এই সাইটটি বার পঠিত
ভাটিয়ালি | টইপত্তর | বুলবুলভাজা | হরিদাস পাল | খেরোর খাতা | বই
  • হরিদাস পাল  ব্লগ

  • কোই হ্যায়? (পূর্ব বঙ্গের ইংরেজ সিভিলিয়ন) - মুনতাসীর মামুন

    Muhammad Sadequzzaman Sharif লেখকের গ্রাহক হোন
    ব্লগ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ২০২৪ বার পঠিত
  • পূর্ববঙ্গের ইতিহাসের উপরে গবেষণা ধর্মী বই লিখেছেন মুনতাসীর মামুন। বইয়ের নাম “কোই হ্যায়?” বইয়ের ফ্লাপে লেখা আছে - “পূর্ববঙ্গে ইংরেজ সিভিলিয়ানদের জীবন চর্চা, কর্মকাণ্ড নিয়ে ইতোপূ্র্বে কোনো গ্রন্থ প্রকাশিত হয়নি। পূর্ববঙ্গের ইতিহাস রচনার পথিকৃৎ ড. মুনতাসীর মামুনের বর্তমান গ্রন্থ সেই অচেনা অজানা বিষয় নিয়ে। দীর্ঘদিন গবেষণার পর পূর্ববঙ্গ সম্পর্কিত সিভিলিয়ানদের লেখা ১৯টি স্মৃতিকাহিনীর ওপর ভিত্তি করে রচিত ‘কোই হ্যায়’। গ্রন্থের প্রথম পর্বে ইংরেজ বা ইউরোপিয়দের এ দেশে আগমন, ক্ষমতাদখল ও ঔপনিবেশিক শাসন বিস্তারের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া হয়েছে। গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে ঔপনিবেশিক আমলাতন্ত্রের বিকাশ, সিভিলিয়ানদের জীবন ও কর্মপদ্ধতি এবং আমলাতন্ত্রের বিভিন্ন কর্মের মাধ্যমে ঔপনিবেশিকতার প্রকাশ ও বীজ বপন ইত্যাদি। দ্বিতীয় পর্বে সিভিলিয়ানদের রচিত পূর্ববঙ্গ সম্পর্কিত বিবরণ। সময়কাল ১৭৭২ থেকে ১৯৪৭।
    ‘কোই হ্যায়’ শব্দ দুটি একদিকে তুলে ধরে ঔপনিবেশিক শাসকের ঔদ্ধত্য-প্রভুত্ব, অন্যদিকে দেশিদের অধস্থনতা। সাধু গদ্যে লেখা তৎকালীন পূর্ববঙ্গ বা বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক ইতিহাসে নতুন মাত্রা যোগ করবে ‘কোই হ্যায়’।”

    ৫০০+ পৃষ্ঠার এই বইয়ের মূল বিষয় নিয়ে দুচারটা কথা বলা আগে দুটি কথা বলে নেই। প্রথম কথা হচ্ছে লেখক মুনতাসীর মামুন সম্পর্কে। সম্ভবত বর্তমান সময়ে তিনিই একমাত্র ইতিহাসবিদ দেশে যিনি নিরলস ভাবে ইতিহাস নিয়ে কাজ করে চলছেন। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে উনার গবেষণা প্রশংসনীয়। ঢাকা শহর নিয়েও তার গবেষণা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। ২০১১ সালে পেয়েছেন একুশে পদক।
