ই - বাইরে থেকে আসা কলিগদের সম্মানার্থে বা অন্য কারণে। তা প্রথম বার যখন গেছি, তখন তো আমি সদ্য কলেজ পাশ - ফ্রী খাওয়া মানে বাহ্যিক জগত সম্পর্কে ভুলে গিয়ে নিজেকে ভাসিয়ে দেওয়া - তেমনি ভাবি তন্দুরি চিকেন সমাধিস্ত করছি, আর আমাদের গ্রুপের দীপা শ্রীনিবাসন দেখি ওয়েটারকে ডেকে ফিসফাস করে কি বলল - ওয়েটার একটু অবাক হয়ে গেল - ছোটাছুটি ইত্যাদি - পরে জানা গেল দীপা কার্ড রাইস খেতে চেয়েছিল - লীলা প্যালেসে রাত দশটায় কার্ড রাইস পাওয়া একটু চাপের ছিল। আমি সেই কালে রেষ্টুরান্টে কার্ড রাইস চাওয়া বা খাওয়াকে অমার্জনীয় অপরাধ মনে করতুম - তবে এখন রক্ত ঠান্ডা হয়ে গেছে অনেক, পেটও হয়েছে সেনসিটিভ। তাই এখন পুরানো দিনের কথা মনে ভেবে ওদের ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখি।
  • নন্দিনী | 132.163.99.162 (*) | ২৯ মে ২০১৫ ১০:০৩66322
  • পিকনিকের কথায় মজার কিছু ঘটনা মনে পড়ল। আমি বড় হয়েছি হলদিয়া তে। সেখানে শীতকালে প্রচুর লোক পিকনিক করতে আসত নদীর ধারে। মোস্টলি রবিবার সকালে।

    আমাদের বাড়ী একদম নদীর ধারে হবার দরুন আমাদের বাড়ী তেই সেইসব পিকনিকের দল হামলা চালাত। মাঝে মাঝে তারা বঁটি নিয়ে আসতে ভুলে গেছে বলে। বা মহিলারা বাথরুম যাবে। কেউ তার ছোট বাচ্চা কে খাওয়াবে।

    কিন্তু সবচেয়ে মজা হল যখন রামানন্দ সাগরের "রামায়ণ" এবং পরে "মহাভারত" শুরু হল। তখন গোটা পিকনিক পার্টি আমাদের বাড়ী এসে সেইদিনের এপিসোড টা দেখে যেত। এক গাদা অচেনা লোক আমাদের বসার ঘরে, মাটীতে বা সোফায় বসে ভিড় করে মহাভারত দেখছে, আর আমার মা তাদের চা সরবরাহ করছে।
  • pi | 127.194.19.208 (*) | ২৯ মে ২০১৫ ১০:২২66323
  • কার্ড রাইস শুনে আমারো মনে পড়ে গেল। বম্বেতে চলে আসার আগে পার্টি দিয়েছিলাম, লোকজন বলেছিল বাঙালি খাবার খাবে। মুখার্জী ক্যাটারারকে ( জানিনা এখনো আছে কিনা) দাওয়াত দেওয়া হল। বিশুদ্ধ বাঙালি মেনু। বিয়েবাড়ির বাঙালি মেনু পুরো। তো, চাটনি পাঁপড়ের পর রসগোল্লা পদে পৌঁছে যাবার পরে প্রফ বি জে রাও কে দেখি বাফের ওখানে নানা কিছু উঁকি ঝুঁকি মেরে দেখছেন, হাতে থালা। কী চাই জিগাতে খুব দুঃখী দুঃখী মুখ করে জিগিয়েছিলেন, কার্ড রাইস নাই ?
  • Lama | 213.99.211.18 (*) | ২৯ মে ২০১৫ ১১:১৩66324
  • বোটানিক্যাল গার্ডেনে পিকনিক করতে আসা কিছু কিছু দল বোটানিক্যাল গার্ডেন ভেবে মাঝেমধ্যে আমাদের কলেজে ঢুকে পড়ত।

    তাদের অনেকে ব্যাডমিন্টন র‌্যাকেট আর টুপি হাতে করে ধর্মতলা বি গার্ডেন মিনিবাস থেকে কলেজ গেটে নামত। সিকিউরিটি গার্ডের সংখ্যা খুব কম ছিল। পিকনিক পার্টিদের অনেকে মিনিবাস থেকে নেমেই সোজা কলেজে ঢুকে পড়ত। আর গেট দিয়ে ঢুকেই হাতের টুপিটা মাথায় এবং পকেট থেকে বার করে রোদচশমা চোখে পরে ফেলত।

    তারপর খইনি ডলতে ডলতে দূর থেকে দৌড়ে আসতেন সিকিউরিটি এবং প্রাঞ্জলভাবে বুঝিয়ে দিতেন কলেজটা পিকনিকের জায়গা নয়। অতঃপর পিকনিক পার্টিরা টুপি চশমা খুলে রেখে ক্যাম্পাস থেকে বেরিয়ে বি গার্ডেনের দিকে হাঁটা দিতেন।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা মনে চায় মতামত দিন