এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • হায় শিক্ষা... হায় শিক্ষক!!

    Muhammad Sadequzzaman Sharif লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ২৩ নভেম্বর ২০১৮ | ১৯১৪ বার পঠিত
  • খুব বেশি দিন আগের কথা না। আজ থেকে দশ পনেরো বছর আগেও মাধ্যমিকে বাঁ উচ্চ মাধ্যমিকে কেউ মোটামুটি ভাল রেজাল্ট করলেও বাবা মা নিজের সন্তান কে নিয়ে যেত সেই ছাত্র কে দেখাতে। স্টার মার্ক পেয়েছে এমন কেউ ছিল দেখতে যাওয়ার মত ছাত্র। দুই বিষয়ে লেটার পেয়ে পাস করা ছাত্রকেও দেখতে গেছে মানুষ ভিন্ন গ্রাম বা মহল্লা থেকে। এরপর ভোজবাজির মত অবস্থার পরিবর্তন হয়ে গেল। নাম্বারের যুগ চলে গেল। আসল গ্রেডিং এর যুগ, এ প্লাসের যুগ। ঘরে ঘরে এ প্লাসে পরিপূর্ণ হয়ে গেল। এখন এমন অবস্থা হয়েছে যে হয় এ প্লাস না হয় ফেল, এর মাঝে যে আরও কিছু আছে তা কেউ মনেই করে না।

    শিক্ষার মান কমে যাচ্ছে বলে সকাল বিকাল চ্যাঁচামেচি করছে বহু মানুষ। কিন্তু মান উন্নয়নের কোন পদক্ষেপ সেই ভাবে চোখে পরছে না। স্কুল কলেজের পড়ালেখা দ্রুত টাকাওয়ালাদের হাতে চলে যাচ্ছে। স্কুল কলেজের ক্লাসে পড়া হচ্ছে না, ছাত্ররা ক্লাসের চেয়ে বাইরে আলাদা করে কোচিং, বাড়িতে শিক্ষক রেখে পড়াশোনায় বেশি আগ্রহী হয়ে উঠছে। বাড়িতে শিক্ষক এসে পড়াচ্ছে প্রত্যেকটা বিষয়। প্রতি বিষয়ের জন্য আলাদা আলাদা শিক্ষক। স্কুলের সময়টা স্কুলে কি হচ্ছে তা একটা গবেষণার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে এখন।

    বাড়িতে শিক্ষক যারা এসে পড়াচ্ছে তারা যদি ছাত্রের নিজের স্কুলের শিক্ষক হয় তাহলে ব্যাপারটা যতখানি কুৎসিত হয়ে যায় তা একটা শিক্ষক বা অভিভাবক কারো চোখেই পরে না।স্কুলের শিক্ষক ক্লাসে কি করে এই প্রশ্ন না তুলে বরং তার হাতেই নিজের সন্তান কে তুলে দিচ্ছেন অভিভাবকরা। পুরো বিষয়টা পড়াশোনার থেকে আস্তে আস্তে সম্পূর্ণ ভিন্ন দিকে চলে যাচ্ছে। এখন শিক্ষকের কথা ভাবুন। দুই জায়গা সামাল দেওয়ার জন্য তাকে কি করতে হচ্ছে? তিনি ক্লাসে খুব ভাল পড়াবেন না, যদি তা করেন তাহলে তাকে তার স্কুলের কোন ছাত্র বাড়িতে পড়ানোর জন্য বলবে না। আবার খুব খারাপ পড়াবেন না সেই একই কারনে। মাঝখানের সূক্ষ্ম একটা পথ ধরে তিনি চলেন।