    অন্য যে বিষয় নিয়ে বলতে চাচ্ছি তা হচ্ছে নামকরণ। ফ্লাপে লিখেছে কোই হ্যায় দিয়ে ঔদ্ধত্য প্রকাশ পাচ্ছে, প্রভুত্ব প্রকাশ পাচ্ছে। নামকরণ বিষয়টা পরিষ্কার করি। সস্তা শ্রমের কারনে ইংরেজরা এদেশে এসে কাজ থাকুক আর না থাকুক এক গাঁদা করে চাকর রাখত। ছোট একটা পরিবারের ঘরের ভিতরে ১৬ জন চাকর দরকার পড়ত, বাহিরে দরকার পড়ত আরও ৯ জনের। এই ১৬ জনে মধ্যে একজন ছিল ‘হরকরা’, এদের একমাত্র কাজ ছিল সাহেবের বৈঠকখানা ঘরের পিছনে একটি কুঠরিতে চুপ করে বসে থাকা, এবং ‘কোই হ্যায়’ বলে সাহেব চেঁচিয়ে উঠলে ‘হুজুর’ বলে সেলাম দিয়ে সাহেবের সামনে দাঁড়ানো” নবাব শুধু ভারতেই ছিল না, একেকজন ইংরেজ এই দেশে এসে নবাব হয়ে যেত অতি সহজেই। ৫ পাউন্ড বেতনের কেরানির চাকরির জন্য তাই ইংল্যান্ডে তুমুল প্রতিযোগিতা হত। সেই আমলে রীতিমত কোচিং সেন্টার পড়ে মানুষ প্রস্তুতি নিত ইন্ডিয়ান সিভিল সার্ভিস পরীক্ষার। পুরো বই জুড়ে পূর্ববঙ্গ কে ইংরেজরা কত ভাবে ছোট করা যায় করেছে বলে দেখিয়েছে। মামলাবাজ বলে গালি দিয়েছে পূর্ববঙ্গবাসীদের। প্রায় সবার বক্তব্য ছিল পূর্ববঙ্গ হচ্ছে নিরস,নোংরা আর "অত্যন্ত অসহ্য" আবহাওয়ার দেশ। এত খারাপ কিন্তু কেউ ছেড়ে চলে যায়নি এই এলাকা ছেড়ে কিংবা অন্য কোথাও পোস্টিং না করলে চাকরি করব না বলেও কেউ বলেনি। তা বলার কথাও না। আর কোথায় পাওয়া যেত এমন ব্যবস্থা যেখানে একজন শুধু বসেই থাকবে সাহেবের কোই হ্যায় ডাক শোনার জন্য, যার জন্য হয়ত খরচ করতে হবে খুব বেশি হলে ১ রুপী!!

    এবার বইয়ের মূল বক্তব্যে যাই। ১৬০৮ সালে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি ভারতবর্ষে আসে। সুরাটে ১৬১৩ সালে নির্মাণ করেন তাঁদের প্রথম বাণিজ্যিক কুঠি। ১৬৩৩ সালের দিকে তৎকালীন বাংলার সাথে বাণিজ্য শুরু করে কোম্পানি। উড়িষ্যার হরিহরপুরে এই জন্য একটা বাণিজ্য কুঠি স্থাপন করে। শুরুতে পর্তুগীজদের জন্য ব্যবসায় সুবিধা করতে পারছিল না ইংরেজরা। তাঁদের মূল লক্ষ্য ছিল মসলা বাণিজ্য। অন্যদিকে বাণিজ্যে সুবিধা না করতে পেরে বাংলায় মনোযোগ দেয় কোম্পানি। ১৬৫১ সালে হুগলীতে স্থাপন হয় আরেকটি বাণিজ্য কুঠি। সুশীল চৌধুরী বলেছেন বাংলায় উপনিবেশিক শাসনের প্রথম মাইলফলক। সপ্তদশ শতকে সারা ভারতে কুঠি ছিল ২৩ টি। শেষ পর্যন্ত বাংলা লাভজনক হয়ে উঠে ইংরেজদের কাছে। সেই সময়ের এক কুঠিয়াল জানায় কোম্পানির পরিচালকদের, “বাংলাদেশ একটি সমৃদ্ধশালী দেশ। এখানে কাঁচা রেশম, সূক্ষ্ম সুতিবস্ত্র, সোরা প্রচুর পাওয়া যায় এবং সস্তায় পাওয়া যায়। আমাদের ব্যবসা এখানে এত লাভজনক চলছে যে অচিরেই আমাদের ব্যবসা সম্প্রসারণের প্রয়োজন পরবে এবং নতুন গুদামঘর স্থাপন করতে হবে।” এরপর ১৬৫৭ সালে মাদ্রাজ থেকে বাংলায় আলাদা ভাবে প্রথম এজেন্সি খোলা হয়। পলাশীর যুদ্ধের আগ পর্যন্ত মোঘলদের অনুমতি নিয়ে ব্যবসা করে কোম্পানি। যুদ্ধের পর চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায়। ব্যবসার জন্য আসা কোন কোম্পানির সেই দেশে শাসনের সাথে যুক্ত হয়ে যাওয়ার নজির আর নাই পৃথিবীর ইতিহাসে। ১৭৫৭ সালে ক্লাইভ সিরাজউদ্দৌলা কে পরাজিত করে কার্যত বাংলা বিহার উড়িষ্যার অধিপতি হয়ে বসেন। কোম্পানি এরপর দখল করে মহীশুর, হায়দ্রাবাদ। মারাঠারা কোম্পানির কাছে নতি স্বীকার করে ১৮২৩ সালের দিকে, ১৮২৬ সালে আসাম, ১৮৪৩ সালে সিন্ধু। ১৮৪৯ সালে পাঞ্জাব এবং ১৮৫২ সালে নিম্ন বার্মা দখল করে কোম্পানি। ব্রিটিশ রাজের প্রশাসনিক এজেন্সিতে পরিণত হয় কোম্পানি।
    প্রথম অবস্থায় কারা আসত অত দূর থেকে ভারতে? মুনতাসীর মামুন বলছেন - “লন্ডন প্যারিসের জুয়াখানার দুর্বৃত্ত, মাদাগাস্কার ও লোহিত সাগরের বেকার জলদস্যু, ব্রিটিশ ও ফরাসী সেনাবাহিনীর ফেরারি ফৌজ, এই শ্রেণীর এবং এই শ্রেণীর বহুপ্রকার বোম্বেটে যাদের পক্ষে ইউরোপে অবস্থান ছিল বিপদজনক, তারাও ইউরোপীয় সভ্যতা ও শিল্প প্রগতির প্রতিভূ রূপে ভারতীয় রণাঙ্গনে অবতীর্ণ হয় এবং বিবাদমান রাজন্যবর্গের বা বণিকদের আশ্রয়ে থেকে অগোচরে ভারতবর্ষীয় ইতিহাসের গতি নিরূপণ করতে থাকে, নির্মাণ করে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের ইমারত।”
    দেখা যাচ্ছে কি চমৎকার লোকগুলাই আসছিল আমাদের কে সভ্য করে তৈরি করতে। পরবর্তীতে অনেক গুণীর দেখাই পাওয়া গেছিল ভারতবর্ষে। কিন্তু শুরু হয়েছেল রবার্ট ক্লাইভের মত মানুষদের দিয়ে।

    শিক্ষিত ইংরেজ আসছে অনেক পরে। যখন কোম্পানি মোটামুটি জাঁকিয়ে বসেছে ভারতবর্ষে। রাইটার নিয়োগ দেওয়া হত। প্রথমদিকের রাইটাররা ছিল স্বল্প শিক্ষিত। রাইটার যারা আইসিএস পরীক্ষায় পাস করত তাঁদের কে এক বছরের মত প্রশিক্ষণ দেওয়া হত। আবার পরীক্ষা হত। যারা পাস করে যেত তারাই ভারতে আসার সুযোগ পেত। খুব কড়াকড়ি ছিল স্থানীয় ভাষা শিক্ষা আর ঘোড়া চালানোর উপরে। সব কিছু পাস করে কেউ যদি ঘোড়া চালানো পরীক্ষায় ফেল করত তাহলে তাকে ফেল করে দেওয়া হত।ভাষা জ্ঞান কে ইংরেজরা গুরুত্ব দিত বেশ। প্রথম অবস্থায় যখন স্থানীয় ভাষা ইংরেজরা রপ্ত করে উঠতে পারত না তখন দেশি লোকদের উপরে পুরোপুরি নির্ভর করত। মুনতাসীর মামুন কবি নবীন চন্দ্রের আত্মজীবনী থেকে উদাহরণ দিয়েছনে । উনিশ শতকের প্রথমার্ধে তার পিতা চট্টগ্রাম জজ আদালতের পেশকার ছিলেন। তিনি লিখেছেন - “তাঁহার দোর্দণ্ড প্রতাপ।