    শিক্ষকদের যে উচ্চ অবস্থান ছিল কিছুদিন আগেও তা এখন আর নাই। শিক্ষকদের এই লাগামহীন গৃহশিক্ষক হওয়ার লোভের কারনে। তারা যদি শুধু সূক্ষ্ম মাঝামাঝি পথ ধরে চলত তাহলেও হয়ত এতটা নষ্ট হয়ে যেত না পরিবেশ, এতটা দুর্গন্ধ উঠত না শিক্ষক পেশা থেকে। যেহেতু একটা স্কুলে একের অধিক গণিত শিক্ষক থাকে কাজেই তাদের নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা করতে হয়। নিজের স্কুলের ছাত্ররা অন্য স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পড়বে তা তারা প্রথমে অলিখিত এক আইন করে বন্ধ করেছেন। আমাদের কাছে পড়বা না? তোমার আর পাশ করে কাজ নাই!! নোংরা ভাবে খাতায় নাম্বার কম দিয়ে, ক্লাস পরীক্ষায় ফেল করিয়ে, কারনে অকারণে শাস্তি দিয়ে ব্যতিব্যস্ত করে রাখা হয় ওই ছাত্র কে। যে মাত্র সে স্কুলের কোন শিক্ষকের কাছে পড়া শুরু করল তার পর থেকেই সব দিক থেকে শান্তির বাতাস বইতে শুরু করে দিল। কিন্তু যখন নিজের স্কুলের শিক্ষকদের মাঝেই প্রতিযোগিতা শুরু সেক্ষেত্রে কি করার?

    সেক্ষেত্রে অবস্থা আরও ভয়াবহ। একজন আরেকজনের নামে কুৎসা রটাচ্ছে, একজনের সামান্য ভুল পেলে আরেকজন সবার সামনে অপদস্থ করছে। অন্যদিকে অভিভাবকদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে, তেল ঘি যখন যা লাগে তা দিয়ে নিজের অবস্থান পরিষ্কার করছে। নোংরামির কোন সীমাপরিসীমা নেই এখানে। ছাত্রদের কে রীতিমত অভিশাপ দিচ্ছে শিক্ষক!! কেন সে তার কাছে পড়ছে না? যখন একজন শিক্ষক ছাত্র কে বলে যে তোর জীবনে পড়াশুনা হবে না, তুই ধ্বংস হয়ে যাবি, না খেয়ে মরবি, ভিক্ষা করবি রাস্তায় রাস্তায় তখন হয় তার সাথে মারামারি করা যায় আর নাহয় তার ব্যাচে পড়তে চলে যাওয়া যায়। ছাত্ররা কেউ কেউ প্রতিবাদ করে, বেশ কিছুদিন গরম অবস্থা থাকে পরে আস্তে ধীরে সবাই কে ওই শিক্ষকের ছায়াতলে আসতে হয়।

    ব্যাচ সিস্টেমে পড়ানোর একটা কুৎসিত দিক বলে শেষ করি। ব্যাচে ছাত্র আনার জন্য শিক্ষকরা কত নিচে নামতে পারে তার উদাহরণ এইটা। আমি নিজে ব্যক্তিগত ভাবে না জানলে বিশ্বাস করতাম না। শিক্ষকরা তার ব্যাচ জমানোর জন্য ক্লাসের কয়েকজন ছাত্রী কে তার ব্যাচে রাখে। তাদের কে রাখাই হয় ছাত্রদের কে আকৃষ্ট করার জন্য। শিক্ষকদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয় দেখতে সুন্দর, স্মার্ট ছাত্রীদের তাদের ব্যাচে পেতে। শিক্ষার অবস্থা আর শিক্ষকদের অবস্থা কোন স্তরে নেমে গেছে তা পরিষ্কার বুঝা গেছ এখন।