ইংরেজ মহলে পর্যন্ত তিনি প্রকৃত জজ বলিয়া পরিচিত।… তিনি পারস্য কাগজ হাতে লইয়া অবিরল পার্সি পড়িয়া যাইতে পারিতেন। গিরিশেখরস্থ ধর্ম্মাধিকরনের দ্বিতল গৃহ কলকণ্ঠে পরিপূর্ণ করিয়া ‘মিসিল’ পড়িতে লাগিলেন; জজ টানা পাখায় আন্দোলিত শেখরজাত স্নিগ্ধ সমীরণে নাসিকা ধ্বনি করিয়া নিদ্রা যাইতে লাগিলেন।।… মিসিল বন্ধ হইলে জজের নিদ্রাভঙ্গ হইল; পিতার প্রদত্ত হুকুমে দস্তখত করিলেন; বিচারকার্য্য শেষ হইল।তাঁকে সন্তুষ্ট করার জন্য সকালে তার বৈঠকখানা উমেদারে পরিপূর্ণ থাকতো। আনা হত ষড়োপচার।”
    এহেন পরিস্থিতির জন্য প্রশিক্ষণ জরুরি ছিল। এরপর ইংল্যান্ডেই কোচিং ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছিল আইসিএস পরীক্ষার জন্য, বর্তমান আমাদের বিসিএস পরীক্ষার মত।

    সিভিলিয়ানদের প্রথম পছন্দ ছিল অবশ্যই কলকাতা। ভারতবর্ষের ব্রিটিশ রাজধানী কলকাতা। কলকাতা প্রদেশে যারা থাকতেন তাদের কে বলা হয় বাংলা ক্যাডার। তাদে সম্মান ও খাতির দুই বেশি। পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশে কে দেখা হত তাচ্ছিল্য করে। এ প্রসঙ্গে স্যার আর্থার ড্যাশের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করা যেতে পারে। তিনি ১৯১০ সালে চাকরিতে যোগ দিয়েছিলেন। টানা ৩২ বছর চাকরি করেছেন এবং প্রায় পুরোটা সময় কাটিয়েছেন পূর্ববঙ্গে। তিনি তার চাকরি জীবনের শুরর অভিজ্ঞতা লিখেছেন। লেখক বর্ণনা করেছেন - “কলকাতায় নেমে তাঁরা গেলেন বেঙ্গল ক্লাবে। ড্যাশ ও তার বন্ধুরা ক্লাবে মাল পত্র রেখে, খানিকটা থিতু হয়ে দল বেঁধে গেলেন রাইটার্স বিল্ডিঙে। দেখা করলেন আন্ডার সেক্রেটারির সাথে। আন্ডার সেক্রেটারি খুব কৃপা ভরে প্রত্যেকের নাম ডাকলেন, রেজিস্টার চেক করলেন। তারপর যারা বাংলা ক্যাডারের তাঁদের আলাদা করলেন। এবং মেপে মেপে বললেন, দুপুর দেড়টায় গভর্নমেন্ট হাউসে গভর্নর বাংলা ক্যাডারের আইসিএসদের সাথে লাঞ্চ করবেন। তখন তাঁরা কে কোথায় পোস্টিং পেয়েছেন তা জানিয়ে দেওয়া হবে।
    এরপর আন্ডার সেক্রেটারি অবহেলাভরে তাকালেন পূর্ববঙ্গ ও আসাম প্রদেশের ক্যাডারদের দিকে। তাচ্ছিল্যভরে জানালেন, তাঁদের পোস্টিং সম্পর্কে রাইটার্সের কোন মাথাব্যথা নেই। তাঁরা যেন নিজ নিজ খরচে পূর্ববঙ্গ সরকার কে টেলিগ্রাম করে জেনে নেন তাঁদের পোস্টিং সম্পর্কে। ব্যাস, ইন্টার্ভিউ শেষ! লাঞ্চ তো দূরের কথা কোথায় তাঁরা যাবেন তাও জানানো হলো না।”
    পূর্ববঙ্গের অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে আরও অনেক আগেই। কলকাতা থেকে পুরাতন শহর হওয়া সত্ত্বেও পূর্ববঙ্গের প্রধান শহর ঢাকা তখন প্রায় মৃত। রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করার পর থেকেই এর পতন শুরু। তবে ঐতিহাসিকগণ মূল কারন মনে করেন মসলিনের বাজার নষ্ট হয়ে যাওয়া কে। যে দাম দিয়ে মসলিন কিনতে হত তা সবার পক্ষে কেনা সম্ভব ছিল না। তখনকার সময়ে ১৫০ রুপী বা ১৫ পাউন্ড লাগত ১০ গজ উৎকৃষ্ট মানে মসলিনের জন্য। এত দাম হওয়াতে ক্রেতা কম ছিল। আস্তে আস্তে বন্ধ হয়ে গেল মসলিন উৎপাদন।
    পূর্ববঙ্গে তথা ভারতবর্ষে ইংরেজরা আসত চাকরির বেতনের জন্য না। তাঁরা আসত চাকরির পাশাপাশি নানান ধান্দা করার জন্য। সুদে টাকা লাগাত, নীল চাষে দাদন দিত, নুনের ব্যবসা করত, কাঠের ব্যবসা করত, কাপড়ের ব্যবসা করত। কেউ কেউ ঘুষ নিতেও দ্বিধা করত না। প্রথমদিকে এইধরনের কাজ বেশি হত। প্রথমদিকে আসতও নিম্নবিত্ত বা মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে। তাঁরা এসে যেভাবে পারে টাকা উপার্জনের ধান্দায় লেগে যেত। উচ্চবিত্ত পরিবার থেকে আসা শুরু করে আরও পরে। ব্রিটিশ আইনে পরিবারে ছোট ছেলে বাবার সম্পত্তির উত্তরাধিকার হয় নাই। এই ছোট ছেলেরা ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য আসা শুরু করে আইসিএস হয়ে।
    সিভিলিয়ানদের ব্যবসার ধরন বুঝার জন্য রবার্ট লিন্ডসের কথা বলা যায়।লিন্ডসে বনেদি পরিবারের ছিলেন কিন্তু তার পরিবার তখন গরিব অবস্থায় ছিল। তিনি ১৭৭৬ সালে ঢাকা আসেন সর্ব কনিষ্ঠ কেরানি হয়ে। দুই বছরে মাথায় সিলেটের কালেক্টর হিসেবে যোগ দেয়। তার প্রোমোশনের পিছনে যা যা আছে তা ইংরেজ শাসনের নাম হিসেবে ঠিক সুখকর না। সিলেটে লিন্ডসে যত প্রকারের ব্যবসা করা সম্ভব সব করেছেন। চুনের ব্যবসা, কড়ির ব্যবসা দুই নাম্বারি করে নিজের হাতে নিয়ে নিয়েছিলেন। হাতির ব্যবসা করেছেন। বন থেকে হাতি ধরে লোক দিয়ে পাঠিয়ে দিতেন ভারতের বিভিন্ন দিকে। নিজের জাহাজ কোম্পানি খুলে জাহাজ বানাতেন।নিজের জাহাজে মাল দিয়ে নানা দিকে পাঠিয়ে দিতেন। সারা দুনিয়া ঘুরে আসত তার জাহাজ। তবে জাহাজের মান কেমন ছিল তা জানা যায় লিন্ডসের মায়ের চিঠি থেকে। লিন্ডসের মা তাঁকে লিখেছিলেন - “প্রিয় রবার্ট, ধরে নিচ্ছি তুমি একজন অভিজ্ঞ জাহাজ নির্মাতা - এ ক্ষেত্রে তোমার ট্যালেন্টও আছে মানি- কিন্তু তোমাকে একটা অনুরোধ- তুমি যখন দেশে ফিরবে তখন নিজের তৈরি জাহাজে ফিরো না।” লিন্ডসে তার মায়ের উপদেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিয়েছিলেন।