    আমি আমার গণ্ডির ভিতরে যতটুকু দেখেছি ততটুকু বললাম। পুরো দেশের চিত্র ভিন্ন রকম হলে আমার চেয়ে বেশি খুশি অন্য কেউ হবে না। কিন্তু আমি জানি পুরো দেশের চিত্রই কম বেশি এমন। ঢাকার যে চিত্র দেখে এসেছি তা আরও ভয়াবহ। সেখানে টাকা বেশি, তাই প্রতিযোগিতা বেশি। তবুও ঢাকার অবস্থা মফস্বল শহর থেকে ভাল কারন সব ভালর নাম ঢাকা। ভাল শিক্ষক থেকে শুরু করে ভাল শিক্ষা সব যেহেতু ঢাকায় তাই সেখানে শিক্ষা নিয়ে বড় বাণিজ্য সেখানে হলেও পড়ালেখাটাও হয়ত খারাপ হয় না।

    কিন্তু মফস্বল শহরের অবস্থা খুবই করুন। সরকারি স্কুল বা বেসরকারি স্কুল, শিক্ষকদের স্বেচ্ছাচারিতা, লাগামহীনতা শিক্ষা ব্যবস্থাকে পঙ্গু করে দিচ্ছে। এই কুৎসিত সিস্টেমের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে যাওয়া একজন আমাকে বলেছে, তিনি যে শিক্ষক এই পরিচয় কাওকে দেন না। উনি শিক্ষক আবার ক্লাসের বাইরে কোন ছাত্র পড়ান না, এটা নাকি কেউ মেনে নিতে পারেন না, ভাবেন তিনি মিথ্যা বলছেন। তাই শিক্ষকদের মত মহান পেশার কথা উনি লজ্জায় কাওকে বলেন না।

    হায়! এরপরেও চাঁদ সূর্য উঠছে, আমরা দিব্যি নিশ্চিন্তে ঘুমচ্ছি আরামের ঘুম!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ২৩ নভেম্বর ২০১৮ | ১৯১৪ বার পঠিত
  • আরও পড়ুন
    বকবকস  - Falguni Ghosh
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • Muhammad Sadequzzaman Sharif | 340112.92.345612.106 (*) | ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ০৬:২৪62833
  • ব্যাচে পড়ান নতুন না। নতুন হচ্ছে ছাত্রদের বাধ্য করা আর বাধ্যকরার তরিকা। টাকার নেশায় অন্ধ একেকজন। টাকার অংকও কম না। আমাদের মফস্বল শহরে একজন ভাল স্কুলের পদার্থ বিজ্ঞান বা গণিত শিক্ষক মাসে চোখ বন্ধ করে এক লাখ টাকা কামাচ্ছে। এরা এই পরিমান টাকা কামাতে কামাতে এখন এর থেকে যদি এক হাজার টাকা কম পরে মানে একজন ছাত্রও যদি কমে যায় ব্যাচ থেকে তাহলেই মাথা আউলা হয়ে যায়। তখন কি থেকে কি করে কোন হুশ থাকে না।
  • Nahar Trina | 89900.227.90012.5 (*) | ২৫ নভেম্বর ২০১৮ ১২:০৪62832
  • স্কুল শিক্ষকের বাইরে ছাত্র-ছাত্রী পড়ানোর রেওয়াজ তো আজকের না রে ভাই। এ নিয়ম বহুদিন থেকেই চালু। ব্যাচ পড়ানোর ব্যাপারটাও তাই। পুরনো রীতি। কিন্তু সুন্দরী ছাত্রীদের ছাত্র আকৃষ্ট করার কাজে ব্যবহারের যে কুৎসিত নিয়মটার কথা শুনলাম, সত্যিই ভাবনাতেই আসছে না এমন হীন কাজ কিভাবে শিক্ষকদের দ্বারা সম্ভব! দিন দিন কোথায় নেমে যাচ্ছি আমরা! :(
  • Atoz | 125612.141.5689.8 (*) | ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ১২:১৮62834
  • সরকারী স্কুল শিক্ষককদের প্রাইভেট টুইশন করার উপরে নিষেধাজ্ঞা আনতে বলুন সরকারকে। আইন হলে তখন অবস্থা বদলাবে।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। লুকিয়ে না থেকে মতামত দিন