    সিলেটে লিন্ডসে পৌঁছালেন সিলেটের দণ্ডমুণ্ড কর্তা হিসেবে। তার প্রথম দিনের অভিজ্ঞতা লিখে আজকের মত অফ যাচ্ছি-
    সিলেটে নিজের বাসায় যাওয়ার পরেই তাঁকে জানানো হয় তাঁকে শাহজালালের মাজারে যেতে হবে শ্রদ্ধা জানাতে। প্রত্যেক রেসিডেন্টকে সিলেটে পা দিয়ে তাই করতে হয় এবং এটাই নিয়ম। লিন্ডসে জানাচ্ছেন সারা ভারত থেকে মুসলমানরা আসে এই তীর্থস্থানে। তিনি পূর্বসূরিদের মত মাজারে গেলেন, চৌকাঠে জুতা রেখে ভিতরে প্রবেশ করলেন, শ্রদ্ধা জানালেন ৫ টি স্বর্নমোহর দিয়ে। তখন এক স্বর্ণ মোহর ছিল ১৬ টাকার সমান।
    তিনি এই ভাবে পবিত্র হয়ে ফিরলেন। এবার তার প্রজাদের(!) শ্রদ্ধা জানানোর পালা/ হিন্দু হোক, মুসলিম হোক কেউ খালি হাতে ওপরওয়ালাকে শ্রদ্ধা জানাতে আসতে পারে না। ‘ফলে আমার টেবিল ভরে উঠল রূপায়’ লিখেছেন লিন্ডসে। একটাকার নিচে কেউ দেয়নি, কেউ কেউ দিয়েছে ৪/৫ টাকা পর্যন্ত। বিনিময়ে লিন্ডসে তাঁদের কে আপ্যায়ন করেছেন পান সুপারি দিয়ে।

    প্রথম দিকের সিভিলিয়ানদের নবাব ডাকা হত, তা এমনে এমনেই না, যথার্থ কারন ছিল বইকি!!!
    পুনঃপ্রকাশ সম্পর্কিত নীতিঃ এই লেখাটি ছাপা, ডিজিটাল, দৃশ্য, শ্রাব্য, বা অন্য যেকোনো মাধ্যমে আংশিক বা সম্পূর্ণ ভাবে প্রতিলিপিকরণ বা অন্যত্র প্রকাশের জন্য গুরুচণ্ডা৯র অনুমতি বাধ্যতামূলক। লেখক চাইলে অন্যত্র প্রকাশ করতে পারেন, সেক্ষেত্রে গুরুচণ্ডা৯র উল্লেখ প্রত্যাশিত।
  • ব্লগ | ০৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ | ২০২৪ বার পঠিত
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • সৈকত | 342323.176.5656.40 (*) | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২১61859
  • এই বইটা আমি বেশ কয়েকবার পাতা উল্টে দেখেছি, বইমেলায়। নয়া উদ্যোগের স্টলেই মনে হয়। কিন্তু প্রতিবারই ভেবেছি , অরিজিনাল যে লেখাগুলোর ওপর ভিত্তি করে এই বইটা সেগুলো পেলে বেশী ভাল হত। অতএব কোন বারই কিনিনি।
  • Muhammad Sadequzzaman Sharif | 340112.92.345612.106 (*) | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:২৯61860
  • সৈকত দা, কাছে যে কপিটা আছে তা সময় প্রকাশনীর। অরিজিনাল খুঁজে পাওয়া সম্ভবত সম্ভব না। কারন মুনতাসির মামুন বহু বছর ধরে খুঁজে খুঁজে এই আত্মজীবনী গুলা যোগার করেছে। ব্রিটিশ লাইব্রেরী থেকে সব চেয়ে বেশি সংখ্যক লেখা পেয়েছেন বলে ভূমিকায় লিখেছেন। তাই অরিজিনালের খোঁজে আর না থেকে যোগার করে পড়ে ফেলুন। অসাধারণ জিনিস বইটা।
  • | 2345.106.673423.155 (*) | ০৫ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:৩২61858
  • ইন্টারেস্টিং! এই বইটা যোগাড় করতে হবে।
  • Muhammad Sadequzzaman Sharif | 340112.92.345612.106 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৬:৫৬61862
  • হুম, দিছে তো। ৫৬ টা প্রকাশিত ইংরেজি বইয়ের নাম, ১৩ টা অপ্রকাশিত ইংরেজি নথিপত্র,৬ টা ইংরেজি প্রবন্ধ, ২৭ টা বাংলা বই, দুইটা বাংলা প্রবন্ধ। এছাড়া ২১২ টা সিভিলিয়ানদের, তাদের আত্মীয় স্বজন ও ভ্রমণকারী যারা ভারত বেড়াতে এসেছিল তাদের লেখা ইংরেজি বইয়ের নাম পরিশিষ্টে দেওয়া আছে।
  • Du | 237812.58.890112.208 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৭:২৯61863
  • বাক্কা হইসে। আসল বইটা কখনো~ই হয়তো পড়া হবে না কিন্তু এই লেখার মাধ্যমে জেনে খুব কৌতুহলোদ্দীপক লাগছে।
  • | 453412.159.896712.72 (*) | ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ১২:৩৪61861
  • পেছনে রেফারেন্স দেওয়া নেই? সেই রেফারেন্স ধরে খুঁজলেই হবে তো।
  • সৈকত | 340112.99.675612.98 (*) | ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২২61864
  • সাদেকুজ্জামানকে বলা হয়নি, যে, হ্যাঁ, বইটা দেখে ভালই লেগেছিল। আমার লোভ একটু বেশী, এই যা।
  • মতামত দিন
  • বিষয়বস্তু*:
  • কি, কেন, ইত্যাদি
  • বাজার অর্থনীতির ধরাবাঁধা খাদ্য-খাদক সম্পর্কের বাইরে বেরিয়ে এসে এমন এক আস্তানা বানাব আমরা, যেখানে ক্রমশ: মুছে যাবে লেখক ও পাঠকের বিস্তীর্ণ ব্যবধান। পাঠকই লেখক হবে, মিডিয়ার জগতে থাকবেনা কোন ব্যকরণশিক্ষক, ক্লাসরুমে থাকবেনা মিডিয়ার মাস্টারমশাইয়ের জন্য কোন বিশেষ প্ল্যাটফর্ম। এসব আদৌ হবে কিনা, গুরুচণ্ডালি টিকবে কিনা, সে পরের কথা, কিন্তু দু পা ফেলে দেখতে দোষ কী? ... আরও ...
  • আমাদের কথা
  • আপনি কি কম্পিউটার স্যাভি? সারাদিন মেশিনের সামনে বসে থেকে আপনার ঘাড়ে পিঠে কি স্পন্ডেলাইটিস আর চোখে পুরু অ্যান্টিগ্লেয়ার হাইপাওয়ার চশমা? এন্টার মেরে মেরে ডান হাতের কড়ি আঙুলে কি কড়া পড়ে গেছে? আপনি কি অন্তর্জালের গোলকধাঁধায় পথ হারাইয়াছেন? সাইট থেকে সাইটান্তরে বাঁদরলাফ দিয়ে দিয়ে আপনি কি ক্লান্ত? বিরাট অঙ্কের টেলিফোন বিল কি জীবন থেকে সব সুখ কেড়ে নিচ্ছে? আপনার দুশ্‌চিন্তার দিন শেষ হল। ... আরও ...
  • বুলবুলভাজা
  • এ হল ক্ষমতাহীনের মিডিয়া। গাঁয়ে মানেনা আপনি মোড়ল যখন নিজের ঢাক নিজে পেটায়, তখন তাকেই বলে হরিদাস পালের বুলবুলভাজা। পড়তে থাকুন রোজরোজ। দু-পয়সা দিতে পারেন আপনিও, কারণ ক্ষমতাহীন মানেই অক্ষম নয়। বুলবুলভাজায় বাছাই করা সম্পাদিত লেখা প্রকাশিত হয়। এখানে লেখা দিতে হলে লেখাটি ইমেইল করুন, বা, গুরুচন্ডা৯ ব্লগ (হরিদাস পাল) বা অন্য কোথাও লেখা থাকলে সেই ওয়েব ঠিকানা পাঠান (ইমেইল ঠিকানা পাতার নীচে আছে), অনুমোদিত এবং সম্পাদিত হলে লেখা এখানে প্রকাশিত হবে। ... আরও ...
  • হরিদাস পালেরা
  • এটি একটি খোলা পাতা, যাকে আমরা ব্লগ বলে থাকি। গুরুচন্ডালির সম্পাদকমন্ডলীর হস্তক্ষেপ ছাড়াই, স্বীকৃত ব্যবহারকারীরা এখানে নিজের লেখা লিখতে পারেন। সেটি গুরুচন্ডালি সাইটে দেখা যাবে। খুলে ফেলুন আপনার নিজের বাংলা ব্লগ, হয়ে উঠুন একমেবাদ্বিতীয়ম হরিদাস পাল, এ সুযোগ পাবেন না আর, দেখে যান নিজের চোখে...... আরও ...
  • টইপত্তর
  • নতুন কোনো বই পড়ছেন? সদ্য দেখা কোনো সিনেমা নিয়ে আলোচনার জায়গা খুঁজছেন? নতুন কোনো অ্যালবাম কানে লেগে আছে এখনও? সবাইকে জানান। এখনই। ভালো লাগলে হাত খুলে প্রশংসা করুন। খারাপ লাগলে চুটিয়ে গাল দিন। জ্ঞানের কথা বলার হলে গুরুগম্ভীর প্রবন্ধ ফাঁদুন। হাসুন কাঁদুন তক্কো করুন। স্রেফ এই কারণেই এই সাইটে আছে আমাদের বিভাগ টইপত্তর। ... আরও ...
  • ভাটিয়া৯
  • যে যা খুশি লিখবেন৷ লিখবেন এবং পোস্ট করবেন৷ তৎক্ষণাৎ তা উঠে যাবে এই পাতায়৷ এখানে এডিটিং এর রক্তচক্ষু নেই, সেন্সরশিপের ঝামেলা নেই৷ এখানে কোনো ভান নেই, সাজিয়ে গুছিয়ে লেখা তৈরি করার কোনো ঝকমারি নেই৷ সাজানো বাগান নয়, আসুন তৈরি করি ফুল ফল ও বুনো আগাছায় ভরে থাকা এক নিজস্ব চারণভূমি৷ আসুন, গড়ে তুলি এক আড়ালহীন কমিউনিটি ... আরও ...
গুরুচণ্ডা৯-র সম্পাদিত বিভাগের যে কোনো লেখা অথবা লেখার অংশবিশেষ অন্যত্র প্রকাশ করার আগে গুরুচণ্ডা৯-র লিখিত অনুমতি নেওয়া আবশ্যক। অসম্পাদিত বিভাগের লেখা প্রকাশের সময় গুরুতে প্রকাশের উল্লেখ আমরা পারস্পরিক সৌজন্যের প্রকাশ হিসেবে অনুরোধ করি। যোগাযোগ করুন, লেখা পাঠান এই ঠিকানায় : [email protected]


মে ১৩, ২০১৪ থেকে সাইটটি বার পঠিত
পড়েই ক্ষান্ত দেবেন না। যা খুশি মতামত দিন